সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৪ জুলাই- ২৩ অক্টোবর ২০২০)

সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৪ জুলাই- ২৩ অক্টোবর ২০২০)

অর্থনীতি

এনবিএলের টাকা কার পকেটে

২৬ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

২০০৯ সালে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদেরও বদল হয় ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল)। ব্যাংকটির কর্তৃত্ব চলে যায় সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের কাছে। নিজের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়স্বজন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পর্ষদে যুক্ত করে ব্যাংকটির একক নিয়ন্ত্রণ নেয় সিকদার পরিবার। এরপর আর অন্য উদ্যোক্তাদের ব্যাংকের ধারে ঘেঁষতে দেননি, পরিচালক তো নয়ই। ওই সময় থেকে ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করে সিকদার পরিবারের সম্পদ। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও। অন্যদিকে ব্যাংকটির আর্থিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে শুরু করে ঠিক তখন থেকেই।

ব্যাংক ছাড়াও বিমা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, নির্মাণ, হোটেল, পর্যটন, এভিয়েশনসহ বিভিন্ন খাতে গ্রুপটির ব্যবসা রয়েছে। এ ছাড়া বিনিয়োগ আছে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ডসহ আরও অনেক দেশে। অন্য দেশে করা বিনিয়োগের উৎস নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

সিকদার গ্রুপের হাতে যাওয়ার পরে পর্ষদের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও বেনামি ঋণের কারণে ২০১৪ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। জরুরি ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েও ন্যাশনাল ব্যাংকের খারাপ হওয়া রোখা যায়নি। এখন দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোর একটি ন্যাশনাল ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের অনেকগুলোই সিকদার পরিবার ও তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হচ্ছে। আবার বেনামি ঋণ সৃষ্টি করেও পরিবারটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে।

আইনে এক পরিবারের চারজন পরিচালক থাকার কথা বলা হলেও ন্যাশনাল ব্যাংকে আছেন সিকদার পরিবারের পাঁচজন। আইন, নীতিমালা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি কোনো কিছুই যেন ন্যাশনাল ব্যাংক ও পরিবারটির জন্য প্রযোজ্য নয়। বর্তমানে ব্যাংকটির ১১ সদস্যের পর্ষদে আছেন চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার, পরিচালক তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার, মেয়ে পারভীন হক সিকদার, ছেলে রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার। এ ছাড়া সিকদার ইনস্যুরেন্সের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা বদিউল আলম। অন্য পরিচালকেরা নামে থাকলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁদের কোনো ভূমিকা নেই। অনেকে পর্ষদ সভাতেও নিয়মিত আসছেন না।

ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক দশকে তাদের খেলাপি ঋণ ব্যাপক বেড়েছে। ২০০৯ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৩৮৮ কোটি টাকা, গত মার্চে যা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা।

বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকই সবচেয়ে বেশি অবলোপন করে আর্থিক স্থিতিপত্র থেকে খেলাপি ঋণ বাদ দিয়েছে। তারপরও কমাতে পারেনি খেলাপি ঋণ। অবলোপন করা এ ঋণ গত বছর ছিল ২ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকটি একাধিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায় করতে না পারলেও তা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করছে না। এতে প্রকৃত খেলাপি ঋণের চিত্র বের হচ্ছে না। আবার ন্যাশনাল ব্যাংক নিজে যে পরিমাণ ঋণ খেলাপি দেখাচ্ছে, তার বিপরীতেও নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে পারছে না। গত মার্চে সঞ্চিতি ঘাটতি ছিল ৪৮৭ কোটি টাকা। ব্যাংকটির শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারীরাও লোকসানে। ১০ টাকা মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের দাম এখন সাড়ে ৭ টাকা।

ন্যাশনাল ব্যাংকের গত এক যুগের আর্থিক প্রতিবেদন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন ও বিভিন্ন নথি এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সন্ত্রাসীদের হাতে রাজনীতির ‘চেরাগ’

২৮ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

.. .. দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত (৪৭) ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ছোট ভাই ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেল তাঁর সহযোগী। তাঁদের বড় পরিচয়, দুজনই সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ। এই ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে তাঁরা চাঁদাবাজি, জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। শহরের এমন কোনো মহল্লা নেই, যেখানে তাঁদের জমি নেই।… …

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বরকত বলেছেন, ২০১২ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। ২০১৫ সালের দিকে তিনি, তাঁর ভাই রুবেল, মোশাররফ হোসেনের এপিএস যুবলীগ নেতা এ এইচ এম ফুয়াদ, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হাসান খন্দকার ওরফে লেবী এবং ফরিদপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মিলে গোপন বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সব কাজ তাঁরা ভাগাভাগি করে নেবেন। এর মধ্যে এলজিইডির টেন্ডারের দায়িত্ব আসে তাঁদের ভাগে। তিনি স্বীকার করেন, এলজিইডির সব উন্নয়নকাজে ১৫ শতাংশ কমিশনের বিনিময়ে তাঁরা কাজ পাইয়ে দেন। তাঁদের সম্মতি ছাড়া কেউ কাজ করতে পারতেন না।.. ..

দুই ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান গত পাঁচ বছরে ৬৬৭ কোটি টাকার ৪২০টি উন্নয়নকাজের কার্যাদেশ পেয়েছে।… …

ফরিদপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নিয়ন্ত্রণ করেন গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, শিক্ষা প্রকৌশল, জনস্বাস্থ্য বিভাগের কাজ।… …

মোশাররফ হোসেনের এপিএস ফুয়াদের নির্দেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ফাহাদ বিন ওয়াজেদ বিএডিসি, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিদ্যুৎ অফিসের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।… …

ফরিদপুরের পাসপোর্ট অফিস, পৌরসভা, বিআরটিএ এবং ফুটপাত নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হাসান খন্দকার লেবী। তাঁর পক্ষ নিয়ে চাঁদা তুলতেন শহর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম নাসিম।

শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান দখলই নয়, কোন খাতে কে চাঁদাবাজি করবে, সেটাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বরকতের মতে, বাস কাউন্টারের চাঁদা আদায় করতেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এবং এস এম কামাল জামাল। এ টাকার ভাগ পেতেন কবিরপুরের সোহাগ শেখ, সহিদুল মোল্লা ও আবদুস সাত্তার মোল্লা।

বিআইডব্লিউটিসির সিঅ্যান্ডবি ঘাট নিয়ন্ত্রণ করতেন ডিক্রির চর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু মেম্বার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. খায়রুজ্জামান। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন অস্ত্রধারী আলীয়াবাদ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মোবারক খলিফা, শহর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মিনার হাসান চৌধুরী, সোহাগ শেখ ও আজমল হোসেন ওরফে ছোট আজম।… …

এপ্রিল থেকে বেতন নেই ১৫ চিনিকলে

২৯ জুলাই, ২০২০, দেশ রুপান্তর

‘রোজার ঈদে ছোট ছেলেডা নতুন জামা চাইছিল। তখন ওরে করোনার ভয় দেখাইয়া কইছি, কোরবানিতে দেব। গত এক সপ্তাহ ধইরা পোলায় মার্কেটে যাওয়ার জন্য কানতাছে। হামারো (আমার) তো মনে চায় ঈদে পোলাপানরে নতুন কাপড়চোপড় দিতে। কিন্তু কী করমু। এপ্রিল থেইক্কা বেতন পাই না। রিকশা চালাইয়া পেট চালাই। কিন্তু করোনায় যাত্রীও মেলে না। কবে বেতন পামু তা-ও জানি না। পোলাপানের মুখের দিকে তাকালে কান্না আসে। লজ্জায় ওদের সামনে যেতে পারি না।’

কথাগুলো বলছিলেন টানা তিন মাস বেতন বকেয়া থাকা জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক তাজুল ইসলাম। শুধু তাজুল নয়, বেতন না পেয়ে এমন করুণ অবস্থা বাংলাদেশ চিনি শিল্প করপোরেশনের অধীন ১৫টি চিনিকলের হাজার হাজার শ্রমিক ও সেখানে আখ বিক্রি করা চাষিদের। কবে তারা বকেয়া টাকা পাবেন তা-ও জানেন না। আন্দোলনেও মিলছে না কোনো প্রতিকার। অথচ করোনা ও বন্যায় তাদের জীবন এখন বিপর্যস্ত। শ্রমিকরা বলছেন, পরিবার নিয়ে এখন তাদের রাস্তায় নামার উপক্রম হয়েছে।

ছাগলের চামড়ার দাম সর্বনিম্ন টাকা, গরুর ১৫০

১ আগস্ট, ২০২০, দেশ রুপান্তর

দাম নির্ধারণ ও রপ্তানির ঘোষণা দেওয়ার পরও এবারের কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বিপর্যয় ঠেকানো যায়নি। রাজধানীতে গরুর চামড়া আকারভেদে ১৫০ থেকে ৬০০ টাকায় আর ছাগলের চামড়া ২ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

শনিবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘরে এমনটাই দেখা গেল।

জিগাতলা ট্যানারি মোড় ও পোস্তার আড়তসহ জায়গাতেই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কমে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। অথচ গতবারের চেয়েও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম এবার ২০ থেকে ২৯ শতাংশ কমিয়ে ধরা হয়েছে।

আঞ্চলিক মানেও নেই বাংলাদেশ

১১ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

ব্যবসা শুরু করতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই বিদ্যুৎ–সংযোগের কথা ভাবতে হবে। কিন্তু আপনি চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ–সংযোগ পাবেন না। এ জন্য কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), ডিমান্ড নোট, মাশুলসহ নানা ধরনের কাগজপত্র বিদ্যুৎ অফিসে জমা দিতে হবে। এরপর বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীরা পরিদর্শনে আসবেন। তাঁদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। এ ছাড়া টেবিলে টেবিলে তো ঘুরতে হবেই। এভাবে ধাপে ধাপে সব কাজ শেষ করে বিদ্যুৎ–সংযোগ পেতে আপনাকে চার মাসের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে।

অবকাঠামো নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতের এমন দুরবস্থার চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ–সংযোগ পেতে গড়ে ১২৫ দিন বা ৪ মাস ৫ দিন সময় লাগে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দুঃসংবাদ হলো, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আছে নিচের দিক থেকে দ্বিতীয়, অর্থাৎ ২৮তম স্থানে। বিদ্যুৎ–সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ১৭৯ দিন সময় লাগে কম্বোডিয়ায়। এ ছাড়া আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভানুয়াতুতে ১০০ দিনের বেশি লাগে। সবচেয়ে কম ১৩ দিন লাগে কোরিয়ায়।… …

বিদ্যুৎ খাত

বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লস বা কাঠামোগত ক্ষতিও বাংলাদেশে অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তলানির দিকে। এ দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণে সিস্টেম লস হিসেবে ১১ শতাংশই হারিয়ে যায়। অবশ্য বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য সান্ত্বনা হতে পারে আফগানিস্তান, যাদের সিস্টেম লস সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ। সবচেয়ে কম মাত্র ২ শতাংশ সিস্টেম লস সিঙ্গাপুরে। বাংলাদেশে বিদ্যুতের মূল্য ও পরিচালন খরচের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। মালদ্বীপ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিদ্যুতের দাম ও পরিচালন খরচের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে পল্লি এলাকা বিদ্যুৎ–সুবিধার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে খুব পিছিয়ে। এ দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির আনুপাতিক হারও বেশ কম। এ দেশে বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক বেশি।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৮৮ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ–সুবিধা পৌঁছেছে। এ ক্ষেত্রে একমাত্র পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৯৯ শতাংশ শহর এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। গ্রাম এলাকায় এই হার ৮১ শতাংশের কিছুটা বেশি। ঘণ্টাপ্রতি এক কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম দশমিক ০৮ ডলার। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের মান মাঝামাঝি। এখানে ৭ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৩ দশমিক ৭।

সড়কের মান দুর্বল

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ ২৯টি দেশের সড়কের মানের কথা বলা হয়েছে। এতে দেখা যায়, নেপাল ও মঙ্গোলিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশের সড়কের মান ভালো নয়। খোদ রাজধানী ঢাকার সড়কে উদ্বেগজনক যানজট হয়। সড়কের মানসংক্রান্ত ৭ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৩ পয়েন্টের কিছু বেশি। সিঙ্গাপুরের সড়কের মান সবচেয়ে ভালো, পেয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ পয়েন্ট। এ ছাড়া ৫ পয়েন্টের বেশি পেয়েছে জাপান, কোরিয়া ও মালয়েশিয়া।

দুর্বল মান ও অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় তুলনামূলক বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। এখানে প্রতিবছর ১ লাখ লোক মারা গেলে ১৫ জনই মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। এই হার এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বেশ বেশি। সে জন্য বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ট্রাফিক আইন সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছে।

পানি সরবরাহে সবচেয়ে পিছিয়ে

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাইপের মাধ্যমে নাগরিকদের পানি সরবরাহ করে থাকে প্রায় সব দেশ। কিন্তু বাংলাদেশের মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ এই সুবিধা পান। পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবার শেষে। জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশে শতভাগ মানুষ সরবরাহ করা পানি পান।

আবার ঢাকার নাগরিকদের পাকিস্তানের করাচি, শ্রীলঙ্কার কলম্বো এবং এমনকি ব্রুনেই দারুসসালামের মতো ধনী দেশের নাগরিকদের চেয়েও বেশি দামে পানি কিনে খেতে হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভুটানেই বাংলাদেশের তুলনায় পানি সরবরাহের খরচ বেশি। এ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে পানি সরবরাহব্যবস্থা খুবই দুর্বল। শহুরে নাগরিকদের ৩৭ শতাংশ সরবরাহ করা পানিসুবিধা পেলেও গ্রামের মাত্র আড়াই শতাংশ মানুষ এই সুবিধা পান।

জিডিপির এত প্রবৃদ্ধি হলো কীভাবে

১২ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

করোনা বদলে দিয়েছে জীবন। গত মার্চ থেকে বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। এরপর এপ্রিল ও মে মাসে বাস, ট্রাক, ট্রেন, ব্যক্তিগত গাড়ি—সব ধরনের যান চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। একইভাবে ট্রলার-লঞ্চ চলাচলও বন্ধ ছিল। আকাশে ডানা মেলেনি বিমান। মানুষও প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে খুব একটা বের হননি। জুন মাসে সীমিত পরিসরে গাড়ি চলাচল শুরু হয়।

সব মিলিয়ে প্রায় তিন মাস অর্থাৎ অর্থবছরের চার ভাগের এক ভাগ সময় পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলেও দেশের অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান কমেনি। বরং বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের (২০১৯-২০) মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বাস, ট্রাক, ট্রেন—এসবের মূল্য সংযোজন আগের বছরের চেয়ে ৪ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা বেড়েছে। নৌযান চলাচলে বেড়েছে ২৪৬ কোটি টাকা। আর বিমান চলাচলে বেড়েছে ৫১ কোটি টাকা।

এবার আসি পর্যটনশিল্পে। সেখানেও একই দুর্দশা। সেই ২৬ মার্চ থেকে পর্যটন এলাকায় হোটেল-মোটেল বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনার শুরুর পর কক্সবাজারসহ দেশের পর্যটন স্পটগুলো প্রায় পর্যটকশূন্য ছিল। এখনো পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। করোনার কারণে প্রথম তিন মাস তো রেস্তোরাঁর মালিকেরা মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন। প্রায় সব রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যায়। জুন মাস থেকে ধীরে কিছু রেস্তোরাঁ সীমিত পরিসরে খোলা হয়েছে। তবে বেচাকেনায় আগের মতো জমজমাট ভাব নেই। বিবিএসের হিসাবে, বছর শেষে হোটেল-রেস্তোরাঁর অবদান জিডিপিতে বেড়েছে ৫০৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার প্রথম তিন মাস ৯৫ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। মানুষের চলাচল সীমিত থাকলে খাবারের ব্যবসা হয় না। তবে করোনার আগেও ব্যবসা তেমন একটা ছিল না।’

জিডিপিতে নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ৮ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে নির্মাণ খাতের অবদান ৮৮ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। নির্মাণ খাতের সিংহভাগ আসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাধ্যমে। বিদায়ী অর্থবছরে এডিবি বাস্তবায়ন আশানুরূপ হয়নি। গত অর্থবছরে এডিপির টাকা খরচ আগেরবারের চেয়ে ৫ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা কমেছে। এমন নজির আগে কখনো দেখা যায়নি। করোনার কারণে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ দুই-তিন মাস বন্ধ ছিল। বছর শেষে এডিবি বাস্তবায়ন ৮০ শতাংশে নেমে আসে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, বিদায়ী অর্থবছরে জিডিপিতে নির্মাণ খাতের মূল্য সংযোজন বেড়েছে ৭ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা।

করোনাকালে ফ্ল্যাট বিক্রি তেমন একটা হয়নি। আবার অফিস, বাসাভাড়াও অনেক ক্ষেত্রে কমানো হয়েছে। বাড়িওয়ালার ভাড়া কমিয়ে ভাড়াটে ধরে রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু বিবিএস বলছে, আবাসন খাতের অবদান বেড়েছে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।

করোনার কারণে এসব খাতের এমন দৈন্যদশার পরও জিডিপিতে অবদান বেড়েছে। এসব খাত প্রতিবছর জিডিপিতে এক-চতুর্থাংশ অবদান রাখে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই খাতগুলো ভালো চলেনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এসব খাতের বাড়তি অবদানকে ধরেই জিডিপির সাময়িক হিসাব করে বলেছে, বিদায়ী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, জিডিপির হিসাব মিলছে না।

করোনার সময়ে উল্লিখিত খাতের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই বন্ধ ছিল, তাই এত প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা নয়। এত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে আগের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) এসব খাতে অন্তত দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হতে হবে। বিবিএসের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, আগের কয়েক বছরে এসব খাতে কখনোই দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়নি। বিদায়ী অর্থবছরে অর্থনীতিতে এত চাঞ্চল্যও ছিল না।

বিবিএসের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, যানবাহন বন্ধ থাকলে কিংবা হোটেল রেস্তোরাঁ একদিন বা নির্দিষ্ট সময় বন্ধ থাকলে জিডিপির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়—এমন কোনো সমীক্ষা বিবিএসের নেই। ফলে ক্ষয়ক্ষতি প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা সম্ভব নয়।

সাধারণত প্রথম ৮-৯ মাসের তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে বিবিএস ওই অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাময়িক হিসাব দেয়। ৮-৯ মাসের প্রবণতা ধরেই পুরো বছরের হিসাবটি করে থাকে। কিন্তু এবার করোনার কারণে শেষের তিন–চার মাসের অর্থনৈতিক গতিপ্রবাহ অন্য বছরের মতো ছিল না। অর্থনীতি প্রায় স্থবির হয়ে গিয়েছিল।

প্রকল্পে প্রকল্পে গাড়িবিলাস

১২ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

একটি প্রকল্পে নিজেদের কর্মীর যাতায়াতের জন্য ৬০২টি গাড়ি ভাড়া করা হবে। তাঁরা ওই সব জিপ, কার, মাইক্রোবাসে চড়ে প্রকল্প এলাকা চষে বেড়াবেন। কেউ ভবন নির্মাণের কাজ দেখতে যাবেন, কেউ প্রশিক্ষণ নিতে যাবেন। আবার কেউ কেনাকাটা করতে বাজারে যাবেন। আগামী তিন বছরে এসব গাড়ি ভাড়ায় খরচ হবে ৩৭ কোটি ৮ লাখ টাকা।

এখানেই শেষ নয়। প্রকল্প পরিচালক, উপপ্রকল্প পরিচালক ও বিভাগীয় সমন্বয়কেরা ভাড়ার গাড়িতে চড়বেন—তা হয় না। তাই প্রকল্পের বড় কর্তাদের জন্য চাই বিলাসবহুল জিপ গাড়ি। কেনা হবে নয়টি বিলাসবহুল জিপ। এ জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর মানে, প্রতিটি গাড়ির দাম পড়বে গড়ে ৮৫ লাখ টাকার বেশি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত জুন মাসে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ‘কোভিড–১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স ও পেনডামিক প্রিপার্ডনেস’ প্রকল্প পাস করা হয়। তিন বছরের এই প্রকল্পে এভাবেই গাড়ি কেনার পাশাপাশি গাড়ি ভাড়া করার বিশাল আয়োজন রাখা হয়েছে। এ জন্য প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা বরাদ্দও রাখা হয়েছে। প্রকল্পের মোট খরচ ধরা আছে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা।

সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে সাধারণত প্রকল্পের গাড়ি কেনা হয়। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রগতির তিনটি মডেলের জিপ গাড়ি আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে দামি হলো জাপানের মিতসুবিশি পাজেরো স্পোর্টস (কিউএক্স) মডেলের জিপ। এর দাম ৯৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া মিতসুবিশি এএসএক্স এসইউভি মডেলটির দাম ৫৫ লাখ টাকা এবং ফোডে ল্যান্ডফোর্ট জিপের দাম পড়বে ৫৩ লাখ টাকা। এর মানে, ওই প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক, উপপরিচালকদের জন্য সবচেয়ে দামি জিপটিই কেনা হবে।

এখানেই শেষ নয়; এসব গাড়ির জ্বালানি হিসেবে গ্যাস, পেট্রল ও লুব্রিক্যান্ট কেনা বাবদ খরচ ধরা হয়েছে সব মিলিয়ে ৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, প্রতিটি গাড়ির জন্য মাসে জ্বালানি বাবদ বরাদ্দ থাকবে প্রায় ১ লাখ টাকা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার টাকার জ্বালানি খরচ মিলবে। বর্তমান বাজার দরে এক লিটার পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা। তাহলে প্রতি গাড়িতে দৈনিক ৩৪ লিটার পেট্রল বরাদ্দ থাকবে। লিটার প্রতি ৫ কিলোমিটার মাইলেজ ধরলে এমন বিলাসবহুল গাড়িতে ওই জ্বালানিতে অন্তত ১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া যাবে। জ্বালানির টাকা খরচ করতে প্রকল্প কর্মকর্তাদের এভাবেই গাড়ি নিয়ে দৌড়াতে হবে।

অথচ প্রকল্পটির মূল কাজ হলো দেশের ২১টি মেডিকেল কলেজে আধুনিক মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব স্থাপন; প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টার এবং রাজধানীর মহাখালীতে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জন্য ২৫০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল চালু করা। এর পাশাপাশি চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, ওষুধ ও প্রতিষেধক, ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী কেনা হবে। যানবাহন খাত হলো প্রকল্পটির চতুর্থ বৃহত্তম খরচ খাত। ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত ২ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট এই প্রকল্প পাস হয়, সেদিনই প্রায় একই ধরনের পৃথক কাজের জন্য এডিবির সহায়তায় আরেকটি প্রকল্প পাস হয়। ওই প্রকল্পের শিরোনাম ‘কোভিড রেসপন্স ইমারজেন্সি অ্যাসিসটেন্স’। এই প্রকল্পে খরচ ধরা হয় ১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।

কাজের ধরন প্রায় একই রকম; তাই গাড়ির কেনার খরচ নিয়ে ওই দুটি প্রকল্পের মধ্যে তুলনা করা যেতে পারে। এডিবি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে গাড়ি কেনা বা ভাড়ার উৎসব তেমন একটা নেই। ওই প্রকল্পে মাত্র ২০টি গাড়ি ভাড়া করতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য ১২টি গাড়ি কিনতে খরচ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রতিটি গাড়ির দাম পড়বে গড়ে ৪৫ লাখ টাকা। জ্বালানি বাবদ খরচ ৮০ লাখ টাকা।

ঋণের টাকায় ঋণ শোধ!

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, সমকাল

নতুন ঋণ নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করার মতো অনিয়ম হচ্ছে। ঋণগ্রহীতাদের একটি অংশ এভাবে ঋণের অপব্যবহার করছে। এতে করে খেলাপি ঋণের নতুন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এক খাতের নামে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগে থেকেই কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই করোনাকালে নতুন ঋণ নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করার প্রবণতা টের পেয়ে ব্যাংকগুলোকে বিশেষভাবে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে গতকাল বুধবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, গ্রাহকের অনুকূলে দেওয়া ঋণ দিয়ে গ্রাহকের বিদ্যমান অন্য ঋণের দায় পরিশোধ বা সমন্বয় করা হচ্ছে, যা ঋণ-শৃঙ্খলার পরিপন্থি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন কোনো ব্যবসা বা বিনিয়োগের জন্য ঋণ নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করার অর্থ হলো, তিনি ঋণের যথাযথ ব্যবহার করছেন না। ওই ঋণ কোথাও বিনিয়োগ করার কথা এবং সেখান থেকে আসা মুনাফার মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করার কথা। এর ব্যত্যয় হওয়া মানেই ঋণটি খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ল।

ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংকগুলো এখন যে ঋণ দিচ্ছে, তার প্রায় সবই বিতরণ করছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সরকারের প্রণোদনার আওতায়। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ঋণ চলতি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বিতরণ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ মুহূর্তে প্রণোদনার বাইরে ঋণ বিতরণ খুব কম হচ্ছে। ফলে এখন কম সুদের প্রণোদনার ঋণের অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তারা বলেন, প্রণোদনাসহ সব ঋণের সুদহার এখন ৯ শতাংশ। তবে প্রণোদনার আওতায় বিতরণ করা ঋণের সুদহারের অর্ধেক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার বেশি হারেও ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছে সরকার। এর মানে, গ্রাহক প্রচলিত সুদের অনেক কম হারে এখন ঋণ পাচ্ছেন। যে কারণে কেউ হয়তো কম সুদে চলতি মূলধন ঋণ নিয়ে বেশি সুদের পুরাতন ঋণ সমন্বয় করছেন। এতে করে সরকার কর্মসংস্থান ধরে রাখার যে উদ্দেশ্যে সুদ ভর্তুকি দিচ্ছে, তা ব্যাহত হচ্ছে।.. …

প্রতিবেশীদের চেয়ে বাংলাদেশে ট্রেনের ভাড়া বেশি

০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, বণিক বার্তা

চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে দূরপাল্লার ট্রেনগুলোতে কিলোমিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ৪ পয়সা হারে ভাড়া বাড়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারত। দেশটিতে বর্তমানে নন-এসি আসনে কিলোমিটারপ্রতি ৪৬ পয়সা (বাংলাদেশী টাকার হিসাবে) ও এসি আসনে ২ টাকা ৩ পয়সা হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

সর্বশেষ ২০১৯ সালে ট্রেনের ভাড়া বাড়ায় আরেক প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান। নন-এসিতে কিলোমিটারপ্রতি ৫৬ পয়সা ও এসি আসনে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৪ পয়সা হারে ভাড়া আদায় করছে দেশটি। অন্যদিকে শ্রীলংকায় নন-এসি আসনে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া আদায় হচ্ছে ৭৯ পয়সা।

২০১৬ সালে নির্ধারণ করা হার অনুযায়ী, বাংলাদেশ রেলওয়ের কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি ভাড়া ৩৯ পয়সা। সংস্থাটির বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়ার হার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নন-এসি (প্রথম শ্রেণী/সিট) আসনে কিলোমিটার ১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গন্তব্যভেদে এসি (সিট) আসনে আদায় হচ্ছে ২ টাকা ২৫ পয়সা থেকে আড়াই টাকা।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে রেলপথের দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার। এ দূরত্বে প্রথম শ্রেণীর (সিট) বর্তমান ভাড়া ৪৬০ টাকা। এ হিসাবে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া আসে ১ টাকা ৩৩ পয়সা। একই মানের আসনে প্রতিবেশী ভারতে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া আদায় করা হয় ৪৬ পয়সা (বাংলাদেশী টাকা)। পাকিস্তানে আদায় হয় কিলোমিটারপ্রতি ৫৬ পয়সা। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলংকায় একই মানের আসনে কিলোমিটারপ্রতি ৭৭ পয়সা। ঢাকা-চট্টগ্রামে এসি (সিট) আসনের কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ২৮ পয়সা। একই মানের আসনে ভারত ও পাকিস্তানে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যাত্রীদের খরচ করতে হয় যথাক্রমে ২ টাকা ৩ পয়সা ও ২ টাকা ৪ পয়সা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান ভাড়ার হার অনুযায়ী প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার চেয়ে বেশি। এমন অবস্থায় আরেক দফা ভাড়া বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সম্প্রতি ২৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্যারিফ কমিটি। সুপারিশ কার্যকর হলে ট্রেনের এসি বার্থ আসনের ভাড়া সমদূরত্বের গন্তব্যে বিমান ভাড়ার কাছাকাছি চলে আসবে। নন-এসি আসনের ভাড়া চলে আসবে নন-এসি বাস ভাড়ার কাছাকাছি। যদিও রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, এখনই ভাড়া বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।.. ..

রাজনৈতিক বিবেচনায় তড়িঘড়ি প্রকল্প

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

পাবনায় হাজার কোটি টাকায় নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে সাবেক এক মন্ত্রীর ইচ্ছায়। কিন্তু সেই রেললাইন দিয়ে দিনে মাত্র একটি ট্রেন চলাচল করে। লোকবলের অভাবে স্টেশনও ঠিকমতো চলছে না।

একই দশা ডেমু ট্রেনের। সমীক্ষা না করে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সময় অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে চীন থেকে ২০ সেট ডেমু কেনা হয়। পাঁচ বছর না যেতেই অর্ধেকের বেশি ডেমু অকেজো হয়ে পড়ে। মেরামতের অবকাঠামো না থাকায় সেগুলো সচল করা যাচ্ছে না।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ মিশ্র গেজে রূপান্তর করলে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ—দুই ধরনের ট্রেনই চলতে পারে। গত এক দশকে নতুন লাইন নির্মাণের দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে মিটারগেজের। এখন মিশ্র গেজের জন্য আবার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। শুরুতে মিশ্র গেজ করলে বারবার প্রকল্প নেওয়া লাগত না। প্রকল্প নিলেই কর্মকর্তাদের লাভ—এমন ভাবনা থেকেই ‘ইচ্ছাকৃত’ এই গলদ বলে মনে করছেন রেলের কেউ কেউ।

এই তিন ঘটনা রেলের বাস্তবায়ন করা তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের সারমর্ম। গত এক দশকে রেলে এমন বেশ কিছু ‘অস্বাভাবিক’ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণে দরকারের চেয়ে মন্ত্রী বা রেলের কর্মকর্তাদের ইচ্ছায়ই প্রাধান্য পাওয়ার বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। শুধু উন্নয়ন নয়, এ সময় নতুন ট্রেন চালু ও ট্রেন থামার স্থানও রাজনৈতিক বিবেচনায় ঠিক করার তথ্য পাওয়া গেছে।.. ..

অস্বাভাবিক উন্নয়ন

পাবনার ঈশ্বরদী-ঢালারচর এবং কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া পথে নতুন রেললাইন নির্মাণ এবং চীন থেকে ২০ সেট ডেমু ট্রেন ক্রয়—এই তিন প্রকল্প কাছাকাছি সময়ে নেওয়া হয়। সব কটিই রাজস্ব খাত থেকে নেওয়া। বাস্তবায়িতও হয়ে গেছে। এগুলোকে রেলের কোনো কোনো কর্মকর্তা ‘অস্বাভাবিক’ উন্নয়ন বলে থাকেন।

রেলের নথি থেকে জানা যায়, ঈশ্বরদী থেকে ঢালারচর পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন চালু হয়েছে গত জানুয়ারিতে। ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। ২০১০ সালে প্রকল্প নেওয়ার আগে এই পথে কী পরিমাণ যাত্রী হতে পারে, এর কোনো সমীক্ষা হয়নি।

বর্তমানে এই লাইন দিয়ে একটিমাত্র লোকাল ট্রেন চলে। পাবনা থেকে ঢালারচর পর্যন্ত ১০টি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু আটটিই বন্ধ। এই প্রকল্প চালু রাখার জন্য ১ হাজার ৯৮ জন লোক নিয়োগ করার কথা। গত দুই বছরে শুধু চিঠি-চালাচালি হয়েছে।

ওই প্রকল্পে যুক্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি নেওয়া হয় তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকারের ইচ্ছায়। এটি মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকাকে যুক্ত করেছে। তখন সরকারের রাজস্ব খাত থেকে নেওয়া সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল এটি। এর বরাদ্দও দেওয়া হয় দ্রুততার সঙ্গে। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের একধরনের বোঝাপড়া হয়। একই সময় আবুল হোসেনের আগ্রহ ছিল চীন থেকে ডেমু ট্রেন কেনার বিষয়ে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রকল্প নেবে, অনুমোদন দেবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দুটি প্রকল্প নেওয়ার আগে সমীক্ষা হয়নি। ফলে বিদেশি অর্থায়ন পাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এ জন্যই রাজস্ব খাতে দুটি প্রকল্প নেওয়া হয়। দুই মন্ত্রী একে অপরকে সহায়তা করেন। এখন তাঁদের কেউ ক্ষমতায় নেই। আর বিনিয়োগ তোলার মতো যাত্রীও নেই সেখানে। ফলে কেউ আর এখন গুরুত্ব দিচ্ছে না।

ডেমু কেনার প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১০ সালে। ৬৩৪ কোটি টাকার এসব ডেমু ট্রেন আসে ২০১৩ সালে। প্রকল্প প্রস্তাবে উদ্দেশ্য হিসেবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে যাত্রী পরিবহন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এই পথে কয়েক দিন ডেমু চালানোর পরই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে যাত্রীর যে চাপ, তা সইতে পারেনি ডেমু।

এ জন্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, জয়দেবপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ নানা পথে ডেমু চালানো শুরু হয়। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। চালুর পর পাঁচ বছরে ডেমু থেকে আয় হয় ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর খরচ ২৫ কোটি টাকা। এখন অর্ধেকের বেশি ডেমু অকেজো।

ফরিদপুরের কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া রেললাইন পুনর্বাসন ও কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া পথে নতুন রেললাইন নির্মাণে ২০১০ সালে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ২ হাজার ১১০ কোটি টাকার এই প্রকল্পও রাজস্ব খাত থেকে নেওয়া। গত জানুয়ারিতে তা চালু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির আগে রাজবাড়ী থেকে একটিমাত্র লোকাল ট্রেন চলাচল করত। এই পথের জন্য ১ হাজার ২৩১ জনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা। তবে এখনো নিয়োগের কোনো অগ্রগতি নেই।.. ..

এক মুরগি বারবার জবাই

গত এক দশকে ৩ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে নতুন মিটারগেজ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লার লাকসাম থেকে চট্টগ্রামের চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার পথ চালু হয় ২০১৫ সালে। পরের বছর চালু হয় টঙ্গী থেকে ভৈরব পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার রেল। দুটি প্রকল্পের অধীনে রেলের সংকেত ব্যবস্থাও আধুনিকায়ন করা হয়। লাগানো হয় নতুন স্লিপার। তিন-চার বছরের ব্যবধানে পুনরায় এই রেলপথ মিশ্র গেজে (মিটারগেজ ও ব্রডগেজ ট্রেন চলতে পারবে) রূপান্তরে পুনরায় প্রকল্প নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন মিশ্র গেজের লাইন নির্মাণ করতে গেলে আগে বসানো সংকেত ব্যবস্থা বাদ দিতে হবে। পুরোনো স্লিপার উঠিয়ে বড় স্লিপার বসাতে হবে। রেলপাতের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। ফলে মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণে যে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে, এর বড় অংশই জলে যাবে।

অথচ ভবিষ্যৎ বিবেচনায় ২০০৮ সালে ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেলপথ মিশ্র গেজে রূপান্তর করা হয়। কমলাপুর থেকে উত্তরবঙ্গে সব ধরনের ট্রেন চালানো সহজ হয়ে যায়।

কিন্তু পরে বাস্তবায়ন করা টঙ্গী-ভৈরববাজার এবং লাকসাম-চিনকি আস্তানা পথে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হয়নি। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বর্তমানে এই রেলপথের আখাউড়া থেকে লাকসাম অংশে মিশ্র গেজের রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ ভুল পরিকল্পনার কারণে আগে-পিছে মিটারগেজ লাইন রয়ে গেল।

টঙ্গী-ভৈরব ডাবল লাইন নির্মাণে যুক্ত ছিলেন, এমন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মিশ্র গেজের লাইনের জন্য ৯ ফুট লম্বা স্লিপার ব্যবহার করতে হয়। মিটারগেজের জন্য সাত ফুট। তখন স্লিপার দুই ফুট বাড়িয়ে একটা রেলপাত বসিয়ে দিলেই হতো। এর জন্য বড়জোর ২০০-২৫০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হতো। কিন্তু এখন নতুন করে এই কাজ করতে ১০ হাজার কোটি টাকা লাগবে।

মন্ত্রী হয়ে নতুন ট্রেন চালাতে তোড়জোড়

রেলে নতুন কোনো মন্ত্রী এলেই নিজ এলাকায় নতুন ট্রেন চালু করেন। সৈয়দ আবুল হোসেনের এলাকায় রেললাইন না থাকায় সেই অভিজ্ঞতা তাঁর হয়নি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলমন্ত্রী হয়েই সিলেটের পথে কালনী এক্সপ্রেস চালু করেন। তিনি মন্ত্রী থাকা অবস্থায় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কামরাসহ পর্যাপ্ত বগি নিয়ে ট্রেনটি চলেছে। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর এই ট্রেনে এখন আর এসি কামরা নেই। বগিও কমতে কমতে পাঁচ-ছয়টিতে ঠেকেছে।

মুজিবুল হক রেলমন্ত্রী হওয়ার পর ইঞ্জিন-কোচ ক্রয়ে খুব একটা অগ্রগতি না করতে পারলেও তিনি ঢাকা-নেত্রকোনা পথে দুটি নতুন ট্রেন চালু করেন। অবশ্য এই দুটি ট্রেন পরে জনপ্রিয় হয়েছে।

বর্তমান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম পাঁচটি নতুন ট্রেন চালু করেন। মন্ত্রীর নিজ জেলার জন্য চালু হয় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। এ ছাড়া যেসব ট্রেন দিনাজপুর পর্যন্ত যেত, এর সব কটিই পঞ্চগড় পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

রেলের পরিচালন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে দিনে গড়ে ৩২টি ট্রেন চালানোর মতো সক্ষমতা আছে। কিন্তু এখন চলছে ৩৮টি। সময় মেনে ট্রেন না চলার এটাও একটা কারণ। আবার অন্য মন্ত্রী, সাংসদ ও রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশে আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

মুজিবুল হক রেলমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী স্টেশনে আন্তনগর গোধূলী এবং মহানগর প্রভাতীর থামার সিদ্ধান্ত হয়। কুমিল্লার মফস্বল এলাকার এই স্টেশন মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় পড়েছে। বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের চিঠিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা চলাচলের পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মহানগর এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়। এর আগে মুজিবুল হকের ইচ্ছায় ২০১৩ সালে মহানগর প্রভাতী ও গোধূলীর যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়েছিল কুমিল্লার লাকসাম জংশনে।.. ..

চড়া সুদের ঋণে উন্নয়ন, প্রকল্পে বিলাসী ব্যয়

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এই কাজের চুক্তি হয় ২০১৬ সালে। এর এক বছর পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পথে নতুন রেললাইন নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ব্যয় ঠিক করা হয় ৪৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রায় একই ধরনের কাজে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয়ের ব্যবধান প্রায় ৩৫ কোটি টাকা।

কক্সবাজারে রেললাইন নির্মাণকাজ হচ্ছে উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে। এর অর্থায়নকারী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। আর পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে রেল সংযোগ হচ্ছে চীনা অর্থায়নে, জিটুজি (এক দেশের সরকারের সঙ্গে অন্য দেশের সরকারের চুক্তি) পদ্ধতিতে। বাণিজ্যিক এই ঋণের সুদ বেশ চড়া। ঠিকাদারও ঠিক করে দিয়েছে চীনা সরকার।

এই দুটি প্রকল্প উদাহরণমাত্র। রেলের প্রায় সব উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়ই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চড়া সুদের ঋণ আর কঠিন শর্তের ফেরে খরচ যেন আকাশছোঁয়া।

গত এক দশকে রেলে সবচেয়ে বেশি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে রেললাইন ও অবকাঠামো নির্মাণে। সমাপ্ত ও বাস্তবায়নাধীন বড় প্রকল্পগুলোর প্রায় সব কটিতেই এমন অস্বাভাবিক ব্যয়ের চিত্র পাওয়া যায়।

এর মধ্যে চীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে নেওয়া তিনটি (জিটুজি) প্রকল্পে অতীতের প্রায় সব নজির ছাড়িয়ে গেছে। চীনের সঙ্গে আরও বেশ কিছু প্রকল্প জিটুজি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের আলোচনা চলছে।

এডিবির ঋণে ছয়টি প্রকল্প চলমান। তাদের অর্থায়নে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। কাজ বৃদ্ধি, নকশা পরিবর্তনসহ নানা অজুহাতে ২০১৬ সালে ব্যয় দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সামান্যই। এডিবির অর্থায়নে সাম্প্রতিক সময়ে সম্পন্ন হওয়া টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইন নির্মাণকাজ শেষে ২০০ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে।

জাপানি সংস্থা জাইকার ঋণে বর্তমানে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার ডাবল লাইনের রেলসেতু নির্মাণে ২০১৬ সালে প্রকল্প নেওয়া হয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। ঠিকাদার জাপানের।

এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সূত্র বলছে, এর আগে যত রেলসেতু হয়েছে, সেগুলোর প্রতি কিলোমিটারের ব্যয়ের সঙ্গে তুলনা করলে এই সেতুর ব্যয় অনেক বেশি।

ভারতের ঋণে সাতটি প্রকল্প চলমান। জিটুজি পদ্ধতি না হলেও এসব প্রকল্পের পণ্য ও সেবা ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ভারত থেকে নেওয়ার শর্ত আছে। ভারতীয় ঋণে রেলে ছয়টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। বেশির ভাগই ইঞ্জিন-কোচ ও মালবাহী ওয়াগন বা ট্যাংকার কেনার প্রকল্প। ফলে প্রায় শতভাগ পণ্য ভারত থেকেই কেনা হয়েছে।

যেভাবে ব্যয় বাড়ে

কীভাবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে, এর একটা চিত্র পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রকল্পে মাটির কাজের দর দেখে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা চুক্তি ও প্রকল্প প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে প্রতি ঘনমিটার মাটি ভরাটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১৩ কোটি টাকা। একই দর আখাউড়া-সিলেট মিশ্র গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে মাটির কাজেও। এ দুটিই হচ্ছে চীনের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে।

সম্প্রতি শেষ হওয়া পাবনা-ঢালারচর নতুন রেললাইন নির্মাণে মাটির ব্যয় ছিল প্রতি বর্গফুটে ৩০৫ টাকা। আখাউড়া-লাকসাম মিশ্র গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে। এই প্রকল্পে মাটির দর ছিল ২৮০ টাকা।

এখন ওই প্রকল্পে মাটির বাড়তি কাজ করতে হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা রেল লিংকসহ অন্য প্রকল্পে বাড়তি দরের অজুহাতে ৬৫০ টাকা ঘনমিটার করার চাপ দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাস্তবায়ন হওয়া রেলের অন্য প্রকল্পগুলোরও মাটির দর ২৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।

জিটুজি প্রকল্পে চুক্তিতে এমন কিছু শর্ত রাখা হয়েছে, যার ফলে কৌশলে শতকোটি টাকা ঠিকাদারের পকেটে চলে যাচ্ছে। যেমন পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে প্রতিবছর পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩০ শতাংশ। আখাউড়া-সিলেট মিশ্র গেজ ডাবল লাইন প্রকল্পে এই হার ২৭ শতাংশ। জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী মিশ্র গেজ ডাবল লাইন প্রকল্পে ২৫ শতাংশ। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের ১৮ মাস পর থেকেই সরকারকে প্রতিটি পণ্যের এই বাড়তি মূল্য দিতে হবে।

পদ্মা রেল লিংকের কাজ চুক্তির প্রায় আড়াই বছর পর শুরু হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ এখনো শুরু হয়নি। অর্থাৎ কাজ শুরুর আগেই পণ্যের মূল্য ৩০ শতাংশ হারে বেড়ে গেছে। প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত মেয়াদে না হলে প্রতিবছরই এভাবে বাড়তি টাকা দিতে হবে।

জিটুজি তিন প্রকল্প নিয়েই প্রশ্ন বেশি

চীনের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে রেলের তিনটি প্রকল্প চলমান। এগুলো হচ্ছে পদ্মা রেল লিংক প্রকল্প, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী মিশ্র গেজ ডাবল লাইন প্রকল্প ও আখাউড়া-সিলেট মিশ্র গেজ ডাবল লাইন প্রকল্প।

পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পটির ঠিকাদার হচ্ছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড। প্রকল্পের ব্যয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এর আওতায় মূল ও শাখা লাইনসহ ২১৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে প্রায় ২২ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। জমি অধিগ্রহণ, বেতন-ভাতা, ভ্যাটসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদে শুধু রেললাইন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৯১ কোটি টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় দাঁড়ায় ৭৯ দশমিক ৪১ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কাগজে-কলমে অগ্রগতি ২২ শতাংশ। তবে এর বেশির ভাগই জমি অধিগ্রহণসহ প্রস্তুতিমূলক কাজ বলে রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আখাউড়া-সিলেট পথে মূল, শাখা লাইনসহ ২৩৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথ মিশ্র গেজে রূপান্তর করার প্রকল্প সরকার অনুমোদন দিয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। ঋণের শর্ত অনুসারে, চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে ঠিকাদার হিসেবে বাছাই করে চীন সরকার।

ঠিকাদারের সঙ্গে করা চুক্তির নথিপত্র বলছে, রেলপথ নির্মাণ ও এ-সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক ব্যয় হচ্ছে ১৩ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারের ব্যয় পড়বে ৫৮ কোটি টাকার বেশি। এই প্রকল্পের ভৌত কাজ এখনো শুরু হয়নি।

জিটুজি প্রকল্পে চুক্তিতে এমন কিছু শর্ত রাখা হয়েছে, যার ফলে কৌশলে শতকোটি টাকা ঠিকাদারের পকেটে চলে যাচ্ছে। যেমন পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে প্রতিবছর পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩০ শতাংশ। আখাউড়া-সিলেট মিশ্র গেজ ডাবল লাইন প্রকল্পে এই হার ২৭ শতাংশ। জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী মিশ্র গেজ ডাবল লাইন প্রকল্পে ২৫ শতাংশ। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের ১৮ মাস পর থেকেই সরকারকে প্রতিটি পণ্যের এই বাড়তি মূল্য দিতে হবে।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, আখাউড়া-সিলেট পথে যে কাজের জন্য চুক্তি হয়েছে, প্রায় একই কাজ চলমান ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া থেকে লাকসাম অংশে। এর অর্থায়ন করেছে এডিবি। ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। এই প্রকল্পের আওতায় মূল ও শাখা লাইন মিলিয়ে নতুন ১৮৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার মিশ্র গেজ লাইন নির্মিত হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যমান রেলপথকে মিশ্র গেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। শুধু লাইন নির্মাণকাজে ব্যয় ৩ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ১৯ কোটি টাকার কম।

গাজীপুরের জয়দেবপুর-পাবনার ঈশ্বরদীর মধ্যে মিশ্র গেজ ডাবল লাইন নির্মাণের ব্যয় ১৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। ঠিকাদারের সঙ্গে মূল কাজের চুক্তি ১০ হাজার ৩০২ কোটি টাকার। মূল লাইনসহ শাখা লাইন নির্মিত হবে ১৭৪ কিলোমিটার। সে হিসেবে প্রতি কিলোমিটারের পেছনে ব্যয় হবে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা। এখনো ঠিকাদার কাজ শুরু করেনি

করোনাকালেও কোটিপতি বেড়েছে সাড়ে হাজার

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

করোনা মহামারিকালে যেখানে সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে, সেখানে দেশে নতুন করে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত মার্চ থেকে জুন এই তিন মাসে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৪১২ জন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই বছরের জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬ হাজার ৩৭ জন। গত মার্চ শেষে এই সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫ জন।

পারিবারিক ও ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকিং খাত: টিআইবি

২২ সেপ্টেম্বর ২২, বাংলা ট্রিবিউন

দেশে ২০০৯  থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  বছরে গড়ে ৯ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়েছে। অর্থাৎ এই সময়কালে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৪১৭ শতাংশ। ঋণখেলাপিদের অনুকূলে বারবার আইন সংশোধন ও নীতি প্রণয়ন ব্যাংকিং খাতকে ঋণখেলাপিবান্ধব করেছে এবং খেলাপি ঋণকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছে, যা নিয়মিত ঋণ গ্রহীতাকেও খেলাপি হতে উৎসাহিত করছে। ‘ব্যাংকিং খাত তদারকি ও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ: বাংলাদেশ ব্যাংকের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটির মতে, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিপুল পরিমাণের খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতে বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে চরম মূলধন সংকট তৈরি করেছে। আর এই সংকট কাটাতে প্রতিবছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে জনগণের করের টাকা থেকে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ কিছু মানুষের অনিয়ম-দুর্নীতির বোঝা ক্রমাগতভাবে জনগণের ওপরে চাপানো হচ্ছে।

পূর্ব ইউরোপের জঙ্গলে দলে দলে বাংলাদেশি

২ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

ইউরোপ যাওয়ার জন্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে বাংলাদেশিদের মৃত্যু এখন আর নতুন খবর নয়। মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে এই ভয়ংকর যাত্রা এবং মৃত্যুর খবর বছর পাঁচেক ধরে প্রায় নিয়মিত গণমাধ্যমে আসছে। মানব পাচারের এখন নতুন পথ হিসেবে আলোচনায় এসেছে মধ্য ইউরোপের দেশ বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও স্লোভেনিয়া।

এই দুটি দেশের জঙ্গলে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে বাংলাদেশিসহ ছয় শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীর আটকা পড়ার খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এপি। তবে তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা কত, সেটা উল্লেখ করা হয়নি। মানব পাচারকারী চক্রগুলো এই ব্যক্তিদের বিভিন্নভাবে ক্রোয়েশিয়া হয়ে বসনিয়া বা স্লোভেনিয়ায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে অ্যাড্রিয়াটিক সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিসহ ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশগুলোতে পাঠাতে ভাগ্যান্বেষী এসব মানুষকে বিপজ্জনক যাত্রায় নামিয়েছে পাচারকারীরা।

.. ..২০১৫ সাল থেকে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৃত্যুর খবর আসতে শুরু করে।

প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে মানব পাচার বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মালয়েশিয়ায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার পর বিষয়টি সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তখন খবর বের হয়, এসব অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের জঙ্গলে পাচারকারী চক্রের ক্যাম্পে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা হতো। যাঁরা টাকা দিতে ব্যর্থ হতেন, তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করে গণকবরে পুঁতে ফেলা হতো।

কেবল ইউরোপ বা মালয়েশিয়া নয়, মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া হয়ে সাগরপথে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও মানব পাচারের একাধিক পথ রয়েছে। যদিও কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সরকার তাদের সমুদ্রসীমায় পাহারা জোরদার করায় এই পথে এখন সুবিধা করতে পারছে না পাচার কারীরা।

এ ছাড়া কলম্বিয়া ও মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে বাংলাদেশের অনেকে মারা গেছেন। অনেকে আটকও হয়েছেন। বিষয়টি কয়েকবার যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচারবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনেও এসেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর এবং স্থলসীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইউরোপ পৌঁছানো ব্যক্তিদের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা করেছে। ওই তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশের ৩ হাজার ৩২৫ জন নাগরিক ভূমধ্যসাগর আর স্থলপথে ইউরোপে পৌঁছেছেন। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মারা গেছেন যথাক্রমে ৩৭৭১, ৫০৯৬, ৩১৩৯, ২২৭৭ ও ১৩১৯ জন।

সর্বশেষ গত মে মাসে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালি যাওয়ার আগে মরুভূমিতে পাচারকারীদের গুলিতে প্রাণ হারান ২৬ বাংলাদেশি। এরপরও পাচারকারীদের প্রলোভন থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিরত করা যাচ্ছে না। চক্রগুলো পাচারের জন্য খুলছে নতুন নতুন পথ।

ইলিশ ধরা থেকে বিক্রি সিন্ডিকেটের হাতে

৯ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

… ইলিশের দাম বেশি হওয়ার পেছনে রয়েছে মাফিয়া চক্রের হাত। এই চক্রের জাল বঙ্গোপসাগর থেকে কলকাতা পর্যন্ত ছড়ানো। জেলেদের জিম্মি করে বছরের পর বছর তারা ইলিশের দরদাম ঠিক করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

ইলিশ নিয়ে গবেষণার জন্য চাঁদপুরে ‘মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূল আবাস বঙ্গোপসাগরে হলেও দেশের ৪০টির বেশি নদীতে ইলিশ আসে। প্রতিবছর পাঁচ লাখ টনের বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। ধরা পড়ার পরিমাণ অনুযায়ী উৎপাদনে হিসাব-নিকাশও ঠিক করা হয়। সেই হিসাবে গেল বছর ৫ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। আর এ বছরে তা সাড়ে পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। ইলিশের দাম ন্যূনতম পাঁচ শ টাকা কেজি হিসাব করা হলে উৎপাদিত ইলিশের বাজারমূল্য ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি। দেশে মোট মাছ উৎপাদনে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ আর জিডিপিতে জাতীয় মাছের অবদান ১ শতাংশের বেশি।

দেশের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৬৬ ভাগের জোগান দেয় বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো। সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে ভোলা ও বরগুনায়। ইলিশের সবচেয়ে বড় মোকাম হলো চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, পাথরঘাটা। এসব মোকাম থেকে বিভিন্ন হাত ঘুরে ইলিশ যায় ঢাকাসহ সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে। ইলিশ কেনাবেচার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রথম আলোকে বলেছেন, যে দামে বাজারে ইলিশ বিক্রি করা হয়, তার অর্ধেক দামও যদি জেলেরা পেতেন, তাহলে তাঁদের জীবন বদলে যেত।

সব ধাপেই মধ্যস্বত্বভোগী

ইলিশ কেনাবেচার হদিস জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল ও চাঁদপুরের জেলে, নৌকার মাঝি, ট্রলারমালিক, দাদনদাতা, আড়তদার ও ইলিশ রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলা হয়। সবার কথায় যা বেরিয়ে আসে তা হলো, সাগরে ইলিশ ধরা থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ নিয়ন্ত্রণ করে সুবিধাভোগীরা। রাতারাতি এই বাধা ভাঙা দুরূহ ব্যাপার। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখার মৌসুমে সরকার জেলেদের যে সহায়তা দেয়, তা আসলে তাঁদের খুব একটা কাজে লাগে না। এই জেলেরা মূলত জাল-নৌকাবিহীন দিনমজুর। ‘লাভের গুড়ের পিঁপড়া’ হলেন তাঁরা, যাঁরা ইলিশ ধরা ও কেনার কাজে টাকা লগ্নি করেন।

ইলিশ ধরা থেকে বাজারজাতের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, ইলিশ ধরা জেলেদের সঙ্গে স্থানীয় আড়তের ব্যবসায়ীদের চুক্তি থাকে। সে অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা অমৌসুমে জেলেদের অর্থসহায়তা দেন। ইলিশ ধরার জাল ও খরচ দেন। শর্ত থাকে, ধরে আনা ইলিশ শুধু ব্যবসায়ীদের কাছেই বিক্রি করতে হবে। এই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আবার ঢাকার পাইকারি ইলিশ বিক্রেতাদের যোগাযোগ থাকে। অনেক সময় ঢাকার বড় পাইকারি বিক্রেতা ও রপ্তানিকারকেরা আড়তমালিকদের আগাম অর্থ দেন। পুরো প্রক্রিয়াটি যেহেতু আগাম অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে হয়, সে কারণে ইলিশ কেনাবেচাও বাজারের দামের চেয়ে কিছুটা কম হয়।

ইলিশ মাছ ধরায় খরচ কেমন, তা জানতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল ও চাঁদপুরের মাছ ব্যবসায়ী ও ট্রলারমালিকদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের একজন কক্সবাজারের নুনিয়াছটার ট্রলারমালিক গিয়াস উদ্দিন জানান, ইলিশ ধরার কাজে তাঁর পাঁচটি ট্রলার নিয়োজিত আছে। প্রতিটি ট্রলারের বিপরীতে বিনিয়োগ প্রায় কোটি টাকা। একটি ট্রলারে জেলে আছেন ১৮ থেকে ২২ জন। গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই মাসে তাঁর পাঁচটি ট্রলার গভীর সাগরে গিয়ে চার দফা ইলিশ ধরেছে। প্রতিটি ট্রিপে সময় লেগেছে ১০-১২ দিন। আহরিত ইলিশ বিক্রি থেকে তিনি আয় করেছেন তিন কোটি টাকা। মালিক হিসেবে তিনি পেয়েছেন দেড় কোটি টাকা। বাকি টাকা কীভাবে ভাগ হয়, তার হিসাবটাও জানা গেল তাঁর কাছ থেকেই। বললেন, যদি এক লাখ টাকার ইলিশ ধরা হয়, তাহলে অর্ধেক পাবেন জাল ও ট্রলারের মালিক। ১৪ শতাংশ টাকা পাবেন ট্রলারের সারেং বা মাঝি। ট্রলার চালানোর সঙ্গে যুক্ত অন্যরা পাবেন ৪ শতাংশ। আর জেলেরা পাবেন মাত্র ২ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ টাকা ট্রলারের খরচ হিসেবে ধরা হয়। ইলিশ ধরার কাজে দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।

দাদনের চোরা ফাঁদ

বরগুনার একজন ট্রলারমালিক প্রথম আলোকে বলেন, সমুদ্রগামী একটি ট্রলারকে সাগরে যাত্রা করতে জ্বালানি, বরফ, বাজার-সদাইসহ আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়। আবার মৌসুমের শুরুতে জাল, ট্রলার মেরামত ও অন্যান্য খরচ মেটাতে ট্রলারমালিকদের তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়। সব মিলিয়ে একটি ট্রলার সাগরে ভাসতে ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা আগাম খরচ লাগে। এই পুরো টাকা লগ্নি করেন আড়তদারেরা। মূলত এটাই হলো দাদন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার বাবুরাম কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, ট্রলারমালিক তাঁদের কাছ থেকে ট্রলারপ্রতি অন্তত ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাদন নেন। যত দিন ট্রলারের ব্যবসা থাকবে, তত দিন ওই ট্রলার আড়তে মাছ দেবে। প্রতিবছর দাদনের টাকা বাড়ানো হয়। এই দাদনের বদলে অর্থ না দিয়ে মাছ দিতে হয়। যেসব ট্রলারমালিক দাদন নেন, তাঁরা আর কোনো দিনই জাল ছিঁড়ে বের হতে পারেন না। শর্ত থাকে, মাছ ধরার পর তা আড়তদারের কাছেই বেঁধে দেওয়া দরে বিক্রি করতে হবে। আড়তদার তা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন কেটে নেন।

দাম ঠিক করে অদৃশ্য হাত

ভোলায় প্রধানত দুটি পদ্ধতিতে মাছ কেনাবেচা হয়। একটি পদ্ধতি হচ্ছে জেলে তাঁর আহরিত মাছ আড়তদারের ডালা বা ঝুড়িতে ফেললে উপস্থিত ক্রেতারা দর হাঁকবেন নিলাম ডাকার মতো। যিনি বেশি দর হাঁকবেন, তিনি মাছ পাবেন। আরেকটি পদ্ধতি হলো আড়তদার ও ফড়িয়ারা সলাপরামর্শ করে একটি দর ঠিক করেন। তবে দর হয় গ্রেড অনুসারে। ওজন ও আকার অনুসারে ইলিশকে চারটি ভাগে ভাগ করে দাম ঠিক করা হয়।

চাঁদপুরের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন ইলিশ নিয়ে নানা গবেষণা হলেও দাম নিয়ে কেউ মাথায় ঘামাননি। তবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা হলে সাধারণ জেলেরা এর সুফল পাবেন। তাঁদের জীবনও বদলে যাবে।

ফোনেই বাজার নিয়ন্ত্রণ

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল ও চাঁদপুরের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলিশের দাম ওঠানামা করে ঢাকার বাজারদরের ওপর ভিত্তি করে। ঢাকায় ইলিশের দাম কমে গেলে ঘাটেও দাম কমে যায়। আবার ঢাকায় বাড়লে সেখানেও বাড়ে। সবই হয় মুঠোফোনে।

বিভিন্ন স্থান থেকে ইলিশ মাছ সংগ্রহ করে ঢাকায় বিক্রি করেন, এমন একজন উদ্যোক্তা প্রবীর কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, যেসব স্থানে ইলিশ ধরা পড়ে, সেখানে একটা ‘সিন্ডিকেট’ আছে। এর বাইরে গিয়ে ইলিশ কেনাবেচা করা যায় না। ঢাকায় যেসব ইলিশ পাওয়া যায়, তার একটা বড় অংশ আসে কোল্ডস্টোরেজ থেকে, যেগুলো সাধারণত ঈদের সময় সস্তায় কিনে রাখা হয়।

চোরাই পথে ইলিশ যাচ্ছে ওপারে

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, যশোরের মোকামে যেসব ইলিশ যায়, তা কি দেশের বাজারে বিক্রি হয়? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, যশোর, সাতক্ষীরা, বেনাপোল দেশের বড় কোনো মাছের মোকাম নয়। তাহলে পাথরঘাটা, বরিশাল, পটুয়াখালীর মহীপুরের ইলিশ মোকামের আড়তদারেরা এই তিন মোকামে কেন ইলিশ পাঠাতে বেশি আগ্রহী।

জানা গেল, এই তিন মোকাম থেকেই চোরাই পথে একশ্রেণির ব্যবসায়ী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ইলিশ পাচার করেন। প্রথমে দেশের বড় মোকাম থেকে এই তিন এলাকায় ইলিশ নিয়ে সংরক্ষণ করার পর নিজেদের সুবিধামতো তা ধীরে ধীরে সীমান্ত পার করেন সেখানের ব্যবসায়ীরা। কলকাতার মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এই অঞ্চলের দাদনদাতা ও আড়তদারদের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। মূলত কলকাতার কিছু মাছ ব্যবসায়ী কয়েক হাত ঘুরে দেশীয় আড়তদারদের মাধ্যমে প্রতিবছর ইলিশ মৌসুম ঘিরে বিপুল অর্থ লগ্নি করেন।

বিদেশি ঋণ বেড়ে ১০ বছরে দ্বিগুণ

১৪ অক্টোবর ২০২০, সমকাল

বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে প্রতিবছর। এক দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। ২০১৯ সাল শেষে মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়াশিংটনে সংস্থার সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত ‘আন্তর্জাতিক ঋণ পরিসংখ্যান-২০২১’ নামে প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ স্বল্প ও মধ্য আয়ের ১২০টি দেশের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান রয়েছে। চলতি বছরের হালনাগাদ পরিসংখ্যান ধরলে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ প্রতিবেদনে প্রকাশিত ঋণের তুলনায় বেশি হওয়ার কথা। কারণ, অতিমারি কভিডের অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিদেশি উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছর ১৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এই অর্থ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নেওয়া প্রকল্পের বাইরে।.. ..

আলুভর্তাও নাগালছাড়া

১৪ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

দুটি সেদ্ধ আলু। সঙ্গে দু-তিনটি কাঁচা মরিচ, কিছু পেঁয়াজকুচি আর একটু শর্ষের তেল। ঠিকমতো মিশিয়ে নিলেই উপাদেয় খাবার—আলুভর্তা।

তৈরি করা সহজ, খরচও কম ছিল। তাই আলুভর্তার জনপ্রিয়তায় কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু এখন সীমিত আয়ের মানুষের অনেকটাই নাগালছাড়া হয়ে গেছে আলু।

ঢাকার বাজারে এখন ১ কেজি আলুর দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় আলুর দাম দ্বিগুণ। আর হিমাগারের মালিক ও আলু ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা এত দাম কখনো দেখেননি।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) দুই দশকের আলুর দামের একটি হিসাব দেখে নেওয়া যাক। ক্যাব বলছে, ২০০০ সালে ঢাকায় ১ কেজি আলুর গড় দাম ছিল ১০ টাকা। ৫ বছর পর সেটা সাড়ে ১০ টাকা হয়। ২০১০ সালে আলু ২১ টাকা, ২০১৫ সালে ৩১ টাকায় দাঁড়ায়। আর সর্বশেষ গত সোমবার আলুর দাম দাঁড়ায় ৫৫ টাকা।

দরিদ্রদের অনেকে সকালে আলুভর্তা, ডাল আর ভাত খেয়ে কাজে যান। মধ্যম আয়ের পরিবারে দুপুরে রান্না করা তরকারিতে টান পড়লে আলুভর্তা করে সামাল দেওয়া হয়। বাজারে এখন ১ কেজি কাঁচা মরিচের দাম ২০০ টাকা। ১ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। শর্ষের তেলের লিটার ২০০ টাকার বেশি। ফলে আলুভর্তাও এখন অভিজাত খাবার হয়ে গেছে।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে ফুটপাতে ভাত বিক্রি করেন সেলিনা খাতুন। তাঁর ক্রেতা মূলত রিকশাচালক ও শ্রমজীবী মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, তরকারির পদ থেকে আলুভর্তা অনুপস্থিত। কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদলা আলুভর্তা তিনি ১০ টাকায় বিক্রি করতেন। আলুর যা দাম, তাতে বিক্রি করে কোনো লাভ হয় না।

হঠাৎ উধাও শিঙাড়া…

১৪ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

জামাল মিয়া কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের চন্ডিবের দক্ষিণপাড়ার একজন চা–দোকানি। টানা ৩০ বছর ধরে চায়ের সঙ্গে পুরি, শিঙাড়া ও পিঠা বিক্রি করে আসছেন তিনি। অন্য সবের চেয়ে তাঁর দোকানের শিঙাড়ার চাহিদা একটু বেশি। ফলে জামালের দোকানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিঙাড়া থাকেই। তবে জামাল এক সপ্তাহ ধরে শিঙাড়া বানাচ্ছেন না।

জানতে চাইলে জামাল মিয়া বলেন, ‘কেমনে বানামু? আলুর দাম ৫০ টেহার ওপর। শিঙাড়া বেছি তিন টেহা। একেকটা শিঙাড়ায় খরচ আছে পাঁচ টেহা। আবার তিন টেহারটা পাঁচ টেহা বেচলে খাইতে চায় না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু জামাল মিয়াই নন, ভৈরবের বেশির ভাগ হোটেল ও চায়ের দোকান থেকে শিঙাড়া এখন প্রায় উধাও হয়ে গেছে। আলুর দাম বেড়ে যাওয়াই এর কারণ বলে বিক্রেতারা জানালেন।.. …

বিপাকে দরিদ্ররা, মধ্যবিত্তও চাপে

১৪ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

মোটা চালের দাম যেন সুতাছেঁড়া ঘুড়িতে পরিণত হয়েছে। কত উঁচুতে উঠবে, কোথায় গিয়ে নামবে, তা কেউ ধারণা করতে পারছে না। শুধু মোটা নয়, সরু ও মাঝারি চালের দাম এখন মগডালে।

দরিদ্র মানুষের নিত্যদিনের বাজারের তালিকায় থাকে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ও আলু। এখন ডাল ছাড়া বাকি সব কটির দামই বাড়তি। শুধু বাড়তি বললে ভুল হবে, দাম অস্বাভাবিক উচ্চতায় উঠে গেছে।

যেমন মোটা চালের দাম এখন তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দুই মাসে অনেকটা লাফিয়ে বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। পেঁয়াজ শতক হাঁকিয়েছে। আলুর দাম এত বেশি কখনো ছিল কি না, তা মনে করতে পারছেন না পুরোনো ব্যবসায়ীরা। বিপরীতে করোনাকালে মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ। নতুন করে দেড় কোটির মতো মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে।

দরিদ্র মানুষের দৈনিক আয়ের বড় অংশ খরচ হয় চাল কিনতে। সরু ও মাঝারি চালের মূল ভোক্তা মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। সবাই চাপে রয়েছেন।.. …

বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ২৯ সেপ্টেম্বর মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সরু মিনিকেট চাল মিলগেটে সাড়ে ৫১ টাকা ও মাঝারি চাল ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। তখন কুষ্টিয়ার মোকামে সরু মিনিকেট চাল ৫৩ টাকা ও মাঝারি চাল ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা ছিল। মোটা চালের দাম নির্ধারণ করা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, মিল থেকে মোটা চালের সরবরাহ নেই।

দাম নির্ধারণের প্রভাব বাজারে পড়েনি। উল্টো বেড়ে গেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক সপ্তাহে সরু চালের দাম কেজিতে এক টাকা বেড়েছে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, মাঝারি চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা এবং সরু মিনিকেট চাল ৫৮ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই দাম তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালের এই সময়ে মোটা চাল ৫০ টাকা কেজিতে উঠেছিল। ওই বছর হাওরে ফসল নষ্ট হয়েছিল।… ….

আলু হিমাগারে ঢুকেছে ১২ টাকায়, বের হচ্ছে ৩৫ টাকায়

১৬ অক্টোবর, ২০২০, বণিক বার্তা

দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৭০-৭৫ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সবজিপণ্যটির উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ টনেরও বেশি। উদ্বৃত্ত উৎপাদন সত্ত্বেও কয়েকদিন ধরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে আলুর বাজারে। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে সবজিপণ্যটির দাম। অথচ সেই আলুই উৎপাদন মৌসুমে এক-চতুর্থাংশ দামে কৃষকের কাছ থেকে কিনেছিলেন হিমাগার মালিক ও মজুদদার ব্যবসায়ীরা।

দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের উৎপাদন মৌসুমে তারা প্রতি কেজি আলু ১২-১৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। সেই আলু কিনে মজুদ করেন হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীরা, যা এখন হিমাগার গেটে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকার বেশি দামে। ৬০ কেজির এক বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণে তাদের খরচ পড়ে ১৮০-২২০ টাকা। ক্রয়মূল্য, হিমাগার খরচ ও অন্যান্য খরচ মিলে প্রতি বস্তা আলুতে মোট খরচ হয় ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। কিন্তু সেই আলু এখন ২ হাজার ১০০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি করছেন হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

দখল-দুর্নীতি-অনিয়ম

বছর পর জানা গেল, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে

২৪ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে জানা গেল, বছর পাঁচেক আগে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল। যদিও ওই সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে পুলিশ দিয়ে তা দমন করা হয়৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করে যথাসময়ে কলেজগুলো ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষও করে।

ওই সময়ে যারা এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের লেখাপড়া এখন শেষের দিকে। সিআইডি এখন বলছে, অন্যায়ভাবে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলের জন্য মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা কথা বলবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সিআইডি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের জেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস বলেন, অধিদপ্তরের ছাপাখানা থেকেই মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বারবার ফাঁস হয়েছে। ছাপাখানার মেশিনম্যান আবদুস সালাম, তাঁর খালাতো ভাই জসিম মিলে দেশব্যাপী একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন। চক্রের মাধ্যমে শত শত শিক্ষা টাকীর জোরে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তি হন।

করোনায় কমেনি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ভূমি দখল, নিপীড়ন

৫ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

করোনা মহামারির মধ্যে দেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ওপর নানা নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। কমেনি নারীর ওপর নিগ্রহ। এর সঙ্গে ভূমি দখলের ঘটনাও ঘটেছে।

এসব তথ্য মিলেছে ‘আ র‍্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট: দ্য ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯ অন দ্য ইনডিজিনাস অ্যান্ড ট্রাইব্যাল পিপলস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় এক ভার্চ্যুয়াল সভায় এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হবে।

ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাপেং ফাউন্ডেশন এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ থেকে জুন—এই চার মাসে অন্তত তিনটি ধর্ষণের ধটনা ঘটেছে। এ সময় থেমে ছিল না ভূমি দখল। ছয় হাজার একরেরও বেশি ভূমি দখল হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের এক ব্যক্তি। জোর করে ধরপাকড়, বাড়িতে হামলাসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৬৫টি।

ডেসটিনি টাকা দেয়নি কাউকেই

৯ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

বিতর্কিত বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) পদ্ধতির ব্যবসায়ের নাম করে এক যুগ ধরে মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল ডেসটিনি। ২০১২ সালে ধরা পড়ার পর কেটে যায় আরও আট বছর। অথচ এত বছরেও গ্রাহকদের কেউ কোনো টাকা ফেরত পাননি। ডেসটিনির নিজের হিসাবেই তাদের ক্রেতা, পরিবেশক ও বিনিয়োগকারী মিলে ৪৫ লাখ।

আবার এখন পর্যন্ত মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে, নিষ্পত্তি হয়নি একটিরও। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অবশ্য বলছে, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ না হওয়ায় কোনো মামলাই রায় হওয়ার পর্যায়ে আসেনি। একটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষের দিকে থাকলেও আরেক মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ এখনো শুরুর দিকে।

তবে আদালত চার বছর আগে ডেসটিনির কাছ থেকে টাকা ফেরত আনার একটি উপায় বের করলেও তা কাজে দেয়নি। ফলে একটি করে বছর যাচ্ছে, আর বাড়ছে গ্রাহকদের বঞ্চনা।

যুবলীগ নেতার দখলে বনভূমি

১২ আগস্ট ২০২০, সমকাল

ক’দিন আগেও অসংখ্য শাল-গজারি গাছে ভরপুর ছিল বন বিভাগের এই জায়গাটি। নানা রকম বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণও ছিল গভীর এই গজারি বনের ভেতর। অথচ সময়ের ব্যবধানে সেই গহিন বনের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে হাঁসের খামার, পুকুর খনন করে চাষ করা হচ্ছে নানা জাতের মাছ, রোপণ করা হয়েছে ধানের চারা। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শিমলাপাড়া বিট অফিস থেকে মাইলখানেক দূরের এ দৃশ্য দেখে বন বিভাগের দায়িত্বশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে সাধারণ মানুষ। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার মাওনা ইউনিয়ন যুবলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক মাসুম মিয়া ও তার বাবা আবদুল হালিম প্রকাশ্যে বনের এ জায়গা দখল করে নিয়েছেন। সেখানে মাছের খামার, হাঁস পালন ও ধানের আবাদ করেছেন। শুধু তাই নয়, গড়ে তুলেছেন বসতবাড়িও। কৌশল করে পুরোনো টিনের ছাউনি দিয়েছেন ঘরে। যাতে মানুষ ধারণা করে এটা বেশ পুরোনো বাড়ি। অবশ্য অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা মাসুম মিয়া দাবি করেছেন, সেখানে তাদের কিছু জোত-জমি আছে।

স্বাস্থ্যের মধু খেয়ে মিঠু বিদেশে, এখন তদন্ত

১৩ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

সিএমএসডির সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ মৃত্যুর আগে লিখিতভাবে সরকারকে জানিয়েছিলেন, কেনাকাটায় অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতির কারণ, স্বাস্থ্য খাত ‘মিঠুচক্র’–এর কবজায়। এরপরই মূলত রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বেশ কয়েকটি সংস্থা নড়েচড়ে বসে। তবে তত দিনে মিঠুচক্রের প্রধান মোতাজজেরুল ইসলাম ওরফে মিঠু বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক শহীদউল্লাহ গত ২৫ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর আগে ৩০ মে জনপ্রশাসন সচিবকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, মোতাজজেরুল ওরফে মিঠু সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে বাজেট থেকে শুরু করে কেনাকাটার পরিকল্পনাও তৈরি করেন। তারপর সেই তালিকা ধরে সিএমএসডিকে দিয়ে জিনিসপত্র কেনান। নামে-বেনামে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে তাঁর। ঘুরেফিরে এই প্রতিষ্ঠানগুলোই দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।

প্রয়াত শহীদউল্লাহ আরও জানান, সিএমএসডি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি কেনাকাটার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। একটি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করে সাড়ে চার শ কোটি টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আবিষ্কার হয় যে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতিই পৌঁছায়নি। এই প্রতিষ্ঠানটিসহ যত প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল, প্রতিটিরই মালিক মোতাজজেরুল ওরফে মিঠু।

মোতাজজেরুল স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটা থেকে গত ১০ বছরে ঠিক কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারছেন না। কারণ, এ ব্যাপারে কখনোই কোনো তদন্ত হয়নি। প্রতিবছর স্বাস্থ্য খাতে যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় খরচ হয় সাত–আট শ কোটি টাকা। এর বাইরেও প্রকল্পভিত্তিক কেনাকাটা হয়। আ ফ ম রুহুল হক স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর ওই সময়ের ১৮টি মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতি সরবরাহের কাজ পান মোতাজজেরুল ওরফে মিঠু।… …

শীর্ষ খেলাপি এমএ আজিজ এবার হলিউডে ছবি বানাবেন!

১৭ আগস্ট , ২০২০, বণিক বার্তা

জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ (এমএ আজিজ)। গোয়েন্দা থ্রিলার ‘মাসুদ রানা’ নিয়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাজেটের সিনেমা বানানোর ঘোষণা দিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন গত বছর। এবার একটি-দুটি নয়, হলিউডের সঙ্গে তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন ব্যাংকিং খাতের এই ‘কুখ্যাত বন্ড’। নিজেই জানিয়েছেন শিল্পী ও কলাকুশলীদের বিশাল বহর নিয়ে আমেরিকায় উড়াল দেয়ার কথা। যদিও কয়েক হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ উদ্ধারে তার কোনো খোঁজই পাচ্ছেন না জনতা ব্যাংক কর্মকর্তারা।

দুই সহোদর এমএ কাদের ও এমএ আজিজের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ক্রিসেন্ট গ্রুপের পাঁচটি কোম্পানির নামে এ অর্থ লুণ্ঠন করা হয়েছিল।

অর্থপাচার মামলায় ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শামীম গ্রেপ্তার

২১ আগস্ট, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

অর্থপাচার মামলায় ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিশান মাহমুদ শামীমকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলিমুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুই হাজার কোটি টাকা অর্থপাচার মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।’

অস্বাভাবিক দামে কেনাকাটা

২৩ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

অতিথির বসার জন্য একটি চেয়ারের দাম ধরা হয়েছে ছয় লাখ টাকা। দুধে কী পরিমাণ পানি আছে, তা মাপার একটি যন্ত্রের দাম ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। একটি বর্জ্য রাখার পাত্রের দাম আড়াই লাখ টাকা। স্কুলে স্কুলে দুগ্ধজাত পণ্য প্রদর্শনীর পেছনে ব্যয় সাড়ে ১০ লাখ টাকা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকার প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন (এলডিডি) প্রকল্পের কেনাকাটায় এই অস্বাভাবিক দাম অনুমোদন করা হয়েছে। এখন শুধু কেনার বাকি। এই প্রকল্পের অধীনে গরু-ছাগল উন্নয়নে বিদেশ সফরের ব্যবস্থাও আছে।

রাজধানীর বিভিন্ন শোরুম, আন্তর্জাতিক ই-কমার্স সাইট আলিবাবা ডটকম ও পণ্য বিক্রির দোকানে খোঁজ নিয়ে প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয়ের সঙ্গে বাস্তবের মিল পাওয়া যায়নি। বাজারমূল্যের সঙ্গে প্রকল্পের পণ্যমূল্যের ব্যাপক তারতম্য দেখা গেছে। যেমন দুধে পানি মাপার যন্ত্রের দাম ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা ধরা হলেও বাজারে এই যন্ত্র পাওয়া যায় ৬০ টাকায়।

দেশের গরুর-ছাগলের উন্নয়নে ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকার এলডিডি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, বাকিটা দিচ্ছে সরকার। গত বছর শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দাবি, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে গরু-ছাগলের প্রবৃদ্ধি হবে ২০ শতাংশ। আর বিশ্বব্যাংক মনে করে, ২০ লাখ ছোট ও মাঝারি খামারি পশু পালনে এ প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন।

ভুতুড়ে বিল’ করা ডিপিডিসির এমডি পেলেন শুদ্ধাচার পুরস্কার

২ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

করোনা মহামারির মধ্যেই পরিকল্পনা করে গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুতের বাড়তি বিল আদায় করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। সেই সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ানকে দেওয়া হয়েছে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’। আর এই পুরস্কার তার হাতে তুলে দিয়েছেন ডিপিডিসির চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ সচিব সুলতান আহমেদ।

গত ২৬ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের মাসিক সমন্বয়সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় গত অর্থ বছরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের অর্পিত কর্মসম্পাদনে নিষ্ঠা ও দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ পান ডিপিডিসির এমডি বিকাশ দেওয়ান।  সেরা কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।… …

কেউ নেন ৩০০, কেউবা আড়াই লাখ

৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

সরকারি হিসাবেই প্রতিবছর ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে রাসায়নিকের গুদামে ঠাসা পুরান ঢাকায়। এর মধ্যে নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন নারী-শিশুসহ ১৯৪ জন। ওই দুটি ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পুরান ঢাকায় আর অতি দাহ্য রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা থাকবে না। কিন্তু এখনো নানা কায়দায় পুরান ঢাকায় দাহ্য রাসায়নিকের ব্যবসা চলছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা বলছে, নিয়ম লঙ্ঘন করে পুরান ঢাকায় রাসায়নিকের ব্যবসা চালিয়ে নিতে ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে তারা। এতে পুরান ঢাকার অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জের বিষয়টি উঠে এসেছে। একই সঙ্গে অতি দাহ্য রাসায়নিকের গুদাম এখনো না সরায় নিমতলী বা চুড়িহাট্টার মতো ঘটনা পুরান ঢাকায় ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে টিআইবি।

গবেষণায় বলা হয়েছে, রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা স্থাপনে লাইসেন্স প্রদান বা নবায়ন বন্ধ থাকলেও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এবং রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে লাইসেন্স বের করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের অসাধু কর্মকর্তাদের পরামর্শে ব্যবসায়ীরা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নাম থেকে রাসায়নিক শব্দটি বাদ দিয়ে এন্টারপ্রাইজ হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স বের করে নিচ্ছে। লাইসেন্স বের করা কঠিন হয়ে পড়লে রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার রাসায়নিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত না হয়েও কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা নিজেদের নামে লাইসেন্স করে তা ব্যবসায়ীদের প্রদান করে থাকে।

রূপপুর বালিশ দুর্নীতির সেই ঠিকাদার জামিনে মুক্ত

৩১ আগস্ট ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাজিন কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদত হোসেন জামিনে মুক্ত হয়েছেন। আজ সোমবার সকালে আদালত ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

শাহাদত হোসেন গত ছয় মাস কারাগারে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার পাবনার একটি আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। ওই দিনই তিনি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান।

সাজিন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আবাসিক ভবনে আসবাবপত্র সরবরাহ করে। মামলায় অভিযোগ আনা হয়, প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পের দুটি ভবনের জন্য কেনা প্রতিটি বালিশের দাম ধরে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। সেসব বালিশ ভবনে তুলতে খরচ ধরে ৭৬০ টাকা। এ ঘটনায় গত ১৩ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চারটি মামলা দায়ের করে। মামলায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে ৩১ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। দুটি মামলায় শাহাদত হোসেনকে আসামি করা হয়।.. …

বান্দরবানে নির্মাণ হচ্ছে পাঁচ তারকা হোটেল

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা

বান্দরবানের নীলগিরিতে পাঁচ তারকা ম্যারিয়ট হোটেল এবং বিনোদন পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিকদার গ্রুপের উদ্যোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ডিভিশন, ৬৯তম ব্রিগেড সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট এবং আর অ্যান্ড আর হোল্ডিংস লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

দৃষ্টিনন্দন নীলগিরির চারদিকে পাহাড় ঘেরা এলাকায় সেনা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এবং আর অ্যান্ড আর হোল্ডিংস লিমিটেডের মধ্যে ৩৫ বছরের চুক্তির আওতায় এটি নির্মিত হচ্ছে।

বাসন্তীর কলাবাগান কেটে সাবাড়

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০,  সমকাল

টাঙ্গাইলের মধুপুরে কয়েক দিন ধরেই জমি উদ্ধারের নামে স্থানীয় গারোদের মাঠের ফসল ট্রাক্টর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযান চালাচ্ছে বন বিভাগ। উপজেলার আরণখোলা ইউনিয়নের আমতলী গ্রামে এরই মধ্যে ১০ গারো পরিবারের পাঁচ একর জমির আনারস, পেঁপে, আদা, হলুদ, কলা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার শোলাকুড়ি ইউনিয়নের পেগামারীতে দরিদ্র বাসন্তী রেমার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন কলাবাগানটিও কেটে উজাড় করে দিয়েছে বন বিভাগ। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ গারো সম্প্রদায়ের লোকজন বন বিভাগের রেঞ্জ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

স্থানীয় গারোদের অভিযোগ- বন বিভাগের জমি দাবি করে কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই গত ২৪ আগস্ট পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ট্রাক্টর দিয়ে তাদের জমির ফসল মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। ওই সময় তাদের পাঁচ একর জমির ফসল এভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। করোনা মহামারির এই সময়ে বন বিভাগের এমন ‘অমানবিক আচরণে’ তারা এখন পথে বসার উপক্রম। গারোরা জানান, যুগ যুগ ধরে দখলসত্ত্বেও এই জমিতে চাষ করে আসছেন তারা। কেউ উত্তরাধিকার, আবার কেউ ‘বাংলা দলিল’ (রেজিস্ট্রিবিহীন) মূলে এই জমির মালিক।.. ..

শত কোটি টাকার মালিক স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক

২০ সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক আব্দুল মালেক ওরফে মালেক ড্রাইভারকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি, চাঁদাবাজি, জাল টাকার ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তার কাছ থেকে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার জাল টাকা ও একটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়াস্থ ৪২ নম্বর বামনেরটেক হাজী কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার শত কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।..

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মালেক জানান, তিনি পেশায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলের একজন ড্রাইভার এবং তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণি। তিনি ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরে কর্মরত রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মালেকের স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় ২টি সাততলা বিলাসবহুল ভবন আছে। ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় ৪.৫ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন আছে এবং দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম আছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও জানা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির ৪৪ কোটিপতির সন্ধান পেয়েছে দুদক

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ডিবিসি নিউজ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির ৪৪ কোটিপতির সন্ধান পেয়েছে দুদক

শুধু আবজাল বা মালেক নয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক ও কেরানিরসহ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেনীর আরো ৪৪ জন কোটিপতির সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদক। তাদের সম্পদের অনুসন্ধানও করা হচ্ছে।   

চালক, কেরানি ছাড়াও এ তালিকায় আছেন অধিদপ্তরের অফিস সহকারি, স্টোর কিপার ও কম্পিউটার অপারেটর। অনুসন্ধানে এসব কর্মচারীর অস্বাভাবিক সম্পদ পাওয়ায় সম্পদ বিবরণীর নোটিশও জারি করেছে দুদক।

দুদক সচিব দিলোয়ার বখত জানান, মালেক ড্রাইভারের সম্পদের অনুসন্ধান একবছর ধরেই চলছে। তার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়ায় সম্পদের নোটিশও তারা পাঠিয়েছেন। এরই মধ্যে ৪৫ জনের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

খাসিয়া পরিবারের পান জুম জোরপূর্বক দখল

১০ অক্টোবর, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন, বাংলা

খাসিয়া জনগোষ্ঠীর সরল জীবনযাপন সব সময়ই কাল হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য। তাদের সরলতার সুযোগ নেওয়ার জন্য সব জায়গাতেই মুখিয়ে থাকে কিছু দুর্বৃত্ত। এমনই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার এক খাসিয়া পরিবার। জবরদখল করা হয়েছে তাদের পান জুম।

খাসিয়া পরিবারটির দখলে থাকা জমি জোরপূর্বক দখল করে পাহারাদার বসিয়েছেন টাট্রিউলি গ্রামের স্থানীয় প্রভাবশালী প্রবাসী রফিক মিয়া। খাসিয়া পরিবারটি যাতে কোনো ধরনের বাধা দিতে না পারে, সেজন্য রফিক মিয়া ও তার সঙ্গীরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

প্রভাবশালীদের হুমকির ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ভুক্তভোগী পারিবারটি। একমাত্র আয়ের উৎস পান জুমের টাকা দিয়েই তিন বছর ধরে নিজের ক্যান্সারের চিকিৎসাসহ পরিবার পরিচালনা করেন পরিবারটির কর্তা।

ম্রো জাতিসত্তার ভূমি রক্ষার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি

০৭ অক্টোবর, ২০২০,বণিক বার্তা

বান্দরবানে অবৈধ দখলের কবলে ম্রো জাতিসত্তার প্রথাগত জুম ভূমিসহ শত শত বছরের সংরক্ষিত পাড়া বন, শ্মশান, সৃজিত ফলজ বনজ বাগান রক্ষার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন নয়টি পাড়ার ম্রো জনগোষ্ঠীর নেতারা।

আজ বুধবার দুপুরে বান্দরবান জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলামের হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেয়া হয়।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের ৪৭ কিলোমিটারে অবস্থিত কাপ্রু ম্রোপাড়া হয়ে ৫২ কিলোমিটারের জীবননগর পর্যন্ত আট শতাধিক একর ম্রোদের প্রথাগত ভূমি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জোর দখল করার অপচেষ্টা করছে সিকদার গ্রুপ (আর অ্যান্ড আর হোল্ডিংস)। এরই মধ্যে ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ড ও খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। বিশাল পরিমাণ এ জায়গার মধ্যে স্মরণাতীতকাল ধরে অনগ্রসর ম্রো জাতিসত্তার মানুষরা বাস করে আসছে। এতে উচ্ছেদের মুখে কাপ্রুপাড়া, দোলাপাড়া, এরাপাড়া এবং উচ্ছেদ ঝুঁকিতে মারকিন, লংবাইতং, মেনসিং, রিয়ামানাই ও মিনরিং ম্রো পাড়া রয়েছে।

এছাড়া এসব পাড়াবাসীর শত শত বছরের সংরক্ষিত প্রাকৃতিক পাড়া বন, শশ্মানভূমি, জুম ভূমিসহ সৃজিত ফলজ বনজ বাগানের বেশিরভাগ ইতিমধ্যে দখল করা হয়েছে। এসব ভূমি বেদখল হলে আটটি পাড়ার প্রায় দেড়শ পরিবার নিজেদের ভূমি ও পাড়া হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এসব বিষয়সহ দখল করা ভূমি নিয়ে কোনো কথা না বলতে প্রুপটির পক্ষের লোকরা কারবারিদের (পাড়া প্রধান) ও পাড়াবাসীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।

স্মারকলিপিতে ভুক্তভোগী ম্রো জাতিসত্তার একটি মৌজার হেডম্যান, একজন ওয়ার্ড মেম্বারসহ ১৩১ জন স্বাক্ষর করেছেন।

৭৭০ নদীতে ৪৯ হাজার প্রভাবশালীর থাবা

১৩ অক্টোবর, ২০২০, বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের সব নদ-নদীতে পড়েছে দখলদারের থাবা। সারা দেশের ৭৭০ নদ-নদীর বিভিন্ন অংশ ৪৯ হাজার ১৬২ জন প্রভাবশালীর দখলে। নদী দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে ঘরবাড়ি, বাসস্ট্যান্ড, কারখানা, রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ও উপাসনালয়। নিজস্ব জনবল না থাকায় নদী উদ্ধারে জেলা প্রশাসকদের ওপর নির্ভরশীল জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। কিছু জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চললেও সপ্তাহ না যেতেই ফের দখল হয়ে যায় নদী। রাজনৈতিক চাপ, আর্থিক ও জনবল সংকটে জেলা প্রশাসনও নদী দখলমুক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে। এদিকে হাই কোর্টের রায়ে নদী দখলকে ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা হয়। জানা যায়, নদীর জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসকদের অধীনে প্রাথমিকভাবে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হয়। নদীর দখলদার উচ্ছেদে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নেই। নদী রক্ষা কমিশন থেকে সব জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। করোনাকালে নদী উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সম্প্রতি নতুন করে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসকরা নদী দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহে আর্থিক বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না।.. …

লাখ ৮৭ হাজার একর বনভূমি ৯০ হাজার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের দখলে

২০ অক্টোবর, ২০২০, বণিক বার্তা

দেশের ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫২ একর বনভূমি ৯০ হাজার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের জবরদখলে আছে। সবচেয়ে বেশি বনভূমি বেদখলে আছে কক্সবাজার জেলায়। এ জেলায় ৫৯ হাজার ৪৭১ হাজার একর বনভূমি জবরদখলে আছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে এ তথ্য দিয়েছে মন্ত্রণালয়। গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

ক্রাচে ভর দিয়ে এসে ট্রেনের নিচে পেতে দিলেন মাথা

২১ অক্টোবর ২০২০, সমকাল

দখলদাররা পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছিল, সেই দুঃখ সইতে না পেরে রাজশাহীতে এসে ট্রেনের নিচে মাথা দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক ব্যক্তি।

বুধবার সকালে নগরীর বিলশিমলা এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে ইমরুল হাসান (৪০) নামের এই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহত ইমরুলের জামার পকেটে একটি সুইসাইড নোটে আত্মহত্যার কারণ লিখে গেছেন।

ইমরুল হাসানের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার দরবারপুর এলাকায়। তার বাবার নাম ফিটু মিয়া। তিনি চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে এসেছিলেন।.. ..

চিঠিতে উল্লেখ করা ফোন নম্বর নিয়ে ইমরুলের স্ত্রী আয়েশা বেগমের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, গত সোমবার চিকিৎসার জন্য তারা রাজশাহী এসেছেন। নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় তার বোনের বাড়িতে ওঠেন। চা খেয়ে সকালে ইমরুল বোনের বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে তার মৃত্যু সংবাদ পান।

আয়েশা জানান, প্রায় পাঁচ মাস আগে জালাল ও কালাম সহযোগীদের নিয়ে তাদের জমি দখল করে নেয়। ইমরুল বাধা দিতে গেলে পিটিয়ে তার হাত ও পা ভেঙে দিয়েছে। এঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের এক দিন পরই তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। তার স্বামীকে ক্রাচে ভর দিয়ে চলতে হতো। এটা তিনি মানতে পারছিলেন না।

শ্রমজীবি মানুষ

প্রবাসে শ্রমিকের বঞ্চনার দায় নেয় না কেউ

৩০ জুলাই ২০২০, সমকাল

সরকারি অনুমোদনে বিদেশ গিয়েও প্রতারিত হচ্ছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, তবুও টাকা হাতাতে কর্মী পাঠাচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ‘স্বার্থে’ তাতে ছাড়পত্র (স্মার্টকার্ড) দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। কর্মী বিদেশে গিয়ে প্রতিশ্রুত চাকরি না পেলে নির্যাতিত রিক্রুটিং এজেন্সির কখনও কখনও শাস্তি হলেও কর্মী পাঠানোর অনুমোদন দেওয়ার দায় নেয় না বিএমইটি, দূতাবাস কিংবা মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি ভিয়েতনাম থেকে যেসব কর্মী ফিরেছেন, তাদের ক্ষেত্রেও এ ঘটনা ঘটেছে। চলতি মাসের শুরুতে দেশে ফেরা ১১ কর্মীর ৯ জনের বৈধ স্মার্টকার্ড রয়েছে। তারা সরকারি সব নিয়ম-কানুন মেনে, ফি দিয়ে দেশটিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু চাকরি না পেয়ে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরেছেন। গত মে মাসে লিবিয়া হয়ে সাগরপথে ইউরোপ পাড়ি জমানোর সময় জিম্মিকারী দালালের গুলিতে ২৬ জন নিহত হন। গত মাসে মেসোডোনিয়ায় উদ্ধার হয় ৬৩ বাংলাদেশি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টায় মেক্সিকোতে ধরা পড়ে জেলে আছে সাড়ে তিনশ’ বাংলাদেশি। ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশের বনে-জঙ্গলে বহু বাংলাদেশির প্রাণ গেছে উন্নত দেশে পাড়ি দেওয়ার আশায়। ইউরোপের স্বপ্নে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরেছেন বহু বাংলাদেশি।… …

ভিয়েতনামের হ্যানয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, দেশটিতে আসলে বিদেশি কর্মীদের কোনো চাকরির সুযোগই নেই। দূতাবাস ছয় বছর পর এসে এ কথা বললেও ২০১৪ সাল থেকে ভিয়েতনামে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দিয়ে যাচ্ছে বিএমইটি। এ পর্যন্ত বৈধভাবে এক হাজার ২৭৫ জন বাংলাদেশি পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে গিয়েছেন চাকরি করতে। কিন্তু তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া বাকিরা চাকরি পাননি। কেউ কেউ দেশে ফিরে এসেছেন। অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যখন যা পাচ্ছেন, তাই করে পেট চালাচ্ছেন। দেশে ফিরতে ধরনা দিচ্ছেন অনেকেই। অন্তত ৬২ জন দূতাবাসে অবস্থান করছেন দেশে ফেরার দাবিতে।

লক্ষাধিক তাঁতির মানবেতর জীবন

৩০ জুলাই ২০২০, সমকাল

করোনা ও বন্যায় দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার তাঁতশিল্পে ধস নেমেছে। ফলে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক তাঁতি ও তাঁতশ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পুঁজি সংকটে কারখানায় তাঁতবস্ত্র উৎপাদন বন্ধ, উৎপাদনের কাঁচামাল ও উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে তারা বেকার হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।

জানা গেছে, শাহজাদপুর উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১৩টি ইউনিয়নে প্রায় দেড় লাখ তাঁত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক লাখ পাওয়ারলুম ও ৫০ হাজার হ্যান্ডলুম। শ্রমিক রয়েছে প্রায় এক লাখ। করোনায় লকডাউন ঘোষিত সময়কালে শাহজাদপুরের সব তাঁত কারখানা বন্ধ ছিল। এ সময়ে এলাকার তাঁতিরা তাঁতবস্ত্র উৎপাদন বা উৎপাদিত বস্ত্র হাটবাজারে বিক্রি করতে পারেননি। এ সময় বাধ্য হয়ে তাঁত মালিকরা কেউ পুঁজি খরচ করে ফেলেছেন, কেউ বা ঋণে জর্জরিত হয়েছেন। লকডাউন তুলে নেওয়ার পর তাঁত মালিকরা তাদের তাঁত কারখানা চালু করার অনুমতি পেলেও পুঁজি না থাকায় তা চালু করা সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ ধারদেনা করে তাঁত কারখানায় বস্ত্র উৎপাদনের চেষ্টা করলেও উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র হাটে বিক্রি করতে না পেরে আবারও কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

এই পঙ্গুত্বের দায় কার

২০ আগস্ট ২০২০, সমকাল

 ‘পল্লী বিদ্যুতের কাজ করতে বগুড়ার সিলিমপুর মাদলায় যাই ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে। বিদ্যুৎ লাইনে কাজ করছিলাম। হঠাৎ ১১ হাজার ভোল্টের তারে হাত দিতেই আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। সঙ্গে সঙ্গে আমি জ্ঞান হারাই। যখন জ্ঞান ফেরে, দেখি আমার এক হাত নেই। হাতটি কেটে ফেলা হয়।’ এভাবেই কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার চন্দনপাঠ গ্রামের ফারুক হোসেন। তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে কেউ সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি।

শুধু ফারুক নন, একই গ্রামের বাদশা মিয়া, এনামুল, বাবু, জাহিদুল, দছিবরেরও একই পরিণতি হয়েছে। তাদের কারও হাত-পা দুটোই কেটে ফেলা হয়েছে, আবার কারও দুই হাত কেটে ফেলা হয়েছে। এখন তারা বাড়িতেই অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংবা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে তাদের কারও খোঁজখবর রাখে না কেউ।

পল্লী বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া একই গ্রামের বাদশা মিয়া জানান, চলতি বছরের প্রথমদিকে পল্লী বিদ্যুতের কাজ করতে যান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার বিটঘর কাইতলা এলাকায়। সেখানে লাইন চালু রেখেই ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তারের সংযোগ লাগাতে বলা হয়। বারবার বলেছি, লাইন বন্ধ করুন। ঠিকাদার বললেন, কাজ করো। চাপের মুখে সংযোগ স্থাপনের জন্য ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তারে হাত দিই। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎস্পর্শে খুঁটিতে ঝুলে যাই। ঝুলে থাকা অবস্থায় ঠিকাদার পালিয়ে যান। পরে বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে আমাকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। প্রাণে বাঁচলেও দুটি হাত কেটে ফেলতে হয় আমার। এখন প্রতিবন্ধী হয়ে বেঁচে আছি। ঠিকাদারের ভুলে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেলাম আমি।.. …

এ পর্যন্ত বাদশা মিয়ার মতো একই অবস্থা সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের চন্দনপাঠ গ্রামের প্রায় ৩০ ব্যক্তির। ঠিকাদারের হয়ে পল্লী বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে পঙ্গু হয়েছেন তারা।… …

অভিজ্ঞতা ছাড়া ঠিকাদারের লোকজন বিদ্যুতের কাজ করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বোনারপাড়া জোনাল অফিসের এজিএম আব্দুল হালিম বলেন, আমরা পল্লী বিদ্যুতের যে কোনো কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারদের দিই। নতুন সংযোগ বা ট্রান্সফরমার পরিবর্তনের জন্য পল্লী বিদ্যুতের নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করতে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার জন্য ঠিকাদার দায়ী থাকবেন। যেহেতু টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ দেওয়া হয়, সেহেতু দুর্ঘটনার দায় নেবে না পল্লী বিদ্যুৎ।

ভালো কর্মসংস্থান হলে দেশেই থাকতেন ৯৯% অভিবাসী

২০ আগস্ট, ২০২০, বণিক বার্তা

বাংলাদেশে জীবিকা নির্বাহের ভালো সুযোগ পেলে ৯৯ শতাংশ সম্ভাব্য অভিবাসী দেশেই থাকতেন। যে পাঁচটি প্রধান কারণে এসব মানুষ বিদেশে অভিবাসী তার মধ্যে রয়েছে জীবিকার অভাব (বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে), অপর্যাপ্ত উপার্জন, অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক সেবার অভাব ও সীমিত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

‘বাংলাদেশ: সার্ভে অন ড্রাইভারস অব মাইগ্রেশন অ্যান্ড মাইগ্র্যান্টস প্রোফাইল’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনটি গতকাল একটি অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ করে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থাটি। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় প্রতিবেদনটির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে আইওএম।

ড্রাই আই’ সমস্যায় ভুগছেন বাংলাদেশি গার্মেন্টস শ্রমিকেরা: গবেষণা

৩১ আগস্ট, ২০২০, দেশ রুপান্তর অনলাইন

অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা, অনুপযুক্ত কাজের পরিবেশ এবং হতাশাসহ নানা সমস্যার কারণে বাংলাদেশের অনেক গার্মেন্টস শ্রমিকের চোখের পানির গুণগত মানের পরিবর্তন (ড্রাই আই) হচ্ছে বলে সুইজারল্যান্ডের পিয়ার রিভিউড জার্নাল এমডিপিআইতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশি গবেষক ডা. একেএম মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশিসহ মোট চারজন বিশেষজ্ঞ এই গবেষণার সঙ্গে ‍যুক্ত ছিলেন।

চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গাজীপুরের ১ হাজার ৫০ জন শ্রমিকের তথ্য সংগ্রহ করে মারাত্মক ড্রাই আইয়ের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩.৮ শতাংশ নারী।

ফলাফলে দেখা গেছে ৬৪. ২ শতাংশেরই ড্রাই আই সমস্যা আছে!

সৌদি আরবে পাশবিক নির্যাতন, লাশ হয়ে ফিরলো ছোট্ট কুলসুম

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা

পরিবারে একটু প্রশান্তির আশায় সৌদি আরবে গিয়েছিল ১৪ বছরের কিশোরী কুলসুম। সেখানে গিয়ে চাকরি আর বেতনের পরিবর্তে তাকে হতে হয় চরম নির্যাতনের শিকার। নির্মম অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে সৌদি আরবের একটি হাসপাতালেই ফুরিয়ে যায় তার জীবন প্রদীপ।

তাই শেষ পর্যন্ত লাশ হয়ে প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরতে হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোর্কণ ইউনিয়নের মেয়ে কুলসুমকে।

নিহতের বাবা জানান, ১৭ আগস্ট জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে তিনি তার মেয়ের লাশ ও আট মাসের বকেয়া বেতন ফেরত পেতে একটি লিখিত আবেদন করেন। লিখিত অভিযোগ তিনি বলেন, স্থানীয় দালাল রাজ্জাক মিয়ার মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ১৭ মাস আগে মেসার্স এম এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে কুলসুমকে গৃহকর্মীর কাজে সৌদি আরব পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, “সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে যোগদানের পর থেকেই আমার মেয়ে কুলসুমের ওপর নির্যাতন শুরু করে মালিকপক্ষ। নির্যাতনের কারণে মেয়েকে ফিরিয়ে আনার জন্যে রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার পরও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। চার মাস আগে সৌদি আরবে গৃহকর্তা ও তার ছেলে মিলে কুলসুমের দুই হাঁটু, কোমর ও পা ভেঙে দেয়। এর কিছুদিন পর একটি চোখ নষ্ট করে রাস্তায় ফেলে দেয়। পরে সৌদি আরবের পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সেখানকার কিং ফয়সাল হাসপাতালে ভর্তি করে। গত ৯ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যায় কুলসুম।”

গাজীপুরে স্টিল কারখানায় দগ্ধ পাঁচজনের জনই মারা গেলেন

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, দেশ রুপান্তর

গাজীপুরের টঙ্গীতে স্টিল কারখানায় উত্তপ্ত তরল লোহা ছিটকে দগ্ধ পাঁচ শ্রমিকের আরও একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে ওই দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হলো।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোজাম্মেল হক (২২) নামের ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, বুধবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) তার মৃত্যু হয়। তার শরীরের ৯০শতাংশ দগ্ধ ছিল।

এর আগে সোমবার রিপন চন্দ্র মোহন্ত (৩০) এবং শনিবার সকালে দুলাল শেখ (৪৫) নামের দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়।.. ..

টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমদাদ হোসেন জানান, গত শুক্রবার ভোরে টঙ্গীর মিলগেট এলাকার এসএস স্টিল লিমিটেড কারখানায় উত্তপ্ত তরল লোহা গলানোর সময় স্ফুলিঙ্গ ছিটকে দুলাল, রিপন, মোজাম্মেল, নিলয় ও আজহারুল নামে পাঁচ শ্রমিক দগ্ধ হন।

টিকিটের জন্য আজও প্রবাসীদের ভিড়

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, সমকাল

সৌদি আরবে ফেরার টিকিটের জন্য সৌদি এয়ারলাইনস ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেছেন প্রবাসীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কাওরান বাজারে সাউদিয়া ও মতিঝিলে বিমানের টিকিটের বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে তাদের ভিড় করতে দেখা যায়। 

সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে টিকিট প্রত্যাশীদের উদ্দেশে মাইকে জানানো হয়, আজ ১ থেকে ৫০০ নম্বর টোকেনধারীদের টিকিট দেওয়া হবে। শুক্রবার ৫০১ থেকে ৮৫০, শনিবার ৮৫১ থেকে ১২০০, রোববার ১২০১ থেকে ১৫০০ নম্বর টোকেনধারীদের টিকিট দেওয়া হবে। যারা টোকেন পাননি, তাদের ২৯ সেপ্টেম্বর আসতে বলা হয়েছে।

তবে প্রবাসী টিকিটপ্রত্যাশীদের কারও কারও অভিযোগ, এ পর্যন্ত ১ থেকে ২০০ জনকে টোকেন দেওয়া হয়েছে।.. ..

ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েন প্রায় ৮০ হাজার প্রবাসীকর্মী। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ছুটিতে আসা কর্মীদের তিন দফায় মোট সাত মাস ছুটি অনুমোদন করা হয়েছে। সর্বশেষ অনুমোদিত ছুটি অনুসারে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজে যোগ দিতে বলা হয়। দেশে আটকা অন্তত ৫০ হাজার প্রবাসীর ভিসা ও ইকামার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

সাত মাস পর কাজে ফিরে যাওয়ার সুযোগ এলেও ফ্লাইটের অভাবে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। টিকিটের দাবিতে তিনদিন ধরে সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিমানের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসী কর্মীরা।

সৌদি এয়ারলাইন্সের সামনে প্রবাসীদের মানবেতর দিনরাত্রী

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

রাত তখন সাড়ে ১১টা, সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চের ওপর শুয়ে আছেন তিনি। মশার কামড় থেকে বাঁচতে পা নাড়াচ্ছেন আর হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন। তারপরও নিস্তার নেই। বাধ্য হয়ে উঠে বসলেন। হুট করে দেখলে মনে হবে ছিন্নমূল ভাসমান মানুষ। কাছে গিয়ে পরিচয় জানতে চাওয়ার পর জানালেন তিনি সৌদি প্রবাসী। গত ৫ দিন ধরেই এভাবে দিন-রাত কাটছে সৌদি অ্যারাবিয়ান সাউদিয়া এয়ালাইন্সের অফিসের পাশে হাতিরঝিল অংশে। একটু দূরে একটা ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান, সেখানে ডিম আর ডাল দিয়ে ভাত খাচ্ছেন কয়েকজন, তারা সৌদি আরব প্রবাসী। আর যাদের টাকা নেই তারা কলা, রুটি খেয়ে নিচ্ছেন। ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটে দেশে এসে করোনার কারণে আটকা পড়ে গেছেন এই প্রবাসীরা। কর্মস্থলে ফিরতে এয়ারলাইন্সটির অফিসের আশেপাশে  টিকিট পাওয়ার আশায়  মানবেতন দিন রাত কাটছে তাদের।

শ্রীমঙ্গলে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা বাগানের শ্রমিকদের দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি

৬ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দুর্গাপূজার আগেই মজুরি বৃদ্ধি ও সেই অনুযায়ী বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে ২৬টি চা-বাগানে দুই ঘণ্টাব্যাপী কর্মবিরতি পালন করেছেন শ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হয়।

ভাড়াউড়া চা-বাগান, ভুরভুরিয়া চা-বাগান, জাগছড়া চা-বাগান, খাইছড়া চা-বাগান, সোনাছড়া চা-বাগান, কালীঘাট চা-বাগান, লাখাইছড়া, মিজাপুর, সাতগাঁওসহ ২৬টি চা-বাগানে একযোগে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করেন।

সকালে উপজেলার ভাড়াউড়া চা-বাগানে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা চা-বাগানের দুর্গাবাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা, চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী প্রমুখ।

কর্মবিরতি পালনকারী শ্রমিকেরা বলেন, বর্তমানে দিনে ১০২ টাকা মজুরি দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ বহন করাও সম্ভব হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে কিন্তু মজুরি সেই অনুযায়ী বাড়েনি।

সারা দেশের চা-বাগানে মজুরি নিয়ে ক্ষোভ

১৩ অক্টোবর, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

শারদীয় দুর্গাপূজার আগে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি ও উৎসব বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে অষ্টম দিনের মতো আজও বাংলাদেশের সব বাগানের চা-শ্রমিকরা দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেছেন।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকরা তাদের নিজ নিজ বাগানে অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেই সঙ্গে তারা তাদের দাবি আদায়ে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি পালন করেন।

সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (শেড) তথ্য অনুসারে, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন (বিসিএসইউ) এবং বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) আলোচনার মাধ্যমে চা-শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে। স্বাধীন বাংলাদেশে চা-শ্রমিকদের জন্য প্রথম নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠিত হয় ১৯৮২ সালে, যা বিসিএসইউ এবং বিটিএ কর্তৃক নির্ধারিত মজুরি অনুসারে মজুরি নির্ধারণ করে। ২০০৯ সালে গঠিত দ্বিতীয় নিম্নতম মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০০৮ সালের ৩২ দশমিক পাঁচ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ৫০ টাকা নির্ধারণ করে।

সরকারি মধ্যস্থতা এবং বিসিএসইউ ও বিটিএর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নগদ মজুরি বাড়িয়ে ২০১৩ সালের জুন থেকে করা হয় ৬৯ টাকা। ২০১৫ সালের জুন থেকে এ শ্রেণির বাগানের জন্য ৮৫ টাকা, বি শ্রেণির বাগানের জন্য ৮৩ টাকা এবং সি শ্রেণির বাগানের মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮২ টাকা।

বিসিএসইউ ও বিটিএর মধ্যে সর্বশেষ চুক্তি সই হয় ২০১৮ সালের ২০ আগস্ট (যা ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর) এবং শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ঠিক হয় এ শ্রেণির বাগানের জন্য ১০২ টাকা, বি শ্রেণির বাগানের জন্য ১০০ টাকা এবং সি শ্রেণির বাগানের জন্য ৯৯ টাকা।

সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর চা বাগানের চা শ্রমিক সুলেখা বাউরী বলেন, ‘আমাদের পাঁচ জনের সংসার। ১০০ টাকায় মাত্র দুই কেজি চাল পাওয়া যায়। অথচ দৈনিক মজুরি আমাদের ১০২ টাকা। বড় কষ্ট করে জীবনযাপন করছি। বেশিরভাগ সময় উপোষ থাকতে হয়।’

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, ‘চা-বাগান মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মালিকপক্ষ ১১২ টাকা থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হয়েছেন। আমাদের দাবি ২৬০ টাকা।’

চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৮ টাকা বেড়ে ১২০

১৬ অক্টোবর ১৬, বাংলা ট্রিবিউন

চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৮ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা করা হয়েছে। চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে মজুরি (বেতন) বাড়ানো বিষয়ক দ্বিপক্ষীয় নতুন চুক্তিতে এই মজুরি বাড়ানো হয়। আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ২১ মাস ১৫ দিন পর বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) এই চুক্তি সম্পাদন হলো। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাখন লাল কর্মকার শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশ চা বোর্ড ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৬৭টি চা-বাগান আছে। এতে নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৭০০ জন। তাদের আগের মজুরি ছিল দৈনিক ১০২ টাকা।

শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ

২০ অক্টোবর, ২০২০, বণিক বার্তা

নৌপরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারা দেশে নদীপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবি আদায়ে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এই কর্মবিরতি শুরু করে শ্রমিকেরা।

বন্দরের তথ্যমতে, বন্দরের বহির্নোঙরে ৩৯টি জাহাজে সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, চুনাপাথর ও জিপসাম, গম, চিনি, ডাল ও শস্যদানা, পাথর ইত্যাদি পণ্য রয়েছে। কর্মবিরতির কারণে এসব বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য স্থানান্তর করে সারা দেশে পরিবহন করা যাচ্ছে না।

নৌযানের শ্রমিকদের ১১ দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিমাসে চার হাজার টাকা খাদ্যভাতা, কর্মস্থলে মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান, নদীপথে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা, নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন, সি ভাতা ও ইনচার্জ ভাতা প্রদান ইত্যাদি।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক নবী আলম বণিক বার্তাকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে যত পণ্য খালাস হয়, সবই নৌপথে নেওয়া হয় সারা দেশে। নদীপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে।

নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার

২৩ অক্টোবর, ২০২০, বণিক বার্তা

খাদ্যভাতা প্রদানসহ ১১ দফা দাবিতে ডাকা নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে এ ধর্মঘট শুরু করেন নৌযান শ্রমিকরা। গতকাল সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত বৈঠকে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘক্ষণ আলোচনার মধ্য দিয়ে নৌযান শ্রমিক ও শ্রমিকরা সমস্যা সমাধান করেছেন। নেতারা চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। এ ধর্মঘট প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে জনজীবনে শান্তি ফিরে আসবে। মানুষের ভোগান্তির অবসান ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১ নভেম্বর থেকে শূন্য টন থেকে এক হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজে কর্মরত শ্রমিকরা মাসিক ১ হাজার টাকা হারে খোরপোশ ভাতা পাবেন। এছাড়া ১ হাজার ১ টন থেকে ১ হাজার ৫০০ টন পর্যন্ত ধারণক্ষমতার জাহাজের শ্রমিকরা মাসিক ১ হাজার ২০০ টাকা ও ১ হাজার ৫০১ টন থেকে জাহাজের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে মাসিক খোরপোশ ভাতা পাবেন শ্রমিকরা। এ বিষয়ে নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে চুক্তি হয়েছে।

পাট-পাট শিল্প-পাট শ্রমিক

১৩ লাখ বেল পাটের কী হবে

৫ আগস্ট, ২০২০, দেশ রুপান্তর

বন্ধ হয়ে গেছে সরকারি পাটকল। প্রতি বছর কৃষকের কাছ থেকে এসব পাটকল ১৩ লাখ বেল পাট কিনত। এবার সেই সুযোগ নেই। চলতি বছর ৮২ লাখ বেল পাট উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমের প্রায় ৩০ শতাংশ পাট ক্ষেত থেকে তুলেছেন কৃষক। এ সপ্তাহেই বাজারে উঠবে নতুন পাট। এত পাট নিয়ে তারা কোথায় যাবেন? ৪০ লাখ পাটচাষির মনে এ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। কারণ বেসরকারি পাটকলগুলোর বড় গুদাম নেই। এজন্য সারা বছরই প্রয়োজন অনুসারে পাট কিনে থাকে তারা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাটের ন্যায্য দাম নিশ্চিতে তারা বদ্ধপরিকর। এজন্য দ্রুত সময়ে বন্ধ পাটকলগুলো আবার চালু করা হবে।… …

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি মৌসুমে ৮২ লাখ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ৭ দশমিক ২৬ হেক্টর জমিতে এবার পাটের আবাদ হয়েছে। গত বছর দেশে ৬৮ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ পাট কাটা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে বাজারে পাট উঠতে শুরু করবে।

কৃষি তথ্যসেবা সূত্রে জানা গেছে, দেশে পাটচাষি ৪০ লাখ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চার কোটি মানুষের জীবিকা পাটকে কেন্দ্র করে। প্রতি বছর মৌসুমে গড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পান কৃষক।

বিজেএমসির তথ্য অনুসারে, সরকারি পাটকলগুলো প্রতি বছর গড়ে ১৩ লাখ বেল পাট কিনে থাকে। গত বছর গড়ে প্রায় দুই হাজার টাকা মণপ্রতি দর পেয়েছেন কৃষক। কিন্তু এবার বেসরকারি পাটকলগুলোর ওপর নির্ভর করতে হবে।.. …

পাটকল বিরাষ্ট্রীয়করণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি

১১ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বিরাষ্ট্রীয়করণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ। এই ব্যানারে আজ মঙ্গলবার খুলনা প্রেসক্লাবে ‘পাটশিল্পের বর্তমান প্রেক্ষিত এবং নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়।

সভায় পাটকলগুলোর লোকসানের মূল কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানে পাটের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় সংলাপ আয়োজন করা, মিলগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে প্রতিটি মিলপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা, সব পাটকলের মাথাভারী প্রশাসন কমানো ও মিলগুলোর আধুনিকায়নের দাবিও জানানো হয়।

মুখর পাট ক্রয়কেন্দ্রে এখন সুনসান নীরবতা

২৩ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বেড়া বাজার পাট ক্রয়কেন্দ্রে এখন সুনসান নীরবতা। অথচ একসময় কয়েক হাজার শ্রমিক ও পাট ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে থাকত এ হাট। পাটকল বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা যেমন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তেমনি কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এখানকার শ্রমিকেরা।

পাটশ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, পাবনার বেড়া উপজেলার বেড়া বাজারের পাট ক্রয়কেন্দ্রের খ্যাতি ছিল উত্তরাঞ্চলজুড়ে। একসময় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রায় সবগুলো পাটকলের ক্রয়কেন্দ্র ছিল এখানে। বেসরকারি পর্যায়েরও কয়েকটি পাটকলের ক্রয়কেন্দ্র ছিল এখানে। এখান থেকে পাট কিনে কলগুলো কারখানায় নিয়ে যেত। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ‘পাটপট্টি’ নামে পরিচিত এই ক্রয়কেন্দ্রে এখনো অর্ধশতাধিক পাটের গুদাম রয়েছে।

ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা আরও জানান, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিক থেকে বেড়ার পাট ক্রয়কেন্দ্রটি স্থবির হতে শুরু হরে। সে সময় ইছামতী নদীর উৎসমুখে বাঁধ দেওয়ায় ক্রয়কেন্দ্রটিতে জাহাজ ও বড় বড় নৌকার প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে এখানে স্থবির অবস্থার সৃষ্টি হয়। এরপরও গত বছর পর্যন্ত ক্রয়কেন্দ্রটি টিকে ছিল। ২০১৯ সালে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি পাটকল এখানে ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে পাট সংগ্রহ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি বিজেএমসি পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁদের ক্রয়কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এবার বেসরকারি কোনো পাটকলের ক্রয়কেন্দ্র এখানে নেই। ফলে এবার পাটের মৌসুমে সুনসান নীরব হয়ে আছে ক্রয়কেন্দ্রটি। দিনের বেলায়ও এখানে যেন ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

বন্ধ ২৫টি পাটকল দ্রুত চালু ও বকেয়া পরিশোধের দাবি

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, সমকাল  

রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল অবিলম্বে চালু এবং শ্রমিকদের পাওনা এককালীন পরিশোধের দাবি জানিয়েছে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদ নামের একটি সংগঠন। শনিবার বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় একই দাবিতে আগামী ২ অক্টোবর বিকেল ৪টায় নগরী খালিশপুর ক্রিসেন্ট গেট চত্বরে শ্রমিক মহাসমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করে সংগঠনটি।

বন্ধ পাটকলগুলো খুলে না দিলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

২ অক্টোবর ২, ২০২০, দক্ষণিাঞ্চল প্রতিদিন

অবিলম্বে বন্ধ সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো চালু এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা এককালীন পরিশোধের দাবীতে শুক্রবার বিকেল ৫টায় খালিশপুর ক্রিসেন্ট মিল গেট চত্ত্বরে এক শ্রমিক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো জনগণের সম্পত্তি। শ্রমিকরা জীবন থাকতে রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো ধ্বংস হতে দেবে না। সরকার যদি অতিদ্রুত পাটকলগুলো খুলে না দেয় এবং বকেয়া পাওনা এককালীন পরিশোধ না করে তাহলে আগামীতে দেশের জনগণকে নিয়ে কঠিন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করা হবে শ্রমিকদের দাবী মেনে নিতে।

পুলিশি বাধায় বন্ধ শ্রমিকদের কফিন মিছিল, মহড়া দিল আ.লীগ

৪ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল পুনরায় চালুসহ ১৪ দফা দাবিতে খুলনায় শ্রমিকদের পূর্বঘোষিত কফিন মিছিল পুলিশি বাধায় বন্ধ হয়ে গেছে। রোববার বিকেল চারটায় ওই মিছিল হওয়ার কথা ছিল। মিছিলটির আয়োজন করেছিল পাটকল রক্ষা শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদ নামের একটি সংগঠন।

এদিকে মিছিলের আগেই দুপুরে আয়োজক সংগঠনের তিনজনকে আটক করে পুলিশ। আটক তিনজন হলেন পাটকল রক্ষা শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক রুহুল আমিন, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিফ অনিক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) আহ্বায়ক সুজয় বিশ্বাস। তাঁরা কফিন মিছিল আয়োজনের জন্য ক্রিসেন্ট জুট মিলের সামনে শ্রমিকদের জড়ো করছিলেন।

পুলিশ বলছে, ওই মিছিল করার জন্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। ওই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার সকালে খালিশপুর শিল্পাঞ্চল এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে নতুন রাস্তা মোড় এলাকার বিআইডিসি সড়কের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ ছাড়া প্রতিটি মিলগেটে বিপুলসংখ্যক শিল্প পুলিশ ও সাধারণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। খালিশপুর এলাকায় দুজনকে একসঙ্গে দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে বেলা পৌনে দুইটার দিকে খালিশপুরের ক্রিসেন্ট জুট মিলের সামনে থেকে আয়োজক সংগঠনের মূল সমন্বয়কসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে সকাল থেকেই ওই এলাকায় জড়ো হতে থাকেন খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। দলের কয়েক শ নেতা–কর্মী দফায় দফায় শিল্পাঞ্চল এলাকায় বিআইডিসি সড়কে মহড়া দেন।

জানতে চাইলে খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সানাউল্লাহ নান্নু দাবি করেছেন, শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাঁদের ফরম পূরণের কাজও চলছে। শিগগিরই তাঁরা টাকা পাবেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে এলাকায় আনন্দ মিছিল করেছেন তাঁরা।

খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের সড়ক অবরোধে পুলিশের লাঠিপেটা

১৯ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী খুলনার আটরা শিল্প এলাকায় খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিল পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ নামের একটি সংগঠন। সোমবার ওই কর্মসূচিতে খুলনার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন পাটকলের শত শত শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন। বেলা ১১টার দিকে শুরু হওয়া ওই কর্মসূচিতে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে। এ সময় কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা।

বন্ধ ঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল পুনরায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু, শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধসহ ১৪ দফা দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে সংগঠনটি। এর আগে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও, স্মারকলিপি পেশ, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সর্বশেষ শ্রমিকদের নিয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে গিয়েছিলেন সংগঠনটির নেতারা।

জামিন পাননি পাটকল শ্রমিক বাম জোটের নেতারা

২১ অক্টোবর, ২০২০, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জামিন পাননি পাটকল শ্রমিক ও বাম জোটের নেতারাপাটকল শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ

খুলনা: খুলনায় গ্রেফতার হওয়া পাটকল শ্রমিক ও বাম জোটের ১৪ জন নেতাকর্মীর জামিন হয়নি। আটরা শিল্প এলাকায় পাটকল শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার (২১ অক্টোবর) তাদের জামিন শুনানির জন্য আদালতে তোলা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলার আসামিরা হলেন, বাসদ খুলনার সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত, যশোরের জেজেআই জুট মিলের সাবেক সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন খান, গণসংহতি আন্দোলনের ফুলতলা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক অলিয়ার রহমান, সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য ও পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব এসএ রশিদ, মহানগর সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, শ্রমিক রবিউল ইসলাম, শেখ রবিউল ইসলাম ওরফে রবি, শামসের আলম, ছাত্র ফেডারেশনের খুলনা মহানগরের আহ্বায়ক আল আমিন শেখ, শ্রমিক নওশের আলী, ফারুক হোসেন, জাহাঙ্গীর সরদার, শহিদুল ইসলাম ও আবুল হোসেন। এর মধ্যে মোজাম্মেল হোসেন খান পলাতক রয়েছেন।

এর আগে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে গ্রেপ্তারদের আদালতে সোপর্দ করা হলেও বিচারক না থাকায় জামিন শুনানি হয়নি।

করোনা পরিস্থিতি

করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট কোথায় পেলেন শাজাহান খানের মেয়ে!

২৬ জুলাই, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার জন্য রওনা হলেও বিমানবন্দর থেকে ফেরত এসেছেন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খান। কারণ, অনলাইনের রেজাল্টের সঙ্গে তার হাতে থাকা করোনার রিপোর্টের মিল পাননি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। রবিবার (২৬ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার রেজাল্ট পজিটিভ এবং তাকে পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। বাংলা ট্রিবিউনের কাছে তার পিসিআর পরীক্ষার মূল (অরিজিনাল) পজিটিভ রিপোর্টটি এসেছে।

এদিকে পজিটিভ ও নেগেটিভ রিপোর্টে দেখা গেছে স্বাক্ষরকারী একজন নয়। একই প্রতিষ্ঠানের দুই জন কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেছেন। পজিটিভ রিপোর্টে স্বাক্ষর করেছেন ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারাল সেন্টারের পরিচালক এবং প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান এবং নেগেটিভ রিপোর্টে স্বাক্ষর করেছেন একই প্রতিষ্ঠানের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) বায়েজিদ বিন মনির।

করোনায় ৯,৬১০জন সংস্কৃতিকর্মীকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহায়তা

২৬ জুলাই, ২০২০, দেশ রুপান্তর

করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া ৯,৬১০ জন সংস্কৃতিকর্মীকে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। রবিবার দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন অনুদানের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (অনুষ্ঠান) অসীম কুমার দে।

মার্চ মাসে করোনার মহামারি পরিস্থিতি শুরু হলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদসহ বিভিন্ন জাতীয় ভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে আর্থিকভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া শিল্পীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এরই প্রেক্ষিতে মে মাসের শেষ দিকে আর্থিক অনুদান সহায়তা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শিল্পকলা একাডেমি এবং সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতায় এই অনুদানের অর্থ প্রদান করা হয়েছে।

অসীম কুমার দে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সর্বনিম্ন ২ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত একজন সংস্কৃতিসেবীকে দেওয়া হয়েছে।… …

ভাড়া দিতে না পেরে ফুটপাতে

২৭ জুলাই ২০২০, সমকাল

করোনা মহামারিতে উপার্জন হারিয়ে বিপাকে রয়েছে বহু মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ আছে চরম সংকটে। এমনিতেই তাদের আয় খুব সামান্য। তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চালানোই মুশকিল ছিল। এর মধ্যে করোনার হানায় তারা আক্ষরিক অর্থেই পথে বসেছেন। যারা ছোটখাটো কিছু করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, পরিবার নিয়ে থাকতেন বস্তির ঘরে, তাদের অনেকেই সেই আশ্রয়টুকুও হারিয়েছেন। দুঃসময়ে কেউ কেউ গ্রামে ফিরলেও কিছু মানুষের ফেরার মতো কোনো গ্রাম নেই, ভিটেমাটি নেই। তাই তাদের ঠিকানা হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত। চন্দ্রিমা উদ্যানসংলগ্ন চৌরাস্তা (বিমান মোড় নামে পরিচিত) এলাকার ফুটপাতে রাতে কিছু মানুষকে ঘুমাতে দেখা যায়।.. …

সুমন নামের এক যুবক জানালেন, তিনি বিভিন্ন সিগন্যালে থেমে থাকা যানবাহনের যাত্রীদের কাছে ফুল বিক্রি করতেন। স্ত্রী নাহারকে নিয়ে থাকতেন আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজার এলাকার বস্তিতে। একটি ঘরের ভাড়া দিতে হতো পাঁচ হাজার টাকা। তবে করোনাকালে তার আয় একেবারে তলানিতে এসে ঠেকে। একপর্যায়ে ঘর ছেড়ে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র নিয়ে চলে আসেন। চন্দ্রিমা উদ্যানের ভেতর পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা ফুচকার গাড়ির নিচের অংশে রেখেছেন সেসব। দিনে একবেলা রান্না করে খান, তারপর জিনিসপত্র আবার সেখানে রেখে দেন। আগে কাঁথা-বালিশ, হাঁড়ি-কড়াই বিমান ভাস্কর্যের খোলের ভেতর রাখতেন। তবে পুলিশ ঝামেলা করায় সেগুলো সরিয়েছেন। দিনের বেলায় স্বামী-স্ত্রী পার্কে বা ফুটপাতে যেখানে সুযোগ হয় থাকেন। রাতে তারা বিছানা পেতে ঘুমান ফুটপাতে। এতে ঘরভাড়া দেওয়া থেকে রেহাই পেয়েছেন। কারণ, এখন খাবার জোটানোই মুশকিল, ভাড়া দেবেন কীভাবে।

সুমনের পাশেই ছিলেন ২৪ বছর বয়সী শরীফ। তাকে একটু রাগান্বিত মনে হলো। তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘আপনারে এইগুলা কইয়া আমগো লাভ কী? আপনে কিছু দিবেন? অ্যার আগেও একদিন সাম্বাদিক আইসা ছবি তুলছে। কই, কিছু তো পাইলাম না।’

বাসদের করোনা সেবা কার্যক্রমে বাধা, দফায় দফায় হট্টগোল

২৯ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

বরিশালে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) করোনাভাইরাস-বিষয়ক সেবা কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বুধবার সকাল থেকে দফায় দফায় হট্টগোলের পর দুপুরে পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এলাকাজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে বাসদ বরিশালে মানবতার বাজার, অক্সিজেন ব্যাংক এবং মানবতার অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। নগরের ফকির বাড়ি রোডের একটি বিদ্যালয় ভবন থেকে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। মাতৃছায়া শিশু কানন নামের ভবনটির মালিক হাসান ইমাম চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। তাঁর কাছ থেকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ভবনটি ভাড়ায় নেন বরিশাল সিটি কলেজের অধ্যক্ষ সুজিৎ কুমার দেবনাথ। সেখানে তিনি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালান। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ। তাই সুজিৎ কুমার দেবনাথের অনুমতি নিয়ে বিনা ভাড়ায় বিদ্যালয়ের চারটি কক্ষে গত ১৮ মার্চ থেকে মানবতায় সেবায় বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করে বাসদ।

বাসদ বরিশাল জেলা কমিটির সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি অধ্যক্ষ সুজিৎ কুমার দেবনাথ একটি বিশেষ মহলের প্ররোচনায় পড়েন। তিনি ভবনটিতে মানবতার কার্যক্রম চালানোর জন্য ভাড়ার পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম দাবি করেন। কিন্তু বাসদের পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। দলের পক্ষ থেকে শুধু ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাতে সুজিৎ কুমার সম্মত না হয়ে কক্ষ ছেড়ে দিতে নানা ধরনের চাপ দেন।

দেশে চীনা টিকার ট্রায়াল অনিশ্চিত

৩০ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

দেশে চীনা টিকার ট্রায়াল বা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশকে (আইসিডিডিআরবি) চীন থেকে টিকা আনার অনুমোদন দেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ট্রায়ালের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে। তবে অন্য দেশের উদ্ভাবিত টিকা পাওয়ার ব্যাপারে সরকার কাজ শুরু করেছে।

করোনা প্রতিরোধে দেশে টিকার ট্রায়াল, টিকা উৎপাদন এবং বিদেশ থেকে টিকা আনা নিয়ে আলোচনা চলছে তিন মাস ধরে। ইতিমধ্যে ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশে চীনা টিকার ট্রায়াল বিষয়ে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। ভারত টিকা উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, পাশাপাশি বিপুল সংখ্যায় টিকা উৎপাদনেরও প্রস্তুতি নিয়েছে। অন্যদিকে জুন মাসের শেষ দিকে সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা টিকার ট্রায়াল বিষয়ে প্রতিবেদন করার সময় গণমাধ্যমকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে বলেছিলেন। এ থেকে অনেকেরই মনে হয়েছে, টিকার পেছনে বৈশ্বিক রাজনীতি থাকলেও থাকতে পারে।

নমুনা টেস্টে প্রতি ১০০ জনের ৩২ জনই করোনায় আক্রান্ত

৩ আগস্ট, ২০২০, দেশ রুপান্তর

নানা কারণে দেশ জুড়ে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা কমলেও সবশেষ চব্বিশ ঘণ্টায় শনাক্ত হারে ব্যাপক উঠতি দেখা গেছে। এই সময়ে যে কয়টা নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তাতে রিপোর্ট পজিটিভ আসার হার প্রায় ৩২ শতাংশ।

কভিড-১৯ নিয়ে সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিনে জানানো হয়, এদিন সকাল আটটা পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৪ হাজার ২৩৮টি। আগের দিনেরসহ মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৪ হাজার ২৪৯টি। তাতে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে ১ হাজার ৩৫৬ জনের শরীরে।

চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের শতকরা হার ৩১.৯১ শতাংশ, দেশে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শনাক্ত হারের ঘটনা।

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ওই দিন করোনা শনাক্তের হার ছিল ৪৩ শতাংশ। ৭ জনের পরীক্ষা করে ৩ জন শনাক্ত করা হয়েছিল। এরপর সবশেষ চব্বিশ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্ত দেখল দেশ।

ক্ষুব্ধ চিকিৎসক-নার্স স্বাস্থ্যকর্মীরা

০৫ আগস্ট ২০২০, সমকাল

করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা, খাওয়া ও যাতায়াত ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী তারা একটানা পনেরো দিন দায়িত্ব পালন শেষে পরবর্তী পনেরো দিন ছুটিতে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। তবে এই সময়ে তারা আবাসন সুবিধা পাবেন না। নিজেদের বাসা-বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। দায়িত্ব পালনকালে তাদের স্বাস্থ্য বিভাগের নির্ধারিত সরকারি ভবনে থাকতে হবে। আবাসিক সুবিধা না নিলে সরকার নির্ধারিত হারে ভাতা পাবেন। হাসপাতাল থেকে সরকার নির্ধারিত আবাসস্থলে যাতায়াতের জন্যও সরকার নির্ধারিত যানবাহন ব্যবহার করতে হবে।

ঈদের ছুটির আগে ২৯ জুলাই ওই পরিপত্র জারি করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। তবে ওই পরিপত্র নিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকে ওই পরিপত্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন চিকিৎসকরা। ছুটি শেষে গত রোববার রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক সমকালকে বলেন, পরিপত্রের বিষয়টি নিয়ে সবার মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ পরিপত্রটি পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের সদস্যরা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়বেন। সুতরাং এটি বাতিল করা জরুরি।

মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া হাসপাতালে অভিযান নিষেধ

৬ আগস্ট, ২০২০, বাংলাদেশ প্রতিদিন

অনুমতি ছাড়া সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে অভিযান পরিচালনা না করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কোথাও কোনো হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে।

দেশে করোনাভাইরাসের তিনটি ধরন সক্রিয়

৯ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

দেশে করোনা সংক্রমণের মূলে আছে ভাইরাসের তিনটি ধরন। করোনাভাইরাসের জিনের কাঠামো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এটা জানতে পেরেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা বিষয়ে এই তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করছে।

বাংলাদেশে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে মূলত জি ধরনের (জি ক্লেড) করোনাভাইরাস। অন্য দুটি ধরন হচ্ছে জিএইচ ও জিআর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এগুলোর সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা অনেক বেশি কি না, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে আক্রান্ত হলে মৃত্যু হবেই—এমন নজির দেখা যাচ্ছে না।

কাল থেকে বন্ধ করোনা নিয়ে অনলাইন বুলেটিন

১১ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিন কাল বুধবার থেকে সম্প্রচার হবে না। কাল থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ–সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হবে গণমাধ্যমকে। আজ মঙ্গলবার শেষবারের মতো এই বুলেটিন তুলে ধরেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। সেখানে তিনি এসব কথা জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সোমবার বলেছিলেন, অচিরেই বন্ধ করা হবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইন বুলেটিন।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে শুরুর দিকে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং চলত। করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকলে একপর্যায়ে তা অনলাইনে শুরু হয়। তবে সেই সময়ও সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল। তবে গত ৮ এপ্রিল গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। শুধু প্রতিদিন বেলা আড়াইটায় বুলেটিন চালু রাখা হয়েছিল।

মহামারীর মধ্যেই ছাঁটাই শুরু করল ডেইলি স্টার

১৮ আগস্ট, ২০২০, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে বিক্রি কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের আয়ে ধস নামার পর কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে ইংরেজি ভাষার দৈনিক ডেইলি স্টার।

প্রথম ধাক্কায় চাকরি হারাচ্ছেন প্রায় ৩৫ জন কর্মী। এই তালিকায় থাকা তিনজন কর্মী সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, মানবসম্পদ বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে তারা ফোন পেয়েছেন। তাদের বলা হয়েছে, ১৯ অগাস্টের মধ্যে নিজে থেকে ইস্তফা না দিলে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে।

যাই ঘটুক, ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের আট মাসের মূল বেতন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ডেইলি স্টারের এই কর্মীদের। তবে পাওনা বুঝে পাওয়ার বিষয়টি যেহেতু এখনও বাকি, সেহেতু নিজেদের নাম এখন প্রকাশ হোক, তা তারা চাননি।

তাদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ দুপুর ১টার দিকে এইচআর থেকে ওই ফোন পেয়ে তো আমি হতভম্ব। আমাকে বলা হল, অপশন আছে দুইটা। হয় আমি পদত্যাগ করব, আর না হলে ছাঁটাই। এতগুলো বছর কোম্পানির জন্য এত কাজ করলাম, এখন আমাকে চলে যেতে হবে!”

প্রাথমিকভাবে ছাঁটাইয়ের এই তালিকায় আছেন মূলত বার্তা কক্ষের বাইরের কর্মীরা। ডেইলি স্টারের আইটি ও প্রডাকশন ইউনিটের ডজন তিনেক কর্মী রয়েছেন এর মধ্যে। সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের বড় ছাঁটাই এটি।

করোনাকালে দেশে ফিরেছেন ৬৪ হাজার প্রবাসী কর্মী

১৮ আগস্ট, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাওয়ার সময়ের পর এখন পর্যন্ত ২৩টি দেশ থেকে ফেরত এসেছেন ৬৪ হাজার ৬৩ জন প্রবাসী কর্মী। এরমধ্যে পুরুষ কর্মী ৬১ হাজার ২১৫ জন এবং নারী কর্মী ২ হাজার ৮৪৮ জন। ফিরে আসা কর্মীদের একটি বড় অংশ কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। কাজ হারিয়ে ফেরত আসা এই কর্মীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৭৪৪ জন। অর্থাৎ শতকরা ৫৯ ভাগই ফেরত এসেছেন কাজ হারিয়ে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১ এপ্রিল থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত তারা ফেরত এসেছেন। এরমধ্যে সৌদি আরব থেকে এসেছেন ১১ হাজার ৪১১ জন, মালদ্বীপ থেকে ৭ হাজার ৪৪৭ জন, সিঙ্গাপুর থেকে ১ হাজার ৩৩২ জন, ওমান থেকে ৩ হাজার ১৫৫ জন, কুয়েত থেকে ৬ হাজার ৭০৩ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২২ হাজার ৬৫ জন, বাহরাইন থেকে ৭৪৬ জন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৭১ জন, কাতার থেকে ৫ হাজার ৪৮৩ জন, মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার ৫৫৯ জন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১০০ জন, থাইল্যান্ড থেকে ২০ জন, মিয়ানমার থেকে ৩৯ জন, জর্ডান থেকে ৭৩৬ জন, ভিয়েতনাম থেকে ১৫ জন, কম্বোডিয়া থেকে ৪০ জন, ইতালি থেকে ১৫১ জন, ইরাক থেকে ১ হাজার ২০ জন, শ্রীলঙ্কা থেকে ৮০ জন, মরিশাস থেকে ৩৬ জন, রাশিয়া থেকে ১০০ জন, তুরস্ক থেকে ১ হাজার ৫৬০ জন এবং লেবানন থেকে ১৯৪ জন ফেরত এসেছেন।

করোনাকালে ঢাকা ছেড়েছে ১৬ শতাংশ দরিদ্র মানুষ

১৮ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

ভাগ্যের অন্বেষণে গ্রাম থেকে শহরমুখী হয় মানুষ। আমাদের আর্থসামাজিক বাস্তবতা এটাই। কিন্তু মহামারি করোনা সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। একসময় গ্রাম থেকে একটু ভালো করে বাঁচার আশায় যারা শহরে এসেছিল, তারা আবার হয়েছে গ্রামমুখী। বেসরকারি সংগঠন পিপিআরসি ও বিআইজিডির গবেষণার তথ্য, করোনাকালে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে অন্তত ১৬ শতাংশ দরিদ্র মানুষ।

বাড়িভাড়া, চিকিৎসা খরচ, যোগাযোগের ব্যয় এবং অন্য নানামুখী ব্যয় মেটাতে না পেরেই এসব মানুষ ঢাকা ছেড়েছে।

আজ সোমবার এক ভার্চ্যুয়াল সভায় ‘লাইভলিহুড, কোপিং অ্যান্ড রিকভারি ডিউরিং কোভিড-১৯’ শীর্ষক জরিপভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

২০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত চলে এ জরিপ। এতে অংশ নেয় ৭ হাজার ৬৩৮ পরিবার। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশের বেশি শহরের পরিবার, ৪৩ শতাংশের বেশি গ্রামের পরিবার এবং ১ দশমিক ২২ শতাংশ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবার। এবারের জরিপে গ্রাম এবং শহরের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষও যুক্ত ছিল।

জরিপে দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এপ্রিল মাসে ৬ শতাংশ শহুরে দরিদ্র মানুষ শহর থেকে গ্রামে চলে যায়। জুনে এসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। জুন মাসে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসে শহুরে দরিদ্র মানুষের আয় কমে গেছে ৪৩ শতাংশ, গ্রামের মানুষের আয় ৪১ শতাংশ আর পার্বত্য চট্টগ্রামের দরিদ্র মানুষের আয় কমেছে ২৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ১৭ শতাংশ জুনে এসে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বাসাবাড়িতে কাজ করত যেসব মানুষ, যাদের মধ্যে প্রায় বেশির ভাগই নারী, তাদের কাজ হারানোর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাদের সংখ্যা ৫৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। এরপর আছে অদক্ষ শ্রমিক, দক্ষ শ্রমিক। দেখা গেছে, কারখানার শ্রমিক ও কৃষিশ্রমিকদের মধ্যে কাজ হারানোর হার অপেক্ষাকৃত কম। দুই পেশাতেই ১০ শতাংশের কিছু বেশি।

করোনার আগে, লকডাউনের সময় ও লকডাউন তুলে নেওয়ার পর দারিদ্র্য পরিস্থিতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয় গবেষণায়। দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে যেখানে শহরে খাবারে ব্যয় ছিল ৬০ টাকা, এপ্রিলে তা কমে হয় ৪৪ টাকা। জুনে এসে এটি সামান্য বাড়ে, হয় ৪৫ টাকা। শহরাঞ্চলে দরিদ্র মানুষের খাবারের ব্যয়ে কিছু উন্নতি হলেও গ্রামে পরিস্থিতি লকডাউনের পরেও ভালো হয়নি। দেখা গেছে, গ্রামে ফেব্রুয়ারিতে খাবার ব্যয় ছিল ৫২ টাকা। এপ্রিলে তা কমে হয় ৪১ টাকা, জুনে ৩৭ টাকা।

আয়ের নিরিখে দেখা যায়, শহরাঞ্চলে দরিদ্র মানুষের আয় ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১০৮ টাকার বেশি। এপ্রিল তা অনেকটা কমে হয়ে যায় ২৬ টাকা, জুনে দাঁড়ায় প্রায় ৬৭ টাকায়। গ্রামাঞ্চলে আয় ফেব্রুয়ারিতে ছিল প্রায় ৯৬ টাকা। এপ্রিল ও জুনে হয় যথাক্রমে ৩৭ ও ৫৩ টাকার কিছু বেশি।

করোনাকালে এক নতুন দরিদ্র শ্রেণি তৈরি হয়েছে। এপ্রিল মাসে তাদের সংখ্যা ছিল ২২ দশমিক ৮ শতাংশ। জুনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যখন চালু হয়ে গেছে, তখন এ সংখ্যা সামান্য কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

লকডাউনে সব শ্রেণির মানুষের আয় কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে রিকশাচালকদের আয়। তাঁদের প্রায় ৫৪ শতাংশ আয় কমেছে। এরপর আছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহনশ্রমিক ও অদক্ষ শ্রমিক।

সমীক্ষায় উঠে এসেছে ত্রাণ সহায়তার চিত্র। করোনাকালে অসহায় মানুষের সহায়তায় নগদ অর্থ দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছিল জোরেশোরে। সমীক্ষায় দেখা যায়, শহর-গ্রাম-পার্বত্য এলাকার মধ্যে শহরেই নগদ সহায়তার পরিমাণ বেশি। তাও মাত্র প্রায় ১৬ শতাংশ মানুষ এ সহায়তা পেয়েছে। গ্রামে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় ১০ শতাংশ। পরিবারপ্রতি খরচ হয়েছে ১ হাজার ৭৬৭ টাকা ৬৮ পয়সা। যদি সব দরিদ্র মানুষকে এটা দেওয়া হতো, তবে তাদের কাছে যেত শহরে মাত্র ২৭২ টাকা, গ্রামে প্রায় ৬১ টাকা।

নয় দেশ থেকে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন ৪১ হাজার প্রবাসী

২৩ আগস্ট, ২০২০, বণিক বার্তা

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত মহামারীর কারণে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে প্রবাসী অধ্যুষিত অধিকাংশ দেশ। এতে বিপুলসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক এরই মধ্যে চাকরি হারিয়েছেন। অর্থাভাবে টিকতে না পেরে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে শুধু নয় দেশ থেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ৪০ হাজার ৭৫৬ জন প্রবাসী কর্মী।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য বলছে, গত ১ এপ্রিল থেকে ১৮ আগস্ট চাকরি হারিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কর্মী ফেরত এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে। গত সাড়ে চার মাসে দেশটি থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ২৩ হাজার ৫০২ জন। এর মধ্যে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা ২২ হাজার ৫৭৩। নারী কর্মী রয়েছেন ৯২৯ জন।

দেশে করোনায় একদিনে ৫৪ জনের মৃত্যু

আগস্ট ২৬, ২০২০, বণিক বার্তা অনলাইন

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯-এ দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ হাজার ৮২ জনে।

এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫১৯ জন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেল। মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩ লাখ ২ হাজার ১৪৭ জনে।

করোনায় মৃত্যু কমানোর চেষ্টায় ঘাটতি থাকছেই

২৯ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

প্রতিদিন করোনায় মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এসব মৃত্যু কমানোর কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাযথ পদক্ষেপ নিলে মৃত্যু কমানো সম্ভব।

গতকাল শুক্রবার এক দিনে ৪৭ জন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের দিন মারা গিয়েছিলেন ৪৫ জন। ২৬ আগস্ট এই সংখ্যা ছিল ৫৪। ২৪ আগস্ট থেকে প্রতিদিন ৪০ জনের বেশি মৃত্যু ঘটে চলেছে। সরকার দাবি করছে, দেশে সংক্রমণ কমছে। প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিদিন এত মৃত্যু হচ্ছে কেন? আরও বড় প্রশ্ন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনায় মৃত্যু কমানোর সুনির্দিষ্ট কী উদ্যোগ নিয়েছে?

নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কাজটি চালু থাকলেও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জোরালো কাজ এখন মাঠপর্যায়ে নেই। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিকে শনাক্ত করা ও শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিকে নজরদারিতে রাখা—এসব কাজ কার্যত বন্ধ রেখেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

লকডাউন (অবরুদ্ধ) করা নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন রাখার কাজ থেকেও অনেকটা সরে এসেছে অধিদপ্তর। সার্বিকভাবে সরকারের কাছে মহামারির গুরুত্ব অনেকটাই কমে গেছে বলে সাধারণ মানুষের ধারণা।

দেশে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ১৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ —সব বয়সী মানুষ করোনায় মারা গেছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে কোনো কোনো পরিবার চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।

দৃষ্টিভঙ্গির ভুলে করোনা মোকাবিলা বাধাগ্রস্ত

৩১ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

প্রসিদ্ধ চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী দ্য ল্যানসেট করোনা পরীক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের সমালোচনা করেছে। ল্যানসেট বলেছে, নমুনা পরীক্ষা ও নজরদারি বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি করোনা মোকাবিলাকে বাধাগ্রস্ত করছে। সাময়িকীটি মনে করে, মূল্য নির্ধারণের কারণে নমুনা পরীক্ষা কমেছে।

‘বাংলাদেশের কোভিড-১৯ পরীক্ষা সমালোচিত (বাংলাদেশস কোভিড-১৯ টেস্টিং ক্রিটিসাইজড)’ শিরোনামের এক পৃষ্ঠার প্রতিবেদন গতকাল শনিবার ল্যানসেটের অনলাইন সংস্করণে ছাপা হয়েছে। প্রতিবেদনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান, জনস্বাস্থ্য গবেষণাবিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমিনেন্সের প্রধান শামীম তালুকদারসহ একজন চিকিৎসকের বক্তব্য ছাপা হয়েছে। চেষ্টা করেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য পায়নি ল্যানসেট।.. …

ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ কোটি ৮০ লাখ নাগরিকের দেশে দৈনিক ১২ থেকে ১৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। করোনা পরীক্ষায় ফি নির্ধারণের কারণে দৈনিক প্রতি এক হাজার মানুষের ক্ষেত্রে দশমিক ৮টি নমুনা পরীক্ষা কমেছে।

‘অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা’ এড়ানোর জন্য সরকার জুনের শেষে করোনার নমুনা পরীক্ষায় ২০০ টাকা করে ফি নির্ধারণ করে। বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহে ৫০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষা করালে সাড়ে তিন হাজার টাকা ফি ঠিক করা হয়। পরে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে সরকার ফি কমায়। হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করালে ফি ১০০ টাকা। বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করলে ফি দিতে হবে ৩০০ টাকা। ল্যানসেট বলছে, ফি নির্ধারণের পর বাংলাদেশে নমুনা পরীক্ষা আকস্মিকভাবে কমে গেছে।

এমিনেন্সের প্রধান শামীম তালুকদার ল্যানসেটকে বলেছেন, করোনা মহামারি দেশের ‘অনৈতিক’ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার চেহারা উন্মোচিত করেছে। তিনি বলেছেন, মহামারির শুরু থেকে সরকার কোভিড-১৯ পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। শুরুতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এখন সরকারি পর্যায়ে পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, এর অর্থ হলো পরীক্ষা থেকে দরিদ্ররা বাদ।

ঢাকার একাধিক কবরস্থান ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শামীম তালুকদার ল্যানসেটকে বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে করোনায় মৃত্যু কমপক্ষে চার গুণ বেশি বলে কবরস্থানের ব্যবস্থাপকেরা তাঁকে জানিয়েছেন। অনেকে করোনায় মারা গেছেন, কিন্তু তাঁদের করোনা পরীক্ষা হয়নি অথবা মৃত্যুর আগে পরীক্ষার ফলাফল জানা যায়নি।

আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক ও করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান ল্যানসেটকে বলেছেন, পরীক্ষার জন্য ফি নির্ধারণ বাস্তবিকই সমস্যা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের জন্য। মহামারির সময় মানুষের কাজ নেই, তাঁদের হাতে অর্থ নেই, তাঁরা ব্যাপক অসুবিধার মধ্যে আছেন…পরীক্ষার জন্য সরকারের ফি নির্ধারণ কর উচিত নয়। পরীক্ষার ফলাফলে বিলম্বসহ আরও কিছু সমস্যার উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা খুবই কম।

জুলাই মাসে জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। এসব ঘটনারও ইঙ্গিত আছে ল্যানসেটের প্রতিবেদনে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ পরীক্ষার বিপুল পরিমাণ ভুয়া সনদ দেওয়ার কারণে মধ্য জুলাইয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনা দেশের অনিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি খাতের ওপর আলো ফেলে।.. ..

নাম ও পরিচয় গোপন রেখে ল্যানসেট একজন চিকিৎসকের বক্তব্য প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। ওই চিকিৎসক বলেছেন, ‘এই মহামারি দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকবে। আমি এই ভেবে ভীত যে কখন বাংলাদেশে শীতকাল আসবে। মানুষজন ভীত।’ অনেকের আশঙ্কা, শীতকালে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে।

ঢাকার দুই বড় হাসপাতালে করোনা রোগী বেড়েছে, চালু ‘পোস্ট করোনা ক্লিনিক’

৩০ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরও যাঁরা নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন, তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছে দুটি বড় সরকারি হাসপাতাল। গত সপ্তাহে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চালু হয়েছে ‘পোস্ট কোভিড ক্লিনিক’। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ গতকাল থেকে চালু করেছে ‘পোস্ট করোনা ক্লিনিক’।… …

ঢাকার দুই হাসপাতালে রোগী বেশি:

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, সারা দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৪ হাজার ৮৪৩টি শয্যা রয়েছে। বর্তমানে খালি পড়ে আছে ১১ হাজার ৪৫টি শয্যা। অর্থাৎ ৩ হাজার ৭৯৮ জন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ৮০৪টি শয্যা আছে। এর মধ্যে ৬৬৮টিতে রোগী আছেন। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য শয্যা আছে ২২৫টি। আজ রোববার পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ২০৬ জন করোনা রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।

হাসপাতাল দুটির পরিচালকেরা জানিয়েছেন, কোরবানির ঈদের আগে করোনা রোগীর ভর্তির হার কমে গিয়েছিল। কিন্তু কোরবানির ঈদের পর করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে।

বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য শয্যাসংখ্যা ২২৫। রোববার পর্যন্ত ভর্তি আছেন ২০৬ জন করোনা রোগী। অথচ ঈদের আগে ১৭০ থেকে ১৮০ জন করোনা রোগী ভর্তি থাকতেন। বর্তমানে করোনা রোগী দুই শর নিচে নামছেই না। হঠাৎ করে করোনা রোগীর এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কেন, সেটি বুঝতে পারছি না।’

অন্যদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কোরবানির ঈদের আগে করোনা রোগী ভর্তির হার বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু ঈদের পর রোগী আসার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। এখন প্রতিদিন আমাদের হাসপাতালে ৭৫ থেকে ১০০ জন করোনা রোগী আসছেন। আমরা যখন মে মাসে করোনা রোগী ভর্তি শুরু করি, তখন গড়ে ৭০০ জনের বেশি করোনা রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতেন। এই আগস্ট মাসে এসেও দেখতে পাচ্ছি, এখন আবার ৭০০ জনের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগজনক।’… …

ভিয়েতনাম কাতার ফেরত ৮৩ শ্রমিক কোয়ারেন্টাইন শেষে গ্রেফতার

০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ইত্তেফাক

ভিয়েতনামফেরত ৮১ জন ও কাতারফেরত ২ জন অভিবাসী শ্রমিককে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে নিয়েছে পুলিশ। এর আগে আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় কোয়ারেন্টিন শেষে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তুরাগ থানার ওসি নূরুল মুত্তাকিন এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, ১৮ আগস্ট দেশে ফেরার আগে এসব শ্রমিকেরা ভিয়েতনামের হ্যানয়ে বাংলাদেশি দূতাবাসের সামনে অবস্থান নেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভিয়েতনাম সরকার পাচারকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে ফেরত আসা ২৫৫ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এসব শ্রমিকদের মুক্তি দাবি করে বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম) এক বিবৃতিতে বলে, এই অভিবাসীদের অধিকাংশই ‘‘অনিবন্ধিত হয়ে পড়া’’ এবং মদ্যপানসহ গুরুতর নয় এমন অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত যাদের বেশির ভাগই অর্ধেক বা তার বেশি সাজা ভোগ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমায় মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন। এদের কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট দেশে ‘টেলিকম নীতি’ লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি ভোগ করেছেন। কেবলমাত্র টক টাইম বিক্রির অপরাধে দণ্ডিত হয়েছিলেন কয়েকজন যা বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত চর্চা এবং সাধারণত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় না। বন্দীদের কাউকেই প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে বহির্বিশ্বে “বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করায়” এবং ভবিষ্যতে তারা খুন, ডাকাতি, সন্ত্রাসবাদ ও নাশকতা কার্যক্রম সংঘটন করতে পারে এমন সন্দেহে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

গ্রুপভিত্তিক সরকারবিরোধী কর্মসূচির’ অভিযোগে এখন তাঁরা কারাগারে 

১ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

প্রতারণার শিকার অভিবাসী শ্রমিকেরা দেশে ফেরার দাবি নিয়ে ভিয়েতনাম দূতাবাসের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন মধ্য জুলাইয়ে। শুরু থেকেই তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযোগ, এই শ্রমিকেরা ভিয়েতনামে বাংলাদেশ দূতাবাস দখল করতে গেছেন। তাঁরা দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট করেছেন। এরপর শ্রমিকেরা দেশে ফিরলে দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টিনে উত্তরার দিয়াবাড়িতে রাখা হয়। কোয়ারেন্টিন শেষে এসব অভিযোগে তাঁদের কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

 আজ মঙ্গলবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়ির কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে ৮১ জন অভিবাসী শ্রমিককে আদালতে নিয়ে যায় তুরাগ থানার পুলিশ। ভিয়েতনাম থেকে ফেরা বাকি ২৫ জনকে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ আগস্ট একটি বিশেষ বিমানে করে ১০৬ জন বাংলাদেশে পৌঁছান। তখন থেকে তাঁরা উত্তরার দিয়াবাড়িতে ছিলেন।

ভিয়েতনামফেরত ৮১ জন ও কাতারফেরত ২ জনের বিরুদ্ধে তুরাগ থানার পুলিশ ‘গ্রুপভিত্তিকভাবে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মসূচি পালন’সহ বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটাতে সলাপরামর্শ করার অভিযোগ এনেছে আদালতের কাছে। তুরাগ থানার উপপরিদর্শক মো. আনোয়ারুল ইসলাম আদালতের কাছে তাঁদের ‘সুষ্ঠু তদন্তের’ স্বার্থে জেলহাজতে আটক রাখা প্রয়োজন বলে আরজিতে উল্লেখ করেন।

আদালতের কাছে পুলিশ দাবি করেছে, ভিয়েতনামের ৮১ জন ও কাতারের ২ জন বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে ছিলেন। তাঁরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। কোয়ারেন্টিন সময়ের পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হলে তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, পারিবারিক সহিংসতা ও জঙ্গি নাশকতামূলক অপরাধে সম্পৃক্ত হতে পারেন।

পুলিশ নিয়ে যাওয়ার আগে কথা হয় কোয়ারেন্টিনে থাকা ভিয়েতনামফেরত শ্রমিক মো. আলমগীর আলমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত ৩০ আগস্ট পুলিশ তাঁদের আদালতে নেবে বলে জানায়। কেন নেওয়া হবে, এর কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা তারা দেয়নি। তাঁরা অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাননি। প্রত্যেকে চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ করেছেন এবং তাঁদের প্রত্যেকের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ছাড়পত্র ছিল। দালালেরা তাঁকে বলেছিলেন, ভিয়েতনামে সোফা ফ্যাক্টরিতে কাজ দেবেন। কিন্তু সেই কাজ তিনি পাননি। ওখানে পৌঁছানোর পর ছোটখাটো দু-চারটে কাজ দিলেও কোনোটিই দীর্ঘমেয়াদি ছিল না। একপর্যায়ে তিনিসহ আরও অনেকে পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়েন। তাঁরা আশা করছিলেন, প্রতারক রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।.. …

এমনকি দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠির সূত্র ধরে বিএমইটি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকেও চিঠি দেয়। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম বলেন, ‘কর্মীরা প্রতিনিয়ত এনজিও, মানবাধিকারকর্মী এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন। এতে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’.. ..

এর আগে কুয়েত থেকে ১৪১, কাতার থেকে ৩৯ এবং বাহরাইন থেকে ৩৯ জনসহ মোট ২১৯ জন প্রবাসী দেশে ফেরার পর তাঁদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো প্রবাসীদের সাজা মওকুফ করে দেশে পাঠিয়েছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশ একই আরজি জানিয়েছিল।

লাখ প্রবাসী নিঃস্ব, আসছেন আরও

২ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

বিশ্বে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে ছুটিতে আসেন প্রায় দুই লাখ প্রবাসী। তাঁরা ফিরতে পারছেন না। সব প্রস্তুতি শেষ করেও যেতে পারেননি এক লাখ নতুন কর্মী। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ফিরে এসেছেন আরও এক লাখ কর্মী। এই চার লাখ কর্মী নিঃস্ব হয়ে গেছেন, বিপন্ন হয়ে পড়েছে তাঁদের পরিবার। গড়ে প্রতিদিন ফিরে আসছেন দুই হাজার কর্মী।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক বলছে, করোনায় যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পরও ফিরে এসেছেন অনেক প্রবাসী কর্মী। শুরুর দিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল ভাড়া করা বিশেষ ফ্লাইটে। গত মাস থেকে নিয়মিত ফ্লাইটে। গত ১ এপ্রিল থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ফিরেছেন ৯৫ হাজার ৬২ জন। এঁদের বড় অংশকেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ১৬ দিনেই এসেছে ৩১ হাজার প্রবাসী। আর শেষ চার দিনেই এসেছেন প্রায় ১০ হাজার কর্মী। ফিরে আসা প্রবাসীদের মধ্যে নারী কর্মী আছেন ৬ হাজার ৬৫৬ জন। ফিরে আসা কর্মীদের করোনার নেগেটিভ সনদ থাকলে বাসায়, আর না থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গনিরোধে (কোয়ারেন্টিন) পাঠানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রবাসী কর্মীদের ফিরে আসার সংখ্যাটি দিন দিন বাড়ছে। দেশে ফিরে কোনো কাজ পাচ্ছেন না তাঁরা। পাচ্ছেন না কোনো সাহায্য। অনেকে ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ফিরে আসা কর্মীদের একটি বড় অংশ অবৈধ হয়ে পড়েছিলেন। এর মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে কারাগারে কাটিয়ে সৌদি আরব থেকে ফিরে এসেছেন ২০ হাজার ৮২৯ জন কর্মী। কারাভোগ করে কুয়েত থেকে ৭ হাজার ৯৪১ এবং ওমান থেকে এসেছেন ৫ হাজার ৭১৩ জন। এ ছাড়া কাজ না থাকায় মালদ্বীপ থেকে প্রায় সাড়ে আট হাজার, কাতার থেকে ৭ হাজার ৭৬৯ জন ও মালয়েশিয়া থেকে প্রায় তিন হাজার জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একইভাবে সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, বাহরাইন, লেবানন, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ভিয়েতনামসহ নানা দেশ থেকে ফিরে আসছেন কর্মীরা। সংখ্যায় কম হলেও কেউ কেউ ফিরেছেন চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায়।… …

করোনায় মারা যাওয়া ৬৬ শতাংশেরই ডায়াবেটিস উচ্চরক্তচাপ ছিল

০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, বণিক বার্তা

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কভিড-১৯ সম্পর্কিত টেলিহেলথ সেন্টারের এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে গত দেড় মাসে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গিয়েছে, তাদের ৬৬ শতাংশেরই ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের মতো কো-মরবিডিটি ছিল। গত ১৫ জুলাই থেকে ৩০ আগস্ট ৪৫ দিনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

এ সময়ে মারা যাওয়া ৮৪৫ জনের কো-মরবিডিটি স্ট্যাটাস বিশ্লেষণ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ বিশ্লেষণ করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করেছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ছাড়াও রয়েছে কেবিনেট ডিভিশন, আইসিটি ডিভিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস), ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) ও সিনেসিস আইটি।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের জটিলতায় ভুগছিল ৩৮ শতাংশ। ২৮ শতাংশ রোগীর মধ্যে উচ্চরক্তচাপের সমস্যা ছিল। এরপর তৃতীয় সর্বোচ্চ হার্টের রোগে ভুগছিল ১১ শতাংশ। এছাড়া ৮ শতাংশ কিডনি রোগে, ৩ শতাংশ করে স্ট্রোক ও অ্যাজমা রোগের জটিলতায় ভুগে মারা গেছে। ৯ শতাংশ মৃত্যুবরণকারীর মধ্যে অন্যান্য রোগের লক্ষণ ছিল।

মাসে দেশে ফেরা শতাধিক প্রবাসী কারাগারে

০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, বণিক বার্তা

করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর চাকরি হারিয়ে কিংবা অন্য কোনোভাবে প্রতারিত হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। গত দুই মাসে দেশে ফেরা এসব প্রবাসীর মধ্যে অন্তত তিন শতাধিক বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, বিদেশে তাদের বিরুদ্ধে নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় গিয়ে এসব শ্রমিক বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাসহ দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।

সম্প্রতি ভিয়েতনাম ও কাতার থেকে দেশে ফেরা ৮৩ শ্রমিককে কারাগারে পাঠানোর পর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা প্রকাশ্য হতে থাকে। ভুক্তভোগী প্রবাসীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও তাদের মুক্তির জোর দাবি জানিয়েছে অভিবাসী সংগঠনগুলো।

জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট ভিয়েতনাম থেকে দেশে ফেরেন ৮১ জন শ্রমিক। দেশে ফেরার পর তাদেরকে ১৮ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। নিঃস্ব ও প্রতারিত হয়ে দেশে ফেরা এসব প্রবাসীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা চালিয়েছেন। ৮১ শ্রমিকের পাশাপাশি কাতার থেকে ফেরা দুজন প্রবাসীকেও কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে গত ৫ জুলাই করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২১৯ প্রবাসী দেশে ফেরেন। কুয়েত, কাতার ও বাহরাইন থেকে ফেরা এসব প্রবাসীকেও কোয়ারেন্টিনে রাখা অবস্থায় অযৌক্তিক কারণে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

দেশে ছয় মাসের মাথায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণের গতি কিছুটা ধীর হয়েছে। তবে রোগী শনাক্তের হার এখনো অনেক বেশি। জনসংখ্যার অনুপাতে নমুনা পরীক্ষাও কম হচ্ছে। এতে প্রত্যন্ত গ্রামে ও শহরের কিছু অঞ্চলে সন্দেহভাজন অনেকে পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। আবার সংক্রমণ ঠেকানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের আশঙ্কা, একটি দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

দেশে করোনা সংক্রমণের ছয় মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ ৮ সেপ্টেম্বর। ছয় মাস আগে ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্তের তথ্য জানায় সরকার। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে থাকে। জুনে তা তীব্র আকার ধারণ করে। জুলাইয়ের শুরু থেকে পরীক্ষা কমানোয় নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যাও কমতে থাকে। কিছুদিন ধরে শনাক্তের হারও কিছুটা কমেছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যেসব নির্দেশকের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে কি না বোঝা যায়, তার কোনোটিই দেশে দেখা যাচ্ছে না। নতুন রোগীর সংখ্যা, পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ও মৃত্যুর তথ্য বলছে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ থেকে বাংলাদেশ এখনো দূরে।

সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশে সংক্রমণের পঞ্চম মাসের তুলনায় ষষ্ঠ মাসে নতুন রোগী শনাক্ত, পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার কমলেও মৃত্যু সেভাবে কমেনি। ষষ্ঠ মাসে (এক দিন এখনো বাকি) ১ হাজার ১৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের মাসে মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ১৬৮ জনের। এই মাসেও ৭২ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, অবশ্য তা আগের মাসের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কম। এই মাসে রোগী শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা আগের মাসের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম।.. ..

করোনায় আক্রান্ত ‘ক্রিটিক্যাল’ রোগীর সংখ্যা আবার বাড়ছে

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসা রোগীর মৃত্যু বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে করোনা নিয়ে অসেচতনতা, বাসায় বসে টেলিমেডিসিন সেবা, টেস্ট করতে গিয়ে ভোগান্তির কারণে টেস্ট না করার মানসিকতা এবং দেরি করে হাসপাতালে যাওয়ার কারণে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাঝে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে ক্রিটিক্যাল বা সিভিয়ার রোগীর সংখ্যা কম থাকায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ফাঁকা ছিল। তবে গত কয়েক সপ্তাহে আইসিইউতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর) করোনাভাইরাসে মারা গেছেন আরও ৩৪ জন। এ নিয়ে করোনায় মোট মারা গেলেন চার হাজার ৬৬৮ জন। সর্বশেষ মারা যাওয়া ৩৪ জনই হাসপাতালে মারা গেছেন। এর আগে, গত ২ সেপ্টেম্বর ৩৫ জন, ৩০ আগস্ট ৪২ জন, ২৯ আগস্ট ৩২ জন আর গত ৩১ জুলাই ২৮ জনের সবাই  হাসপাতালে মারা যান।

করোনায় তরুণদের ২৫% বেকার

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হয়েছে। করোনার আগে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে গড়ে ১২ জন বেকার ছিলেন। এখন তা বেড়ে প্রায় ২৫ জন হয়েছে। এর মানে, প্রতি চারজন কাজপ্রত্যাশী তরুণের মধ্যে একজন বেকার।

বর্তমানে নতুন চাকরির সুযোগ বেশ সীমিত। করোনায় বেকার হয়ে যাওয়া তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন নতুন চাকরিপ্রত্যাশীরাও। পুরোনো ২৭ লাখ বেকার তো আছেনই। ব্যবসা-বাণিজ্যে টান পড়ায় ছোট-বড় কোম্পানিগুলো আগের মতো নতুন জনবল নিয়োগ দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। .. ..

আইএলওর হিসাবে ৩৫টি খাতের মধ্যে সাতটি খাতে বেশি কাজ হারিয়েছেন তরুণেরা। এই খাতগুলো হলো কৃষি, খুচরা বিক্রি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, অভ্যন্তরীণ পরিবহন, বস্ত্র, নির্মাণ ও অন্যান্য। বাংলাদেশে যত তরুণ-তরুণী কাজ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রায় ৭৬ শতাংশ এই সাত খাতের। এর মধ্যে কৃষি খাতে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বস্ত্র খাতে খাতে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

রাজধানীতে হাসপাতাল থেকে লাফিয়ে করোনা আক্রান্ত বিদেশির মৃত্যু

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, দেশ রুপান্তর

রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ল্যাবএইড হাসপাতালের ছয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে এক বেলারুশ নাগরিক মারা গেছেন।

নিহত মিখাইল স্টেলমাখ (২৯) করোনাভাইরাস পজিটিভ ছিলেন বলে জানা গেছে।

করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর একেকবারের টেস্টে একেক রিপোর্ট পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় এদিন দুপুর পৌনে ৩টার দিকে ল্যাবএইড হাসপাতালেই তার মৃত্যু হয়।

ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রায়হানুল করিম জানান, মিখাইল বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফিটার হিসেবে কাজ করতেন এবং থাকতেন সেখানেই। গত মাসে তার করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। এরপর সহকর্মীরা তাকে ২৮ আগস্ট ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করান।

ল্যাবএইডের ৬ষ্ঠ তলায় ভর্তি ছিলেন তিনি। তবে তার করোনা টেস্ট করা হয় ৭/৮বার। একবারের টেস্টে একেক রিপোর্ট আসে তার। একবার পজিটিভ, আবার নেগেটিভ। এই কারণেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।.. …

করোনায় মৃত্যু পাঁচ হাজার ছাড়াল

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, সমকাল

দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়াল। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সংক্রমণের ১৯৯ দিনের মাথায় মোট মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার সাতজনে পৌঁছাল। একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এক হাজার ৫৫৭ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৫২ হাজার ১৭৮ জনে পৌঁছেছে। এর বিপরীতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত আরও দুই হাজার ৭৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে করোনা আক্রান্ত মোট দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন। করোনায় মৃতদের বয়সভিত্তিক বিশ্নেষণে দেখা যায়, অর্ধেকের বেশির বয়স ৬০ বছরের ওপরে। লিঙ্গভিত্তিক বিশ্নেষণে দেখা যায়, মৃতদের ৭৮ শতাংশই পুরুষ।

প্রথম ৭৯ দিনে ৫০০, পরবর্তী ১২০ দিনে ৪৫০০ মৃত্যু :করোনায় মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ একজন মারা যান। এটিই ছিল করোনায় দেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। সংক্রমণের ৭৯ দিনের মাথায় ২৫ মে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়ায়। এরপর দ্রুতই আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৃতের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। সংক্রমণের ৯৫ দিনের মাথায় ১০ জুন মৃত্যু এক হাজার ছাড়ায়। ১২০তম দিনে ৫ জুলাই

মৃতের সংখ্যা দুই হাজার অতিক্রম করে। ১৪৩তম দিনে ২৮ জুলাই মৃতের সংখ্যা তিন হাজারে পৌঁছায়। সংক্রমণের ১৭১তম দিনে ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা চার হাজার ২৮ জনে পৌঁছায়। ১৯৯তম দিনে গতকাল মঙ্গলবার মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ হাজার সাতজনে।

প্রথম মৃত্যু :৮ মার্চ দেশে করোনার প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

মৃত্যু ১০০০ ছাড়ায় :সংক্রমণের ৭৯ দিনের মাথায় ২৫ মে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০০ ছাড়ায়। ওই দিন ২১ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ৫০১ জনে পৌঁছায়। একই সঙ্গে ওই দিন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৫৮৫ জনে পৌঁছায়। মৃতের সংখ্যা ৫০০ থেকে এক হাজার ছাড়াতে সময় লাগে মাত্র ১৬ দিন। সংক্রমণের ৯৫ দিনের মাথায় ১০ জুন আরও ৩৭ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ১২ জনে পৌঁছায়। ওই দিন মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৪ হাজার ৮৬৫ জনে। ওই দিন কাতারকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ সংক্রমিত দেশগুলোর মধ্যে ১৯ নম্বরে উঠে আসে।

মৃত্যু ২০০০ ছাড়ায় :মৃতের সংখ্যা এক হাজার থেকে দেড় হাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১২ দিন। সংক্রমণের ১০৭ দিনের মাথায় ২২ জুন মোট মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৫০২ জনে পৌঁছায়। ওই দিন মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ১৫ হাজার ৭৮৬ জনে। মৃত্যু দেড় হাজার থেকে দুই হাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১৩ দিন। সংক্রমণের ১২০ দিনের মাথায় ৫ জুলাই মোট মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ৫২ জনে পৌঁছায়। ওই দিন মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জনে পৌঁছায়।

মৃত্যু ৩০০০ ছাড়ায় :মৃতের সংখ্যা দুই হাজার থেকে আড়াই হাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে ১২ দিন। সংক্রমণের ১৩২ দিনের মাথায় ১৭ জুলাই মোট মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ৫৪৭ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৯৯ হাজার ৩৫৭ জনে পৌঁছায়। মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজার থেকে তিন হাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১১ দিন। সংক্রমণের ১৪৩ দিনের মাথায় ২৮ জুলাই মোট মৃতের সংখ্যা তিন হাজারে এবং আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ২৯ হাজার ১৮৫ জনে পৌঁছায়।

মৃত্যু ৪০০০ ছাড়ায় :মৃতের সংখ্যা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারে পৌঁছাতে সময় নেয় ১৫ দিন। সংক্রমণের ১৫৮ দিনের মাথায় ১২ আগস্ট মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৫১৩ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৬৬ হাজার ৪৯৮ জনে পৌঁছায়। মৃতের সংখ্যা সাড়ে তিন থেকে চার হাজার ছাড়াতে সময় লাগে ১৩ দিন। সংক্রমণের ১৭১ দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট মোট মৃতের সংখ্যা চার হাজার ২৮ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৯৯ হাজার ৬২৮ জনে পৌঁছায়।

মৃত্যু ৫০০০ ছাড়াল :মৃতের সংখ্যা চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার ছাড়াতে সময় লাগে মাত্র ১৩ দিন। সংক্রমণের ১৮৪ দিনের মাথায় ৭ সেপ্টেম্বর মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৫১৬ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ২৭ হাজার ৩৫৯ জনে পৌঁছায়। মৃতের সংখ্যা সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার ছাড়াতে সময় লাগে ১৫ দিন। সংক্রমণের ১৯৯তম দিনে গতকাল মোট মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার সাতজনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৫২ হাজার ১৭৮ জনে পৌঁছাল।

করোনায় কাজ বন্ধ থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রামে ৬৮ শতাংশ মানুষ চাকরি হারিয়েছে

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, দেশ রুপান্তর অনলাইন

করোনা মহামারির কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে কাজ বন্ধ থাকায় ৬৮ শতাংশ মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছে বলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

‘লুজিং লাইভলিহুড: দ্য লেবার মার্কেট ইমপ্যাক্টস অব কোভিড-১৯ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে ঢাকায় চাকরি হারিয়েছেন ৭৬ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ৫৯ শতাংশ।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কর্মজীবীদের ওপর র‌্যাপিড প্যানেল ফোন সার্ভের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। সার্ভেটি দুইটি ধাপে করা হয়েছে। একটি মহামারি শুরুর পরে। আরেকটি ১০ জুন থেকে ১০ জুলাইর মধ্যে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশি চাকরি হারিয়েছেন বিভিন্ন বস্তিতে বসবাসরত মানুষ। সেখানে চাকরি হারিয়েছেন ৭১ শতাংশ। আর অন্য এলাকায় হারিয়েছেন ৬১ শতাংশ। কিছু মানুষ কাজে ফিরে যাওয়ার আশায় আছেন এবং হয়তো তারাও সেটি ফিরে পেতে নাও পারেন। সুতরাং চাকরি হারানোর মানুষের সংখ্যা বাস্তবে আরও বেশি হতে পারে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই তিন এলাকার মানুষের মধ্যে আয় কমে যাওয়া বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বেতনভোগী কর্মীদের ৮০ শতাংশ এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৯৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের আয় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমে গেছে।

মজুরিভিত্তিক শ্রমিকদের মধ্যে, যারা দৈনিক ও সাপ্তাহিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন, তাদের আয় বেতনভোগীদের চেয়ে অনেক বেশি (৪৯ শতাংশ) কমেছে। নারী শ্রমিকরাও এই মহামারিতে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং তুলনামূলকভাবে বেশি চাকরি হারিয়েছেন।

আয় কমে যাওয়ায় ৬৯ শতাংশ পরিবারই তাদের স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমিয়েছেন। একই সংখ্যক মানুষ তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে সহায়তা নিয়েছেন।

সার্ভেতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৮ শতাংশের পরিবার সরকারি সহায়তা পেয়েছেন এবং ৪২ শতাংশের পরিবার তাদের জমানো অর্থ ব্যবহার করেছেন।

যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫৪ শতাংশই পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। এরপর রয়েছেন গার্মেন্টসকর্মীরা। তাদের মধ্যে চাকরি হারিয়েছেন ১৯ শতাংশ।

কোয়ারেন্টিন থেকে কারাগারে লেবানন ফেরত ৩২ জন

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

মধ্যপ্রাচ্য ও ভিয়েতনামের পর এবার গ্রেপ্তার হলেন লেবানন ফেরত ৩২ অভিবাসী শ্রমিক। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুজন নারী। তুরাগ থানায় আজ সোমবার দায়ের হওয়া মামলায় পুলিশ বলেছে, লেবানন ফেরত অভিবাসী শ্রমিকদের ছেড়ে দিলে তারা ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, জঙ্গি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়াবে।

এর আগে মধ্যপ্রাচ্য ও ভিয়েতনাম ফেরত ৩০২ জন অভিবাসী শ্রমিকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তোলা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধেও তুরাগ থানা-পুলিশ ৫৪ ধারায় মামলা করেছিল। লেবানন ফেরত অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে একই ধারায়। আজই তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

করোনায় ছাঁটাই ৭০ হাজার শ্রমিক

২ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, করোনায় ১০৬ পোশাক কারখানায় ৭০ হাজার পোশাকশ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। এই দায় শুধু পোশাকশিল্প মালিকদের নয়, বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে দায় নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানও প্রণোদনার ঋণ পাবে

২ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি পোষাতে কম সুদের প্রণোদনার ঋণ নিতে পারবে বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানও। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এরই মধ্যে ৮৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আটটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতায় থাকা ইপিজেডের কারখানা ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্কে অবস্থিত ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণির শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও ঋণসুবিধা পাবে। এ ক্ষেত্রে প্রণোদনার অর্থ বেজা, বেপজা, হাইটেক পার্কে অবস্থিত ‘এ’ শ্রেণির শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ঋণ হিসেবে যুক্ত হবে। রপ্তানি বাণিজ্যে জড়িত দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ও কর্মসংস্থান অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ইপিজেডে অবস্থিত ‘এ’ শ্রেণির প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি বিদেশি মালিকানাধীন, ‘বি’ শ্রেণির প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি-দেশি যৌথ মালিকানার এবং ‘সি’ শ্রেণির প্রতিষ্ঠানগুলো দেশি মালিকানার।

করোনা জটিলতা এমআইএস-সিতে নটর ডেম ছাত্রের মৃত্যু

২ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

কোভিড-১৯ রোগের জটিল ও বিরল অসুস্থতা মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেনে (এমআইএস-সি) আক্রান্ত হয়ে নটর ডেম কলেজের এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ জেনারেল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া কলেজছাত্রের বয়স ১৭ বছর।

ধারণা করা যাচ্ছে, এমআইএস-সি জটিলতায় দেশে এটাই প্রথম মৃত্যু। এর আগে এই জটিলতায় কারও মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সম্প্রতি এই নতুন অসুস্থতার সঙ্গে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। ২১ বছরের কম বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। এটাকে পেডিয়াট্রিক ইনফ্লেমটরি মাল্টিসিস্টেম সিনড্রোমও (পিআইএমএস) বলা হয়।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত বা আক্রান্ত অবস্থা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিল, এমন শিশু-কিশোরদের মধ্যে এমআইএস-সি দেখা যাচ্ছে।

দেশে সেপ্টেম্বর মাসে শিশু হাসপাতাল, এভারকেয়ার, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও স্কয়ারে ২৬-২৭ জনের মতো এমআইএস-সি আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

অনেক শিল্পী-মিউজিশিয়ান গ্রামে, বদলেছেন পেশা

০৭ অক্টোবর, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

করোনা মহামারির প্রভাব পড়েছে সংগীতাঙ্গনে। লকডাউনের শুরুর দিক থেকে এখন নতুন স্বাভাবিকে বন্ধ রয়েছে স্টেজ শো। একেবারে ঘরে বসে রয়েছেন অনেক শিল্পী, মিউজিশিয়ান।

বর্তমানে নিজের জমানো টাকা খরচ করে জীবনযাপন করছেন এইসব শিল্পী ও মিউজিশিয়ানরা। পড়েছেন অসুবিধায়। এতোটা দীর্ঘ সময় এ এভাবে যাবে কল্পনায় ছিল না কারও। করোনা নিঃস্ব করে দিয়েছে সংগীতাঙ্গনের অনেক মানুষকে। স্টেজ শো বন্ধ থাকায় অনেক মিউজিশিয়ান, শিল্পী চলে গেছেন বাড়িতে। নতুন পেশায় যুক্ত হয়েছেন তারা। তাদের আয়ের বড় মাধ্যম ছিল স্টেজ শো। যারা আছেন অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন ঢাকায়।

সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ এই বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা মহামারির শুরুর দিকে চট্টগ্রামের ২০ জনের মতো মিউজিশিয়ান ঢাকা ছেড়েছেন। এদের অনেকেই খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন। তারা সবাই মিলে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেছেন। কেউ কেউ এই পেশায় ফিরে আসতে অনিচ্ছুক। নতুন পেশায় তারা ভালো আছে বলেই আমাকে জানিয়েছেন। কতদিন এই অবস্থা থাকবে আমার জানা নেই। সবাই সবার পাশে থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।’

সংগীতশিল্পী দিলশাদ নাহার কণা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ভীষণ খারাপ অবস্থায় আছেন মিউজিশিয়ানরা। হানিফ মোহাম্মদ নামের একজন মিউজিশিয়ান আমাকে বলেছেন, রামপুরার দিকে প্রায় ১০০ মিউজিশিয়ান থাকতেন। করোনা মহামারির শুরুর দিকে প্রায় সবাই চলে গেছেন। এখনো অনেকেই ফেরেননি। কেউ কেউ নতুন পেশায় নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। আগামী কতদিন ঘরে বসে থাকতে হবে তার তো কোনো ঠিক নেই। এমন অনিশ্চিত সময়ের মুখোমুখি হতে হবে কেউ ভাবেনি।’

গত ছয়-সাত মাসে অনেকগুলো উৎসব চলে গেলেও শিল্পী ও মিউজিশিয়ানরা ঘরে বসা। কোনো ধরনের অনুষ্ঠান হয়নি। করোনার মহামারির শুরুর দিকে সরকারের তরফ থেকে শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে কয়েক দফায় কিছু শিল্পী-মিউজিশিয়ানদের আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুব অল্প ছিল বলে জানিয়েছেন অনেকেই।

করোনা সংক্রমণের ৭ মাস, মৃত্যু ৫৪৬০

৮ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ১ হাজার ৪৪১ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একই সময় করোনায় আক্রান্ত আরও ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত মানুষের মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৯২। করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৬০। মোট সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৮৮ হাজার ৩১৬ জন।

দেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ওই ২৪ ঘণ্টায় মোট ১২ হাজার ৬০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আজ দেশে সংক্রমণের সপ্তম মাস পূর্ণ হয়েছে।

 আজ দেওয়া তথ্যে গতকালের চেয়ে নতুন রোগীর সংখ্যা, মৃত্যু ও শনাক্তের হার কমেছে। গতকাল ১ হাজার ৫২০ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত নতুন রোগী শনাক্তের কথা জানানো হয়েছিল। পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।  মৃত্যু হয়েছিল ৩৫ জনের।

ঢাকার অর্ধেক মানুষের করোনা হয়ে গেছে

১৩ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

ঢাকা শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষের করোনা সংক্রমণ ঘটে গেছে। অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফলাফল বলছে, তিন মাস আগেই রাজধানীর ৪৫ শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনা-ভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা অনুমান করছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।.. …

গবেষণার জন্য ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্য থেকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে ২৫টি ওয়ার্ড বেছে নেওয়া হয়। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে একটি মহল্লা বাছাই করা হয়। প্রতিটি মহল্লা থেকে ১২০টি খানা জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া ৮টি বস্তিকে এ জরিপে যুক্ত করা হয়। মোট ৩ হাজার ২২৭টি খানার সদস্যদের গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

খানাগুলোকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। জরিপের দিন বা পূর্ববর্তী সাত দিনে খানার কমপক্ষে একজন সদস্যের জ্বর, কাশি, গলায় ব্যথা, শ্বাসকষ্ট—করোনা সংক্রমণের এ চারটির একটি লক্ষণ থাকলে তাকে উপসর্গযুক্ত খানার শ্রেণিতে ফেলা হয়। অন্যদিকে কোনো সদস্যের একটি লক্ষণও না থাকলে সেই খানাকে উপসর্গহীন শ্রেণিভুক্ত করা হয়।

এসব খানার সদস্যদের নমুনা (শ্বাসতন্ত্র লালা এবং রক্ত) সংগ্রহ করা হয় মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত। আর বস্তির মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হয় মধ্য জুলাই থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত। এ গবেষণা কাজে আর্থিক সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।.. ..

গতকালের অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির সংক্রামক রোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরি। তাতে দেখা যায়, ঢাকা শহরের ৪৫ শতাংশ মানুষ ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আর বস্তির মানুষের মধ্যে এ হার ছিল ৭৪ শতাংশ।

গবেষণা–সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা শহরের সংক্রমণের এ তথ্য জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের। সংক্রমণের ধারা অনুসরণ করলে অনুমান করা যায়, গত তিন মাসে আক্রান্তের হার ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

ঢাকা মহানগরের জনসংখ্যার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন। তবে ধারণা করা হয়, জনসংখ্যা দুই কোটি বা তার বেশি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গবেষকেরা মনে করেন, ইতিমধ্যে শহরের প্রায় এক কোটি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন।

উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় ১০০ শতাংশে অ্যান্টিবডি পেয়েছেন গবেষকেরা। অন্যদিকে উপসর্গহীন ৪৫ শতাংশের রক্তে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। এর অর্থ হচ্ছে ঢাকা শহরের বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের কোনো উপসর্গ নেই। তাঁরা দিব্যি রাস্তাঘাটে, বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অফিস করছেন।

রাত ১১টায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাল গবেষণার সীমাবদ্ধতা

১৪ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে,  ঢাকা শহরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের করা গবেষণায় নমুনা সংখ্যা কম ছিল। এত কমসংখ্যক নমুনা ঢাকা শহরের প্রতিনিধিত্ব করে না।

গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ কথা বলেন। এর একদিন আগে রাজধানীর একটি হোটেলে করোনা বিষয়ে আইইডিসিআর ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) যৌথ গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

করোনায় কর্মহীন ৩৭% এমএসএমই শ্রমিক

২১ অক্টোবর ২০২০, সমকাল

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের এমএসএমই খাতের ৩৭ শতাংশ শ্রমিক স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে কাজ হারিয়েছেন। আর এ খাতের ৯৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের বিক্রি ব্যাপকভাবে কমেছে। পুরুষের তুলনায় নারীদের প্রতিষ্ঠান বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত জুন ও আগস্ট মাসের মধ্যে বাংলাদেশের মাইক্রো বা অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) খাতের ওপর করোনার প্রভাব শীর্ষক এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক, কমনওয়েলথ এবং উন্নয়ন কার্যালয় (এফসিডিও) সঙ্গে অংশীদারিত্বে বিশ্বব্যাংক ও এর অঙ্গ সংস্থা আইএফসি এ জরিপ করে। গতকাল এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এ জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়।

পাঁচ শতাধিক এমএসএমই প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, যারা কাজে আছেন তাদের ৭০ শতাংশই কাজ হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন অস্থায়ীভাবে বন্ধ আছে বা আংশিক খোলা রয়েছে। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গড়ে এসব প্রতিষ্ঠানের ১০০ দিন পরিচালনার মতো নগদ অর্থ ছিল। পরে তাদের নগদ প্রবাহে সমস্যা দেখা দেয়। বাংলাদেশে পুরুষের মালিকানাধীন ২১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের তুলনায় নারীদের মালিকানাধীন ৩৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান অস্থায়ীভাবে বন্ধ ছিল।.. …

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি

টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিহত

১ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন মেজর নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার বাহারছড়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর পুলিশ তল্লাশি চেকপোস্টে এই ঘটনা ঘটে। অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর টিশার্ট–ট্রাউজার পরিহিত ছিলেন।

নিহত অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তার নাম সিনহা রাশেদ খান। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সাবেক সেনা কর্মকর্তা তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে অপর একজন সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসছিলেন। মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া তল্লাশি চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তা বাধা দেন। এই নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তা তাঁর কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রাশেদ গুরুতর আহত হন। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

প্রদীপ আর লিয়াকতের নেতৃত্বেই ১৬১ ‘ক্রসফায়ার’

৫ আগস্ট, ২০২০, কালের কন্ঠ

মাদকবিরোধী অভিযানে ২০১৮ সালের মে মাস থেকে কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারে’ ১৬১ জন নিহত হয়েছে। এর বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটে মেরিন ড্রাইভ এলাকায়। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে এলাকাটি ‘ক্রসফায়ার জোন’ হয়ে উঠলেও থামেনি ইয়াবার কারবার। ওসি প্রকাশ্যে মাদক কারবারিদের নির্মূল করার ঘোষণা দিলেও তাঁর এই মিশনে শীর্ষ কারবারি হাজি সাইফুল ছাড়া উল্লেখযোগ্য কেউ নিহত হয়নি। নিহতদের বেশির ভাগই ইয়াবার খুচরা বিক্রেতা। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আত্মসমর্পণের নামে শীর্ষ কারবারিদের রেহাইয়ের সুযোগ দিয়ে এবং চুনোপুঁটিদের দমন করে চলছে ‘ক্রসফায়ার বাণিজ্য’।

গত ৩১ জুলাই মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদের মৃত্যুর পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতের ‘ভিন্ন রকম ত্রাসের’ অভিযোগ মিলছে। সূত্রগুলো জানায়, বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে টেকনাফে এসে ‘আস্থাভাজন ওসি’ বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করেন প্রদীপ। গোপালগঞ্জে বাড়ি এবং ছাত্রলীগ করতেন বলে পরিচয় দেন লিয়াকত। এসব কারণে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, পুলিশও তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলে না। বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া অনেক ব্যক্তিকে ‘ক্রসফায়ার’ দিয়ে বড় ইয়াবা কারবারি বলে প্রচারের অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। কিছু পরিবার টাকা আদায়েরও অভিযোগ করছে। … …

বন্দুকযুদ্ধে’ ভর করে সর্বোচ্চ পদক

৬ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

টেকনাফ থানার বহুল আলোচিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ কথিত বন্দুকযুদ্ধের জন্য ২০১৯ সালে পুলিশের  সর্বোচ্চ পদক ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ বা বিপিএম পেয়েছিলেন। পদক পাওয়ার জন্য তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে ছয়টি কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন। সব কটি ঘটনাতেই আসামি নিহত হন।

প্রদীপ কুমার দাশ প্রায় ২৫ বছরের চাকরিজীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন চট্টগ্রাম অঞ্চলে। বছর দুয়েক আগে টেকনাফ থানায় যোগ দেন। এই দুই বছরে দেড় শতাধিক ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ঘটেছে এ থানা এলাকায়। সর্বশেষ ভিডিও বার্তায় তিনি চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে টেকনাফকে মাদকমুক্ত করতে মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসেন। মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর গতকাল তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ইয়াবা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে দিতেন ‘ক্রসফায়ার’

০৬ আগস্ট, ২০২০, ইত্তেফাক

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস। দীর্ঘ ২২ মাস এই থানার দায়িত্ব পালনের পর গতকাল বুধবার প্রত্যাহার হয়েছেন। এই ২২ মাসে তিনি ১৪৪টি ক্রসফায়ার দিয়েছেন। তাতে মারা গেছে ২০৪ জন। এর অর্ধেক ক্রসফায়ারই হয়েছে মেরিন ড্রাইভে। যে ২০৪ জনকে তার নির্দেশে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে একই বাড়ির চার জন, এমনকি দুই ভাইও আছেন। চাহিদামতো টাকা না পেলে নির্বিঘ্নে দিতেন ক্রসফায়ার। ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে প্রচার করে দায়মুক্তিও পেয়ে যেতেন। তবে টেকনাফের মানুষ বলছেন, তিনি মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার জন্য এসব ক্রসফায়ার দিতেন। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা।

এতদিন ক্রসফায়ারে হত্যা করা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রভাবশালী কেউ না থাকায় পার পেয়ে গেছেন। তবে এবার মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার পর ফেঁসে গেছেন। একে একে বেরিয়ে আসছে তার ক্রসফায়ার বাণিজ্যের আদ্যোপান্ত। এলাকাবাসীও মুখ খুলতে শুরু করেছেন। মেজর (অব.) রাশেদকে হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরাও সামনে এসে কথা বলছেন। মেজর (অব.) রাশেদের বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে গতকাল কক্সবাজার আদালতে একটি মামলা করেছেন। এই মামলার দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে ওসি প্রদীপকে।

আর একটিও বিচারবহির্ভূত হত্যা চান না অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা

১০ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

বাংলাদেশে আর একটিও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখতে চায় না রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া)। রাওয়ার চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর খন্দকার নুরুল আফসার বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন করতে হবে।

খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, পুলিশ যে একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে, সেটা কেউ নজরে আনেনি। যদি সুপারভিশন ঠিক থাকে, তাহলে পুলিশ এত ঔদ্ধত্য হতে পারত না। পুলিশের ভেতর রং কনফিডেন্স গ্রো করেছে। বিকজ পুলিশের বিচার হয়নি।

পুলিশের ‘বোমা নাটক’ থেকে দুর্ঘটনা

১১ আগস্ট ১১, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

রাজধানীর পল্লবী থানায় বিস্ফোরিত বোমাটি থানার ভেতরে নিয়ে গিয়েছিলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্যই। উদ্দেশ্য ছিল— বোমা উদ্ধারের নাটক মঞ্চস্থ করা এবং কাউকে সেই নাটকে ফাঁসানো। এমনটিই জানা গেছে বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সূত্র থেকে।

অদক্ষ হাতে এসব বোমা সামলাতে গিয়ে বোমাটি একজন অফিসারের কক্ষে বিস্ফোরিত হয়। এতে করে গত ২৯ জুলাই থানার ভেতরে চার পুলিশ সদস্য ও এক বেসামরিক ব্যক্তি আহত হন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, অসাধু পুলিশ সদস্যদের একটি অংশ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা নিয়ে ওজন মাপার মেশিনের ভেতরে লাগানো বোমাটি ‘সংগ্রহ’ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল অন্য নেতাদের ফাঁসিয়ে দেওয়া।

তিন বছর আগে রিট হয়েছিল ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে

১২ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার একটি ঘটনায় বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে তিন বছর আগে হাইকোর্টে একটি রিট হয়েছিল। তখন তিনি কক্সবাজারের মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন। রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার পর মহেশখালী থানায় মামলা করতে গেলে তা নেওয়া হয়নি।

নিহত ব্যক্তির স্ত্রী এজাহার (লিখিত অভিযোগ) দাখিল করলে তা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করতে তখন ওসিকে (প্রদীপ কুমার দাশ) নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ওই আদেশ বাতিল করে নতুন করে রিট শুনানি করতে বলেন। এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ওই রিটের কার্যক্রম আর এগোয়নি।

ঘটনাটি ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির। সেদিন রাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মহেশখালীর মাঝেরপাড়া এলাকার বাসিন্দা লবণচাষি আব্দুস সাত্তার। ‘ক্রসফায়ারের’ নামে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয় বলে তখন অভিযোগ তোলেন তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগম। অন্যদিকে তখন পুলিশ দাবি করেছিল, বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সাত্তার। মহেশখালী থানার বর্তমান ওসি মো. দিদারুল ফেরদৌস গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সাত্তার তালিকাভুক্ত অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে তখন অস্ত্রসহ তিনটি মামলা ছিল। তবে হামিদা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী লবণচাষি ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর দুই ছেলে পানের বরজে দিনমজুরি করে সংসার চালান।

সিগারেট খাওয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার, পরে পুলিশকে সাড়ে লাখ টাকা দিয়ে মুক্তি

১১ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

সোহেল মীর নামের এক ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার ওসিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। এর আগে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের ভেতর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সামনে সোহেল মীর ‘মাদকদ্রব্য’ সিগারেট খেয়েছিলেন, এমন অপরাধে তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি আসামিরা হলেন কোতোয়ালি থানার এসআই পবিত্র সরকার, এসআই খালিদ শেখ, এএসআই শাহিনুর রহমান, কনস্টেবল মিজান ও পুলিশের সোর্স মোতালেব।

রাতে ধরে নিল পুলিশ, সকালে বিলে মিলল লাশ

১৫ আগস্ট ২০২০, সমকাল

রাজবাড়ীতে গভীর রাতে রবিউল বিশ্বাস (৩৫) নামে এক যুবককে পুলিশ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর সকালে তার লাশ পাওয়া গেছে পার্শ্ববর্তী একটি বিলে। পরিবারের অভিযোগ, রবিউলকে ধরে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেন কালুখালী থানার এসআই ফজলুল হক।

ঘটনাটি ঘটেছে কালুখালী থানার মাজবাড়ি ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামে। রবিউল ছিলেন বেকারি ব্যবসায়ী। মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী। শনিবার সকালে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে রবিউলকে গ্রেপ্তারের পর সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ পুলিশ অস্বীকার করেছে।

কর্মীরা বৈঠক করে কিশোরদের ‘পেটানোর সিদ্ধান্ত’ নেন

১৫ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) গত বৃহস্পতিবার সকালে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রের ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, কেন্দ্রের প্রধান প্রহরীকে আঘাত করা কিশোরদের পেটাতে হবে অচেতন না হওয়া পর্যন্ত। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একে একে ১৮ কিশোরকে আবাসিক ভবন থেকে ধরে আনা হয়। এরপর তাদের দুই হাত জানালার গ্রিলের মধ্যে আটকে, পা বেঁধে ও মুখে গামছা গুঁজে দিয়ে রড এবং ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে পেটানো হয়। এতে মারা যায় ৩ কিশোর, গুরুতর আহত হয় ১৫ জন। সেদিন দুপুরে তাদের খেতেও দেওয়া হয়নি।

যশোর জেলা পুলিশ আজ শনিবার আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে শিশু নির্যাতনের এমন বর্ণনা দেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন।

৫০ লাখ টাকা না পেয়ে ওসি-এসআই মিলে তিন যুবককে ক্রসফায়ারে ‘খুন’

১৭ আগস্ট ২০২০, চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কক্সবাজারের টেকনাফে মেজর (অব.) সিনহাকে যেদিন পুলিশ হত্যা করে, সেদিনই অনেকটা নিরবে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয় আরও তিন যুবককে। ঘটনাস্থল কক্সবাজারেরই আরেক থানা চকরিয়া। পটিয়া থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া এক প্রবাসী ও দিনমজুরের সঙ্গে চকরিয়ার এক যুবককেও একইসঙ্গে সেদিন ‘হত্যা’ করা হয়।

চকরিয়া থানা পুলিশ সেদিনই সংবাদমাধ্যমে প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানিয়েছিল— ‘কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ৩ মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ওসিসহ ৪ পুলিশ সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪৪ হাজার পিস ইয়াবা, অস্ত্র ও গুলি। শুক্রবার (৩১ জুলাই) ভোরে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া বানিয়ারছড়া আমতলী গর্জন বাগান পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।’

ঘটনাটি ধামাচাপাই পড়তে যাচ্ছিল। কিন্তু মেজর (অব.) সিনহা হত্যার ঘটনার পর স্বজনরা আর চুপ থাকতে পারেননি। এখন জানা যাচ্ছে, পরিকল্পিতভাবেই ওই প্রবাসী ও দিনমজুরকে পটিয়ার বাসা থেকে ধরে চকরিয়ায় নিয়ে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করে চকরিয়া থানা পুলিশ। নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি, তারা কোনো অপরাধের সাথে জড়িত ছিল না। পুলিশকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের। ঘর থেকে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ার দেওয়ার আগে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল পুলিশ— এমন অভিযোগও উঠেছে সুনির্দিষ্টভাবে।

মৃত’ কিশোরীর ফিরে আসা: আগের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল

২৫ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

জীবিত ফিরে আসা ‘গণধর্ষণের পর হত্যার শিকার’ কিশোরীর বাবার করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে মঙ্গলবার বদল করা হয়েছে। ওই মামলায় তিন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, কিশোরীকে গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন। এই কিশোরীকে ৫১ দিন পর জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক(এসআই) শামীম আল মামুনকে বদল করা হয়েছে।.. …

গত ৪ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় ১৫ বছরের কিশোরী। ৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় কিশোরীর বাবা মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়েকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে আব্দুল্লাহ নামের একজন উত্ত্যক্ত করতেন। ৪ জুলাই আব্দুল্লাহ ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এই ঘটনায় পুলিশ অটোরিকশা চালক রকিব, আব্দুল্লাহ ও খলিলকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁরা নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিলটন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তাঁরা বলেন, ওই কিশোরীকে অপহরণের পর গণধর্ষণ করে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর অচল দশা

২৬ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

২০১৪ সালের কথা। নিজেদের শরীরের রক্ত ঝরিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল কিশোরেরা। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ১৫ কিশোর কাচ দিয়ে শরীর চিরে সেদিন প্রতিবাদ করেছিল। বলেছিল, ওরা ভালো নেই। ছয় বছর পর একই কেন্দ্রে ঘটে গেল আরেকটি নির্মম ঘটনা। কেন্দ্রের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের পিটুনিতে মারা গেল তিন কিশোর। সঙ্গে আহত আরও কয়েকজন।

গাজীপুর, টঙ্গী ও যশোরে তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র আছে। এগুলোতে মোট আসনের বিপরীতে দেড় গুণ বেশি, ৯০২ জন নিবাসী আছে। তাদের জীবনমান, খাবারদাবার অত্যন্ত নিম্নমানের বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নামে উন্নয়ন কেন্দ্র, আদতে জেলখানার চেয়ে বাজে অবস্থা এসব কেন্দ্রের—এমনটাই অভিযোগ সেখানে বসবাসকারী কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের। আছে ‘বড় ভাই’ কালচার। যার জাঁতাকলে পরে কিশোরদের জীবন ওষ্ঠাগতপ্রায়।.. ..

১৯৭৪ সালের শিশু আইন বাস্তবায়নে (বর্তমানের শিশু আইন ২০১৩) ১৯৭৮ সালে গাজীপুরের টঙ্গীতে এবং ১৯৯৫ সালে (কার্যক্রম শুরু) যশোরের পুলেরহাটে ছেলেশিশুদের জন্য এবং ২০০৩ সালে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে (মেয়েদের জন্য) উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত তিনটি কেন্দ্রের মোট আসনসংখ্যা ৬০০। সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যশোরে আসনসংখ্যা ১৫০, তবে বর্তমানে সেখানে আছে ২৮৩ জন। টঙ্গীতে আসনসংখ্যা ৩০০, সেখানে নিবাসীর সংখ্যা ৫৩৩। আর মেয়েদের জন্য উন্নয়ন কেন্দ্রের আসনসংখ্যা ১৫০, সেখানে আছে ৮৩ জন। সব মিলিয়ে ৬০০ আসনের বিপরীতে নিবাসী আছে ৯০২ জন। অর্থাৎ আসনের চেয়ে দেড় গুণের বেশি নিবাসী নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে। কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সীমিত বাজেট, প্রশাসনিক দুর্বলতা, অপর্যাপ্ত জনবল, অনুন্নত সংশোধন প্রক্রিয়া, পুনর্বাসন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কেন্দ্রগুলো পরিচালিত হচ্ছে।

এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে যশোরের উন্নয়ন কেন্দ্র। ১৯৯৫ সালে যশোরের কেন্দ্রটির নাম ছিল ‘কিশোর অপরাধী সংশোধন প্রতিষ্ঠান’। ২০০২ সালে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র এবং ২০১৭ সালে তার নামকরণ করা হয় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র। ৫ দশমিক ২২ একর জায়গার প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে অবস্থান করা নিবাসীদের মধ্যে ৬৭ জন হত্যা মামলা, ৭০ জন নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা, ৬৫ জন মাদক মামলা, ৪ জন অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তরা আছে। নিবাসীদের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১০ জন। ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সী নিবাসীর সংখ্যা ১২৭। ৯৮ জনের বয়স ১৭ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে ৭৫ জন, আর ১৬০ জন অটোমোবাইল, ইলেকট্রিক্যাল, ওয়েল্ডিং ও সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কেন্দ্রটিতে অনুমোদিত পদ ৪৯, এর মধ্যে বর্তমানে বিভিন্ন পদে কর্মরত ২৬ জন। সহকারী তত্ত্বাবধায়ক, প্রসিকিউশন অফিসার, সোশ্যাল কেস ওয়ার্কার, হাউস প্যারেন্টসহ ২৩টি পদই শূন্য।

কেন্দ্রের শিশুদের জন্য মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দ ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে খাদ্য ও জ্বালানি বাবদ ২ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ২০০ টাকা। চিকিৎসায় বরাদ্দ ১০০ টাকা। প্রশিক্ষণে ১৫০ টাকা, পোশাক ৩০০ টাকা, তেল, সাবানসহ অন্যান্য খাতে বরাদ্দ ২৫০ টাকা।

এক কিশোরের অভিজ্ঞতা

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কলেজপড়ুয়া এক ছেলে প্রায় তিন মাসের বেশি সময় টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ছিল। করোনাভাইরাসের বিস্তারের পর ভার্চ্যুয়াল আদালতের মাধ্যমে বর্তমানে সে জামিনে আছে।

মুঠোফোনে কথা হলো তার সঙ্গে। তার ভাষায়, কেন্দ্রে থাকা একটু বেশি বয়সীদের মধ্য থেকে হাউস ক্যাপ্টেন ঠিক করে দেন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক। ক্যাপ্টেন বা কেন্দ্রের ভাষায় এই ‘বড় ভাই’ আবার তার পছন্দের নিবাসীদের নিয়ে দল গঠন করে। জুনিয়র ব্যাচ, সিনিয়র ব্যাচ, রিমোট পাস, বাকেট পাস (পানির ড্রামে বসার যোগ্যতা অর্জনকারী), চৌকি পাস (কয়েকটি তোশক দিয়ে বানানো) বিভিন্ন নামের দলগুলো বিভিন্ন ফ্লোরে ও রুমে রাজত্ব করে।

কিশোর জানায়, কেন্দ্রে নতুন সদস্য গেলে তাকে ‘পাবলিক’ বলে ডাকা হয়। বড় ভাইয়ের নির্ধারণ করে দেওয়া ৩৬৫টি নিয়ম মানতে হয় পাবলিককে। বড় ভাইয়ের চোখের দিকে তাকানো যাবে না, বড় ভাই বারান্দায় হাঁটলে সবাইকে ঘরের মধ্যে ঢুকে যেতে হবে। এ ধরনের নিয়ম পালনে একটু ব্যত্যয় ঘটলেই কিডনি লক, গামছা ভিজিয়ে গুটলি পাকিয়ে তা দিয়ে মারাসহ ১৪৪টি নির্ধারিত মার খেতে হয়। অপরাধ অনুযায়ী এ মারগুলো দেওয়া হয়।

এই কিশোর মার খেয়েছে কি না, জানতে চাইলে বলে, ‘৩৬৫টা নিয়ম তো আর মানা যায় না, তাই পাবলিককে মাইর খাইতেই হয়।’

এই কিশোরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১০ বছরের কম বয়সীদের একসঙ্গে রাখা হয়। আর ১০ বছরের বেশি বয়সীদের আলাদা ফ্লোরে রাখা হয়। বড় ভাই ও ভাইয়ের অনুগত সদস্যদের থাকার জায়গা ‘হাইফাই’ থাকে। অনেকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে টাকা দিয়ে বড় ভাইয়ের বডিগার্ড হিসেবেও নিয়োগ পায়। বড় ভাই চাইলেই কেন্দ্রের গার্ড ও কর্মচারীদের দিয়ে বাইরে থেকে যেকোনো জিনিস ঘরে আনাতে পারে। বড় ভাইয়ের ‘বডিগার্ড’ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরাও ক্ষমতাশালী। খাবারের প্লেটে ভাত নির্দিষ্ট পরিমাণে দেওয়া থাকে (পেট ভরে না ওই ভাতে)। মেনু অনুযায়ী মুরগি, ডিমসহ অন্যান্য তরকারি দেওয়া হয়। তবে হাউস ক্যাপ্টেন সবার প্লেট থেকে মুরগির রান, মাছের বড় পিস তুলে নিয়ে যায়। ফলে মুরগির রান বা ভালো টুকরা খাওয়ার সুযোগ কম পাওয়া যায়। সাবানসহ অন্যান্য বরাদ্দ করা জিনিসের বেলায়ও একই নিয়ম।

এই কিশোর জানায়, কেন্দ্রের পানি খুব খারাপ, তাই প্রায় সবার শরীরে খোসপাঁচড়া হয়েছে। তবে গুরুতর আহত বা সমস্যা না হলে চিকিৎসকের দেখা মেলে না।.. ..

যেসব হত্যার বিচার হয় না

২৯ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

১১ বছর আগে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস আলীর একমাত্র ছেলে নূর আলম বাবুকে (২৬) তুলে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার ঘটনায় র্যাবের সদস্যরা জড়িত ছিলেন। ঘটনার পরের বছর এ কথা বলেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

মন্ত্রণালয় র্যাবের আটজন সদস্যের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ফৌজদারি মামলা করতে পুলিশ সদর দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু আজও তা করা হয়নি।

বৃদ্ধ আক্কাস আলী (৭১) ছেলে হত্যার বিচারের আশায় নিভৃতে দিন পার করছেন রাজধানীর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কমপ্লেক্সে। হত্যাকারীদের নামসহ তদন্ত প্রতিবেদনটি তিনি সযত্নে স্টিলের আলমারিতে রেখে দিয়েছেন।

বাংলাদেশের সংবিধান বলছে, প্রত্যেক নাগরিক আইনের আশ্রয় নেওয়ার অবারিত সুযোগ পাবে। অথচ রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার বিচার পেয়েছে, এমন নজির প্রায় নেই। বিচার চাইতে গেলেও নানা রকমের বাধা আসে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, নতুন সহস্রাব্দের গোড়া থেকে চার হাজারের বেশি মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। মানুষ হেফাজতে নির্যাতনে মারা গেছে, গুম হওয়ার পর লাশ হয়ে ফিরেছে। তবে বড় অংশটির মৃত্যু হয়েছে কথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে। ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বলেছিল, ক্রসফায়ার বন্ধ করবে। তেমনটা হয়নি।

প্রথম আলো এমন সাতটি কথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে নয়জন নিহত হওয়ার ঘটনা তলিয়ে অনুসন্ধান করেছে। পরিবারগুলো থানা–পুলিশ, আদালত বা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয়েও বিচার পায়নি। অন্যদিকে র্যাব বা পুলিশ কিন্তু বন্দুকযুদ্ধের দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি।

সাতটি ঘটনার কোনোটিতেই থানা–পুলিশ পরিবারের মামলা নেয়নি। একটি ঘটনায় আদালতে নালিশি মামলা করার পর ১১ বছরে পাঁচটি সংস্থা তদন্ত করেছে। প্রতিটি তদন্তই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে র্যাবকে দায়মুক্ত করেছে।

আরেকটি ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের ফলে ১১ পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মামলার তদারককারী পরিবারের সদস্যটি ১২ বছর পর একইভাবে নিহত হয়েছেন।

ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে সরকারি দায়িত্ব পালনকালে অপরাধের অভিযোগ উঠলে সে মামলা আমলে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। একটি ঘটনায় সেই অনুমতি চেয়ে আদালত ৯ বছরেও উত্তর পাননি।

পরিবারগুলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে। বিচারের নাগাল পায়নি। কমিশনের সুপারিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধা আক্কাসের ছেলের মৃত্যুসহ দুটি ঘটনার তদন্ত করেছিল। তদন্তে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কিন্তু রাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।

অন্যদিকে সাত ঘটনার কোনোটিকে বন্দুকযুদ্ধ, কোনোটিকে দুই সন্ত্রাসী দলের মধ্যকার গোলাগুলি দাবি করে এক বা একাধিক মামলা করেছে র্যাব বা পুলিশ। কিন্তু তদন্তে কোনো সন্ত্রাসী দল শনাক্ত হয়নি। মামলা শেষ হয়েছে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে। পুলিশ প্রবিধান বলছে, যেকোনো বন্দুকযুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার যুক্তিযুক্ত ও বিধিসম্মত হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী তদন্ত করতে হবে। প্রতিটি ঘটনায় সেই তদন্ত হয়েছে। কিন্তু র্যাব বা পুলিশের ভাষ্য ছাড়া কিছু পাওয়া যায়নি।

অপরাধ দমনের নামে বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারই বিচারবহির্ভূত হত্যাকে মেনে নিয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক ব্যবসা ও ধর্ষণের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যার অভিযোগ অনেক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব আর স্বার্থেও বিনা বিচারে হত্যা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে র্যাবের ১৭ জন সদস্যের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে ভাড়া খেটে অপহরণ করে সাত খুনের অভিযোগ হাইকোর্টে প্রমাণিত হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকার ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপির শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ১ হাজার ১৯৯টি বিচারবহির্ভূত হত্যার হিসাব দিচ্ছে।

২০০২-২০০৩ সালে টানা ৮৫ দিন যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ অভিযানে অন্তত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। ‘সন্ত্রাস নির্মূল’ করার যুক্তিতে আইন করে এসব কাজকে দায়মুক্তি দেয় তৎকালীন বিএনপি–জামায়াত জোট সরকার।

অধিকারের হিসাবে, ২০০৭-২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিনা বিচারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মারা পড়েন ৩৩৩ জন। সংস্থাটি ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময়ে ২ হাজার ৪৭০ জনকে হত্যার হিসাব দিচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে জুলাই পর্যন্ত সংখ্যাটি ২ হাজার ৫০৩।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দলটি ক্ষমতায় গেলে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে এমন হত্যার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্সের’ কথা বলে।

সে বছর জুনে আসকসহ তিনটি সংস্থা বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের দাবিতে হাইকোর্টে রিট করে। মামলাটি আজও ঝুলে আছে। ঝুলে আছে ২০০৬ সালে করা আরেকটি রিটের শুনানি। বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড কিন্তু চলছেই।… …

” … …২০০৯ সালের ৯ অক্টোবর রাত সাড়ে ১২টার দিকে পূর্ব রামপুরা বাজার এলাকায় মডেল ও অভিনেতা কায়সার মাহমুদের লাশ পাওয়া যায়। র্যাব-১ রামপুরা থানায় মামলা করে।

মামলার এজাহারে আছে, ‘কায়সার মাহমুদ বাপ্পি’ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করার জন্য আট-দশজন সহযোগীর সঙ্গে শলাপরামর্শ করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের সদস্যরা সেখানে যান। সন্ত্রাসীরা তাঁদের গুলি করে। আত্মরক্ষার্থে তাঁরাও গুলি করেন। গোলাগুলির পর কায়সার মাহমুদের লাশ দেখেন।

এজাহার অনুযায়ী, র্যাব-১-এর দলটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার সরকার ওমর ফারুক। তাঁর সঙ্গে আরও নয়জন ছিলেন। এজাহারে তাঁদের নাম রয়েছে। পরের বছর ঘটনাটির তদন্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি বলে, র্যাবের তথ্যদাতার ভুলের কারণে কায়সার মাহমুদকে ‘ক্রসফায়ার’ নামের হত্যার শিকার হতে হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা ছিল না। সন্ত্রাসের অভিযোগ ছিল কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তিনি এবং কায়সার দুজনেরই ডাকনাম বাপ্পি। র্যাব-১ ‘ক্রসফায়ার’ করে ভুল লোককে মেরেছে।… …

নাটোরের সিংড়ার কাকিয়ান জঙ্গলে সার ব্যবসায়ী আনছার আলীর (৩৫) লাশটা পাওয়া গিয়েছিল ২০০৮ সালের ২৬ জুলাই। পুলিশ বলে, তিনি ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। আনছার আলীর বাবা রজব আলী বাদী হয়ে ১৪ পুলিশ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশি মামলা করেন। বিচার বিভাগীয় তদন্ত বলে, কোনো ক্রসফায়ার হয়নি। আনছার আলীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে গল্প সাজানো হয়েছে।

তদন্তটি নাটোরের সিংড়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিকসহ ১২ পুলিশ সদস্য এবং তাঁদের ৭ সহযোগীকে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে। পুলিশের ১১ জন ও বাকিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

কিন্তু ঘটনাটি পরে নাটকীয় মোড় নেয়। বাবা রজব আলী প্রথম আলোকে বলেন, এলাকার প্রভাবশালী লোকদের অনুরোধে তিনি আসামিদের সঙ্গে আপস করেন। আদালতে শুনানির সময় সাক্ষীরা সমঝোতা অনুযায়ী সাক্ষ্য দেন। ২০১৫ সালে আসামিরা খালাস পান।

২০১৯ সালের ৭ আগস্ট বগুড়ার শেরপুরের ভবানীপুর বাজারের পাশে আনছারের ভাই আফজাল হোসেনের (৪৫) গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। জেলা পুলিশ বলে, তিনি ছিলেন নিষিদ্ধঘোষিত পূর্ব বাংলা সর্বহারা দলের আঞ্চলিক নেতা। চরমপন্থী ডাকাত দলের বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।

আফজালের ছেলে এনামুল হক সিংড়া আমলি আদালতে মামলা করেন। আরজিতে তিনি লেখেন, ঘটনার এক দিন আগে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে কিছু লোক তাঁর বাবাকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের বন্দর নামের জায়গা থেকে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাবা রজব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ভাইয়ের হত্যার মামলাটি দেখভাল করতেন আফজাল। আফজালের মৃত্যুর ঘটনায় আবার মামলা করায় তাঁদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভয়ে তাঁরা এখন বাড়িতেই থাকেন না।… …”

দেশে অর্থকষ্টে নিখোঁজদের পরিবার

৩০ আগস্ট, ২০২০, দেশ রুপান্তর

২০১০ সালের ২৪ মার্চ রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী সুজনকে তুলে নিয়ে যায় সাদাপোশাকধারী কয়েকজন ব্যক্তি। এর পর থেকে পুলিশ-র‌্যাবসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ধরনা দিয়ে এখনো তার খোঁজ পায়নি স্বজনরা। বড় ভাই মাহবুবুর রহমান জানান, সুজনের ব্যবসার টাকায় চলত তাদের সংসার। অর্থসংকটে বর্তমানে অনেকটা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। একই কথা জানায় ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল নিখোঁজ হওয়া সাইদুর রহমান শাওনের পরিবার। শত চেষ্টা করে কোথাও শাওনের সন্ধান মেলেনি। ছেলে নিখোঁজের পর শাওনের মা হীরা খাতুন পুলিশের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছিলেন। শেষে তিনি চাপের মুখে মামলাটি তুলে নেন। নিখোঁজ সুজনের পরিবারের মতো শাওনের পরিবারও এখন অর্থকষ্টে দিন পার করছে বলে জানান তার বড় ভাই ফয়সাল মির্জা। আর শুধু সুজন বা শাওনই নন, তাদের মতো আরও অনেক নিখোঁজের পরিবার অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছে বলে দেশ রূপান্তররের অনুসন্ধানে জানা গেছে।

আজ ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ^ব্যাপী। গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি আছে সাধারণ লোকজনও। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বন্ধ না হলেও অনেকটাই কমেছে। নিখোঁজ বা গুম নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে বিভিন্ন সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো সদস্য কাউকে গুম বা নিখোঁজ করে না। অভিযোগ আসার পর তারা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ১৪ বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর ৬০৪ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তাদের বেশির ভাগের জীবিত বা মৃত সন্ধান পাওয়া গেলেও ২০০-এর বেশি মানুষ এখনো নিখোঁজ আছেন। তাদের স্বজনরা পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। স্বজনদের খুঁজে পেতে গিয়ে তারা হয়রানি, ভয়ভীতিসহ নানা অনাকাক্সিক্ষত অভিজ্ঞতারও মুখোমুখি হচ্ছেন।.. ..

গুম হওয়া ব্যক্তির সম্পদ আটকা, সংকটে পরিবার

৩০ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন ২০১৯ সালের ১৯ জুন শাহ আলী মাজারের কাছে থাকা নিজের দোকান থেকে দুপুরের খাবার খেতে বেরিয়েছিলেন। আর ফেরেননি। ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার সারা দিনের ফুটেজ পাওয়া গেছে। শুধু পাওয়া যায়নি দুই ঘণ্টার ফুটেজ, যে সময়টিতে তিনি দোকান থেকে বের হন।

ইসমাঈল হোসেনের স্ত্রী নাসরীন জাহান এখন ১৫ বছরের মেয়ে আর ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছেন। নিজে একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরি নিয়েছিলেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা বন্ধ। নাসরীন গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামীর ব্যাংক হিসাবে কিছু টাকা জমা ছিল। স্থায়ী আমানতও ছিল। তিনিই নমিনি (মৃত্যুর পর টাকা পাওয়ার জন্য মনোনীত)। তবে ব্যাংক বলেছে, তাঁর স্বামী জীবিত না মৃত নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ওই টাকা তিনি পাবেন না।

মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে গুমের শিকার হয়েছেন ৫৫৩ জন। তাঁদের কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। কেউ উদ্ধার হয়েছেন সীমান্তের ওপার থেকে। কারও লাশ পাওয়া গেছে পরে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ তুলছে। যাঁরা এখনো নিখোঁজ, তাঁদের পরিবারের বিপদ অন্য রকম। সেটি হলো নিখোঁজ ব্যক্তির নামে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমানো টাকা তুলতে না পারা এবং সম্পদও বুঝে না পাওয়া।… …

আইন অনুযায়ী একজন ব্যক্তি টানা সাত বছর নিখোঁজ থাকার পর আদালত তাঁর পরিবারকে ব্যাংকে জমা টাকা ওঠানো ও সম্পদ বণ্টনের অনুমতি দিতে পারেন। এ জন্য পরিবারকে আদালতে যেতে হয়। আইনি নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না প্রথম আলোকে বলেন, সাত বছর একজন মানুষ নিখোঁজ থাকার পর তিনি আর ফিরবেন না বলে ধরে নেওয়া হয়।

তার আগে ব্যাংক থেকে টাকাপয়সা তোলা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বণ্টনে সমস্যা থাকে। আদালত বিশেষ বিবেচনায় পরিবারগুলোকে জমানো টাকার কিছু অংশ তোলার অনুমতি দিতে পারেন। কিন্তু সমস্যাটা হলো, পরিবারগুলো আশা করে থাকে গুম হয়ে থাকা স্বজন ফিরে আসবেন। তাঁরাও অনেক সময় আদালতে যান না। অপেক্ষা করতে থাকেন।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের কারও কারও স্বজন বলছেন, আইনি যে প্রক্রিয়া, তা অনুসরণ করা তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। কারও ক্ষেত্রে সাত বছর হয়নি, কিন্তু পরিবার ভীষণ আর্থিক সংকটে রয়েছে।… …

স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয় ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে’

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, সমকাল

নারায়ণগঞ্জে জীবিত ফিরে আসা কিশোরীকে ‘ধর্ষণ ও হত্যার দায়’ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেওয়া তিন আসামির একজন নৌকার মাঝি খলিলুর রহমান জামিনে মুক্ত হয়েছেন। মুক্ত হওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি’ দিতে তাকে বাধ্য করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ ছাড়া থানায় পুলিশের নির্যাতনের কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলেও জানান তিনি।

গত ৪ জুলাই নারায়ণগঞ্জের এক কিশোরী নিখোঁজ হওয়ার পর ওই কিশোরীর পরিবার সদর মডেল থানায় প্রথমে জিডি ও পরে মামলা করে। এ ঘটনায় খলিলসহ গ্রেপ্তার তিন আসামি ‘ধর্ষণ-হত্যার দায়’ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। নিখোঁজের এক মাস ২০ দিন পর ওই কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করা হলে শুরু হয় তোলপাড়। প্রশ্নবিদ্ধ হয় পুলিশের তদন্ত। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তারের ২৮ দিন পর বুধবার জামিন পান খলিল। অন্য দুই আসামির জামিন হয়নি এখনও।

নামের ভুলে গেল প্রাণ

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, সমকাল

 “এজাহারের ২ নম্বর আসামি মো. জয়নাল, পিতা আবদুল জলিল পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। তার নিহত হওয়ার সব বিষয় ও কাগজপত্র মামলার কেস ডকেটে (সিডিতে) নোট রাখি। একাধিকবার চিঠি দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছ থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট (এমসি) সংগ্রহ করেছি।” মারধর, হত্যাচেষ্টা ও চুরির মামলার আসামি বখাটে মো. জয়নালের মারা যাওয়ার বিষয়টি এভাবে চার্জশিটে সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দিপংকর চন্দ্র রায়। নিহত হওয়ায় এই আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে আবেদন করা হয়। পুলিশের তদন্তের আলোকে আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতিও দেন আদালত।

তবে এর কিছুদিন পরই বখাটে জয়নাল হঠাৎ আদালতে এসে আইনজীবীর মাধ্যমে এ মামলায় হাজিরা দাখিল করে। ফলে মামলাটি অন্যদিকে মোড় নেয়। সামনে আসে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজনের জায়গায় অন্যজন মারা যাওয়ার বিষয়টি। আদালত থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে এ তথ্য জানার পর এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের বায়েজিদে সরেজমিন অনুসন্ধান করা হয়। এতে বের হয়ে আসতে থাকে আসল ঘটনা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যে জয়নাল প্রাণ হারিয়েছে, সে আসলে ওই মামলার আসামি নয়। সে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল, পড়ত বায়েজিদে অবস্থিত ভোকেশনাল অ্যান্ড টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে। ফলে অভিযোগ উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাম ভুল করায় নিরপরাধ শিক্ষার্থীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। যদিও শিক্ষার্থী ও আসামির নাম এক হলেও তাদের বাবার নাম ভিন্ন ছিল।.. ..

ছয় মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ১৬৭

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৬৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।এর মধ্যে ১২৪ জন ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ বা সংঘর্ষে’ মারা গেছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মোট ১৪২টি ঘটনায় ১৩ জনের নির্যাতনের পর মৃত্যু, ৫ জনের গুলিতে মৃত্যু এবং হাজতে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।.. ..

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের পাশাপাশি গত ছয় মাসে নারী ও শিশুর প্রতি নানা ধরনের সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিবেদনে ধর্ষণ, খুন, যৌন হয়রানি ও আত্মহত্যার ঘটনার সংখ্যাও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই বছরের প্রথম ছয় মাসে ৫২৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩০১ জনই শিশু, যাঁদের বয়স ১৬ বছরের নিচে। ৯৭ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ধর্ষণের পর ১৯ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। শিশুর প্রতি সহিংস ঘটনায় ১৮ শিশু মারা গেছে এবং ৩৯ শিশু মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে।.. …

গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে এইচআরএসএস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় মাসে ৫১ সাংবাদিক আহত হয়েছেন, ৮ জনকে হুমকি দেওয়া, ১১ জন গ্রেপ্তার এবং ১১ জন হামলার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় ৭১ জনকে গ্রেপ্তার ও ১০৩টি মামলা দাখিল করা হয়েছে।

এ ছাড়া গত ছয় মাসে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২৪ বাংলাদেশি, আহত হয়েছেন ৬ জন, ৮ জন গুলিবিদ্ধ এবং ১২ জন বাংলাদেশিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গ্রেপ্তার করেছে।

এক জুম্ম মায়ের আর্তনাদ

২৫ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

খাগড়াছড়ির বলপিয়ে আদাম এলাকায় চাকমা সম্প্রদায়ের এক নারীকে গতকাল ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

২০০৫ সালে ভাইকে এবং ২০০৬ সালে বাবাকে হারানোর পর থেকেই অসহায় এই নারী মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ ছিলেন বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা।

মেয়েটির মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় বার বার তিনি মূর্ছা যাচ্ছিলেন, আর বলছিলেন, ‘কী অপরাধ ছিল আমার অসহায় মানসিক বিপর্যস্ত মেয়েটির? চোখের সামনে মানুষ নামের নরপশুরা আমার অসহায় মেয়েটিকে হাত-পা বেঁধে পাশবিক নির্যাতন করেছে। মেয়েকে দানবদের হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে আমাদেরকেও তারা নির্মমভাবে পিটিয়েছে।’

কান্না করতে করতে এই মা বলছিলেন, ‘এই দেশ কি আমাদের না? আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আমার মেয়ের ওপর যারা পাশবিক অত্যাচার করেছে, আমি তাদের বিচার চাই।’

মেয়েটির আত্মীয়রা জানান, ধর্ষকরা ওই এলাকার সেটেলার। তারা নয় জন মিলে অসহায় এই নারীকে ধর্ষণের পর তার বাড়িতেও লুটপাট চালায়। পাহাড়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের মত তিনিও একজন, যিনি জানেন- এই রাষ্ট্র তার সম্ভ্রমহানির বিচার করতে পারবে না।

খাগড়াছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আফসার জানান, যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে, তার ৩০০ থেকে ৪০০ গজের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুইটি চেকপোস্ট আছে।.. ..

প্রতিদিন ৩টির বেশি ধর্ষণের ঘটনা

৫ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর—এই নয় মাসে প্রতিদিন গড়ে তিনটির বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। নয় মাসে মোট ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রাবাস দখল করে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিতি ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। এ পর্যন্ত অভিযুক্তদের সকলেই ধরা পড়েছেন। এই ঐতিহ্যবাহী কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এক তরুণীর ধর্ষণের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার পরপরই নোয়াখালীর এক গৃহবধুকে বিবস্ত্র করে তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটল। আজ এ পর্যন্ত মোট চারজন এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে। ওই নারী নয়জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন।

আসকের হিসাবে চলতি বছর গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন নারী। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন নারী। আর আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী।

আসকে তথ্য অনুযায়ী, গত নয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানরি কারণে ১২ নারী আত্মহত্যা করেছেন। আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিন নারী এবং ছয় পুরুষ নিহত হয়েছেন।

গত নয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে জুন মাসে। এ মাসে ১৭৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই মাসে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৩৯টি। নয় মাসের এ সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি।

আসক জানায়, এ সময়কালে দেশে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে।

আসকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের তুলনায় গত বছরের (২০১৯) প্রথম নয় মাসে ধর্ষণের ঘটনা বেশি ছিল। গেল বছর এ সময়ে এক হাজার ১১৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন।

আসকের তথ্য অনুযায়ী, গত নয় মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৬৮ নারী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৩ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী।

ভোটকেন্দ্র দখল করে আলীগ নেতাদের নজরে আসে দেলোয়ার

০৯ অক্টোবর ২০২০, যুগান্তর

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুরে ২ সেপ্টেম্বর নারীকে ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বিবস্ত্র করে মারধরের ছবি ভাইরালের ঘটনার অন্যতম হোতা দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। তার বাহিনীতে ৫০ থেকে ৬০ জন ক্যাডার রয়েছে। এলাকায় সে যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। মূলত একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগ নেতাদের নজরে আসে দেলোয়ার।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে ছ্যাঁচড়া চোর থেকে দেলোয়ার কিশোর গ্যাং ‘মামা বাহিনী’ গড়ে তোলে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নে তার বাহিনী বিস্তৃত। এ বাহিনীতে ক্যাডার সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ জন।

এক সময়কার ছিঁচকে চোর দেলোয়ার এখন যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা। হত্যা, রাহাজানি, চাঁদাবাজিসহ পাঁচ মামলার আসামি দেলোয়ার হোসেন। দেল্যা চোরা পুলিশের খাতায় দীর্ঘদিন ধরে পলাতক।

বাহিনীর ক্যাডাররা চুরি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাই, নারী নির্যাতন ও ইভটিজিংয়ের সঙ্গে জড়িত। অনেকের প্রয়োজনে থানার গোলঘরে সালিশদার হিসেবেও গেছে দেলোয়ার।

বেগমগঞ্জ থানার দু-একজন সাব-ইন্সপেক্টর ও সহকারী সাব-ইন্সপেক্টরের সঙ্গেও তার সখ্য ছিল। অথচ পুলিশ বলছে তাকে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে এলাকাবাসী বলছেন দেলোয়ার গ্রামেই ছিল।

এলাকাবাসী জানান, দেলোয়ারের দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই। চুরি-চামারি-ছিনতাই, অস্ত্রবাজি করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সে অর্থ আদায় করত। একে মেরে, ওকে হুমকি দিয়ে ও চাঁদাবাজি করে তার দিন কাটত। অস্ত্র বিক্রি ও অস্ত্র ভাড়া দিয়ে সে অর্থ কামাই করত।

এলাকাবাসী জানান, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর কবিরের পক্ষে একটি ভোটকেন্দ্র দখল করে দেলোয়ার আওয়ামী লীগ নেতাদের নজরে আসে। যদিও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিপুল ভোটে হেরে যান। এর পর দেলোয়ার এলাকার যুবলীগ নেতায় পরিচিত হয়।

টাকা নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আসো, আমাকে বাঁচাও

১২ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

সিলেট কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে মৃত্যুর আগে তাঁকে বাঁচাতে পরিবারের সদস্যদের কাছে আকুতি জানিয়েছিলেন মো. রায়হান আহমদ (৩৪)। তিনি বলেছিলেন, পুলিশের দাবি করা ১০ হাজার টাকা নিয়ে দ্রুত ফাঁড়িতে যেতে। মামলার এজাহারে নিহত রায়হানের স্ত্রী এমন কথাই উল্লেখ করেছেন।

রায়হানের স্ত্রী এজাহারে উল্লেখ করেন, শনিবার বিকেল তিনটার দিকে রায়হান নিজের কর্মস্থল নগরীর রিকাবিবাজার এলাকার স্টেডিয়াম মার্কেটের একটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্রে যান। পরের দিন রোববার ভোর ৪টা ৩৩ মিনিটে একটি মোবাইল ফোন নাম্বার থেকে রায়হানের মা সালমা বেগমের মোবাইল ফোনে কল আসে। ফোন কলটি ধরেন রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ। এ সময় রায়হান ‘টাকা নিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আসো, আমাকে বাঁচাও’ বলে আকুতি জানান। এ কথা শুনে চাচা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান। রায়হান কোথায় জানতে চাইলে একজন পুলিশ বলেন, তিনি (রায়হান) ঘুমিয়ে গেছেন। এ সময় হাবিবুল্লাহ ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা জানালে ওই পুলিশ সদস্য তাঁকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁড়িতে আসতে বলেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, পুলিশের কথা মতো রায়হানের চাচা সকাল পৌনে ১০টার দিকে ফাঁড়িতে যান। দায়িত্বরত পুলিশ তখন জানান যে রায়হান অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চাচা তখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রায়হানকে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তিনি সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে মারা যান।

তিন নেতাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

১২ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন নেতাকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর করা ধর্ষণ মামলার আসামি। রোববার তাঁদের তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।

এই তিনজন হলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম ও মো. সোহরাব হোসেন এবং সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি মো. নাজমুল হুদা। এর মধ্যে সাইফুল ও নাজমুল ওই ছাত্রীর করা মামলার আসামি।

পরিবারের দাবি, পিটিয়ে হত্যা করেছে পুলিশ

১৪ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার ভেতর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হত্যা মামলার আসামি মামুন মিয়াকে (২৭) পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার তাঁর পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, মামুনকে হত্যা করে তাঁর লুঙ্গি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শৌচাগারে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

মামুনের বোন শারমিন বেগম বলেন, ‘পুলিশ বলেছে, আমার ভাই জানালার সঙ্গে লুঙ্গি পেঁচিয়ে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু আমার ভাইয়ের ঘাড় ও ঠোঁটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশই আমার ভাইকে নির্যাতন করে পিটিয়ে হত্যা করেছে।’… …

উত্তাল সিলেট, পুলিশকে ধাওয়া করলো জনতা

১৫ অক্টোবর, ২০২০, ইত্তেফাক

‘পুলিশি নির্যাতনে’ যুবক রায়হান মৃত্যুর ৫ দিনেও উত্তাল ছিল সিলেট। একই দিন রাস্তা থেকে জনতাকে সরিয়ে দিতে গেলে উল্টো পুলিশকে ধাওয়া করে বিক্ষুব্ধ জনতা।

বৃহস্পতিবার বিকালে রায়হানের বাসার কাছে নেহারীপাড়ায় সিলেটে-সুনামগঞ্জ সড়কে জনতা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে।

একই সময়ে সুবিদবাজারে ও দুপুরে আম্বরখানা পয়েন্টে ও শহীদ মিনারে, সন্ধ্যায় কোর্ট পয়েন্টে পৃথক প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে বক্তরা অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও ফাঁসি দাবি করে বলেন, পুলিশ হেফাজতে কারো মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

এর আগে দুপুরে নিহত রায়হানের মা সালমা বেগমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্ট লোকজন রেজিস্ট্রি মাঠ থেকে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক এম, কাজী এমদাদুল ইসলামের নিকট রায়হান হত্যাকারীদের বিচার ও দোষীদের গ্রেফতার দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

এদিকে বিকালে পাঠান টুলায় রাস্থা অবরোধ করলে পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দিতে গেলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশকে ধাওয়া করে।… …

ফেনীতে ধর্ষণবিরোধী লংমার্চে হামলা, আহত

১৭ অক্টোবর, ২০২০, দেশ রুপান্তর

দেশব্যাপী ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন ও ‍বিচারহীনতার প্রতিবাদে শাহবাগ থেকে নোয়াখালীর একলাশপুরগামী লংমার্চে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

সমাবেশ শেষে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফেনী শহরের কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৮ জন আহত হয়েছেন বলে লংমার্চে অংশগ্রহণকারীদের অভিযোগ।

এর আগে শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে লংমার্চকারীরা সমাবেশ করেন।

লংমার্চকারীরা বলেন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সমাবেশ ও প্রচারাভিযান করে ফেনী জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের দিকে লংমার্চ যাওয়ার সময় কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কয়েকজন  সন্ত্রাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। এ সময় লংমার্চকারীদের মধ্যে হৃদয়, শাহাদাত, অনিক, যাওয়াদসহ ৮ জন আহত হন।

তাদের অভিযোগ, সমাবেশে সরকার ও ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়ায় ক্ষমতাসীনরা ক্ষিপ্ত হয়ে লংমার্চকারীদের ওপর হামলা করে। হামলাকারীরা সরকার দলের লোক। পুলিশ পাহারায় সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ফেনী শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ফেনীতে সমাবেশের পরিচালক পংকজ দেবনাথ সূর্য বলেন, এ হামলা ন্যক্কারজনক। আমাদের কর্মীদের হামলা করে দমিয়ে দিতে চায় সন্ত্রাসীরা।

তবে ফেনী মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, হামলাকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছে। ঘটনার পর লংমার্চে অংশগ্রহণকারীদের নোয়াখালী পাঠানো হয়েছে।

এর আগে শহরের শহীদ মিনারের পাশে দোয়েল চত্বরে সমাবেশ চলাকালে স্থানীয় সংসদের ছবির উপর লাল রং লাগিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য লেখাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে লংমার্চকারীদের বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।.. …

যুব অধিকারের তারেক, ছাত্র অধিকারের সজলকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ

২২ অক্টোবর ২২, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন, বাংলা

বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমানকে রাজধানীর রায়সাহেব বাজার এলাকা ও ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগরের কর্মী সজলকে আগাওগাঁও এলাকা থেকে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গণতন্ত্র মতপ্রকাশের অধিকার

শেখ কামালের জন্মদিনে কটুক্তির অভিযোগ, যুবক আটক

০৭ আগস্ট ২০২০, সমকাল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের জন্মদিন নিয়ে ফেসবুকে কটুক্তিমূলক পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় সুজাত হোসেন মোল্যা (২০) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পর তাকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

ফেসবুকে না লেখার শর্তে ছাড়া পান আশরাফ মাহাদী

১০ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

ফেসবুকে লিখবেন না—এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন আশরাফ মাহাদী। তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক আমিনীর নাতি। গত ৬ জুলাই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। ঠিক যেখান থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, অপহরণকারীরা দুদিন পর সেখানেই তাঁকে ফেলে যায়।

জ্যোতির্ময় জিয়া’ নিবন্ধ লিখে চাকরি হারালেন ঢাবি অধ্যাপক

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, সমকাল

পত্রিকায় লেখা একটি নিবন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে করা মন্তব্যকে তার প্রতি অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি হিসেবে সাব্যস্ত করে এক অধ্যাপককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ওই শিক্ষকের নাম ড. মোর্শেদ হাসান খান। তিনি মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।.. …

অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক। ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে নিবন্ধ লেখেন তিনি। সেখানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করেন অধ্যাপক মোর্শেদ। ওই নিবন্ধে তিনি লিখেন, ‘ওই সময় (মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে) আওয়ামী লীগের নেতারা অধিকাংশই পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে যান, এমনকি বঙ্গবন্ধুও।’ পরে ওই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লেখাটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বঙ্গবন্ধু-সংশ্লিষ্ট অংশটুকু প্রত্যাহার করে নেন অধ্যাপক মোর্শেদ।.. …

বছরে মামলা হাজার ছাড়াল

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার দুই বছরের মধ্যে এ আইনে মামলার সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে ৭৩৪টি মামলা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন থানায় করা আরও ৩৩০টি মামলা বিচারের জন্য এ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।

এসব মামলার মধ্যে বেশির ভাগই হয়েছে আইনটির ২৫ ও ২৯ ধারায়। মূলত রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং মানহানির অভিযোগে এ দুটি ধারায় মামলাগুলো হয়েছে। এ আইন হওয়ার আগে একই রকম অভিযোগে মামলা হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারায়।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত বছর সারা দেশে ৭৩২টি মামলায় ১ হাজার ১৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চলতি বছরের প্রথম দুই (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) মাসে ১৬৫ মামলায় ৩৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।.. ..

ভেঙে ফেলা হলো আবরার স্মৃতিস্তম্ভ

৭ অক্টোবর, ২০২০ দেশ রুপান্তর

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর পলাশী মোড়ে নির্মিত আবরার ফাহাদ স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার রাতে পুলিশকে বুলডোজার এনে ওই স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ফেলতে দেখা যায়।

আগ্রাসন বিরোধী আট স্তম্ভ নামে এই স্মৃতিস্তম্ভটি তৈরি করেছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মীরা।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে পরিষদের নেতা-কর্মীরা আবারার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ ব্যানারে এই স্তম্ভ তৈরি করেন।

এর ফলকে লেখা ছিল ‘অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা, অসীম মহাকাশের অন্তে’। আবরার ফাহাদ তার ফেইসবুক প্রোফাইলেও ওই উক্তি ব্যবহার করেছিলেন।

নিজেকে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক হিসেবে দাবি করে আখতার বলছেন, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, গণপ্রতিরক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, দেশীয় শিল্প-কৃষি ও নদী-বন-বন্দর রক্ষা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদা এই আটটি বিষয়ের প্রতীক হিসেবে তারা আটটি স্তম্ভ বানিয়েছেন।

সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের পোস্ট দিতে পারবেন না কলেজের ছাত্রশিক্ষকেরা

৯ অক্টোবর ২০২০, প্রথম আলো

কলেজের ছাত্র ও শিক্ষকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, মন্তব্য, লাইক ও শেয়ার করতে পারবেন না। এসব কাজ থেকে তাঁদের বিরত থাকতে নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

কলেজের ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারসংক্রান্ত নির্দেশনা’ গত বুধবার জারি করা হয়। বিষয়টি মাউশির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় গতকাল।

এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে আরও কিছু বিষয়ে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো সার্ভিস বা পেশাকে হেয়প্রতিপন্ন করে এমন কোনো পোস্ট দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনো রকম তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা যাবে না।

নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে অপপ্রচার বন্ধ না করলে ব্যবস্থা

১৩ অক্টোবর, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে দেশ ও বিদেশ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে এসব অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) এ তথ্য জানানো হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে দেশ ও বিদেশ থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকার, জনপ্রতিনিধি, সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিষয়ে অসত্য, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করার জন্য অসত্য ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। এতে দেশের বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা, জনমনে উদ্বেগ, বিদ্বেষ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরকার ধৈর্যের সঙ্গে এসব অপপ্রচারকারী ও তাদের সহযোগীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে, দেশের স্থিতিশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ও জনস্বার্থে এসব অপকর্ম সৃষ্টিকারী অপরাধীর বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

এ অবস্থায় সরকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে দেশ ও বিদেশ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিদ্যুৎ-জ্বালানী-খনিজসম্পদ

বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ২৫ হাজার কোটি টাকা

২৬ জুলাই, ২০২০, শেয়ার বিজ নিউজ

বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে ২০০৯ সালে বেশকিছু রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয় সরকার। তিন ও পাঁচ বছর মেয়াদি ছাড়াও ১৫ বছর মেয়াদি কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয় সে সময়। যদিও অদক্ষ এসব কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। আবার করোনার কারণে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় কেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগই অলস বসে থাকছে। ফলে বোঝা হয়ে উঠেছে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলো।

তথ্যমতে, ২০১০-১১ অর্থবছর থেকেই বেশিরভাগ রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করে। পরের বছর আরও কয়েকটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসে। যদিও তিন ও পাঁচ বছর মেয়াদি বেশকিছু রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন করে বিদ্যুৎ কেনা অব্যাহত রাখে সরকার। এতে ২০১০-১১ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ৯ বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই গুনতে হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এদিকে ৯ বছরে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনায় মোট ব্যয় হয় ৬৫ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের ৩৮ শতাংশের বেশি ছিল ক্যাপাসিটি চার্জ। বাকি অংশ যায় জ্বালানি ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটাতে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র উঠে এসেছে।

সূত্র জানায়, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে মূলধনি ব্যয় সংস্থানে সরকার ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থাপনে বেসরকারি উদ্যোক্তারা মোট ব্যয়ের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাংকঋণ সুবিধা পেয়েছিল। বাকি ২০ শতাংশ ইক্যুইটি হিসেবে নিজস্ব অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। আর এ ব্যাংকঋণ পরিশোধের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ব্যয় বিবেচনায় ক্যাপাসিটি চার্জের হার নির্ধারণ করা হয়েছিল।

সাধারণত বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ধারিত মেয়াদ (তিন বা পাঁচ বছর) শেষে অবচয়িত মূল্য বাদ দিয়ে বাকি অংশের নেট বর্তমান মূল্য ও ইন্টারনাল রেট অব রিটার্ন হিসাব করে ক্যাপাসিটি চার্জের হার নির্ধারণ করতে হয়। তবে দেশের এ হার নির্ধারণে নির্দিষ্ট কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। বিভিন্ন কেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোক্তাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে দরকষাকষির ভিত্তিতে বছরভিত্তিক ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয়।

পিডিবির তথ্যমতে, ২০১০-১১ অর্থবছরে স্থাপিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ছিল এক হাজার ৭০৩ মেগাওয়াট। আর এজন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় এক হাজার ৩৭১ কোটি ২১ লাখ টাকা। পরের অর্থবছর (২০১১-১২) স্থাপিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৭৪ মেগাওয়াট। এজন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় তিন হাজার ৪৩৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

২০১২-১৩ অর্থবছরে স্থাপিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষমতা একই ছিল। তবে উৎপাদন সক্ষমতা কিছুটা কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট। আর সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় তিন হাজার ৮৭০ কোটি সাত লাখ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরও রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা একই ছিল। তবে মেয়াদশেষে তিন বছর মেয়াদি কুইক রেন্টালগুলো চুক্তি নবায়নের সময় ক্যাপাসিটি চার্জের হার কিছুটা কমানো হয়। এতে সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় তিন হাজার ২১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে স্থাপিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা কিছুটা কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৫৬ মেগাওয়াট। সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় তিন হাজার ১৭১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। পরের বছর বন্ধ হয়ে যাওয়া আরও বেশকিছু রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন করা হয়। এতে ২০১৫-১৬ অর্থবছর রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৯৬ মেগাওয়াট। তবে চুক্তি নবায়নের সময় ক্যাপাসিটি চার্জের হার আরও কিছুটা কমানো হয়। এতে সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় দুই হাজার ৭৯১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছরও রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা একই ছিল। আর সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় দুই হাজার ৬৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। পরের বছর বেশকিছু রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এতে ২০১৭-১৮ অর্থবছর রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা আরও কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৮৯৪ মেগাওয়াট। আর সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় দুই হাজার ৪৭০ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা এক হাজার ৮৯৪ মেগাওয়াটই ছিল। আর চুক্তির ভিত্তিতে সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে ২৫ হাজার ৮৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন ও পাঁচ বছর মেয়াদি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি নবায়নের সময় উচ্চ হারে ক্যাপাসিটি চার্জ অব্যাহত রাখা হয়। যদিও প্রাথমিক মেয়াদেই (তিন বা পাঁচ বছরে) এসব কেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় উঠে গেছে। তবে চুক্তি নবায়নের সময়েও যথাযথভাবে দরকষাকষি করা হয়নি। এতে সরকারের লোকসানের বোঝা বেড়ে গেছে। আর করোনাভাইরাসের কারণে এখন বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে গেছে। ফলে বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে বাধ্য হয়ে কিছু কেন্দ্র বন্ধ করার কথা বলা হচ্ছে।

২২ বিদ্যুৎকেন্দ্রে বছরে গচ্চা দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা

২৭ জুলাই ২৭, ২০২০, শেয়ার বিজ নিউজ

ঘোড়াশালে ১৪৫ মেগাওয়াটের রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১০ সালের আগস্টে নির্মাণ করে এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল। বেসরকারি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চুক্তি ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে এ চুক্তি নবায়ন করা হয়। এতে কেন্দ্রটির জন্য প্রতি মেগাওয়াটে দৈনিক ৫০০ ডলার হারে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। এতে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কেন্দ্রটির জন্য মাসে ১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা দিতে হয় পিডিবি। আর বছরে এ চার্জ পড়ছে ২০৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

একই কোম্পানির ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রয়েছে ৮৫ মেগাওয়াটের গ্যাসচালিত আরেকটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। চুক্তি নবায়নের পর এটির মেগাওয়াটপ্রতি দৈনিক ক্যাপাসিটি চার্জ পড়ছে ৪৬৬ দশমিক ৬৭ ডলার। এতে কেন্দ্রটির মাসিক ক্যাপাসিটি চার্জ ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আর বছরে চার্জ ১১৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

সিদ্ধিরগঞ্জে দেশ এনার্জির ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ মাসিক ১৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর কেন্দ্রটির দৈনিক চার্জ এক্ষেত্রে ৬৩১ দশমিক ৬৭ ডলার। এ হারে বছরে কুইক রেন্টাল কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ দাঁড়ায় ১৮১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। যদিও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চুক্তি নবায়ন করা হয়।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের শুরুর দিকে এভাবেই ২২টি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন করে সরকার। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৫৮২ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে রয়েছে ৯টি ফার্নেস অয়েল, তিনটি ডিজেল ও ১০টি গ্যাসচালিত কেন্দ্র। এ্রগুলোর মাসিক ক্যাপাসিটি চার্জ ১৯১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এতে বছরে এ চার্জ বাবদ পিডিবিকে গুনতে হবে প্রায় দুই হাজার ৩০২ কোটি টাকা। অথচ চাহিদা না থাকায় বেশিরভাগ কেন্দ্রই সারা বছর বসিয়ে রাখা হয়। কখনও কখনও নামমাত্র উৎপাদন করা হয় কেন্দ্রগুলোতে। ফলে ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় পুরোটাই এখন গচ্চা যাচ্ছে।

কর্তাদের হুকুমে ভুতুড়ে বিল, শাস্তি কর্মীদের

১০ আগস্ট ২০২০, প্রথম আলো

ভুল করে নয়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েই বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল করেছিল ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল বাড়তি রাজস্ব দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পারফরম্যান্স বোনাস নেওয়া। একই সঙ্গে প্রথাগত লোকসান (সিস্টেম লস) কমিয়ে দেখানোর জন্য ভুতুড়ে বিল করা হয়েছিল।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডিপিডিসি তাদের ৩৬টি কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে বেশি বিল করার নির্দেশ দিয়েছিল। ওই নির্দেশে এলাকাভেদে ১০ থেকে ৬১ শতাংশ বেশি বিল করতে বলা হয়।.. ..

ডিপিডিসি ও ডেসকোর চার কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রতিবছরই বিদ্যুতের বাড়তি বিল করে তা গ্রাহকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এগুলো হলো সিস্টেম লস কমিয়ে দেখানো। কোম্পানিগুলো যে সিস্টেম লস দেখায়, প্রকৃতপক্ষে তার চেয়ে সিস্টেম লস বেশি। তা ছাড়া যে কোম্পানি যত বেশি বিদ্যুতের বিক্রি (সেলস) বেশি দেখাবে, সে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তত বেশি বোনাস পাবেন। অর্থবছরের (১ জুলাই থেকে ৩০ জুন) শেষ চার-পাঁচ মাসে সাধারণত গ্রাহকের বিদ্যুতের বিল বেশি করা হয়। এবার ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল—এই তিন মাসে মাত্রাতিরিক্ত ভুতুড়ে বিল করায় বিষয়টি সামনে এসেছে।

জিসিএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করবে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ

৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী কয়লাখনিতে কার্যক্রম পরিচালনার বৈধ অনুমোদন নেই গ্লোবাল কোল ম্যানেজমেন্ট রিসোর্সেস পিএলসির (জিসিএম নামে পরিচিত)। কিন্তু ফুলবাড়ী প্রকল্পের কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি জালিয়াতির মাধ্যমে বছরের পর বছর লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট মার্কেটে শেয়ার কেনাবেচা করছে। ‘বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষায় জাতীয় কমিটি’ (এনসিবিডি) যুক্তরাজ্য শাখার এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ। গত মঙ্গলবার দেওয়া জবাবে এমন আশ্বাস দিয়েছে তারা। 

জিসিএমের কার্যক্রম বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে আন্দোলন করে আসছে এনসিবিডিসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। সম্প্রতি দেশটির লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ এবং ‘ফাইন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটির (এফসিএ) কাছে লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি এক স্মারকলিপিতে জিসিএমের তালিকাভুক্তি বাতিলের আবেদন জানায় এনসিবিডি।

বাপেক্সের গ্যাসক্ষেত্রে কাজ পাচ্ছে গ্যাজপ্রম

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, সমকাল

 দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যয়ে ভোলায় তিনটি গ্যাসকূপ খননের কাজ দেওয়া হচ্ছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমকে। দুটি অনুসন্ধান ও একটি উন্নয়ন কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমকে দেওয়া হচ্ছে ৬৩ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলার। প্রতিটি কূপ খননে গড়ে ব্যয় হচ্ছে ২১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এর আগে বাংলাদেশে কোনো গ্যাস কূপ খননে এত ব্যয় হয়নি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় সমঝোতার মাধ্যমে এই কাজ পাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বড় গ্যাস কোম্পানিটি। সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় হয়ে খুব দ্রুত ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যেতে পারে। কূপ তিনটি হলো টবগি-১, ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২।

সূত্র জানায়, গ্যাজপ্রম গত বছরের ২৫ মে ভোলার ওই তিন কূপ খননের জন্য ৬৫ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দর প্রস্তাব করে। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করার জন্য একটি কারিগরি উপকমিটি গঠন করা হয়। এই উপকমিটি কয়েক দফা আলাপ-আলোচনা ও দর কষাকষি শেষে ৬৩ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার দর চূড়ান্ত করে তা জ্বালানি বিভাগের প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) কাছে উপস্থাপন করে। গত ২৭ আগস্ট পিপিসির সভায় এই দাম অনুমোদন করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর সভার কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছে।

জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এই কূপ তিনটি খননে অতিরিক্ত ব্যয়ের যুক্তি হিসেবে সমাঝোতা সভাগুলোতে বলা হয়েছে, ভোলা ক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ (রিজার্ভার প্রেশার) বেশি, ৪৫০০ থেকে ৫০০০ পিএসআই। ফলে সেখানে কূপ খনন করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া, এই কাজের জন্য গ্যাজপ্রমকে ড্রিলিং কন্ট্রাক্টসহ ছয়টি প্রকৌশল সেবা (ডিএসটি, সিমেন্টিং, মাড লগিং, ওয়ারলাইন লগিং, টেস্টিং অ্যান্ড কমপ্লিশন) বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করতে হবে। কভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতির কারণে সমুদ্র ও আকাশপথে চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় মালপত্র ও জনবল আনা-নেওয়ার ব্যয়ও বাড়বে।

বঞ্চিত হচ্ছে বাপেক্স :ভোলা একটি আবিস্কৃৃত গ্যাসক্ষেত্র। সূত্রমতে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এটি আবিস্কার করেছে। সেখানে একাধিক কূপও খনন করেছে দেশি এ প্রতিষ্ঠানটি। গ্যাজপ্রমকে এখন যে তিনটি কূপ খননের কাজ দেওয়া হচ্ছে সেগুলোও বাপেক্সের দেওয়া ভূতাত্ত্বিক কারিগরি নির্দেশনা (জিওলজিক্যাল টেকনিক্যাল অর্ডার বা জিটিও) অনুসরণ করে, বাপেক্সের নির্ধারণ করে দেওয়া স্থানেই (লোকেশন) কূপ খনন করবে গ্যাজপ্রম। বাপেক্স ওই এলাকায় দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করায় কূপ খননের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্যই তাদের কাছে রয়েছে। কূপ খননের জন্য রিগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং জনবলও বাপেক্সের আছে। আর একেকটি কূপ খনন করতে বাপেক্সের ব্যয় হবে সর্বোচ্চ ১০ মিলিয়ন ডলার (রিগ ভাড়া, জনবলের পেছনে ব্যয়, থার্ড পার্টির সেবাগুলোর ব্যয় সব মিলিয়ে)। কিন্তু বেশি মূল্যে বাপেক্সের এসব কূপ খননের কাজ দেওয়া হচ্ছে গ্যাজপ্রমকে।

গ্যাজপ্রম কম ব্যয়ে কূপ খনন করেছিল :বাংলাদেশে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তির (পিএসসি) অধীনে সিলেট অঞ্চলের তিনটি ব্লকে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি শেভরনের প্রতিটি কূপ খননে গড় ব্যয় হয় ১৭ মিলিয়ন ডলার। গ্যাজপ্রম এর আগে গত এক দশকে একাধিক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে মোট ১৭টি কূপ খনন করেছে। এর মধ্যে প্রথম ১০টির চুক্তিমূল্য ছিল প্রায় ১৯৩ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, প্রতিটি কূপে কোম্পানিটি নিয়েছিল ১৯ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। পরের কূপগুলোতে গ্যাজপ্রম খনন করেছে ১৬ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু এবার প্রতি কূপে খরচ দেওয়া হচ্ছে ২০ মিলিয়নের বেশি।

নির্দেশনা লঙ্ঘন :সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে ভোলার তিন কূপ খনন প্রস্তাবের যে সারসংক্ষেপ জ্বালানি বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, গ্যাজপ্রম ‘হ্রাসকৃত মূল্যে’ এই তিনটি কূপ খনন করবে। প্রধানমন্ত্রী সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেন। কিন্তু এখন তিনটি কূপের যে চুক্তিমূল্য চূড়ান্ত করা হয়েছে তা বাংলাদেশে গ্যাস কূপ খননে সর্বোচ্চ মূল্যের রেকর্ড। ফলে এটা এক প্রকার নির্দেশনার লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন সংশ্নিষ্টরা।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এই কূপগুলো খননে সম্পূর্ণ সক্ষম। এই অবস্থায় কোনো যুক্তিতেই রেকর্ড পরিমাণ বেশি ব্যয়ে এই কাজ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যৌক্তিক নয়। এটা জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজ হবে।

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, গ্যাজপ্রম আমাদের সহযোগিতা করতে পারে চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। তাদের সহযোগিতা দরকার গভীর কূপ খননে, সমুদ্রবক্ষে অনুসন্ধানে। তার পরিবর্তে বাপেক্সের আবিস্কৃত ক্ষেত্র তাদের কাছে দেওয়ার কোনো মানে হয় না।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সমকালকে বলেন, গ্যাজপ্রমের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তারা এই দরের নিচে নামতে চাচ্ছে না। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভোলার উন্নয়ন যেহেতু গ্যাজপ্রম করছে, তাই কূপ খননের কাজও তাদের দেওয়া হচ্ছে। কারণ উচ্চচাপের কূপ খননের অভিজ্ঞতা গ্যাজপ্রমের রয়েছে।

ভোলায় প্রথম অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয় ১৯৯৪ সালে। এরপর আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ১১ মে থেকে ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে দৈনিক পাঁচ কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এই গ্যাসক্ষেত্রে দেড় ট্রিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য শুধু শাহবাজপুর নয়, পুরো ভোলাতেই গ্যাস পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ভোলা বেঙ্গল বেসিনভুক্ত। সেখানে যে ভূ-কাঠামোয় গ্যাস পাওয়া গেছে, তার ভূতাত্ত্বিক নাম ‘স্টেটিগ্রাফিক স্ট্রাকচার’। দেশের অন্য সব গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে সুরমা বেসিনে।

শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে ভোলায় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে (২২৫ ও ৩৫ মেগাওয়াট) গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় শিল্প ও আবাসিক গ্রাহকদেরও গ্যাস দেওয়া হচ্ছে।

চড়া দামে খনন করবে গাজপ্রম, বঞ্চিত বাপেক্স

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রথম আলো

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের আবিষ্কৃত ভোলা গ্যাসক্ষেত্রের তিনটি কূপ খননের কাজ বিনা দরপত্রে রাশিয়ার গাজপ্রমকে দেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। প্রতিটি কূপ খননে গাজপ্রম পাবে ২১ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার (১৮০ কোটি টাকার বেশি)। দুটি অনুসন্ধান ও একটি উন্নয়ন কূপ খনন করবে এই কোম্পানি। তবে বাপেক্স খনন করলে প্রতিটি কূপে খরচ হতো গড়ে ১০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮০ কোটি টাকা)। গাজপ্রমকে এত বেশি দামে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না।

গাজপ্রম সর্বশেষ শাহবাজপুর উত্তর ও ভোলা পূর্বে দুটি কূপ খনন করে। এতে ব্যয় ছিল ১৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এর চেয়েও কম মূল্যে গাজপ্রমকে কূপ খননের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় প্রতিটি কূপ খননে গাজপ্রমকে ২১ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে জ্বালানিসচিবের নেতৃত্বাধীন প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি (পিপিসি)। এই সিদ্ধান্ত এখন ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যাবে। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন প্রধানমন্ত্রী। জ্বালানি বিভাগ ও বাপেক্স সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজপ্রমকে ২০১২ সালে দেশের যে ১০টি গ্যাসকূপ খননের ঠিকাদারি দেওয়া হয়েছিল, সে অভিজ্ঞতা ভালো ছিল না। গাজপ্রম এ পর্যন্ত মোট ১৭টি কূপ খনন করেছে। সব কাজই পেয়েছে বিনা দরপত্রে বিশেষ জরুরি ও জ্বালানি আইনের অধীনে।

ভোলা গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় ১৯৯৫ সালে। বাপেক্স ২০০৯ সাল থেকে সেখানে গ্যাস উত্তোলন করছে, যা শুধু ভোলায় ব্যবহৃত হয়।

বাপেক্স থাকতে কেন বিদেশি কোম্পানিকে কূপ খননের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে? তাহলে কি বাপেক্স কূপ খনন করতে পারত না, এমন প্রশ্নের জবাবে জ্বালানিসচিব মো. আনিছুর রহমান গতকাল বুধবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাপেক্স কূপ খনন করতে পারত না, তা বলব না। আবার পারত, তা-ও বলছি না। কূপ খননের বিষয়ে গাজপ্রমের সঙ্গে আগেই একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ফলে গোটা বিষয়টাই বুঝতে হবে।’… …

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের শর্তভঙ্গ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই সঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রীও। এই মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির কোনো সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জ্বালানিমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নেওয়ার বিধান রয়েছে। গাজপ্রমকে তিনটি কূপ খননের বিষয়ে ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়। এক সপ্তাহ পর এতে সই করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই সারসংক্ষেপে হ্রাসকৃত মূল্যে কূপ খননের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও এখন সেটা মানা হচ্ছে না। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী হ্রাসকৃত মূল্যে খনন করতে বলার পরও গাজপ্রমকে আগের দাম ১৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ২১ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলারে কূপ খননের অর্থ হলো, সরকারি কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানিসচিব মো. আনিছুর রহমান গতকাল বুধবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। কিন্তু বাস্তবতাটাও বুঝতে হবে। গাজপ্রম ২০১৭ সালে ১৬ মিলিয়ন ডলারে কূপ খনন করেছে। এখন ২০২০ সাল। প্রায় চার বছর পর এসে এই দাম বেশি নয়। তা ছাড়া যেখানে গাজপ্রম কূপ খনন করবে, সেখানে উচ্চ চাপ আছে গ্যাসের।’.. ..

বাপেক্স থাকতে গাজপ্রম কেন

প্রথম আলোর কাছে জ্বালানিসচিব আনিছুর রহমান দাবি করেছেন, বাপেক্সের তুলনায় বেশি দামে কূপ খননের কাজ দেওয়া হয়নি গাজপ্রমকে। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৩ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ২০টি কূপ খনন করতে বাপেক্সের গড়ে খরচ হয়েছে ১৭ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় দেড় শ কোটি টাকা)।

তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। আসলে ২০টি গ্যাসকূপের মধ্যে ঠিকাদার হিসেবে বিনা দরপত্রে ১৭টি কূপ খনন করেছে গাজপ্রম। ১৭টি কূপের মধ্যে ৫টি বালু-পানি উঠে বন্ধ হয়ে যায়। এগুলো হচ্ছে তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের ২০ ও ২১ নম্বর কূপ, সেমুংতাং ৬, বেগমগঞ্জ ৩ ও শাহবাজপুর ৪। পরে এই পাঁচটি কূপ খনন করে বাপেক্স। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর পেট্রোবাংলাকে দেওয়া বাপেক্সের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতিবেদনে এই তথ্য রয়েছে।

বাপেক্সের একাধিক ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেছেন, গাজপ্রম প্রথম পর্যায়ে যে ১০টি কূপ খনন করেছিল, সেগুলোর ৫টিই কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়। ওই কূপগুলো আবার সংস্কার করে গ্যাস উত্তোলন করে বাপেক্স। গাজপ্রমের ভুলে নষ্ট হওয়া কূপ খননে কিছু ব্যয় বেশি হয়েছে তখন। বাপেক্সের কোনো কূপ খনন ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার বেশি হওয়ার নজির নেই। সম্প্রতি করোনাকালের মধ্যে শ্রীকাইল পূর্ব খনন শেষ হয়েছে, এটি করতে বাপেক্সের ৮০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

রিগ আনা-নেওয়ায় অবাস্তব দর

প্রতিটি কূপ খননে গাজপ্রম গড়ে ২১ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার পাচ্ছে। গাজপ্রমের দর প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংস্থাটি কূপ খননের যন্ত্র রিগ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিতে ১ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় দেখিয়েছে। উজবেকিস্তানের কোম্পানি এরিয়ালের কাছ থেকে রিগ নেবে গাজপ্রম। বর্তমানে এরিয়ালের রিগটি শাহবাজপুর উত্তর-১ রয়েছে। এখানে তারা সর্বশেষ কূপটি খনন করে। এখান থেকে ভোলা উত্তরে নেওয়া হবে রিগ। এই পথের দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার। সেখানে কূপ খনন শেষে রিগ নেওয়া হবে শাহবাজপুর ইলশাতে। এই পথের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। আর সেখান থেকে ভোলা টগবিতে নেওয়া হবে, যার দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। গাজপ্রম প্রতিবার রিগ সরাতে নেবে ১ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার করে। আবার রিগ ফিরিয়ে নিতে নেবে ৩ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার।

জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি শুধু অস্বাভাবিকই নয়, বাস্তবের সঙ্গে এটির কোনো সংগতি নেই।

কক্সবাজারে ৮টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র: বাস্তবায়িত হলে ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটবে

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, বণিক বার্তা

ভিশন-২০২০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এসব প্রকল্পের মধ্যে বিদ্যুৎ খাত অন্যতম। উন্নয়নের পূর্বশত হিসেবে বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশে কয়লাভিত্তিক বড় বড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নের কাজ চলছে। পরিবেশবাদীদের আপত্তির মুখে এসব কেন্দ্র বাস্তবায়িত হলেও মারাত্মক বিপর্যয়ের চিত্র উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থায়। বিশেষ করে দেশের পর্যটন জেলা কক্সবাজারে তাপভিত্তিক আটটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে অন্তত ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার অন রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার’ (সিআরএই)।

গবেষণায় বলা হয়েছে, কক্সবাজারে আটটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে কক্সবাজার জেলা। পর্যটন এ রাজধানীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কারণে বছরে আনুমানিক ১ হাজার ৬০০ কেজি পারদ এবং ছয় হাজার টন ফ্লাই অ্যাশ বাতাসে ছড়াবে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়া পারদের ৪০ শতাংশ মাটি ও সাধু পানিতে জমা হবে। বিশেষ করে কৃষিজমিতে এবং জলাশয়ে পারদ মিশে গিয়ে ওই অঞ্চলের ৭৪ লাখ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে।

সিআরইএর প্রধান বিশ্লেষক লরি মিলিভিরতা বলেন, মহেশখালী ও মাতারবাড়ীতে আটটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক হাব তৈরি হবে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিরূপণ করায় চরম গাফিলতি করা হয়েছে এবং এগুলোর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি খুবই দুর্বল।

সিআরইএ গবেষণা বলছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পরিচালনকালীন যে পরিমাণ বায়ুদূষণকারী পদার্থের নিঃসরণ ঘটবে তা আনুমানিক ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে। এর মধ্যে ৪ হাজার ১০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করবে দীর্ঘদিন ফুসফুসের রোগে ভুগে, ৭ হাজার ৭০০ মানুষ হূদরোগে, ২০০ জন শিশুসহ অন্তত ৩ হাজার মানুষ শ্বাসযন্ত্র সংক্রমণজনিত, এক হাজার ৩০০ জন ফুসফুসের ক্যান্সারে, ২ হাজার ৬০০ জন স্ট্রোকে এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড বিষক্রিয়ায় মারা যাবে ৫ হাজার ৯০০ মানুষ।

জানা গেছে, কক্সবাজারে মোট আটটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ১৪টি ইউনিটে বিভক্ত থাকবে। মোট উৎপাদনক্ষমতা হবে ৮ হাজার ৭২০ মেগাওয়াট। এছাড়া আরো দুটি ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

বিদেশি ৭ কোম্পানি নিয়ে গেছে ১৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা

২৪ সেপ্টেম্বর ২৪, শেয়ার বিজ নিউজ

গত এক দশকে বিদ্যুৎ খাতে দেশীয় কোম্পানির পাশাপাশি কিছু বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। আবার ২০১০ সালের আগেও বাংলাদেশে কয়েকটি বিদেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল। সব মিলিয়ে বিদেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা দুই হাজার ১৫ মেগাওয়াট। আর এসব কেন্দ্রের জন্য এক দশকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা।

পিডিবির তথ্যমতে, ২০১০-১১ অর্থবছর বাংলাদেশের ছয়টি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এ কোম্পানিটির কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩৯০ মেগাওয়াট। আর সে অর্থবছর এ ছয় কেন্দ্রের জন্য পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে ৪৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পরের (২০১১-১২) অর্থবছর এগ্রিকোর কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় সাতে। আর উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ৫৩৫ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয় ৯৮৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

যদিও ২০১২-১৩ অর্থবছর এগ্রিকোর দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ছিল। এতে পাঁচটি কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা কমে দাঁড়ায় ৩৯০ মেগাওয়াট। তবে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই অর্থবছর এগ্রিকোকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় এক হাজার সাত কোটি ১২ লাখ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরও কোম্পানিটির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা একই ছিল। তবে উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ কমে দাঁড়ায় ৯৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৪-১৫ অর্থবছর এগ্রিকোর ৪০ মেগাওয়াটের একটি কুইক রেন্টাল কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। তবে অপর দুটি কেন্দ্রের সক্ষমতা ১৫ মেগাওয়াট করে বাড়ানো হয়। এতে এগ্রিকোর কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ৩৮০ মেগাওয়াট। আর এজন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় এক হাজার ৫১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরও এগ্রিকোর কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা একই ছিল। তবে উৎপাদন কমে যাওয়ায় এগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ কমে যায়। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পিডিবি ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করে ৫৭৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, আর ২০১৬-১৭ অর্থবছর ৪৭১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষ দিকে এগ্রিকোর ১০০ মেগাওয়াটের আরেকটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসে। এতে কোম্পানিটির কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ৪৮০ মেগাওয়াট। তবে উৎপাদন আরও কমায় ক্যাপাসিটি চার্জ কমে দাঁড়ায় ৪০৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছর এগ্রিকোর ১৪৫ মেগাওয়াটের আরেকটি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। তবে ১০০ মেগাওয়াটের আরেকটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসে। যদিও নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে না পারায় কেন্দ্রটিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের বদলে ৩০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ফলে ওই অর্থবছর কোম্পানিটিকে সার্বিকভাবে পরিশোধিত ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছর এগ্রিকোর ১৪০ মেগাওয়াটের আরও দুটি কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এতে কোম্পানিটির তিন কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কমে দাঁড়ায় ২৯৫ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে কোম্পানিটিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় ৪৯৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর সব মিলিয়ে এক দশকে কোম্পানিটির পকেটে গেছে ছয় হাজার ৭৯৫ কোটি তিন লাখ টাকা।.. …

এদিকে বেসরকারি খাতে বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) মেঘনাঘাট পাওয়ার কোম্পানি। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এইএস (অ্যালাইড এনার্জি সিস্টেম) করপোরেশন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করে। তবে ২০০৩ সালে তারা কেন্দ্রটি যুক্তরাজ্যের সিডিসি গ্লোবলাকের কাছে বিক্রি করে দেয়। আর ২০০৭ সালে সিডিসি গ্লোবলাক এ কেন্দ্রটি মালয়েশিয়ার পানডেকার এনার্জির কাছে বিক্রি করে দেয়।

গ্যাসচালিত ৪৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ কেন্দ্রটির জন্য গত এক দশকে (২০১০-১১ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর) পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে তিন হাজার ৭২৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

মেঘনাঘাট আইপিপির আগে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে বিদেশি বিনিয়োগের আইপিপি হরিপুর পাওয়ার প্লান্ট। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এইএস করপোরেশন ২০০১ সালে গ্যাসচালিত ৩৬০ মেগাওয়াটের এ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করে। গত এক দশকে এ কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে এক হাজার ৭৯৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

যদিও বাংলাদেশে বেসরকারি তথা বিদেশি বিনিয়োগের প্রথম আইপিপি (বিদ্যুৎকেন্দ্র) হরিপুর বার্জমাউন্টেড পাওয়ার প্লান্ট। ১৯৯৮ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউ ইংল্যান্ড পাওয়ার কোম্পানি। ২০ বছর মেয়াদি এ কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছর। এতে ২০১০-১১ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত ৯ বছরে কেন্দ্রটির জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে এক হাজার ১৯৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর বাংলাদেশে ৩০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এপিআর এনার্জি। ডিজেলচালিত এ কেন্দ্রটির জন্য দুই অর্থবছরে পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে এক হাজার ৪৭ কোটি টাকা। যদিও চাহিদা না থাকায় গত অর্থবছর এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে নামমাত্র উৎপাদন করা হয়।

ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে নির্মিত কেন্দ্রটি সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হলে বছরে কমপক্ষে ২১৬ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। অথচ গত অর্থবছর কেন্দ্রটিতে মাত্র ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা সক্ষমতার এক শতাংশের কম। তবে এ সময় কেন্দ্রটির জন্য ৫৩২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় পিডিবিকে। এতে কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি এক হাজার ৫৭৯ টাকা ৫৭ পয়সা। এটি দেশে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

এদিকে ২০১৪-১৫ সালে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কোম্পানি লক্ষধনবি। এ কোম্পানির ৫২ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির জন্য ছয় বছরে ৩৭৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়া লক্ষধনবির সহযোগী রাজলঙ্কা পাওয়ার বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে। ৫২ মেগাওয়াটের এ কেন্দ্রটির জন্য সাত বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪৪৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

গত অর্থবছর ফেনীলঙ্কা নামে ১১৪ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশে নির্মাণ করেছে লক্ষধনবি। এ কেন্দ্রের জন্য ৭৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে লক্ষধনবি বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছে ৮৯৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

এর বাইরে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সেম্বকর্প ২৮২ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। দুই বছরে কেন্দ্রটির জন্য কোম্পানিটি ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়েছে ৮২৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

পরিবেশ

ওয়াসার খাল দখল করে রাজউকের লেক

২৩ আগস্ট ২০২০, সমকাল

ঢাকা ওয়াসার প্রবহমান তিনটি খাল দখল করে লেকে পরিণত করায় রাজধানীর পানি প্রবাহ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। খালগুলোর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা মহানগরীর উত্তরে বিস্তৃত এলাকায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিতে পারে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) উত্তরা আবাসিক প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়) অধীনে সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে লেক নির্মাণের কাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা ওয়াসা বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির বিরোধিতা সত্ত্বেও খালকে লেকে রূপান্তর করার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে রাজউক।

বালু উত্তোলনে কৃষিজমি ঘরবাড়ি যাচ্ছে নদীতে

২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, সমকাল

সোনারগাঁয়ের বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক এলাকায় বালু সন্ত্রাসীরা ইজারা ছাড়াই অবৈধভাবে রাতের আঁধারে ৩০-৩৫টি ড্রেজার বসিয়ে নদীর তীরবর্তী স্থান ও কৃষিজমির কাছ থেকে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন মেঘনার তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। মেঘনা নদীর বিভিন্ন বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে মেঘনা নদীবেষ্টিত অনেক গ্রাম এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে। এরই মধ্যে নদীর তলদেশের মাটি সরে উপজেলার খাসেরচর, ভুরভুড়িয়া, ভাটিবন্ধর ও সুলতান নগর গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে মালিগাঁও, হাড়িয়া, গোবিন্দি হাড়িয়া বৈদ্যেপাড়া সোনামই, নুনেরটেক গুচ্ছগ্রামসহ কয়েকটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে।

দখলে অর্ধেক কর্ণফুলী বর্জ্যে বিষাক্ত হালদা

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, সমকাল

দখল-দূষণে মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ কমে অর্ধেকে নেমেছে। চট্টগ্রামের প্রধান এই নদীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় ২০১৪ সালে প্রস্থ ছিল ৮৬৬ মিটার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪১০ মিটারে। অভিযান বন্ধ থাকায় কর্ণফুলীর বিভিন্ন পাড়ে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা। বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ক্ষতিকর বর্জ্য পড়ছে নদীতে। দূষণে পিছিয়ে নেই দক্ষিণ এশিয়ায় কার্পজাতীয় মাছের অন্যতম প্রজননকেন্দ্র হালদাও। খন্দকিয়া, কাটাখালীর মতো ছোট-বড় বেশ কয়েকটি খাল দিয়ে শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালির ক্ষতিকারক বর্জ্য প্রতিদিনই পড়ছে হালদায়। এতে হুমকিতে পড়ছে মা মাছ ও ডলফিনের প্রজনন। দূষিত হচ্ছে পরিবেশও। একাধিক অভিযানেও হালদায় বন্ধ করা যাচ্ছে না গোপনে মাছ শিকার। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার উদাসীনতা, সমন্বিত উদ্যোগের অভাবসহ কয়েকটি কারণে এ দুই নদীর কান্না থামছে না বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা। ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠনের পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে কর্ণফুলীর বিষয়ে পিলে চমকানোর মতো তথ্য। কর্ণফুলীর রাজাখালী খালের মুখে প্রশস্ততা ৮৯৮ মিটার থাকলেও সেটি এখন নেমেছে ৪৬১ মিটারে। চাক্তাই খালের মুখে এখন নদীর প্রস্থ মাত্র ৪৩৬ মিটার, যা আগে ছিল ৯৩৮ মিটার। মেরিনার্স পার্ক এলাকায় প্রস্থ ৯৮১ মিটার হলেও খনন করে সেখানে মিলছে ৮৫০ মিটার। ফিরিঙ্গিবাজার মোড়ে প্রস্থ ছিল ৯০৪ মিটার, বন্দর কর্তৃপক্ষ খননের পর সেখানে নদী আছে ৭৫০ মিটার। ইচ্ছামতো গাইড ওয়াল নির্মাণ করার কারণে কয়েকটি অংশের জায়গা চিরতরে বিলুপ্ত হয়েছে বলে জরিপে তুলে ধরা হয়েছে। সর্বশেষ জরিপ হিসেবে গত ৩০ আগস্ট থেকে ২১ দিনব্যাপী কর্ণফুলী নদীর এই প্রস্থ জরিপ পরিচালনা করা হয়। বিএস শিট, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, চট্টগ্রাম বন্দর প্রণীত কৌশলগত মহাপরিকল্পনা ২০১৪-এর সঙ্গে তুলনা করে এই জরিপ করা হয়।

হালদাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা !

১৮ অক্টোবর ২০২০, দৈনিক পূর্বকোণ

মোহরা ও মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে হালদা নদী থেকে দৈনিক ১৮ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করে নগরীতে সরবরাহ দেয় চট্টগ্রাম ওয়াসা। এরইমধ্যে মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে পানি সরবরাহ দিতে আরো একটি নতুন প্রকল্প নিচ্ছে সরকারের সেবা সংস্থাটি। হালদা থেকে দৈনিক পানি ১৪ কোটি লিটার উত্তোলন করে সরবরাহ করা হবে এই প্রকল্পে। বিপুল এই পানি উত্তোলন করা হলে হালদার মৃত্যু ডেকে আনা হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞগণ। চট্টগ্রাম মৎস্য দপ্তরও এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। অথচ প্রকল্পটির স্বপক্ষে আইডব্লিউএম (ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং) রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

হালদা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রিপোর্ট দেওয়ার আগে হালদার নদীর ইকোলজিক্যাল ফ্লো নির্ধারণ করতে হবে। নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা, ডলফিনের বিচরণ এবং রুই জাতীয় মাছের প্রজননের জন্য কী পরিমাণ পানি প্রয়োজন সেটি আগে নির্ধারণ করা দরকার। এরপর অতিরিক্ত পানি থাকলে তা উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া ২০১৬ সালে প্রখ্যাত পানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট), বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টিম হালদা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালায়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ওই গবেষণায় হালদায় পানি সংকট উল্লেখ করে বলা হয়, ভূজপুর রাবারড্যাম, হালদার বিভিন্ন শাখা খালের মুখে স্থাপিত ১৬টি স্লুইচগেট ও প্যারালাল খাল প্রজেক্টের কারণে নদীর জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এসব স্থাপনার কারণে হালদার পানির স্রোত আটকে যাচ্ছে। তাই এগুলো অপসারণ করে পানি ফ্লো বৃদ্ধির জন্য রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া অতীতে ১১টি বাঁক কেটে দেওয়ার কারণে হালদার দৈর্ঘ্য ২৫ কিলোমিটার কমে গেছে। আগে নদীর দৈর্ঘ্য ছিল ১২৩ কিলোমিটার। বর্তমানে আছে ৯৮ কিলোমিটার। এ কারণে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম ওয়াসার মোহরা ও মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে হালদা থেকে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে শুষ্ক মওসুমে নদীতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে থাকে। তাই নতুন কোন প্রকল্প গ্রহণ করলে এসব বিষয় মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ টিমের এসব সুপারিশ এড়িয়ে গিয়ে হালদা থেকে দৈনিক আরো ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলনে ওয়াসার প্রস্তাবিত প্রকল্পের পক্ষে গত সেপ্টেম্বরে রিপোর্ট দেয় আইডব্লিউএম। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিতে গেলে আইডব্লিউএম’র রিপোর্টের বিষয়ে বিভিন্ন ত্রুটি উঠে আসে।

যেন শত পাহাড়ের গণহত্যা

২৩ অক্টোবর, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের এক পাশে রাঙ্গাপাহাড় গ্রাম। ওই জনপদের সবচেয়ে বড় পাহাড়টির নামে গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে। গত দুই বছরে নাম একই থাকলেও হারিয়ে গেছে ওই গ্রামের সব পাহাড়।

পাহাড়গুলো কোথায় হারিয়ে গেছে সে উত্তর মিলবে গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়া দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের দিকে তাকালে। সব পাহাড় কেটে আনা মাটি দিয়ে ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে রেললাইন। পাহাড় থেকে মাটি আনতে ফসলি জমি ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে এক কিলোমিটার দৈঘ্যের একটি মাটির সড়ক। ভরাট করা হয়েছে একটি প্রবাহমান খালও। মাটির সড়ক ধরে মিনিট বিশেক হাঁটলে দেখা মিলবে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাওয়া সব পাহাড়ের।

‘ঐখানে ছিল সবচেয়ে বড় পাহাড়টি। বছর খানেক আগে সেটি কাটা হয়ে গেছে’— স্থানীয় বাসিন্দা আবু শাহেদ দ্য ডেইলি স্টারকে এ কথা বলেন। গত দুই বছর ধরে পাহাড় কাটা হচ্ছে জানিয়ে শাহেদ বলেন, আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছি। কিছু বলতে পারিনি। কারণ ইলিয়াস নামে এক ব্যক্তি যার নেতৃত্বে পাহাড় কাটা হচ্ছে, তিনি খুবই প্রভাবশালী।

পুরো দিন চেষ্টা করে মিললো ইলিয়াসের পরিচয়। তার বাড়ি চুনতি ইউনিয়নের বড়ঘোণা এলাকায়। পেশায় ব্যবসায়ী ইলিয়াস থাকেন কক্সবাজারে। রেলওয়ের প্রকল্পে মাটি সরবরাহ করছেন এই ব্যবসায়ী।

রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন গ্র্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক রাশেদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে তারা মাটি নেন। মাটি নেওয়ার আগে তাদের জমির দলিলাদি সঠিক আছে কি না সেটা যাচাই করে তারপর তারা চুক্তিতে যান।

‘আমরা ইলিয়াসের সঙ্গে চুক্তি করেছি মাটি সরবরাহের। চুক্তি অনুযায়ী, তার কথা ছিল আজিজনগর থেকে মাটি দেবে। রাঙ্গাপাহাড় থেকে যে মাটি দিচ্ছে সে বিষয়টি আমরা জানি না’, বলেন তিনি।

তবে, রেললাইন নির্মাণের স্থানে বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয় ও তমা কন্সট্রাকশনের গাড়ি দেখেছেন এ প্রতিবেদক। ইলিয়াসকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাকে এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি।

কাটা হয়েছে দুই কোটি দুই লাখ ঘনফুট পাহাড়

গত ১৬ অক্টোবর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাহাড়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে। তারা প্রায় দুই কোটি দুই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়েছে।… …

পানি

সরবরাহকৃত পানি সুবিধার বাইরে ৮৫% মানুষ

২৭ জুলাই, ২০২০, বণিক বার্তা

দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশ ভুটান। আয়তন ও অর্থনৈতিকভাবে ছোট হলেও নাগরিকদের পরিশোধিত পানির প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য নেই দেশটির। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, ভুটানের ৯৯ শতাংশের বেশি মানুষ পাইপলাইনে সরবরাহ করা পরিশোধিত পানি পাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশে এখনো পরিশোধিত পানি সুবিধার আওতায় রয়েছে মাত্র ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষ।

বিশ্বব্যাংক তাদের ওই প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পানি সরবরাহ, গুণগত মান এবং দাম নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে। সেখানে পাইপলাইনে সরবরাহকৃত পানির বিষয়ে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সরবরাহকৃত পরিশোধিত পানি প্রাপ্তির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভুটান। দেশটির ৯৯ শতাংশের বেশি মানুষ সরবরাহকৃত পানি সুবিধা পায়। অন্যদিকে মালদ্বীপে ৪৭ দশমিক ৮০ শতাংশ, নেপালে ৪৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, ভারতে ৪৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ, শ্রীলংকায় ৩৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও আফগানিস্তানে ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ মানুষ পাইপলাইনে সরবরাহ করা পানি সুবিধার আওতায় রয়েছে।

এক টিউবওয়েলে ভরসা চার গ্রামের মানুষের

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, সমকাল

 ‘পুকুরের পানি নোনতা আর ঘোলা। প্রচণ্ড তেষ্টা সত্ত্বেও তা খাওয়া যায় না। প্রতি কলস পানি ১০ টাকায় কিনে খাবার মতো সামর্থ্যও আমাগো নেই। বাধ্য হয়ে দুই কিলোমিটার হেঁটে বদনের ভাগাড়ে আইছি টিউবওয়েলের পানি নেব বলে।’ আক্ষেপভরা কণ্ঠে কথাগুলো বলেন পার্শ্ববর্তী দেওল গ্রাম থেকে শংকরকাঠি গ্রামে খাবার পানি নিতে আসা চল্লিশোর্ধ্ব গৃহবধূ হাফিজা বেগম।

পাশে দাঁড়িয়ে পানির জন্য অপেক্ষায় থাকা খুটিকাটা গ্রামের রোজিনা খাতুন বলেন, ‘সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চার গ্রামের মানুষ লাইন দিয়ে পানি নেয়। একটা মাত্র টিউবওয়েল হওয়ায় অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেরি হয়। বড় লোকেরা পানি কিনে খাচ্ছে, কিন্তু আমাগো মতো গরিব মানুষগো ভরসা এই টিউবওয়েল।’

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের কাছিহারানী, কাঁঠালবাড়িয়া, দেওল ও খুটিকাটা গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। এই চার গ্রামের পুকুরের পানি ঘোলা ও লবণাক্ত হওয়ায় তা পানের অযোগ্য। আর্সেনিক ও আয়রন থাকার পাশাপাশি টিউবওয়েলের পানিও কষ ও লবণাক্ত। যে কারণে জীবন বাঁচানোর তাগিদে এসব গ্রামের নারী ও শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করে দুই থেকে চার কিলোমিটার দূরবর্তী শংকরকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ‘বদনের ভাগাড়’ এলাকার টিউবওয়েলে আসেন পানি নিতে। তবে এ পানি নিয়েও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন তারা।

কাছিহারানী, কাঁঠালবাড়িয়া, দেওল ও খুটিকাটা গ্রাম ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আইলার পর থেকে মূলত এসব এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দেয়। পরে পানির কষ্ট দূর করতে বেসরকারি উদ্যোগে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হলেও নানা কারণে কয়েক বছর আগেই তা বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে উপকূলীয় এলাকা না হওয়া সত্ত্বেও উপজেলার এ অংশে খাবার পানি নিয়ে রীতিমতো হাহাকার চলছে।.. ..

পানির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ, ওয়াসাকে আল্টিমেটাম

১৮ অক্টোবর, ২০২০ ইত্তেফাক

ওয়াসার পানির দাবিতে রাজধানীর মিরপুরে শেওড়াপাড়ার প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসময় তারা পানির সমস্যা সমাধানে ওয়াসাকে আল্টিমেটাম দেন। অন্যথায় লাগাতার সড়ক অবরোধ করা হবে বলে ঘোষণা দেন।

রবিবার সকাল ৯টার দিকে পূর্ব শেওড়াপাড়ার অধিবাসীরা সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধের কারণে শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়কে যানজট তৈরি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী যাত্রীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে পূর্ব শেওড়াপাড়া থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে প্রধান সড়কে অস্থান নেন এলাকাবাসী। তারা সেখানে ওয়াসার পানির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভে অংশ নেন নারী-পুরুষ।

দুর্ঘটনা

বৈরুতের মতো বিস্ফোরণ ঝুঁকিতে রাজধানীবাসী

আগস্ট ০৮, ২০২০, বণিক বার্তা

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ১৩৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো চার হাজারের বেশি। এতে তিন লাখের মতো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেড় হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বিস্ফোরণের জন্য দায়ী ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, যা বৈরুত বন্দরের একটি গুদামঘরে অবৈধ ও অনিরাপদভাবে মজুদ ছিল দীর্ঘ পাঁচ বছর। বন্দরের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আদালত এ বিপজ্জনক পদার্থ রফতানি কিংবা বিক্রি করতে নির্দেশ দিলেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে লেবাননকে।

বৈরুতে লোমহর্ষক এ বিস্ফোরণের পর নড়েচড়ে বসছে গোটা বিশ্ব। এমন বিপজ্জনক পদার্থ বা রাসায়নিক কারখানা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে অনেক দেশ। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সরকার সিডনি থেকে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুদ সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ ঘটনার পর ভারতও চেন্নাইয়ের ৭০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। পুরান ঢাকায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ বিপজ্জনক সব রাসায়নিক পদার্থের বিপুল মজুদ থাকলেও তা সরানোর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর আশপাশের এলাকায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ যেসব বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের মজুদ রয়েছে, তা বৈরুত বন্দরে মজুদ রাসায়নিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। কোনো ধরনের মনিটরিং ছাড়াই যত্রতত্রভাবে রাখা হচ্ছে এসব কেমিক্যাল। ফলে যেকোনো সময় বৈরুতের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে রাসায়নিক পদার্থের মজুদ নিরাপদ স্থানে সরানো এবং কঠোর মনিটরিং নিশ্চিতের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

ঘুষের ৫০ হাজার টাকা না পেয়ে মসজিদ কমিটির আবেদনে সাড়া দেয়নি তিতাস

৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২০, ডিবিসি নিউজ অনলাইন

ঘুষের ৫০ হাজার টাকা না পেয়ে মসজিদ কমিটির আবেদনে সাড়া দেয়নি তিতাস

বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি। কেউ দায়ী হলে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিতাসের এমডি।

৯ মাস আগেই গ্যাস লাইন লিকেজ মেরামতের জন্য লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হলেও ৫০ হাজার টাকার জন্য কাজ করেনি তিতাস। এমনটাই অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ পশ্চিম তাল্লা বায়তুল সালা জামে মসজিদ কমিটির। এবিষয়ে তদন্ত চলছে, কেউ দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এদিকে, বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

লাইনের লিকেজ থেকেই গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয় নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা বাইতুল সালাহ জামে মসজিদটি। শুক্রবার রাতে এশার নামাজের সময় বিকট শব্দে মসজিদের পর পর ছয়টি এসিই বিষ্ফোরিত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। দগ্ধ হন মসজিদের অর্ধ শতাধিক মুসল্লী।.. ..

জালের মতো ছড়িয়ে আছে ‘বিস্ফোরণ’ ঝুঁকি

২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, সমকাল

তিন যুগেরও বেশি সময়ের জরাজীর্ণ গ্যাসের পাইপলাইনগুলো বিস্ফোরণসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। ১৯৮৪ সালে শুরু হয়েছিল গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের কাজ। বিভিন্ন সময় তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো পাইপলাইন পরিবর্তন করা হয়নি। কোথাও লিকেজ হলে তা সারিয়ে তোলা এবং জোড়াতালি দিয়ে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে প্রায় ছয় লাখ গ্রাহককে। বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা সত্ত্বেও আপাতত এসব ঝুঁকিপূর্ণ পাইপলাইন পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল)।

এদিকে বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশন, পিডিবি, ওয়াসা ও সিডিএ রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করায় অনেক স্থানে গ্যাসের পাইপলাইন লিকেজ হয়ে গেছে। আবার যেসব সড়কের ধার দিয়ে গ্যাসের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে, বিভিন্ন সময় সেসব সড়ক উঁচু করার কারণে পাইপলাইন মাটির অনেক নিচে পড়ে গেছে। বর্তমানে এসব লাইনের কী অবস্থা তা-ও জানা নেই কেজিডিসিএলের! বিভিন্ন সময় মূল সরবরাহ লাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলেও আবাসিক এলাকায় এ ধরনের কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না। এলএনজি যুক্ত হওয়ার পর গ্যাসের অতিরিক্ত চাপে যাতে পাইপ ফেটে না যায়, সে জন্য কিছু সরবরাহ লাইনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আবাসিক এলাকায় হাতই দেওয়া হয়নি।

গত সাড়ে তিন বছরে চট্টগ্রামে অন্তত পাঁচ দফা গ্যাসজনিত বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মারা গেছেন ১২ জন। সর্বশেষ গত ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় গ্যাসজনিত বিস্ম্ফোরণে সাতজনের মৃত্যু হয়। আহত হন ২০-২৫ জন। পাথরঘাটা এলাকায় বিস্ম্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হলেও অন্য চারটির কোনোটিতেই সে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে নারায়ণগঞ্জের একটি মসজিদে গ্যাস বিস্ম্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটনার পর গ্যাসজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রাইজার (ভাল্ক্ব ও রেগুলেটরের মাধ্যমে গ্যাসের চাপ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র) পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করছে কেজিডিসিএল। গ্যাসের পুরোনো পাইপ পরিবর্তন না করে শুধু লিকেজ শনাক্ত করে তা মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।

চার মাসে পানিতে ডুবে দুই হাজার শিশুর মৃত্যু

১৬ অক্টোবর, ২০২০, বণিক বার্তা

চলতি বছর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত চার মাসে পানিতে ডুবে ১ হাজার ৯২৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিনার্গোস গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য দিয়েছে।

তবে সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, চার মাসে শিশুমৃত্যুর তথ্যটি বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত উৎস থেকে নেয়া হয়েছে। অনেক শিশুমৃত্যুর ঘটনা সংবাদমাধ্যম কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে না। বাস্তবে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার আরো বেশি। সংস্থাটির তথ্য বলছে, দেশে পানিতে ডুবে প্রতিদিন ৩২ জনের মতো এক থেকে চার বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়।

ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশে সিআইপিআরবি ও আইসিডিডিআর,বি ২০১২ সাল থেকে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে এক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে গতকালের সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়। এতে সিআইপিআরবির ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিনুর রহমান বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হারে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১২ হাজার শিশু মারা যায় পানিতে ডুবে। দিনে মারা যায় ৩২ জন, যাদের বয়স এক থেকে চার বছর। শিশুকে সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখলে এ দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।

ভারত-বাংলাদেশ

বছর আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ৩৩ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন: বিজিবি

১১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ প্রধানের মধ্যে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ছয় দিনব্যাপী বৈঠকে সীমান্ত হত্যার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বছর আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ৩৩ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।’.. ..

সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে প্রতীকী লাশ নিয়ে পদযাত্রা

১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, জাগো নিউজ

সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে প্রতীকী লাশ নিয়ে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্ত অভিমুখে একক পদযাত্রা শুরু করেছেন হানিফ বাংলাদেশি।

পদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে শনিবার (১২ সেপেস্টম্বর) সাভারে পৌঁছেছেন তিনি। আগামীকাল সকাল ৮টায় সাভার থেকে আবারো পদযাত্রা শুরু করবেন।

শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একক পদযাত্রা শুরু করেন হানিফ বাংলাদেশি। পদযাত্রার প্রথম দিন ১৫ কিলোমিটার হেঁটে গাবতলী ব্রিজে গিয়ে পদযাত্রা শেষ করেন তিনি।

পদযাত্রা সম্পর্কে হানিফ বাংলাদেশি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমরা চাই ভারত প্রতিবেশীর সঙ্গে মানবিক আচরণ করুক। কিন্তু প্রতিনিয়তই ভারতের বিএসএফ নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যা করে চলছে।’

ইলিশ পাঠানোর দিন পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করল ভারত

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০, অর্থ সূচক ডটকম

ভারতে পদ্মার ইলিশ রফতানির দিনই কোনো ঘোষণা ছাড়াই বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করল ভারত।

আজ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। তবে এদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি হয়েছে ১২ মেট্রিক টন ইলিশ।

পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করায় বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে পেঁয়াজভর্তি ১৫০টি ট্রাক। একই অবস্থা অন্যান্য স্থলবন্দরেও। ভারতের শুল্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সোমবার কিছু নীতিগত পরিবর্তন হওয়ার কারণে পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করা হয়েছে।

সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজের গাড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। বেনাপোল বন্দর দিয়ে সকালের দিকে ৫০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ প্রবেশের পরপরই দেশের সবগুলো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারতের পেঁয়াজ রফতানিকারকদের সংগঠন। বিকেলের দিকে দুই ট্রাক পদ্মার ইলিশ ভারতে রফতানি করলেও পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানিতে তাদের মন গলেনি।

ছিল গরু, হয়ে যাচ্ছে বাছুর, কোটি কোটি টাকা ঘুষে অভিযুক্ত বিএসএফ-শুল্ক কর্তারা, রাজ্যে সিবিআই

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, আনন্দবাজার

কলমের সামান্য ‘খোঁচা’। তাতেই গরুকে বাছুর বানিয়ে ফেলা হত বড় সহজে। আর ‘নামসাফাই’য়ের সেই ফাঁক গলেই সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতর (কাস্টমস)-এর ‘বেনামী’ রোজগার হয় কোটি কোটি টাকা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে গবাদি পশু পাচারের তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। পাচারের এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বিএসএফ, কাস্টমস-সহ বিভিন্ন দফতরের একাধিক সরকারি আধিকারিক। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে এ রাজ্যে গরু পাচার নিয়ে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।

ওই এফআইআরে মূল অভিযুক্তদের অন্যতম সতীশ কুমার। বিএসএফের কমান্ডান্ট পদমর্যাদার আধিকারিক। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫-র ডিসেম্বর থেকে ২০১৭-র এপ্রিল সতীশ কুমার এ রাজ্যে বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট ছিলেন। ওই ১৬ মাসে তাঁর বাহিনী মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় বাংলাদেশ সীমান্তে বাজেয়াপ্ত করেছিল প্রায় ২০ হাজার গরু। কিন্তু বাজেয়াপ্ত করা সেই গরুকেই বিএসএফের সরকারি নথিতে করা হচ্ছিল বাছুর। এর পর গরুর যা দাম, তার অনেক কম দামে সেই ‘বাছুর’ নিলাম হত স্থানীয় বাজারে। আর নিলামে সেই গরু ফের কম দামে কিনে নিত মুর্শিদাবাদের কুখ্যাত পাচারকারীরা। বিশু শেখ সেই চক্রের মাথা। এখানেই শেষ নয়। নিলামে কিনে নেওয়া ওই গরুই ফের সীমান্ত পেরিয়ে পাচার হয়ে যেত বাংলাদেশে। আর বিএসএফ যে গরুকে ‘বাছুর’ বানিয়ে দিল, তার ‘মূল্য’ হাতেগরমে দিত বিশু শেখের সিন্ডিকেট। বিএসএফের জন্য বরাদ্দ থাকত গরু প্রতি ২ হাজার টাকা। আর ৫০০ টাকা কাস্টমসের জন্য।.. …

শুধু পাচারে সহায়তা নয়, বাজেয়াপ্ত গরুকে খাতায়কলমে বাছুর হিসাবে দেখিয়েও সরকারকে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের। সুবিধে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে পাচারকারীদের। সিবিআইয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পাচার সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাঁত করেই নির্দিষ্ট সময় অন্তর কিছু কিছু গবাদি পশু বাজেয়াপ্ত করা হত। সেই সংখ্যাটাই সতীশের এলাকায় ১৬ মাসে প্রায় ২০ হাজার।” তাঁর ব্যাখ্যা, আসলে গরু বাজেয়াপ্ত করে বিএসএফ আধিকারিকরা প্রমাণ করতেন, তাঁরা সীমান্ত প্রহরায় কতটা সতর্ক। কিন্তু সেই ফাঁকেই চলত কোটি কোটি টাকার প্রতারণা। ওই আধিকারিক আরও বলেন, ‘‘একটি পূর্ণবয়স্ক গরুর দাম যদি নিলামে ৬০ হাজার টাকা হয়, তবে বাছুরের দাম তার প্রায় অর্ধেক। খাতায়কলমে বাজেয়াপ্ত গরুকে বাছুর দেখিয়ে নিলামের সময় দাম কমানোর ব্যবস্থাটা করে দিতেন বিএসএফ আধিকারিকদের একাংশ। কম দামে সেই গরু কিনে ফের পাচার করা হত। আর সেটা করত এনামুলের সিন্ডিকেট।’’

প্রাথমিক অনুসন্ধানে সিবিআই জানতে পেরেছে, ওই সময় কালে প্রায় ২০ হাজার গরু ধরা পড়লেও এক বারও কোনও গাড়ি বা কোনও পাচারকারী ধরা পড়েনি। সিবিআই তদন্তকারীদের ইঙ্গিত, গাড়ি বাজেয়াপ্ত করলে সেই গাড়ির মালিক কে, কোথা থেকে গরু বোঝাই করা হয়েছে— এ ধরনের প্রশ্ন ওঠে। পাচারকারীদের সঙ্গে আঁতাঁতের জন্যই সেই সূত্র কোথাও রেখে দেননি কাস্টমস বা বিএসএফের ওই আধিকারিকদের ওই অংশ। সিবিআইয়ের অভিযোগ, এ ভাবে সরকারের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন কাস্টমস এবং বিএসএফ আধিকারিকদের একাংশ। দুর্নীতি দমন শাখার ৭, ১১ এবং ১২ নম্বর ধারায় ওই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সিবিআই। যোগ করা হয়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি ধারাও। আনা হয়েছে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও।.. ..

সীমান্তে গরু পাচারে জড়িত বিএসএফ!

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ডিডাব্লিউ ডটকম

গরু পাচার নিয়ে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত মাঝে মাঝেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাচারকারী, এই অভিযোগে বহু বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে মেরেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফ। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গেল ভূত রয়েছে সর্ষেতেই। বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগ গরু পাচারে সাহায্য করে।

কিছুদিন আগেই বিএসএফ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। বাংলাদেশ অবশ্য সেই অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা ভারতের উপর দোষ চাপিয়েছিল। সম্প্রতি সিবিআইয়ের এক তদন্তে চমকপ্রদ তথ্য উঠে এলো। বলা হচ্ছে, সীমান্তে বিএসএফ এবং শুল্ক বা কাস্টমস বিভাগের বহু অফিসার সরাসরি গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত। বুধবার বিএসএফের এক অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। বস্তুত, এর আগেও বিএসএফের অফিসারদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে এবং তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিবিআই জানিয়েছে, অভিনব কায়দায় এই গরু পাচার চালানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিএসএফকে সীমান্তে গরু ধরতেই হয়। খাতায় কলমে দেখাতে হয়, মাসে কতজন পাচারকারীকে তারা গ্রেফতার করেছে এবং কত সংখ্যক গরু উদ্ধার হয়েছে। বিএসএফ তা নিয়মিত করেও। খেলা শুরু হয় তার পরে। মালদা, মুর্শিদাবাদ সহ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ বাজেয়াপ্ত গরুকে খাতায় কলমে বাছুর বানিয়ে দেয়। খাতায় বাছুর অথচ বাস্তবে পূর্ণ বয়স্ক গরুকে নিয়ে এরপর বাজারে যাওয়া হয়। সেখানে সেই গরুর বাছুর হিসেবে নিলাম হয়। অর্থাৎ, খুব কম টাকায় তা বিক্রি করা হয়। যারা সেই গরু কিনছে, তারা পাচারকারী। নিলাম এমন ভাবে করা হয়, যাতে পাচারে বাজেয়াপ্ত গরু ফের পাচারকারীর হাতেই পৌঁছয়। প্রতিটি নিলামে বিএসএফের অভিযুক্ত অফিসারদের দেওয়া হয় গরু পিছু দুই হাজার টাকা। শুল্ক বিভাগের অফিসারদের দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। পাচারকারীরা ফের সেই গরু সীমান্তের অন্য পারে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয়বার তাদের গরু আর ধরা হয় না।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •