চলচ্চিত্র পর্যালোচনা
মানুষকেন্দ্রিক সভ্যতা, পারমাণবিক সুবিধা, পারমাণবিক বর্জ্য এবং তার প্রতিফলন
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন

সিনেমা সম্পর্কিত তথ্যঃ
নামঃ অনন্তের গভীরে (অনন্তের গভীরেঃ একটা সিনেমা ভবিষ্যতের জন্য) / INTO ETERNITY (INTO ETERNITY: A FILM FOR THE FUTURE) (২০১০) ।
রচনা ও পরিচালনাঃ মিখেইল ম্যাডসেন । ক্যামেরাঃ হেইকি ফার্ম ।
সম্পাদনাঃ ড্যানিয়েল ড্যান্সেক এবং স্টিভেন সানডলফ। প্রযোজনাঃ লিস লেন্স-মোলের ।
শব্দ নকশার পরামর্শদাতাঃ পিটার আলব্রেকটসেন।
শব্দ নকশাঃ ওভিন্দ অয়েইঙ্গারদে ও নিকোলাই লিংক। মিশ্রণঃ টমাস আরভে।
শব্দ ধারণ ও অন্যান্যঃ টুওমাস ক্লাভো, লুকাস নীলসন, জ্যাক পেদারসেন, পিরক্কো টিইটিনেন।
সঙ্গীতঃ কার্সটেন ফান্ডাল । ভাষাঃ ইংরেজি এবং কিছু কিছু সুইডিশ ও ফিনিশ । দৈর্ঘ্যঃ ৭৫ মিনিট। দেশঃ ডেনমার্ক।
ভূমিকাঃ
এক সময় মাটির গভীরে মূল্যবান গুপ্তধন লুকিয়ে রেখে যেত মানুষ পরের প্রজন্মের জন্য।
গত একশত বছরে দুটো বিশ্বযুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা যেখানে প্রায় শেষ সময়ে শক্তি প্রদর্শনের জন্য আমেরিকার হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণ যার ফলে হিরোশিমাতে প্রায় ১৪০,০০০ লোক মারা যায় এবং নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪,০০০ লোক মারা যায় আর পরে দুই শহরেই বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় আরো ২১৪,০০০ জন। আর জাপানের খবরের কাগজ আসাহি সিম্বুন এর করা হিসাব অনুযায়ী বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ফলে হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য হিসেব করে হিরোশিমায় ২৩৭,০০০ জন এবং নাগাসাকিতে ১৩৫,০০০ জন লোকের মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়। দুই শহরেই মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক সাধারণ লোকজন এবং এছাড়াও বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য গণহত্যার অংশীদার আমরা কি রেখে যাব পরের, পরের, পরের সময়ের জন্য? দূষণ, প্লাস্টিক এবং প্রায় অমর পারমাণবিক বর্জ্য। সারা পৃথিবীজুড়ে ৪৫৬টি পারমাণবিক চুলা রয়েছে যেগুলো মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং এসব চুলা ছাড়াও আরো নানান কারণে সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে পারমাণবিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়, যা পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি স্বরূপ এমনকি এই মানুষকেন্দ্রিক সভ্যতার মানুষকেই সে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে পৃথিবী থেকে, যেকোনো সময়, চিরকালের জন্য (মনে করে দেখুন চেরনোবিল (২৬এপ্রিল, ১৯৮৬) ও ফুকুশিমা (মার্চ ১১, ২০১১) দুর্ঘটনার বিবরন ও পারমাণবিক বর্জ্যের প্রভাব)। এরকম ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ প্রযুক্তির কাঁধে ভর করে চলেছে মানুষের সভ্যতা, সামনের কথা তার চিন্তায় এবং কাজে নেই। প্রয়োজন নেই তারপরেও দখলে থাকতে হবে সব, এখনি খেতে হবে সব এমনকি অন্যকে ঠকিয়ে নিজের লালসার তৃপ্তিসাধন, চলছে এবং চলবে “স্বাভাবিক ভাবেই”। মানুষের কারণে চিরকালের মতন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে একের পর এক বিভিন্ন প্রজাতি, মানুষের জীবনযাপনে, ভাবনাতে এসবের জন্য সময় নেই।
ফলে মানুষেরা মাটির গভীরে লুকিয়ে রাখছে তার জীবনযাপনের ফলে তৈরি ভয়াবহ বিপদজনক পারমাণবিক বর্জ্য, এছাড়া আর কোনো উপায় মানুষ বের করতে পারেনি/করতে চায়নি। আর এসব পারমাণবিক বর্জ্য নিরাপদ হতে লেগে যাবে হাজার, হাজার, হাজার বছর, মনে করে দেখুন পিরামিড নির্মিত হয়েছিল মাত্র পাঁচ হাজার বছর আগে (প্রায়) কিন্তু এসব পারমাণবিক বর্জ্য পাঁচ হাজার, দশ হাজার বছরে কিছুই হবেনা, থেকে যাবে সমান ক্ষতিকর এবং কোনো ভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছড়িয়ে পড়লে তার ফলাফল হবে ভয়াবহ বিপর্যয়কর। পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দেখা যায়না, শোনা যায়না, অনুভব করা যায়না কিন্তু ক্ষতি করে যাবে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে। এই যেকোনো সময়ে ঘটতে যাওয়া বিপর্যয় কাধে নিয়ে, এগিয়ে চলেছে শুধুমাত্র মানুষকেন্দ্রিক এই সভ্যতা।
অনন্তের গভীরে (অনন্তের গভীরেঃ একটা সিনেমা ভবিষ্যতের জন্য) / INTO ETERNITY (INTO ETERNITY: A FILM FOR THE FUTURE) (২০১০) সিনেমার কাহিনিঃ
স্থানীয় ভাষায় এটাকে বলা হয় “ওঙ্কালো” মানে লুকানোর জায়গা বা গহ্বর / গুহা/ লুকানো জায়গা, যেটা থাকবে শক্ত পাথরের মাটির প্রায় ৪ কিলোমিটার নিচে বিস্তৃত, যার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ২০০৪ সালে এবং শেষ হবে ২১০০ সালের দিকে অথবা এর পরের কোনো এক সময়ে এবং এখানে ৬৫০০ টন পারমাণবিক বর্জ্য ক্যাপসুল সদৃশ মোড়কে আবৃত থাকবে ১০০,০০০ (এক লক্ষ বছর ধরে)। মানবসৃষ্ট কিছুই আর এতদিন টিকে থাকবেনা। ভাবুন একবার একশো হাজার বছর পরেও মানুষের তৈরি যা টিকে থাকবে তা হলো একটা পারমাণবিক বর্জ্যের আধার! আর কিছুনা, মানুষ হিসেবে খারাপ লাগছেনা? এই খারাপ লাগাটাই ছড়িয়ে আছে সারা সিনেমা জুড়ে।
যদি কোনো প্রাকৃতিক কারণে এই আধার ধ্বংস হয়ে যায়, আংশিক বা পুরোটাই তাহলে, যদিও ফিনিশ সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা সেটা যথারীতি অস্বীকার করলেন (ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে, মনে হচ্ছেনা পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সরকারি কোনো কর্মকর্তার বয়ান, যদিও এ পর্যায়ের কেউ বাংলাদেশের কোনো নির্মাতাকে তার সামনে বসারও সুযোগ দেবেনা, অবশ্য সেটা যদি তাদের পক্ষীয় প্রচারমুলক সিনেমা হয় তবে ভিন্ন কথা) আবার হতেই পারে কৌতূহলবশত দশ হাজার বছর পরে এটা কেউ খুঁড়তে শুরু করলো, তখন? কর্মকর্তা জানালেন এ জন্যই জাতিসংঘের সকল দাপ্তরিক ভাষাতেই এখানে সতর্কতা জারি করে নির্দেশনা দেয়া থাকবে। কিন্তু ভাষা বদলায়, মাত্র ৫ হাজার বছর আগের পিরামিডের মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্স ভাষার পাঠ উদ্ধার করতে আমাদের কতকাল খরচ হয়েছে আবার এনিয়ে রয়েছে প্রচুর বিপরীত মতামত আবার নিষেধ সত্ত্বেও, সমাধি জানা সত্ত্বেও আমরা কি থেমে থেকেছি, প্রবেশ থেকে, খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করেছি, উত্তর না, তাহলে?
আর যে হারে মানুষ যুদ্ধের প্রতি, উগ্র জাতীয়তার প্রতি আকর্ষিত হচ্ছে/ আকর্ষিত করা হচ্ছে তাতে বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থা কতদিন টিকে থাকবে সেটাও প্রশ্ন, এমনকি হতে পারেনা দেয়ালে লেখা কোনো ভাষাই তারা পড়তে পারলোনা তখন? কর্মকর্তার জবাব তাহলে বিভিন্ন প্রায় অসম্ভব বাধা এবং পারমাণবিক বর্জ্যের রাসায়নিক গঠন দেখেই তারা টের পেয়ে যাবে এটা বিপদজনক এলাকা এবং এটা বিপদজনক বস্তু এটা থেকে দূরে থাকতে হবে, আর তারা যদি এর রাসায়নিক গঠন বুঝতে না পারে, কর্মকর্তার স্বাভাবিক উত্তর, তাহলে তারা এতো গভীরে প্রবেশই করতে পারবেনা। অথচ আমরাই অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের আগে থেকেই সেই মাটির গভীর থেকে কয়লা এবং খনিজ আহরণ করছি। তাহলে যা চলছে তা চলবেই, থামানো যাবেনা ( মনে হচ্ছেনা রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গল্প, চলছে চলবে, পরিবেশ ও জনস্বার্থ উপেক্ষা করে!)। আমরা আরো মতামত শুনি কেউ জানান বিভিন্ন সাংকেতিক ভাষার ব্যবহার হতে পারে কেউ বলেন এডওয়ার্ড মুঙ্কের “চিৎকার” এর প্রতিলিপি ব্যবহার করা যেতে পারে আবার কেউ বলেন উপরের এবং আশেপাশের জায়গাগুলো এমন সব স্থাপনা ভাস্কর্য দিয়ে ভরে দেয়া যেতে পারে যা হবে ভয়াবহতার প্রতীক এবং এ জায়গার প্রতি কেউ স্বভাবতই আকর্ষণ বোধ করবেনা। তাহলে পারমাণবিক বর্জ্যের হাত থেকে রেহাই পেতে এই হল ফিনিশ সরকারের স্থায়ী পরিকল্পনা।
এসব আলাপের ফাঁকে ফাঁকেই আমরা দেখতে থাকি এই প্রকল্পের কাজকর্ম, ঢুকে যেতে থাকি মাটির আরো গভীরে, কখনো মাটির উপরের গভীর জঙ্গল, প্রাণী এবং দুধের মতো সাদা বরফে ঢাকা চারিদিক, পিচঢালা রাস্তা, নীরবতা আবার কখনো শ্রমিকদের পাথর খোঁড়ার দৃশ্য। এসবের ভিতরে ভিতরে চলতে থাকে নানানজনের নানান কথা আর ফিরে ফিরে আসে ভাবনা, তাহলে এই পারমাণবিক বর্জ্যই মানবজাতির ইতিহাস, একশো হাজার বছর পরে? একালের পিরামিড অথবা টিকে থাকা আশ্চর্য। ২১০০ সালের কোনো একসময় এই লুকানো জায়গা একেবারে সিল মেরে বন্ধ করে দেয়া হবে একটানা একশো হাজার বছরের জন্য। কেউ কেউ এর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মত দিয়েছেন এটাকে ধীরে ধীরে একেবারে লোকচুক্ষর অন্তরাল করে ফেলা হোক, এবং জায়গাটাকে এমনভাবে রাখা হোক যেন কখনো কেউ টের না পায় এর নিচে কিছু আছে, ধীরে ধীরে মুছে ফেলা হোক এ সম্পর্কিত তথ্যসমূহ।
ভয়াবহ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনায় ভরপুর এরকম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শেষ পরিণতি তাহলে এরকম!
নির্মাণরীতিঃ
সিনেমা নির্মাতা মিখেইল ম্যাডসেন তার এক সাক্ষাৎকারে পরিষ্কার করেই জানান শুরুতে খোলা মনে তাকে ওঙ্কালোর ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয়েছে কিন্তু তার কাজকর্মের ধরন দেখে এর সাথে জড়িত উচ্চপদস্থরা পরে আর আগের মতো অকপট থাকেননি। আর শুরু থেকেই তিনি চাননি, মাইকেল মুরের সিনেমার মতো আরেকটা সিনেমা বানাতে। বরং তিনি চেয়েছেন যেন তার সিনেমা বাহ্যিক ভাবনা এবং পরিবর্তন যেটুকু করার করুক কিন্তু তার চেয়ে বেশি তোলপাড় তুলুক মানুষের ভিতরে, ঠিক তার পছন্দের নির্মাতা মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি ও স্ট্যানলি কুবরিকের সিনেমার মতন। যেন ধীরে ধীরে তার সিনেমায় উত্থাপিত ভাবনাসমূহ ভাবায় যিনি সিনেমাটি দেখলেন, বুঝলেন তাকেও, সিনেমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও।
রাস্তা ধরে ধীরে ধীরে সিনেমার শুরুতেই আমরা প্রবেশ করি ওঙ্কালোর ভিতরে, আর একের পর এক প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মতোই পর্দায় আমাদের সামনে হাজির হয় ওঙ্কালোর খোঁড়াখুঁড়ির দৃশ্যসমূহ, তার নির্মাণ সম্পন্ন করা অংশ, নির্মীয়মাণ অংশ এবং শ্রমিকেরা। এ সিনেমার কোথাও ঠিক ভিলেন বা খলচরিত্র বলে যা বোঝানো হয় সেরকম কিছু নেই, কোনো একটা দেশ (এ ক্ষেত্রে ফিনল্যান্ড) বা কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, আছে সমস্ত মানব প্রজাতি। অনেক ভাবনারা জড়ো হতে থাকে সিনেমা চলাকালীন এবং তাদের ঠিকঠাক ভাবার সময় দেয়ার জন্যই মাঝেই মাঝেই হাজির হয় প্রাকৃতিক দৃশ্যসমূহ কিন্তু কোথাও সিনেমার মূল কাহিনিতে সেটা ব্যাঘাত ঘটায়না। ঠিকঠাক সম্পাদনার মতোই দৃশ্যায়ন চমৎকার এবং আলাদা করে আলোচনায় আসতে পারে এ সিনেমার শব্দের নকশা, শব্দ ধারণ এবং শব্দ মিশ্রণ। শুরুতেই এ সিনেমার শব্দ শুনতে শুনতেই আপনি ধরে ফেলবেন আপনি সাধারণ নয় এমন কোনো জায়গাতে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন আপনার মনে হতেই পারে আপনি শুরু করছেন কোনো মহা-জাগতিক যাত্রা। এ সিনেমার শব্দ অনেকটাই সাহায্য করে আমাদের বুঝতে যে একশো হাজার বছরের সময়টা আসলে কতো কতো সুদীর্ঘ এবং ততদিনে আমাদের পরিচিত, উত্তেজিত আলাপের বিষয়, বড় বড় তারকাগণ, মহান/অমহান নেতাগণ, ভেদাভেদ, এমনকি আমাদের পরিচিত কোনো মূল্যবোধ, এসবের কোনো কিছুরই কোনো সামান্য মাত্র অস্তিত্ব থাকবেনা।
থেকে যাবে পারমাণবিক বর্জ্য, যদিও আশা করা হচ্ছে ততদিনে আর এর ক্ষতিকর প্রভাব থাকবেনা কিন্তু এমতের বিরোধিতাও রয়েছে এবং এসবই করা হচ্ছে পারমাণবিক বর্জ্যের একটা স্থায়ী সমাধান করার জন্য। তাহলে পারমাণবিক বর্জ্য এতো ভয়াবহ এবং বিপদজনক।
উপসংহারঃ
অনন্তের গভীরেঃ একটা সিনেমা ভবিষ্যতের জন্য, পারমাণবিক বর্জ্যের যে ভয়াবহতা এবং পারমাণবিক শক্তির তাৎক্ষণিক সুবিধাপ্রাপ্তির ফলে আমাদের যে অনন্তকাল ধরে বিপদ বয়ে বেড়াতে হবে সে সম্পর্কে জানান দেয়। পারমাণবিক বর্জ্য যে শুধু ফিনল্যান্ডের সমস্যা তা নয়, এ নিয়ে খোদ ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া, জাপান, চীন এসব দেশরাও ভয়াবহ ঝুঁকির সামনে রয়েছে, তারাও পারছেনা এই ঝুঁকির নিরাপদ ব্যবস্থাপনা করতে। সেখানেও রয়েছে দক্ষ সুব্যবস্থাপনার অভাব তাহলে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থা কী হতে পারে বুঝতে পারছেন? যেখানে নির্মাণ থেকেই প্রতি পদে পদে দুর্নীতি হচ্ছে আর দক্ষ লোকবল কোথায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে নেয়ার জন্য? আর পারমাণবিক বর্জ্যের কী হবে হবে, সে নিয়েও কোনো পরিষ্কার নির্দেশনা নেই। আর সারা পৃথিবীর সব দেশেই এখন পারমাণবিক বিদ্যুতের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে, সেখানে এরকম ঝুঁকিপূর্ণ একটা প্রযুক্তির ব্যবহার এরকম ঘনবসতি পূর্ণ একটা দেশে, কোনো ভাবেই কোনো আশাবাদ তৈরি করে না বরং অনাগত ভয়াবহ বিপদ ঘনিয়ে আসার জানান দেয়, যে বিপদের সামনে না চাইলেও, যে বিপদ তৈরিতে যাদের কোনো ভূমিকা নেই তাদেরকেও দাঁড়াতে হবে। আমরা যদি পারমাণবিক প্রযুক্তির বিপক্ষে না দাঁড়াই, বিপক্ষে না বলি, তাহলে মানবসৃষ্ট এই প্রযুক্তি খুব তাড়াতাড়িই অন্যসব প্রজাতিকে ধংসের পাশাপাশি মানুষকেও সমূলে বিলীন করে দেবে যেকোনো সময়ে।
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন: চলচ্চিত্রকার
ইমেইল: raiparasadardi@gmail.com
পাদটীকা
১। মার্শাল দীপপুঞ্জের এনেওতাক অটল নামক ছোট দীপপুঞ্জের রানিট দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক পারমাণবিক বোমা ও অস্ত্রের পরীক্ষা (১৯৪৬-১৯৫৮) চালায় এবং এই পারমাণবিক দূষণ যেন ছড়িয়ে না পড়তে পারে সে জন্য তারা ১৮ ইঞ্চি সিমেন্টের ঢালাই দেয়া একটা ডোম (১৯৭৭-১৯৮০) বানিয়ে ঢেকে দেয় এই পারমাণবিক বর্জ্য। ৪০০০ হাজার আমেরিকান এই দূষণ পরিষ্কার কাজে অংশ নেয় যদিও সরকার তাদের জানায়নি তারা কী কাজের জন্য যাচ্ছেন এবং এজন্য তাদের যথেষ্ট সুরক্ষা পোশাকও দেয়া হয়নি। তাদের অনেকেই পরে মারা গেছেন পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা সৃষ্ট নানান রোগে। আর মার্শাল দীপপুঞ্জের লোকদের নিয়তি আরো খারাপ কেউ কেউ তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত আর অধিকাংশই নিজেদের ভূমি থেকেই বিতাড়িত সারাজীবনের জন্য এবং তারা কখনো ফিরতে পারবেন বলেও মনে হয়না।
২০১৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস একটা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে যেখানে তারা জানায় এই ডোম ফেটে যাচ্ছে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সুমদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ার ফলে, ডুবে যেতে পারে এই ডোম। যার ফলে সুমুদ্রজুড়ে ঘটবে ভয়াবহ পারমাণবিক বর্জ্যের দূষণ।
এই মার্শাল দীপপুঞ্জেই ১৯৪৬ সালে পানির নিচে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর সময়ে চারপাশে ছড়িয়ে রাখা হয়েছিল নানান জাহাজ, প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য, পরে এই জাহাজগুলো সানফ্রান্সিসকো শিপইয়ার্ডে আনা হয়, ধ্বংস করার জন্য কারণ মেরিনদের মতে এগুলো ছিল একেকটা পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় ষ্টোভ। ১৯৮৯ সালে এই শিপইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু এই এলাকা এখনো বসবাসের জন্য উপযোগী নয় কারণ পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা।
এ সম্পর্কে আরো জানার জন্যঃ
https://en.wikipedia.org/wiki/Marshall_Islandshttps://en.wikipedia.org/wiki/Marshall_Islands
https://en.wikipedia.org/wiki/Enewetak_Atoll
https://en.wikipedia.org/wiki/Runit_Island#Runit_Dome
Marshall Islands:
This Concrete Dome Holds A Leaking Toxic Timebomb | Foreign Correspondent |Nov 27, 2017 | ABC News In-depth (Foreign Correspondent is the prime-time international public affairs program on Australia’s national broadcaster, ABC-TV.)
https://www.youtube.com/watch?v=autMHvj3exA
Parts of the Marshall Islands just as radioactive as Chernobyl and Fukushima (Sep 27, 2019 LA TIMES)
https://www.youtube.com/watch?v=PyhZcWy1Ero
The Marshall Islands, a nation that fears it’s on the brink of extinction | ABC News | Dec 21, 2018
https://www.youtube.com/watch?v=qZUDdAs2ME0
Concrete Dome Holding 22 Million Gallons of Nuclear Waste Is Cracking & Sinking on A Pacific Island| Nov 13, 2019
https://www.youtube.com/watch?v=5C_09vhTiL0
Verge Science | Oct 9, 2018 | San Francisco | USA
In 1946, the American military detonated a nuke underwater in the Pacific Ocean to see what would happen to abandoned warships nearby. In this video, we trace the far-reaching consequences of that test. It leads all the way to the present day; to a major American city; and to a nuclear scandal that’s cost millions and has put people behind bars.
https://www.youtube.com/watch?v=ouzU08Byrwk
২। পারমাণবিক বর্জ্য বাবস্থাপনা নিয়ে আমেরিকা যে অবস্থায় আছে সে সম্পর্কিত কিছু লিঙ্কঃ
Verge Science । Aug 28, 2018
The United States produces 2,200 tons of nuclear waste each year…and no one knows what to do with it. The federal government has long promised, but never delivered, a safe place for nuclear power plants to store their spent fuel. This means that radioactive waste is piling up all over the country. We visited one of the worst places where the waste is stuck: a beachside power plant uncomfortably close to both San Diego and Los Angeles. And we asked the people in charge of the waste there: what happens now?
88,000 tons of radioactive waste – and nowhere to put it | Aug 28, 2018
https://www.youtube.com/watch?v=YgVyPwhkoJs
Verge Science | Jun 14, 2012 | New Mexico
Wasteland: The nuclear graveyard under New Mexico
Today, nearly 70,000 tons of nuclear waste sits outside nuclear power plants across the country. For the last half-century, scientists and politicians have struggled to create a viable solution for permanent waste disposal at Yucca Mountain, located 90 miles outside Las Vegas. They’ve failed. As the political dust settles over Yucca, eyes turn to the Waste Isolation Pilot Plant, outside of Carlsbad, New Mexico.
https://www.youtube.com/watch?v=zDgBUwhUAVE
৩। চেরনোবিলের দুর্ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৬ সালে এবং তারপরে তৎকালীন সোভিয়েত সরকার পুরো একটা শহরের (প্রিপিয়াৎ) মানুষকে সরিয়ে নেয় এবং আশেপাশের চারিদিকের ৩০ কিলোমিটার জায়গা তেজস্ক্রিয়তার ফলে খালি করে ফেলে, যেটা এখনো এতো বছর পরেও নিরাপদ নয়। বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যদি এমন কিছু হয় তখন বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে এতো বিশাল একটা স্থানান্তরের এবং এতো বিশাল জায়গা এতো বছর ধরে রক্ষণাবেক্ষণ করার, খালি রাখার? কারণ এ বছরেও (এপ্রিল, ২০২০) চেরনোবিলের পাশের এক বনে আগুন লেগে নতুন করে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কারণ এই পুরো অঞ্চলটাই তেজস্ক্রিয় হয়ে আছে সেই ১৯৮৬ সালের দুর্ঘটনার ফলে।
https://www.thesun.co.uk/tech/11352239/chernobyl-forest-fires-radiation/
https://edition.cnn.com/2020/04/06/europe/chernobyl-fire-radiation-scli-intl-scn/index.html
https://en.wikipedia.org/wiki/Pripyat
https://en.wikipedia.org/wiki/Chernobyl_disaster
৩। পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কতো কঠিন এবং পারমাণবিক চুল্লি পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা কতটা সুদক্ষ লোকবলের দরকার হয় এবং তার অভাবে কী হতে পারে এবং কতটা খারাপ হতে পারে, আকারে সেটা কতটা বড় হতে পারে এর কিছুটা ধারনা পাওয়ার জন্য দেখতে পারেন এইচ,বি,ওর ৫ পর্বের মিনি সিরিজ “চেরনোবিল” (২০১৯)।
https://en.wikipedia.org/wiki/Chernobyl_(miniseries)
Chernobyl (2019) | Official Trailer | HBO | Created and written by Craig Mazin and directed by Johan Renck
https://www.youtube.com/watch?v=s9APLXM9Ei8
তথ্যসূত্রঃ
https://www.imdb.com/title/tt1194612/?ref_=ttfc_fc_tt
https://en.wikipedia.org/wiki/Nuclear_power_by_country
https://en.wikipedia.org/wiki/Onkalo_spent_nuclear_fuel_repository
https://en.wikipedia.org/wiki/Radioactive_waste
https://en.wikipedia.org/wiki/Yomiuri_Shimbun
https://en.wikipedia.org/wiki/Atomic_bombings_of_Hiroshima_and_Nagasaki
Into Eternity Official Trailer 2010 A Film by Michael Madsen
https://en.wikipedia.org/wiki/Into_Eternity_(film)
https://www.youtube.com/watch?v=xoUkhOup1C4
Into Eternity digs deep into our own mortality as conspiracies are cast aside by Matt Ford | First published on Tue 9 Nov 2010 17.15 GMT
https://www.theguardian.com/film/2010/nov/09/into-eternity-michael-madsen-nuclear
‘Into Eternity’ Is a Warning Message for the Future
By by Daniel Oberhaus | May 6 2017, 10:00pm
https://www.vice.com/en_us/article/mgykk3/into-eternity-michael-madsen-onkalo-finland-nuclear-waste
Humans, Who Once Buried Their Treasures, Now Bury Their Dangers
By By A.O. Scott | Feb. 1, 2011
547
এইখানে ইমেইল এড্রেসটা ভুল আছে লেখকের। ঠিক করে দ্যান।
লেখক নিজে এই ইমেইল ঠিকানাই আমাদেরকে দিয়েছেন: raiparasadardi@gmail.com