সৌর বিদ্যুতের নামে নদীর সর্বনাশ করে জমি দখলের প্রকল্প

সৌর বিদ্যুতের নামে নদীর সর্বনাশ করে জমি দখলের প্রকল্প

সুজয় শুভ

বাংলাদেশের প্রাণ নদী। আর দেশের বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ সৌরবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য প্রকল্প। যখন সারা বিশ্বে কয়লা পারমাণবিক বাদ দিয়ে নবায়নযোগ্য পথ প্রশস্ত করা হচ্ছে তখন বাংলাদেশে সরকার একদিকে দেশি বিদেশি মুনাফাখোরদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বানাচ্ছে একের পর এক কয়লা ও পারমাণবিক প্রকল্প, অন্যদিকে বিশ্ব দরবারে বলছে নবায়নযোগ্য প্রকল্পের কথা। আবার সেইসব প্রকল্প ব্যক্তি মুনাফাধীন পথে করায় নানা অনিয়ম ও জবরদস্তি তৈরি হচ্ছে, এসব প্রকল্পের নামে জমি নদী দখলদারদের পথ তৈরি করা হচ্ছে। এই লেখায় সৌর বিদ্যুতের নামে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ক্ষতি করে নদী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জমি দখলের অপতৎপরতার প্রামাণ্য চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। 

নদীর পানিতে অর্ধেক ডুবে থাকা পাতাবিহীন একটি লিকলিকে গাছ দেখিয়ে প্রচণ্ড ভারী গলায় ষাটোর্ধ্ব মজিবর মিয়া বলে উঠলেন: ‘এই গাছের পশ্চিমে আমার ১২ দোন (সাড়ে তিন একর প্রায়) জমি ছিল। গত বর্ষায় তিস্তায় গেছে, নদীর মধ্যে। আস্তা (রাস্তা) না হলে এত বড় ক্ষতি হতো না। বউ-বাচ্চা নিয়ে পুরো পথে বসতে হলো শুধু এই আস্তার কারণে।’ ভোটমারি থেকে ট্রলারে তিস্তা পার হয়ে শৈলমারী যেতে যেতে শেষ সম্বলটুকু হারানোর যন্ত্রণায় এভাবেই আর্তনাদ করছিলেন সর্বস্বান্ত মজিবর মিয়া।

সত্যিই তিস্তার ভোটমারি-শৈলমারী প্রবাহটিকে বেইলি ব্রিজ বানানোর জন্য এমনভাবে সংকুচিত করে আনা হয়েছে–দেখলে যে কারোরই মনে হবে, কেউ হয়তো তিস্তাকে গলা চেপে ধরেছে। বেইলি ব্রিজটি করা হচ্ছে ভোটমারি থেকে শৈলমারী চরের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে যাওয়ার রাস্তার অংশ হিসেবে। নদীর মধ্য দিয়ে আড়াআড়ি চলে যাওয়া রাস্তাটাও বেশ অদ্ভুত–ধানখেতের মধ্য দিয়ে ৫০ ফুট চওড়া রাস্তার দুপাশে বিদ্যুৎ ও সড়কবাতির খুঁটি। তবে খানিক দূরে দূরে কালভার্ট বসানো দেখে মনে হয়, নদীর মধ্য দিয়ে রাস্তাটা বানানোর পরও নদীর অস্তিত্বকে পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারেনি রাস্তার মালিকরা। নদীর বুকে আড়াআড়ি দুই কিলোমিটার রাস্তা বানিয়ে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাতায়াতের আয়োজন করা হয়েছে–ব্যাপারটা একই সঙ্গে বিস্মিত এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়ার মতোই। আগ্রহী হয়ে উঠলাম এই বিশেষ গুরুত্ববাহী বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে, ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অনায়াসে যে তিস্তাকে বলি দেওয়া হলো, তাকে কাছ থেকে দেখার লোভ সামলানো কঠিন।

নদী পার হয়ে ট্রলার থেকে নেমে একহাঁটু কাদায় ধানখেতের মধ্য দিয়ে খানিকদূর এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল বড় সাইনবোর্ডে গোটা গোটা করে লেখা: ‘ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড, ৩০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট।’ পুরোনো খবর ঘেঁটে দেখলাম, ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ারের সঙ্গে পৃথক দুটি চুক্তি করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। চুক্তি অনুযায়ী, রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ৩০ মেগাওয়াটের সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরির কথা ছিল, সেই বিদ্যুৎ ১২ টাকা ৮০ পয়সা দরে ২০ বছরের জন্য কেনার চুক্তি করেছিল পিডিবি। কিন্তু রংপুরের চরের জমি পুনরায় নদীতে হারিয়ে যাওয়ায় রংপুর বাদ দিয়ে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারির শৈলমারী চরে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্য আবেদন করে ইন্ট্রাকো। এরই মধ্যে ২০২০ সালে ১৮ কোটি ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইন্ট্রাকো সোলারের ৮০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় পি কে হালদার-কাণ্ডে আলোচনায় আসা শাখাওয়াত হোসেনের মালিকানাধীন প্যারামাউন্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট বিট্রাক এনার্জি। ফলে নামে ইন্ট্রাকো হলেও শৈলমারী সোলার প্ল্যান্টের মালিকানা প্যারামাউন্ট গ্রুপের। আমরা যখন শেষ বিকেলে শৈলমারী গ্রামে গিয়ে পৌঁছাই, তখনো দেখি রাস্তায় বালি ফেলার কাজ চলছে। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এবং গার্ডদের অতি সচেতন চোখের কারণে বাইরে থেকে প্ল্যান্ট দেখা ছাড়া ভেতরের খবর বিশেষ বোঝা গেল না। তবে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে কথা হয় শৈলমারীর বাসিন্দাদের সঙ্গে। খুব সংক্ষেপে সেই অভিজ্ঞতাটুকুই তুলে ধরার চেষ্টা করব। 

২০২০ সালে ১৮ কোটি ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইন্ট্রাকো সোলারের ৮০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় পি কে হালদার-কাণ্ডে আলোচনায় আসা শাখাওয়াত হোসেনের মালিকানাধীন প্যারামাউন্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট বিট্রাক এনার্জি।

তিস্তার বুকে আড়াআড়ি রাস্তা

তিস্তার ভোটমারি শৈলমারীর প্রবাহের মাঝে আড়াআড়ি প্রায় দুই কিলোমিটারের রাস্তা বানিয়েছে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার কর্তৃপক্ষ। রাস্তায় দুটি বেইলি ব্রিজ ও ১৮টি কালভার্ট আছে নদীর পানি প্রবাহের জন্য, কিন্তু নদীর মাঝে রাস্তা বানিয়ে তাতে কালভার্ট দিয়ে যে নদী বাঁচানো চলে না–এতটুকু বিশেষজ্ঞ না হয়েও স্থানীয় মানুষজন বুঝেছে সেই কবে, শুধু আমাদের বিশেষজ্ঞদের ফুরসত মেলেনি তিস্তাকে নিয়ে ভাবার। বেইলি ব্রিজ বানানোর জন্য নদীর প্রবাহকে অনেকখানি সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে, ফলে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার পানির চাপ সামান্য বাড়লেই এই সংকুচিত মুখ পারছে না পানির চাপ সামলাতে। এ জন্য ভয়াবহ আকার ধারণ করছে নদীভাঙন। আবার পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বন্যার পানিও সহজে বের হতে পারছে না, বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে অতীতের তুলনায়।

তিস্তার ভোটমারি শৈলমারীর প্রবাহের মাঝে আড়াআড়ি প্রায় দুই কিলোমিটারের রাস্তা বানিয়েছে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার কর্তৃপক্ষ। রাস্তায় দুটি বেইলি ব্রিজ ও ১৮টি কালভার্ট আছে নদীর পানি প্রবাহের জন্য, কিন্তু নদীর মাঝে রাস্তা বানিয়ে তাতে কালভার্ট দিয়ে যে নদী বাঁচানো চলে না–এতটুকু বিশেষজ্ঞ না হয়েও স্থানীয় মানুষজন বুঝেছে সেই কবে, শুধু আমাদের বিশেষজ্ঞদের ফুরসত মেলেনি তিস্তাকে নিয়ে ভাবার।

ভোটমারি প্রান্তে চায়ের দোকানে দেখা হয়েছিল একদল খেতমজুরের সঙ্গে। তাদেরই একজন ইদ্রিস আলী জানান, গতবারের বন্যায় শুধু এই রাস্তা থাকার কারণে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি নদীভাঙন হয়েছে এবং এই ভাঙন শুধু ভোটমারি শৈলমারী নয়, আশপাশের এলাকায়ও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আয়ুব আলীদের তিন একর ও ইউসুফদের শেষ সম্বলটুকুও তিস্তায় গেছে বলে বিলাপ শুরু করেন দুজনে। গত বছরের মতো এবার বন্যা না হলেও নদীভাঙন গত বছরের মতো ভয়াবহ মাত্রায় থাকার একমাত্র কারণ এই ‘রাস্তা’–এমনটাই মনে করেন ভোটমারি শৈলমারীর তিস্তা পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ট্রলারের চালক রফিক মিয়া। নদী পার হওয়ার সময় খেয়াল করলাম, এই শুষ্ক মৌসুমেও নদীর পানি স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারছে না, ফলে আগামী বর্ষায় তিস্তা যে আরও ভয়াল রূপ ধারণ করবে, সেটা ভেবে আতঙ্কিত না হয়ে পারলাম না।

ভোটমারি প্রান্তে চায়ের দোকানে দেখা হয়েছিল একদল খেতমজুরের সঙ্গে। তাদেরই একজন ইদ্রিস আলী জানান, গতবারের বন্যায় শুধু এই রাস্তা থাকার কারণে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি নদীভাঙন হয়েছে এবং এই ভাঙন শুধু ভোটমারি শৈলমারী নয়, আশপাশের এলাকায়ও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

রাস্তার কারণে পানি প্রবাহিত হতে না পারায় রাস্তার দুপাশে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। যে কারণে রাস্তার দুপাশ দিয়ে অনাবাদি পড়ে আছে বিশাল আয়তনের আবাদি জমি, যাতে এক বছর আগেও ফসল ফলত।

লালমনিরহাটের এই অংশে মাছের ঘের বা বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করার জমিকে বলে মাছের প্রজেক্ট। কথা হচ্ছিল মৎস্যচাষি ফরিদউদ্দীনের সঙ্গে। যে জায়গাটাকে বেইলি ব্রিজের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার পাশেই ফরিদউদ্দীনের মাছের প্রজেক্ট। গত বছর তিন লাখ টাকা খরচ করেছিলেন মাছের রেণু আর মাছের খাবার কিনতে, কিন্তু ৫২ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পারলেও বাকিটুকু রক্ষা করতে পারেননি, পুরো মাছ ভেসে গিয়েছিল বানের জলে। ওই এলাকার অর্ধশত মাছের প্রজেক্টেরই একই হাল হয়েছিল গত বন্যায়। বন্যার মুখে আগেও অনেকবার পড়তে হয়েছে এসব মৎস্যচাষিকে, কিন্তু গতবারের বন্যার পানি যেন মুহূর্তের মধ্যেই সবটা ভাসিয়ে নিয়ে গেল। রাস্তা তৈরি এবং বেইলি ব্রিজের জন্য নদীকে সংকুচিত করার কারণেই পানি এতটা আগ্রাসি হয়ে উঠেছিল বলে মনে করেন স্থানীয়রা। আরেক মৎস্যচাষি নাহিদ জানান, ২৫ শতক জমিতে মাছ চাষের জন্য পোনা এবং মাছের খাবার বাবদ খরচ করেছেন ৩০ হাজার টাকা, কিন্তু বিক্রি করতে পারেননি এক টাকার মাছও, আর ভুলেও মাছ চাষের চিন্তা মাথায় আনবেন না বলে জানান তিনি।

তিস্তার পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পলি জমছে বেইলি ব্রিজের জন্য নির্ধারিত জায়গার আশপাশে, ফলে কমছে নদীর গভীরতা। নদীর এই গভীরতা কমার কারণে আবার বন্যা হলে সেই বন্যা যে আরও বেশি আগ্রাসি রূপ ধারণ করবে, এতটুকু বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না। পলি জমে নদীর গভীরতা কমায় এবং নদী সংকোচনের কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এবং অবকাঠামো তৈরির কারণে পানি স্বচ্ছতা হারাচ্ছে। সেনা কল্যাণ সংস্থার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অফিসের বিপরীতে দীর্ঘদিন ধরে হোটেল ব্যাবসা করে আসা কুদরত মিয়া জানান, তিস্তার এ অংশে আগে বৈরালি, ইছলা (চিংড়ি), শাটি (টাকি) পুঁটি মাছ পাওয়া যেত দু-বছর আগেও। ঘোলা পানিতে বৈরালি মাছ থাকে না, বাকি কারণে চিংড়িও হারিয়ে গিয়েছে এ অংশ থেকে। কোনো মাছই এখন আর তিস্তার এই অংশে পাওয়া যায় না, মাছ শিকারিরাও তাই এ এলাকায় নামেন না মাছ ধরতে। আলাপের সত্যতা পাওয়া গেল আমাদের লালমনিরহাট সফরেই।

বেশ ক’দিন তিস্তা ভ্রমণ করলেও এ এলাকায় আমরা একবারের জন্যও মাছ ধরার নৌকা দেখিনি। দিনের শেষে মাছ বিক্রি করে ফিরছিলেন মাঝবয়সি দুজন জেলে। জিজ্ঞাসা করলাম মাছ মিলছে কেমন? উত্তরে একজন জানান, এক কেজি বৈরালি মাছের দাম ৪০০ টাকার মতো। গত বছর এ সময়েও শুধু বৈরালি মাছ বেচে দিনে ২০০০-২৫০০ টাকা ইনকাম করতেন, এখন গড়ে ৩০০-৩৫০ টাকার মাছ ধরতেই সারা দিন চলে যায়। জিজ্ঞাসা করলাম বাজার করেছেন কি না? বিরস মুখে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে গালাগালি করে বলেন, ‘বাজার করার মতো সাহস আর নাই, দুই ছেলের পড়ার খরচ জোগাতেই হিমশিম খাচ্ছি।’ জানালেন, সুযোগ পেলে শহরে যাবেন, এভাবে মাছ বেচে আর চলছে না। তারা আরও জানান, বাকি মৎস্যজীবীরাও মাছ ধরা ছেড়ে দিচ্ছেন, খেতমজুরের কাজ শুরু করেছেন অনেকে। বাকিরা এলাকা ছেড়ে শহরে যাচ্ছেন কাজের খোঁজে। সোলার প্ল্যান্টের রাস্তাসহ অন্যান্য কারণে আলোক দূষণে নদীসহ আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে এবং নিশাচর প্রাণী, পোকামাকড় ,পাখি, মাছসহ অন্যান্য প্রাণীর স্বাভাবিক জীবনচক্র ব্যাহত হছে–এমন মত অনেকের।

হারিয়ে গেল সোনা ফলানো জমি

শৈলমারীর শিমুলতলা বাজারের চায়ের দোকানে বসে স্মার্টফোনে গেম খেলছিলেন উঠতি যুবক সজীব। এগিয়ে গেলাম কথা বলতে। ইদানীং কী করছেন জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, হাতে কোনো কাজ নেই। সারা দিন বসে বসে গেম খেলি। আগে চাষাবাদ করতাম, এখন জমিও নেই কাজও নেই। সজীব জানান, তাদের পরিবারের শেষ সম্বল ছিল শৈলমারী চরের আট একর জমি। সোলার কোম্পানি তাদের বাধ্য করেছে জমি বিক্রি করতে। জমি বিক্রি করে নগদ টাকা কিছু পেয়েছেন বটে, কিন্তু সেই টাকা শৈলমারী চরে বসে নতুন উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগানোর কোনো সুযোগ নেই। এখন যেন এই টাকাটাই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরো পরিবারের জন্য। কীভাবে কাজে লাগাবেন এই টাকা, সেই পরিকল্পনা করতে করতেই নগদ টাকার অর্ধেক শেষ হয়ে গিয়েছে। সজীবদের পুরো পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষ চারজন। আগে সারা দিন খেতে কাজ করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতেন। এখন অবশ্য অশেষ অবসর। সজীবদের মতো আরও অন্তত পনেরো-বিশটা পরিবারের কথা জানা গেল, জমি কেড়ে নেয়ায় যাদের কাজ করার জায়গা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সারা জীবন কৃষির সঙ্গে যুক্ত থাকায় হুট করে অন্য পেশায় মানিয়েও নিতে পারছেন না তারা। সোজা কথায়, বেকার জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। সোলার প্ল্যান্ট যে জায়গায় গড়ে উঠেছে, সেই জায়গাজুড়ে ছিলো দুই ফসলি জমি। ওই জমিতে বহু বছর ধরে ধান চাষ হয়ে আসছে, আহামরি যত্ন বা সেচ ছাড়াই প্রতি দোনে (২৭ শতকে) ১২ থেকে ১৪ মণ ধান পাওয়া যেত। ধানের পাশাপাশি ভুট্টা, তামাক, বাদাম, লাউ, কুমড়াসহ নানা সবজির চাষ হতো এখানে। প্রতি দোনে (২৮ শতকে) ৩০ মণ করে ভুট্টা হয় শৈলমারী চরের জমিতে। ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয় ভুট্টা, ভুট্টাগাছও ব্যবহার হয় গোখাদ্য হিসেবে। তামাক চাষেও দারুণ ফলন হতো এই জমিতে। ২৭ শতক জমিতে ৮-৯ মণ করে তামাক, চার সাড়ে চার হাজার টাকা করে মণ সব মিলিয়ে কৃষকের জন্য আশীর্বাদ ছিল এই জমি। সেই জমিতে এখন গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন আর সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট। জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে, এ এলাকার কৃষির সঙ্গে যুক্ত ৬০ শতাংশ মানুষই খেতমজুরের কাজ করে। কিন্তু একই চরের দুদিকে দুটি পাওয়ার প্ল্যান্ট বানানোর কারণে এক হাজার একরের মতো ফসলি জমি হারিয়ে তার ওপর রাস্তার দুধারের জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না আরও বিপুল পরিমাণ জমির । হুট করে এই বিপুল পরিমাণ জমির ‘নাই’ হয়ে যাওয়ার ভয়ানক প্রভাব পড়েছে খেতমজুরদের ওপর, কমে গেছে তাদের কাজের ক্ষেত্র। খেতমজুরদের আয় কমার ব্যাপারটা নিশ্চিত করেন স্থানীয় মুদি দোকানিরা। এখন আর শুধু খেতমজুরের কাজ করে কোনোভাবেই সংসার চলছে না বলে জানান খেতমজুররা। অনেকেই যাচ্ছেন বড় শহরে নতুন জীবিকার খোঁজে।

শিমুলতলায় বসে আলাপের মধ্যে নামাজ সেরে দোকানে এলেন চার-পাঁচজন পৌঢ়। টুপি খুলতে খুলতে আকবর চাচা বলেন , এই প্ল্যান্টের কারণে একসময় শৈলমারী খাদ্যশস্যহীন হয়ে যাবে, একদিন হয়তো বাইরে থেকে খাদ্যশস্য এনে বাঁচিয়ে রাখতে হবে সোনা ফলানো শৈলমারীর মানুষকে। আশঙ্কা বিশেষ মিথ্যে নয়, সত্যিই খাদ্যের উৎপাদন কমেছে শৈলমারীতে। ৯০ শতাংশ পরিবারের নিজস্ব পুকুর আছে–এমনটাই জানান স্থানীয়রা। কিন্তু রাস্তার কারণে বন্যার পানি যেভাবে বাড়তে শুরু করে, তাতে নিজেদের খাওয়ার মাছটুকুও রক্ষার সুযোগ আর অবশিষ্ট নেই। 

চলছে জমি দখলের মহোৎসব

ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ারের পক্ষ থেকে দখল করা জমির পরিমাণ নিয়ে নানা ধোঁয়াশা থাকলেও স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২০০ একর জমি এরই মধ্যে দখল করেছে ইন্ট্রাকো এবং এই দখলের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এলাকার সবাই জানে, এ প্ল্যান্ট পরিচালনা করে একটা কমিটি। কয়েকজন জমিদাতা এবং এলাকার ক্ষমতাসম্পন্নদের নিয়ে বানানো হয়েছে এ কমিটি। স্থানীয়রা জানান, কমিটিতে গোটা বিশেক বিশেষ ক্ষমতাধর মানুষ আছে। জমি অধিগ্রহণের কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এ কমিটি। কোম্পানি যার জমি দখল করা প্রয়োজন বলে মনে করে, প্রথমে এই কমিটিকে দিয়ে তাকে জমি বিক্রির প্রস্তাব দেয়। কখনো কখনো প্রস্তাবের সঙ্গে চাকরি দেয়ার মিথ্যে প্রলোভনও থাকে। প্রস্তাবে রাজি না হলে কমিটির লোকজন সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার মধ্য দিয়ে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করে। মারধরের নজিরও আছে বেশ কয়েকটা। জমির মালিক এতেও রাজি না হলে পুলিশ দিয়ে ভয় দেখানো হয়। সবশেষ অস্ত্র হলো জমির চারপাশ কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে জমিতে প্রবেশে বাধা দেওয়া। এমনটাই ঘটেছিল সজীবদের আট একর জমির ক্ষেত্রে। নানারকম ভয় দেখিয়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে পুলিশ দিয়ে ভয় দেখানো হয়। তাতেও কাজ না হলে চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জমিতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। এখন চাষাবাদ করা না গেলে জমি রেখে লাভ কী ভেবে চাষিরা জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন।

কোম্পানি যার জমি দখল করা প্রয়োজন বলে মনে করে, প্রথমে এই কমিটিকে দিয়ে তাকে জমি বিক্রির প্রস্তাব দেয়। কখনো কখনো প্রস্তাবের সঙ্গে চাকরি দেয়ার মিথ্যে প্রলোভনও থাকে। প্রস্তাবে রাজি না হলে কমিটির লোকজন সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার মধ্য দিয়ে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করে। মারধরের নজিরও আছে বেশ কয়েকটা। জমির মালিক এতেও রাজি না হলে পুলিশ দিয়ে ভয় দেখানো হয়। সবশেষ অস্ত্র হলো জমির চারপাশ কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে জমিতে প্রবেশে বাধা দেওয়া।

এমদাদ মিয়ার এক একর জমিও এভাবে কাঁটাতারে ঘিরে ফেলে ইন্ট্রাকো। এমদাদ মিয়া এটা নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করেন। ফলশ্রুতিতে কমিটির লোকজনের হাতে মারধরের শিকার হন তিনি। মারধর করেই ক্ষান্ত হয়নি ইন্ট্রাকো, এমদাদের নামে উলটো মামলাও ঠুকে দিয়েছে। আরও ভয়ানক ব্যাপার হলো, ইন্ট্রাকো মোকলেছুর রহমান নামে একজনের কাছ থেকে প্রায় চার একর জমি কিনেছে ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়, যে মোকলেছুর রহমান ১৭ বছর আগে ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ক্যানসারে মারা গেছেন। আবার রাস্তার কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ায়ও অনেক কৃষক জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। দলিল জাল করা কিংবা টাকা না দিয়েই জমি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও কমিটির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি। চাকরির লোভ দেখিয়ে জমি নেওয়ার পর চাকরি পাননি এমন মানুষও আছে ঢের। জলিল জানান, এখানে সিকিউরিটি গার্ড বাদে অন্য কোনো পদের জন্য অশিক্ষিত মানুষের চাকরির সুযোগ নেই। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর লোক দিয়ে সে চাহিদাও মিটে গেছে। ফলে চরের আর একটা মানুষেরও চাকরি হওয়ার সুযোগ নেই।

শ্রমিকের টাকা চুরি

শৈলমারী স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, কাঁধে কোদাল হাতে বছর তিরিশের এক খেতমজুর এলেন। জিজ্ঞাসা করলাম প্ল্যান্টের ব্যাপারে। কোদাল ফেলে দিয়ে চিৎকার করতে করতে বলতে লাগলেন, “‘শালারা’ আমার ৬টা হাজিরার একটা টাকাও দেয় নাই। মাফ কইরা দিছি, আমার টাকা মাইরা পারলে বড়লোক হ তোরা।” অবাক হলাম ইন্ট্রাকো শ্রমিকের মজুরি দিচ্ছে না শুনে। কিন্তু খানিক পর জানলাম আরেক তথ্য, ইন্ট্রাকো প্ল্যান্টে শ্রমিকের নাশতা খরচসহ দৈনিক আনুষ্ঠানিক মজুরি ৫২০ টাকা হলেও এর থেকে ১২০ টাকা নিয়ে নেয় কমিটির লোকজন। এক বছর ধরে প্রতি শ্রমিকের মাথাপিছু প্রতিদিন ১২০ টাকা নিয়ে নিয়েছে এই কমিটির মান্যবরেরা। কমিটির অনেকেই এই শ্রমিকের মাথার ওপর থেকে টাকা চুরি করে নব্য ধনী হয়ে উঠছে–এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের। গত নভেম্বরের ১০ তারিখে ইন্ট্রাকোর ইলেকট্রিক পিলার চাপায় মারা যান ট্রাক্টরচালক রিংকু। স্থানীয়দের অভিযোগ, রিংকুকে বাঁচানোর জন্য স্থানীয়রা প্রাণপণ চেষ্টা করলেও ইন্ট্রাকোর পক্ষ থেকে ন্যূনতম খোঁজটুকুও নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি, দেওয়া হয়নি পরিবারকে ন্যূনতম ক্ষতিপূরণও।

তিস্তার যে অংশে রাস্তা বানিয়েছে ইন্ট্রাকো, সেটাই একসময় তিস্তার প্রধান প্রবাহ ছিল। দুটি প্রবাহের মধ্যে বাঁ-তীরের প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ইন্ট্রাকোর অবকাঠামোর কারণে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে না জানিয়ে, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই এবং হাইকোর্টের রায়কে অমান্য করে নদী রক্ষা কমিশনের অনাপত্তি ছাড়াই ইন্ট্রাকো তৈরি করেছে এ রাস্তা। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না-থাকা নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় আপাতত বেইলি ব্রিজের কাজ বন্ধ আছে, তবে বাকি আয়োজন চলছে পুরোদমে।

আর দশটা প্রকল্পের মতোই এখানেও কিছু প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগী আছে, যাদের কাজ দিনভর এ প্রকল্পের জয়গান গাওয়া। কথা হচ্ছিল প্রকল্পের একজন কর্মী মজিদের সঙ্গে। মজিদ জানান কীভাবে মাত্রাতিরিক্ত দামে কৃষকদের কাছ থেকে অনাবাদি জমি কিনেছে ইন্ট্রাকো। একদম দুর্গম চরে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে ইন্ট্রাকো। রাস্তা বানিয়ে চরের মানুষের যাতায়াত সহজ করে দিয়েছে ইন্ট্রাকো। ফলে চরের মানুষের উচিত ইন্ট্রাকোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। শুধু আলাপ দিয়েই থেমে থাকেননি মজিদ, আমরা কেন ইন্ট্রাকোর এই প্ল্যান্ট নিয়ে এতখানি আগ্রহী, সে নিয়েও তার সন্দেহের শেষ নেই। ইন্ট্রাকোর গার্ডদের সঙ্গে মিলে প্রজেক্ট এলাকায় কোনো নতুন মানুষ এলে তাকে চোখে চোখে রাখার কাজটাও যে মজিদ প্রচণ্ড নিষ্ঠার সঙ্গে করেন, সে ব্যাপারেও মতামত দিল অনেকে। ইন্ট্রাকো যে তার প্রজেক্টের নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রচণ্ড সচেতন, সেটা বোঝা যায় সাংবাদিকসহ অনুসন্ধিৎসু মানুষের আনাগোনা দেখলে প্রজেক্টের কর্মীদের দিয়ে তাদের চোখে চোখে রাখা এবং মিথ্যে তথ্য উপস্থাপন করার নানা গল্প শুনলে।

তবে স্থানীয় মানুষজনও থেমে নেই, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে হাজারো কৃষক মানববন্ধন করেছিলেন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে। যে কারণে সরকার কখনোই জনগণের কথায় কর্ণপাত করার প্রয়োজনবোধ করে না, সেই একই কারণে এদের মতকেও গোনায় ধরেনি। বেলা, রাজশাহী একটা পিটিশন করেছে এই রাস্তার বিরুদ্ধে। চরবাসীর যাতায়াতের রাস্তা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেওয়ায় ইন্ট্রাকোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান। নদী খুন করে দু-তিন ফসলি জমি ধ্বংস করে সোলার প্ল্যান্ট বানিয়ে সরকার কার উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়, সেটার উত্তর আমাদের খুঁজতে হবে। একজন পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক জানান, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিসহ সাংবাদিক এবং সুধী সমাজ সবাই এই প্রজেক্টের অর্থনৈতিক সুবিধাভোগী, কেউ একটা শব্দ পর্যন্ত করছেন না। কিন্তু শেষ ভরসা ওই সাধারণ মানুষ। কিন্তু এখনো লড়ছেন নিজের ভিটে বাঁচাতে, তিস্তাকে বাঁচাতে।

ইন্ট্রাকোর বীভৎস অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরার সময় দেখি আরেক কাণ্ড, নদীর মধ্যে সেনা কল্যাণ সংস্থার প্রস্তাবিত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৪০০ একর নদী। তিস্তার মাঝখানের জমি কে বেচল, কীভাবেই-বা বেচল–সেই হিসাব মেলাচ্ছিলাম, মিলল না। খোঁজ নিয়ে দেখে গেল, সত্যিই নদীর মালিকানা মানুষের হতে পারে। নদী যখন ভাঙে তখন তো আর সঙ্গে করে জমির দলিলটা নিয়ে যায় না, ফলে প্রবহমান নদীকেও অনায়াসে মালিকানাধীন সম্পত্তি বলে দাবি করা চলে। আরেক বিষফোঁড়া হলো জমির শিকস্তি/পয়স্তি আইন, যে আইনবলে নদীভাঙনের ত্রিশ বছর পর এক কিলোমিটারের মধ্যে জেগে ওঠা চরকে নিজের মালিকানাধীন জমি বলে দাবি করার সুযোগ থাকে, এভাবেই প্রবহমান নদী পরিণত হয় কাগুজে জমিতে।

ইন্ট্রাকোর বীভৎস অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরার সময় দেখি আরেক কাণ্ড, নদীর মধ্যে সেনা কল্যাণ সংস্থার প্রস্তাবিত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৪০০ একর নদী। তিস্তার মাঝখানের জমি কে বেচল, কীভাবেই-বা বেচল–সেই হিসাব মেলাচ্ছিলাম, মিলল না।

আমেনা বেগম কাজ করেন হোটেলে। সাইনবোর্ড দেখানোয় বললেন, মিলিটারিরা পারুলিয়া পয়েন্টে তিস্তাকে বেঁধে দেবে, দিলে নদীর এই প্রবাহটা মরে যাবে, তখন শুকনো নদীতে সোলার প্ল্যান্ট করা হবে এবং এই নদী যদি মরে যায়, তাহলে নদীভাঙনের হাত থেকে এলাকার লোকজন বেঁচে যাবে। জিজ্ঞাসা করলাম, নদী মরে গেলে তো আপনাদেরই ক্ষতি হবে। শীতকালে সেচের পানি পাবেন কোথায়? উত্তরে তিনি বলেন, মিলিটারিরা মোটরে পানি তোলার জন্য কারেন্ট দেবে। নদী বিক্রি হয়ে গেছে, তবুও অনেকে খুশিও হচ্ছেন তিস্তা মরে গেলে নদীভাঙন আর বন্যার ভয় থেকে মুক্তি পাবেন ভেবে, আমরাই শুধু খুশি হতে পারলাম না…

সুজয় শুভ: সংগঠক ও শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •