অ্যাঞ্জেলা ডেভিসের সাথে কথোপকথন-৮
ষাটের দশক থেকে ওবামার যুগ: রাজনৈতিক সংগ্রাম ও প্রতিবাদ আন্দোলন
অনুবাদ: ফাতেমা বেগম
মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদী লেখক ও অধিকার আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তিত্ব অ্যাঞ্জেলা ডেভিসের সাথে লেখক এ্যাক্টিভিস্ট ফ্রাংক বারাত দীর্ঘ আলাপ করেছেন, তাঁর বক্তৃতা সংকলিত করেছেন। এতে মার্কিন সমাজে বৈষম্য, বর্ণবাদী আক্রমণ, ফিলিস্তিনি জনগণ সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের লড়াই নিয়ে অ্যাঞ্জেলা ডেভিসের বক্তব্য পাওয়া যায়। এই সংকলন গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়, নাম: Freedom is a Constant Struggle: Ferguson, Palestine and the Foundations of a Movement| এর অনুবাদ ধারাবাহিকভাবে সর্বজনকথায় প্রকাশিত হচ্ছে। এবারে অষ্টম পর্ব যেখানে অ্যাঞ্জেলা ডেভিসের ডেভিডসন কলেজে দেওয়া বক্তৃতা (১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩) উপস্থাপন করা হয়েছে। অনুবাদ করেছেন ফাতেমা বেগম।
সবাইকে ধন্যবাদ এবং শুভ সন্ধ্যা। ডেভিডসন কলেজে কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস মাস উদযাপনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত এবং সম্মানিত। নর্থ ক্যারোলিনায় আসার সুযোগকে আমি সব সময় স্বাগত জানিয়ে থাকি। কারণ, আমার সংগ্রামী জীবনের কয়েকটা বছর আমি এই প্রদেশে কাটিয়েছি।
সর্বপ্রথম যা উল্লেখ করতে হয় তা হলো, বছরের ক্ষুদ্রতম মাস ফেব্রুয়ারিতে কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস মাস উদযাপিত হওয়ার ব্যাপারে অনেকেই অভিযোগ করেন। কিন্তু এই মাসটাকে কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাসের মাস হিসেবে উদযাপন করার সুনির্দিষ্ট কতগুলো কারণ রয়েছে, যার মধ্যে একটা হলো ফ্রেডারিক ডগলাসের জন্মদিন এই মাসে। আর যখন থেকে আমরা জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ড. মার্টিন লুথার কিংয়ের জন্মদিন পালন শুরু করেছি, তখন থেকে আমাদের ফেব্রুয়ারি মাসের উদযাপন সম্প্রসারিত হয়ে দেড় মাসে পরিণত হয়েছে। দেশে নারীর অধিকার রক্ষার জন্য যেসব কৃষ্ণাঙ্গ নারী গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছেন, তারা নারী ইতিহাস মাস পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস উদযাপন করেন। তাহলে কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস মাস আড়াই মাসে পরিণত হলো। ভালোই তো হলো।
উত্তর আমেরিকা বা আফ্রিকা বা ইউরোপ যেখানেই হোক না কেন, কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস সব সময় প্রতিরোধের চেতনা, বিপ্লবীর প্রতিবাদ এবং রূপান্তরের চেতনায় চালিত হয়। তাই আমি ষাট দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত সামাজিক প্রতিবাদ এবং রূপান্তরের বিষয়ে বক্তব্য রাখার জন্য এখানে আমন্ত্রিত হতে পেরে খুবই আনন্দিত।
উত্তর আমেরিকা বা আফ্রিকা বা ইউরোপ যেখানেই হোক না কেন, কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস সব সময় প্রতিরোধের চেতনা, বিপ্লবীর প্রতিবাদ এবং রূপান্তরের চেতনায় চালিত হয়।
যদিও, অশ্বেতাঙ্গদের ওপর আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধ অতিক্রম করার জন্য সর্বপ্রথম যেসব কৃষ্ণাঙ্গ অসংখ্য ভূমিকা রেখেছিল, কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস মাসে তাদেরকে প্রথমে স্বীকৃতি দেওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস মাসে শুধু তাদেরকে উদযাপন করব না। বরং সবার জন্য স্বাধীনতা অর্জন এবং তা বিকাশকারী শতাব্দীপুরোনো সংগ্রামকে আমরা এই কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস মাসে উদযাপন করব। কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস অবশ্যই আমেরিকার ইতিহাস। তবে এটি পৃথিবীর ইতিহাসও বটে। ২০০৮ সালে ওবামা নির্বাচনে জয়ী হলে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়, তার একটা কারণ ছিল। কৃষ্ণাঙ্গদের ঐতিহাসিক সংগ্রামী চেতনার সঙ্গে চিহ্নিত একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। পৃথিবীর সর্বত্র সেই কারণে আনন্দের ছড়াছড়ি হয়েছিল। কারণ, সর্বত্র মানুষ সেই ঘটনাকে স্বাধীনতার এই টেকসই সংগ্রামের সঙ্গে চিহ্নিত করেছে, সেডরিক রবিনসন যাকে ‘দ্য ব্ল্যাক র্যাডিকেল ট্র্যাডিশন’ বলেছেন।
এটি এমন একটি ঐতিহ্য, যেটাকে মানুষ জাতি, জাতীয়তা বা ভৌগোলিক অবস্থানভেদে সর্বত্র নিজের বলে দাবি করতে পারে। অধিকন্তু, বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট সংহতির সুফল ভোগ করছে আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গরা। ফ্রেডারিক ডগলাস দাস প্রথা বিলোপের সমর্থন আদায়ে ইউরোপ সফর করেছিলেন। আইডা বি ওয়েলস দাসত্ব প্রথার বিরুদ্ধে জনসমর্থন তৈরির জন্য ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড সফর করেছিলেন। তখন কানাডা দাসদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছিল। ফিউজিটিভ স্লেইভ ল (Fugitive slave law)-এর কারণে যখন পালিয়ে যাওয়া দাসদের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও আশ্রয় পাওয়া অসম্ভব ছিল না, তখন কানাডায় পর্যন্ত এই উদ্দেশ্যে পাতাল রেল সম্প্রসারিত হয়েছিল।
এরপর স্কটসবরো নাইন নিয়ে আলাপ করতে পারি। ১৯৩০ এবং ১৯৪০-এর দশকে স্কটসবরো নাইনকে মুক্ত করার সংগ্রামে আমার মা যুক্ত ছিলেন। এ ব্যাপারে একটি আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন হয়েছিল। তবে স্কটসবরো নাইনের শেষ ব্যক্তি মুক্তি পেতে পেতে বহু দশক লেগে গিয়েছিল। ১৯৫০-এর দশকে উত্তর ক্যারোলিনায় ‘কিসিং কেইস’ নামে এক কুখ্যাত মামলা হয়েছিল। ১৯৫৮ সালে উত্তর ক্যারোলিনার মনরো শহরে ছয় বছর বয়সি এক কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেশিশু তার খেলার সাথি এক সাদা মেয়েশিশুকে চুমু দিয়েছিল। ধর্ষণের চেষ্টা করার অভিযোগে সেই শিশুছেলেটিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই ঘটনাটির সমালোচনা ইউরোপের মিডিয়া পর্যন্ত ছড়িয়েছিল, যার ফলে সেই শিশুছেলেটি মুক্তিলাভ করে। আরও অনেক রাজনৈতিক বন্দি আন্তর্জাতিক সংহতির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছিলেন। আমিও তাদের মধ্যে একজন।
১৯৫০-এর দশকে উত্তর ক্যারোলিনায় ‘কিসিং কেইস’ নামে এক কুখ্যাত মামলা হয়েছিল। ১৯৫৮ সালে উত্তর ক্যারোলিনার মনরো শহরে ছয় বছর বয়সি এক কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেশিশু তার খেলার সাথি এক সাদা মেয়েশিশুকে চুমু দিয়েছিল। ধর্ষণের চেষ্টা করার অভিযোগে সেই শিশুছেলেটিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
আমি যখন জেলে ছিলাম তখন বিশ্বের সর্বত্র আমার মুক্তির দাবিতে আওয়াজ উঠেছিল। এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, ইউরোপ, সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া, পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানি। আপনারা প্রফেসর কাপলানের কাছ থেকে শুনলেন… মুমিয়া আবু জামালের চলমান কেইসটির কথা, যার দুর্দশার বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোপে বেশি মাত্রায় জনগণের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ব্ল্যাক প্যানথার পার্টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঘটনাটি শুধু যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তরুণ-তরুণীদের মন জয় করেছিল তা নয়; এই দেশের প্রতিটি বড় শহরে ব্ল্যাক প্যানথার পার্টির শাখা ছিল।
আগামী সোমবার উইনস্টন-সালেমে ব্ল্যাক প্যানথার পার্টির সভাপতি কথা বলবেন। নিউজিল্যান্ডের মতো জায়গায় ব্ল্যাক প্যানথার পার্টি গঠিত হয়েছিল। নিউজিল্যান্ডে মাওরি গোষ্ঠী বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছিল। এই মাওরি গোষ্ঠী সেখানে ব্ল্যাক প্যানথার পার্টি গঠন করেছিল। সেরকম, ব্রাজিলে, ইসরায়েলেও ব্ল্যাক প্যানথার পার্টির জন্ম হয়েছে।
ব্ল্যাক প্যানথার পার্টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঘটনাটি শুধু যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তরুণ-তরুণীদের মন জয় করেছিল তা নয়; এই দেশের প্রতিটি বড় শহরে ব্ল্যাক প্যানথার পার্টির শাখা ছিল।
তাই আমাদের চিন্তা করতে হবে, প্রতিবাদ ও সংগ্রামের বৃহত্তর পরিসরে ব্ল্যাক প্যানথার পার্টি কীভাবে জন্ম নিয়েছিল। সারা বিশ্বের মানুষ কৃষ্ণাঙ্গ স্বাধীনতা আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের দেশে নিজেদের নিপীড়ক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। আমাদের দেশের সংগ্রাম এবং অন্যান্য দেশের সংগ্রামের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক এবং সৌহার্দমূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কৃষ্ণাঙ্গ স্বাধীনতাসংগ্রাম দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক স্বাধীনতা সংগ্রামকে আংশিকভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। দেশের সবচেয়ে বৈষম্যমূলক শহর বার্মিংহাম এবং আলাবামাতে আমি বেড়ে উঠেছি। আমি দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কে জানতে পারছিলাম। কারণ, বার্মিংহাম শহরকে দক্ষিণের জোহানেসবার্গ বলা হতো। বর্ণ প্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রামে ড. মার্টিন লুথার কিং গান্ধীর অহিংস নীতি অনুসরণ করেছেন। এবং ভারতে ইতঃপূর্বে অস্পৃশ্য বলে পরিচিত দলিত এবং যারা জাত প্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, তারা আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছেন। ষাটের দশকে ফ্রিডম রাইডার্স যেভাবে পৃথকীকৃত বাসে চড়েছিল, সম্প্রতি তরুণ প্যালেস্টাইনিরা ফিলিস্তিনের দখলকৃত অঞ্চলে সেরকম ফ্রিডম রাইডসের আয়োজন করেছে এবং ১৯৬০ সালে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটদের গ্রেফতার করার মতো প্যালেস্টাইনিদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের প্রকল্পের নাম প্যালেস্টিনিয়ান ফ্রিডম রাইডস।
কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাসকে আমাদের আরও বৃহত্তর পরিসরে বিবেচনা করা উচিত। দেশের ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের সামষ্টিক সম্পর্ককে গভীরভাবে বিকৃত করা হয়েছে। আপনাদের অনেকের পরিচিত উইলিয়াম ফকনারের সেই উদ্ধৃতিটি বারবার বলছে: ‘অতীত কখনো মৃত নয়। অতীত কখনো মৃত নয়। এমনকি অতীত বলে কিছু নেই।’ এবং আমরা অতীতের ভূতের সঙ্গে বাস করছি। আমরা দাসত্বের ভূতের সঙ্গে বসবাস করছি। মুক্তির ঘোষণার ১৫০তম বার্ষিকীকে এই ২০১৩ সালে এসে কেন মহাসমারোহে উদযাপন করছি না, সেটা ভেবে অবাক হচ্ছি। আপনাদের কাছে কি সেটা অদ্ভুত মনে হয় না? আমি শুনেছি, ওবামা ১৩ ডিসেম্বর মুক্তির ঘোষণা দিবস উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কেউ তা করেছে বলে আমি জানি না। আপনারা কি জানেন? তো, আমি ভাবছি, ১৫০তম মুক্তির ঘোষণা দিবস পালিত হলে সেখানে ১৩তম সংশোধনীর ব্যাপারটি কীভাবে উল্লেখ করা হবে? হয়তো আরেকটা মুভি দেখানো হবে।
‘অতীত কখনো মৃত নয়। অতীত কখনো মৃত নয়। এমনকি অতীত বলে কিছু নেই।’ এবং আমরা অতীতের ভূতের সঙ্গে বাস করছি। আমরা দাসত্বের ভূতের সঙ্গে বসবাস করছি।
তাই আমি এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অতীতের ভূতকে অন্বেষণ করব। আমাকে ষাটের দশকের প্রতিবাদ আন্দোলনের ব্যাপারে বলতে বলা হয়েছে। ঊনবিংশ শতকে দাসত্ব পুরোপুরি বিলুপ্ত হলে মধ্য শতাব্দীতে সেই প্রতিবাদী আন্দোলনের প্রয়োজন থাকত না। ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন’-এর অধিকাংশ অংশগ্রহণকারীরা সেই আন্দোলনকে ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’ হিসবে বিবেচনা করেছে। স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকারের মধ্যে মজার একটি বিচ্ছিন্নতা আছে। মনে হয় যেন নাগরিক অধিকার সম্পূর্ণ স্বাধীনতার ব্যাপারটিকে দখল করে ফেলছে এবং স্বাধীন হওয়ার একমাত্র উপায় বিদ্যমান সামাজিক কাঠামোর মধ্যে নাগরিক অধিকার অর্জন। যদি ১৮৬৩ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা বা ১৮৬৫ সালে ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে দাস প্রথার বিলুপ্তি ঘটত, তাহলে কৃষ্ণাঙ্গরা নাগরিকত্বের পূর্ণ ও সমান মর্যাদা পেত এবং নতুন কোনো আন্দোলনের প্রয়োজন হতো না।
যদি ১৮৬৩ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা বা ১৮৬৫ সালে ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে দাস প্রথার বিলুপ্তি ঘটত, তাহলে কৃষ্ণাঙ্গরা নাগরিকত্বের পূর্ণ ও সমান মর্যাদা পেত এবং নতুন কোনো আন্দোলনের প্রয়োজন হতো না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে লুক্কায়িত যুগ হচ্ছে র্যাডিকেল পুনর্গঠনের সময়কাল। এটা সত্যিকার অর্থেই একটা র্যাডিকেল সময় ছিল। তখন নির্বাচিত কৃষ্ণাঙ্গ কর্মকর্তা ছিলেন। তারপর তাদেরকে আবার ফিরে পেতে এক শতাব্দীরও বেশি সময় লেগেছে। সেই সময় গণশিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছিল। এই দেশের মানুষ এখনো অজ্ঞ যে, পূর্ববর্তী কৃষ্ণাঙ্গ দাসরাই দক্ষিণ আমেরিকায় গণশিক্ষার সূচনা করেছিল। কৃষ্ণাঙ্গদের বিরামহীন সংগ্রাম ছাড়া দক্ষিণের শ্বেতাঙ্গ শিশুদের শিক্ষার সুযোগ হতো না। কারণ, শিক্ষা এবং স্বাধীনতাকে সম্পূরক হিসেবে দেখা হয়েছিল। শিক্ষা বাদ দিয়ে স্বাধীনতা নয়। এ ছাড়া এই সংক্ষিপ্ত সময়কালে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। আমি ১৮৬৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত র্যাডিকেল পুনর্গঠনের সময়কালের কথা বলছি। বিভিন্ন প্রদেশের আইনসভায় কৃষ্ণাঙ্গ সদস্য ছিলেন এবং অনেক প্রগতিশীল আইন পাস হয়েছে। এই প্রগতিশীল আইনগুলো শুধু বর্ণবিদ্বেষের সমস্যাসংক্রান্ত ছিল না, নারী অধিকারের ব্যাপারেও আইন পাস হয়েছিল।
যদি আমরা স্বাধীনতা ঘোষণার ১৫০ বছর পূর্তি এবং কয়েক বছর পর ১৩তম সংশোধনীর দেড় শ বর্ষপূর্তি উদযাপন করতে পারি, তাহলে স্কুল থেকে পোস্টগ্র্যাজুয়েট পর্যায় পর্যন্ত প্রতিজনের ডব্লিউ ই বি ডু বয়েস-এর লিখিত ব্ল্যাক রিকনস্ট্রাকশন বইটি পড়া উচিত। ১৮৬০-এর দশকে যে সমস্যাগুলোর সমাধান হওয়া উচিত ছিল, ১৯৬০-এর দশকে আমরা সেই সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছি। ২০৬০ সালে তাহলে কী ঘটতে পারে? মানুষ কি তখনো একই সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে? ভবিষ্যতের ইতিহাস যেন আমাদের জীবনকালের মধ্যে আটকে না থাকে, সেই নিয়ে ভাবা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মাঝে মাঝে মানুষ বলে, যদি এত লম্বা সময় লাগে, তাহলে তো মরেই যাব। তাতে কী? সবাইকে তো মরতেই হয়, তাই না? আমি স্মরণ করছি ফ্রেডারিক ডাগলেস বা আইডা বি ওয়েলসকে, যারা ঝুলিয়ে হত্যার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। তাদের মতো যারা দাস প্রথা বিলুপ্তির জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, তারা যদি তাদের অবদানকে ব্যক্তিগত সংকীর্ণতার মধ্যে দেখতেন, তাহলে আজ আমরা কোথায় থাকতাম? তাই আমাদের জীবনসীমার বাইরের ভবিষ্যৎ কল্পনা করা শিখতে হবে। আমাদের শিখতে হবে, আমরা আমাদের নিজের জীবনকালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নই।
১৮৬০-এর দশকে যে সমস্যাগুলোর সমাধান হওয়া উচিত ছিল, ১৯৬০-এর দশকে আমরা সেই সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছি। ২০৬০ সালে তাহলে কী ঘটতে পারে? মানুষ কি তখনো একই সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে? ভবিষ্যতের ইতিহাস যেন আমাদের জীবনকালের মধ্যে আটকে না থাকে, সেই নিয়ে ভাবা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৭০-এর দশকে নর্থ ক্যারোলিনায় কু ক্লাক্স ক্ল্যানের আধিপত্য বিরাজ করছিল। আমি তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। নৈশভোজে আমি সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করছিলাম। প্রত্যেক প্রদেশ এবং শহরের প্রবেশমুখে বড় বিলবোর্ডে কু ক্লাক্স ক্ল্যানের নাইটসদের ছবি লাগানো ছিল। তারা ছবিতে আগন্তুকদের স্বাগত জানাচ্ছিল। কু ক্লাক্স ক্ল্যানের সদস্যরা তাদের পোশাক পরে জনসম্মুখে হাজির হয়েছিলেন। ‘ন্যাশনাল এলায়েন্স আগেনস্ট রেইসিস্ট অ্যান্ড পলিটিক্যাল’ নামে বহুজাতিসংবলিত সংগঠনের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম। সেই সূত্রে আমি দুটি প্রধান প্রতিবাদী মিছিল সংগঠিত করেছিলাম। আমাদের কিছু শ্বেতাঙ্গ কর্মী কু ক্লাক্স ক্ল্যানদের বারে ঘোরাফিরা করে ক্ল্যানদের পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছিল। ’৬০ ও ৭০-এর দশক পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর কু ক্লাক্স ক্ল্যানদের সহিংসতার ইতিহাস থেকে আমাদের আশঙ্কা হচ্ছিল যে, তারা আমাদের প্রতিও সহিংস হতে পারে।
আমাদের জীবনসীমার বাইরের ভবিষ্যৎ কল্পনা করা শিখতে হবে। আমাদের শিখতে হবে, আমরা আমাদের নিজের জীবনকালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নই।
কু ক্লাক্স ক্ল্যানকে সামগ্রিকভাবে বর্ণবাদিতার, জাতিগত পৃথকীকরণের প্রতীক হিসেবে ভাবতে গিয়ে আমরা মনে করি, দাসব্যবস্থার মধ্যদিয়ে তাদের উত্থান হয়েছে। কিন্তু তাদের উত্থান হয়েছে দাস প্রথার পরে, ব্ল্যাক র্যাডিকেল রিকনস্ট্রাকশনেরও পরে। সেই সময় স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অপরাধে ঐতিহাসিকভাবে যাদের পরাধীন এবং শৃঙ্খলিত করা হয়েছিল, তাদের কাছে তখন এর অর্থ কী ছিল? তাদের মধ্যে অনেকে এসব দেখতে চায়নি। অবশ্যই তাদের মধ্যে কেউ কেউ দাসত্বকে বহাল রাখতে চেয়েছিল। তবে কৃষ্ণাঙ্গদের মুক্ত করতে অনেক কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল।
কু ক্লাক্স ক্ল্যানের সন্ত্রাস কিংবা দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদের বাধ্যতামূলক শ্রমিক হিসেবে ইজার দেওয়ার ঘটনার মতো কৌশলগুলো যদি অবলম্বন করা না হতো, তবে কৃষ্ণাঙ্গরা এই দেশে সবার জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে আরও বেশি সফল হতে পারত। দাস প্রথার পর যদি কৃষ্ণাঙ্গরা পূর্ণ নাগরিকত্ব লাভ করত, তাহলে ১৮৬০ সালে সংগ্রামের কোনো প্রয়োজনই হতো না। কিন্তু আমরা যখন ৫০ এবং ৬০-এর দশকে দক্ষিণের সংগ্রাম, বিশেষ করে মন্টগোমারি বাস বর্জনের দিকে খেয়াল করি, তখন ড. মার্টিন লুথার কিং আমাদের উদ্দীপিত করেন। রোজা পার্কের সঙ্গে সঙ্গে জো অ্যান রবিনসনকেও মনে করতে হবে। জো অ্যান ‘দ্য মন্টগোমারি বাস বয়কট অ্যান্ড দ্য উইমেন হু স্টারটেড ইট’ বইটির লেখক ছিলেন। আমি যতবার কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস মাসে বক্তব্য রাখি, ততবারই ক্লান্তিহীনভাবে সবাইকে স্মরণ করাই যে, এই আন্দোলন এক বা দুজনের অবদান নয়। প্রকৃতপক্ষে, সম্মিলিত এই আন্দোলনে বেশিরভাগ ছিলেন নারী। এই কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা ছিলেন দরিদ্র, গৃহপরিচারিকা, ধোপা এবং রাঁধুনি। তারা সম্মিলিতভাবে বাসে চড়তে অস্বীকার করেছিলেন।
আমি যতবার কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস মাসে বক্তব্য রাখি, ততবারই ক্লান্তিহীনভাবে সবাইকে স্মরণ করাই যে, এই আন্দোলন এক বা দুজনের অবদান নয়। প্রকৃতপক্ষে, সম্মিলিত এই আন্দোলনে বেশিরভাগ ছিলেন নারী। এই কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা ছিলেন দরিদ্র, গৃহপরিচারিকা, ধোপা এবং রাঁধুনি।
তারা সেই মানুষ, যারা একটি ভিন্ন বিশ্ব কল্পনা করেছিলেন। যাদের অবদানের জন্য আজ আমরা বর্তমানে বসবাস করতে পারছি। আমাদের তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। তাদের একজন ক্লডেট কলভিন, যিনি ‘টোয়াইস টুওয়ার্ড জাস্টিস’ নামে অসাধারণ একটি বই লিখেছিলেন। আপনাদের সবার এই বইটি পড়া উচিত। কারণ, রোজা পার্ক অ্যাকশন নেওয়ার আগেই ক্লডেট কলভিন বাসের পেছনে গিয়ে বসতে অস্বীকার করেছিলেন। ক্লডেট কলভিনকে তাই আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমরা অনেক সময় ব্যক্তিবাদীদের মতো চিন্তা করি। আমরা মনে করি, শুধু বীর ব্যক্তিরাই ইতিহাস রচনা করেন। এই কারণেই আমরা ড. মার্টিন লুথার কিংয়ের ওপর বেশি মনোযোগ দিই। তিনি একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন; কিন্তু তার এই মাহাত্ম্য তিনি একটি সম্মিলিত আন্দোলন থেকে শিখেছিলেন। সেই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তিনি নিজের মধ্যে রূপান্তর ঘটিয়েছিলেন। নিপীড়িত জনগণকে মুক্ত করার আন্দোলনে তিনি নিজেকে একক ব্যক্তি হিসেবে দেখেননি।
এরপর অবশ্যই সিক্সটিনথ স্ট্রিট ব্যাপটিস্ট চার্চে বোমা নিক্ষেপের ব্যাপারটি বলতে হবে। সেই রোববার সকালে আলাবামার বার্মিংহামে ক্যারোল রবার্টসন, সিনথিয়া ওয়েসলি, এড্ডি মায় কলিন্স এবং ডেনিস ম্যাকনেয়ারকে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের একটি বড় আকারের প্রতীকী বার্তা হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ছেঁটে ফেলা, যেন তারা বড় হয়ে কখনো মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ না পান। আর এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা নিহত হওয়ার কয়েক মাস আগে শিশুদের প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বার্মিংহামে শিশুদের প্রতিবাদ মিছিলে সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্তে শিশুরা পুলিশ, ফায়ারম্যানদের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পানিবিদ্ধ করার যন্ত্র এবং প্রশিক্ষিত কুকুরদের মুখোমুখি হয়েছিল। শিশুরা ন্যায়বিচার দাবি করছিল। এই ধরনের প্রতিবাদের ভূমিকা মুছে যায়, যখন আমরা শুধু একক ব্যক্তির ব্যাপারে মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হই।
চলুন, কৃষ্ণাঙ্গ স্বাধীনতা আন্দোলন, নাগরিক অধিকার আন্দোলনের বিষয়ে ফেরা যাক। স্বাধীনতা আন্দোলন একটি ব্যাপক ব্যাপার ছিল। সারা দেশকে রূপান্তরিত করার আন্দোলন ছিল। এটা শুধু একটি নির্দিষ্ট অপরিবর্তনীয় কাঠামোর মধ্যে নাগরিক অধিকার আদায়ের ব্যাপার ছিল না। নাগরিক অধিকারের ছোট ফ্রেমের সঙ্গে খাপ খায় এমন একটি ঐতিহাসিক স্মৃতি তৈরি করার উদ্দেশ্যে সেই আন্দোলনকে সহযোজিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি কিন্তু বলছি না যে, নাগরিক অধিকার আদায়ের সংগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বন্দিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম একটি নাগরিক অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। কাজেই আমি বলছি না যে, নাগরিক অধিকার আদায়ের সংগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের প্রেক্ষিতে বিবাহে সমতা আদায়ের সংগ্রাম একটি নাগরিক অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। কিন্তু তারপরও নাগরিক অধিকার আদায়ের চেয়ে স্বাধীনতাসংগ্রামের ব্যাপ্তি অনেক বেশি। ষাটের দশকে আমাদের অনেকেই জোর দাবি করেছিল যে, সামাজিক অংশগ্রহণের স্বার্থে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার আদায় করাই শুধু স্বাধীনতা সংগ্রাম নয়। বরং প্রায় চল্লিশ একর এবং একটি খচ্চরের যে প্রতিশ্রুতি, উনিশ শতকে বিলোপবাদী এজেন্ডা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তারও সংগ্রাম এটি। এই সংগ্রামের উদ্দেশ্য ছিল আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন।
এই সংগ্রাম ছিল প্রকৃত স্বাধীনতার সংগ্রাম। অবৈতনিক শিক্ষা, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, সাশ্রয়ী বাসস্থানের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। এই সমস্যাগুলো উনিশ শতকে বিলোপবাদের এজেন্ডায় স্থান পাওয়া উচিত ছিল। অথচ আমরা এই একুশ শতকে এসেও বলতে পারছি না যে, আমাদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, সাশ্রয়ী বাসস্থান আছে। শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে একটি বাজারের পণ্যে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা এতটাই বাণিজ্যিক পণ্য হয়েছে যে, অনেকে জানেনই না, জ্ঞান আহরণের পদ্ধতিটি কী। কারণ, ভবিষ্যতে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে শিক্ষা নিয়ন্ত্রিত। সুতরাং অবৈতনিক শিক্ষা, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, সাশ্রয়ী বাসস্থানের অধিকার আদায়ের জন্য ছিল এই স্বাধীনতাসংগ্রাম। কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়গুলোতে বর্ণবাদী পুলিশের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ছিল এই স্বাধীনতাসংগ্রাম। ব্ল্যাক প্যানথার পার্টিও কিছু দাবি ঘোষণা করেছিল।
এই সংগ্রাম ছিল প্রকৃত স্বাধীনতার সংগ্রাম। অবৈতনিক শিক্ষা, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, সাশ্রয়ী বাসস্থানের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। এই সমস্যাগুলো উনিশ শতকে বিলোপবাদের এজেন্ডায় স্থান পাওয়া উচিত ছিল। অথচ আমরা এই একুশ শতকে এসেও বলতে পারছি না যে, আমাদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, সাশ্রয়ী বাসস্থান আছে।
আমি ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ড শহরে থাকি। এই শহরে ১৯৬৬ সালে ‘ব্ল্যাক প্যানথার পার্টি’ গঠিত হয়েছিল। এখনো পুলিশি বর্ণবাদ ও পুলিশি সহিংসতা আমাদের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা। একটি হাইস্কুলের সামনে সম্প্রতি পুলিশ একজন তরুণকে হত্যা করেছিল। অল্প কিছুদিন আগে আমি সেই নিহত তরুণের সতেরোতম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনে কথা বলেছি। তারপর মনে করুন ট্রাভিয়ন মার্টিনের হত্যাকাণ্ড। তিনিও ১৮ বছর বয়সি ছিলেন। আপনারা কয়জন ব্ল্যাক প্যানথার পার্টির দশ দফা দাবির সঙ্গে পরিচিত?
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বৃহত্তর সংগ্রামের সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলনের কিছু মুহূর্ত খুব সহজেই সম্পর্কিত করা যায়। আরও কিছু মুহূর্ত সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। এটা একটা চমকপ্রদ ব্যাপার। এই দেশে একজন ব্যক্তিকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি মার্টিন লুথার কিংয়ের নাম জানেন না। সারা বিশ্বে অল্প কিছু মানুষ পাওয়া যাবে, যারা মার্টিন লুথার কিংয়ের নাম জানেন না। এটি একটি চমৎকার ব্যাপার। তারা মার্টিন লুথার কিংয়ের কথাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করেন: ‘আমি ন্যায়বিচার, শান্তি এবং ন্যায়পরায়ণতার জন্য ড্রাম মেজর ছিলাম।’ এই ভুল উদ্ধৃতিটি তারা সম্ভবত মুছে ফেলবে। তিনি আসলে বলেছিলেন: ‘আপনারা যদি আমাকে ড্রাম মেজর বলতে চান, তাহলে বলুন, আমি শান্তির জন্য একজন ড্রাম মেজর ছিলাম। তাহলে বলুন, আমি ন্যায়বিচার ও ন্যায্যতার জন্য ড্রাম মেজর ছিলাম।’ স্মৃতিস্তম্ভটি দারুণ একটা ব্যাপার। মার্টিন লুথার কিং দিবসে ওবামার দ্বিতীয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এনডি শ্যাল্লালের আয়োজনে মোস ডে এবং সুইট হানির রক মিউজিকের সঙ্গে শান্তি উদ্বোধন নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। বল শেষ করে আমরা স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে গেলাম। আমি বুঝতে পারিনি যে, এই স্তম্ভ আমার অনুভূতিকে এতটা আন্দোলিত করবে। রাত ২টা ৩০ মিনিটে জনশূন্য স্তম্ভের দেওয়ালে হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম এবং দেওয়ালের গায়ে লিখিত উদ্ধৃতিগুলো পড়ছিলাম। দারুণ এক অনুভূতি! আমাকে তখন ভাবতে হয়েছিল যে, আমরা নিঃসন্দেহে অনেকদূর এগিয়েছি। কিন্তু একইসঙ্গে আমরা অনেকটা পশ্চাৎমুখীও হয়েছি। তাহলে একই সময়ে আমাদের অগ্রগতি এবং পশ্চাদ্গমনকে আপনারা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? আমি এই জন্য এই বিষয়টি উল্লেখ করছি যে, অনেকে ব্ল্যাক প্যানথার পার্টির দশ দফা দাবি দেখার সুযোগ পাননি। আজও সেই দশ দফা দাবি গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকান গণতন্ত্রের সরকারি ব্যাখ্যার মধ্যে লড়াইয়ের সেই দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যেগুলোকে সফল বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। কাজেই কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় নাগরিক অধিকার পেয়েছে। নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য আর কোনো সংগ্রাম প্রয়োজন নেই। তাই স্বাধীনতার সংগ্রামকে অতীতে পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এটাই সত্যি।
আমি প্রথমে দশ দফা পাঠ করে শোনাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি আপনাদের গুগল থেকে ‘টেন-পয়েন্ট প্রোগ্রাম ব্ল্যাক প্যানথার পার্টি’ দেখে নিতে বলব। সেখানে দশ দফার মধ্যে আপনারা পাবেন: ‘আমরা কৃষ্ণাঙ্গ এবং শোষিতদের জন্য পরিপূর্ণভাবে বিনা খরচের স্বাস্থ্যসেবা চাই।’ এই পয়েন্টটি এমন এক সময়ে পড়ছি যখন সবাই স্বাস্থ্যসেবা সংকটে ভুগছে। ওবামা এই স্বাস্থ্যসেবা চালু করেছেন, যা আসলে তেমন কিছু পরিবর্তন আনেনি। আরেকটি পয়েন্ট পাবেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল, রাজ্য, জেলা, শহর, সামরিক কারাগার এবং জেলখানার সব কৃষ্ণাঙ্গ ও শোষিতের মুক্তি চাই।’ প্রফেসর কাপলানের তথ্য থেকে জানা যায়, ২৫ লাখ এখন কারাগারে বন্দি আছেন। মিশেল আলেক্সান্ডার জানান, ১৮৫০ সালের তুলনায় বর্তমান একুশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে সংশোধনাত্মক এজেন্সির অধীন আরও বেশি কৃষ্ণাঙ্গ কারাবন্দি আছেন।
ষাট দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত সামাজিক প্রতিবাদ…ইতিহাসের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে বা ইতিহাসে নিজেদের অবস্থান খুঁজে পেতে যদি আমাদের অসুবিধা হয়, তাহলে একই ধরনের সমস্যা আমরা বর্তমান গণ-আন্দোলনের ক্ষেত্রেও দেখতে পাব। গণমাধ্যমের নানা প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে আমাদের গণ-আন্দোলনের ঘটনাগুলো মামুলি খবরে পরিণত হয়। অবস্থাটা এমন যে, একেবারে সাম্প্রতিককালের, মাত্র এক বছর আগের অকুপাই আন্দোলনটাকেও ইতিহাসের বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। ওই আন্দোলনটা এমন একটি শক্তি নিয়ে জেগে উঠেছিল এবং আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতটাই এমন ছিল যে, মিশর, তিউনিশিয়া থেকে শুরু করে, এমনকি উইসকনসিনের সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের সঙ্গে এর যোগসূত্র তৈরি হয়েছিল। ওই সময়ে এই যোগসূত্রগুলো কিন্তু খুব পরিষ্কার ছিল। আর তারপর তো এই দেশের সব কটি বড় শহরে এবং অনেক ছোট শহরে আন্দোলনের শিবির স্থাপিত হয়েছিল, আন্দোলনের শিবির স্থাপিত হয়েছিল বিশ্বজুড়েই।
মাত্র এক বছর আগের অকুপাই আন্দোলনটাকেও ইতিহাসের বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। ওই আন্দোলনটা এমন একটি শক্তি নিয়ে জেগে উঠেছিল এবং আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতটাই এমন ছিল যে, মিশর, তিউনিশিয়া থেকে শুরু করে, এমনকি উইসকনসিনের সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের সঙ্গে এর যোগসূত্র তৈরি হয়েছিল।
প্রকৃতপক্ষে, ফিলাডেলফিয়া শহরের আমার দখলকৃত জায়গায় আমার সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছিল (উল্লাসধ্বনি এবং হাততালি)। ফিলাডেলফিয়া, নিউইয়র্ক এবং ওকল্যান্ডে অসাধারণ এক মিছিলে অংশ নিয়ে আমরা পোর্ট বন্ধ করেছিলাম। বার্লিন এবং লন্ডনেও গিয়েছি। অকুপাই আন্দোলন অদ্যাবধি একটি সম্ভাবনাময় ভূমিকা রেখে চলেছে। আমরা নিজেদের সেই আন্দোলনের প্রতিশ্রুতি স্মরণ করাতে চাই। আমরা খুব সহজেই সেটা ভাবতে পারি না। কারণ, অল্প কিছু জায়গা ছাড়া আন্দোলনের শিবিরগুলো আর নেই। তবে এটা ভাবাও ভুল হবে যে, শতকরা ৯৯ জনের আন্দোলন ভেঙে গিয়েছে। আমরা কি অল্প সময়ে অনেক কিছু শিখিনি? অকুপাই আন্দোলনের ফলে আমরা পুঁজিবাদের ব্যাপারে জনসম্মুখে উন্মুক্ত আলোচনা করতে সক্ষম হয়েছি। ১৯৩০-এর দশক থেকে এমন আলোচনা অসম্ভব ছিল। কাজেই আমাদের এই নতুন সম্ভাবনা উদ্যাপন করা উচিত এবং অকুপাই আন্দোলনের কারণে আমরা যে এখনো একটি রাজনৈতিক অবস্থান দাবি করতে পারছি, তা উপলব্ধি করা উচিত। আমাদের ভাবা উচিত নয় যে, এখন আন্দোলনের তাঁবুগুলো উঠে গেছে। এখনো অনেক টিকে আছে। বিশেষ করে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রচুর সক্রিয়তা রয়েছে। সম্প্রতি বারাক ওবামা পুনরায় নির্বাচিত হলেন। ইতোমধ্যে, যারা ওবামাকে দেশের মুক্তিদাতা হিসেবে আশা করেছিলেন, তারা বুঝেছেন যে, উনি শুধু একজন প্রেসিডেন্টই ছিলেন। শুধুই বর্ণবাদী, সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্ট তিনি। আমরা সবাই আশা করছি, এই টার্মে আগের চেয়ে ভালো কিছু হোক। তবে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে এবং নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজ করে যেতে হবে।
যারা ওবামাকে দেশের মুক্তিদাতা হিসেবে আশা করেছিলেন, তারা বুঝেছেন যে, উনি শুধু একজন প্রেসিডেন্টই ছিলেন। শুধুই বর্ণবাদী, সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্ট তিনি।
নির্বাচন থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। অবিস্মরণীয় এক অভিজ্ঞতা। প্রথম নির্বাচনের চেয়ে এবার আরও বেশি। প্রথম নির্বাচনের সময় বেশিরভাগ ব্যক্তি দূরদৃষ্টিহীনভাবে প্রার্থীর প্রতি মনোযোগী ছিলেন। এবার নির্বাচনে আমরা অনেকেই আশঙ্কা করছিলাম যে, রিপাবলিকান প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেন এবং রাজনীতিতে বিপর্যয় ঘটাতে পারেন। আমি সবাইকে বলেছিলাম, রোমনির বিদায়ি ভাষণ না শোনা পর্যন্ত ঘুমাতে যাব না। ২০০০ সালে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ভেবেছিলাম, আল গোর নতুন প্রেসিডেন্ট হবেন। কিন্তু সকালে পরবর্তী আট বছরের দুঃস্বপ্ন নিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। রোমনি কিন্তু তার বিদায়ি বক্তব্য লেখেননি। তিনি শুধু তার বিজয়ী বক্তব্য লিখে রেখেছিলেন। তাই বিদায়ি ভাষণ দিতে একটু সময় লেগেছিল। আমরা দেখেছিলাম তরুণ, কৃষ্ণাঙ্গ, ল্যাটিনো মানুষ ভোটার দমনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তারা ভোট দেওয়ার জন্য ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছেন। আপনারা হয়তো ভেবেছেন, মুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় এটি প্রথম নির্বাচন ছিল। আসুন, সেই অতীত নির্বাচনের উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনাটি ভুলে না যাই। এই ঘটনা দেখায়, আমাদের দেশ কী এবং আমরা কী অর্জন করতে পারি।
আসুন, লিঙ্গবৈষম্য সম্পর্কে কথা বলা যাক: পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি নারী ওবামাকে ভোট দিয়েছিলেন। কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের শতকরা ৯৬ ভাগই ওবামাকে ভোট দিয়েছিলেন। এবং কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের শতকরা ৮৭ ভাগ ওবামাকে ভোট দিয়েছিলেন। শতকরা ৭৬ ভাগ ল্যাটিনো নারী ওবামাকে ভোট দিয়েছিলেন, যেখানে ল্যাটিনো পুরুষের সংখ্যা ছিল শতকরা ৬৫ ভাগ। প্রশ্ন হলো: অধিকাংশ সাদা পুরুষ কেন রোমনিকে ভোট দিয়েছিলেন? এটি একটি ভীতি-উৎপাদক ব্যাপার। সত্যি ভীতি-উৎপাদক ব্যাপার। এই ঘটনা বর্ণবাদিতার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। কিন্তু একইসঙ্গে আমরা লক্ষ করলাম যে, জাতীয় এজেন্ডায় সাদা পুরুষের একচ্ছত্র প্রভাব আর কাজ করেনি। এটি বিশাল এক বিজয়। ঘটনাক্রমে আপনারা কেউ সাদা পুরুষ হলে নিজেদের সেই ‘সম্মিলিত পুরুষ’-এর সঙ্গে এক করে ভাববেন না।
আমি এখন অভিবাসী অধিকার সম্পর্কিত অভিযান সম্পর্কে যে কিছু কথা আগে বলেছিলাম, তার পুনরাবৃত্তি করতে চাই। প্রথমত, ওবামার বিরুদ্ধে একটি গুরুতর সমালোচনা হিসেবে আমি এই ব্যাপারটি উল্লেখ করতে চাই। ওবামার বিরুদ্ধে আমার অনেক সমালোচনা আছে। আমি মনে করি, ইতোমধ্যে গুয়ান্তানামো বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। এবং আফগানিস্তানে আমাদের অভিযান করা উচিত ছিল না। একইসঙ্গে আমি একটি নারীবাদী পদ্ধতির ব্যবহার করে পরস্পর বিরোধিতাকে ব্যাখ্যা করতে চাই, যাতে আমি একইসঙ্গে ওবামার সমর্থক হতে পারি এবং তার কঠিন সমালোচকও হতে পারি।
অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে আমি আমাদের রাজনৈতিক বক্তব্যটি এতটা সাদামাটা হয়ে ওঠার সমালোচনা করছি। উদাহরণস্বরূপ, আমরা এমনকি শ্রমিকশ্রেণির ব্যাপারে আর কথা বলতে পারি না। কখন থেকে হঠাৎ প্রত্যেকে ‘মধ্যবিত্ত’ হয়ে গেল? এমনকি আমাদের মধ্যে যারা আসলেই ‘মধ্যবিত্ত’, তারা তো এখনো শ্রমিকশ্রেণির সঙ্গে একাত্ম হতে পারে। আমরা যে শ্রমিকশ্রেণির ব্যাপারে কথা বলতে পারি না, সেখানে কোনো একটি ভুল কাজ করছে। আমি পুঁজিবাদ সম্পর্কে কথা বলতে সক্ষম হওয়ার জন্য বিতর্কিত জায়গাটি উন্মুক্ত করার কথা বলছিলাম; তার মানে হলো, আমাদের বক্তব্যে শ্রমিকশ্রেণির কথা পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
আমরা এমনকি শ্রমিকশ্রেণির ব্যাপারে আর কথা বলতে পারি না। কখন থেকে হঠাৎ প্রত্যেকে ‘মধ্যবিত্ত’ হয়ে গেল? এমনকি আমাদের মধ্যে যারা আসলেই ‘মধ্যবিত্ত’, তারা তো এখনো শ্রমিকশ্রেণির সঙ্গে একাত্ম হতে পারে।
আপনারা যদি শ্রমিকশ্রেণি নিয়ে কথা না বলতে পারেন, তাহলে দরিদ্র মানুষ নিয়ে কীভাবে কথা বলবেন? কীভাবে আপনারা বেকারত্ব নিয়ে কথা বলবেন? ১৯৮০-র দশক থেকে শিল্পায়ন এবং বৈশ্বিক পুঁজিবাদের সৃষ্ট উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার ব্যাপারে কীভাবে কথা বলবেন? সুতরাং আমাদের অভিবাসী অধিকার নিয়ে কথা বলতে হবে। কারণ, বিশ্বায়নের সঙ্গে অভিবাসী অধিকারের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এটা ভালো ব্যাপার যে, ওবামা অভিবাসী অধিকারের ব্যাপারটিতে মনোযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু ড্রিম অ্যাক্টের চেয়েও আমাদের সমস্যা বড় ব্যাপার। দ্য ড্রিম অ্যাক্ট গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু এটি বালতিতে একটি ফোঁটা ফেলার মতো। এটা দিয়ে শুরুর পদক্ষেপ হবে, তা বলা যাবে না। অনেকে ড্রিম অ্যাক্টের বিরোধিতা করছে। কারণ, এই ড্রিম অ্যাক্ট সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। আবার একইসঙ্গে আপনি সামরিক বাহিনীর বিরোধিতা এবং ড্রিম অ্যাক্টকে সমর্থন করতে পারেন। যেমন, সামরিক বাহিনীতে সমকামীদের অধিকারকে সমর্থন করবেন। আবার একইসঙ্গে বলবেন, আমি পেন্টাগনকে ধ্বংস করতে চাই।
এলজিবিটি বিষয়ে আন্দোলন শুধু বিয়ের সমতাকে কেন্দ্র করে নয়। আমি বুঝতে পারি না, কেন সবকিছু বৈবাহিক সমতাকে নিয়ে শুরু করতে হয়। হ্যাঁ, বৈবাহিক সমতা নাগরিক অধিকার বিষয়ের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এলজিবিটি গোষ্ঠীর বিষয়টি শুধু সব ভিন্নধর্মী মানুষের জন্য প্রযোজ্য মানদণ্ডে ফেলে দেওয়ার বাইরেও আলোচিত হতে হবে। ভীষণ আকর্ষণীয় অংশটি হলো, নারীবাদী আন্দোলনের একটি পর্যায়ে যখন বিবাহ প্রথার সমালোচনা হচ্ছিল, তখন সমকামী অধিকারের জন্য আন্দোলন হওয়া। বিশেষত দাসত্বের যুগে কৃষ্ণাঙ্গদের শোষণ করার জন্য আদর্শিক অস্ত্র হিসেবে যখন প্রাতিষ্ঠানিক বিবাহকে ব্যবহার করা হচ্ছিল। বুশ যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, মানুষের বিয়ে করা উচিত। দরিদ্র মানুষের একমাত্র যেটা করা উচিত, তা হলো বিয়ে করা। তাতে কি রাতারাতি তাদের সব সমস্যা উধাও হয়ে যাবে? যখন আমি বিয়ের সমালোচনা করি, তখন আমি ঘনিষ্ঠতা এবং সংবেদনশীল সংযোগ এবং যেসব ব্যক্তির সঙ্গে আমরা আমাদের জীবন কাটাতে চাই, তাদের সঙ্গে যে বন্ধন আমরা অনুভব করি, তার কথা বলছি না। আমি বৈবাহিক প্রতিষ্ঠানকে একটি পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠান, যা সম্পদের বণ্টনের নিশ্চয়তা দেয় না, সেই হিসেবে দেখছি।
আমাদের সংগ্রামে ইসলামোফোবিয়া এবং জেনোফোবিয়াকে কীভাবে কমানো যায়, সেই কৌশল অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদকে সমতুল্য করার প্রয়াসের কারণে গুরুতর আক্রমণে থাকা মুসলমানদের রক্ষা করুন। এমনকি ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কহীন মানুষও আক্রমণের শিকার হচ্ছে। যেমন, একজন শিখ ব্যক্তির পাগড়ির জন্য তাকে মুসলমান ভেবে হত্যা করা হয়েছিল। আমি আগেই বলেছিলাম, অভিবাসী অধিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু ড্রিম অ্যাক্ট এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যাপার নয়; এটি যারা শ্রম দিয়ে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে সাহায্য করেন, তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর ব্যাপার–কৃষক, সেবকসহ সবার শ্রম, যা একসময় কৃষ্ণাঙ্গরা করতেন। অভিবাসীদের ব্যাপারটি কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস এবং তাদের সংগ্রামের একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
একুশ শতকে কৃষ্ণাঙ্গদের সংগ্রাম নানাভাবে অনেক বিস্তার লাভ করেছে। যারা আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম আছেন, তাদের সুস্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনের ভাই এবং বোনদের সংগ্রামের সঙ্গেও একাত্ম হওয়া উচিত।
এরপর আমার সময় থাকলে প্রতিবন্ধীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতাম। আমি ইতোমধ্যে নির্ধারিত সময় পার করে ফেলেছি। তাই শুধু বলব, যদি আমার আরও সময় থাকত, তাহলে আমি কী বলতাম। আমি বলতাম, খাদ্যরাজনীতি এবং পুঁজিবাদী খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রচুর মানুষকে অসুস্থ করেছে এবং প্রচুর পশুর জন্য কষ্টভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে আরও বিস্তারিত বলতাম। আমি মনে করি, একুশ শতকে কৃষ্ণাঙ্গদের সংগ্রাম নানাভাবে অনেক বিস্তার লাভ করেছে। যারা আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম আছেন, তাদের সুস্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনের ভাই এবং বোনদের সংগ্রামের সঙ্গেও একাত্ম হওয়া উচিত।
ন্যায়বিচার অবিভাজ্য। কোথাও কোনো অবিচার হলে, তা সর্বত্রই ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি।
সবশেষে, আমরা প্রগতিশীল এবং রূপান্তরকামী সংগ্রামে জড়িত থাকতে চাই। আমাদের একটি নীতি মনে রাখা উচিত। এই নীতিটি ড. মার্টিন লুথার কিংয়ের একটি উক্তি, যা আমাদের সব আন্দোলনের স্লোগান হওয়া উচিত। নীতিটি হলো: ন্যায়বিচার অবিভাজ্য। কোথাও কোনো অবিচার হলে, তা সর্বত্রই ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি।