শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক

চিঠিপত্র

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক

মমতাজ হাসান

এক বছরের বেশি হলো করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এ সময়ে শিক্ষার্থীরা বাসায় চুপচাপ বসে; তারা অপেক্ষায় রয়েছে স্কুলে যাবার।মাঝে মাঝে ঘোষণা আসে অমুক তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাহবে। শিক্ষার্থীরা আশায় বুক বাঁধে।পরে আবার সিদ্ধান্ত বদলায়।তারা হতাশ হয়। তাদের মন ভেঙ্গে যায়। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা প্রয়োজন।স্কুলগামী শিশু-কিশোরেরা বাড়িতে আবদ্ধ থাকতে থাকতে প্রচন্ড একঘেয়েমিতে ভুগছে। লেখাপড়া তো হচ্ছেই না তাদের মনের অবস্থাও খারাপ।জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় তারা ঘরে বসে নষ্ট করছে। অথচ বাইরে যাওয়া, লেখাপড়া, ছোটাছুটি, খেলাধুলা প্রভৃতির চর্চা শিক্ষার্থীদের জীবন ও মনন নির্মাণের গুরুত্বপুর্ণ উপাদান।এগুলি তারা হারাচ্ছে।বর্তমানে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন এক অস্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। শিশু-কিশোরদের মন নরম, বেশি চাপ বহন করার ক্ষমতা তাদের নাই। এই অস্বাভাবিকতা আরো দীর্ঘ হলে তারা মানসিক ভাবে বড় ক্ষতির মধ্যে পড়বে যা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবেনা।এই দুর্যোগ এড়াতে তাই স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া প্রয়োজন।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে স্কুল বা পাড়াভিত্তিক কিছু প্রয়াস নেয়া যেতে পারে। একদিনে একটি বা দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসবে।শিক্ষার্থী বেশি হলে কেউ আসবে বিকেলে কেউ সকালে। তারা বসবে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে।শিক্ষকগণ তাদের ক্লাস নেয়া ছাড়াও আনুসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা করবেন। শ্রেণিকক্ষের বাইরে মাঠেও বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একেক দল একেক দিকে বসবে। উন্মুক্ত মাঠেই চলতে পারে পাঠদান সহ আনুসঙ্গিক বিষয়ের চর্চা। শ্রেণিকক্ষ বা মাঠ যেখানেই বসার ব্যবস্থা হোক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে পরিপুর্ণ। এই অন্তরবর্তীকালে তারা যেন যথাযথ মাত্রায় প্রাণবন্ত উচ্ছ্বল ও উদ্যোমী থাকে। স্কুলের বাইরে পাড়া-মহল্লাতেও এলাকার শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে যদি সেরকম সুযোগ থাকে। এরকম জায়গার খবর শিক্ষার্থীদের জানা থাকার কথা। লেখাপড়া কমবেশি যেমনই হোক একটি বৃহৎউদ্দেশ্য হল তাদের মনকে জাগ্রত রাখা। তারা যেন মনে করে যে, স্কুল খুলেছে এখন সবকিছু আগের নিয়মে শুরু হবে। এই সময়ে লেখাপড়া নিয়ে তাদের অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে তাদের মনে জমে থাকা সকল দ্বিধা, ভয়, জড়তাকে দূর করতে পারতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, নিয়মিত পড়াশোনা করার মানসিকতা ও উদ্যোম যেন বজায় থাকে। তাই লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলাসহ অন্যান্য বিষয়গুলির সঙ্গেও যেন তারা কমবেশি যুক্ত হয়।শিক্ষার্থীরা এতে উজ্জীবিত হবে।এটা তাদের মানসিকতাকে সবল করার পথ।শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি এই প্রক্রিয়া বিদ্যমান স্থবিরতা ও বৈকল্যের বিরুদ্ধে এক প্রকারের ওষুধ।ভবিষ্যতে স্কুল পুর্ণাঙ্গ রূপে চালু হলে পেছনে ফেলে আসা শিক্ষার ঘাটতি পূরণে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় মানসিক ও শারীরিক সামর্থ্যের অভাব হবে না।এই শক্তিটা এখন বসে থেকে কেবল ক্ষয় হচ্ছে, একই সঙ্গে নষ্ট করছে লেখাপড়াও।এটা রোধ করা দরকার।
ক্লাসসহ শিক্ষার পাঠ্য বিষয়ের একটা সংক্ষিপ্ত সূচি অনুসরণ করে শ্রেণি পরীক্ষাগুলি নেয়া যায়।তবে পরীক্ষা নেয়াই যেন মূখ্য উদ্দেশ্য না হয়ে পড়ে সেটাও কঠোরভাবে লক্ষ্য রাখতেহবে।সবাই চেষ্টা করলে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে পাবলিক পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এগুলি না ঘটা পর্যন্ত খেয়াল রাখতে হবে শিশু-কিশোরদের মনোবল যেন অটুট থাকে,তারা নুয়ে না পড়ে। সেক্ষেত্রে স্কুল খোলার জন্য এসব টোটকা খুব উপকারি।

করোনা চলছে, পাশাপাশি চলছে অফিস-আদালত-ব্যাংক-বাজার-পরিবহন-গার্মেন্টস-শিল্পকারখানা-পার্ক-খেলাধুলা-বলা যায় সবকিছুই। কেবল শিক্ষার্থীদেরকেই কেন মহামারি ঠেকানো ও মানুষকে বাঁচানোর ঝক্কিটা নিতে হবে।স্কুলকলেজের ন্যায় জনসমাগমওয়ালা স্থান দেশে আরও অনেক আছে সেগুলিবন্ধ নেই, সেখানে শিক্ষার্থীদের সমবয়সীদেরও আনাগোনাতে কোনো কমতি লক্ষ্য করা যায়না। তাহলে কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা কেন? কর্তৃপক্ষ পরিহন সেক্টর, বাজারের ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস মালিক এদের উপরে আস্থা রাখতে পারেন কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীদের উপরে আস্থা রাখতে পারেন না। এরাকি এতই অক্ষম মানুষ! তাদেরকে এতটা আস্থাহীন করে রাখায় কোনো পক্ষেরই লাভ হচ্ছেনা।

ভবিষ্যৎ নির্মাণের রাস্তাটা বন্ধ রেখে ভবিষ্যতের মানুষদের মানসিকতাকে নষ্ট করে ফেলা একেবারেই অনুচিত। আমরা এই মুহূর্তে ফসল ফলাতে না পারি অন্ততঃ জমিটা ঠিক রাখি যেন পরিবেশ ভাল হলে পুনরায় দ্রুত কাজ শুরু করা যায়। কিন্তু বর্তমান পরিবেশ জমিটাকেই নষ্ট করে ফেলার উপক্রম করেছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় বলছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক।

মমতাজ হাসান: অবসরপ্রাপ্ত সহকারী মহাব্যবস্থাপক, রাজশাহী কৃষিউন্নয়ন ব্যাংক।

ইমেইল: mamtazhasan7@gmail.com

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •