ফিলিস্তিন, জিফোরএস এবং কারাগার শিল্প কমপ্লেক্স

অ্যাঞ্জেলা ডেভিসের সাথে কথোপকথন-৪

ফিলিস্তিন, জিফোরএস এবং কারাগার শিল্প কমপ্লেক্স

অনুবাদ: ফাতেমা বেগম

মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদী লেখক ও অধিকার আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তিত্ব অ্যাঞ্জেলা ডেভিসের সাথে লেখক এ্যাক্টিভিস্ট ফ্রাংক বারাতের দীর্ঘ কথোপকথনের ওপর এই লেখা তৈরি করা হয়েছে। ২০১৪ সালে বেশ কয়েক মাস ধরে ই-মেইলের মাধ্যমে এই কথোপকথন পরিচালিত হয়েছে। এতে মার্কিন সমাজে বৈষম্য, বর্ণবাদী আক্রমণ, ফিলিস্তিনি জনগণ সহ বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের লড়াই নিয়ে অ্যাঞ্জেলা ডেভিসের বক্তব্য বিস্তারিতভাবে উপস্থিত করেছেন ফ্রাংক বারাত। পরে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়, নাম: Freedom is a Constant Struggle: Ferguson, Palestine and the Foundations of a Movement। এর অনুবাদ ধারাবাহিকভাবে সর্বজনকথায় প্রকাশিত হচ্ছে। এবারে চতুর্থ পর্ব।

লন্ডনের SOAS[1] এ ভাষণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৩

বহুজাতিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান জিফোরএস (G4S) বর্জনের গুরুত্বের উপর এই আলোচনা অনুষ্ঠানটি আয়োজনকালে আমরা জানতাম না যে এই আলোচনায় নেলসন ম্যান্ডেলার স্মৃতিচারণ অন্তর্ভুক্ত হবে।

ম্যান্ডেলার সাথে সম্পর্কিত সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে সেই সংগ্রামকে স্বীকার করতেই হয় যার মাধ্যমে ম্যান্ডেলার মুক্তি অর্জিত হয়েছিল, এবং যার ভিত্তিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতি-বিদ্বেষের সমাপ্তি হয়েছিল। তাই আমি স্মরণ করছি রুথ ফার্স্ট এবং জো স্লোভো, ওয়ালটার এবং আলবার্টিনা সিসুলু, গোভান মেকি, অলিভার ট্যাম্বো, ক্রিস হানি, এবং আরও অসংখ্য সংগ্রামীদেরকে, যারা আজ আমাদের মাঝে নেই। ম্যান্ডেলা সবসময় একটি সম্মিলিত সংগ্রামের মাঝে নিজের অবস্থানকে উপলব্ধি করেছেন। তাই তার কয়েকজন সহকর্মী সংগ্রামী, যারা জাতি-বিদ্বেষ অবসানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের কথা আমাদের স্মরণ করতেই হয়। ম্যান্ডেলা নিজেও তাকে একক কৃতিত্ব দেয়ার ব্যাপারে জোরালো আপত্তি করতেন। বরঞ্চ, সংগ্রামে তিনি তার সহযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতি দাবি করতেন। তাই যখন সর্বসম্মতিক্রমে, এবং ক্রমাগত, এককভাবে নেলসন ম্যান্ডেলার ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয় তখন এই প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিৎ। তিনি নিঃসন্দেহে একজন অসাধারণ ব্যক্তি ছিলেন, ব্যক্তি হিসেবে তিনি বিশেষ উল্লেখযোগ্য এই কারণে যে, যারা সব সময় তার পাশে ছিলেন তাদেরকে বাদ দিয়ে শুধু তার কৃতিত্বকে আলাদা করে দেখাবার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের তিনি বিরোধিতা করেছেন। নব্য-উদারনীতিবাদের কেন্দ্রীয় মূল্যবোধ হিসাবে চিহ্নিত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের বিরোধিতার মধ্যেই তার ব্যক্তিগত স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিহিত।

তাই আমি তদানীন্তন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস এবং সাউথ আফ্রিকান কম্যুনিস্ট পার্টির রাজনৈতিকভাবে নির্বাসিত সদস্যসহ যুক্তরাজ্যের অসংখ্য মানুষকে ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা এই দেশে জাতিবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনে একটি শক্তিশালী এবং দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রেখেছেন। সত্তর(৭০) এবং আশি(৮০)দশকে আমি অনেকবার এখানে জাতি-বিদ্বেষবিরোধী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য এসেছি। আমি সেই সকল নারী এবং পুরুষকে ধন্যবাদ জানাই যারা নেলসন ম্যান্ডেলার মত অটলভাবে সংগ্রামে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। যুক্তরাজ্যের সংহতি আন্দোলনে অংশগ্রহণ আমার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ভূমিকা গঠন ও আন্দোলন সংগঠন করার ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা রেখেছে।

নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতি শোক প্রকাশের সাথে সাথে আমি তাদের সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই যারা বহু দশক যাবৎ জাতি-বিদ্বেষ বিরোধী সংগ্রামকে উজ্জীবিত রেখেছেন। তাদের সেই দীর্ঘ সংগ্রামের ফলেই জাতিগত বিদ্বেষের সাথে জড়িত বর্ণবাদ এবং নিপীড়ন থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব হয়েছে। আমি বর্ণবাদ, পুরুষ-প্রাধান্য, সমকামীতা-বিরোধিতা, এবং ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধানের ভূমিকা উল্লেখ করছি।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনে আরেকটি জাতি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রচারকে আরও জোরদার করার জন্য, এবং ফিলিস্তিনি জনতার মুক্তি সংগ্রামের সাথে সংহতি জানানোর জন্য আমি আবার আপনাদের সাথে মিলিত হয়েছি। যেমন নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, “আমরা খুব ভালোভাবে অবগত আছি যে ফিলিস্তিনি জনগনের মুক্তি না হলে আমাদের মুক্তি অসম্পূর্ণ ।”

ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক উত্থান ঘটেছিল এমন একটি আন্তর্জাতিকতাবাদের পরিবেশে যা সকল মুক্তি সংগ্রামের মধ্যে সংযোগ গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কালোদের সংগ্রামের সাথে আফ্রিকার মুক্তি সংগ্রামের সম্পর্ক তৈরি করার কথা বলেছে যার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ANC[2], এঙ্গোলার MPLA[3], নামিবিয়ার SWAPO[4], মোজাম্বিকের FRELIMO[5], গায়ানা বিসাউ এবং কেইপ ভার্দের PAIGC[6] সংগঠিত সংগ্রাম। এই আন্তর্জাতিক সংহতি কেবল আফ্রিকীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যেই নয়, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার সংগ্রামের মাঝেও বিস্তৃত হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কিউবার বিপ্লবের সাথে চলমান সংহতি এবং ভিয়েতনামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সাথে সংহতি।

এই আন্তর্জাতিক সংহতি কেবল আফ্রিকীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যেই নয়, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার সংগ্রামের মাঝেও বিস্তৃত হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কিউবার বিপ্লবের সাথে চলমান সংহতি এবং ভিয়েতনামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সাথে সংহতি।

এই সংগ্রামগুলির সমাপ্তি ভাল মন্দ যেমনই হোক, তথাপি, অর্ধশতাব্দি পরেও এই সংগ্রামগুলির উত্তরাধিকার আমরা বহন করে চলেছি যা আমাদেরকে আশা ও উদ্দীপনার যোগান দিচ্ছে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার বাস্তব শর্ত তৈরি করছে।

আমরা ইসরাইলি জাতি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের সাহায্য করার জন্য মুখোমুখি হয়েছি। এই সংগ্রামগুলির সাথে আফ্রিকার জাতি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সংগ্রামগুলির অনেক সাদৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। সবচাইতে লক্ষণীয় সাদৃশ্য হলো, স্বাধীনতা অর্জনের প্রচেষ্টাকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করবার ভাবাদর্শ। ঐতিহাসিকভাবে, সিআইএ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জাতিবিদ্বেষী সরকারের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৬২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকান সরকার একজন সিআইএ এজেন্টের মাধ্যমে নেলসন ম্যান্ডেলার অবস্থান সম্পর্কে অবগত হয়ে তাকে গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ করে।

আমরা ইসরাইলি জাতি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের সাহায্য করার জন্য মুখোমুখি হয়েছি। এই সংগ্রামগুলির সাথে আফ্রিকার জাতি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সংগ্রামগুলির অনেক সাদৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। সবচাইতে লক্ষণীয় সাদৃশ্য হলো, স্বাধীনতা অর্জনের প্রচেষ্টাকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করবার ভাবাদর্শ।

অধিকন্তু, মাত্র পাঁচ বছর আগে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ম্যান্ডেলার নাম এফবিআইএর সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। জর্জ বুশ একটি বিলে স্বাক্ষর করার পর সেই তালিকা থেকে ANCর অন্যান্য সদস্যসহ তার নাম মুছে দেয়া হয়। তার মানে, ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ম্যান্ডেলা যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন তখনো তার নাম সন্ত্রাসীদের তালিকায় বহাল ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি যে নিষিদ্ধ ছিলেন, সেই সময় তারা তা প্রকাশ্যভাবে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

আমি বলতে চাচ্ছি যে, দীর্ঘকাল যাবৎ ম্যান্ডেলা এবং তার সহযোদ্ধারা আজকের অসংখ্য ফিলিস্তিনি সংগ্রামী নেতা এবং কর্মীদের মত একই অবস্থানে ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতি-বিদ্বেষী সরকারকে সহযোগিতা করেছিল, ঠিক একইভাবে এখন ফিলিস্তিন দখলকারী ইসরাইলকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে চলেছে। প্রতিদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে ৮.৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সাহায্য দিয়ে থাকে। আমরা ওবামা প্রশাসনকে জানাতে চাই, মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্র যে কত গভীরভাবে এই দখল প্রক্রিয়ায় জড়িত আছে তা বিশ্ববাসীর কাছে অজানা নয়।

আমি এই সভায় অংশ নিয়ে সম্মানিত বোধ করছি, বিশেষত ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি কেপ টাউনে সংগঠিত ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল প্রিজনারস কমিটির সদস্য হিসেবে, এবং ফিলিস্তিনের রাসেল ট্রাইব্যুনালের জুরি সদস্য হিসাবে এখানে উপস্থিত হতে পেরে। আমি ওয়ার অন ওয়ান্ট (War on Want)[7] কে এই অনুষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এবং আজকের সন্ধ্যায় এখানে আমাদের উপস্থিতি সম্ভব করার জন্য প্রগতিশীল শিক্ষার্থী, অনুষদ, এবং SOAS এ কর্মীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।

আজকের সমাবেশে ফিলিস্তিনি সুশীল সমাজের আহ্বানে চলমান বিডিএস (BDS)[8] আন্দোলন- অর্থাৎ বর্জন, বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও জরিমানার আন্দোলনকে কীভাবে আরও সম্প্রসারিত করা যায় সেই ব্যাপারটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। বিডিএস আন্দোলনটি দক্ষিণ আফ্রিকার জাতি-বিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনের শক্তিশালী একটি মডেলকে অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। বয়কট বা বর্জনের আওতায় অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন ভেওলিয়া (Veolia), Sodastream, Ahava, Caterpillar, Boeing, Hewlett Packard কে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে আজকের সন্ধ্যায় আমরা জিফোরএস বর্জনের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করছি।

জিফোরএস বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ নির্যাতন কৌশলযন্ত্রের সংরক্ষণ এবং পুনরুৎপাদনে জিফোরএস প্রত্যক্ষ এবং সুস্পষ্ট ভূমিকা রেখে চলেছে যার কিছু উদাহরণ হিসাবে ফিলিস্তিনের জেলখানা, চেকপয়েন্ট আর বিভাজনের প্রাচীরের কথা বলা যায়। নয়া উদারনৈতিক রাষ্ট্রে নিরাপত্তার ভাবাদর্শ অনুযায়ী “নিরাপত্তা” বলতে যা কিছু বোঝানো হয় জিফোরএস তার প্রতিনিধিত্ব করে। এই নিরাপত্তা ভাবাদর্শ শুধু যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বেসরকারিকরণকেই উৎসাহিত করে তা নয়, সেই সাথে যুদ্ধ এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার বেসরকারিকরণকেও উৎসাহিত করে।

নয়া উদারনৈতিক রাষ্ট্রে নিরাপত্তার ভাবাদর্শ অনুযায়ী “নিরাপত্তা” বলতে যা কিছু বোঝানো হয় জিফোরএস তার প্রতিনিধিত্ব করে। এই নিরাপত্তা ভাবাদর্শ শুধু যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বেসরকারিকরণকেই উৎসাহিত করে তা নয়, সেই সাথে যুদ্ধ এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার বেসরকারিকরণকেও উৎসাহিত করে।

ইসরাইলে রাজনৈতিক বন্দীদের দমন-পীড়নের জন্য এই জিফোরএস দায়ী। সাহার ফ্রানসিস পরিচালিত এডডামিয়ার (Addameer)[9] ডকুমেন্টারিতে প্রকাশিত হয়েছে, কীভাবে অসংখ্য ফিলিস্তিনি ভয়ঙ্কর নির্যাতন এবং কারাদণ্ডের সম্মুখীন হচ্ছে, এবং কারাগারে তারা অনশন ধর্মঘট এবং অন্যান্য ধরণের প্রতিরোধ করছে।

জিফোরএস পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান- ওয়ালমার্ট সবচাইতে বৃহত্তম এবং ফক্সকম দ্বিতীয় বৃহত্তম অবস্থানে আছে। জিফোরএস এর ওয়েবসাইটে উল্লিখিত তথ্য অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানটি বৃহৎ পরিসরে “মানুষ এবং সম্পত্তি’র” নিরাপত্তা সেবা দিতে সক্ষম। সংগীত তারকা এবং ক্রীড়া তারকাদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে আনন্দ ও নিরাপত্তা পরিপূর্ণ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার জন্য বিমানবন্দরসহ সকল বন্দরে নিরাপত্তা, অবৈধ অভিবাসীদের পাহারাধীন রাখা ও জিজ্ঞাসাবাদকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া জিফোরএস এর দায়িত্বে অন্তর্ভুক্ত।

জিফোরএস এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে, “আমাদের সেবা তোমাদের প্রত্যাশাকে অতিক্রম করে”, “জিফোরএস  তোমার জগতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।” জিফোরএস উল্লিখিত নিরাপত্তা সেবায় প্রত্যাশা অতিক্রম করার সাথে আমরা আরও যোগ করতে পারি-  রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তার বেশে জিফোরএস আমাদের জীবনে দখল নিয়েছে- ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক কারাদণ্ড এবং নির্যাতনের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে ইসরাইলে বর্ণবাদ এবং জাতি-বিদ্বেষের প্রযুক্তি; ইসরাইলের দেয়াল থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারাগারসম স্কুল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমানায় দেয়াল নির্মাণ পর্যন্ত। জিফোরএস– ইসরাইল হাশ্যারন (HaSharon) কারাগারে নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এনেছে। এই কারাগারে বিচারবিহীন আটক বন্দিদের সাথে শিশু সন্তানরা আছে। নারী বন্দিদের জন্য ডামুন (Damun) নামে আরেকটি কারাগার আছে।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তার বেশে জিফোরএস আমাদের জীবনে দখল নিয়েছে- ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক কারাদণ্ড এবং নির্যাতনের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে ইসরাইলে বর্ণবাদ এবং জাতি-বিদ্বেষের প্রযুক্তি; ইসরাইলের দেয়াল থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারাগারসম স্কুল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমানায় দেয়াল নির্মাণ পর্যন্ত। জিফোরএস– ইসরাইল হাশ্যারন (HaSharon) কারাগারে নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এনেছে। এই কারাগারে বিচারবিহীন আটক বন্দিদের সাথে শিশু সন্তানরা আছে।

এইরকম একটা প্রেক্ষাপটে, চলুন দেখা যাক, বৈশ্বিক কারাগার-শিল্প কমপ্লেক্সের সাথে জিফোরএস কতটা গভীরভাবে সম্পর্কিত। এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু সারা বিশ্বের ব্যক্তি-মালিকানাধীন কারগারের মালিক এবং পরিচালকই নয়, একই সাথে এই প্রতিষ্ঠানটি স্কুল এবং কারাগারের মধ্যে পার্থক্যের ইতি টানতে সাহায্য করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অশ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত দরিদ্র এলাকার স্কুলগুলি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার সাথে এতটা জড়িত যে অনেক সময় স্কুল এবং কারাগারের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়। স্কুলগুলি দেখতে কারাগারের মত, কারাগারে ব্যবহৃত একই সনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, এবং কখনো কখনো তারা একই আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার অধীনে থাকে। কিছু স্কুলে অস্ত্রধারী অফিসারগণ পাহারা দেয়। বর্তমানে কিছু স্কুল ডিস্ট্রিক্ট, যাদের জিফোরএস এর মত প্রতিষ্ঠান থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাড়া করার সামর্থ্য নাই, সেই সব স্কুলে শিক্ষকদেরকে অস্ত্রসহ প্রশিক্ষণ প্রদান করে। আমি ঠাট্টা করছি না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অশ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত দরিদ্র এলাকার স্কুলগুলি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার সাথে এতটা জড়িত যে অনেক সময় স্কুল এবং কারাগারের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়। স্কুলগুলি দেখতে কারাগারের মত, কারাগারে ব্যবহৃত একই সনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, এবং কখনো কখনো তারা একই আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার অধীনে থাকে।

কিন্তু জিফোরএসের মূল দক্ষতা নিরাপত্তা বিষয়ক হলেও প্রতিষ্ঠানটি স্কুল পরিচালনার কাজেও যুক্ত থাকে। “গ্রেট স্কুল” শিরোনামের একটি ওয়েবসাইটে ফ্লোরিডায় সেন্ট্রাল পাসকো গার্লস অ্যাকাডেমি নামে একটি ছোট বিকল্প পাবলিক স্কুল সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে। আপনি যদি জিফোরএস এর ওয়েবসাইটে সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কিত পাতাটি লক্ষ্য করেন তবে আপনি এই তথ্যটি আবিষ্কার করবেন: “সেন্ট্রাল পাসকো গার্ল একাডেমি মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ১৩-১৮ বছর বয়সি এমন সব মেয়েদেরকে সেবা দিয়ে থাকে যাদের নিবিড় মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন।”

জিফোরএস  দাবি করে যে তারা “জেন্ডার-অনুকূল পরিসেবা” পদ্ধতি ব্যবহার করে এবং তারা যৌন নির্যাতন এবং ড্রাগ অপব্যবহার ইত্যাদি বিষয়েও গুরুত্ব দেয়। যদিও এটি অপেক্ষাকৃত নির্দোষ বলে মনে হতে পারে, তবে এই চমকপ্রদ উদাহরণটি দেখায়, শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে নিরাপত্তা বিষয়টি আসলে কতটা সম্পৃক্ত হয়েছে, এবং এভাবেই, শিক্ষা ও কারাগার ব্যবস্থা কীভাবে পুঁজিবাদী মুনাফার অধীনে সংযুক্ত হয়েছে। এই উদাহরণটি আরো দেখায় যে কারাগার-শিল্প কমপ্লেক্সটির পরিধি কারাগারের বাইরে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত।

এই প্রতিষ্ঠানটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “ঝুঁকি”তে থাকা  কিশোরী/তরুণীদের পুনর্বাসন সেবাসহ অনেক এজেন্সিকে নিরাপত্তা সেবা দেয়। ইউরোপ, আফ্রিকা, এবং এশিয়াতে ব্যক্তিমালিকানাধীন কারাগার পরিচালনা করে। ইসরাইলে ওয়েস্ট ব্যাংকের চেকপয়েন্টগুলিতে, ইসরাইলের প্রাচীর সংলগ্ন রাস্তায়, এবং টার্মিনালের দিকে যেখান থেকে গাজাকে অনবরত সামাজিক অবরোধের মধ্যে রাখা হয়েছে সেখানে যন্ত্রপাতি এবং সেবা দিয়ে থাকে। এছাড়া জিফোরএস ওয়েস্ট ব্যাংকে ইসরাইলি পুলিশকে দ্রব্য এবং সেবা সরবরাহ করে। এছাড়া, তারা ব্যক্তিগত ব্যবসা এবং দখলকৃত প্যালেস্টাইনে অবৈধ ইসরাইলি বাসিন্দাদের নিরাপত্তা প্রদান করে।

ব্যক্তি-মালিকানাধীন কারাগার প্রতিষ্ঠানগুলি দীর্ঘদিন ধরেই জানে যে, কারাগার-শিল্প কমপ্লেক্সের আওতায় সবচেয়ে লাভজনক কাজ হলো অভিবাসীদের আটক করা এবং তাদেরকে বিতাড়িত করা। জিফোরএস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের মেক্সিকোতে বিতাড়নের জন্য যানবাহন সরবরাহ করে। এইভাবে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান শোষণমূলক অভিবাসন প্রক্রিয়ার অশুভ আঁতাতের সাথে জড়িত রয়েছে। তবে একজন অনথিভুক্ত অভিবাসীকে পরিবহনের সময় তার উপর নিপীড়নের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে এখানে, যুক্তরাজ্যে।

কারাগার-শিল্প কমপ্লেক্সের আওতায় সবচেয়ে লাভজনক কাজ হলো অভিবাসীদের আটক করা এবং তাদেরকে বিতাড়িত করা। জিফোরএস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের মেক্সিকোতে বিতাড়নের জন্য যানবাহন সরবরাহ করে। এইভাবে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান শোষণমূলক অভিবাসন প্রক্রিয়ার অশুভ আঁতাতের সাথে জড়িত রয়েছে।

অক্টোবর মাসে লন্ডনে বার্কবেক স্কুল অফ ল তে বক্তব্য রাখার সময় আমি ইনকুয়েস্ট  নামক প্রতিষ্ঠানের সহপরিচালক ডেবোরাহ কোলসের সাথে জিমি মুবেংগার (Jimmy Mubenga) মামলার ব্যাপারে কথা বলছিলাম। যুক্তরাজ্য থেকে এংগোলাতে বিতাড়নের সময় জিফোরএস  এর পাহারাধীন অবস্থায় জিম্মি মুবেংগা নিহত হন। ব্রিটিশ এয়াওয়েজের বিমানে পিছনে হাতকড়া বাধা অবস্থায় মুবেংগা যেন প্রতিরোধ করার চেষ্টায় কোনো আওয়াজ না করতে পারে, সেইজন্য জিফোরএস এজেন্টরা নিষিদ্ধ “কার্পেট কারাওকে “(Carpet Karaoke)[10] পদ্ধতিতে তার মাথা সামনে সীটের সাথে ধাক্কা দিয়ে জোরপূর্বক ধরে রাখে । আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য কার্পেট কারাওকে পদ্ধতি ব্যবহার অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও বিস্ময়করভাবে সেটি প্রয়োগ করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে, যে ব্যক্তিটিকে ধরে রাখা হয় তাকে “কার্পেটে গাইতে” (sing into the carpet) বাধ্য করা হয়- মুবেঙ্গার ক্ষেত্রে কার্পেটের বদলে ছিল সামনের পুরু সিট, যাতে তার প্রতিবাদের আওয়াজ মৃদু এবং দুর্বোধ্য হয়। মুবেংগাকে ৪০ মিনিট এইভাবে চাপ দিয়ে ধরে রাখা হয়। কেউ এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেননি। অবশেষে যখন তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, ততক্ষণে তিনি মারা গিয়েছেন।

যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের প্রতি এই ভয়াবহ আচরণের সাথে ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কিত করতে হবে। ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের পূর্বপুরুষের জমিতে জোরপূর্বকভাবে নথিবিহীন অভিবাসীতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। আমি পুনরাবৃত্তি করছি- তাদেরকে নিজভূমিতে অভিবাসীতে পরিণত করা হয়েছে। জিফোরএস এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলি বিভিন্ন কারিগরি পদ্ধতি প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের নিজেদের ভূমিতে অভিবাসীতে রূপান্তরিত করেছে।

আমরা জানি যে, জিফোরএস  বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিমালিকানাধীন কারাগার পরিচালনার দায়িত্বে আছে। দ্য কংগ্রেস অফ সাউথ আফ্রিকান ট্রেড ইউনিয়ন (CO-SATU) সম্প্রতি ফ্রি স্টেটে ম্যানগং কারেকশনাল সেন্টার (Mangaung Correctional Centre) এর পরিচালনাকারী জিফোরএস এর ভূমিকার বিরোধিতা করে। দ্য কংগ্রেস অফ সাউথ আফ্রিকান ট্রেড ইউনিয়ন (COSATU)এর মতেঃ

জিফোরএস এর কার্যপ্রণালিতে নয়া-উদারবাদী পুঁজিবাদ ও ইসরাইলি জাতি-বিদ্বেষের অন্তর্ভুক্ত দুইটি উদ্বেগের বিষয় পরিলক্ষিত হয়ঃ “নিরাপত্তা’র” মতাদর্শ এবং ক্রমবর্ধমান হারে প্রচলিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বেসরকারিকরণ। এই প্রেক্ষিতে, নিরাপত্তা বলতে সবার জন্য নিরাপত্তা বুঝায় না। বরঞ্চ, কেউ যদি জিফোরএস এর নিরাপত্তা সেবা গ্রাহকদের (ব্যাংক, সরকার, কর্পোরেশন, ইত্যাদি) দিকে লক্ষ্য করে তাহলে প্রমাণিত হয় যে জিফোরএস এর স্লোগান, “তোমার জগতের নিরাপত্তা” বলতে শোষণ, নিপীড়ন, দখল এবং বর্ণবৈষম্যের এক জগৎকে বুঝানো হচ্ছে।

আমি দুই বছর আগে আদিবাসী এবং অশ্বেতাঙ্গ বুদ্ধিজীবী/আন্দোলনকারী নারীদের প্রতিনিধিদলের সাথে ফিলিস্তিনে গিয়েছিলাম। প্রতিনিধিদলের জন্য ফিলিস্তিনে এটা প্রথম সফর ছিল। আমাদের সাথে অধিকাংশই ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলনের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে জড়িত ছিলেন। কিন্তু ইসরাইলি ঔপনেবিশিকদের চাক্ষুষ এবং ভয়ঙ্কর নিপীড়ন আবিষ্কার করে আমরা সবাই মর্মাহত হয়েছিলাম। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিন জনগনের ওপর যে ধরণের সহিংসতা করছিল, তা গোপন করা বা কমানোর কোনো ধরনের চেষ্টাই তারা করছিল না। সর্বত্র বন্দুকবহনকারী সামরিক নারী, পুরুষসহ অনেক কম বয়সিদের দেখা যাচ্ছিল। সর্বত্র দৃশ্যমান প্রাচীর, কংক্রিট, ধারালো বেড়া আমাদেরকে একটি জেলে থাকার অনুভূতি দিচ্ছিল। ইতঃপূর্বে গ্রেফতারকৃত ফিলিস্তিনিরা ইতোমধ্যে কারাগারে আবদ্ধ। একটা ভুল পদক্ষেপের জন্য কেউ গ্রেফতার হয়ে যায় এবং তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়; উন্মুক্ত জেলখানা থেকে তারপর আবদ্ধ জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

ফিলিস্তিনে কারাগার ব্যবস্থার সাথে জিফোরএস এর সম্পর্ক সুস্পষ্ট। এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে ব্যাপকহারে ক্রমবর্ধমান কারাদণ্ডের সাথে জড়িত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির মুনাফা-চালিত উদ্দেশ্যও সুস্পষ্ট হয়ে যায়।

বছরে যে কোনো দিন আমাদের দেশের সাধারণ কারাগার, সামরিক কারাগার, ইন্ডিয়ান কারাগার, এবং অভিবাসীদের আটক কেন্দ্রে থাকা বন্দির সংখ্যা মোটামুটি ২৫ লক্ষ। এটা দৈনিক একটি হিসাব। তাই প্রতি সপ্তাহে, বা প্রতি মাসে বা প্রতি বছরে ঠিক কতজন এই ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তা এই হিসাবে প্রতিফলিত হবে না। এই খাতে অশ্বেতাঙ্গ নারী বন্দিদের সংখ্যা সবচাইতে বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্দিদের মধ্যে অনেক তৃতীয় লিঙ্গ এবং হিজড়া আছেন। বাস্তবতা হলো, অশ্বেতাঙ্গ হিজড়াদেরই গ্রেফতার ও বন্দি হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কারাগার-শিল্প কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধান, পুনরুৎপাদন, এবং প্রসারে ইন্ধন যোগায় বর্ণবাদ।

কাজেই, আমরা যদি বলি কারাগার-শিল্প কমপ্লেক্স নির্মূল করতে হবে, তাহলে জাতি-বিদ্বেষ নির্মূল করার ব্যাপারেও বলতে হবে । এবং ফিলিস্তিনকে দখলমুক্ত করতে হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে যখন কৃষ্ণাঙ্গ দর্শকের উপস্থিতিতে আমরা দখলকৃত ফিলিস্তিনের পৃথকীকরণ বর্ণনা করেছি, তখন এই বর্ণনার সাথে দক্ষিণ আমেরিকায় ঐতিহাসিকভাবে বর্ণবাদভিত্তিক জাতিবিভক্তির এতটাই সুস্পষ্ট মিল রয়েছে যে, সেখানে মন্তব্য এসেছেঃ

“কেউ কেন এর আগে আমাদের এই ব্যাপারে কিছু বলেনি? পৃথক দীর্ঘ সড়কপথ বা হেবর্ন চিহ্ন দিয়ে পথিকদের পথ আলাদা করার ব্যাপারে কেউ আগে কিছু বলেনি কেন? এরকম পৃথকীকরণ তো জিম ক্রো সাউথেও করা হয়েছিল। কেন কেউ আমাদের আগে কিছু বলেনি?”

ঠিক যেমন হলোকাস্টের জন্মদানকারী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা বলি “আর কখনো নয়”, ঠিক তেমনি দক্ষিণ আফ্রিকা,এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে জাতি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে “আর কখনো নয়” বলা উচিৎ। তার মানে হচ্ছে, সর্বাগ্রে আমাদের সংহতি বাড়াতে হবে এবং তা গভীরভাবে ফিলিস্তিনিদের সাথে, সকল লিঙ্গ এবং যৌন পরিচয়ের মানুষের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। কারাগারের দেয়ালের ভিতরে এবং বাইরে, জাতিবিদ্বেষের দেয়ালের ভিতরে এবং বাইরে।

জিফোরএস  বর্জন করুন! বিডিএস কে সমর্থন করুন!

ফিলিস্তিন মুক্ত হবে!

ধন্যবাদ।

সহায়ক শব্দ তথ্য

[1] SOAS (School of Oriental and African Studies (London, UK)

[2] ANC (African National Congress)

[3] MPLA (The People’s Movement for the Liberation of Angola)

[4] SWAPO (South West Africa People’s Organization)

[5] FRELIMO (Frente de Libertação de Moçambique, Mozambique Liberation Front)

[6] PAIGC (The African Party for the Independence of Guinea and Cape Verde)

[7] War on Want, an anti-poverty charity based in London.

[8] BDS (Boycott, Divestment, Sanction)

[9] ADDAMEER (Arabic for conscience) Prisoner Support and Human Rights Association

[10] Carpet Karoke (একটি পদ্ধতি যেখানে বিনা বিচারে আটক বন্দির মুখ জোর করে বিমানের কার্পেটে চাপ দিয়ে রাখা হয়। তাতে বন্দির চিৎকারের আওয়াজ একজন খারাপ কারাওকে গায়কের গানের মত শুনায়। তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ানো থাকে, শক্ত সিটবেল্টের সাথে কাফটি বাধা থাকে, এবং তার মাথা তার দুই পায়ের মাঝখানে ধাক্কা দিয়ে রাখা হয়, সামনের আসনের পিছনে প্রবেশ করানো হয়। এই ধরণের পদ্ধতিতে মৃত্যুর গুরুতর ঝুঁকি থাকে)।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *