মহাশ্বেতা দেবীর সাথে আলাপ

মহাশ্বেতা দেবীর সাথে আলাপ

আনু মুহাম্মদ

ভারতের বাংলা ভাষার লেখকদের মধ্যে স্মরণীয় নাম মহাশ্বেতা দেবী (১৪ জানুয়ারি ১৯২৬- ২৮ জুলাই ২০১৬)। তিনি ১০০টিরও বেশি উপন্যাস এবং ২০টিরও বেশি ছোটোগল্প সংকলন রচনা করেছেন। ১৯৬৪ সালে মহাশ্বেতা দেবী কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। এই সময় থেকে মহাশ্বেতা দেবী সাংবাদিক ও সৃজনশীল লেখক হিসেবেও কাজ করতেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের লোধা ও শবর জাতি, নারী ও দলিতদের নিয়ে অনুসন্ধান ও লেখালেখির মধ্য দিয়ে সবার সামনে এক নতুন জগত উন্মোচিত করেছেন। মহাশ্বেতা দেবীর জীবনসঙ্গী বিজন ভট্টাচার্য ছিলেন ভারতীয় গণনাট্য সংঘ আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তাঁদের পুত্র নবারুণ ভট্টাচার্যও পরবর্তীকালে ঔপন্যাসিক ও বিশ্লেষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মহাশ্বেতা দেবীর গ্রন্থগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা যায়: ঝাঁসির রানি, হাজার চুরাশির মা, অরণ্যের অধিকার, অগ্নিগর্ভ, চোট্টি মুন্ডা ও তার তীর, ‘কৈবর্ত খন্ড’, ‘কবি বন্দ্যঘটি গাঞির জীবন ও মৃত্যু’ । তিনি ভারতের কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। তবে তিনি নিশ্চয়ই পুরস্কারের চাইতে বড় লেখক।

২০০৯ সালে মহাশ্বেতা দেবী যখন দৃক-এর আমন্ত্রণে ঢাকায় আসেন তখন তাঁর সাথে এই আলাপ হয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় মইনুল আহসান সাবের সম্পাদিত তৎকালীন সাপ্তাহিক ২০০০ পত্রিকায়।  

আনু মুহাম্মদ : আপনার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তখন ভীষণভাবে অসুস্থ। আপনি বাংলাদেশে এসেছিলেন একটি সাহিত্য সম্মেলনে। সেই সময় দেখেছি ইলিয়াস ভাইকে আপনি অনেক সময় দিয়েছেন, কথা বলেছেন, গান শুনিয়েছেন। আমরা বুঝতাম ঐ কষ্টের মধ্যে আপনার সঙ্গ ইলিয়াস ভাইকে অনেক ভাল সময় দিয়েছে।

মহাশ্বেতা দেবী : হ্যাঁ, আমি গানও শোনাতাম। কথা তো শেষই হতো না। সাহিত্য, মানুষ, ওর নানা পরিকল্পনা। ইলিয়াসের মতো কেউই জানত না যে সে চলে যাচ্ছে। ইলিয়াস হাসপাতালে থাকাকালীন শুনল যে আমি জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছি। শুনে ফোন করে আমাকে বলেছে, ‘দিদি, আমিই যেন জ্ঞানপীঠ পেলাম’। ও খুব আনন্দিত হয়েছিল।

আনু মুহাম্মদ : আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা সম্পর্কে এখন আপনার কী মনে হয়?

মহাশ্বেতা দেবী : সর্বকালের, সর্বসময়ের একজন বড় সাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।

আনু মুহাম্মদ : সে সময় ইলিয়াস ভাই আপনার একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। শেষ করতে পারেননি। ওনার মৃত্যুর পর আমরা সেই সাক্ষাৎকার লেখক শিবিরের সাহিত্য পত্রিকা ‘তৃণমূল’ এ প্রকাশ করেছিলাম। আপনি পেয়েছিলেন?

মহাশ্বেতা দেবী : বারবার বাসা বদল হলো তখন, মনে হয় সেই কারণে কপি পাইনি।

আনু মুহাম্মদ : ওই সাক্ষাৎকারে আপনি সাহিত্য, ভাষা, আদিবাসীদের জগৎ ও উন্নয়ন চিন্তা নিয়ে বিস্তারিত বলেছিলেন। এবং তাদের উন্নয়নের তথাকথিত মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার ব্যাপারে আপনার স্পষ্ট বিরোধিতাও প্রকাশ করেছিলেন। আবার একটু বলবেন?

মহাশ্বেতা দেবী : আমি যা বলেছিলাম এবং আজও বলব তা হলো ভারতবর্ষে আমরা সবাই কিন্তু বহিরাগত। আমাদের বহু আগে থেকেই কিন্তু ভারতবর্ষের বনেজঙ্গলে বাস করত এই আদিবাসীরাই। পৃথিবীর বহু জায়গার মতোই এখানেও তারা আদিম অধিবাসী। একটা কথা, আদিবাসীদের মূলস্রোতে নিয়ে আসার কথা কেন বলা হচ্ছে? আমি মনে করি মূলস্রোতধারা বলতে কিছু নেই। অবিভক্ত ভারতবর্ষে বহুসংখ্যক সতীদাহ হতো এবং তা কিন্তু তথাকথিত এলিট সম্প্রদায়ের মধ্যেই বেশি হতো। তাই, কোনটা সভ্য, কোনটা নয়Ñ সে বিচার আমরা কেন করি?

আদিবাসী সমাজের বন্ধন খুবই দৃঢ়। সেখানে নারী-পুরুষে কোনও বিভাজন নেই। একটা ছেলে জন্মাল, না মেয়ে জন্মাল, তাতে কিছু যায় আসে না। আদিবাসী সমাজে দুজনেরই সমঅধিকার। তাদের বিয়েতে পাত্রপক্ষকে পণ দিতে হয় না। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খেটে খায়। তারা যদি বিবাহ-বিচ্ছেদ করতে চায় সেটাও খুব সহজ। আমাদের মতো ‘উইমেন্স কমিশন’ গঠন জাতীয় হাঙ্গামা করতে হয় না। সাধারণত পঞ্চায়েত বা মোড়ল টাইপের একজন লোক এসে সব জানাশোনার পর একটা গাছের পাতা ছিঁড়ে দু টুকরো করে দিলেই বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে গেল। বিবাহ-বিচ্ছেদের পর স্বামী-স্ত্রী উভয়েই পুনর্বিবাহ করতে পারে।

 কাজেই এ রকম একটা সমাজকে সভ্য করে মূলস্রোতে আনার কী আছে? কাকে সভ্য করা হবে? কেন সভ্য করা হবে? কী সভ্য করা হবে? তোমার মধ্যে এমন কী আছে বা কোন অধিকারে তাকে সভ্য করবে? তারাই সেই লোক যারা গঙ্গা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রকে রক্ষা করেছে, পাহাড় রক্ষা করেছে, মাটি রক্ষা করেছে, অরণ্য রক্ষা করেছে। তাকে তুমি কী শেখাবে?

এ রকম একটা সমাজকে সভ্য করে মূলস্রোতে আনার কী আছে? কাকে সভ্য করা হবে? কেন সভ্য করা হবে? কী সভ্য করা হবে? তোমার মধ্যে এমন কী আছে বা কোন অধিকারে তাকে সভ্য করবে? তারাই সেই লোক যারা গঙ্গা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রকে রক্ষা করেছে, পাহাড় রক্ষা করেছে, মাটি রক্ষা করেছে, অরণ্য রক্ষা করেছে। তাকে তুমি কী শেখাবে?

আনু মুহাম্মদ : আমরা তো দেখি বাংলাদেশ বা ভারতের মতো দেশে বৈষম্য ও নিপীড়নের সবচেয়ে বড় শিকার শিশুরা, তারাই সবচেয়ে অবহেলিত, নিগৃহীত। আমি বিভিন্ন উন্নয়ন আলোচনায় বা ক্লাশে আপনার অভিজ্ঞতার কথা বলি। যেখানে আপনি জানিয়েছেন, আপনার দেখা আদিবাসী সমাজে একটা শিশু একটি পরিবারের নয় তাকে সমাজের শিশু হিসাবে গণ্য করা হয়। শিশুকে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গী তো খুবই মৌলিক একটি বিষয়, তাই না?

মহাশ্বেতা দেবী : একেবারেই ঠিক। ওরা শিশুদের প্রতি সামাজিক দায়িত্বকে খুবই গুরুত্ব দেয়। অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক চাপে আদিবাসীদের সবাইকে কিছু না কিছু কাজ করতে হচ্ছে সেখানে সবকিছু ভাগ করে নেবার দৃষ্টিভঙ্গীটাই প্রধান। ওদের সমাজে সমাজকল্যাণ বলে আলাদা কোন শব্দ নেই, সমাজের কাজ সবারই। পশ্চিমবঙ্গে মুন্ডা সমাজেও আমরা এমনটা দেখি।

আনু মুহাম্মদ : আপনার লেখায় দেখেছি, আমাদের দেশেও দেখি, আদিবাসী ভাষায় তাদের শব্দভান্ডারে ‘শোষণ’ ‘প্রতিহিংসা’ ‘ধর্ষণ’ এসব বাংলা  শব্দের সমার্থক কোন শব্দ নেই,  আদিবাসী ভাষায় এর কোনও প্রতিশব্দ নেই।

মহাশ্বেতা দেবী : এসব ওদের ভাষায় নেই কারণ এসব ওরা করেও না। জানেও না।

আনু মুহাম্মদ : আপনি তো আদিবাসীদের সঙ্গে অনেক কাজ করেছেন। আপনার ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘চোট্টি মুন্ডা ও তার তীর’ উপন্যাস সহ নানা লেখা আমাদের শিক্ষিত করেছে, অজানা জগৎ জানতে সাহায্য করেছে। এখন তথাকথিত উন্নয়ন ডামাডোলে তাদের অবস্থা কী?

মহাশ্বেতা দেবী : উন্নয়ন বলব না। সরকারিভাবে বলা হয়েছে কিছু কাজ আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। তবে বাস্তব সুফল আদিবাসীরা পায় না। পেলেও হারামজাদা প্রকৃতির কেউ কাজটা পায়, যে কি না সরকারকে সমর্থন করতে পেরেছে। সিপিএম ৩০-৩২ বছর যাবত এসব করায় পঞ্চায়েত পর্যায়ে থেকে জনগণ তাদের আউট করে দিয়েছে। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামসহ বহু জায়গায় এমন হয়েছে।

আনু মুহাম্মদ: সিঙ্গুরের অবস্থা কী এখন?

মহাশ্বেতা দেবী: সিঙ্গুরে সিপিএম জনগণকে না জানিয়ে টাটার সঙ্গে ডিল করায় বিধানসভা নির্বাচনে তারা হেরেছে। গুজরাটের রাজকোটে দেখেছি টাটার ন্যানো গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে। সেগুলো সিঙ্গুরে এনে সংযোজন করার চেষ্টা হচ্ছিল। অথচ, সে জন্য ভারতবর্ষের অন্যতম ঊর্বরতা সম্পন্ন সিঙ্গুরের ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫শ’ একর জমি অধিগ্রহণের কোনও দরকার ছিল না। এত মানুষকে উচ্ছেদ করাও দরকার ছিল না। এসব ক্ষেত্রে সরকার জনগণকে কিছু জানালোও না। আমরা জানলাম টাটাগোষ্ঠী সিঙ্গুরে দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। কিন্তু পশ্চিম বাংলা সরকার টাটাকে কী কী সুবিধা দিচ্ছে তা গোপনীয়ই থাকল। আমরা দেখেছি সিঙ্গুরে টাটার সঙ্গে চুক্তির পর সরকার পাকা রাস্তাঘাট বানাল, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করল, এমনকি আজ পর্যন্ত ১০-১২ হাজার পুলিশ সিঙ্গুরে টাটাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বসিয়ে রেখেছে। কেন পাহারা দিচ্ছে? সিঙ্গুর তো এখন পরিত্যক্ত।

ভারতবর্ষের অন্যতম ঊর্বরতা সম্পন্ন সিঙ্গুরের ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫শ’ একর জমি অধিগ্রহণের কোনও দরকার ছিল না। এত মানুষকে উচ্ছেদ করাও দরকার ছিল না। এসব ক্ষেত্রে সরকার জনগণকে কিছু জানালোও না। আমরা জানলাম টাটাগোষ্ঠী সিঙ্গুরে দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। কিন্তু পশ্চিম বাংলা সরকার টাটাকে কী কী সুবিধা দিচ্ছে তা গোপনীয়ই থাকল।

আনু মুহাম্মদ : পরিস্থিতি দেখে তো মনে হচ্ছে, সিপিএমের মধ্যে তথাকথিত উন্নয়ন নিয়ে একটা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে।

মহাশ্বেতা দেবী : সিপিএম সমর্থক লবীরা বলছে, তারাই নাকি শিল্পায়নের এবং উন্নয়নের সপক্ষের শক্তি। আমরা নাকি উন্নয়ন বিরোধী।

আনু মুহাম্মদ : এদেশে আমরা যখন দেশের সম্পদ লুন্ঠন ও পাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াই, যখন জনগণের জীবন ও সম্পদ তাদের হাত থেকে কেড়ে নেবার বিরুদ্ধে কথা বলি তখন এসব উপাধি আমরাও পাই। নন্দীগ্রামে তথাকথিত উন্নয়নপন্থীদের যে নৃশংসতা দেখলাম, সিপিএমের কারণে তা একবারেই অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী?

মহাশ্বেতা দেবী : নন্দীগ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে তালপাটি খাল। ওপারে খেজুরি। এতদিন ধরে সিপিএমের শরিক সিপিআই প্রার্থী ওখানে জিতেছে। খেজুরি থেকে হার্মাদ বাহিনী খাল পেরিয়ে এসে নন্দীগ্রামে বীভৎস অত্যাচার চালিয়েছে। নারীধর্ষণ হয়েছে। ধর্ষিতা মেয়েরা বলেছে, আজীবন আমার দাওয়ায় এসে চা-নাস্তা খেয়ে বৌদি কিংবা মাসী ডেকেছে সেই ছেলেই আমাকে ধর্ষণ করেছে। বীভৎস হত্যা হয়েছে। এক পরিবারের মা ও মেয়েকে একসঙ্গে ধর্ষণ করা হয়েছে। এটা নিয়ে কিন্তু সারাদেশ জুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে, কমিশন হয়েছে। মেধা পাটকারও কিন্তু ওখানে গিয়ে ঘুরে এসেছেন।

আনু মুহাম্মদ : এই নৃশংসতার পেছনে অন্য কী কোনও ফ্যাক্টর ছিল?

মহাশ্বেতা দেবী :  আমার ধারণা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলে সিপিএম ক্ষিপ্ত হয়েছে। পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই গ্রাম উন্নয়ন হয়। পশ্চিম বাংলায় অনেক গ্রামেই বিশুদ্ধ পানীয় জল কিংবা স্বাস্থ্যসেবা নেই। মানুষ অনেক দিন সহ্য করতে করতে ক্ষিপ্ত হয়েই কিন্তু সিপিএমের বিপক্ষে গেছে। এ সবের জন্যই পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম মাটি চাপা পড়েছে। এরপর নন্দীগ্রামে বিধানসভা নির্বাচনে দেলোয়ার হোসেনের মা ফিরোজা বিবি ৪০-৪২ হাজার ভোটে জিতেছে। দেলোয়ারকে সিপিএম কর্মীরা নৃশংসভাবে হত্যা করায় মানুষ সিপিএমের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েই ওই গ্রাম্য কৃষক বধূকে ভোট দিয়েছে। সিপিএমের অত্যাচারের নীরব একটা প্রতিবাদ হয়েছে ভোটের মাধ্যমে।

আনু মুহাম্মদ : পশ্চিমবঙ্গে হল না, কিন্তু সারা ভারতেই তো দেখছি ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ গড়ে উঠছে……..

মহাশ্বেতা দেবী : মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে দেখেছি সেই সব অঞ্চল, যেখানে কৃষকরা ব্যাপকভাবে আত্মহত্যা করেছে। দেখেছি, কৃষকরা  ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ হওয়ায় জমি হারিয়ে জিরত হারিয়ে হতাশ হয়েই আত্মহত্যা করেছে। কাগজেও এসব নিয়ে বহু লেখা পড়েছি। এই ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ বা এসইজেড এক সর্বনাশা ঘাতক। এই এসইজেড শিল্পপতিদের আরও ধনী হতে সাহায্য করেছে আর কৃষক কাজ হারিয়ে দুবেলা অন্ন জোটাতে পারছে না। তোমাদের এখানে কী খবর?

মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে দেখেছি সেই সব অঞ্চল, যেখানে কৃষকরা ব্যাপকভাবে আত্মহত্যা করেছে। দেখেছি, কৃষকরা  ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ হওয়ায় জমি হারিয়ে জিরত হারিয়ে হতাশ হয়েই আত্মহত্যা করেছে। কাগজেও এসব নিয়ে বহু লেখা পড়েছি। এই ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ বা এসইজেড এক সর্বনাশা ঘাতক। এই এসইজেড শিল্পপতিদের আরও ধনী হতে সাহায্য করেছে আর কৃষক কাজ হারিয়ে দুবেলা অন্ন জোটাতে পারছে না।

আনু মুহাম্মদ : এগুলো তো আসলে এক দুই দেশের ব্যাপার না, এটা সারা দুনিয়ার মানুষেরই অভিজ্ঞতা, পুঁজির দখল আর মানুষের অস্তিত্বের লড়াই। আমাদের এখানে বড় রাজনৈতিক দল, কিংবা বড় বড় বিশেষজ্ঞরা তো এরকম কর্মকান্ডকেই রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাফল্য হিসাবে উল্লেখ করে।

মহাশ্বেতা দেবী : ছিঃ ছিঃ ছিঃ! সেটাই। শুনেছি ভারতের মতো এখানেও জায়গাজমি মানুষ পানি সব শেষ করে সর্বনাশা সব কান্ড হচ্ছে।

আনু মুহাম্মদ: ভারতে দেশি কোম্পানি বা যৌথ প্রকল্পের জন্য আর এখানে হয় বিদেশি কোম্পানির জন্যও। উন্নয়নের কর্মসূচির নামে বাঙালী আদিবাসী মানুষ জমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে বহুদিন। বনজঙ্গল উজাড় হচ্ছে। নদীনালাখালবিল দখল হচ্ছে। এখন উন্নয়ন মানে মিলকলকারখানা বন্ধ করে, জমিজমা খালবিল দখল করে হাইরাইজ শপিংমল বানাও। বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দাও সবকিছু। কর্মসূচি হচ্ছে, মার্কেটের কাছে যাওÑ মার্কেট সবকিছু দেখাশোনা করবে। টাকা পয়সা না থাকলে মরো…. 

মহাশ্বেতা দেবী : আচ্ছা ফুলবাড়ীর সর্বশেষ খবর কী? এখানেও তো এক সর্বনাশা কান্ড হতে যাচ্ছিলো…..

আনু মুহাম্মদ: মানুষ তা ঠেকিয়েছে জীবন দিয়ে। কিন্তু শয়তানদের অক্ষ তো শক্ত। সম্পদ আর মুনাফার লোভে তারা এখনও তৎপর। জনগণের তাড়া খেয়ে তারা পালিয়েছে বটে কিন্তু শয়তানি তো থামেনি। সর্বশেষ চেষ্টা ছিল নির্বাচনে টাকা ছড়িয়ে তাদের সুবিধামতো প্রার্থীকে পাশ করানো। হলে বলতে পারতো এই দেখো জনপ্রতিনিধি চাইছে এখানে এশিয়া এনার্জি আসুক। কিন্তু মানুষ তা হতে দেয়নি। আমাদের আন্দোলনের, ফুলবাড়ী গণঅভ্যুত্থানের, অন্যতম নেতা আমিনুল ইসলাম বাবলু উপজেলা নির্বাচনে এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই দাঁড়িয়েছিলেন। সর্বস্তরের মানুষ এমনকি ভিখিরী, ক্ষেতমজুর ৫ টাকা ১০ টাকা যে যা পারে চাঁদা দিয়ে, শ্রম দিয়ে, দৃঢ়তা দিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। ৩২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন বাবলু। এটা ফুলবাড়ী জনগণের দ্বিতীয় বিজয়।  

আমাদের আন্দোলনের, ফুলবাড়ী গণঅভ্যুত্থানের, অন্যতম নেতা আমিনুল ইসলাম বাবলু উপজেলা নির্বাচনে এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই দাঁড়িয়েছিলেন। সর্বস্তরের মানুষ এমনকি ভিখিরী, ক্ষেতমজুর ৫ টাকা ১০ টাকা যে যা পারে চাঁদা দিয়ে, শ্রম দিয়ে, দৃঢ়তা দিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। ৩২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন বাবলু। এটা ফুলবাড়ী জনগণের দ্বিতীয় বিজয়।  

মহাশ্বেতা দেবী : বা! মানুষের বিজয় কে ঠেকায়? এতো ফিরোজা বিবির বিজয়ের মতোই এক বড় ঘটনা।

মহাশ্বেতা দেবী, জয় ভদ্র : এদেশে এনজিওর এখন কী অবস্থা?

আনু মুহাম্মদ : এনজিও জগতে বড় আকারে মেরুকরণ হয়েছে, মাত্র কয়েকটি এনজিওর হাতে এখন শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ সম্পদ, জনবল, এলাকা আর ক্ষুদ্রঋণ তো আছেই। বলতে পারেন মনোপলি এনজিও। আবার এরা সবাই প্রচুর ব্যবসা বানিজ্যের মধ্যে ঢুকে কর্পোরেট চেহারা নিয়েছে। আর এরাই বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে যৌথ কাজ করছে। ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক এগুলোর পুরোধা।   

মহাশ্বেতা দেবী : বাংলাদেশে এনজিও ব্যাপারটা খুব শক্তিসঞ্চার করেছে সেটা জানি। আমাদের অভিজ্ঞতায় এনজিওরা ভালো কাজ করার কথা, কিন্তু সব এনজিও কিন্তু তা করে না। শাসকশ্রেণীর সুবিধা আর নানা পরিকল্পনার উপযোগী করে এনজিওদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন কাজেকর্মে।

আনু মুহাম্মদ : ক্ষুদ্রঋণ এখন বিশ্বজোড়া নাম। কিন্তু এটি এখন বিভিন্ন দেশে আধুনিক ফর্মে নতুন শৃঙ্খলের চেহারা নিচ্ছে। আপনার বিভিন্ন লেখায় বন্ডেড লেবার কথাটি বারবার ঘুরেফিরে এসেছে……

মহাশ্বেতা দেবী : বন্ডেড লেবার নিয়েই আমি প্রথম কাজ করতে নামি। অবশ্য এর আগে থেকেই আদিবাসীদের করুণ চিত্র সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল। বন্ডেড লেবার সিস্টেমটা হলো- একজন লোক ভূস্বামী বা জমিদারের কাছ থেকে ১শ বা ৫শ টাকা নিল। এতে একটা স্ট্যাম্প করা হলো। সাধারণ লোক তো লেখাপড়া জানে না তাই ভূস্বামীই কাগজে লিখল এবং ঋণগ্রহীতার টিপসই নিল। এর বিনিময়ে ওই লোকটি সারাদিন জমিদারের ক্ষেত-খামারে শ্রম দেবে। বিনিময়ে পাবে সারাদিনে একটা লুকমা। লুকমা হচ্ছে চাল-ডাল দিয়ে পাক করা একজাতীয় নরম খাবার। সেই লোকের পরিবার আছে কিন্তু তাদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেই্ এই ঋণ কিন্তু আর শোধ হয় না। কবে শোধ হবে এটা যদি ১০ বছর পরও জমিদারকে জিজ্ঞেস করা হয় উত্তর আসে সুদে-আসলে আরও বেশি হয়েছে। অর্থাৎ আজীবনেও এই ঋণ শোধ হয় না। পুরুষানুক্রমে এই ঋণের বোঝা বইতে হয় তবু ওই ঋণ আর শোধ হয় না। এটাই ভূমিদাস প্রথা বা বন্ধুয়া মজদুরি। এটা দাসপ্রথারই আধুনিক সংস্করণ। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি সমস্ত ভারতবর্ষেই এটা আছে। নাম ভিন্ন। ভারত সরকার ১৯৭৬ সালে এই প্রথা নিষিদ্ধ করে আইন করে। আইন করার পরে দেখলাম, বিত্তশালী পালাময়ী যাদের বিরুদ্ধে আইন  হলো, তাদেরই এই আইন বাস্তবায়নে নিয়োজিত করা হলো। বাস্তবে তারা অন্যরূপে চালাতে লাগল এই বন্ধুয়া মজুরদের। আমরা এটা দেখে এলাম এক প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে। ফিরে এসে আন্দোলন সংগঠিত করলাম। পালাময়ীদের নিয়ে ডাল্টনগঞ্জ নামক একটা ছোট শহরে আন্দোলন শুরু করলাম। এই প্রথমবারের মতো ডাল্টনগঞ্জ শহরে এসে পালাময়ীরা পাকা রাস্তায় হাঁটার সুযোগ পায়। এই পালাময়ীরা আগে পাকা রাস্তায় না হাঁটায় ডাল্টনগঞ্জকেই তারা ভাবছিল নিউইয়র্ক কিংবা লন্ডন। সেই আন্দোলনে দেখেছি তাদের আত্মবিশ্বাস। ‘কামানেওয়ালা খায়েগা, লুটনে ওয়ালা জায়েগা, বন্ধুয়া মজলিস খতম কর’ Ñলেখা প্ল্যাকার্ড হাতে মহিলারা সমানে শহরে মিছিল করল। সে দিন ওরা নিজ মালিক লাক্সমান সিংকে নিয়ে ব্যঙ্গ নাটক করল। এরপর ওরা জাগ্রত হওয়ার পর ‘ভূমিসেনা’ গঠন হলো। অধিকার কিছুটা ফিরে পেল।

আনু মুহাম্মদ : আপনি এক লেখায় লিখেছেন তেভাগা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়ই নকশালবাড়ী আন্দোলন হয়েছে যেটা নিয়ে আপনি ‘হাজার চুরাশির মা’ লিখেছেন…

মহাশ্বেতা দেবী : তেভাগা আন্দোলন যখন শুরু হয় তখন কিন্তু জমিদার প্রথা ছিল। তখন যদি ফসলকে চারভাগে ধরি, জমিদার তিন ভাগ নিত, বর্গাদার এক ভাগ পেত। তেভাগা আন্দোলনের বিষয় ছিল, জমিদার এক ভাগে পাবে, বর্গাদার তিন ভাগ পাবে। বর্গাদারও কিন্তু সবটা চাষ করত না বা করতে পারত না। তাই ক্ষেতমজুর লাগানো হতো। তেভাগা আন্দোলনের পর পশ্চিমবঙ্গে বর্গাদারের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। কিন্তু ক্ষেতমজুরের অধিকার কোনও দিনই বাস্তবায়িত হয়নি। এর ভিত্তিতেই আমি একটা উপন্যাস লিখেছি। নকশালবাদী আন্দোলন কিন্তু তেভাগারই পরিক্রমায় এসেছে।

আনু মুহাম্মদ : ভারতের অন্যান্য অংশে যেভাবে হিন্দু ফ্যাসিবাদীদের উত্থান ঘটেছে এখন পশ্চিম বাংলায় সিপিএমের ব্যর্থতায় কিংবা অধপতনে ওখানেও কী হিন্দু ফ্যাসিবাদিদের উত্থানের কোনও সম্ভাবনা দেখেন?

মহাশ্বেতা দেবী : বিজেপি, হিন্দু মহাসভা, নরেন্দ্র মোদী এরা সবাই হিন্দু ফ্যাসিবাদী। মোদীর সময়ই গুজরাটে ব্যাপক গণহত্যা হলো। অথচ, টাটা এখন চাইছে মোদী যেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। পশ্চিম বাংলা সরকার মানুষকে বঞ্চিত করে রেখেছে অথচ মোদী অনেক দক্ষ, গুজরাটে অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছেন।

আনু মুহাম্মদ: দক্ষ না হলে ফ্যাসিবাদও হয় না।

মহাশ্বেতা দেবী : ঠিক। সেখানে মুসলমানদের ব্যাপক অত্যাচার হয়েছে। সবরমতিতে হামলা ছাড়াও ৭/৮ বার দাঙ্গা হয়েছে গুজরাটে। নরেন্দ্র মোদী বদমায়েশ কিন্তু তারপরও একধরনের  উন্নয়নের কারণে সে ক্ষমতায় টিকে আছে। ব্রিটিশরাও কিন্তু শোষণ পাকাপোক্ত করতে উন্নয়ন করেছিল। তবে পশ্চিমবঙ্গে কোনওদিনও হিন্দু ফ্যাসিবাদী শক্তির উদ্ভব হবে না। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ এদের সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। একটা সাংস্কৃতিক ভিত তো তৈরি হয়েছে।

আনু মুহাম্মদ : আমার অভিজ্ঞতা হলো, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজও বাংলাদেশ সম্পর্কে কম জানে কিংবা জানার আগ্রহ রাখে না। বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেকের চিন্তা যেন এখানে সাম্প্রদায়িকতা ছাড়া আর কিছুই নাই। এই দূরত্বটা দূর করার উপায় কী?

মহাশ্বেতা দেবী : হ্যাঁ, ওরা বাংলাদেশ সম্পর্কে খুবই কম জানে। বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক ভাবে এটা ঠিক না। তবে দুই বাংলায় যারা মানুষের অধিকারের জন্য কাজ করে তাদের মধ্যে যোগাযোগটা বাড়ানো দরকার। এ জন্য আমাদের সবারই কাজ করতে হবে।

আনু মুহাম্মদ : বাংলাদেশে আমরা ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখি। কিন্তু ভারতে বাংলাদেশের চ্যানেল দেখানো হয় না। তথ্য আদান প্রদানে এটাও তো বড় বাধা। এখান থেকে বইপত্রও অনেক কম যায়। 

মহাশ্বেতা দেবী : এটা একপক্ষীয় ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। যোগাযোগ, তথ্যপ্রবাহ বাড়াতে হবে। আমরা যারা মানুষের জন্য কাজ করছি তারা এটা করার জন্য একত্রিত হচ্ছি।

আনু মুহাম্মদ: বাংলাদেশে অস্তিত্বের জন্য, মুক্তির জন্য, জনগণের সম্পদের উপর জনগণের অধিকারের জন্য যেসব লড়াই হচ্ছে সেখানে প্রতিপক্ষ দেশি শাসক শ্রেণী তো আছেই, তার সঙ্গে আছে বহুজাতিক পশ্চিমা বা ভারতের বৃহৎ পুঁজি। এখন আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত গাটছড়া বেঁধেছে। এদেশে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি বা বহুজাতিক কোম্পানি যেসব কর্মসূচির জন্য চাপ দেয় তার একটা অন্যতম স্বার্থগোষ্ঠী হচ্ছে ভারতের বৃহৎ পুঁজি। এই লড়াইয়ে তো আমরা ভারতে আপনারা যারা মানুষের মুক্তির জন্য, সমতার জন্য কাজ করেন তাদের অংশগ্রহণ চাই। তারজন্য তো ঠিকমতো দুইদেশের এমনকি দক্ষিণ এশিয়া পর্যায়ে জনগণের মধ্যে যোগাযোগ থাকতে হবে। 

এদেশে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি বা বহুজাতিক কোম্পানি যেসব কর্মসূচির জন্য চাপ দেয় তার একটা অন্যতম স্বার্থগোষ্ঠী হচ্ছে ভারতের বৃহৎ পুঁজি। এই লড়াইয়ে তো আমরা ভারতে আপনারা যারা মানুষের মুক্তির জন্য, সমতার জন্য কাজ করেন তাদের অংশগ্রহণ চাই। তারজন্য তো ঠিকমতো দুইদেশের এমনকি দক্ষিণ এশিয়া পর্যায়ে জনগণের মধ্যে যোগাযোগ থাকতে হবে।

মহাশ্বেতা দেবী : খুবই ঠিক। এসবের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনই একমাত্র পথ। এসব বিষয়ে কাজ করবার জন্য আমরা ‘একচেটিয়া আগ্রাসন বিরোধী মঞ্চ’ করেছি। আমি তোমাদের এসব জিজ্ঞাসা, প্রশ্ন সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। ভারতে গিয়ে ওখানকার বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা করব। কারণ এটা দুই দেশের মানুষের স্বার্থেই করা দরকার। আমি সমমনাদের সংগঠিত করার চেষ্টা অবশ্যই করব। এটা আমার জীবনের একটা বড় কাজ।

আনু মুহাম্মদ: আপনি অতীতের মানুষ ও সময় নিয়ে বেশ কয়েকটি উপন্যাস লিখেছেন, ‘কৈবর্ত খন্ড’, ‘ঝাঁসীর রাণী’, ‘কবি বন্দ্যঘটি গাঞির জীবন ও মৃত্যু’…ইলিয়াস ভাইকেও দেখলাম যত তিনি সামনে যাচ্ছেন ততই পেছনে তাকাচ্ছেন। আপনাকে ওনার পরিকল্পনার কথা লিখেছেনও। মৃত্যুর আগে দেখেছি উনি ঢাকা কলেজে খাড়া সিঁড়িতে উঠছেন ক্রাচ দিয়ে, অনেক কষ্ট করে। বাধা দিলে বলেছেন, প্রাকটিস করতে হবে, গড়ে পাহাড়ে ঘুরতে হবে..। আপনি তো জরীপও করেছেন অনেক, বর্তিকা নামে পত্রিকাও প্রকাশ করেছেন। 

মহাশ্বেতা দেবী : ঘুরতেই হবে। আমি বা ইলিয়াস, আমরা তো মানুষকে নিয়ে কাজ করি। তাই মানুষের শক্তির সন্ধান করি। করতে গেলে যেতে হবে মানুষের মধ্যে, অতীতেও। ঠিকই, আমি অনেক জরীপও করেছি। বর্তিকা পত্রিকায় অনেক লেখালেখি রিপোর্ট আছে। তেভাগা বা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিশেষ সংখ্যাও আছে।    

আমি বা ইলিয়াস, আমরা তো মানুষকে নিয়ে কাজ করি। তাই মানুষের শক্তির সন্ধান করি। করতে গেলে যেতে হবে মানুষের মধ্যে, অতীতেও।

আনু মুহাম্মদ : আপনার চিন্তা-ভাবনা ও কাজ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আপনার সাথে আরও অনেক কথা বাকি থাকলো। আজকের মতো শেষ করি ইলিয়াস ভাইকে আপনি যে গানগুলো শুনিয়েছিলেন তার একটি দিয়ে।

মহাশ্বেতা দেবী : কোনটা গাইবো?

আনু মুহাম্মদ : বাহাদুর শাহ জাফর….

মহাশ্বেতা দেবী :  এখন তো আর সেই রকম গাইতে পারব না। সেই গানটাও সেরকম আসবে না। গানটার সব লাইন এখন মনেও নাই। তারপরও চেষ্টা করছি, ‘লাগতা নেহি হে জিমেরা/… মাঙ্গ কর/দোয়ার আরজু মে কাটগায়ি…’।

স্থান: ধানমন্ডি, ঢাকা। ১লা ফেব্রুয়ারি ২০০৯

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •