তাজরীন! তাজরীন! আমাদের ঘিরে থাকা অনিশ্চয়তার ছবি
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন
সিনেমা সম্পর্কিত তথ্য:
নামঃ তাজরীন।
পরিচালক, প্রযোজক, সম্পাদক, চিত্রগ্রাহকঃ ইয়াসমিন কবির।
দৈর্ঘ্যঃ ১৭ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড, রঙ্গিন।
ভাষাঃ বাংলা।
নির্মাণকাল ও দেশঃ ২০১৪, বাংলাদেশ।
গণতন্ত্র, পুঁজিবাদ এবং আমাদের ঘিরে থাকা অনিশ্চয়তা
দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বা গার্মেন্টস এর বিস্তার ঘটেছে কিন্তু এখনো এ শিল্প নানান দোহাই ও কারণ দেখিয়ে সরকারি নানান সুযোগ-সুবিধা, প্রণোদনা হস্তগত করতে সিদ্ধহস্ত ও ক্ষমতার অপব্যবহারে অদ্বিতীয় (মনে করে দেখুন হাতির ঝিলে গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠনের ভবন কতদিন সব কিছুকে উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে ছিল, আর তাদের সরানোর জন্য কী বিপুল আয়োজন ও খরচ করেছে ও করছে সরকার!)। বাংলাদেশের নব্য ধনী ও অতি ধনীদের অনেকেরই সম্পদের প্রাপ্তিযোগ ঘটেছে এই গার্মেন্টস এর মাধ্যমে। শহরের বিদেশি বিলাস পণ্যের ক্রেতা ও দেশে বিদেশে নামে বেনামে যারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে, তাদের দলে এই গার্মেন্টস মালিক ও উচ্চপর্যায়ের চাকুরিরতদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত (দেশের ভিতরেও তাদের ক্ষমতাকেন্দ্রিক,বিলাসী ও ব্যয়বহুল জীবনযাপন চোখে না পড়ার উপায় নেই।)। কিন্তু যে ৪০ লক্ষ (প্রায়) শ্রমিক এ পেশার সাথে জড়িত তাদের সম্পদের পরিমাণ কত? তাদের ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়ে? তারা কোন দোকান থেকে কী সদাই করেন? কেন তারা মহামারির সময়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন কারণ সে নাহলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে! এসব নিয়ে নেই কোনো বস্তুনিষ্ঠ তথ্য, নেই তাদের বয়ান, গল্পভঙ্গি, স্বপ্ন ও সাধের উপস্থাপন। পক্ষান্তরে রয়েছে অনুদান, পুরস্কার প্রাপ্তি ও স্বীকৃতির লোভে তৈরি কিছু মধ্যবিত্তের/নিম্নমধ্যবিত্তের শ্রান্ত বুলি, যা নানান সময়ে, নানান মোড়কে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে প্রদর্শন করা হয়। এসব বয়ানের ভিতর রয়েছে “গার্মেন্টস না থাকলে এসব মেয়েদের বাসাবাড়ির কাজ করে খেতে হত, তার চেয়ে এখন সম্মানের সাথে চাকরি করে খাচ্ছে।” “গার্মেন্টস মালিকেরা যদি এই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করতো তবে দেশ যে কোথায় যেত।” “গার্মেন্টসের ফলেই এখন অনেকে বাংলাদেশকে চেনে, এখন মেড ইন বাংলাদেশ বলে একটা ব্যাপার আছে। ইউরোপ, আমেরিকায় এখন কাপড়ের ট্যাগে “মেড ইন বাংলাদেশ”! গর্বে বুক ভরে যায়।” “গার্মেন্টস এর ফলে দেশের নারী সমাজের ক্ষমতায়ণ হয়েছে।” ইত্যাদি ইত্যাদি। আরেকদল আছেন যারা সবকিছুর সমাধান, ওষুধ হিসেবে হাজির করেন মার্কিন প্রেসক্রিপশন, তাদের আজ্ঞাবহ “শ্রমিক ইউনিয়ন”। তাদের তৈরি শিল্প ও বয়ানে রয়েছে এর ঢালাও ব্যবহার (খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই শ্রমিকদের কী দশা এবং পুঁজির লড়াইয়ে কীভাবে আইন, নীতি ও নানানসব দোহাই দিয়ে ঠকানো হচ্ছে তাদের সেই বিবরণ দেখতে পারেন স্টিভেন বোগনার ও জুলিয়া রিচার্ট নির্মিত “আমেরিকান কারখানা” (২০১৯) সিনেমায়।)। সাধারণত এসব বয়ানেরাই নানান শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে ঘুরে বেড়ায় আমাদের চেতনায় এবং নানাবিধ শিল্প ও অশিল্প কর্মে।
বাংলাদেশের নব্য ধনী ও অতি ধনীদের অনেকেরই সম্পদের প্রাপ্তিযোগ ঘটেছে এই গার্মেন্টস এর মাধ্যমে। শহরের বিদেশি বিলাস পণ্যের ক্রেতা ও দেশে বিদেশে নামে বেনামে যারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে, তাদের দলে এই গার্মেন্টস মালিক ও উচ্চপর্যায়ের চাকুরিরতদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত
যেসব বাদ পড়ে যায়, সেসবের আলোচনায় যেহেতু অনুদান, (শব্দটা মনে রাখবেন আর দেখবেন পুঁজিবাদী সমাজে শিল্পী ও ব্যবসায়ি এ দুই দলেরই প্রচুর অনুদান প্রীতি, তারা সরকারের ও নানান ধরনের সংস্থার অনুদান, উপহার ও পুরস্কার পাওয়ার জন্য, বড় হা করে থাকে সবসময়।) উপহার ও স্বীকৃতির অনিশ্চয়তা থাকে এবং এসবের বদলে বরং অবহেলা, অস্বীকৃতি জুড়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি তাই এ পথের লোকসংখ্যা অপ্রতুল ও নগণ্য। এসব বাদ পড়ে যাওয়া বিষয়গুলোর ভিতরে থাকে পোশাক শ্রমিকের ক্ষুধা, চিকিৎসা, শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চাপ, মালিকপক্ষ ও গণমাধ্যমের অবহেলা, দুর্ঘটনা, মৃত্যু সর্বোপরি গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতি সর্বোপরি অবহেলা (ভাব এমন যেন “খেয়ে পরে বেঁচে আছে আর কী দরকার এদের?” “সকল সমস্যা মালিককেই পোহাতে হয়! এদের নিয়ে আবার এতো কথার কী আছে?” ইত্যাদি ইত্যাদি বা আরো সরেস উপর থেকে চাপান কোনো সিদ্ধান্ত যার সাথে এ সকল শ্রমিক নামধারী মানুষের সম্পর্ক ক্ষীণ এবং মূল ক্ষমতা ও অর্থ কুক্ষিগত থাকে অন্যদের হাতে।শ্রমিকদের নিয়ে সিনেমা ও শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমেও এই আধিপত্য বজায় থাকে তাই এসবে তাদের যে বয়ান/গল্প উপস্থাপন করা হয় তা দেশি/বিদেশি শাসক/শিল্পী/সমালোচকদের বয়ান ও বাচন ভঙ্গির সাথে মিললেও মেলেনা এ শ্রমিকদের জীবন, যাপন ও বয়ান ভঙ্গির সাথে।)।
এসব নানান খাতের নিম্নবিত্ত শ্রমিকদের জীবন ও যাপনের প্রতি আগ্রহবোধ করেছেন এ সময়ের বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতা ইয়াসমিন কবির, তার পরবাসী মন আমার (২০০১), শেষকৃত্য (২০০৭) ও (এখানে আলোচিত) তাজরীন (২০১৪) সহ তার রচিত অন্যান্য সিনেমাতে বিভিন্নখাতের প্রান্তিক মানুষেরা বারবার ফিরে এসেছে তাদের নিজেদের মতো করেই, কোনো প্রকার মধ্যবিত্তের/নিম্নমধ্যবিত্তের শ্রান্ত বুলি ও ততোধিক শ্রান্ত, বাতিল রদ্দি সমাধান ও উপস্থাপন ছাড়াই।
আমাদের কারখানায় “শ্রমিকদের নিরাপত্তার” জন্য গেটে গেটে তালা মারা থাকে যেন আগুন লাগলেও তাদের নিজের জীবন বাঁচানোর চেষ্টায় “প্রোডাকশনের” মূল্যবান সময় নষ্ট না হয়।
তাজরীন!
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বরে, তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড এর কারখানায় আগুন লেগে ৯ তলা ভবনের ৬ তলাই পুড়ে যায়, আগুনে জীবন্ত পুড়ে মারা যায় শতাধিক মানুষ এবং আগুন থেকে বাঁচতে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিহত হন আরো মানুষজন। কারণ আমাদের কারখানায় “শ্রমিকদের নিরাপত্তার” জন্য গেটে গেটে তালা মারা থাকে যেন আগুন লাগলেও তাদের নিজের জীবন বাঁচানোর চেষ্টায় “প্রোডাকশনের” মূল্যবান সময় নষ্ট না হয়। আর এ ঘটনায় ঠিক কতজন আহত ও পঙ্গু জীবন যাপন করছেন এবং সঠিক চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মরছেন তার ঠিক হিসাব রাখেনি কেউ, তাদের পুনর্বাসন ও ভরণপোষণের দায় এড়িয়ে গেছে সকলে (কতজন মারা গেছেন তার হিসেবেও নানান মত!)। তো এই আগুনলাগার ঘটনার পরে, সেখানে হাজির হন ইয়াসমিন কবির (যিনি সিনেমাতে উপস্থিত হন অদৃশ্যভাবে কিন্তু তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখানো হয় সিনেমা)। সিনেমাতে বাংলার মানুষের হাহাকার ও আহাজারি আমরা দেখি ঠিক তাদের মত করেই, তাদের কান্না, চিৎকার, মানসিক স্বাভাবিকতাবোধ হারিয়ে শুধু শূন্য, ভয়ার্ত পশুর চোখের মারা যাবার আগের শেষ ভয়ার্ত চিৎকার দেখি আমরা বাংলার মানুষের চোখে, যেন এডভার্ড মুঙ্কের “চিৎকার” (১৮৯৩) এর জীবন্ত বাংলা অনুবাদ। যারা এ চিৎকার তৈরি করেছে তাদের আমরা সিনেমার কোথাও দেখতে না পেলেও আমরা জানি তারা কে এবং কারা আর তাদের পিছনেরঅর্থনৈতিক,রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শ ও সমর্থনকী, কেন ও কীভাবে। সারা সিনেমা জুড়েই আমরা আহত শ্রমিকের বয়ান, বিলাপ শুনতে থাকি তাদের মুখ থেকেই সরাসরি, দেখতে থাকি পঙ্গু শ্রমিকদের, তাদের আশেপাশে জড় হওয়া স্বজনেরা জানান তাদের আবেগ, ব্যাখ্যা এবং দৃষ্টিভঙ্গি। লাশ খুঁজে না পাওয়া মানুষের হাহাকার আর তীব্রভাবে অনুবাদ করা যায় তাদের, চোখের মুখের ক্ষোভ। না কেউ তীব্রভাবে ফেটে পড়েনি ক্যামেরার সামনে বিচারের দাবিতে, যেন তারা সেই সময়েই জানতেন ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খালি ভাঙ্গাচোরা ফুটপাতে নীল রঙয়ের পলিথিন টানিয়ে, বিছিয়ে এবং শীত-রোদ-বৃষ্টি নিয়ে সামান্য খেয়ে না খেয়ে বসে থাকবেন তারা কিন্তু এ শহরের মানুষজন, শিল্পী ও সরকার বাহাদুর, বিচারক মহাশয়েরা কেউ তাদের দিকে ফিরেও তাকাবেনা, অবহেলায় এবং অবশেষে জনগণের বন্ধু (মনে পড়ে সামরিক শাসকদের ফ্রেন্ড নট মাস্টার বচনখানি) পুলিশ এই আপদ ইচ্ছামতো পিটিয়ে দূর করে শহরবাসীর নাগরিক মনের সামান্য খচখচানি চিরতরে দূর করে দেবে। যেন প্রায় ৩ মাস সুবিচার ও সঠিক পুনর্বাসনের দাবি-দাওয়া নিয়ে তারা যে আবেদন/নিবেদন জানিয়েছেন সরকার বাহাদুরের দরবারে তার ছাপ কোথাও না থাকে। সুশীল সমাজ, সরকার এবং কোমলমতি মনের শিল্পীরা (শিক্ষক, লেখক, ফিল্মমেকার, নায়ক, গায়ক, চিত্রকর, কবি, আলোকচিত্রকার, ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিক ও শিল্প উদ্যোক্তাসহ অন্যান্যদের) কেউ কথা বলবেনা এইসব “ছোটলোকের” নোংরামি, সর্বোপরি “রাজনৈতিক” বিষয়ে!
যেন তারা সেই সময়েই জানতেন ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খালি ভাঙ্গাচোরা ফুটপাতে নীল রঙয়ের পলিথিন টানিয়ে, বিছিয়ে এবং শীত-রোদ-বৃষ্টি নিয়ে সামান্য খেয়ে না খেয়ে বসে থাকবেন তারা কিন্তু এ শহরের মানুষজন, শিল্পী ও সরকার বাহাদুর, বিচারক মহাশয়েরা কেউ তাদের দিকে ফিরেও তাকাবেনা
সাড়ে সতের মিনিটের এ সিনেমা যেন দশকের পর দশক ধরে চলছে এ শহর ও দেশময়, ভিন্ন ভিন্ন নামে বিভিন্ন জায়গাতে। এ সিনেমাতে কোনো কলাকৌশলের কারিকুরি দেখানোর বা একটি “মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির যাত্রা” বা একে একটি “মানবিক গল্পে” রূপান্তরের ক্লিশে/একঘেয়ে চেষ্টা করা হয়নি, নির্মাতা কালোকে সহজেই কালো বলেছেন, যা দেখেছেন একের পর এক নির্মেদ দৃশ্য খণ্ডের মাধ্যমে সেসবকেই সাজিয়েছেন যথার্থভাবে। তিনি নিজেই ধারণ করেছেন দৃশ্য, করেছেন সম্পাদনা ও প্রযোজনা এবং তার পরিমিতিবোধ এ সিনেমাকে পরিণত করেছে, তৈরি হয়েছে এক স্বাধীন নির্মাতার স্বাধীন ছবি (ইন্ডি ফিল্মমেকার এখন আর ইন্ডি নেই এটা এখন সবচেয়ে দুর্দান্ত একটা ব্যবসানীতি, এখন আর আসলেই অতর মেকার বা আসলেই “স্বাধীন” মেকার পাওয়া দুষ্কর! আপনি ভাবতে পারেন যে মিরা নায়ার এর মতো বিগেরাও আজকাল তাদের পরিচয় দেন ইন্ডি মেকার বলে! আর কোটি কোটি টাকার সিনেমা প্রকল্প যা পরিচালিত হয় পৃথিবীর সেরা সব সুদক্ষ কর্পোরেট উৎসব ও অনুদান নিয়ে, কয়েক দেশের কর্পোরেট সংস্থা মিলে, সেসব ও আজ ব্র্যান্ডিং হচ্ছে “ইন্ডি ফিল্ম” হিসেবে এবং এসব এন,জি,ও মডেলের ফিল্মমেকারেরাও নিজেরা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে (মূর্খের মতো) পরিচয় দেন নিজেদের “ইন্ডি মেকার” হিসেবে। অরুন্ধতী রায়ের লেখায় পড়েছিলাম এই বাজারকেন্দ্রিক জীবনযাপন কাঠামো আমাদের শব্দ ও তার মানেও চুরি করেছে, বদলে ফেলেছে। চারিদিকের এসব “স্বাধীন ফিল্ম/মেকার” ও “উন্নয়ন” দেখে দেখে বলাই বাহুল্য, তার সাথে দ্বিমত পোষণের কোনো কারণ নেই, এই রাক্ষসতন্ত্রে বাস করে (রায়ের, “ডেমনক্রেইজির” বাংলা করণের প্রয়াস, তিনি ডেমোক্রেসি কে লিখেছেন ডেমনক্রেইজি ))।
প্রচারসর্বস্বতা, অগভীর চিন্তা-ভাবনা, জবাবদিহির অভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির উৎসব
তাজরীনের শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য পাওনা পায়নি, আদায় করতে পারেনি, দেশ-বিদেশের কেউ তাদের পাশে শক্ত হয়ে অবস্থান করেনি, সবই কেমন যেন গা ছাড়া, হেলে দুলে ঢিমেতালে কোথাও যাচ্ছে (যার ফলে একের পর এক তৈরি হচ্ছে রানা প্লাজাসহ আরো সব ছোট-বড় ভয়াবহ দুর্ঘটনা)। যে যাত্রার সামনের সারিতে অবস্থান করছে বাংলার তথাকথিত বড় বড় শিল্পীর দল, যাদের অনুদান ও পুরস্কারের খবর দিস্তের পর দিস্তে ছেপে যেতে যেতে চেপে যাচ্ছে আসল খবর, শিল্পের ও শিল্পীর কাজ, বাংলার খবরের কাগজেরা। এই শিল্পীদের আচরণ সরকারি কর্মচারীদের ন্যায়, সব সময় পরামর্শ ও অনুদানের নামে বিদেশি চাপিয়ে দেয়া বিষয়, বয়ান ও এজেন্ডা নিয়ে এতো বালখিল্যতায় ভেসে যাচ্ছেন যে তাদের দিয়ে, যোগ্য বয়ান নির্মাণ কতটুকু সম্ভব সে সম্ভবত গবেষণার বিষয় হতে পারে। তবে “তাজরীন” (২০১৪) সিনেমাকে এ সকল বিষয়ের বাস্তবতা ভাবনায় রেখে পাঠ করার দরকার, সে না হলে “তাজরীন” এর মতো সিনেমা কেন তৈরি হচ্ছে আবার কেন সে নিয়ে সরবতা নেই, সে নির্মাতার কাজ নিয়ে আলোচনা নেই, সে বোঝার বাইরে থেকে যাবে। আর কেন ইয়াসমিন এ নিয়ে আরো সুবিশাল পরিসরে, আরো গভীরতর নির্মাণে যেতে পারেননি বা যাননি, সে প্রয়োজনীয় বিষয় আমাদের অজানা রয়ে যাবে।
চলমান এ অবস্থায় “তাজরীন” এর শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য পাওনা যে বুঝে পাবেনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে থাকা যায়। সরকার বাহাদুর তাদের ন্যায্য পাওনা না দেয়ার বন্দোবস্ত করতে ব্যস্ত কিন্তু গার্মেন্টস মালিকদের একের পর প্রণোদনা দিয়েই যাচ্ছেন তাদের আবদার অনুযায়ী, সে আবার নেয়া হচ্ছে শ্রমিকদের দোহাই দিয়ে কিন্তু সে টাকার “মধ্যে ৮৩ দশমিক ৯৭ শতাংশই (ব্যয় হয়েছে/হচ্ছে) কারখানা মালিকদের ব্যবসায়িক সংকট মোকাবিলায়। আর বেতন-ভাতা বাবদ শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ।” (১৭ ডিসেম্বর ২০২০, প্রথম আলো)। দেশের গালভরা বুলির গার্মেন্টস এর এ হচ্ছে অবস্থা আর এ অবস্থার ফলে এই সাধারণ শ্রমিকদের জীবনে যে ধারাবাহিক দুর্যোগ নেমে এসেছে সে আমরা দেখে যাচ্ছি একের পরে এক, কার্যকর প্রতিবাদ প্রতিরোধ ছাড়াই (মনে করে দেখুন করোনাকালিন মহামারির লকডাউনের ভিতরে কীভাবে তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে, দেয়া হয়নি বেতন-ভাতা, এবং কারখানা খোলা ও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে খামখেয়ালিভাবে যার ফলে এই লকডাউনের ভিতরেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বারবার তাদের দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে ঢাকায় আসতে হয়েছে আবার হেঁয়ালিপূর্ণ সিদ্ধান্তের ফলে ফিরে যেতে হয়েছে, কেউ এর দায়ভার নেয়নি, করেনি জবাবদিহি)!
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন: চলচ্চিত্রকার। ইমেইল: raiparasadardi@gmail.com
দোহাই
https://en.wikipedia.org/wiki/2012_Dhaka_garment_factory_fire
https://en.wikipedia.org/wiki/2013_Dhaka_garment_factory_collapse
https://en.wikipedia.org/wiki/The_Scream
https://en.wikipedia.org/wiki/American_Factory
World needs to use or lose Bangladesh apparel industry
Bangladesh garment factories reopen despite coronavirus threat to workers
Coronavirus: Two million Bangladesh jobs ‘at risk’ as clothes orders dry up
For Bangladesh’s Struggling Garment Workers, Hunger Is A Bigger Worry Than Pandemic
আইএলওর প্রতিবেদন | মজুরিতে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ
অভিমত: তাজরীনের আহত শ্রমিকেরা ফুটপাতে | মালিকদের উদ্যোগ পর্যাপ্ত ছিল না
মতামত | মানবাধিকারের দৈন্য কাটবে কি | কামাল আহমেদ
প্রণোদনা ও আর্থিক সহায়তার সিংহভাগই মালিকদের জন্য
মতামত | তেলা মাথায় তেল দেওয়া আর কত দিন | ফজলুল কবির
সাক্ষাৎকার: তৈরি পোশাক খাত | পোশাক ব্যবসায়িরা অনেক ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছেন
তৈরি পোশাক খাতে কাজ করেন প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। করোনাকালে সেই শ্রমিকেরা কঠিন সময় পার করছেন। শ্রমিকদের পাশাপাশি পোশাকশিল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের (এসজিএসএফ) সভাপতি নাজমা আক্তার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার।
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬: ২৬