করোনাকালে অধিকতর প্রান্তিক মানুষেরা
ফিলিপ গাইন
সামাজিকভাবে অধিকতর বঞ্চিত, প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সিংহভাগ কেবল দরিদ্র কিংবা হতদরিদ্র নন, তাঁরা এর পাশাপাশি সামাজিক অধিকতর বৈষম্যের শিকার। দেশে চলমান দুর্যোগকালীন তাঁদের অধিকাংশ আরও বিপন্ন অবস্থায় পড়েছেন। দেশে লকডাউন চলাকালে কীভাবে এসব সম্প্রদায়ের মানুষের দিন কাটছে, তার চিত্র জানা গুরুত্বপূর্ণ। এ লেখায় সেইসব প্রান্তিক মানুষের বর্তমান পরিস্থিতির ওপরই আলোকপাত করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এই সময়ে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সারা দেশে জনসমাগম বন্ধ রাখা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তাই ধনী-গরিব সবার ওপরেই পড়েছে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাব। তবু রাষ্ট্রসহ যাঁরা সমাজে সুবিধাজনক ও নিরাপদ অবস্থায় আছেন, অন্তত উপার্জন ও শারীরিক সুস্থতা বিবেচনায়, তাঁদের সাথে সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া, প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি একইরকম নয়। নীচে একে একে তাঁদের পরিস্থিতি তুলে ধরা হলো।
চা শ্রমিক
মালিকদের সন্তুষ্টির জন্য লকডাউনের মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১৬৩টি চা-বাগানের শ্রমিকরা। দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের মত তাঁরাও বেতন ও অন্যান্য সুবিধাসহ ছুটির দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই সময়ও বন্ধ হয়নি দেশের চা-বাগানগুলো। তবে গত ২৭ মার্চ থেকে নিজ উদ্যোগেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা-বাগানের শ্রমিকরা। সেদিন ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন বৃহৎ শমশেরনগর চা-বাগান, চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও চা শ্রমিকদের ৫০ জনের মত একটি দল বাগান ব্যবস্থাপকের কাছে গিয়ে জানায়, তারা কাজ বন্ধ করে দিতে চায়। শমশেরনগর চা-বাগানের শ্রমিকদের নেয়া এই পদক্ষেপে প্রায় এক লাখ স্থায়ী চা শ্রমিকের সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন বিস্মিত না হলেও বাগান মালিকদের প্রতিনিধিত্ব করা সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) অনেকটা বিব্রত হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, চা শ্রমিকদের কাজ বন্ধের ব্যাপারটি প্রত্যাখ্যান করে বিটিএ। ৩০ মার্চ থেকে শমশেরনগর চা-বাগানে আবারও কাজ শুরু হয়। তবে কাজের সময় দুপুর দুইটা পর্যন্ত করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির উদ্যোগে সেখানকার ২৩টি চা-বাগানের কাজ ৩০ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, “বন্ধের সময় যাতে আমাদের পুরো মজুরি ও রেশন দেয়া হয়, তা জানিয়ে আমরা বাগান ব্যবস্থাপকদের চিঠি দিয়েছি।” কিন্তু সরকার ও বাগানের মালিকদের সিদ্ধান্ত, ‘বাঁধা’ চা শ্রমিকরা অবশ্যই কাজ করবেন। কারণ তাঁদের ধারণা, চা শ্রমিকরা করোনার ঝুঁকি থেকে মুক্ত এবং তাঁরা নিরাপদেই বসবাস করেন; কাজেই চা-বাগানগুলো চালু রাখতে কোন সমস্যা নেই। বলা বাহুল্য, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারঘোষিত প্রণোদনা সুবিধার আওতায় চা শ্রমিকরা নেই।
সরকার ও বাগানের মালিকদের সিদ্ধান্ত, ‘বাঁধা’ চা শ্রমিকরা অবশ্যই কাজ করবেন। কারণ তাঁদের ধারণা, চা শ্রমিকরা করোনার ঝুঁকি থেকে মুক্ত এবং তাঁরা নিরাপদেই বসবাস করেন; কাজেই চা-বাগানগুলো চালু রাখতে কোন সমস্যা নেই। বলা বাহুল্য, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারঘোষিত প্রণোদনা সুবিধার আওতায় চা শ্রমিকরা নেই।
চা-বাগানগুলোতে বসবাসরত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের আরেকটি গুরুতর বিষয় রয়েছে। সেটি হল, চা-বাগানগুলোতে সাধারণত এক পরিবার থেকে একজনই চা-বাগানে কাজ করেন এবং তাঁর দৈনিক আয় ১০২ টাকার নগদ মজুরি ও কিছু রেশন সুবিধা। কিন্তু পাঁচ সদস্যের পরিবারের পক্ষে এইটুকু দিয়ে বেঁচে থাকা দায়। প্রত্যেক চা শ্রমিক পরিবারের অন্তত একজন প্রতিদিন বাগানের বাইরে কৃষিকাজ, ইটভাটা, ফলমূল ও লেবুবাগান বা বাড়িঘরে শ্রমিক হিসাবে কাজ করে কিছু রোজগার করেন। দেশে বর্তমানে লকডাউন জারি করার পরেও এসব মানুষ বাগানের বাইরে কাজের খোঁজে বেরিয়েছেন। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, “বাগানের বাইরে কাজ করা শ্রমিকদের অনেকেই এখন আর কাজের জন্য বাইরে যেতে পারছেন না। ফলে এসব চা শ্রমিক পরিবারকে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”
অবাঙালি হরিজন
বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি পেশাজীবী সম্প্রদায় হরিজন, যাঁরা সুইপার কিংবা ক্লিনার নামে পরিচিত। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার অধীনস্থ বিভিন্ন কলোনিতে গাদাগাদি করে বাস করে থাকেন হরিজন সম্প্রদায়ের লোকেরা। বেশির ভাগ হরিজনপল্লিই শহরের সবচেয়ে নোংরা স্থানে অবস্থিত। সেখানে প্রায় এক লাখ হরিজনের বসবাস। অর্থাৎ শহর পরিষ্কার রাখছেন যে হরিজনরা, তাঁরাই বাস করছেন সবচেয়ে নোংরা স্থানে। তাঁদের কলোনিগুলোতে যে পরিমাণ ত্রাণ ও সুরক্ষা উপকরণ দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। হরিজনদের সংগঠন বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণলাল বলেন, “ঢাকায় সিটি কর্পোরেশন থেকে আমাদের এখন পর্যন্ত একবার কিছু সাবান ও ব্লিচিং পাউডার দেয়া হয়েছে।”
শহর পরিষ্কার রাখছেন যে হরিজনরা, তাঁরাই বাস করছেন সবচেয়ে নোংরা স্থানে। তাঁদের কলোনিগুলোতে যে পরিমাণ ত্রাণ ও সুরক্ষা উপকরণ দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
চা শ্রমিকদের মত যেসব হরিজন অস্থায়ী শ্রমিক, তাঁরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। এ ছাড়া অনেকে তাঁদের ডেকে নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ দেন। বর্তমানে চলমান লকডাউনে কাজ পাচ্ছেন না এসব উদ্বৃত্ত হরিজন শ্রমিক। তাঁদেরও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন।
ভাসমান বেদে
করোনার প্রভাবে মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে দেশের ভাসমান জনগোষ্ঠী বেদে সম্প্রদায়। সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বসবাসরত বেদের সংখ্যা ৭৫ হাজার ৭০২। তবে বেদে জনগোষ্ঠীর দাবি, তাদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। তাঁদের বেশির ভাগই দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ধারে কিংবা খোলা মাঠে তাঁবুতে থাকেন। এই অস্থায়ী বসবাসের ক্যাম্পে থাকার সময় তাঁরা স্থানীয় মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন। ফলে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তাঁরা প্রত্যাশিত সহায়তা নাও পেতে পারেন। চলমান এই দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে সরকার তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারে।
সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বসবাসরত বেদের সংখ্যা ৭৫ হাজার ৭০২। তবে বেদে জনগোষ্ঠীর দাবি, তাদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ।
যৌনকর্মী
দেশে প্রায় এক লাখ যৌনকর্মী রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে চার হাজারের মত বাস করেন দেশের ১১টি যৌনপল্লিতে। বলা বাহুল্য, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যৌনপল্লিগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যৌনপল্লিভিত্তিক যৌনকর্মীরা যে সহায়তা পাচ্ছেন, তা পর্যাপ্ত নয়। দেশের প্রায় ৩৭ হাজার ভাসমান যৌনকর্মীর মধ্যে অনেকের হয়ত থাকার জায়গাও নেই। এছাড়া আরও প্রায় ৩৭ হাজার যৌনকর্মী বাসাবাড়িতে থেকে কাজ করে থাকেন; এবং হোটেলভিত্তিক যৌনকর্মী রয়েছেন আরও প্রায় ১৬ হাজার।
দেশে প্রায় এক লাখ যৌনকর্মী রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে চার হাজারের মত বাস করেন দেশের ১১টি যৌনপল্লিতে।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১০ হাজার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছেন। দেশে চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ভাসমান যৌনকর্মীদের মত বেহাল দশা তাঁদেরও। কারণ বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার মানুষদের কাছ থেকে চাঁদা ও ভিক্ষা সংগ্রহ করেই তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার যৌনকর্মী হিসাবেও কাজ করেন। দেশের এই সংকটময় সময়ে সাহায্যের জন্য আকুতি জানাচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ও যৌনকর্মীরা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১০ হাজার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছেন।
জলদাস
পেশাগতভাবে প্রান্তিক ও সামাজিক অস্পৃশ্যতার শিকার জলদাসরা বংশপরম্পরায় একটি মৎস্যজীবী জনগোষ্ঠী। দেশের কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় বাস করছেন প্রায় দেড় লাখ জলদাস। মূলত সমুদ্রে মাছ ধরে জলদাসরা জীবিকা নির্বাহ করেন; বর্তমানে সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
জলদাস জনগোষ্ঠীর একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক হরিশংকর জলদাসের দেয়া তথ্যানুসারে, উপকূলীয় গ্রামে বসবাসরত অনেক জলদাস পরিবারের কাছে এখনও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এই অভিযোগ আমলে নিয়ে জলদাস সম্প্রদায়ের প্রতি সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া।
উর্দুভাষী বিহারি
দেশের ১৩টি জেলার ৭০টি ক্যাম্পে বাস করছেন তিন লাখ উর্দুভাষী বিহারি। তাঁরাও কোন ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। ৭০টি ক্যাম্পের মধ্যে ৩৩টিই ঢাকায়। গত ৯ এপ্রিল স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানিজ জেনারেল রিপ্যাট্রিয়েশন কমিটির (এসপিজিআরসি) সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী বলেন, “বিহারি ক্যাম্পগুলোতে এখনও কোন ধরনের সরকারি ত্রাণসামগ্রী এসে পৌঁছায়নি। আমরা ক্যাম্পগুলোতেই রয়েছি। আমাদের খাদ্য সহায়তা ও সুরক্ষা উপকরণ প্রয়োজন।”
দেশের ১৩টি জেলার ৭০টি ক্যাম্পে বাস করছেন তিন লাখ উর্দুভাষী বিহারি। তাঁরাও কোন ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। ৭০টি ক্যাম্পের মধ্যে ৩৩টিই ঢাকায়।
কায়পুত্র
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার ৪১টি গ্রামে বাস করছেন কায়পুত্র জনগোষ্ঠীর ১২ হাজার মানুষ। তাঁরা সাধারণত শূকর চরানো জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত, যে কারণে তাঁরা সমাজের একটি বড় অংশের কাছে ‘অচ্ছুত’ হিসাবে বিবেচিত। করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে তাঁদের ওপরও। কায়পুত্র জনগোষ্ঠী এবং তাদের পালিত শূকরগুলো মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অকল্পনীয় জটিলতার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছে।
যশোরের শূকর ব্যবসায়ী দিলীপ মন্ডল সম্প্রতি তাঁর ৬০০ শূকরের পাল ও ১৫ জন রাখাল নিয়ে শরীয়তপুরে ছিলেন। তিনি বলেন, “শরীয়তপুরের লোকেরা এমনভাবে আমাদের দিকে আঙুল তুলল, যেন আমরা অপরাধী। তারা আমাদের দ্রুত সেই এলাকা ছাড়তে বলে। আমরা শূকরগুলো নিয়ে হেঁটে নড়াইলে চলে আসি।” লকডাউন চলাকালে শূকর বা শূকরের মাংস বিক্রি কোনভাবেই সম্ভব নয়।
ঋষি
বাংলাদেশে বসবাসরত ঋষিরা বংশপরম্পরায় চর্মকার, চামড়া শ্রমিক ও বাদক। তাঁদেরকে মুচি, চামার ও চর্মকার নামেও অভিহিত করা হয়। করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে তাঁদের ওপরও। যদিও তাঁদের বেশির ভাগই যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলায় বসবাস করেন, কিন্তু দেশের প্রায় সব জেলাতেই ঋষি গোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা মুচি হিসাবে কাজ করেন কিংবা যাঁরা বাঁশের জিনিস তৈরি করে থাকেন, বর্তমানে তাঁদের কাজ নেই। সাতক্ষীরায় ঋষি ও দলিতদের জন্য কর্মরত সংগঠন পরিত্রাণের পরিচালক মিলন দাস বলেন, “দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলায় বসবাসরত ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষেরা সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছে না বললেই চলে।”
প্রান্তিক আদিবাসী
বাংলাদেশে পাহাড়ে এবং সমতলে বাস করা আদিবাসী আছেন অন্তত প্রায় ২০ লাখ। এঁদের মধ্যে যাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম চাষ করেন, প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করেন এবং কৃষিকাজ করেন, চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে তাঁরাও কঠিন সময় পার করছেন। উন্নয়ন পরামর্শক হ্যান হ্যান বলেন, “বছরের এ সময়টি পার্বত্য চট্টগ্রামে এমনিতেই সংকটের মাস, আর এখনই এখানে খাদ্যসংকটের ব্যাপারটি স্পষ্ট।”
বাংলাদেশে পাহাড়ে এবং সমতলে বাস করা আদিবাসী আছেন অন্তত প্রায় ২০ লাখ। এঁদের মধ্যে যাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম চাষ করেন, প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করেন এবং কৃষিকাজ করেন, চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে তাঁরাও কঠিন সময় পার করছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে অবগত। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য প্রকাশ কান্তি বড়ুয়া বলেন, “কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাবার পৌঁছানো কঠিন। খাদ্যসংকটের সময় অভাবী মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমরা ইউএনও ও ইউনিয়ন পরিষদের তৈরি করা তালিকা অনুসরণ করছি।”
এছাড়া পাহাড়ের মানুষের, বিশেষ করে কৃষক, দিনমজুর, রেলস্টেশনে কাজ করা শ্রমিক এবং যাঁরা বস্তিতে থাকেন, সরকারের উচিত তাঁদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া। সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া, প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন আরও অনেক সম্প্রদায়ও রয়েছে, যাদের এই মুহূর্তে সহায়তা প্রয়োজন। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রতিবন্ধী, নাপিত, ধোপা, তাঁতি, দর্জি, কসাই, কামারসহ অনেকেই। এছাড়া যাঁরা রাস্তায় ভিক্ষা করেন এবং রাস্তায়ই থাকেন, তাঁদের কথাও ভুলে গেলে চলবে না।
বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে পুরো দেশই গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। আমরা জানি না এই মহামারির শেষ কবে। যা হোক, করোনাভাইরাসজনিত একেবারে ভিন্ন প্রকৃতির এবং বহুমাত্রিক ও দীর্ঘমেয়াদি এই সংকটের মোকাবিলায় সরকারের দায়িত্বটাই সবচাইতে বেশি। পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় সমাজের বিত্তবানদেরও পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ৭০ লাখ মানুষের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। কোথাও কেউ ক্ষুধার্ত না থাকুক কিংবা অবহেলায় কারও মৃত্যু না হোক, সেটাকে বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিতভাবে এই সংকট মোকাবিলা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
ফিলিপ গাইন: লেখক, গবেষক, সেড।
ইমেইল: philip.gain@gmail.com
155