সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৩ এপ্রিল- ২১ জুলাই ২০২০)

সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৩ এপ্রিল- ২১ জুলাই ২০২০)

করোনা পরিস্থিতি

বারডেমের আইসিইউ কার্যক্রম স্থগিত

২৩ এপ্রিল ২০২০, প্রথম আলো

বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) কার্যক্রম মঙ্গলবার থেকে বন্ধ করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন একজন করোনা রোগী থেকে আরও তিনজন সংক্রমতি হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রথম আলোকে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক নাজিমুল ইসলাম।

নাজিমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলনে, হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন একজন রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসিউতে পাঠানো হয়। এর আগে ওই রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা পরীক্ষা করা হয়।প্রথমবার ফলাফলে তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয়বার পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দ্বিতীয়বারের নমুনার ফলাফল হাতে আসার আগেই তাঁকে আইসইিউতে ভর্তি করা হয়েছিল। আইসইিউতে ভর্তির পর রোববার রাতে দ্বিতীয় পরীক্ষার ফলাফলে তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

যুগ্ম পরিচালক আরও বলনে, এরপরই নিয়মানুযায়ী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অন্যান্য রোগীদেরও নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে আরও তিন জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

বারডেমের আইসিইউ–এর একজন চিকিৎসক জানান, সব রোগীকেই পরে করোনাভাইরাসরে জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের সবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা হবে। তিনি জানান, তাঁদের প্রায় ৪৫ জন চিকিৎসক ও র্নাস ওই রোগীর সংর্স্পশে আসেন।

করোনায় মৃত্যু হলে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৫০ লাখ টাকা

২৪শে এপ্রিল, ২০২০, ডিবিসি নিউজ

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মারা গেলে পদমর্যাদা অনুসারে তাদের পরিবারকে দেয়া হবে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২৩শে এপ্রিল) অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে ক্ষতিপূরণের এই ঘোষণা দেয়া হয়। পরিপত্রে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বলা হয়, বেতন স্কেল অনুযায়ী ১৫ থেকে ২০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ পাবেন ৫ লাখ টাকা, আর মারা গেলে পাবেন ২৫ লাখ টাকা।

১০ থেকে ১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর মারা গেলে পাবেন ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া,  প্রথম থেকে নবম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ টাকা এবং মারা গেলে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন।

ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রত্যক্ষভাবে করোনাভাইরাস পজিটিভের প্রমাণপত্র বা মেডিক্যাল রিপোর্টসহ স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ থেকে এই অর্থ দেয়া হবে।

হাসপাতালে অক্সিজেন ঘাটতি

২৫ এপ্রিল ২০২০, প্রথম আলো

শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা জটিল হলে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয়। সরকারি হিসাব বলছে, রোগী সামলাতে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার যা দরকার, আছে তার অর্ধেক। ঘাটতি আছে আনুষঙ্গিক সরঞ্জামেরও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থায় অক্সিজেন সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

করোনা চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে ১৯টি এবং দেশের ৮টি বিভাগে আরও ৬৪টি হাসপাতাল বাছাই করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, রাজধানীর বাইরে করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ৩ হাজার ২০০টি এবং আনুষঙ্গিক সামগ্রী (অক্সিজেন মাস্ক, ফ্লোমিটার, চাবি, ট্রলি) আছে ২ হাজার ৭৩৯ সেট। রোগীর চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সিলিন্ডার আরও দরকার ৩ হাজার ৪৫টি এবং আনুষঙ্গিক সামগ্রী ৩ হাজার ১৮৯ সেট।

সরকারি হিসাবে রাজধানীর জন্য আরও কত অক্সিজেন সিলিন্ডার দরকার, তার উল্লেখ নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অন্যান্য হাসপাতালের মতো রাজধানীতেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের ঘাটতি রয়েছে।

রাজধানীর বাইরের পরিস্থিতি

সরকার রাজধানীর বাইরে সারা দেশে কোভিড–১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৬৪টি হাসপাতাল ঠিক করেছে। এসব হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ পরিস্থিতি সম্প্রতি মূল্যায়ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিটি বিভাগ, প্রতিটি জেলা এবং প্রতিটি নির্দিষ্ট হাসপাতাল ধরে ওই হিসাব করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রীর ঘাটতি আছে।

ওই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, রংপুর বিভাগের কোভিড–১৯ রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে মাত্র ৮২টি। সবচেয়ে বেশি আছে খুলনা বিভাগে, ৭০৬টি। রাজধানীর নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলো বাদ দিলে ঢাকা বিভাগে আছে ৬৪৯টি অক্সিজেন সিলিন্ডার।

কোন বিভাগে কতটি বাড়তি সিলিন্ডার দরকার হতে পারে, তারও একটি হিসাব করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি বাড়তি ৫৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দরকার সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে।

রাজধানীর পরিস্থিতি

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, আপাতত নির্ধারিত রাজধানীর ১৯টি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ২ হাজার ৫৮৩টি। এসব হাসপাতালের ১০টিতে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। বাকি আটটিতে শুধু সিলিন্ডার আছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ আছে শুধু আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটার ও ডায়ালাইসিস কেন্দ্রে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সিলিন্ডার আছে ৩৫০টি। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে আছে ১২৩টি। আর মহানগর হাসপাতালে আছে ৪৮টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। এই তিনটি হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নেই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা জেনারেল হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থার পাশাপাশি যথাক্রমে ৬২৮টি ও ২৪৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে।

মিরপুর লালকুটি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ২০টি। কিন্তু সিলিন্ডার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়ার কোনো ট্রলি নেই বলে সরকারের নথিতে বলা আছে।

সিলিন্ডার নিয়ে সমস্যা

বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, ‘কোভিড–১৯ রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ দরকার। কিন্তু সিলিন্ডারে তা পুরোপুরি সম্ভব নয়। একটি সিলিন্ডারের অক্সিজেন ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায়। তখন নতুন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলার একজন সিভিল সার্জন বলেছেন, একজন করোনা রোগীর চার–পাঁচ দিন বা তারও বেশি সময় টানা অক্সিজেন সরবরাহের দরকার হয়। কিন্তু অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে সিলিন্ডার ৩–৪ ঘণ্টা পরপর পাল্টাতে হয়। আবার যিনি সিলিন্ডার পাল্টাতে থাকেন, তাঁরও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

একটি বিদেশি স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, একজন রোগীর দিনে ৩ থেকে ৪টি সিলিন্ডার লাগবে। এর অর্থ সিলিন্ডারের সংখ্যার এক–চতুর্থাংশ রোগী তা (৩ হাজার ২০০ সিলিন্ডার ৮০০ রোগীর কাজে আসবে) ব্যবহার করতে পারবে। একটি নির্দিষ্টসংখ্যক সিলিন্ডার অক্সিজেন ভরে আনার জন্য রাস্তায় থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার চাইলেও কোভিড–১৯–এর জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে অল্প সময়ে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ অবকাঠামো গড়ে তোলা কঠিন হবে। পরিকল্পনা করে ফেব্রুয়ারি বা মার্চের শুরুতে উদ্যোগ নিলে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হতো। এ পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত, সরকারি–বেসকারি যেসব হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা আছে এবং রোগী কম আছে, সেগুলোকে কোভিড–১৯ রোগের আওতায় নিয়ে আসা। এসব হাসপাতালের রোগীদের দ্রুত সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা।

গণস্বাস্থ্যের করোনা টেস্টিং কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সরকারের কোনও প্রতিনিধি আসেননি

এপ্রিল ২৫, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টেস্টিং কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আসেননি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনও প্রতিনিধি। আসেননি ওষুধ প্রশাসনের কোনও কর্মকর্তাও। যদিও এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণস্বাস্থ্যের টেস্টিং কিট চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তিনিও কোনও উত্তর দেননি। ফলে এখন তারা এসব কিট নিজ উদ্যোগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে পৌঁছে দেবেন।

তবে শনিবার (২৫ এপ্রিল) ওই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির কাছে কিট হস্তান্তর করা হয়। বেলা ১২টার দিকে ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠান হয়।

করোনায় নাগরিকদের সুরক্ষায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ

২৬ এপ্রিল ২০২০, প্রথম আলো

করোনাভাইরাস সংকটে নাগরিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনটাই দেখা যাচ্ছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আটটি ক্ষেত্রে দেশগুলোর নেওয়া সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার তুলনা করে প্রতিবেদনটি এ চিত্র দিয়েছে। এই অঞ্চলে কোভিড-১৯ মহামারির সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের ওপর এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে এশিয়া–প্যাসিফিক ইকোনমিস্ট নেটওয়ার্ক নামের অর্থনীতিবিদদের একটি সংগঠন।

আটটি ক্ষেত্র বা সূচকগুলোর প্রথমেই আছে সুলভ স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানোর পদক্ষেপ। এ ছাড়া আছে অসুস্থতাকালীন ছুটির সময় পর্যাপ্ত ভাতা ও সুবিধা, চাকরিচ্যুতি ঠেকানো এবং চাকরিহারা মানুষকে সহায়তা দেওয়া; বয়স্ক, বেঁচে ফেরা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা। আরও আছে নাগরিকদের আয়-সহায়তা জোগানো ও পরিবারকে সেবা দেওয়ার প্রয়োজনে ছুটি বা অন্য সুবিধার নীতি। এ ছাড়া কর এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতের প্রদেয় মেটানোর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়াও বিষয়টিও দেখা হয়েছে। এ ছাড়া ‘অন্যান্য’ পদক্ষেপ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেওয়া তুলনামূলক চিত্রের ছকটি বলছে, বাংলাদেশ সরকার শুধু বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিয়েছে। অবশ্য সেখানে এটাও বলা হয়েছে যে ছকে দেশগুলোর কোনো পদক্ষেপ বাদও পড়ে থাকতে পারে।

প্রতিবেদনের ছক অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি পদক্ষেপ নিয়েছে ফিলিপাইন, ইরান ও থাইল্যান্ড। এ দেশগুলো সাত ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। ছয় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে চীন, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া। পাঁচ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে জাপান, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারত।

ভারত বাদে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা চারটি এবং নেপাল ও পাকিস্তান তিনটি করে পদক্ষেপ নিয়েছে। শেষের দুটি দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বাড়তি হিসেবে নাগরিকদের জন্য আয়ের সহায়তা দিয়েছে। ভারত ও শ্রীলঙ্কা চাকরির সুরক্ষা দিয়েছে। ভারত প্রতিষ্ঠানের কর দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ব্যবস্থাও করেছে।

এর আগে ৬ এপ্রিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক অর্থনীতিবিষয়ক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এফএম গ্লোবাল ‘গ্লোবালরেজিলিয়েন্স ইনডেক্স–২০১৯’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই সূচক অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার সামর্থ্যের দিক থেকে ১৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৬তম।

ওই সূচক অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও শ্রীলঙ্কার অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৫৮ ও ৮১তম। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের এই সামর্থ্য তথা রেজিলিয়েন্স বা সহিষ্ণুতার ক্ষমতা কম।

কিট তৈরির সক্ষমতা রয়েছে জানিয়েও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাড়া পাচ্ছে না ঢাবি

এপ্রিল ২৭, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

করোনাভাইরাস শনাক্ত করার এবং কিট উদ্ভাবনের সক্ষমতা রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি)৷ এ জন্য নিজেদের দক্ষ লোকবলও রয়েছে। গত ২৯ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিশ্ববিদ্যালয়টির সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত করেন টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা৷ কিন্তু একমাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও সাড়া বা সমর্থন পাননি বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা৷

সরকার বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমর্থন এবং আর্থিক সহযোগিতা পেলে কিট উদ্ভাবন, ভাইরাস শনাক্তকরণে তারা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান৷ এ জন্যে তিনি গত ২৮ মার্চ করোনাভাইরাস রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করেন৷ এ কমিটির উদ্যোগে ইতোমধ্যে টেলিমেডিসিন এবং মেন্টাল হেল্প সেবা চলমান রয়েছে৷

টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি৷ কিন্তু অফিসিয়ালি এখন পর্যন্ত কোনও সাড়া পাইনি৷ এখন যে কিট তৈরি করা হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়৷ পরবর্তী সময়ে কিটের সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ কিটের সংকট পূরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷’

মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা চিকিৎসক ওএসডি

৩০ এপ্রিল ২০২০,  প্রথম আলো

রাজধানীর ৫০০ শয্য বিশিষ্ট মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক শহিদ মো. সাদিকুল ইসলামকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। সম্প্রতি কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে দেওয়া মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এই পরিচালক। তিনি এ বিষয়ে মতামত চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠিও দিয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বুধবার সাদিকুল ইসলামকে ওএসডি করে আদেশ জারি করা হয়। এ সংক্রান্ত চিঠি সাদিকুল ইসলাম হাতে পেয়েছেন। তবে এ সংক্রান্ত আদেশে ওএসডি করার কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাংবাদিকের জানার সুযোগ কমাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

৩০ এপ্রিল ২০২০, প্রথম আলো

প্রথমে বন্ধ হলো রোজকার ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ। তারপর বাদ পড়ল মজুত থাকা শনাক্তকরণ কিটের তথ্য। তারও পরে ছাঁটাই হলো কেন্দ্রভিত্তিক নমুনা পরীক্ষার দৈনিক হিসাব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য জানার সুযোগ সীমিত করছে। সাংবাদিকেরা কোনো তথ্য খতিয়ে দেখলেই এমনটা হচ্ছে। এটা শুরু হয়েছে এপ্রিলের গোড়া থেকে, যখন কিনা প্রতিদিন দেশে শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

অধিদপ্তর তথ্য দেয় সংক্ষেপে। বিফ্রিংয়ে প্রশ্ন করে সাংবাদিকেরা বিশদ তথ্য আর প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চাইতেন। প্রশ্নোত্তর বন্ধ হওয়ায় সে সুযোগ কমেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, মহামারি পরিস্থিতিতে মানুষকে সঠিক তথ্য ও বার্তা দিতে হবে। না জানলে এবং আস্থা হারালে মানুষ রোগ শনাক্ত করতে বা চিকিৎসা নিতে যেতে চায় না।

২৪ ঘণ্টায় ১০৯ পুলিশ সদস্যের করোনা শনাক্ত

০১ মে ২০২০, প্রথম আলো

দেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে গত ২৪ঘণ্টায় আরও ১০৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে পুলিশে মোট আক্রান্ত সদস্যের সংখ্যা দাড়াল ৬৪৫। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আক্রান্ত সদস্যের সংখ্যা ছিল ৫৩৬। এ সময় করোনায় আক্রান্ত হয়ে চার পুলিশের মৃত্যু হয়। এ পর্যন্ত যে চারজন মারা গেছেন, তাঁরা সবাই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্য।

মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের আবাসন ব্যবস্থার কারণে তাঁদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ হচ্ছে। সেখানে গাদাগাদি করে পুলিশ সদস্যদের থাকতে হচ্ছে। এতে একজন আক্রান্ত হলে তা সহজেই অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।

এছাড়া পুলিশের যেসব সদস্য রাস্তায় টহল ও তল্লাশি করছেন, তাঁদের ভেতরে করোনা সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাঁরা যেমন সামাজিক দূরত্ব মানছেন না, তেমনি নিজেদের সুরক্ষা পোশাক নিয়ে ঢিলেঢালা ভাব। আবার এক গাড়িতে পাশাপাশি বসে ব্যারাকে ফিরে যাচ্ছেন। এতে একজন কোনোভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সহজেই তা অন্যকে সংক্রমিত করার আশঙ্কা থাকছে। রাজারবাগের পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

করোনা: কুষ্টিয়ার ৬৭ পজিটিভ ঢাকায় এসে হলো

০১ মে ২০২০, সমকাল

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় কম নমুনা পরীক্ষা করে দেশে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তার মধ্যেও জটিলতা তৈরি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা শনাক্তের ফলাফল নিয়ে। পিসিআর ল্যাবে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হলেও অন্য ল্যাবে তার ফল আসছে নেগেটিভ। কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে ৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে এমনই ঘটনা ঘটেছে।

কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে ৬৭ জনের করোনা পজিটিভ হলেও ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথে (আইপিএইচ) ৬৫ জনের নেগেটিভ এসেছে। মাত্র দুইজনের করোনা পজিটিভ বলে সেখান থেকে জানানো হয়েছে।

লকডাউনে’ জেনেভা ক্যাম্পে ১৩ জনের মৃত্যু

০২ মে ২০২০, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকার মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ নিয়ে অন্তত ১৩ জনের মৃত্য হয়েছে; কিন্তু এটা ক্যাম্পবাসী যেমন চেপে গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও তা খতিয়ে দেখেনি। গত ২৬ মার্চ লকডাউনের পর ঝুঁকি মাথায় রেখে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের এই ক্যাম্পের সবগুলো ফটক বন্ধ করা হলেও ভেতরের জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা থেকেই গিয়েছিল।

লকডাউনের ৩৬ দিন গড়ানোর পর শনিবার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিন সপ্তাহে এক নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৩ ক্যাম্পবাসী মারা গেছেন।

ওই এলাকায় দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও ক্যাম্পবাসী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে দুদিনের ব্যবধানে দুই ভাই মারা যাওয়ার মধ্য দিয়ে জেনেভা ক্যাম্পে মৃত্যু শুরু হয়। এদের একজনের বয়স ৩০ বছর অন্যজনের বয়স ৫০। এরপরে আরও কয়েকজনের মৃত্যূ ঘটে।

এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাস্টন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ক্যাম্পে কিছু মৃত্যুর খবর তিনিও শুনেছেন। তবে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না, তা তার জানা নেই।

“এর মধ্যে শিশুটি হয়তবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। তবে প্রতিবেদন হাতে না পেলে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না।”

ক্যাম্পে ‘দুই থেকে তিনজন’ করোনাভাইরাসের রোগী থাকার কথা জানিয়ে কাউন্সিলর বলেন, তাদের খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।

রোগী পাওয়ায় সংক্রমণ এড়াতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখানকার একটা স্কুলকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা হয়েছিল। ২০টি বিছানার ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু কেউ মানেনি।

“জনবসতি এই জেনেভা ক্যাম্পে যেখানে একটি ঘরে পরিবারের সদস্যরা তিন শিফট করে ঘুমাতে যায়। সেখানে কোনো নিয়মই চলতে চায় না।”

গজনবী রোড, বাবর রোড, শাহজাহান রোড, হুমায়ুন রোড ঘিরে অবাঙালিদের জন্য গড়ে উঠা এই জেনেভা ক্যাম্পে ১০ হাজারের মতো পরিবার থাকে। কোনো পরিবারেই চারজনের কম সদস্য নেই।

এই ক্যাম্পের ভেতরে অপরিকল্পিতভাবে প্রচুর উঁচু ভবন গড়ে উঠেছে। আট-দশ হাত কক্ষগুলোতে ঠাসাঠাসি করে চার-পাঁচজন করে থাকেন। কোনো কোনো ঘরে ‘শিফটিং’ করেও ঘুমানো হয়। ফলে ঘরে থাকার উপায়ও নেই।

ঢাকা মেডিকেল: চার দিনে মারা গেছেন করোনা সন্দেহে ভর্তি হওয়া ২৮ জন

০৫ মে ২০২০, প্রথম আলো

গত চার দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ভর্তি হওয়া ২৮ জন মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মারা যাওয়া ২৮ জনের মধ্যে ৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকিদের কেউ কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।

করোনা উপসর্গে মৃতদের বড় অংশই চিকিৎসা পাননি

০৮ মে ২০২০, সমকাল

‘দেশে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বড় অংশেরই চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা হয়নি। ৮ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৮৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৫৬ জন বাসায় অথবা কর্মস্থলে মারা গেছেন। তাদের ৬৪.৭৪ ভাগই একরকম বিনাচিকিৎসা বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আগেই মারা গেছেন। উপসর্গে মৃতদের মধ্যে ১৪.১০ ভাগ স্থানীয় চিকিৎসক, পল্লিচিকিৎসক, হোমিওপ্যাথিক, কবিরাজ এমনকি তান্ত্রিকের কাছে যান। ১২.৮২ ভাগ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান এবং সেখান থেকে চিকিৎসা-পরামর্শ দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর তাদের মৃত্যু হয়। ৭.০৫ ভাগ হোম বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে মৃত্যুবরণ করেন। আর ১.২৮ ভাগ একাধিক হাসপাতালে গেছেন, তবে করোনা আতঙ্কে তাদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়েছে। ৩.৯০ ভাগ রাস্তার ধারে, মসজিদে, বাজারে, উপকূলে, চা বাগানে, বাসার সামনে বা হাসপাতালের বাইরে মরে পড়ে ছিলেন।’

‘কভিড-১৯ উপসর্গে মৃত্যুসমূহ ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। দেশ ও দেশের বাইরের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, গবেষক, ফ্রিল্যান্সার ও কম্পিউটার ডেভেলপারদের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। মূলত বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত খবরের তথ্য ও তথ্যসূত্র পর্যালোচনা করে তাদের প্রতিবেদনটি তৈরি। গবেষক দলের পক্ষে নেদারল্যান্ডসের গ্রনিঙ্গেন ইউনিভার্সিটির এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের শিক্ষার্থী অনুপম সৈকত শান্ত জানান, আইইডিসিআর বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতিদিন কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর যে তথ্য জানায়, সেখানে করোনা উপসর্গে মৃত্যুর সংখ্যাটি অনুল্লেখিত থেকে যায়। এ কারণেই দেশজুড়ে করোনা উপসর্গে মৃত্যুর ঘটনাগুলোকে সংকলিত করার উদ্দেশ্যে গবেষণা কার্যক্রমটি হাতে নেওয়া হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে নকিয়া বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক এই টেলিকম প্রকৌশলী জানান, করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর পরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি বা করা যায়নি। তবে এপ্রিলের শুরু থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এপ্রিল পর্যন্ত করোনা উপসর্গে মৃতদের ৭৭ ভাগ বা ২৯৮ জনের নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ২৬৫ জনের নমুনা নেওয়া হয়েছে মৃত্যুর পর। মাত্র ৩৩ জনের নমুনা মৃত্যুর আগে সংগ্রহ করা হয়। তিনি জানান, করোনা উপসর্গে মার্চে ৭৩ ও এপ্রিলে ৩১৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ ২০ জনের মৃত্যু হয় ১১ এপ্রিল। এক দিনে ১৫ বা তার বেশিজনের মৃত্যু হয়েছে পাঁচ দিন এবং এপ্রিলের শেষ নাগাদ সংখ্যাটি ৫ থেকে ১০ এর মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা উপসর্গে মৃতদের ২৬৮ জনেরই জ্বর ছিল। ২৩৫ জনের ছিল শ্বাসকষ্ট, ১৩৮ জনের সর্দি ও ১৩৪ জনের কাশি। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও সর্দি- এই চার লক্ষণের কমপক্ষে দুটি লক্ষণ ছিল ২৪৬ জনের, কমপক্ষে তিনটি লক্ষণ ছিল ১৪৯ জনের। উপসর্গে মৃতদের ৭১ ভাগ পুরুষ ও ২৯ ভাগ নারী (১১ জনের তথ্য পাওয়া যায়নি)। করোনায় আক্রান্তের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের হার যথাক্রমে ৩২ ও ৬৮ ভাগ।

এদিকে বাংলাদেশে করোনার উপসর্গে কিংবা কভিড-১৯ পজিটিভ হয়ে মৃতদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে শিশুমৃত্যু। মৃতদের ২ ভাগ ১০ বছরের কম বয়সী শিশু। করোনা উপসর্গে মৃতদের ক্ষেত্রে শিশু ৬ ভাগ। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ২০ শিশু করোনা উপসর্গে মারা গেছে। আর ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-তরুণ মারা গেছে আরও ২৪ জন বা ৭.৬ ভাগ। করোনা উপসর্গে মৃত্যুর ১৩২টি ঘটনায় পেশাগত তথ্য পাওয়া যায়নি। বাকি ২৫৪ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৭ জন শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। করোনা উপসর্গে সর্বাধিক ২৫ জন মারা গেছেন নারায়ণগঞ্জে ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ জন ঢাকায়। করোনা উপসর্গ থাকা ৫০ জন হাসপাতালে নেওয়ার পথে অর্থাৎ চিকিৎসা শুরুর আগেই মারা যান। উপসর্গ নিয়ে ১৩৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৭.৩৮ ভাগ দু’দিনের বেশি বেঁচেছেন এবং মাত্র ০.৮২ ভাগ রোগী আইসিইউতে ভর্তি অবস্থায় মারা গেছেন। রোগীদের ১৩.৯৩ ভাগই মারা গেছেন ভর্তি হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে।

প্রতিবেদনটির উপসংহারে বলা হয়েছে, এই মৃত্যুগুলোর কতটি করোনায় আর কতটি নয়, সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও ভঙ্গুর দশার চিত্রটি গবেষণায় পরিস্কারভাবেই উঠে এসেছে।

জায়গা নেই খিলগাঁওয়ে, দাফন হচ্ছে রায়েরবাজারে

০৮ মে ২০২০, বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের জন্য নির্ধারিত খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে দাফনের জায়গা নেই। এমন পরিস্থিতিতে মারা যাওয়া করোনা রোগীদের দাফন করা হচ্ছে রায়েরবাজার বসিলা কবরস্থানে। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে শুধু আক্রান্তদেরই নয়, আক্রান্ত সন্দেহে যারা মারা যাচ্ছেন তাদেরও এখানে কবর দেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব লাশ পরিবহন ও দাফনের দায়িত্বে আছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুল ইসলামী। তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নেওয়া হয় কবরস্থানে। খিলগাঁও কবরস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে এ পর্যন্ত দাফন হয়েছে ১৯১ লাশ। এদের কেউ করোনা পজিটিভ ছিলেন, কাউকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে দাফন করা হয়েছে।

এ কবরস্থানের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই ৯ নম্বর লাইন ধরে সোজা দক্ষিণে ঝিলপাড়ের কাছে ঝোপের আড়ালে নির্ধারণ করা হয়েছে করোনায় মৃতদের জায়গা। অন্যান্য কবর থেকে একটু আলাদাভাবে রাখা। এসব কবর খননের জন্য দায়িত্বে ছিলেন চারজন গোরখোদক। কবরগুলোর একপাশে আগে থেকে বাঁশ কেটে সাজিয়ে রাখা হতো। দাফন করা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে প্রতিটি কবরের মাঝখানে বাঁশ কেটে বাতা করে নাম্বারিং করে দেওয়া হয়েছে। জায়গার সংকটের কারণে গত ৩০ এপ্রিল থেকে করোনা আক্রান্তে মারা যাওয়াদের দাফন শুরু হয়েছে রায়ের বাজার বসিলা কবরস্থানে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে করোনা রোগীর লাশ কবরস্থানে নিয়ে আসা হয়। অ্যাম্বুলেন্স দুটি কবরস্থানের এক প্রান্তে পার্ক করে রাখা হয়। এক অ্যাম্বুলেন্সে বহন করা হয় দাফনের দায়িত্বে থাকা ১০ স্বেচ্ছাসেবককে। তারা প্রত্যেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষার সরঞ্জাম (পিপিই) পরা। অপর অ্যাম্বুলেন্সে বহন করা হয় লাশ। তারা একটি স্ট্রেচারে করে সাদা কাফনে মোড়ানো লাশ নামান। এরপর কবরস্থানের ইমামসহ ১০/১২ জনের উপস্থিতিতে জানাজা নামাজ পড়ানো হয়। জানাজা শেষে স্ট্রেচারে করে তারা লাশ কবরের কাছে আনেন। এরপর পিপিই পরা চারজন মিলে লাশ কবরে নামান। কবরে দেহ নামানোর পর মাটি দেওয়া হয়। সব শেষে যারা দাফনে অংশ নেন তারা কবরস্থানের নির্দিষ্ট একটি স্থানে গিয়ে পিপিই খুলে ফেলেন। সবাই নিজেদের গামবুট আর শরীর জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করে নেন। এরপর পিপিইগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে নষ্ট করে দেন। দাফন কাজ শেষে তারা মৃতের জন্য হাত তুলে দোয়াও করেন।

গত ২৫ মার্চ খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তিকে দাফন করা হয়। খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানের মোহরার মো. ফেরদৌস এ প্রতিবেদককে বলেন, করোনায় যাদের দাফন হতো, তাদের বিষয়ে এক দুই ঘণ্টা আগে তাদের জানানো হয়। এরপর তারা কবরের অন্যান্য জিনিসপত্র প্রস্তুত করে রাখতেন। এরপর কবরস্থানের মসজিদের ইমাম দিয়ে জানাজা পড়ানো হতো। জানাজার সময় প্রত্যেকে নিজের সুরক্ষার জন্য মুখে মাস্ক পরে থাকেন। দাফন শেষে প্রত্যেকে হাত-পা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলেন। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে কিছু জায়গায় পানি জমে গেছে, ঝিলের পানি উঠে এসেছে। আবার জায়গা সংকটের কারণে খিলগাঁও কবরস্থানে এখন কোনো লাশ দাফন হচ্ছে না। সব লাশ দাফন হচ্ছে রায়ের বাজারে।

একের পর এক হাসপাতাল ঘুরে কুর্মিটোলায় ভর্তির পর অতিরিক্ত সচিবের মৃত্যু

০৯ মে ২০২০, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

করোনাভাইরাস সঙ্কটের এই সময়ে কিডনির জটিলতায় অসুস্থ অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকারকে নিয়ে একের পর এক হাসপাতাল ঘুরতে হল তার পরিবারকে। অন্য কোনো হাসপাতালে না পেরে শেষে বৃহস্পতিবার কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এই সরকারি কর্মকর্তাকে। শনিবার বেলা ১২টার দিকে গৌতম আইচের মৃত্যু হয় বলে তার মেয়ে সুস্মিতা আইচ জানিয়েছেন, যিনি নিজেও একজন চিকিৎসক।

সুস্মিতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোভিড-১৯ এর কোনো উপসর্গ না থাকলেও অন্য কোনো উপায় না পেয়ে অনেক কষ্টে বাবাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করাই।

“বাবার আইসিইউ সাপোর্টটা খুব দরকার ছিল, কিন্তু তা পাওয়া যায়নি। বাবার চিকিৎসাই হল না, তিনি মারা গেলেন। আমি ডাক্তার হয়েও কিছু করতে পারলাম না।”

যে ৩৩৩ হটলাইন নম্বর থেকে সরকার স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে, সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. সুম্মিতা।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তার বাবা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কি না, তা জানার চেষ্টাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করেনি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের অন্য রোগীদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হতে যে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে, অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তার চিকিৎসক মেয়েও হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন যে শ্বাসকষ্ট থাকলেও তার বাবা কোভিড-১৯ রোগী নন, আর তিনি তার বাবার রোগের আদ্যোপান্তই জানেন।.. …

সুস্মিতা বলেন, “আমি আমার বাবাকে নিয়ে সাফার করছি, …এটা নিয়ে আমি কথা বলব। বিশেষ করে নরমাল যারা পেশেন্ট, কোভিড-১৯ না, আমার বাবার মতো কিডনি পেশেন্ট, তারা কী করবেন, তাদের জন্য কী করছেন? কারণ আমি যে হাসপাতালেই গিয়েছি সবাই বলেছে, টেস্ট (রিপোর্ট) আনেন। আমি টেস্টটা কোথায় করাব?”

ঘুরে ঘুরে রাস্তাতেই মারা যাচ্ছে রোগী

০৯ মে ২০২০, সমকাল

সরকারি হোক বা বেসরকারি- যে কোনো হাসপাতালে করোনা সন্দেহভাজন রোগী এলে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানাতে হবে। গত ৩০ এপ্রিল এরকম একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে কোনো মুমূর্ষু রোগী কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত বলে যদি সন্দেহ হয়, কোনো কারণে ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো যদি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে রোগীকে অপেক্ষমাণ রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের চারটি নম্বরের যে কোনোটিতে ফোন করে ওই রোগীর চিকিৎসা বা ভর্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নিতে হবে।

সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, করোনার লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রোগী ও তাদের স্বজনের কাছ থেকে এমন বেশকিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ নির্দেশনা জারি করে। বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই নির্দেশনার পরও হাসপাতাল থেকে রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো ওই নির্দেশনা আমলে নিচ্ছে না।

বিপজ্জনক পথে করোনা

১২ মে, ২০২০, দেশ রুপান্তর

দেশে করোনা পরিস্থিতি বিপজ্জনক পথে যাচ্ছে। সংক্রমণের সব পথ খোলা থাকায় সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময় আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যা যেমন বাড়তে পারে; তেমনি কমিউনিটিতে আরও বেশি বিস্তার ঘটতে পারে রোগটির। বিশেষ করে নতুন নতুন জনগোষ্ঠীর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

গত ২৬ এপ্রিল গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে থেকেই দেশের বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছিলেন। সেই আশঙ্কার মধ্যেই গার্মেন্টস কারখানা খুলেছে। ইফতারি বিক্রি ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট চালু হয়েছে। দোকানপাট আগের চেয়ে বেশি সময় ধরে খোলা থাকছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর খুলে দেওয়া হয়েছে। ঈদের কেনাকাটা করতে খুলতে শুরু করেছে মার্কেট শপিং সেন্টার। লকডাউন শিথিল হয়েছে। মানুষ কাজে যোগ দিতে দলে দলে ঢাকায় ফিরছে।

এমন পরিস্থিতি শুরু হলে সংক্রমণ মারাত্মক আকার নিতে পারে বলে এ মাসের শুরুতেও সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছিলেন, এসব সিদ্ধান্তের কারণে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা না পেলে ও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে মধ্য মে’র দিকে, বিশেষ করে ১১-১৫ মে পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ভবিষ্যতে কোনদিকে যাবে, তা বোঝা যাবে। একই সঙ্গে তারা মে মাসকে সবচেয়ে ‘ক্রিটিক্যাল’ বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

শেষ অবধি বিশেষজ্ঞদের এ পূর্ব সতর্কতাই বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার করোনা শনাক্তের ৬৫তম দিনে শনাক্ত এক লাফে হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এদিন সর্বোচ্চ সাত সহস্রাধিক নমুনা পরীক্ষা করে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৪ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত এটাই এক দিনে দেশে সর্বোচ্চ আক্রান্ত। এর আগে গত রবিবার ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮৮৭ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়াল। পাশাপাশি গত কয়েক দিন ধরে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ১৭ এপ্রিল এক দিনে সর্বোচ্চ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গত পাঁচ দিনে মোট মারা গেছে ৫৩ জন। মোট মৃত্যু ২৩৯ জনের।

দেশে করোনায় মৃত্যুর হিসেবে গরমিল!

১৪ই মে, ২০২০, ডিবিসি নিউজ অনলাইন

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হিসেব মিলছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া মৃত্যুর হিসেবের সঙ্গে বাস্তবতার বিস্তর ফারাক। সারা দেশের কবরস্থান এবং শ্মশান থেকে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, করোনা পজিটিভ মরদেহের সৎকার হয়েছে প্রায় চারশ’। ১৩ই মে পর্যন্ত সরকারি হিসেবে, মৃতের সংখ্যা ২৬৯। এছাড়া, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে প্রায় চার শতাধিক মানুষ।

মার্চের আট তারিখ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর যত দিন গেছে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর সারি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, প্রতিদিনই জানাচ্ছে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। তাদের হিসেব অনুযায়ী ১৩ই মে পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭,৮২২ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৬৯ জনের।

তবে রাজধানীসহ সারাদেশের কবরস্থান এবং শ্মশানঘাট থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে গরমিল পাওয়া গেছে। শুধু রাজধানীর কবরস্থান এবং শ্মশানঘাটে ১৩ই মে পর্যন্ত সৎকার হয়েছে ২৩৭ জন করোনা পজিটিভ মৃতদেহের।

এর মধ্যে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে দাফন হয়েছে ১৩৯ জনের, রায়েরবাজার কবরস্থানে ৫৯ জনের এবং আজিমপুর ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ২ জনের দাফন হয়েছে। এর বাইরে পোস্তগোলা শ্মশানঘাটে সৎকার হয়েছে ৩৫ জন করোনা পজিটিভ মৃতদেহের।

এছাড়া, রাজধানীর বাইরে সারাদেশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ১৫৫ জন। এরমধ্যে শুধু নারায়ণগঞ্জেই ৫৯ জন, চট্টগ্রামে ১৯ জন এবং মুন্সীগঞ্জে ১২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে কোন করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়িতে মারা গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানালে সেই হিসেব অধিদপ্তরে নথিভুক্ত হয়না।

এইতো গেল পজিটিভ শনাক্ত হওয়া মৃত্যুর হিসেব। এর বাইরে গত দুই মাসে রাজধানীসহ সারাদেশে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও চার শতাধিক মানুষ। এরমধ্যে রাজধানীর কবরস্থানগুলোতে দাফন হয়েছে ৮০ জনের। তালতলা কবরস্থানে ৫২ জন, রায়েরবাজার কবরস্থানে ২৮ জন ও পোস্তগোলা শ্মশানঘাটে সৎকার হয়েছে ৩০ জনের।

রাজধানীর বাইরে করোনা উপসর্গ নিয়ে ১১ই মে পর্যন্ত মারা গেছেন ২৯৬ জন। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জে প্রায় ৫০, খুলনায় ১৭, লক্ষ্মীপুরে ১৫, বরিশালে ১৪, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং নোয়াখালীতে ১০ জনের মৃতদেহ দাফন বা সৎকার করা হয়। এর বাইরেও কারও কারও করোনা আক্রান্তের তথ্য লুকিয়ে দাফন বা সৎকার করা হয়েছে। যদিও সে সংখ্যাটি খুব বেশি নয়।

নতুন নিয়োগ পাওয়া ডাক্তারদের জন্য করোনা ‘আশীর্বাদ’: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

১৩ মে ২০২০, দেশ রুপান্তর

করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারীতে বিশেষ বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকদের জন্য এই ভাইরাস আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।বুধবার এক নিয়োগদান অনুষ্ঠানে নতুন চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনাভাইরাস আপনাদের জন্যে আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। কারণ কভিড-১৯ যদি না আসতো আপনাদের হয়তো নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হতো না।’

‘কাজেই কভিড আপনাদের জন্যে একটি আশীর্বাদ হিসেবেই এসেছে…কভিডের কারণেই আপনার এ নিয়োগ পেয়েছেন’ যোগ করেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সারা বিশ্বে কভিড-১৯ বিভিন্ন পর্যায়ে হানা দিয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় আপনারা দেখেছেন কী অবস্থা। সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে।

উল্লেখ্য, ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও পদ না থাকায় ৮ হাজার ১০৭ জন সে সময় নিয়োগের সুপারিশ পাননি। পরে করোনাভাইরাস সংকটে স্বাস্থ্যসেবা খাতের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ায় তাদের মধ্যে থেকে দুই হাজার জনকে সহকারী সার্জন পদে নিয়োগের সুপারিশ করে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি। এর ভিত্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৪ মে তাদের নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, ‘সাময়িকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী সার্জনদের কভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হবে। এ সময় তার কর্মদক্ষতা সন্তোষজনক কি না, চাকরি স্থায়ীকরণের সময় তা বিবেচনা করা হবে।’

করোনায় হিমশিম বাজেট সেবায় নড়বড়ে স্বাস্থ্য খাত

১৬ মে ২০২০, প্রথম আলো

বিশ্বে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম বিনিয়োগের দেশের একটি বাংলাদেশ। এখানে মানুষ নিজের পকেট থেকেই চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুবিধা, আমদানি করা যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে, কেনাকাটায় চলে বড় দুর্নীতি।  খাতটির স্বল্প বাজেট, সেবা-সুবিধার ঘাটতি, অদক্ষতা আর জনবলসংকটের কারণেই নতুন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে দেশ। .. ..

বাংলাদেশে সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সরকার তখন বলেছিল, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। কিন্তু গোড়াতেই সমন্বয়হীনতা, শনাক্তকরণ পরীক্ষার সরঞ্জামের অপর্যাপ্ততা, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সুরক্ষা পোশাকের (পিপিই) সংকট প্রকট হয়ে দেখা দেয়। এখন কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালগুলো বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে, তবে উপকরণ ও সুবিধা এখনো অপর্যাপ্ত।

সর্বনিম্ন ব্যয়ের কাতারে বাংলাদেশ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, স্বাস্থ্য বাজেটকে হতে হবে দেশের মোট বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ। কিন্তু চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বরাদ্দ এই দুটি হারের ধারেকাছেও নেই।

গত অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের হার ছিল সামান্য বেশি, কোনোমতে ৫ শতাংশ পেরিয়ে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের টাকা আগের বছরের চেয়ে অল্প বেড়েছে, কিন্তু তার তুলনায় মোট বাজেট বেড়েছে বেশি। অর্থাৎ প্রকৃত বরাদ্দ কমেছে।

আবার চলতি ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হবে জিডিপির ১ দশমিক ১২ শতাংশ। সেটাও এ বছর ১ শতাংশের নিচে রয়ে গেছে।

বিশ্বে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি খরচ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র—জিডিপির ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে আছে সুইজারল্যান্ড (১২ দশমিক ২ শতাংশ)। তৃতীয় স্থানে আছে জার্মানি (১১ দশমিক ২ শতাংশ)।

স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ে সবচেয়ে কৃপণ দেশগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। সেখানে সর্বশেষ পরিসংখ্যান ২০১৬ সালের। সেই তালিকা অনুযায়ী, জিডিপির তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম খরচ করে যথাক্রমে মোনাকো, পাপুয়া নিউগিনি এবং ব্রুনেই। এরপরেই রয়েছে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের (এসকাপ) ২০১৮ সালের জরিপ বলছে, জিডিপি অনুপাতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ৫২টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

ডব্লিউএইচও এবং বিশ্বব্যাংক ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য খাতের আর্থিক সুরক্ষার ওপর একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি বলছে, স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বে সবচেয়ে কম খরচ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সরকারেরা। স্বাস্থ্যসেবা পেতে এ অঞ্চলের নাগরিকদের নিজেদের খরচ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। গড়ে স্বাস্থ্যসেবা খরচের ৪৬ শতাংশ তারা মেটায় নিজেদের পকেট থেকে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অবস্থা সবচয়ে খারাপ, নাগরিকেরা নিজেরা স্বাস্থ্যসেবা খরচের ৭০ শতাংশের বেশি জোগায়।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জাতীয় স্বাস্থ্যব্যয় প্রতিবেদন বলেছিল, রোগী নিজের পকেট থেকে জোগায় ৬৭ শতাংশ। খরচের ২৩ শতাংশ জোগায় সরকার, ৭ শতাংশ জোগায় উন্নয়ন অংশীদারেরা। বাকি ৩ শতাংশ আসে গোষ্ঠী স্বাস্থ্যবিমাসহ অন্যান্য উৎস থেকে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে রোগীর নিজের ব্যয়ের অংশ সবচেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে কম মালদ্বীপে, ১৮ শতাংশ।

স্বাস্থ্য-সুবিধার অবস্থা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সংস্থা (নিপোর্ট) মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির আর্থিক সহায়তায় দেশে স্বাস্থ্য-সুবিধার সর্বশেষ জরিপটি করেছে ২০১৭ সালে। তবে ‘বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে-২০১৭’ নামে এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে।

জরিপটি বলছে, দেশে ২৮ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে। সাধারণ চিকিৎসক আছে প্রায় ৬০ শতাংশের আর নার্স আছে ৮০ শতাংশের। মাত্র ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে জরুরি পরিবহন বা অ্যাম্বুলেন্স আছে। ২২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে অ্যালকোহলভিত্তিক জীবাণুনাশক আছে।

এ ছাড়া সার্জিক্যাল মাস্ক আছে ২৮ শতাংশের কাছে। পরীক্ষাগারের সুবিধা আছে ৩৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে। ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে ‘উন্নততর’ পানি পাওয়া যায়, যদিও হাত ধোয়ার পানি ও সাবান আছে মাত্র ৫৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে।

বিশ্বব্যাংকের উপাত্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য হাসপাতালে শয্যা আছে আটটি। যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ২৯ আর চীনে ৪২। আবার বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক আছেন পাঁচজন, ভারতে আটজন। ইতালিতে আছেন ৪০ জন আর যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ জন।

চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ

১৭ মে ২০২০, সমকাল

করোনা রোগী নিয়ে ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি চট্টগ্রাম। শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় করোনা ডেডিকেটেড দুই সরকারি হাসপাতালে আর ভর্তি করানো হচ্ছে না রোগী। সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ১০০ আইসোলেশন শয্যায় এখন রোগী আছে ১১০ জন। গতকাল শনিবার থেকে তাই আর নতুন রোগী ভর্তি করাচ্ছে না তারা। ৩০ শয্যার বিআইটিআইডি হাসপাতালেও খালি নেই কোনো শয্যা। আজ রোববার থেকে রোগী ভর্তি বন্ধ থাকবে সেখানেও। করোনা চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নেই বিকল্প কোনো বেসরকারি হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য শয্যা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চললেও সময় লাগবে তাতেও।

দেশে ৬০ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যু বাড়ছে

১৭ মে ২০২০, প্রথম আলো

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ৬০ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের মৃত্যুর হার বাড়ছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৫৫ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের কম। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনায় পুরুষের মৃত্যু হচ্ছে বেশি। মারা যাওয়াদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই পুরুষ।

দেশে করোনায় আক্রান্ত (কোভিড-১৯) হয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩১৪ জনের। মৃত ব্যক্তিদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম ১০০ মৃত্যুর ক্ষেত্রে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মৃত্যুহার ছিল ৫১ শতাংশ। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে। আর ৬০-এর কম বয়সীদের মৃত্যুহার ছিল ৪৯ শতাংশ, সেটি বেড়ে ৫৫ শতাংশ হয়েছে। অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে ৬০ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের মৃত্যুর হার বেশি।চ প্রতিদিনই করোনা রোগী বাড়ছে। চট্টগ্রামে এখন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় সাতশ’ জন।

বেসরকারি মেডিকেলের দাবি আকাশচুম্বী!

১৮ মে ২০২০, সমকাল

আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ইচ্ছা প্রকাশ করে গত মাসের মাঝামাঝিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখায় একটি প্রস্তাব পাঠায়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. ইহতেশামুল হক স্বাক্ষরিত ওই প্রস্তাবে ২০০ শয্যার হাসপাতালটির পরিচালন ব্যয় হিসেবে প্রতি মাসে ১৭ কোটি ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৫ টাকা চাওয়া হয়। প্রস্তাবনায় ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়। সেখানে মেডিকেল কলেজের বেতন বাবদ এক কোটি ২৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭১৫ টাকা, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কর্মীদের বেতন বাবদ চার কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা, হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ২ কোটি ৮৩ লাখ ২২ হাজার টাকা, যন্ত্রপাতি বাবদ ৮৯ লাখ ৫ হাজার ৫৫ টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় বাবদ আরও ১০ লাখ টাকা চাওয়া হয়।

হাসপাতালটির এই প্রস্তাব অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন স্বাস্থ্য খাতের সংশ্নিষ্টরা। তারা বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মানদণ্ড পূরণ করে হাসপাতালটি পরিচালনা করলে সর্বোচ্চ ব্যয় তিন কোটি টাকা হতে পারে। অথচ এর থেকে পাঁচ গুণেরও বেশি টাকা দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এটি অযৌক্তিক। রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের মালিক আনোয়ার হোসেন এমপি। তিনি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনেরও সাধারণ সম্পাদক। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের পদত্যাগের পর তিনি এই পদে আসেন। আনোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, দুর্যোগের সময় মানুষকে সহায়তা করার জন্য তারা এগিয়ে এসেছেন। এখানে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই।

পরিচালন ব্যয় বাবদ ১৭ কোটি টাকা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন দাবি করেন, এ তথ্য সঠিক নয়। তিনি বলেন, পরিচালন ব্যয়ের ওই প্রস্তাব শুরুর দিকে দেওয়া হতে পারে। এরপর আরও তিন দফায় তা পরিবর্তন করে অনেক কমে গেছে। এটি নিউজের বিষয় নয়। আমরা পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধার একটি হাসপাতাল প্রস্তুত করে দিয়েছি। এগুলোর জন্য সরকারের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ীই হাসপাতাল পরিচালনা করছি।

সরকারের দেওয়া টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, এটি এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। সরকার পিপিই সরবরাহ করেছে। সুতরাং আমরা পিপিই ক্রয় করব না। এভাবে অন্যান্য যন্ত্রপাতিসহ যেসব সামগ্রী সরকার থেকে সরবরাহ করা হবে, সেগুলো আমরা ক্রয় করব না। এই দুর্যোগের সময়ে মানুষের সেবা করাই আমার উদ্দেশ্য। করোনা নিয়ে বাণিজ্য করার অভিপ্রায় নেই বলে জানান তিনি।

সাড়া দিচ্ছেন না হাসপাতাল মালিকরা : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, করোনার চিকিৎসা দিতে বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন। চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় কেউই করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে রাজি হচ্ছেন না। সংশ্নিষ্টদের মতে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দাবি আকাশচুম্বী। স্বাস্থ্য বিভাগ মনে করছে, তারা ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়তি অর্থ দাবি করছে। এ কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে করোনা চিকিৎসায় যুক্ত করার প্রক্রিয়া থমকে আছে।

আনোয়ার খান মডার্নসহ দেশের সাতটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, প্রাইম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এর বাইরে ক্রিসেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখা, সাজেদা ফাউন্ডেশন ও স্কয়ার হাসপাতাল করোনা চিকিৎসায় যুক্ত হয়েছে। অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাড়া দিচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালগুলোর পরিচালনায় প্রতি মাসে ৩০০ শয্যার জন্য প্রায় ২৫ কোটি, ৪০০ শয্যার জন্য প্রায় ৩২ কোটি এবং ৫০০ শয্যার জন্য প্রায় ৪০ কোটি চাওয়া হয়েছে। এই সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রমের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ দুটি প্রতিষ্ঠানে করোনা চিকিৎসা কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। তবে হাসপাতাল দুটির পরিচালন ব্যয়ের জন্য প্রতি মাসে কত টাকা দেওয়া হবে তা জানা যায়নি।

করোনায় এস আলম গ্রুপের পরিচালকের মৃত্যু

২৩ মে ২০২০, প্রথম আলো

করোনায় আক্রান্ত হয়ে এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম (৬৫) আজ শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় মারা গেছেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশান ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

করোনা টেস্টে কৌশলে ‘বাড়তি টাকা’ নিচ্ছে স্কয়ার মডার্ন হাসপাতাল

২৪ মে ২০২০, আমাদের সময়

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে বাংলাদেশে। প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন শনাক্ত রোগী। থেমে নেই মৃত্যুর মিছিলও। আজও দেশে ১ হাজার ৫৩২ জন শনাক্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ২৮ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনা সংক্রমণ কমাতে বেশি বেশি টেস্ট দরকার। এ কারণে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে করোনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩৫০০ টাকা। তবে নানা কৌশলে সরকারের বেঁধে দেওয়া সাড়ে ৩ হাজার টাকার সঙ্গে বাড়তি টাকা আদায় করার অভিযোগ তুলেছেন একাধিক ভুক্তভোগী।

এবার খোদ এক চিকিৎসকই এমন অভিযোগ তুলেছেন দেশের দুটি বড় বেসরকারি হাসপাতাল ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল এবং পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

ডা. সাদিয়া আফরিন নামে ওই চিকিৎসক করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রথমে ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে যান। সেখানে স্যাম্পল ও ডেংগু টেস্টের নামে তার কাছে ৪৫০০ টাকা চাওয়া হয়। পরে তিনি যান পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে, সেখানেও চিকিৎসকের ফির নাম করে তার কাছে ৪৫০০ টাকা চাওয়া হয়।

তিনি নিজে চিকিৎসক পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো লাভ হয়নি। পরে করোনা টেস্ট না করেই বাসায় ফিরে গেছেন ডা. সাদিয়া আফরিন।

হঠাত্ বন্ধ, হঠাত্ খোলা বিভ্রান্ত সাধারণ মানুষ

২৩ মে, ২০২০, ইত্তেফাক

কখনো ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে পুলিশের চেকপোস্টে ব্যাপক কড়াকড়ি, পায়ে হেঁটেও পার হওয়া যাবে না। আবার কখনো খুলে দেওয়া হচ্ছে চেকপোস্ট। আকর্ষিক এসব ঘোষণায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই ধরনের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনাও হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দিনভর ছিল ব্যক্তিগত গাড়িতে বাড়ি ফেরার সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি। একজন লিখেছেন, ‘এ দেশটা কি বাড়ি, ঝাড়ি আর গাড়িওয়ালাদের’? আরেকজন লিখেছেন, ‘কষ্ট করে গরীব মানুষ বাড়ি ফেরার পর কি ধনীদের জন্য উন্মুক্ত করা হলো গাড়িতে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ। তাহলে গণপরিবহন আটকে রেখে লাভ কি?’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) ওয়ালিদ হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, ‘পুলিশ সদর দফতর থেকে আমাদের কাছে নির্দেশনা এসেছে যারা বাড়ি যেতে চান, তারা বাড়ি যেতে পারবেন। পুলিশ পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় চেকপোস্টও থাকবে। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।’ তাহলে কীভাবে মানুষ বাড়ি যাবে? যাদের নিজস্ব যানবাহন নেই তারা কি তাহলে বাড়ি যাবে না? জবাবে তিনি বলেন, আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসে বাড়ি যাওয়ার পথে কাউকে বাধা দেওয়া যাবে না। অর্থাত্ গণপরিবহন ছাড়া অন্য যে কোনোভাবে চাইলে কেউ বাড়ি যেতে পারবেন। এই সিদ্ধান্তের পর মধ্যরাতেই পুলিশ রাজধানীবাসীদের প্রবেশ এবং বাইরে যাওয়ার চেকপোস্টগুলো উন্মুক্ত করে দেয়। তবে গতকাল সকালে এই সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়ার পর রেন্ট-এ-কারের ভাড়া কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ৫ হাজার টাকা ভাড়া ১৫ হাজার টাকা দিয়েও গাড়ি মিলছে না রাজধানীতে। অনেকেই নিজের এলাকা থেকে উচ্চমূল্যে ভাড়া করে গাড়ি ঢাকায় এনে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করছেন।

ঢাকার সাবেক এমপি মকবুলের করোনায় মৃত্যু

২৪ মে ২০২০, সমকাল

করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আওয়ামী লীগের নেতা ও ঢাকার সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মকবুল হোসেন। রোববার রাত ৯টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ছুটি বাড়ছে না, ৩১ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস

২৭ মে ২০২০, সমকাল

করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঘোষণা করা সাধারণ ছুটি আর বাড়ছে না। তবে সীমিত আকারে চালু হচ্ছে অফিস, বন্ধ থাকছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গণপরিবহন চলবে না, তবে কর্তৃপক্ষ চাইলে নিয়ম মেনে ফ্লাইট চালাতে পারবে।

৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত এসব বিধি কার্যকর হচ্ছে বলে বুধবার সমকালকে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাধারণ ছুটি আর বাড়ছে না। তবে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত আকারে চালু হবে সরকারি, আধা-সরকারি স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে অর্থননৈতিক কর্মকাণ্ডও সীমিত আকারে চালু হবে। নাগরিক জীবনে সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মানুষের চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আগুন, রোগীর মৃত্যু

মে ২৭, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আগুনে পাঁচ রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২৭ মে) দিবাগত রাতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ও মৃত্যু ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার কামরুল ইসলাম। তিনি জানান, বুধবার রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে আগুন লাগার পর বারিধারা ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। করোনা ইউনিটে থাকা পাঁচ জন করোনা আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন।

সোহেল এফ রহমানও বিমান ভাড়া করে সস্ত্রীক গেলেন লন্ডনে

২৯ মে ২০২০, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় উড়োজাহাজ ভাড়া করে যুক্তরাজ্যে গেছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান।

শুক্রবার একটি বিশেষ ফ্লাইটে সোহেল এফ রহমান এবং তার স্ত্রী লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হন বলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান মো. মফিদুর রহমান জানিয়েছেন।

সোহেল এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সালমান রহমানের বড় ভাই।

সালমান এফ রহমানের বেয়াই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানও বৃহস্পতিবার ভাড়া করা একটি বিমানে স্ত্রীসহ যুক্তরাজ্যে গেছেন।

বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা: খরচ বহন করতে হবে রোগীকেই

৩০ মে ২০২০, সমকাল

জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে শয্যা ফাঁকা নেই বললেই চলে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে। সেখানে ৫০ ও এর বেশি শয্যাসংখ্যার প্রত্যেকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে বলা হয়েছে।… …

করোনার চিকিৎসার সঙ্গে যেসব বেসরকারি হাসপাতাল যুক্ত হবে, সেগুলোর ব্যয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই। সরকারিভাবে ব্যয় বহন করা হবে, নাকি রোগী নিজেই ব্যয় বহন করবে, সে বিষয়ে কোনো গাইডলাইন নেই। ফলে প্রত্যেকটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের নিজের পকেট থেকে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হবে। সেক্ষেত্রে দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের পক্ষে চিকিৎসা গ্রহণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।

এদিকে, বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা ব্যয় আক্রান্ত ব্যক্তিকে বহন করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফোকাল পারসন ও অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান। সমকালকে তিনি বলেন, করোনা চিকিৎসার সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। তাছাড়া আক্রান্তদের বেশিরভাগেরই সংক্রমণ মৃদু। তাদের তেমন ওষুধের প্রয়োজন হয় না। সুতরাং ব্যয় বেশি হবে না। শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য সমস্যা থাকলে আইসিইউর প্রয়োজন হবে। তবে এটি লাগবে সীমিতসংখ্যক মানুষের। এর বাইরে অন্যান্য চিকিৎসা ব্যয় খুব একটা বেশি নয়।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের মাকে ভর্তি নিলো না চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতাল!

৩০ মে ২০২০, যমুনা টিভি অনলাইন

করোনা আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা করাতে না পেরে চট্টগ্রাম ছাড়তে বাধ্য হলেন স্বয়ং বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির! শুক্রবার রাতে তিনি অসুস্থ মাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন এবং আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করান।

ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির এবং তা মা রাজিয়া কবির দু’জনই করোনা আক্রান্ত। পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের যিনি হর্তাকর্তা, স্বয়ং তিনি এবং তার পরিবার পেলেন না যথাযথ চিকিৎসা। এ নিয়ে চট্টগ্রামে চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা। তাদের যদি এ দুরবস্থা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা, সে প্রশ্ন এখন চট্টগ্রামের সব মানুষের।

করোনায় ছেলের মৃত্যুর পর উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন মা-বাবা

মে ৩০, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

চাঁদপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে ছেলের মৃত্যুর কয়েকদিন পর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন তার মা ও বাবা। ১৯ মে নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় ঢাকা ফেরত মানিক সরকারের। ২৮ মে মৃত্যু হয় তার বাবা মজিবুর রহমান বাচ্চু সরকারের (৮০) এবং শনিবার (৩০ মে) মারা গেছেন মা ফজিলুতুন্নেছা (৬৫)। মৃত মজিবুর রহমান বাচ্চু সরকার কচুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ছিলেন। তাদের বাড়ি কচুয়া উপজেলার গোহাট উত্তর ইউনিয়নের পালগিরী গ্রামে।

কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দফতর সম্পাদক কবির হোসেন জানান, মানিকের মা-বাবা গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। করোনা সংক্রমণ-রোধে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর মানিক স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামে এসে দু’মাস বাড়িতে থাকেন। এরপর অফিস থেকে ফোন দেওয়ার পর তিনি ঢাকা যান। পরিবারের অন্যরা বাড়িতেই ছিলেন। ঢাকায় অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতে নিয়ে আসার দু’দিন পর তার মৃত্যু হয়। সাত দিন পর বৃহস্পতিবার (২৮ মে) সকালে তার বাবা মজিবুর রহমান মারা যান। আর ১০ দিনের মাথায় শনিবার (৩০ মে) মারা গেলেন তার মা।

কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ নেই ৩৯ সরকারি হাসপাতালে

জুন ০৩, ২০২০, বণিক বার্তা

কভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় রোগীদের লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই ৩৯ সরকারি হাসপাতালে। ফলে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হলেও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।

সম্প্রতি লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের জন্য ন্যাশন্যাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে একটি চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। চিঠিতে বলা হয়েছে, গণপূর্ত বিভাগ নির্মিত সরকারি হাসপাতালগুলোয় মেডিকেল গ্যাস পাইপলাইন সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক নেই। ফলে কভিড-১৯ রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের জন্য এখনো যেসব হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করা হয়নি, সেগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের প্রয়োজনে গ্যাস সিস্টেম লাইন সম্প্রসারণের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।

এ ৩৯ হাসপাতালের তালিকায় নাম রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও। এখানকার করোনা ইউনিটে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই। আছে শুধু আইসিইউতে। একই অবস্থা শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেও। সেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ আছে শুধু আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটার ও ডায়ালাইসিস কেন্দ্রে। মুগদা জেনারেল হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও সেটি পুরোপুরি কার্যকর নয়।

করোনায় রানা প্লাজার মালিক খালেকের মৃত্যু

০৪ জুন ২০২০, প্রথম আলো

ঢাকার সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক আব্দুল খালেক করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে নিজের বাসায় তিনি মারা যান। এ নিয়ে এই উপজেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো নয়জনে।

সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সহস্রাধিক মানুষ মারা যান।আহত হন কয়েক হাজার মানুষ। হতাহতের বেশির ভাগই ছিলেন বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক। ওই ঘটনায় দায়ের করা একাধিক মামলার আসামি ছিলেন আব্দুল খালেক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জামিনে ছিলেন।তাঁর ছেলের নাম সোহেল রানা। তিনিও এ-সংক্রান্ত মামলার আসামি।

একটি আইসিইউ বেডের জন্য হাহাকার!

জুন ০৫, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কান পাতলেই এখন শোনা যায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য স্বজনদের হাহাকার। সাধারণ মানুষের এই আর্তিতে বিব্রত হন চিকিৎসকরা। কেবল চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না তাদের। আইসিইউ বেডের অভাবে চোখের সামনে রোগীকে মরতে দেখার চিত্র এখন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে।.. …

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড রয়েছে ৩৯৯টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ২১৮টি। ঢাকা বিভাগের অন্য জেলায় রয়েছে ৪৭টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৪টি, রাজশাহী বিভাগে ২৮টি, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ১৮টি করে, সিলেট বিভাগে ১৬টি এবং রংপুর বিভাগে রয়েছে ১৩টি আইসিইউ বেড।

রাজধানীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ২৬টি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭টি, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ১০টি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪৮টি, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১৬টি, রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় ৩টি করে, সাজিদা ফাউন্ডেশনে ৪টি, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০টি, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল এবং মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতালে ৫ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি ইমপালস হাসপাতালে রয়েছে ১৪টি আইসিইউ।

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার বণিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে আইসিইউ বেড ফাঁকা থাকে না বললেই চলে। একেকটি বেডের জন্য অপেক্ষায় থাকেন একাধিক রোগী। কেউ সুস্থ হয়ে কেবিনে গেলে কিংবা মারা গেলে অপেক্ষারতদের মধ্য থেকে তুলনামূলক যার অবস্থা বেশি নাজুক তাকেই নিয়ে আসা হয় আইসিইউতে।’

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আসাদুল মজিদ নোমানের দাবি, এখানে প্রতিটি আইসিইউর জন্য ভীষণ চাপ থাকে। নিদেনপক্ষে একেকটি বেডের জন্য অপেক্ষায় থাকেন পাঁচজন করে। তারা কিছুক্ষণ পরপর বেড খালি হয়েছে কিনা জানতে চান।

ডা. আসাদুল মজিদ নোমানের কথায়, ‘কী সব মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যে আমরা যাচ্ছি জানেন না। একজন রোগীর ডেথ সার্টিফিকেট লেখা শেষ না হতেই আরেকজনকে আনা হয়। তার অবস্থা এতই নাজুক ছিল যে, আইসিইউতে আনার পর তার চিকিৎসা শুরু করতে না করতেই মারা গেছেন।’

যুগ্ম-সচিব পদে ১৩২ কর্মকর্তার নজিরবিহীন পদোন্নতি

০৫ জুন ২০২০, সমকাল

করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেই প্রশাসনের ১৩২ উপসচিবকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। তাদের মধ্যে ১২৩ জনের নামে শুক্রবার ছুটির দিনে নজিরবিহীনভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে জেলা প্রশাসক (ডিসি) রয়েছেন ৬ জন। আর ৯ জন লিয়েনে থাকায় তাদের নামে প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।

হাসপাতাল ঘুরে পেলেন না চিকিৎসা, কোটিপতি ব্যবসায়ীর মৃত্যু

৫ জুন ২০২০, আমাদের সময়

সরকারি-বেসরকারি চার হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন সিলেটের কোটিপতি ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন খোকা (৫৪)। তার এমন মৃত্যুতে নিন্দা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে শুরু তার এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

আজ শুক্রবার ভোরে মৃত্যু হয় নগরীর বন্দরবাজারের আরএল ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী ও কুমারপাড়ার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন খোকার। মৃত্যুর আগে প্রথমে তাকে নগরীর সোবাহানীঘাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় নর্থ ইস্ট হাসপাতালে। সেখান থেকে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে খোকাকে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। সবশেষে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু কোথাও চিকিৎসা পাননি খোকা।

হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যু, সিলেটে ‘কফিন মিছিল’

৬ জুন ২০২০,মানবজমিন

হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় সিলেটে প্রতিবাদী ‘কফিন মিছিল’ হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে শনিবার বিকেলে এই মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি দরগাহ এলাকা থেকে শুরু হয়ে নগরীর চৌহাট্রা পয়েন্টে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

মিছিলের আয়োজক পাবলিক বয়েজ’র সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী জানান- চিকিৎসা পাওয়া নাগরিক অধিকার। কিন্তু করোনার সময়ে সিলেটের সরকারী, বেসরকারী হাসপাতালে ঘুরেও রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না। এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গেইট পর্যন্ত খুলেনি। এ কারনে আমরা সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘প্রতিকী কফিন’ মিছিল করেছি।

হাসপাতালে শয্যা আইসিইউ সংখ্যায় গরমিল

০৮ জুন ২০২০, প্রথম আলো

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) যে সংখ্যা দিচ্ছে, বাস্তবে রয়েছে তার চেয়ে অনেক কম। গোঁজামিল দিয়ে শয্যা ও আইসিইউর সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে।

গত শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ৯৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানীতে ৭ হাজার ২৫০টি।

অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর নাম, শয্যা, আইসিইউ ও ডায়ালাইসিস শয্যার তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এখনো প্রস্তুত না হওয়া হাসপাতালের নাম ও শয্যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বুলেটিনের তালিকায় যোগ করা হয়েছে। বাস্তবে শয্যা আছে ৫ হাজারেরও কম। বলা হচ্ছে, আইসিইউ রয়েছে ২১৮টি। এর মধ্যে চালু হয়নি এমন আইসিইউর সংখ্যাও যুক্ত করা হয়েছে। আদতে আইসিইউ রয়েছে ১৪০টিরও কম। আবার এসব আইসিইউর সব কটি সচল নেই।

চট্টগ্রামে অক্সিজেনের দুর্ভিক্ষ

৮ জুন, ২০২০, দেশ রুপান্তর

চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ডেডিকেট হাসপাতালগুলোর বেশিরভাগেরই নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পুরো জেলায় অক্সিজেনের জন্য চলছে হাহাকার। তীব্র শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্বজনদের। সংশ্লিষ্টরা সংকট সমাধানের আশ্বাস দিলেও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেলায় স্বাস্থ্যসেবার হ-য-ব-র-ল অবস্থা। সমন্বয়হীনতার কারণেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট চরমে পৌঁছেছে।

চট্টগ্রামে সরকারিভাবে জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও বিআইটিআইডিতে করোনা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি উদ্যোগে ফিল্ড হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল চালু হলেও রয়েছে নানা সংকট। আর বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা হলি ক্রিসেন্ট সরকারকে বুঝিয়ে দিলেও জনবল সংকটে ৬টি আইসিইউ চালু করা সম্ভব হয়নি।

চমেকে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা থাকলেও রোগীর চাপে ত্রাহি অবস্থা। জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারে সাপোর্ট দেওয়া হলেও তা অপ্রতুল। ফলে অক্সিজেনের অভাবে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। করোনা নিয়ে গত ২ জুন জেনারেল হাসপাতালে মারা যান প্রবীণ আইনজীবী কবির চৌধুরী। তার ছেলে শফি উদ্দিন কবির আবিদ বলেন, ‘বাবাকে বাইরে থেকেও অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে দিয়েছি। ৩০ মে রাতে অক্সিজেন স্যাচুরেশন নেমেছিল ৭০ ও ৬৫। পরে দুজন রোগী থেকে এনে সাপোর্ট দেওয়া হয়। একটি সিলিন্ডারে ৪ ঘণ্টার বেশি যায় না। হাসপাতালের সিলিন্ডার সকাল ১০টার আগে পাওয়া যায় না। অবস্থা খারাপ হলে ৩১ মে রাতে বাবাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ২ জুন তার মৃত্যু হয়।’ গত ১ জুন ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা না পেয়ে মারা যান স্বপন চক্রবর্ত্তী। এখানে সিলিন্ডারে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হলেও তীব্র সংকট রয়েছে। বিআইটিআইডির পরিচালক ডা. এমএ হাসান চৌধুরী বলেন, ‘অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদাপত্র দিয়েছি। এলে সংকট কেটে যাবে।’… …

তিন হাসপাতাল ঘুরে’ মারা গেলেন বরিশালের চিকিৎসক

০৯ জুন ২০২০, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বরিশালের একজন চিকিৎসক ‘করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে রাজধানী ঢাকার তিন হাসপাতাল ঘুরে’ মারা গেছেন। আনোয়ার হোসেন নামে এই চিকিৎসক সোমবার রাত পৌনে ৩টায় ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বেসরকারি এএমজেড হাসপাতালে আইসিইউতে নেওয়ার পর মারা যান বলে তার ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।

বরিশালের বেসরকারি রাহাত-আনোয়ার হাসপাতালের চেয়ারম্যান ছিলেন অর্থপেডিক সার্জন আনোয়ার।… …

তিন হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় আ. লীগ নেতার মৃত্যু

জুন ০৯, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

চট্টগ্রামে স্ট্রোক করার পর তিনটি হাসপাতাল থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিনা চিকিৎসায় এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে স্ট্রোক করার পর হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে দুপরের দিকে মারা যান তিনি।

মৃত সফিউল আলম সগীর নগরীর বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।.. ..

চট্টগ্রামে করোনার চেয়ে উপসর্গে মৃত্যু চার গুণ বেশি

১০ জুন, ২০২০, আজাদী

করোনাভাইরাসের চেয়ে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা চার গুণ বেশি। যে পরিমাণ মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি মানুষ মরছেন উপসর্গে। একদিনে ১৯ জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে লাশের সারি। সরকারি হিসেবে করোনায় আক্রান্তদের নাম তালিকাভুক্ত হলেও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মানুষের নাম-ঠিকানা কোথাও নেই। চট্টগ্রামে গত ক’দিনে ১০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৪৯৮ জনের লাশ দাফন ও সৎকার হয়েছে।.. ..

মে মাসে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ দাফন বেড়েছে ঢাকায়, নারায়ণগঞ্জে দ্বিগুণ

জুন ১০, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

রাজধানীতে চলতি বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় মে মাসে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬১ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি লাশ দাফন হয়েছে। আর রাজধানী পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জে এ সংখ্যা দ্বিগুণ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯টি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনাধীন ৩৩টি কবরস্থান ও তিনটি শ্মশানের হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য পাওয়া গেছে। করোনার কারণে এমনটা হতে পারে বলে মনে করেন কবরস্থানগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ঢাকার দুই সিটির অধীন ৯টি কবরস্থানের হিসাব বলছে, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলের গড় হিসাবের তুলনায় মে মাসে কবরস্থানে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লাশ দাফন করা হয়েছে।

মে মাসে ৯টি কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে দুই হাজার ৪২২ জনের। এপ্রিলে এ সংখ্যা ছিল এক হাজার ৫২১ জন, মার্চে এক হাজার ৪৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৪৬১ জন এবং জানুয়ারিতে দাফন করা হয় এক হাজার ৫২৪ জনকে। এই চার মাসের গড় হিসাবে দেখা যায়, শুধু মে মাসে এর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬১ দশমিক ৮৯ শতাংশ লাশ বেশি দাফন হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে রাজধানীতে লাশ দাফন হয়েছে মোট ৮ হাজার ৪০৫ জনের। আর প্রথম চার মাসে দাফন হয়েছে ৫ হাজার ৯৮৩ জনের লাশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ৯ কবরস্থানের মধ্যে সাতটি ঢাকা উত্তর এবং দুইটি ঢাকা দক্ষিণের। ঢাকা উত্তর সিটির কবরস্থানগুলোর মধ্যে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থান এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া লাশ দাফনের অনুমতি রয়েছে।

রায়েরবাজার বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে জানুয়ারিতে ১৬২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৮ জন, মার্চে ১৫৬ জন, এপ্রিলে ১৭৪ জন এবং মে মাসে ৫৫৬ জনের লাশ দাফন করা হয়। এর মধ্যে করোনায় মারা যাওয়া রোগী ছিল ৩৮৮ জন। জুন মাসের প্রথম ৮ দিনে এখানে ১৮৫ জনের লাশ দাফন হয়েছে। এরমধ্যে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৮১ জন। এই কবরস্থানে স্বাভাবিক সময়ে গড়ে ১৫০-১৭৫ জনের লাশ দাফন হতো বলে জানিয়েছেন কবরস্থানটির সিনিয়র মোহরার আব্দুল আজিজ।

এদিকে, খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানের মোহরার ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এই কবরস্থানে জানুয়ারিতে ৪১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৪ জন, মার্চে ৫২ জন, এপ্রিলে ৩৪ জন এবং সর্বশেষ মে মাসে ৬৪ জনের লাশ দাফন করা হয়। গত পাঁচ মাসে মোট দাফন করা হয় ২২৫ জনের লাশ। এরমধ্যে ১৯১ জন ছিলেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ।… …

সন্তানসম্ভবা নারী দিন ঘুরে হাসপাতালে সিট পেলেও, মারা গেলেন আইসিইউ না পেয়ে

জুন ১০, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

শ্বাসকষ্ট নিয়ে পাঁচ দিন ঘুরে হাসপাতালে ঠাঁই হলেও আইসিইউ’র অভাবে চট্টগ্রামে মারা গেলেন এক সন্তানসম্ভবা নারী। ফাতেমা আক্তার মুক্তা (৩০) নামের এই নারীর বাড়ি চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকায়। দুই সন্তানের জননী ফাতেমাকে আজ বুধবার ফৌজদারহাটে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।.. …

৪৭ জেলায় নেই আইসিইউ, জেলা হাসপাতালগুলোতে নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন ব্যবস্থা

জুন ১১, ২০২০,  ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী এবং বিভাগীয় শহরের বাইরে বেড়ে চলেছে গুরুতর রোগীর সংখ্যা। আর জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭টিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সুবিধা নেই। এ ছাড়াও, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় হাসপাতালগুলোর ভেন্টিলেশন ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার এক নির্মম চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।

কোভিড-১৯ রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যায় আইসিইউ এবং অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা উভয়ই প্রয়োজনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ জেলা হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ৯০ শতাংশ হাসপাতালে আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাস (এবিজি) এনালাইজার নেই। যা রোগীর রক্তের গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে প্রয়োজন হয়। ৮৯ শতাংশ হাসপাতালে অক্সিজেনের কনসেনট্রেটর নেই, যা অক্সিজেনের মসৃণ ও উচ্চ প্রবাহ নিশ্চিত করে।

এ ছাড়াও, ৯৬ শতাংশ হাসপাতালের কোনো যান্ত্রিক ভেন্টিলেটর নেই, যা রোগী শ্বাস নিতে না পারলে শ্বাসযন্ত্রের কাজ করে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৯৫ শতাংশ জেলা হাসপাতালে বিপিএপি ও সিপিএপি নেই এবং ৩০ শতাংশ হাসপাতালে অক্সিজেন মাস্ক নেই।… …

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আর নেই

১৩ জুন ২০২০, প্রথম আলো অনলাইন

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শনিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে তাঁর মৃত্যুর কথা ঘোষণা করা হয়। টানা দুই সপ্তাহ হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চলে গেলেন তিনি। রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।

রক্তচাপজনিত সমস্যা নিয়ে ১ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। ওই দিনই তাঁর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ৪ জুন তাঁর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও ৫ জুন ভোরে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়। এরপর দুই দফায় ৭২ ঘণ্টায় করে পর্যবেক্ষণে রাখে মেডিকেল বোর্ড। এর মধ্যেই পরপর তিনবার নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি তাঁর শরীরে।

কয়েক দিন স্থিতিশীল থাকলেও গত বৃহস্পতিবার রক্তচাপ অস্বাভাবিক ওঠানামা করতে থাকে নাসিমের। এরপর গতকাল শুক্রবার পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকে। হৃদ্‌যন্ত্রে জটিলতা দেখা দেয়।

মোহাম্মদ নাসিম বর্তমান সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মুখপাত্রও তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

করোনায় মৃত্যুর তালিকায় মন্ত্রী-সাংসদ, বাড়ছে উদ্বেগ

১৫ জুন ২০২০, প্রথম আলো

করোনাভাইরাস কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না। আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন মন্ত্রিসভার সদস্য, সাংসদসহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারাও। এত দিন চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ তুলনামূলক বেশি আক্রান্ত হচ্ছিলেন। কিন্তু এখন বিশিষ্টজনদের আক্রান্ত হওয়া এবং কারও কারও মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। নিজের ও পরিবারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।

.. … মন্ত্রিসভার সদস্য ও সাংসদদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর, যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সাংসদ রণজিত কুমার রায়, নওগাঁ-২ আসনের সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সাংসদ এবাদুল করিম, জামালপুর-২ আসনের সাংসদ ফরিদুল হক খান, চট্টগ্রাম-১৬ আসনের সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। তাঁদের মধ্যে নওগাঁর শহীদুজ্জামান সরকার ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।

গত রোববার মারা গেলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাংসদ মোহাম্মাদ নাসিম এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। এর আগে করোনায় মারা গেছেন সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আনোয়ারুল কবির, সংরক্ষিত মহিলা (বগুড়া-জয়পুরহাট) আসনের সাবেক সাংসদ কামরুন্নাহার ও সাবেক সাংসদ হাজি মকবুল হোসেন।

এখন পর্যন্ত সরকারের তিনজন মন্ত্রী ও সাত সাংসদ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন এক মন্ত্রী ও এক সাংসদ।

সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে মারা গেছেন সাবেক সচিব এম বজলুল করিম, অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়া অতিরিক্ত সচিব তৌফিকুল আলম, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ফখরুল কবির, উপকর কমিশনার সুধাংশু কুমার, রাজস্ব কর্মকর্তা খোরশেদ আলম, খাদ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা উৎপল হাসান, দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক জালাল সাইফুর রহমান প্রমুখ।

গত শনিবার দিবাগত রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নতুন সচিব আবদুল মান্নানের স্ত্রী কামরুন নাহার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় মারা গেছেন সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর স্ত্রী বেগম সাহান আরা আবদুল্লাহ।

শিক্ষাবিদদের মধ্যে মারা গেছেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা নিলুফার মঞ্জুরসহ কয়েকজন। এ ছাড়া করোনার কাছে হার মেনেছেন ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য নাজমুল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাকিল উদ্দিন আহমেদ।

এ ছাড়া পানি বিশেষজ্ঞ এম এ সামাদ, এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম, পপুলার গ্রুপের চেয়ারম্যান তাহেরা আক্তার, নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী খোকন সাহা, ব্র্যাকের পরিচালক আফতাব উদ্দীন আহমদ, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা মো. ইমামুল কবীর প্রমুখ মারা গেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম ব্যবস্থাপক আশরাফ আলী, রূপালী ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক সহিদুল ইসলাম খান, সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার মাহবুব এলাহী, সিটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের মুজতবা শাহরিয়ার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু সাঈদসহ বেশ কয়েকজন ব্যাংকার মারা গেছেন।

বিভিন্ন বাহিনীতে আক্রান্তের অবস্থা

সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোতে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ২৪৭ জন সদস্য ও তাঁদের পরিবারের লোকজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পুলিশ বাহিনীতে। গতকাল রোববার পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৩১৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের সদস্য আছেন ১ হাজার ৯৪৯। এ পর্যন্ত পুলিশের ২৪ জন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, গতকাল পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) আছেন ৯ হাজার ৩৯৬ পুলিশ সদস্য। আর আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্নকরণ) ৩ হাজার ২১৮ জন। আক্রান্ত সদস্যদের মধ্যে ৩ হাজার ৭৩০ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে জানান, আক্রান্ত সদস্যদের চিকিৎসার জন্য রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল ছাড়াও একটি বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য ১১টি হোটেলও ভাড়া করা হয়েছে।

সশস্ত্র বাহিনী সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু থেকে এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সদস্য এবং তাঁদের পরিবার মিলে ৩ হাজার ৪৭৭ আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। এ সময় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৩৮ জন।… …

দেশে পরীক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাপান-কোরিয়া

জুন ১৬, ২০২০, বণিক বার্তা

বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে জাপান ও কোরিয়া। দেশে পরীক্ষা চালিয়ে করোনা নেগেটিভ পাওয়া কয়েকজনের পরীক্ষা চালিয়ে ফলাফল পজিটিভ পেয়েছে দেশ দুটি। এ কারণে দেশ দুটিতে বাংলাদেশী নাগরিকদের গ্রহণের বিষয়ে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক অনলাইন সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ কথা জানান।… …

গণস্বাস্থ্যের কিট: অ্যান্টিবডি শনাক্তে ৭০% কার্যকর

১৮ জুন ২০২০, প্রথম আলো

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট কোভিড–১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যান্টিবডি শনাক্তে ৭০ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষক দল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে এ কথা বলেছে। গতকাল বুধবার বিএসএমএমইউ আনুষ্ঠানিকভাবে এই মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং সংক্ষিপ্তসার গণমাধ্যমে পাঠায়।

বিএসএমএমইউর গবেষক দল বলেছে, এই কিট কোভিড প্লাজমা বিতরণ, কোয়ারেন্টিনের (সঙ্গনিরোধ) সমাপ্তির সময় নির্ধারণ এবং লকডাউন তুলে নেওয়ার ব্যাপারে ব্যবহার করা যাবে। তবে কোভিড–১৯ রোগের উপসর্গ নিয়ে আসা ব্যক্তিদের রোগ শনাক্তকরণে এই কিট কার্যকর নয়। অর্থাৎ এই কিট দিয়ে অ্যান্টিজেন শনাক্ত করা যাবে না।.. ..

করোনায় চিকিৎসক মৃত্যুর দায় মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের: বিএমএ

২১ জুন ২০২০, মানবজমিন

করোনাভাইরাসে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী মৃত্যুর দায় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এড়াতে পারে না বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেককে লেখা এক চিঠিতে সংগঠনটির সভাপতি ও মহাসচিব এই অবস্থান ব্যক্ত করেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসকদের চিকিৎসায় আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মানসম্পন্ন হাসপাতাল নির্ধারণেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিএমএর সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব মো. এহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরন্তর ও নিবিড়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।”

এতে অভিযোগ করা হয়, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে ‘মানহীন পিপিই, মাস্ক, জোড়াতালি দিয়ে অবৈজ্ঞানিকভাবে দ্রুত তৈরি করা কভিড আইসিইউ, অপর্যাপ্ত ট্রেনিং, রোগীদের খামখেয়ালিপনা, স্বল্প পরিসরে কভিড, নন-কভিড চিকিৎসা”র কারণে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী স্বল্পতা, থাকা-খাওয়ার অব্যবস্থাসহ এসব বিষয়ে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের ‘নির্লিপ্ততা, উদাসীনতা, অদূরদর্শীতা, সমন্বয়হীনতা”র কারণে এখন পর্যন্ত ১১০০ চিকিৎসকসহ ৩৫০০ স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। ৪৪ জন চিকিৎসক এবং নার্সসহ ৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন।

বিএমএ’র সভাপতি ও মহাসচিব বলেন, ‘এহেন জাতীয় ক্ষতির জন্য অনেকাংশে আপনার মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর দায় এড়াতে পারে না। এহেনও আচরণে আমরা ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।

স্বাস্থ্য বিভাগকে ‘মহা আজগুবি বিভাগ’ বললেন সাংসদ একরামুল

২২ জুন ২০২০, প্রথম আলো

স্বাস্থ্য বিভাগকে এবার ‘মহা আজগুবি বিভাগ’ বলে মন্তব্য করেছেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যও।

আজ সোমবার বিকেলে সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লাইভ ভিডিওতে এসে এ মন্তব্য করেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমি দু-তিন দিন আগে বলেছিলাম, স্বাস্থ্য বিভাগ একটা আজগুবি বিভাগ, কিন্তু এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা আজগুবি নয়, মহা আজগুবি বিভাগ।’

সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ওই লাইভ ভিডিও করেন। সন্ধ্যা সাতটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁর ভিডিওটি প্রায় ছয় হাজারবার শেয়ার হয়েছে এবং প্রায় দুই হাজার মানুষ মন্তব্য করেছেন। ১৫ জুন দুপুরেও একইভাবে ফেসবুকের লাইভে এসে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা সমালোচনা করেন। ওই ভিডিওতেও সাংসদ একরামুল বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আসলে কে চালাচ্ছে—সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

আজকের লাইভ ভিডিওতে সাংসদ একরামুল বলেন, ‘আজ নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের করোনা পরীক্ষা বন্ধ কিটের অভাবে। এই কিটের অভাবের কারণে মানুষের মনে একটা হাহাকার বিরাজ করছে।’ সাংসদ বলেন, ‘শুনেছি, আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই নাকি বলেছেন দেশে কিটের সংকটের কথা। কিন্তু আমি যত দূর জানি, তিন-চারটি কোম্পানি, ব্যবসায়ী প্রায় ১০ লাখ কিট এনে রেখেছে। তারা দিতে পারছে না “মিঠু সিন্ডিকেটের” কারণে।’ তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিঠু সিন্ডিকেট যতক্ষণ পর্যন্ত ভাঙা না যাবে, তত দিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কখনো ভালো অবস্থানে থাকবে না।… …

করোনার চিকিৎসাসেবা ঢাকার বাইরে অপ্রতুল

২৩ জুন ২০২০, প্রথম আলো

সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকার বাইরে করোনা রোগী বাড়ছে। করোনা রোগীর চিকিৎসাসেবা অনেকটাই ঢাকাকেন্দ্রিক। রাজধানীর বাইরে অনেক সেবা অপ্রতুল, কিছু ক্ষেত্রে সেবা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা চিকিৎসায় ঢাকার বাইরে মনোযোগ কম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিসের কোনো ব্যবস্থা রাজধানীর বাইরে নেই। ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলার করোনা রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা মাত্র সাতটি। ২০৫টি আইসিইউ শয্যা ঢাকা শহরে ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। করোনা রোগীর শয্যাসংখ্যাও অনেক জেলায় অপ্রতুল।.. …

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় সব বিভাগেই প্রয়োজনের চেয়ে শয্যা কম। মাস দেড়েক আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটি হাসপাতালবিষয়ক পরামর্শ তৈরি করার সময় বলেছিল, বরিশাল বিভাগের জন্য কমপক্ষে ৮৯৮টি শয্যা দরকার হবে। বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার জন্য তারা ৬ হাজার ৬১২টি শয্যার প্রস্তাব করেছিল। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কোন কোন হাসপাতালে এসব শয্যা নির্দিষ্ট থাকবে, তা-ও কমিটি বলে দিয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই ৬টি বিভাগে ৪ হাজার ২০০ শয্যার ব্যবস্থা করেছে। অর্থাৎ সুপারিশের চেয়ে ২ হাজার ৪১২টি শয্যা কম।… …

ময়মনসিংহ বিভাগে আইসিইউ সবচেয়ে কম। এই বিভাগের শুধু ময়মনসিংহ সদরের একটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য সাতটি শয্যা আছে। বাকি তিন জেলায় কোনো আইসিইউ সেবা নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশের ৪৯টি জেলায় করোনা রোগীদের জন্য কোনো আইসিইউ শয্যা নেই। বিভাগীয় শহরগুলোতেই মূলত এই সেবার ব্যবস্থা আছে।

রাজধানী ঢাকায় ১৫৮টি ও ঢাকা বিভাগের ৬টি জেলায় ৪৭টি আইসিইউ শয্যা আছে করোনা রোগীদের জন্য। অর্থাৎ মোট আইসিইউ শয্যার ৬০ শতাংশ ঢাকার রোগীদের জন্য। দেশের বাকি রোগীদের জন্য ৪০ শতাংশ আইসিইউ।… …

৬৪ জেলার ৪৩টিতেই করোনা পরীক্ষাকেন্দ্র নেই

২৩ জুন ২০২০, প্রথম আলো

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৩টিতেই করোনা পরীক্ষাকেন্দ্র নেই। এসব জেলা থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার জন্য কাছের জেলায়, কিছু ক্ষেত্রে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। এতে পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে চাপ বাড়ছে, তৈরি হচ্ছে নমুনাজট। অন্যদিকে পরীক্ষার ফল জানতে সময়ও বেশি লাগছে। অনেক ক্ষেত্রে সংগৃহীত নমুনা সঠিক পদ্ধতিতে পরিবহন না করায় তা অকার্যকর বা বাতিলও হচ্ছে।

বর্তমানে দেশের ৬২টি কেন্দ্রে কোভিড-১৯ শনাক্ত–করণের পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩২টি এবং ঢাকার বাইরে ৩০টি। এর বাইরে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষা করা যায়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত দেড় মাসে ঢাকায় নতুন যুক্ত হওয়া ১৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টিই বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বেসরকারিভাবে পরীক্ষা করাতে সরকার নির্ধারিত খরচ সাড়ে তিন হাজার টাকা। ফলে সরকারি কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার চাপ বাড়ছে।…

করোনা শনাক্তকরণের নমুনা সংগ্রহের পর সেটি ভাইরাস ট্রান্সপোর্ট মিডিয়ায় (ভিটিএম) ভরে কুল বক্সে (শীতল বক্স) করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠাতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ভিটিএম না থাকায় সাধারণ স্যালাইনে সোয়াব স্টিক ডুবিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। দূরের পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে স্যালাইন বের হয়ে নমুনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বরগুনা সদর হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বরগুনা থেকে সংগ্রহ করা নমুনা ঢাকার মহাখালীর একটি বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। তিনবার বরগুনার শতাধিক নমুনা বাতিল করেছে ঢাকার প্রতিষ্ঠানটি। নমুনা পাঠিয়ে ফলাফল পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে।… …

দামে চড়া, মানে খাটো পিপিই হাসপাতালে যাচ্ছেই

শেখ সাবিহা আলম, ঢাকা

২৩ জুন ২০২০, প্রথম আলো

সুরক্ষা পোশাকগুলো চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে বাঁচানোর মতো মানের নয়। তবু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প এমন এক লাখের বেশি পিপিই কিনেছে। প্রকল্পের পরিচালক চলতি মাসে ৬৩ জেলায় ১ হাজারটি করে এই পিপিই পাঠিয়ে সেরেছেন।

এগুলো সব প্রথম ধাপের পিপিই। হাসপাতালের জন্য পণ্য ও সেবার মান নির্ধারণ করে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির নির্দেশনা বলছে, প্রথম ধাপের পিপিই হালকা ঝুঁকির পরিবেশের জন্য। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি গুরুতর। তাঁদের দরকার সর্বোচ্চ, অর্থাৎ চতুর্থ ধাপের পিপিই।…

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় চলা এ প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন অধিদপ্তরের পরিকল্পনা শাখার পরিচালক ইকবাল কবির। তিনি এগুলো কেনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।…

চতুর্থ ধাপের পিপিইর দুটি প্রধান শর্ত হচ্ছে কাপড়ের উন্নত মান এবং আটালো ফিতা সেঁটে সেলাইয়ের ছিদ্র বন্ধ করা। উদ্দেশ্য, ভাইরাস যেন কিছুতেই ঢুকতে না পারে। পিপিইগুলো কেনা হয়েছে এসআরএস ডিজাইন অ্যান্ড ফ্যাশনস লিমিটেডের কাছ থেকে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এমন ফিতা সেঁটে দিতে পারতেন।

সাইফুর বলেন, প্রকল্প পরিচালক আপাতত প্রথম ধাপের সাধারণ পিপিই চেয়েছিলেন। কার্যাদেশ তিনি পেয়েছিলেন এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে।…

প্রকল্প পরিচালক ইকবাল কবির প্রথম আলোকে বলেছেন, যাচাই-বাছাইয়ের দরকার পড়েনি। কমিটিকে জানানোর কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। কাগজপত্রে অবশ্য বলা আছে, কমিটি পিপিইসহ সব সুরক্ষাসামগ্রীর মান পরীক্ষা করে চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে লিখিত মতামত জানাবে।

কিন্তু প্রথম ধাপের পিপিই কেনা হলো কেন? ইকবাল কবির প্রথমে বললেন, সে সময় বাজারে ভালো মানের পিপিই ছিল না। তারপর বললেন, এগুলো সংবাদকর্মীদের মতো প্রথম সারিতে থাকা মানুষজন ব্যবহার করতে পারবেন।

সিভিল সার্জনদের চিঠিতে কেন তবে এগুলো কোভিড রোগীদের সেবায় নিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও নমুনা সংগ্রাহকদের ব্যবহার করতে বলা হয়েছে? ইকবাল কবিরের উত্তর, এটা ভুলবশত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কারও ভুলের কারণে চিকিৎসক আক্রান্ত হবেন, মারা যাবেন, এটা তো হতে পারে না।… …

চট্টগ্রামে করোনার উপসর্গে মৃত্যু গুণ বেশি

২৩ জুন ২০২০, প্রথম আলো

… …চট্টগ্রামে কোভিড রোগে মৃত্যুর চেয়ে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচ গুণ বেশি। এখানকার দুটি হাসপাতালের মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর পর বেশির ভাগ মৃতদেহ থেকে নমুনা নেওয়া হচ্ছে না। নিউমোনিয়া বা অন্য কোনো রোগে মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। এরপর স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে লাশ।

এতে করোনায় মৃত্যুর প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

কোভিড হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গত ৩ এপ্রিল থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৪০ জন, আর উপসর্গ নিয়ে মারা যান ৩১ জন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিসংখ্যান একেবারেই চমকে ওঠার মতো। এই হাসপাতালের কোভিড হলুদ জোনে (উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন) ৪ এপ্রিল থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৭ জন শ্বাসকষ্টের রোগী ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে মারা যান ৩২৯ জন। অন্যদিকে এই হাসপাতালের কোভিড লাল জোনে ২১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ১৯০ জন কোভিড রোগী ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে মারা যান ২৪ জন। অর্থাৎ দুই হাসপাতালে কোভিডে মারা গেছেন ৬৪ জন এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৬০ জন। চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন এবং জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. আবদুর রব মৃত্যুর তথ্য এই প্রতিবেদককে দিয়েছেন।… …

ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে এত মৃত্যু কেন?

২৩ জুন ২০২০, প্রথম আলো

করোনা ও করোনার উপসর্গ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রায় ২১ শতাংশকে বাঁচানো যায়নি। তাদের বড় অংশ হাসপাতালে ভর্তির এক দিনের মাথায় মারা গেছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দীন গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা গেছে, যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় হাসপাতালে এসেছেন। অনেকে চিকিৎসা শুরুর আগেই মারা গেছেন। কেউ এসেছেন মৃত। হাসপাতালে ভর্তির ১২ ঘণ্টার মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং এক দিনের মাথায় ৯০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে।.. …

কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর তথ্য লিপিবদ্ধ করছে, যাঁদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার নিশ্চিত প্রমাণ আছে, তাঁদের। উপসর্গ নিয়ে যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের সবার পরীক্ষা বেঁচে থাকতে বা মৃত্যুর পর হয়নি। কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ২ মে করোনা ইউনিট চালুর পর চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ৩১৬ জন। গতকাল সোমবার বেলা তিনটা পর্যন্ত মারা গেছেন ১৮৫ জন। মৃতের হার ৬ শতাংশের কিছু ওপরে।

তারপরও আনুষ্ঠানিক হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মৃত্যুহার সাড়ে ৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক। অন্যদিকে হাসপাতালের মর্গ অফিসের নিবন্ধন খাতা গত ২ মে থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গে মৃত্যুর সংখ্যা ৬৯৬।

এত মৃত্যু কেন

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল মৃত্যু পর্যালোচনার কাজটি করেছেন। সোমবার প্রথম আলোকে তিনি এত মৃত্যুর পেছনে মোটাদাগে তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন।

বেশির ভাগ রোগী অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় এবং অনেকটা দেরি করে হাসপাতালে এসেছিলেন। রোগীদের বড় অংশেরই ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ বা জটিল দীর্ঘমেয়াদি রোগ ছিল। অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্তদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া জরুরি হলেও, শয্যা-সংকটের কারণে নেওয়া যায়নি।… …

স্বাস্থ্যমন্ত্রী অফিস করেন না

২৫ জুন ২০২০, প্রথম আলো

তিনি আছেন, আবার নেই। মাঝেমধ্যে দেখা যায় টেলিভিশন বা অনলাইন সংবাদে। আবার চলে যান অফলাইনে। কখনো কোভিড হাসপাতাল উদ্বোধন করেন, কখনো বিমানবন্দরে যান বিদেশি প্রতিনিধিদলকে বিদায় জানাতে। তবে কর্মস্থলে শেষ কবে গিয়েছিলেন, তা চট করে বলতে পারেননি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তিনি হলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সচিবালয়ে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই শীর্ষ ব্যক্তি নিয়মিত তাঁর দপ্তরে যান না। এই মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব অবশ্য যৌক্তিক কারণে দপ্তরে অনুপস্থিত। একজন করোনায় আক্রান্ত, অপরজনের স্ত্রী করোনায় মৃত্যুর পর আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্ন অবস্থায়) রয়েছেন।

অফিস চলাকালে গত রবি, সোম ও বুধবার—তিন দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘুরে তেমন কোনো কর্মতৎপরতা দেখা যায়নি। অথচ কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর থাকত এই মন্ত্রণালয়। এখন সেখানে গুটিকয় কর্মকর্তা-কর্মচারী, লিফটম্যান ছাড়া কাউকে চোখে পড়ে না।… …

কিট সংকট মজুদের তথ্যে লুকোচুরি

২৫ জুন ২০২০, সমকাল

.. .. কিট সংকটের কারণে ১৮ জুন থেকে নারায়ণগঞ্জের খানপুর তিনশ’ শয্যা হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। একই কারণে ১৭ তারিখ থেকে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ আছে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুরসহ সারাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালেও কিট সংকটের কারণে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতেও নমুনা সংগ্রহের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, কিটের তথ্য নিয়ে লুকোচুরি করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। উচ্চ সংক্রমণের এই সময়ে বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন অন্তত ৩০ হাজার নমুনা পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা তো দূরের কথা, বর্তমানে যে পরিমাণ পরীক্ষা হচ্ছে কিট সংকটের কারণে তাও হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। কিট সংকট নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একেক রকম তথ্য দিচ্ছে। কখনও বলছে, কিটের সংকট আবার কখনও বলছে; আরটিপিসিআর ল্যাবরেটরির অভাব। সত্যিকার সমস্যাটি কী, তা মুখ খুলে বলছেন না কেউই।

বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে কত কিট মজুদ আছে সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য জানাচ্ছেন না কেউ। তবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, বর্তমানে যে কিট মজুদ আছে তা নিয়ে আগামী ৬ থেকে ৭ দিন হয়তো পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এই সময়ের মধ্যে কিট সংগ্রহ করা না হলে নমুনা পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।

নগর থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে গ্রামে

২৫ জুন, ২০২০, দেশ রুপান্তর

চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বিগত এক মাস ধরে করোনা রোগী বাড়ছে। এর মধ্যে নগরীর আশপাশের উপজেলাতে সংক্রমণের হার বেশি। এতে নগর ছাড়িয়ে এখন উপজেলা নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, নগর থেকে প্রতিদিন মানুষ গ্রামে যাতায়াত করছেন। তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানানো সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য গ্রামে সংক্রমণ বাড়ছে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যে, চট্টগ্রামে গত সোমবার পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৬৯৯ জন শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪টি উপজেলার ২ হাজার ১৪২ জন এবং নগরীর ৪ হাজার ৫৫৭ জন। এ পর্যন্ত করেনায় ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার রয়েছে ৩৩ জন। গত ২২ মে থেকে ২২ জুন পর্যন্ত এক মাসে ৯৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৩ ও নারী ২৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৬৯৯ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে ৩৫৩ ও হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৬০৬ জন।

করোনা চিকিৎসায় হাসপাতালে ৬৭% শয্যাই খালি

২৭ জুন ২০২০, প্রথম আলো

দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও বেশির ভাগই হাসপাতালে যাচ্ছেন না। ৯৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ রোগীই চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায় থেকে। অন্যদিকে সারা দেশে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত শয্যার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি (৬৭.৪৮ শতাংশ) খালি পড়ে আছে।

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আক্রান্তদের একটি বড় অংশের লক্ষণ ও উপসর্গ মৃদু। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। মূলত যাঁদের অবস্থা গুরুতর, তাঁদেরই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের একটা অংশের মৃত্যু হচ্ছে বাসায়। গত ছয় দিনে মোট মৃত্যুর ২৩ শতাংশই হয়েছে বাসায়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অবস্থা গুরুতর হওয়ার পরও

অনেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন না।

ফাঁকা বেডগুলো কোথায়

২৮ জুন, ২০২০, দেশ রুপান্তর

দেশে করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায়ও পরীক্ষা অনুপাতে সর্বোচ্চ ২৩ শতাংশের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। প্রতিদিনই গড়ে সাড়ে তিন হাজারের মতো নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে, গড়ে সুস্থ হচ্ছেন ১৫শ’ করে। সে হিসাবে প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত রোগী থাকছেন আড়াই হাজার করে। গত এক সপ্তাহের হিসাব ধরলে বর্তমানে রোগী থাকার কথা সাড়ে ১৭ হাজার। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন কভিড হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৩২ জন। তাহলে বাকি ১৪ হাজার রোগী কোথায় এমন কোনো তথ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।

একইভাবে অধিদপ্তর বলছে, ৬ হাজার ৯৮৩টি ও আইসিইউ বেড ২৫৪টি। বর্তমানে সাধারণ বেডে রোগী ভর্তি রয়েছেন ৩ হাজার ৩২জন। সে হিসাবে বেড ফাঁকা ৩ হাজার ৯৫১টি। একইভাবে বর্তমানে আইসিইউ বেডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৩৩ জন। অর্থাৎ আইসিইউ বেড ফাঁকা ১২১টি।

এর বাইরে গত শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা অনলাইন বুলেটিনে বলেছেন, করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে এখনো ১৯৬টি আইসিইউ বেড ফাঁকা পড়ে আছে। আর হাসপাতালগুলোতে সাধারণ শয্যা ফাঁকা রয়েছে ৯ হাজার ৯১৯টি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন তথ্যের প্রেক্ষাপটে করোনা রোগীর প্রকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা। তাদের হিসাবে, প্রতিদিন যেখানে অসংখ্য করোনা রোগী বেডের অভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না, সেখানে বেড ফাঁকা থাকার বিষয়টি তাদের কাছে বোধগম্য নয়। বিশেষ করে তারা আইসিইউ বেডের ব্যাপারে বলেছেন, দেশে যে পরিমাণ আইসিইউ বেড, তা করোনা রোগীর চাহিদা অনুপাতে ১০ শতাংশেরও কম। অর্থাৎ ১০০ জন রোগীর মধ্যে ১০ জনের জন্যও আইসিইউ দিতে পারছি না। তাহলে এত বেড ফাঁকা থাকে কী করে? বিশেষজ্ঞরা এমনও প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি করছে না? নাকি অব্যবস্থাপনা ও দুর্ভোগের কথা ভেবে রোগীরাই হাসপাতালে যাচ্ছেন না।

বারডেমে অস্থায়ী চিকিৎসকদের অবস্থান কর্মসূচি

জুন ২৮, ২০২০, বণিক বার্তা

চাকরি স্থায়ীকরণ, করোনা মহামারীর সময় চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় নিজেদের সুরক্ষা এবং আর্থিক প্রণোদনাসহ বিভিন্ন দাবিতে বেসরকারি বারডেম হাসপাতালের একদল চিকিৎসক কর্মবিরতিসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগের হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার চেম্বার কমপ্লেক্সে তারা অবস্থান নিয়েছেন।

অস্থায়ী ভিত্তিতে হাসপাতালটিতে নিয়োগকৃত শতাধিক চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত চিকিৎসকদের চাকরি স্থায়ীকরণ, করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে কেউ আক্রান্ত হলে সেই চিকিৎসক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বারডেমে চিকিৎসার সুযোগ, রোগীদের করোনা পরীক্ষার জন্য বারডেমে ল্যাব চালু এবং করণায় আক্রান্ত হয়ে কোন চিকিৎসকের মৃত্যু হলে ১০ লাখ টাকা প্রণোদনার দাবি জানানো হয়েছে।

করোনায় হাসপাতাল গিয়ে পরীক্ষার জন্য ২০০ টাকা, বাড়িতে থেকে করলে ৫০০

২৮ জুন ২০২০, প্রথম আলো

সরকারিভাবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য ফি আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আদেশ জারি হলে হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করাতে ২০০ টাকা ফি দিতে হবে। আর বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করলে দিতে হবে ৫০০ টাকা।

পুরনো মডেলের মেশিন কেনায় মিলছে না কিট

৩০ জুন, ২০২০, বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামেগঞ্জে। করোনা উপসর্গ নিয়ে টেস্ট করতে আসা মানুষের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। কিন্তু প্রায়ই দেশের বিভিন্ন ল্যাবে নষ্ট থাকছে করোনা টেস্টের আরটিপিসিআর মেশিন। অভিযোগ উঠেছে, ২০০৯ সালের মডেলের মেশিন গছিয়ে দেওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া পুরনো মডেল হওয়ায় ১১ বছর পরে এসে এই মডেলের কিটও পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে করোনা সংক্রমণের পর জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানই (আইইডিসিআর) নমুনা পরীক্ষার কাজ করে আসছিল। ওই সময় আইইডিসিআরের বাইরে আরও সাতটি প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষার ল্যাব ছিল। ল্যাব বাড়াতে আরটিপিসিআর মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, নমুনা পরীক্ষার জন্য সর্বশেষ কেনা ২১টি আরটিপিসিআর মেশিন ২০০৯ সালের মডেলের। ওই মেশিনের কিট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। চাহিদা থাকার পরও এসব মেশিনের কিট সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে পরীক্ষাও করা যাচ্ছে না। অভিযোগ পাওয়া গেছে, থার্মোফিশার ৭৫০০ মডেলের আরটিপিসিআর মেশিনগুলো ২০০৯ সালের পুরনো মডেলের। পরবর্তী সময়ে ওই কোম্পনির আরও কয়েকটি নতুন মডেলের মেশিন বাজারে এসেছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী চাহিদার সুযোগ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরনো মডেলের মেশিনই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে গছিয়ে দিয়েছে। তিন শিফটে উন্নতমানের মেশিনে ২৭০-২৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু এই পুরনো মডেলের মেশিনে এর অর্ধেক টেস্টও করা সম্ভব হচ্ছে না। মেশিনের ত্রুটির কথা তুলে ধরে রাজধানীর দুটি হাসপাতালের পরিচালক তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতিও জানিয়েছিলেন। গত মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার বিষয় নিয়ে হাসপাতাল পরিচালকদের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে কয়েকজন পরিচালক মেশিনের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের এক পরিচালক বলেন, এই মেশিন দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করতে সমস্যা হচ্ছে।

২০০৯ সালের পুরনো মডেলের এই মেশিন দিয়ে এক শিফট কাজ চালানোয় মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় শিফটে কাজ করতে গেলে মেশিনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সব রেজাল্ট নেগেটিভ কিংবা সব রেজাল্ট পজেটিভ চলে আসছে।’

মুগদা হাসপাতালে মৃত্যুর ৩৫% ভর্তির দিনে

০৩ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

শরীরে অক্সিজেন কম নিয়ে যেসব করোনা রোগী হাসপাতালে আসছেন, তাঁদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। ৩৫ শতাংশের মৃত্যু হচ্ছে হাসপাতালে আসার এক দিনের মধ্যে। মৃত্যু পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া ৯৩ জন করোনা রোগীর চিকিৎসার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে দেখা গেছে, ভেন্টিলেটর ব্যবহার করে একজন রোগীকেও বাঁচাতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পর্যালোচনার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও গবেষকেরা বলছেন, ভেন্টিলেটরের চেয়ে বেশি প্রয়োজন উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা।

মুগদা হাসপাতালে দেশ রূপান্তরের ফটো সাংবাদিকের ওপর হামলা-ক্যামেরা ভাঙচুর

৩ জুলাই, ২০২০, দেশ রুপান্তর

মুগদা হাসপাতালে দেশ রূপান্তরের ফটো সাংবাদিকের ওপর হামলা-ক্যামেরা ভাঙচুর

করোনা পরীক্ষার নমুনা দিতে লাইনে দাঁড়ানো রোগীকে মারধরের ছবি তুলতে যাওয়ায় মুগদা জেনারেল হাসপাতালে দেশ রূপান্তরের ফটো সাংবাদিক রুবেল রশীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন সেখানকার আনসার সদস্যরা। হামলার মুহূর্তটি এভাবে ক্যামেরায় ধরা পড়ে।

করোনা পরীক্ষার নমুনা দিতে লাইনে দাঁড়ানো রোগীকে মারধরের ছবি তুলতে যাওয়ায় মুগদা জেনারেল হাসপাতালে দেশ রূপান্তরের ফটো সাংবাদিক রুবেল রশীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন সেখানকার আনসার সদস্যরা। তারা ফটো সাংবাদিকের ক্যামেরাও ভেঙে ফেলে।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতাল চত্বরে এ হামলার ঘটনা ঘটে।… …

মুগদা হাসপাতালে মৃত্যুর ৩৫% ভর্তির দিনে

০৩ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

শরীরে অক্সিজেন কম নিয়ে যেসব করোনা রোগী হাসপাতালে আসছেন, তাঁদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। ৩৫ শতাংশের মৃত্যু হচ্ছে হাসপাতালে আসার এক দিনের মধ্যে। মৃত্যু পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া ৯৩ জন করোনা রোগীর চিকিৎসার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে দেখা গেছে, ভেন্টিলেটর ব্যবহার করে একজন রোগীকেও বাঁচাতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পর্যালোচনার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও গবেষকেরা বলছেন, ভেন্টিলেটরের চেয়ে বেশি প্রয়োজন উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা।

করোনার পরীক্ষা যখন বাড়ানো প্রয়োজন, তখনই ‘নিয়ন্ত্রিত’

০৭ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষা যখন আরও বাড়ানো প্রয়োজন, তখনই তা ‘নিয়ন্ত্রিত’ হয়ে পড়ছে। জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট—এই চারটি উপসর্গ না থাকলে করোনা শনাক্তের পরীক্ষার জন্য কারও নমুনা নেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে পরীক্ষা নিরুৎসাহিত করতে সরকারি ফি আরোপ এবং কিটের স্বল্পতার কারণে কম নমুনা সংগ্রহের বিষয়টি তো রয়েছেই।

জুন মাসের শেষের দিকে ১৭ হাজার থেকে ১৮ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু গত চার দিন (৩ থেকে ৬ জুলাই) ধরে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে ১৩ থেকে সাড়ে ১৪ হাজার। এর আগের চার দিনের (২৯ জুন থেকে ২ জুলাই) তুলনায় পরের চার দিনে ১৪ হাজার ৮৯০টি পরীক্ষা কম হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে সরকার দেশে করোনার সংক্রমণ কম দেখালে সমস্যার সমাধান হবে না; বরং সংক্রমণ পরিস্থিতি লুকানোর চেষ্টা সবার জন্যই বিপদ ডেকে আনবে।… …

চতুর্থ মাসে করোনার সংক্রমণ মৃত্যু অনেক বেড়েছে

০৮ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার চার মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। প্রথম দিকে সংক্রমণ বিস্তারের গতি ধীর থাকলেও যত দিন যাচ্ছে, তা তত তীব্র হচ্ছে। প্রথম তিন মাসের তুলনায় চতুর্থ মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই অনেক বেড়েছে। মোট রোগীর ৫৯ শতাংশের বেশি শনাক্ত হয়েছে চতুর্থ মাসে। আর মোট মৃত্যুর প্রায় ৫৭ শতাংশ ছিল এই এক মাসে।

মহামারির জরুরি পরিস্থিতির বিবেচনায় চার মাস অনেক দীর্ঘ সময়। এই চার মাসে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কাজগুলো আরও জোরদার হওয়া দরকার ছিল। জোরদার না হয়ে কিছু ক্ষেত্রে দুর্বল হয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এপ্রিল পর্যন্ত কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং (রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ) মোটামুটি ভালোই করেছিল। কিন্তু মে থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি প্রায় বন্ধ আছে।

নমুনা পরীক্ষার কাজে একটি-দুটি করে ল্যাবরেটরি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নমুনা সংগ্রহও বাড়ছিল। কিন্তু চার মাসের শেষে এসে দেখা যাচ্ছে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা দুই কমেছে।.. …

১২০ কভিড হাসপাতালের ৭১টির ব্যবস্থাপনাই নাজুক

জুলাই ১০, ২০২০, বণিক বার্তা

বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে করোনা রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিবন্ধিত হয়েছিল রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখা। সেবা মূল্যায়নে অধিদপ্তরের স্কোর কার্ডে সবুজ চিহ্নযুক্ত হাসপাতালের তালিকায় স্থানও করে নিয়েছিল রিজেন্ট। সম্প্রতি করোনার ভুয়া সনদ ও প্রতারণার অভিযোগে এই হাসপাতালটিতে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দিয়েছে র‌্যাব।

এ তো গেল সবুজ চিহ্নিত হাসপাতালের চিত্র। এর চেয়ে আরো খারাপ পরিস্থিতি হলুদ ও লাল চিহ্নিত হাসপাতালগুলোর। রাজধানীর উপকণ্ঠে কভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে এমন আরেকটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আমিনবাজার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। করোনা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় তেমন কোনো ব্যবস্থাপনাই চোখে পড়েনি। হাসপাতালটিকে লাল চিহ্নিত হাসপাতালের তালিকায় রেখেছে অধিদপ্তর।.. ..

দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে নির্ধারণ করা ১২০টি হাসপাতাল রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘ন্যাশনাল হেলথ ফ্যাসিলিটি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেডিনেস র‌্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট চেকলিস্ট ফর কভিড-১৯’ শীর্ষক তালিকায়। এর মধ্যে ৭১টি হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনাই সন্তোষজনক অবস্থানে নেই।… …

চেকলিস্টের স্কোর কার্ড অনুযায়ী, সবুজ তালিকায় রয়েছে মাত্র ৪৯টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। বাকি ৭১টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পিছিয়ে থেকে হলুদ ও লাল চিহ্নিত তালিকায় অবস্থান করছে। এর মধ্যে মোট স্কোরে ৩০-এর কম পয়েন্ট নিয়ে ১০টি হাসপাতাল আছে লাল চিহ্নিত তালিকায়। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো হলুদ চিহ্নিত তালিকায় অবস্থান করছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও খুব বেশি ভালো না।.. …

মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কর্মবিরতি

১০ জুলাই ২০২০, সমকাল

ছয় দফা দাবিতে দেশের সব সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমটিএ) আহ্বানে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা এ কর্মবিরতি পালন করেন তারা। কর্মবিরতিতে সীমিত আকারে জরুরি সেবা চালু থাকলেও ব্যাহত হয় নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সেবা কার্যক্রম। প্রভাব পড়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষায়ও। দাবি আদায়ে আগামী বুধবারও কর্মবিরতি পালন করবে বিএমটিএ। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে টেকনোলজিস্টরা বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদাসীনতার কারণে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা কর্মবিরতির মতো কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হয়েছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, দাবি আদায়ে তিন মাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য বিভাগ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এর আগে গত ৫ জুলাই বিভিন্ন দাবি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন তারা।… ….

স্বাস্থ্যে অব্যবস্থাপনা–অনিয়মের প্রভাব করোনা পরীক্ষা চিকিৎসায়

১১ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম যেন দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘটনাগুলোর পরিষ্কার ব্যাখ্যা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দিচ্ছেন না। এর প্রভাব পড়ছে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নজরদারি ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি এই পর্যায়ে এসেছে।

গত বৃহস্পতিবার নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, দুটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একটি কলেজে বিলম্বে যন্ত্র আসার কারণে পরীক্ষা শুরু করতে দেরি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই কলেজের করোনা পরীক্ষার উপযুক্ত আরটি–পিসিআর যন্ত্রই নেই। যাচাই না করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কলেজটিকে ল্যাবরেটরির অনুমতি দিয়েছে।

এর আগে জেকেজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নমুনা পরীক্ষার ঘটনা সামনে আনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেই ঘটনা মানুষের মন থেকে মুছে যাওয়ার আগেই রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণা সারা দেশে সাড়া ফেলে। রিজেন্টের সঙ্গে করা চুক্তিপত্রে সই আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, রিজেন্টের ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি করেছে। জেকেজির বিষয়ে তেমন কিছু হয়নি। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ল্যাবরেটরি সরেজমিনে না দেখে আরও কিছু প্রতিষ্ঠানকে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, শুধু ল্যাবরেটরি বা হাসপাতালের অনুমতির বিষয় নয়, আরও কিছু ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে রাজধানীতে একাধিক মৃত্যুর ঘটনায় কোনো তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পাঁচ হাজারের বেশি চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণ ঝুঁকির কারণ অনুসন্ধান এবং করণীয় নির্ধারণের কথা ছিল। সেই কাজ কেন হয়নি, কেউ জানে না। গবেষণা, পরিকল্পনা, নীতিনির্ধারণের জন্য যে মানসম্পন্ন রোগতাত্ত্বিক তথ্য–উপাত্ত–পরিসংখ্যান দরকার, তা নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি লিখেও তথ্য পাননি।

অন্যদিকে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের মাস্কের বিষয়ে মুগদা ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুজন সরকারি কর্মকর্তা প্রতিবাদ করেছিলেন। পরে তাঁদের একজনকে বদলি এবং অন্যজনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়। এসব বিষয়ে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলছেন না।… ….

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাট নয়

১০ জুলাই ২০২০,  প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাট স্থাপন না করার সুপারিশ করেছে করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করতে বলেছে তারা। আর অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ প্রতিরোধ নীতিমালা পালন করে পশুর হাট বসানো পক্ষে মত দিয়েছে কমিটি। তবে শহরের ভেতরে হাট স্থাপন করা করা যাবে না।.. …

মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে টেস্ট কমে সাড়ে ১৮ হাজার থেকে ১১ হাজার

১১ জুলাই, ২০২০, দেশ রুপান্তর

দেশে করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) বিস্তারের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা নিয়ে যখন বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, বিপরীতে করোনার নমুনা পরীক্ষায় ঠিক উল্টো অবস্থা। মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে করোনা পরীক্ষা কমেছে প্রায় অর্ধেক।

শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ১৯৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

এর আগে গত  ৩০ জুন সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সে হিসাবে মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষা কমেছে ৭ হাজার ২৩৩টি যা সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষার অর্ধেকের কাছাকাছি।… …

ফির কারণে করোনা পরীক্ষা থেকে দূরে, বাড়ছে সংক্রমণ ঝুঁকি

১৪ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

করোনার নমুনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণের কারণে অনেকে পরীক্ষা থেকে দূরে থাকছেন। এর মধ্যে দিনে আনুমানিক ২১০ জন করোনায় আক্রান্ত মানুষ রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা থেকে বাদ পড়ছেন। মাস শেষে বাদ পড়াদের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়াতে পারে। এর ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ছে।… ….

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তথ্য দিয়ে সহায়তাকারী দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শাফিউন শিমুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘একাধিক জরিপে দেখা গেছে করোনার কারণে দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে। দরিদ্র মানুষ ২০০ বা ৩০০ টাকা ফি দিয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষা করাবে না। আমাদের অনুমান ৩০ শতাংশ পরীক্ষা কমেছে ফি নির্ধারণের কারণে।’… ….

এন-৯৫ নামে নিম্ন মানের মাস্ক শাস্তিযোগ্য: তদন্ত কমিটি

১৬ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

এন-৯৫ মাস্কের নামে নিম্নমানের সাধারণ মাস্ক সরবরাহের ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত প্রতারণা ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠন করা তদন্ত কমিটি। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের কমিটির এই প্রতিবেদনের আলোকে মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জেএমআই এবং মালামাল গ্রহণ, বিতরণ বা অন্য যেকোনোভাবে এ বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেছে মন্ত্রণালয়।… ….

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের অনুরোধে জেএমআই দুই চালানে ২০ হাজার ৬০০টি এন-৯৫ নামের ফেস মাস্ক সরবরাহ করে। তদন্তে দেখা গেছে, সরবরাহ করা পণ্যের মান ঠিক হয়নি, তাদের পণ্য তৈরির অনুমোদন প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি, পণ্য তৈরির জন্য বৈধভাবে কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়নি। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য অনুযায়ী পণ্যটি (কথিত এন-৯৫ মাস্ক) গবেষণা ও উন্নয়ন পর্যায়ে রয়েছে। এন-৯৫ মাস্কের বৈধ উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক না হয়েও সুদৃশ্য মোড়কে ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়ে এসব মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। এটিকে কোনোভাবেই ভুল হিসেবে বিবেচনার সুযোগ নেই। মাস্কগুলো ব্যবহৃত হলে কোভিড-১৯ সংক্রমণকালে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা ছিল। ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত প্রতারণা এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে প্রতীয়মান হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের মিল না থাকার বিষয়টি জেনেও তা গ্রহণ এবং বিতরণ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।… …

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের পদত্যাগ

জুলাই ২১, ২০২০,বাংলা ট্রিবিউন

পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। মঙ্গলবার (২১ জুলাই) সকালে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।

স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তিনি তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।… …

প্রসঙ্গত, করোনা নিয়ে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কাজে সমন্বয়হীনতা আগে থেকে থাকলেও সেটা প্রকাশ্যে আসে সম্প্রতি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে অধিদফতর থেকে অনুমোদন পাওয়া রিজেন্ট হাসপাতাল এবং নমুনা সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান জেকেজির নজিরবিহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও প্রতারণার পর। আলোচনা সমালোচনার পর স্বাস্থ্য অধিদফতর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চুক্তিটি করা হয়েছিল।’ এই বক্তব্যের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অধিদফতরের মহাপরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছিল। ওই সময়সীমার শেষ দিনে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সচিবের কাছে নোটিশের লিখিত জবাব দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।.. …

শ্রমজীবি মানুষ

শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে কারখানা খোলা রাখা যাবে

২৩ এপ্রিল ২০২০, সমকাল

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরিস্থিতিতে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা, যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার শর্তে কিছু গার্মেন্টস, ওষুধ ও রপ্তানিমুখী কারখানা খোলা রাখা যাবে। তবে জরুরি পণ্য ছাড়া কোনো গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সাধারণ ছুটি ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসময়ে রপ্তানিমুখী কারখানা খোলা রাখা যাবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।

এছাড়া সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খোলা রাখার সুপারিশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে গার্মেন্ট চালু করতে পারবেন কয়জন মালিক?

এপ্রিল ২৩, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

দেশে ছোট-বড় গার্মেন্টস কারখানার সংখ্যা ৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে মাত্র দুই তিনটি কারখানায় হাতে গোনা কয়েকজন শ্রমিকের থাকার ব্যবস্থা আছে। বাকি কোনও কারখানায় শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা নেই। আবার করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য শ্রমিকদের যতটুকু দূরত্বে থাকার কথা, দেশের একটি কারখানায়ও সেই ধরনের পরিবেশ নেই। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও কারখানাগুলো চালু রাখতে চাচ্ছেন গার্মেন্টস মালিকরা। শুধু তাই নয়, বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা চালু করার জন্য পাঁচটি জেলা থেকে শ্রমিকদের আনতে বিআরটিসির বাস চেয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গার্মেন্টস কারখানা খুলতে হলে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে তারপর খুলতে হবে। শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থাও করতে হবে। তারা যেন সুরক্ষিত অবস্থায় থাকতে পারে। এসব নিয়ম মেনে তারা কারখানা চালু করতে পারবে।

তবে খোদ গার্মেন্টস মালিকরাই বলছেন, স্বাস্থ্য নির্দেশিকা পুরোপুরি মেনে গার্মেন্টস চালানো সম্ভব নয়। কারণ, স্বাস্থ্য নির্দেশিকা পুরোপুরি মানতে গেলে শ্রমিকদের নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখতে হবে। অর্থাৎ আগের সিট প্ল্যান চেঞ্জ করতে হবে। কারখানার সব মেশিন খুলে নতুন করে স্থাপন করতে হবে। আর স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে নতুন করে মেশিন স্থাপন করতে হলে অন্তত ১৬ লাখ শ্রমিককে ছাঁটাই করতে হবে। এছাড়া এই মুহূর্তে শ্রমিকদের সুরক্ষা দিয়ে কারখানার ভেতরে তাদের থাকার ব্যবস্থা করাও সম্ভব নয়।

সুইং বা সেলাই: পরপর মেশিনগুলো যেভাবে বসানো থাকে, তাতে দু’জন শ্রমিকের মধ্যে দূরত্ব মাত্র দেড় ফুট। আর পাশাপাশি দুই টেবিলের মাঝে গ্যাপ থাকে মাত্র ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি। প্রতিটি সেলাই মেশিন লম্বায় ২৮ ইঞ্চির মতো হয়। ফলে কারখানাগুলোতে প্রতি ৩০ থেকে ৩২ ইঞ্চির মধ্যে দুজন, কখনও কখনও ৪ জন শ্রমিকও বসেন।

কাটিং: যেখানে শ্রমিকরা কাটিং করেন, সেখানে তারা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়ান। এখানেও দুজন শ্রমিকের মধ্যে দূরত্ব দেড় ফুটের মতোই। কখনও দেড় ফুটের চেয়েও কম। একইভাবে ফিনিশিংয়ের স্থানও আগের তুলনায় দ্বিগুণ বড় করতে হবে। আয়রন করার ক্ষেত্রেও কিছুটা দূরত্ব বাড়াতে হবে।

মাস্ক পরতে খামখেয়ালি: এমনিতেই মানসম্মত মাস্ক নেই। তারপর অনেক শ্রমিক খামখেয়ালি করে কারখানার ভেতরে মাস্ক পরেন না। অনেকেই ভেতরে প্রবেশের পর মাস্ক খুলে রাখেন। আর শ্রমিকরা অপুষ্টিতে ভোগার কারণে সব সময়ই তাদের ঠান্ডা-কাশি লেগেই থাকে। ফলে শ্রমিক অর্ধেক কমানোর পরও একজন থেকে আরেকজনে ভাইরাসের সংক্রমণের শঙ্কা থেকেই যায়।

টয়লেট ব্যবহার: কারখানার শ্রমিকরা গণ টয়লেট ব্যবহার করেন। প্রতিদিন একই টয়লেট দেড় থেকে দুইশ’ মানুষ ব্যবহার করেন। কাজেই বাথরুম থেকেও হতে পারে করোনার সংক্রমণ। এ কারণে বাথরুম বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বাথরুম পরিষ্কারের জন্য কর্মচারী বাড়াতে হবে।

আরও যেসব গুরুত্বহীন দূরত্ব: শ্রমিকরা যখন কারখানায় প্রবেশ করেন, তখন একসঙ্গে একই সময়ে একই গেট দিয়ে বা সিঁড়ি দিয়ে পাঁচ হাজার শ্রমিকের সবাই প্রবেশ করেন। তিন ফুট দূরত্ব মানতে হলে লাইন ধরে প্রবেশ করতে হবে। দেখা যাবে, প্রবেশ করতেই তাদের দুই ঘণ্টা শেষ। একইভাবে কারখানা ছুটি হলে সবাই একসঙ্গে গা ঘেঁষে নামার চেষ্টা করেন। এছাড়া শ্রমিকরা যখন খেতে বসেন, একসঙ্গে একহাজার বা তারও বেশি শ্রমিক গা ঘেঁষে বসেন। কারখানার ভেতরে একই গ্লাস দিয়ে শত শত শ্রমিক পানি পান করেন। একসঙ্গে সবাই নাস্তা বা টিফিন খান।

কাপড়ের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনা: একটি জামা বা প্যান্ট তৈরি করতে ৩০ থেকে ৭৫ জন ব্যক্তির হাত হয়ে তারপর শেষ হয়। ফলে ৭৫ জনের কোনও একজনের থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। যে কারণে সবার জন্য হ্যান্ড গ্লাভস জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হলো কোনও কারখানার মালিকই এই হ্যান্ড গ্লাভস দেন না।

সাবান দিয়ে হাত ধুতেও আলসেমি: কারখানাগুলোতে প্রবেশের সময় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার রেওয়াজ থাকলেও পরে আর হাত ধোয়ার বালাই নেই। শ্রমিকরাই বলছেন, প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর হাত ধোয়া সম্ভব নয়।

আরও যেসব ঝুঁকি: কারখানার ফ্লোর এবং বাথরুম স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিষ্কার রাখতে হবে। কারখানায় লাইন ধরে একজনের সঙ্গে আরেকজনের দূরত্ব তিন ফুট ব্যবধান রেখে প্রবেশ ও বের হতে হবে। তবে কারখানার ভেতরে সব ঠিকঠাক করার পরও ঝুঁকি থাকবেই। কারণ, শ্রমিকরা কারখানার বাইরে যখন থাকেন, তখন বাজার করবেন, খাওয়া-দাওয়া করবেন। যেখানে থাকবেন সেখানকার মানুষদের সঙ্গে মিশবেন। একই রান্নাঘরে একাধিক পরিবার খাবার তৈরি করবেন। এছাড়া স্ত্রী কারখানার শ্রমিক আর স্বামী রিকশাচালক, এক্ষেত্রেও ঝুঁকি থেকে যায়।

আবারও পোশাক কারখানা খোলা নিয়ে লুকোচুরি, বিভ্রান্তিতে শ্রমিকরা

এপ্রিল ২৫, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

একদিকে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ থেকে বলা হচ্ছে কারখানা খোলার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, অন্যদিকে শ্রমিকদের আগামীকাল রবিবার (২৬ এপ্রিল) থেকে কারখানায় আসার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বেশ কয়েকজন কারখানা মালিক। এমন পরিস্থিতিতে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিকরা। এরইমধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ফিরতে শুরু করছেন পোশাক শ্রমিকরা। শ্রমিকরা বলছেন, কারখানা থেকে তাদের ফোন দিয়ে আসতে বলা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে পোশাক কারখানার মালিকদের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে শ্রমিকরা জানাচ্ছেন, তাদের অফিস করতে বলা হয়েছে, কারণ আগামীকাল রবিবার খুলছে পোশাক কারখানা। তাই বাধ্য হয়ে অঘোষিত লকডাউনের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ফিরতে শুরু করছেন পোশাক শ্রমিকরা।  আবার অনেকে দ্বিধার মধ্যেও আছেন ঢাকায় ফিরবেন কীভাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেশিরভাগ শ্রমিকের। আবার গত ৪ এপ্রিলের মতো ঢাকায় গিয়ে বিপাকে পড়বেন কিনা, এই চিন্তায় পড়েছেন বেশিরভাগ শ্রমিক। এসব বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।

তবে শ্রমিকরা বলছেন, আগামীকাল থেকে ঢাকা ও আশেপাশের শিল্প-কারখানা ও পোশাক কারখানা খুলবে। কাজে যোগ দিতে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, রিকশা কিংবা ঠেলা ভ্যান ভাড়া নিতে হয়েছে। কেউ কেউ হেঁটেই রওনা হয়েছে গন্তব্যের উদ্দেশে।

এর আগে গত ৫ এপ্রিল থেকে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার খবরে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছিলেন শ্রমিকরা। ৪ এপ্রিলও রাস্তাগুলোতে শ্রমিকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে, টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে, নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরিতে হঠাৎ করে মানুষের ঢল নামে। এসব শ্রমিক ঢাকায় পৌঁছানোর পর রাত ১০টার দিকে বিজিএমইএ থেকে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে চরম নাজেহাল হওয়ার পাশাপাশিও অনেক শ্রমিক হয়রানির শিকার হন।

রানা প্লাজা ধসের সাত বছর: সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়েই ঝুলে আছে মামলা

এপ্রিল ২৪, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা চার মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে কেবল একটির। ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলার রায় ঘোষণা করেন। বাকি তিন মামলার বিচারকার্য সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়েই ঝুলে আছে। মামলাগুলোর  মধ্যে হত্যা মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে । আর ইমারত নির্মাণ আইনে দায়ের করা দুই মামলার মধ্যে রাজউকের মামলাটি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং ইমারত নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন। আরও ১১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে শ্রম আদালতে।ঃ

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার রানা প্লাজার ৮ তলা ভবন ধসে পড়ে। ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত হন আরও কয়েক হাজার। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণঘাতী এই দুর্ঘটনার রেশ এখনও বয়ে চলছেন আহত শ্রমিক এবং হতাহতের পরিবারের সদস্যরা। আহত শ্রমিকদের বড় একটি অংশই এখনও ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে, কেউ আবার পঙ্গু হয়েছেন আজীবনের জন্য। এ ঘটনায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।

রানা প্লাজা হত্যা মামলা

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক হাজার ১৩৬ জন। আহত হয়েছিলেন আরও সহস্রাধিক। এ ঘটনায় পরদিন সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন।

২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় অভিযোগ পত্রে ৫৯৪ জনকে সাক্ষী করা হয়। ৪১ আসামির মধ্যে আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা যান। বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৩৯ জন।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করলেও এখন পর্যন্ত একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর খোন্দকার আবদুল মান্নান বলেন, হত্যা মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে জেলা ও দায়রা আদালতে। অভিযোগ গঠনের পর কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলাটি স্থগিত করেন। তাদের মধ্যে এখনও সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রেফাত উল্লাহ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলীর পক্ষে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তাদের পক্ষে মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় মামলার কোনও কার্যক্রম এগোচ্ছে না।

ইমারত আইনে রাজউকের মামলা

আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ওইদিন ইমারত নির্মাণ আইনে সাভার থানায় আরেকটি মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবনের মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৩০ জনকে মামলার সাক্ষী করা হয়। ২০১৬ সালের ১৪ জুন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তবে এখন পর্যন্ত একজনেরও  সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনারুল কবির বাবুল বলেন, কয়েকজন আসামি অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিভিশন মামলা করেন। তাদের মধ্যে নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ ও সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের রিভিশন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। অপরদিকে ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামের রিভিশন মঞ্জুর করে অব্যাহতি দেন আদালত। রিভিশনের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করতে পারব।

ইমারত আইনে দুর্নীতি মামলা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পরপরই ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছয় তলার জন্য অনুমোদন নিয়ে ৮ তলা হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল রানা প্লাজাকে। এই দুর্নীতির কারণে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় সাভার থানায় ২০১৩ সালের ১৫ জুন একটি মামলা দায়ের করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক মফিদুল ইসলাম। বর্তমানে মামলাটি ঢাকা বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের  দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। করোনাভাইরাসের কারণে আদালত বন্ধ থাকায় কার্যক্রম চলছে না। এ পরিস্থিতি কেটে গেলে মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ করতে পারবো।

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ দুদকের মামলা

২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও তার মা মর্জিনা বেগমের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় রানা প্লাজার নির্মাণের তথ্য গোপন করে দুদকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে ছয় কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯০০ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ করা হয়।  ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট এ মামলার রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস। দুদকের দায়ের করা এই মামলার রায়ে সোহেল রানাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ের আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই মামলায় তার মা মর্জিনা বেগমকেও তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে অবৈধভাবে অর্জিত সাভার বাজার রোডের ৬৯/১ বাড়িটির এক-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও আদেশ দেন আদালত।

আসামি রানার আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, মামলাটির বিচার হচ্ছে না । বিনা বিচারে রানা কারাগারে আটক আছেন। জামিনও পাচ্ছেন না। ভবনের মূল মালিক রানার বাবা, তিনি জামিন পেলেও রানা জামিন পাচ্ছে না। সব আসামি জামিনে সুবিধা ভোগ করছে, কিন্তু নামের কারণে রানা জামিন পাচ্ছে না। এজন্য আমরা চাই মামলার বিচার যেন দ্রুত শেষ হয়ে যায়।

শ্রম আইনে মামলা

এ ঘটনায় রানা প্লাজা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে ১১টি মামলা দায়ের করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর। সবগুলো মামলাই বিচারাধীন রয়েছে।

পায়ে হেঁটে ফের কর্মস্থলে ফিরছে পোশাক কর্মীরা

২৫ এপ্রিল ২০২০, আরটিভি অনলাইন

সরকারের সাধারণ ছুটির সঙ্গে বেড়েছে গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণাও। কেবল বাড়েনি পোশাককর্মীদের ছুটি। এজন্য আজ শনিবার সকাল  থেকেই কর্মস্থলে যোগ দিতে শত শত কর্মীর স্রোত দেখা যাচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে।

গণপরিবহন না থাকায় অনুমোদনহীন যানবাহন ও পায়ে হেঁটে চরম ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলে যাচ্ছেন তারা।

কাজে যোগ না দিতে না পারলে দেখা দিয়েছে চাকরির অনিশ্চয়তা।

এদিকে গ্রামেও খাদ্যসংকট দেখা দেওয়ায় করোনার ঝুঁকি নিয়েই মাইলের পর মাইল হেঁটে যাচ্ছেন তারা। মহাসড়কেও পড়তে হচ্ছে নানা হয়রানিতে।

বেতনের দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ

এপ্রিল ২৭, ২০২০, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ঝুঁকির মধ্যে কারখানা খোলা রেখে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদ ও বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরে বিক্ষোভ করেছেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) সকালে গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় চারটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে জরুরি পণ্যবাহী গাড়িগুলো আটকা পড়ে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।

পরে পুলিশ এসে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়েন ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন।

পরে অতিরিক্ত সংখ্যক পুলিশ শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন বলেন, শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অতিরিক্ত সংখ্যক পুলিশ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

পরিকল্পনার চেয়ে বেশি কারখানা খুলে গেছে

২৮ এপ্রিল ২০২০, প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে এলাকাভেদে ধাপে ধাপে সীমিত পরিসরে পোশাক কারখানা চালুর পরিকল্পনা থাকলেও সেটি রক্ষা করা যায়নি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার-আশুলিয়া ও চট্টগ্রামে গত দুই দিনে হাজার খানেক পোশাক ও বস্ত্র কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। দূরদূরান্তের শ্রমিকদের আপাতত কর্মস্থলে আসতে নিষেধ করা হলেও তাঁরা শিল্পাঞ্চলে ফিরছেন। ফলে নতুন করে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকছেই।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নির্দেশনা অনুযায়ী অনেক কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে উৎপাদন চালু করেছে। অনেকেই আবার জরুরি ক্রয়াদেশের কারণ দেখিয়ে ৭০-৮০ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে উৎপাদন শুরু করেছে। এসব কারখানায় পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত হচ্ছে না।

এদিকে সাভার-আশুলিয়ার কয়েকটি কারখানার মালিকপক্ষ গতকাল চালু করতে চাইলেও শ্রমিকদের অনীহার কারণে সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ, বকেয়া মজুরি ও লে-অফ করা কারখানা খুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। এর মধ্যে গাজীপুরে তিনটি মোটরসাইকেল ও আটটি বাইসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিকেএমইএ গত শনিবার তাদের সব সদস্য কারখানাকে স্যাম্পল, নিটিং ও ডায়িং সেকশন পরদিন রোববার থেকে চালুর নির্দেশনা দেয়। পাশাপাশি বলা হয়, সুইংসহ (সেলাই) অন্যান্য সেকশন ২ মে থেকে খোলা যাবে। তবে জরুরি রপ্তানি ক্রয়াদেশ থাকলে সংশ্লিষ্ট কারখানা তাদের প্রয়োজনীয় সেকশনগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখনই চালাতে পারবে। অন্যদিকে বিজিএমইএর নির্দেশনা ছিল, রোববার ও সোমবার ঢাকার ২১৩ কারখানা চালু হবে। আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের কারখানা খুলবে ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল। এ ছাড়া রূপগঞ্জ, নরসিংদী ও কাঁচপুরের কারখানা ৩০ এপ্রিল এবং গাজীপুর ও ময়মনসিংহের কারখানা ২ ও ৩ মে চালু হবে। তবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত শুধুই নিটিং, ডায়িং ও স্যাম্পল (নমুনা) সেকশন, ২ মে কাটিং এবং ৩ মে থেকে সেলাই বা সুইং সেকশন চালু করতে পারবে কারখানাগুলো।

কিন্তু রোববারই ঢাকাসহ সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক কারখানা চালু হয়েছে। সেদিনই বিষয়টি নজরে আনলে বিজিএমইএর তিনজন নেতা দাবি করেন, বিজিএমইএ ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কারখানাগুলো খুলেছে। গতকালও অনেক কারখানা চালু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সংখ্যাটি আরও বাড়বে বলে জানান বিজিএমইএর এক নেতা।

নমুনা পরীক্ষার পজিটিভ রিপোর্ট যখন এলো তখন তিনি পোশাক কারখানায়

এপ্রিল ২৮, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

ঢাকা ফেরত পিরোজপুর সদর উপজেলার এক গার্মেন্ট কর্মীর নমুনা পরীক্ষায় জানা গেছে তিনি করোনা পজিটিভ। কিন্তু রিপোর্ট আসার আগেই তিনি ঢাকার আশুলিয়ায় তার কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) পিরোজপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শিশির রঞ্জন অধিকারী এ তথ্য জানিয়েছেন।

ডা. শিশির রঞ্জন অধিকারী বলেন, ‘সিকদার মল্লিক ইউনিয়নের চালিতাখালী গ্রামের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রামের বাড়িতে আসার পর গত ২৩ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়। সোমবার (২৭ এপ্রিল) রাতে তার করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর আমরা তার বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি তিনি ২৫ এপ্রিল কর্মস্থল আশুলিয়ায় চলে গেছেন।’

চৌগাছায় গার্মেন্ট শ্রমিক করোনা আক্রান্ত, সুরক্ষা চেয়ে বিক্ষোভ

২৮ এপ্রিল, ২০২০, কালের কন্ঠ

যশোরের চৌগাছা উপজেলায় ডিভাউন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের গার্মেন্ট শ্রমিকের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আজ মঙ্গলবার কতিপয় শ্রমিকরা সুরক্ষার জন্য বিক্ষোভ করেন। এ সময় শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তাদের জোরপূর্বকভাবে কাজ করানো হচ্ছে। এমনকি চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

গার্মেন্টে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, সারা দেশে যখন করোনা আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না ঠিক তখনই উপজেলার ডিভাইন গ্রুপ তাদেরকে জোরপূবর্ক কাজ করতে বাধ্য করছে। কাজে না আসলে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, গার্মেন্টের ভিতরে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে গাদাগাদি করে তাদেরকে কাজ করতে হয়। তাদের সুরক্ষার জন্য নেই কোনো ব্যবস্থা। নিম্নমানের ঝুট দিয়ে তৈরি করা মাস্ক ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হ্যান্ড গ্লোভস ব্যবহার হচ্ছে না। এমন সংকটময় মূহুর্তে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। গার্মেন্টে প্রায় ১৫০০ শ্রমিক কাজ করেন। যদি ভাইরাসটি শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে মহামারি ধারণ করবে বলে শ্রমিকরা জানান।

রাস্তায় ফিরতে মরিয়া পরিবহন শ্রমিকরা

এপ্রিল ৩০, ২০২০, বণিক বার্তা

ঢাকার মিরপুর-মতিঝিল রুটের একটি ‘লোকাল’ বাসের চালক আব্দুল মতিন। দিনে আয় হতো ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। দিনের আয় বলতে গেলে দিনেই ফুরিয়ে যেত তার। ২৬ মার্চ থেকে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়েছেন এ চালক। এরই মধ্যে দুদফায় পরিচিতজনদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে নিয়েছেন তিনি। আর বেসরকারি একটি সংস্থা দিয়েছে কয়েক কেজি চাল-ডাল। উপার্জনহীন সংসারে সেসব শেষ হতে সময় লাগেনি বেশিদিন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে ফের রাস্তায় নামার পথ খুঁজছেন এ চালক।

গাড়ি বন্ধ থাকায় ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনালে আটকা পড়েছেন কয়েকশ পরিবহন শ্রমিক। একই অবস্থা ঢাকার মহাখালী, সায়েদাবাদ, ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে। দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরের টার্মিনালেই আটকে পড়েছেন হাজার হাজার পরিবহন শ্রমিক। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। খাবার সংকটে পড়েছেন পরিবারের সঙ্গে থাকা পরিবহন শ্রমিকরা।

দেশে সড়ক পরিবহন শ্রমিকের সংখ্যা কম-বেশি ৫০ লাখ। নৌ-পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন আরো কয়েক লাখ। মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের চার ভাগের তিন ভাগ শ্রমিকই বসে আছেন। বাকি এক ভাগ সড়ক ও নৌপথে পণ্য পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত। এ বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে ত্রাণ সহায়তার জন্য দেশের প্রত্যেকটি জেলা প্রশাসনকে শ্রমিকদের তালিকা দিয়েছে স্থানীয় সংগঠনগুলো।

জেলা প্রশাসনকে ত্রাণ সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হলেও অনেক জেলায়ই তা পাননি পরিবহন শ্রমিকরা। ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ এসেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কাছ থেকে। ফেডারেশনের নেতারা জানিয়েছেন, ত্রাণ না পাওয়ায় জীবিকার তাগিদে অনেকেই রাস্তায় নামার চেষ্টা করছেন।

রাজধানীর ৪২ লাখ দিনমজুর সরকারি সহায়তার বাইরে

৩০ এপ্রিল, ২০২০, কালের কন্ঠ

রাজধানীর রায়েরবাজারের সাদেক খান সড়কে প্রতিদিন ভোরে দিনমজুরের হাট বসত। ঝুড়ি, কোদাল, শাবলসহ অন্য সরঞ্জাম নিয়ে হাটে ভিড় জমাতেন তাঁরা। মহাজনদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কাজ ও মজুরি ঠিক করে চলে যেতেন কাজ করতে। দিন শেষে মজুরি নিয়ে বাজার করে বাসায় ফিরতেন। কিন্তু প্রতিদিনের এ চিত্র এখন আর দেখা যায় না।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর রাজধানীর চেনা চেহারা অচেনা হয়ে গেছে। মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছুই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে দুর্দশায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

বিভিন্ন বেসরকারি হিসাবে, রাজধানীতে কমপক্ষে ৪২ লাখ দিনমজুর এখন তীব্র সংকটে আছেন খাদ্যের পর্যাপ্ত সহায়তার অভাবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘোষিত বরাদ্দ পাঁচ কোটির বেশি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ভাগ করলে মাথাপিছু মাত্র ১৫০ টাকা করে পড়ে, যা তাঁদের জীবনধারণের জন্য অপ্রতুল।

সংকটে ১০ লাখ নরসুন্দর

৩০ এপ্রিল, ২০২০, দেশ রুপান্তর

ঢাকার জাফরাবাদ এলাকায় ছোট একটি সেলুন চালান নোয়াখালীর কৃষ্ণচন্দ্র শীল। মালিক-কর্মচারী বলতে তিনি নিজেই। ক্ষুর-কাঁচি চালানোর তালে তালে কৃষ্ণর মুখে থাকে গান, কৌতুক। গ্রাহকরাও আনন্দে হাসেন। তবে গতকাল বুধবার সকালে আমুদে এ লোকটির মুখে আর হাসি দেখা গেল না। মুখ ভার করে বন্ধ সেলুনটির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আছেন কেমন জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘ভালো না ভাই। কাম করি, ভাত খাই। সেই কাম এক মাস নাই। তাইলে বউ-বাচ্চা, বুড়া মারে লইয়া কেমন আছি বুইজা লন।’

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট অচলাবস্থায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দেশের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষ। এ তালিকায় আছে অন্তত কয়েক লাখ নরসুন্দর বা ক্ষৌরকার। তাদের মধ্যে রাজধানীর সেলুনগুলোর কর্মীরা পড়েছেন চরম দুর্দিনে। তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় কর্মহীন থাকলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা পাননি। ফলে পরিবার বাঁচাতে অনেকে রিকশা চালাচ্ছেন, ভ্যানে সবজি বিক্রি করছেন।

বাংলাদেশ নরসুন্দর কল্যাণ সমিতি কেন্দ্রীয় পরিষদের হিসাবে, দেশে মোট নরসুন্দর বা সেলুনকর্মীর সংখ্যা ১০ লাখের কিছু বেশি। ঢাকা শহরে এ সংখ্যা ৫২ হাজার। এ ছাড়া গোটা দেশে প্রায় ৩ লাখ বিউটি পারলারকর্মী রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন। করোনাকালে কাজ না থাকায় দিন দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি ত্রাণ যায়নি। ঢাকার অনেক কলোনিতে সিটি করপোরেশনের ত্রাণ গেলে জনপ্রতিনিধিরা ভোটার আইডি দেখে দুই-চারজনের বেশি দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের।

এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে চিঠি লিখে ত্রাণ চেয়েও মেলেনি বলে জানিয়েছেন নরসুন্দর কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার শীল। গতকাল দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘নরসুন্দররা দিনমজুর, তাদের হাতে কোনো সঞ্চয় থাকে না। এত দিন হয়ে গেল সরকারি-বেসরকারি কেউ আমাদের খোঁজ নিল না। আমরা ত্রাণ চাইলেও উত্তর পাই না। সেলুনে ক্রিম বিক্রেতা কোম্পানিগুলোর কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম তারাও দেয়নি। সবার প্রতি অনুরোধ আমাদের দিকে একটু তাকান।’

সাভারে ২৪ ঘণ্টায় আটজনের করোনা শনাক্ত, সাতজনই পোশাক কর্মী

০১ মে ২০২০, প্রথম আলো

ঢাকার সাভারে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও আটজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে সাভারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩০ জনে। পাশের উপজেলা ধামরাইয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সাতজন।

সাভারে নতুন আক্রান্তদের সাতজনই বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক। তাঁদের বয়স ৩৫ থেকে ৩৬ বছরের মধ্যে। তাঁরা যেসব এলাকায় থাকতেন গতকাল শুক্রবার ওই সব এলাকা লকডাউন করে দিয়েছে পুলিশ।

ঢাকায় ঢুকতে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে পোশাকশ্রমিকদের

০২ মে ২০২০, প্রথম আলো

ঢাকায় প্রবেশে কারখানার পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের। পরিচয়পত্র না দেখাতে পারলে ঢাকার প্রবেশপথেই তাঁদের আটকে দেওয়া হবে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) থেকে আজ শনিবার নির্দেশনাটি দিয়েছে। এটি বাস্তবায়নে পুলিশের মহাপরিদর্শক, শিল্প পুলিশের মহাপরিচালকসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরে নির্দেশনার অনুলিপি পাঠিয়েছে অধিদপ্তর।

ডিআইএফইর মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‌‘কোনো শ্রমিকের কারখানার কাজের জন্য ঢাকায় আসার প্রয়োজন হলে তাঁকে কারখানার আইডি কার্ড সঙ্গে বহন করতে হবে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রদর্শন করতে হবে। অন্যথায় ঢাকার প্রবেশপথ, ঘাট ও স্থানসমূহে তাঁদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না।’

ফেরি পার হওয়া হাজার হাজার শ্রমিক ঝুঁকিতে

মে ০৩, ২০২০, বণিক বার্তা

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) পাঁচজন কর্মী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটের বিভিন্ন ফেরিতে কাজ করতেন তারা। সবাই আক্রান্ত হয়েছেন গত এক সপ্তাহের মধ্যে। এ সময়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে ফেরিতে করে ঢাকায় এসেছেন হাজার হাজার শ্রমিক। এ শ্রমিকদের কারো মাধ্যমেই বিআইডব্লিউটিসির কর্মীরা নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর ফেরিগুলোতে মানুষ যেভাবে গাদাগাদি করে এসেছে, তাতে নভেল করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন ফেরি পার হয়ে ঢাকায় ফেরা হাজার হাজার শ্রমিক।

ঘাটের ফেরি কর্মীদের মধ্যে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস ধরা পড়ে গত ২৬ এপ্রিল। সেদিন দুই কর্মীর শরীরে কভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার কথা জানান গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা। এর আগেই আক্রান্ত কর্মীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। ফলাফল আসার পর কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয় তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের। দুই কর্মীর নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের আরো ২০ কর্মীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৩০ এপ্রিল এসব নমুনার ফলাফল আসে, তাতে নতুন করে আরো তিনজনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে।

পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পের শ্রমিকদের ওপর হামলা, আহত

০৭ মে ২০২০, প্রথম আলো

পদ্মা সেতুর রেল–সংযোগ প্রকল্পের শ্রমিকদের ওপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ৯ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। ওভারটাইমের মজুরি ও বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করলে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে আটায় মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার সিতারামপুর এলাকার রেলওয়ের প্রকল্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত কয়েকজন শ্রমিক বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকায় কাজের স্থান থেকে শ্রমিকদের বাইরের যাওয়ায় নিয়ম নেই। যত দিন পরিস্থিতি ঠিক না হয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের প্রকল্প এলাকার ভেতর থেকেই কাজ করতে বলে। এ জন্য প্রত্যেক শ্রমিককে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ ৩০০ টাকা করে ওভারটাইম ও ঈদের বোনাস দেওয়ার কথা ছিল। এখানে প্রায় ৬৫০ থেকে ৭০০ শ্রমিক কাজ করেন। মাসের শুরুতে তাঁদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। তবে বুধবার শ্রমিকদের জানানো হয়, ওভারটাইম ৩০০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা করে দেওয়া হবে। বিষয়টি জানার পর তাঁরা কাজ বন্ধ রেখে সন্ধ্যার পর থেকে বিক্ষোভ করতে থাকেন। রাত সাড়ে আটটায়ও তাঁদের বিক্ষোভ চলছিল। একপর্যায়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁদের ওপর ছররা গুলি ছোড়েন। এতে ছয়জন শ্রমিক ছররা গুলিবিদ্ধ হন। অপর তিন শ্রমিককে বন্দুক ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়।

শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাঁদের ঠিকমতো খাবার দিচ্ছে না, থাকার জায়গাও ভালো না। ৫ জনের জায়গায় ১০ জনকে ঘুমাতে হচ্ছে। কাজেও খুব কষ্ট দিচ্ছে। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে মজুরি কেটে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির গবেষণা: ৯৬ পোশাকশ্রমিক করোনায় আক্রান্ত

০৭ মে ২০২০, প্রথম আলো

রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের ৯৬ জন শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া একজন কর্মকর্তাও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় আক্রান্তদের ৮০ শতাংশ শ্রমিকই ঢাকা বা তার আশপাশের শিল্প এলাকায় কর্মরত ছিলেন।

আক্রান্ত পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ ও ৪৭ শতাংশ নারী। তা ছাড়া আক্রান্তদের ৫০ শতাংশের বয়স ২৫-৩৫ বছর। ৪০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর। আর ১০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের ওপরে। গত ২৬ এপ্রিল পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার পর ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ শতাংশ শ্রমিক। তার মানে, কারখানা চালুর পর তুলনামূলক কম দিনে বেশিসংখ্যক পোশাকশ্রমিক আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির এক গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে। ৯ এপ্রিল থেকে গতকাল ৬ মে পর্যন্ত দেশের ২৫টি গণ্যমাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণাটি করে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি।

ফের বেতন জটিলতায় পোশাক শ্রমিকরা

৮ মে, ২০২০, দেশ রুপান্তর

করোনাঝুঁকির মধ্যে কাজ করলেও এখনো এপ্রিলের বেতন পাননি পোশাকশ্রমিকরা। শ্রম আইন অনুযায়ী, মাসপূর্তির পরের ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বেতন পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন পরিশোধে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ ছাড়ের প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। সব প্রক্রিয়া শেষে এই অর্থ শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবে পৌঁছাতে আগামী ১৫-২০ মে পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এদিকে যেসব কারখানা প্রণোদনার অর্থ নেবে না সেসব কারখানাও অন্য মালিকদের চাপে বেতন দিচ্ছে না। মালিক সংগঠন বলছে, কয়েকটি কারখানা যদি বেতন দেয়, তাহলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।

গত মার্চের বেতন নিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হয় পোশাকশ্রমিকদের। বেশিরভাগ কারখানা তাদের বেতন দেওয়া শুরু করে গত ১২ এপ্রিলের পর থেকে। অধিকাংশ কারখানা বেতন দেয় ১৬-২০ এপ্রিল। এখনো কয়েকটি কারখানার মার্চের বেতন বকেয়া রয়েছে বলে দাবি শ্রমিকদের। আদায়ে প্রায়ই তাদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

শতভাগ মজুরির দাবিতে আন্দোলন

১০ মে ২০২০, প্রথম আলো

সরকার-মালিক ও শ্রমিকনেতারা মিলে এপ্রিলে পোশাকশ্রমিকদের ৬৫ শতাংশ মজুরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু শতভাগ মজুরির দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছেন শ্রমিকেরা।

আশুলিয়া ও গাজীপুরের অন্তত ২৭টি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা গতকাল শনিবার শতভাগ মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় একাধিক কারখানা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সাথে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে পুলিশ।

যেসব কারখানায় গতকাল শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।.. …

বিক্ষুব্ধ কয়েকজন পোশাকশ্রমিক বলেন, সরকার শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য নামমাত্র সেবা মাশুলে প্রণোদনা দিচ্ছে। সেখান থেকে অর্থ নিয়ে পুরো মজুরি দিতে পারেন মালিকেরা। তা ছাড়া এত বছর ব্যবসা করার পর আপতকালীন এক মাসের পুরো মজুরি না দেওয়া খুবই দুঃখজনক। তাই বাধ্য হয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন।

আশুলিয়ায় বকেয়া শতভাগ বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ

১২ মে ২০২০, প্রথম আলো

ঢাকার আশুলিয়ায় বকেয়া ও শতভাগ বেতনের দাবিতে তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা আজ মঙ্গলবার আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। এর মধ্যে একটি কারখানার শ্রমিকদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামগড়া এলাকার ফ্যাশন নিটওয়্যারের শ্রমিকেরা  মঙ্গলবার সকালে যথাসময়ে কারখানায় গিয়ে কাজ শুরু করেন। কাজ শুরুর কিছু সময় পরে তাঁরা এপ্রিল মাসের শতভাগ বেতন অথবা সরকার ঘোষিত ৬৫ শতাংশ বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত ২ হাজার ৫০০ করে দাবি করেন। কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবি পূরণে রাজি না হওয়ায় শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে অবস্থান নেন।

ওদের খবর কেউ রাখে না

১৩ মে ২০২০, সমকাল

মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বাসসহ অন্যান্য যাত্রীবাহী যানের চালক শ্রমিকরা ৪৮ দিন ধরে বেকার। মোট শ্রমিকের একটি ছোট অংশ টার্মিনালে বাসের মধ্যে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা থেকে পাহারা দিয়ে দৈনিক ৩০০ থেকে ২০০ টাকা খোরাকি পাচ্ছেন। বাকিদের কানাকড়িও আয় নেই। তাদের দিন কাটছে অনাহারে।

শ্রমিকদের এমন দুর্দিনে পরিবহন নেতারা গত দেড় মাসে তাদের খোঁজখবর নেওয়া দূরের কথা, টার্মিনালেও একবার উঁকি দেননি। প্রায় শতভাগ শ্রমিকের অভিযোগ, গাড়ির মালিকের কাছ থেকে খোরাকি বাবদ কিছু পেলেও একটি টাকাও সহায়তা পাননি নেতাদের কাছ থেকে। তবে পরিবহন নেতাদের দাবি, ঢালাও অভিযোগ ঠিক নয়। তারা যথাসাধ্য করছেন।

কিন্তু সরেজমিন চিত্রের সঙ্গে নেতাদের বক্তব্য মিলছে না।… …

মোবাইলে ওয়েদারডটকম রোববার দুপুর আড়াইটায় সায়েদাবাদের তাপমাত্রা দেখাচ্ছিল ৩৬ ডিগ্রি। আর ‘রিয়েল ফিল’ ছিল ৪২ ডিগ্রি। মাসখানেক ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা বাসের ভেতরের তাপমাত্রা কোনোভাবেই ৫০ ডিগ্রির কম নয়। গরম সইতে না পেরে পরিবহন শ্রমিক জসিম উদ্দিন ফরাজী বাসের নিচে মালামালের বক্সে গামছা বিছিয়ে শুয়েছিলেন। করোনা সংকট শুরুর পর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গত দেড় মাস এভাবে দিন কাটাচ্ছেন ৫৫ বছর বয়সী এই পরিবহন শ্রমিক। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা বাস পাহারা দিয়ে পান দৈনিক ২০০ টাকা।.. …

সিডিএম পরিবহনের সুপারভাইজার টার্মিনালের ভেতরে নিয়ে দেখালেন কীভাবে তাদের জীবন চলছে। হোটেলে খেলে ২০০ টাকায় ইফতার আর সেহরিই হবে না, বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানকে কী পাঠাবেন? তাই তারা নিজেরা রান্নাবান্না করে খাচ্ছেন। কিন্তু টার্মিনালে তো চুলা, রান্নাঘর নেই। রাঁধবেন কোথায়? সে জন্য আশপাশের গাছ থেকে ডাল ভেঙে এনে মাটিতে ইট পেতে রান্না চলছে। সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ইফতার বানানোর আয়োজন চলছিল। আলুভর্তা, ডাল ও ভাত- এই দিয়ে ইফতার করেন শ্রমিকরা। যেটুকু থেকে যায় তা দিয়ে চলে সেহরি।

আশুলিয়ায় বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ-ভাঙচুর

মে ১৪, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

সাভারের আশুলিয়ায় বকেয়া বেতন, অর্জিত ছুটির টাকা এবং ঈদ বোনাসের দাবিতে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

আজ বৃহস্পতিবার আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার মেডলার অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার ভিতরে এ ঘটনা ঘটে।

শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা কারাখানার ফটকে তালা দিয়ে ভেতরে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফটক কেটে ভেতরে ঢুকে জলকামান ও টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করে।

মজুরির পর বোনাসও কম পাবেন পোশাকশ্রমিকেরা

১৬ মে ২০২০, প্রথম আলো

রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা গতবারের তুলনায় অর্ধেক ঈদ বোনাস পাবেন। বাকি অর্ধেক পরবর্তী ছয় মাসে সমন্বয় করে দেবে মালিকপক্ষ। ফলে মজুরির পর আপতত ঈদ বোনাসও কম পাবেন পোশাকশ্রমিকেরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজ শনিবার আয়োজিত সভায় পোশাকশ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ নিয়ে সিদ্ধান্তটি হয়েছে।

গাইবান্ধায় ট্রাক উল্টে প্রাণ গেল ১৩ জনের

২২ মে, ২০২০, কালের কন্ঠ

গোপনে ত্রিপলের নিচে লুকিয়ে রডবোঝাই ট্রাকে ঈদে বাড়ি ফিরছিল তিন শিশুসহ ১৩ জন যাত্রী। প্রবল বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে রডবাহী ওই ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে পানিভর্তি খাদে উল্টে পড়ে। ঘটনাস্থলেই রডের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারায় ওই ১৩ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের দুবলাগাড়ী জুনদহ এলাকায় ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনার বেশ পরে স্থানীয়রা দুর্ঘটাকবলিত ট্রাকটি দেখতে পান। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন—গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের ছোট ভগবানপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে পোশাক শ্রমিক মহসিন মিয়া (২৬), রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ধোরাকান্ত গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে শামছুল আলম (৬৫) ও নাতি সোয়াইত (৭)। সোয়াইতের বাবার নাম সুমন মিয়া।

সরকারের নিষেধাজ্ঞার পরও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ঈদ করতে এসব মানুষ বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। তাঁরা ট্রাকের ড্রাইভার-হেলপারদের সঙ্গে যোগসাজশে ত্রিপলের নিচে লুকিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় তাঁদের আর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করা হলো না। গ্রামবাসী জানান, সম্ভবত সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে ট্রাকটি দুর্ঘটনায় পড়ে। বৃষ্টি কিছুটা কমে এলে কিছু মানুষ পথে বের হন। তাঁরা ট্রাকটি দেখতে পান। প্রথমে তাঁরা মালবাহী ট্রাক দুর্ঘটনায় পড়েছে ভাবলেও  কাছে গিয়ে ভেতরে দুমড়ে-মুচড়ে থাকা মানুষ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।

লিবিয়ায় গুলি করে ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যা

২৮ মে ২০২০, প্রথম আলো

লিবিয়ায় ৩০ জন অভিবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স। অন্য চারজন আফ্রিকান অভিবাসী।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, লিবিয়ার মানব পাচারকারী এক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা ওই ৩০ অভিবাসীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। ওই পাচারকারী আগেই মারা গেছেন। সেই মৃত্যুর দায় এই অভিবাসীদের ওপর চাপিয়েছে তার স্বজনেরা। তার প্রতিশোধ নিতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

সেই পোশাককর্মীর লাশ দাফনে বাধা দিয়েছিলেন ইউপি চেয়ার‌ম্যান: তদন্ত কমিটি

মে ২৯, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

ঢাকা থেকে ফেরার পথে মৃত্যুবরণকারী পোশাককর্মী মাহমুদা বেগম মৌসুমির (২১) লাশ দাফনে বাধা দিয়েছিলেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ নিশাত। জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কমিটি ঘটনাটি তদন্তের পর এ তথ্য জানান ডিসি আবু জাফর। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বৃহস্পতিবার (২৮ মে) চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমারা গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফার একমাত্র মেয়ে পোশাককর্মী মাহমুদা বেগম মৌসুমি গত ২২ মে ঢাকা থেকে ট্রাকে বাড়ি ফেরার পথে মারা যান। ৯৯৯-এ সংবাদ পেয়ে মৌসুমির লাশ উদ্ধার করে রংপুর তাজহাট থানা পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে বাবা গোলাম মোস্তফার কাছে ২৩ মে লাশ হস্তান্তর করে তারা। এরই মধ্যে সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে বুড়িমারীতে গুজব রটে। স্থানীয়রা লাশ এলাকায় প্রবেশে বাধা দিলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ নিশাতের কাছে ফোন করেন মেয়েটির বাবা গোলাম মোস্তফা। কিন্তু তিনিও অনুমতি না দিলে লাশ দাফনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে পাঁচ হাজার টাকা দেন গোলাম মোস্তফা। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার লাশটি দাফন না করে তিস্তা নদীতে ভাসিয়ে দেন। সেই লাশ নদী থেকে উদ্ধার করে দাফনের ব্যবস্থা করে আদিতমারী থানা পুলিশ।

মে মাসের বেতন পরিশোধ হয়নি ৩৭২৩ কারখানার

জুন ১৭, ২০২০, বণিক বার্তা

দেশের শিল্প অধ্যুষিত ছয় এলাকায় (আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা) উৎপাদনমুখী সব খাতের শিল্প-কারখানা আছে ৭ হাজার ৬০২টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭২৩টি কারখানা এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের মে মাসের বেতন পরিশোধ করেনি। যদিও শ্রম আইন অনুযায়ী মাসের প্রথম সাত কর্মদিবসের মধ্যে আগের মাসের বেতন পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণেই এ ছয় শিল্প এলাকায় একক খাতভিত্তিক কারখানার সংখ্যা বেশি। এ ছয় এলাকায় শুধু পোশাক খাতকেন্দ্রিক কারখানা আছে ৩ হাজার ৩৭২টি। শ্রমিকদের মে মাসের বেতন পরিশোধ না করা কারখানাগুলোর মধ্যেও পোশাক খাতকেন্দ্রিক কারখানার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।.. …

শিল্পকারখানায় ১৭ দিনে ২১ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই

১৯ জুন, ২০২০, দেশ রুপান্তর

চলতি মাসে ১৭ দিনে তৈরি পোশাকসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ২১ হাজার ৩৩১ জন শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ছাঁটাই হয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএইএ) সদস্য ৮৬টি কারখানায়, ১৬ হাজার ৮৫৩ শ্রমিক। বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সদস্য ১৬টি কারখানায় ছাঁটাই করা হয়েছে ২ হাজার ২৯৮ শ্রমিক। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্য ৪টি কারখানায় ২৫৮ ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কর্র্তৃপক্ষের (বেপজা) ৮টি কারখানায় ৫৬ শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। এসব সংস্থার বাইরে বিভিন্ন ধরনের ১৫ কারখানায় ছাঁটাই করা হয়েছে আরও ১ হাজার ৮৬৬ জন। বাংলাদেশ শিল্প পুলিশের পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।.. …

কড়াইল বস্তি: কোনো পরীক্ষা নেই তাই শনাক্তও নেই

জুন ১৯, ২০২০, বণিক বার্তা

.. …পশ্চিমে বনানী। উত্তর-পশ্চিমে গুলশান। দুই অভিজাত এলাকার ঠিক মধ্যখানে কড়াইল বস্তি। আয়তন-জনসংখ্যায় ঢাকার সবচেয়ে বড় বস্তি কড়াইল। কমবেশি বিশ হাজার খুপরি ঘরে লাখ তিনেক মানুষের বাস। একেকটি খুপরি ঘরে থাকে পাঁচ-সাতজন। পাঁচ-সাতটি খুপরির জন্য একটি টয়লেট। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সংক্রামক রোগের সব উপকরণই বিদ্যমান। জ্বর-সর্দির রোগী থাকলেও কড়াইল বস্তিতে করোনা রোগীর সংখ্যা কত কিংবা আদৌ রোগী আছে কিনা, সে সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই। রাখা হয়নি পরীক্ষার ব্যবস্থাও। করোনা আতঙ্ক থাকলেও বস্তিবাসী বেশি চিন্তিত জীবিকা নিয়ে। দুবেলা ভাতই যেখানে জোটে না, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা তাদের জন্য বিলাসিতা মাত্র।

‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’ খ্যাত মুম্বাইয়ের ধারাবি বস্তির সঙ্গে ঢাকার কড়াইল বস্তির খুব একটা পার্থক্য নেই। গতকাল সরেজমিন ঘুরে কড়াইলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কোনো সরকারি উদ্যোগই চোখে পড়েনি। দুয়েকটি হাত ধোয়ার ড্রাম বসিয়েই দায় সেরেছে সিটি করপোরেশন। বাসিন্দার সিংহভাগই মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করছে। স্থানের সংকুলান না হওয়ায় চলাফেরা করছে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে। পুরো বস্তি ঘুরে কোথাও জীবাণুনাশক টানেল যেমন চোখে পড়েনি, তেমনি দেখা মেলেনি করোনার নমুনা সংগ্রহের কোনো বুথও।

এত অবহেলিত থাকার পরও করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি বলে দাবি বস্তিবাসীর। কড়াইল বস্তিতে ১৮ বছর ধরে থাকছেন মর্জিনা বেগম। তিনি জানান, দুয়েকজনের জ্বর সর্দি হওয়ার খবর তিনি শুনেছেন। কিন্তু কারো করোনা হয়েছে, এমন কিছু তিনি গতকাল পর্যন্ত জানতে পারেননি। তার দাবি, নোংরা পরিবেশে থাকলেও কড়াইল বস্তি এখনো করোনামুক্ত। মর্জিনা বেগম গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে। মার্চের মাঝামাঝিতে তাকে কাজে নিষেধ করে দেয়া হয়। এর পর থেকেই বেকার জীবন কাটছে। করোনাভাইরাসের চেয়ে জীবিকার ভয়টাই বেশি পাচ্ছেন বলে বণিক বার্তাকে জানান তিনি।… …

প্যারাডাইস কেব্ল শ্রমিকদের বিক্ষোভ

২৩ জুন, ২০২০, দেশ রুপান্তর

নারায়ণগঞ্জের প্যারাডাইস কেব্ল লিমিটেডের শ্রমিকরা ১৩ মাসের বকেয়া মজুরির দাবিতে গত রবিবার থেকে শ্রমভবনের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্মারকলিপি দিতে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে তাদের মিছিল রওনা হলে পুলিশ বাধা দেয়।

পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের অদূরে কদম ফোয়ারার কাছে সড়কে সমাবেশ করেন শ্রমিকরা। সমাবেশ থেকে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়।

শ্রমিকদের অভিযোগ, প্যারাডাইজ কেব্ল ৩০ বছরের বেশি বৈদ্যুতিক তার উৎপাদন করছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও করছে। কিন্তু প্রায় এক বছর মালিকপক্ষ উৎপাদিত পণ্য বিক্রির অর্থ পুনঃবিনিয়োগ করছে না। এমনকি কারখানার অধীনে ৭০০ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নিয়ে লাভজনক অবস্থানে থাকলেও উৎপাদন স্থগিত রেখেছে। এসবের আড়ালে অর্থপাচার করছে। আর মালিকপক্ষ পরিকল্পিতভাবে ১৩ মাস শ্রমিকদের মজুরি বন্ধ রেখেছে। আগের তিন বছরের ওভারটাইম ভাতাও দেয়নি। এ অবস্থায় শ্রমিকরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। গত ২১ এপ্রিল শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে করোনাকালে শ্রমিকদের দুই কিস্তিতে দুই মাসের বকেয়া পরিশোধে চুক্তি করলেও মালিকপক্ষ তা বাস্তবায়ন করেনি। বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন বলে জানান শ্রমিকরা।

রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধ, শ্রমিকদের জন্য হাজার কোটি টাকা

২ জুলাই, ২০২০, দেশ রুপান্তর

রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।

এ পর্যন্ত এই পাটকলগুলোর পুঞ্জিভূত ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা জানিয়ে আহমদ কায়কাউস বলেন, এখানে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে তাদের অবসরে পাঠানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালের সর্বশেষ মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রায় ২৫ হাজার পাটকল শ্রমিক অবসরকালীন সুবিধাসহ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পাবেন। সে জন্য আগামী তিন দিনের মধ্যে শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

এর আগে সকালে গণভবনে মুখ্য সচিব, অর্থ সচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুখ্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, আজ যখন প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন।

পাটকলে সুনসান নীরবতা

০৪ জুলাই ২০২০, সমকাল

বৃহস্পতিবার রাতে সারাদেশের ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করায় একদিনেই যেন চিরচেনা দৃশ্য বদলে গেছে। গতকাল শুক্রবার মিলগুলোর গেটে বন্ধ-সংক্রান্ত বিজেএমসির নোটিশ ঝুলতে দেখা যায়। খুলনা নগরীর খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের প্লাটিনাম, দৌলতপুর, খালিশপুর ও ক্রিসেন্ট জুট মিল এবং এর আশপাশের সড়কে ঘুরে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। একই চিত্র দেখা গেছে রাজশাহীর একমাত্র সরকারি পাটকলেও। তবে নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলে নীরবতা ছিল না। কয়েকশ’ শ্রমিককে মিল বন্ধের নোটিশ পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা যায়।… …

কোয়ারেন্টিন শেষে ২১৯ প্রবাসীকে পাঠানো হলো কারাগারে

০৫ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

কুয়েত, কাতার ও বাহরাইন থেকে আসা ২১৯ জনকে পুলিশি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলে পাঠিয়েছেন আদালত। তাঁরা উত্তরা দিয়াবাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য সলাপরামর্শ করছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজ রোববার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত দেশে ফেরত এই প্রবাসীদের কারাগারে পাঠান। আদালতকে বলা হয়, পুলিশ গোপন সূত্রে ওই সলাপরামর্শের খবর জানতে পেরেছে।

তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল মুত্তাক্বীন প্রথম আলোকে বলেন, এই ২১৯ জন কুয়েত, কাতার ও বাহরাইনে বিভিন্ন অপরাধে সাজা খাটছিলেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে তাঁদের মুক্তি দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল শনিবার তাঁদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে। এখন তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।.. …

রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধ, শ্রমিকদের জন্য হাজার কোটি টাকা

২ জুলাই, ২০২০, দেশ রুপান্তর

রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।

এ পর্যন্ত এই পাটকলগুলোর পুঞ্জিভূত ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা জানিয়ে আহমদ কায়কাউস বলেন, এখানে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে তাদের অবসরে পাঠানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালের সর্বশেষ মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রায় ২৫ হাজার পাটকল শ্রমিক অবসরকালীন সুবিধাসহ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পাবেন। সে জন্য আগামী তিন দিনের মধ্যে শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

এর আগে সকালে গণভবনে মুখ্য সচিব, অর্থ সচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুখ্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, আজ যখন প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন।

খুলনায় আটক ২ পাটকল শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার দেখাল পুলিশ

০৭ জুলাই ২০২০, সমকাল

খুলনায় সদ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের দুইজন শ্রমিক নেতাকে রোববার রাতে আটকের পর সোমবার গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। তাদেরকে ২০১৯ সালে দায়ের হওয়া পুলিশ বক্সে হামলা ও ভাংচুর মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

ওই দুই শ্রমিক নেতা হলেন ইস্টার্ন জুট মিলের শ্রমিক ও পাট শিল্প রক্ষা যুব জোটের আহ্বায়ক অলিয়ার রহমান এবং প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের শ্রমিক ও পাট শিল্প রক্ষা যুব জোটের উপদেষ্টা নূর ইসলাম।

অলিয়ার রহমানের ছেলে নাঈম শেখ জানান, গত রোববার রাত আড়াইটার দিকে নগরীর খানজাহান আলী থানার মশিয়ালী এলাকার বাড়িতে কয়েকজন লোক এসে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলে। তাদের হাতে ওয়ারলেস ও রাইফেল ছিল। আমরা দরজা খুললে তারা বলে বাবাকে নিয়ে মিলে যাবে। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবাকে নিয়ে গাড়িতে করে চলে যায়।

নূর ইসলামের ছেলে মো. জুয়েল বলেন, রোববার রাত সাড়ে তিনটার দিকে কিছু লোক আমাদের খালিশপুরের বিআইডিসি রোডের বাসায় আসে। এ সময় তারা বলতে থাকে এই দরজা খুলুন আগুন লেগেছে। তখন আমরা তাদের বলি আপনারা কারা, তারা বলে আমরা ফায়ার সার্ভিসের লোক। তারপর চোখের পলকে বাবাকে নিয়ে চলে যায়।… …

হতাশায় ৩০ হাজার শ্রমিক

১১ জুলাই, ২০২০, দেশ রুপান্তর

করোনাকালে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে খুলনা নগরীর খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। হঠাৎই চাকরি হারানোর বেদনা-হতাশার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সম্প্রতি দুই শ্রমিক নেতাকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার পর সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। দুশ্চিন্তা আর অজানা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের নিরাপদ রাখতে অনেক শ্রমিক পরিবার নগর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমাচ্ছে। সব মিলিয়ে খালিশপুর শিল্পাঞ্চল যেন পরিণত হয়েছে এক ভুতুড়ে নগরীতে।

গত কয়েক দিন খালিশপুর শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে শ্রমিকদের চিরচেনা পদচারণা নেই। সাইরেনের শব্দও শোনা যাচ্ছে না। থেমে গেছে কোলাহল। মিলগেটগুলোর সামনে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। তাদের চোখেমুখে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে চাকরি হারানোর বেদনা, বেতন না পাওয়ার হতাশা ও গ্রেপ্তার আতঙ্ক। গত মঙ্গলবার প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের ফটকে নাজমুল, রবিউল, রিপন, মেহেদী, জহির, বাবু ও শফিকুলসহ ৮-১০ জন হতাশ হয়ে বসে ছিলেন। তারা এই মিলে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে চাকরি করতেন। এখন চাকরি হারিয়ে অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছেন। হতাশার সুরে তারা বলেন, কী করবেন, কোথায় যাবেন তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।

শ্রমিক নেতারা জানায়, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুট মিলে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। এসব শ্রমিকের ১২ থেকে ১৫ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। মিলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও দুই মাসের বেতন বকেয়া। এ অবস্থায় গত ২ জুলাই রাতে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনাঞ্চলের ৯টিসহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল আপাতত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের অবসায়নের (অব্যাহতি) সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

এদিকে মিল বন্ধের সিদ্ধান্তের পর শ্রমিকরা কোনোভাবেই যেন তাদের দাবি আদায়ে সংগঠিত বা রাস্তায় না নামতে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক চাপও দেওয়া হচ্ছে কম-বেশি। এমন পরিস্থিতিতে গত ৫ জুলাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বাড়ি থেকে গভীর রাতে ইস্টার্ন জুট মিলের শ্রমিক ও পাটশিল্প রক্ষা যুব জোটের আহ্বায়ক অলিয়ার রহমান এবং প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের শ্রমিক ও পাটশিল্প রক্ষা যুব জোটের উপদেষ্টা নূর ইসলামকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ২০ ঘণ্টা পর  তাদের পুরনো এক মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দুই শ্রমিক নেতাকে আটকের পর থেকে শ্রমিকদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ বিষয়ে মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছে শ্রমিকরা। এমন গুমোট পরিস্থিতিতে অনেক শ্রমিক মিল এলাকা ত্যাগ করে পরিবারসহ গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন।… …

বেতনের দাবিতে জয়পুরহাটে চিনিকল শ্রমিকদের বিক্ষোভ

১২ জুলাই ২০২০, সমকাল

জয়পুরহাটে তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে চিনিকল চত্বরে আন্দোলন করছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিনিকলের সামনের রাস্তা অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে তিন শতাধিক শ্রমিক বিক্ষোভ মিছিল করেন শহরের রাস্তায় রাস্তায়। … …

জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আলী আক্তার বলেন, তিন মাসের শ্রমিক-কর্মচারীদের মূল বেতন, গ্রাচুইটি ও এরিয়া বিলসহ ১৫ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। বেতন না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দ্রুত পরিশোধ না করলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানান তিনি।… …

মধ্যপাড়া পাথরখনি: অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাচ্ছেন শ্রমিকরা

১৪ জুলাই, ২০২০, দেশ রুপান্তর

তিন মাসের বকেয়া বেতন-বোনাসসহ ছয় দফা দাবিতে টানা এক মাস আন্দোলন চালিয়ে আসছেন দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথরখনির শ্রমিকরা। কিন্তু এর মধ্যে এসবের সুরাহা না হওয়ায় আজ মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ও অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন তারা। গতকাল সোমবার খনি গেটের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ ও মানববন্ধন থেকে এ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। শ্রমিকরা জানান, করোনাসংকটে টানা তিন মাস বেতন না পেয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতন জীবন যাপন করছেন তারা। বকেয়া বেতন চেয়ে খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের (জিটিসি) সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। পরে আলটিমেটাম দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও জিটিসির কোনো কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।… …

অর্থনীতি

আধা কেজি চালের যুদ্ধ

এপ্রিল ২৫, ২০২০, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা

শুরু হয়েছে সংযমের মাস রমজান। সিয়াম সাধনায় নিয়োজিত হয়ে সারাবেলা খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকার সময়। কিন্তু এ বছর ফরিদা বেগমের বাসায় রমজান এসেছে বেশ আগেই। করোনাভাইরাসের প্রকোপে আর ১০টি নিম্নবিত্ত পরিবারের মতোই তার পরিবারেরও জুটছে না দুমুঠো খাবার।

ফরিদা শুনেছিলেন শনিবার ত্রাণ মিলবে। সে আশায় বুক বেঁধে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে ছুটেছিলেন বংশালে। চড়া রোদ্দুরের মধ্যে বংশালে পৌঁছানোর পর মেলে মাত্র আধা কেজি চাল।

পরিবারের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে সেই চাল নিয়েই আবার ছুটবেন বাসার দিকে। কিন্তু বেঁচে থাকার অদম্য মনোবলের সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে উঠতে পারেনি তার শরীর। অভুক্ত পেটে, আসন্ন বিপদের শঙ্কায় আর প্রচণ্ড রোদের তাপে সংজ্ঞা হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পাশেই পড়ে ছিল দিনভর সংগ্রামের পর যোগাড় করা সেই আধা কেজি চাল।

ধানের দাম পাচ্ছেন না হাওড়ের কৃষক

১ মে ২০২০, বণিক বার্তা

কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চলতি বোরো মৌসুমে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৪০ টাকায় কেনার ঘোষণা দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। সে অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল থেকে ধান কেনার কথা থাকলেও তা এখনো শুরু হয়নি হাওড়ের বিভিন্ন অঞ্চলে। সরকারের ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে এমন গড়িমসির সুযোগ নিচ্ছেন ফড়িয়ারা। অর্থের প্রয়োজনে সরকার ঘোষিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষককে।

হাওড়ের সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদনকারী জেলা সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মূল হাওড় বা নিচের জমিগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশের ধান কাটা হয়েছে। তবে সেই ধান ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছেন না জেলার কৃষকরা। অঞ্চলভেদে প্রতি মণ ধান উৎপাদনে ৭০০-৮৫০ টাকা খরচ হলেও ওই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৬০০-৭৫০ টাকায়। সে হিসাবে সরকার ঘোষিত দুই-তৃতীয়াংশ দামও পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের কৃষক।

সরকারি সংগ্রহে লাভ হয় চালকলমালিকদের

০৬ মে ২০২০, প্রথম আলো

সরকার প্রতিবছর যে চাল সংগ্রহ করে, তাতে মূলত চালকলমালিকেরা লাভবান হন। গত বছর চালকল মালিকেরা সরকারি

গুদামে যে চাল সরবরাহ করেছেন, তার ৯৪ শতাংশ ছিল হাইব্রিড চাল। বাজারের অন্য মোটা চালের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম দামে, ১৪ টাকা কেজি দরে কেনেন। নিজেদের মিলে ওই ধান চালে পরিণত করে ৩৬ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এসব চাল অপেক্ষাকৃত মোটা ও নিম্নমানের।

খাদ্যনীতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইফপ্রি থেকে দেশে বোরো উৎপাদন, সংগ্রহ, বিক্রি ও বাজার নিয়ে করা এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তায় গবেষণাটি করা হয়েছে।

কী করলে সরকারি সংগ্রহ থেকে কৃষক লাভবান হবেন, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে গবেষণাটিতে। বলা হয়েছে, সরকার যদি খাদ্য সংগ্রহের পুরোটা ধান হিসেবে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কিনে নেয়, তাহলে তা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের জন্য ভালো হবে। সরকার গত বছর যখন প্রায় চার লাখ টন ধান কেনে, তখন ধানের দাম প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ বেড়ে যায়। আর যদি সংগ্রহের পুরোটা ধান হিসেবে কিনত, তাহলে দাম বাড়ত ৪৫ শতাংশ।

আর সরকার যদি সরাসরি ধান কেনে, তাহলে গুদামে শুধু হাইব্রিড ধান আসবে না। সব ধরনের ধান সরকারি গুদামে কৃষক বিক্রি করবেন। এতে সরকারি চালের যে ভোক্তা, অর্থাৎ দরিদ্র মানুষ কিছুটা উন্নত মানের চাল পাবেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইফপ্রি বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আখতার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি গুদামগুলোতে কৃষক ধান বিক্রি করতে গেলে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ধানের আর্দ্রতা নিয়ে। কৃষকদের বড় অংশ সাধারণত ভেজা ধান বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। কিন্তু সরকার ১৪ শতাংশের বেশি আর্দ্রতা থাকলে তা কিনতে চায় না। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে আর্দ্রতা অনুযায়ী ধানের দাম ঠিক করা যেতে পারে।

গবেষণাটিতে পরামর্শ হিসেবে বলা হয়েছে, সরকার চালকলগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ধান সেখানে ভাঙাতে পারে। দেশের বেশির ভাগ বড় চালকলে ধান শুকানোর আধুনিক ব্যবস্থা আছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ওই ধানের আর্দ্রতা বেশি হলে চালকল-মালিক দ্রুত তা সরকারি গুদাম থেকে নিয়ে যাবে। আর আর্দ্রতা কম থাকলে সরকার তা গুদামে রেখে দিয়ে সুবিধামতো সময়ে ভাঙানোর ব্যবস্থা করবে।

গত বছর বাংলাদেশে ৩ কোটি ৬৩ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে সরকার সংগ্রহ করেছে ১৪ লাখ ১৮ হাজার টন। ওই সংগ্রহের ৮১ শতাংশ সরবরাহ করেছেন চালকলমালিকেরা। বাকি ১৯ শতাংশ সংগ্রহ করা হয়েছে কৃষকের কাছ থেকে ধান হিসেবে।

খাদ্যসংকটে উপকূলের ৫৭ শতাংশ পরিবার: জরিপ

১২ মে ২০২০, প্রথম আলো

কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে ঘরবন্দী থাকায় উপকূলের ৫৭ শতাংশ পরিবার খাদ্যসংকটে পড়েছে। অতিরিক্ত সুদে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে ৬৩ শতাংশ পরিবার। বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতাও। গ্রামীণ অর্থনীতি সচল না থাকার কারণে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা কোস্টট্রাস্টের করা এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে ওই জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সংস্থাটির মনিটরিং ও গবেষণা বিভাগ এ জরিপ পরিচালনা করে। কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বাংলাদেশে ঘোষিত লকডাউনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছে—এ নিয়ে উপকূলীয় ছয়টি জেলায় জরিপ পরিচালনা করে কোস্টট্রাস্ট। জেলাগুলো হলো চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর ও ভোলা। গত ২৫ এপ্রিল এ জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়। শেষ হয়েছে ৭ মে।

কোস্টট্রাস্টের মনিটরিং ও গবেষণা বিভাগ জানায়, ছয়টি জেলায় সংস্থাটির ১২টি শাখার অধীনে ২৪০ জন দরিদ্র নারীপ্রধান ও নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়। এটির ৮৩ শতাংশ উত্তরদাতা গ্রামে এবং ১৭ শতাংশ শহরে বাস করেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ নারীপ্রধান পরিবার।

জরিপে দেখা যায়, লকডাউনের ফলে ৪২ শতাংশ পরিবার তিনবেলা খেতে পারছে। দিনে দুই বেলা খেতে পারছে ৫২ শতাংশ পরিবার এবং ৫ শতাংশ পরিবার দিনে এক বেলা করে খাচ্ছে। সপ্তাহে ৩-৪ দিন মাছ, মাংস বা ডিম অর্থাৎ নিয়মিত প্রোটিন খেতে পারত ৫৬ শতাংশ পরিবার। ঘরবন্দী থাকার ফলে তা নেমে এসেছে ১৩ শতাংশে। ৮৭ শতাংশ পরিবার এখন সপ্তাহে ১-২ দিন প্রোটিন গ্রহণ করছে। এতে আরও দেখা যায়, লকডাউনের কারণে পরিবারের পুরো আয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৪ শতাংশ পরিবারের। আয় এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে ৩৯ শতাংশ পরিবারের এবং অর্ধেকে নেমে এসেছে ১৯ শতাংশ পরিবারের। তবে নারীপ্রধান পরিবারের ক্ষেত্রে এই চিত্র ভিন্ন। এ ধরনের পরিবারে আয় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৬ শতাংশ পরিবারের। ৩০ শতাংশ পরিবারের আয় এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে।

৬৩ শতাংশ পরিবার চলমান সংকট মোকাবিলায় চড়া সুদে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করেছে ১৮ শতাংশ পরিবার এবং কোথাও ঋণ পায়নি বলে জানিয়েছে ১৩ শতাংশ পরিবার। সংকট মোকাবিলায় সঞ্চয় ভেঙে ফেলেছে ৪৮ শতাংশ পরিবার। গরু-ছাগল বিক্রি করে ফেলেছে ৩৫ শতাংশ পরিবার। নারীপ্রধান পরিবারগুলোর মধ্যে ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, সঞ্চয় ভাঙা, গরু-ছাগল বা গয়না বিক্রি করা ছাড়া তাঁদের কোনো উপায় ছিল না। জরিপের ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, লকডাউনে পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গালাগালি বা কটূক্তির ঘটনা ঘটেছে ৮২ শতাংশ পরিবারে। ৯ শতাংশ পরিবারে গায়ে হাত তোলা এবং ৯ শতাংশ পরিবারে যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আবারো দ্রুত ধনীদের শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

মে ২১, ২০২০, বণিক বার্তা

জিডিপির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি দেশে ধনী-দরিদ্রের মধ্যকার আয়বৈষম্যও বাড়ছে। এর ফলে শুধু ধনীদের সম্পদ বাড়ছে। আর এতে ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির বিবেচনায় শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় আবারো উঠে এসেছে বাংলাদেশ। চলতি মাসে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথএক্স প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির বছর দুয়েক আগের প্রকাশিত প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের ধনীদের দ্রুত সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছিল।

এনজিওর কিস্তি নিয়ে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

০৩ জুন ২০২০, সমকাল

শিবালয়ে সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এনজিওর কিস্তি দেওয়ার জন্য গত সোমবার থেকে ঋণগ্রহীতাদের চাপ দেওয়া শুরুম্ন হয়েছে। এনজিওর কর্মীরা ঋণগ্রহীতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিস্তি দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। করোনাভাইরাসের কারণে ন্নি আয়ের মানুষ প্রায় দুই মাস বাড়িতে থেকে ধারদেনা করে এতদিন সংসার চালিয়েছেন। প্রায় দুই মাস লকডাউনের পর গত ৩১ মে থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুললেও লোকজন এখনও আগের মতো চলাচল শুরু করেনি। এ কারণে দিনমজুর ও রিকশাভ্যান চালকসহ ন্নি আয়ের মানুষেরা এখন পর্যন্ত নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন না। এদিকে অফিস-আদালত খোলার পরই এনজিও কিস্তির টাকার জন্য চাপ দিতে শুরুম্ন করায় তারা এখন বিপাকে পড়েছেন।

পোশাক খাতের চেয়ে কৃষিতে ক্ষতি বেশি

জুন ০৫, ২০২০, বণিক বার্তা

নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের রফতানিমুখী শিল্পে সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার তৈরি পোশাক শিল্প, এমনটাই দাবি পোশাক শিল্প মালিকদের। বিজিএমইএর দেয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ থেকে মে তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৪৮ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি কম হয়েছে। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৫ টাকা ধরলে তিন মাসে ৩৮ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়েছে পোশাক খাত। করোনায় তৈরি পোশাকসহ শিল্প খাতের ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা থাকলেও এক্ষেত্রে অনেকটা অনালোচিতই থেকে গেছে দেশের কৃষি খাত। যদিও ব্র্যাকের এক গবেষণা বলছে, কভিড-১৯-এর প্রভাবে দেড় মাসে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকায় সরকারকে ঋণ দিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক

জুন ০৭, ২০২০, বণিক বার্তা

সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ডের নিলামে ঝাঁপিয়ে পড়ছে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো। আবার এ ব্যাংকগুলোই রেপোতে ধার নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত ধরনা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। কম সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে সে টাকা থেকেই সরকারকে বেশি সুদে ঋণ দিচ্ছে অনেক বেসরকারি ব্যাংক।

করোনার আঘাত থেকে ব্যাংকগুলোকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে রেপোর সুদহার ৬ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নিচ্ছে ৮ শতাংশের বেশি সুদে। নীতি সুদহারের সঙ্গে সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

লাসভেগাসসহ বড় বড় শহরে সিকদার পরিবারের বিপুল সম্পদ

০৯ জুন ২০২০, প্রথম আলো

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে কার্যক্রম শুরু করে কয়ি রিসোর্ট অ্যান্ড রেসিডেন্স। যেটি পরিচালনা করছে বিশ্বখ্যাত হিলটন কর্তৃপক্ষ। বিনিয়োগের বিপরীতে নাগরিকত্ব সুবিধার আওতায় ৫৩ হাজার জনসংখ্যার দেশটিতে এ চার তারকা হোটেল গড়ে তোলা হয়েছে। এই কয়ি রিসোর্টের কর্ণধার বাংলাদেশের সিকদার পরিবার।

কয়ি রিসোর্টের নিজস্ব প্রকাশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার এবং যুক্তরাষ্ট্রের কয়ি গ্রুপ ও কেআরএল হসপিটালিটির প্রধান নির্বাহী ও চেয়ারম্যান নিক হক এ রিসোর্টের নির্মাতা। তাঁরা সম্পর্কে পিতা-পুত্র।

সিকদার পরিবারের মালিকানাধীন কয়ি রেস্টুরেন্ট রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ও নিউইয়র্ক, প্রমোদ নগরী হিসেবে খ্যাত লাসভেগাস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি ও থাইল্যান্ডের ব্যাংককেও। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডে রয়েছে সিকদার পরিবারের একাধিক কোম্পানি ও বিপুল বিনিয়োগ। এমনকি টেলিভিশন চ্যানেলও রয়েছে।

এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও অতিরিক্ত এমডিকে গুলি এবং আটক করে নির্যাতনের ঘটনায় আলোচিত সিকদার পরিবারের নামে সম্পদ শুধু এসব দেশেই সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে পৃথিবীর আরও বিভিন্ন প্রান্তে। ফলে কোথায় নেই সিকদার পরিবারের সম্পদ, এমন প্রশ্নও উঠছে। তবে অনেক দেশ বিনিয়োগ তথ্য প্রকাশ না করায় বিদেশে তাদের কত সম্পদ রয়েছে, তা জানা যায়নি। আর সব দেশের তথ্য জানাও সম্ভব হয়নি। ওই ঘটনার পর রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে থাইল্যান্ডে পাড়ি দেন।… …

সংসার গুটিয়ে গ্রামে ফিরছে শহুরে মানুষ

১২ জুন, ২০২০, কালের কন্ঠ

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ফের ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা করোনার রেড জোনে ভাগ করে লকডাউন কার্যকর করায় বিপাকে পড়েছেন পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিক-কর্মচারী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। অনেকেই ভাড়াবাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন আসবাবপত্রসহ সপরিবারে। প্রতি রাতেই পিকআপ ও ছোট ট্রাক ভরে সংসারের সব আসবাবপত্রসহ অনেক পরিবারই জামালপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন।… …

গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে জামালপুর শহরের প্রধান সড়কের রেলগেট এলাকায় দেখা যায়, একটি ছোট পিকআপভরা খাট-চেয়ার-টেবিলসহ সংসারের বিভিন্ন আসবাব ও তৈজসপত্র নিয়ে সপরিবারে জেলার মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ী পৌরসভা এলাকায় নিজের বাড়িতে যাচ্ছেন মো. বাবুল (৩০)। ছোট ওই পিকআপটিতে তার স্ত্রী ও তার বড়ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানেরাও রয়েছেন।

তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, বাবুল ও তার ভাই সাভারের আশুলিয়ায় একটি পোশাককারখানার কর্মচারী। একদিকে পোশাককারখানায় বেতন পাননি। অন্যদিকে করোনার কারণে ওই এলাকায় পুনরায় লকডাউন শুরু হওয়ায় ভাড়াবাসায় ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছেন তারা।

রেলগেট এলাকার রাত্রিকালীন সিএনজি অটোরিকশাচালক ও স্থানীয় নৈশপ্রহরীরা জানালেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত এমন বাসাবাড়ির আসবাবপত্র, অন্যান্য মালামাল ও সাত-আটজনের যাত্রীসহ অন্তত ১৬টি পিকআপ যেতে দেখেছেন তারা। গত কয়েকদিন ধরে ভোররাত পর্যন্ত এভাবেই অনেকেই অধিকহারে করোনা সংক্রমিত এলাকা থেকে জামালপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাড়িতে চলে আসছেন। … ….

কাজ নেই, দিশেহারা অভাবী মানুষ

২২ জুন ২০২০, প্রথম আলো

উলিপুর কুড়িগ্রাম জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা। ১৩ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা মিলে উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। উলিপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের জীবিকা কৃষিনির্ভর। প্রায় এক লাখ লোক কাজ করেন দেশের বিভিন্ন এলাকায়। বাকিরা স্থানীয়ভাবে নানা পেশার সঙ্গে যুক্ত।

করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে এসব মানুষের অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ। মঙ্গলবার বিকেলে উলিপুর থেকে আট কিলোমিটার পূর্বে হাতিয়া ইউনিয়নের পুরোনো অনন্তপুর হাটে কথা হয় গোলজার হোসেনের সঙ্গে। তিনি রামরামপুর চড়ুয়াপাড়া গ্রাম থেকে এসেছিলেন বাঁশ বিক্রি করতে। তাঁর ছেলে ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিন মাস ধরে কাজ বন্ধ। টাকা পাঠাতে পারছেন না। তাই তিনি বাঁশ কেটে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন।

অনন্তপুর হাটের আশপাশের সড়কগুলো দিয়ে যেতে এমন অসংখ্য অভাবী মানুষের দেখা মেলে। তাঁরা হাঁস-মুরগিসহ অভাবের তাড়নায় বাড়ির নানা কিছু বেচে দিচ্ছেন। হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দেখা গেল, বাজার করা ব্যাগে করে অ্যালুমিনিয়ামের পুরোনো তার বেচতে যাচ্ছেন মিয়াজীপাড়া গ্রামের ছাবিদুর রহমান। জানালেন, তিনি ভাঙারি ব্যবসা করেন। তিন মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ। এক কেজি পুরোনো তার বাড়িতে জমা ছিল। সেগুলো বেচে চাল-ডাল কিনবেন।

বেলা শেষের হাট ধরতে হাতিয়া ৪ নম্বর ইউনিয়নের ভাঙ্গামাল্লি গ্রামের রফিকুল ইসলামকে ডান হাতে একটি হাঁস নিয়ে জোরে হাঁটতে দেখা যায়। তিনি ঢাকায় রিকশা চালাতেন। এক মাস আগে এসেছেন। জানালেন, এরই মধ্যে তাঁর তিন হাজার টাকা ঋণ হয়েছে। পরিবার নিয়ে চলতে পারছেন না।

বুধবার বিকেলে উলিপুরে গরুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, মাঠভর্তি গরু নিয়ে বিক্রেতা দাঁড়িয়ে আছেন। বাইরের ক্রেতা নেই। হাট ইজারা কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, বিপদগ্রস্ত মানুষ গরু-ছাগল বিক্রি করতে আসছেন, দাম কম।

করোনাকালে এখানকার অর্থনীতি নিয়ে খানিকটা ধারণা দিলেন বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের দলন গ্রামের কৃষিশ্রমিক জয়নাল মিয়া। বললেন, সাধারণত আউশ ধান ওঠার পর এলাকায় কাজ থাকে না। তখন কৃষিশ্রমিকেরা কাজের জন্য বিভিন্ন এলাকায় যান। কিন্তু এবার হয়েছে উল্টো। শ্রমজীবীরা এলাকার বাইরে যেতে পারেননি বরং যাঁরা বাইরে কাজ করতেন, তাঁদের ফিরে আসতে হয়েছে। ফলে আয় কমেছে। অভাব বেড়েছে।

অসংগতি কৌশলে ভরা বাজেট বরাদ্দ

২৫ জুন ২০২০, প্রথম আলো

.. .. বাজেটে এক খাতের মধ্যে অন্য খাতের প্রকল্প কৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেসব খাত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে বরাদ্দ বাড়ানোর চাপ রয়েছে, সেসব খাতেই মূলত বরাদ্দ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি। আর এ কৌশলের কারণেই এবারের বাজেটে সবচেয়ে বড় বরাদ্দের খাত সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী এবং শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত। এমনকি বরাদ্দ তেমন না বাড়িয়েও কৌশল করে স্বাস্থ্যকেও বড় ও অগ্রাধিকার খাত বলা হয়েছে।

বরাদ্দের চালাকি সামাজিক নিরাপত্তায়

চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী বক্তৃতায় বলেছেন। আগের অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দ বেড়েছে ১৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, এই খাতের বরাদ্দ প্রস্তাবিত বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ, আর জিডিপির ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

বিশ্লেষকেরা অবশ্য একে একধরনের ফাঁকিবাজি বলছেন। কেননা, অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনের টাকাও সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে। আগামী অর্থবছরে ৬ লাখ ৩০ হাজার পেনশনভোগীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। আর এতেই সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ ফুলেফেঁপে বড় হয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা এবার আরও অবাক হয়েছেন এই খাতের আরেকটি বরাদ্দ ঢুকে যাওয়া দেখে। এবার নতুন করে সঞ্চয়পত্রের সুদের একটি অংশকেও এই খাতে দেখানো হয়েছে। আর এর পরিমাণ ৬ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। ব্যাখ্যাটা হচ্ছে, মানুষ ব্যাংকে আমানত হিসেবে অর্থ না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনলে যে বেশি সুদ পায়, তা বহন করতে হয় সরকারকে। সুতরাং এটা সামাজিক নিরাপত্তা খাতের অংশ। হিসাব করে এখন দেখা যাচ্ছে, পেনশন ও সঞ্চয়পত্রেই ব্যয় হয়ে যাবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ৩১ শতাংশ।

শিক্ষা বাজেটে সূক্ষ্ম কারচুপি

শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে ৮৫ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে, যা মোট বাজেটের সম্পদ ব্যবহারের দিক থেকে সর্বোচ্চ, ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। .. .. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ১৭ হাজার ৯৪৬ কোটি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের ১ হাজার ৪১৫ কোটি ঢুকিয়ে শিক্ষা খাতের হিসাবটি বেশ বড় করে দেখানো হয়েছে। এর ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকাও এখন শিক্ষা বাজেটের অংশ হয়ে আছে।

আবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং হাওর এলাকায় জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ইমামদের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্পও দেখানো হয়েছে শিক্ষা খাতে। পুরো বিষয়টিতেই শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।.. ..

স্বাস্থ্য খাতে প্রকৃত বরাদ্দ কত

স্বাস্থ্য খাতে এবারের বরাদ্দের পুরো হিসাবটাই যথেষ্ট গোলমেলে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা। অথচ বাজেট দলিলে দেখা যাচ্ছে, বরাদ্দ ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।

কোভিড-১৯ উপলক্ষে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নের ২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ব্যয় সমন্বয় করলে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য খাতে এবার সরকারের বরাদ্দ বেড়েছে মাত্র ১ হাজার ২২ কোটি টাকা। বাকি আছে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে জরুরি থোক বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকার হিসাব। তবে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় এর উল্লেখ করেছেন ঠিকই, কিন্তু মূল বাজেট দলিলে এ নিয়ে কোনো তথ্য নেই।… …

কৃষি ভর্তুকিতে ইশপের গল্প

ইশপের গল্পে এক মুরগি বা এক কুমিরের ছানাকে বারবার দেখানোর একটি ঘটনা ছিল। সেই গল্প যেন ফিরে এসেছে অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেটে। কৃষি খাতের ভর্তুকিকে অর্থমন্ত্রী একাধিক জায়গায় দেখিয়েছেন। আর এই ভর্তুকির পরিমাণ সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। প্রতি অর্থবছরেই কৃষি ভর্তুকি হিসেবে সাত থেকে আট হাজার কোটি টাকা রাখা হয়, এটি নতুন কোনো বরাদ্দ নয়। আর এবার এই ভর্তুকিকে কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের তালিকায়ও দেখানো হয়েছে।.. …

করোনার আকালে এখন সঞ্চয়ই তাঁদের ভরসা

২৫ জুন ২০২০, প্রথম আলো

বরিশাল নগর ছাড়িয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাণ্ডব নদের তীরে কৃষ্ণকাঠি গ্রাম। সবুজ প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়ায় গ্রামটা এমনিতেই নির্জন। সেই নির্জনতাকে আরও গভীর করেছে করোনার আকাল। এই গ্রামের মঞ্জু রানীর (৩৫) কথায় সেই ইঙ্গিত পাওয়া গেল।

নদের তীরে সরু মেঠোপথটা পশ্চিমে অনেক দূর গেছে। কিছুদূর এগোতেই দেখা গেল, মঞ্জু রানী গোবর ঘুঁটে জ্বালানি তৈরি করছিলেন। কুশল জানতে চাইলে তিনি স্মিত হেসে বললেন, ‘এই তো আছি।’ পাশেই তাঁর বাড়ির চারপাশে দারিদ্র্যের মলিন চেহারা। ছোট্ট টিনের দোচালা ঘরটার চারপাশে হোগলপাতার বেড়া। স্বামী সঞ্জয় চন্দ্র শারীরিক প্রতিবন্ধী। এ জন্য চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে ছয়জনের সংসার মঞ্জু রানীকেই সামলাতে হয়।

গ্রামের বিল-বাদাড়ে ঘুরে শাকসবজি, কলা, দেশি ফল সংগ্রহ করে পাশেই সুখী নীলগঞ্জ বাজার কিংবা নদীপথের দূরত্বে হলতা বাজারে বিক্রি করে এত দিন তিন–চার শ টাকা আয় হতো। এ দিয়ে ছয়জনের সংসার চলত। কিন্তু করোনাকাল শুরুর পর আগের মতো বেচাকেনা নেই। এখন এক-দেড় শ টাকা আয় তাঁর।

সংসার কীভাবে চলছে, কথা তুলতেই মঞ্জু রানী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘উপায় কী, জীবন তো আর থাইম্মা থাহে না’। মঞ্জু রানীর কথা শুনে পাশে দাঁড়ানো তাঁর স্বামী সঞ্জয় নির্বাক ছিলেন।

মঞ্জু রানীর বাড়ি থেকে পশ্চিম দিকে এগোতে মেঠোপথটা নদে ভেঙে ভেঙে আরও সরু হয়ে গেছে। এই পথ ধরে যেতে দেখা গেল, কাঁথা সেলাই করছেন পলাশী রানী। ৪০ বছর বয়সী এই নারীর ছোট্ট বাড়ির ভূখণ্ডটুকু পাণ্ডব নদ গিলে খাওয়ার অপেক্ষা করছে। পলাশীর স্বামী শ্যামল পাইক হোগলা বুনে আর পলাশী কাঁথা তৈরি করে বিক্রি করেন। দুজনের আয়ে ছয়জনের সংসারটা এত দিন ভালোই চলছিল। কিন্তু করোনা তাতে বাদ সেধেছে। পাশের সুখী নীলগঞ্জ ও হলতা বাজারে এখন আর তেমন ক্রেতা নেই। তাই হোগলার তেমন চাহিদাও নেই।

পলাশীর সেলাই করা কাঁথার বেশ সুনাম এলাকায়। আগে তিন–চার হাজার টাকা আয় হতো। দুজনের আট–নয় হাজার টাকা আয়ে সংসার ভালোই চলে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন আয় কমে দুই-আড়াই হাজারে ঠেকেছে। ফলে সংসার চলছে অনটনে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে এসব নিম্নবিত্ত পরিবারকে তিন মাস ধরে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যদিও সবাই তা পাচ্ছে না। জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে গত ২৭ মে পর্যন্ত বরিশাল জেলা ও নগরে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪০০ পরিবারের মধ্যে মানবিক সহায়তা ও ঈদ উপহার হিসেবে ৩ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন ও নগর কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিতরণ করেছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার এবং ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার শিশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।… …

সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে মধ্যবিত্ত

খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের মতো সংকটে পড়েছেন গ্রামের বিত্তরাও। তাঁরা না পারেন সাহায্যের জন্য হাত পাততে, আবার না পারেন অভাবের কথা মুখ ফুটে বলতে। ফলে করোনার প্রবল ঢেউয়ে ভেতরে ভেতরে তাঁরা ক্ষতবিক্ষত।

এ রকম কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা বললেন, জীবনধারণের চাহিদা মেটাতে তাঁদের অনেকেরই সঞ্চয়ে-বিনিয়োগে হাত পড়েছে। সামাজিক গতিশীলতা ও উন্নয়নের পরিবর্তে মধ্যবিত্ত শ্রেণি তাদের পিছিয়ে পড়া নিয়ে এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।.. …

গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না

বরিশাল-বাকেরগঞ্জ-বরগুনা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের বাকেরগঞ্জের মহেশপুর একটি প্রসিদ্ধ বাজার। আগে বাজারটি দিন-রাত মানুষের কোলাহলে মুখর থাকত। গত সোমবার সন্ধ্যায় দেখা গেল, বাজারটির সেই চিরচেনা রূপ বদলে গেছে। করোনা যেন গ্রামের অর্থনীতির চাকা আটকে দিয়েছে। বাজারের কয়েকটি চায়ের দোকানে কিছু লোক চা পান করছিলেন। তাঁদের কেউ গালগল্প, কেউ টিভি দেখছিলেন। তবে শারীরিক দূরত্ব কেউ মানছেন না। কারও মুখে মাস্কও ছিল না।

ইসহাক আলী আকন (৫০) এই বাজারের বড় মুদি ব্যবসায়ী। সন্ধ্যার পর তাঁর দোকান ছিল ক্রেতাশূন্য। আগে প্রতিদিন ২০-৩০ হাজার টাকা বিক্রি করতেন, এখন ৮-১০ হাজারে নেমেছে। ঋণের টাকা পরিশোধ, সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে এখন সঞ্চয়ের ওপর হাত বাড়াতে হচ্ছে তাঁকে। বললেন, ‘চালান ভাইঙ্গা এহন সোংসার চালাইতে আছি—এই রহম কয় দিন পারমু কইতে পারি না।’

ইসহাকের কথার সত্যতা পাওয়া গেল বাজারের একটু দূরে আরেক ব্যবসায়ী সুলতান তালুকদারের (৪৫) সঙ্গে কথা বলে। তিনি রড-সিমেন্টের পাশাপাশি মুদি ব্যবসায়ী। আগে প্রতি মাসে যেখানে ৮০০-৯০০ বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হতো, এখন সেখানে ১০০ বস্তাও হয় না। প্রতিদিন যে বেচাবিক্রি হয়, তা দিয়ে সংসার খরচ ওঠে না। এ জন্য তাঁকেও মূলধনে হাত দিতে হয়েছে। সুলতান আক্ষেপ করে বললেন, ‘মোগো বাঁচনের কোনো উপায় দেহি না।’.. …

নতুন করে দেড় কোটির বেশি মানুষ দরিদ্র হয়েছে

জুন ২৫, ২০২০, বণিক বার্তা

চলতি বছরের শুরুতে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। মার্চে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কা এসে পড়লে কাজ হারাতে থাকে অনেক মানুষ। বন্ধ হয়ে যায় আয়-রোজগারের পথ, বাড়তে থাকে দারিদ্র্য। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণা বলছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। বছরের তৃতীয় ও শেষ প্রান্তিকে মানুষের আয় কাঙ্ক্ষিত হারে ফিরে এলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। তার পরও বছর শেষে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ ছাড়াতে পারে।

‘পভার্টি ইন দ্য টাইম অব করোনা: শর্ট টার্ম ইফেকটস অব ইকোনমিক স্লোডাউন অ্যান্ড পলিসি রেসপন্স থ্রু সোস্যাল প্রটেকশন’ শীর্ষক এ গবেষণা পরিচালনা করেছেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন।

এক বছরে নতুন কোটিপতি হয়েছেন ৮২৭৬ জন

২৪ জুন, ২০২০, বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে এক কোটি টাকা বা এর বেশি আমানত রয়েছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এখন ৮৩ হাজার ৮৩৯টি। গত এক বছরে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বেড়েছে আট হাজার ২৭৬টি। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসেই বেড়েছে তিন হাজার ৯৬২টি। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের প্রায় সাড়ে ৪৩ শতাংশই কোটিপতিদের দখলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশে কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা কত সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে আমানতকারীর ব্যাংক হিসাব থেকে এ বিষয়ে একটি ধারণা করা যায়। বাস্তবে কোটিপতির সংখ্যা আরো বেশি বলে জানা গেছে।

বড় ঋণে কাড়াকাড়ি ছোটরা পাচ্ছে না

০৩ জুলাই ২০২০, সমকাল

করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া সংকট কাটাতে শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণের জন্য কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে। বড় গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন ব্যাংক এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ ছাড়ের অনাপত্তির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে। তবে বিপরীত চিত্র কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের ঋণে। এ খাতের জন্য ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ হচ্ছে না বললেই চলে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২০০ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে ছয়টি ব্যাংক। ব্যাংকাররা বলছেন, এসএমই ঋণে আবেদন কম আসছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে ছোট উদ্যোক্তারা ব্যাংকে গিয়ে ঋণ পাচ্ছে না।.. …

রফতানি লক্ষ্য পূরণ করেছে শুধুই পাট

জুলাই ০৬, বণিক বার্তা

সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ ছয় মাস কেটেছে বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯ ঝড়ে। এক মাস বন্ধই ছিল প্রায় সব রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা। বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতের ফলে ধস নামে রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র পোশাক রফতানিতে। রফতানি পতন হয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যেরও। কিন্তু বৈশ্বিক এ সংকটের মধ্যেও ভালো করছে সোনালি আঁশ খ্যাত পাট। রফতানির লক্ষ্য পূরণ করেছে শুধু এ পণ্যটিই।… …

রফতানি খাতের শীর্ষ তিন পণ্য হলো পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। বরাবরের মতো গত অর্থবছরেও রফতানি সবচেয়ে বেশি হয়েছে পোশাকের। মোট রফতানির প্রায় ৮৩ শতাংশই ছিল পোশাক পণ্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি হয় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের, তৃতীয় সর্বোচ্চ রফতানি ছিল পাট ও পাটজাত পণ্যের। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ চিত্রে পরিবর্তন এসেছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি হয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্যের। পোশাক ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি কমলেও বেড়েছে পাট ও পাটজাত পণ্যের।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি হয় ৮১ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে রফতানি হয়েছে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারের। গত অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি লক্ষ্য ছিল ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। এ লক্ষ্যের চেয়ে ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয় মোট চারটি ভাগে। এর মধ্যে আছে র জুট বা কাঁচা পাট, জুট ইয়ার্ন অ্যান্ড টোয়াইন বা পাটের সুতা, জুট স্যাক্স অ্যান্ড ব্যাগস বা পাটের বস্তা এবং অন্যান্য পাটজাত পণ্য।.. …

চাকরি হারানো গার্মেন্ট কর্মকর্তার আত্মহত্যা

জুলাই ০৪, বণিক বার্তা

করোনাকালে চাকরি হারিয়ে অভাব-অনটনে পড়ে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেছেন রাজধানীর পল্লবীর এক বাসিন্দা।… …

পল্লবী থানার এসআই নুরে আলম জানান, স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের ‘এ’ ব্লকের ৫ নম্বর  রোডের ৫ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন আনোয়ার হোসেন মান্নান (৪৫)। চাকরি করতেন মিরপুর ১০ নম্বর  সেকশনের একটি গার্মেন্ট কারখানায়। করোনার কারণে ১০/১৫ দিন আগে তার চাকরি চলে যায়। অভাব-অনটন ও মানসিক চাপে থাকা আনোয়ার গত বুধবার নিজ বাসায় কীটনাশক পান করেন। গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা । গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।.. ..

বেচাকিনি নাই, কিলা যে সংসার চলব?’

০৬ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ৩১০টি গ্রাম রয়েছে। একটির নাম কুন্দিয়ারচর। এর অবস্থান মোগলাবাজার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে। আগের রাতে মুষলধারে বৃষ্টিতে গ্রামের ইট–সলিংয়ের একমাত্র রাস্তা আর বাড়ির উঠানে থিকথিকে কাদাপানি জমেছে। সেই পানি আর কাদা মাড়িয়েই যেতে হয় সালেহ আহমদের বাড়িতে। তাঁর মা জ্যোৎস্না বেগম টিনশেড ঘরের বারান্দায় পিঁড়ি পেতে বসে দা দিয়ে কাঁঠাল-বিচি কেটে কেটে টুকরো করছিলেন। পাশ ঘেঁষে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদে লুটোপুটি দিচ্ছিল তাঁর আট মাসের নাতনি।

আগন্তুক দেখে দৌড়ে মেয়েকে কোলে নেন সালেহ আহমদের স্ত্রী সুলতানা বেগম। সালেহ বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ–সংযোগ সরবরাহের কাজ করেন। গড়ে হাজার টাকা রুজি করতেন। করোনার শুরুর পর দুই মাস বেকার ছিলেন। ইদানীং কিছু কাজ পাচ্ছেন। দুই–তিন শ টাকা আয় হয়।

আলাপে যোগ দেন জ্যোৎস্না বেগমও। জানান, তাঁর ১০ সদস্যের পরিবার। দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বড় সালেহই শুধু আয় করেন। তাঁর ষাটোর্ধ্ব স্বামী আবদুল কাদির অসুস্থ। প্রতি মাসে তাঁর সাড়ে চার হাজার টাকার ওষুধ লাগে। এখন ছেলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সরকারি কোনো সহায়তাও পাননি তাঁরা।

একটু এগোতে দেখা মিলল মৎস্যজীবী ইসমাইল আলীর সঙ্গে। পাশেই ছোট একটি খালে বেশ কয়েকটি বারকিজাতীয় নৌকা বাঁধা। ইসমাইলের স্ত্রী রাজিয়া বেগম এসব দেখিয়ে বলেন, এসব নৌকা দিয়েই মাছ শিকারে যান তাঁর স্বামী। তবে আগের চেয়ে মাছ বিক্রি হয় কম। একই সারিতে কাঠমিস্ত্রি ইনসান আলীর বাড়ি। দুই ছেলে ও এক মেয়ে তাঁর। এখন আয় কমে যাওয়ায় কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁর স্ত্রী শাফিয়া বেগম বললেন, ‘কম কম খাইয়া দিন যাইতাছে!’

… …সেই সাতসকাল থেকে তাঁরা হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত-অবসন্ন। পেটেও দানাপানি কিছু পড়েনি। একটু জিরিয়ে নেওয়ার আশায় তাঁরা ছোট একটি টং মতন রেস্তোরাঁয় বসেন। রেস্তোরাঁটির অবস্থান দক্ষিণ সুরমার চৌধুরী বাজার রাস্তামুখী ত্রিমুখী এলাকায়। তাঁরা প্রথমে ভেবেছিলেন, পানি খেয়েই উঠে পড়বেন। কিন্তু পেটের ক্ষুধায় সে চিন্তা থেকে সরে এসে ডিম-খিচুড়ির অর্ডার দেন।

সাথী বেগম ও শিউলি বেগম নামের ওই দুই নারী মাথায় একটা বড় ঝুড়িতে কাচ ও মেলামাইনের থালা, বাটি, কাপ, গ্লাস, ট্রেসহ বিভিন্ন সামগ্রী দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন। দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকায় স্বামী-সন্তান নিয়ে তাঁরা সাত বছর ধরে ভাড়া ঘরে বসবাস করেন। মূল বাড়ি কুমিল্লা জেলায়।

সাথী জানান, জিনিস ফেরি করতে গিয়ে এখন তাঁদের এক কঠিন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের ভয়ে তাঁদের এখন আর কেউ বাড়ির উঠানে কিংবা ঘরের বারান্দায় উঠতে দেয় না। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত কয়েকটা গ্রাম ঘুরেছেন। কিন্তু তিন শ টাকার মালামালও বেচতে পারেননি। আগে এক দিনে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার জিনিস বিক্রি হতো।

জীবন রক্ষার তাগিদে ভিন্ন পেশায় কর্মহীন গার্মেন্টসকর্মীরা

০৬, জুলাই ০৬, ২০২০ বাংলা ট্রিবিউন

করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষের পাশাপাশি কাজ হারিয়েছেন গার্মেন্টসকর্মীরা। কাজ হারিয়ে ঢাকা-গাজীপুর-নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে নেমেছেন তারা। গ্রামে গিয়ে কেউ মুদি দোকান, আবার কেউ মৌসুমি ফল বিক্রি করছেন। এতে যা উপার্জন হচ্ছে, তা জীবিকার জন্য পর্যাপ্ত নয়। এমনকি দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে থাকায় সরকারি ত্রাণ সহায়তাও পাচ্ছেন না তারা। এই পরিস্থিতিতে তীব্র সংগ্রামে দিন পর করতে হচ্ছে তাদের। ময়মনসিংহের বেশ কয়েকজন কাজ হারানো গার্মেন্টসকর্মী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

ময়মনসিংহ সদরের চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের আসামুদ্দিনের স্ত্রী লিপি খাতুন (৪০), গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। করোনাভাইরাসের কারণে কাজ হারিয়ে গত এপ্রিলের শুরুতে গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন স্বামী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে। লিপি কোনও কাজ না পেয়ে একটি বেসরকারি এনজিও থেকে সুদে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে একটি  মুদি দোকান দিয়ে বসেছেন। মুদি দোকানের বেচাকেনার আয় দিয়ে বেকার স্বামী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছেন তিনি।

লিপি খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে কাজ হারিয়ে আমরা কয়েকশ’ গার্মেন্টসকর্মী বেকার হয়ে গ্রামের বাড়িতে বসে আছি। সুদে ঋণ নিয়ে ছোট একটি মুদি দোকান দিয়েছি। এতে যা আয় হয় তা থেকে এনজিও’র কিস্তি বাবদ সপ্তাহে এক হাজার ৭৫০ টাকা দেওয়ার পর হাতে যা থাকে তাই দিয়ে কোনোরকম সংসার চলছে। গ্রামের মানুষের হাতে নগদ টাকা না থাকায় দোকানের বেচাকেনাও কম। এছাড়া গ্রামের বাড়িতে দোকানে বাকিতে বেচাকেনা করতে হচ্ছে। এখন বাকিতে বিক্রি করা টাকা উঠাতে না পারায় প্রতি সপ্তাহে কিস্তির টাকাও দিতে পারছি না ঠিক মতো।’

চাকরি হারিয়ে গ্রামে গিয়ে ফল বিক্রি করছেন পোশাক শ্রমিক সাইফুল ইসলামএদিকে, ময়মনসিংহ সদরের চরহরিপুর গ্রামের কাজ হারানো পোশাক শ্রমিক সাইফুল ইসলাম মাওনা গাজীপুর থেকে গ্রামের বাড়িতে এসে কাজ না পেয়ে হকারে মৌসুমী ফল বিক্রি করছেন। জীবন সংগ্রামে নানা সংকটের কথা তুলে ধরে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কাজ হারিয়ে গ্রামে এসেও কোনও কাজ না পেয়ে হকারি করে আম, জাম, লটকনসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল বিক্রি করছি। সারাদিন ঘুরে যে আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতো সংসার চলছে।’ তিনি জানান, গ্রামের বাড়িতে প্রায় আড়াই মাস ধরে এসেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের দেওয়া ত্রাণ পাননি। কর্মহীন এসব মানুষকে ত্রাণ দেওয়া হলে তাদের কষ্টটা কিছুটা লাঘব হতো বলে জানান তিনি।

লিপি খাতুন ও সাইফুলের মতো কাজ হারানো কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিকের একই অবস্থা। পেশা বদলে একেক জন একেক কাজে নেমেছেন। অনেকে আবার বেকার হয়ে বসে আছেন। নিজের গ্রামের বাড়িতে তালিকায় নাম না থাকায় তারা সরকারি ত্রাণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এদের ত্রাণের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা।… ….

পাটের সুসময়ে সরকারি পাটকলে তালা

০৬ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

লোকসানের কারণে সরকারি ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বেসরকারি পাটকল লাভ করছে। তাদের হাত ধরে করোনাভাইরাসের এই সময়েও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে। তাতে দীর্ঘদিন পর তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি পণ্যের জায়গা দখল করেছে পাট।

সদ্য বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার। রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা তৈরি পোশাকের রপ্তানি ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ, তৃতীয় শীর্ষ কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ ও চতুর্থ শীর্ষ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ রপ্তানি কমেছে। সেখানে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে ৮৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানির মধ্যে পাটসুতার অবদান ৫৬ কোটি ডলার। সেখানে আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। তা ছাড়া ১২ কোটি ডলারের কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। আর পাটের ব্যাগ রপ্তানি হয়েছে ১০ কোটি ডলারের। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে পাটের ব্যাগের রপ্তানি আয় বেড়েছে সাড়ে ২৮ শতাংশের মতো।

বেসরকারি খাত লাভজনক হলেও সরকারের পাটকলগুলো গত ১০ বছরে ৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে। এই ১০ বছরের মধ্যে একবারই ১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা মুনাফা হয়, সেটিও ২০১০-১১ অর্থবছরে। সরকারের পক্ষে এ লোকসানের বোঝা আর টানা সম্ভব হচ্ছে না, তাই শ্রমিকদের স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠিয়ে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)।

১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ৭৮টি পাটকল নিয়ে বিজেএমসি গঠিত হয়। ১৯৮১ সালে মিলের সংখ্যা বেড়ে হয় ৮২। তৎকালীন এরশাদ সরকার ৩৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়। ৮টি পাটকলের পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকের পাট খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১১টি পাটকল বন্ধ, বিক্রি ও একীভূত করা হয়। ২০০২ সালের জুনে বন্ধ হয় আদমজী জুট মিল। বর্তমানে বিজেএমসির আওতায় ২৬টি পাটকলের মধ্যে গত সপ্তাহ পর্যন্ত চালু ছিল ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও ৩টি ননজুট কারখানা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি রাশেদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ হচ্ছে। ফলে পাটের ব্যাগের চাহিদা বাড়ছে। কেবল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতেই বার্ষিক প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি পাটের ব্যাগের চাহিদা তৈরির সম্ভাবনা দেখছি। তা ছাড়া গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত বাগানের জন্যও পাটপণ্য জনপ্রিয় হচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় বহুমুখী পাটপণ্যের চাহিদা বাড়বে।’

সরকারি পাটকলের বিষয়ে রাশেদুল করিম আরও বলেন, ‘ভারত তাদের পাটকলগুলো নব্বইয়ের দশকে আধুনিকায়ন করলেও আমরা পারিনি। আমাদের সরকারি পাটকলে ৬০ থেকে ৭০ বছরের যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে, তা দিয়ে ২ থেকে ৩টির বেশি পণ্য উৎপাদন করা যায় না। বর্তমানে বেসরকারি পাটকলগুলো যে পাটসুতা রপ্তানি করে মুনাফা করছে, সেই পণ্যটিই উৎপাদন করে না বিজেএমসির মিল।’.. …

রিজার্ভ থেকে প্রকল্প ঋণের সম্ভাব্যতা যাচাই করুন

০৭ জুলাই ২০২০, সমকাল

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বর্তমানে রেকর্ড পরিমাণ রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ নেওয়া যায় কিনা এবং তার প্রভাব কী হতে পারে তা অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই করে দেখতে পারে।… …

ধারদেনায় চলছেন স্বল্প আয়ের মানুষ

০৭ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

করোনার সংক্রমণ শুরু হলে রাজধানীর স্বল্প বা নিম্ন আয়ের অনেকে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। প্রায় তিন মাস কাটিয়েছেন গ্রামেই। ঘরবন্দী সময়ে সঞ্চয়ের সবটুকু শেষ হলে প্রায় সবাই নিকটজনদের কাছ থেকে ধার করে চলেছেন। ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার ঋণও নিয়েছেন কেউ কেউ।

জুন মাসের শুরুতে সরকার সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু ও অফিস খুলে দিলে তাঁরা ফিরেছেন নিয়মিত পেশায়। কিন্তু ‘নতুন স্বাভাবিক’ জীবন তাঁরা ফিরে পাননি। যাঁরা স্বল্প পুঁজিতে রাজধানীর ফুটপাতে ব্যবসা করেন, তাঁরা বলছেন, আগের মতো আয় হচ্ছে না। যাঁরা দৈনিক মজুরিতে কাজ করতেন, তাঁদের অনেকে কাজ হারিয়ে বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে সাইকেলে করে যাঁরা খাবার ও পণ্য সরবরাহ করেন, তাঁরা বলছেন, ঝুঁকি থাকলেও খেয়ে-পরে ভালো আছেন। একই কথা বলেছেন সবজি বিক্রেতারাও।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিমেকারস কনসালটিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার স্বনন শাহরিয়ার বলেন, ‘এসইসি বা আর্থসামাজিক শ্রেণিবিভাগে ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা বিবেচনা করে পুরো সমাজের রোজগেরে মানুষদের পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। এসইসি গ্রিডের ‘ডি’ শ্রেণিভুক্ত নিম্ন আয়ের এই মানুষেরা আমাদের সমাজের প্রায় ৩০ শতাংশ। যাঁরা পেশায় শিক্ষিত কৃষক, হাতের কাজে দক্ষ, খুচরা ব্যবসায়ী, অশিক্ষিত পেশাজীবী বা স্বল্পশিক্ষিত বিক্রয়কর্মী। করোনার সময়ে বেশি ভুগছেন এই শ্রেণির মানুষ।’… …

৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে ৩৪ লাখ এখনো টাকা পায়নি

০৮ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারের কাছে আড়াই হাজার টাকা করে এখনো পৌঁছাতে পারেনি সরকার। কারণ, জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নেতৃত্বে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে যে তালিকা করা হয়েছিল, তা ছিল অনিয়ম ও অসংগতিতে ভরা।

আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা নেওয়ার যোগ্য নন, এমন অনেককেই তালিকায় রাখা হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সরকারি কর্মচারী, পেনশনভোগী এবং পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের মালিককেও। অন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে সুবিধা ভোগ করে আসছেন, এমন ব্যক্তিদেরও রাখা হয়েছে এ তালিকায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এক অবস্থানপত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

অর্থ বিভাগ গত ৩০ জুন ‘মুজিব বর্ষে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচি’ শীর্ষক অবস্থানপত্রটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। একই দিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, সব বিভাগীয় কমিশনার এবং ডিসিকে আলাদা চিঠি দিয়ে তালিকা সংশোধনের কথাও বলেছে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৫০ লাখ পরিবারের জন্য ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা দুই মাস আগেই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। টাকা পৌঁছানোর খরচের জন্যও বরাদ্দ রয়েছে আট কোটি টাকা। তালিকাটি যখন চূড়ান্ত করা হয়েছিল, তখন রোজার ঈদ ছিল সামনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই ঈদের আগে গত ১৪ মে টাকা দেওয়ার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এখন আরেক ঈদ চলে এসেছে।

অর্থ বিভাগের অবস্থানপত্র বলছে, এখন পর্যন্ত টাকা পেয়েছে এক-তৃতীয়াংশেরও কম পরিবার। অর্থাৎ ৩৪ লাখ পরিবার এখনো টাকা পায়নি। অথচ তালিকাটি করা হয়েছিল ডিসিদের নেতৃত্বে এবং ইউএনও তত্ত্বাবধানেই।… …

কৃষকের আয় নেই বোরোতে

জুলাই ০৮, ২০২০, বণিক বার্তা

দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান শস্যে পরিণত হয়েছে বোরো ধান। মোট উৎপাদিত চালের অর্ধেকই জোগান দেয় বোরো। বোরোতে এই সাফল্যই বিশ্বে তৃতীয় শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশের অবস্থান এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে। অথচ সেই বোরো চাষেই আয়ের দিক থেকে কৃষকের অর্জন শূন্য। লাভ দূরে থাক, উল্টো নিয়মিত গুনতে হচ্ছে লোকসান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বোরো ধানে কৃষকের লোকসানের অন্যতম কারণ এতে উৎপাদন খরচ বেশি। আউশ-আমনে সেচ খরচের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বোরোতে সেচের পেছনে বড় অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয় কৃষককে। খরচ বেশি হলেও সে তুলনায় ধানের দাম পান না কৃষক। ফলে গুনতে হয় লোকসান।

কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গত বোরো মৌসুমে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৪০ টাকায় কেনার ঘোষণা দিয়েছিল খাদ্য অধিদপ্তর। কিন্তু ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে গড়িমসির কারণে সরকার ঘোষিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করতে হয়েছে কৃষককে।

হাওড়ের সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদনকারী জেলা সুনামগঞ্জের কৃষকরা জানান, অঞ্চলভেদে প্রতি মণ ধান উৎপাদনে ৭০০-৮৫০ টাকা খরচ হলেও ওই ধান বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ৬০০-৭৫০ টাকায়। এতে উৎপাদন খরচ তো ওঠেইনি উল্টো গুনতে হয়েছে লোকসান। শুধু সুনামগঞ্জ নয়, একই চিত্র ছিল দেশের প্রায় সব জায়গায়।… ….

আধুনিক পাটকল করব, চাকরি পাবে অভিজ্ঞরা: প্রধানমন্ত্রী

০৯ জুলাই, ২০২০, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

রাষ্ট্রায়ত্ত যেসব পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, বিশ্বব্যাপী পাটের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সেগুলোকে সময়োপযোগী, আধুনিক করে গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, নতুন আঙ্গিকে পাটকলগুলো চালু হলে অভিজ্ঞকর্মীদেরই সেখানে চাকরি হবে, এজন্য তাদেরকে আধুনিক প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।

দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল সম্প্রতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য এসব পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিকের শতভাগ পাওনা মিটিয়ে দিয়ে তাদের চাকরি অবসায়ন করা হবে।… ….

সরকারের ব্যাংক ঋণে রেকর্ড

০৯ জুলাই ২০২০, সমকাল

রাজস্ব আদায়ে খারাপ অবস্থা এবং সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরের শুরু থেকেই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের বেশি বেশি ঋণ নেওয়ার প্রবণতা ছিল। অর্থবছরের শেষ দিকে এসে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ঋণনির্ভরতা আরও বেড়ে যায়। বিদেশ থেকে প্রচুর ঋণ ও অনুদান পাওয়ার পরও ২০১৯-২০ অর্থবছরে শেষ পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা নিয়েছে সরকার। এ যাবৎকালের মধ্যে যা সর্বাধিক। ২০১৮-১৯ অর্থবছর সরকার ব্যাংক থেকে নিয়েছিল ২৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।

সংশ্নিষ্টরা জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধীরগতির কারণে রাজস্ব আয়ে খুব খারাপ অবস্থা ছিল। করোনার কারণে অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। ফলে আদায় কমেছে ব্যাপক হারে। এ অবস্থায় ৪৫ বছর পর রাজস্ব আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে কম হয়েছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আদায় খারাপ থাকায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে তিন লাখ ৫শ’ কোটি টাকা করা হয়। অথচ গত অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, আয় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মানে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৮৫ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।… …

বছরে ৮০ হাজার কোটি টাকার খাদ্য কৃষিপণ্য আমদানি

জুলাই ১১, ২০২০, বণিক বার্তা

খাদ্য ও কৃষিপণ্য আমদানি বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে প্রতি বছর। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, তুলা বাদে অন্যসব খাদ্য ও কৃষিপণ্য আমদানিতে প্রতি বছর ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এর সঙ্গে তুলা আমদানিতে ব্যয়কৃত অর্থ যোগ করলে খাদ্য ও কৃষিপণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের বার্ষিক ব্যয় দাঁড়ায় ৮০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

প্রতি বছর শুধু খাদ্যশস্য আমদানিতেই বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয় বাংলাদেশকে। ভোজ্যতেল, তেলবীজ, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, ডালবীজ, ফল ও মসলাপণ্যের ক্ষেত্রেও এখনো ব্যাপক মাত্রায় আমদানিনির্ভর রয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সঠিক পরিকল্পনাভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব পণ্যের আমদানিনির্ভরতা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।.. …

বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে উপস্থাপিত তথ্য বলছে, তুলার বাইরে অন্যান্য কৃষি ও খাদ্যপণ্যের মোট আমদানি ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি খরচ হচ্ছে চারটি পণ্য আমদানিতে। এর মধ্যে ভোজ্যতেলেই ব্যয় হচ্ছে ২৬ শতাংশ (পাম অয়েলে ১৬ এবং সয়াবিন ও অন্যান্য ভোজ্যতেল ১০ শতাংশ)। এছাড়া গম ও চিনি আমদানিতে খরচ হচ্ছে মোট আমদানি ব্যয়ের যথাক্রমে ১৪ ও ১১ শতাংশ। এছাড়া মোট ব্যয়ের ৬ শতাংশ শুকনা সবজি আমদানিতে, ৬ শতাংশ চালে ও ৬ শতাংশ সয়াবিন বীজ আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে। পাশাপাশি দুধ ও ক্রিম আমদানিতে ৪ শতাংশ, ভুট্টায় ৩ ও পশুখাদ্যে ৩ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে। এর বাইরেও অয়েল কেক, আপেল ও অন্যান্য ফল, পেঁয়াজ এবং অন্যান্য মসলার প্রতিটিতে ব্যয় হচ্ছে ২ শতাংশ করে। ১ শতাংশ করে ব্যয় হচ্ছে সাতটি পণ্য আমদানিতে। এগুলো হলো সিট্রাসজাতীয় ফল, আটা, ময়দা ও অন্যান্য পণ্য, আদা, জাফরান, হলুদ, ছোলা ও মত্স্যজাত পণ্য।… …

অরক্ষিত বিজেএমসির ২৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

জুলাই ১৪, ২০২০, বণিক বার্তা

চলতি মাসের ২ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সব পাটকল। বন্ধ ঘোষণার পর থেকে ডিউটিতে নেই এসব পাটকলের প্রহরী ও নিরাপত্তাকর্মীরা। এ অবস্থায় অনেকটা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে পাটকলগুলোর প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় পাটকল খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস লিমিটেড। ১১৩ একর জমির ওপর স্থাপিত এ পাটকলে কয়েকদিন আগেও ভেতর-বাইরে জমজমাট চিত্র ছিল। শ্রমিক, কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মীসহ নানা শ্রেণীর মানুষের আনাগোনায় মুখর ছিল এর আঙিনা। কিন্তু হঠাৎ বন্ধ ঘোষণার পর থেকে অনেকটা ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে এ পাটকলে। নিরাপত্তাকর্মীরা ডিউটিতে না থাকায় বর্তমানে কর্মকর্তারা শিফট করে পাহারা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পাটকলটির প্রকল্পপ্রধান খান মো. কামরুল ইসলাম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় নিরাপত্তা প্রহরী কম ছিল আমাদের। এখন সবাই ছুটিতে থাকায় কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুসারে কর্মকর্তারা শিফট করে পাহারা দিচ্ছি। কিছু শ্রমিক এখনো কলোনিতে রয়েছেন। তারা চলে গেলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। সামনের দিনে আনসার মোতায়েন বা পুলিশি টহল বাড়াতে পারলে পাটকলের মূল্যবান সম্পদগুলো অক্ষুণ্ন রাখা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

নিরাপত্তা প্রহরী না থাকলেও সীমানাপ্রাচীর আছে ক্রিসেন্ট জুট মিলসে। কিছু পাটকলে তাও নেই। আবার অনেক পাটকলে সীমানাপ্রাচীর থাকলেও তা পর্যাপ্ত মজবুত নয় ও নিরাপত্তার জন্য অপ্রতুল। এছাড়া বেশকিছু পাটকলের জমি প্রায় বেদখলের পথে রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে মিল বন্ধ করায় এখন প্রহরী বা নিরাপত্তাকর্মীরা কেউ পাহারা দিচ্ছেন না। ফলে এসব সম্পত্তির ওপর স্থানীয়দের লোভ বাড়তে পারে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে জমি বেদখল হতে পারে। এমনকি প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও  চুরি বা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি তাদের মোট সম্পত্তি মূল্যায়নের জন্য এরই মধ্যে পাটকলগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। তবে ২০১৮-১৯-এর খসড়া বার্ষিক প্রতিবেদনে মোট সম্পত্তির নানা শ্রেণী বিভাজন দেখিয়েছে বিজেএমসি। এতে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পত্তির মধ্যে স্থায়ী সম্পদ রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৩২৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার—যার মধ্যে ভূমি, ভূমি উন্নয়ন, দালানকোঠা ও অন্যান্য, স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি, আসবাব ও সরঞ্জামাদি, পরিবহন ও মোটরযানসহ অন্যান্য সম্পদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগ, চলতি হিসাবে জমা, লাভ/ক্ষতি হিসাবে জমার অর্থ দিয়ে মোট সম্পত্তি নির্ণয় করা হয়েছে।… …

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর সম্পদের মধ্যে বড় অংশই হচ্ছে জমি। বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, পাটকলগুলোর জমির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ একর।  ঢাকা অঞ্চলের সাতটি পাটকলের মধ্যে ৭৭ দশমিক শূন্য ২৫ একর জমি নিয়ে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলস লিমিটেড। এছাড়া করিম জুট মিলস লিমিটেড ৫০ দশমিক ৬৮ একর, লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস লিমিটেড ৬২ দশমিক ৮৩ ও ইউএমসি জুট মিলস লিমিটেড ৫২ দশমিক ২৯ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। পাশাপাশি রাজশাহী জুট মিলস লিমিটেডে ৪৯ দশমিক শূন্য ২ একর এবং জাতীয় জুট মিলস লিমিটেডে ৭৫ দশমিক ২১ একর জমি রয়েছে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০টি জুট মিলের মধ্যে ৭৯ একর জমি নিয়ে শীর্ষে রয়েছে আমিন জুট মিলস লিমিটেড ও ওল্ড ফিল্ডস লিমিটেড। এছাড়া গুল আহমেদ জুট মিলস লিমিটেড ৫১ দশমিক ৪৮ একর, হাফিজ জুট মিলস লিমিটেড ৬৬ দশমিক ৩৩, এমএম জুট মিলস লিমিটেড ১৯ দশমিক ৭৬, আর আর জুট মিলস লিমিটেড ৯ দশমিক ৬৩, বাগদাদ-ঢাকা কার্পেট ফ্যাক্টরি লিমিটেড ১০, গালফ্রা হাবিব লিমিটেড (নন-জুট) ২০ দশমিক ৪৮, কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড ও ফোরাত কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরি ৭৬ দশমিক ২১ এবং মিলস ফার্নিশিং লিমিটেড (নন-জুট) ১ দশমিক ৩৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

খুলনা অঞ্চলের নয়টি পাটকলের মধ্যে ১১৩ দশমিক শূন্য ৩ একর জমি নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ক্রিসেন্ট জুট মিলস লিমিটেড। এছাড়া কার্পেটিং জুট মিলস লিমিটেড ২৩ দশমিক শূন্য ৬ একর, যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৭৯ দশমিক ৬৩, আলীম জুট মিলস লিমিটেড ৪৫ দশমিক ২৮,  ইস্টার্ন জুট মিলস লিমিটেড ৪০ দশমিক ৮৭, প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস লিমিটেড ৫৫ দশমিক ৮৪, স্টার জুট মিলস লিমিটেড ৫৬ দশমিক ৩১, খালিশপুর জুট মিলস লিমিটেড ৭০ দশমিক ৩ এবং দৌলতপুর জুট মিলস লিমিটেডের ২২ দশমিক ৫৯ একর জমি রয়েছে।… ….

পেনশনের টাকা জোটেনি, বিনা চিকিৎসায় প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু

১৬ জুলাই, ২০২০,কালেরকন্ঠ

যশোরের শার্শায় পেনশনের টাকা না পেয়ে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় আইন উদ্দীন (৬২) নামের অবসরপ্রাপ্ত এক প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। শিক্ষক আইন উদ্দীন শার্শার কায়বা ইউনিয়নের চালিতাবাড়িয়া গ্রামের মৃত ইউছুপ তরফদারের ছেলে ও বেনাপোল পোর্ট থানার বারোপোতা ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ায় ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কয়েক দিন পর তিনি হঠাৎ স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও পেনশনের টাকা জোটেনি এই প্রধান শিক্ষকের ভাগ্যে। আশায় বুক বেঁধে ছিলেন, পেনশনের টাকা পেলে সুচিকিৎসা করাবে তাঁর পরিবার। কিন্তু দেড় বছর অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি হয়নি। অসুস্থ হয়ে অর্থাভাবে না জোটত ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া, না পেতেন সুচিকিৎসা নিতে। ওপর মহলে এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা না হওয়ার ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন শিক্ষক আইন উদ্দীনসহ তাঁর পরিবার। অতপর উন্নত চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকা অবস্থায় বুধবার রাতে মারা যান এই অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

এ ব্যাপারে বারোপোতা ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পুটখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার হাদিউজ্জামান জানান, তিনি আমার শিক্ষাগুরু ছিলেন। তাঁর অসুস্থতা ও পেনশনের টাকাটা না পাওয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। দ্রুত পেনশনের টাকাটা তাঁর পরিবার যেন পেতে পারে, সে বিষয়ে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি শুনেছি বা অফিসে খোঁজ নিয়ে জেনেছি তিনি পেনশন পাননি। এ ব্যাপারে আমার কোনো হাত নেই। তবে তাঁদের পরিবারকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছি।

দুর্নীতি

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ভুয়া কার্ডের ছড়াছড়ি

৩০ এপ্রিল ২০২০, সমকাল

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আর লকডাউনের মধ্যেও কর্মহীন ও হতদরিদ্র মানুষের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি থেমে নেই। জামালপুর সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল নিয়ে চালবাজি চলছে চার বছর ধরে। ২০১৬ সালে এই ইউনিয়নের দুই হাজার ১৯১ সুবিধাভোগীর তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনের পর থেকে চারজন ডিলার হতদরিদ্রদের মধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির শর্তে বিপুল পরিমাণ চাল উত্তোলন করে আসছেন। অভিযোগ উঠেছে, এসব চালের সিংহভাগই রাতের আঁধারে চলে যাচ্ছে কালোবাজারিদের গুদামে। বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে হতদরিদ্ররা।

অভিযোগে জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার ১২নং তিতপল্লা ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় দুই হাজার ১৯১ সুবিধাভোগীকে ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ মানুষ চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভুয়া কার্ডের ছড়াছড়ির কারণে অধিকাংশ সুবিধাভোগী তাদের নামের বরাদ্দ কার্ডের কথাও জানেন না।

তালিকার আংশিক তদন্তে দেখা গেছে, চলমান তালিকার একই নামের বিপরীতে দুটি করে কার্ড ইস্যু করা হয়েছে ১৫০ জনের নামে। এ ছাড়া ৩৬টি ভুয়া, একই পরিবারে দুটি করে ৩০টি, বিত্তবানদের নামে ২৮টি ও মৃত ব্যক্তির নামে রয়েছে ৮টি কার্ড।অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পের ইউনিয়ন সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব ও ডিলাররা এসব ভুয়া কার্ডের বিপরীতে চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে আসছেন।

কোটিপতিরাও ওএমএসের তালিকায়

মে ১৪, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

তার পরিচয়ের শেষ নেই! ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পরিচয় অনুসারে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা রেস্তোরাঁ সমিতির সভাপতি, জেলা জামে মসজিদের যুগ্ম সম্পাদক, কেন্দ্রীয় এফবিসিসিআইয়ের সদস্য, জেলা এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য এবং জেলা অন্ধ কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জেলা শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহ আলম।

তবে এসব পরিচয় ছাপিয়ে এখন তার পরিচয় দাঁড়িয়েছে তিনি গরিব ও কর্মহীন। এই পরিচয়ের কারণে তার স্ত্রী, কন্যা, ভাইসহ পরিবারের ও আত্মীয় স্বজনদের প্রায় সবারই নাম উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার বিশেষ ওএমএস তালিকায়। তিনি আবার নিজেও একজন ওএমএস ডিলার।

গত ১ এপ্রিল নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের চালু করা বিশেষ ওএমএস কার্যক্রমের গেজেটে বলা হয়েছে সাধারণ কর্মজীবী মানুষ যারা সাধারণ ছুটির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে যেমন: সাধারণ শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালক, চায়ের দোকানদার, হিজড়া, ভিক্ষুক ও ভবঘুরে লোকজন এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। গেজেটে এক পরিবারের একের বেশি সুবিধাভোগী নির্ধারণ না করার শর্তের কথাও বলা হয়েছে।

তবে শাহ আলমের ক্ষেত্র কোনো নিয়ম মানা হয়নি। তার নিজের পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের অধিকাংশের নাম আছে এই তালিকায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা প্রাথমিকভাবে প্রত্যেক ওয়ার্ডে বিশেষ ওএমএসের জন্য ৫০০ জনের তালিকা তৈরি করেছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ওএমএস ডিলার শাহ আলম। এই ওয়ার্ডের তালিকা তৈরিতেও বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

১০ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকার ১৬ নম্বরে রয়েছে শাহ আলমের স্ত্রী মমতাজ আলমের নাম এবং ১২ নম্বরে মেয়ে আফরোজার নাম। শাহ আলমের তিন ভাইবোন মো. সেলিম, মো. আলমগীর ও শামসুন্নাহারের নাম রয়েছে ৮, ৯ ও ২৭ নম্বরে। আরেক ভাই খোরশেদ মিয়ার ছেলে প্রবাসী নাছিরের নাম রয়েছে ৭ নম্বরে। ৩ নম্বরে রয়েছে তার শ্যালক তাজুল ইসলামের নাম। শ্যালকের স্ত্রী আসমা ইসলামের নাম ৫ নম্বরে। আরেক শ্যালকের স্ত্রী জান্নাতুল ইসলামের নাম রয়েছে ১০ নম্বরে। বোনের তিন দেবর মতিউর রহমান, মাহবুবুর রহমান ও লুৎফুর রহমানের নাম রয়েছে ৭২, ৭৩ ও ৭৪ নম্বরে। আরেক শ্যালক প্রবাসী শফিকুল ইসলামের নাম রয়েছে তালিকার ১৩ নম্বরে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে গরিব-কর্মহীন মানুষের জন্যে বিশেষ ওএমএস কার্ড গরিবের রেশন কার্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এতে একজন সুবিধাভোগী ১০ টাকা কেজি দরে ২০ কেজি চাল পাবেন। এই পৌরসভার মোট ৯ হাজার ৬০০ জন এই সুবিধা পাওয়ার কথা।

তবে শাহ আলম একা নন, তার মতো ৮৪ জন ধনাঢ্য ব্যক্তির নাম রয়েছে পৌরসভার অন্যান্য ওয়ার্ডের তালিকায়।

উদাহরণ হিসাবে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকার ৩৪ নম্বরে আছে এ্যানী রহমানের নাম। তাদের পরিবারের দুটি পাঁচতলা ভবন আছে। তার ভাই লন্ডন প্রবাসী। এই ওয়ার্ডের তালিকায় ৮৭, ৯২ ও ৯৪ নম্বরে রয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মকবুল হোসেনের তিন ভাই মো. আরিফ, মো. হানিফ ও মো. গোলাম রাব্বীর নাম। নাজির মিয়া কোটিপতি হওয়ার পাশাপাশি তার দুই ছেলে বিদেশ থাকে। বজলু মিয়ার এক ছেলে প্রবাসী ও এক ছেলে ইতালিতে থাকেন, কবির মিয়া শহরের বড় কাপড় ব্যবসায়ী, নূরুল আলমের বাড়ির তৃতীয় তলার কাজ চলমান। তাদের সবারই নাম আছে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকায়। এছাড়া ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকায় জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন দুলাল এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুণ অর রশিদের নাম রয়েছে।.. ..

ঘুষের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জিসিসি প্রকৌশলীকে হত্যা

১৮ মে, ২০২০, দেশ রুপান্তর

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন দেলোয়ার হোসেন। দীর্ঘদিন ধরেই সুনামের সঙ্গে চাকরি করে আসছিলেন। কোনো বাধা বা অদৃশ্য শক্তির কাছে মাথানত করেননি। নিয়মের মধ্যে থেকেই সবাইকে সহযোগিতা করতেন তিনি। ঠিকাদাররা ফাইল ছাড়িয়ে নিতে নিয়মিত ঘুষ সাধতেন দেলোয়ার হোসেনকে। কিন্তু তিনি তা ফিরিয়ে দিতেন। এ নিয়ে অনেকের বিরাগভাজন হন দেলোয়ার। তাকে ওএসডি পর্যন্ত করা হয়েছিল। আর সৎ থাকাই যেন কাল হলো এ প্রকৌশলীর। সম্প্রতি রাজধানীর তুরাগ এলাকায় তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর গাজীপুরে তোলপাড় শুরু হয়। থানায় মামলা হওয়ার পর র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা ছায়া তদন্ত শুরু করলে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের রহস্য বের হয়ে আসছে। ঘুষের বিনিময়ে শতকোটি টাকার কাজের ফাইল ছাড়তে রাজি না হওয়ায় নিজ গাড়িচালকের সহায়তায় প্রকৌশলী দেলোয়ারকে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্ত সংস্থাগুলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে।

এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে হুমকি সিকদার গ্রুপের: ‘গুলি করে জন্মের মতো খোঁড়া করে দিব’

২৭ মে ২০২০, প্রথম আলো

‘তোর কত বড় সাহস যে আমার কথা অমান্য করিস। গুলি করে জন্মের মতো খোঁড়া করে দিব।’ বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়াকে অস্ত্রের মুখে ধরে এনে এভাবেই হুমকি দিয়েছেন সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার।

শুধু তা–ই নয়, ব্যাংকটির এমডি ও অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টাও করেন তাঁরা। চালানো হয় নির্যাতন। জোর করে সাদা কাগজে সইও নেওয়া হয়।

আর ঘটনাটি ঘটেছে ৭ মে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর ১১ নম্বর সড়কের সিকদার হাউসে। মূলত এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ চেয়ে সময়মতো না পাওয়াতেই চলে এ নির্যাতন। এ ঘটনার পর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ব্যাংকের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

সিকদার গ্রুপ: ২৫ মে ব্যক্তিগত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ‘দেশ ছেড়েছেন দুই ভাই’

মে ২৯, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আরোপিত বিধিনিষেধের মধ্যেই গত ২৫ মে সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দুই জন যাত্রী নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে যাওয়া এই দুই ‘মুমূর্ষু রোগী’ হলেন— সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার। তারা দুই জনই ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার ইস্যুতে দুই শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাকে গুলি করার হুমকি ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত।

ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানালেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ গত ২৫ মে দুই জন যাত্রী নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

টাকার গগলস ৫০০০, হাজারের পিপিই ৪৭০০

৪ জুন, ২০২০, কালের কন্ঠ

দেশের স্বাস্থ্য খাত কতটা নড়বড়ে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর তা উন্মোচিত হয়েছে। পর্যাপ্ত ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) অভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগী মারা যাচ্ছে। নেই যথেষ্টসংখ্যক মানসম্পন্ন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই)। স্বাস্থ্য সরঞ্জামের অভাবে করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। এমন বাস্তবতায় বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে পিপিই, ভেন্টিলেটর, মাস্ক, গগলসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এসব স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় যে খরচ ধরা হয়েছে, তা বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে দুই থেকে চার গুণ বেশি।

এ ছাড়া চলমান মানবিক দুর্যোগের সময় যেখানে চিকিৎসা উপকরণের দিকে জোরালো নজর দেওয়া দরকার, সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশি ঝোঁক চিকিৎসাবহির্ভূত খাতে। চিকিৎসা সরঞ্জামে যত টাকা খরচ করা হচ্ছে, তার চেয়ে তুলনামূলক বেশি টাকা খরচ হচ্ছে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, সেমিনার, কনফারেন্স ও পরামর্শক খাতে।

করোনা সংকট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে এখন পর্যন্ত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দুটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ৮৫০ কোটি টাকা। বাকি ২৭৭ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এডিবির অর্থায়নে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিবির ঋণ ৮৫০ কোটি টাকা। বাকি ৫১৫ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। এরই মধ্যে দুটি প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে।

কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকল্প দুটিতে আছে ব্যাপক ত্রুটিবিচ্যুতি। টাকা খরচের ক্ষেত্রে আছে দ্বৈততা। অর্থ অপচয়ের আছে প্রচুর সুযোগ। প্রকল্প দুটিতে যে খরচ দেখানো হয়েছে, তাতে আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনও। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। খরচ কমানো যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেওয়া ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জরুরি সহায়তা’ শিরোনামের প্রকল্পটির আওতায় এক লাখ সেফটি গগলস কেনা হবে। প্রতিটি সেফটি গগলসের দাম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে প্রতিটি সেফটি গগলস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায়। এই প্রকল্পের আওতায় মোট এক লাখ সাত হাজার ৬০০ পিপিই কেনা হবে। যার প্রতিটির জন্য খরচ ধরা হয়েছে চার হাজার ৭০০ টাকা। পিপিই কেনায় মোট খরচ হবে ৫০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব শর্ত মেনে ওষুধ অধিদপ্তরের সব শর্ত অনুসরণ করে বিভিন্ন কম্পানির তৈরি ভালো মানের পিপিই বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দুই হাজার টাকায়। এই প্রকল্পের আওতায় ৭৬ হাজার ৬০০ জোড়া বুট শু কেনা হবে। প্রতিটি শুর খরচ দেখানো হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা। এই খাতে খরচ ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দেশে বর্তমান বাজারে বুট শু ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় মিলছে।

জানতে চাইলে বেক্সিমকো ফার্মার চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জিএসএম ৭০’ পিপিই দেশের বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ওষুধ অধিদপ্তরের সব শর্ত মেনেই মানসম্পন্ন পিপিই উৎপাদন ও সরবরাহ করছে বেক্সিমকো।

পিপিই ও গগলস উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সফট-বাংলার স্বত্বাধিকারী কুদরত এলাহী লিটন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিটি পিপিইর দাম এক থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে। এসব পিপিই আন্তর্জাতিক মানের। দুই হাজার টাকার বেশি কোনো পিপিই নেই। এ ছাড়া প্রতিটি ভালো মানের সুরক্ষা গগলস বিক্রি হয় ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।

কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে করোনা মোকাবেলার প্রকল্পে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার চেয়ে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, সেমিনার, কনফারেন্স ও পরামর্শক খাতে তুলনামূলক বেশি খরচ হচ্ছে। গবেষণার জন্য খরচ হবে ২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইনোভেশন নামের আলাদা একটি খাত তৈরি করে সেখানে ৩৬ কোটি টাকা খরচ করা হবে। চলমান করোনা সংকটের মধ্যে যেখানে সব কিছু স্থবির, সেখানে এই প্রকল্পে ভ্রমণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। মাত্র ৩০টা অডিও-ভিডিও ফিল্ম তৈরির খরচ দেখানো হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ৮০টা সেমিনার ও কনফারেন্স করে খরচ করা হবে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে ওয়েবসাইট উন্নয়ন খাতে। মাত্র চারটি ওয়েবসাইট উন্নয়ন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খরচ হবে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাঁচটি ডাটাবেইস তৈরিতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাঁচটি কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনায় খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ৩০টি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য খরচ হবে আরো ৪৫ কোটি টাকা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া নেওয়া হবে। সেই গাড়িভাড়া বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৩৭ কোটি টাকা। দেশে যতগুলো স্থলবন্দর আছে, সেখানে যাতায়াত করা মানুষের শরীরের তাপমাত্রা দেখতে নির্মাণ করা হবে অনাবাসিক ভবন। সেসব ভবন নির্মাণে খরচ দেখানো হয়েছে ১৯০ কোটি টাকা।

এমন খরচের হিসাব দেখে বিস্মিত পরিকল্পনা কমিশনও। কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিকালে প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদন দরকার, তাই চিকিৎসা সরঞ্জামের তুলনায় এসব খাত অনাবশ্যক হওয়া সত্ত্বেও প্রকল্পটি অনুমোদন করতে হয়েছে কমিশনের কর্মকর্তাদের।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব পদমর্যাদার) আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনাবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য যে ১৯০ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, আমরা জানতে চেয়েছি এই খরচ কোন প্রক্রিয়ায় দেখানো হয়েছে। কিন্তু আমরা সদুত্তর পাইনি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব আমরা প্রকল্পটি অনুমোদন করেছি। এখন দেখছি অনেক খাতে যে খরচ ধরা হয়েছে, সেটা বেশি মনে হচ্ছে। তবে এখনো সংশোধনের সুযোগ আছে। আমরা প্রকল্পে খরচ কমিয়ে আনতে পারি।’

এডিবির অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্পটির নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্পে প্রাক্কলন করা খরচের সঙ্গে বেশ কিছু অসংগতি রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের প্রকল্পটিতে অডিও-ভিডিও ফিল্মে যেখানে খরচ দেখানো হয়েছে ১১ কোটি টাকা, এডিবির অর্থায়নের প্রকল্পটিতে একই খাতে খরচ ধরা হয়েছে মাত্র এক কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্পে গবেষণা খাতে খরচ দেখানো হয়েছে ২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, এডিবির অর্থায়নের প্রকল্পটিতে সমজাতীয় খাতে খরচ দেখানো হয়েছে মাত্র চার কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া পাঁচটি কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ৫০ লাখ টাকা, যেখানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের প্রকল্পটিতে সমানসংখ্যক সফটওয়্যার কেনার খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। এডিবির অর্থায়নে এই প্রকল্পের আওতায় সেমিনার কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপ খাতে ৪৫ কোটি টাকা ধরা আছে।

এডিবির অর্থায়নের প্রকল্পটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় অনাবাসিক ভবন নির্মাণে ২০০ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রক্রিয়ায় এই টাকা খরচ ধরা হয়েছে, পরিকল্পনা কমিশনকে সদুত্তর দিতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

মানব অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতে সংসদ সদস্য কাজী পাপুল গ্রেফতার

০৭ জুন, ২০২০, ইত্তেফাক

মানবপাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার হয়েছেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম ওরফে কাজী পাপুল। তিনি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য। শনিবার রাতে কুয়েতের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) তাকে গ্রেফতার করে। কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকায় প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, শনিবার (৬ জুন) স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় কুয়েতের সিআইডি সদস্যরা মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলকে কুয়েত সরকারের সিআইডি গ্রেফতার করেছে বলে জানতে পেরেছি। শনিবার রাতে কুয়েত সিটির বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। কুয়েত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে তিনি জানান, ওই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ তদন্ত করছে কুয়েত সরকার। ফেব্রুয়ারিতে এ সংক্রান্ত সংবাদ কুয়েতের পত্রিকায় প্রকাশ হয়। এরপরও দূতাবাসকে কিছু জানায়নি কুয়েত সরকার।

সূত্র জানায়, কুয়েতে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে ১০০ জনেরও বেশি ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযুক্তদের তালিকায় এমপি কাজী পাপুলের নামও ছিল। কুয়েতে ব্যবসা রয়েছে তার। মার্চ মাসের শেষদিক থেকে কুয়েতেই অবস্থান করছিলেন তিনি।

গত ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস ও আরব টাইমস সংসদ সদস্যসহ বাংলাদেশের মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের তিন জন মানব পাচারকারীকে ধরতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল এই তিন জনের মধ্যে একজন। সেখানে গ্রেফতার অভিযান শুরুর আগেই তিনি দেশে চলে আসেন। কুয়েতে তাঁর পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ মাস ধরে কর্মীদের বেতন দিচ্ছে না।

কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির নিরাপত্তা বিভাগ বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যকে খুঁজছে যার অবৈধ ভিসার ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তার কোম্পানি যাতে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পায় সেজন্য বাংলাদেশের ওই সংসদ সদস্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ঘুষ হিসেবে ৫টি বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দিয়েছেন।

দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, ২০ হাজার বাংলাদেশিকে কুয়েতে পাচার করে ওই চক্রটি ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

কাজী শহিদ ইসলামের ফেসবুক ও ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি মারাফী কুয়েতিয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজ, কুয়েত, ওমান ও জর্ডানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটি জনশক্তি রপ্তানিতে যুক্ত। এ ছাড়া তিনি বেসরকারি খাতের ব্যাংক এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান এবং এনআরবি সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানির চেয়ারম্যান। স্বতন্ত্র এই সংসদ আওয়ামী লীগ কুয়েতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য, বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েতের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন।

দুর্জয় এখন পাওয়ার প্লান্টের মালিক, কোথায় পেলেন এত টাকা?

২৩ জুন, ২০২০, কালের কণ্ঠ

ছিলেন একজন ক্রিকেটার। স্ত্রীসহ চাকরির আয়ে জীবিকা চলত। এমপি হওয়ার পর অদৃশ্য জাদুর ছোঁয়ায় সেই নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের হাতে চলে আসে আলাদীনের চেরাগ। রাতারাতি গড়ে ওঠে অঢেল সম্পদ আর প্রাচুর্য। এমনকি পাওয়ার প্লান্টের মালিকও হয়েছেন তিনি। দেশ-বিদেশে হরদম যাতায়াত চলে তার। মালয়েশিয়ায় গড়ে তুলেছেন নানা রকম ব্যবসা- বাণিজ্য। এসব নিয়ে দুর্জয়ের নির্বাচনী এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা মানুষের মুখে মুখে। তাকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টির আরেকটি কারণ হচ্ছে, পাপিয়াকাণ্ডে তার নাম উঠে আসা।

মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নাঈমুর রহমান দুর্জয় তার নির্বাচনী এলাকাকেও ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত করেছেন। থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কমিটি গঠন, পদ প্রদান, পদ থেকে হটিয়ে দেওয়া, সবকিছুর পেছনেই বাণিজ্য করার এন্তার অভিযোগ রয়েছে। এ বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের দল থেকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সর্বত্রই এমপির পকেট কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের মাধ্যমেই চলছে ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলার যাবতীয় কর্মকাণ্ড।

এলাকার যাবতীয় ঠিকাদারি, সব ধরনের নিয়োগ, বালুমহাল জবরদখল, সরকারি খাস জমি ও খাল-নালা ভরাট করে পজেশন আকারে কেনাবেচা, নদ-নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজিংসহ বেপরোয়া মাটি বাণিজ্যের সবকিছুই এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন দুর্জয়। এ ছাড়া আরিচা ও পাটুরিয়াঘাটে ঝুঁকিপূর্ণ স্পিডবোটের অবৈধ বাণিজ্যও গড়ে তুলেছেন তিনি। দলের নিজস্ব ক্যাডার ও আস্থাভাজন নেতা-কর্মীদের মাধ্যমেই তার প্রতিটি ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে।… …

ছেলেধরা’ মিঠুর মুঠোয় স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটা

২৩ জুন, ২০২০, কালের কন্ঠ

হাওয়া ভবন থেকে মিন্টো রোড, মহাখালী থেকে সচিবালয়, মন্ত্রীর দপ্তর থেকে বাসা—যুগের কিংবা সরকারের বদল হলেও স্বাস্থ্য খাতে ঠিকাদারি সাম্রাজ্যের গডফাদার হয়েই আছেন মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। বিএনপি আমলে যেমন খোদ প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে ধরেছিলেন, তেমনি আওয়ামী লীগ আমলে একজন মন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সখ্য গড়ে স্বাস্থ্য খাতে যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতেই রেখেছেন বছরের পর বছর ধরে। গা বাঁচাতে সাত বছর ধরে কিছুটা পর্দার আড়ালে থেকে চালাচ্ছেন নিজের গড়া সিন্ডিকেটের সব কিছু। থাকছেন কখনো দেশে, কখনো বা দেশের বাইরে। কেনাকাটার বাইরে স্বাস্থ্য খাতের সরকারি পর্যায়ে বদলি-নিয়োগেও রয়েছে তাঁর সমান নিয়ন্ত্রণ। নিজের সিন্ডিকেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতে বসানো এবং অপছন্দের লোকদের অন্যত্র বদলি করানোর কাজও নিয়মিত করে ফেলছেন নানা প্রভাব খাটিয়ে।

এমনকি এখন পালিয়ে থেকেও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সব কিছুই চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে মিলেছে এমন তথ্য। গত ৩০ মে জনপ্রশাসনসচিবের কাছে লেখা এক চিঠিতে এই মিঠুসহ আরো বিভিন্ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ।

মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর একসময়ের ঘনিষ্ঠ এক সহযোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মিঠুর এত প্রভাবের খুঁটির জোর কোথায়? সে কেন সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে। এর জবাব মন্ত্রীদের ছেলেরাই মিঠুর ভরসা। তাই আমরা তাকে সব সময় ‘ছেলেধরা মিঠু’ বলেই ডাকতাম। কেবল স্বাস্থ্যমন্ত্রীই নন, আরো কয়েকজন মন্ত্রীর ছেলেদের সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে বাণিজ্যিক কারণেই।”… …

পরীক্ষা ছাড়াই করোনা শনাক্তের অভিযোগ, জেকেজির সিইও গ্রেপ্তার

২৩ জুন ২০২০, প্রথম আলো

ফোন করলে বাসায় গিয়ে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করা হতো। বিনিময়ে নেওয়া হতো সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু সেই নমুনার কোনো পরীক্ষা ছাড়া এক দিন পরেই পরীক্ষার ফল দেওয়া হতো। এমন অভিযোগ উঠেছে জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার (জেকেজি হেলথকেয়ার) বিরুদ্ধে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চল আজ মঙ্গলবার জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল চৌধুরীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বলছে, অন্তত ৩৭ জনকে ভুয়া ফল দেওয়ার বিষয়টি তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য পাঁচটি ল্যাপটপ, দুটি ডেস্কটপ এবং করোনার নমুনা সংগ্রহের তিন হাজার কিট জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।… …

শুধু টাকার জোরেই…

২৪ জুন ২০২০, প্রথম আলো

শুধু টাকার জোরে সস্ত্রীক সাংসদ হয়েছেন কুয়েতে মানব পাচারে অভিযুক্ত মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম (পাপুল)। ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়ে প্রথমে নিজে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের (রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সদরের আংশিক) সাংসদ হন। পরে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও একইভাবে সংরক্ষিত আসনে সাংসদ বানান। এখন কুয়েতে আটক হওয়ার পর জানা যাচ্ছে, এই টাকার উৎস ভিসাবাণিজ্য ও মানব পাচার।

ইতিমধ্যে কুয়েত কর্তৃপক্ষ সে দেশের ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশি এই সাংসদের ১৩৮ কোটি টাকা জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। সে দেশ থেকে অন্য দেশেও তিনি অর্থ পাচার করেছেন বলে কর্তৃপক্ষের বরাতে কুয়েতি গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। তবে বিদেশে থাকা এসব অর্থসম্পদের কথা শহিদ ইসলাম ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় উল্লেখ করেননি।

এলাকায় খোঁজখবর করে জানা গেছে, এলাকার মানুষের কাছে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে শহিদ ইসলামের আকস্মিক প্রার্থী হওয়া এবং নির্বাচিত হওয়া ছিল পিলে চমকানোর মতো। যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচনের আগেই অনেকটা জয় নিশ্চিত করে ফেলেন। গত নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরিক এরশাদের জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দেয়। জাপার মনোনয়ন পান আগের বারের সাংসদ মোহাম্মদ নোমান। কিন্তু মনোনয়ন পাওয়ার পর নোমান নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান।

তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দর–কষাকষির একটা পর্যায়ে এইচ এম এরশাদ দলের মহাসচিব পদ থেকে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দায়িত্ব দেন মসিউর রহমানকে (রাঙ্গা)। দায়িত্ব ছাড়ার আগে রুহুল আমিন হাওলাদার লক্ষ্মীপুর-২ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে নোমানের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছিলেন। এরপর এমন কী ঘটেছিল যে দলীয় প্রার্থী নোমানকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে হয়েছিল? এ প্রশ্নের জবাবে মসিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘একদিন পাপুলকে (শহিদ ইসলাম) সঙ্গে নিয়ে নোমান এসে বলল, ভাই আমি নির্বাচন করব না। আমি জিততে পারব না, এটা পাপুলকে দিয়ে দেন। প্রার্থী যদি নির্বাচন করতে না চায়, তাহলে কী করার আছে?’

তবে জাপার উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, মহাসচিব পদে পরিবর্তনের পর আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বেইলি রোডের বাসায় একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জাপার প্রতিনিধির কাছে লক্ষ্মীপুর–২ আসন শহিদ ইসলামকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন এইচ টি ইমাম। এ কারণে জাপা আসনটি ধরে রাখেনি; আওয়ামী লীগও প্রার্থী দেয়নি। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনাকমিটি থেকে চিঠি দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদ ইসলামের পক্ষে কাজ করার জন্য দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের পক্ষে চিঠিটি পাঠান নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী সেলিম মাহমুদ। চিঠিতে বলা হয়, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান জোটের বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদ ইসলামের সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। যদিও বাস্তবে নোমান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। এ কারণে ব্যালটে প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ও দলীয় প্রতীক লাঙ্গল ছিল। তিনি মূলত ওই সময়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের আট দিন আগে ওই চিঠিটি পাঠানো হয় লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে। তাতে আরও বলা হয়, ‘আপনাদের জানা আছে যে শহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত নেতা ও সক্রিয় মাঠপর্যায়ের কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বৃহত্তর স্বার্থে এই আসনের বিজয় দলের পক্ষে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে শহিদ ইসলামকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে নির্বাচন কমিশনকৃত তাঁর প্রতীকে বিজয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি।’

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বললেন, ‘শহিদ ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী আমাদের লক্ষ্মীপুর জেলা, উপজেলা ও কোনো ইউনিয়ন কমিটির সদস্য পদেও নেই। তিনি মাঠপর্যায়ে দলীয় কোনো কাজও কখনো করেননি।’

তাহলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চিঠিতে কীভাবে শহিদ ইসলামকে দলের একজন নিবেদিত নেতা ও সক্রিয় মাঠপর্যায়ের কর্মী বলা হলো—এ প্রশ্নের জবাবে নূর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘হ্যাঁ, ওইভাবে একটা লেখা দেখেছি। ওইটা তো চিঠি যাঁরা ইস্যু করেছেন, তাঁরা বলতে পারবেন। ঊর্ধ্বতন ইউনিট যখন একটা কিছু দেয়, সে বিষয়ে আমাদের তো বলারও কিছু থাকে না।’… …

র‌্যাবের অভিযানে রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আটক

জুলাই ০৬, বণিক বার্তা অনলাইন

করোনা রোগীদের কাছ থেকে বিল আদায়, করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট তৈরিসহ নানা অভিযোগে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। অভিযানে এসব অভিযোগের সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ পাওয়ায় হাসপাতালটির ব্যবস্থাপকসহ ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. শাহেদ পলাতক।

আজ সোমবার দুপুরের পর থেকে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কের ওই হাসপাতালে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। এতে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম। সন্ধ্যার পর তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিন ধরনের অভিযোগ ও অপরাধের প্রমাণ পেয়েছেন তারা। প্রথমত, তারা করোনার নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করত। এ ধরনের ১৪টি অভিযোগ র‌্যাবের কাছে জমা পড়ে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান।

দ্বিতীয়ত, হাসপাতালটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেয়ার। সরকার এই ব্যয় বহন করবে। কিন্তু তারা রোগীপ্রতি লক্ষাধিক টাকা বিল আদায় করেছে। পাশাপাশি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে এই মর্মে সরকারের কাছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি বিল জমা দেয়। রিজেন্ট হাসপাতাল এ পর্যন্ত প্রায় দুশ কভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে বলেও জানান সারোয়ার আলম।.. …

রিজেন্টের ভুয়া টেস্ট-কাল হলো ইতালিতে ফেরা বাংলাদেশিদের

১০ জুলাই, ২০২০, ইত্তেফাক

বাংলাদেশের কয়েকটি হাসপাতালে করোনা টেস্ট জালিয়াতি ও তথ্য গোপন করে কোভিড-১৯ শরীরে নিয়ে নেগেটিভ সনদে ইতালিতে প্রবেশ করার ঘটনায় তোলপাড় চলছে সে দেশে।

গত ২৬ জুন ও ৬ জুলাই দুটি ফ্লাইটে যাওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে ২৯ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তাদের ‘করোনা সনদ’-এর গলদ ধরতে পারে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।

পরীক্ষা ছাড়াই রিজেন্টসহ কয়েকটি হাসপাতাল থেকে করোনা নেগেটিভের ভুয়া সনদ নিয়ে ইতালিতে যাওয়ার পর বিপাকে পড়ছেন বাংলাদেশিরা।

ইতিমধ্যে কয়েকটি ফ্লাইট ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে তারা। ভুয়া করোনা টেস্ট রিপোর্টের জের ধরে ইতালি সরকার ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশিকে ঢুকতে দেবে না সেই দেশে।

তারা তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জানতে পারে এসব প্রবাসী ভুয়া ‘নেগোটিভ’ সনদ কীভাবে সংগ্রহ করেছেন। ইতালির প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, টাকার বিনিময়ে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে বাংলাদেশিরা ইতালিতে ঢুকছেন।

রিজেন্ট হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে ভুয়া সনদ বিক্রি হচ্ছে। এখন বাংলাদেশিদের এড়িয়ে চলছেন ইতালীয়রা। ইতালিফেরত এক আক্রান্ত প্রবাসী বাংলাদেশি রেস্তোরাঁয় কাজ করায় ঐ মালিকের দুটি রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও হানা দিচ্ছে প্রশাসনের লোকজন। ইতিমধ্যে সোমবার কাতার এয়ারওয়েজের যে ফ্লাইট রোমে গিয়েছিল, সেটাকে ইতালির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ‘করোনা বোমা’ আখ্যা দিয়ে ১৬৫ জনকে বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় ফেরত পাঠিয়েছেন।

ঢাকায় ফেরা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘ইতালির স্বাস্থ্য দপ্তর ঢাকা ত্যাগের ৭২ ঘণ্টা পূর্বে ইস্যু করা স্বাস্থ্য সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক করেছে। সেক্ষেত্রে অনেকে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও বিদেশে কর্মস্থলে ফিরতে ভুয়া স্বাস্থ্য সনদ সংগ্রহ করছেন। আমার জানামতে, এ পর্যন্ত যারা ইতালিতে ফিরেছেন, তাদের কয়েক জন রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে করোনার সার্টিফিকেট নিয়েছেন। কারণ সরকারি ব্যবস্থাপনায় দ্রুত করোনা টেস্টের রিপোর্ট পাওয়া যায় না। রিজেন্টকে টাকা দিলে দ্রুত সার্টিফিকেট পাওয়া গেছে।’

গত জুন মাসে চার্টার্ড ফ্লাইটে যারা ইতালি গেছেন, তাদের কেউ কেউ দ্রুত পাওয়ার জন্য রিজেন্ট ও জেকেজি হেলথ কেয়ার (জোবেদা খাতুন সার্বজনীন চিকিত্সাসেবা) থেকে সনদ সংগ্রহ করেছেন।

ইতালি-বাংলা অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট তাইফুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ থেকে আগতদের ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে সহযোগিতা করেছে ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের কয়েকটি শাখা। ১ জুন থেকে যারা ইতালিতে ফিরেছেন, তাদের করোনা টেস্ট করানোর জন্য সরকারি কেন্দ্রে যেতে আহ্বান করেছে। এ ছাড়া সংক্রমণ রোধে এই সপ্তাহে জুমার জামাতে অংশ নিতেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

একটি সূত্র জানায়, ইতালিতে যাওয়া করোনা রোগীদের অধিকাংশের ভুয়া সার্টিফিকেট ছিল রিজেন্টের দেওয়া। এই খবর সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসে। এরপরই রিজেন্টে অভিযান চালানো হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।… …

বেঙ্গল জাহেরের পারিবারিক সিন্ডিকেট

১৮ জুলাই, ২০২০, দেশ রুপান্তর

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতাপশালী ঠিকাদার জাহের উদ্দিন সরকার একসময় ছিলেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর বেতদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। দিনাজপুর-রংপুর অঞ্চলের স্কুলে স্কুলে বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী রাজধানীর পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে নিজের বিদ্যালয়ের জন্য সরঞ্জাম কেনার সুবাদে পরিচয় হয় জাহেরের। ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে জোট বেঁধে দিনাজপুর-রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুলে বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ শুরু করেন জাহের। তার কোম্পানির নাম দেন বেঙ্গল সায়েন্টিফিক। সেই থেকে তিনি ‘বেঙ্গল জাহের’ নামে পরিচিতি পান। এরপর বেঙ্গল জাহের একসময় ঢাকায় আসেন তারই পাশের জেলা রংপুরের এক ঠিকাদারের হাত ধরে। তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। চতুর জাহের পরে নিজেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ঠিকাদারি শুরু করেন। নাম দেন বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোং লি.। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ঠিকাদারির নামে সরঞ্জাম সরবরাহ না করেই অর্থ আত্মসাৎ এবং নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন একসময়ের স্কুলশিক্ষক জাহের উদ্দিন। বাবা আবদুস সাত্তার সরকার, ছেলে আহসান হাবীব, ভগ্নিপতি আসাদুর রহমান এবং শ্বশুরসহ পরিবারের আরও কয়েকজনের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলে ঠিকাদারির ‘পারিবারিক চক্র’ গড়ে তোলেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাৎ করেছে জাহের পরিবার। এই অভিযোগে বাবা, ছেলে, নাতি ও ভগ্নিপতিকে আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৯ সালেই জাহের পরিবারের বিরুদ্ধে কমপক্ষে পাঁচটি মামলা করেছে দুদক।

দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে জাহের পরিবারের ঠিকাদারি চক্রের অবিশ্বাস্য অনেক তথ্য। জাহের ঠিকাদারি করে বাড়ি কিনেছেন অস্ট্রেলিয়াতে, সেখানে রয়েছে ব্যবসাও। তার এক স্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার ওই বাড়িতে থাকেন এবং তার সেখানকার ব্যবসা দেখাশোনা করেন। দেশে থাকেন আরেক স্ত্রী। সাবেক স্কুলশিক্ষক জাহেরের সম্পদের পরিমাণ কত তার সঠিক তথ্য না পাওয়া গেলেও দিনাজপুরের ফুলবাড়ী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ঠিকাদার চক্র গঠন করে জাহের এখন শতকোটি টাকার মালিক। ঢাকা ও দিনাজপুরসহ দেশে-বিদেশে রয়েছে তার সম্পদের পাহাড়। তিনিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরখাস্ত হওয়া হিসাবরক্ষক আবজালের মতো বিপুল সম্পদের মালিক। আর আবজালেরই হাত ধরে পাড়ি জমিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়।

দুদকের সুপারিশের পর গত ১৪ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে ১৪ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে তার ৩টি বেঙ্গল জাহের পরিবারের। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক), সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ এবং সরঞ্জাম সরবরাহ না করেই বিল তুলে আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে জাহেরের বিরুদ্ধে। জাহের উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আরও অনুসন্ধান চলমান আছে দুদকে।

জাহের উদ্দিন পরিবারের ৫-৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ঢাকার বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোং-এর স্বত্বাধিকারী মো. জাহের উদ্দিন সরকার, মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী তার বাবা মো. আবদুস সাত্তার সরকার ও ছেলে আহসান হাবীব সরকার। জাহেরের ভগ্নিপতি দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর আসাদুর রহমান ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের মালিক। এর বাইরে শ্বশুরসহ আরও কয়েকজন আত্মীয়ের নামে জাহেরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে।

কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমডি) বিদায়ী পরিচালক (ভান্ডার ও সরবরাহকারী) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহ গত ৩০ মে জনপ্রশাসন সচিবকে লেখা এক চিঠিতে সিএমএসডিসহ গোটা স্বাস্থ্য খাতকে ‘সিন্ডিকেট বাণিজ্যমুক্ত’ করার অনুরোধ জানান। চিঠিতে স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেঙ্গল সায়েন্টিফিকের জাহের উদ্দিন সিন্ডিকেটের আধিপত্যের কথা তুলে ধরেন। এই সেনা কর্মকর্তা সিএমএসডির ক্রয় প্রক্রিয়ায় সরকারি এবং সাপ্লাইয়ার (ঠিকাদার) পরিবেষ্টিত দুষ্টচক্র বা সিন্ডিকেট বাণিজ্যের আধিপত্য সম্পর্কে লিখেছেন, স্বাস্থ্য খাতে ঠিকাদার চক্রের মধ্যে বেঙ্গল সায়েন্টিফিকের জাহের উদ্দিন উল্লেখযোগ্য। এই চক্র বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিশেষত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বাজেট সংগ্রহসহ প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান তৈরি এবং তাদের দেওয়া প্রকিউরমেন্ট লিস্ট অনুযায়ী সিএমএসডিতে কাজ বাগিয়ে নিতে আধিপত্য বিস্তার করে। যা তারা দীর্ঘদিন থেকেই করে আসছে। এতে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিম্নমানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সরবরাহ হচ্ছে। যেহেতু সিএমএসডির সকল ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে সেহেতু সেসব স্থানে তাদের পছন্দনীয় কর্মকর্তা বদলি করে আনায় হাত রয়েছে। এমনকি ক্রয় প্রক্রিয়া তাদের মনঃপূত না হলে ক্রয় বাতিল/দীর্ঘায়িত করার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ওইসব কর্মকর্তা। প্রয়োজনবোধে কর্মকর্তার বদলিসহ বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয়।… …

করোনায় দুর্নীতির অভিনবত্বে এগিয়ে বাংলাদেশ

২০ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

… … সব মিলিয়ে কোভিড-১৯-এর সময়ে অনেক দেশই দুর্নীতি নিয়ে কমবেশি সংকটে আছে। সরকারি কিছু কর্মচারী, বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি খাতের অনেক উদ্যোক্তা এসব দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বেশি অভিযোগ বেশি দরে পণ্য কেনাকাটার। কিন্তু দুর্নীতির ক্ষেত্রে অভিনবত্বের পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ। সুরক্ষা পণ্য কেনাকাটায় দুর্নীতি, কাজ দেওয়ায় অনিয়ম এবং অসহায় ও দুস্থদের ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতি তো আছেই। তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে ভুয়া পরীক্ষার কেলেঙ্কারি। নতুন ধরনের এই দুর্নীতির কারণে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে ‘বিগ বিজনেস ইন বাংলাদেশ: সেলিং ফেক করোনাভাইরাস সার্টিফিকেট’।… …

নগদ আড়াই হাজার টাকা দেওয়ার কর্মসূচি সফল করতে পারেনি সরকার। এখন পর্যন্ত নগদ অর্থ পেয়েছে মাত্র ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৫৬ জন। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই এই হাল। অনেক অবস্থাপন্নদের নাম এই তালিকায় ঢোকানো হয়েছে। নগদ সহায়তা এবং ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ১০২ জন জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়াদের বেশির ভাগই কোনো না কোনোভাবে সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সুরক্ষাসামগ্রী কেনা ও সরবরাহ নিয়েও ঘটেছে দুর্নীতি। নিম্নমানের সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) ও মাস্ক কিনে তা সরবরাহ করা হয়েছে। এসব কেনাও হয়েছে অস্বাভাবিক বেশি দামে। করোনার শুরুতেই অর্থ মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। পরে সংকট মোকাবিলায় জরুরি স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে সরকার। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকা এবং এডিবির প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। এই দুই প্রকল্পের কেনাকাটা নিয়েই উঠেছে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ। স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনাকাটার বাইরে সফটওয়্যার কেনা, ওয়েবসাইট উন্নয়ন, অডিও-ভিডিও ফিল্ম নির্মাণ, সেমিনার সম্মেলন করা, ভ্রমণ ব্যয় এবং পরামর্শক খাতে বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েও উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ।

তবে বাংলাদেশে করোনাকালের দুর্নীতির সব উদাহরণকে ছাপিয়ে গেছে জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের জালিয়াতির ঘটনা। করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে এই দুই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের আটক করেছে সরকার। করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা ফেলে দিয়ে, ভুয়া ফলাফল দেওয়ার ঘটনা সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত বিরল।

বাংলাদেশে শুরু থেকেই টেস্ট করা হয়েছে খুবই কম। সমালোচনার মুখে টেস্টের সংখ্যা বাড়লেও ফল পেতে দীর্ঘ সময় এখনো অপেক্ষা করতে হয়। টেস্টের জন্য ধরতে হয় দীর্ঘ লাইন। এখন তো টেস্টের জন্য অর্থ নেওয়া শুরু করেছে সরকার। ফলে শুরু থেকেই করোনা টেস্ট নিয়ে যে আস্থার অভাব ছিল, তা আরও বেড়েছে। এর মধ্যেই আবার জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের ভুয়া টেস্টের তথ্য। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাবানদের একাংশের যোগসাজশের বিষয়টি এর মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে। আবার এই দুই প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া ও চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরস্পরের দোষ দিচ্ছে। সুশাসন ও জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই বলেই এমনটা ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এ ছাড়া, চুক্তি সই করার আগে পড়ে দেখেন না বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যও ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।… …

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি

নিখোঁজ ফটোসাংবাদিক শফিকুলের খোঁজ মিলেছে

০৩ মে ২০২০, প্রথম আলো

নিখোঁজ ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের খোঁজ মিলেছে বলে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে মনোরম পলক। প্রথম আলোকে শফিকুল ইসলামের ছেলে মনোরম পলক জানান, শনিবার দিবাগত রাত ২টা ৪৮ মিনিটে তাঁর বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। বেনাপোল থানার একজন পুলিশ সদস্যের ফোন থেকে তিনি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি ভালো আছেন বলে জানান।

র‌্যাব পরিচয়ে ‘রাষ্ট্রচিন্তা’দিদারকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ

মে ০৫, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

র‌্যাব পরিচয়ে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার নিজের অফিস থেকে রাষ্ট্রচিন্তা নামে একটি সংগঠনের অন্যতম সংগঠক দিদার ভুঁইয়াকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। মঙ্গলবার (৫ মে) সন্ধ্যার সময় সাদা পোশাকে কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের র‌্যাবের লোক বলে দিদার ভুঁইয়ার অফিসে যায়। অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিরা দিদার ভুঁইয়াকে নিয়ে যায়। একইসঙ্গে তার অফিসের দুটি সিপিইউ, একটি ল্যাপটপ এবং একটি মোবাইলও নিয়ে যায়। যোগাযোগ করা হলে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, র‌্যাব-১ দিদার নামে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করেনি। তবু বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

দিদার ভুঁইয়ার বোন জামাই জাকির চৌধুরী জানান, রাজধানীর উত্তর বাড্ডার হল্যান্ড সেন্টারের পেছনে একটি ভবনের তৃতীয় তলায় থাকেন দিদার ভুঁইয়া। ওই ভবনের ৬ তলায় অ্যাবাক টেকনোলজি নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ ও ‘পরিবর্তন চাই’ নামে দুটি সংগঠনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার সময় তিনি অফিসে অবস্থানকালে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক গ্রেপ্তার

মে ০৬, ২০২০, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে রাজধানীর কাকরাইল ও লালমাটিয়া থেকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম আজ বুধবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘র‌্যাব-৩ এর একটি দল আটককৃতদের রমনা থানায় হস্তান্তর করেছে।’

বিষয়টি র‌্যাব-৩  দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জামশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় তাদের দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

গুজব ছড়ানোর অভিযোগে কার্টুনিস্ট, সাংবাদিকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

০৬ মে ২০২০, প্রথম আলো

জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে র‌্যাব-৩ প্রবাসী সাংবাদিক, কার্টুনিস্টসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় মামলা করেছে।

এই মামলায় আসামি করা হয়েছে, কার্টুনিস্ট আহম্মেদ কবির কিশোর, ব্যবসায়ী মোস্তাক আহম্মেদ, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য মো দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মিনহাজ মান্নান, প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও সাহেদ আলম, সায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, র‌্যাব-৩ পর্যালোচনা করে দেখেছেম আই এম বাংলাদেশী (ইংরেজি হরফে লেখা) পেজের অ্যাডমিন সায়ের জুুলকারনাইন, আমি কিশোর, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ ও মোস্তাক আহম্মেদ নামে পাঁচজন দীর্ঘদিন ধরে ওই ফেসবুক পেজটি পরিচালনা করে আসছেন।

এই ফেসবুক পেজ থেকে জাতির জনক, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মহামারী সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অপপ্রচার বা মিথ্যা জেনেও তাঁরা গুজবসহ বিভিন্ন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াচ্ছিলেন। এতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে র‌্যাব।

এজাহারে র‌্যাব বিভিন্ন পোস্টের লিঙ্ক দিয়েছে।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাঈনুল ইসলাম ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার খবর নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার আছেন, বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মাসে ক্রসফায়ার হেফাজতে ১০১ মৃত্যু

১০ মে, ২০২০, দেশ রুপান্তর

চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও ক্রসফায়ারে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গত শুক্রবার রাতে আসকের অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিংয়ের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফজলুল কবির স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত চার মাসে গ্রেপ্তারের আগে ক্রসফায়ারে ৬১ জন, গ্রেপ্তারের পর ক্রসফায়ারে ২১ জন, গ্রেপ্তারের আগে শারীরিক নির্যাতনে ৩ জন, গ্রেপ্তারের পর শারীরিক নির্যাতনে ১০ জন, গ্রেপ্তারের আগে বন্দুকযুদ্ধে দুজন, কাস্টডিতে অসুস্থ হয়ে একজন, কাস্টডিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর শরীরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্র্তৃক দুজনকে গুম করার অভিযোগ উঠেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: করোনাকালেও বেড়েছে মামলা গ্রেপ্তার

১১ মে ২০২০, প্রথম আলো

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতেও দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত ৭১ দিনে এই আইনে মামলা হয়েছে ৪৩টি। এর আগে ২০১৯ সালে বছরজুড়ে এই সংখ্যা ছিল ৬৩।….

গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত হওয়া ৪৩টি মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর ১১টি হয়েছে করোনাভাইরাস নিয়ে ‘গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে। ছয়টি মামলা হয়েছে মন্ত্রী, সাংসদ বা স্থানীয় মেয়রকে জড়িয়ে ‘মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন’ বা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে। ত্রাণ চুরি নিয়ে ‘মিথ্যা তথ্য’ ছড়িয়ে দেওয়া ও সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে পাঁচটি, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে তিনটি, ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে তিনটি, পুলিশের সমালোচনা করে সংবাদ পরিবেশন ও ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে চারটি, চিকিৎসার সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় একটি, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে সমালোচনা করায় দুটি, ‘চাঁদা না পেয়ে সংবাদ পরিবেশনের’ অভিযোগে একটি এবং ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে একটি মামলা হয়েছে।

ডিবি পরিচয়ে পল্লবীর বাসা থেকে যুবককে তুলে নেয়ার অভিযোগ

১১ জুন, ২০২০, দেশ রুপন্তর

রাজধানীর পল্লবীর বাসা থেকে ফারজাদ জুলফিকার অমিত (৩০) নামে যুবককে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ করেছেন তার মা।  তবে থানা পুলিশ ও ডিবির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করেননি।

ফারজাদ জুলফিকারের মা জানান, অমিত ভারত থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বছরখানেক আগে দেশে ফেরে।

তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ ও অনলাইনে লেখালেখি করতেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন। … …

রংপুরে বেরোবির শিক্ষিকা গ্রেফতার

১৪ জুন, ২০২০, ইত্তেফাক

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাংলা বিভাগের সিরাজুম মুনিরা নামের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ফেসবুকে ব্যঙ্গাত্মক স্ট্যাটাসের অভিযোগে করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার দিবাগত (১৩ জুন) রাত বারোটার দিকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে তাজহাট থানা পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি তুষার কিবরিয়া বাদী হয়ে নগরীর তাজহাট মেট্রোপলিটন থানায় এ মামলা দায়ের করেন। সদ্য প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক স্ট্যাটাসের অভিযোগ তাকে গ্রেফতার করা হয়। একইদিনে মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে ফেসবুকে ব্যঙ্গ করে স্ট্যাটাস দিয়ে পরে মুছে ফেলেন তিনি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুহিব্বুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতারকৃত ওই শিক্ষিকা সিরাজুম মুনিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার ও ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনীতি করতেন।

মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার পর থেকে ছাত্রদল নেতাসহ নিখোঁজ

জুন ১৫, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

যশোরে ইব্রাহিম হোসেন (২৭) নামে ছাত্রদলের এক নেতা এবং তার বন্ধু রিপন হোসেনকে (২৮) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর দুই দিন পার হলেও পরিবারের সদস্যরা জেলা র‌্যাব ও পুলিশের কাছে গিয়ে তাদের খোঁজ পাননি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই নামে কাউকে আটক করেনি।

নিখোঁজ ইব্রাহিম হোসেন যশোর সদরের দেয়াড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও নতুনহাট গ্রামের মাহবুব মোল্লার ছেলে। তার বন্ধু রিপনের বাড়ি সদর উপজেলার মেঘলা গ্রামে।… …

মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে এবার রাবি শিক্ষক গ্রেপ্তার

১৮ জুন ২০২০, সমকাল

প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায়  বুধবার রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।.. …

জানা গেছে, শিক্ষক কাজী জাহিদুর নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক। মোহাম্মদ নাসিম অসুস্থ হওয়ার পর কাজী জাহিদুর তার ফেসবুকে নাসিমকে ইঙ্গিত করে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে কয়েকটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে দেশের স্বাস্থ্যখাতের নানা অনিয়মের কথা উল্লেখ করেন। মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ার পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে একই ধরনের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর জাহিদুর রহমানের স্ট্যাটাসগুলো সামনে আসে। তার শাস্তির দাবি জানান ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা।

তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের জেরে গত ১৬ জুন নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

ভালুকায় ডিজিটাল আইনে মামলায় ছাত্র গ্রেফতার

২২ জুন ২০২০, যুগান্তর

ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস দেয়ায় ভালুকা উপজেলায় স্কুলছাত্র ইমনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফ মোহাম্মদ নিপুণ বাদী হয়ে মামলা করায় পুলিশ শনিবার রাতে উপজেলার কাদিগড় গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

ভালুকা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, কাদিগড় গ্রামের ইসমাঈল হোসেনের ছেলে পাড়াগাঁও নবদিগন্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ইমন শুক্রবার ফেসবুক আইডি থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একটি আপত্তিকর পোস্ট দেয়। এ ঘটনায় হবিরবাড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মোহাম্মদ নিপুণ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

জুন ২২, ২০২০,বাংলা ট্রিবিউন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সোমবার (২২ জুন) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এক অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ দাবিতে অবস্থান করেছে নেটওয়ার্কের সদস্যরা।

প্রতিবাদ অবস্থান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরুতেই আমরা দেখেছি কেএন-৯৫ মাস্কের পরিবর্তে ফুটপাতের মাস্ক দেওয়া হল। এখন একে একে অনেক ডাক্তার, নার্স, সাংবাদিক, পুলিশ করোনায় মারা যাচ্ছে। অথচ রাষ্ট্রের কোন কার্যকলাপের সমন্বয় নেই। যারা জানুয়ারি থেকেই বলেছেন যে আমরা প্রস্তুত, তারা চরম মিথ্যা কথা বলেছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা উচিত। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে না, যারা এসব সমন্বয়হীনতা নিয়ে কথা বলছে, হত্যা-লুটতরাজ নিয়ে কথা বলছে তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করছে।.. …

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গড়ে প্রতিদিন তিন মামলা

২৬ জুন ২০২০, প্রথম আলো

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এখন প্রতিদিন গড়ে তিনটি করে মামলা হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর এই মামলার সংখ্যা ৬০ ভাগ পর্যন্ত বেশি হতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘কটূক্তিমূলক’ পোস্ট দেওয়া, পোস্ট শেয়ার করা, কার্টুন বা ব্যঙ্গাত্মক চিত্র আঁকা, ই-মেইলে যোগাযোগ করা এবং নিজেদের মধ্যে চ্যাট করার দায়ে শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষ এ বছর গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কমপক্ষে ৩৮ জন সাংবাদিক।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, মামলাগুলো হয়েছে অনলাইন বা ডিজিটাল প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, গুজব রটানো ও মিথ্যাচার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি চেষ্টার মতো সাইবার অপরাধের অভিযোগে। গত বছর এই আইনে ৭৩২টি মামলায় ১ হাজার ১৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ১৬৫ মামলায় ৩৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই হিসাবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় তিনটি মামলা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখনো পরিস্থিতি একই রকম। এই হারে মামলা হলে বছর শেষে মামলার হার গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ১০টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে মামলার পরিসংখ্যান রাখে। গত বছর মানবাধিকার সংগঠনটি ২৪টি মামলার খবর সংগ্রহ করেছে। এ বছর প্রথম ছয় মাসে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪-তে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মামলার আসামিদের বড় একটি অংশ ত্রাণ চুরি, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার অনিয়ম, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন বা কার্টুন এঁকেছেন। তাঁদের কাউকে কাউকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে তুলে নিয়ে যায়। পরে ডিজিটাল প্রযুক্তি মামলায় তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক, কার্টুনিস্ট ও মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তারের পর মানবাধিকার কর্মীরা আইনটি বাতিলের দাবি তুলছেন। তাঁরা প্ল্যাকার্ডে দাবির কথা লিখে ছবি পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভার্চ্যুয়াল আলোচনা করছেন। রাষ্ট্রচিন্তা ফেসবুকে তার দেয়ালে লিখেছে, ‘আমি চোরকে চোর, ভোট চোরকে ভোট চোর, ডাকাতকে ডাকাত, খুনিকে খুনি, আর দুর্নীতিবাজকে দুর্নীতিবাজ বলতে চাই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করো।’

রাজনৈতিক মঞ্চ রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূইয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে আছেন। ত্রাণ বণ্টনের অনিয়ম নিয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবে তাঁর ফেসবুক পেজে লিখে আসছিলেন।… …

করোনাকালে সমালোচনা-কটূক্তির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা-গ্রেপ্তার বেড়েই চলেছে

০৭ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

মুঠোফোনে কলের খরচ বাড়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করে ফেসবুকে লিখেছিল ১৪ বছর বয়সী মো. রফিক (ছদ্মনাম)। তারপর পোস্টটি মুছে ক্ষমা চেয়ে সে আরেকটি পোস্ট দেয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্থানীয় যুবলীগ নেতার করা মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছে।

একই আইনে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তার করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে একই কেন্দ্রে আছে ১৫ বছর বয়সী মো. করিম (ছদ্মনাম)। অভিযোগ, সে ফেসবুকে মহানবী (সা.) ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। করিম বাড়ি জামালপুর জেলায়, ঘটনাটি গত মে মাসের। রফিক থাকত ময়মনসিংহের একটি গ্রামে, ঘটনাটি গত জুনের।

করিমের ঘটনায় পুলিশ স্নাতক-পড়ুয়া দুজন তরুণকেও গ্রেপ্তার করেছে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, লেখকসহ নানা শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষজনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখে, মন্তব্য করে বা ছবি শেয়ার দিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। কোভিডকালে অনেক মামলা হয়েছে চিকিৎসা বা ত্রাণ নিয়ে সমালোচনা করার কারণে।

এসব মামলার সংবাদ খতিয়ে দেখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করা এবং সমালোচনা ও ভিন্নমত দমনের আলামত স্পষ্ট হয়। এদিকে পুলিশের বছরওয়ারি হিসাব বলছে, এ আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার বেড়েই চলেছে। এমনকি কোভিডকালেও।

প্রথম আলো গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সাতটি জাতীয় পত্রিকা এবং কয়েকটি আঞ্চলিক পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ১০৯টি মামলার খবর বিশ্লেষণ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ মামলাই হয়েছে ‘কটূক্তি’, ‘মানহানিকর বক্তব্য’, ‘বিকৃত ছবি শেয়ার’, ‘গুজব ছড়ানো’ আর ‘সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’-জাতীয় অভিযোগে।

অভিযোগ মূলত আসছে সরকার, সরকারদলীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতা অথবা সরকারের সিদ্ধান্ত-কাজকর্মের সমালোচনামূলক পোস্ট, সংবাদ বা ছবি নিয়ে। প্রায় ৯০ ভাগ মামলার বাদী পুলিশ আর সরকারি দলের চৌহদ্দিতে থাকা নেতা-কর্মীরা। পেশাজীবী হিসেবে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন সাংবাদিকেরা।… …

সংবাদে আসা ১০৯টি মামলায় অভিযোগের ধরন

  • মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি, সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ‘মিথ্যা সংবাদ’ পরিবেশন, ফেসবুকে লেখা বা সম্প্রচার: ৩৩
  • বঙ্গবন্ধু, তাঁর জন্ম শতবার্ষিকী, প্রধানমন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি: ২০
  • করোনাভাইরাস ও এর চিকিৎসা নিয়ে ‘গুজব ছড়ানো’: ১৯
  • ত্রাণ চুরির ‘মিথ্যা তথ্য’ ছড়ানো ও সংবাদ পরিবেশন: ৫
  • সরকারবিরোধী প্রচারণা: ৩
  • পুলিশের সমালোচনা করে সংবাদ পরিবেশন ও ফেসবুক লেখা: ৫
  • ধর্ম নিয়ে কটূক্তি বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত: ১২
  • ‘ভুল’ সংবাদ: ৬
  • কারাবন্দি জামায়াত নেতা সাঈদি পক্ষে ফেসবুকে লেখা: ৩
  • ফেসবুকে গাঁজার ছবি দেওয়া, পোশাক কারখানার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, ও ‘চাঁদা না পেয়ে সংবাদ পরিবেশন’: ৩

বান্দরবানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নারী নিহত

১১ জুলাই ২০২০, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বান্দরবানে ধাওয়ার মুখে থাকা দুর্বৃত্তদের গুলিতে এক নারী নিহত হয়েছেন বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছে তার শিশু ছেলে।

শুক্রবার বিকালে জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার অংগ্যপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে বান্দরবান সেনা রিজিয়ন থেকে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

নিহত শান্তিলতা তঞ্চঙ্গ্যা (৩০) জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নাতিংঝিরি পুনর্বাসন পাড়ার বাসিন্দা।

আহত ছেলের বয়স ছয় বছর। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে অংগ্যপাড়ায় একদল সন্ত্রাসী অবস্থান করছে এমন খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর তিনটি টহল দল অবস্থান নেয়। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পাহাড় থেকে সেনাসদস্যদের লক্ষ করে এলোপাতাড়ি গুলি করে।

“সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে এলাকায় অনুসন্ধান চালানোর সময় স্থানীয় এক নারী ও তার ছেলেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বান্দরবান সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওই নারী মারা যান। আহত ছেলেকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”… …

এ বিষয়ে রোয়াংছড়ি থানার ওসি তৌহিদ কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেনাসদস্যরা আমাকে জানিয়েছেন, সেনাসদস্যদের ওপর সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছিল। তখন ক্রসে পড়ে এক নারী নিহত হন। আর তার ছেলে আহত হয়।”… …

মা-বোনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর কিশোরের আত্মহত্যা, এসআই বরখাস্ত

১৭ জুলাই ২০২০, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

মা এবং বোনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় মারুফ আলম (১৭) নামে এক কিশোর আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আগ্রাবাদের বাদামতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হেলাল খানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার ফারুকুল হক।

মারুফ আলম আগ্রাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। সে ওই এলাকার মো. দিদারুল আলমের ছেলে।

স্থানীয়রা এবং পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি মারুফ আলমের একটি বাইসাইকেল চুরি হয়। এরপর থেকে মারুফ এলাকায় নতুন কাউকে দেখলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বৃহস্পতিবার রাতেও অপরিচিত এক ব্যক্তিকে দেখে মারুফ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে জানতে পারে ওই ব্যক্তি পুলিশের সোর্স।

এক পর্যায়ে সোর্সের সঙ্গে থাকা সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা মারুফকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। কিন্তু মারুফ পালিয়ে যায়। এরপর তার বাসায় গিয়ে ডবলমুরিং থানার এসআই হেলাল খানের নেতৃত্বে মারুফের মা ও বোনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে বাসায় ফিরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে মারুফ আলম।

এদিকে মারুফের মৃত্যুর পর পুলিশ তার মা এবং বোনকে বাসায় নিয়ে যায়। তখন এলাকাবাসী পুলিশকে অবরুদ্ধ করে। পরে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক ক্লোজড করা হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

হঠাৎ গুলিতে এলোমেলো মশিয়ালী গ্রাম

১৭ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

খুলনার ফুলতলা উপজেলার খানজাহান আলী থানাধীন মশিয়ালী গ্রাম। এই গ্রামেই বৃহস্পতিবার রাতে ঘটে গেছে এক অভাবনীয় তাণ্ডব। এলাকার প্রভাবশালী শেখ জাকারিয়া ভাইদের ছোড়া বৃষ্টির মতো গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন তিন গ্রামবাসী। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরও সাতজন। এই ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শেখ জাকারিয়া ভাইদের তিনটি আলিশান দোতলা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের পিটুনিতে মারা গেছেন জাকারিয়া ভাইদের এক চাচাতো ভাই। সঙ্গে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করেছেন জাকারিয়াদের সব আত্মীয়ের বাড়ি।

মশিয়ালী গ্রামে আজ শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, পুরো গ্রাম থমথমে। মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। নিহতদের বাড়িতে চলছে মাতম।.. …

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গতকাল সন্ধ্যায় ওই এলাকায় থাকা জাকারিয়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে মুজিবর রহমান শেখ নামের একজনকে অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশ। এলাকাবাসীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে ‘নিরীহ’ মুজিবর রহমানকে ডেকে নিয়ে অস্ত্র দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন জাকারিয়া ভাইয়েরা। এ কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। পরে রাত আটটার দিকে এলাকাবাসী দল বেঁধে জাকারিয়াদের বাড়ি গেলে নির্বিচার গুলি ছোড়েন জাকারিয়া ও তাঁর ভাইয়েরা। পুলিশও বলছে, জাকারিয়া ভাইদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ছিলেন এলাকাবাসী। বছর কয়েক আগে বাবা হাসান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করায় বাবাকেও কুপিয়ে জখম করেছিলেন ছেলেরা।

শেখ জাকারিয়া খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সহ–প্রচার সম্পাদক। হামলার পর তাঁকে ওই পদ থেকে বহিষ্কার করেছে থানা আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে ছোট ভাই জাফরিন খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এলাকাবাসী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ আগে থেকেই ওই এলাকায় সুদের ব্যবসা করতেন জাকারিয়া, মিল্টন ও জাফরিন। টাকা দেওয়ার সময় সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হতো। সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে কেড়ে নেওয়া হতো দোকান, ঘরবাড়ি। রোজার সময় ওই এলাকায় বাবুল শেখ নামের একজন একটি দোকান দেন। ওই দোকানের জন্য তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করেন জাকারিয়া। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় লোকজন নিয়ে দোকান ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই ফুঁসে ছিলেন এলাকাবাসী।

ওই এলাকার মসজিদ ও মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন শেখ জাকারিয়া। গত ৩০ জুন ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বাবুলের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করার অভিযোগে এলাকাবাসী এবার ওই কমিটি থেকে জাকারিয়াকে বাদ দিতে চাইছিলেন। আজ শুক্রবার পুরোনো কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করার কথা ছিল। এটা নিয়েও এলাকাবাসীর সঙ্গে জাকারিয়া ভাইদের বিরোধ চরম মাত্রায় পৌঁছায়। ওই বিরোধ থেকেই মুজিবর রহমানকে ডেকে নিয়ে হাতে অস্ত্র দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। রাত সাড়ে আটটার দিকে এরই প্রতিবাদ করতে গিয়ে জাকারিয়া ভাইদের হামলার শিকার হন তাঁরা।… …

তিন ভাইয়ের মগের মুল্লুক

২০ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

মশিয়ালী গ্রামের পূর্ব পাড়ার দিনমজুর রাজ্জাক মোল্লা ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন শেখ জাকারিয়ার প্রতিষ্ঠান দোয়েল সমবায় সমিতি থেকে। কয়েক সপ্তাহ ঋণের কিস্তি দিতে পারেননি। এ কারণে একদিন শীতের গভীর রাতে দলবল নিয়ে ওই বাড়িতে হানা দেন জাকারিয়া। সবার সামনে ব্যাপক মারধর করার পর ওই রাতেই রাজ্জাককে পুকুরে নামিয়ে বস্ত্রহীন করে চোবানো হয়। লজ্জায়-অপমানে ঘটনার পরদিনই পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়েন রাজ্জাক মোল্লা। ঘটনাটি প্রায় চার বছর আগের। রাজ্জাকের টিনের ছাউনির কাঁচা বাড়িটি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় ঘটনার সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে।

এলাকার কয়েকজন জানান, রাজ্জাকের ওপর নির্যাতনের সময় এলাকার মানুষ তাঁকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু কারও কথাই শোনেননি জাকারিয়া। সবাই হতভম্ব হয়ে ওই নির্যাতন দেখেছেন আর চোখের পানি ফেলেছেন।

খুলনার ফুলতলা উপজেলার মশিয়ালী গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা (বর্তমানে বহিষ্কৃত) শেখ জাকারিয়া, তাঁর মেজ ভাই শেখ মিল্টন ও ছোট ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শেখ জাফরিনের অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। এ যেন তিন ভাইয়ের মগের মুল্লুক। প্রভাবশালী পরিবারটির দ্বারা গ্রামের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতিত ও অপমানিত হয়েছেন।

গ্রামবাসীর সেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে। এ সময় শেখ জাকারিয়া ও তাঁর ভাইদের ছোড়া গুলিতে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন, যাঁদের মধ্যে তিনজন পরে মারা যান। আর গ্রামবাসীর পিটুনিতে আরও একজন নিহত হন। জাকারিয়াদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেন গ্রামবাসী। তিনজনকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন জাকারিয়ার ভাই শেখ জাফরিন, শ্যালক আরমান ও চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর।… …

শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার’: মধ্যরাতে শিক্ষক গ্রেপ্তার

২০ জুলাই, ২০২০, দেশ রুপান্তর

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বিরুদ্ধে স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুকে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে চাঁদপুর সদরের ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের দুই শিক্ষকসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার মধ্যরাতে কলেজ ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে  গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের আইসিটি শিক্ষক নোমান সিদ্দিকী (৩৫), ইসলামী ইতিহাসের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম (৪০) ও ফরক্কাবাদ আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক আনিসুর রহমান (৩৮)।

সোমবার দুপুরে চাঁদপুর মডেল থানায় প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুািলশ সুপার মো. জাহেদ পারভেজ চৌধুরী।

মডেল থানার ওসি নাসিম উদ্দিন বলেন, ওই তিন শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে ‘আয়েশা খন্দকার’ এবং ‘জয় আহমেদ’ নামের দুটি ফেসবুক আইডির মাধ্যমে চাঁদপুর-৩ আসনের সাংসদ ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমা, ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হান্নান মিজিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল।

এই ঘটনায় গত ২৭ এপ্রিল মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.হান্নান মিজি।

অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রেজাউল করিম তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে অভিযোগ দাখিল করলে আদালত গ্রেপ্তারী পরোনায়া জারি করেন। গত রবিবার মধ্যরাতে কলেজ ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে আইসিটি বিভাগ থেকে ওই তিন শিক্ষককে আটক করা হয়।

অভিযোগ দায়েরকারী ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.হান্নান মিজি বলেন, অভিযুক্ত তিনজনই স্থানীয়  আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। এদের মধ্যে ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নোমান সিদ্দিকী সদস্য। এছাড়া এবিএম আনিসুর রহমান ও নোমান সিদ্দিকী আপন দুই ভাই।… ….

পরিবেশ

আম্পানের ছোবলে উপকূল লণ্ডভণ্ড

২১ মে ২০২০, সমকাল

ভয়াল গতি নিয়ে সেই সুন্দরবনেই ছোবল মারল ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এর আগেও সিডর-বুলবুলের আঘাত আসে সুন্দরবনে। এই সুন্দরবনই বাঁচিয়ে দেয় হাজার হাজার মানুষের প্রাণ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গতকাল বুধবার বিকেল থেকে এটি স্থলভাগে উঠে আসতে শুরু করে। তবে ঝড়ের মূল কেন্দ্র (চোখ) সুন্দরবনে ছোবল মারে সন্ধ্যার দিকে। এ সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। প্রবল বেগের এই ঝড়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটসহ উপকূলীয় এলাকা লণ্ডভণ্ড করে দেয়। বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি, ভেঙে পড়ে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি। উপকূলের ১৯ জেলায় অন্তত ৫১ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে। গাছ ও দেয়ালচাপায় এবং নৌকাডুবিতে বিভিন্ন স্থানে ১০ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাত ১২টা ১৫ মিনিটে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আম্পান ১৩৫ কিলোমিটার বেগে যশোর অতিক্রম করছিল।

আম্পান সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে সাতক্ষীরায়। উপকূলীয় এ জেলায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ১৪৮ কিলোমিটার। সেখানকার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, এক ঘণ্টার বেশি সময় তীব্রগতিতে তাণ্ডব চলেছে সাতক্ষীরায়। পরে গতিবেগ কমে ১০০ কিলোমিটারে নেমে আসে।

আম্পানের ২৮ ঘণ্টার তাণ্ডবে দক্ষিণ থেকে উত্তরে ব্যাপক ক্ষতি

২২ মে ২০২০, প্রথম আলো

বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রায় ২৮ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। গত বুধবার বিকেল চারটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ বাংলাদেশে ঢোকে। অনেকগুলো জেলা, পদ্মা নদী পেরিয়ে পরদিন সকাল সাড়ে ৯টায় এটি রাজশাহীতে ঘূর্ণিঝড়ের গতি নিয়েই আঘাত হানে। যাত্রাপথে ঘূর্ণিঝড়টি ঘরবাড়ি, ফসলের খেত, মাছের ঘের, ফলের বাগানের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। সকাল ১০টার দিকে এটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আরও ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়েছে। সরকারের প্রাথমিক হিসাবে এই ঘূর্ণিঝড়ে ২৬টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

দেশের ছয় জেলায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বগুড়ায় ঝড়ের মধ্যে নৌকা ডুবে দুজন নিখোঁজ হয়েছেন। ঝড়ের পর থেকে বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।

বুধবার বিকেল ৪টার দিকে সাতক্ষীরায় এই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগটি আঘাত হানে। রাত ৯টার দিকে এর কেন্দ্রটি যখন সাতক্ষীরা অতিক্রম করছিল তখন উপকূলীয় প্রায় সব কটি জেলাতেই এর প্রভাবে বাতাসের তাণ্ডব চলছিল। সঙ্গে ছিল জলোচ্ছ্বাস। এরপর সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ ও আশপাশের জেলাগুলো দিয়ে বয়ে গিয়ে পদ্মা পার হয়ে পাবনা ও রাজশাহীতে আঘাত হানে আম্পান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এটি রাজশাহীতে ঘূর্ণিঝড়ের গতি নিয়েই ঢোকে। আধা ঘণ্টার মধ্যেই সেটি প্রবল বৃষ্টি ঝরিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। এই নিম্নচাপের প্রভাবে রাত ৮টার দিকেও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি ও দমকা বাতাস বইছিল।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মোট ২৬ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা। মোট পৌনে দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আমের ক্ষতি বেশি। এ ছাড়া ১৩ জেলার প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার বাঁধ ভেঙেছে। ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে এসব ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটির টাকা। তবে সরকার বলছে, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।

সুন্দরবন ঢাল হয়ে আম্পান না ঠেকালে ঢাকাও লন্ডভন্ড হতো

২২ মে ২০২০, প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের গতি ৭০ কিলোমিটার কমিয়েছে সুন্দরবন। এর জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতাও ৩ থেকে ৪ ফুট কমিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই শ্বাসমূলীয় বনটি। ঝড়টি ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার গতিবেগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত করে। আর এটি বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় আঘাত করে ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটার গতিবেগে। কিন্তু তার আগেই সুন্দরবন এর শক্তি কমিয়ে দেয়। ফলে এই ঝড়ে যে পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে আরও অনেক বেশি ক্ষতির হাত থেকে উপকূলের মানুষ ও সম্পদ রক্ষা পেয়েছে।

আজ ২২ মে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস। এই সময়ে আবারও সুন্দরবন প্রমাণ করল এটি বাংলাদেশের জীববৈচিত্রের সবচেয়ে বড় আধারই শুধু না, তা আমাদের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচও।

দুর্যোগ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবন না থাকলে কলকাতা শহরে ঘূর্ণিঝড় আম্পান যে তাণ্ডব চালিয়েছে, একই পরিণিত হতো ঢাকাসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর। গতকাল পর্যন্ত পশ্চিবঙ্গে ৭০ জন এবং বাংলাদেশে অন্তত ২১ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঢাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার, আর কলকাতায় ছিল ১১২ কিলোমিটার। তাই সুন্দরবন না থাকলে ঢাকাতেই ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতি নিয়ে ঝড়টি চলে আসত।

তবে ওই ঝড়ের কারণে সুন্দরবনের বেশ ক্ষতি হয়েছে। বন বিভাগের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার মতো এবারও সুন্দরবনের মিষ্টি পানির উৎস ৬৫টি পুকুর, বন বিভাগের ১৮টি টিনের তৈরি ফাঁড়ি, ২৮টি জেটিসহ অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। কেওড়াসহ বিভিন্ন গাছও ভেঙে পড়েছে। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা ও খুলনা এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। মোট ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে চার সদস্যের একটি কমিটিও করেছে বন বিভাগ।

তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগে ১৯৮৮ ও ১৯৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালে সিডর, ২০০৯ সালে আইলা, ২০১৬ সালে রোয়ানু, ২০১৮ সালে বুলবুল ও ২০১৯ সালের ফণী এবং এ বছর আম্পানের গতি থমকে দিয়েছে সুন্দরবন।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা উইনরক ইন্টারন্যাশনালের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউট ‘সুন্দরবনের পর্যটন, ঘূর্ণিঝড় থেকে বসতবাড়ি সুরক্ষা এবং আহরিত সম্পদের আর্থিক মূল্যায়ন’ শীর্ষক একটি গবেষণা করেছিল। তাতে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’-এর সময় সুন্দরবন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৪৮৫ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ বাঁচিয়েছিল।

গবেষকেরা বলছেন, ৬ লাখ ৩ হাজার হেক্টর আয়তনের সুন্দরবন না থাকলে টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতো।

লবণাক্ত পানিতে দাঁড়িয়েই ঈদের নামাজ পড়লেন কয়রাবাসী

মে ২৫, ২০২০, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা

২০০৯ সালের এই দিনে (২৫ মে) উপকূলীয় অঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে। ধসে গিয়েছিল খুলনার কয়রার বাঁধ। তারপর দীর্ঘ ১১ বছর ধরে পাকা বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন কয়রাবাসী। কিন্তু সুফল মেলেনি। কোনোমতে টিকে থাকা বাঁধের কঙ্কালে গত ২০ মে আঘাত হানে আরও একটি প্র্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এখন বানের পানিতে ডুবে আছে পুরো এলাকা।

দুর্যোগের কবল থেকে নিজেদের সুরক্ষা দিতে স্থানীয় উদ্যোগেই নির্মাণকাজ চলছে কয়রা বেড়িবাঁধের। এই বাঁধ নির্মাণ হয়ে গেলে লবণাক্ত পানির কবল থেকে মুক্তি মিলবে কয়রাবাসীর। তাই সোমবার (২৫ মে) পানির মধ্যে দাঁড়িয়েই ঈদের নামাজ আদায় করেন কয়রার মানুষ। নামাজ শেষ করেই বাঁধ মেরামতের কাজে নেমে পড়েন তারা।

লকডাউনে ‘সুখী স্বস্তিতে’ ঢাকাকে ঘিরে থাকা নদ-নদী

০৪ জুন ২০২০, প্রথম আলো

করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ঘোষণা করা সাধারণ ছুটির মধ্যে ঢাকার আশপাশের পাঁচটি নদ-নদীর পানির মানের উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন নিরিখে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর পানির মান দ্বিগুণেরও বেশি উন্নত হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণে এ চিত্র উঠে এসেছে।.. ..

পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর নানা পয়েন্ট থেকে নিয়মিত পানির মান পরীক্ষা করে। নদীগুলোর দূষণ সাধারণত শুরু হয় নভেম্বর মাস থেকে। দিন দিন তা বাড়তে থাকে। এপ্রিল মাসে দূষণ চরম অবস্থায় পৌঁছায়। এপ্রিল মাসকেই দূষণের সবচেয়ে বড় সময় বলে মনে করে অধিদপ্তর। সরকারি এ দপ্তরের গত তিন বছরের পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেছে, পাঁচ নদীর পানির মান চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বেশ বেড়েছে।

ঢাকার একেবারে গা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদী বুড়িগঙ্গা। গত বছরে (২০১৯) বুড়িগঙ্গার মিরপুর ব্রিজের কাছের পানিতে ডিওর পরিমাণ ছিল শূন্য শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক শূন্য ২ মিলিগ্রাম। গত বছরের এপ্রিলে বিওডি ছিল ২০ মিলিগ্রাম। এ বছরও এর মানের কোনো হেরফের হয়নি। তবে গত বছর এপ্রিলে এখানকার পানিতে সিওডি ছিল ৯২ মিলিগ্রাম, যা এবার ৭৬ মিলিগ্রাম।

গাবতলী ব্রিজের কাছে তুরাগ নদে গত বছরের এপ্রিল মাসে ডিও ছিল শূন্য দশমিক ১২ মিলিগ্রাম। এ বছর এর ডিওর পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আশুলিয়ায় তুরাগের ডিও গেল বছর ছিল শূন্য মিলিগ্রাম। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

শিল্পবর্জ্যের দূষণে বিপর্যস্ত শীতলক্ষ্যা। নদীর দুপাশ দিয়ে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার অনেকগুলোরই বর্জ্য শোধনাগার নেই। সেই দূষণের নদীতেও এবার এসেছে প্রাণ। এ নদীর ডেমরা ঘাট ও এসিআই এলাকায় গত বছর ডিও ছিল যথাক্রমে ১ ও ১ দশমিক ২ মিলিগ্রাম। এবার তা হয়েছে ১ দশমিক ৩১ এবং ১ দশমিক ২৪ মিলিগ্রাম।

বালু নদের দূষণচিত্রেও আশাব্যঞ্জক ফল। এ নদীর হোসেন ডায়িং এলাকার পয়েন্টে গত বছর পানিতে ডিওর পরিমাণ ছিল শূন্য দশমিক ১ মিলিগ্রাম। এবার তা হয়েছে শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ। নদের বালু ব্রিজ পয়েন্টে গত বছরের এপ্রিলে পানিতে ডিওর পরিমাণ ছিল শূন্য, এবার হয়েছে ১ দশমিক ২২ মিলিগ্রাম।

রামপাল নিয়ে জার্মানিতে বিক্ষোভ

২১ জুন ২০২০, প্রথম আলো

বাংলাদেশের সুন্দরবনের রামপালে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে, জার্মানির পরিকল্পনা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। গত শুক্রবার ১৯ জুন জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে ফ্রাইডে ফর ফিউচারসহ আরও তিনটি সংগঠন, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ফিশটনার’–এর সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

এদিন বিক্ষোভকারীরা ফিশটনার কর্তৃপক্ষের কাছে ২৫ হাজার মানুষের স্বাক্ষর–সংবলিত একটি অনুরোধপত্র হস্তান্তর করেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, বাংলাদেশের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের কিনারায় রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যার হাত থেকে লাখ লাখ মানুষের রক্ষা পেতে সমস্যা হবে।

সার কারখানার বর্জ্যে ফসল উৎপাদন ব্যাহত

২৩ জুন ২০২০, সমকাল

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মরে যাচ্ছে আবাদি ফসল, পুকুরের মাছ ও বাগানের গাছপালা। এতে চলতি মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমিতে কাঙ্ক্ষিত ফসল পায়নি কৃষক।

ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি, কারখানার রাসায়নিকযুক্ত বিষাক্ত বর্জ্য ও আবাসিক কলোনির বর্জ্য বিকল্প উপায়ে শোধন বা নিস্কাশন না করে সরাসরি পাইপের মাধ্যমে জমি ও বিলে ফেলা হচ্ছে। এতে ১০টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমিতে ফসল উৎপাদন এবং জলাশয়ে মাছ চাষ ব্যাহত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিলেও যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কালক্ষেপণ করছেন।.. ..

রূপগঞ্জে বিষাক্ত কেমিক্যালের গ্যাসে অসুস্থ অর্ধশতাধিক

০৮ জুলাই ২০২০, সমকাল

ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানার বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে রূপগঞ্জের ৭ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। কয়েক দিন আগে হঠাৎ করে কারখানা কর্তৃপক্ষ গ্যাস ছেড়ে দিলে অর্ধশতাধিক লোক অসুস্থ হয়ে পড়ে। ৩০ বছর ধরে স্থানীয়রা এ সমস্যার মধ্যে বসবাস করলেও এর সমাধানে এগিয়ে আসেনি কেউ। কালেভদ্রে সংশ্নিষ্টরা কিংবা জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে এলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ থেকে সুবিধা নিয়ে তারা সটকে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মঙ্গলখালী, ফরিদ আলীর টেক, কাঁটাখালী, মোকিবনগর, পাবই, ঠাকুরবাড়ীর টেক ও বানিয়াদি এলাকায় ৪০ হাজার লোকের বসবাস। এখানে অবস্থিত ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানার বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে ফুসফুসে প্রদাহ, ফুসফুসের কোষ ছোট হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাঈদ আল মামুন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝে মধ্যেই বিকট শব্দে বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। গ্যাসের কারণে ৭ গ্রামের গাছপালা, ধানী জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিন আগে এলাকার গ্যাস ছেড়ে দেওয়ায় অর্ধশতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। মরে যাচ্ছে গবাদিপশু ও খামারের মাছ। কারখানা কর্তৃপক্ষকে বারবার গ্যাস বন্ধ করার অনুরোধ করলেও কোনো কাজ হয় না। এর প্রতিবাদ করায় স্থানীয় পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকার চাঁদাবাজি মামলা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। মোকিমনগর এলাকার গৃহবধূ সোনিয়া আক্তার বলেন, আমার পাঁচ বছরের পোলা গ্যাসের কারণে অসুস্থ অইয়া পড়ছে। কৃষক মনু মিয়া বলেন, আগে ক্ষেতে ধান অইতো ১৮-১৯ মণ। আর অহন অয় ৮-১০ মণ ধান। এদিকে অসুস্থ হওয়ার ভয়ে এলাকা ছেড়ে ঢাকার কাজলা, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন মোকিমনগর এলাকার ইউসুফ আলী, সোহরাব মিয়া, ফারুক মিয়াসহ ২৫ থেকে ৩০টি পরিবার।… …

অবৈধ সিসা কারখানা ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

১০ জুলাই ২০২০, সমকাল

কেরানীগঞ্জ উপজেলায় গড়ে উঠেছে কমপক্ষে অর্ধশত সিসা কারখানা। এসব কারখানার বেশিরভাগই চলছে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধ উপায়ে। কেরানীগঞ্জের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব অবৈধ সিসা কারখানা কীভাবে চলছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

হাসনাবাদ এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে ৬টি সিসা কারখানা ছিল। এক বছর আগে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর হস্তক্ষেপে ৩টি কারখানা উচ্ছেদ করে পরিবশে অধিদপ্তর। কিন্তু এলাকায় একটি প্রভাবশালী মহল আবারও কারখানাগুলো চালু করে।… ….

বন্যা

পানিত কষ্ট করিচ্চি, হামাকেরে কেউ অ্যাকনা খোঁজ লিচ্চে না’

০৩ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

‘দশ দিন থ্যাকে জলবন্দী জীবন। বুকসমান পানিত খুব কষ্ট করিচ্চি। লৌকাত সংসার। অ্যাকনা চাল আচলো, সেকনা কয়দিন ফুটে খাচি। বিয়ানবেলা আজ অ্যাকনা আনলা পান্তা ভাত খাচি, বিকাল গড়ায়ে যাচ্চে প্যাটত ভাত জোটেনি। খাওয়ার অ্যাকনা পানিও নাই। সগলি বানের পানি খাচ্চি। চরত কেউ অ্যাকনা হামাকেরে খোঁজ লিবার আসিচ্চে না, ইলিপও দিচ্চে না।’

আক্ষেপের এই কথাগুলো বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম দলিকার চরের আলেফা বেওয়ার। গতকাল বৃহস্পতিবার যমুনার ঢলে প্লাবিত চরের লোকালয়ে ভেলায় ঘটিবাটিসহ বসে ছিলেন নাতনি রহিমাকে নিয়ে ত্রাণের আশায়। দলিকার চরের প্রায় ৩০০ পরিবার দুই দিন ধরে পানিবন্দী। আজ শুক্রবার পর্যন্ত সেখানে কোনো ত্রাণসহায়তা পৌঁছায়নি।… …

বানভাসি মানুষ নদীভাঙনে দিশেহারা

০৩ জুলাই ২০২০, সমকাল

কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বৃষ্টিপাত কিছুটা কমলেও বন্যার পানি নামছে ধীরগতিতে। ফলে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। নদনদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। একের পর এক নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বানভাসি মানুষ। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী মানুষের ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে। অথচ ভাঙন রোধে নেই সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ।… …

মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আবারও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের সিমলায় পাউবোর স্পারবাঁধ। স্পার বাঁধের প্রায় ৭০ মিটার অংশ (মাটির শ্যাঙ্ক) গত বুধবার রাতে যমুনা নদীর প্রবল স্রোতে ধসে গেছে। বাঁধের অভ্যন্তরে পাঁচঠাকুরী এলাকার প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীনের আশঙ্কায় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন কয়েকশ’ পরিবার।…

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে নেত্রকোনার প্রধান নদী সোমেশ্বরী, উদ্ধাখালী, কংস, ধনুসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে জেলার বারহাট্টা, আটপাড়া, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা, মোহনগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। …

নদীভাঙনে নাকাল উলিপুরের তিস্তাপাড়ের হোকডাঙ্গা মৌজার মানুষ। গত ৩ বছর ধরে বিরামহীন ভাঙছে তিস্তা নদী। কিন্তু ভাঙনরোধে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রতিদিন নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি। গত দুই সপ্তাহে নদীভাঙনে ২৫টি পরিবার সবকিছু হারিয়ে পথে বসেছে। ভাঙনরোধে সরকারি উদ্যোগ না থাকায় গত ২৬ জুন ভাঙনকবলিত গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে বাঁশের পাইলিং দিয়েছে। তবু রোধ হচ্ছে না ভাঙন… …

বন্যায় ভাসছে মানুষ

১৬ জুলাই ২০২০, সমকাল

ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানির তোড়ে ছুটছে কুড়িগ্রামের মানুষ। ডুবে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। অনেকে গবাদিপশুসহ আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের ওপর। কেউ কেউ ঘরের চালে। এভাবে বন্যার পানিতে ভাসছে মানুষ। তবে তাদের দ্রুত উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার পদক্ষেপ কম বলেই জানা গেছে। এ অবস্থায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে। দুর্গত এলাকায় নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।

এদিকে, গাইবান্ধা, বগুড়া, রংপুরসহ উত্তরের জনপদ ডুবিয়ে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হতে শুরু করেছে দেশের মধ্যাঞ্চলেও। জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলকে প্লাবিত করে বানের পানি ঢুকে পড়েছে ঢাকার চারপাশে। উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, যমুনার পাশাপাশি মধ্যাঞ্চলে পদ্মা, মেঘনা, এমনকি ধলেশ্বরীর পানি পর্যন্ত হু হু করে বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকবে।

সরকারি হিসাবমতে, বন্যায় এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ১৭টি জেলার ৯১টি উপজেলার ৪৫০টি ইউনিয়ন বন্যা উপদ্রুত হয়েছে বলে তথ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের।… ….

আগাম প্রস্তুতি না থাকায় বিপাকে বানভাসি মানুষ

১৭ জুলাই ২০২০, সমকাল

উত্তরের সীমান্তবর্তী নদী ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এর প্রভাবে শুধু কুড়িগ্রামেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত তিন লাখ মানুষ। সরকারিভাবে অনেক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার কথা বলা হলেও সীমা ছাড়িয়েছে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। গবাদিপশু নিয়ে বানভাসিরা আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের ওপর। কেউবা ঘরের চালে। বিশুদ্ধ পানি এবং শুকনো খাবারের চরম সংকট সেখানে। একই পরিস্থিতি গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়ায়ও। উপচে উঠেছে যমুনার পানি। কোথাও বিপদসীমার ১২৫, কোথাও ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি উদ্যোগে বন্যাদুর্গত এলাকার জন্য বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী মজুদ রাখা হলেও আগাম প্রস্তুতি না থাকায় সংকট মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্য দুর্যোগে আগাম প্রস্তুতি থাকলেও বন্যার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যায় না। পানি ঢুকে পড়ার পর শুরু হয় তোড়জোড়। অথচ বন্যার পূর্বাভাস আগেই দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে বন্যার ১৯ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। তবু উপদ্রুত এলাকায় মানুষের কষ্ট লাঘব না হওয়াকে অব্যবস্থাপনার পরিণাম বলছেন তারা।… …

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্নেষণ করলেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতির চিত্র পাওয়া যায় না। এবার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ২৬ জুন। আগাম বন্যায় দেশের ১০ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় উপদ্রুত এলাকার জন্য প্রথম ধাপে ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দেয় ৪ জুলাই। অথচ ওই সময় প্রথম ধাপের বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে।… ….

বিদ্যুৎজ্বালানীখনিজসম্পদ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্ঘটনায় প্রকৌশলী নিহত

২৪ এপ্রিল ২০২০, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

নির্মাণাধীন পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্ঘটনায় এক প্রকৌশলী মারা গেছেন।

বৃহস্পতিবার বিকালে প্রকল্পের পারমাণবিক চুল্লির শীতলায়ন টাওয়ারের (কুলিং টাওয়ার) ঢালাই কাজ চলার সময় এ দুর্ঘটনায় আহত প্রকৌশলী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান।

নিহত আব্দুল মবিন (৩৫) পাবনা সদর উপজেলার টেবুনিয়া মজিদপুর গ্রামের কেরামত আলী খানের ছেলে। তিনি এ প্রকল্পের ভারতীয় সাব-ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘পাহারপুর কুলিং টাওয়ার’ এর প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে নির্মাণাধীন কুলিং টাওয়ারে ২৯০০ লোডের ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। এ সময় ‘বোম প্লেসার’ ভেঙে ওই প্রকৌশলীর মাথায় পড়লে গুরুতর আহত হন তিনি। তাকে উদ্ধার করে প্রকল্পের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পরে সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এক পর্যায়ে তাকে রাজশাহী থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়ারও প্রস্তুতিও চলছিল। তবে রাজশাহীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস পড়ে আছে

১৮ মে ২০২০, প্রথম আলো

বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি স্থাপন করা হয়েছে। সে কারণে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাত্র ৪৩ শতাংশ ব্যবহার করা হয়, বাকি ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্র ভাড়া দেওয়া হয়। এ কারণে বাংলাদেশে বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। গত অর্থ বছরে অলস বসিয়ে রেখে এসব বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। এ কারণে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না করার সুপারিশ করা হয়েছে।

একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সোমবার। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের প্রকৃত চাহিদনা পুনরায় নিরুপ করার সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ সংস্থাটি, তার আগে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা অর্থনীতির জন্য ভাল হবে না বলে মত দিয়েছে তারা।

অনুমাননির্ভর’ বিদ্যুৎ বিল দেখে বিচলিত না হওয়ার আহ্বান

২৩ মে ২০২০, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখে নয়, অনুমানের ওপর ভর করে বিদ্যুৎ বিল করা হচ্ছে জানিয়ে তা নিয়ে গ্রাহকদের বিচলিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

পরবর্তীতে মিটার দেখে এই বিলের সঙ্গে ব্যবহৃত বিদ্যুতের মূল্যের হেরফের হলে তা সমন্বয় করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

এপ্রিলে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল আসা নিয়ে অনেকে ফেইসবুকে ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারপর বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে গ্রাহকদের এই বার্তা দেওয়া হল।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: সুরক্ষাব্যবস্থা নির্মাণ ব্যয় ২৪০০ কোটি টাকা

২৯ মে ২০২০, প্রথম আলো

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষাব্যবস্থা (পিপিএস) নির্মাণ চুক্তি সই হয়েছে রাশিয়ার কোম্পানি জেএসসি এলরনের। আজ শুক্রবার রাশিয়ার কোম্পানিটির সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পাবনার রূপপুর প্রকল্পের ‘পারমাণবিক নিরাপত্তা ও ভৌত সুরক্ষাব্যবস্থা সেল’র (এনএসপিসি) মধ্যে এ চুক্তিটি হয়। রাশিয়ার কোম্পানি জেএসসি এলরন ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষাব্যবস্থা নির্মাণ করে দেবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত দেশের সব থেকে বড় এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর ৯০ শতাংশ অর্থ রাশিয়ার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নিচ্ছে, বাকিটা বাংলাদেশ সরকার সরকার দেবে। তবে চুক্তি হওয়া ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার পিপিএস প্রকল্পটি মোট ব্যয়ের মধ্যে নেই। ফলে রূপপুর প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে।

জ্বালানি খাতে যে কারণে বিদেশনির্ভরতা

০৬ জুন ২০২০, প্রথম আলো

বাংলাদেশের একমাত্র তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী সংস্থা বাপেক্স ৩১ বছরেও নিজেকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে পারেনি। এ কারণে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিদেশনির্ভরতা বেড়েছে, ফলে দুর্বল হয়েছে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাপেক্সকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দিলে এবং এর পরিচালনা পর্ষদে বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা না হলে প্রতিষ্ঠানটি দাঁড়াতে পারবে না। অন্যদিকে সরকার বলছে, বাপেক্স নিজেরাই চায় না শক্তিশালী হতে।

জানা গেছে, গত সাত বছরে প্রতিষ্ঠানটিতে আটজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে দায়িত্বে এসেছেন। তা ছাড়া এর বোর্ড সভায় সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদেরই প্রাধান্য থাকে। ফলে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে পারেনি বাপেক্স। গত তিন দশকে বাপেক্স বড় হতে পারেরি, চলছে ঢিমেতালে।

অথচ জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাপেক্স দেড় হাজারের বেশি ত্রিমাত্রিক জরিপ করেছে খুব কম অর্থ ব্যয় করে। এই জরিপের ভিত্তিতে ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনাসহ দক্ষিণ অঞ্চলের নতুন ধরনের ভূকাঠামোতে বিপুল গ্যাস থাকার আভাস মিলেছে। কিন্তু সেখানে যে সংখ্যক কূপ খনন করার দরকার ছিল, সেই অনুমতি বাপেক্সকে দেওয়া হয়নি। ১৯৮৯ সালে বাপেক্স গঠন করা হয়। তখন এর কাজ ছিল শুধু তেল–গ্যাস অনুসন্ধান করা। পরে একে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের এবং উন্নয়ন ও উৎপাদন কোম্পানি হিসেবে পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়।.. …

বাপেক্সের একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাপেক্সকে চারটি রিগ কেনার পাশাপাশি একটি পরিকল্পনা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ২০২১ সালের মধ্যে ৫৫টি অনুসন্ধান কূপ, ৩১টি উত্তোলন কূপ ও ২২টি পুরোনো কূপ সংস্কার করবে। এসব করা গেলে দৈনিক ৯০ কোটি ৩০ লাখ ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়বে। এ প্রকল্প অর্থের জন্য গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়। প্রতিবছর এ তহবিলে জমা হতে থাকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

অথচ বাস্তব চিত্র হচ্ছে, গত ১০ বছরে বাপেক্স মাত্র ১২টি কূপ খনন এবং চারটি কূপ সংস্কার করেছে। এর মধ্যে আবার দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি দামে বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে ৭টি কূপ খনন করানো হয়েছে। ফলে গোটা সময় মূলত বাপেক্স বসে ছিল দামি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং লোকবল নিয়ে।

বাপেক্স সূত্র জানায়, তাদের প্রতিটি কূপ খনন করতে খরচ হয় গড়ে ৮০ কোটি টাকা। আর বিদেশি কোম্পানি নেয় গড়ে ১৫০ কোটি টাকা। ত্রিমাত্রিক জরিপ করতে বাপেক্সের খরচ হয় প্রতি কিলোমিটারে ৯ থেকে ১৩ লাখ টাকা আর বিদেশি কোম্পানি নেয় সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা। গ্যাসকূপ খনন না করে এলএনজি আমদানি করছে সরকার। বর্তমানে দৈনিক ৬০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানির পেছনে বছরে ব্যয় হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা।

সংসদে বিল: বছরে একাধিকবার বিদুৎ-জ্বালানির দাম পরিবর্তন করা যাবে

২৩ জুন ২০২০, প্রথম আলো

বছরে একাধিকবার বিদুৎ-জ্বালানির দাম পরিবর্তনের সুযোগ রেখে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) বিল-২০২০’ উত্থাপন করা হয়েছে সংসদে।

আজ মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। এর আগে সকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

বিলটি উত্থাপণের পর ৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে বিলটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

দরকার নেই এত বিদ্যুতের, বন্ধ হবে রেন্টাল–কুইক রেন্টাল

২৬ জুন ২০২০, প্রথম আলো

মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় নতুন করে কোনো রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়বে না, সেই সঙ্গে সরকারি পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হবে। এভাবে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে তিন হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেবে সরকার, যার বেশির ভাগই রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের দুই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, গত ছয় বছরে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেন্দ্র ভাড়া দিয়েছে সরকার। এসব কেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতা তো দূরে থাক, ৩০ শতাংশও চালানো সম্ভব হয়নি। অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে অর্থ দিয়েছে সরকার। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রয়োজন নেই এমন তিন হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেবে সরকার। এর ৯০ ভাগই রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র।

দুর্ঘটনা

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবে ৩২ প্রাণের অবসান

২৯ জুন ২০২০, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকার শ্যামবাজারের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে এক লঞ্চের ধাক্কায় আরেকটি ছোট লঞ্চ ডুবে অন্তত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এমএল মর্নিং বার্ড নামের ওই লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে যাত্রী নিয়ে সদরঘাটের দিকে আসছিল। সোমবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে শ্যামবাজারের কাছে নদীতে ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় সেটি ডুবে যায়।

ছোট দুর্ঘটনা’ অবহেলা করায় বড় দুর্ঘটনা

জুন ২৯, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন

প্রতিবছরই লঞ্চ দুর্ঘটনায় দেশে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রচার মাধ্যম এবং সরকারসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনার ঝড় ওঠে। তদন্ত কমিটি হয়। তদন্ত কমিটি নানাবিধ সুপারিশও করে। কিন্তু এর বেশির ভাগই আলোর মুখ দেখে না। অথচ  চাইলেই এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব, বলছেন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।… …

যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, সদরঘাটে চলতি বছরেই ১২টি ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে লঞ্চে-লঞ্চে সংঘর্ষ ছয়টি এবং লঞ্চের সঙ্গে ছোট নৌকার সংঘর্ষ ছয়টি। এই ছোট ছোট  দুর্ঘটনাগুলো কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি বলেই আজ  এত বড় দুর্ঘটনা ঘটলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এধরনের অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে তারা বলছেন, চাইলেই এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

ময়ূর-লঞ্চে চালকের আসনে ‘মাস্টার’, জনের বিরুদ্ধে মামলা

৩০ জুন ২০২০, সমকাল

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় সোমবার রাতে নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে ‘ময়ূর-২’ লঞ্চের মালিকসহ ৬ জনকে। এদিকে ময়ূর-২ লঞ্চের সাবেক চালক জানিয়েছেন, লঞ্চটিতে আপাতত চালক নেই। মাস্টারের মাধ্যমে সেটি চলাচল করছিল।

.. … ‘ময়ূর-২’ লঞ্চের সাবেক চালক শিপন হাওলাদার জানিয়েছেন, গত ২১ জুন থেকে ওই লঞ্চে তার চাকরি নেই। বেতন পরিশোধ করে তাকে লঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যারা লঞ্চ চালানোর কথা নয়, তারা ময়ূর-২ চালাচ্ছিলেন। ওই লঞ্চে কোনো চালক নেই। মাস্টার লঞ্চটি চালাচ্ছিলেন বলে জানান তিনি।

নৌদুর্ঘটনার বিচার তদন্তেই সীমাবদ্ধ

৩০ জুন ২০২০, সমকাল

দেশের অধিকাংশ নৌদুর্ঘটনাই তদন্ত ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এসব প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না বললেই চলে। কখনও কখনও দায়ী সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা কিংবা সাময়িক বরখাস্তের শাস্তি দিয়েই দায় এড়িয়ে যাওয়া হয়। পরে এই লঘু শাস্তিমূলক পদক্ষেপও উঠিয়ে নেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদনগুলোতে ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা এড়াতে যেসব সুপারিশ করা হয়, সেগুলোরও বাস্তবায়ন হয় না।

আবার নৌদুর্ঘটনা সংক্রান্ত মামলাগুলোতে অভিযুক্ত প্রভাবশালী নৌযান মালিকসহ সংশ্নিষ্টদের নৌ-আদালতে যথাযথ সাজাও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে দিনের পর দিন আসামিদের মামলায় উপস্থিত না হওয়া এবং তাদের গ্রেপ্তারে সংশ্নিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদাসীনতাও দায়ী বলে সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত নৌদুর্ঘটনাগুলোয় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদন ও প্রতিবেদন পরবর্তী অবস্থা পর্যালোচনা করেও অভিযুক্ত সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের পার পেয়ে যাওয়ার এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ গতকাল সোমবার রাজধানীর শ্যামবাজার এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘মর্নিংবার্ড’ দুর্ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) রফিকুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক (নৌনিরাপত্তা) রফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে গঠিত এই তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর থেকে আসা ‘এমভি ময়ূর-২’ লঞ্চের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গায় ডুবে যায় মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকার সদরঘাটের দিকে আসা যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমভি মর্নিংবার্ড’। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মীরা সেখানে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৩২ জনের লাশ উদ্ধার করার কথা জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী লঞ্চ ময়ূর-২ আটক ও এর একজন চালককে গ্রেপ্তার করা গেলেও মূল চালক এখনও পলাতক। এর পরও অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে এই দুর্ঘটনারও যথাযথ বিচার ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার বিষয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছেন কেউ কেউ।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কঠোর পদক্ষেপ ও দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে গত পাঁচ বছরে দেশে উল্লেখ করার মতো বড় কোনো নৌদুর্ঘটনা ঘটেনি। ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় পদ্মা নদীতে ‘এমভি মোস্তফা’ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চ দুর্ঘটনায় ৭০ যাত্রী নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজনকে দায়ী করার পাশাপাশি মোট ২৪টি সুপারিশ করা হয়। যার একটিও বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট মাওয়ার পদ্মা নদীতে সংঘটিত আলোচিত যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমএল পিনাক-৬’ দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। এতে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও বৈরী আবহাওয়ার কথা উল্লেখ করা হলেও দায়িত্বে অবহেলার বিভিন্ন কারণে বিআইডব্লিউটিএর মাওয়া নদীবন্দরের পরিবহন পরিদর্শক জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) শফিকুল হক ও যুগ্ম পরিচালক (নৌ-নিট্রা) রফিকুল ইসলামকে দায়ী করা হয়। ত্রুটিপূর্ণ নকসার ভিত্তিতে লঞ্চটিকে নিবন্ধন প্রদান ও বিধিলঙ্ঘন করে সর্বশেষ ফিটনেস (সার্ভে) দেওয়ায় ওই সময়ের সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের (বর্তমান নৌপরিবহন অধিদপ্তর) প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলাম ও অধিদপ্তরের জাহাজ জরিপকারক মির্জা সাইফুর রহমানকেও দায়ী করা হয়। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীর ভূঁইয়াকে দুর্ঘটনার পরপরই এবং মির্জা সাইফুর রহমানকে পরে সাময়িক বরখাস্ত করে দায় সারা হয়। অবশ্য অতিরিক্ত যাত্রী বহনের দায়ে দায়ী লঞ্চটির মালিক আবু বকর সিদ্দিক কালু ও তার ছেলে ওমর ফারুক লিমন গ্রেপ্তার হন। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান। এ ছাড়া লঞ্চের মাস্টার মনিরুল মনি ও কাওড়াকান্দি ঘাটের ইজারাদার আব্দুল হাই সিকদারকেও দায়ী করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

একইভাবে ২০১৪ সালের ১৫ মে ‘এমভি মিরাজ-৪’ নামের যাত্রীবাহী নৌযান মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে নিমজ্জিত হলে ১৮ মে অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এই দুর্ঘটনারও বিচার হয়নি। একই বছরের ৯ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী নৌযান ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ দুর্ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ২৩টি সুপারিশ করা হয়েছিল। যদিও এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি।

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত কেবল গত ২৬ বছরেই ছোট-বড় মিলিয়ে ৬৬১টি লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে সাত হাজারেরও বেশি মানুষ। অবশ্য সরকারি হিসাবে এসব দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪৩১ এবং নিখোঁজ প্রায় দেড় হাজার। এসব ঘটনায় আড়াই শতাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও মাত্র চার-পাঁচটি কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। কেবল গত প্রায় ছয় বছরে দেশে সংঘটিত ১৩টি নৌদুর্ঘটনায় গঠিত ১৬টি তদন্ত কমিটির মধ্যে আটটিই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। আর স্বাধীনতার পর সংঘটিত নৌদুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে প্রায় ৯০০টি। তদন্ত প্রতিবেদনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে কয়েক হাজার মামলাও হয়েছে। তবে বড় ধরনের শাস্তির নজির নেই বললেই চলে। মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যাও খুবই কম, মাত্র দেড় শতাধিক।

লঞ্চ ডুবছে প্রাণহানি ঘটছে, কারও দায় নেই

০১ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

লঞ্চ ডুবে হরেদরে মানুষের মৃত্যু এ দেশে নতুন নয়। আর লঞ্চডুবির পরে সবচেয়ে অবশ্যম্ভাবী বিষয় হচ্ছে ‘তদন্ত কমিটি’। অতীতের তথ্য বলছে, এসব তদন্ত কমিটির প্রায় কোনো সুপারিশই বাস্তবায়িত হয়নি। বেশির ভাগ কমিটির তথ্যই অপ্রকাশিত থেকে গেছে। তাই শাস্তিও পান না দায়ী ব্যক্তিরা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর হিসাব বলছে, ১৯৭৬ সাল থেকে গত ৪৪ বছরে ৭৩২টি নৌ দুর্ঘটনায় ১০ হাজারের মতো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এসব ঘটনায় ৫৩২টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা পড়েছে। দুর্ঘটনার তদন্তে কমিটি হলেও সুপারিশ বাস্তবায়নের বেলায় ঠনঠন।

সর্বশেষ গত সোমবার সদরঘাটে ময়ূর-২ নামের আরেকটি লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড নামের একটি ছোট লঞ্চ। ওই ঘটনায় গতকাল আরও দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ওই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। আরও এক যাত্রী নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন তাঁর স্বজনেরা। দুর্ঘটনার শিকার মর্নিং বার্ড লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়েছে। লঞ্চের ভেতর লাশের সন্ধান না পাওয়ায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ।

এ ঘটনায়ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাত সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁদের মনে হয়েছে, ছোট লঞ্চ মর্নিং বার্ডকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছে ময়ূর-২।

এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে গতকাল মঙ্গলবার মামলা হয়েছে ময়ূর-২ নামের লঞ্চটির মালিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে। গত ৪৪ বছরে ৭৩২টি নৌদুর্ঘটনায় ৫৩২টি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে এসব তদন্ত কমিটির সুপারিশ প্রায় বাস্তবায়িত হয়নি বললেই চলে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি ও বেসরকারি একাধিক সংস্থা এসব তথ্য জানিয়েছে।

নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট পদ্মায় আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ। ওই ঘটনায় কারও শাস্তিই হয়নি। তাঁর অভিযোগ, লঞ্চ দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির কোনো সুপারিশই বাস্তবায়িত হয়নি। মাঝেমধ্যে প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নামমাত্র জরিমানা করা হলেও দৃষ্টান্তমূলক শান্তি হয়নি।

২০১২ সালে মেঘনায় এমভি শরীয়তপুর ডুবে গেলে দেড় শতাধিক যাত্রী মারা যান। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী কারও শাস্তি হয়নি।

২০০২ সালে এমভি সালাউদ্দিন-২-এর দুর্ঘটনায় প্রায় চার শ যাত্রী নিহত হন। ওই দুর্ঘটনার অভিযুক্ত ব্যক্তির শাস্তিসংক্রান্ত ফাইল গায়েব হয়ে যায়। দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চের মালিকের শাস্তি সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

২০০৩ সালে এমভি নাসরিন দুর্ঘটনায় আট শতাধিক যাত্রীর প্রাণহানি হয়। তদন্ত কমিটি নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চাকরিচ্যুত করা এবং মালিকের লঞ্চটির নিবন্ধন বাতিলের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সুপারিশ মানা হয়নি। .. ..

জাহাজের ধাক্কায় নৌকা ডুবে যাত্রী নিখোঁজ হন, খাতায় নাম আসে না

০৪ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সুরভী-৭ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় গত বছরের ৬ মার্চ নৌকায় থাকা একটি পরিবারের ছয় সদস্যের মৃত্যু হয়। এর কয়েক দিন পরেই গত বছরের ২১ জুন একইভাবে নৌকায় করে বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার সময় পূবালী-৫ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় দুই বোনের মৃত্যু হয়। দুজনই শিশু।

ঢাকার সদরঘাট নৌ থানার পুলিশ এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, সদরঘাটে নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই ছোট নৌকার যাত্রী। লঞ্চ, ট্রলার, বালুবাহী জাহাজের ধাক্কায় এসব নৌকার যাত্রীরা হতাহত হচ্ছেন। কখনো মারা যান নৌকার মাঝিরাও।

ঢাকার সদরঘাট নৌ থানার খাতাপত্রের তথ্য বলছে, গত বছর (২০১৯ সালে) ঘাটে নৌ–দুর্ঘটনায় মারা যান ২৩ জন এবং ২০১৮ সালে মারা যান ১৩ জন। তবে চলতি বছরের ছয় মাসে নিহত হয়েছেন ৩৭ জন, যাঁদের মধ্যে ৩৪ জনই গত সোমবার ডুবে যাওয়া লঞ্চ মর্নিং বার্ডের যাত্রী। এদিকে সদরঘাটের নৌকার মাঝি, লঞ্চের কর্মচারী এবং মাঠপর্যায়ের বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, সদরঘাটে রাতের বেলা লঞ্চ, ট্রলার কিংবা বালুবাহী জাহাজের ধাক্কায় প্রায়ই নৌকা ডুবে যাত্রী নিখোঁজ হন। পরে হয়তো অজ্ঞাতনামা হিসেবে লাশ উদ্ধার হয়। সেই তথ্য পুলিশের নৌডুবির খাতায় আসে না।

লঞ্চ দুর্ঘটনা: তদন্ত কমিটির ২০ দফা সুপারিশ

০৭ জুলাই, ২০২০, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বুড়িগঙ্গার নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পেছনে নয়টি কারণ চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ২০ দফা সুপারিশ করেছে নৌ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

ঢাকা সদরঘাটের কাছে নৌযানের বার্থিং বন্ধ করা, খেয়াঘাট সরিয়ে নেওয়া, ভয়েজ ডিক্লারেশন বাধ্যতামূলক করা, নৌযানের গতি সীমা নির্ধারণ, পুরনো ধাঁচের লঞ্চ তুলে দেওয়া, লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত টিকেট বিক্রি বন্ধ করা এবং শাস্তি বাড়িয়ে নৌ আইন যুগোপযোগী করার সুপারিশ রয়েছে সেখানে।

তবে ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় এমএল মর্নিং সান বুড়িগঙ্গায় ডুবে যাওয়ার ওই ঘটনা তদন্ত করে তদন্ত কমিটি কার কী দায় পেয়েছে, তা প্রকাশ করেননি নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

ওই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এক জন্য কে কে দায়ী তা এখন প্রকাশ করছি না। তবে তদন্ত কমিটি বিশটি সুপারিশ দিয়েছে।”

গত ২৯ জুন মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে যাত্রী নিয়ে সদরঘাটের দিকে আসছিল ছোট আকারের লঞ্চ এমএল মর্নিং বার্ড। শ্যামবাজারের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে ময়ূর-২ নামের আরেকটি বড় লঞ্চের ধাক্কায় সেটি ডুবে যায়। দুই দিনের তল্লাশি অভিযানে মোট ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) মো. রফিকুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক এবং বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা) মো. রফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।… ….

ভবিষ্যতে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে তদন্ত কমিটি যে ২০ দফা সুপারিশ করেছে, সংবাদ সম্মেলনে সেগুলো পড়ে শোনান নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন।

১. সদরঘাট থেকে ভাটিতে সাত থেকে আট কিলোমিটার এবং উজানে তিন থেকে চার কিলোমিটার অংশে বার্থিং উঠিয়ে দিতে হবে। ওই অংশে পন্টুন ছাড়া কোথাও নৌযান নোঙ্গর করে রাখা যাবে না। নদীর ওই অংশ থেকে পর্যায়ক্রমে শিপইয়ার্ড ও ডকইয়ার্ড উঠিয়ে দিতে হবে।

২. সদরঘাট টার্মিনালের আশপাশে কোনো খেয়াঘাট রাখা যাবে না। ওয়াইজঘাটের উজানে খেয়াঘাট স্থানান্তর করা যেতে পারে।

৩. লঞ্চের সামনে, পেছনে, মাস্টার ব্রিজে, ইঞ্জিন রুমে, ডেকে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে। মাস্টারের দেখার সুবিধার জন্য ব্যাক ক্যামেরার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া লঞ্চে পর্যায়ক্রমে ওয়াকি-টকি ব্যবহার চালু করতে হবে।

৪. লঞ্চ বা জাহাজ ঘাট ত্যাগ করার আগেই ভয়েজ ডিক্লারেশন দাখিল বাধ্যতামূলক করতে হবে। লঞ্চে কতজন যাত্রী বহন করা হচ্ছে, ডেক সাইডে এবং ইঞ্জিনে কারা কারা কর্মরত, তা ভয়েজ ডিক্লারেশনে উল্লেখ করতে হবে।

৫. ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচল বন্ধ করতে হবে। প্রত্যেক লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট ও লাইফ বয় রাখতে হবে।

৬. সকল নদীপথে বিভিন্ন নৌযানের গতি সীমা নির্ধারণ করে দিতে হবে। ঢাকা সদরঘাটে নৌযানের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য টাওয়ার স্থাপন ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

৭. লঞ্চে মেকানিকাল স্টিয়ারিংয়ের পরিবর্তে ইলেট্রো হাইড্রলিক স্টিয়ারিং প্রবর্তন করার উদ্যোগ নিতে হবে।

৮. যাত্রীবাহী লঞ্চে মেইন ইঞ্জিনে লোকাল কন্ট্রোল সিস্টেমের পরিবর্তে ব্রিজ কন্ট্রোল সিস্টেম চালুর ব্যবস্থা নিতে হবে পর্যায়ক্রমে।

৯. ‘সাংকেন ডেক’ লঞ্চ পর্যায়ক্রমে উঠিয়ে দিতে হবে। প্রশস্ত ও ব্যস্ত নদীতে এ ধরনের নৌযান চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রশস্ত ও ব্যস্ত নদীতে যথাযথ সনদধারী মাস্টার ও ড্রাইভার ছাড়া নৌযান পরিচালনা করা যাবে না। ডিসপেনসেশন সনদের প্রথা বাতিল করতে হবে।

১০. যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ করে শিশু, নারী, বয়স্ক যাত্রীদের ওঠা-নামার সুবিধার্থে গ্যাংওয়ে বা ব্রিজ স্থাপন করতে হবে নৌযানে।

১১. সদরঘাটে পন্টুনের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

১২. সার্ভের সময় নৌযানের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও অন্যান্য বিষয় দেখার জন্য পরিদর্শন কার্যক্রম আরও জোরদার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্টেট ও মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।

১৩. লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত টিকেট বিক্রি বন্ধ করতে হবে। টিকেট দেখানো ছাড়া কোনো যাত্রীকে লঞ্চে উঠতে দেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের সুযোগ বন্ধ করার জন্য কেবিন সংখ্যা ও ডেকের যাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ করে দিয়ে ও সকল টিকেট অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

১৪. নৌ আইন অমান্যকারীদের শাস্তির মেয়াদ ও জরিমানার পরিমাণ সুযোপযোগী করে আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

১৫. নৌ কর্মীদের প্রশিক্ষণ ফলপ্রসূ করার জন্য বিআইডব্লিউটিএ কে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। নৌযানের ফিটনেস ও নৌকর্মীদের যোগ্যতা সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে আরও কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। সার্ভে সনদ প্রদানকারী সংস্থা নৌপরিবহন অধিদপ্তরে সার্ভেয়ারের সংখ্যা এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।

১৬. ডেক অ্যান্ড ইঞ্জিন পারসোনেল ট্রেইনিং সেন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। দেশে বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার নিবন্ধিত জাহাজ ছাড়াও অনিবন্ধিত অসংখ্য জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজে গড়ে কমপক্ষে ২ জন মাস্টার ও ২ জন ইঞ্জিন চালক নিয়োগ করতে হলে প্রায় ৫৬ হাজার প্রশিক্ষিত জনবল দরকার। শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জাহাজে নিয়োগ করতে পারলে দুর্ঘটনা কিছুটা কমতে পারে। এ ধরনের ট্রেইনিং সেন্টারের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি উপস্থিতি দৃশ্যমান করতে হবে।

১৭. নৌ দু্র্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য দায়ী মাস্টার, ইঞ্জিন ড্রাইভারদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নিতে হবে। নৌ দুর্ঘটনা ও নৌযান সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ ও আসামি গ্রেপ্তারের জন্য সদরঘাটে নৌপুলিশের জনবল সংখ্যা ৯ জন থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ২৫ জন করতে হবে।

১৮. নৌযান ও নৌকর্মীদের চলাচল ও অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার জন্য নৌযান ও নৌকর্মীদের ডেটাবেজ তৈরি এবং ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে।

১৯. নৌ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আনুনিকায়ন করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে যথাযথ কারিগরি সুবিধা দিতে হবে। সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

২০. নৌ দুর্ঘটনা নিয়ে গবেষণার বিষয়ে একটি প্রতিষ্ঠান করা যেতে পারে।

ভারতবাংলাদেশ

ভারতে প্রবেশ করতে পারছে না বাংলাদেশী পণ্য

জুন ৩০, ২০২০, বণিক বার্তা

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ছেদ টেনেছিল কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব। বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশে কোনো বাধা না থাকলেও, বাংলাদেশ থেকে রফতানি পণ্য প্রবেশ করতে পারছে না ভারতে। এ অবস্থায় বাণিজ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়ে এরই মধ্যে দিল্লিকে চিঠিও দিয়েছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দেশের স্থলবন্দরগুলো থেকে বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত: বাংলাদেশিদের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা আরও বেড়েছে ছয় মাসে

১ জুলাই, ২০২০, কালের কণ্ঠ অনলাইন

চলতি ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলি ও নির্যাতনে বাংলাদেশি নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সংগ্রহ করা তথ্যে দেখা গেছে।

এসব তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সীমান্তে ২৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের সৈন্যদের গুলিতে।

মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র এই তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র বা আসক।… …

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় ঋণ দিচ্ছে ভারত

০৭ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় ভারতই সাড়ে ১১ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। এ অর্থ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৭৮ কোটি টাকা (৮৫ টাকা ডলার ধরে)।

বাংলাদেশ এ ঋণ পাচ্ছে ভারতের তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ভারতের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বাংলাদেশ সফরে এলে তৃতীয় এলওসি সই হয়। এর আওতায় মোট ঋণের প্রতিশ্রুতি ছিল ৪৫০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, ভারত সরকার ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (আইএসইজেড) প্রতিষ্ঠার প্রকল্পে ঋণ দিতে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে। বাংলাদেশে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) আগেই অনুমোদন পেয়েছে।

২০১৫ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সমঝোতা স্মারক সই হয়।

শুরুতে ভারত কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৪৬০ একর ও বাগেরহাটের মোংলায় ১১০ একর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আগ্রহ নিয়ে এগোচ্ছিল। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আগ্রহ দেখায়। এখন আর বাকি দুই প্রকল্পে ভারতের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। কাজ হচ্ছে মিরসরাই ঘিরে।

মিরসরাই, ফেনী ও সীতাকুণ্ড মিলিয়ে ৩০ হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে। মিরসরাইয়ে ভারতের জন্য জমি রাখা হয়েছে এক হাজার একরের মতো।

ভারতের পক্ষে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি উন্নয়নের কাজ পেয়েছে আদানি গ্রুপ। আদানির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেডস কাজটি করছে। এ বিষয়ে বেজার সঙ্গে আদানির সমঝোতা স্মারক সই হয় ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর। আর গত ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আদানিকে উন্নয়নকারী হিসেবে অনুমোদন দেয়।

বেজা জানিয়েছে, আদানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ চুক্তির বিষয়টি দর কষাকষির মধ্যে রয়েছে।

২০১০ সাল থেকে ভারত লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় বাংলাদেশকে তিন দফায় ৭৫০ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে এ অর্থায়ণের আওতায় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ও ঋণের অর্থ ছাড়করণে ধীরগতি রয়েছে।

ভারতীয় এই ঋণের শর্ত মোটামুটি এ রকম যে প্রকল্পে ভারতীয় ঠিকাদারেরা কাজ পাবে। ঋণের টাকায় পূর্তকাজের প্রকল্প হলে ৬৫ শতাংশ মালামাল ভারত থেকে আনতে হবে। অন্য প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ মালামাল ও সেবা ভারত থেকে আনতে হবে। প্রকল্পভেদে শর্তের ভিন্নতা রয়েছে। সুদের হার ১ শতাংশ আর প্রতিশ্রুতি মাশুল আধা শতাংশ। ৫ বছরের রেয়াতকাল সহ ঋণ পরিশোধের সময় ২০ বছর।

সাধারণত কম সুদের ঋণে এ ধরনের শর্তই থাকে। যেমন জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানের ঠিকারদারেরাই কাজ পাচ্ছে।

বেজা জানায়, ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের ক্ষেত্রে ঠিকাদার ও পরামর্শক ভারতীয়। মালামাল আনার শর্ত নেই। কারণ অর্থনৈতিক অঞ্চলে মাটি ছাড়া তেমন কোনো মালামাল লাগে না। বেজা বলছে, মূল ঠিকাদার ভারতীয় হলেও সহঠিকাদার হিসেবে বাংলাদেশিরাও কাজ করবে।… …

বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে আসাম ত্রিপুরায় যাচ্ছে ভারতীয় পণ্য

১৬ জুলাই, ২০২০, ডেইলি স্টার অনলাইন বাংলা

বাংলাদেশের বন্দর পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা অঞ্চলে পণ্য পৌঁছে দিতে কলকাতার বন্দর থেকে একটি জাহাজ রওনা হয়েছে। আগামী সোমবার এটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে।

আজ বৃহস্পতিবার কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর থেকে চারটি কনটেইনার রড ও ডালের একটি চালান নিয়ে যাত্রা করেছে এমভি সেঁজুতি।

ভারতের হাই কমিশনার ও বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত বাংলাদেশ ট্রান্সশিপমেন্ট এর চুক্তির আওতায় প্রথমবারের মতো এ জাহাজটি ১০৮ টি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। এরপর, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে চারটি কনটেইনার আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর হয়ে প্রবেশ করবে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যে।

ভারতীয় হাইকমিশন ও বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির সূত্রে জানা গেছে, এ চারটি কনটেইনারের মধ্যে দুই কনটেইনার রড ত্রিপুরার জিরানিয়ার এস এম করপোরেশনের। বাকি দুই কনটেইনার ডাল যাবে আসামের জেইন প্রতিষ্ঠানের কাছে।

এ চালানের মাধ্যমেই বাংলাদেশের বন্দর ও সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য তাদের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পরিবহনের প্রথম পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করলো।.. …

বাংলাদেশের অন্যান্য আমাদানিকারকদের মতোই নির্ধারিত হারে মাশুল আদায় করে জাহাজটিকে ছাড়পত্র দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় পণ্য ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাত ধরনের মাশুল আদায় করবে। এই সাতটি হলো প্রতি চালানের প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, প্রতি টনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ৩০ টাকা, নিরাপত্তা মাশুল ১০০ টাকা, এসকর্ট মাশুল ৫০ টাকা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক মাশুল ১০০ টাকা।

এ ছাড়া প্রতি কনটেইনার স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা এবং বিধি অনুযায়ী ইলেকট্রিক সিল ও লক মাশুল প্রযোজ্য হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের চুক্তি হয়।

চুক্তির আর্টিক্যাল-৪ (পোর্ট এন্ড আদার্স ফ্যাসিলিটিজ) এ বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে যে ধরণের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পরিবাহিত ইন্ডিয়ার পণ্যের ক্ষেত্রেও একই সুবিধা প্রদান করবে। এছাড়াও এ ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘প্রায়োরিটি’র ভিত্তিতে ‘স্পেস’ প্রদান করবে ‘ডেডিকেটেড’ নয়।

ভারতীয় পণ্য অগ্রাধিকার (প্রায়োরিটি) দেয়ার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, এর অর্থ এই নয়, ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ ভেড়ানোর জন্য আমরা দেশীয় জাহাজকে জেটি থেকে বের করে দেবো। বন্দরের জেটি ও ইয়ার্ড খালি থাকা সাপেক্ষেই তাদের এ সুবিধা দেয়া হবে।

একই দিনে একটি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পণ্য বোঝাই জাহাজ ও ভারতের পণ্য বোঝাই জাহাজ বন্দরে এলে কোনটি আগে বন্দরে ভিড়বে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী অবশ্যই ভারতের পণ্যবাহী জাহাজটিকেই আগে প্রায়োরিটি দিতে হবে।’

এতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে হওয়া একটি চুক্তিকে সবারই সম্মান করা উচিত।’ বন্দরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভারতের পণ্যের ক্ষেত্রে যে প্রায়োরিটি দেয়ার কথা বলা হয়েছে তাতে বন্দরের কিছু করার নেই। চুক্তি অনুযায়ী তা আমাদের করতে হবে। যদিও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বাড়ার কারণে বছরে কয়েক দফা, প্রায় ৫-৬ মাস জাহাজ জটে পড়তে হয়।’

তিনি বলেন, ‘শুরুতে ভারতের পক্ষ থেকে তাদের পণ্যবাহী জাহাজের জন্য একটি ডেডিকেটেড জেটি ও ইয়ার্ড দাবি করা হয়েছিল। বন্দর বিভিন্ন চেষ্টার মাধ্যমে ‘ডেডিকেটেড’ এর পরিবর্তে ‘প্রায়োরিটি’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

দেশীয় ব্যবসায়ীদের চেয়ে ভারতের ব্যবসায়ীরা বেশি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ব্যবসায়ী মহলে। তবে ভারতীয় পণ্যের এ সুবিধার পক্ষেও মত দিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি মাহবুবুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আপনার বাড়িতে কোন মেহমান এলে নিজে খাওয়ার আগে অবশ্যই মেহমানদের খাওয়ানো উচিত। সে হিসাবে ভারতীয় পণ্য বেশি প্রায়োরিটি পেতে পারে।’ এতে দেশি আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের তেমন কোন সমস্যা হবে না বলে দাবি করেন তিনি।

তবে তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজেএমইএর সহ সভাপতি এ এম চৌধুরী সেলিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্দরে যেহেতু জাহাজ জট ও কনটেইনার জট নেই সেহেতু আপাতত কোন সমস্যা হবে না। তবে যখন বন্দরের জাহাজ জট শুরু হবে এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পণ্য পরিবহন আস্তে আস্তে বাড়বে তখন দেশিয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।’ … …

গরু চোরাচালান: বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন বিজিবির

১৯ জুলাই ২০২০, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

সীমান্তে গরু পাচারে বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষীদের সমর্থন দেওয়ার যে খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তার প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ‘নীরবতা’ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ।

রোববার বিজিবির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় চোরাকারবারীদের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় ভারতের মাটিতে গরু সমাগম ও নদীপথে গরু পাচারে বিএসএফ এর নিষ্ক্রিয়তা/তৎপরতার অভাব নিঃসন্দেহে বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারণা করে।”

বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি এস এস গুলেরিয়া স্বাক্ষরিত হিন্দি ভাষার এক বিবৃতির বরাত দিয়ে গত ১৩ জুলাই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

‘বিএসএফ: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সাপোর্টস ক্যাটল স্মাগলিং’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বিএসএফের বিবৃতি থেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ভারত থেকে গরু পাচারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ‘সম্পূর্ণভাবে সমর্থন’ দিয়ে যাচ্ছে।

ওই অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ দাবি করে বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ভারতীয় গরু পাচারকারীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় বাংলাদেশে এভাবে গরু পাচার করার কাজে অতি উৎসাহী হয়। এতে করে দেশীয় খামারিগুলো প্রায়শঃ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

গরু চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, পুলিশ, সমাজের গণ্যমাণ্য ব্যক্তি এবং সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে সীমান্ত এলাকায় জনসচেতনতামূলক সভা আয়োজন, রাত্রিকালীন পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বলে জানানো হয় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিবৃতিকতে।

বিএসএফ কর্তকর্তা এস এস গুলেরিয়াকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গরুগুলোর চোখ বেঁধে কলাগাছের সঙ্গে বেঁধে গঙ্গায় ছেড়ে দেওয়া হয়, যাতে সেগুলো ভেসে ভেসে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছাতে পারে।

“যখন সেগুলো নদীর বাংলাদেশ অংশে পৌঁছায়, শত শত বাংলাদেশি পাচারকারী গরুগুলোকে ধরে স্পিডবোটে তোলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যদের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে তারা কখনও কখনও এ কাজটি করে।”

তবে গরু পাচারে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে বিজিবি বলেছে, “মূলত গরু চোরাচালান প্রতিরোধে বিএসএফ এর ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্যই ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ হতে পারে বলে অনুমেয়।”

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের উত্তর অংশ থেকে ট্রাক ভর্তি করে পাচারের জন্য গরু নিয়ে আসা হয় সীমান্তে। বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি আনার পর পাচারকারীরা সেগুলোকে জোরে দৌড়াতে বাধ্য করে যাতে সেগুলো ধরা না যায়। সেগুলো যাতে জোরে দৌড়ায় সেজন্য কখনও কখনও গরুগুলোকে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক দেওয়া হয়। কখনও কখনও সেগুলোর লেজ কেটে ক্ষত তৈরি করা হয়।

বিএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতে যে মহিষের দাম ৫০ হাজার রুপি, বাংলাদেশে পাচারের পর কোরবানির মৌসুমে তা বিক্রি করা হয় প্রায় দেড় লাখ রুপির সমতুল্য দামে। প্রতিটি মহিষে পাচারকারীর লাভ থাকে দশ হাজার রুপি।

বিজিবির প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, চলতি জুলাই মাসের শেষে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু চোরাচালান বেড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে। অর্থাৎ গরু পাচারের পেছনে ‘ধর্মীয় কারণের উপস্থিতির দিকে ইঙ্গিত’ করা হয়েছে।

“মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে জানা গেছে, বিগত বছরে ১ কোটির সামান্য কিছু বেশি পশু কোরবানির জন্য সারাদেশে ব্যবহৃত হয়েছে। এ বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে ধারণা করা হচ্ছে এ সংখ্যা ১ কোটির কিছু কম হবে। আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য আমাদের দেশে ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি পশু মজুদ রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত।

পাচারের কারণে দেশীয় খামারীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য দেশের সীমান্তে গবাদী পশু চোরাচালান রোধে বিজিবির নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে প্রতিবাদলিপিতে।

ভারতের বিতর্কিত কোম্পানিকে স্মার্ট কার্ডের দায়িত্ব দিয়েছে বিআরটিএ

২১শে জুলাই, ২০২০, ডিবিসি নিউজ অনলাইন

নিজ দেশ ভারতেই, আধার কার্ড প্রকল্পে আজীবন নিষিদ্ধ। আফ্রিকার দেশ কেনিয়াতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঝুলছে ৯ পরিচালকের বিরুদ্ধে। ঘুষ-অনিয়মের মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে শ্রীলঙ্কাতেও। এমন বহু অভিযোগে অভিযুক্ত ভারতের মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। আর এই কোম্পানিকেই ১২০ কোটি টাকার ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড প্রকল্পের কাজ দিয়েছে বিআরটিএ। এজন্য চারবার সংশোধন করা হয়েছে দরপত্রের শর্ত।

মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স-এমএসপি’র কাজের পরিধি বেশ ব্যাপক। অভিযোগ-তারচেয়েও বেশি। ভারতের আধার কার্ড প্রকল্পে কাজ পেয়েছিল এমএসপি। কিন্তু নাগরিকদের তথ্য বিক্রি করে দেয়। ফলাফল আজীবন নিষেধাজ্ঞা। বের করে দেয়া হয়েছে তেলেঙ্গানার সামাজিক সুরক্ষা সেবা মিসেভা প্রকল্প থেকেও। ভবিষ্যতেও কোন টেন্ডারে অংশ নিতে পারবেনা কোম্পানিটি।

দুর্নাম ভারতের বাইরেও কুড়িয়েছে। শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। কেনিয়াতে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা চলছে। নয় পরিচালকের বিরুদ্ধে আছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও। অথচ বিআরটিএ’র দরপত্রের শর্ত ছিলো ৫ বছরের মধ্যে দরদাতার বিরুদ্ধে কোন মামলা থাকা চলবে না। কিন্তু দরপত্র যাচাই কর্তাদের এসব কিছুই চোখে পড়েনি।

গোয়েন্দাবৃত্তিতেও সফল এমএসপি। প্রথম দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের সেল্প এসএএস’র দরপত্রের সব তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। বিআরটিএকে চিঠি সেল্পের প্রস্তাবের ঘাটতি সম্পর্কে জানায় এমএসপি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, গোপন দরপত্রের তথ্য এমএসপি জানলো কিভাবে?

বাংলাদেশে ২০১৫ সালে বিএমইটির ইমিগ্রেশন কার্ড সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছিলো ভারতের এই এমএসপি। কিন্তু সে যাত্রায়ও কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছিলো। তবুও বিআরটিএ বলছে, এমএসপিকে কাজ দেয়া ছাড়া উপায় নেই।

প্রথম দরপত্রে ৩৫ লাখ কার্ড বিতরণের কথা থাকলেও সংশোধিত দরপত্রে তা ৪০ লাখ করা হয়। অভিযোগ আছে, এমএসপি’র অন্যায় প্রভাবেই কার্ড সংখ্যা ৫ লাখ বাড়ানো হয়েছে।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •