গত ১০ মে হামীম গ্রুপের গার্মেন্টস কারখানা ক্রিয়েটিভ ওয়ানের শ্রমিকেরা ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবি নিয়ে জমায়েত হলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। গুরুতর আহত হন কাঞ্চন মিয়া (৫০)। চিকিৎসা, চিকিৎসা ব্যয়, ক্ষতিপূরণ নিয়ে যে অবহেলা, দায়িত্বহীনতা দেখা দেয় তার কারণে কাঞ্চন মিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এ বিষয়ে গত ৫ জুন ২০২১ সাংবাদিক সম্মেলনে কাঞ্চন মিয়া সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। মনে রাখা দরকার যে, বাংলাদেশে কারখানা, নির্মাণসহ নানা ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাবে শ্রমিকদের নিহত ও জখম হবার ঘটনা নিয়মিতভাবে ঘটলেও সরকার বা মালিকেরা কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না। কাঞ্চন মিয়ার ক্ষেত্রে আন্দোলনের চাপে হামীম গ্রুপ কিছু দায়িত্ব নিলেও তা ছিল দায়সারা, প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কাঞ্চন মিয়ার বিস্তারিত বক্তব্য এই পরিস্থিতি বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে তা এখানে প্রকাশ করা হলো।
পুলিশের গুলিতে পঙ্গু হয়ে যাওয়া ঈদের ছুটির দাবিতে আন্দোলন করা হামীম গ্রুপের ক্রিয়েটিভ ওয়ান ফ্যাক্টরির শ্রমিক কাঞ্চন মিয়ার সংবাদ সম্মেলন
ন্যায়বিচার চাই! দোষীদের শাস্তি চাই!
শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির জন্য নায্য, সম্মানজনক ও দৃষ্টান্তমূলক ক্ষতিপূরণ চাই!
হাসপাতালে চিকিৎসা বাবদ খরচের পুরোটা সরকার ও মালিকপক্ষকে বহন করতে হবে!
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আপনারা আমার কথা ও মনের ব্যাথাগুলো শোনার জন্য যারা এই সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন তাদের প্রতি শুরুতেই আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি হামীম গ্রুপের গার্মেন্টস কারখানা ক্রিয়েটিভ ওয়ানের শ্রমিক কাঞ্চন মিয়া (৫০)। আপনারা জানেন, গত ১০ মে, ২০২১ তারিখে ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবীতে আন্দোলন করতে গিয়ে আমি আমার অপরাপর শ্রমিকভাইদের মতো পুলিশের গুলিতে আহত হই। আমার আঘাত অত্যন্ত গুরুতর ছিল বিধায় গত ১০ মে তারিখে আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। গার্মেন্টস মালিকের কাছে ঈদের বর্ধিত ছুটির দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামলে (যেই বর্ধিত ছুটি আমরা গার্মেন্টস শ্রমিকেরা সচরাচর পেয়ে থাকি) পুলিশ ওইদিন বিনা উস্কানিতে বিনা কারণে আমাদের উপর ছররা গুলি চালায়। আমি প্রথম দফা গুলি খেয়ে মাটিতে পড়ে যাই। তখন আমি শত অনুনয় বিনয় করলেও, আমার বাচ্চাদের দোহাই দিয়ে বাঁচার আকুতি জানালেও, আমার কাছ থেকে আমার তলপেট বরাবর লক্ষ্য করে আবারো আমার উপর ছররা গুলি চালানো হয়। আমার তলপেটে শতাধিক ছররা বুলেট বিদ্ধ হয়। খুব কাছ থেকে গুলি করার কারণেই হয়তো কিছু ছররা গুলি আমার তলপেট ভেদ করে আমার অন্ত্রে গিয়ে পৌঁছায়। সেদিন আমার উপর এই নির্মম নিষ্ঠুরতা চালিয়েই তারা ক্ষান্ত হয় নাই। এরপর আমাকে ওই গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই কারখানার একটি টয়লেটে নিয়ে আটকে রাখা হয়। আমি প্রচন্ড কান্নাকাটি করি, শতবার অনুনয় বিনয় করে, আমার বাচ্চাদের দোহাই দিয়ে বলি যে আমাকে যেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আমার কথা শোনা হয় নাই। আমাকে তখন থেকে বলা হয়েছিল আমাকে ওই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তৎক্ষণাৎ শ্রমিকদের সামনে দিয়ে বের করলে নাকি ‘সমস্যা’ হবে। আমি ওভাবেই একটা কক্ষে আটক হয়ে পড়ে থাকি দুই ঘন্টার অধিক।
ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর, গত ১২ মে তারিখে আমার অপারেশনের পর আইসিইউতে ৬ দিন আমাকে জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে হয়েছে। অপারেশনের সময় যখন ডাক্তার এসে আমার স্বজনদের বলে যে আইসিইউ ছাড়া আমাকে বাঁচানো যাবে না তখন ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ আমার জন্য আইসিইউ জোগাড়ের ব্যাপারে কোন কিছুই করেনি। পরে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের বন্ধুদের তদবিরের কল্যাণে আমি শেষ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে ঠাঁই পাই। এর পর আমি আইসিইউ থেকে ছাড়া পেলেও আজ পর্যন্ত আমাকে হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। এখনো আমি অত্যন্ত অসুস্থ এবং চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছি। আমার তলপেটের ভেতর ছররা গুলি ঢুকে পড়ায় আমার অন্ত্রের একটা বড় অংশ অপারেশন করে কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। আমার পেট ফুটো করে আলাদা নল দিয়ে মলত্যাগ করার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। স্বাভাবিক উপায়ে মলত্যাগ করার আর কোন অবস্থা এই মুহূর্তে নাই। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার তিনমাস পরে আমাকে আবার এসে এই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হতে হবে পরবর্তী অপারেশনের জন্য। গত প্রায় এক মাস হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আমার কথা বলার মতো কোন পরিস্থিতি ছিল না। এখনো যে খুব কথা বলার মতো অবস্থায় আছি নয়। কিন্তু আমি নিতান্ত নিরুপায় হয়ে আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার প্রাক্কালে আপনাদের সামনে এসেছি। কারণ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে আমাকে গ্রামে ফিরে যেতে হবে। ঢাকা শহরের আমার থাকার কোন জায়গা নেই।
গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের কাছে গণতান্ত্রিক উপায়ে দাবী তুলে বিনিময়ে পুলিশের গুলি খেলাম, পঙ্গু হলাম চিরতরে। আমার উপর যে বর্বর নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়েছে এটি আমাকে হত্যা করার চেষ্টা বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। গণতান্ত্রিকভাবে দাবী তুলে বিক্ষোভ করার জন্য যদি গুলি খেতে হয় তাহলে কিসের স্বাধীন হলাম আমরা? এই ঘটনার পুরো দায়ভার হামীম গ্রুপের ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ এবং সরকারকে নিতে হবে। আমি আমার সাথে করা এই নির্মম নিষ্ঠুর নির্যাতন এবং অপরাপর শ্রমিক ভাইদের উপর গুলি চালানোর ঘটনার নায্য ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই! দোষীদের শাস্তি চাই! এইটা আমার প্রথম দাবী। যে চূড়ান্ত অসম্মানের জ্বালায় আমি জ্বলছি আমি সেটারও বিচার চাই।
আমি শ্রমিক! আমার আত্মসম্মান আছে। আমি এবং আমার মতো শ্রমিকেরাই এদেশের অর্থনীতির চালক। আমি আমার সম্মান ফেরত চাই। আমাকে বিনা কারণে গুলি করা হল, পঙ্গু বানানো হল এরপর আমি হাসপাতালে থাকাকালে ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ এবং সরকার আমার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার নামে প্রতি পদে পদে আমাকে অসম্মানিত করে গেল! আমার ক্ষতিপূরণ দেয়া তো দূরের কথা আমার চিকিৎসার খরচটা পর্যন্ত সরকার আর ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ মিলে পুরোটা বহন করেনি! এখন পর্যন্ত ১০ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত আমার চিকিৎসা বাবদ সকল প্রকার খরচ মিলিয়ে মোট খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩০০ টাকা। যার বিস্তারিত আমি এই লিখিত বক্তব্যের শেষে দিয়েছি। আর সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত আমার চিকিৎসা বাবদ দেয়া হয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার টাকা! যার মধ্যে শ্রমমন্ত্রী দিয়েছেন ৫০০০ আর বাকিটা কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের উদ্যোগে গার্মেন্টস শ্রমিকের জন্য গঠিত কেন্দ্রীয় ফান্ড থেকে দেয়া হয়েছে। এই ৫০ হাজার পেতেও আমার পরিবারকে নানারকম হয়রানি ও ঝক্কিঝামেলায় পড়তে হয়েছে। যার জন্য আমার ছেলেকে গিয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে দুই দফায় গিয়ে আবেদন করতে হয়েছে, এরপর তাদের ভুলের কারণে আমার শ্যালককে নতুন ফরম নিয়ে পূরণ করে যেতে হয়েছে গাজীপুরে তাদের অফিসে। অন্যদিকে ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত মাত্র ৫৫ হাজার টাকার ওষুধ, ইনজেকশন ও টেস্ট প্রভৃতির খরচ বহন করেছে। সেটার ক্ষেত্রেও শুরুতে কিছুদিন তারা হাসপাতালে লোক পাঠিয়ে টাকা দিলেও পরবর্তীতে নানারকম টালবাহানা শুরু করেছে। এখন তারা বলছে তাদের অফিসে গিয়ে বিল ভাউচার জমা দিয়ে টাকা নিয়ে আসতে। তারা নাকি এও বলেছে আমার পরিবারের সদস্যদের কাছে যে তারা বড়জোর এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত বহন করবে।
আমি প্রশ্ন করতে চাই আমি কি ভিক্ষুক? এই দেশ চলে আমার মতো শ্রমিকের শ্রমে, আমার বর্তমান ফ্যাক্টরি মালিকের মুনাফায় আমারও ১২ বছরের শ্রমের অবদান আছে! তাদের উচিত আমাকে আমার নায্য পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে যাওয়া। আমাকে, আমার পরিবারকে কেন সাহায্যের জন্য সরকার আর ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হবে? তাদের কারণে আমি আজ গুলি খেয়ে পঙ্গু হলাম। এই দায় তাদের। তারা কেন হাসপাতালে এসে কোনরকম আবেদন ছাড়াই আমাকে আমার ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে যাবে না? অথচ এখন পর্যন্ত আমার শুধু এই দফার চিকিৎসা বাবদই আরও অন্ততপক্ষে ৪৫৩০০ টাকা পাওনা রয়েছে। ক্ষতিপূরণ তো অনেক পরের কথা। তাদের কি ধারণা চিকিৎসার ব্যয় মানে কেবল ওষুধের ব্যয়? এই যে আজ প্রায় ১ মাস হল আমার পরিবারের ২ জন সদস্য সারাক্ষণ আমার সাথে হাসপাতালে থাকতে বাধ্য হচ্ছে তার খরচ ও আনুষঙ্গিক খরচ নাই? এসব খরচের তো কোন বিল ভাউচারও হয় না। তাহলে আমার এইসব খরচ কে দিবে? আমি এই লিখিত বক্তব্যের শেষে আমার গত ২৬ দিনের চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল প্রকার খরচের একটা নূন্যতম হিসেব দিয়েছি। প্রকৃত খরচ আরও বেশি হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে এর বেশি হিসেব দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। সরকার আর ফ্যাক্টরি মালিক কি চায়? আমি, আমার পরিবার বসে বসে চিকিৎসা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তাদের কাছে হিসেব দাখিলের কাজ করব?
অথচ বিদ্যমান আইনেই আহত হলে আড়াই লক্ষ টাকা এমনিতেই পাওয়ার কথা আমার চিকিৎসা বাবদ। তাছাড়া তিন মাস পরে আমার আবার অপারেশন করাতে হবে বলেছে ডাক্তাররা। ওই টাকাই বা কে দেবে? জবাব চাই! সরকার তো লক্ষ কোটি টাকার বাজেট বানাতে পারে। ফ্যাক্টরি মালিক তো কোটি কোটি টাকার মুনাফার হিসেব করতে পারে। তাহলে আমার মতো একটা গুরুতর আইসিইউ ঘুরে আসা রোগীর চিকিৎসা বাবদ কত খরচ হয় এই সামান্য হিসাবটুকু তারা আগাম কারতে পারে না কেন? কেন আমাকে চিকিৎসার টাকার জন্য তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়? কেন আমার চিকিৎসার পুরো ব্যয়ভার বহন করা হয় না? অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে একদফা গুলি খেয়ে পঙ্গু হয়ে তো অপূরণীয় ক্ষতি আমার হয়েছেই এখন এই চিকিৎসা করতে গিয়ে আরেকদফা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি আমি ও আমার পরিবার এবং আত্মীয় স্বজন। আমি এই অসম্মান মানি না। আমার চিকিৎসার সমুদয় ব্যয়ভার সরকার ও মালিককে বহন করতে হবে। আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত চিকিৎসা বাবদ প্রাপ্য সমুদয় অর্থ আগাম হিসেব করে প্রচলিত বাজার দরের সাথে সামঞ্জস্য করে আমাকে দিয়ে দিতে হবে আগাম এইটা আমার দ্বিতীয় দাবি।
এবারে আমার ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গে আসি। আমার ক্ষতি হয়েছে তিন প্রকার। প্রথমত শারীরিক ক্ষতি। চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছি। দ্বিতীয়ত মানসিক ক্ষতি। আজ যদি ফ্যক্টরি মালিক কিংবা সরকারের কোন মন্ত্রী পুলিশের ছররা গু লিতে বিদ্ধ হতেন তাহলে তাদের যে পরিমাণ মানসিক ক্ষতি হত আমার মানসিক ক্ষতি কেন তার থেকে কম হবে? সারাজীবন আমাকে এই ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে। তৃতীয়ত আমাকে এভাবে গুলি করে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটকে রেখে আমার প্রতি চূড়ান্ত যে অসম্মান করা হয়েছে সেই সম্মানহানি জনিত ক্ষতি। মাননীয় সরকার এবং মান্যবর ফ্যাক্টরি মালিক, আমিও একজন মাননীয় শ্রমিক! জ্বি! আমিও মাননীয়! কারণ আমিও মাননীয় জনগণের অংশ। আমাকে অসম্মান করার কোন এখতিয়ার আপনাদের নেই।
আমি তো আর চাকরি করতে পারবো না এই শরীরে। এই গুলি না খেলে আমার তো আরও নিদেনপক্ষে ১০ বছর চাকরি করার কথা। আর ইতিমধ্যেই চাকরী করেছি ১২ বছর। ফলে কেবল আমার আগামী ১০ বছরের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি এবং গত ১২ বছরের ১টা করে বেসিক ও আর্ন লিভ যোগ করলে এমনিতেই তো আমি ২২ লক্ষের অধিক টাকা পাওনা ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের কাছে। আর যদি এমন হত যে আমি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছি তাহলে একটা কথা ছিল। কিন্তু আমি তো কোন দুর্ঘটনায় আহত হইনি! আমাকে গুলি করা হয়েছে। এবং এটা কোন দুর্ঘটনা নয়! এটা একটা অপরাধ! ঘৃণ্য অপরাধ করা হয়েছে আমার সাথে। আমি কি বাকি জীবন অপরের মুখাপেক্ষী হয়ে জীবন কাটাব? কেন? আমার অপরাধ কি? অপরাধ তো আপনাদের লোকজন! অন্যায় করেছে আপনাদের লোকজন! ফলে দায়ভারও আপনাদের নিতে হবে।
তাই বলতে চাই আমার ক্ষতিপূরণ কোন ভিক্ষা নয়। আমি আপনাদের দয়া চাই না। আমাদের শ্রমেই তো আজ আপনারা সরকার চালান, ফ্যাক্টরি চালান। তাই আমাকে দয়া করতে আসবেন না। আমাকে আমার নায্য পাওনা বুঝিয়ে দিন সম্মানের সাথে! যে বিবিধ প্রকার অপূরণীয় ক্ষতি আমার করেছেন তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। প্রচলিত শ্রম আইন দিয়ে আমার ক্ষতিপূরণ হিসেব করা যাবে না। কারণ আমি কোন দুর্ঘটনায় আহত হইনি। ফলে আমার ক্ষতিপূরণ হিসেব করতে গেলে তাই আমার শারীরিক ক্ষতি, আমার মানসিক ক্ষতি, আমার সম্মানহানিজনিত ক্ষতি, এবং আমি যে কোন দুর্ঘটনায় আহত হইনি ঠান্ডা মাথায় গুলি চালানোতে আহত হয়েছি সেটা, আমার পাঁচ সন্তানের ভবিষ্যত, তাদের অন্তত আগামী ২০ বছরের ভরণপোষণ, আমার পরিবারের ভরণপোষণ, আমার পুনর্বাসন, এই সবকিছু বিবেচনায় নিলে আমার ক্ষতিপূরণ অন্তত ১ কোটি টাকা হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি এবং আমি সেটাই দাবী করি আমার ক্ষতিপূরণ হিসেবে। এইটা আমার তিন নম্বর দাবী।
আমি জানি আমাদের ফ্যাক্টরি মালিককে যদি কেউ বলে যে তাকে ১ কোটি কেন, শত কোটি টাকা দেয়া হবে বিনিময়ে তার অন্ত্রের একটা বড় অংশ কেটে ফেলা হবে, তার পায়খানার রাস্তা পেটের সামনে দিয়ে আলাদা নল করে দেয়া হবে আমার মতো তাহলে তিনি রাজী হবেন তাতে? কখনোই না। ঠিক তেমনি আমিও মনে করি যে বিবিধ প্রকার ক্ষতি আমার তারা করেছে তাতে ১ কোটি টাকা দিলেও এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। তবুও সার্বিক বিবেচনায় আমি এই ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবী জানাই। চলতি বাজার দরের যে উর্ধ্বগতি তাতে আগামী ২০ বছরের এই ১ কোটি টাকার মান তো আজকের মতো থাকবে না। ফলে আমি সকলককে বলতে চাই আমি কোন বেশি টাকা ক্ষতিপূরণ আসলে চাইছি না। কোন অদ্ভুত দাবীও করছি না। এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পাওয়া আমার ন্যায়বিচার পাওয়ার অংশ বলে আমি মনে করি। যেকোন সভ্য দেশে আমি নিশ্চয়ই আরও বেশি ক্ষতিপূরণ পেতাম। সরকার যদি নিজেকে শ্রমিকবান্ধব প্রমাণ করতে চায় তাহলে আমাকে এই নায্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে সেটা প্রমাণ করুক! দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক!
পরিশেষে আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই, কষ্ট করে আমার কথাগুলো শোনার জন্য। এবং আপনাদের অনুরোধ করি আমাদের মতো শ্রমিকদের, নিপীড়িতদের কথাগুলো তাদের মনের ক্ষোভগুলো আপনাদের প্রচার মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য।
মেহনতী মানুষদের সম্মান ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায়, মানুষ হিসেবে পরিচয় দেয়ার অধিকার ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায় শেষ করছি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।
৫ জুন ২০২১
ঈদের ছুটির দাবীতে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে পঙ্গু হওয়া হামীম গ্রুপের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির শ্রমিক কাঞ্চন মিয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা বাবদ খরচের বিবরণ (৪ঠা জুন, ২০২১ পর্যন্ত)
খাত |
বিবরণ | খরচের পরিমাণ (টাকা) |
যাতায়াত (আন্তঃজেলা) | কাঞ্চন মিয়ার ছেলের ১ বার কিশোরগঞ্জ এর গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা আসা এবং কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রীর ২ বার কিশোরগঞ্জ এর গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা আসা ও ১ বার ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ এর গ্রামের বাড়িতে যাওয়া বাবদ যাতায়াত ভাড়া নূন্যতম হিসাব (ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসতে হয়েছে+ করোনাকালীন বর্ধিত বাস ভাড়ার জন্য) | ৩২০০ |
কাঞ্চন মিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনে কাঞ্চন মিয়ার শ্যালকের (যিনি কিশোরগঞ্জে চাকরি করেন) ৩ বার ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ এর গ্রামের বাড়ি যাওয়া ও আসা, ১ বার কিশোরগঞ্জের গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা আসা, ঢাকা থেকে গাজীপুরে DIFE এ চিকিৎসার জন্য সাহায্যের জন্য আবেদন করতে আসা ও যাওয়া বাবদ যাতায়াত ভাড়া নূন্যতম হিসাব (ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসতে হয়েছে+করোনাকালীন বর্ধিত বাস ভাড়ার জন্য) | ৬১০০ | |
জরুরী কেনাকাটা | ৫টা বালিশ ক্রয় (কাঞ্চন মিয়ার জন্যই ৩টা বালিশ লাগে, তার হাত পায়ের নিচে দেয়ার জন্য) বাকি ২টা উনার স্ত্রী আর ছেলের জন্য কিনতে হয়েছে | ১৫০০ |
মাটিতে শোয়ার জন্য ২টা পাটি ক্রয় (উনার স্ত্রী আর ছেলের জন্য) | ৬০০ | |
কাঞ্চন মিয়ার জন্য একটা বিছানার চাদর ক্রয় | ৪৪০ | |
২টা গামছা ক্রয় | ১৫০ | |
খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় থালাবাসন | ৪০০ | |
বালতি ৩টা | ৩৮০ | |
কাঞ্চন মিয়ার ছেলেকে এক কাপড়ে ঢাকা আসতে হয়েছিল তখন পরবর্তীতে তার পরার জন্য প্রয়োজনীয় জামাকাপড় কিনতে হয় তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে সেই বাবদ | ১৫০০ | |
কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রীর জন্যও একই কারণে ২টা ওলনা কিনতে হয় সেই বাবদ | ৩২০ | |
গরমের কারণে একটি ছোট ফ্যান কেনার প্রয়োজন পড়ে। সেই বাবদ | ১০০০ | |
মাল্টিপ্লাগ ক্রয় বাবদ | ১২০ | |
১টি মোবাইল চার্জার ক্রয় বাবদ | ১৫০ | |
বাবার চিকিৎসার জন্য ঢাকা আসার পর কাঞ্চন মিয়ার ছেলের মোবাইল চুরি হয়ে গেলে সিম উত্তোলন বাবদ মোট খরচ | ৫২০ | |
কাঞ্চন মিয়ার জন্য দুইটি লুঙ্গি ক্রয় বাবদ | ৬০০ | |
২টি পানি খাওয়ার মগ ক্রয় বাবদ | ১২০ | |
ফটোকপি/ প্রিন্ট | বিভিন্ন সময় চিকিৎসার কাগজপত্রসহ কাঞ্চন মিয়ার জরুরী কাগজপত্র ফটোকপি করা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে (DIFE) চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন করার সময় ছবি প্রিন্ট করা, DIFE এর ভুলের কারণে নতুন করে আবেদন পত্র প্রিন্ট ও ফটোকপি করা | ২৮০ |
বিশেষ খরচ | কাঞ্চন মিয়া যখন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে ৫০ হাজার টাকার চেক পান চিকিৎসা বাবদ তখন সেই টাকা নিরাপদে রাখার স্বার্থে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হয়। সেই ব্যাংক একাউন্ট খোলা বাবদ | ১৫০০ |
কাঞ্চন মিয়ার ছেলের চুরি যাওয়া স্মার্ট ফোন বাবদ ক্ষতি (যখন কিনেছিল তখন বিদেশ থেকে কাঞ্চন মিয়ার শ্যালক টাকা পাঠিয়েছিল) | ১২০০০ | |
যাতায়াত (বিশেষ) | DIFE এ আবেদন করার জন্য মেডিকেল থেকে দৈনিক বাংলা ও মেডিকেল থেকে বিজয়নগর (DIFE) এর অফিসে যাওয়া বাবদ যাতায়াত, কাঞ্চন মিয়া আইসিইউতে থাকাকালে DIFE এ আবেদনের প্রয়োজনে মোবাইল হারানোর জিডি করতে পল্টন থানায় যাওয়া আসা, কাঞ্চন মিয়ার টেস্টের জন্য পিজি সহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত। | ৬২০ |
ওষুধ, ইনজেকশন ও টেস্ট | মূল মূল ওষুধ, অপারেশন সামগ্রী, ইনজেকশন, ও বিভিন্ন টেস্ট এর খরচ বাবদ | ৬০০০০ |
চিকিৎসা সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক খরচ | মূল ওষুধ, ইনজেকশন, টেস্ট ব্যাতীত মোট আনুষঙ্গিক খরচ (নিত্যদিনের চিকিৎসা সামগ্রী, চিকিৎসা সংক্রান্ত অপ্রত্যাশিত খরচ, ২৬ দিন ধরে ৩ জনের ৩ বেলা খাবার কিনে খাওয়া, মোবাইল বিল, নিত্যদিনের যাতায়াত ও অন্যান্য) *এই খরচের বিস্তারিত হিসেব তারিখ ধরে পরবর্তী ৪টি টেবিলে দেয়া হয়েছে | ৬৩৮০০ |
সর্বমোট ৪ জুন পর্যন্ত চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল প্রকার খরচের পরিমাণ | ১৫৫৩০০ | |
এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে চিকিৎসা বাবদ দেয়া হয়েছে | ৫৫০০০ | |
এখন পর্যন্ত কারখানা মালিক পক্ষ চিকিৎসা বাবদ দিয়েছে | ৫৫০০০ | |
সুতরাং সরকার ও মালিক পক্ষের কাছ থেকে এখনও স্রেফ এই দফার হাসপাতালের চিকিৎসা বাবদ কাঞ্চন মিয়ার পাওনা রয়েছে অন্তত | ৪৫৩০০ |
সরকার ও মালিক পক্ষ এই চিকিৎসা বাবদ বাকি টাকা না দিলে এই টাকা তবে কোথা থেকে এসেছে?
স্রেফ হাসপাতালের চিকিৎসা বাবদই এখন পর্যন্ত কাঞ্চন মিয়ার পাওনা এই ৪৫,৩০০ টাকার যোগান আপাতত এসেছে কাঞ্চন মিয়ার আত্মীয় স্বজন, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এর বন্ধুবান্ধব ও একটিভিস্টদের তরফ থেকে।
৪ঠা জুন, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত চিকিৎসা সংক্রান্ত যে আনুষঙ্গিক খরচ (৬৩৮০০ টাকা) হয়েছে তার তারিখওয়ারী খরচের বিস্তারিত বিবরণ
ক. অপারেশনের আগে (১০ মে – ১১ মে, ২০২১)
তারিখ | বিবরণ | ১০ মে থেকে ১১ মে পর্যন্ত মোট খরচ (টাকা) |
১০ মে রাত থেকে ১১ মে | কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রী ও তার ছেলের ১০ তারিখের রাতের খাবার ২০০ + কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রী, শ্যালক ও ছেলের ১১ তারিখের তিনবেলা খাবার (তিনজনের জন্য সকালে ২০০, দুপুরে ৪০০ ও রাতে ২০০ টাকা) কাঞ্চন মিয়ার পিছনে তখন খাবার বাবদ কোন খরচ ছিল না কারণ তার স্যালাইন চলছিল | ১০০০ |
টিস্যু ২ প্যাকেট | ১০০ | |
পারিবারিক মোবাইল বিল (কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রী, ছেলে ও শ্যালক) | ৩০০ | |
জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা শহরের ভেতরে যাতায়াত | ৪১০ | |
মাস্ক ১০ টা | ৬০ | |
স্যানিটাইজার | ৪০ | |
তেলাপোকার হাত থেকে কিনে আনা খাবার বাঁচাতে ৩টা টিফিন বক্স, ১টা চামচ ক্রয় বাবদ | ১২০ | |
১২ লিটার পানি মিনারেল ওয়াটার | ২৪০ | |
১১ মে তারিখে চা, হালকা নাস্তা বাবদ | ১০০ | |
ক. | ১০ মে রাত থেকে ১১ মে পর্যন্ত এই দেড় দিন অপারেশনের আগে কাঞ্চন মিয়া যখন ওয়ার্ডে ছিলেন তখন ওষুধ, ইনজেকশন, টেস্ট ইত্যাদি বাদে তখনকার মোট খরচ | ২৩৭০ |
খ. যখন কাঞ্চন মিয়া আইসিইউতে ছিলেন (১২ মে – ১৭ মে, ২০২১)
তারিখ | বিবরণ | প্রতিদিনের গড় খরচ | ৬ দিনের মোট খরচ |
১২ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত | কাঞ্চন মিয়ার শ্যালক, তার স্ত্রী ও তার ছেলের তিনবেলা খাবার (তিন জনের জন্য সকালে ২০০, দুপুরে ৪০০ ও রাতে ২০০ টাকা) | ৮০০ | ৪৮০০ |
স্যানিটাইজার | ৮০ | ৪৮০ | |
তিন জনের দৈনন্দিন চা, বিস্কুট এবং কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রীর পান বাবদ | ১৫০ | ৯০০ | |
আইসিইউতে থাকাকালে প্রতিদিন গড়ে ১২ লিটার পানি কিনে খাওয়া বাবদ (তখন প্রচুর গরম ও সারাক্ষণ আইসিইউর সামনে স্ট্যান্ডবাই থাকা ও বিবিধ কারণে পাম্পের পানি আনার জন্য লাইন দেয়া সম্ভব হত না) | ২৪০ | ১৪৪০ | |
দিনে অন্তত ১২টা মাস্ক ৩ জনের জন্য। (বিভিন্ন প্রয়োজনে আইসিইউতে ৩ জনেরই নিয়মিত প্রবেশ করতে হত, আইসিইউর বাইরে গরমে ঘামে মাস্ক দ্রুত ময়লা হয়ে যেত তাই স্বাভাবিকের থেকে ওই সময় মাস্ক বেশি লাগত) | ১২০ | ৭২০ | |
আইসিইউতে থাকাকালে বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিদিন তার ছেলে ও শ্যালকের ঢাকা শহরের ভেতরে জরুরি যাতায়াত বাবদ | ৩০০ | ১৮০০ | |
প্রতিদিন ৩টা গাউন (কারণ তিন জনকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে আইসিইউতে ঢুকতে হত) | ৩০০ | ১৮০০ | |
পারিবারিক মোবাইল বিল (কাঞ্চন মিয়ার ছেলে, স্ত্রী ও শ্যালক) | ৩০০ | ১৮০০ | |
খ. | ১২ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত ৬ দিন যখন কাঞ্চন মিয়া আইসিইউতে ছিলেন তখন ওষুধ, ইনজেকশন, টেস্ট, আইসিইউর চিকিৎসার সামগ্রী ইত্যাদি বাদে মোট খরচ | ২২৯০ | ১৩৭৪০ |
গ. আইসিইউ থেকে বের হওয়ার পর যখন কাঞ্চন মিয়া কেবল তরল খাবার খেতে পারতেন (১৮মে – ২৭মে, ২০২১)
তারিখ | বিবরণ | প্রতিদিনের গড় খরচ | ১০ দিনের মোট খরচ |
১৮ মে থেকে ২৭ মে পর্যন্ত | কাঞ্চন মিয়ার জন্য প্রতিদিন ৫টা ডাবের পানি (ডাক্তারের কথা মতো)। ঢাকা মেডিকেলের সামনে তখন ১০০ টাকা করে প্রতিটা ডাব | ৫০০ | ৫০০০ |
কাঞ্চন মিয়ার জন্য জাউ খিচুরি ৩ বেলা ৫০ টাকা করে | ১৫০ | ১৫০০ | |
কাঞ্চন মিয়ার জন্য স্যুপ ২ বেলা ৬০ টাকা করে | ১২০ | ১২০০ | |
কাঞ্চন মিয়ার ছেলে ও তার স্ত্রীর তিন বেলার খাবার ( জনপ্রতি সকালে ৬০, দুপুরে ১৪০, রাতে ৬০ টাকা করে) | ৫২০ | ৫২০০ | |
কাঞ্চন মিয়ার খাওয়া ও তার জন্য ব্যবহারের প্রয়োজনের সুবিধার্থে মিনারেল ওয়াটার প্রতিদিন অন্তত ৪ লিটার (উনার যেহেতু ইনফেকশনের ভয় আছে তাই উনার ক্ষেত্রে পাম্পের পানি ব্যবহার ও উনাকে সেটা খাওয়ানো নিরাপদ বোধ না করায়) | ৮০ | ৮০০ | |
কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রী ও ছেলের খাওয়ার জন্য পাম্প থেকে ৮ লিটার পানি সংগ্রহ (প্রতি লিটার ৫টাকা করে) | ৪০ | ৪০০ | |
দৈনন্দিন চা, বিস্কুট, হালকা নাস্তা এবং কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রীর পান বাবদ | ১৫০ | ১৫০০ | |
প্রতিদিন প্রায় ২ প্যাকেট টিস্যু বাবদ | ১০০ | ১০০০ | |
প্রতিদিন ১ প্যাকেট গ্লাভস বাবদ (কাঞ্চন মিয়াকে প্রতিদিন তিনবার করে ড্রেসিং ও ঘন ঘন প্রসাব পায়খানা পরিস্কার করাতে হয়) | ২২০ | ২২০০ | |
স্যানিটাইজার | ৪০ | ৪০০ | |
প্রতিদিন অন্তত ৬ টা করে মাস্ক | ৬০ | ৬০০ | |
কাঞ্চন মিয়াকে তিনবেলা ড্রেসিং করাতে ১-৩ জন ওয়ার্ড বয়কে প্রতিবারে ১০০ টাকা করে মোট ১০০-৩০০ টাকা দিতে হয় (১ জন হলে ১০০, ২ জন হলে ২০০, ৩ জন হলে ৩০০) সেই বাবদ প্রতিদিনের তিন বার ড্রেসিং বাবদ মোটের ওপর ওয়ার্ড বয়দের দিতে হয়েছে অন্তত | ৬০০ | ৬০০০ | |
পারিবারিক মোবাইল বিল (কাঞ্চন মিয়ার ছেলে, স্ত্রী ও শ্যালক) | ১০০ | ১০০০ | |
প্রতিদিনের ছোটখাট যাতায়াত রিকশা ভাড়া | ৮০ | ৮০০ | |
প্রতিদিনের টুকিটাকি ছোটখাট জিনিস বাবদ গড়ে (সাবান, শ্যাম্পু, ছোটখাট ওষুধ) | ২৫ | ২৫০ | |
গ. | ১৮ মে থেকে ২৭ মে পর্যন্ত এই ১০ দিন যখন কাঞ্চন মিয়া কেবল তরল খাবার খেতে পারতেন তখন ওষুধ, ইনজেকশন, টেস্ট বাদে তখনকার মোট খরচ | ২৭৮৫ | ২৭৮৫০ |
ঘ. যখন কাঞ্চন মিয়া শক্ত খাবার খেতে পারতেন (২৮মে – ৪জুন, ২০২১)
তারিখ | বিবরণ | প্রতিদিনের গড় খরচ | ৮ দিনের মোট খরচ |
কাঞ্চন মিয়ার সকালের তিনবেলার খাবার (সকালে ৭০, দুপুরে ১৪০, রাতে ৬০) | ২৭০ | ২১৬০ | |
কাঞ্চন মিয়ার জন্য তিন বেলা ৩ প্যাকেট ইউএইটি দুধ (যেটা জ্বাল না দিয়ে সরাসরি খাওয়া যায়) প্রতি প্যাকেট ৪৫ টাকা করে | ১৩৫ | ১০৮০ | |
কাঞ্চন মিয়াকে প্রতিদিন ফল খাওয়ানো বাবদ | ৬০ | ৪৮০ | |
কাঞ্চন মিয়ার খাওয়া ও তার জন্য ব্যবহারের প্রয়োজনের সুবিধার্থে মিনারেল ওয়াটার প্রতিদিন অন্তত ৪ লিটার (উনার যেহেতু ইনফেকশনের ভয় আছে তাই উনার ক্ষেত্রে পাম্পের পানি ব্যবহার ও উনাকে সেটা খাওয়ানো নিরাপদ বোধ না করায়) | ৮০ | ৬৪০ | |
কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রী ও ছেলের খাওয়ার জন্য পাম্প থেকে ৮ লিটার পানি সংগ্রহ (প্রতি লিটার ৫টাকা করে) | ৪০ | ৩২০ | |
কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রী ও ছেলের জন্য তিনবেলার খাবার ( জনপ্রতি সকালে ৬০, দুপুরে ১৪০, রাতে ৬০) | ৫২০ | ৪১৬০ | |
দৈনন্দিন চা, বিস্কুট, হালকা নাস্তা এবং কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রীর পান বাবদ | ১৫০ | ১২০০ | |
প্রতিদিন প্রায় ২ প্যাকেট টিস্যু বাবদ | ১০০ | ৮০০ | |
প্রতিদিন ১ প্যাকেট গ্লাভস বাবদ (কাঞ্চন মিয়াকে প্রতিদিন তিনবার করে ড্রেসিং ও ঘন ঘন প্রসাব পায়খানা পরিস্কার করাতে হয়) | ২২০ | ১৭৬০ | |
স্যানিটাইজার | ৪০ | ৩২০ | |
প্রতিদিন অন্তত ৬ টা করে মাস্ক | ৬০ | ৪৮০ | |
কাঞ্চন মিয়াকে তিনবেলা ড্রেসিং করাতে ১-৩ জন ওয়ার্ড বয়কে প্রতিবারে ১০০ টাকা করে মোট ১০০-৩০০ টাকা দিতে হয় (১ জন হলে ১০০, ২ জন হলে ২০০, ৩ জন হলে ৩০০) সেই বাবদ প্রতিদিনের তিন বার ড্রেসিং বাবদ মোটের ওপর ওয়ার্ড বয়দের দিতে হয়েছে অন্তত | ৬০০ | ৪৮০০ | |
পারিবারিক মোবাইল বিল (কাঞ্চন মিয়ার ছেলে, স্ত্রী ও শ্যালক) | ১০০ | ৮০০ | |
প্রতিদিনের ছোটখাট যাতায়াত রিকশা ভাড়া | ৮০ | ৬৪০ | |
প্রতিদিনের টুকিটাকি ছোটখাট জিনিস বাবদ গড়ে (সাবান, শ্যাম্পু, ছোটখাট ওষুধ) | ২৫ | ২০০ | |
ঘ. | ২৮ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত এই ৮ দিন যখন কাঞ্চন মিয়া শক্ত খাবার খেতে পারছেন তখন ওষুধ, ইনজেকশন, টেস্ট ব্যাতীত তখনকার মোট খরচ | ২৪৮০ | ১৯৮৪০ |
সুতরাং, ওষুধ, ইনজেকশন ও টেস্ট ব্যাতীত ৪ঠা জুন, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত সর্বমোট চিকিৎসা সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক খরচ
= ক+খ+গ+ঘ
= ২৩৭০ + ১৩৭৪০ + ২৭৮৫০ + ১৯৮৪০
= ৬৩৮০০ টাকা
492