'তবে কি চাষার হৃদয় জুড়াবে মাঠ হারাবার দেশে?'
মেহেদী হাসান সুমন
করোনা ভাইরাস হঠাৎ করে আসেনি, এর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে মুনাফা উন্মাদনাভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থার আগ্রাসী তৎপরতায়। মানুষ আর পৃথিবী, প্রাণ প্রকৃতি সবই বিপন্ন এদের থাবায়। একদিকে মুনাফার সৌধ অন্যদিকে অরক্ষিত মানুষ, যে পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে আমাদের, তা করোনা সবার সামনে উন্মোচিত করেছে। ইবোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাইরাসের অভিজ্ঞতার সূত্র ধরে এই লেখা সেই চিত্র আমাদের সামনে হাজির করেছে।
ঘটনাটা শুরু হয়েছিল একটি শিশুর রহস্যময় মৃত্যুর ভেতর দিয়ে। ১৮ মাসের এই ছোট্ট শিশুটির নাম ছিল এমিল। যদিও পৃথিবীব্যাপী তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে ‘পেশেন্ট জিরো’ হিসেবে। এমিল রেডিও শুনতে খুব ভালোবাসতো। লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিয়নের সীমান্তের কাছাকাছি গিনির মেলেন্দুতে তাদের বাড়ি ছিল। যেদিন সে অসুস্থ হয়ে পড়ে, সেদিন সে তার বাড়ির কাছাকাছি একটা বিশাল বড় মরা গাছের নিচে খেলা করেছিল। গাছটা ছিল বাদুড়ে ভর্তি। এমিল মারা যায় ২০১৩ সালের ৬ ডিসেম্বর। পরবর্তী জানুয়ারি মাসের মধ্যে একই রকম উপসর্গ নিয়ে মারা যায় এমিলের বোন, দাদী এবং মা। দাদীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যারা এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে এই অজানা রোগটি। প্রথমে এটি গিনির গ্রাম ও শহরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সিয়েরালিয়ন, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল এবং মালিতে ছড়ায়। আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে থাকেন স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরাও। এমিলের মৃত্যুর প্রায় তিন মাস পরে এই সংক্রামক রোগটি একটি নাম পায়। ইবোলা।
মানুষের শরীরে ইবোলার উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, শরীর ব্যথা এবং ডাইরিয়া। শরীরের ভেতরে ও বাইরে অনিয়ন্ত্রিত রক্তক্ষরণ। আক্রান্ত মানুষের শরীর থেকে নিঃসৃত তরলের মাধ্যমে এর সংক্রমণ ছড়ায়। মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এই ভাইরাসের উপসর্গ এর আগে দেখা গিয়েছিল ১৯৭৬ সালে। সুদান ও কঙ্গোতে। এর আগে ইবোলার অস্তিত্ব ছিল শুধুমাত্র আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের বাদলবনের কিছু প্রাণীদের মধ্যে। কখনই তা মানুষকে স্পর্শ করেনি। এমনকি মানুষের কাছে এর অস্তিত্বই ছিল আজানা।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে এই মরণঘাতী সংক্রামক রোগটি মানুষের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে। এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে ‘পেশেন্ট জিরো’ এর অবস্থান মেলেন্দু থেকেই। মেলেন্দু গিনির গুকেদু বনাঞ্চলের একটি গ্রাম। ২০১৪ সালে এখানে যখন মহামারী আঘাত হানে, সেসময়ে এই অঞ্চলে খনি থেকে সোনা আহরণ ও কাঠের জন্য চরমভাবে বন উজাড় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। এর ফলে বনের গভীরে থাকা প্রাণীদের আবাস সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রাণীগুলো ছিল এই ভাইরাসের প্রাকৃতিক বাহক। কিন্তু নির্বিচার বনভূমি উজাড়ের ফলে যখনই তারা মানুষের সংস্পর্শে আসতে শুরু করে, ঠিক সেই মুহূর্তেই মানুষের ভেতরে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে।
২০১৪ সালে এখানে যখন মহামারী আঘাত হানে, সেসময়ে এই অঞ্চলে খনি থেকে সোনা আহরণ ও কাঠের জন্য চরমভাবে বন উজাড় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। এর ফলে বনের গভীরে থাকা প্রাণীদের আবাস সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রাণীগুলো ছিল এই ভাইরাসের প্রাকৃতিক বাহক। কিন্তু নির্বিচার বনভূমি উজাড়ের ফলে যখনই তারা মানুষের সংস্পর্শে আসতে শুরু করে, ঠিক সেই মুহূর্তেই মানুষের ভেতরে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে।
সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ফরেস্ট্রি রিসার্চ (সিআইএফওআর) এর সিনিয়র গবেষণা সহযোগী, ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন ই ফা মনে করেন, মানুষ পরিবেশের যে পরিবর্তন ঘটিয়েছে, নতুন রোগগুলি সৃষ্টির ক্ষেত্রে তা ভীষণভাবে সম্পর্কযুক্ত। এমনিতে মানুষের সাথে প্রাণী, ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়ার একটি ভারসাম্য রয়েছে। কিন্তু যখনই কোনো বন বিনাশ করা হয়, তখনই সেই ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটে যায়।
নভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে ‘ল্যাবরেটরিতে প্রস্তুতকৃত ভাইরাস’ হিসেবে যখন বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালানো হচ্ছে, সে সময়ে আমরা আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংক্রামক রোগের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি মেলতে পারি। যেমন প্লেগ। এই পর্যন্ত পৃথিবীতে কমপক্ষে প্রায় আড়াইকোটি মানুষ প্লেগে প্রাণ দিয়েছেন। এর উৎপত্তির কারণ হিসেবেও এশিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে পাকাপাকিভাবে কৃষি জমি ও মানুষের বসবাসের জন্য অবাধ বনভূমি উজাড়কে দায়ী করা হয়। ভারতের কর্নটাকের কৃষাণু বনাঞ্চল থেকে এভাবে বানরের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল কৃষাণুর ফরেস্ট ডিজিজ বা কেএফডি। বন বিনাশ ও দক্ষিণ কারানার বানরদের আবাস ভূমি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে মানুষের জন্য মারাত্মক এই ভাইরাসটি লোকালয়ে চলে আসে। বিগত ৫০ বছরে এমন ৩৩৫টি নতুন রোগ যা মানুষ ও গবাদি পশুর মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে, কেট ই জোনস ও তাঁর দলের গবেষণা বলছে এর প্রায় ৬০% রোগ মানুষ ওয়াইল্ড লাইফ থেকে অর্জন করে। এইচআইভি, ডেঙ্গু, ইয়োলো ফিভার, এসআইভি, নিপাহ ভাইরাস, সার্স, রেবিস, রকি মাউন্টেন স্পটেড ফিভার এই সবগুলো ভাইরাসই মানুষ কর্তৃক পরিবেশ বিনাশের ফলাফল।
বিগত ৫০ বছরে এমন ৩৩৫টি নতুন রোগ যা মানুষ ও গবাদি পশুর মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে, কেট ই জোনস ও তাঁর দলের গবেষণা বলছে এর প্রায় ৬০% রোগ মানুষ ওয়াইল্ড লাইফ থেকে অর্জন করে। এইচআইভি, ডেঙ্গু, ইয়োলো ফিভার, এসআইভি, নিপাহ ভাইরাস, সার্স, রেবিস, রকি মাউন্টেন স্পটেড ফিভার এই সবগুলো ভাইরাসই মানুষ কর্তৃক পরিবেশ বিনাশের ফলাফল।
তাহলে আমরা কি নভেল করোনা ভাইরাসের সাথেও পরিবেশ ও প্রতিবেশ পরিবর্তনের যোগসূত্রকে মেলাতে পারি? যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত তার লোভ ও বাণিজ্যের জন্য উন্নয়নের নামে নির্বিচারে অন্য প্রজাতির আবাসস্থল ধ্বংস করেছে, গাছ ও প্রাণিকে দূষিত করেছে ‘বিজ্ঞান’ ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করে।
২.
এখনও পর্যন্ত নভেল করোনা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিস্কৃত হয় নি। শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের একমাত্র হাতিয়ার। কিন্তু মহামারী ছড়িয়ে পড়ার মাত্র চতুর্থ মাসেই এ ভাইরাসের সংক্রমণে ইতোমধ্যে ১,৬৮,৭৫৮ জন মৃত্যবরণ করেছেন। এই লেখা প্রকাশিত হতে হতে এই সংখ্যা হয়তো আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মানুষরা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে প্রবল মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে আছেন। এই যদি পরিস্থিতি হয়, তাহলে আমাদেরকে প্রশ্ন তুলতে হবে, হঠাৎ করেই পৃথিবীব্যাপী মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতো দুর্বল হয়ে পড়লো কেন?
ভারতীয় পরিবেশবাদী ড. বন্দনা শিবা মনে করেন, এই পৃথিবীর স্বাস্থ্য এবং মানুষের স্বাস্থ্য আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের নাগরিক হিসেবে বন্দনা শিবার এই উক্তির মর্মার্থ আমাদের অবোধগম্য নয়। উন্নয়নের বায়ু দূষণে আমাদের ফুসফুসগুলো ঢাকার রাস্তার মতো মলিন হয়ে আছে। শ্বাস প্রশ্বাসের অসুখ নিয়ে শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই বাংলাদেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ। এখানে এলে পৃথিবীরও হয়তো নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। পৃথিবী যতটা মুমূর্ষু হয়ে ওঠে, আমরাও ঠিক ততোটাই। আর আমাদের এও জানা দরকার যে, পৃথিবীব্যাপী মুমূর্ষু মানুষ তৈরির একটি বড় পদ্ধতি হচ্ছে আধুনিক কৃষি। প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্টকারী, মনোকালচারের অগ্রদূত কর্পোরেট কৃষি। হারিয়ে ফেলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা যার গভীরে প্রবেশ করতে পারি। কারণ এ কথা কে না জানে যে, আমাদের খাবার আমাদের স্বাস্থ্যগঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে।
পৃথিবী যতটা মুমূর্ষু হয়ে ওঠে, আমরাও ঠিক ততোটাই। আর আমাদের এও জানা দরকার যে, পৃথিবীব্যাপী মুমূর্ষু মানুষ তৈরির একটি বড় পদ্ধতি হচ্ছে আধুনিক কৃষি। প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্টকারী, মনোকালচারের অগ্রদূত কর্পোরেট কৃষি।
প্রায় বছর চারেক আগে নিজেদের পরিবারের জন্য নিরাপদ খাদ্যের পথ খুঁজতে আমি আর আমার সহোদর ভাই কৃষিভূমিতে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে বাস করার আলুলায়িত স্বপ্ন আর রোমান্টিসিজমে ভরা মন নিয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে যে বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছিলাম, তার অভিজ্ঞতা ছিল নিদারুণ। ধীরে ধীরে বুঝতে শিখেছিলাম, কৃষি বিপ্লব কত মিথ্যে আর শঠতায় ভরা। এই বিপ্লব কিছুতেই কৃষকের নয়, বরং কৃষি কর্পোরেট বেনিয়াদের পকেট ভর্তির বিপ্লব। চলতে চলতে চারপাশের সবুজ ক্ষেতগুলো হয়তো মুহূর্তে সেলফির মতো ভাবালুতা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মোড়া ঐ ক্ষেতগুলো হচ্ছে মানুষের অপ্রাকৃতিক কর্মকাণ্ডের নিকৃষ্ট উদাহরণ। লক্ষ লক্ষ মেট্রিক টন রাসায়নিক সার, বিষ, হরমোন, হার্বিসাইড আর প্যাটেন্ট করা বীজের এক চূড়ান্ত শোষণধর্মী কাঠামো। যাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় লালন করা হয়।
এই কৃষি সৃষ্টি হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উদ্বৃত্ত রাসায়নিকের নতুন বাজার সৃষ্টি করতে। আমরা দেখেছি, আমাদের খাবারগুলো কীভাবে যুদ্ধে ব্যবহার করা বিষে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেখেছি আমদের কৃষকরা পকেটের টাকা খরচ করে যে 2,4-D হার্বিসাইড কিনে নিয়ে তাঁদের মাঠগুলোতে স্প্রে করেন, তা তৈরি হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জামার্নীতে খাদ্য সংকট সৃষ্টি করতে। দেখেছি গ্লাইফোসেটের মতো ভয়ংকর বিষে ভরে আছে আমাদের পাহাড়, সমতল, কৃষি উপকরণের দোকান, মাঠ, কৃষকের হাত আর আমাদের পবিত্র খাবার।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান দ্যা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) আমাদেরকে সতর্ক করেছে যে, বায়ার ও মনসান্টোর প্যাটেন্ট করা এই বিষে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান আছে। যে রোগটিতে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি মানুষ মারা যায়। টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসও কৃষি ও প্রকৃতি দূষণের সাথে সম্পর্কিত। প্রায় ১৭ লক্ষ লোক প্রতি বছর ডায়াবেটিসে মৃত্যুবরণ করে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়াতে ডায়াবেটিস এর প্রকোপ সবেচেয়ে বেশি। আবার এটাও দেখা গেছে যে, মাঠে ব্যবহার করা কৃষি রাসায়নিকের ঘনত্ব দক্ষিণ এশিয়াতেই সর্বাধিক। ইউরোপে যদি এর ঘনত্ব হয় ৭২ একক, তাহলে তামিল নাড়ুতে এর ঘনত্ব ১২০ একক।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান দ্যা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) আমাদেরকে সতর্ক করেছে যে, বায়ার ও মনসান্টোর প্যাটেন্ট করা এই বিষে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান আছে। যে রোগটিতে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি মানুষ মারা যায়। টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসও কৃষি ও প্রকৃতি দূষণের সাথে সম্পর্কিত। প্রায় ১৭ লক্ষ লোক প্রতি বছর ডায়াবেটিসে মৃত্যুবরণ করে।
আর বাংলাদেশের বিষয়টি আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করা যাক। প্রত্যেকটি বিষের গায়ে এটি ব্যবহারের পর কতদিনের মধ্যে ফসল তোলা যাবে না সেটি প্রিন্ট করা থাকে। এটি ১ সপ্তাহ থেকে ১৮ বা ২০ দিন পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু বাণিজ্যিক কৃষিক্ষেত্রের জন্য এই নির্দেশনা অবাস্তব। কারণ একজন কৃষক, যিনি ভেন্ডি, টমেটো বা ধুন্দুল চাষ করেছেন, তাঁকে প্রতিদিনই ফসল তুলে বাজারজাত করতে হবে। ফলে আমরা দেখেছি যে, সকালে বিষ স্প্রে করে পরিণত ফসলগুলোকে বিকেলে সংগ্রহ করা হয় এবং পরদিন সকালে সেগুলোকে বাজারজাত করা হয়।
ডায়াবেটিস তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদেরকে অন্ধত্ব, কিডনির রোগ, হার্ট এট্যার্ক, স্ট্রোকের মতো নানা ধরনের রোগের দিকে পরিচালিত করেছে। আর কৃষিতে ব্যবহার করা পেস্টিসাইড আমাদেরকে দিয়েছে আলঝেইমার, এ্যাজমা, জন্মক্রুটি, শরীর জ্বালাপোড়া, পারকিনসনসহ রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ বিষয়ক নানান রোগবালাই। এই সকল রোগের উপসর্গ নিয়ে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় পৃথিবীর গণস্বাস্থ্য পরিস্থিতি বেশ নাজুক। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আমাদেরকে সেই বার্তাই জানাচ্ছে।
৩.
প্রকৃতিতে সকল ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, উদ্ভিদ, প্রাণী যেমন একটি বাস্তুতন্ত্র মেনে চলে। বৃহৎ পুঁজির বড় বড় কর্পোরেশনগুলোও তেমনিভাবে একটি বাস্তুতন্ত্র মেনে চলে। তাই বন বিনাশ, মনোকালচার, বীজ বিকৃতি, প্রাণ ও প্রকৃতি দূষণের মুনাফা যেমন তাদের ঘরে গেছে তেমনি এ থেকে সৃষ্ট রোগ বালাই এর নিদান অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ মুনাফার রাস্তাও তাদের ঘরের দিকেই গেছে। ফুড এন্ড হেলথ মেনিফেস্টো ২০১৯ এর একটি স্টাডি, মানুষের যে রোগগুলো খাদ্যের সাথে সম্পর্কিত তার বিশ্বব্যাপী খরচ সম্পর্কে আমাদেরকে জানাচ্ছে। ফুসফুসের ক্রনিক জটিলতা (সিওপিডি) রোগে ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীবাসীর খরচ বছর প্রতি ৪.৮ ট্রিলিয়নে পৌঁছাবে। ডায়াবেটিস এর খরচও এই সালের মধ্যে প্রতি বছর ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছাবে। তবে ক্যানসারের চিকিৎসার খরচ ইতোমধ্যেই প্রত্যেক বছর ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অটিজমের জন্য ১৭১ বিলিয়ন আর শুধু মার্কিন দেশেই জন্মত্রুটির জন্য ২২.৯ বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে ২০১৩ সাল থেকেই।
তাই বন বিনাশ, মনোকালচার, বীজ বিকৃতি, প্রাণ ও প্রকৃতি দূষণের মুনাফা যেমন তাদের ঘরে গেছে তেমনি এ থেকে সৃষ্ট রোগ বালাই এর নিদান অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ মুনাফার রাস্তাও তাদের ঘরের দিকেই গেছে।
মুনাফার এই বাজারটি কর্পোরেট কৃষির বাজারের চেয়ে বহু বহু গুণ বেশি। তবে কর্পোরেট কৃষিই এই পথটি সৃষ্টি করেছে। আরো আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, যারাই এগ্রোক্যামিকালের বাণিজ্যের সাথে যুক্ত ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবসাটাও তাদেরই। অর্থাৎ ‘সর্প হইয়া দংশন করো, ওঝা হইয়া ঝাড়ো’-ই পুঁজিকে টিকিয়ে রাখার বাস্ততন্ত্র। নিচে তার কিছু নমুনা দেখা যাক।
১৯৭৬ সালে সুদান ও কঙ্গোতে ইবোলা প্রথম আবিষ্কৃত হলেও সেসময়ে এর ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। কারণ ২০১৪ সালের আগে এর কোনো বাণিজ্যিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয় নি। কিন্তু কোভিড-১৯ বা নভেল করোনা ভাইরাস চার মাসের মধ্যেই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর জন্য এক বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এই বৈশ্বিক মহামারীর ফলে যেখানে পৃথিবীর সকল ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেখানে একমাত্র ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যই ফুলে ফেঁপে উঠেছে। মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক জেরল্ড পোজনার, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ড্রাস্টির ইতিহাস নিয়ে ‘ফার্মা: গ্রিড, লাইজ এন্ড দ্য পয়জনিং অব আমেরিকা’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। তিনি মনে করেন, কোভিড-১৯ কে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো তাদের বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘এই সুযোগ জীবনে একবারই আসে’ হিসেবে বিবেচনা করছে। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ১ ডজনের বেশি কোম্পানি এই দৌড় প্রতিযোগিতায় ছুটছে। কারণ এই প্রতিযোগিতায় যে জয়ী হবে, তার পুরষ্কার কল্পনাতীত। পোজনার মনে করেন, ‘বিক্রি ও লাভের জায়গা থেকে কোভিড-১৯ একটি ব্লক বাস্টার। মহামারী পরিস্থিতি যত খারাপের দিকে যাবে, এই কোম্পানিগুলোর লাভ ততো উর্দ্ধমুখী হবে।’
‘বিক্রি ও লাভের জায়গা থেকে কোভিড-১৯ একটি ব্লক বাস্টার। মহামারী পরিস্থিতি যত খারাপের দিকে যাবে, এই কোম্পানিগুলোর লাভ ততো উর্দ্ধমুখী হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এককভাবে সর্বোচ্চ মুনাফা করে থাকে। কারণ পৃথিবীর যেকোন দেশের তুলনায় মার্কিন দেশে এই কোম্পানিগুলো নিজেদের প্রোডাক্টের মূল্য নিজেরাই নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করার মতো স্বাধীনতা ভোগ করে। কিন্তু একচোটিয়া মুনাফার যে লোভ সারা পৃথিবীতে সবকিছু ধ্বংস করে সামনের দিকে এগিয়েছে, সেই লোভ যেন কিছুতেই কমবার নয়। করোনাকালীন সময়ে, যে মুহূর্তে আমরা আমাদের বিগত জীবনের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ করছি এবং আগামীতে একটি সুস্থায়ী ও সমৃদ্ধ পৃথিবীর কথা কল্পনা করছি। ঠিক সে মুহূর্তে এই কর্পোরেশনগুলো তাদের লাভকে বাড়িয়ে তুলতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করছে। ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখে মার্কিন আইন প্রণেতাদের মধ্যে জান স্কাওকস্কি, ডি-ইল এবং অন্যান্য হাউস সদস্যরা প্রাথমিক ভাবে চেষ্টা করেছিলেন যে, মার্কিন জনগণের টাকায় করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে যে গবেষণা হচ্ছে, সেই গবেষণার ফলাফল যেন মার্কিন জনগণরা ভোগ করতে পারেন। এই গবেষণা থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ঠিক কতটা ফসল তাদের নিজেদের ঘরে তুলতে পারবে, তার যেন একটা সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। করদাতারা যেন সুলভে ও সহজলভ্যভাবে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে অনেক রিপাবলিকান এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তাঁরা মনে করেন, শিল্পের লাভের ক্ষেত্রে কোন সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করলে তা গবেষণা ও উদ্ভাবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবসেবা সেক্রেটারি এ্যালেক্স আযহার তাই জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন মার্কিন জনগণের জন্য সাশ্রয়ী হবে না, কারণ ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে এই ভ্যাকসিনের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
মজার বিষয় হচ্ছে, এই কর্পোরেশনগুলো এতোটাই শক্তি অর্জন করেছে যে, আমেরিকাতে বিভিন্ন অসুখে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরির গবেষণার খরচ ব্যয় করা হয় মার্কিন করদাতাদের পকেট থেকে, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ এর মাধ্যমে। কিন্তু পেটেন্ট হয় কর্পোরেশনগুলোর নামে। উদাহরণ হিসেবে দুটি ওষুধের কথা বলা যায়। ওষুধ দুটি হচ্ছে AZT এবং Kymriah. AZT ব্যবহৃত হয় এইচআইভি’র জন্য এবং Kymriah হচ্ছে ক্যান্সারের ওষুধ হিসেবে। দুটি ওষুধই আমেরিকার পাবলিক ফান্ডে করা গবেষণার ফল হলেও Novartis এগুলোকে ৪,৭৫০০০ ডলারে বিক্রি করে থাকে।
এই কর্পোরেশনগুলো এতোটাই শক্তি অর্জন করেছে যে, আমেরিকাতে বিভিন্ন অসুখে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরির গবেষণার খরচ ব্যয় করা হয় মার্কিন করদাতাদের পকেট থেকে, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ এর মাধ্যমে। কিন্তু পেটেন্ট হয় কর্পোরেশনগুলোর নামে।
৪.
বাংলাদেশে অঘোষিত লক ডাউনের আজ ২৬ তম দিন। ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া বারণ। চীন তাদের নাগরিকদের চলাচল সীমাবদ্ধ ও স্বাধীন চলাচলের উপর আরো গভীরভাবে নজরদারি করতে ‘হেলথ কোড’ নামে মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। এই এ্যাপ ছাড়া সেখানে ঘর থেকে বাইরে বের হবার অনুমতিই মিলছে না। এই এ্যাপ জানতে ইচ্ছুক, আপনি কার কার সাথে দেখা করছেন, কথা বলছেন। করোনা মোকাবেলার নামে অন্যান্য দেশগুলোও একই ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। রাষ্ট্রগুলো তাদের নাগরিকদের উপর আরো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার এক সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেছে। অপরদিকে আমাদের কাছেও সুযোগ এসেছে। আমাদের জীবন ও তার সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় নিয়ে আরো গভীর পর্যবেক্ষণের। রাষ্ট্রের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার। যা আমাদের বেঁচে থাকার পথগুলোকে রুদ্ধ করে দেয়, সেগুলোর আমূল পরিবর্তনের।
রাষ্ট্রগুলো তাদের নাগরিকদের উপর আরো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার এক সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেছে। অপরদিকে আমাদের কাছেও সুযোগ এসেছে। আমাদের জীবন ও তার সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় নিয়ে আরো গভীর পর্যবেক্ষণের। রাষ্ট্রের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার। যা আমাদের বেঁচে থাকার পথগুলোকে রুদ্ধ করে দেয়, সেগুলোর আমূল পরিবর্তনের।
আমাদের সামনে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, উন্নয়নের গল্পগুলো কত মিথ্যে। যে উন্নয়ন পরিবেশ ও প্রতিবেশকে অস্বীকার করে সংগঠিত হয়, আদতে তা কোন উন্নয়নই নয়। চোখে দেখা যায় না এমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটা ভাইরাসের আঘাতেই তা ভেঙে গুড়িয়ে যেতে পারে। বন বিনাশ, অন্য প্রাণীর আবাস স্থল ধ্বংস করা, পৃথিবীর হাজার হাজার প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়ে এককভাবে আমাদের বাঁচার কোন সুযোগ নেই।
আমরা আগের চেয়েও অনেক বেশি উপলদ্ধি করেছি যে, স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। গণস্বাস্থ্যকে রক্ষা করা প্রত্যেকটি রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। স্বাস্থ্যব্যবস্থার ব্যাপক বাণিজ্যিকরণ টিকে থাকার প্রশ্নে আমাদের কোনো কাজেই আসবে না। বরং সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকেই ঢেলে সাজাতে হবে। যেখানে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম আছে, সেটাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। যেখানে নেই সেখানে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
এখন আমাদের এটাও উপলদ্ধি করার সময় যে, যুদ্ধের রাসায়নিক এর উপর ভিত্তি করে যে আধুনিক কৃষি সৃষ্টি হয়েছে, তা গণস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। এখান থেকে আসা ‘ফেক ফুড’ আমাদের ইমিউন সিস্টেমগুলো ধ্বংস করে আমাদেরকে আরো মুমূর্ষু, আরো দরিদ্র করে তুলেছে। আমাদেরকে এখনই ফিরে যেতে হবে সেই কৃষিতে, যা বায়োডাইভারসিটি রক্ষা করে এবং অন্য কোনো প্রাণী, উদ্ভিদ বা মাটির অনুজীবনকে হত্যা করে না। প্রাকৃতিক কৃষির মূল কথাই হচ্ছে যত্ন ও কৃতজ্ঞতা। এটা শুধু মাটি থেকে গ্রহণ করে না, মাটিকে ফেরতও দেয়। যা পৃথিবী ও আমাদের দেহকে সুস্থ করে তোলে। এই খাদ্যব্যবস্থা গণস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
কোভিড-১৯ ভাইরাস আমাদের চোখের সামনে মানুষের বৈষম্যের দিকটিও স্পষ্ট করে তুলেছে। বাধ্যতামূলক ঘরে থাকার নির্দেশনার পর বোঝা গেছে অনেক মানুষের ঘরই নেই। অনেকের ঘর থাকলেও সেখানে কোনো খাবার নেই। অথচ সরকারি খাদ্যগুদাম বা বাজারে কোনো খাদ্য সংকট নেই। আর ওদিকে আমাদের গ্রামগুলোতে, কৃষকের ক্ষেতে ক্ষেতে টনকে টন খাবার নষ্ট হচ্ছে।
বাধ্যতামূলক ঘরে থাকার নির্দেশনার পর বোঝা গেছে অনেক মানুষের ঘরই নেই। অনেকের ঘর থাকলেও সেখানে কোনো খাবার নেই। অথচ সরকারি খাদ্যগুদাম বা বাজারে কোনো খাদ্য সংকট নেই। আর ওদিকে আমাদের গ্রামগুলোতে, কৃষকের ক্ষেতে ক্ষেতে টনকে টন খাবার নষ্ট হচ্ছে।
বিশ্বায়িত কৃষি ব্যবস্থা না পারছে মানুষকে রক্ষা করতে, না পারছে কৃষিকে। অথচ সুস্থায়ী কৃষির সাথে গ্রাম ভিত্তিক অর্থনীতি জোরদার করা হলে, আমরা এতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হতাম না। একচেটিয়া পণ্য বা ফসল উৎপাদন করা আর বিমানযোগে সেগুলো বাইরে পাঠানো শ্রমিক বা কৃষকের জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারেনা। কারণ তা তাঁদেরকে রক্ষা করবে না। তাই বিশ্বায়নের চেয়ে স্থানীয়করণ অনেক জরুরি। কৃষকের জন্য স্থানীয় পর্যায়েই বাজার সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের হারিয়ে ফেলা হাটগুলোর মতো। যেখানে কৃষক তাঁর নিজের ফসলের মূল্য নিজেই নির্ধারণ করেন। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, যেভাবেই হোক কৃষক যেন টিকে থাকে। কৃষক হারিয়ে গেলে জয়ী হবে বেয়ার, সিনজেনটা, মনসান্টো। কৃষকহীন শিল্পায়িত কৃষিই যাদের বাসনা। যে কৃষি জীববৈচিত্রকে ধ্বংস করে, বীজ ও উদ্ভিদের বিকৃতি ঘটায় আর আমাদের জন্য প্রস্তুত করে নকল খাবার। যারা আমাদের জীবন ও স্বাস্থ্যের বিনিময়ে মুনাফা করে। তাদের লাগামগুলোকে টেনে ধরার প্রচেষ্টাই আমাদের করোনাকালীন জরুরি শিক্ষা।
[লেখার শিরোনামটি কফিল আহমেদ-এর একটি গান থেকে ধার করা]
মেহেদী হাসান সুমন: পরিবেশ ও কৃষি কর্মী।
ইমেইল: sumon@mcc.com.bd
1.2K
very pleasant writing. We lost our golden harvest with healthy life. We want to return it for our health, prosperity; but how can we get it?