সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৬ জুলাই- ২৬ অক্টোবর ২০২২)
অর্থনীতি
হবিগঞ্জে শিল্পকারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে
২৭ জুলাই, ২০২২, প্রথম আলো
সায়হাম টেক্সটাইল ও কটন মিলে উৎপাদিত সুতা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে দেশের শতভাগ রপ্তানিমুখী বহু পোশাক কারখানাও সুতা নেয়। কিন্তু দেশে তীব্র লোডশেডিং শুরু হওয়ায় কয়েক দিনে এই কারখানার উৎপাদন কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত সায়হাম টেক্সটাইল ও কটন মিলের উৎপাদন প্রকৌশলী রেজাউল হকের মুখেই বিষয়টি শোনা যাক। গত রোববার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন আমরা ভালোই উৎপাদন করে আসছিলাম। কিন্তু কিছুদিন ধরে আমাদের এলাকায় গ্যাসের ফ্লো (চাপ) কমে গেছে। পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়েছি। গ্যাসের ফ্লো যেখানে ১৫০ থেকে ১২০ পিএসআই থাকার কথা সেখানে এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪৭ পিএসআই। এ পরিস্থিতিতে আমাদের উৎপাদন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কমে গেছে।’
শুধু সায়হাম টেক্সটাইল ও কটন মিলই নয়, হবিগঞ্জে গড়ে ওঠা শতাধিক শিল্পকারখানা এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের তীব্র সংকটে পড়েছে। এতে তাদের উৎপাদন কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই অবস্থায় অনেক প্রতিষ্ঠানই লোকবল কমানোর চিন্তা করছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে হবিগঞ্জ জেলার ওলিপুর থেকে মাধবপুর উপজেলা সদর পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৮–১০ বছর আগে শতাধিক শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারের সুয়োগ থাকার কারণেই মূলত হবিগঞ্জে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল।
দেশের অন্যতম গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড, রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড এবং শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র ও বিবিয়ানা বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র হবিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। হবিগঞ্জের পাঁচটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। কিন্তু বিদ্যুৎ ও গ্যাসের পর্যাপ্ততাকে বিবেচনায় নিয়ে সেখানে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো এখন বিপর্যয়ে পড়েছে।
সাফকো স্পিনিং মিল লিমিটেডের পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা এত দিন ৭০টি মেশিন চালিয়ে আসছিলাম। বিদ্যুৎ–সংকটের কারণে এখন ৩২টি মেশিন চালাতে হচ্ছে। তা–ও পরিমাণমতো গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।’
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জেনারেল ম্যানেজার দীপক কুমার দেব বলেন, ‘আমরা এখন কঠিন সময় পার করছি। গ্যাসের চাপ কম থাকায় বাধ্য হয়ে কারখানার উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি জানান, এই শিল্প পার্কে ৩০ হাজার মানুষ কাজ করেন।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডের উপমহাব্যবস্থাপক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘গ্যাস সমস্যা শুধু এই এলাকার নয়, এটি এখন দেশের সমস্যা। আমরা যে গ্যাস উৎপাদন করি, তা জাতীয় গ্রিডে সরাসরি চলে যায়।’
জানতে চাইলে জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিভিশনের ডিজিএম রাহুল করিম প্রথম আলোকে জানান, এটি এখন জাতীয় ইস্যু। এই বিষয়ে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র ঢাকা থেকে বিস্তারিত অবহিত করেন। তাই তাঁর মন্তব্য করার কোনো সুযোগ নেই।
প্রভাবশালীদের ক্ষমতা বুঝল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
২৮ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের প্রধান তিন শাখার বৈদেশিক ঋণ কার্যক্রম গত মঙ্গলবার বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। চাপের মুখে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ঋণ কার্যক্রম খুলে দিতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকটি নিয়ে সিদ্ধান্তটি ২৪ ঘণ্টাও ধরে রাখতে পারল এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
জনতা ব্যাংকের শাখা তিনটি হলো ঢাকার জনতা ভবন করপোরেট শাখা ও লোকাল অফিস এবং চট্টগ্রামের সাধারণ বীমা ভবন করপোরেট শাখা। ব্যাংকটির ৭৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের অর্ধেকই এই তিন শাখায়। আর প্রভাবশালী গ্রাহকেরাও এই তিন শাখার গ্রাহক। এর ফলে ঋণ কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্তে বেশি সময় স্থির থাকতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০১৫ সালেও জনতা ব্যাংক ছিল রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে। আগে ব্যাংকটির গ্রাহক ছিল দেশের প্রথম শ্রেণির রপ্তানিকারক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। সময়ের ব্যবধানে এখন দেশের শীর্ষ খেলাপি ও প্রভাবশালীরা ব্যাংকটির বড় গ্রাহক। এ জন্য খেলাপি ঋণের হারও ১৯ শতাংশ। আগে ব্যাংকটি অন্য ব্যাংককে টাকা ধার দিত, এখন প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্য ব্যাংক থেকে পাঁচ-ছয় হাজার কোটি টাকা ধার করে চলছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বেশ আগেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যেটা চলে গেছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত বাতিলে আমি অবাক হয়নি। এটাই এখন দেশের বাস্তবতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন বলে কিছু নেই। ব্যাংক খাতে অত্যন্ত অসুস্থ ধারা চলছে।’
কেন ঋণ বন্ধের সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব কারণে ব্যাংকটির তিন শাখার বৈদেশিক ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে তার মধ্যে অন্যতম হলো চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত নতুন ১০ হাজার ২৮০ কোটি টাকা ঋণের ৮৪ শতাংশই সৃষ্টি হয়েছে নন-ফান্ডেড দায় থেকে। অর্থাৎ ব্যাংকটি ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলে বা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে যে ঋণ দিয়েছে, তার দায় বৈদেশিক মুদ্রায় শোধ করেনি গ্রাহকেরা। ফলে ব্যাংকটি বাধ্য হয়ে ওই গ্রাহকের নামে টাকা ঋণ সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকটির এমন ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৩০ কোটি টাকা। আর ব্যাংকটির ফোর্সড ও ফান্ডেড ঋণ ১৯ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা।
ঋণ কার্যক্রম স্থগিতের চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এসব ঋণ স্বাভাবিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়নি। রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসন না হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং এই প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে অর্থ পাচার হওয়ায় ঝুঁকি রয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ থেকে দেওয়া ঋণের বিপরীতে রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত না হয়েই বারবার একই গ্রাহককে ইডিএফ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ইডিএফ-সুবিধার অপব্যবহার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইডিএফ গঠন করা হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থ দিয়ে। ডলার-সংকটে ইডিএফ থেকে ঋণ নেওয়া কঠিন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেসব গ্রাহক ডলারে ঋণ নিয়ে ডলার শোধ করছেন না, তাঁদের ইডিএফ-সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকটির ১৭ বড় গ্রাহকের ফান্ডেড দায় ২৯ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার ৩৪ কোটি টাকা এসেছে ঋণপত্র ও নন-ফান্ডেড দায় থেকে। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট ও অ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও জালিয়াতি ধরা পড়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবারের চিঠিতে বলা হয়, তিন শাখার বৈদেশিক বাণিজ্য অর্থায়ন আপাতত স্থগিত করা হলো। বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে ঋণপত্র খোলাও স্থগিত করা হলো।
পিছু হটল কেন
এই তিন শাখার মধ্যে লোকাল অফিসের গ্রাহক কয়েকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, অ্যাননটেক্স ও প্রভাবশালী কয়েকজন গ্রাহক। এই শাখার ২৫ শতাংশ ঋণই খেলাপি। ভবন শাখার গ্রাহক সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন, ক্রিসেন্ট গ্রুপ। এই শাখার ৩০ শতাংশ ঋণই খেলাপি। চট্টগ্রামের সাধারণ বীমা ভবন শাখার গ্রাহক দেশের কয়েকটি ব্যাংকের মালিকের প্রতিষ্ঠান।
গতকাল দুপুরে জনতা ব্যাংকে গেলে কর্মকর্তারা জানান, এই সিদ্ধান্ত দুই দিনও বহাল রাখতে পারবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই যা সত্য হয়ে ওঠে।
গতকাল সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) চিঠি দিয়ে জানায়, পর্যাপ্ত তারল্য সংরক্ষণসাপেক্ষ বৈদেশিক ঋণ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা স্থগিত করা হলো। তিন শাখার বৈদেশিক ঋণের তথ্য প্রতি মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ও তহবিলের অবস্থা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে জানাতে হবে।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কিছু শর্ত দিয়ে সিদ্ধান্তটি স্থগিত করা হয়েছে। শাখা তিনটির কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে।
কেন সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তার ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।
দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ৩১ বিলিয়ন ডলার
২৯ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
“আমদানি খরচ বাড়ায় দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রায় এখন আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। আর এতেই চাপ তৈরি হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। কারণ, জ্বালানি, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (৪৮ বিলিয়ন) থেকে কমে হয়েছে ৩ হাজার ৯৬১ কোটি ডলার (৩৯ বিলিয়ন)। অর্থনীতির চাপে পড়লে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যে কতটা প্রয়োজন হয়ে ওঠে, এর ফলে তা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, এই ৩৯ বিলিয়ন ডলারের পুরোটাই কি ব্যবহারযোগ্য? কারণ, বিভিন্ন খাতে রিজার্ভ থেকে দেওয়া আছে ৮ বিলিয়ন ডলার, যা চাইলেই সহজে ফেরত পাওয়া যাবে না। সংকট বাড়লে পুরো রিজার্ভও ব্যবহার করা যাবে না। সুতরাং এ মুহূর্তে দেশে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ ৩ হাজার ১০০ কোটি বা ৩১ বিলিয়ন ডলার।…
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের অর্থ বিদেশে বিভিন্ন বন্ড, মুদ্রা ও স্বর্ণে বিনিয়োগ করে রেখেছে। আবার রিজার্ভের অর্থে দেশেও তহবিল গঠন করেছে। রিজার্ভ থেকে ৭০০ কোটি ডলার (৭ বিলিয়ন) দিয়ে গঠন করা হয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল। আবার রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠন করা হয়েছে লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ), গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ)। বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে ও সোনালী ব্যাংককে অর্থ দেওয়া হয়েছে। আবার পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতেও রিজার্ভ থেকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। এসব মিলিয়ে ব্যবহার হয়েছে আট বিলিয়ন ডলার। ফলে প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ৩ হাজার ১০০ কোটি (৩১ বিলিয়ন) ডলার।”
সব রেকর্ড ভেঙে খোলা বাজারে ডলার আজ ১১২ টাকা
২৬ জুলাই, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন
খোলা বাজারে মার্কিন ডলারের দাম আরও বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার সব রেকর্ড ভেঙে খোলা বাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১১২ টাকায়।
নগদে ডলার কেনা বেচায় জড়িত ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক সপ্তাহে দেশে খোলা বাজারে দ্রুত ডলারের দাম বেড়েছে। গতকালও সাধারণ মানুষ ১০৭ টাকায় ডলার পেয়েছেন। এক দিনের ব্যবধানে ডলারের দাম ৫ টাকা বেড়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচায় ব্যবসায় যুক্ত একজন বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই খোলা বাজারে নিয়মিত ডলারের দাম বেড়েছে। গত ঈদুল আজহার আগেও বাজারে ডলারের দাম ১০০ টাকার নিচে ছিল।
জিডিপি-সঞ্চয় অনুপাত তীব্রভাবে নেমে গেছে
২৬ জুলাই, ২০২২, বণিক বার্তা
কোনো দেশের বিনিয়োগ সক্ষমতার অন্যতম মাপকাঠি হলো সঞ্চয়-জিডিপি অনুুপাত। যে দেশের সঞ্চয়-জিডিপি অনুুপাত যত বেশি, সে দেশের বিনিয়োগ সক্ষমতাও শক্তিশালী। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশে সঞ্চয়-জিডিপির ন্যূনতম প্রত্যাশিত অনুপাত ৩২-৩৪ শতাংশ। তিন বছর আগেও দেশে এ অনুপাত ছিল প্রত্যাশিত মাত্রার কাছাকাছি। এরপর গত তিন বছরে জিডিপির আকার লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বাড়লেও সে অনুপাতে সঞ্চয় বাড়েনি। উল্টো গত অর্থবছরে সঞ্চয়-জিডিপির অনুপাত আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির চাবিকাঠি হলো বিনিয়োগ। সরকার ও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ দেশ ও দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তোলে। উন্নত হয় জনগণের জীবনমান। আর বিনিয়োগের বড় একটি অনুঘটক হলো জাতীয় সঞ্চয়। সামগ্রিক সঞ্চয় থেকেই বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের জোগান আসে। এজন্যই অর্থনীতিবিদরা সঞ্চয়-জিডিপি অনুুপাত শক্তিশালী করার ওপর জোরারোপ করেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও দেশে সঞ্চয়-জিডিপি অনুপাত ছিল ৩১ দশমিক ১৪ শতাংশ। পরের অর্থবছরে এ অনুপাত কিছুটা বাড়লেও তার পর থেকে কমছে। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়-জিডিপির অনুপাত নেমে আসে ৩০ দশমিক ৭৯ শতাংশে। সর্বশেষ গত অর্থবছরে (২০২১-২২) দেশের সঞ্চয়-জিডিপির অনুপাত নেমেছে ২৫ দশমিক ৪৫ শতাংশে। জিডিপির অনুপাতে সঞ্চয় কমে যাওয়ার এ প্রবণতাকে অর্থনীতির জন্য অশুভ লক্ষণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইএমএফের কাছে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে সরকার
২৬ জুলাই, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রী ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ও বাজেট সহায়তা হিসেবে এ অর্থ চেয়েছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর বিষয়টিকেও কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে নথিতে।
রোববার আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভার কাছে চিঠি পাঠিয়ে ঋণের অনুরোধ জানানো হয়।
দেশে আসছে না বড় অংকের রফতানি আয়
২৭ জুলাই, ২০২২, বণিক বার্তা
রফতানীকৃত পণ্যের বিপরীতে যে পরিমাণ আয় দেশে আসার কথা তা আসছে না। ব্যাপক ব্যবধান থেকে যাচ্ছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রফতানি পরিসংখ্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি আয়ের তথ্যে। প্রতিষ্ঠান দুটির প্রায় তিন বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এ সময় রফতানীকৃত পণ্যের বিপরীতে অপ্রত্যাবাসিত অর্থের পরিমাণ ক্রমেই বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিডের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ক্রেতা ও রফতানিকারকের বাণিজ্য বিরোধের অনেক ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে রফতানির বিপরীতে মূল্য হ্রাসের ঘটনাও বেড়েছে। আবার ঋণপত্রের বিপরীতে অর্থ পরিশোধের সময়সীমাও বেড়ে গিয়েছে। এ সবকিছুরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে রফতানির বিপরীতে প্রত্যাবাসিত অর্থের পরিসংখ্যানে।
নিয়মিতভাবেই রফতানির উদ্দেশ্যে জাহাজীকৃত পণ্যের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে ইপিবি। আর সে রফতানির বিপরীতে আয় প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য বিরোধের প্রেক্ষাপটে মূল্য হ্রাসের কারণে এ দুই পরিসংখ্যানে পার্থক্য থাকতেই পারে। সেক্ষেত্রে রফতানির বিপরীতে প্রত্যাবাসিত অর্থের পরিমাণও কম হতে পারে। তবে তা কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। আবার অর্থ পরিশোধের সময়সীমাও বাড়তে পারে। তবে তা নির্ধারিত সময়ে সমন্বয় হয়ে যায়। সব মিলিয়ে রফতানির বিপরীতে অর্থ প্রাপ্তির পার্থক্য খুব বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। তবে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ক্রেতা ও রফতানিকারকদের যোগসাজশে অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটতে পারে। সবকিছুর প্রভাবে পণ্য রফতানি ও প্রাপ্ত অর্থের পার্থক্য বেড়েই চলেছে। ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ অনুযায়ী তিন বছরে রফতানির বিপরীতে অপ্রত্যাবাসিত বা অপ্রাপ্ত অর্থের হার ১৩ শতাংশেরও বেশি।
ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের। যদিও অর্থ এসেছে ২ হাজার ৯৯৬ কোটি ডলার। এ হিসাবে রফতানিতে অপ্রত্যাবাসিত অর্থ রয়ে গিয়েছে ১১ শতাংশের বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ডলারের পণ্য। এর বিপরীতে এসেছে ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি ডলার। এ হিসাবে রফতানি ও প্রত্যাবাসিত অর্থের পার্থক্য ১২ শতাংশের বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ডলারের পণ্য। এর বিপরীতে এসেছে ৩ হাজার ১৬১ কোটি ডলার। এ হিসাবে রফতানি ও প্রত্যাবাসিত অর্থের পার্থক্য ১৮ শতাংশ।
সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ গুনতে খরচ ১৫৭৫ কোটি টাকা
২৭ জুলাই ২০২২, জাগো নিউজ
দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ এবং নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ১২ হাজার ৬২৯ জন। বহুল প্রতীক্ষিত জনশুমারি ও গৃহগণনায় এ তথ্য মিলেছে। আর দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ গুনতে খরচ হয়েছে এক হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা।
দেশের প্রথম ডিজিটাল এ জনশুমারিতে তথ্য সংগ্রহের জন্য তিন লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব কেনা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ৪৪৭ কোটি ৭৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭০ টাকা। এছাড়া প্রায় ৪ লাখ গণনাকারী ও সুপারভাইজারদের সম্মানি বাবদ ৪৫৭ কোটি টাকা খরচ হয়। এসব টাকা বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে, আইন অনুযায়ী প্রতি ১০ বছর পরপর দেশের প্রতিটি মানুষকে গণনার আওতায় আনা হয়। এজন্য ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন করা হয়। শুরুতে এ প্রকল্পের খরচ ধরা হয় এক হাজার ৭৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা খরচ করা হচ্ছে। পরে প্রকল্পের সংশোধনীতে ব্যয় কিছুটা কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা।
১০ মেগা প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে গেছে ৯১ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা
২৮ জুলাই ২০২২, শেয়ার বিজ
গত মাসে উদ্বোধন করা হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা বহুমুখী সেতু। তবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে সড়কপথে যুক্ত করা এ সেতুটির নির্মাণ প্রক্রিয়া খুব একটা সহজ ছিল না। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সেতু নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে ছয় বছর। তবে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল অনেক আগে। ২০০৭ সালের আগস্টে এ প্রকল্পটি অনুমোদন করে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
যদিও প্রথমে শুধু সড়ক সেতু নির্মাণের কথা ছিল পদ্মা নদীর ওপর। এজন্য সে সময় ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয় লাভ করে ক্ষমতা গ্রহণের পর সেতুটিতে রেলপথ যুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য সেতুটির নকশাতেও পরিবর্তন আনা হয়। ফলে ২০১১ সালে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।
প্রকল্পটির সব প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগশেষে পদ্মা সেতুর নির্মাণব্যয় আরও বেড়ে যায়। এতে ২০১৬ সালে প্রকল্পটি দ্বিতীয় দফা সংশোধন করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। পরে ড্রেজিং স্পয়েল ফেলার জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়েও আরও এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ে। এতে সর্বশেষ ২০১৮ সালে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এতে সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণব্যয় এ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ হাজার ৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বা ১৯৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে বাস্তবায়ন বিলম্বসহ কয়েকটি কারণে সেতুটি নির্মাণব্যয় আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
একই অবস্থা এমআরটি-৬ (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট-৬) তথা মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের। প্রাথমিকভাবে এর আওতায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের কথা ছিল। তবে গত সপ্তাহে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এতে মতিঝিলের পরিবর্তে মেট্রোরেল যাবে কমলাপুর পর্যন্ত। পাশাপাশি আয় বৃদ্ধির জন্য মেট্রোরেলের স্টেশন এলাকায় যুক্ত হবে স্টেশন প্লাজা। স্টেশনে ওঠানামার জন্য ফুটপাতের পাশে জমি/বাড়ি অধিগ্রহণ করতে হবে। এসব কারণে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে গেছে।
২০১২ সালের জুলাইয়ে প্রথম এমআরটি-৬ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। সে সময় এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি সাত লাখ টাকা। তবে সংশোধিত হিসাবে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ মেট্রোরেল নির্মাণব্যয় বেড়ে গেছে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা ৫২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
শুধু এ দুটোই নয়, দেশের প্রায় সব মেগাপ্রকল্পের ব্যয় এভাবেই ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ প্রাথমিক পরিকল্পনায় ত্রুটি। পরবর্তী সময়ে সে ত্রুটি সংশোধন করতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে যায়। এতে এদিকে বাড়ে রাষ্ট্রের ব্যয়ের বোঝা। অপরদিকে প্রকল্পগুলো থেকে প্রাপ্ত সুবিধার হার কমে আসে। তাই সবসময়ই প্রকল্পের বারবার ব্যয় বৃদ্ধির বিরোধিতা করেন বিশেষজ্ঞরা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ১০টি মেগাপ্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করেছে শেয়ার বিজ। এতে দেখা যায়, পরিকল্পনার ত্রুটি সংশোধনে এ ১০ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৯১ হাজার ৪৫০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা তথা ৬৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তবে কিছু প্রকল্পের কাজ এখনও অনেক বাকি। ফলে এগুলোর ব্যয় আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এমনই একটি প্রকল্প কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওই ব্যয়েই প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। সে সময় এর ব্যয় ছিল আট হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যদিও ঋণচুক্তি সম্পাদনে দেরি হওয়ায় টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় আরও দুই বছর পর। আর জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি, ভ্যাট ও কর পরিশোধের হার বৃদ্ধি, সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি, পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তর ইত্যাদি খাতে ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে ২০২০ সালে টানেলটির নির্মাণব্যয় বেড়ে যায়। সে সময় এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এরপরও টানেল নির্মাণব্যয় স্থির থাকেনি। ২০২১ সালে জরুরি ভিত্তিতে ৪৯৪ কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব বিশেষ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। তবে নির্মাণব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ প্রকল্প ব্যয়ের পাঁচ শতাংশের মধ্যে থাকায় তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) পাঠানো হয়নি। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (অবকাঠামো) এ প্রস্তাব অনুমোদন করেন। পরে প্রকল্পটি সংশোধনের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এ ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এদিকে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক। এটি নির্মাণে একটি প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১৬ সালের মে মাসে। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে তা বেড়ে হয় ছয় হাজার ৮৯২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। তবে প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি থেকে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির বাকি কাজ শেষ করার জন্য ২০১৮ সালে নেয়া হয় ২য় প্রকল্প, যা অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত।
দ্বিতীয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় চার হাজার ১১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এরই মধ্যে প্রকল্পটিতে আরও কিছু বিষয় নতুন যুক্ত হয়। এতে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়ায় চার হাজার ১৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এতে দুই প্রকল্প মিলিয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১১ হাজার ৪৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই প্রকল্প মিলিয়ে ব্যয় বেড়েছে চার হাজার ৪৭১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বা ৭৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
অপরদিকে জয়দেবপুর থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেন নির্মাণে দুটি পৃথক প্রকল্প নেয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম প্রকল্পটি হলো জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইল হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার চার লেন নির্মাণ। ২০১৩ সালের এপ্রিলে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৭৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। চার দফা বৃদ্ধির পর ২০২০ সালের জুনে এ ব্যয় দাঁড়ায় ছয় হাজার ২১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তবে পঞ্চম দফা প্রকল্পটি সংশোধন করা হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। এ সময় মহাসড়কটির নির্মাণব্যয় কিছুটা কমে দাঁড়ায় ছয় হাজার ১৬৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে তিন হাজার ৩৮০ কোটি টাকা বা ১২১ দশমিক ২১ শতাংশ।
একই অবস্থা এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক ১৯০ কিলোমিটার চার লেন নির্মাণ প্রকল্পটির। এটি অনুমোদন করা হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। সে সময় এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি এক লাখ টাকা। তবে ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গেছে চার হাজার ৪৭৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বা ৪০ শতাংশ। উভয় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে পরিকল্পনার ত্রুটি সংশোধনে।
রেলওয়ের চলমান মেগাপ্রকল্পগুলোরও একই অবস্থা। এর মধ্যে যমুনা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেল সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা। চার দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের বৃহত্তম এ রেল সেতু নির্মাণে ছিল পরিকল্পনাগত ত্রুটি। পরে তা সংশোধন করে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করা হয়।
এতে পিলারের সংখ্যা ৪১টি থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০টি। একইভাবে খসড়া নকশায় পাইলের গভীরতা (ডেপ্থ) ধরা হয়েছিল ২৭ দশমিক ৭৯ মিটার। চূড়ান্ত নকশায় তা বেড়ে হয়েছে ৩৭ মিটার। আর খসড়া নকশায় স্প্যান লেন্থ (দৈর্ঘ্য) ধরা হয়েছিল ১২০ মিটার। পরে তা কমিয়ে ১০০ মিটার করা হয়। সব মিলিয়ে রেলসেতুটির নির্মাণব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ নির্মাণব্যয় বেড়েছে সাত হাজার ৪৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বা ৭২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
একই অবস্থা পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। তবে নকশা চূড়ান্ত করার সময় বেশকিছু বিষয় পরিবর্তন করতে হয়। এতে ২০১৮ সালে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণব্যয় এক দফা বাড়ানো হয়েছে। সে সময় ঢাকা-মাওয়া-যশোর রেলপথ নির্মাণব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
যদিও প্রকল্পটির ব্যয় আরেক দফা ব্যয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। এক্ষেত্রে এক হাজার ১৭৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি খাতে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এ ব্যয় করা হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৪২৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বেড়েছে পাঁচ হাজার ৪৩৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তবে চূড়ান্তভাবে নির্মাণব্যয় আরও বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
রেলের মেগাপ্রকল্পগুলোর সবচেয়ে ব্যয় বেশি বেড়েছে দোহাজারি-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে। কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১০ সালে। ১২৮ কিলোমিটার এ রেলপথ নির্মাণে সে সময় ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধি, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি পাওয়া, ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ ও হাতি চলাচলের নিরাপত্তা, রুট ও নকশায় পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে ২০১৬ সালে বিস্তারিত নকশা প্রণয়নশেষে প্রকল্পটি বড় ধরনের সংশোধন করা হয়।
এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ নির্মাণব্যয় বেড়ে যায় ১৬ হাজার ১৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৮৭৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে মিয়ানমারের অনুমতি না পাওয়ায় সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে না। ফলে ২৮ কিলোমিটার কমবে এ রেলপথের দৈর্ঘ্য। আর প্রকল্পটির ব্যয়ও কমানো হবে।
অপরদিকে ২০১৪ সালের আগস্টে অনুমোদন করা হয় মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। তবে এর আওতায় কয়লা খালাসে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনায় ছিল ত্রুটি। আবার বিদ্যুৎ বিতরণ উপকেন্দ্রের সক্ষমতাও ছিল কম। এগুলো সংশোধন করতে হয়েছে। পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণব্যয় বেড়ে গেছে।
প্রাথমিকভাবে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। তবে পরিকল্পনা সংশোধনের ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫২ হাজার ৩৮৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ১৬ হাজার ৪০৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বা ৪৫ দশমিক ৫৯ লাখ টাকা।
কুড়িগ্রামে কাজের ‘মঙ্গা’ কাটেনি
৩০ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
বন্যায় বাড়ি ভেঙে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের কিনারে পড়ে ছিল একটি কদমগাছ। সেই গাছ কেটে খড়ি বানিয়ে নৌকায় করে বিক্রি করতে এনেছেন জসমত আলী। খড়ি বেচলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হবে। সেই টাকা দিয়ে চাল, ডাল আর লবণ কিনে বাড়ি ফিরবেন।
ষাটোর্ধ্ব দিনমজুর জসমত আলীর সঙ্গে দেখা মোল্লার হাটে। তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রবেষ্টিত বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে। ব্রহ্মপুত্র তাঁর জমিজিরাত কেড়ে নিয়েছে। এখন বতুয়াতলীর চরে অন্যের জমিতে থাকেন। তাঁর সম্বল বলতে আছে শুধু দুটি টিনের ঘর।
জসমত বললেন, ‘নদী ভাঙছে ১০–১৫ বারের বেশি ছাড়া কম হবার নয়। অভাবত পড়ি, ঘরবাড়ি সরার লাগে গরু–ছাগল বিক্রি করা নাগে। বন্যা ও নদীভাঙন হামার সব শ্যাষ করি দিছে।’
কুড়িগ্রাম দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত জেলা। জনসংখ্যা ২৩ লাখের কিছু বেশি। দারিদ্র্যের হার ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ। এখানকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। তবে বছরের একটি বড় সময় কুড়িগ্রাম বন্যাকবলিত থাকে। ফলে বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে জসমত আলীর মতো কুড়িগ্রামের ৪২০টি চরের অধিকাংশ হতদরিদ্র পরিবারকে অভাব-অনটনের সঙ্গে নিরন্তর লড়াই করতে হয়। কাজের সংকটে মৌসুমি দারিদ্র্যের শিকার সমতলের মানুষও।
দারিদ্র্যের ধরন বদলেছে
একসময় মঙ্গা নিয়ে হইচই হতো। মূলত বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে কৃষিনির্ভর দিনমজুর দরিদ্র মানুষের চরম খাদ্যঘাটতির সমস্যাকে মঙ্গা বলা হতো। মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত এ সময়টাতেই মানুষের অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিত। খাবারের সংগ্রহ কমে যেত, কাজের সুযোগ থাকত না। কুড়িগ্রাম ছিল মঙ্গার অন্যতম কেন্দ্র। তবে গত এক দশকে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এ অঞ্চলে। ফলে আগের চিত্র কিছুটা পাল্টে গেছে।
অবশ্য সরেজমিনে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার ও তিস্তা নদী অববাহিকা অঞ্চলগুলোতে ঘুরে এখনো এ এলাকার হাজার হাজার পরিবারের অভাব–অনটনের সঙ্গে নিরন্তর লড়াই চোখে পড়ে। একসময় তিনবেলা খেতে না পাওয়ার কষ্ট ছিল। এখন অভাব ভিন্ন, খাদ্যের বদলে পুষ্টির অভাব দেখা যায়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে ঘাটতি রয়েছে।
১৮ জুলাই চিলমারী উপজেলার জোড়গাছ বাজারে দেখা হয় কয়েকজন দিনমজুরের সঙ্গে। তাঁরা দুপুরের কড়া রোদে গামছায় বেঁধে হেলেঞ্চাশাক নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। কৃষিশ্রমিক হযরত আলী বলেন, তাঁরা মাছ, মাংস কিনে খেতে পারেন কম। বেশির ভাগ সময় শাকপাতা সংগ্রহ করে খান।
বৃহত্তর রংপুরের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আরডিআরএস কুড়িগ্রামে কাজ করছে প্রায় চার দশক ধরে। এ সংস্থার জেলা প্রোগ্রাম ম্যানেজার তপন কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, কুড়িগ্রামে মঙ্গা না থাকলেও দুই ধরনের দারিদ্র্য আছে। একটি হলো মৌসুমি দারিদ্র্য। বিশেষ করে জুন থেকে সেপ্টেম্বরে বাড়িঘরে বন্যার পানি উঠলে মানুষ চরম বিপদে পড়েন। তাঁদের হাঁস, মুরগি ও ছাগল মারা যায়। ঘরবাড়ির ক্ষতি হয় ও ফসল নষ্ট হয়। তখন তাঁরা চরম খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন এবং আরও দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যান।
দারিদ্র্যের আরেকটি ধরন হলো, যাঁরা একেবারে চরে বাস করেন, তাঁদের কোনো জমি নেই। তাঁরা সব সময় দারিদ্র্যের মধ্যেই থাকেন। তাঁরা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে চলেন। এই মানুষগুলোর বেশির ভাগ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদনের সুবিধাবঞ্চিত।
ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে বাড়লো ৬ টাকা
০১ আগস্ট ২০২২, ইত্তেফাক
আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ সরকার ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়েছে। ডিলার পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। সোমবার (১ আগস্ট) থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪, পেট্রলে ৪৪ টাকা বাড়ল
০৫ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা আর পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
এখন এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে ১১৪ টাকা লাগবে। এক লিটার অকটেনের জন্য দিতে হবে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি লিটার পেট্রলের দাম হবে ১৩০ টাকা।
দূরপাল্লার বাসে কিলোমিটারে ভাড়া বাড়ল ৪০ পয়সা, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩৫ পয়সা
০৬ আগস্ট ২২, সমকাল
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর একদিন পরেই বেড়ে গেল বাস ভাড়া। দূরপাল্লার বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। অর্থাৎ দূরপাল্লার বাসভাড়া কিলোমিটারে ৪০ পয়সা বেড়ে যাওয়ায় ২২ শতাংশ ভাড়া বাড়ল।
এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা থেকে বেড়ে নতুন ভাড়া দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৫০ পয়সা। এই দুই মহানগরে প্রতি কিলোমিটারে ৩৫ পয়সা বাড়ায় ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ ভাড়া বেড়ে গেল।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল, আরও চাপে পড়ল আমজনতা
০৬ আগস্ট ২২, সমকাল
মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটে নিত্যপণ্যের দামে সংসার চালাতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ঠিক সে সময়ে এলো বড় দুঃসংবাদ। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ৯ মাসের মাথায় ফের ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এবার অকটেন ও পেট্রোলের দামও বেড়েছে। এক লাফে ৪৭ শতাংশের বেশি দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে আরও চাপে পড়বে আগে থেকেই দ্রব্যমূল্যের চাপে চিড়েচ্যাপ্টা সাধারণ মানুষের জীবন। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সরকার আইএমএফের কাছ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে ভর্তুকি কমাতে তেলের দাম বাড়িয়েছে।
এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম এর আগে কখনোই এত বেশি বাড়ানো হয়নি বলে সংশ্নিষ্টরা জানান।
বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমতে শুরু করলেও দেশে এক লাফে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৪ টাকা। এবার বেড়েছে অকটেন, পেট্রোলের দামও। অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ থেকে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোল লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত নভেম্বরের মতো এবারও সময় না দিয়েই কার্যকর করা হয়েছে বর্ধিত দাম। শুক্রবার রাত ১২টায় নতুন দামে তেল বিক্রি শুরু হয়। এর দুই ঘণ্টা আগে দাম বৃদ্ধির গেজেট জারি করে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে পেট্রোল পাম্পে তেলের জন্য ভিড় করেন হাজার হাজার ক্রেতা। এতে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। তবে পাম্পগুলো ১২টা পর্যন্ত তেল বিক্রি বন্ধ রাখে।
সার্বিকভাবে তেলের দাম ৪৭ শতাংশেরও বেশি বাড়িয়েছে সরকার। এর আগে গত ৪ নভেম্বর ডিজেলের লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। এতে দ্রব্যমূল্য আরও বেড়ে যায়। এবারের দাম বৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হবে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
গণপরিবহনে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায়
৭ আগস্ট, ২০২২, ভোরের কাগজ
সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও গণপরিবহনে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে পরিবহন শ্রমিকরা। এই বাড়তি ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের চলছে তর্কবিতর্ক, কথা কাটাকাটি এমনকি পরিস্থিতি হাতাহাতি পর্যায়েও পৌঁছেছে।
রবিবার (৭ আগস্ট) থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে। বাসগুলোতে এখনও বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট টাঙানো হয়নি। তাছাড়া নতুন ভাড়া কার্যকরের প্রথম দিন যাত্রীরাও এলাকা ভেদে দূরত্ব সম্পর্কে অবহিত নন। এ অবস্থায় পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। চালক ও কন্ট্রাক্টর যে ভাড়া বলছেন, তা দিতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। এমনই অভিযোগ করেছেন মিডলাইন পরিবহনের যাত্রী আনিসুর রহমান। এ নিয়ে ঘটেছে হাতাহাতির ঘটনাও।
বাসভাড়া বৃদ্ধির পর এখনও রাজধানীর রাস্তায় সব বাস নামেননি। এ কারণে এখনও পরিবহন সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। উপায় না পেয়ে অনেকেই পরিবহন কর্মীদের চাহিদার অনুযায়ী ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে যাচ্ছেন।
সীমান্ত দিয়ে জ্বালানি তেল পাচার হয় না: পরিচালক অপারেশন, বিজিবি
৮ আগস্ট, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ভারত প্রসঙ্গ বারবার আলোচনায় আসছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তেলের দামের ব্যবধান থাকায় দেশ থেকে জ্বালানি তেল পাচার হয়। তাই ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করতে দাম বাড়ানো হয়েছে।
তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বলছে, দেশের কোনো সীমান্ত দিয়ে জ্বালানি তেল পাচার হয় না। ২০২১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মাত্র ৭১১ লিটার তেল পাচারের চেষ্টা করা হয়েছে এবং সবগুলো আটক করা হয়েছে।
বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফয়জুর রহমান আজ সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে জ্বালানি তেল পাচারের চেষ্টা খুবই অপ্রতুল। এই পাচারের চেষ্টাগুলো সাধারণত ১০-১২ লিটার হয়। এ কারণে আমি মনে করি না যে সীমান্ত দিয়ে জ্বালানি তেল পাচার হচ্ছে। ডিজেল ব্যাগে করে পাচার করা যায় না। যদি ব্যারেল ব্যারেল জ্বালানি তেল সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়, তবেই অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। সীমান্তে তো আর বাতাস দিয়ে ব্যারেল ব্যারেল জ্বালানি তেল পাচার হতে পারবে না।’
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গত শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে যদি আমাদের ৫০ টাকা, ৮০ টাকা ডিফারেন্স থাকে, তাহলের বিশাল অঙ্কের তেল বর্ডার দিয়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’
গত শনিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জ্বালানি তেল পাচার রোধে তেলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে সরকার। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তেলের দামের ব্যবধান থাকায় দেশ থেকে তেল পাচার হয়। মূল্যবৃদ্ধিতে পাচার রোধ করা সম্ভব।’
বিপিসি লোকসানে, সত্যিই?
দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ৭ আগস্ট ২০২২
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে প্রতিব্যারেল ৯৪.১২ ডলারে নামে। গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যা সবচেয়ে কম। কিন্তু, তারপরের দিনই বাংলাদেশের ভোক্তারা ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত জেনেছেন।
দেশে জ্বালানি তেলের একক আমদানিকারক সংস্থা- বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরশন (বিপিসি) গত ছয় মাস ধরে দৈনিক ৭৭ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। এই লোকসান সমন্বয় করতেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কথা জানায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
কিন্তু, বিপিসির আর্থিক অবস্থা বলছে অন্য কাহিনি।
গত ৮ বছর ধরে সরকারের একমাত্র লাভজনক সংস্থা হিসেবে গ্রাহকদের কাছে বিশ্ববাজারের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করে ৪৮ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে বিপিসি।
দাম না বাড়িয়ে এই হারে লোকসান করতে থাকলেও– মুনাফার টাকায় প্রায় ২১ মাস জ্বালানি সরবরাহ করতে পারতো বিপিসি।
কিন্তু, গত ছয় মাসে তেল বিক্রিতে বিপিসির মোট ৮ হাজার ১৪.৫১ কোটি টাকা পরিচালন লোকসানকে যুক্তি হিসেবে দেখিয়ে গত শুক্রবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ তেলের মূল্য ৪২.৫ শতাংশ থেকে ৫১.৬ শতাংশ বাড়িয়েছে– যা ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এর আগে গত নভেম্বরে সরকার একই যুক্তিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতিলিটারে ১৫ টাকা .বাড়ায়।
মূল্যবৃদ্ধিকে সমর্থন করে শনিবার (৬ আগস্ট) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মূল্য সমন্বয় করা ছাড়া তাদের হাতে অন্য কোনো বিকল্প ছিল না।
নিজ বাসভবনে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, বিপিসির পিঠ এখন দেওয়ালে গিয়ে ঠেকেছে। পরিস্থিতি এতটা খারাপ যে, সংস্থাটি তেল আমদানি বন্ধ করতে প্রায় বাধ্যই হচ্ছিল।
তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেছেন, ‘বিশ্ববাজারে যখন দাম কমতে শুরু করেছে তখন তেলের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না’।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায়– গত আট বছরে বিপিসি বিপুল মুনাফা করেছে। বিশ্ববাজারে মূল্য অস্থিতিশীল হলে সরকার দেশেও মূল্য বাড়িয়েছে। কিন্তু, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমতে শুরু করেছে- তখন দেশের বাজারে সে অনুসারে (কমিয়ে) সমন্বয় করা হয়নি’।
বিপিসি– সরকারের সোনার ডিম দেওয়া রাজহাঁস?
পাটকল ও রেলওয়ে-সহ সরকারের সকল সংস্থা যখন লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, তখন রাজস্ব সংগ্রহে সরকারের কাছে সোনার ডিম দেওয়া রাজহাঁস হয়ে উঠেছে বিপিসি।
বিপিসির তথ্যানুসারে, ২০১৮ অর্থবছর থেকে সংস্থাটি শুল্ক, কর ও লভ্যাংশ বাবদ সরকারি কোষাগারে ৫৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা দিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের তথ্য অনুসারে, নিয়মিত পরিচালন খরচ এবং অন্যান্য কর দেওয়ার পরও বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে বিপিসির রয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে, এর তিনটি বিতরণকারী কোম্পানি- পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ও যমুনা অয়েল কোম্পানির ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংক আমানত রয়েছে বলে জানাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেকর্ড মূল্যস্ফীতির সময়ে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষ। তেলের সাম্প্রতিক এই মূল্যবৃদ্ধি নাগরিকদের ওপর অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপাবে।
বুয়েটের (অবসরপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, এই মূল্যবৃদ্ধি একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।
‘বিশ্ববাজারের মূল্যের সাথে দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে একথা বলা- নির্বুদ্ধিতার শামিল’- মন্তব্য করেন তিনি।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি যেভাবে এড়ানো যেত
বিদ্যমান আমানতের টাকা দিয়ে বিপিসি প্রায় ১৪ মাস তেল সরবরাহ করতে পারতো।
এ ছাড়া, ২০২০ এবং ২০২১ অর্থবছরে সরকারের কোষাগারে ৯ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে করপোরেশনটি, যা দিয়ে দাম না বাড়িয়েও আরও চারমাস লোকসান সমন্বয় করা যেত।
বিপিসি তার তিনটি বিতরণ কোম্পানি- পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যাংক একাউন্টে জমা থাকা আমানত দিয়ে আরও ৫ মাস আগের দামে তেল বিক্রি করতে পারতো।
গত দুই অর্থবছর সরকার জ্বালানি তেল থেকে যে পরিমাণ শুল্ককর আদায় করেছে, তা দিয়ে দাম না বাড়িয়ে আরও অন্তত ১০ মাস জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যেত।
এর আগে গত ৪ নভেম্বর বিপিসির লোকসানের কথা বলে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। সে সময় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছিলেন, বিপিসির আগের লোকসানকে তাদের মুনাফা দিয়ে সমন্বয় করা সম্ভব। এতে জ্বালানির দাম বাড়ানোর চাপ কিছুটা কমানো যায়।
তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলে ভর্তুকি বা কর কর্তনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম আগের পর্যায়ে রাখতে পারে’।
কিন্তু, সেবারও জ্বালানি তেলের ওপর শুল্ক ও কর কমানো হয়নি– হয়নি এবারেও।
অথচ সব রকমের কর প্রত্যাহার করলে, প্রতিলিটার ডিজেলের মূল্য ৩৬ টাকা কমবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)- এর সূত্র জানিয়েছে, ফার্নেস অয়েল, জেট ফুয়েল, ডিজেল ও অকটেনের আমদানির ওপর কাস্টমস শুল্ক ও অন্যান্য কর বাবদ রাজস্ব কর্তৃপক্ষটি প্রায় ৩৪ শতাংশ কর আদায় করে।
অর্থাৎ, এখন ১১৪ টাকার প্রতিলিটার ডিজেল থেকে ৩৬ টাকা কর আদায় করছে সরকার।
এরমধ্যে কাস্টমস শুল্ক হলো ১০ শতাংশ, ভ্যাট বা মূসক ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ২ শতাংশ এবং অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ।
এ ছাড়া, সরবরাহ পর্যায়ের নতুন তালিকা অনুসারে, ডিজেলের ওপর দুই ধাপে ভ্যাট আদায় করা হবে ১৬.১৪ টাকা। কেরোসিন, অকটেন এবং পেট্রোলেও যথাক্রমে– ১৬.৩৩, ১৮.৬৮ এবং ১৮.২৩ টাকা ভ্যাট দুই ধাপে কার্যকর হবে।
এই বাস্তবতায়, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, সরকার জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণনের বিভিন্ন পর্যায়ে আরোপ করা করের পরিমাণ কমিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ কমাতে পারতো।
এর আগে গত জুনে গ্যাসের দাম বাড়ায় সরকার। এই বাড়তি দামের কারণে ভোক্তাদের গুণতে হবে অতিরিক্ত ৪,৭২২ কোটি টাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান টিবিএসকে বলেন, জ্বালানি তেলে সরকার দু’দিক থেকে মুনাফা করছে। একদিকে জ্বালানি তেলের উপর ৩০%-৩২% হারে শুল্ককর আদায় করছে; অন্যদিকে বিপিসিও দীর্ঘ সময় দাম না কমিয়ে মুনাফা করেছে।
‘আমি দাম বাড়ানোর বিপক্ষে নই। বিশাল ভর্তুকির চাপ সামলাতে দাম কিছুটা সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই। আর এমন সময় এত বেশি দাম বাড়ানো হলো, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম পড়তির দিকে’- উল্লেখ করেন তিনি।
প্রতিবেশী ভারত চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে ১১ বার তেলের মূল্য বাড়িয়েছে। কিন্তু, জনগণের ওপর তা যেন বোঝা না হয়ে ওঠে, সেজন্য মূল্যবৃদ্ধির আগে উল্লেখযোগ্য হারে কর কমানো হয়েছে।
গত ৪ নভেম্বরে বাংলাদেশে সরকার যখন তেলের দাম বাড়ায়, তখন ভারত প্রতিলিটার পেট্রোল ও ডিজেলে যথাক্রমে ৫ ও ১০ রুপি করে আবগারি শুল্ক কর্তন করে।
তেলের দাম এর পর আরও কয়েক দফা বাড়ানোর পর– মে মাসে ভারতের অর্থমন্ত্রী পেট্রোল ও ডিজেলে যথাক্রমে ৮ ও ৬ রুপি আবগারি শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেন।
এতে প্রতিলিটার পেট্রোল ও ডিজেলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মোট কর নেমে এসেছে যথাক্রমে ১৯.৯ এবং ১৫.৮ রুপিতে। দেশটির জনগণও এর মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব থেকে অনেকটা সুরক্ষা লাভ করেছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার উত্তাপ নিত্য পণ্যের বাজারে
০৯ অগাস্ট, ২০২২, দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট অনলাইন
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় উত্তাপ লাগতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। চার দিনের ব্যবধানে আবারো বেড়েছে চাল, আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন ও চিনির মতো নিত্যপণ্যের দাম। বেড়েছে কিছু কিছু সবজির দামও।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘটনা পাল্টে দিয়েছে অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ। জীবনযাত্রা ও অর্থনীতির এমন কোনো খাত নেই, যেখানে এর প্রভাব পড়ছে না। আকস্মিক এ দাম বৃদ্ধি নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে সব শ্রেণির ভোক্তা ও ব্যবহারকারীকে।
জ্বালানির দাম বাড়ার পর রাজধানীর বাজারগুলোতে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
চারদিনে দিনের ব্যবধানে আবারো বেড়েছে চালের দাম। পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে মোটা, মাঝারি ও চিকন সব ধরনের চালের দাম প্রতি কেজি ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর বাজারগুলোয় ৫২ টাকার নিচে মিলছে না কোনো চাল।
রাজধানীর বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই থেকে তিন দিন আগে মুরগির দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। কোথাও কোথাও ১৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খোলা আটা ছিল ৪১ থেকে ৪২ টাকা, এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা। আদা, পেঁয়াজ ও রসুনের দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
নিত্যপণ্যের দামে সংসার চালাতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ঠিক সে সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। খাবারের তালিকায় কাটছাঁট করছেন অনেকে।
দেশের ইতিহাসে খোলা বাজারে ডলারের দাম সর্বোচ্চ, ১১৯ টাকা
১০ আগস্ট ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
খোলা বাজারে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডলারের দাম এখন ১১৯ টাকা।
একদিন আগে গত সোমবার খোলা বাজারে ডলারের দাম ছিল ১১৫ টাকা। দুই দিনের ব্যবধানে আজ বুধবার চার টাকা বেড়ে ১১৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ডলার।
নগদ ডলারের সংকটের কারণে অধিকাংশ মানি এক্সচেঞ্জ বিক্রির চেয়ে কেনায় বেশি আগ্রহ।
খোলা বাজার ডলার বিক্রিতারা বলছেন, বেশিরভাগ মানি এক্সচেঞ্জেই এখন নগদ ডলার সংকট। বিক্রির চেয়ে কিনছে বেশি।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এতোদিন যারা রাস্তায় ডলার কেনাবেচা করতেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের ভয়ে তারাও সরাসরি কেনাবেচা করছেন না।
দীর্ঘদিন ধরে খোলাবাজারের ডলার বিক্রেতা রিপন মিয়ার কাছে ডলারের দাম জানতে চাইলে বলেন, “এখন ডলার নাই, কেউ বিক্রি করলে ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা রেট দেব।
বিক্রির রেট কত জানতে চাইলে বলেন বিক্রি করার মতো ডলার নেই।
গত ১৭ মে দেশে খোলাবাজারে ডলার প্রথমবারের মতো ১০০ টাকার ঘর পেরোয়। এরপর আবার কমে আসে। গত ১৭ জুলাই ডলারের দাম আবারও ১০০ টাকা অতিক্রম করে। গত মাসের শেষ দিকে ডলারের দাম ১১২ টাকায় উঠেছিল।
সবশেষ গত সোমবার (৮ আগস্ট) আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছে ৯৫ টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক ওইদিন সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে। নিয়ম অনুযায়ী এটিই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। একদিন আগেও এ দাম ছিল ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা।
মে মাসের শুরুর দিকে এ দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়। এ হিসাবে দেড় মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে ৮ টাকা ৫৫ পয়সা।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বললেন
প্রত্যেকের গায়ে জামাকাপড় আছে, খুব খারাপ আছি মনে করি না
১০ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, গ্রামগঞ্জের কোনো মানুষ না খেয়ে নেই। প্রত্যেক মানুষের গায়ে জামাকাপড় আছে। আমি মনে করি না, আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। ‘নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: জনজীবনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক নগর সংলাপে এসব কথা বলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এ সংলাপের আয়োজন করে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাজুল ইসলাম বলেন, আমদানির জন্য কারেন্ট অ্যাকাউন্টে (চলতি হিসাবে) ঘাটতি আছে। কিন্তু দেশে রিজার্ভ আছে। রিজার্ভ দিয়ে এটা কভার করা যাবে।
সার-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি
কৃষকের খরচ পদে পদে বাড়ল
১১ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
ডিজেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ বেড়ে গেছে। খেত প্রস্তুত থেকে শুরু করে সেচ দেওয়া, মাড়াই করা, ফসল ঘরে তোলা, শ্রমিকের মজুরি—সব ক্ষেত্রেই বাড়তি খরচের বোঝা টানতে হচ্ছে।
কয়েক দিনের ব্যবধানে ইউরিয়া ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আমনের ভরা মৌসুমে খরচ মেটাতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অনাবৃষ্টি। এবার সারা দেশেই বৃষ্টি কম হওয়ায় আমন ধানে সেচ বেশি লাগছে। এতে উৎপাদন খরচ আরও বাড়ছে। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে খরচ উঠবে না বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। যশোর, নওগাঁ, টাঙ্গাইল ও জামালপুর—এ চার জেলায় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন আশঙ্কার কথা জানা গেল।
সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষি অর্থনীতিতে দুই ধরনের চাপ সৃষ্টি হতে পারে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের ন্যায্য দাম পেতে হবে। আবার বাজারে চালের দাম বাড়লে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের খরচ বাড়বে। চালের দাম বেড়ে গেলে গরিব মানুষের কষ্ট অবধারিতভাবে আরেক দফা বাড়বে। কারণ, দিন আনি দিন খাই মানুষের আয়ের বেশির ভাগই খাবার কিনতে খরচ করতে হয়। চাল কিনতেই বেশি খরচ হয়, যা মূল্যস্ফীতিকে আবার উসকে দেবে।
১ আগস্ট ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়িয়ে ডিলার পর্যায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ২২ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এর চার দিন পরই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে। ডিজেল ও কেরোসিনের ক্ষেত্রে লিটারপ্রতি দাম ৩৪ টাকা, পেট্রলে ৪৪ টাকা এবং অকটেনে বেড়েছে ৪৬ টাকা।
সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক গতকাল গবেষণা সংস্থা সিপিডির এক সংলাপ অনুষ্ঠানে এ নিয়ে বলেছেন, ৬০ শতাংশ চাল আসে বোরো থেকে। এটা পুরোটাই সেচনির্ভর। ৩৭ হাজার গভীর নলকূপ, ১৩ লাখ অগভীর নলকূপ থেকে সেচ হয়। সব মিলে ১৫ লাখ কৃষি যন্ত্রপাতি আছে, যার ৭৫ শতাংশই ডিজেলচালিত। ডিজেলের দাম বাড়ায় বিঘাপ্রতি সেচের খরচ বাড়বে ৭০০ টাকা। পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর ব্যবহারে খরচ বাড়বে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া ইউরিয়ার দাম বাড়ানোর কারণে খরচ বাড়বে ৫০০ টাকা। আবার বৃষ্টি না হওয়ায় ৩০ শতাংশ জমিতে আমন চাষ হচ্ছে না। এটিও বড় আঘাত হানতে পারে।
ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছাড়াল সোয়া লাখ কোটি টাকা
১১ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ সোয়া লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। গত মার্চে যা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। ফলে ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণসংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
করোনার কারণে ব্যাংকঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে যে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, তা তুলে নেওয়ার পর ধাপে ধাপে এখন খেলাপি ঋণ বাড়তে শুরু করেছে। এর আগে গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। আর এখন মার্চ–জুনে এসে বাড়ল প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।
অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১২ আগস্ট ২২, সমকাল
বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সুখের তুলনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে, একটি পক্ষ থেকে এমন প্যানিক ছড়ানো হচ্ছে। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। বৈশ্বিক মন্দায় অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে।
আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণবিষয়ক এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
পণ্য পরিবহন ভাড়ায় বিশৃঙ্খলা
১৩ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়কপথে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে পণ্য পরিবহনে ছয় চাকার গাড়িতে ডিজেল দরকার হয় ৬০ থেকে ৭০ লিটার। সেই হিসাবে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা বাড়ানোয় খরচ বেড়েছে ২ হাজার ৪০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩৮০ টাকা। কিন্তু পরিবহন কোম্পানিগুলো ভাড়া বাড়িয়েছে চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা।
একইভাবে নৌপথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অঞ্চলে যেতে দেড় থেকে দুই হাজার টন পণ্যবাহী জাহাজে জ্বালানি তেল লাগে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার লিটার। এতে প্রতিটি জাহাজে জ্বালানি খরচ বাড়বে জাহাজভেদে ৮৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এতে টনপ্রতি বাড়তি পরিবহন খরচ দাঁড়ায় ৫১ থেকে ৫৬ টাকা। তবে গত বৃহস্পতিবার নৌপথে চট্টগ্রাম থেকে গন্তব্যভেদে ১৫ থেকে ২২ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, যা ৬ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর গন্তব্যে টনপ্রতি ১০৫ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বেড়েছে।
লোডশেডিং ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত পোলট্রি খাত
১৩ আগস্ট ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
এখনও পুরোপুরিভাবে মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পারা পোলট্রি খাত এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লোডশেডিং এবং জ্বালানির রেকর্ড পরিমাণে মূল্যবৃদ্ধিতে।
প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টার লোডশেডিং এর কারণে পোলট্রি বাচ্চা, মাংস ও ডিমের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে সরবরাহ ঘাটতি।
এছাড়া, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে বাড়তি উৎপাদন খরচ ও পরিবহন ব্যয় যুক্ত হয়ে হু হু করে বাড়ছে মুরগি ও মাংসের দাম।
ঢাকার বাজারে বর্তমানে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১৭৫-১৯০ টাকা। বেড়েছে ডিমের দামও। প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়, অর্থাৎ একটি ডিম কিনতে গেলে ভোক্তাকে গুণতে হচ্ছে ১২-১২.৫ টাকা।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২২.০৩ শতাংশ এবং ডিমের দাম হালিতে ১৫.৩৮ শতাংশ বেড়েছে।
পোল্ট্রি খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, খামাড়িরা এখন মুরগির বাচ্চা কিনতে ভয় পাচ্ছে। কারণ একটি খামাড়ে বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ দরকার। ৮-১০ ঘণ্টার লোডশেডিং এর প্রভাব মোকাবেলায় ছোট খামাড়িরা জেনারেটর ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেকের মুরগি মারা যাচ্ছে।
খরচ বহন করতে না পেরে অনেকেই উৎপাদন বন্ধ করে দিচ্ছে। যে কারণে সরবরাহে সংকট তৈরি হয়েছে।
কৃষক আজিজুর এখন দিনমজুর, সন্তান এতিমখানায়
১৩ আগস্ট ২২, সমকাল
হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মারুপাড়া গ্রামটি পঞ্চগড় শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। এই গ্রামের আজিজুর রহমান তিন বছর আগেও ছিলেন কৃষক। বর্গা চাষ করে চলত সংসার। তবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসান গুনে কৃষিকাজ ছাড়তে হয় তাঁকে। এরপর ঋণ নিয়ে ভ্যান কিনলেও অভাব দূর হয়নি। ভ্যান ছেড়ে এখন তিনি অন্যের জমিতে দিনমজুরি করেন; তাও প্রতিদিন কাজ পান না। চাল, ডাল, তেলসহ সব খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সন্তানদের ঠিকঠাক খাবার দিতে পারছেন না। একমাত্র ছেলেকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এতিমখানায় দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। মারুপাড়ায় ৩ শতাংশ জমিতে গায়ে গা লাগানো তিনটি ঘর। তার একটিতে থাকেন আজিজুর রহমান। অন্য দুই ঘরের বাসিন্দা তাঁর বাবা মোক্তার হোসেন ও ছোট ভাই আনিছুর রহমান। এই ভিটা ছাড়া তাঁদের আর জমিজমা নেই। ছোট বেলায় দর্জির কাজ শেখার চেষ্টা করেছিলেন আজিজুর। সংসারে অভাবের কারণে দর্জি হতে পারেননি। পৈতৃক পেশা কৃষিকাজে যোগ দেন।
করোনার আগেও প্রতিবেশী সাইজুল ইসলামের ৬৬ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে ধান, টমেটো, ভুট্টা, শসা, লাউ, শিম, আলু ও কুমড়া চাষ করেছিলেন আজিজুর। ভালোই কাটছিল দিন। করোনায় জেলার বাইরে থেকে পাইকার আসা বন্ধ হলে আজিজুরের বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৩ লাখ টাকার টমেটো জমিতে নষ্ট হয়। করোনার পর শসা চাষ করে লোকসান গোনেন। ৭০ বস্তা শসা বিনা পয়সায় দিয়ে দেন পাইকারকে। উল্টো তাঁকে ভ্যান ভাড়া দিতে হয়। নইলে ক্ষেতে শসা পচে দুর্গন্ধ ছড়াত। দাম না পেলেও সার, সেচ, বীজ, পরিচর্যার খরচ ষোলোআনাই করতে হয়।
খরচের ভয়েই আর কৃষিকাজে ফেরেননি আজিজুর। সমিতি থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ভ্যান কেনেন। হাফিজাবাদ, পাঠানপাড়া বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে জেলা শহরে যেতেন। তবে কয়েক মাস ধরে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ঋণের কিস্তিও দিতে পারছিলেন না তিনি। শেষে মাত্র ১৬ হাজার টাকায় সেই ভ্যান বিক্রি করে দেন।
এককালের কৃষক আজিজুর এখন দিনমজুরি করে দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আয় করেন। স্ত্রী লাভলী আক্তার এবং এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। যে ক’দিন কাজ মেলে, তাতে সংসার চলে না।
আট বছর বয়সী ছেলে লাবিব ইসলামকে স্থানীয় আলোর দিশারী স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। পোশাক, বই-খাতা, বেতনসহ লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারেননি। তাই মা-বাবা বেঁচে থাকতেও পাশের গ্রামের তেলিপাড়া নেছারিয়া এতিমখানা মাদ্রাসায় লাবিবকে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে দুই বেলা খাবার, পোশাক, লেখাপড়ার সামগ্রী পাচ্ছে সে। আজিজুর এতটুকুর জন্যই ছেলেকে এতিমখানায় দিতে বাধ্য হয়েছেন।
আজিজুরের ছোট ভাই আনিছুরও দিনমজুরি করেন। তাঁর একমাত্র ছেলে জুনায়েদ ইসলামকেও এতিমখানায় ভর্তি করা হয়েছে। আজিজুরের বাবা মোক্তার হোসেন স্থানীয় মসজিদে আজান দেন। বিনিময়ে মাসে ৫০ কেজি মোটা চাল পান। স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর আলাদা সংসার।
আজিজুর বলেন, ভ্যান বিক্রির পর আর শহরে যাননি। কোরবানির ঈদে প্রতিবেশীর দেওয়া মাংস খেয়েছিলেন। এরপর আর মাংস খেতে পাননি। মাছও কিনতে পারেননি। স্থানীয় পাঠানপাড়া বাজারে কেটে বিক্রি করা ব্রয়লার মুরগির মাংসের কেজিও ৩৫০ টাকা। কী করে কিনবেন। ভাত, আলু, শাক দিয়ে দিন পার করছেন। এখন রোপা আমনের চারা লাগানোর কাজ করছেন। আর যেদিন কাজ থাকে না, সেদিন না খেয়ে থাকতে হয়।
আজিজুর বলেন, তিনি করোনা, যুদ্ধ, উন্নয়ন এগুলো বোঝেন না। বুঝতেও চান না। এটুকু বোঝেন, বর্গাচাষি হিসেবে ভালোই ছিলেন। তবে এখন তাঁর কৃষিকাজে ফেরারও উপায় নেই। সারের দাম বেড়ে গেছে, ঠিকমতো পাওয়াও যায় না। ডিজেলের দাম বাড়ায় সেচ খরচও বেড়েছে। বিদ্যুৎ সংকটের কথা বলে এক ঘণ্টা সেচের জন্য ৩০০ টাকা নেন মেশিন মালিকরা। বেড়েছে কীটনাশকের দাম। জমির মালিকরাই কৃষিকাজ করতে পারছেন না। বর্গাচাষিরা আর কী করবেন! তাই দিনমজুরিই একমাত্র ভরসা।
জীবনের চাকা ঘোরাতে অবসরে সাইকেল মেরামত
১৩ আগস্ট ২২, সমকাল
আসাদুল্লাহ দুদু একটি কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করেন। সপ্তাহে পাঁচ দিন সাইকেলে করে ব্যাংকের চেকবই ডেলিভারি দেন। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। মাসে বেতন ১৪ হাজার টাকা। টানাপোড়েন থাকলেও স্ত্রী আর একমাত্র সন্তানকে নিয়ে থেমে ছিল না সংসারের চাকা। সাপ্তাহিক ছুটিতে গ্রামে যেতেন বাবা-মায়ের কাছে কিংবা ছেলের সঙ্গে অবসর কাটাতেন। তবে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁর এই সুখ কেড়ে নিয়েছে। এখন আর তাঁর অবসর নেই। নিজের সাইকেল মেরামতের অভিজ্ঞতা পুঁজি করে ছুটির দিনে রাজধানীর ধানমন্ডির ফুটপাতে অন্যের সাইকেল মেরামত করছেন বাড়তি রুজির আশায়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের ১৩/এ সড়কের বিপরীত পাশের ফুটপাতে দেখা হয় জামালপুরের মেলান্দহের তেঘরিয়া গ্রামের এই কুরিয়ার কর্মীর সঙ্গে। বিনয়ী ও শান্ত স্বভাবের মানুষ তিনি। ৪০ বছরেই চুল-দাড়িতে পাক ধরেছে। দুর্মূল্যের বাজারে কী করে চলছে সংসার- তা নিয়ে হলো দীর্ঘ আলোচনা। সংসার চালানোর খরচের হিসাব শুনিয়ে বললেন, আর চলছে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বাধ্য হয়ে বাড়তি উপার্জনে নামতে হয়েছে। সামান্য অভিজ্ঞতার পুঁজি নিয়ে শুরু করেছি সাইকেল মেরামত। এমন অভাব আগে ছিল না আসাদুল্লাহর। গ্রামে বাবার ১২-১৩ বিঘা ফসলের জমি ছিল। কাপড়ের দোকান ছিল। সাত ভাইয়ের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগিতে দোকান হাতছাড়া হয়। ২০০৯ সালে আসেন ঢাকায়। চাকরি নেন একটি কুরিয়ার সার্ভিসে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ। রোজ সকালে মগবাজার থেকে শুরু করে কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, মিরপুর, হাজারীবাগ, চকবাজার ঘুরে ১৪টি ব্যাংকের শাখায় চেকবই, ক্রেডিট কার্ড, ডেভিড কার্ড পৌঁছে দেন তিনি। এ কাজে প্রতিদিন ৩০-৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালাতে হয়।
২০০৯ সালে এক হাজার ২০০ টাকায় পুরোনো সাইকেল কেনেন আসাদুল্লাহ। নিত্যসঙ্গী সাইকেলটিকে ঠিক রাখতে চাকার লিক সারাই থেকে স্পোক বদল- সব কাজ শিখেছেন দেখে দেখে। কয়েক বছর আগে এক হাজার ৩০০ টাকায় হাওয়া দেওয়ার পাম্পার, রেঞ্জ, হাতুড়িসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনেন। বছরখানেক ধরে বাড়তে থাকা চাল, ডাল, তেল, আটা, ডিম, নুনের দামের ধাক্কায় বেতনের টাকায় সংসার চালাতে না পেরে সেই যন্ত্রপাতি নিয়ে ফুটপাতে বসেছেন পরের সাইকেল মেরামতে। গত ৫ আগস্ট প্রথম দিনে ২১০ টাকা উপার্জন করেন। পরদিন রোজগার হয় ১৬০ টাকা। গতকাল প্রথম ঘণ্টায় মাত্র ২০ টাকা আয় হয়।
আসাদুল্লাহ থাকেন পশ্চিম ধানমন্ডির শংকরে। এক রুমের বাসার ভাড়া পাঁচ হাজার টাকা। রান্নাঘর ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয় অপর দুই ভাড়াটিয়ার সঙ্গে। তাঁর শঙ্কা সেপ্টেম্বরে ওয়াসার পানির দাম বাড়লে ঘর ভাড়াও বাড়বে। কী করে বাড়তি খরচ মেটাবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না। হয়তো স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে হবে।
ঘর ভাড়া দেওয়ার পর আসাদুল্লাহর হাতে থাকে ৯ হাজার টাকা। ছেলে ওয়েস্ট আবুল হোসেন স্কুলের কেজি ক্লাসের ছাত্র। মাসিক বেতন ৫০০ টাকা। ছেলের প্রাইভেট শিক্ষকের বেতন ৬০০ টাকা। আসাদুল্লাহর ছোট ভাই মাদ্রাসায় পড়েন। তাঁকে মাসে দিতে হয় ৫০০ টাকা। এই ক’টি খরচ মিটিয়ে হাতে থাকে সাত হাজার ৪০০ টাকা।
আসাদুল্লাহ জানালেন, মাসে দুই হাজার ৮০০ টাকার চাল লাগে। মাছ, সবজি, তেল, নুন, চিনির মতো শুকনা বাজারে যায় আরও ৩০০০ টাকা। ছেলের পুষ্টির জন্য প্রতিদিন একটি ডিম ও দুটি কলা খাওয়াতে হয়। তাতেই মাসে ৬০০ টাকা খরচ হয়। খাবার, ভাড়া ও লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে অবশিষ্ট থাকে এক হাজার টাকা। তা দিয়ে নিজের হাত খরচ, স্ত্রীর খরচ, ছেলের আবদার, বাবা-মায়ের খরচ মেটাতে হয়। জামা-কাপড় কেনা, ওষুধ, ফলমূল জীবন থেকে বাদ গেছে।
আগে মাসে দু’বার বাড়ি যেতেন আসাদুল্লাহ। লোকাল ট্রেনে যাওয়া-আসায় ৩০০ টাকা খরচ হয়। বাবা-মায়ের জন্য এটা সেটা নিতে আরও পাঁচশ-সাতশ টাকা ব্যয় করতেন। খরচের ভয়ে এখন বাড়ি যান না। ৮০ বছরের বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা এবং ৭৫ বছর বয়সী মায়ের মুখ দেখেন না প্রায় তিন মাস। বাবা-মায়ের মুখ দেখতে না পারার কষ্ট বুকে চেপে ছুটির দিনে সাইকেল মেরামত করেন দু’পয়সা বাড়তি রোজগারের আশায়। তাতেও কিছু হচ্ছে না। ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকা কেজি হওয়ার দুঃসংবাদ তাঁকে আরও বিপদগ্রস্ত করেছে।
কোরবানির ঈদে ধনীদের বাড়ি থেকে তোলা গরুর মাংস বিক্রি হয় রাজধানীর সড়কে। মাসখানেক আগে ৫০০ টাকায় সেই মাংস এক কেজি কিনেছিলেন আসাদুল্লাহ। আগামী ১১ মাসে আর মাংস কেনা সম্ভব নয়। তেলের দামের কথা উঠতেই শান্তশিষ্ট আসাদুল্লাহ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। বললেন, ‘কী আর কইতাম! দুই লিটার তেল খুব হিসাব করে খরচ করলেও ২৪-২৫ দিনের বেশি যায় না। দুই কেজি তেলের দাম আছিন ২০০ টাকা। সেই তেল এখন ৪২০ টাকা। এই ২০০ টাকা কোইত্তে আহে।’
শেষ কবে বেতন বেড়েছিল মনে করতে পারলেন না আসাদুল্লাহ। জানালেন, খুব সম্ভবত ২০১৯ সালে ৩০০ টাকা বেড়েছিল। সেই সময়ে এক বস্তা চালের দাম ছিল এক হাজার ৮০০ টাকা। এখন তা দুই হাজার ৮০০ টাকা। হাজার টাকা খরচ বাড়লেও বেতন বাড়েনি এক পয়সা। শাকসবজি, মাছের দাম দ্বিগুণ হয়েছে, রুজি বাড়েনি। আটার দাম বাড়ায় রুটি বাদ দিয়ে সকালেও ভাত খাচ্ছেন। দুধ, চিনির দামের কারণে চা খান না।
১৬ ঘণ্টার চাকরিতেও চলে না সংসার
১৩ আগস্ট ২২, সমকাল
করোনা পরিস্থিতিতে প্রথম ধাক্কা সামাল দিতে দিতেই ইউক্রেন যুদ্ধের ঢেউ লাগে এ দেশেও। ফলে আবার কাবু সাধারণ মানুষ। সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর জীবনযাত্রায় ব্যয় বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনযুদ্ধ নিয়ে সমকালের আয়োজন
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মো. শাহাজাহান ১৫ বছর ঢাকায় থাকেন। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এটিএম বুথে, এরপর রাত ১০টা পর্যন্ত ইংরেজি শিক্ষার একটি কোচিংয়ে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেন। দিনে ১৬ ঘণ্টা কাজ করে মাসে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা পান। মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে থাকে গ্রামে। মাস ছয়েক আগেও তাঁদের জন্য মাসে ১০-১১ হাজার টাকা পাঠাতে পারতেন। ঢাকায় খরচ বাড়ায় এখন পাঠান ৯ হাজার টাকা। ধানের জমি আর পুকুর থাকলেও অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় গ্রামের সংসারেও চলছে টানাটানি।
শাহাজাহানের সঙ্গে কথা হয় গতকাল শুক্রবার বিকেলে। নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহ করা কোম্পানির পোশাক পরা এই ব্যক্তিকে অভাবী মনে হয় না। সব মিলিয়ে ৫০ বছর বয়সী শাহাজাহান বেশ সুদর্শন। তাঁর ২২ বছর বয়সী বড় ছেলে যশোরের সিটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। ছোট ছেলে স্থানীয় স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে।
বড় ছেলে বাড়িতে থেকে ক্লাস করেন। তাঁকে প্রতিদিন দিতে হয় ১৫০ টাকা। এর মধ্যে বাস ভাড়া ১২০ টাকা। ডিজেলের দাম দুই দফায় বাড়ার আগে গত নভেম্বরে তা ছিল ৬০ টাকা। মাসে ২০ দিন বড় ছেলের যাতায়াত ও পড়াশোনার খরচ ৩ হাজার টাকা। ছোট ছেলে তিন বিষয়ে প্রাইভেট পড়ে। ২৫০ করে মাসে বেতন ৭৫০ টাকা। স্কুলের খরচ মিলিয়ে হাজার টাকা।
দুই ছেলের পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে ৫ হাজার টাকা অবশিষ্ট থাকে শাহাজাহানের স্ত্রীর হাতে। তা দিয়ে ৭০ বছর বয়সী শাশুড়ির চিকিৎসাসহ বাড়ির সব খরচ মেটাতে হয়। কী করে স্ত্রী এই অসম্ভব কাজটি করছেন, তা নিজেও বুঝতে পারেন না শাহাজাহান। জানালেন, পৈতৃক সূত্রে দুই বিঘা জমি পেয়েছেন। তাতে যে ধান হয়, তা দিয়ে বছর চলে।
খাবারের কষ্টে বস্তির মানুষেরা
১২ আগস্ট, ২০২২, প্রথম আলো
রাতে একটু বেশি ভাত রান্না করতেন শাহিদা বেগম। বেঁচে যাওয়া ভাত ভিজিয়ে রাখতেন সকালের জন্য। ওই পান্তা খেয়ে কাজে যায় স্বামী আর ছেলে। নিজেও খেতেন।
সকালে তাঁরা আর পান্তা খান না। এর বদলে গরম ভাত যে খাচ্ছেন, তা–ও নয়। চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে শাহিদারা দিশাহারা। খরচ বাঁচাতে তাই যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকু ভাতই রান্না করছেন। কখনো কমও রান্না করতে হচ্ছে।
শাহিদা জানালেন, স্বামী আর ছেলে না খেয়েই কাজে যায়। নিজের বেলায়ও তা–ই। টাকা থাকলে ছোট দুই ছেলেকে রুটি-বিস্কুট কিনে দেন। মাঝেমধ্যে তারাও দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে থাকে।
শাহিদারা থাকেন রাজধানীর কল্যাণপুরের ৮ নম্বর পোড়া বস্তিতে। স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ভাঙারি পণ্যের হকার। ছেলে শাহীন ইসলাম তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী। নার্সারিতে পড়া শামীম আর সোহানের বয়স ৩ বছর।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বস্তিতেই কথা হয় শাহিদা ও জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। ঘরে তখন অতিথি মেয়ে শারমিন আক্তার ও তাঁর জামাই। জামাই আপ্যায়ন নিয়ে শাহিদা জানান, কিছু টাকা ছিল। তা দিয়ে একটি পাঙাশ মাছ কিনেছেন। কচুর লতি দিয়ে সেটাই রান্না হয়েছে। বাজারের টাকা না থাকায় আর কিছু রান্না হয়নি।
বস্তিতে জাহাঙ্গীরদের ঘরটি দুই কক্ষের। মাঝের টিনের বেড়াটি সরানো হয়েছে চলতি বর্ষায়। জানালেন, টাকার অভাবে টিনের চাল সারানো যাচ্ছিল না। বেড়ার টিন সরিয়ে চালে বসিয়েছেন। যেখানে টিন হয়নি, সেখানে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর গড়ে ১৫-১৬ হাজার টাকা উপার্জন করেন। ছেলের বেতন সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। হৃদ্যন্ত্রের চিকিৎসার জন্য বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এর সুদসহ কিস্তি দিতে হয় ৬ হাজার টাকা। সঙ্গে জমা আরও ৫০০ টাকা। ছেলের বেতনের পুরোটা সেখানে যায়। নিজেকেও দিতে হয় ১ হাজার টাকা।
এ ছাড়া বাজার-সদাই ও খাওয়া বাবদ প্রায় ১০ হাজার টাকা লাগে। মেজ ছেলের স্কুলের বেতন ২০০ টাকা, কোচিংয়ে দিতে হয় ৩০০ টাকা, আরবি শিক্ষার জন্য লাগে আরও ২০০ টাকা। বিদ্যুৎ, পানি ও ডিশের বিল লাগে ৯০০ টাকা। দেড় হাজার যায় সিলিন্ডার গ্যাসে। সব মিলিয়ে ১৩ হাজার টাকার বেশি।
জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, রোজগারের টাকা সব খাওয়ার পেছনেই চলে যায়। তবু নিজের পছন্দমতো খাওয়া যায় না। না খেয়েও থাকতে হয়। টাকার অভাবে পাঁচ মাস ধরে ওষুধও খেতে পারছেন না।
জাহাঙ্গীরের মতো রাজধানীর বিভিন্ন বস্তির অনেক ঘরেই এমন চিত্র। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেকে সকালে খাওয়া বাদ দিয়েছেন। কেউ এক বেলা না খেয়ে থাকছেন। অনেকে ছেড়েছেন প্রয়োজনীয় ওষুধ। অনেকেই আবার গ্রামে বয়স্ক মা-বাবার জন্য নিয়মিত টাকা পাঠাতে পারছেন না।
একই বস্তির বাসিন্দা মিনারা বেগমের স্বামী নেই। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। সঙ্গে থাকেন ছেলে ইসাউল রুবেল। একটি টেইলার্সে জামা সেলাইয়ের কাজ করে জুলাই মাসে মাত্র ২ হাজার ১০০ টাকা রোজগার করতে পেরেছিলেন মিনারা, যা বাসা ভাড়ার পেছনে চলে গেছে। ছেলের স্কুল–কোচিংয়ের ফি বাকি পড়েছে। মিনারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একদিক দিয়ে টাকা রোজগার করি, অন্য দিক দিয়ে শেষ হয়ে যায়। সব থাকতে আর খাইতেই চলে যাচ্ছে। এ মাসে দুই মেয়ের কাছ থেকে ৪ হাজার আর ভাইয়ের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নিতে হয়েছে। এর পরেও কোনোমতে ডাল, ভর্তা আর ভাত খেয়ে থাকছি।’
না খেয়ে থাকলেও এই শহর ছেড়ে যেতে পারছেন না মো. জাহাঙ্গীর। স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে কল্যাণপুরের পোড়া বস্তিতে বসবাস তাঁদের। গ্রামের বাড়ি ভোলার ইলিশা এলাকার ভিটেমাটি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। জাহাঙ্গীর ও তাঁর বড় ছেলে জুয়েল রিকশা চালান। এক ছেলে স্কুলে ও দুই মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে। স্ত্রী মমতাজ বেগম গৃহিণী।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খাওয়ার পেছনেই প্রায় ১১ হাজার টাকা লাগে। ঘরভাড়া দিতে হয় ২ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ ও পানিতে খরচ ৫৫০ টাকা। সন্তানদের পড়াশোনা ও কোচিংয়ে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘কোনো কোনো দিন শুধু মরিচপোড়া, পেঁয়াজ দিয়ে হুদা ভাত খাই। কষ্টের কথা কারে কমু, বইলাই–বা কী হইব?’
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রাতের জন্য ডিমভুনা করছিলেন কড়াইল বস্তির বেলতলা অংশের বাসিন্দা বিউটি বেগম। দুপুরে আগের দিনের বেঁচে যাওয়া চালকুমড়ার ডাল দিয়ে খেয়েছেন বলে জানালেন। বিউটি বেগম বলেন, ‘খরচের কারণে মাংস খাওয়া একদম বাদ। মাছের মধ্যে শুধু তেলাপিয়া আর পাঙাশ কিনি। এ ছাড়া ডাল ও সবজি দিয়েই প্রতিদিনের রান্না হয়। দুই সপ্তাহে এক-দুবার ডিম কিনি।’ ভ্যানচালক স্বামী হানিফ মিয়ার উপার্জনে চলে বিউটির পাঁচ সদস্যের সংসার।
জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে গ্রামে মা-বাবার জন্য আর প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে পারছেন না মো. রাশিদুল। ময়লার ভ্যানচালক রাশিদুল স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কড়াইলের এরশাদনগর বস্তিতে থাকেন। স্ত্রী নার্গিস আক্তার গৃহকর্মীর কাজ করেন। দুজনে মিলে ১৩ হাজার টাকা বেতন পান। রাশিদুল বলেন, ‘আগে প্রতি মাসে বাপের জন্য ১ হাজার আর মায়ের জন্য ৫০০ টাকা পাঠাইতাম। এখন কোনো মাসে পাঠাই, কোনো মাসে পারি না।’
ওষুধের দাম ৫০% বাড়ল
১৩ আগস্ট, ২০২২, পূর্বকোণ
ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম বাড়ায় প্রাথমিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত সব ওষুধের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। দাম বাড়ার এসব ওষুধের তালিকায় রয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ১১৭টি জেনেরিকের ২৮৫টি ব্র্যান্ডের ওষুধ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওষুধ প্রশাসনের তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা সরকারের হাতে। ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, এক্সিপিয়েন্ট (নিষ্ক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান), প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, পরিবহন, বিপণন ব্যয় এবং ডলারের দাম বাড়ার কারণে ওষুধের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় দেশে-বিদেশে ওষুধ তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়ে যায়। কাঁচামাল, প্যাকেজিংসহ সবকিছুর দাম বাড়ায় ওষুধ উৎপাদনের খরচও বেড়ে যায়। ফলে এই সংক্রান্ত মূল্য নির্ধারণ কমিটি ও টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে শেষে ১১৭টি জেনেরিক ওষুধের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসনের চলতি দায়িত্বে থাকা পরিচালক আইয়ুব হোসেন জানান, ওষুধ তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার পর এ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে ওষুধের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্যারাসিটেমল আগে যেখানে ভ্যাটসহ ৮০ পয়সা ছিল। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ টাকা ২০ পয়সা। আর সিরাপের ক্ষেত্রে ২০ টাকার সিরাপ এখন হয়েছে ৩৫ টাকা।
লঞ্চের ভাড়া বাড়ল ৩০ শতাংশ
১৬ আগস্ট, ২০২২, বণিক বার্তা
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে এবার লঞ্চের ভাড়া ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা এসেছে। এখন প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ৩ টাকা হিসেবে ধরা হয়েছে। আর সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ৩০ টাকা। আগামী ১৬ আগস্ট থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর।
আজ মঙ্গলবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, লঞ্চের যাত্রীভাড়া ৩০ ভাগ সমন্বয় করে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, প্রথম ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটারে জনপ্রতি ভাড়া ২.৩০ টাকা থেকে ৭০ পয়সা বৃদ্ধি করে ৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি ১০০ কিলোমিটার পর প্রতি কিলোমিটারে জনপ্রতি ভাড়া ২ টাকা থেকে ৬০ পয়সা বৃদ্ধি করে ২.৬০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ টাকা থেকে ৮ টাকা বাড়িয়ে ৩৩ টাকা করা হয়েছে।
বেশি দাম দিয়েও চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না কৃষকেরা
২০ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
সরকার ইউরিয়া সারের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রতি কেজি ২২ টাকা। তবে সেই সার কৃষক পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৬ টাকা। অন্যদিকে ১৫ টাকা কেজির এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ২৬ টাকায়।
এই বাড়তি দাম দিয়েও কোনো কোনো জেলায় চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না কৃষকেরা। সারের জন্য পরিবেশকদের কাছে তাঁদের রীতিমতো ধরনা দিতে হচ্ছে। তারপর যে পরিমাণ সার তাঁরা পাচ্ছেন, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। কোথাও কোথাও কৃষকেরা বিক্ষোভও করছেন।
সারের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার আমন মৌসুমে বৃষ্টি কম হচ্ছে। বাড়তি দরে ডিজেল কিনে কৃষককে সেচ দিতে হচ্ছে। সরকার ইউরিয়া সারের দামও বাড়িয়েছে। এখন যদি কৃষকদের সার পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, দাম নির্ধারিত দরের বেশি রাখা হয়, তাহলে তাঁরা আমন ধানের পরিচর্যায় নিরুৎসাহিত হতে পারেন। এতে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দেশের সাতটি জেলায় গত দুই দিন সরেজমিন পরিস্থিতি দেখে এবং কৃষকের সঙ্গে কথা বলে সার নিয়ে গতকাল শুক্রবার প্রতিবেদন পাঠান প্রথম আলোর প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা। জেলাগুলো হলো নওগাঁ, যশোর, জামালপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও ও কুষ্টিয়া। প্রতিবেদনগুলোতেই বেশি দাম নেওয়া এবং চাহিদামতো সার না পাওয়ার চিত্র উঠে এসেছে। কোথাও সংকট কম, কোথাও বেশি। কোনো কোনো জেলায় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
টাকা ফেরত চায় জীবন বীমা, ব্যাংকগুলি অপারগ
২১ আগস্ট ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা
আমানতের টাকা ফেরত পেতে, জেবিসির একই অবস্থা হয়েছিল পদ্মা ব্যাংকে টাকা রেখে, যা তখন ফারমার্স ব্যাংক নামে ছিল। ব্যাংকটির সাতটি হিসাবে ১০৯ কোটি টাকা আমানত রেখেছিল জীবন বীমা করপোরেশন।
অবিবেচক সিদ্ধান্তের মূল্য দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা জীবন বীমা করপোরেশন (জেবিসি)। গ্রাহকের বিমা প্রিমিয়ামের টাকা দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখে মেয়াদ শেষেও তা আর ফেরত পাচ্ছে না।
মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাবের অর্থ ফেরত চেয়ে করপোরেশনটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে ডজন ডজন চিঠি লিখেও কোনো সাড়া পাচ্ছে না।
যেমন- বেসরকারিখাতের ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডে দু’টি স্থায়ী আমানত হিসাব খুলে প্রায় ৪০ কোটি টাকা আমানত রাখে জেবিসি, যার মেয়াদ যথাক্রমে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে পূর্ণ হয়েছে। গত ৩১ জুলাই নাগাদ সুদাসলে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮.৪৬ কোটি টাকা।
২০১৮ সালে মেয়াদোত্তীর্ণের সময় থেকেই জেবিসি আমানত হিসাব দু’টি নগদায়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফার্স্ট ফাইন্যান্সকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করলেও– জেবিসির টাকা দেয়নি আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। এই চার বছরে পাওনা টাকা চেয়ে বিমা কোম্পানিটি ফার্স্ট ফাইন্যান্সকে ৩৮টি তাগিদপত্র দিয়েছে। কিন্তু, তাতে কোনো সাড়া পায়নি।
এবিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকে চিঠি দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ফার্স্ট ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যানের কাছে দুটি এবং জীবন বীমার তহবিল যাতে ছাড় করা হয় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবকে আরেকটি চিঠি দিয়েছে। কিন্তু, আমানতের টাকা ফেরত পাওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।
জেবিসির আমানতের অর্থ ফেরত দিতে সর্বশেষ গত ১২ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এমডিকে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতকিছুর পরও রুগ্ন আর্থিক অবস্থার কারণে ফার্স্ট ফাইন্যান্স কর্তৃপক্ষ আমানতের টাকা ফেরত দেয়নি বলে গত জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংককে লিখিতভাবে জানিয়েছেন জেবিসির এমডি মো. সাইফুল ইসলাম।
দুর্বল আর্থিক অবস্থার কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড সাধারণ গ্রাহকের আমানতের অর্থও ফেরত দিতে পারছে না।
আমানতের টাকা ফেরত পেতে, জেবিসির একই অবস্থা হয়েছিল পদ্মা ব্যাংকে টাকা রেখে, যা তখন ফারমার্স ব্যাংক নামে ছিল। ব্যাংকটির সাতটি হিসাবে ১০৯ কোটি টাকা আমানত রেখেছিল জীবন বীমা করপোরেশন। ভিন্ন সময় নবায়ন শেষে ২০১৮ সালে সবক’টি আমানত হিসাব মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। তখন থেকে আমানত নগদায়নের জন্য পদ্মা ব্যাংককে ২৬টি তাগাদাপত্র এবং পাঁচটি ডিও লেটার-সহ মোট ৩১টি চিঠি দিয়েছে জেবিসি। কিন্তু তা সত্ত্বেও নগদায়ন করেনি ব্যাংকটি।
ওই সময় সুদাসলে পদ্মা ব্যাংকের কাছে পাওনা দাঁড়ায় ১২৫ কোটি টাকা। কিন্তু, এই অর্থ পরিশোধের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় ব্যাংকটি পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় জেবিসিকে। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া সাত বছর মেয়াদি এই আমানতে সুদ ধার্য করা হয় ৬ শতাংশ, প্রস্তাবটি জীবন বীমা মেনে নেয়।
অর্থনীতিতে বড় চাপ, ৩৪ বিলিয়ন ডলারের অনিষ্পন্ন আমদানি দায়
২২ আগস্ট, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমলেও এখনই স্বস্তি ফিরছে না বৈদেশিক বাণিজ্যে। উন্নতি হচ্ছে না সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতিতেও। এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে গত অর্থবছরে খোলা রেকর্ড আমদানি ঋণপত্র (এলসি)। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিলম্বিত হওয়া এলসি দায়ও বৈদেশিক বাণিজ্যে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারের এলসি অনিষ্পন্ন রেখে। রেকর্ড এসব অনিষ্পন্ন এলসি দেশের অর্থনীতির জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিষ্পন্ন থাকা এলসির দায় দুই বছরের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। একই সঙ্গে পরিশোধ করতে হবে নতুন করে খোলা এলসির দায়ও। এ অবস্থায় দেশের বাজারে চলমান ডলার সংকট সহসা কাটবে, এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং আগামী দিনগুলোয় অনিষ্পন্ন এলসির দায় খেলাপি হয়ে বিদেশে বাংলাদেশের ঋণমান অবনমনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বিনিয়োগ করিয়ে এখন নানা বিধিনিষেধ
২১ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
জাপানের অটোমোবাইল খাতের সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান হোন্ডা মোটর করপোরেশন ২০১৮ সালে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেড (বিএইচএল) নামের এই যৌথ উদ্যোগের কোম্পানিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল শিল্প সংস্থারও (বিএসইসি) মালিকানা রয়েছে।
বিএইচএলের কারখানাটি মুন্সিগঞ্জে। এতে কাজ করেন ৭০০ জনের বেশি কর্মী। ২০১৮ সালে কারখানা চালুর পর ব্যবসায় বিএইচএল ভালো করেছে। বছর বছর বিক্রি বেড়েছে। বাজার হিস্যার দিক দিয়ে তাদের অবস্থান উঠে এসেছে শীর্ষ চারে। তবে মোটরসাইকেল নিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক কয়েকটি সিদ্ধান্তে অন্যান্য কোম্পানির মতো দুশ্চিন্তায় পড়েছে বিএইচএল।
সরকার গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। একটি নিষেধাজ্ঞা আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
সেটি হলো লাইসেন্স প্রদর্শন ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি করা ও নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) দেওয়া যাবে না। এত দিন শিক্ষানবিশ লাইসেন্স নিয়ে মোটরসাইকেল কিনে নিবন্ধন নেওয়া যেত। মোটরসাইকেল কিনে চালানো শেখার পর চূড়ান্ত লাইসেন্স নিতেন গ্রাহকেরা। এদিকে সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা জোরদার করা ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ বাস্তবায়নে গঠিত টাস্কফোর্স গত মাসে আন্তজেলা ও মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের সুপারিশ করেছে।
মোটরসাইকেলকেন্দ্রিক এসব বিধিনিষেধ শুধু বিএইচএল নয়, পুরো মোটরসাইকেল খাতকেই দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। তাদের আশঙ্কা, লাইসেন্স প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা মোটরসাইকেল কেনাবেচায় ধস নামবে। কারণ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বছরে দেড় লাখের মতো লাইসেন্স দিতে পারে। ওদিকে মোটরসাইকেল বিক্রি হয় প্রায় ছয় লাখ।
উদ্যোক্তারা বলছেন, পরিস্থিতি অনেকটা ‘গাছে উঠিয়ে মই কেড়ে নেওয়া’র মতো। একদিকে সরকার নানা ধরনের নীতিসহায়তা দিয়ে মোটরসাইকেল খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে, অন্যদিকে বিধিনিষেধ দিয়ে এ খাতের গতি থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোম্পানিগুলো আরও বলছে, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সে বিষয়ে তারাও একমত। তবে তারা চায়, কোম্পানিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করে দুর্ঘটনা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হোক। লাইসেন্স দেখানো ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি করা যাবে না—এই বিধিনিষেধ আরোপের আগে বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএমএ) সভাপতি ও উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে মোটরসাইকেলশিল্পের যাত্রা শুরু। সরকার নীতিসহায়তা দিয়েছে, বলেছে যে ১০ বছরে নীতি পাল্টাবে না। তারপর কারখানা করা হয়েছে। এখন বিধিনিষেধ আরোপ করা তো সরকারের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, ‘বিআরটিএ আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই নির্দেশ জারি করেছে। এ নির্দেশ কার্যকর হলে কারখানা বন্ধের উপক্রম হবে।’
মোটা চালের কেজি এখন ৫৫ টাকা
২৩ আগস্ট, ২০২২, প্রথম আলো
ঢাকার বাজারে এখন মোটা চালের (স্বর্ণা) কেজি ৫৫ টাকায় উঠেছে, যা এক মাস আগের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। বাজারে নজর রাখা ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক কালে এই দর সর্বোচ্চ।
চালের মূল্যবৃদ্ধির হিসাবটি সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)। বাজার ঘুরেও দেখা গেছে একই চিত্র। শুধু মোটা চাল নয়, টিসিবি বলছে, সরু ও মাঝারি চালের দামও বেড়েছে। তবে বাড়ার হার মোটা চালের চেয়ে কম—৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ।
টিসিবির গতকাল সোমবারের হিসাবে, বাজারে এখন এক কেজি সরু চাল কেনা যাচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। আর মোটা চাল সর্বনিম্ন ৫৫, সর্বোচ্চ ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের বিকল্প খাদ্য আটার (খোলা) দামও এক মাসে বেড়েছে ২০ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান নিজের একটি গবেষণার বরাত দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলে মানুষ ব্যয় সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে মাঝারি চাল থেকে সরে মোটা চাল কেনা শুরু করে। এবার মোটা চালের দাম বেশি বাড়ার ক্ষেত্রে একটি কারণ হতে পারে, মানুষ মোটা চাল কেনা বাড়িয়েছে। এতে মোটা চালের বাজারে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।
চালের দামের সেই সময়
চাল দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। চালের দাম বাড়লে তা মূল্যস্ফীতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। এ কারণে এই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা দেখা যায়। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়।
দেখে নেওয়া যাক সাম্প্রতিক কালে বাজারে চালের দাম কেমন ছিল। ঢাকার বাজারে চালসহ নিত্যপণ্যের দামের হিসাব রাখে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তাদের হিসাবে ২০০৯ সালে ঢাকায় মোটা চালের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ২৩ টাকার কিছু বেশি। সরু চাল বিক্রি হতো সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজি দরে।
টিসিবির হিসাবে, ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি ঢাকার বাজারে মোটা চালের দাম ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা, যা পাঁচ বছর পরে (২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি) ৩৮ থেকে ৪২ টাকায় দাঁড়ায়।
অবশ্য মাঝে ২০১৭ সালের শেষ দিকে চালের দাম ব্যাপক বেড়ে গিয়েছিল। মোটা চালের কেজি উঠেছিল ৫০ টাকায়। এর কারণ ছিল হাওরে আগাম পানি চলে আসা ও অতিবৃষ্টির কারণে ফসলহানি। এরপর আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। এতে দাম কমতে শুরু করে।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় চালের কেজি ৩০ টাকায় নামে। এরপর যে বাড়ার প্রবণতা শুরু হয়, তা আর কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
চাল কিনতে দীর্ঘ লাইন
খাদ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, সরকারের কাছে এখন প্রায় ১৬ লাখ ৭৪ হাজার টন চাল রয়েছে। গত বছরের এই সময়ে যা ছিল ১৪ লাখ ২৭ হাজার টন।
মজুত থেকে সরকার খোলাবাজারে (ওএমএস) ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করছে। ঢাকায় চাল বিক্রির ট্রাকের পেছনে ভিড় বাড়ছেই। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসস্ট্যান্ডের কাছে ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রির ট্রাকের কাছে গিয়ে দেখা যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। যদিও তখন পর্যন্ত ট্রাক থেকে চাল বিক্রি শুরু হয়নি। পরে বেলা পৌনে দুইটার দিকে গিয়ে দেখা যায়, তখনো শ দেড়েক নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
চাল কেনার জন্য অপেক্ষমাণ মনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে চালের দাম অনেক বেশি। ওএমএসে কম দামে পাওয়া যায় বলে তিনি প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চাল কিনেছেন। চাল কিনতে গিয়ে অত্যধিক ভিড়ের মধ্যে চাপাচাপিতে হাতে ব্যথাও পেয়েছেন। তবু ১০ কেজি চাল পেয়ে তিনি খুশি।
মনোয়ারা খণ্ডকালীন গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালান। তাঁর ভাই দিনমজুরের কাজ করেন। মনোয়ারা বলেন, পাঁচ কেজি চাল তিনি নিজের ভাইকে দেবেন। কারণ, তাঁর ভাই চাল কিনতে পারেননি।
এবার চিনির বাজারে অস্থিরতা
২৫ আগস্ট, ২০২২, বণিক বার্তা
কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে ভোজ্যতেল, গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দেয়। ফলাফল হিসেবে বেড়ে যায় দাম। এর প্রভাব পড়ে আমদানিনির্ভর দেশগুলোতে। চলতি বছরের শুরুতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তোলে। তবে এতদিন এসবের বাইরে ছিল চিনির সরবরাহ ও দাম। কিন্তু সবচেয়ে বেশি চিনি উৎপাদনকারী দেশগুলোতে খরার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়া, বিভিন্ন দেশ নিজস্ব পণ্য রফতানি সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়াসহ বিভিন্ন কারণে চিনির বাজারও অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে বেড়ে গিয়েছে অপরিশোধিত চিনির বুকিং দর। যার রেশ পড়েছে বাংলাদেশের বাজারেও। এক মাসের ব্যবধানে দেশে পাইকারি পর্যায়ে চিনির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৬-৭ টাকা, খুচরায় যা আরো বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই মাস আগেও পাইকারি পর্যায়ে চিনির মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) দাম ছিল ২ হাজার ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭৫০ টাকা। দাম বাড়তে বাড়তে পণ্যটির মণপ্রতি দাম ৩ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ গতকাল দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি চিনির দাম এসও (সরবরাহ আদেশ) পর্যায়ে ৩ হাজার ৫০ টাকা এবং পাইকারি পর্যায়ে ৩ হাজার ৮০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে চিনির দাম বেড়েছে মণপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা। চাহিদামতো সরবরাহ কম থাকায় পণ্যটির দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এক বছর আগে সরকারি পর্যায়ে চিনির কেজিপ্রতি দাম ছিল ৬৫ টাকা। পরে এক দফায় দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে ৭০ টাকা করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) চিনির দাম আরো ৫ টাকা বাড়িয়ে ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে। সবশেষ ১০ আগস্ট বেসরকারি মিল মালিকদের অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে চিনির দাম পুনর্নির্ধারণের আবেদন করে। মূলত বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং প্রত্যাহার করা শুল্ক সুবিধা উঠে যাওয়ায় দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিল মালিকরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, বাংলাদেশে দুই ধরনের চিনি আমদানি হয়। এগুলো হলো অপরিশোধিত চিনি ও পরিশোধিত বা সাদা চিনি। অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ট্যারিফ ভ্যালু ধরা হয় টনপ্রতি ৩৫০ ডলার। আমদানি পর্যায়ে এ চিনিতে ৩ হাজার টাকা স্পেসিফিক ডিউটি বা কাস্টমস ডিউটি দিতে হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর এবং ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর।
অন্যদিকে সাদা চিনির ক্ষেত্রে টনপ্রতি ৪৩০ ডলার ট্যারিফ ভ্যালু ধরে ৬ হাজার টাকা কাস্টমস ডিউটি ছাড়া বাদবাকি শুল্ক অপরিশোধিত চিনির মতোই। তবে চলতি বছরের শুরুতে চিনির দাম বেড়ে গেলে সরকার অপরিশোধিত আমদানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে। এরপর একই সুবিধা চলতি বছরের ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও ১০ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহালের কারণে চিনির দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে দেশে চিনির চাহিদা প্রায় ১৮-২০ লাখ টন। দেশীয় চাহিদার মধ্যে সরকারি মিলগুলো একসময় দেড়-দুই লাখ টন চিনি উৎপাদন করত। তবে সর্বশেষ দুই বছরে ১৫টি সরকারি চিনিকলের মধ্যে ছয়টির উৎপাদন বন্ধ থাকায় উৎপাদন যথাক্রমে ৪৮ ও ২৫ হাজার টনে নেমে এসেছে। যার কারণে দেশের চিনি খাতটি প্রায় শতভাগ বেসরকারি মিলগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম কমল লিটারে ৫ টাকা
২৯ আগস্ট ২২, সমকাল
বৃদ্ধির ২৩ দিনের মাথায় দাম কমেছে জ্বালানি তেলের। ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমানো হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরে সোমবার রাতেই জ্বালানি বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
দাম বৃদ্ধির পর প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন বিক্রি হচ্ছে ১১৪ টাকায়। রাত ১২ টার পর এ আদেশ কার্যকর হবে; এরপর থেকে তা বিক্রি হবে ১০৯ টাকায়। অকটেন বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৩৫ টাকায়, এটি নামবে ১৩০ টাকায়। পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, তা কমে হবে ১২৫ টাকা।
এর আগে রোববার ডিজেলের আমদানি শুল্ক ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে ডিজেল আমদানিতে মোট শুল্ক ৩৪ শতাংশ থেকে কমে ২২ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে।
বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসান কমাতে গত ৬ আগস্ট এই চার পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম গড়ে ৪৭ শতাংশ বাড়িয়েছিল সরকার। সে সময় প্রতি লিটারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয় ৩৪ টাকা। অকটেন ও পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল যথাক্রমে ৪৬ ও ৪৪ টাকা।
জীবন এখন যেমন: কম কিনছেন কম খাচ্ছেন
৩০ আগস্ট, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
মো. সাবাব হোসাইন (ছদ্মনাম) পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মকর্তা। বয়স ৫০ এর বেশি। বাড়ি হবিগঞ্জে। গত ২ মাসে খাবারসহ অন্যান্য খরচ মিলে তার ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। তবে আয় ১ টাকাও বাড়েনি।
আয় না বাড়লে বাড়তি খরচের যোগান দিচ্ছেন কীভাবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু সঞ্চয় ছিল। সেগুলো ভেঙে খরচ করছি। জানি না কতদিন চলবে। এক প্রকার নিরুপায় হয়ে গেছি।’
সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারের চালের দোকানের সামনে সাবাব হোসাইনের সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয়।
স্ত্রী ও ২ সন্তান নিয়ে ৪ জনের পরিবার সাবাব হোসাইনের। কাজ করেন সাভারের একটি গার্মেন্টসে। থাকেন রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। সেখানেই থেকেই অফিসে যাতায়াত করেন।
এই গার্মেন্টস কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার ২ শিশুর জন্য দুধ কিনতে হয়। প্রতি কেজি দুধের দাম প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে। যে চাল আগে কিনতাম ৬৮ টাকা কেজি, সেই চাল এখন ৭৪ টাকা। বাস ভাড়া বেড়েছে। প্রায় সব নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে। এমন একটা পর্যায়ে আছি না পারছি খরচ কমাতে, না পারছি কমদামি পণ্য কিনতে। বাধ্য হয়েই সঞ্চয় ভেঙে চলছি।’
এভাবে আর কতদিন চলতে পারবেন, জানতে চাইলে কিছুক্ষণ চুপ থাকেন তিনি। তারপর বলেন, ‘মনের কষ্টগুলো কাউকে বলতে পারি না। কিছুদিন আগে আমাদের গার্মেন্টেসের মালিক বলেছেন তাদের নাকি বিক্রি কমে গেছে। লোক ছাঁটাইয়ের কথা ভাবছে। আমাদেরকে চাকরি খুঁজতে বলেছেন। পরে আমরা বাধ্য হয়ে সবাই বলেছি ছাঁটাই না করে আমাদের বেতন একটু কমিয়ে দেন। এই বয়সে কোথায় চাকরি খুঁজব। সবমিলে আমার আয় কমেছে, কিন্তু ব্যয় বেড়েছে।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে খাবার কমিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যে পরিস্থিতিতে আছি, চাইলেও খাবার কমানো বা খরচ কমানো সম্ভব না। তবে আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব খরচ কমিয়েছে। যারা আগে চিকন চাল কিনতেন, তারা এখন মোটা চাল খাচ্ছেন। কেউ বা পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে অফিসের আশেপাশে একটা রুম নিয়ে থাকছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমাকেও হয়তো পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে কম খরচে চলতে হবে।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সানজিদা আক্তার (ছদ্মনাম) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগে নিয়মিত কফি খেতাম, এখন আর খাই না। আমার বাসায় সবসময় ফলমূল থাকত। কাঠবাদাম, কাজুবাদাম এগুলো খেতাম। এখন ৩ বেলা খেতে পারলেই বাঁচি। মুখ লজ্জায় এই কথাগুলো কারো সঙ্গে শেয়ারও করতে পারি না।’
‘আমার আয় বাড়েনি, কিন্তু খরচ বেড়েছে। ব্যাংকে কিছু টাকা ছিল, সেখান থেকে চলছি। বেশি অবস্থা খারাপ হলে গ্রামে চলে যাব। সেলাইকাজ জানি। সেটি দিয়েই টুকিটাকি আয় করে চলব’, তিনি যোগ করেন।
মানুষ যে তাদের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ডেইলি স্টার আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকেও। গত শনিবার ডেইলি স্টার আয়োজিত ‘আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ সম্পর্কিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১০ জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন মাহমুদ শাহ বলেন, ‘দেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে মানুষ তাদের জমা টাকা তুলে নিচ্ছেন। গত ৯ মাসের চিত্র থেকে বললে, ৩৫ শতাংশ এফডিআর গ্রাহকরা ভেঙেছেন প্রাত্যহিক খরচ চালাতে।’
অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করেন এবং তাদের ব্যাংকেও প্রায় একই অবস্থা বলে জানান।
মানুষ যে কম কিনছেন, সেই প্রমাণও পাওয়া যায় দোকানীদের সঙ্গে কথা বলে। ঢাকা রাইসের সত্ত্বাধিকারী মো. সায়েম বলেন, ‘আমার আগের যে ক্রেতারা চিকন চাল কিনতেন, তারা এখন মোটা চাল কিনছেন। এমনো কিছু ক্রেতা আছেন যারা আগে প্রতিমাসে ২৫ কেজি চাল কিনতেন, তারা এখন ১৫-২০ কেজি কিনছেন। কম চাল কেনে চলেন কীভাবে, সেটা তারাই ভালো জানেন। দেখ বোঝা যায় সবাই অনেক কষ্টে আছেন।’
ডিজেলের দাম ৫ টাকা কমায় বাস ভাড়া ৫ পয়সা কমল
৩১ আগস্ট, ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ডিজেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমার পর বাস ভাড়াও কমানো হয়েছে।
বুধবার বিআরটিএতে এক বৈঠকে বাস ভাড়া কিলোমিটারে ৫ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
ঢাকার বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে ডিজেলচালিত বাস-মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী।
গত ৬ অগাস্ট সরকারের এক সিদ্ধান্তে ডিজেলের দাম ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা (৪২.৫ শতাংশ) বাড়িয়ে লিটার ১১৪ টাকা করার পর বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়।
সে দফায় বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে দূরপাল্লায় ৪০ পয়সা এবং নগরে ৩৫ পয়সা করে বাড়ানো হয়। দূরপাল্লায় বাসের ভাড়া দাঁড়ায় ২ টাকা ২০ পয়সা। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাস ভাড়ার হার দাঁড়ায় কিলোমিটারে ২ টাকা ৫০ পয়সা।
নতুন সিদ্ধান্তের ফলে দূরপাল্লায় বাসের ভাড়া হবে ২ টাকা ১৫ পয়সা। আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাস ভাড়া হবে কিলোমিটারে ২ টাকা ৪৫ পয়সা।
সংকটের মূলে সরকারের ভুল নীতি, অব্যবস্থাপনা
৩১ আগস্ট, ২০২২, প্রথম আলো
নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য জাতীয় সংসদে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেওয়া ভুল নীতিকেও তাঁরা দায়ী করেন। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করেন তাঁরা।
বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা বর্তমান পরিস্থিতির জন্য রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করেন। তাঁরা দাবি করেন, এখনো বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ শক্ত অবস্থানে আছে।
কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জ্বালানি–সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ জাতিকে জানাতে সংসদে সাধারণ প্রস্তাব আনেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক।
সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, পরিস্থিতি মূল্যায়নে সরকারের ব্যর্থতা ছিল। অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজির কথা বলছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। কিন্তু সরকারের সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে এটি হতো না। তিনি প্রশ্ন রাখেন, দেশে রিজার্ভ যথেষ্ট থাকলে ডলারে অস্থিরতা কেন?
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, ‘সরকারের লোকেরা প্রত্যক্ষ করেন কি না জানি না। কিন্তু আমরা দেখি, মানুষ আসলেই খুব খারাপ অবস্থায় আছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং গরিব মানুষ বাজারে গেলে তাদের গায়ে আগুন লেগে যায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে।’
সরকার জ্বালানি কূটনীতিতে মনোযোগী নয় উল্লেখ করে মুজিবুল হক বলেন, ওপেকভুক্ত (জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন) তেল উৎপাদনকারী কোম্পানি এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে জ্বালানি সরবরাহের স্থায়ী কোনো চুক্তি করার উদ্যোগ নেই। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেয়ে স্পট মার্কেট (আন্তর্জাতিক খোলা বাজার) থেকে তেল আমদানি করার আগ্রহের পেছনে অন্তর্নিহিত কোনো স্বার্থ আছে। প্রাথমিক জ্বালানির উৎস এবং সরবরাহ নিশ্চিত না করেই সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দেশে প্রতিবছর বেসরকারি বিদ্যুতকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়লেও বড় অংশ অলস পড়ে আছে জানিয়ে মুজিবুল হক বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে ক্যাপাসিটি চার্জের (বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া) নামে প্রচুর আয় করেছে বিনিয়োগকারীরা। ১২ বছরে এখানে খরচ হয়েছে ৮৬ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। এমনকি ভারতে থেকে গত ৯ বছরে বিদ্যুৎ আমদানিতে ক্যাপাসিটি চার্জ গেছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা। ভর্তুকির পুরোটাই অপ্রয়োজনীয়, অলস, রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি এবং ওভারহেডিং চার্জে গেছে। গত এক যুগে দেশে বিদ্যুৎ খাতের শীর্ষ ১০টি কোম্পানির ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৪৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। এ আনুকূল্যের পেছনের সরকারের স্বার্থ কী, তা তিনি জানতে চান।
বিভিন্ন ব্যাংকে বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) ২৫ হাজার ২৬৪ কোটি জমা আছে জানিয়ে জাপার এই সংসদ সদস্য বলেন, ওই ব্যাংকগুলোর অবস্থা কাহিল। মানুষকে ঋণ দিয়ে তাদের এখন মূলধন নেই। বিপিসি চাইলেও টাকা তুলতে পারবে না। বিপিসি কার স্বার্থে এই টাকা ওই সব ব্যাংকে রেখেছে, সেটিও জানতে চান তিনি।
সরকারের জ্বালানি নীতির সমালোচনা করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, শাসনক্ষমতার কেন্দ্রে আছে কিছু ক্ষুদ্র ধনিক ও আমলা গোষ্ঠী। তাদের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির পেছনে বৈশ্বিক কারণ আছে, এটা ঠিক। কিন্তু নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখা দরকার, নীতি সঠিক কি না। জ্বালানি নীতি মূলত আমদানিনির্ভর। এ কারণে জ্বালানি–সংকটের সময় এ খাত মুখ থুবড়ে পড়েছে। জ্বালানি তেলের যে দাম কমানো হয়েছে, তা হলো ‘গরু মেরে জুতা দান।
অবস্থা অনেক মজবুত’
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইউরোপে এখন ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। জার্মানির মতো দেশে হাহাকার চলছে। কোনো কোনো দেশে মূল্যস্ফীতি ২৩ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা অনেক মজবুত।
বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এরশাদ সরকার ও বিএনপি জোট সরকারের আমলের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিরোধী দল প্রথম আলোর প্রতিবেদন দেখিয়েছে। তিনিও প্রথম আলোর কিছু খবর তুলে ধরতে চান। এ সময় তিনি ২০০১-২০০৭ সালের বিদ্যুৎ ও পানি পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলো পত্রিকার বেশ কিছু প্রতিবেদনের কাটিং তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিরোধী দলের সদস্যদের ‘গোল্ডফিশ মেমোরি’। তাঁরা সব ভুলে গেছেন। এখন ভূতের মুখে রাম নাম। তাঁরা একই ভাঙা রেকর্ড বাজাচ্ছেন। ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া ছাড়া বিশ্বের কোথাও বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যায় না।
নসরুল হামিদ বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরপর যখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন দেশে দাম বাড়ালে ৬০ টাকা বাড়াতে হতো। এ কারণে সরকার অপেক্ষা করেছে তেলের দাম কমার জন্য। বৈশ্বিক অবস্থা, তেলের ঘাটতি ও প্রতিবেশী দেশে পাচারের আশঙ্কা বিবেচনায় পরবর্তী সময়ে তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
সত্য স্বীকারে ব্যর্থতা
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, সত্য স্বীকারে আওয়ামী লীগের ব্যাপক ব্যর্থতা আছে। তাদের উচিত সত্য স্বীকার করে নেওয়া এবং সমাধান বের করা। সংকট মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনা কী, তা তুলে ধরা। তিনি প্রশ্ন রাখেন, বিপিসির টাকা কোথায় গেল। ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে। সেসব ব্যাংকে কেন বিপিসির টাকা রাখা হলো। তিনি বলেন, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের সংকট—এগুলো নিয়ে আলোচনা দরকার। ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার গুম, খুনসহ যেসব কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি দিচ্ছে, তা এক সময় বুমেরাং হবে।
বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, চলমান সংকট থেকে বের হতে হলে দুর্নীতি, অপচয় বন্ধ করতে হবে। সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে আসতে হবে। কর্তৃত্ববাদী আচরণ পরিহার করতে হবে।
মন্ত্রীরা স্বীকার করেন না
সরকারের নিশ্চয় কিছু ভুল আছে বলে উল্লেখ করেন জাপার সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, আইএমএফের কাছে চার বিলিয়ন ডলার চাওয়া হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি ডলার আনা যেত যদি ‘সিস্টেমেটিক্যালি’ (নিয়মমাফিক) টাকার অবমূল্যায়ন করা হতো বা প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা বাড়ানো হতো।
জাপার আরেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মন্ত্রীরা ব্যর্থতা ঢাকতে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। দেশে অভাব নেই, এটা ঠিক নয়। কিন্তু মন্ত্রীরা এটা স্বীকারই করতে চান না। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। এর সঙ্গে সরকারের অনেকে জড়িত। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যেসব ব্যাংক ডলারের দাম বাড়িয়েছে, সেসব ব্যাংকের এমডিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন।
বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, এই সরকারের উন্নয়নের বয়ানের মধ্যে ছিল অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি আর মাথাপিছু আয় দেখানো। সরকারের আচরণ বলছে, দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়া, বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা, নানাভাবে সরকারের ব্যয় সংকোচনের মতো পদক্ষেপ তীব্র সংকটকে নির্দেশ করে।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে রুমিন বলেন, দ্রব্যমূল্য বাড়লে সমস্যায় পড়ে মধ্যবিত্ত। না পারে চাইতে, না পারে সইতে।
রুমিন প্রশ্ন তোলেন, বর্তমান সংকট কি ভুল নীতির কারণে? নাকি ভয়ংকর লুটপাটের অনিবার্য পরিণতি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের কষ্টের জন্য নিজের এবং সরকারের পক্ষ থেকে মাফ চান হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, মানুষ কষ্টে আছে। এটি হঠাৎ শুরু হয়েছে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। কিন্তু মানুষকে সমবেদনা জানানোর বদলে কিছু মন্ত্রী ঠাট্টা–মশকরা করছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
সরকার অনেক ভুল করেছে, এখন ভুল স্বীকার করার সময় জানিয়ে জাপার সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, ‘উন্নয়নের অহমিকা বিপজ্জনক।’
যাত্রাপথে বিগড়ে যাচ্ছে রেলের ‘বুড়ো ইঞ্জিন’
০১ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
লক্কড়-ঝক্কড় আর মেয়াদহীন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের অধিকাংশ ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ)। এ কারণে চলন্ত অবস্থায় যখন তখন ইঞ্জিন বিকল হয়ে মেজাজ বিগড়ে দিচ্ছে যাত্রীদের। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে না পেরে যাত্রীরা পড়ছেন সীমাহীন বিপদে। তথ্য বলছে, শুধু রেলের পূর্বাঞ্চলেই গেল তিন মাসে চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৭০ বার। মূলত জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত না করায় বারবার এমন গ্যাঁড়াকলে পড়ছে রেল ইঞ্জিন।
সংশ্নিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, ব্রেক প্রেশার কমে যাওয়া, ইঞ্জিন অস্বাভাবিকভাবে গরম হওয়া, বৈদ্যুতিক সমস্যা ও যন্ত্রপাতি কাজ না করার কারণে সাধারণত ইঞ্জিন বিকল হয়। চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে লোকোমাস্টারকে (চালক) মোবাইল ফোনে নির্দেশনা দিয়ে ইঞ্জিন চালুর চেষ্টা করা হয়। বড় কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে আরেকটি ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেনটি চালানো হয় এবং বিকল ইঞ্জিন মেরামতের জন্য আরেকটি ইঞ্জিনের সহায়তায় ওয়ার্কশপে পাঠানো হয়। এ সবকিছু করতে গিয়ে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
পূর্বাঞ্চলে চলাচলকারী রেলের ইঞ্জিন বিকল কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হলে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপে নেওয়া হয়। ওই ওয়ার্কশপে একটি ইঞ্জিন দেড় বছর পরপর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি সারানো হয় ইঞ্জিনের নিয়মিত যান্ত্রিক ত্রুটিও।
সূত্র জানায়, রেলওয়ের বহরে রয়েছে ২৬৩টি ইঞ্জিন। এগুলোর মধ্যে ১৭৫টিই মেয়াদোত্তীর্ণ, যা মোট ইঞ্জিনের ৬৭ শতাংশ। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের মধ্যে ৭৮টি ৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো। এমনকি ১৯৫৩ সালে কেনা ৯টি লোকোমোটিভও এখন ব্যবহার হচ্ছে। অথচ সাধারণত একটি ইঞ্জিনের সেবার আয়ুস্কাল ধরা হয় ২০ বছর। ২৬৩ ইঞ্জিনের মধ্যে বর্তমানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ব্যবহার হচ্ছে ১৫৯টি ইঞ্জিন। এর মধ্যে ১০২টি সচল রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ ও অচল অবস্থায় রয়েছে ৫৭টি। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ইঞ্জিনই মেয়াদোত্তীর্ণ। দৈনিক ১১৬টি ইঞ্জিনের চাহিদা রয়েছে পূর্বাঞ্চলে। তবে নিয়মিত ইঞ্জিন পাওয়া যাচ্ছে ৯০-৯৫টি। ফলে ট্রেন পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত মে মাসে ইঞ্জিন বিকল হয়েছে ২৮ বার, জুনে ২৯ বার আর জুলাইয়ে ১৩ বার। এর মধ্যে অন্তত ৪৬ বার ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ার পর যাত্রীদের ঘটনাস্থলে এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় লেগে যায়। কোনো স্থানে একটি ইঞ্জিন বিকল হলে অন্য ট্রেনও অনেক সময় আটকা পড়ে। যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি মালবাহী ট্রেনেরও ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটছে।
আমদানি নিয়ন্ত্রণে এলেও দায় নিষ্পত্তি বেড়েছে ৬৩ শতাংশ
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে কঠোর নীতি নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমদানির লাগাম টানতে এরই মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খোলায় আরোপ করা হয়েছে নানা শর্ত। এতে কিছুটা হলেও কমে এসেছে নতুন এলসি খোলার পরিমাণ। তবে এলসি খোলা কমলেও এলসি নিষ্পত্তির হার বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম মাস জুলাইয়ে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তির হার ৬৩ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। জুলাইয়ের ধারাবাহিকতায় আগস্টেও এলসি নিষ্পত্তিতে প্রায় একই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত ছিল বলে জানা গিয়েছে। অথচ রেকর্ড আমদানি এলসি খোলার ২০২১-২২ অর্থবছরেও এলসি নিষ্পত্তিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪৬ শতাংশ। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে এলসি নিষ্পত্তিতে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশে সীমাবদ্ধ।
এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার বিরূপ প্রভাব দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর পড়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়া রিজার্ভ এরই মধ্যে ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৯ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। আগামীকাল এ রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি দায় পরিশোধ করতে হবে। সে হিসাবে চলতি সপ্তাহেই রিজার্ভের পরিমাণ সাড়ে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জামালপুরে সারের দাবিতে কৃষকদের সড়ক অবরোধ, কর্তৃপক্ষ বলছে ‘সংকট নেই’
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
জামালপুর সদর উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী সারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন বিক্ষুব্ধ কয়েক শ কৃষক। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার নান্দিনা বাজার এলাকায় জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসে আশ্বাস দিলে সড়ক ছেড়ে দেন তাঁরা।
কৃষকদের অভিযোগ, রোপা আমনের খেতে সার দেওয়ার সময় চলে যাচ্ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী তাঁরা সার পাচ্ছেন না। আজ সকালে স্থানীয় ডিলার মেসার্স হায়দার ট্রেডার্স থেকে কৃষকদের সার দেওয়ার কথা ছিল। এ জন্য সকাল সাতটা থেকে নান্দিনা বাজারে বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা জড়ো হন, তবে ৯টা বেজে গেলেও গুদামটি খোলা হচ্ছিল না। এ জন্য কৃষকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
অন্যদিকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সারের কোনো সংকট নেই। কিন্তু কৃষকেরা সার পাবেন না বা অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হবে—এমন শঙ্কা থেকে সার বিক্রির খবর পেয়েই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তাঁরা। এ কারণেই সেখানে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।
যে গুদাম ঘিরে বিক্ষোভ হয়েছে, তাঁর স্বত্বাধিকারীর ভাষ্য, যে পরিমাণ সার তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন তাঁর অর্ধেক গুদামে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু গুদামের সামনে কয়েক গুণ কৃষক জড়ো হয়েছেন। সে কারণে তিনি আরও বিশৃঙ্খলার শঙ্কায় গুদাম খোলেননি।
মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা, সর্বোচ্চ ১০০
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, বণিক বার্তা
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরে মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ উত্তরা-মতিঝিল পথে মেট্রো রেলের সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। দেশের মানুষের আর্থিক সামর্থ্য ও বর্তমানের বাসভাড়া বিশ্লেষণ করে খাতসংশ্লিষ্টরা মেট্রোরেলের জন্য নির্ধারিত ভাড়াকে বেশি হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে এ হারে আদায় হওয়া ভাড়া দিয়েও পরিচালন ব্যয় তুলে আনা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন খোদ বাংলাদেশের মেট্রো কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।
গতকাল উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোতে প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্র উদ্বোধনের পর মেট্রোর ভাড়ার হার চূড়ান্ত করার কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, মেট্রোরেলে সর্বনিম্ন যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণের জন্য খরচ হবে ১০০ টাকা। কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। যেসব যাত্রী সাপ্তাহিক, মাসিক, পারিবারিক কার্ড ব্যবহার করবেন, তাদের বিশেষ ছাড় দেয়া হবে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা বিনামূল্যে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবেন।
সরকার নির্ধারিত মেট্রোরেলের এ ভাড়াকে ‘বেশি’ ও ‘অযৌক্তিক’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ঢাকা শহরে সরকার নির্ধারিত বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৪৫ পয়সা। সেখানে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে কিলোমিটারপ্রতি ৫ টাকা। আবার বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা হলেও মেট্রোর সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। এ ভাড়ার হার কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের আর্থিক সামর্থ্যের উপযোগী হয়নি।
দেশে কোটিপতি এক লাখ ৮ হাজার
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ঢাকা ট্রিবিউন অনলাইন বাংলা
দেশে তিন মাসে কোটিপতি বেড়েছে ৪ হাজার ৮৬০ জন। চলতি বছরের মার্চের শেষে কোটি টাকা আমানতের অ্যাকাউন্ট ছিল ১ লাখ ৩ হাজার। জুনের শেষে যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮ হাজারে।
চলতি বছরের মার্চের শেষে ২৫ কোটি টাকার ওপরে জমা থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৯৭৫টি। যা জুনের শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১১৮টিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জুনের শেষে শেষে কোটি টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৯৯ হাজার ৯১৮টি। যা সেই বছরের ডিসেম্বরের শেষে গিয়ে দাঁড়ায় এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টিতে।
সিঙ্গাপুরের ৪২তম শীর্ষ ধনী সামিটের আজিজ খান
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় আবারও নাম উঠেছে বাংলাদেশের মুহাম্মদ আজিজ খানের। তিনি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি সামিটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। গতকাল বুধবার মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকা প্রকাশ করে।
এ তালিকায় আজিজ খান রয়েছেন ৪২ নম্বরে। তাঁর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৯৫ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা।
ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৩ বছর বয়সী আজিজ খান এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিকস, অবকাঠামো খাতের ব্যবসা আছে সামিট গ্রুপের। সামিটের অধীন এ দেশে বিদ্যুৎ খাতের যত ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর মালিকানায় বা হোল্ডিং কোম্পানি সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল। আর সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত। এ কারণে বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও যেহেতু সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত, তাই এটির সম্পদের হিসাব করা হয় সিঙ্গাপুরে।
বিশ্বব্যাংক থেকে বাজেট সহায়তা পেতে ১২ শর্ত
১৫ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
আগামী তিন বছরে বাংলাদেশকে ১৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দেওয়ার কথা রয়েছে বিশ্বব্যাংকের। তবে এ ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এক ডজন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- জ্বালানি খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি প্রণয়ন ও কার্বন কর আরোপের পদক্ষেপ। শর্তগুলোর বেশিরভাগই সরকারের রাজস্ব এবং আর্থিক খাতের সংস্কারের সঙ্গে সম্পর্কিত। সংস্কারের প্রশ্নে সরকারের সাহসী নীতি ও সিদ্ধান্ত থাকলে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আরও বেশি পরিমাণ ঋণ পেতে পারে।
জানা গেছে, ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্প্রতি এক বৈঠকে বাংলাদেশকে এসব শর্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত জুনে বিশ্বব্যাংকের কাছে বাজেট সহায়তা আকারে ঋণ চাওয়া হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
বীজের রাজনীতিতে বিলুপ্তপ্রায় হরি ধান
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, বণিক বার্তা
আমনের অন্যান্য জাতের তুলনায় ফলন বেশি। খরাসহিষ্ণু জাতটিতে রোগবালাইয়ের আক্রমণও তেমন একটা দেখা যায় না। ধানের গোছা পুরুষ্টু ও বিচালিও শক্ত। চাল মোটা হলেও এর ভাত খেতে সুস্বাদু বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। গাছ পুষ্ট ও লম্বা হওয়ায় খড়ের দামও পাওয়া যায় অন্যান্য জাতের তুলনায় বেশি। এর পরও গত দুই দশকে হরি ধানের আবাদ সম্প্রসারণ করা যায়নি। এ জাতের উদ্ভাবক হিসেবে প্রয়াত কৃষক হরিপদ কাপালি জেলা পর্যায়ের নানা পুরস্কার পেলেও এখনো বীজের জাত হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি হরি ধানের। স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন কৃষক ও হরিপদ কাপালির পরিবারের সদস্যরা ছাড়া আর কাউকে এখন আর এ ধান আবাদ করতে দেখা যায় না। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলার কিছু এলাকায় এখনো সামান্য পরিমাণে আবাদ হচ্ছে। মূলত আবাদ সম্প্রসারণ না হওয়ার কারণেই হরি ধান এখন এক প্রকার বিলীনের পথে বলে জানিয়েছেন কৃষি খাতের বাজার পর্যবেক্ষকরা।
স্থানীয় পর্যায়ে উদ্ভাবিত এমন অনেক ধানের জাত বাজার না পেয়ে হারিয়ে গিয়েছে। দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় জাতগুলো অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারত বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। তাদের ভাষ্যমতে, এমন অনেক জাতই বীজের বাজারকেন্দ্রিক রাজনীতিতে টিকতে না পেরে হারিয়ে গিয়েছে। হরি ধানের ক্ষেত্রেও এখন এমনটাই ঘটছে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
‘অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা না করলে ব্যবস্থা’
২২ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
‘অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) জমি বরাদ্দ নিয়ে অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিল্পকারখানা স্থাপন করতে হবে। তা না করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বুধবার এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ কথা জানান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেজার কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ছয় প্রতিষ্ঠানকে ১৭ একর জমি বরাদ্দের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, একসময় বিসিকের জমি নিয়ে শিল্পকারখানা স্থাপন না করে ভবিষ্যতে দাম বাড়ার আশায় তা রেখে দিতেন অনেকে। ইজেডেও কিছু প্রতিষ্ঠান জমি নিয়ে শিল্প স্থাপন করছে না। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে যাঁরা শিল্প স্থাপন করেননি তাঁদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফেরত নেওয়া হবে জমি। সেই প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে চলছে লুকোচুরি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে চলছে লুকোচুরি। সেপ্টেম্বর মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ সরকার আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি। বেশি হারে বেড়েছে বলেই মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতির তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একধরনের রাজনীতি করা হচ্ছে।
সাধারণত প্রথম সপ্তাহেই আগের মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য তৈরি করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এবারও তা-ই করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো সরকারের উচ্চপর্যায়ের ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়া যায়নি। ফলে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করছে না পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিবিএসের খসড়া হিসাবে গত আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আর খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে উঠেছে। এক মাসের মধ্যে প্রায় ৩ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির তথ্য সরকার প্রকাশ না করলেও সীমিত আয়ের মানুষ ঠিকই এর উত্তাপ পাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। প্রতিনিয়ত চাপ সামলাতে হচ্ছে তাদের। এতে গরিব আরও গরিব হয়ে যাচ্ছে, মধ্যবিত্তরাও জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।
সরকারি সহায়তা পেতে প্রান্তিক চাষির বঞ্চনা
২৩ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
কৃষি খাতে নানা ভর্তুকি, প্রণোদনা, বরাদ্দ ও প্রকল্পে খরচ করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তবে সেই টাকার সুফল প্রান্তিক চাষিরা পাচ্ছেন কিনা-তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। প্রান্তিক চাষিদের অভিযোগ, তদারকি ও জবাবদিহিতা না থাকায় অনেক সময় প্রকৃত কৃষকরা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পদে পদে হয়রানির মুখেও পড়ছেন তাঁরা। অনেক ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পছন্দের লোক, রাজনৈতিক নেতা কিংবা বড় উদ্যোক্তা। কখনও কখনও প্রণোদনার টাকা বা সামগ্রী যথাযথ বণ্টন না করে নয়ছয়েরও অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে মাঠ পর্যায়ের একটি চক্রের ঘেরাটোপে বন্দি হয়ে আছেন ক্ষুদ্র চাষিরা।
সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ৮৭টি। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পে। ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল মেয়াদের এ প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ খাতে ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষিযন্ত্র বিতরণের কাজ চলছে।
যন্ত্রে সরকার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। তবু উচ্চ দরের যন্ত্রপাতির ব্যবহার এখনও অধিকাংশ কৃষকের নাগালের বাইরে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাবে তা ১০ শতাংশের কম। ডিএই জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০৮ কোটি টাকা খরচে সারাদেশে প্রায় দুই হাজার ৩০০টি কৃষিযন্ত্র কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। তবে এসব যন্ত্র বিতরণে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। বিভিন্ন এলাকায় নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও প্রকৃত চাষির হাতে যাচ্ছে না যন্ত্র। কিছু ক্ষেত্রে বরাদ্দের যন্ত্র উধাও হওয়ারও ঘটনা ঘটেছে।
যেভাবে অনিয়ম: গত ৯ জানুয়ারি নওগাঁ ডিএইয়ের উপপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগে বদলগাছীর বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের আশরাফুল ইসলাম জানান, বদলগাছীতে ১০টি পাওয়ার থ্রেসার মেশিন বরাদ্দ হয়। নিজের নামে বরাদ্দ আসার পর আশরাফুল ইসলাম উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে কৃষি কর্মকর্তা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন করা ওয়ার্কশপ থেকে কিনতে হবে। জেলায় ৮০টির মতো পাওয়ার থ্রেসার মেশিন তৈরির ওয়ার্কশপ থাকলেও মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনভুক্ত। এগুলো হলো পত্নীতলার নজিপুর বাজারের এমআর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এবং ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা এবং পত্নীতলা কৃষি অফিসের এক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার আত্মীয়। আশরাফুল ওই দুই ওয়ার্কশপে যোগাযোগ করলে পাওয়ার থ্রেসার মেশিনের দাম চাওয়া হয় ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অথচ সরকারের ভর্তুকি দরে এর দাম ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এদিকে একই মানের পাওয়ার থ্রেসার মেশিন অন্য ওয়ার্কশপগুলোতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
২০২০ ও ২০২১ সালে কিশোরগঞ্জ সদরের দানাপাটুলি ইউনিয়নে ১৩টি ধান কাটার যন্ত্র দেওয়া হয়। কৃষি বিভাগের শর্ত অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে এগুলো কেউ বিক্রি করতে পারবে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি যন্ত্রও এখন নেই। বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা তা বিক্রি করে দিয়েছেন। দানাপাটুলি ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক বলেন, তাঁদের ইউনিয়নে দু-তিনটি যন্ত্র হলেই যথেষ্ট। অথচ সেখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩টি।
ব্যয় বাড়ে, ট্রেন কমে, ভারী হয় লোকসানের বোঝা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
কাগজে-কলমে রেল দেখাচ্ছে সারা দেশে ৩৬৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। কিন্তু বাস্তবে চলছে ২৭৬টি। অর্থাৎ ৯২টি ট্রেনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলোর প্রায় সব কটিই মেইল, লোকাল ও কমিউটার। যাত্রাপথে এসব ট্রেন প্রায় সব স্টেশনে থামে।
নিম্ন আয়ের মানুষ, অফিসগামী ব্যক্তি ও গ্রাম থেকে শহরের বাজারে টুকটাক পণ্য পরিবহনের প্রধান ভরসা হিসেবে পরিচিত এসব ট্রেন। বন্ধ ট্রেনের কোনো কোনোটি কয়েক বছর ধরে চলছে না। কিছু ট্রেন বন্ধ আছে করোনা মহামারির পর। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এসব বন্ধ ট্রেনের বিষয়টি পুরোপুরি
চেপে যাচ্ছে।
রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ইঞ্জিন-কোচের স্বল্পতা এবং প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে ট্রেনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর যেসব ট্রেন চলাচল করছে, সেগুলোও সক্ষমতার চেয়ে কম কোচ নিয়ে চলছে। এতে যাত্রীও কম যাতায়াত করতে পারছে। ইঞ্জিন, রেল অবকাঠামো ও লোকবল ব্যবহার করে কম কোচ নিয়ে চলাচলের কারণে তুলনামূলকভাবে পরিচালন ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ট্রেন পরিচালনায় প্রত্যেক যাত্রীর পেছনে কিলোমিটারপ্রতি প্রায় আড়াই টাকা খরচ হয়। আয় এর অর্ধেকের মতো।
ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ বছর। আর কোচের ৩৫ বছর। রেলের হিসাবেই ৬৭ শতাংশ ইঞ্জিন এবং ৪৭ শতাংশ কোচ আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে। ৯৫টি ইঞ্জিন কেনা হয়েছে স্বাধীনতার আগে। এগুলোর কোনো কোনোটির বয়স ৬৬ বছর পর্যন্ত।
বর্তমানে রেলে আন্তনগর ট্রেনের সংখ্যা ১০৪। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের সোনার বাংলা ও সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি সর্বোচ্চ ২২টি কোচ নিয়ে চলাচল করার সক্ষমতা আছে। কিন্তু এ দুটি ট্রেন চলছে ১৪টি কোচ নিয়ে। একইভাবে মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনগুলোও সক্ষমতার অর্ধেক বা এরও কম কোচ নিয়ে চলাচল করছে।
চীনা ঋণের প্রকল্প
বৈদ্যুতিক পণ্যেই ৪৫ কোটি ডলার বেশি দিয়ে চুক্তি ডিপিডিসির
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে শুধু ইলেকট্রিক্যাল বা বৈদ্যুতিক পণ্য কিনতেই বাংলাদেশকে বেশি গুনতে হচ্ছে প্রায় ৪৫ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৯৯ টাকা দরে (সরকারি প্রকল্প) হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় তা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন এ প্রকল্পের নাম ‘ডিপিডিসি এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প। ২০ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকার এ প্রকল্প বিদ্যুৎ বিতরণ খাতে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ব্যয়ের দিক থেকে বেশি হলেও এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে নেই। এর কাজ করছে চীনের বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তেবিয়ান ইলেকট্রিক অ্যাপারাটাস কোম্পানি লিমিটেড (টিবিইএ)।
ডিপিপি বিশ্লেষণে দেখা যায়, চীনা ঠিকাদার টিবিইএ শুধু প্রকল্পের বৈদ্যুতিক পণ্যের জন্যই চেয়েছিল ২১০ কোটি ২৫ লাখ ডলার। ডিপিডিসি প্রায় অর্ধেক কমিয়ে টিবিইএকে জানিয়েছিল, যেসব বৈদ্যুতিক পণ্য কিনতে হবে, তার জন্য ১১১ কোটি ১৮ লাখ ডলারের বেশি লাগবে না।
এ নিয়ে দুই পক্ষের দর-কষাকষির একপর্যায়ে স্বতন্ত্র পরামর্শক হিসেবে বুয়েটের কাছে যায় ডিপিডিসি। বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন (বিআরটিসি) সব ধরনের বিশ্লেষণ করে ডিপিডিসিকে জানায়, ইলেকট্রিক্যাল পণ্যগুলোর দাম হতে পারে বড়জোর ৮৭ কোটি ৬ লাখ ডলার।
কিন্তু বিআরটিসির মতামত অগ্রাহ্য করে ডিপিডিসি শেষ পর্যন্ত এ পণ্যের জন্য চীনা ঠিকাদারের সঙ্গে ১৩২ কোটি ২২ লাখ ডলারের চুক্তি করে। আর এতেই ৪৫ কোটি ১৬ লাখ ডলার বেশি গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
টিবিইএকে ডিপিডিসি এভাবে কাজ দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বৈদ্যুতিক পণ্যেই যদি দামের এমন দশা হয়, সহজেই অনুমেয় যে পুরো প্রকল্প কত বেশি দামে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
রূপপুরের ঋণের সুদাসল রুবলে চায় রাশিয়া
০১ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়া যে ঋণ দিয়েছে, তার সুদ ও আসল নিজেদের মুদ্রা রুবলে পেতে চায় দেশটি। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সরকারকে পাঠিয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ও বৈশ্বিক লেনদেনব্যবস্থা সুইফট থেকে রুশ ব্যাংকগুলোকে বের করে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া এই প্রস্তাব দিল।
রাশিয়ার প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। তাদের পর্যালোচনা বলছে, চীনের মাধ্যমে এই লেনদেন করতে পারে বাংলাদেশ। তবে রুবলে ঋণের সুদাসল পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যয় ও ঝুঁকি বাড়তে পারে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব উত্তম কুমার কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার প্রস্তাব পর্যালোচনা করছি। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।’
যশোর-খুলনা মহাসড়ক
৩২১ কোটি টাকার কাজ শেষ হওয়ার আগেই খানাখন্দ
০৩ অক্টোবর, ২০২২, বণিক বার্তা
যশোর-খুলনা মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এখনো সড়কের উন্নয়নকাজ চলমান। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। মহাসড়কের ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৮ কিলোমিটারের নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই আট কিলোমিটার অংশজুড়ে ফুলেফেঁপে ওঠে। সে থেকে সড়কের নির্মাণকাজ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সড়কের নির্মাণকাজের এ অনিয়ম নিয়ে তোলপাড় হয় গোটা সড়ক বিভাগে। ক্ষুব্ধ হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ নিয়ে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হলে বুয়েটের একজন শিক্ষককে তদন্তের জন্য পাঠায় সড়ক বিভাগ।
পরবর্তী সময়ে সড়কের এ অনিয়ম ঢাকতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের ফুলেফেঁপে ওঠা আট কিলোমিটারজুড়ে শুরু করে জোড়াতালির কাজ। নতুন নির্মিত সড়কে একের পর এক চলতে থাকে সংস্কারকাজ, কিন্তু বিভিন্নভাবে জোড়াতালি দিয়েও অনিয়ম ঢাকতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। সম্প্রতি কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সব জোড়াতালি উঠে সড়কে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে সড়কের নির্মাণ ব্যয় ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। পরামর্শকের সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।
পদ নেই, কাজও আগের, তবু তাঁদের পদোন্নতি
৩ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
জনপ্রশাসনে যুগ্ম সচিবের পদ আছে সব মিলিয়ে ৫০২টি। যদিও এই পদের বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তা রয়েছেন ৭১৭ জন। নতুন করে পদোন্নতির প্রক্রিয়াও চলছে।
যুগ্ম সচিব পদের মতো অতিরিক্ত সচিব ও উপসচিব পদেও পদসংখ্যার চেয়ে কর্মকর্তা বেশি। পদ না থাকলেও পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা যে বাড়তি দায়িত্ব অথবা আগের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন, তা নয়। বহু ক্ষেত্রে পদোন্নতির পরও তাঁদের দিয়ে করানো হচ্ছে আগের কাজই। অর্থাৎ বড় কর্মকর্তারা এক ধাপ নিচের পদের কাজ করেন। পদোন্নতির ফলে শুধু তাঁদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ে। ফলে ব্যয় বেড়ে যায় সরকারের।
সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে বাজেট দিয়েছে, তাতে দেশের সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশনে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের ২৫ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ সরকার পুরো দেশের জন্য যে বাজেট করেছে, তার প্রতি ১০০ টাকা ব্যয়ের ২৫ টাকার বেশি যাচ্ছে সরকারের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন সুবিধায়।
সরকারের সব ধরনের চাকরিতে এভাবে পদোন্নতি হয় না। অভিযোগ আছে, প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে দ্রুত পদোন্নতি হয়। অন্য ক্যাডারে বছরের পর বছর কর্মকর্তারা পদোন্নতির আশায় বসে থাকেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অবশ্য পদোন্নতির পক্ষে কিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন। যুগ্ম সচিব পদে নতুন করে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়ার কথা জানাতে গিয়ে সম্প্রতি তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কর্মকর্তারা অবসরে যাওয়ায় প্রতিনিয়তই ওপরের পদগুলোতে জনবল কমতে থাকে। আর যুগ্ম সচিব পদটি বেশি প্রয়োজন। প্রকল্পসহ সরকারের কাজও বেড়েছে। এ জন্য যুগ্ম সচিব পদে অন্তত ১০০ জনের মতো বেশি জনবল রাখতে হয়। কারণ, অনেকে শিক্ষাছুটিতে থাকেন, অসুস্থ থাকেন।
অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাস্তবতা আসলে ভিন্ন। পদোন্নতি দিয়ে যথোপযুক্ত কাজ দিতে না পেরে সরকার কর্মকর্তাদের নিচের পদে দায়িত্বে রাখে। প্রয়োজন না থাকলেও পদোন্নতি দেওয়া হয় আমলাদের খুশি রাখতে।
জনপ্রশাসনের কাঠামো এখন ‘পেটমোটা’
বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে ২৬টি ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়।
জনপ্রশাসন নিয়ে গবেষণা করেন বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (পিএটিসি) সাবেক রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে জানান, দেশে জনপ্রশাসনের এখন যে কাঠামো রয়েছে, তা গড়ে তুলেছিল ব্রিটিশরা। এই কাঠামো পিরামিড আকৃতির, অর্থাৎ ওপরের স্তরে কর্মকর্তা কম থাকবেন, নিচের দিকে বেশি থাকবেন। এতে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত হবে। তিনি আরও বলেন, এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো আমলাতন্ত্র এখন সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভুটানে রয়েছে। তারা পিরামিড আকৃতি বজায় রেখেছে। বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের কাঠামো এখন ‘পেটমোটা’ হয়ে গেছে। তাঁর জানামতে, এমন ‘পেটমোটা’ কাঠামোর প্রশাসন আর কোথাও নেই।
বাংলাদেশের প্রশাসনের কাঠামো ‘পেটমোটা’ হয়েছে পদ ছাড়া পদোন্নতির কারণে। উল্লেখ্য, জনপ্রশাসনের পদ ছয়টি স্তরের। এর মধ্যে শুরুর পদটি সহকারী সচিব (মাঠ প্রশাসনে সহকারী কমিশনার)। এরপর ধারাবাহিকভাবে ওপরের পদগুলো হলো জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত শনিবারের হিসাব অনুযায়ী, জনপ্রশাসনে মোট কর্মকর্তা ৫ হাজার ৯৭১ জন। বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের নিয়মিত পদ আছে ২১২টি। এর সঙ্গে সমপর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেষণে (নির্ধারিত পদের বাইরে অন্যান্য দপ্তর বা সংস্থায় নিয়োগ) থাকা পদ আছে আরও প্রায় ১২৫টির মতো। সব মিলিয়েও অতিরিক্ত সচিবের পদ দাঁড়ায় ৩৩৭টিতে। কিন্তু ১ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মরত অতিরিক্ত সচিব ছিলেন ৪৩৩ জন। অর্থাৎ পদের চেয়ে ৯৬ জন অতিরিক্ত সচিব বেশি।
যুগ্ম সচিবের মোট পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি ২১৫ জন। আর এখন উপসচিব আছেন ১ হাজার ৬৩৬ জন। এই পদে কার্যত নিয়মিত পদ আছে হাজারখানেক। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, সারা দেশে সমপর্যায়ের পদগুলো মিলিয়ে উপসচিব বা সমপর্যায়ের পদ আছে ১ হাজার ৭৫০টি। উল্লেখ্য, উপসচিব থেকে পদগুলো আর একক কোনো ক্যাডারের থাকে না। এই পদে ৭৫ শতাংশ পদোন্নতি হয় প্রশাসন ক্যাডার থেকে এবং ২৫ শতাংশ পদোন্নতি হয় অন্যান্য ক্যাডার ছেড়ে আসা কর্মকর্তাদের। এদিকে উপসচিব পদে নতুন করে পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে।
বর্তমানে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব আছেন ১ হাজার ৮৯৫ জন এবং সহকারী সচিব আছেন ১ হাজার ১৯৬ জন। অর্থাৎ চাকরির শুরুর পদে কর্মকর্তা তুলনামূলক কম।
জ্যেষ্ঠ (সিনিয়র) সচিবসহ বর্তমানে ৭৬ জন সচিব এবং ১৮ জন গ্রেড-১–এর কর্মকর্তা আছেন।
১৯৭৯ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেওয়া ২৩ কর্মকর্তার উদাহরণ দিয়ে আবদুল আউয়াল মজুমদার বলছিলেন, এত কমসংখ্যক কর্মকর্তার পদোন্নতি পেয়ে উপসচিব হতে সময় লেগেছিল প্রায় ১৯ বছর। কারণ, ওপরের পদ খালি না হওয়ায় তাঁরা পদোন্নতি পাননি। এখন প্রশাসন ক্যাডারে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় বেশি। পদ না থাকলেও পদোন্নতি হয় দ্রুত।
পুলিশ ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হয়ে তৃতীয় গ্রেডের সুবিধা পাচ্ছেন। এমনকি ২৪তম বিসিএসের কয়েকজন কর্মকর্তাও পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এ ছাড়া ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারাও এক বছরের বেশি আগে পুলিশ সুপার (এসপি) পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। সর্বশেষ কিছুদিন আগে পুলিশের ২৮তম ব্যাচের ২৫ জন কর্মকর্তা এসপি পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। যদিও তাঁদের এখনো নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
বিদেশে ঋণসীমা কমায় বিপাকে দেশি ব্যাংক
০৫ অক্টোবর ২২, সমকাল
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই সংকট চলছে। বাজার সামলাতে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রির ফলে কমছে রিজার্ভ। এ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর ঋণসীমা বা ক্রেডিট লাইন কমিয়ে দিয়েছে অনেক বিদেশি ব্যাংক। এতে আমদানি দায় পরিশোধে বিপাকে পড়েছে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক। এ পরিস্থিতিতে ১০টি বিদেশি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে এ বৈঠকে বিদেশি মাশরেক ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, কমার্জ ব্যাংক এজি, জেপি মরগান, আইসিআইসিআই ব্যাংক, ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সিঙ্গাপুর, ডেটাচ ব্যাংক, এইচএসবিসি, সিটিব্যাংক এনএ এবং দোহা ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম বৈঠকে অংশ নেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ, ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ও বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এক বছরে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য বৃদ্ধি রহস্যময়ই থেকে যাচ্ছে
০৬ অক্টোবর, ২০২২, বণিক বার্তা
বাংলাদেশ গত অর্থবছরে রেকর্ড ১৪ হাজার ১২৪ কোটি বা ১৪১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক বাণিজ্য করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে যা প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলার বেশি। প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়ে যায় ৩৫ শতাংশ। রেকর্ড এ বাণিজ্যকে রহস্যময় আখ্যায়িত করে এর যথার্থতা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা প্রশ্নও তুলেছিলেন।
অর্থনীতিবিদদের তোলা প্রশ্নের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য তথা পণ্য আমদানি-রফতানির প্রায় ৯০ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে। সংস্থাটির তথ্যে দেখা যায়, অর্থের দিক দিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হলেও পণ্যে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। গত অর্থবছরে পণ্য আমদানি ও রফতানি বেড়েছে ৪ শতাংশেরও কম।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বন্দরটির মাধ্যমে ১০ কোটি ৭৮ লাখ ৭২ হাজার টন পণ্য আমদানি ও রফতানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে হয়েছিল ১০ কোটি ৩৯ লাখ ৫৬ হাজার টন। সে হিসাবে গত অর্থবছরে বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির হার মাত্র ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের মোট আমদানি ব্যয় ছিল ৮৯ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারের। আগের অর্থবছরে ছিল ৬৫ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমদানি ব্যয় বাড়ে ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার বা ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যদিও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, এ সময়ে পণ্য আমদানিতে মাত্র ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
অর্থের পরিমাপে বৈদেশিক বাণিজ্যের রেকর্ড প্রবৃদ্ধি আর পণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির বড় ধরনের অসামঞ্জস্যতা দেশ থেকে অর্থ পাচারের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে বিশ্ববাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে পণ্য পরিবহন ব্যয়। তবে পণ্যের দাম ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিসংখ্যানে সামঞ্জস্য নেই। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির গড় ১০ শতাংশের বেশি হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রফতানি প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশের কম হলেও অর্থের পরিমাপে ওই পণ্যের দাম ৩৫ শতাংশের বেশি বাড়া অস্বাভাবিক। বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বড় অংকের অর্থ পাচারের যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, এটি সেটিরই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
ওষুধের দাম ঘিরে দীর্ঘশ্বাস
০৭ অক্টোবর ২০২২, যুগান্তর
দেশে নিত্যপণ্যের মতোই জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম হুহু করে বাড়ছে। সরকার ৫৩ ধরনের ওষুধের দাম বেঁধে দিলেও খুচরা বিক্রেতাদের অনেকেই তা মানছেন না।
কোম্পানিগুলো নানা অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছে। জুন-জুলাইয়ের পর সেপ্টেম্বরেই অন্তত ৫০ ধরনের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমদানি করা ওষুধের দামের ওপর কারও হাত নেই। যে যার মতো দামে বিক্রি করছে। এক্ষেত্রেও বিশ্ববাজার, ডলার, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত দেওয়া হচ্ছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই নিয়মিত নজরদারি। এ সুযোগে ফার্মেসি মালিকরা বেশি দাম নিচ্ছেন। উচ্চমূল্যের পাশাপাশি আছে ভেজাল ওষুধ। সরকারি হাসপাতালগুলোয় ওষুধ কেনায় আছে দুর্নীতিও। ওষুধের বাজার ঘিরে নৈরাজ্য থামানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় উচ্চমূল্য জোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে অনেক রোগী কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাস চেপে ফার্মেসির সামনে থেকে শূন্যহাতে ফিরছেন। কেউ কেউ সামান্য ওষুধ কিনলেও বাকিগুলো খাওয়া ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ওষুধসেবন ছেড়ে দিলে দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক জটিলতার সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সুদূরপ্রসারী চ্যালেঞ্জ বাড়াবে।
ওষুধের বাড়তি মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সম্প্রতি সরকার সর্বোচ্চ ১৩৪ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু ওষুধের দামের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো যে প্রস্তাব করেছে, সরকার তার চেয়ে বেশি মূল্য বেঁধে দিয়েছে-এমন ঘটনাও আছে। এসব কারণে আগে যে দামে ওষুধ কেনা যেত, এখন তার চেয়ে কয়েকগুণ টাকা গুনতে হচ্ছে রোগীদের।
নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের বাজারে ওষুধের বাড়তি দাম জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রেতারা। খোলাবাজারে একই ওষুধের দামের ভিন্নতা আছে। সরকারি হাসপাতালেও এ ধরনের চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া গ্রামের দুর্গম এলাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের এবং ভেজাল ওষুধ বিক্রি হচ্ছে।
ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কেবল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত ১১৭টি জেনেরিকের ওষুধের দাম বাড়াতে পারে। বাকিগুলোর দাম উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সবদিকে কঠোর মনিটরিংয়ের অভাবে এ খাতে বিশৃঙ্খলা চলছে। মানুষের প্রাণ রক্ষায় এদিকে সরকারের দ্রুত নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কমে আসছে ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য
০৯ অক্টোবর ২২, সমকাল
ডলার বিক্রির কারণে একদিকে বাজার থেকে টাকা উঠে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। একই সময়ে পণ্যের দর বৃদ্ধির প্রভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ছে। তবে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আমানত তেমন বাড়ছে না। এতে করে কমে আসছে ব্যাংক খাতের উদ্বৃত্ত তারল্য। গত আগস্ট শেষে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায় নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। গত জুলাইয়ে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭২৫ কোটি টাকায় নামে। আগস্টে কমেছে আরও ১৪ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের আগস্ট শেষে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৫২ শতাংশ
১১ অক্টোবর, ২০২২, বণিক বার্তা
আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ হিসাব করেছে। আজ মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে হালনাগাদ মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে এম এ মান্নান বলেন, গত মাস শেষে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। এ নিয়ে পরপর দুই মাস মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। জুলাইয়ে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
বৈদেশিক ঋণ বেড়ে ৯৫.৮৫ বিলিয়ন ডলার, উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদরা
১৩ অক্টোবর, ২০২২, ঢাকা ট্রিবিউন অনলাইন বাংলা
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাড়তি উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন মাসে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই বৈদেশিক ঋণ ৯৫.৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সরকারি খাতে ৫৯.৯ বিলিয়ন ডলার দীর্ঘমেয়াদী ঋণ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ ধরনের বৃদ্ধি আগে কখনো হয়নি। এটি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এমনিতেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থায় রিজার্ভ অবনতির চাপে রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে মন্দা দেখা দিয়েছে, এমন অবস্থায় আগামী দুই বছরের জন্য রিজার্ভ থেকে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অন্যান্য সরকারি খাতে উচ্চ সুদ হারের স্বল্পমেয়াদী ঋণ ২.৮৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ ২৫.৯৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদী ঋণ ১৭.৭৫ বিলিয়ন ডলার; এবং স্বল্পমেয়াদী বাণিজ্য ঋণ ১১.৯৬ বিলিয়ন ডলার।
খেলাপির পথে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদেশী ঋণ
১৬ অক্টোবর, ২০২২, বণিক বার্তা
বিদেশী উৎস থেকে দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নেয়া ঋণ খেলাপি হওয়ার পথে রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হতে শুরু করেছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। আবার উদ্যোক্তারা চাইলেও মধ্যস্থতাকারী দেশী ব্যাংকগুলো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির পাশাপাশি রিজার্ভে মার্কিন মুদ্রাটির সংকটের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বিদেশীদের কাছে খেলাপি হওয়া থেকে বাঁচতে এরই মধ্যে ঋণের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছেন কেউ কেউ। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান মেয়াদ বাড়াতে রাজি না হলে অন্য বিদেশী প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি সুদে ঋণ নিয়ে দায় সমন্বয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি রফতানি নেই এমন খাতের অন্য ব্যবসায়ীদের নেয়া বিদেশী ঋণও এখন খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯৫ কোটি বা প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার। বিপুল এ বিদেশী ঋণের ৬৮ শতাংশের মেয়াদই স্বল্পমেয়াদি। বেসরকারি খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিদেশী ঋণের পরিমাণও ৮১৯ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৪১০ কোটি ডলারই নিয়েছেন বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা। জ্বালানি খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি বিদেশী দায় যোগ করে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩৩ কোটি ডলারে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকার বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিল পরিশোধ করতে পারছে না। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে উদ্যোক্তাদের পাওনা বকেয়া বিলের পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি। এ কারণে উদ্যোক্তারা চাইলেও যথাসময়ে বিদেশী ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না।
খাবার কিনতে হিমশিম অবস্থা ৬৮% মানুষের
১৬ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
দেশের মানুষের বড় অংশ এখন খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। খাবার কেনার জন্য কেউ কেউ পরিবারের কোনো সম্পদ বিক্রি করছেন। কেউ কেউ ঋণ করছেন।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক জরিপভিত্তিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে জানানো হয়, মানুষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বিগত ছয় মাসে তাঁদের ওপর বড় আঘাত কী। জবাবে ৮৮ শতাংশ মানুষ খাদ্যের চড়া দামকে বড় আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আরও তিনটি বিষয় বড় আঘাত হিসেবে উঠে এসেছে—রোগ ও চিকিৎসা ব্যয়, তেলের দাম ও পরিবহন ব্যয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। খাবার কিনতে হিমশিম খাওয়া মানুষের হার ৬৮ শতাংশ।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন সিলেট ও বরিশাল বিভাগের মানুষ। আর সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছেন ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিবাসীরা।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ‘বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা ও বিপন্নতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ মানুষের ওপর জরিপের মাধ্যমে। গত মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে আটটি বিভাগের এসব মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে দেশের ২২ শতাংশ মানুষ মাঝারি মাত্রায় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন (আগস্টে)। হারটি আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে কম। ওই মাসে ২৯ শতাংশ মানুষ মাঝারি মাত্রায় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। আর নিম্ন আয়ের ৪২ শতাংশ পরিবারের জীবনযাত্রা এবং খাদ্য পরিস্থিতির সব ক্ষেত্রে অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতির জন্য মূলত খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রোগবালাইয়ের মতো স্বাস্থ্যসমস্যা বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করা হয়েছে।
সুদের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেশি
ব্যাংকে টাকা রাখলেই লোকসান
১৬ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
মূল্যস্ফীতির কাছে আমানতকারীরা অসহায় এখন। সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, আবার ব্যাংকে আমানতের সুদও বেঁধে দিয়েছে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। ফলে ব্যাংকে টাকা রাখা আমানতকারীদের কাছে এখন বড় লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হিসাবি আমানতকারীরা তাই দ্বিধাগ্রস্ত ও চিন্তায়। তাঁদের প্রশ্ন, ব্যাংকে টাকা জমিয়ে তাহলে তাঁদের লাভ কী? ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে এনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (লিজিং) রাখবেন, সে উপায়ও নেই। সেখানে সুদ বেশি পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু তখন মূল টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কি না, সেই আশঙ্কাও রয়েছে। কারণ, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখে মূল টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য অনেক গ্রাহক মাসের পর মাস ঘুরছেন।
সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ১১ অক্টোবর জানিয়েছে, আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে তা ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। এ অবস্থা ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। তাতে সব ধরনের পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যায়।
‘ক্ষুধার যন্ত্রণা ভুলতে’ নেশা করে ছিন্নমূল শিশুরা
১৭ অক্টোবর ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
রাজধানীর পুরান ঢাকায় অন্তত ২ হাজার ছিন্নমূল শিশুর বসবাস। এদের বেশিরভাগই ‘ড্যান্ডি’ নামে একধরনের নেশায় আসক্ত। ‘ড্যান্ডি’ হচ্ছে এক ধরনের আঠা বা গাম; যা জুতা বা সাইকেলের টায়ারে ব্যবহার করা হয়। অল্প খরচে এই গাম কিনে নেশা করা যায় বলে ছিন্নমূল শিশুরা দিনদিন অনেক বেশি ঝুঁকে পড়ছে এতে। একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে ছড়িয়ে যাচ্ছে। পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালসহ বিভিন্ন অলিগলিতে ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত এমন অহরহ ছিন্নমূল শিশু দেখা যায়।
পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে ছিন্নমূল শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সহজলভ্য এই মাদক ক্ষুধামন্দা তৈরি করে। এজন্য খাবারের ‘যন্ত্রণা ভুলে থাকতে’ তারা মাদক গ্রহণ করে। মাদকাসক্ত এই শিশুদের একজন নবীন (ছদ্মনাম)। জন্মের পর থেকে বাহাদুর শাহ পার্কই তার ঠিকানা। বয়স জানা নেই, তবে তার অনুমান ৯ বছর হবে। এই বয়সে জীবনের অনেক রূপ দেখেছে সে। প্লাস্টিক কুড়িয়ে, ছিন্নমূল চারীদের কাছে হাত পেতে, যা পায় তাই দিয়েই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তার। মাঝে-মধ্যে ডাস্টবিনে ফেলা উচ্ছিষ্ট খাবারও খায় সে।
ক্ষুধার জ্বালায় কিছুদিন আগে এক নারীর ব্যাগ নিয়ে দৌড়া দিয়েছিল সে। সেকথাও প্রতিবেদকের কাছে অকপটে স্বীকার করে এই শিশু। পরে ধরা পড়লে মারও খেয়েছে সে। নেশা করে কেন- জানতে চাইলে সে বলে, ‘মাঝেমধ্যে খুব খিদা লাগে। কী করবো বুঝি না। তাই এই গাম খাই। এটা খেলে কেমন যেন একটা লাগে। সারাদিন মাথা ঝিমঝিম করে। আর খিদা লাগে না।’
পুরান ঢাকার বেশিরভাগ ছিন্নমূল শিশু সিগারেট ও ড্যান্ডির নেশায় আসক্ত। ড্যান্ডি বলতে মূলত পলিথিনের মধ্যে গাম দিয়ে সেই গাম মুখ দিয়ে টেনে নেশায় মত্ত তারা। এই নেশা করলে নাকি তাদের আর ক্ষুদা লাগে না। মুক্তা (১৩) নামে এক নেশাগ্রস্ত কিশোরী বলে, ‘আমার কাছে টাকা থাকলে আমি এই গাম না খেয়ে ভাত খাইতাম। ৪০ থেকে ৫০ টাকার গাম কিনলে তিন দিন খাইতে পারুম। এই তিন দিন এক বেলা খাইলেও চলে। কিন্তু এই ৫০ টাকা দিয়া কি তিন বেলাতো ভাত খাওন যাইবো?’
বাড়ি পাচ্ছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব-মুখ্য সচিব, খরচ ধরা হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা
১৭ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
জনপ্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের দুটি পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের জন্য বাসভবন করছে সরকার। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় পাশাপাশি নির্মিত হবে দুটি ভবন। প্রকল্প অনুসারে এগুলো নির্মাণে খরচ হবে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। আর এই টাকার জোগান দেবে সরকারি তহবিল।
প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুসারে প্রতিটি ভবন হবে তিন তলা। সাড়ে ১৮ হাজার বর্গফুটের। প্রতিটি ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে সাড়ে ২১ কোটি টাকা করে। এর মধ্যে প্রতিটি বাসভবনে দুই সেট সুইমিং পুল হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা।
খেলাপি বেড়েছে ৯০০০ কোটি টাকা
১৭ অক্টোবর, ২০২২, প্রথম আলো
অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আর এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না।’ অর্থমন্ত্রীর কথা ঠিক থাকেনি। তাঁর ঘোষণার ঠিক আগে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। সাড়ে তিন বছরের মাথায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। এ হলো দেশের সার্বিক খেলাপি ঋণের চিত্র।
সার্বিক চিত্র থেকে বেরিয়ে এসে যদি শুধু রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বিডিবিএল ও বেসিক—এই ছয় ব্যাংকের কথা বিবেচনা করা হয়, তাহলে কী চিত্র দেখা যায়? অর্থমন্ত্রী যখন বলেছিলেন আর এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না, তখন ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৪৬ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। ২০১৯ সালেই ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৯ শতাংশ সরল সুদে ১০ বছর মেয়াদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ করে দিলে পরের বছর ২০২০ সালে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমে আসে ৪৩ হাজার ২৫৫ কোটি টাকায়। তবে পরের বছরেই (২০২১) তা আবার বেড়ে হয় ৫০ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুনে তা আরও বেড়ে ৫৫ হাজার ৪৩০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। অর্থাৎ সাড়ে তিন বছরে ছয় ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়ে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, খেলাপি ঋণ থেকে নগদ আদায়, অবলোপনকৃত ঋণ, অবলোপন থেকে আদায়, শীর্ষ ২০ খেলাপি ঋণগ্রহীতা থেকে আদায়, ঋণ-আমানত অনুপাত এবং মামলায় আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ নিয়ে ৩ অক্টোবর বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরাই (এমডি) উপস্থিত ছিলেন। সার্বিক কৃতিত্বের (পারফরম্যান্স) মূল্যায়ন করে বৈঠকে ব্যাংকগুলোর ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩০ জুন পর্যন্ত ছয় ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ জনতা ব্যাংকের। এই ব্যাকের মোট ঋণের ২৫ শতাংশই খেলাপি, যার পরিমাণ ১৭ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। আর সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংকের মোট ঋণের ১৭ শতাংশ খেলাপি, যার পরিমাণ ১০ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৭ শতাংশ, পরিমাণ ৬ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩৬ শতাংশ, যার পরিমাণ ৭৬৮ কোটি টাকা। মোট ঋণের মধ্যে খেলাপির হার সবচেয়ে বেশি বেসিক ব্যাংকে। টাকার অঙ্কে যা ৮ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই বিভিন্ন সূচকে ব্যাংকগুলোতে দৃশ্যমান পরিবর্তন। বৈঠকে সে নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে।’
খেলাপি আদায়ে পিছিয়ে জনতা
মোট খেলাপি ঋণের ৬ থেকে ৭ শতাংশ অর্থ আদায় করতে বিডিবিএল ছাড়া পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গেই সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ জনতা ব্যাংকের হলেও খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধারে সবচেয়ে পিছিয়ে এই ব্যাংক। ব্যাংকটি ২০১৯ সালে ৯০৪ কোটি, ২০২০ সালে ১৭৯ কোটি এবং ২০২১ সালে ২৮৩ কোটি টাকা আদায় করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে করা ব্যাংকটির এমওইউ অনুযায়ী, ২০২২ সালে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। অথচ ছয় মাসে ব্যাংকটিআদায় করতে পেরেছে মাত্র ৮ শতাংশ অর্থাৎ ১০৫ কোটি টাকা।
অন্যদিকে এমওইউ অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংক ১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১৬৫, অগ্রণী ব্যাংক ১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২৪৮, রূপালী ব্যাংক ৬৭০ কোটি টাকার মধ্যে ১১৭ কোটি, বেসিক ব্যাংক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার থেকে ১৪৬ এবং বিডিবিএল ৯৮ কোটি টাকার মধ্যে ১৬ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলাপি থেকে আদায়ে আমরা বিশেষ মনোযোগ দিয়েছি। আজও (গতকাল) এ ব্যাপারে বৈঠক করে ব্যাংকারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে নামমাত্র আদায়
গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে পাওনা ২১ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকেরই রয়েছে ৮ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংককে চলতি বছর শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছ থেকে ২ হাজার ৪৫ কোটি টাকা আদায় করতে বলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো গত ৩০ জুন পর্যন্ত আদায় করেছে মাত্র ১১৯ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি আদায় করেছে অগ্রণী ব্যাংক। বেঁধে দেওয়া ৩০০ কোটি থেকে ব্যাংকটি আদায় করেছে ৮৭ কোটি টাকা। আর জনতা ব্যাংক ৮০০ কোটির মধ্যে ১০ কোটি, সোনালী ব্যাংক ৩০০ কোটির মধ্যে মাত্র ৩৮ লাখ, রূপালী ব্যাংক ৩৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ২ কোটি, বিডিবিএল ১০ কোটি টাকার মধ্যে ২ কোটি এবং বেসিক ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে ১৮ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে।
২০২৩ সালে বিদেশী ঋণ দাঁড়াবে ১১৫ বিলিয়ন ডলারে
১৮ অক্টোবর, ২০২২, বণিক বার্তা
আগামী বছর শেষে বাংলাদেশের বিদেশী ঋণের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। আর ২০২৪ সাল শেষে বিদেশী ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩০ বিলিয়ন ডলারে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার নিয়ে করা এক পর্যবেক্ষণে সরকারি-বেসরকারি খাতের বিদেশী ঋণ নিয়ে এ পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ২০২১ সালে সুদসহ দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বাংলাদেশকে দ্বিগুণ বিদেশী ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ২০২২ সাল শেষে বিদেশী ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ঠেকবে ২৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে দেশের বেসরকারি খাতকে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। বাকি ৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে সরকার। তবে আগামী দুই বছর বিদেশী ঋণ পরিশোধের চাপ কিছুটা কমবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময়েও প্রতি বছর সুদসহ ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশী ঋণ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট শুরুর পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল চলতি বছরের শুরুতেই। জানুয়ারিতে ব্যাংকগুলোর খোলা আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৬২ কোটি ডলারে। ফেব্রুয়ারিতে এলসি খোলা কিছুটা কমলেও মার্চে সেটি ৯৮০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। এক মাসেই প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি খোলা হয়ে গেলে নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি কমাতে সক্রিয় হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ। বিভাগটির পক্ষ থেকে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট মুভমেন্ট’ নামে একটি প্রকাশনা তৈরি করা হয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সৃষ্ট সংকটের কারণ নির্ণয় এবং সেটি থেকে উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশের রেকর্ড ১৭ বিলিয়ন ডলারের বিদেশী ঋণ তৈরি হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি উভয় খাত এ ঋণ নিয়েছে। রেকর্ড এ বিদেশী ঋণের ৫৭ শতাংশই তৈরি হয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্যের দায় বিলম্বের কারণে। এ সময় নভেল করোনাভাইরাসসৃষ্ট বৈশ্বিক দুর্যোগের কারণে আমদানি দায় পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ২০২১ সালের মোট আমদানি দায়ের ৩০ শতাংশ বিদেশী ঋণে রূপ নেয়। আমদানি দায় অপরিশোধিত থাকার কারণে স্বল্পমেয়াদি এ বিদেশী ঋণ সৃষ্টি হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সংকট সৃষ্টির প্রেক্ষাপটও তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর একটি। করোনার আগের পাঁচ বছর দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় ছিল ৭ শতাংশ। জিডিপির এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকার ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। রাজস্ব থেকে অর্থের সংস্থান না হওয়ায় দেশী-বিদেশী বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়েও এ সময়ে বিনিয়োগ করা হয়। এ কারণে দেশের জাতীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সঞ্চয় ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ হলেও বিনিয়োগ হয়েছে ৩১ শতাংশ। জাতীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগের বড় এ ব্যবধানই দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে ভারসাম্যহীনতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
চিনির কেজি ১০০, আরও বাড়ানোর পাঁয়তারা
১৯ অক্টোবর ২২, সমকাল
ব্যবসায়ীদের চাপে গত ১২ দিনে দুই দফায় চিনির কেজি ২০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তবু নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশিতে বেচাকেনা হচ্ছে চিনি। সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। অন্যদিকে ৮-১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এখন খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। রাজধানীর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে পেঁয়াজের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত আমদানি বন্ধ থাকায় দেশে পেঁয়াজের কিছুটা সংকট দেখা দেয়। সেই ছুতায় দাম বাড়তে পারে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দর বেড়ে যাওয়ায় এবং স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর চিনির দাম বাড়ায় বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশন। তখন প্রতি কেজি খোলা চিনির খুচরা মূল্য ৭৪ টাকা ও প্যাকেটজাত মূল্য ছিল ৭৫ টাকা। তবে সেই দামে কখনোই বাজারে চিনি বিক্রি হতে দেখা যায়নি। ডলার ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়াসহ নানা কারণ দেখিয়ে গত সেপ্টেম্বরে আবারও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি। তাদের চাপে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২২ সেপ্টেম্বর খোলা চিনির কেজি ৮৪ এবং প্যাকেটজাত চিনির দর ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়, যা ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করতে বলা হয়। এর ১২ দিনের মাথায় গত ৬ অক্টোবর ফের দাম বাড়ানো হয় পণ্যটির। এ দফায় কেজিতে আরও ৬ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসেবে দুই দফায় খোলা চিনির দাম কেজিতে ১৬ এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ২০ টাকা বাড়ায় মন্ত্রণালয়। দু’দফা দাম বাড়ানোর পরও খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি।
সঞ্চয় ভেঙে সংসারে
১৯ অক্টোবর ২২, সমকাল
যশোরের একটি ব্যাংকে পাঁচ বছর মেয়াদি ডিপিএস (কিস্তিভিত্তিক সঞ্চয়) খুলেছিলেন বেসরকারি চাকুরে মোরশেদ আলম। প্রতি মাসে জমা রাখছিলেন ২ হাজার টাকা। বাজারে সব জিনিসের দর বাড়ায় সংসার চালাতে গিয়ে খেই হারান মোরশেদ। খরচ বাড়লেও বাড়েনি তাঁর আয়। নিরুপায় হয়ে ১৮ মাস কিস্তি দেওয়ার পর গত আগস্টে তিনি ডিপিএস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে যান। আরেকটি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় তিন বছর মেয়াদি ডিপিএস খুলেছিলেন রাজধানীর বাড্ডার রেহেনা আক্তার। গত ডিসেম্বরে খোলা ডিপিএসে প্রতি মাসে জমা করতেন ৩ হাজার টাকা। তবে ৯ মাসের মাথায় টাকাপয়সার টানাটানিতে গত সেপ্টেম্বরে ডিপিএসের হিসাব গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন রেহেনা।
সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাওয়ার হার গেল এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। আবার ব্যাংকে টাকা রেখে যে মুনাফা মিলছে তাও সব খরচ বাদে খুব সামান্য। ফলে মোরশেদ আলম ও রেহেনা আক্তারের মতো অনেকেই এখন সঞ্চয় থেকে সরে গেছেন। গত আগস্টে ব্যাংক আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, অথচ মূল্যস্ম্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। এতে সঞ্চয়ের বিপরীতে যে আয় আসছে তা দিয়ে তেমন লাভ হচ্ছে না। ফলে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ খরচের চাপে পড়ে সঞ্চয় ভাঙছে। বাসা ভাড়া, সন্তানের স্কুল, যাতায়াতসহ অন্য সব খরচও বাড়বাড়ন্ত। ফলে হাত পড়ছে সঞ্চয়ে। সংসারের চাকা ঘোরাতে অনেকে আবার ঋণের জাঁতাকলে পড়ছেন। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের ভোক্তা ঋণ ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ৯৫ হাজার ৪১৯ কোটি টাকায় উঠেছে। ব্যক্তি পর্যায় কিংবা অন্য নানা মাধ্যম থেকেও ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন অনেকে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি: সিপিডি
২০ অক্টোবর ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
বাংলাদেশে বেশিরভাগ পণ্য ও পরিষেবার মূল্য দক্ষিণ এশিয়ার গড় দামের চেয়েও বেশি, জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশে আধা কেজি পাউরুটির দাম ৬২ টাকা, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।
তিনি বলেন, আধা কেজি পাউরুটির দাম পাকিস্তানে ৪৫ টাকা; ভারত ও নেপালে ৪৮ টাকা। এমনকি শ্রীলঙ্কাতেও একই পরিমাণ পাউরুটির দাম ৫০ টাকা, যা বাংলাদেশের তুলনায় যথেষ্ট কম।
রাজধানীতে সিপিডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘স্লোডাউন ইন গ্লোবাল ইকোনমি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ফর বাংলাদেশ: হাউ টু ট্যাকেল?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি।
ঢাকায় এক পরিবারের খাবারে খরচ মাসে ২২ হাজার ৪২১ টাকা
২০ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
মূল্যস্ফীতি এখন লাগামহীন অবস্থায় আছে বলে মনে করে দেশের অন্যতম বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। শুধু আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নয়; দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি দাম মানুষের ওপর বোঝা হয়ে যাচ্ছে।
মূল্যস্ফীতির চাপ সাধারণ মানুষের খরচ কত বাড়িয়ে দিয়েছে, এর উদাহরণও দিয়েছে সিপিডি। যেমন মাছ-মাংস না খেয়েও ঢাকা শহরের চার সদস্যের এক পরিবারকে এখন খাবার কিনতে মাসে গড়ে ৯ হাজার ৫৯ টাকা খরচ করতে হয়। মাছ-মাংস খেলে ওই পরিবারের খাবারে খরচ হয় ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি চলতি অক্টোবর মাসের হিসাব। গত পৌনে চার বছরে খাবার কেনায় ওই সব পরিবারের খাবার খরচ ২৭ থেকে ৩৮ শতাংশ বেড়েছে।
সিপিডির হিসাবে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা শহরের একটি পরিবার মাছ-মাংস খেলে খাবারে খরচ হতো ১৭ হাজার ৫৩০ টাকা। আর মাছ-মাংস না খেলে এ খরচ ছিল ৬ হাজার ৫৪১ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতির চাপ বোঝাতে এ হিসাব দিয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের ছয় মাস আগেই রিজার্ভের ক্ষয় শুরু
২৩ অক্টোবর, ২০২২, বণিক বার্তা
গত এক বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্ষয় হয়েছে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। ৪৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠা রিজার্ভ এখন নেমে এসেছে ৩৫ বিলিয়নে। স্বল্প সময়ে রিজার্ভের এ অস্বাভাবিক ক্ষয়ের কারণ হিসেবে নীতিনির্ধারকরা ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করে আসছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর ছয় মাস আগেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্ষয় হতে শুরু হয়। এর সূত্রপাত রিজার্ভ থেকে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির মাধ্যমে। গত বছরের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ১ হাজার ২০৭ কোটি বা ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে শুধু চলতি বছরই ৯৫৯ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। আমদানি দায় ও বিদেশী ঋণ পরিশোধের চাপের কারণেই রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাই পর্যন্ত বাজার থেকে ডলার কেনার ধারায় ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পর থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করা হয়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ৩১ কোটি ডলার বিক্রি করা হলেও পরে তা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর তিন মাসে বিক্রি করা হয়েছিল ১৫৪ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চে ১৫৬ কোটি ও এপ্রিল-জুনে ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ১ বিলিয়ন ডলার বাজারে বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকে প্রতি মাসে বিক্রি করতে হচ্ছে দেড় বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের জুলাই থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়েছে ৪৪৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দিন যত যাচ্ছে বিদেশী ঋণ ও এলসি পরিশোধের চাপ ততই বাড়ছে। এখন প্রতি মাসে ১৫০ কোটি ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের চাপ যেভাবে বাড়ছে, তাতে বছরের বাকি সময়ে মাসে ডলার বিক্রির পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে। এতদিন রিজার্ভের পতন যে গতিতে হয়েছে, আগামীতে সেটি আরো বাড়বে।
রিজার্ভের যে অবস্থা, জানি না সামনে কী হবে: তৌফিক-ই-ইলাহী
২৩ অক্টোবর, ২০২২, দেশ রুপান্তর
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছেন শিল্প-মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ব্যবসায়ীরা।
‘রিজার্ভের যে অবস্থা, জ্বালানি কেনার পয়সা নেই’ তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর মন্তব্যে ব্যবাসায়ীরা হট্টগোল শুরু করেন। এক ব্যবসায়ী দাঁড়িয়ে বলেন, আমরা সব কর্মীদের নিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি। আপনি নারায়ণগঞ্জে যান, সেখানে একটি ফ্যাক্টরি ছাড়া আর কোনো ফ্যাক্টরি চলছে না।
রবিবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত শিল্পে জ্বালানি সংকট সমাধান শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তৌফিক-ই-ইলাহী প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার সময় এ বাহাস হয়। ব্যবসায়ীরা হট্টগোল শুরু করলে কিছুক্ষণ বক্তব্য থামিয়ে দেন জ্বালানি উপদেষ্টা।
ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, আমাদের গ্যাস ও বিদ্যুৎ দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় টিপ্পনি কেটে উপদেষ্টা বলেন, এই হলরুমে এখন এসি চলছে। এখানে তো এসি থামালেন না। এখানে তাপমাত্রা কত জানতে চান তিনি। দিনের বেলায় সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করার শপথ নিতে বলেন তৌফিক-ই-ইলাহী।
এ সময় তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, আমাদের রিজার্ভের যে অবস্থা, আমরা জানি না সামনে কী হবে। এলএনজি এখন আমরা আনছি না। এ সময়ে ২৫ ডলার হিসাব ধরেও যদি এলএনজি আমদানি করতে যাই, চাহিদা মেটাতে অন্তত ৬ মাস কেনার মতো অবস্থা আছে কি না জানি না। আমাদের এখন সাশ্রয়ী হওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রয়োজনে দিনের বেলা বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধই করে দিতে হবে।
এর আগে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, নাইট শিপ্টে কারখানা চালু রাখতে পারছি না। এ ব্যাপারে সমাধানের জন্য জ্বালানি উপদেষ্টাকে ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আমার ফোন ধরেননি।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, দেড় মাস ধরে আমার ফ্যাক্টরিগুলো নাইট শিফটে কাজ করতে পারছে না। নাইট শিফটে কাজ করা কর্মীরা চাকরি হারানোর পথে। জ্বালানি উপদেষ্টার কাছে আমি পরামর্শ চাইব, আমাকে সাজেশন দেন তাদের এসব যন্ত্রণা থেকে কীভাবে অব্যাহতি দেব। আমাদের রেভিনিউ ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল, এখন এমন অবস্থা এক বছর পর আমাদের বেকারত্ব কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কবে শেষ হবে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া গেলে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিতাম। আমাদের ভোলায় কিছু গ্যাস আছে, সেগুলো সিএনজিতে করে নিয়ে আসব। সেখানে ৮০ এমএমসি গ্যাস আছে। আমরা দু-তিন মাসে সেটা নিয়ে আসার চেষ্টা করব। অপরদিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যাচ্ছি। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ পাব। আরও এক হাজার মেগাওয়াট সোলার প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদন করব। তখন অনেকটা সমস্যার সমাধান করতে পারব।
তিনি বলেন, আজ যদি আমরা গ্যাস বাঁচাতে চাই তাহলে লোডশেডিং বাড়বে, তখন আপনারাই সমালোচনা করবেন। অথচ একসময় সব জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা চাইলে এসি বন্ধ রাখতে পারি, বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে পারি। সারাদেশে যে পরিমাণ এসি চলে, তাতেই ৫ থেকে ৬ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা আছে। আমরা এসি বন্ধ রাখব বা কম চালাব, এতে দু-তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। গ্যাস সাশ্রয় হবে। সবাই মিলে যদি রাজি হই লোড কমাব তাহলে কিছু গ্যাস রিলিজ হবে।
আমরা কৃষি ও ইন্ডাস্ট্রিতে বিদ্যুৎ বেশি দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রয়োজনে অন্যরা বিদ্যুৎ ব্যবহার কম করব। প্রয়োজনে দিনের বেলা ব্যবহারই করব না। বিদ্যুৎ যদি আমরা শিল্পে দিই, তাহলে আবাসিকে সাপ্লাই কমাতে হবে। সেটা করলেই আবার মিডিয়ায় অনেকেই অনেক কথা বলবেন।
তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, যুদ্ধের সময় তো আমাদের কিছুই ছিল না। তখনও আমরা চলেছি। এখনও পারব। আমরা শপথ নেব, দরকার হলে দিনের বেলা কোনো বিদ্যুৎ ব্যবহার করব না।
পাতাল রেল প্রকল্পে ১৫১৭ কোটি টাকায় পরামর্শক নিয়োগ
১৩ অক্টোবর, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পে জাপান, ফ্রান্স, ভারত ও বাংলাদেশের আট প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক হিসেবে নিযুক্ত করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। আজ রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এ সম্পর্কিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এমআরটি লাইন-১ এর সার্বিক নির্মাণ কাজ তদারকি করবে এসব প্রতিষ্ঠান। পরামর্শক সেবার চুক্তিমূল্য ১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা।
এমআরটি লাইন-১ এর দুটি রুট। প্রথম রুট বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পুরোপুরি পাতালপথে হবে। নতুনবাজার-পূর্বাচলের দ্বিতীয় রুটটি হবে উড়াল পথে। পুরো মেট্রোটি নির্মাণে খরচ হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। ২০২৬ সালে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সুলভের বিদেশী ঋণ ক্রমেই ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে
২৫ অক্টোবর, ২০২২, বণিক বার্তা
গত এক দশকে বিদেশী ঋণের উৎসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির মতো বহুজাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে মোট ঋণের পোর্টফলিওতে এখন দ্বিপক্ষীয় ঋণেরই প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে বেশি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতো দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নেয়া ঋণের সুদহার ছিল নির্দিষ্ট ও সুলভ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২০-২৫ বছর হলেও সুদহার নির্ধারিত ছিল সর্বোচ্চ ২ শতাংশ। সেখানে এখন বৈদেশিক ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে নিয়েছে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট ও বাণিজ্যিক শর্তযুক্ত ঋণের মতো কঠিন শর্তের ঋণও।
দীর্ঘদিন এ ধরনের ঋণের সুদ বা ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে শুধু লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফারড রেটের (লাইবর) ভিত্তিতে। গত পাঁচ বছরে সে জায়গা দখল করে নিয়েছে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর)। এসওএফআর হলো ডলারভিত্তিক ঋণের সুদহার, যার ওঠানামা নির্ভর করে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদহারের ওপর। এসওএফআর নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোলেটারাল (বা নিশ্চয়তা হিসেবে গৃহীত সম্পদ) হিসেবে ধরা হয় মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের বাজারকে। ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসওএফআরও বেড়ে যায়। এসব ঋণের ক্ষেত্রে লাইবর বা এসওএফআরের প্রচলিত হারের সঙ্গে ঋণ চুক্তিতে নির্ধারিত সুদহার যুক্ত করে মোট সুদ নির্ধারণ করা হয়। এসব কিস্তি পরিশোধের সময় বাজারে এসওএফআরের প্রচলিত হারের নির্ধারিত সুদহার ছাড়াও সার্ভিস চার্জসহ অন্যান্য ব্যয়ও যুক্ত করতে হয়।
শর্ত কঠিন হলেও এসওএফআরভিত্তিক ঋণ এতদিন মোটামুটি সুলভেই পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে কভিড সংক্রমণ শুরুর পরই এসওএফআর নেমে আসে শূন্যের কাছাকাছি পর্যায়ে। প্রায় দুই বছর শূন্যের কাছাকাছি পর্যায়েই স্থিতিশীল ছিল এসওএফআর হার। এ সময়টিতেই দেশের সরকারি-বেসরকারি খাত বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে সবচেয়ে বেশি। তুলনামূলক কম সুদহারের সঙ্গে প্রায় শূন্য এসওএফআর যুক্ত হওয়ায় এ সময় বেশ সুলভেই ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু গত ছয় মাসে ক্রমেই বেড়ে এখন এসওএফআর দাঁড়িয়েছে ৩ শতাংশেরও বেশিতে। নির্ধারিত এ সুদহারের সঙ্গে বাড়তি এ এসওএফআর যুক্ত করে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে দেশের সরকারি-বেসরকারি খাতকে। সুলভে পাওয়া ঋণ এখন দিনে দিনে আরো ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এ ধারা সামনের দিনগুলোয় আরো অব্যাহত থাকবে বলে ফেডারেল রিজার্ভসহ (ফেড) দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞের পূর্বাভাসে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিদেশী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৮৬ কোটি বা প্রায় ৯৬ বিলিয়ন ডলার। এ ঋণের প্রায় ৭৩ শতাংশ নিয়েছে সরকার। বাকি ২৭ শতাংশ নিয়েছে দেশের বেসরকারি খাত। গত এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে লাইবরের সুদহার শূন্য দশমিক ৫০ থেকে বেড়ে ৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। প্রায় শূন্যের কাছাকাছি থেকে বেড়ে এসওএফআর এখন ৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে। টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়নের পাশাপাশি লাইবর ও এসওএফআর সুদহার অস্বাভাবিক বাড়ায় বিদেশী ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে।
জুন শেষে সরকারের নেয়া বিদেশী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। এ ঋণের মধ্যে ৬৭ বিলিয়ন ডলার এসেছে দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ৩৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের উৎস হলো বহুপক্ষীয়। ২৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়া হয়েছে দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৩ বিলিয়ন, বাণিজ্যিক শর্তযুক্ত ঋণ হিসাবে ৩ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ও অন্যান্য উৎস থেকে ১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে সরকার। জুন শেষে সরকারের নেয়া স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণও ২ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের বহুপক্ষীয় ঋণের শর্ত অনেক বেশি নমনীয়। সুদহারও অনেক বেশি সুলভ। এসব ঋণের বেশির ভাগেরই সুদহার নির্ধারিত। মেয়াদ অনেক দীর্ঘ হলেও এসব ঋণের সুদহার বাড়বে না। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় ও অন্যান্য উৎস থেকে নেয়া বিদেশী ঋণের শর্ত অনেক কঠিন, সুদহারও চড়া। লাইবর বা এসওএফআরের সঙ্গে সংযুক্ত করে দ্বিপক্ষীয় ও অন্যান্য বেশির ভাগ ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে। গত এক বছরে এসওএফআর ও লাইবরের পাশাপাশি ডলারের বিনিময় হার ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। ফেড এখন আগ্রাসীভাবে সুদহার বাড়িয়ে তোলায় সামনের দিনগুলোয় এ ব্যয়বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে।
দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ঋণের ভিত্তিতে দেশে এখন বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর একটি হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ওয়ার্ল্ভ্র নিউক্লিয়ার নিউজের তথ্য অনুযায়ী রাশিয়ার দেয়া ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ঋণের সুদহার ধরা হয়েছে লাইবরের অতিরিক্ত ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চুক্তিটি যখন সই হয় তখন লাইবর হার ছিল বেশ কম। কিন্তু এখন লাইবর হার বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ঋণের সুদ বাবদ পরিশোধযোগ্য ব্যয়ের পরিমাণও অনেকটাই বেড়েছে।
মামলায় ঝুলছে দেড় লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ
২৫ অক্টোবর ২২, সমকাল
মামলা করে খেলাপি ঋণ আদায়ে বছরের পর বছর অপেক্ষা করছে ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে বড় ঋণ আদায়ে ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে বেশি। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলা বাড়লেও নিষ্পত্তি হচ্ছে খুব কম। গত জুন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে, অর্থঋণ আদালতে ৬৯ হাজার ৩৬৯টি মামলার বিপরীতে আটকে আছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। ছয় মাস আগে গত ডিসেম্বর শেষে ৬৮ হাজার ২৭১টি মামলার বিপরীতে ঝুলে ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ।
ব্যাংকাররা জানান, ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির বাংলাদেশে নেই। আবার অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা ও বিচারক কম থাকাসহ বিভিন্ন কারণে মামলা নিষ্পত্তি অনেক সময়সাপেক্ষ। এসব কারণে ২০০৩ সালের আইনটি সংশোধনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৮ সালে প্রস্তাব দেয় সরকারের কাছে। সংশোধনীতে মামলা নিষ্পত্তিতে একটি সময়সীমা নির্দিষ্ট করাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়। তবে চার বছরেও সংশোধনী প্রস্তাব আলোর মুখ দেখেনি। আবার মামলার বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে অনেক আলোচনা হলেও তাও কার্যকর হয়নি।
১৮ কোটি টাকার বরগুনা বিসিক শিল্পনগরী এখন কাশবন
২৬ অক্টোবর, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরগুনা বিসিক শিল্পনগরী এখন কাশবন। প্লটের উচ্চমূল্যের কারণে প্লট বরাদ্দ নিতে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ নেই।
শিল্পনগরীর ৬১ প্লটের মধ্যে গত ২ বছরে মাত্র ৮টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তারা। বাকি প্লটগুলোয় জন্মেছে কাশবন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেই এলাকাটি মাদকাসক্তদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে।
বরগুনার বিসিক সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, ২০১১ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় বরগুনায় শিল্পনগরী স্থাপনে ৭ কোটি ৮ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জেলা শহরের ক্রোক এলাকায় ১০ দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিসিককে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন।
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয় ১১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
ঠিকাদার বর্ধিত মেয়াদেও কাজ শেষ করতে না পারায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। ব্যয় বেড়ে হয় ১৮ কোটি ৮ লাখ টাকা।
এরও ২ বছর পর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় প্রকল্পের কাজ।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে চাপে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ!
স্বল্পমেয়াদি বেসরকারি ঋণ দুই বছরে দ্বিগুণ
২৫ অক্টোবর ২০২২, শেয়ার বিজ
কমছে রিজার্ভ, বাড়ছে বিদেশি ঋণ। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। এতে চাপ বাড়ছে ডলারের বাজারে, সংকট ঘনীভূত হচ্ছে অর্থনীতিতে। এক বছরের মধ্যে রিজার্ভ কমেছে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। অথচ এ সময় স্বল্পমেয়াদি বেসরকারি ঋণ বেড়েছে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার। তাই বিদেশ থেকে বেসরকারি খাতের অনিয়ন্ত্রিত ঋণ গ্রহণ এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে দুঃসংবাদ ডলার সংকটকে আরও প্রকট করে তুলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ দুই বছরে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যদিও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাড়ছে তুলনামূলক ধীরগতিতে। তবে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধের চাপে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৈদেশিক ঋণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুনশেষে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল আট দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের জুনশেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের জুনশেষে তা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দুই বছরে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়েছে ৯ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছর স্বল্পমেয়াদি বেসরকারি ঋণ দ্রুত বেড়েছে।
দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বায়ার্স ক্রেডিট (সরবরাহকারীর ঋণ)। ২০২০ সালের জুনে বায়ার্স ক্রেডিটের পরিমাণ ছিল চার দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার ও ২০২২ সালের জুনে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দুই বছরে বায়ার্স ক্রেডিট বেড়েছে পাঁচ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার বা ১০৯ শতাংশ।
বায়ার্স ক্রেডিটের এ ঋণ সাধারণত এক বছরের মধ্যে শোধ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বায়ার্স ক্রেডিট হচ্ছে দেশের আমদানিকারকের বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় নেয়া ঋণ। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা এসব ঋণ নিয়ে থাকেন। দু’ভাবে বায়ার্স ক্রেডিট নেয়া হয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার অংশ হিসাবে আমদানিকারককে বাকিতে পণ্য সরবরাহ করে, যা ঋণ হিসাবে বিবেচিত হয়। আমদানিকারককে পণ্য বুঝে পাওয়ার ছয় মাস পর ঋণ পরিশোধ করতে হয়। আবার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানিকারককে ঋণের ব্যবস্থা করে পণ্যটি সরবরাহ করেন। এতে রপ্তানিকারক অর্থ পেয়ে যান। কিন্তু আমদানিকারক পরে ব্যাংককে ঋণ শোধ করেন। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য এসব ঋণের জোগান দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ পণ্যই ভোগ বিলাসে ব্যবহƒত হয়। খুব কম পণ্যই আসে শিল্পের কাঁচামাল বা সহযোগী যন্ত্রপাতি হিসাবে। সেবা খাতের জন্য কিছু পণ্য এ প্রক্রিয়ায় আমদানি হয়।
তবে বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে হলে আমদানিকারক স্থানীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি সাপেক্ষে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। এ ধরনের কোনো ঋণের সুদহার ৬ শতাংশের বেশি হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয় ব্যাংকগুলোর। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে এসব ঋণের মেয়াদ এক বছর আর শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে মেয়াদ ৬ মাস। এ কারণে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই এ ঋণ শোধ করতে হয়। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যবসায়ীদের এই ঋণ নেয়ার সুযোগ করে দেয়।
এদিকে ২০২২ সালের জুনশেষে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। যদিও ২০২০ সালের জুনে তা ছিল তিন বিলিয়ন ডলারের কম। এমনকি ২০২১ সালের জুনেও এর পরিমাণ ছিল তিন দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। তবে দুই বছরে অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি দায় বাড়েনি। ২০২০ সালের জুনে এর পরিমাণ ছিল শূন্য দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, ২০২২ সালের জুনশেষে তা প্রায় একই ছিল (শূন্য দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার)।
দুই বছরে এলসি অনিষ্পন্নজনিত দায়ও অনেকটা বেড়েছে। ২০২০ সালের জুনশেষে ডেফার্ড (বিলম্বিত) পেমেন্ট ছিল শূন্য দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের জুনশেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক বিলিয়ন ডলারের কিছুটা বেশি। আর ফরেন ব্যাক টু ব্যাক এলসি ২০২০ সালের জুনে ছিল শূন্য। ২০২২ সালের জুনে তা দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।
যদিও গত এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের জুনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের জুনশেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ০১ বিলিয়ন ডলার। তবে সম্প্রতি রিজার্ভ আরও কমে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে চলেছে। আর রিজার্ভ থেকে ইডিএফ ফান্ডের আওতায় প্রদত্ত ঋণ বাদ দিলে তা দাঁড়াবে ২৮ বিলিয়ন ডলার। এ অবস্থায় স্বল্পমেয়াদি বেসরকারি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ঝুঁকি বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দখল, দুর্নীতি ও অনিয়ম
ক্ষমতাবান স্বামী–স্ত্রীদের প্লট দিতে পাল্টে যাচ্ছে রাজউকের বিধি
২৭ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী নিজে ঢাকায় রাজউকের একটি প্লট পেয়েছেন। তাঁর স্ত্রী ফাহিমা খাতুন পেয়েছেন আরেকটি প্লট। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী দুজনের দুটি প্লট নেওয়ার সুযোগ নেই। যেকোনো একটি প্লট ছাড়তে হবে এই দম্পতিকে। কিন্তু উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী কোনো প্লটই ছাড়তে চান না।
অভিযোগ উঠেছে, রাজউক এখন এ-সংক্রান্ত বিধিমালাই বদলে ফেলছে। সংস্থাটির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বিধিমালার নতুন খসড়ায় স্বামী-স্ত্রীর নামে পৃথক দুটি প্লট বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। খসড়াটি অনুমোদন পেলে সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী ফাহিমা খাতুনের পাশাপাশি অন্য প্রভাবশালী দম্পতিরাও এই সুবিধা নিতে পারবেন।
এর আগে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে প্লট দেওয়ার ক্ষেত্রে কিস্তি পরিশোধে বিলম্বজনিত জরিমানা মওকুফ এবং তুলনামূলক ছোট প্লট পাল্টে বড় প্লট নেওয়ার সুবিধা দিয়েছে রাজউক।
নীলার দংশনে নীল পূর্বাচল
০২ আগস্ট ২২, সমকাল
রাজধানীর অদূরেই পূর্বাচল নতুন শহর। ওই শহরে পা ফেললে একটা নাম মানুষের মুখে ফেরে। তিনি নীলা! পুরো নাম সৈয়দা ফেরদৌসী আলম। রূপগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান, পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। জমি দখলসহ নানা অবৈধ কাজে তাঁর দাপট আর প্রভাব খাটানোর ব্যাপক অভিযোগ থাকলেও পূর্বাচল-রূপগঞ্জের কেউ প্রতিবাদ তো দূরের কথা- কিছু বলতেও সাহস পান না।
পূর্বাচলের ‘নীলা মার্কেট’ গণমাধ্যমে এতবার শিরোনাম হয়েছে যে এখন মার্কেটটি একনামে চেনে সবাই। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট দখল করে নীলা দাঁড় করিয়েছেন ওই মার্কেট। এর পাশেই প্লট দখল করে বানিয়েছেন ক্লাব। ক্লাবের পিলে চমকানো নাম ‘আওয়ামী লীগ ক্লাব’! নীলার স্বামী শাহ আলম ফটিক আর দেবর আনোয়ার হোসেন ক্লাবটির দেখভাল করেন। পূর্বাচলে প্রতিবন্ধীদের খেলার জায়গা দখল করে বানিয়েছেন লেডিস ক্লাব, পূর্বাচল কনভেনশনের ৭৬ কাঠার প্লট এখন তাঁর কবজায়, পূর্বাচল ক্লাবের সদস্যপদ কেনাবেচা হয়, শীতলক্ষ্যার তীরে প্লট দখল করে চলছে কয়লা-পাথর-বালুর কারবার, মন্দির-শ্মশানের প্লটে উঠিয়েছিলেন দোকান আর ইউসুফগঞ্জ খালের ওপর উঠেছে নীলার বাড়ি। ক্ষমতার দাপটে স্থানীয় ইউসুফগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির পদ নীলা আঁকড়ে রেখেছেন এক যুগ।
সিন্ডিকেটের মুঠোয় সারের নাটাই
২৫ আগস্ট ২২, সমকাল
আছে সর্বোচ্চ মজুত, সারের সংকট একেবারেই নেই- কৃষি মন্ত্রণালয় এমন ঢোল পেটালেও মাঠের বাস্তব ছবি পুরোটাই বিপরীত। সারের জন্য তৃণমূলের চাষিরা একরকম তেতেই আছেন। কোথাও কোথাও চাষিরা রাস্তায় নামছেন, গাড়ি আটকে দিচ্ছেন, বিক্ষোভে তুলছেন স্লোগান। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কিংবা ধরপাকড়েও কাটছে না সংকট। বাড়তি দামেও মিলছে না সার। সার নিয়ে এমন হযবরল পরিস্থিতি সাম্প্রতিক সময়ে আর দেখা যায়নি। এমন সংকটের কারণ খোদ কৃষি মন্ত্রণালয়েরও অজানা। কৃষিমন্ত্রী বারবার সারের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন, তবু কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই।
সমকালের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সারের কৃত্রিম সংকটের নানা ফিরিস্তি। পেছনে কারা, বেরিয়ে আসছে তাদের মুখগুলো। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, অসাধু কর্মকর্তা, পরিবহন ঠিকাদার ও ডিলারদের মুঠোতেই সার। এসব চক্রের লাগাম টানা না গেলে সংকট আরও গভীরে ডুব দিতে পারে। তবে সার সংকটের কারণ খুঁজতে গোয়েন্দা সংস্থার একটি দল মাঠে কাজ করছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা দুর্নীতিতে প্রথম
০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, সমকাল
দেশের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিতে জড়িত। ঘুষ লেনদেনে শীর্ষে রয়েছে পাসপোর্ট অফিস। আর ঘুষ ও দুর্নীতির উভয় অপকর্মে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। তবে ঘুষ লেনদেনের পরিমাণ বেশি হয়েছে বিচারিক সেবা খাতে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘সেবা খাতে দুর্নীতি :জাতীয় খানা জরিপ ২০২১’-এ এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির পক্ষ থেকে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ১৯৯৭ সালে শুরু হয়ে এ নিয়ে নবমবারের মতো দেশের সেবা খাতের দুর্নীতিবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করল টিআইবি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে সেবা খাতের দুর্নীতিবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেটির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ওই সময়ের চেয়ে এবার দুর্নীতি ও ঘুষ- উভয়ের মাত্রাই বেড়েছে। ২০১৭ সালে সাড়ে ৬৬ শতাংশ খানাকে (পরিবার) ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হতে হয়েছিল। ২০২১ সালে তা বেড়ে ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রতিটি খানাকে গড়ে ঘুষ দিতে হয়েছিল ৫ হাজার ৯৩০ টাকা। ২০২১ সালে তা হয়েছে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকা। এবার মাথাপিছু ঘুষের পরিমাণ ৬৭১ টাকা। ২০১৭ সালে জাতীয় পর্যায়ে মোট ঘুষ ছিল ১০ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এবার মোট ঘুষ ১০ হাজার ৮৩০ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা গত জরিপের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
টিআইবির গবেষক ফারহানা রহমান ও মোহাম্মদ নূরে আলমের উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামের ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ খানা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার মাধ্যমে দুর্নীতির শিকার হয়েছে। শহরে তা ৭৫ দশমিক ২। পাসপোর্টে গ্রামাঞ্চলের ৮২ দশমিক ৯ শতাংশ আর শহরে ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ। বিআরটিএতে গ্রামের ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ আর শহরে তা ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এতে দেখা যায়, শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছে। একইভাবে শিক্ষিত খানার চেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছে অল্প শিক্ষিত খানা। প্রতিবন্ধী খানার দুর্নীতির শিকার হওয়ার চিত্রও তুলনামূলক বেশি। মধ্যবয়সীদের চেয়ে বেশি বয়সী খানাও তুলনামূলক বেশি দুর্নীতি ও ঘুষের শিকার হয়েছে।
সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত ও ঘুষের খাত :জরিপে সাতটি খাতকে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর শীর্ষে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা; এ খাতে ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ খানা দুর্নীতির শিকার আর ঘুষের শিকার ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে পাসপোর্ট; এ খাতে ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ দুর্নীতির শিকার আর ঘুষের শিকার ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে বিআরটিএ; এ খাতে দুর্নীতির শিকার ৬৮ দশমিক ৩ শতাংশ আর ঘুষের শিকার ৫০ দশমিক ২ শতাংশ। বিচারিক সেবা খাতে দুর্নীতির শিকার ৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ আর ঘুষের শিকার ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ। স্বাস্থ্য (সরকারি) খাতে দুর্নীতির শিকার ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ আর ঘুষের শিকার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান খাতে দুর্নীতির শিকার ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ আর ঘুষের শিকার ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ভূমিসেবা খাতে দুর্নীতির শিকার ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ আর ঘুষের শিকার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্যের জরুরি কেনাকাটায় ১৯৩ কোটি টাকার অনিয়ম
৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
করোনা মহামারির শুরুতে জরুরি সুরক্ষাসামগ্রীসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন কেনাকাটায় ১৯৩ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এই অনিয়ম উঠে এসেছে। এ–সংক্রান্ত নিরীক্ষা আপত্তি নিয়ে গতকাল রোববার সরকারি হিসাবসংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। কমিটি কেএন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে তদন্ত এবং অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ সরবরাহকারীর সঙ্গে চুক্তি করে সুরক্ষাসামগ্রী কেনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে।
সংসদীয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জরুরি ভিত্তিতে ১ হাজার ১১২ কোটি টাকার (কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রজেক্ট) প্রকল্প গ্রহণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের প্রথম অর্থবছরের যেসব নিরীক্ষা আপত্তি এসেছে, তার মধ্যে ১২টি নিষ্পত্তি হয়নি।
নিরীক্ষায় একটি আপত্তিতে বলা হয়, ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই), মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস সরবরাহের জন্য মেসার্স জাদিদ অটোমোবাইলস জেএআইয়ের সঙ্গে ২০২০ সালের ১৯ মে ৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকার চুক্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি দেড় লাখ কেএন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করার কথা। এর মধ্যে সরকারের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) ২৪ হাজার মাস্ক ভেজা অবস্থায় গ্রহণ করেছে। প্রতিটি মাস্ক ৫২০ টাকা হিসাবে এখানে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এই আপত্তির জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, সিএমএসডিতে মাস্কগুলো নেওয়ার সময় কোনো মাস্ক ব্যবহার অযোগ্য হিসেবে দেখানো হয়নি। পরবর্তী সময়ে পরীক্ষা করে মাস্কের গুণাগুণ সম্পর্কে সন্তোষজনক ফল পাওয়া গেছে। তবে তাদের এই বক্তব্য গ্রহণ করেনি নিরীক্ষা অধিদপ্তর। প্রতিবেদনে বলা হয়, জবাবের সঙ্গে সংযুক্ত প্রামাণিক চালানের কপিতে ‘সিএমএসডি কর্তৃক রিসিভসংক্রান্ত মন্তব্য অংশ’ ঘষামাজা করে মুছে ফেলা হয়েছে। পরীক্ষা প্রতিবেদনের সংযুক্তিও পাওয়া যায়নি।
আরেকটি আপত্তিতে বলা হয়, চুক্তির চেয়ে দুই হাজার কম মাস্ক সরবরাহ করেছে। প্রতিটি মাস্কের দাম ৫২০ টাকা হিসাবে ক্ষতি হয়েছে ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, জাদিদ অটোমোবাইলস চুক্তি অনুযায়ী দেড় লাখ মাস্ক সরবরাহ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিরীক্ষা অধিদপ্তর বলেছে, চালানের কপিতে সিএমএসডি কর্তৃক প্রাপ্তিস্বীকারসংক্রান্ত মন্তব্য অংশ ঘষামাজা করে মুছে ফেলা হয়েছে। পুরোনো চালান ঘষামাজা করে মালামাল গ্রহণের প্রমাণক দেওয়া হয়েছে।
এই প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজে দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২ লাখ পিপিই ও ৩ লাখ ১০ হাজার মাস্ক এবং ১ হাজার ৫৫০ থার্মোমিটার কেনা হয়। কিন্তু বিতরণের নথিতে দেখা যায়, ১ লাখ ৮৪ হাজার পিপিই, প্রায় ৩ লাখ মাস্ক এবং ৬৫০টি থার্মোমিটার বিতরণের কোনো প্রাপ্তিস্বীকারপত্র নেই। এতে মোট ৩২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার গরমিল রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাবি, দেশব্যাপী কুরিয়ারের মাধ্যমে এসব পাঠানো হয়। তবে নিরীক্ষা অধিদপ্তর বলেছে, প্রমাণ হিসেবে কুরিয়ার সার্ভিসের যে চালান দেওয়া হয়েছে, তাতে মালামাল গ্রহণ ও বিতরণের বিষয় যথাযথভাবে সন্নিবেশিত ও কর্তৃপক্ষের সই নেই।
পৃথক আপত্তিতে বলা হয়, অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ সরবরাহকারীর কাছ থেকে ৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকার সুরক্ষাসামগ্রী কেনা হয়েছে। যারা গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ এবং কম্বল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ৪৭ কোটি টাকার সামগ্রী অব্যবহৃত ফেলে রাখা হয়। একই প্রকৃতির চিকিৎসাসামগ্রী একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দরে কেনায় ক্ষতি হয় ১৭ কোটি টাকা। সরকারি ক্রয়নীতি লঙ্ঘন করে প্রায় ১১ কোটি টাকার কাজ জামানত ছাড়াই চুক্তি করা হয়। ৬ কোটি টাকার বেশি অনিয়মিত ব্যয় হয় মোবাইল অ্যাপ, টিভিক্লিফ, সফটওয়্যার তৈরির কাজে। সরবরাহকারী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় চুক্তি মোতাবেক বিলম্ব জরিমানা ছাড়াই বিল পরিশোধ করায় ৪ কোটি টাকার বেশি সরকারের ক্ষতি হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা দরের চেয়ে বেশি দামে চিকিৎসাসামগ্রী কেনায় সরকারের পৌনে ৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
ব্যাংকের টাকা মেরে দেউলিয়া ঘোষণা
ঋণের টাকা পাচারের শঙ্কা
০৬ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
দুটি ব্যাংকের কাছে দেনার পরিমাণ ৩৩৫ কোটি টাকা। এ দেনার বিপরীতে জামানত হিসেবে আছে শুধু ঢাকার মিরপুর ১২ নম্বরের একটি ৯ তলা জরাজীর্ণ ভবন। ব্যবসা গুটিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদ পালিয়েছেন থাইল্যান্ডে। এক সময় দেশে যাতায়াত থাকলেও অনেকদিন আর তাঁর দেখা নেই। ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএইচএম রায়হান শরীফ দেশে থাকলেও কিছুদিন ধরে তাঁকেও খুঁজে পাচ্ছে না ব্যাংক। ব্যাংকের টাকা মেরে এখন আইনি প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে দিতে তাঁরা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার জন্য আবেদন করেছেন ঢাকার একটি আদালতে।
জানা গেছে, ঢাকার দেউলিয়াবিষয়ক আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ সৈয়দা কানিজ কামরুন নাহার গত ১১ মে মোট তিনটি মামলা গ্রহণ করেন। এর প্রথম শুনানি হয় ১৫ জুন। মামলার বাদী ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান ক্লাসিক সাপ্লাইজ ও কোমো অ্যাপারেলসের এমডি মোহাম্মদ রাশেদ এবং পরিচালক এএইচএম রায়হান শরীফ এ আবেদন করেছেন। বিবাদী করা হয়েছে পাওনাদার রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং পলাতক মোহাম্মদ রাশেদের সাবেক স্ত্রী ফারহানা রাশেদকে। দেউলিয়া ঘোষণা সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে তাঁদের কাছে পাওনার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ৩৩৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্লাসিক সাপ্লাইজের দেনা ১৭৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং কোমো অ্যাপারেলসের ১৫৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। তাঁদের অফিসের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর ব্লকের ৬ নম্বর রোডের একটি প্লট। ২০১৯ সালে জাতীয় সংসদে প্রকাশিত ঋণখেলাপির তালিকায় প্রতিষ্ঠান দুটির নাম ছিল।
দিনাজপুরের সাঁওতালদের জমি দখলের অভিযোগ আ.লীগের সংসদ সদস্য ও তাঁর চাচার বিরুদ্ধে
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
দিনাজপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তাঁর চাচা দিনাজপুর জাতীয় পার্টির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ করেছেন সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর কয়েকজন। জমি ফেরত চাওয়ার কারণে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে এবং কেউ কেউ বাড়ি ছাড়া বলেও অভিযোগ করেছেন সাঁওতালরা। তবে সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলছেন, অভিযোগ ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক কারণে এসব হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সাঁওতালদের জমি ও জীবনরক্ষা আন্দোলন’–এর ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় স্বপ্নপুরি নামের বিনোদনকেন্দ্রে সাঁওতাল ও মাহালি সম্প্রদায়ের তিনটি কবরস্থান আছে। একটি কবরস্থানের ওপর শিবলী সাদিক বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। স্বপ্নপুরি বিনোদনকেন্দ্রের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন।
সংসদ সদস্যের চাচা ও জেলা জাতীয় পার্টির নেতা দেলোয়ার হোসেনকে ভূমিদস্যু আখ্যা দিয়ে বলা হয়, তিনি সাঁওতালদের ৭৭ দশমিক ১১ একর জমি দখল করেছেন। এলাকায় কোনো জমি নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে জমির মালিক হয়ে যান দেলোয়ার হোসেন। এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত সাঁওতালদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
প্রশাসনের অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অভিযোগ জানালে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। সাঁওতালরা জীবন ও জমি রক্ষার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলেন উকিল হেমব্রম নামের একজন বলেন, তাঁর ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন। বাকি সব দখল করা হয়েছে। গ্রামে ভয়ে কেউ কথা বলতে পারে না। স্বপ্নপুরি বিনোদনকেন্দ্রের ময়লা সাঁওতালদের কিছু কবরস্থানের ওপর ফেলা হয়। তিনি এক মাসের বেশি সময় ধরে বাড়ি যেতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেন।
ঝিরিতে কীটনাশক ছিটিয়ে মাছ শিকার, দুর্ভোগে ১৫ ম্রো পরিবার
৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো, চট্টগ্রাম সংস্করণ
বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েনপাড়ার বাসিন্দাদের পানির প্রধান উৎস কালাইয়া ঝিরিতে কীটনাশক ছিটিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। কীটনাশকের প্রভাবে চিংড়িসহ নানা ধরনের মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী পচে দুর্গন্ধ তৈরি হয়েছে ঝিরির পানিতে। এতে সংকটে পড়েছেন দুর্গম এলাকাটিতে বসবাসরত ম্রো সম্প্রদায়ের ১৫টি পরিবার।
রেংয়েনপাড়ার কার্বারি (পাড়া প্রধান) রেংয়েন ম্রো অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় একটি রবারবাগান ১৪ থেকে ১৫ জন শ্রমিক দুই দলে ভাগ হয়ে কলাইয়ার ঝিরিতে কীটনাশক ছিটিয়ে মাছ শিকার করা শুরু করেন।
কীটনাশক ছিটানোর পর মরে ভেসে ওঠা বিভিন্ন ধরনের মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া সংগ্রহ করতে দেখা গেছে তাঁদের। বিষয়টি জেনে পাড়াবাসী একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানাতে গেলে শ্রমিকেরা পালিয়ে যান।
কার্বারি রেংয়েন ম্রো বলেন, কীটনাশক ছিটানোর পর দুর্গন্ধের কারণে ঝিরির পাশে যাওয়া যাচ্ছে না। ঝিরিতে বিষের প্রভাব থাকায় এলাকাবাসী পানি ব্যবহার নিয়ে দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।
পাড়ার বাসিন্দা জিতলীপ ম্রো জানান, যাঁরা কীটনাশক ছিটিয়েছেন, তাঁরা লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের বাগানের আগাছা দমনে নিয়োজিত। পাড়ার লোকেরা তাঁদের নাম না জানলেও দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের চেনেন।
হুন্ডির মাধ্যমে এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, বণিক বার্তা
বাংলাদেশ থেকে গত এক বছরে ৭৮০ কোটি ডলার বা প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত চারমাসেই পাচার করা হয়েছে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ তথ্য জানিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকিং বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় ব্যবহার করে এসব ডলার পাচার করা হয়। এ ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
তিনি বলেন, দেশের ডলারের দাম বাড়ার কারণে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তে নেমে হুন্ডি কারবারের সঙ্গে জড়িত ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গত ৪ মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে এমএফসে হুন্ডি করে এমন ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে।
নজরুল, খালেকে ডুবল ফারইস্ট
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
- মোট আত্মসাৎ ২,৩৬৭ কোটি টাকা।
- এফডিআর বন্ধক রেখে আত্মসাৎ ১,৩৩২ কোটি টাকা।
- ৭টি জমি কেনায় ৬৬৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ।
- সাড়ে ৭ লাখ ডলারে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি করেন নজরুল।
- কোম্পানির আরও ক্ষতি ৪৩২ কোটি টাকা।
- সাবেক দুই চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও এম এ খালেক এখন কারাগারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। বাড়িটির ঠিকানা ১১৫২২ মানাতি বে এলএন, ওয়েলিংটন, এফএল ৩৩৪৪৯। ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বাড়িটি কেনা হয়েছিল ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩২৭ মার্কিন ডলার দিয়ে। বাড়ি কিনতে কোনো ঋণ নেওয়া হয়নি অর্থাৎ পুরো অর্থই একবারে পরিশোধ করা হয়। এ ছাড়া ছেলেমেয়ের নামে তিনি একই রাজ্যে গড়ে তুলেছেন তিনটি কোম্পানি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দুদক বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। সেই নজরুল ইসলাম এখন কারাগারে। গত সোমবার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাগ থানা-পুলিশ। আর গত মঙ্গলবার আদালতে তুললে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদ শুনানি শেষে নজরুল ইসলামের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নজরুল ইসলামের পাশাপাশি ফারইস্টের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ খালেক ও তাঁর ছেলে রুবাইয়াত খালেকও কারাগারে এখন। এ দুজনকে রিমান্ডে না নিয়ে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংক খাতে একসময় ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি ছিল বেসিক ব্যাংকের, তেমনি বিমা খাতে ছিল ফারইস্ট লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। চেয়ারম্যান হিসেবে পাঁচ বছরের দায়িত্ব পালনকালে শেখ আবদুল হাই যেমন বেসিক ব্যাংককে ধ্বংসের কিনারে নিয়ে গেছেন, ফারইস্ট লাইফে একই পরিস্থিতি হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পলিসি হোল্ডারের বিমা পলিসির মেয়াদ শেষ হলেও কোম্পানিটি এখন দাবি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে।
কীভাবে তা সম্ভব হলো—তার একটি চিত্র ওঠে আসে ফারইস্ট লাইফের ওপর করা সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানির এক বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ২০২১ সালের এপ্রিলে সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানিকে ফারইস্ট লাইফের ওপর নিরীক্ষা করার দায়িত্ব দেয়। গত মে মাসে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আইডিআরএর কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফারইস্ট লাইফ থেকে ২ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এর বাইরে অনিয়ম হয়েছে ৪৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার ও পলিসিহোল্ডাররা তাঁদের ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা হারিয়েছেন। নজরুল ইসলাম, এম এ খালেকসহ কোম্পানির সাবেক সব পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. হেমায়েত উল্লাহ এবং কোম্পানির কিছু শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাও এ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটান।
বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে জমি কেনা, বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ফারইস্টের মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিট (এমটিডিআর) বন্ধক রেখে পরিচালকদের ঋণ নেওয়া এবং ক্ষতিকর বিনিয়োগ—মূলত এই তিন উপায়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে ওঠে আসে। এমটিডিআর হচ্ছে একধরনের স্থায়ী আমানত।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই মাসে সিইও মো. হেমায়েতউদ্দিনকে বরখাস্ত করে আইডিআরএ। কোম্পানিটি চলছে এখন স্বতন্ত্র পরিচালকদের মাধ্যমে।
২২০০ কোটি টাকার জন্য মাফ ২৬০০ কোটি
২০ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
এ বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বেসরকারি ব্যাংকে পুনঃতপশিল করা ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ২১২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সুদ মওকুফ করা হয়েছে ২ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। এই প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে সব মিলিয়ে তিন হাজার ৭০৬ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতপশিলের বিপরীতে মাফ করে দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। এর মানে পুনঃতপশিল ও সুদ মওকুফের বেশিরভাগই হয়েছে বেসরকারি ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে পুনঃতপশিল করা এ ঋণের সবই যে আদায় হবে তা নিশ্চিত নয়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে কোনো ঋণ একাধিকবার পুনঃতপশিলেরও ঘটনা রয়েছে।
গত প্রান্তিকের চিত্রটি বেশ অস্বাভাবিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা পুনঃতপশিল করা হয়। এর বিপরীতে সুদ মওকুফ হয়েছিল মাত্র ২২১ কোটি টাকা। ২০২১ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ২ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা পুনঃতপশিলের বিপরীতে সুদ মওকুফ হয় ১৯৩ কোটি টাকা। আগের বিভিন্ন প্রান্তিকেও একই ধরনের চিত্র ছিল, অর্থাৎ পুনঃতপশিল করা অঙ্কের তুলনায় সুদ মওকুফ ছিল অনেক কম।
জানা গেছে, গত প্রান্তিকে পুনঃতপশিলে অস্বাভাবিকতার মূল কারণ হলো, বেসরকারি খাতের দুটি ব্যাংকের যোগসাজশে বিপুল অঙ্কের সুদ মওকুফ। এ দুটি ব্যাংকের মালিকানায় থাকা বিভিন্ন পক্ষ একে অপরকে সুবিধা দিতে বিপুল অঙ্কের সুদ মওকুফ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি জানার পর শুরুতে দুটি ব্যাংকের সঙ্গেই আলোচনা করে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক শেষ পর্যন্ত এর অনুমোদন দেয়।
দরিদ্রের তালিকা তৈরীর প্রকল্প
বিপুল ব্যয়, ‘চরম গাফিলতি’
২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
দরিদ্রদের তালিকা তৈরি না করেই এ–সংক্রান্ত একটি প্রকল্প শেষ করতে যাচ্ছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ২০১৩ সালে এই তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, এতে ইতিমধ্যে (গত জুনের হিসাবে) ৬৩৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। এখন তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ করতে নতুন প্রকল্প নেওয়ার আলোচনা চলছে।
জাতীয় খানা তথ্যভান্ডার (ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডেটাবেজ বা এনএইচডি) নামের এই প্রকল্পে দেশের সব কটি খানার (পরিবার) আর্থিক অবস্থাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার কথা, যা ধনী-দরিদ্রদের তালিকা নামে পরিচিতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) পাশ কাটিয়ে প্রকল্পটি নেয় পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, যাদের এ ধরনের জরিপ বা শুমারি করার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। বিবিএস এই বিভাগের অধীন একটি সংস্থা।
প্রকল্পটি নেওয়ার পর মেয়াদ বেড়েছে চার দফা। ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১২২ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্পটি চরম গাফিলতির একটি বড় উদাহরণ। পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক সচিব রীতি ইব্রাহিম বলেন, এই জরিপে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের পরিসংখ্যান নিয়ে ন্যূনতম কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, দক্ষতাও ছিল না। ফলে তাঁরা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন।
দরিদ্রের তালিকা কেন দরকার
সরকারের কাছে দরিদ্রতালিকা থাকলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সচ্ছলেরা ঢুকে পড়তে পারেন না। এক ব্যক্তির একাধিক কর্মসূচির আওতায় সুফল পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়। আবার তালিকা ধরে সংকটকালে দরিদ্রদের সহায়তা দেওয়া যায়।
করোনাকালে ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দিতে গিয়ে সরকার দেখে যে তাদের কাছে তালিকা নেই। তড়িঘড়ি করে তালিকা করে ৩৬ লাখ পরিবারকে সহায়তা দেওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে সচ্ছল অনেক পরিবারও ঢুকে যায়।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে জাতীয় খানা তথ্যভান্ডার প্রকল্পটি যখন নেওয়া হয়, তখন ব্যয় ছিল ৩২৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ সংশোধনে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ৬৮৭ কোটি টাকা। বাকি ৪০ কোটি টাকা সরকারের কোষাগারের।
পরিসংখ্যান বিভাগ জানিয়েছে, প্রকল্পের অধীনে ২০১৭ সালে দেশের সব খানার (৩ কোটি ৬০ লাখ) তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত তথ্য ডিজিটাল ব্যবস্থায় (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা এমআইএস নামের সফটওয়্যারে) সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সফটওয়্যারটি তৈরি হয়নি। সফটওয়্যার তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকে।
পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাঠ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা বসে আছি। কিন্তু সেটি সফটওয়্যারে আপলোড (সংরক্ষণ) করতে পারছি না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কবে সফটওয়্যার তৈরির কাজটি করতে পারবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। তাদের জন্য আমরা দায়ভার নিতে পারি না।’
সফটওয়্যার তৈরির কাজটি পেয়েছে আর্মেনিয়ার কোম্পানি সিনার্জি ইন্টারন্যাশনাল সিস্টেম। ২০১৮ সালে তাদের এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বলছে, করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা নিজ দেশে চলে যান বলে কাজ পিছিয়ে যায়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক বলেন, পরিসংখ্যান বিভাগ নিজেদের কাজই এখনো শেষ করতে পারেনি। সফটওয়্যারের কাজ চলছে, ৯০ শতাংশ শেষ।
জাতীয় খানা তথ্যভান্ডার প্রকল্পটি ২০১৭ সালেই শেষ হওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের এক বিভাগ ও এক অধিদপ্তর নিজেদের দায় একে অপরের দিকে ঠেলার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে জনগণের টাকা গচ্চা যেতে বসেছে।
ঋণের টাকা গায়েবের নকশায় চেয়ারম্যান
০৪ অক্টোবর ২২, সমকাল
ঋণের নামে উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা লোপাটের নকশায় খোদ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রশীদুল হাসান সরাসরি জড়িত। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির একাধিক পরিচালক ও কর্মকর্তা। জামানত ও ঋণ বিষয়ক কাগজপত্র জমা না দিয়ে এবং পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই ছয় বছরে (২০১৬ থেকে ২০২১) জালিয়াতি করে ওই টাকা তছরুপ করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে বিপুল এ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ।
এ পটভূমিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির ৯ কর্মকর্তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে বিএফআইইউ এরই মধ্যে ৩৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। বিএফআইইউর প্রতিবেদনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা শাখা। টাকা তছরুপের সত্যতাও পেয়েছে দুদক।
কাজ নিয়ে সময়ক্ষেপণ করে তমা কনস্ট্রাকশন, বাড়িয়ে নেয় টাকা
১১ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
রাজধানীবাসীর কাছে বছর কয়েক আগেও দুঃসহ ভোগান্তির নাম ছিল মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক। এটি নির্মাণের কাজ পেয়েছিল তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। ২০১৩ সালে শুরু করে দুবছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু লাগিয়েছে চার বছর। এ ছাড়া মূল চুক্তিমূল্যের চেয়ে ৭৬ কোটি টাকা বেশিও ব্যয় করেছে তারা। আর নির্মাণকাজ শেষ করতে গিয়ে প্রাণহানি ঘটে ৯ জনের।
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করেনি তমা কনস্ট্রাকশন। নির্ধারিত মূল্যেও করেনি কাজ। ফলে একদিকে সময় বেড়েছে, তেমনি প্রকল্পের খরচ বেড়েছে। বাড়তি টাকা সরকারের কোষাগার থেকে বহন করতে হয়েছে।
তমা কনস্ট্রাকশনের বেশ কয়েকটি প্রকল্প বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে সংস্থাটি।
৩৭শ কোটি টাকা লুটপাটে দায়ী পাঁচ ডেপুটি গভর্নর
১৭ অক্টোবর ২০২২, কালবেলা
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে (আইএলএফএসএল) আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পাঁচ ডেপুটি গভর্নরসহ ২৪৯ কর্মকর্তার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিনটি বিভাগের এই কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করেছেন আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এবং মেজর (অব.) মান্নান। নজিরবিহীন এই অনিয়মের কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির আলাদা তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মোট ১২শ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দুটি এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিআইএফসি ও আইএলএফএসএল থেকে অবৈধভাবে জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে মোট ৩ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে আইএলএফএসএল শুধু ভারতে কারাবন্দি প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এবং তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেই নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। আর বিআইএফসি থেকে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান ও তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে গেছে ৬০০ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে এই লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও নিশ্চুপ ছিলেন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
লোপাট ৩০০০ কোটি টাকা
২৪ অক্টোবর ২০২২, যুগান্তর
সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসার চার প্রকল্পেই ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে সংস্থাটির স্তরে স্তরে অনিয়ম-দুর্নীতির মহোৎসবের তথ্য পেয়ে রীতিমতো বিস্ময়ে হতবাক সংশ্লিষ্টরা। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকার পরও সংস্থার শীর্ষপদে নিয়োগ পান ‘বিতর্কিত’ ও দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী তাকসিম এ খান। এরপর তিনি প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রামের বাইরে গিয়ে পরিচালক পদে নিয়োগ দেন দুজনকে। অবৈধভাবে এ দুজনসহ পাঁচ কর্মকর্তার নিয়োগ এবং তিন কর্মকর্তার নিয়মবহির্ভূত পদোন্নতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্যের তথ্যও এসেছে দুদকের হাতে। এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম ওয়াসায় দুর্নীতির রেকর্ডপত্র সংগ্রহের কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।.. ..
জানা যায়, রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে পদ্মা যশলদিয়া প্রকল্পর অধীনে পদ্মা নদীর পানি আনার উদ্যোগ নেয় ঢাকা ওয়াসা। মুন্সীগঞ্জের পদ্মপারের যশলদিয়া পয়েন্টে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি ৪৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রাথমিক তথ্যে দুদক জানতে পেরেছে, এই প্রকল্পে লোপাট করা হয়েছে অন্তত ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। লুটপাটের কারণে পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার পানি পাওয়ার কথা। বাস্তবে পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ কোটি লিটার পানি, যা সক্ষমতার অর্ধেক। এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় সরবরাহ লাইনের কথা চিন্তা করা হয়নি বলেই এ অবস্থা বলে জানা গেছে। অথচ ৪৫ কোটি লিটার পানি পাওয়ার জন্য ওই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পরিচালনায় যে পরিমাণ খরচ হতো, এখন অর্ধেক পানি পেলেও খরচ হচ্ছে প্রায় একই।
দুদকের পাওয়া তথ্যে ওয়াসার লুটপাটের আরেক প্রকল্প দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার। রাজধানীবাসীর পয়ঃবর্জ্য সেবা দেওয়ার জন্য ঢাকার দাশেরকান্দি এলাকায় একটি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে ঢাকা ওয়াসা। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৭১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। দুদকের পাওয়া প্রাথমিক তথ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নেও লোপাট হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ হলেও স্যুয়ারেজ সংগ্রহের কোনো পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি। নতুন করে পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহের পাইপলাইন না করা পর্যন্ত এই প্রকল্প থেকে রাজস্ব আয় হবে না। আগামী ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে এই প্রকল্প থেকে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আয় দুরূহ হবে। এছাড়াও গন্ধববপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা, গুলশান-বারিধারা প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকা এবং সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-২-এর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ১৫ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য পেয়েছে দুদক। এ হিসাবে ওয়াসার বাস্তবায়িত চারটি প্রকল্পেই লোপাট হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।
জানা যায়, প্রকল্পের টাকা লুটপাটের বাইরেও ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির অর্থ আত্মসাতের তথ্যও পেয়েছে দুদক। অর্থ লোপাটের জন্য সমবায় সমিতির সদস্য নয়-এমন লোকদের নিয়ে ২০১৯ সালের ৩০ মে গঠিত হয় কমিটি। এই কমিটির মাধ্যমে সমিতির ঠিকাদারি বিল বাবদ ৪১ কোটি ৭০ লাখ ৮০ হাজার ৭৫০ টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়। এছাড়া সমিতির মালিকানার ৬২ হাজার ৪৮১ পিস পানির মিটার সমিতির অনুমোদন ব্যতিরেকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকা।
দুদকের হাতে আসা সমবায় অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঢাকা ওয়াসা থেকে কমিশন বাবদ প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা সমিতির ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে। অথচ সমিতির নিরীক্ষা প্রতিবেদনে জমা দেখানো হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। বাকি প্রায় ১৩২ কোটি টাকার কোনো হিসাব নিরীক্ষা দল পায়নি। আর ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সমিতির ব্যাংক হিসাব থেকে ৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এই টাকা ব্যয়ের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির বিপুল আয়ের উৎস গ্রাহকের বিল থেকে পাওয়া কমিশন। ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই সমিতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঢাকা ওয়াসার সাতটি রাজস্ব অঞ্চলে গ্রাহকের কাছ থেকে বিল আদায়ের কাজ করে। এর বিপরীতে কর্মচারী সমিতি মোট বিলের ১০ শতাংশ কমিশন হিসাবে পেয়েছে।
শ্রমজীবি মানুষ
লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার আড়ালে গেটম্যানদের ‘বঞ্চনার জীবন’
৫ আগস্ট ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথম প্রশ্নটি ওঠে- গেটম্যান কোথায় ছিল? শাস্তির প্রথম কোপটিও পড়ে তার উপরই। দায়িত্বে অবহেলার জন্য শাস্তি হলেও রেলের এই গেটম্যানদের জীবনের কষ্টগাথা থেকে যায় আড়ালেই।
স্বল্প বেতনে চাকরি, ঘণ্টার কোনো হিসাব নেই, থাকার স্থানটিতেও থাকে না তেমন সুবিধা, এর মধ্যেই কাজ করে যেতে হয় গেটম্যানদের। ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যেও কাজের বিরাম নেই। বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও ছুটতে হয় বেশ দূরে, ‘টেনশন’ সঙ্গী করে।
“বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও আমরা অনেক সময় যেতে পারি না দায়িত্বের খাতিরে। আর লোকজন সিগনাল মানে না, ব্যারিকেড মানে না। আর দুর্ঘটনা হলে দোষ হয় আমাদের!” ক্ষোভ নিয়ে বলছিলেন ঢাকার খিলগাঁও লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান মোহাম্মদ ইয়াসীন।
চট্টগ্রামের খৈয়াছড়ায় ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ১১ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনা ফের সামনে এনেছে লেভেল ক্রসিংয়ের বিভীষিকার কথা।
গত ২৯ জুলাইয়ের এই দুর্ঘটনার পর লেভেল ক্রসিংয়ের পাহারাদার সাদ্দাম হোসেনকে আটক করে রেল পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা তার দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুললেও সাদ্দামের দাবি, তিনি ব্যারিয়ার নামিয়ে যানবাহন আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু মাইক্রোবাসটি যাওয়ার জন্য কেউ একজন সেই ব্যারিয়ার তুলে দিয়েছিল।”
এই দুর্ঘটনার পর পূর্ব রেল দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এখনও প্রতিবেদন জমা না হওয়ায় ‘প্রকৃত ঘটনা’ জানা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে রেলপথে ৯৯টি দুর্ঘটনায় ১০৫ জনের প্রাণহানি হয়।
এর মধ্যে লেভেল ক্রসিংয়েই ঘটেছে ১৮টি দুর্ঘটনা, যেসব ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২২ জুন পর্যন্ত রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২২৭ জন। এর মধ্যে ১৯১ জনই প্রাণ হারিয়েছেন লেভেল ক্রসিংয়ে।
বেতন সীমিত, কাজের সময় বাড়তি, ছুটিও মেলে না
বেশ কয়েকজন গেটম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জনবল কম হওয়ায় অনেককে দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয়। জরুরি প্রয়োজনেও ছুটি মেলে না, কর্মস্থলে নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা। একে নিজেদের বঞ্চনার জীবন বলছেন তারা।
প্রায় চার বছর ধরে ঢাকার খিলগাঁও রেলগেটে গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ নূরনবী। দিনে আট ঘণ্টা কখনওবা তার বেশি সময় দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। সপ্তাহ দুয়েক আগে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সন্তান হওয়ার একদিন আগে ‘অনেক বলে-কয়ে’ ছুটি মিলেছিল তার।
হতাশা কণ্ঠে নূরনবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেলে লোক (গেটম্যান) কম হওয়ায় আমাগো অনেকের উপ্রেই অনেক চাপ পড়ে। ছুটি পাওয়া আমাগো জন্য বিরাট ব্যাপার। মানুষ ঈদে বাড়িতে যায়, আমরা ডিউটি করি। ঈদের ছুটিতে আমাগো কাজ আরও বাইড়া যায়।”
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে তিন শিফটে চারজন করে মোট ১২ জন পাহারাদার থাকার কথা। কিন্তু কোনো কোনো লেভেল ক্রসিংয়ে এর চেয়েও কম পাহারাদার আছেন। ফলে আটঘণ্টারও বেশি ডিউটি করতে হয় অনেককে। অনেক ক্ষেত্রে ১২ ঘণ্টাও ডিউটি করতে হয়।
গাইবান্ধা জেলা শহরের দুই নম্বর রেল গেটের গেট কিপার মানিক মিয়া জানান, রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের প্রকল্পের অধীনে তিনিসহ দুজন এই গেটে দায়িত্ব পালন করেন। তাদেরকে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে ডিউটি করতে হয়। তারা প্রতি মাসে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা করে বেতন পান।
২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া দুটি প্রকল্পের আওতায় রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ৭০২টি লেভেল ক্রসিং উন্নয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় অস্থায়ী ভিত্তিতে পাহারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রায় দেড় হাজার জনকে। বেতন সর্বসাকুল্যে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা।
আর যারা স্থায়ী ভিত্তিতে রাজস্ব খাতের অধীনে চাকরি করেন, তাদের বেতন প্রকল্পের কর্মীদের চাইতে খানিকটা বেশি। তবে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দুধরনের কর্মীরই অভিযোগ একই।
খিলগাঁওয়ের নূরনবী বলেন, বেতন যা পান, তা দিয়ে বাবা, মা, ভাই, স্ত্রী ও সন্তানের খরচ চালানো কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রামের পটিয়াতে একটি লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান হিসেবে কাজ করেন মোহাম্মদ রায়হান। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাসের বেতন অনেক সময় দুই মাসে পাই, অনেকসময় তিন চারমাসেও হয়। দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা ডিউটি করে যদি মাসের বেতন মাসে না পাওয়া যায়, তাহলে খাব কী?
“বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল কীভাবে দিব? ১৪ হাজার টাকা, তাও তিন মাস পর পাইলে তো সংসার সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।”
গাইবান্ধার মানিক মিয়া বলেন, “এই বেতনে সংসার চলে না; তার উপর সময় মতো পাওয়া যায় না। দ্রুত আমাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হোক।”
এই বেতন ছাড়া বছরে তিনটি উৎসব ভাতা পাওয়ার কথা তাদের। কিন্তু এখনও গত ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা পাননি বলে জানান তিনি।
মানিকের সঙ্গী আরেক গেটম্যান আবু নাঈম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হবে বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যানদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হলেও সেখানে তাদের জন্য কোনো স্যানিটেশন সুবিধা নেই। টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হলে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাঁটার দূরত্বে গিয়ে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়, ফলে রেলগেট অরক্ষিত থাকার একটা ঝুঁকি থেকে যায়।
পোশাক শ্রমিকের দীর্ঘশ্বাস ‘দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর’
১২ আগস্ট, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
পোশাক শ্রমিক আব্দুল মোমিন। কাজ করেন সাভারের একটি কারখানায়। সর্বসাকুল্যে বেতন পান ১২-১৩ হাজার টাকা। গত কয়েক মাস ধরে কারখানায় কাজ কম থাকায় ওভারটাইম হচ্ছে না। গত মাসে পারিশ্রমিক পেয়েছেন ১১ হাজার টাকা।
আজ শুক্রবার সারা মাসের বাজার করতে সাভার পৌর এলাকার গেন্ডা বাজারে গিয়েছিলেন। বাজারে সব পণ্যের দামই বেড়েছে দেখে সর্বমোট সাড়ে ৩ হাজার টাকার বাজার করে ফিরে এসেছেন।
মোমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘একা সাভারে থাকি। বেতন পাওয়ার পর পুরো মাসের বাজার একসঙ্গে করি। প্রতি মাসে আমার আড়াই হাজার টাকার বাজার করলেই হয়ে যায়। কিন্তু আজ সাড়ে ৩ হাজার টাকার বাজার করতে হয়েছে। তারপরও পুরো বাজার করিতে পারিনি।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই বেড়েছে উল্লেখ করে আব্দুল মোমিন বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সব পণ্যের ওপরই প্রভাব পড়েছে। গত মাসে ব্রয়লার মুরগি কিনেছিলাম ১৫০ টাকা কেজি, তবে আজ কিনতে হলো ২০০ টাকায়। চাল ছিল ৫০ টাকা কেজি, আজ কিনেছি ৫৭ টাকায়। সয়াবিন তেল ছিল ১৮০ টাকা কেজি, আজ কিনলাম ২০০ টাকায়।’
‘তেলাপিয়া মাছ গত মাসে ছিল ১৩০ টাকা কেজি, আজ কিনতে হলো ২০০ টাকায়। ১২০ টাকার পাঙ্গাশ মাছও এখন ১৬০ টাকা কেজি। ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৩৪ টাকা থেকে হয়েছে ৪৫ টাকা। বাজারে সবজির দামও বেশ চড়া। ৫০ টাকা কেজির নিচে তেমন কোনো সবজিই নেই। কী খেয়ে বাঁচবো। পেপের দামও বেড়ে হয়েছে ৪৫ টাকা কেজি’, যোগ করেন তিনি।
মোমিন বলেন, ‘আমরা নিম্নআয়ের মানুষ। কী আর করবো। আগে মাস শেষে কষ্টের টাকা কিছু গ্রামের বাড়িতে পাঠাতাম আর কিছু সঞ্চয়ের চেষ্টা করতাম। এখন সঞ্চয় তো দূরের কথা, পরিবার-পরিজন নিয়ে দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।’
দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে চা শ্রমিকেরা
১৩ আগষ্ট ২০২২, একাত্তর টিভি অনলাইন
চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে দেশের সব চা বাগানে শনিবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে সকাল ৬টা থেকে এই ধর্মঘট চলছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বি-৭৭) সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি দাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার চা বাগানগুলোর মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক করে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর। মালিকপক্ষের কেউ বৈঠকে আসেননি। এতে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। ফলে আজ শনিবার সকাল ছয়টা থেকে দেশের সবগুলো চা বাগানের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন।
তিনি জানান, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আমরা গত ৮ আগস্ট থেকে আন্দোলন করে আসছি। দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ চূড়ান্ত পর্যায়ে চা শ্রমিকরা সিলেট-বিমানবন্দর সড়কের পাশে লাক্কাতোড়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে বসে আছেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, দেশে প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ক্রয় ক্ষমতা চা শ্রমিকদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। দৈনিক ১২০ টাকা যে মজুরি আমরা পাই তা দিয়ে পেট চলে না। এ অবস্থায় গত ৩ আগস্ট আমরা চা বাগানের মালিকদের কাছে শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা করার জন্য এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সেটাতে কর্ণপাত করেননি। এর প্রতিবাদে আমরা গত ৮ আগস্ট থেকে সারাদেশের চা বাগানে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছি। তারপরও মালিকপক্ষ আমাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় আমরা ধর্মঘটের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ৪ হাজার চা শ্রমিকের ২৫ কিলোমিটার পদযাত্রা
১৭ আগস্ট ১৭, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ২৫ কিলোমিটার পদযাত্রা করেছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ছয়টি চা বাগানের প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক।
আজ বুধবার সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের পঞ্চম দিন চা শ্রমিকেরা তাদের দাবি নিয়ে সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার মুড়াইছড়া, গাজীপুর, কালিটি, রাঙ্গিছড়া, আসকরাবাদ ও রাধানগর চা-বাগানের প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক মিছিল নিয়ে বাগান থেকে বের হয়ে গাজীপুর চৌমুহনীতে এসে একত্রিত হন। সেখান থেকে তারা পদযাত্রা করে কুলাউড়া শহরের দিকে আসেন।
সেসময় ‘চা-শ্রমিকদের আন্দোলন চলছে, চলবে’, ‘আটা-রুটির সংগ্রাম চলছে, চলবে’, ‘চুক্তি নিয়ে টালবাহানা চলবে না, চলবে না’, ‘৩০০ টাকা মজুরি দিতে হবে, দিতে হবে’, ‘করুনা নয়, অধিকার চাই’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দেন তারা।
ক্রয়ক্ষমতা কমছে, কষ্টে শ্রমিকেরা
১৬ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
দ্রব্যমূল্যের চলমান ঊর্ধ্বমুখিনতায় সবচেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে পড়েছেন শ্রমিকেরা। তাঁদের সরকার নির্ধারিত যে ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হয়, তা এই বাজারে জীবনধারণের জন্য বেশ অপ্রতুল। কারণ, শ্রমিকদের মজুরি যে হারে বাড়ছে, তার চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। অর্থাৎ মজুরির চেয়ে এখন মূল্যস্ফীতির হার বেশি। এতে শ্রমিকের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
বর্তমানে ৪২টি খাতের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা আছে। এর মধ্যে ১৮টি খাতের ন্যূনতম মজুরিকাঠামোর নির্ধারিত পাঁচ বছর সময়সীমা পেরিয়ে গেছে। নতুন মজুরিকাঠামো পাচ্ছেন না এসব খাতের শ্রমিকেরা। এর মধ্যে ১০টির মেয়াদ ১০ বছর পেরিয়েছে।
এ দেশে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করেন পোশাক খাতে। এই খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের জন্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী একজন পোশাকশ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা। একজন পোশাকশ্রমিক যখন কাজ শুরু করেন, তখন এই মজুরি পান। প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে মূল মজুরি বৃদ্ধি পায়।
শ্রমিকেরা চাল, ডাল, তেল, নুন, সবজিসহ খাবার কিনতেই মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি অনুভব করেন। বিশেষ করে চালের দাম বাড়লেই তাঁদের জীবন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে ওঠে। এখন প্রায় সব জিনিসের দামই বাড়ছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মোট চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৩৮ টাকা। এখন তা ৬০ টাকা। গত সাড়ে চার বছরে শুধু চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ।
ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সাবেক মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন প্রথম আলোকে বলেন, জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের শ্রমিকগোষ্ঠীর জীবনধারণে নাভিশ্বাস উঠছে। গত দুই বছরে তাদের ক্রয়ক্ষমতা ২০ শতাংশের মতো কমেছে। এই অবস্থায় তিনি শ্রমিকদের জীবনধারণের সুবিধার্থে মহার্ঘ ভাতা প্রদান কিংবা রেশন চালুর দাবি জানান।
১৮ খাতের মেয়াদ পেরিয়েছে
বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মজুরিকাঠামোর মেয়াদ সাধারণত পাঁচ বছর। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ খাতের মজুরিকাঠামোর সময়সীমা পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এই খাতগুলো হলো টাইপ ফাউন্ড্রি; পেট্রলপাম্প; আয়ুর্বেদিক কারখানা; আয়রন ফাউন্ড্রি ও প্রকৌশল ওয়ার্কশপ; চা-বাগান; তেল কারখানা ও সবজি উৎপাদন; হোমিওপ্যাথ কারখানা; সল্ট ক্রাশিং; কোল্ড স্টোরেজ; ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত অদক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক ও কিশোর শ্রমিক; ব্যক্তিমালিকানাধীন পাটকল; রাবারশিল্প; সিনেমা হল; ম্যাচশিল্প; জুট প্রেস অ্যান্ড বেলিং; মৎস্যশিকারি (মাছ ধরার ট্রলারে কাজ করেন); বিড়ি; বাংলাদেশ স্থলবন্দর। এসব খাতের সর্বশেষ মজুরি হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৬ সালের আগে। এর মধ্যে কোনোটির মেয়াদ দশক পেরিয়েছে। এসব খাতের ন্যূনতম মজুরি ৫২১ থেকে ৭ হাজার ৪২০ টাকার মধ্যে।
তবে দেশের বিরাট শ্রমিকগোষ্ঠী এখনো সরকার নির্ধারিত মজুরিকাঠামোর বাইরে রয়ে গেছে। তাঁরা মূলত অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক। তাঁরাও জিনিসপত্রের উচ্চমূল্যের এই সময়ে ভীষণ কষ্টে আছেন।
মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেশি বাড়ছে
জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মজুরি তথা আয় না বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়ে। তাঁদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতি ও জাতীয় মজুরি সূচক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাধারণত মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি থাকে। কিন্তু কয়েক মাস ধরেই এর ব্যতিক্রম চলছে। গত জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, সেখানে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে নির্মাণ খাতের শ্রমিকদের মজুরি সবচেয়ে কম বেড়েছে। এই খাতে মজুরি বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, যা সার্বিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। এর মানে, যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, সেই হারে মজুরি বাড়ছে না।
শ্রীমঙ্গলে টিলা ধসে চার নারী শ্রমিকের মৃত্যু
১৯ আগস্ট, ২০২২, বণিক বার্তা
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টিলা ধসে চার নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কালীঘাট ইউনিয়নের লাখাইছাড়া চা বাগানে ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হচ্ছেন চা শ্রমিক হীরামনি ভূমিজ (৩০), পূর্ণিমা ভূমিজ (২৮), রাধা মাহালি (৪০) ও শকুন্তলা ভূমিজ (৪০)। ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা।
তিনি বলেন, আজ সকালে চার নারী ঘর লেপার মাটি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। টিলা থেকে মাটি কেটে নেয়ার সময় সেটি ধসে পড়ে। সে সময় মাটি চাপায় তারা ঘটনাস্থলে নিহত হন।
তৃতীয় দফার সমঝোতা প্রত্যাখ্যান, চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে
২৩ আগস্ট ২০২২, এনটিভি অনলাইন
চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে প্রথম দফা ঢাকায় বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তর কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠক, পরে শ্রীমঙ্গল শ্রম দপ্তরে এবং সর্বশেষ গত রোববার রাতভর মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা বৈঠক হয়। রোববার রাতের বৈঠকে ৮ জন শ্রমিক নেতা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ স্বাক্ষর করে আপাতত ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। পরে তারা সাধারণ শ্রমিকদের চাপে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত ৮ শ্রমিক নেতা পরে তাদের মুঠোফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে রয়েছেন।
গতকাল সোমবার মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানের মধ্যে বেশ কিছু বাগানের শ্রমিক কাজে যোগ দেন। আবার কিছু বাগানের শ্রমিকেরা সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভও করেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মৌলভী চা বাগান, শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাঝদিহি চা বাগান ও ফিনলে কোম্পানির ভারাউড়া চা বাগান ও কমলগঞ্জ উপজেলার মৃত্তিঙ্গা চা বাগান ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেননি।
গত ৯ আগস্ট থেকে চা শ্রমিকেরা ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবিতে ধর্মঘটে নামেন। এরপর ১৩ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস চা শ্রমিকেরা মানববন্ধন, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করে ধর্মঘট পালন করে আসছেন। ১৪ ও ১৫ আগস্ট দুদিন স্থগিত থাকার পর এ পর্যন্ত পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালন করে আসছেন তারা।
১৪৫ টাকা মজুরি প্রত্যাখ্যান, ধর্মঘট চালানোর ঘোষণা
২১ আগস্ট, ২০২২, প্রথম আলো
দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণের পর চলমান অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহারে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনরত শ্রমিকদের একাংশ।
মৌলভীবাজারের মনু ধলাই ও লস্করপুর ভ্যালির চা-শ্রমিকেরা কমিটির ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। সংগঠনটির লস্করপুর ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ বাড়াইক বলেন, ‘লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি চা-বাগানের পঞ্চায়েত নিয়ে আমরা বসেছিলাম। কেউই ১৪৫ টাকা মজুরিতে ধর্মঘট প্রত্যাহারে রাজি নয়। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চলছে, চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট ছাড়ছি না।’
চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, ‘শ্রমিকেরা ১৪৫ টাকা মজুরি মানছেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলে দিতে চাই, যদি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে থাকে, তাহলে আমরাও স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
এর আগে চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করার পর চলমান অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল।
ধর্মঘটের অষ্টম দিন গতকাল শনিবার বেলা তিনটায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে বৈঠকের পর নিপেন পাল বলেন, চা-শ্রমিকদের মজুরি ১২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে সরকারের এই প্রস্তাব মেনে নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
সভায় মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, এনএসআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর বজলুর রহমান, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, শ্রীমঙ্গলের ইউএনও আলী রাজিব মাহমুদ, বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার, সহসভাপতি পংকজ এ কন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এখন শ্রমিকনেতাদের আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা মেনে না নেওয়ায় চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি। এখন শ্রমিকেরা যদি সেটা মেনে না নেন, আমরা তাঁদের কীভাবে বোঝাব। আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি এই বিষয়ে আলোচনা করছি।’
৯ আগস্ট থেকে চা-বাগানের শ্রমিকেরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন করছেন। ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন তাঁরা। গতকাল ধর্মঘটে দেশের ২৩১টি চা-বাগানের শ্রমিকেরা বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার চা-শ্রমিকেরা দেড় ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে চা শ্রমিকদের
২৬ আগস্ট ২২, সমকাল
মৌলভীবাজারের ৯২টিসহ সারা দেশের ১৬৭ চা বাগানের শ্রমিকরা দৈনিক তিনশ টাকা মজুরি দাবিতে ১৮ দিন ধরে কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ফলে তারা সাপ্তাহিক মজুরি ও রেশন থেকে পাচ্ছেন না। চা জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ পরিবারের খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন চলছে।
এ দিকে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী এনজিও সংস্থা ঋণগ্রহীতাদের কিস্তি দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে বলে জানা গেছে। চা শ্রমিকদের করুণ অবস্থার মাঝে সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে চাপ না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
চা–শ্রমিকদের মজুরি বাড়ল ৫০ টাকা
২৭ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা–বাগানমালিকদের বৈঠকে শ্রমিকদের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এত দিন ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করেছিলেন তাঁরা। সে হিসাবে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি বেড়েছে ৫০ টাকা। এর সঙ্গে প্লাকিং বোনাস (বাড়তি পাতা তোলার জন্য অর্থ), উৎসব ভাতা, ভবিষ্য তহবিলসহ অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা আনুপাতিক হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শ্রমিকদের বার্ষিক ছুটি ও অসুস্থতাজনিত ছুটিও বাড়বে।
দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করেছিলেন চা–শ্রমিকেরা। চা–বাগানগুলোতে চলছিল ধর্মঘট। এই প্রেক্ষাপটে আজ শনিবার বিকেলে চা–বাগানমালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চা–বাগানমালিক এম শাহ আলমের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস সাংবাদিকদের কাছে সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন।
প্রশিক্ষণ পান না ৯৬ শতাংশ শ্রমিক
২৯ আগস্ট ২২, সমকাল
শ্রমিকদের দক্ষতার অভাবে ধুঁকছে দেশের কৃষি ও শিল্প খাত। অদক্ষ শ্রমিকের হাতে উৎপাদিত পণ্য অনেক সময়ই মানসম্পন্ন হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ধরনের পণ্য দক্ষ শ্রমিক দিয়ে দ্বিতীয়বার তৈরি করিয়ে নিতে হয়। এ ছাড়া বিদেশে পাঠানো শ্রমিকদের অনেকে দক্ষতার অভাবে নামমাত্র মজুরি পান। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ প্রবণতার পরও শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের পদক্ষেপ খুবই নগণ্য। মাত্র ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ শ্রমিক দক্ষতা উন্নয়নে প্রতিবছর কোনো না কোনো প্রশিক্ষণ পান। অর্থাৎ বাকি ৯৬ শতাংশেরও বেশি শ্রমিক কোনো রকম প্রশিক্ষণ পান না।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘দক্ষতার চাহিদা, সরবরাহ এবং এই দুইয়ের ব্যবধান’ শীর্ষক ওই গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি) কর্মসূচির আওতায় এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ জন্য এক হাজার ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানের সাত হাজার ১৮ জন শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। বিআইডিসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল গবেষণার নেতৃত্ব দেন।
ওই গবেষণায় দেখা যায়, শীর্ষ ১০ শিল্প খাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তির চিত্র আরও উদ্বেগের। মাত্র ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ ৯৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষণ সুবিধার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন। দক্ষতা অর্জনে কাজের অভিজ্ঞতাই বড় ভরসা। এ কারণে দক্ষতা ঘাটতি প্রায় ৩০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি, বনায়ন ও মৎস্য খাতের শ্রমিকদের মাত্র শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ বছরে একবার প্রশিক্ষণ পান। ১০ শিল্প খাতের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রশিক্ষণের সুযোগ পান নির্মাণশ্রমিকরা। তাঁদের মাত্র শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রশিক্ষণ পান। সবচেয়ে বড় শিল্প পোশাক খাতের ৯৯ শতাংশ শ্রমিকই প্রশিক্ষণ সুবিধার বাইরে থাকছেন। তবে স্বাস্থ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রায় ১২ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষণ পান।
গুলিস্তানে উচ্ছেদ অভিযানের সময় হকারদের বিক্ষোভ
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, মানবজমিন
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানকালে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সেখানকার হকাররা। এসময় তারা অভিযান বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে একজনকে জরিমানা করা হলে হকাররা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের মুখে সিটি করপোরেশনের অভিযান টিম এলাকায় ত্যাগ করেন। হকারদের দাবি কোথাও পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করা মেনে নেবেন না তারা।
বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হাসিম কবির বলেন, আমরা শুনেছি হকারদের জন্য মেয়র সাহেব একটি মার্কেট করছেন। উনি বলেছেন ওখানে নাকি হকারদের জায়গা দেওয়া হবে। আমরা বলতে চাই, আপনারটা হবে নগদ আর আমাদেরটা হবে বাকি। এটা আমরা মেনে নেব না।
তিনি বলেন, আপনারা মার্কেট করবেন সেখানে ৪ থেকে ৫ বছর সময় লাগবে।
এই লম্বা সময়টা আমাদের হকাররা কোথায় যাবে? আগে হকারদের ব্যবস্থা করবেন, তারপর আমরা জায়গা ছাড়ব। এখন আপনারা চাইলে পাঁচতলা মার্কেট করেন বা একশ তলা বিল্ডিং করবেন, সেটা আপনাদের বিষয়।
মহাখালীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ বস্তিবাসীদের
২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, যুগান্তর
রাজধানীর মহাখালীতে সোমবার সকাল থেকে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সাততলা বস্তিবাসী। এতে মহাখালী থেকে তেজগাঁও, মতিঝিল ও গাজীপুরগামী যানবাহন আটকে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। মহাখালী থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সড়কে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে মহাখালী কাঁচাবাজার এলাকায় পুনর্বাসন ছাড়া বস্তি উচ্ছেদ চলবে না-এমন একটি ব্যানার হাতে নিয়ে সড়কে বিক্ষোভ করে কয়েকশ’ বস্তিবাসী। আন্দোলনকারীরা সড়কে বসে পড়েন। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ বারবার তাদের যেতে বললেও তারা সড়ক থেকে সরে যাননি।
বিক্ষোভকারীরা জানান, সাততলা বস্তিই তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। কোনো রকম পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না নিয়েই তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। বস্তি থেকে সরিয়ে দিলে তাদের থাকার আর কোনো জায়গা থাকবে না। তাই তারা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন।
সংশোধিত শ্রম বিধিমালায় শ্রমিকের সুবিধা কমছে
০৫ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
শ্রম বিধিমালা-২০১৫ সংশোধনের মাধ্যমে ‘যুগোপযোগী ও আধুনিকীকরণ’ করতে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে প্রস্তাব প্রণয়নে কমিটি গঠন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ৩৪ মাস পর সেই বিধিমালা সংশোধনের কাজ শেষ হয়। সেখানে নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন সুবিধা হিসাব করার নতুন নিয়ম যুক্ত করা হয়েছে। এতে নারী শ্রমিকেরা আগের চেয়ে সুবিধা কম পাবেন। এ ছাড়া রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরা চাকরির বয়স ৯ মাস না হওয়া পর্যন্ত কল্যাণ তহবিল থেকে সুবিধা পাবেন না। এত দিন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ও অসুস্থতার কারণে নতুন-পুরোনো সব শ্রমিকই তহবিল থেকে সুবিধা পেতেন।
শ্রম বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, বিধিমালায় বেশ কিছু ভালো বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। তবে দু-তিনটি জায়গায় শ্রমিকেরা এত দিন যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিলেন, সেগুলো কাটছাঁট করা হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হচ্ছে, নতুন নিয়মের মাধ্যমে নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন সুবিধা আগের চেয়ে হ্রাস করা, এটা অমানবিক ও অযৌক্তিক।
২০০৬ সালে বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রণয়ন করে শ্রম মন্ত্রণালয়। ২০১৩ সালে শ্রম আইনের ব্যাপক সংশোধন হয়। আইনের প্রয়োগ সহজ করতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। ২০১৮ সালে আরেক দফা শ্রম আইন সংশোধিত হয়। এরপর বিধিমালাও সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। গত ২৫ আগস্ট সংশোধিত শ্রম বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এতে ১০১টি বিধি সংশোধন করা হয়।
চাকরি হারাচ্ছেন রেলের অস্থায়ী ৫ হাজার কর্মী
০৬ অক্টোবর ২২, সমকাল
রেলওয়েতে প্রায় ৫ হাজার টিআরএল (টেম্পোরারি লেবার রিক্রুট) বা অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। তাঁরা ৫ থেকে ১৫ বছর ধরে রেলের বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তাঁদের চোখে-মুখে এখন রাজ্যের অন্ধকার। চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তাঁরা। নিজস্ব তহবিল থেকে বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে রেলওয়ে। ফলে ৫ হাজার অস্থায়ী কর্মী চাকরি হারাতে যাচ্ছেন। তাঁরা সাধারণত ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ ভিত্তিতে কাজ করে থাকেন।
এখন ‘আউটসোর্সিং’-এর মাধ্যমে শূন্যপদে অস্থায়ী লোক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের পর থেকে চাকরি থাকছে না তাঁদের। প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন শ্রমিকরা। বাংলাদেশ রেলওয়ে অস্থায়ী (টিএলআর) শ্রমিক পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে।
অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করলেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন শ্রমিকরা। রেলওয়ের গেটকিপার, পয়েন্টসম্যান, পোর্টার, ওয়েম্যান, টিএক্সআর খালাসি, ওয়ার্কশপ খালাসি, লোকো খালাসি, অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কাজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তাঁরা।
মিরপুরে ট্রাফিক বক্সে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের হামলা
১৪ অক্টোবর, ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদে পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে ঢাকার মিরপুর ও পল্লবী থানা এলাকার পাঁচটি পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়েছেন চালকরা।
শুক্রবার সকালে এ ঘটনায় মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ট্রাফিক বক্সে মিজানুর রহমান নামের এক পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন।
ট্রাফিক পুলিশের পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার ইলিয়াস হোসেন জানান, শুক্রবার সকালে দুটি ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করা হয়েছিল। এরপর ১০ নম্বর গোলচত্বর ট্রাফিক বক্সে হামলা করে একদল চালক।
পুলিশ বক্সে হামলা: ১১ রিকশাচালক রিমান্ডে
১৫ অক্টোবর ২২, সমকাল
রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১১ জন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকের দুদিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। শনিবার ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এদিন গ্রেপ্তার ১৩ রিকশাচালককে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তের স্বার্থে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত ১১ জনের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে অপর দুই রিকশাচালকের রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
মাসে ৩০ কোটি টাকার বাণিজ্য অবৈধ রিকশায়
১৬ অক্টোবর ২২, সমকাল
ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। নীতিমালায় না থাকায় এ বাহনটি ঘিরে চলছে অবৈধ বাণিজ্য। রিকশা রাস্তায় নামাতে হলে টাকার বিনিময়ে নিতে হয় টোকেন। আবার টোকেন পেলেও নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ নেই। মূল সড়ক ছাড়াও অলিগলিতে অভিযানের নামে অটোরিকশা জব্দ করে মোটা অঙ্কের রেকার বিল আদায় করা হয়। রিকশাপ্রতি রেকার বিল গুনতে হয় ১ হাজার ২০০ টাকা। আবার কোনো রিকশা ডাম্পিং স্টেশনে নেওয়া হলে ২০০০-৪০০০ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করে রাস্তায় নামাতে হয়। রাজধানীতে অটোরিকশার এই মধুচক্রে পুলিশ ছাড়াও স্থানীয় অসাধু রাজনৈতিক নেতা ও পাড়ামহল্লার মাস্তানরা জড়িত।
২০১৪ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে ২০১৭ সালে এসব পরিবহন বন্ধে আরেক দফা নির্দেশনা আসে। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর অটোরিকশা বন্ধ ও আমদানি নিষিদ্ধ করেন সর্বোচ্চ আদালত। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সিটি করপোরেশন অভিযান চালালেও তা যেন ‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলা। ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযানে ক্ষুব্ধ হয়ে গত শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অন্তত সাতটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন রিকশাচালকরা। হামলাকারীদের বেধড়ক পিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছেন এক পুলিশ কনস্টেবল। আহত হয়েছেন পুলিশের আরও পাঁচ সদস্য। রিকশাচালকরা সংঘবব্ধ হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণের মতো নজিরবিহীন এই ঘটনার পর আবারও এই খাতের গভীর সমস্যার বিষয়টি সামনে এলো। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার চালকরা বলছেন, তাদের নিয়মিত বখরা দিতে হলেও প্রায়ই অভিযানের নামে চলে নিপীড়ন।
যে জীবন বাস কন্ডাক্টরের: দিন শুরু যার বচসায়, ভাড়ার বিবাদে!
১৬ অক্টোবর ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা
বেশ কয়েকটি রুটের বাসের জিরানোর জায়গা মিরপুর ১২ নম্বর। এর মধ্যে নাম করা যায় নারায়ণগঞ্জগামী হিমাচল, মাওয়াগামী স্বাধীন, যাত্রাবাড়িগামী শিকড়, কালিয়াকৈরগামী রাজধানী, মতিঝিলগামী বিকল্প বা আজিমপুরগামী সুপার লিংকের। ঢাকার মধ্যে চলা বাসগুলো জিরানোর সময় বেশি পায় না, তবে নারায়ণগঞ্জ বা আরেকটু দূরে যারা যায় তারা কিছু বেশি সময় পায়। মিরপুর সিরামিকস থেকে কালশী যাওয়ার পথটিই মূলত বাসগুলোর বিশ্রামখানা। তাই এপাশে ওপাশে ফুটপাথের ওপর চায়ের দোকান, ভাতের দোকানও বসেছে কয়েকটি।
শিকড় পরিবহনের কন্ডাক্টর জুম্মনের বয়স ৩৪। পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। ৯৬ সালের দিকে মা ও মামার সঙ্গে হেঁটে হেঁটে ফার্মগেট যেতেন। সেখানে ১৮ টাকা শয়ে ইট ভাঙতেন। তারপর নিরানব্বই সালে পরিবহন লাইনে আসেন। পাড়াতো ভাই বন্ধুরা ছিল লাইনে, তাদের মাধ্যমেই গাড়ির হেলপার হন। তার একটি মেয়ে ছিল, নাম রেখেছিলেন সাজিয়া, নিউমোনিয়ায় মারা গেছে ১৩ বছর আগে। জুম্মনকে দেখতে অবশ্য ২০-২২ বছরের মনে হয়। হাল আমলের ছেলেদের মতো ত্যারচা করে চুল কাটা তার। গলাটা বেশ ভারী। গাড়ির ভিতর বসেই ওস্তাদের সঙ্গে ভাত খাচ্ছিলেন গরুর সালুন দিয়ে। দুই বেলায় খোরাকি বাবদ ৭০ টাকা করে পান প্রতিজন। তাতে সবসময় কুলায় না, বিশেষ করে যেদিন গরুর তরকারি দিয়ে ভাত খেতে মন চায়। তখন নিজের পকেট থেকে ভরতে হয়।
মিরসরাইয়ে সমুদ্রে ড্রেজার ডুবে ৮ শ্রমিকের মৃত্যু
২৫ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে আট শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের ৩ নম্বর জেটি এলাকার পশ্চিমে এ ড্রেজারডুবির ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া শ্রমিকেরা হলেন ইমাম মোল্লা, মাহমুদ মোল্লা, শাহীন মোল্লা, আল আমিন, মো. তারেক ও বাশার। অন্য দুজনের নাম জানা যায়নি। তবে ড্রেজারটি থেকে এক শ্রমিক তীরে আসতে সক্ষম হয়েছেন। ওই শ্রমিকদের সবার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠী এলাকায়।
ড্রেজারটি থেকে বেঁচে ফেরা শ্রমিক মো. সালাম জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও ঢেউ ওঠায় সৈকত-২ নামে তাঁদের ড্রেজারটি মিরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ডুবে যায়। ড্রেজারটির মালিক সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে নিয়োগ দিয়েছে বেপজা। ড্রেজারটিতে থাকা ৯ শ্রমিকের মধ্যে তিনি কিনারে আসতে পারলেও বাকি ৮ শ্রমিক আটকা পড়েন।
গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের অধিকার
ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে মর্জিনা জানলেন, তাঁর ভোটটি দেওয়া হয়ে গেছে
২৭ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
অসুস্থ মর্জিনা বেগম (৪৮) ভোট দিতে কেন্দ্রে এসেছেন দুপুর সাড়ে ১২টায়। দীর্ঘ প্রায় দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা তাঁকে জানালেন, তিনি ভোট দিতে পারবেন না। কারণ, ইভিএম মেশিনে দেখানো হচ্ছে, ‘মর্জিনা বেগম, আপনি ইতিপূর্বে ভোট প্রদান করেছেন।’ অথচ মর্জিনা বেগমের দাবি, তিনি ভোট দেননি। তাঁর হাতের বৃদ্ধা আঙুলেও নেই ভোট প্রদানের মার্কিং চিহ্ন।
আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনের ২ নম্বর রাজারচর মোল্লাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর মোল্লাকান্দি এলাকার মজিবর মুনশির স্ত্রী মর্জিনা বেগম। তাঁর বাবার নাম নজরুল ইসলাম।
ডিবি তুলে নেয় ভোর ৬টায়, ‘তুই কি হিরোর মতো, নাম পরিবর্তন করবি’
২৯ জুলাই ২৯, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
‘তোর চেহারা কি হিরোর মতো? আয়নায় একবার নিজের চেহারা দেখেছিস? হিরোদের চেহারা কেমন হয় সিনেমায় দেখিস না? তোর হিরো আলম নাম পরিবর্তন করবি।’
`তোর জন্য আমরা মুখ দেখাতে পারি না। বাইরের দেশে তোর জন্য আমাদের অপমান করে। তুই বাংলাদেশের হিরো এটা শুনতে লজ্জা লাগে। তোর নামে অনেক মামলা। এখন বল তুই কী করবি? তুই এতগুলো অন্যায় করেছিস। সাইবার ক্রাইমে তোর ৭ বছর জেল হবে। এখন কী করবি বল?’
ডিবি অফিসে কী হয়েছিল- আলোচিত, সমালোচিত ও বিতর্কিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম সাঈদ ওরফে হিরো আলম আজ শুক্রবার তা জানান দ্য ডেইলি স্টারকে।
হিরো আলমকে বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। আর কোনো দিন রবীন্দ্র-নজরুল সংগীত গাইবেন না এবং পুলিশের পোশাক ব্যবহার করবেন না এই মর্মে মুচলেকাও দিয়েছেন হিরো আলম।
হিরো আলম বলেন, বুধবার ভোর ৬টার দিকে ডিবির লোকজন তার রামপুরার অফিস থেকে তাকে তুলে আনে। দুপুর ২টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ছেড়ে দেওয়ার আগে তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন হিরো আলম।
ভোলায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক
৩১ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
ভোলা সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে জেলা সদরের মহাজনপট্টিতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবিতে বিএনপির ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে এ সংঘর্ষ হয়। নিহত ব্যক্তির নাম মো. আবদুর রহিম। তিনি সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
বিএনপির দাবি, পুলিশ অতর্কিতভাবে তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দিয়ে গুলি চালিয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সমাবেশের অনুমতি নিয়ে মিছিল বের করায় পুলিশ বাধা দিলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়।
ভোলা জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম খান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, জেলা সদরের মহাজনপট্টিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিলেন দলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ঘটনাস্থলে এসে বাধা দেয় পুলিশ। তাঁরা প্রতিবাদ জানালে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এরপর দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে তাঁদের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৫ জন।
‘গুলি না ছুড়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যেত’
০৫ আগস্ট ২২, সমকাল
ভোলায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই নেতাকর্মীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে নানামুখী সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশিষ্টজন মনে করছেন, পুলিশ চাইলে গুলি না ছুড়েও ভিন্ন উপায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। একান্তই বাধ্য হলে প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করা যেত। তা না করায় পরিস্থিতি ‘ঘোলাটে’ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে পুলিশের প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও কৌশল না থাকাকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ জুলাই এক সভায় বলেন, বিএনপি তাঁর কার্যালয় ঘেরাও করতে গেলেও বাধা দেওয়া হবে না; বরং নেতাকর্মীদের চা খাওয়ানো হবে। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও বলেছেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে। এসব বার্তায় যখন রাজনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে বলে ধরে নিয়েছিলেন অনেকে, তখনই ৩১ জুলাই ভোলায় সহিংস ঘটনা ঘটল। সেদিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলম বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আর ঘটনার দিনই মারা যান জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আবদুর রহিম।
এই পরিস্থিতিতে বিশিষ্টজন পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের কৌশল ঠিক ছিল না। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক সমকালকে বলেন, আমাদের আইন, সংবিধান, সিআরপিসি, পিআরবি- সব জায়গায় পরিস্কার করে বলা হয়েছে যে, সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে গুলি না চালানোর জন্য। হ্যাঁ, তাদের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালাতে পারে। কিন্তু সে রকম পরিস্থিতির উদ্ভব কতটা হয়েছিল, সেটা বোঝার বিষয় ছিল। ফাঁকা গুলি ছোড়া যায়, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা যায়; কিন্তু এটা করে (গুলি চালিয়ে) তারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ফেলল।.. ..
এদিকে ভোলার সচেতন মহল মনে করে, পুলিশ পেশাদার আচরণ করলে এত হতাহতের ঘটনা ঘটত না। ভোলা জেলা উন্নয়ন ও স্বার্থরক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ রায় অপু বলেন, উভয় পক্ষেরই সংযত থাকা উচিত ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ, জলকামান ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারত। তাতে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটত না। ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে আগেই গুলির মতো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ছালাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, পুলিশ সেদিন পুরোপুরি পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে গুলি করতে হলে হাঁটুর নিচে গুলি করার বিধান রয়েছে। সেটার বদলে পুলিশ সরাসরি গুলি শুরু করেছে, যার ফলে এত হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের জেলা সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী বলেন, দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বাড়াবাড়ির কারণেই ভোলার ঘটনাটি ঘটেছে। আন্দোলনকারীদের চেয়ে পুলিশই এজন্য বেশি দায়ী। মিছিল করা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার। সেখানে পুলিশ কেন বাধা দেবে?
আজ অর্ধদিবস হরতাল করবে বাম জোট
২৫ আগস্ট, ২০২২, বণিক বার্তা
জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে আজ অর্ধদিবস হরতাল পালন করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তবে হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও মরদেহ বহনকারী গাড়ি, গণমাধ্যমের গাড়ি, ওষুধের দোকান এবং খাবার হোটেল হরতালের আওতার বাইরে থাকবে। রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে গতকাল অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ কর্মসূচিকে সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এর আগে ১৬ আগস্ট জ্বালানি তেল ও সারের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারসহ আট দফা দাবিতে বাম জোটের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে যেতে চাইলে শাহবাগ মোড়ে বাধা দেয় পুলিশ। ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে তাদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে সেখানেই প্রতিবাদ সমাবেশ করে ২৫ আগস্ট সারা দেশে অর্ধদিবস হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
তেলের দাম নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করায় ঢাবি ছাত্র ‘হলছাড়া’
২৫ আগস্ট ২০২২, জাগো নিউজ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক পোস্ট করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
গত ১৫ আগস্ট এ ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) এ তথ্য জানাজানি হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম কাজী সাকিব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মী হলেন ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আবু হাসান রনি এবং বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মশিউর রহমান শান্ত। তারা দুজনই মহসিন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শহিদুল হক শিশিরের অনুসারী। শিশির বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী।
সাত স্থানে বিএনপির বিক্ষোভে হামলা, আহত ১৬৯
২৭ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও ভোলায় গুলিতে দুই নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে টানা পাঁচ দিন ধরে চলা বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছেই। গতকাল শুক্রবারও দেশের ১০ জেলায় হামলা, সংঘর্ষ ও কর্মসূচিতে বাধার ঘটনা ঘটে। সাতটি স্থানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির কমপক্ষে ১৬৯ জন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। জবাবে বিএনপির নেতা–কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। গতকাল শুক্রবারের এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ৪০ জন আহত হন।
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে বিএনপির মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের করা হামলায় আহত হন অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী। বাগেরহাটে বিএনপির সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে হামলা ও বাড়িঘরে ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে আহত হন ২৫ জন।
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশের মঞ্চ ভাঙচুর করেন। এ সময় ১৫ জন আহত হন বলে দাবি স্থানীয় বিএনপির। নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরে বিএনপির সমাবেশে আসার পথে অন্তত ছয়টি স্থানে হামলায় দলটির ২৮ জন নেতা-কর্মী আহত হন।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে হামলাকালে সাংবাদিককে মারধর ও বগুড়ার শেরপুরে দলীয় কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে হামলায় যুবদলের পাঁচজন নেতা-কর্মী আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৯ জেলায় গুলি হামলা মামলা
২৯ আগস্ট ২২, সমকাল
বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে নতুন করে অন্তত ৯টি জেলায় সংঘর্ষ, হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার নরসিংদীর মনোহরদীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির ২৫ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। যশোর শহরে তাণ্ডব চালিয়েছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তাঁরা বিএনপি অফিসও তছনছ করেছেন। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ৭ জন আহত হয়েছেন। পুলিশের বাধায় ভোলার বোরহানউদ্দিনে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ ভন্ডুল হয়ে গেছে।
রাঙামাটির কাপ্তাই, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ ও কক্সবাজারের পেকুয়ায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। এদিকে, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে পুলিশের ওপর হামলা ও মাগুরায় সহিংসতার অভিযোগে বিএনপির ৯ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে এর আগের দু’দিনও বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার কয়েকটি জেলায় বিএনপির মিছিল-সমাবেশে হামলায় অন্তত ২০০ জন আহত হন। শনিবারও ৯ জেলায় হামলায় আহত হন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।
বিএনপির ওপর মারমুখী আ.লীগ
২৯ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
বিএনপিকে মাঠে দাঁড়াতে দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকালও দুটি জেলায় বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছেন সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে নরসিংদীর মনোহরদীতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলার পাশাপাশি পুলিশও গুলি ছুড়েছে। এতে ২৭ নেতা-কর্মী রাবার বুলেটবিদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
এদিকে গতকাল রোববার যশোরে আবারও বিএনপির প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। তরিকুলের ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলামের গাড়িতেও হামলা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে যশোর জেলা বিএনপির কার্যালয়।
বিএনপির পর আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়ায় গতকাল তিনটি উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি ছিল। ফলে সেখানে কর্মসূচি বাতিল করেছে বিএনপি। ভোলা, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়ন বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে ঢাকার বাইরে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। এরপর থেকে গতকাল পর্যন্ত টানা সাত দিনই বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মারমুখী অবস্থানে দেখা গেছে।
এই কয়েক দিনে বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ১৯টি কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আটটি স্থানে বিএনপি নেতাদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। দলীয় কার্যালয়ে হামলা হয়েছে চারটি স্থানে। দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণার কারণে আটটি উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ছয়টি স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ।
‘হাওয়া’ পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলাকারী কর্মকর্তাকে শোকজ
২৯ আগস্ট ২০২২, ঢাকা পোস্ট
‘হাওয়া’ সিনেমার পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলাকারী কর্মকর্তাকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে চলচ্চিত্র অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মোরশেদুল ইসলাম, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, তারিক আনাম খান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, এস এ হক অলীক, আফসানা মিমি, চঞ্চল চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন, সৈয়দ গাউসুল আলম প্রমুখ।
বৈঠক শেষে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি সিনেমা আবার দর্শকদের হলে ফিরিয়ে এনেছে। সেই সিনেমাগুলোর একটি ‘হাওয়া’। এর পরিচালকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। আমি বিদেশে ছিলাম, জানার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি, সেই মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে কর্মকর্তা মামলা করেছেন, তাকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আইনের যদি ব্যত্যয় হয়ে থাকে তাহলে পরিচালককে নোটিশ করতে পারতেন। সরাসরি কোর্টে গিয়ে মামলা করা সমীচীন হয়নি বলে আমি মনে করি।
‘শনিবারের বিকেল’ সিনেমাটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় হলি আর্টিজানে যে হামলা হয়েছিল, সেই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে দু’জন পুলিশ অফিসার মারা গেছেন। আমাদের পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে জঙ্গিদের দমন করেছিল। সেন্সর বোর্ডের অভিমত, সেই বিষয়গুলো সিনেমাটিতে আসেনি। সেজন্য এসব দৃশ্য সংযোজন করতে বলা হয়েছে। কিছুটা করা হয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছে। কিন্তু সেটিও যথেষ্ট নয়। তারা আপিল করেছিলেন। আপিল কর্তৃপক্ষ সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজককে জানিয়ে দেবে কী কী সংযোজন করা প্রয়োজন। সেগুলো সংযোজন হলে আমি মনে করি এই সিনেমা রিলিজ করার ক্ষেত্রে যে সমস্যা আছে, তা কেটে যাবে।
সাত স্থানে বিএনপির বিক্ষোভে হামলা, আহত ১৬৯
২৭ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও ভোলায় গুলিতে দুই নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে টানা পাঁচ দিন ধরে চলা বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছেই। গতকাল শুক্রবারও দেশের ১০ জেলায় হামলা, সংঘর্ষ ও কর্মসূচিতে বাধার ঘটনা ঘটে। সাতটি স্থানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির কমপক্ষে ১৬৯ জন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। জবাবে বিএনপির নেতা–কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। গতকাল শুক্রবারের এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ৪০ জন আহত হন।
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে বিএনপির মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের করা হামলায় আহত হন অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী। বাগেরহাটে বিএনপির সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে হামলা ও বাড়িঘরে ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে আহত হন ২৫ জন।
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশের মঞ্চ ভাঙচুর করেন। এ সময় ১৫ জন আহত হন বলে দাবি স্থানীয় বিএনপির। নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরে বিএনপির সমাবেশে আসার পথে অন্তত ছয়টি স্থানে হামলায় দলটির ২৮ জন নেতা-কর্মী আহত হন।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে হামলাকালে সাংবাদিককে মারধর ও বগুড়ার শেরপুরে দলীয় কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে হামলায় যুবদলের পাঁচজন নেতা-কর্মী আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার অভিযোগে গত ৩১ জুলাই ভোলায় বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের দুই নেতা নিহত হন। এরপর থেকে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ১৪টি কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছয়টি স্থানে বিএনপি নেতাদের বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচটি উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারির ঘটনা ঘটে।
খালেদা জিয়াকে আর দয়া দেখানো সম্ভব না
৩১ আগস্ট, ২০২২, প্রথম আলো
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যথেষ্ট দয়া দেখানো হয়েছে। এর বেশি আর দয়া দেখানো সম্ভব না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘তাঁর জন্য দয়া দেখাতে হবে। দয়া তো দেখিয়েছি আর কত দয়া দেখাব। যে আমাকে খুন করতে চেয়েছে, যে আমার বাবা-মা, ভাইদের হত্যার সঙ্গে জড়িত, তার জন্য যথেষ্ট দয়া দেখানো হয়েছে। যে আমার হাজার হাজার নেতা–কর্মীকে হত্যা করেছে, পঙ্গু করেছে, নির্যাতন করেছে। দিনের পর দিন নির্যাতন করেছে। অনেক দেখানো হয়েছে, এর বেশি আর দয়া আমাদের পক্ষে দেখানো সম্ভব না।’
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয়। বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ তাঁকে বিদেশে পাঠাও, আহ্লাদের আর শেষ নেই। এতিমের অর্থ আত্মসাত করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি জেলে ছিল; অন্তত আমি এইটুকু দয়া করেছি যে ঠিক আছে বয়োবৃদ্ধ মানুষ বা অসুস্থ, হাঁটতে-চলতে, উঠতে-বসতে অসুবিধা; শুইলে একজন না ধরলে উঠতে পারে না, এ অবস্থা দেখেছি। যতটুকু ক্ষমতা আছে তার মাধ্যমে তাঁকে আমি তাঁর বাসায় থাকার সুযোগটা করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন উনি (খালেদা) সেজেগুজে মেকআপ নিয়ে, একেবারে ভ্রু-ট্রু এঁকে হাসপাতালে যান। আর এদিকে তাঁর ডাক্তারেরা আবার রিপোর্ট দেয় খুবই খারাপ অবস্থা। মানে অবস্থা নাকি যায় যায়, তাঁর লিভার নাকি পচে শেষ। লিভার সাধারণত পচলে মানুষ কী বলে? সেটা আমি মুখ দিয়ে বলতে চাই না। কী খেলে তাড়াতাড়ি লিভার পচে, সেটা সবাই জানে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তারা আরেকটা নাটক সাজাচ্ছে। আপনারা দেখেছেন যে গাড়িতে করে হলুদ শাড়ি পরে তিনি হাসপাতালে গেলেন। এখন রিপোর্ট দিয়েছে খুবই খারাপ অবস্থা। বিদেশে না পাঠালে নাকি চিকিৎসা হবে না। এভারকেয়ার তো চমৎকার চিকিৎসা করেছে। সব থেকে আধুনিক চিকিৎসা, সব থেকে ব্যয়বহুল চিকিৎসা তাকে দিচ্ছে। আসামিকে কে কবে বিদেশে পাঠায়, চিকিৎসার জন্য। তাহলে কারাগারে কোনো আসামি আর বাদ থাকবে না। সবাই দাবি করবে আমাদেরও চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। আমরা কি সবাইকে পাঠাব? আমি অনেক দুঃখে এই কথাগুলো বললাম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস ও জ্বালাও–পোড়াওয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বেঁচে থাকার অধিকারটুকু দেয়নি বিএনপি। সেই বিএনপির কাছ থেকে মানবতা এবং মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমান তাঁর (শেখ হাসিনার) বাবা-মা ভাই ভাইয়ের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যায় জড়িতদের দায়মুক্তি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন। খালেদা জিয়া আরও এক ধাপ এগিয়ে খুনিদের ১৯৯৬ সালের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারির নির্বাচনে প্রার্থী করে বিজয়ী ঘোষণা করে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসান। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করলে মামলার রায় ঘোষণার দিনও বিএনপি হরতাল ডেকেছিল।
যেসব দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা মানবাধিকারের কথা শোনায় আমাদের। মানবাধিকার নিয়ে তত্ত্বজ্ঞান দেয়। কিন্তু আমার কাছে যখন এই কথা বলে বা দোষারোপ করে, তারা কি একবারও ভেবে দেখে যে আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল যখন আমরা আপনজন হারিয়েছি? স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে কেঁদে বেড়িয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ তার উন্নয়নের ধারা থেকে কখনোই শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে পতিত হবে না, বরং সব বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাবে। অর্থনীতির গতিশীলতা যেন অব্যাহত থাকে এবং অর্থনৈতিকভাবে দেশ যাতে এগিয়ে যেতে পারে, সে জন্য সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নিয়ে সরকার এগোচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে যুবদল কর্মী নিহত
০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে যুবদলের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম শাওন প্রধান (২০)। তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী ছিলেন।
শাওনের মৃত্যুর বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল) আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শেখ ফরহাদ। তিনি বলেন, শাওন মাহমুদকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তাঁর শরীরে গুলির চিহ্ন আছে। লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
বিএনপির ওপর আরও কঠোর হবে সরকার
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
বিএনপিকে আর পুরো শক্তি নিয়ে আন্দোলনে নামতে দেবে না সরকার। বিএনপি নামতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোরভাবে তা দমনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিএনপির কর্মসূচির ওপর নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পরপরই গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে বিএনপির মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচিতেও একইভাবে পুলিশ মারমুখী অবস্থানে থাকবে। সরকারি দলের নেতা-কর্মীরাও চড়াও হবেন বিএনপির ওপর।
এ বছরের শুরু থেকে বিএনপি কিছু কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে শুরু করে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এসব কর্মসূচি ছিল বাধাহীন। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু গত আগস্টের শেষের দিক থেকে বিএনপির কর্মসূচির ওপর মারমুখী হয়ে ওঠে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন।
চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করেন ডিবির এসআই কনক
০৩ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও শটগানের পাশাপাশি চায়নিজ রাইফেল দিয়েও গুলি ছুড়েছে। ডিবি পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান কনককে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে পরপর তিন রাউন্ড গুলি করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কনকের নামে কোনো রাইফেল ইস্যু নেই, আছে পিস্তল। তিনি অন্য কারও রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়লে তা নিয়মের ব্যত্যয়। বৃহস্পতিবারের ওই সংঘর্ষের সময় গুলিতে শাওন আহমেদ রাজা নামে এক যুবদল কর্মী নিহত এবং ২৫ জনের বেশি গুলিবিদ্ধসহ বহু নেতাকর্মী আহত হন।
ঢাকায় বিরোধী দলের পাড়া–মহল্লার নেতাদের তালিকা করছে পুলিশ
৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
রাজধানীতে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের তালিকা তৈরি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ঢাকার প্রতিটি থানা ও পাড়া-মহল্লাভিত্তিক নেতা-কর্মীর নাম-ঠিকানা; বিভিন্ন কমিটিতে পদ, পদবি ও মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে তালিকা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই তালিকা করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্র বলছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে কেউ যাতে নাশকতা চালাতে না পারেন, আবার নাশকতার কোনো ঘটনা ঘটলে যাতে সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে জন্যই এই তালিকা করা হচ্ছে।
তবে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলের নেতারা মনে করছেন, বিরোধী দলকে দমনপীড়ন, নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় এবং মামলার আসামি করার জন্য নির্বাচনের আগে এই তালিকা করা হচ্ছে।
ডিএমপির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের থানা, ওয়ার্ড ও মহানগর পর্যায়ের বিভিন্ন কমিটির সদস্য এবং পাড়া-মহল্লা পর্যায় পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তালিকা করা হচ্ছে। বড় দল হিসেবে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামের তালিকা তৈরিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আগাম তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ডিএমপির মাঠপর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে অনেক মামলা হয়। কোনো কোনো মামলায় মৃত ব্যক্তি এবং বিদেশে রয়েছেন এমন নেতা-কর্মীদেরও আসামি করা হয়েছিল। এ নিয়ে তখন অনেক সমালোচনা ও প্রশ্নের মুখে পড়েছিল পুলিশ। থানায় যদি নেতা-কর্মীদের পদ–পদবিসহ হালনাগাদ তথ্য এবং মুঠোফোন নম্বর তথ্য থাকে, তাহলে সামনে এ ধরনের ভুল এড়ানো যাবে। এমনিতে প্রতিটি থানায় রাজনৈতিক দলগুলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতা-কর্মীদের তালিকা রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে সেই তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে।
বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে হামলা–সংঘর্ষ চলছেই
৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
ভোলায় পুলিশের গুলিতে দুই নেতা নিহত এবং জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা চলছেই। গতকাল শনিবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ও কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কিশোরগঞ্জে পুলিশের ৯ সদস্য ও বিএনপির শতাধিক নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে আহত হয়েছেন ২৫ জন। এ ছাড়া নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে হামলার অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ
হাতকড়ার ভয়ে নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া
০৫ সেপ্টেম্বর, সমকাল
বিএনপির চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে হামলা-সংঘাত। এর জেরে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ করছে একের পর এক মামলা। হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা ঠোকার পর পুলিশ চালাচ্ছে সাঁড়াশি অভিযান। মামলায় শত শত অচেনা আসামি থাকায় এজাহারনামীয় ছাড়াও দলটির সক্রিয় অনেক নেতাকর্মীই গ্রেপ্তারের ভয়ে এখন এলাকাছাড়া।
পুলিশ অভিযানের সময় নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে বিভিন্ন স্থানে বিএনপি কর্মীরা আক্রান্ত হলেও ওই সব ঘটনায় হামলাকারী কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ। এদিকে, পুলিশের হয়রানির পাশাপাশি নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ কর্মীরাও বিএনপি নেতাদের মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। তবে পুলিশ হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, অহেতুক কাউকে প্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
নোয়াখালীতে ১০ মামলায় সাড়ে তিন হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করার পর ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় আসামি করা হয়েছে দেড় হাজার মানুষকে। এরই মধ্যে ২৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। মানিকগঞ্জে আড়াই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। ফেনীতে চার মামলায় আসামি ১ হাজার ১১৮ জন। নেত্রকোনায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। যশোরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাদের বাড়িঘরে হামলা চালালেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। উল্টো বিএনপির ২৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।
‘বর্ডার’ কেন প্রদর্শনের অযোগ্য, জানালেন তাঁরা
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু মানুষের জীবনচক্র নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র ‘বর্ডার’। পূর্ণদৈর্ঘ্য এ চলচ্চিত্র গত ২২ আগস্ট বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা দেখেন। তখন সেন্সর বোর্ড সদস্যরা ছবিটি দেখে ছাড়পত্র দেননি। ৪ সেপ্টেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে ছবির পরিচালক ও প্রযোজককে জানিয়ে দেওয়া হয়, ছবিটি প্রদর্শনের অযোগ্য। ছবির অনেক জায়গায় সেন্সর নীতিমালার অসংগতির বিষয় চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
অসংগতির কথা উল্লেখ করা হলেও চাইলে ছবির প্রযোজক ও পরিচালক এক মাসের মধ্যে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সেন্সর বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে আপিল করতে পারবেন। আপিল না করলেও সেন্সর বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী রিভাইস ভার্সন করে আবারও ছবিটি সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়া যাবে।
সেন্সর বোর্ড সেক্রেটারি মমিনুল হক প্রথম আলোকে জানান, সেন্সর বোর্ড সদস্যরা ছবিটি দেখেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সেন্সর নীতিমালায় পুরোপুরি সিনেমাটি তৈরি করা হয়নি। দেখার পর কয়েক দিন সময় নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ছবিটি প্রদর্শনের অযোগ্য। তিনি বলেন, ‘ছবির যেসব জায়গায় সেন্সর নীতিমালায় সমস্যা মনে করা হয়েছে, পয়েন্ট আকারে চিঠিতে তা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধান তিনটি কারণের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বিজিবি কাজ করে, কিন্তু বর্ডার ছবিতে পুলিশকে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ছবিতে সাতক্ষীরা অঞ্চলের একজন গডফাদার দেখানো হয়েছে, যার কাছে মন্ত্রী-এমপি সবাই জিম্মি থাকেন—বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি নেই। তৃতীয়ত, বর্ডার ছবিতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে—যা সেন্সর নীতিমালার পরিপন্থী। এর বাইরে ছবিটিতে আরও ছোট ছোট বেশ কয়েকটি অসংগতি রয়েছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাষ্ট্র সংস্কারের নেতা গ্রেপ্তার
০৯ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
শ্রীমঙ্গল পৌর ছাত্রলীগের এক নেতার করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা প্রীতম দাশকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার ভানুগাছ সড়ক থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কয়েক দিন আগে পাকিস্তানের লেখক সাদত হোসেন মান্টোর একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন প্রীতম দাশ। এ ঘটনায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ এনে গত ৩১ আগস্ট তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয় মুসলিম জনতা।
এরপর পৌর ছাত্রলীগের নেতা মাহবুব হোসেন ভূঁইয়া ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শ্রীমঙ্গল থানায় প্রীতম দাশের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। এ মামলায় গতকাল পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
নিশ্চিত জয় জেনেই আ.লীগ নেতাদের এত আগ্রহ
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
জেলা পরিষদে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেন না। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই এখানে ভোটার। স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। ফলে জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মানেই জয় নিশ্চিত। এ পরিস্থিতিতে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রায় ৫০০ প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। প্রতিটি জেলা পরিষদের জন্য গড়ে আগ্রহী প্রার্থী আটজন।
গতকাল শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় ৬০টি জেলা পরিষদে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সাতক্ষীরার প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়নি। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চেয়ারম্যান পদে অর্ধেকের বেশি জেলা পরিষদে আগের চেয়ারম্যানদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিছু স্থানে পরিবর্তন করা হয়েছে। কেউ কেউ মারা গেছেন। মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের বেশির ভাগই বয়োজ্যেষ্ঠ। তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ে পদপদবি আছে, এমন নেতারাই মনোনয়ন পেয়েছেন। মনোনয়নপাপ্ত কারও কারও পরিবারে সংসদ সদস্য কিংবা কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাও আছেন।
সিরাজগঞ্জে মনোনয়ন পেয়েছেন আবদুল লতিফ বিশ্বাস। তিনি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জয়ী হয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছিলেন। পরে তিনি জেলা প্রশাসনের চেয়ারম্যান হন। এবারও তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন।
টাঙ্গাইলে মনোনয়ন পাওয়া ফজলুর রহমান খান আগেরবার চেয়ারম্যান ছিলেন। এর আগে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন। তাঁর ছেলে খান আহমেদ বর্তমানে মির্জাপুরের সংসদ সদস্য।
পিরোজপুরে সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ বাদ পড়েছেন। তিনি অবশ্য আগেরবার বিদ্রোহী হিসেবে দলের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য শাহ আলমকে পরাজিত করেছিলেন। এবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মহিউদ্দিন মহারাজ ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার প্রথম
পাতায় বড় করে বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছেন। এই জেলায় মনোনয়ন পেয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্য সালমা রহমান। তিনি পিরোজপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁর স্বামী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের বাকি ৬১টি জেলা পরিষদের মেয়াদ গত ১৭ এপ্রিলে শেষ হয়। এরপর ২৭ এপ্রিল বিদায়ী চেয়ারম্যানদের নিজ নিজ জেলার পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৮ অক্টোবর জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গাইবান্ধায় উপনির্বাচন হবে ১২ অক্টোবর।
দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান, জেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের যেসব শীর্ষ নেতা জনপ্রতিনিধি নন, এমন নেতারাই দলীয় ফরম বেশি কিনেছেন। জেলা পরিষদের ভোটার হচ্ছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। ২০১৪ সালের পর স্থানীয় সরকারের যেসব নির্বাচন হয়েছে, প্রায় সব কটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জবরদস্তির অভিযোগ আছে। অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দলটিরই বিদ্রোহী প্রার্থী। সব মিলিয়ে ৮০ শতাংশের ওপর স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের মনোনীত, সমর্থিত কিংবা দলটির নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যরা তাঁদের ভোটেই নির্বাচিত হবেন। এ কারণে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয় অনেকটাই নিশ্চিত।
অসুস্থ, প্রবীণ, প্রবাসীরাও আসামি
বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, প্রথম আলো
দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় গত ২২ দিনে ৪৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ২১ হাজার ৭০৯। এর মধ্যে এজাহারে ২ হাজার ৭৭৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, বাকিরা অজ্ঞাতনামা। আসামিদের বেশির ভাগই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। এর মধ্যে অসুস্থ, প্রবীণ ও প্রবাসে থাকা ব্যক্তিও রয়েছেন।
১৮টি জেলায় দায়ের হওয়া এসব মামলার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এবং এসব জেলা থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ২২ আগস্ট থেকে গতকাল ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ৪৮টি কর্মসূচিতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ২৫টি স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। আর একই স্থানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশ থাকায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে ১৭টি স্থানে। এসব ঘটনায় যে ৪৬টি মামলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ২৯টির বাদী পুলিশ। বাকি ১৭টি মামলার বাদী আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
বিএনপির অভিযোগ, তাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে রাশ টানতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একের পর এক হামলার পাশাপাশি পুলিশও বাধা দিয়েছে। এরপর এসব ঘটনায় উল্টো বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং গত ৩১ জুলাই ভোলায় পুলিশের গুলিতে বিএনপির দুই নেতার মৃত্যুর প্রতিবাদে ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ধারাবাহিক বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করা হয়।
৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিএনপির এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৩১ জুলাই ভোলার ঘটনা থেকে শুরু করে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় দলের ৩ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মী। এসব ঘটনায় ২০০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। চার হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার জনকে।
বিএনপিরও এখন দোয়া করা উচিত, শেখ হাসিনা যেন ক্ষমতায় আসেন
বললেন চট্টগ্রামের ডিসি
– ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, প্রথম আলো
‘আমি মনে করি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যদি থাকে, তাহলে আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ বলি, বিএনপি বলি, জামায়াত বলি—সবাই নিরাপদ থাকবে। আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতেরও এখন দোয়া করা উচিত, শেখ হাসিনা যেন আবার ক্ষমতায় আসেন।’
গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক সম্প্রীতি সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এ কথা বলেন। আসন্ন দুর্গাপূজা সামনে রেখে এই সম্প্রীতি সভার আয়োজন করা হয়। ওই দিন ছিল জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
বেলা ১১টার দিকে সভা চলাকালে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম সেখানে ঢুকে পড়েন। নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা ডিসি মমিনুরের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এই নির্বাচনে পেয়ারুলসহ তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সবাই হাত তুলে মোনাজাতে অংশ নেন।
মোমবাতি প্রজ্বালনেও হামলা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
এবার বিএনপির মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। গতকাল শনিবার রাত পৌনে আটটার দিকে ঢাকার বনানীতে এ হামলা হয়। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠির আঘাতে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা আহত হয়েছেন।
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে দলের তিন কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় বনানী ও নয়াপল্টনে পৃথক মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি ছিল বিএনপির। বনানীর কর্মসূচি ছিল কাকলী থেকে গুলশান-২ নম্বর গোলচক্কর পর্যন্ত এবং নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এ কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল।
নয়াপল্টনের কর্মসূচিতে কোনো বাধা না এলেও বনানীতে আওয়ামী লীগের মহড়া এবং কুমিল্লায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাকে (বুলু) মেরে রক্তাক্ত করার খবর এলে নেতা–কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক ঘণ্টার কর্মসূচি ১৫ মিনিটের মধ্যেই শেষ করে দেন নেতারা।
বিএনপি ১১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ১৬টি স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরই অংশ ছিল গতকালের মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি।
যুক্তরাজ্যপ্রবাসী দুই ভাইয়ের ‘অপরাধে’ কারাগারে দুজন
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
নোয়াখালী জেলা সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি নূরে আলম চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ছোট ভাই যুক্তরাজ্যপ্রবাসী শামসুল আলমের রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী প্রচার-প্রচারণার সঙ্গে স্থানীয়ভাবে তিনি জড়িত। শামসুল লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকার সম্পাদক।
এদিকে একই ধরনের অভিযোগে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার রাউৎগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিএনপি নেতা আবদুল মোক্তাদীরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কুলাউড়া থানার পুলিশ বলছে, মোক্তাদীরের বড় ভাই যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আবদুর রব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি ও গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে সমালোচনা করে ফেসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এ অবস্থায় ৯ সেপ্টেম্বর মোক্তাদীরকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত মঙ্গলবার রাতে নোয়াখালী শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসা থেকে নূরে আলমকে ধরে নিয়ে যায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। পরদিন বুধবার দুপুরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী শামসুলের রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী প্রচার-প্রচারণার সঙ্গে স্থানীয়ভাবে নূরে আলম জড়িত বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে শামসুলের কাছে বিভিন্ন সময় টাকা পাঠানো হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে নূরে আলমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ছোট বোন সামিনা সুলতানা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শামসুল ২০১৫ সালে একবার দেশে এলেও নোয়াখালী আসেননি। তাঁর সঙ্গে পরিবারের কারও যোগাযোগ নেই। তিনি সেখানে কী করছেন, তা তাঁরা জানেন না।
জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক বকশিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, লন্ডনে থাকা শামসুল যদি সরকারবিরোধী কোনো তৎপরতায় জড়িতও থাকেন, সে জন্য দেশে তাঁর পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করা অযৌক্তিক।
নূরে আলমকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। এক বিবৃতিতে তাঁরা তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়টি তদন্তাধীন উল্লেখ করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সন্দেহের মধ্যে থাকায় নূরে আলমকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার রাউৎগাঁওয়ের ইউপি সদস্য মোক্তাদীরকে পাশের বড়লেখা থানার একটি মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি সম্প্রতি বিলুপ্ত ঘোষিত কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক, মৌলভীবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপির স্থানীয় নেতারা তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, আবদুর রব যুক্তরাজ্য থেকে সরকারবিরোধী বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। এর সঙ্গে মোক্তাদীরের সংশ্লিষ্টতা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর বড়লেখা উপজেলায় যুবদলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলা হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় ১১ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোক্তাদীরকে গ্রেপ্তার দেখাতে আদালতে আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করেন।
রাতে ছাত্রদল নেতার বাড়িতে হামলা-লুট, দিনে অস্ত্রসহ মহড়া
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, প্রথম আলো
“ভুলতা মোড় থেকে পশ্চিমের সরু সড়ক ধরে কিছু দূর গেলে কৈরাবো মোড়। সেখানেই ছাত্রদল নেতা মাসুদুর রহমানের বাড়ি। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, জলাভূমির মাঝখানে একতলা পাকা বাড়ি। ভবনের দেয়ালজুড়ে সাদা রঙে লেখা ‘রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল’। কাছে এগিয়ে যেতেই বাড়ির বাইরে পোড়া বিছানাপত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। নাকে উৎকট পোড়া গন্ধ ধাক্কা দেয়।
বাড়ির প্রধান ফটকে প্রবেশ করতেই এক নারীকে বিলাপ করতে দেখা যায়। তিনি মাসুদুরের ভাবি রাবেয়া খাতুন। তিনি বলেন, শনিবার রাতে শতাধিক অস্ত্রধারী লোক তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায়। তিনি তাঁর ছেলে শহিদুল ইসলাম (১৫) ও মেয়ে আবিদা সুলতানাকে (১০) নিয়ে দরজা বন্ধ করে নিজের ঘরে অবস্থান নেন। হামলাকারীরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে তাঁর ছেলে ও মেয়েকে কেড়ে নিয়ে মারধর করে। মাটিতে শুইয়ে ছেলের গলায় রামদা ধরে হুমকি দেয়।
রাবেয়া চিৎকার করে বলেন, ‘আমি কই ভাইও, আমার পুতেরে মাইরেন না। আপনেরা বাপ লাগেন আমার। আমার পুতের প্রাণ ভিক্ষা দেন। একজন তখন আমার মাথায় পিস্তল ঠেকাইয়া কয় তোরে মাইরা লামু।’ হামলাকারীদের কাউকে চেনেন না উল্লেখ করে রাবেয়া বলেন, ‘আমি, আমার স্বামী কেউ কোনো রাজনীতি করি না। আমি সাধারণ। মাসুদে বিএনপি করে দেইখা এই অবস্থা করসে।’
বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির পাঁচটি কক্ষের হাঁড়ি–পাতিল থেকে শুরু করে আসবাব ভাঙচুর করে স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়েছে। কোথাও কোথাও পুড়ে যাওয়া আসবাব, বইপত্র ও বিছানা পড়ে আছে। ঘরের মেঝেতে আগুন নেভানোর পানি জমে আছে।
মাসুদুর রহমান বলেন, শনিবার রাজধানীতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে অনুসারীদের নিয়ে রাত নয়টায় তিনি ভুলতা এলাকায় মশালমিছিল করেন। মিছিল শেষ করে বাড়ি ফেরার পর রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় বাড়ির প্রধান ফটকের তালা ভেঙে হামলাকারীরা বাড়িতে ঢুকে অন্তত আটটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। হামলাকারীরা তাঁর বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ মা–বাবা, কিশোরী বোন, কিশোর ভাতিজা ও বড় ভাইকে পিটিয়ে আহত করে। মারধরে তাঁর মায়ের হাত ও পায়ের হাড় ভেঙে গেছে।
হামলাকারীরা বাড়িতে থাকা ৭৩ হাজার টাকা, টেলিভিশন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দেড় লাখ টাকা মূল্যের সাবান লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ মাসুদর রহমানের। থানায় অভিযোগ করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হামলার সময় বাড়ির বাইরে একটি গাড়িতে পুলিশ উপস্থিত ছিল। তাদের উপস্থিতিতেই হামলা হয়েছে। তারা সবই জানে। চাইলে তারা তখনই হামলাকারীদের প্রতিহত করতে পারত। এখন উল্টো আমিসহ আমার মা–বাবার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হবে বলে খবর পাচ্ছি।’
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা বলেন, এসব ঘটনা তাঁকে কেউ জানায়নি। তিনি শুনেছেন, ছাত্রদলের মশালমিছিল থেকে কয়েকটি মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়েছে।
অন্য যে যুবদল-ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা দোকান ও রেস্তোরাঁয় লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা হলেন ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শাকিল আহমেদ, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি রনি হাসান, তাঁর মামা মো. শরীফ ও ছাত্রদল কর্মী মো. আলিফ।
শাকিল আহমেদ বলেন, মাসুদুরের বাড়িঘরে হামলার আগে হামলাকারীরা তাঁর বাড়িতে আক্রমণ করেন। বাড়ির প্রধান ফটক ভাঙতে না পেরে তাঁরা বাড়ির সামনে থাকা তাঁর মুদিদোকানের তালা ভেঙে লুটপাট করেন। ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ২০ বস্তা চালসহ অন্তত ৯ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল লুট হয়েছে। পরে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ছাত্রদলের বিভিন্ন নেতা-কর্মীর দোকান ও রেস্তোরাঁ লুট হয়েছে বলে দাবি করেন শাকিল।
৪৭ শতাংশ মামলার বাদী পুলিশ ও ক্ষমতাসীনেরা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, প্রথম আলো
দুই বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা। একজন অতিথি সেই অনুষ্ঠানে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। এ অভিযোগে খাদিজা ও অতিথির বিরুদ্ধে ঢাকার নিউমার্কেট থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন পুলিশের এক উপপরিদর্শক। খাদিজার বিরুদ্ধে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা, গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি এবং সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২৪ দিন ধরে কারাগারে আছেন খাদিজা। এই সময়ে তিনবার আবেদন করেও জামিন পাননি তিনি।
খাদিজার বোন মনিরা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় খাদিজার বয়স ছিল ১৭ বছর। কেবল একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার আসামি হয়েছেন তাঁর বোন। তিনি সেখানে নিজের কোনো মত দেননি। সেই মামলায় পুলিশ খাদিজা ও ওই অতিথির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এরপর গত ২৬ আগস্ট মিরপুর থেকে তাঁর বোনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে খাদিজার বিরুদ্ধে এই মামলা করে। মামলার কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে খাদিজার ভবিষ্যৎ। তাঁদের পরিবারকেও যেতে হচ্ছে দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করছেন বলে অভিযোগ করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। আইনটি প্রণয়ন হওয়ার পর গত চার বছরে এই আইনে ১ হাজার ৭০০–এর বেশি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আইন ও সালিশ কেন্দ্র ৩৫৩টি মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে।
এসব তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৬৫টি মামলার বাদী পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। অর্থাৎ মোট মামলার ৪৭ শতাংশই করেছেন প্রভাবশালীরা। এই আইনে ৩৬ শতাংশ মামলা হয় সরকার, প্রধানমন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও অপপ্রচারের অভিযোগে।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০১৮ সালের এই দিনে (১৯ সেপ্টেম্বর) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করে সরকার। শুরু থেকেই এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মতো এই আইনের অপপ্রয়োগ হবে। এখন তাঁরা বলছেন, তাঁদের সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করার পাশাপাশি ভিন্নমত দমনে এই আইন ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে।
চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশের মাশুল গুনতে হয়েছে সাংবাদিকদের। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে মারা যান। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কারাগার থেকে মুক্তি পান কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর। ফটোসাংবাদিক আবুল কালাম, খুলনা গেজেট ও দৈনিক লোকসমাজ-এর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু সংবাদপত্র নয়, বাংলাদেশে জ্ঞান ও সংস্কৃতিচর্চা করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়ছেন অনেকে। বাউলশিল্পী রীতা দেওয়ানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
জাতীয় সংসদে এই আইনের উত্থাপক ছিলেন তৎকালীন আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এই মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ৯৫ শতাংশ অপপ্রয়োগ হয়েছে ব্যক্তি পর্যায়ে। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে হয়রানি বা হেয় করতেই সেটি প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে কখনো কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর মর্মার্থ বুঝতে না পেরে বা তদন্ত না করে অথবা যেকোনো কারণেই হোক কিছু মামলায় আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে। অপরাধীর শাস্তি হওয়ার কথা থাকলেও নিরীহ ব্যক্তি ভুক্তভোগী হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ক্ষেত্রে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রের ডিজিটাল নিরাপত্তা এখন যতটুকু আছে, এই আইন না থাকলে এর ‘ছিটেফোঁটাও’ থাকত না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনের অপপ্রয়োগ
মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন আর্টিকেল-১৯ বলছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫১৪টি মামলার তথ্য-উপাত্ত তারা সংরক্ষণ করেছে। এর মধ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৯৩টি। অর্থাৎ ১৮ শতাংশ মামলাই হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় ৯৭৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। অর্থাৎ ১৯ শতাংশ আসামিই হচ্ছেন সাংবাদিক।
এমনই একজন ভুক্তভোগী ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম। ২০২০ সালের ১১ মার্চ ঢাকার চকবাজার থেকে নিখোঁজের ৫৩ দিন পর যশোরের বেনাপোলের সীমান্তে তাঁর খোঁজ মেলে। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ১০ মাস কারাভোগের পর উচ্চ আদালতে রিট করে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে জামিন পান তিনি। তিনটি মামলার বাদীর মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং দুজন মহিলা লীগের নেত্রী।
শফিকুল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এখনো গুম হয়ে যাওয়ার ভয় পান। ভয়ে কেউ তাঁকে চাকরি দিতে চায় না।
আর্টিকেল-১৯–এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল প্রথম আলোকে বলেন, ভয় দেখাতে এই আইন করা হয়েছে, বিশেষ করে সাংবাদিকদের জন্য। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ যেন কোনো কথা না বলে।
এই আইনের ভয়াবহ অপপ্রয়োগ হচ্ছে জানিয়ে সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, কখনো রাজনৈতিক কারণে, কখনো প্রশাসনিক কারণে এবং কখনো সাংবাদিকদের হেনস্তা করার জন্য এই আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। যতজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই আইনের প্রয়োগ করা হয়েছে, একটিও যথার্থ সাংবাদিকতার কারণে প্রয়োগ করা হয়নি। শুধু প্রতিহিংসার কারণে আইনের অপপ্রয়োগ করা হয়েছে।
বিরোধী দমনে আইনের প্রয়োগ
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। সেই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গত জুলাইয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল মগনামা ইউপি ভবনে। এ কারণে আওয়ামী লীগ নেতা ও মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুচ চৌধুরীকেও সহযোগিতার অভিযোগের আসামি করা হয়। এই মামলার বাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুচ চৌধুরী বলেন, ওই মামলাটি যেদিন হয়, তার ছয় দিন পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ছিল। সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে আবুল কাশেমের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম আমি। বিএনপির অনুষ্ঠানকে অজুহাত করে তাঁকে (ইউনুচ) সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে দূরে রাখতে আবুল কাশেম এই মামলা করেন।
মামলার কারণে দুঃসহ জীবন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় ভুক্তভোগী ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের সমালোচনা করার অভিযোগে ২০২০ সালের ১৭ জুন তাঁর বিরুদ্ধে রাজশাহীর মতিহার থানায় মামলা করেন আওয়ামীপন্থী এক আইনজীবী। ওই দিন রাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৭১ দিন কারাভোগের পর জামিন পান তিনি। ২০২১ সালের নভেম্বরে এই মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেন উচ্চ আদালত।
কাজী জাহিদুর প্রথম আলোকে বলেন, এই মিথ্যা মামলার কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সামাজিক মর্যাদা চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। সব মিলে একটি দুঃসহ সময়ের মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে। কারণ, কাউকে তো আর বোঝানো যেত না এটা মিথ্যা মামলা।
সুশাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ এক গবেষণায় দেখিয়েছে, সবচেয়ে বেশি মামলা হয় ওই আইনের ৩৯ ধারায়। এই ধারাটি মূলত মানহানির তথ্য প্রচারবিষয়ক। অভিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা বিবেচনায় এই আইনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ২৫ ধারা। এই ধারা হচ্ছে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য–উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ ইত্যাদি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী জাহিদুরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার একটি ধারা ছিল ২৫।
ধর্মীয় বিষয়ে মন্তব্য করেও অনেকেই এই মামলার আসামি হচ্ছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই আইনের ১০ শতাংশ মামলা হয় ধর্মীয় বিষয়ে মন্তব্য করার কারণে। তবে অনেক সময় ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে ধর্মীয় উসকানি ছড়িয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার অভিযোগও রয়েছে।
সুরক্ষার চেয়ে নজরদারির সুযোগ করে দেবে বেশি
২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
সরকার ২০১৯ সালে উপাত্ত সুরক্ষায় একটি আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণের মতামত নিতে প্রথম চলতি বছরের মার্চে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২২’ নামে আইনের খসড়া ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করে। এর মধ্যে খসড়ার দুটি সংশোধনী প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া আইন নিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মতামত দেওয়ার সুযোগ ছিল।
১৬ জুলাই পর্যন্ত সংশোধিত খসড়ার ওপর জাতিসংঘের বাংলাদেশ দপ্তর গত ১০ আগস্ট সরকারকে ১০টি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। বিশ্ব সংস্থাটির অন্যান্য অঙ্গ সংস্থাও নিজেদের বিষয়গুলো নিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
জাতিসংঘের ১০ পর্যবেক্ষণ—
সংজ্ঞা
খসড়ায় ‘সংবেদনশীল উপাত্ত’-এর সংজ্ঞা খুবই সংকীর্ণ। সংজ্ঞায় জাতি, বর্ণ গোষ্ঠী, রাজনৈতিক মতামত, ট্রেড ইউনিয়নে সদস্য পদ, ধর্মীয় বিশ্বাস বা অন্যান্য বিশ্বাস, যৌনজীবন, যৌনতা সম্পর্কিত তথ্যের মতো বিষয় নেই। ব্যক্তিগত উপাত্তের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত’ হিসেবে যেগুলোকে বিবেচনা করা হয়, তার সঙ্গে এই খসড়া সংগতিপূর্ণ নয়।
উপাত্ত সুরক্ষা নীতি
খসড়ার ৫ ধারায় বর্ণিত উপাত্ত সুরক্ষার নীতি যথেষ্ট নয়। এ জন্য শক্তিশালী নীতিমালার সুপারিশ করে উদাহরণ হিসেবে জাতিসংঘ কাউন্সিল অব ইউরোপের ‘কনভেনশন ১০৮+’ নমুনা হিসেবে তুলে ধরে।
উপাত্ত মজুত ও স্থানান্তর
খসড়া আইনের দশম অধ্যায়ে উপাত্ত মজুত ও স্থানান্তরসংক্রান্ত বিধানের ৪২ ও ৪৩ ধারা (সংশোধিত খসড়ার ৪৪ ও ৪৫ ধারা) মানবাধিকারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি নজরদারির ঝুঁকি বাড়াবে। উপাত্ত স্থানান্তরের ধারা উন্মুক্ত ইন্টারনেটের বৈশ্বিক নীতির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।
খসড়া আইনে তিন ধরনের উপাত্ত স্থানীয়করণ বা সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার কোনো উপাত্তকে শ্রেণিবদ্ধ বলে ঘোষণা দিলে তা অনুমোদন ছাড়া স্থানান্তর করা যাবে না।
জাতিসংঘ বলেছে, এই ধারা বলে ব্যবহারকারীর উপাত্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখার অবাধ সুযোগ থাকবে। এই ধারা নাগরিকদের তথ্যের ওপর সরকারের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াবে। এ ছাড়া বৈশ্বিক তথ্য বিনিময়ে বাধা তৈরি করবে।
জাতিসংঘ ফ্রিডম হাউসের ২০২০ সালের প্রতিবেদনের সূত্র দিয়ে বলেছে, স্থানীয়ভাবে উপাত্ত সংরক্ষণ সুপরিচিত অধিকারকর্মী, সরকারের সমালোচক এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করতে ব্যবহার করা হয়। কয়েক বছর ধরে সরকারের সমালোচক, সাংবাদিক, অধিকার ও রাজনৈতিক কর্মী, আইনজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে উপাত্ত সংরক্ষণ ধারা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কারণ, ব্যবহারকারী সৃষ্ট উপাত্তে নজরদারি থাকলে ব্যক্তির বিশ্বাস, যৌন সম্পর্কিত তথ্য, সামাজিক বৈষম্য নিয়ে সমালোচনা, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচিতিসহ ব্যক্তিগত অনেক গোপনীয় তথ্য হুমকির মুখে পড়বে। এতে মানুষের মধ্যে ভয় ও স্বনিয়ন্ত্রণ বাড়বে।
অব্যাহতির বিধান
প্রস্তাবিত আইনটির দশম ধারায় বলা আছে, সরকার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বা অপরাধ প্রতিরোধ, শনাক্ত ও তদন্তের উদ্দেশ্যে উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারবে। এসব বিষয়ে ৩৩ নম্বর ধারায় আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এই ধারা বলবৎ হলে বাংলাদেশের ডেটা সেন্টার ও সার্ভারে সংরক্ষিত উপাত্ত নজরদারি আওতায় আসবে। অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলোর গোপন তথ্য প্রকাশে চাপ সৃষ্টি হবে। এই ধারা গণতান্ত্রিক শাসনকে দুর্বল করতে পারে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি
খসড়ার ১৩তম অধ্যায় অনুযায়ী, কোনো অভিযোগের অপরাধ দেওয়ানি না ফৌজদারি হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাহী বিভাগ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনকানুন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, এমন প্রতিষ্ঠান, মালিকানার অংশীদার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিচালক, কর্মচারী বা প্রতিনিধিদেরও দায়বদ্ধ করা যাবে।
এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি ধারায় মামলা শুধু অযৌক্তিকই নয়, এতে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে মামলাজট আরও বাড়বে। এতে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। কারণ, খসড়া আইনে এমন কোনো বিধান নেই, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তদন্ত শেষ ও আদালতে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা আছে।
ফৌজদারি কাঠামো বাদ দিয়ে প্রশাসনিক জরিমানার বিধানের পক্ষে সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।
প্রবাসীদের উপাত্ত সংরক্ষণ ও বিদেশি কোম্পানি প্রসঙ্গ
খসড়ার ৪ নম্বর ধারায় প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের উপাত্ত সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবহার, বিতরণ ও ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান না করে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এই দেশে কোনো ব্যবসার প্রয়োজনে উপাত্ত প্রক্রিয়া করে, তাদের ক্ষেত্রেও এই আইন প্রযোজ্য হবে।
এই ধারাকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে জাতিসংঘ বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশনও (জিডিপিআর) এত ব্যাপকভাবে আইন প্রণয়ন করেনি।
প্রবাসী কারও উপাত্ত নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আইন প্রয়োগে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। এ ছাড়া খসড়ায় বলা আছে, সংবেদনশীল, ব্যবহারকারীর সৃষ্ট এবং শ্রেণিবদ্ধ উপাত্ত স্থানীয়ভাবে মজুত করতে হবে, যা বিদেশি আদালত, আইন প্রয়োগকারীর সংস্থারও এখতিয়ারের বাইরে থাকবে। এ ধরনের বিধান বিদেশি আদালত, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সার্বভৌমত্ব এবং এখতিয়ারকে সীমিত করে।
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ–সংক্রান্ত ধারার কারণে অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে।
ক্ষমতার অপব্যবহারে আশঙ্কা
খসড়া আইনের ধারা, সময়ে সময়ে বাধ্যতামূলক নির্দেশ, আচরণবিধি ও আদেশ জারির মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতা বা জবাবদিহি ছাড়াই আইনের বিশদ পরিধি ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়াবে। জাতিসংঘ বলেছে, নতুন এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি থেকে আলাদা হতে হবে।
আইনের উদ্দেশ্য
উপাত্ত সুরক্ষাই আইনের উদ্দেশ্য হতে হবে—নিয়ন্ত্রণ নয়। খসড়ায় এমন কিছু শব্দ আছে, যা সুরক্ষার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণকেই নির্দেশ করে।
সার্বভৌম ডিজিটাল অ্যাজেন্ডা নিয়ে সতর্কতা
সার্বভৌম ডিজিটাল অ্যাজেন্ডা ও উপাত্ত স্থানীয়করণের বিষয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। তারা বলেছে, এ ধরনের আইন অনেক দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ডেটা স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতায় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো প্রথমে কঠোর নীতিতে গিয়েছিল। পরে অর্থনৈতিক উদ্বেগের কারণে তারাও সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। আইনটি সংসদে পেশ করার আগে এর অর্থনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন করা জরুরি।
স্বাধীন নজরদারি ব্যবস্থা
জাতিসংঘ বলেছে, একটি শক্তিশালী প্রায়োগিক কাঠামো ও স্বাধীন কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোনো উপাত্তই সুরক্ষিত থাকবে না।
জাতিসংঘ বলেছে, সরকারের তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে যেন উপাত্ত সুরক্ষা আইন কোনোভাবে সাংঘর্ষিক না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয়ভাবে উপাত্ত সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হলে বাংলাদেশে বড় ধরনের ডেটা সেন্টারের প্রয়োজন পড়বে। সর্বোচ্চ মানের ডেটা সেন্টারের জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রচুর বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজন পড়বে। এটি বাংলাদেশকে আরও চাপে ফেলবে।
মুন্সিগঞ্জে যুবদল কর্মীর মৃত্যু
মেডিকেল নথিতে গুলি, পুলিশ বলছে ইটের আঘাত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের সময় গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে যুবদল কর্মী শহিদুল ইসলাম ওরফে শাওনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপারের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান আল মামুন এ দাবি করেন।
অথচ আহত অবস্থায় শহিদুলকে হাসপাতালে নেওয়ার পর বলা হয়েছিল, গুলির কারণে তাঁর মস্তিষ্কে ক্ষত হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শহিদুলকে ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, আইসিইউর নিবন্ধন খাতায় লেখা হয়েছিল, ‘ব্রেন ইনজুরি-গান শুট (গুলিতে মস্তিষ্কে ক্ষত)।’ পরের দিন শহিদুলের মৃত্যুর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া মেডিকেল সনদে মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘গুলির কারণে মস্তিষ্কে গুরুতর ক্ষত।’
শহিদুলের মৃত্যুর ছয় দিন পর গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান আল মামুন বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর পুলিশের ওপর বিএনপির নেতা-কর্মীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে যুবদল কর্মী শাওন ও তাঁর সঙ্গে থাকা বিএনপির অপর এক কর্মীর পেছন থেকে ছোড়া ঢিলে আঘাত পান। তাঁকে আত্মীয়স্বজন চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। পরদিন রাত নয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
তবে নিহত শহিদুলের মা লিপি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা বলছে আমার ছেলে ইটের আঘাতে মারা গেছে, তারা ওই ভিডিওটি দেখুক, যেখানে গুলির শব্দ হলো, ধোঁয়াও বের হলো, তখন আমার ছেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। হাসপাতালের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, গুলির আঘাতে শাওন মারা গেছে। অথচ তারা সেই রিপোর্টকে মিথ্যা বলছে।’
১১ বছরে ১১৯ গুমের অভিযোগ এসেছে : মানবাধিকার কমিশন
২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, আরটিভি অনলাইন
২০১২ থেকে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ ১১ বছরে ১১৯টি গুমের অভিযোগ এসেছে বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান।
নাছিমা বেগম বলেন, ১১৯টি গুমের অভিযোগের মধ্যে ফেরত এসেছে ২৮ জন এবং ৩৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে ৬২টি সরাসরি কমিশনে করা হয়েছে। ৪৮টি বিভিন্ন সংগঠন এবং ৯টি অভিযোগ আর গণমাধ্যমে দেখে নেওয়া হয়েছে।
ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার ছাত্রদল
২৭ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার বিকেলে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এই হামলার শিকার হন। এ হামলায় ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি মো. খোরশেদ আলম সোহেল, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
ছাত্রদলের অভিযোগ, এএফ রহমান হল ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুনের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ।
আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রায় ইউএনও, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে গত বুধবার বিকেলে শোভাযাত্রা বের করেন আওয়ামী লীগ এবং দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী। আওয়ামী লীগের এই শোভাযাত্রায় থাকা একটি পিকআপ ভ্যানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তবে তাঁরা দাবি করেছেন, দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেননি। আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের কর্মসূচি থাকায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি পিকআপে একসঙ্গে ছিলেন।
জাতীয় নির্বাচনে ‘নিরাপত্তা সামগ্রী’ কিনতে ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পুলিশ
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
‘নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা বজায় রাখতে’ চলতি অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত ১,২২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পুলিশ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের পাঠানো একটি সাম্প্রতিক চিঠি অনুসারে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যয় হবে এ অর্থ।
পুলিশের দেওয়া পণ্যের তালিকায় রয়েছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ, প্রয়োজনীয় মোটরযান ও জ্বালানী, গোয়েন্দা, অপারেশনাল ও নিরাপত্তা সামগ্রী।
পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, রাজনৈতিক কর্মসূচি বৃদ্ধির ফলে পুলিশের মোবিলিটি বৃদ্ধি, নবসৃষ্ট পদের বিপরীতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন হওয়া এবং মোটরযান বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া, অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দের শতভাগ খরচের অনুমতিসহ চলতি অর্থবছর অতিরিক্ত ২০৪.৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
পুলিশের প্রস্তাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনতে অতিরিক্ত ১৫৮ কোটি টাকা, মোটরযান খাতে ২২৬ কোটি টাকা এবং নিরাপত্তা সামগ্রী কিনতে ৭৭.৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া, অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি খাতে অতিরিক্ত ৫৪০ কোটি টাকা, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি খাতে ১২ কোটি টাকা, কম্পিউটার সফটওয়্যার খাতে ৭ কোটি টাকা এবং কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক খাতে ৪৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে অংশ নিতে ইতিবাচক ইসলামি দলগুলো
০১ অক্টোবর ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দেশের প্রধান কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল। সংসদীয় আসনের সংখ্যা হিসাবে সবগুলোতে না পারলেও সুনির্দিষ্ট আসনকেন্দ্রিক প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে এসব দলের।
কিছু দলের ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে দ্বৈত মত রয়েছে। এসব দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দুই ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে ভাঙনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আবার কিছু দল ‘সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙা হলে এবং ক্ষমতাসীনরা দুর্বল হলে’ পক্ষ ত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাবে।
শনিবার (১ অক্টোবর) ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিসহ কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সাংগঠনিক প্রস্তুতি, প্রার্থী বাছাই এবং সর্বোপরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কী কী সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে, এ নিয়েও রাজনৈতিক কৌশল প্রণয়ন করছেন নীতিনির্ধারণী নেতারা।
বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা বানাচ্ছে পুলিশ
০১ অক্টোবর, ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা তাদের অধীনস্থ সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে বিএনপি-জামায়াত ও অনান্য সরকার বিরোধী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক, অর্থ যোগানদাতাদের তালিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। এমনকি তালিকায় বিএনপি নেতাদের নাম-ঠিকানার পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সারা দেশে এবার বিএনপি, জামায়াত ও বিরোধীদলের কর্মসূচি সফল করতে কাজ করা ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অর্থযোগানদাতা, জনবল সংগঠক ও সহযোগীদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।
গত ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (স্পেশাল ব্রাঞ্চ-এসবি) রাজনৈতিক শাখা থেকে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার ও মহানগরের পুলিশ কমিশনারের কাছে বিএনপিসহ অনান্য বিরোধীদলের কর্মসূচি সফল করতে যারা কাজ করছে তাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এরকম নির্দেশনার আলোকে অনেক জেলার পুলিশ সুপাররা জেলার সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে বিএনপি-জামায়াত ও অনান্য সরকার বিরোধী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক, অর্থ যোগানদাতাদের তালিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।
সরকারি ২৯ প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা
০৪ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করেছে সরকার। তথ্য পরিকাঠামো হলো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক, যেখানে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।
গত ২১ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। আইসিটি বিভাগ তাদের ওয়েবসাইটে ২৬ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ধারা ১৫ অনুযায়ী সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করা হলো।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী, এ আইন দিয়ে সরকার কোনো কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক বা তথ্য পরিকাঠামোকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড, সেতু বিভাগ, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জাতীয় ডেটা সেন্টার (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (নির্বাচন কমিশন সচিবালয়), সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইমিগ্রেশন পুলিশ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি বাংলাদেশ, রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় (জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করলে সাত বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। বেআইনিভাবে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন বা ক্ষতির চেষ্টা করলে ১৪ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডই দেওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, রাজবাড়ীতে মহিলা দল নেত্রী গ্রেপ্তার
০৫ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে রাজবাড়ীতে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে শহরের ৩ নম্বর বেড়াডাঙ্গা এলাকা থেকে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার নারীর নাম সোনিয়া আক্তার ওরফে স্মৃতি। তিনি রাজবাড়ী ব্লাড ডোনার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জেলা মহিলা দলের সদস্য। সোনিয়া শহরের ৩ নম্বর বেড়াডাঙ্গা এলাকায় বসবাস করেন। তাঁর স্বামী প্রবাসী।
বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুত আমি: শেখ হাসিনা
৬ অক্টোবর, ২০২২, নিউজ বাংলা টুয়েন্টিফোর
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের দায়িত্ব শেষ হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন এখন তিনি বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুত।
আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলনে একজন কাউন্সিলরও যদি আপত্তি তোলেন তিনি আর নেতৃত্বে থাকবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে গণভবনে বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় আমরা একটানা ছিলাম বলে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আমার লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী, ২০২১ সালের দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং সুবর্ণজয়ন্তীতে কিন্তু আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এখন বিদায় নেয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।’
পরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলর যদি বলে যে আমাকে চায় না, আমি কোনোদিনও থাকব না। এটা যেদিন থেকে আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করেছিল, তখন থেকে এই শর্তটা মেনে যাচ্ছি।’
মাঠ প্রশাসন থেকে ধাক্কা খেল নির্বাচন কমিশন
০৯ অক্টোবর ২২, সমকাল
জাতীয় নির্বাচনের এক বছর আগে ‘নিরপেক্ষ আচরণের’ বার্তা দিতে মাঠ প্রশাসনকে ঢাকায় ডেকেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল তাঁর বক্তব্যে বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন। তবে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে ইসির শীর্ষ কর্তাদের প্রথম যাত্রা সুখকর হয়নি।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমানের বক্তব্যের জের ধরে মাঠ প্রশাসনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উল্টো বার্তা পেয়েছেন সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা। দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ছিল মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে বর্তমান কমিশনের প্রথম বৈঠক। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে জনমনে সৃষ্ট আস্থাহীনতার জন্য ডিসি-এসপিদের ওপর সরাসরি দায় চাপাতে গিয়েছিলেন সাবেক এই আমলা। তবে সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে বক্তব্য শেষ না করেই নিজ আসনে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। মাঠ প্রশাসনের এই আচরণে অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় তাঁর সহকর্মীরাও, অনুষ্ঠানের বাকি সময়টা কাটিয়েছেন বেশ অস্বস্তিতে। পরবর্তী সময়ে অন্য কমিশনারদের বক্তব্যেও প্রসঙ্গটি সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
.গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ বন্ধ
১২ অক্টোবর ২২, সমকাল
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোট পর্যবেক্ষণের মনিটরিং সেলে বসে উপনির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে দুপুর সোয়া ২টার দিকে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এর আগে সিইসি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, উপনির্বাচন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তিনি বলেন, ‘আইন ভঙ্গ করে গোপন কক্ষে প্রবেশ করে ভোট দিয়ে দিতে আমরা স্বচক্ষে দেখেছি।’
প্রিসাইডিং অফিসারদের বাধ্য করা হয়েছে নির্বাচনকে অবাধ-সুষ্ঠু ঘোষণায়
১৫ অক্টোবর, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হলে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত
গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে গত বুধবারের ভোটগ্রহণ অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে মর্মে লিখিত বক্তব্য দিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন প্রিসাইডিং অফিসার।
অনেকে দাবি করেছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা তাদের বিবৃতিতে মোট ভোটের পরিসংখ্যান লিখতে বাধ্য করেছেন।
নানা অনিয়মের মধ্যে ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাওয়ায় এই আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই অনিয়মের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের দায়ী করে কমিশন।
বিএনপির সমাবেশের আগে ময়মনসিংহে বাস বন্ধ, ভোগান্তি
১৫ অক্টোবর, ২০২২, নিউজবাংলা টুয়েন্টিফোর
নগরীর পাটগুদাম বাসটার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা সামাদ মিয়া নামের একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে সড়কপথে ময়মনসিংহকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।’
ময়মনসিংহে বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে গণপরিবহন।
শনিবার দুপুরের ওই সমাবেশ ঘিরে শুক্রবার রাত থেকে জেলার ভেতর ও জেলা থেকে বাইরে পরিবহন যাওয়া-আসা বন্ধ আছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
মোটরযান মালিক বাস মালিক সমিতি জানিয়েছে, নিরাপত্তার শঙ্কায় গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের কর্মসূচিতে জনসমাগম ঠেকাতেই সরকারের নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত। তবে পরিবহন আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, এতে তাদের হাত নেই।
জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গণপরিবহনেরও নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে। কারণ সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘাত না হলে সড়কে থাকা গণপরিবহন ভাঙচুর হতে পারে। এ জন্য শনিবার ময়মনসিংহে বাস, ট্রাক অটোরিকশার চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
তথ্য সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসর
প্রশাসনে দোটানায় থাকা কর্মকর্তাদের কঠোর বার্তা
১৭ অক্টোবর ২২, সমকাল
স্বাভাবিক অবসরের এক বছরের কম সময়ের আগে তথ্য সচিব মো. মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে সরকার। তিনি দেড় বছরের মতো তথ্য সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে নানা জল্পনা চলে, কিন্তু সুস্পষ্ট কারণ জানা যাচ্ছিল না। দায়িত্বশীল একটি সূত্র থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এর মাধ্যমে শুধু তথ্য সচিবকে নয়, প্রশাসনে দোটানায় থাকা সব কর্মকর্তার জন্যই বড় বার্তা দেওয়া হলো।
গত বছর ৩১ মে তথ্য সচিব হিসেবে যোগদান করেন মকবুল হোসেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের দশম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ১৯৯১ সালে চাকরিতে যোগ দেন। তাঁর চাকরির মেয়াদ আরও বছরখানেক ছিল। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দ্বিতীয়বারের মতো একজন তথ্য সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলো। ২০০৯ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে হেয় করে কবিতা লেখার অভিযোগে তৎকালীন তথ্য সচিব আ ত ম ফজলুল করিমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছিল সরকার। তিনি লেখক মহলে আবু করিম নামে পরিচিত ছিলেন। মকবুল হোসেনের আগের তথ্য সচিবও বেশিদিন দায়িত্বে ছিলেন না।
আগের রাতে ভোটারদের দিলেন জাল টাকা, জেতার পর দেখালেন পুলিশের ভয়
১৮ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
আগের রাতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকার বান্ডিল হাতে তুলে দেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাবে—এই শঙ্কার কথা বলে টাকাগুলো ভোটের আগে খরচ করতে নিষেধ করেন। নির্বাচনে জিতে যান তিনি।
ভোট শেষে ভোটাররা বুঝতে পারেন, বান্ডিলে করে প্রার্থী যে টাকা দিয়েছিলেন সেগুলো মূলত জাল টাকার নোট। বিষয়টি প্রার্থীকে জানালে তিনি উল্টো জাল টাকা সংরক্ষণ করায় ভোটারকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী প্রার্থী মো. সুমন সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন অন্তত সাতজন ইউপি সদস্য। গতকাল সোমবার ওই জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়।
ভোট দেওয়ার বিপরীতে টাকা নেওয়া এই ইউপি সদস্যদের কেউ নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, গত রোববার রাতে প্রার্থীর কাছ থেকে টাকার বান্ডিল নেওয়ার পর গতকাল সোমবার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া মডেল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে সুমনকে ভোট দেন তাঁরা। এরপর প্রার্থীর দেওয়া টাকায় কেনাকাটা করতে বেরিয়ে দেখেন টাকাগুলো সব জাল নোট। এ কথা প্রার্থীকে জানালে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, জাল নোট যার কাছে পাওয়া যাবে, তাঁকেই পাকড়াও করবে পুলিশ।
বিরোধী দল আটকাতে জনগণকে জিম্মি
২০ অক্টোবর ২২, সমকাল
বিরোধী দলের কর্মসূচিতে জনসমাগম ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধের রাজনীতির মূল্য দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঠেকাতে মালিকদের দিয়ে গণপরিবহন ‘বন্ধ করাত’ বিএনপি। অঘোষিত হরতালের এই কৌশল এখন বিএনপির বিরুদ্ধে ‘প্রয়োগ’ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এতে সমাবেশে জনসমাগম যতটা না কমে, তার বহু গুণ ভোগান্তি হয় সাধারণ মানুষের।
ময়মনসিংহের মতো খুলনায়ও বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে বাসসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী যানবাহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা। ২২ অক্টোবরের গণসমাবেশের আগের দিন, মানে আগামীকাল শুক্রবার থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সহসভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন। গত মঙ্গলবার রাতে মালিক-শ্রমিকদের যৌথ সভার পর তিনি বলেছেন, শুক্র ও শনিবার খুলনা থেকে বাস ছাড়বে না। বাইরের জেলা থেকেও বাস ঢুকবে না।
বিদ্যুৎ-জ্বালানী-খনিজসম্পদ
বিদ্যুৎ উৎপাদকেরা ইচ্ছেমতো পাবেন ব্যাংকঋণ
২৭ জুলাই, ২০২২, প্রথম আলো
বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর ব্যাংকঋণের সীমা তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে করে বিদ্যুৎ উৎপাদকেরা এখন ব্যাংক থেকে তাঁদের ইচ্ছেমতো ঋণ নিতে পারবেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ২৬খ (১) অনুযায়ী আগে একটি কোম্পানিকে ব্যাংকের সংরক্ষিত মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ প্রদানের সুযোগ ছিল না। সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে বাংলাদেশ ব্যাংকঋণের সীমা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল মঙ্গলবার এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে অর্থ সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখার লক্ষ্যে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির জন্য তাদের প্রয়োজনীয় ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। এ জন্য আগামী ছয় মাসের জন্য ব্যাংকঋণ পেতে সংরক্ষিত মূলধনের ২৫ শতাংশ ঋণ দেওয়ার হিসাবটি কার্যকর হবে না।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪ নম্বর আইনের ১২১ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বিদ্যুৎ উৎপাদকদের এই সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী একক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে কোনো ব্যাংকঋণ দিতে গেলে অনুমোদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো অঙ্কের ঋণ অনুমোদন করবে। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদকেরা যত ইচ্ছা ঋণ পাবেন।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদকদের ঋণ অনুমোদনের কোনো নথি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এলে তা ইতিবাচকভাবে দেখা হবে। তাঁরা যেন পর্যাপ্ত ঋণ নিয়ে বিদ্যুৎ খাত সচল রাখতে পারেন, সে জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ঋণসীমা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটির সভাপতি ইমরান করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদকদের জন্য ঋণের কোনো সীমা ছিল না। এরপর দেশের বিদ্যুৎ খাত স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় নতুন বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে সরকার ঋণের সীমা বেঁধে দেয়। সরকারের কাছেও ব্যবসায়ীদের বড় অঙ্কের টাকা পাওনা রয়েছে। তাতে এ খাতের উৎপাদকেরা আবার তারল্য–সংকটে ভুগছে। এ জন্য আমরা সরকারের কাছে ঋণসীমা তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলাম।’
দিনাজপুরের লোহার খনির সমীক্ষায় চুক্তি সই
২৫ জুলাই ২২, সমকাল
দিনাজপুরের হাকিমহাটের আলীহাট লোহার খনির প্রকৃত অবস্থা জানতে সমীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাই প্রাথমিক সমীক্ষার জন্য জার্মান কোম্পানি ডিএমটি কনসাল্টিংয়ের সঙ্গে সোমবার চুক্তি সই করেছে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি (বিসিএমসিএল)। সমীক্ষার ফল ইতিবাচক হলে পরবর্তীতে খনির উন্নয়নের জন্য বিশদ সমীক্ষা চালানো হবে।
প্রিলিমিনারি স্টাডি ফর ডেভেলপমেন্ট অব আলীহাট আয়রন ওর ডিপোজিট শীর্ষক চুক্তিতে সই করেন বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিংয়ের কোম্পানি সচিব উম্মে তাজমেরী সেলিনা আখতার এবং ডিএমটি কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ভেসিলিস রোবস।
রাজধানীর কাওরান বাজারে পেট্রোবাংলার বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ (জিএসবি) এই লৌহ আকরিক সমৃদ্ধ শিলাখনি আবিস্কার করে। প্রাথমিকভাবে পাঁচ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৬২৫ মিলিয়ন টন লোহার আকরিক মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। খনির গভীরতা ৪২৬ থেকে ৫৪৮ মিটার। শিলা স্তরে লৌহ আকরিকের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ। এই শিলা স্তরগুলোর গড় পুরুত্ব ৬৮ মিটার। পরবর্তীতে এই খনির সম ফিজিবিলিটি স্টাডি পরিচালনার দায়িত্ব বিসিএমসিএলকে প্রদান করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বিসিএমসিএল ৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় একটি প্রাথমিক সমীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সমীক্ষায় লোহার আকরিকের মজুদ যথেষ্ট পাওয়া গেলে খনি উন্নয়নের জন্য সার্বিক জরিপ চালানো হবে।
জ্বালানি তেলের কৌশলগত মজুদ সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি দেশে
২৮ জুলাই, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশে জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা প্রায় ১৩ লাখ টন। এ পরিমাণ জ্বালানি তেল দিয়ে ৪০-৪৫ দিনের মতো চাহিদা মেটানো সম্ভব। এর মধ্যে অর্ধেকই বিপিসির অধীন বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিপণনের উদ্দেশ্যে জমাকৃত। সেখানে কৌশলগতভাবে সংরক্ষণের সুযোগ কম। মজুদ সক্ষমতা কম হওয়ায় প্রতিনিয়ত জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি)। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেলে ভারি হয়ে ওঠে বিপিসির লোকসানের বোঝা। যদিও দাম পড়তির দিকে থাকা অবস্থায় পরিস্থিতির সুযোগ নেয়া সম্ভব হয় না মজুদ সক্ষমতার অভাবে।.. ..
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থাগুলোর প্রমিত মান অনুযায়ী, স্বাভাবিক অবস্থায়ও আমদানিনির্ভর দেশগুলোর আপত্কালীন ব্যবহারের জন্য অন্তত ৯০ দিনের জ্বালানি তেলের সংস্থান রাখা উচিত। যদিও দেশের মোট মজুদ সক্ষমতা এর অর্ধেক। আবার বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, জ্বালানি তেলের এখনকার যে মজুদ আছে, তা দিয়ে আরো ৩২ দিন চালানো সম্ভব। এ অবস্থায় বিশ্ববাজারের মূল্য পরিস্থিতির পাশাপাশি আমদানি এলসি জটিলতাও বড় আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। কৌশলগত মজুদ সক্ষমতা গড়ে তোলা গেলে বাংলাদেশ এ পরিস্থিতিও খুব সহজেই মোকাবেলা করতে পারত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এলএনজি কিনতে এক বছরে ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা
০১ আগস্ট, ২০২২, বণিক বার্তা
স্থানীয় গ্যাসের আবিষ্কৃত মজুদ কমে আসছে। গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা মেটানো হচ্ছে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি)। বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যটির ঊর্ধ্বমুখিতায় প্রতি বছর বাড়ছে আমদানি ব্যয়। গ্যাস অনুসন্ধানে অর্থের জোগান না হলেও আমদানিতে বিপুল ব্যয় পেট্রোবাংলার ওপর আর্থিক চাপ বাড়িয়ে তুলছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এলএনজি আমদানি বাবদ সংস্থাটির খরচ হয়েছে ৪৬০ কোটি ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ৪০ হাজার কোটির টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময় হার ৮৬.৯৬ টাকা ধরে)।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) সম্প্রতি বৈশ্বিক এলএনজির বাজারে বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পেট্রোবাংলার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববাজারে এলএনজির আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত অর্থবছরে সংস্থাটি পণ্য আমদানি বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে। গত ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে আনুমানিক হিসাবে এ ব্যয় ৪৬০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের অর্থবছরে এলএনজি আমদানি ব্যয়ের দ্বিগুণ। জ্বালানি বিভাগের হিসাব মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এলএনজি আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩৮ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা।
১২ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ গেছে ৮৬ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা
৩ আগস্ট ২০২২, শেয়ার বিজ
বিদ্যুৎ সংকট মেটাতে ২০০৯ সাল থেকেই বেসরকারি খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। প্রথমে তিন ও পাঁচ বছরের জন্য বেশকিছু রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হলেও পরে এগুলোর মেয়াদ বেড়েছে দফায় দফায়। পাশাপাশি ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) নামে বড় ও মাঝারি বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেরও অনুমোদন দেয় সরকার। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে।
যদিও এসব কেন্দ্রের বড় অংশই বসে থাকছে। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) প্রতি বছর মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে। সংস্থাটির হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০-১১ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ১২ বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক যুগে প্রায় তিনটি পদ্মা সেতুর নির্মাণব্যয়ের সমান অর্থ গেছে এ খাতে।
গত ১২ বছরে দেশে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে ৩০ হাজার ৩৫৭ কোটি ২০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এজন্য পিডিবিকে বিল পরিশোধ করতে হয় দুই লাখ ৩২ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গেছে ৩৭ দশমিক ২৩ শতাংশ।
পিডিবির তথ্যমতে, গত ১৪ বছরে বেসরকারি খাতে প্রায় ১০০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র দরপত্রের মাধ্যমে নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়। যদিও একটি কোম্পানি অংশ নেয়ায় তাতেও কোনো প্রতিযোগিতা ছিল না। ফলে বেশি দরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের লাইসেন্স পায় সামিট। বাকি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল আনসলিসিটেড তথা অযাচিত প্রস্তাবের মাধ্যমে। ফলে এগুলো ক্যাপাসিটি চার্জ অনেক বেশি ধরা হয়েছে।
শীর্ষ ১০ দেশি কোম্পানির ক্যাপাসিটি চার্জ ৪৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা
৪ আগস্ট ২০২২, শেয়ার বিজ
বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীলতা গত এক যুগে কয়েক গুণ বেড়েছে। এ সময় দেশি কিছু কোম্পানি এ খাতে বিনিয়োগ করেছে। এতে বিদ্যুৎ খাত গুটিকয়েক করপোরেটের দখলে চলে গেছে। যদিও বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর বড় অংশই নিয়মিত বসে থাকছে। তবুও এ খাতে প্রতি বছর বড় অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)।
সংস্থাটির হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০-১১ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ১২ বছরে পিডিবি’কে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার ৬৬৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ১০টি গ্রুপ/কোম্পানির পকেটে গেছে ৪৪ হাজার ৬৪০ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ শীর্ষ দেশি ১০টি গ্রুপ/কোম্পানি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে এ খাতে ব্যয়ের ৫১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
পিডিবির তথ্যমতে, গত ১২ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে শীর্ষে রয়েছে সামিট গ্রুপ। বর্তমানে গ্রুপটির অধীনে সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া বিবিয়ানা-২-এর ৮০ শতাংশ ও খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল) ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সামিটের কাছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে সামিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৪৫১ মেগাওয়াট। গত ১২ বছরে গ্রুপটি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে প্রায় ১০ হাজার ৮৭২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে দ্বিতীয় অবস্থানে দেশীয় ইউনাইটেড গ্রুপ। বর্তমানে এ গ্রুপটির ছয়টি নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া গ্রুপটির কাছে কেপিসিএলের ৩৫ শতাংশ, পায়রায় একটি কেন্দ্রের ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ ও আশুগঞ্জের একটি কেন্দ্রের ৭১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সব মিলিয়ে ইউনাইটেড গ্রুপের বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার পাঁচ মেগাওয়াট। ১২ বছরে গ্রুপটি ছয় হাজার ৫০৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের সাড়ে সাত শতাংশ।
দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাক্যাট রয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে তৃতীয় স্থানে। এ গ্রুপের নিজস্ব পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে বর্তমানে, যেগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে অ্যাক্রন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের (ইউনিট-১, ২ ও ৩) উৎপাদন সক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট এবং বাংলা ট্র্যাক-১ ও ২ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট। এছাড়া প্যারামাউন্ট বি. ট্রাক ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪৯ শতাংশ রয়েছে বাংলাক্যাটের হাতে। এতে সব মিলিয়ে এ গ্রুপটি ১২ বছরে পাঁচ হাজার ৬৯৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। মোট ক্যাপাসিটি চার্জের তা ছয় দশমিক ৫৮ শতাংশ।
দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ওরিয়ন গ্রুপের বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫০৭ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১০০ মেগাওয়াটের একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্রও রয়েছে। এ গ্রুপটি এক যুগে চার হাজার ৫৩১ কোটি ১১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। মোট ক্যাপাসিটি চার্জের তা পাঁচ দশমিক ২৩ শতাংশ।
ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পাঁচটি সমিতির অধীনে গড়ে ওঠা এ কোম্পানিটির বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতা ১৮২ মেগাওয়াট। ১২ বছরে এ কোম্পানির পকেটে গেছে চার হাজার ৪১৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের পাঁচ দশমিক ১০ শতাংশ।
এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কেপিসিএলের বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে দুটি। এছাড়া পায়রায় ইউনাইটেড গ্রুপের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে কেপিসিএলের কাছে। সামিট ও ইউনাইটেড গ্রুপের সমান ৩৫ শতাংশ করে ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে কোম্পানিটির। বাকি ৩০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। কোম্পানি এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে তিন হাজার ৬৪৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা কোম্পানিটির জন্য পকেটে গেছে চার দশমিক ২০ শতাংশ অর্থ।
ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে এর পর রয়েছে মোহাম্মদী গ্রুপ। সপ্তম অবস্থানে স্থানে থাকা গ্রুপটির বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩২৫ মেগাওয়াট। দেশ এনার্জি নামে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রয়েছে এ গ্রুপের। ১২ বছরে গ্রুপটি দুই হাজার ৫৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের দুই দশমিক ৯২ শতাংশ।
দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে অষ্টম অবস্থানে থাকা হোসাফ গ্রুপের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বর্তমানে ২১৩ মেগাওয়াট। এনার্জি প্রিমা ও হোসাফ পাওয়ার নামে এ গ্রুপের কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ১২ বছরে এ গ্রুপটি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে দুই হাজার ৪৫৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের দুই দশমিক ৮৪ শতাংশ।
ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে নবম অবস্থানে রয়েছে ডরিন গ্রুপ। এ গ্রুপটির অধীনে বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ছয়টি, যেগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩৬৯ মেগাওয়াট। ১২ বছরে এ গ্রুপটি দুই হাজার ১৩৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের দুই দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে দশম অবস্থানে থাকা সিকদার গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে দুটি। এগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৯৪ মেগাওয়াট। পাওয়ার প্যাক নামে উৎপাদন করা এ গ্রুপটি গত অর্থবছর এক হাজার ৮৪২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। মোট ক্যাপাসিটি চার্জের তা দুই দশমিক ১৩ শতাংশ।
উপরোল্লিখিত ১০টি গ্রুপ/কোম্পানির বাইরে দেশীয় ম্যাক্স গ্রুপ, সিনহা গ্রুপ, রিজেন্ট গ্রুপ, এনার্জি প্যাক, বারাকা পাওয়ার, কনফিডেন্স গ্রুপ, প্যারামাউন্ট গ্রুপসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করেছে। এসব গ্রুপ/কোম্পানির এক বা একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে। তবে এদের আদায়কৃত ক্যাপাসিটি চার্জ এ খাতে ব্যয়ের দুই শতাংশের কম।
৫০ বছরেও জ্বালানি তেল শোধনক্ষমতা বাড়েনি
০৮ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
দেশে জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা না বাড়ায় বেশি পরিমাণে ডিজেল আমদানি করতে হয়। এতে প্রতিবছর বাড়তি ডলার খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। এখন চাপে পড়ে জ্বালানি সাশ্রয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চলছে। অথচ ৫০ বছরেও দেশে তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়েনি। এর মধ্যে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নেওয়া প্রকল্পটি ১০ বছরেও অনুমোদিত হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ২৪ কোটি ডলার সাশ্রয় হতো। এখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেই দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি তেল পরিশোধনক্ষমতা বাড়াতে ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল-২’ নামের প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১২ সালে। এরপর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) ১০ বার সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়েছে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি। বর্তমানে এটি পরিকল্পনা কমিশনে জমা আছে।
দেশে একমাত্র সরকারি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) তৈরি করা হয় ১৯৬৮ সালে। বিপিসির মাধ্যমে আনা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল তারা শোধন করে। এতে উৎপাদিত ডিজেলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেল নেয় বিপিসি। ইআরএলের বছরে তেল শোধনের সক্ষমতা ১৫ লাখ টন। ইআরএল-২ প্রকল্পের আওতায় নতুন পরিশোধনাগারের সক্ষমতা হবে ৩০ লাখ টন। প্রকল্পটি মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলে ঠিকাদার নিয়োগে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। ঠিকাদার নিয়োগের পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে শোধনাগারটি স্থাপন করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি
ট্রাকভাড়া বেড়েছে ২০%, বাড়তি সবজির দামও
০৮ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
রাত ১২টা। ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়তে সবজিবাহী ট্রাকগুলো আসতে শুরু করেছে। কোনোটায় ঝিঙে, কোনোটায় পটোল, আবার কোনোটায় একাধিক ধরনের সবজি।
বগুড়া থেকে ট্রাকচালক আবদুল মমিন নিয়ে এসেছিলেন ঢ্যাঁড়স, করোলাসহ বিভিন্ন সবজি। তিনি প্রথম আলোকে জানালেন, বগুড়ার থেকে আসতে তাঁর সাড়ে তিন টন ক্ষমতার ট্রাকে ডিজেল খরচ হয়েছে ৯০ লিটারের মতো (আসা-যাওয়া)। সরকারনির্ধারিত নতুন দামে ডিজেল কিনতে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ২৬০ টাকা, যা এক দিন আগের তুলনায় ৩ হাজার ৬০ টাকা বেশি।
এই ট্রাকচালকের ভাষ্য অনুযায়ী, বগুড়া থেকে ঢাকায় সবজি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সাড়ে তিন টন ক্ষমতার একটি ট্রাকে ভাড়া বেড়েছে তিন হাজার টাকার মতো। এত দিন ভাড়া ছিল ১২ হাজার টাকার আশপাশে। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর নেওয়া হচ্ছে ১৫ হাজার টাকার মতো।
কারওয়ান বাজারে গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে রোববার ভোর ৫টা পর্যন্ত থেকে ট্রাকচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর বিভিন্ন রুটে ট্রাকভাড়া ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর প্রভাব পড়েছে সবজির দামেও। পাইকারি ও খুচরা বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। কম দামি সবজিগুলোর দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা এবং বেশি দামের সবজির দাম ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে খুচরা পর্যায়ে। এর পুরোটাই যে ট্রাকভাড়ার কারণে, তা নয়, চাহিদা ও সরবরাহের বিষয়টিও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এও বলছেন, তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে। এ কারণে তাঁরা একটু বেশি দাম নিচ্ছেন।
দুই এলএনজি টার্মিনাল
দৈনিক গচ্চা যাচ্ছে দুই কোটি টাকা
১৪ আগস্ট ২২, সমকাল
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা জলে ফেলা নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই। এরই মধ্যে জানা গেল, এলএনজি বা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকে রূপান্তরে (রিগ্যাসিফিকেশন) দৈনিক গচ্চা যাচ্ছে ২ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে এই জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় কমে গেছে আমদানি। এতে কক্সবাজারের মহেশখালীর অদূরে গভীর সমুদ্রে স্থাপন করা দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে সরবরাহ কমে যাওয়ায় উৎপাদন অর্ধেক হয়ে গেছে। তবে চুক্তি অনুসারে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে সক্ষমতা অনুযায়ী।
এলএনজি টার্মিনাল বা ফ্লটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) তরল গ্যাসকে পূর্বের গ্যাসীয় অবস্থায় রূপান্তর করে দেশের অভ্যন্তরে তথা জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। আমদানি কমে যাওয়ায় ইউনিট দুটির ক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার না হলেও দিনে প্রায় ২ কোটি টাকা (২ লাখ ডলার) ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে পেট্রোবাংলাকে। সূত্র জানায়, ১০০ কোটি ঘনফুটের জন্য দুই এফএসআরইউর দৈনিক রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ প্রায় ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা (সাড়ে ৪ লাখ ডলার)। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির চার্জ ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা (২ লাখ ৩৭ হাজার ডলার) এবং দেশীয় সামিট গ্রুপের এফএসআরইউর জন্য চার্জ ২ কোটি ৬ লাখ টাকা (দুই লাখ ১৭ হাজার ডলার)। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় জুলাই মাস থেকে স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ আছে। এতে এলএনজির সরবরাহ কমে গেছে। তাই দুই এফএসআরইউ থেকে দিনে কম-বেশি ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে, যা সক্ষমতার অর্ধেক। তবে রিগ্যাসিফিকেশন না করলেও বাকি সক্ষমতার জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে প্রায় ২ কোটি টাকা পাচ্ছে এফএসআরইউর উদ্যোক্তারা।
ক্ষমতায় গেলে কুইক রেন্টাল বাতিল করবে বিএনপি
১৪ আগস্ট, ২০২২, বণিক বার্তা
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সৃষ্ট সংকটের জন্য সরকারের দুর্নীতি, আত্মঘাতী চুক্তি ও অপরিণামদর্শী পরিকল্পনাকে দায়ী করেছে বিএনপি। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে করা চুক্তি বাতিলসহ মোট ১২ দফা পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক কোম্পানি কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের মাধ্যমে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। এসব ছিল কুইক রেন্টালের নামে কুইক লুটপাট। তবে আমাদের আশার বাণী হচ্ছে, আমরা বিদ্যুতের এ সমস্যার সমাধান করব। আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবারহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল করব। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল করা হবে। স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ সম্পাদন করা হবে। চাহিদা অনুযায়ী পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হবে। উৎপাদনের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন অতি দ্রুত স্থাপন করা হবে। বাপেক্স ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দেশীয় খনিজ ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ এবং দেশীয় প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে উপযুক্ত উদ্যোগ নেয়া হবে।
খনিজ পদার্থ উত্তোলনের পরিকল্পনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বঙ্গোপসাগরে সম্ভাবনাময় গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ উত্তোলনে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি, জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তিনির্ভর জ্বালানি নীতি গ্রহণ, বেজ লোড পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর সংস্কার করা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা না বাড়িয়ে আইপিপির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা অন্যায়ভাবে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ১০ বছরে অফশোর গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগায়নি। এমনকি বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০ শতাংশের বেশি গ্যাস সরবরাহ করা যেত, তাও করা হয়নি। এ সময় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সরকারের অদূরদর্শী পরিকল্পনার অংশ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পাঁচ বছরে পিডিবির লোকসান ৬০ হাজার ১৮২ কোটি টাকা
১৬ আগস্ট ২০২২, শেয়ার বিজ
২০০৯ সাল থেকেই দেশে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। বর্তমানে এ খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৫৩৪ মেগাওয়াট। এসব রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ও আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় অনেক বেশি। যদিও তা বিক্রি করতে হয় অনেক কম দামে। ফলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) প্রতি বছর গুনতে হয় মোটা অঙ্কের লোকসান।
পিডিবির তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ বছরে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ও আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ কিনে সংস্থাটির লোকসান হয়েছে ৬০ হাজার ১৮২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এ সময় বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয় ১৬ হাজার ৪৬০ কোটি ৬৮ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয় এক লাখ ৩৯ হাজার ৪৮৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর ওই বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবির আয় হয় ৭৯ হাজার ৩০৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট উৎপাদন ব্যয়ের ৪৩ দশমিক ১৫ শতাংশই ছিল লোকসান।
পাঁচ বছরে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ও আইপিপিগুলোয় যে লোকসান হয়েছে তার ৯৮ শতাংশই ছিল ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয়। বর্তমানে বেসরকারি খাতে ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ৫২টি। এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা পাঁচ হাজার ৪২৭ মেগাওয়াট। বেসরকারি খাতে অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রই ফার্নেস অয়েলচালিত।
যদিও গত পাঁচ বছরে উৎপাদন করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলোয়। আর রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ও আইপিপিগুলোর মধ্যে শুধু গ্যাসচালিত কেন্দ্রেই মুনাফা করে পিডিবি। বর্তমানে এ ধরনের কেন্দ্র রয়েছে ৩৬টি। এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা তিন হাজার ৬৭৩ মেগাওয়াট। আর ডিজেলচালিত কেন্দ্র রয়েছে ছয়টি, যেগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার মেগাওয়াট। এছাড়া কয়লাচালিত কেন্দ্র একটি, যার সক্ষমতা এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট।
দীঘিপাড়ার কয়লা তোলা হবে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে
২৪ আগস্ট ২২, সমকাল
অবশেষে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি দিনাজপুরের দীঘিপাড়া থেকে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ অনুসারে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হতে পারে। দীঘিপাড়া থেকে কয়লা তোলা সম্ভব হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে বলে ধারণা সংশ্নিষ্টদের।
১৯৯৫ সালে নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুর উপজেলায় দীঘিপাড়া কয়লা খনি আবিস্কার করে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। খনির সম্ভাব্য আয়তন ২৪ বর্গ কিলোমিটার। খনির উন্নয়নের জন্য ২০০৫ সালে পেট্রোবাংলাকে লাইসেন্স প্রদান করে সরকার। এরপর পেট্রোবাংলা খনির ৪ হাজার হেক্টর ভূমি বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষের (বিসিএসসিএল) কাছে হস্তান্তর করেছে। জিএসবির মতে, খনিতে ৮৬ দশমিক ৫ কোটি টন কয়লার মজুত থাকতে পারে। দীঘিপাড়ায় সর্বোচ্চ ৪৩৪ দশমিক ৪৯ মিটার এবং সর্বনিম্ন ৩২৩ মিটার গভীরতায় ৭২ দশমিক ৩৬ মিটার থেকে ৪৭ দশমিক ২৯ মিটার পুরুত্বের কয়লার স্তর রয়েছে। খনিতে কয়লা ছাড়াও প্রায় ২০০ টন সিলিকা বালু ও সাদামাটি রয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দীঘিপাড়া থেকে কয়লা উত্তোলনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ২০১৭ সালের ৩১ মে জার্মানির মিরবাগ কনসালটিং ইন্টারন্যাশনাল, দেশটির অন্য কোম্পানি ফুগরো এবং অস্ট্রেলিয়ার রাঞ্জ পিনকোক মিনারকোর যৌথ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে বিসিএসসিএল চুক্তি করে। প্রায় তিন বছর ধরে কনসোর্টিয়াম খনি এলাকায় জরিপ চালিয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেদন জমা দেয় পেট্রোবাংলায়। এতে ভূগর্ভস্থ বিশেষ পদ্ধতিতে (সুড়ঙ্গ পদ্ধতি) কয়লা তোলার বিষয়ে মত দেওয়া হয়। পদ্ধতিটি হলো- মাল্টি স্লাইস লংওয়াল টপ কোল কেভিং উইথ কাট অফ ওয়াল প্রসেস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ ৭০ দশমিক ৬ কোটি টন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরে ৩০ লাখ টন হিসাবে ৩০ বছরে ৯ কোটি টন কয়লা উত্তোলন করা যাবে। কয়লা তোলার ব্যয় টনপ্রতি হবে ১৬০ ডলার। তবে এটি অনেক ব্যয়বহুল বলে মনে করছে বিসিএসসিএল কর্তৃপক্ষ। তাই ওই জরিপ প্রতিবেদন ডিএমটি নামের যুক্তরাজ্যের একটি কোম্পানিকে দিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেন, রিভিউ প্রতিবেদনে ডিএমটি খরচ কমাতে কিছু পরামর্শ দিয়েছে, যা যাচাই করতে একটি কমিটি করা হয়েছে।
বর্তমান সক্ষমতা অব্যবহৃত, নতুন আরো দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের প্রস্তাব
২৫ আগস্ট, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশে এলএনজি আমদানি হচ্ছে ২০১৮ সাল থেকে। এজন্য পরিচালিত হচ্ছে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বা ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ)। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে নির্মিত টার্মিনাল দুটি পরিচালনা করছে স্থানীয় ও বিদেশী দুটি কোম্পানি। টার্মিনাল দুটির দৈনিক সরবরাহ সক্ষমতা ১০০ কোটি ঘনফুট। যদিও এ সক্ষমতার প্রায় অর্ধেকই ব্যবহার করা যাচ্ছে না এলএনজি সংকটে। এর মধ্যেই আবার নতুন করে ১০০ কোটি ঘনফুট সক্ষমতার আরো দুটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পেট্রোবাংলা।
বিদ্যমান অবকাঠামোগুলোর সক্ষমতা অনুযায়ী এলএনজি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে আবার নতুন করে টার্মিনাল নির্মাণ করতে গেলে জ্বালানি বিভাগ ভয়াবহ আর্থিক চাপে পড়বে বলে আশঙ্কা খাতসংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, এমনিতেই বিদ্যমান অবকাঠামোগুলোর সক্ষমতা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। এর ওপর একই সক্ষমতার দুটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করে গ্যাস সরবরাহ দিতে না পারলেও শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের অর্থ জোগান দিতে গিয়েই আর্থিকভাবে আরো বিপত্তিতে পড়ে যাবে সংস্থাটি।
দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন বা ১০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতার এ টার্মিনাল পরিচালনা করবে স্থানীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি সামিট গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি। এরই মধ্যে কোম্পানি দুটি তাদের এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পেট্রোবাংলার কাছে জমা দিয়েছে। এ প্রস্তাব অনুযায়ী, কক্সবাজারের মহেশখালীতে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতার এলএনজির ভাসমান টার্মিনাল পরিচালনা করবে সামিট। অন্যদিকে পটুয়াখালীর পায়রায় একই সক্ষমতার টার্মিনাল পরিচালনা করবে এক্সিলারেট এনার্জি।.. …
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম এখন আকাশচুম্বী। স্পট মার্কেটে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৫৬ ডলারের ওপরে। ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করে সাশ্রয়ী মূল্যে এলএনজি আমদানি করা না গেলে তা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলবে জ্বালানি বিভাগকে। এছাড়া বিদ্যমান এলএনজির অবকাঠামো পুরোটাই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বর্তমানে ৪২ শতাংশের মতো সক্ষমতা বসে আছে। টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তি অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ সক্ষমতা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর কম ব্যবহার হলে প্রতি ইউনিটের রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ ৫০ সেন্ট এবং ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে।
বিপিসির অনিয়ম দেখে ‘স্তম্ভিত’ সংসদীয় কমিটি
২৩ আগস্ট, ২০২২, প্রথম আলো
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নানা অনিয়ম ও নিরীক্ষা আপত্তি দেখে ‘স্তম্ভিত’ জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠানসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় বিপিসির তিনটি অর্থবছরের অনিষ্পন্ন নিরীক্ষা (অডিট) আপত্তির কথা উঠে এসেছে, যার সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা জড়িত। সভায় জানানো হয়, একটি নিরীক্ষা আপত্তিতে বিপিসির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে বিপিসির অনিয়ম ও বিভিন্ন নিরীক্ষা আপত্তি নিয়ে সংসদীয় কমিটির সভা হয়। কমিটি সূত্র জানায়, সভায় বিপিসির ২০০৯-১০, ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরের অনিষ্পন্ন নিরীক্ষা আপত্তিগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। এসব আপত্তির সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা জড়িত।
একটি আপত্তিতে হিসাব ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর বলেছে, বিপিসির স্থিতিপত্রে (ব্যালান্সশিট) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পকে দেওয়া ঋণের যে পরিমাণ দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে ওইসব প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের স্থিতিপত্রে দেখানো অঙ্কে ২ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকার গরমিল দেখা গেছে। নিরীক্ষার সময় বিপিসি এই গরমিলের ব্যাপারে কোনো জবাব দেয়নি। নিরীক্ষায় অনুসন্ধান করে এই গরমিলের সঙ্গে কারা জড়িত, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিপিসি কিছুই করেনি। পরে ওই আপত্তি জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাবসংক্রান্ত কমিটিতে পাঠানো হয়। গত ২২ মে কমিটি দুই মাসের মধ্যে নিরীক্ষা অধিদপ্তরে নথিপত্র দিতে বিপিসিকে নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু তারা কমিটিকে কোনো নথিপত্র সরবরাহ করেনি।
বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়, আর্থিক বছর শেষ হওয়ার পরেও বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করেনি বিপিসি, যা আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী। প্রতিবেদনে নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত না করায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।
২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে মজুত ধারণক্ষমতার বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করায় বাড়তি সময় জাহাজ ফ্লোটিং করে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। এতে বিপিসির ৫০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। একই অর্থবছরে ব্যাংকে নিজস্ব তহবিল থাকা সত্ত্বেও ঋণ (ওভার ড্রাফট) নিয়ে কেনাকাটা করায় সুদ বাবদ প্রতিষ্ঠানের ২৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
কমিটির বৈঠকে আরেকটি নিরীক্ষা আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয় যাতে বলা হয়, অকার্যকর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ এবং যথাযথ প্রত্যক্ষ তদারকির অভাবে বিপিসির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, বিপিসিতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। তাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব আছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কম। তাদের অনিয়মের চিত্র দেখে কমিটি ‘শকড’ (স্তম্ভিত)। বিভিন্ন কেনাকাটা ও নিরীক্ষায় যেসব আপত্তি এসেছে, তাদের সেগুলো সমন্বয় করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা কিছুই করেনি।
আ স ম ফিরোজ বলেন, নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অনেকের নাম উল্লেখ করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিপিসি কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া। দুদকের কথাও তারা শোনেনি।
তবে অনিয়মের বিষয়ে বিপিসি সংসদীয় কমিটিকে লিখিতভাবে বলেছে, বিপিসি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে এখানে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে গত ১০ বছরের লাভ–ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে বিপিসি। এতে বলা হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর—এই সাত বছরে বিপিসি ৫৭ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এর আগের তিন অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা।
উচ্চ মূল্যে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কেনায় বছরে ক্ষতি ১ বিলিয়ন ডলার
২৫ আগস্ট, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশে উচ্চ দামে বিদ্যুৎ কিনে বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতি হয়েছে।
বাংলাদেশি মুদ্রায় বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হিসেবে)।
একটি গবেষণা বলছে, প্রায় একই ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ার পরও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কিছু কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৫ শতাংশ বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনেছে।
২০০৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ৫৮টি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কেনা বিদ্যুতের মূল্য বিশ্লেষণ করে গবেষণায় বলা হয়, কিছু বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক চুক্তি না করায় বিদ্যুৎ খাতে বিপুল খরচ বেড়েছে।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এ গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। গবেষণাটি করেছেন অ্যান্টি করাপশন এভিডেন্স রিসার্চ পার্টনারশিপ কনসোর্টিয়ামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন খান। তিনি একই সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতির অধ্যাপক।
গবেষণায় দেখানো হয়েছে কীভাবে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী ব্যবসায়ীদের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
মুশতাক হোসেন খান বলেন, খরচের দিক দেখলে এটা বিশাল পার্থক্য তৈরি করছে। যা বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।’
গবেষণায় বলা হয়, জনগণের নাগালে রাখতে বিপিডিবি তুলনামূলক কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। আর লোকসান সামাল দেওয়া হয় জনগণের টাকায় ভর্তুকির মাধ্যমে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে শুধুমাত্র সরকারি জমি ইজারা দেওয়ার কারণে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। ইজারার বিষয়টিকে অর্থনৈতিক মডেলিংয়ে বিবেচনায় নিয়ে এ হিসাব করা হয়েছে।
এ ছাড়াও, রাজনৈতিক যোগসাজশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির পথ সুগম হয়েছে। যেমন, কম খরচের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ব্যয়বহুল কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে। অথচ বিষয়টা উল্টো হওয়ার কথা ছিল।
‘ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা থাকলেও বিদ্যুতের চাহিদা যখন সর্বনিম্ন থাকে (বেস লোড) তখনো এদের থেকেই বিদ্যুৎ কেনা হয়। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অন্যদের তুলনায় আগে গ্যাস পায়। দুই পক্ষের মধ্যে যোগসাজশে এটা হয়।’
গবেষণায় উঠে এসেছে, ব্যয়বহুল রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সরকারের চুক্তি অনুযায়ী তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্ডার দেওয়া না হলেও ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে উৎপাদন সক্ষমতার ৬০ শতাংশ দাম দিতে হয়।
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি রেকর্ড ২৯ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা!
২৫ আগস্ট ২০২২, শেয়ার বিজ
এক যুগের বেশি সময় ধরে বড় অঙ্কের লোকসান গুনছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম মূল্যে বিক্রি করায় লোকসান দিতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। এ ঘাটতি পূরণে পিডিবিকে প্রথমে ঋণ দেয়া শুরু করে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে সরাসরি ভর্তুকি দেয়া হয়। প্রতি বছরই এ খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। তবে গত অর্থবছর এ খাতে ভর্তুকি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
পিডিবির তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এতে ২০২১-২২ অর্থবছর রেকর্ড লোকসানের মুখে পড়েছে পিডিবি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত অর্থবছরের জন্য ২৯ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছরে পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয় ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে গেছে ১৭ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা বা ১৫২ দশমিক ৬২ শতাংশ।
সূত্র জানায়, ভর্তুকির পুরোটা এখনও ছাড় করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) ভর্তুকি ছাড় করা হয়েছে। এ বাবদ পিডিবিকে দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। এখনও ১৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা ভর্তুকি ছাড় বাকি রয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের জন্য আরও সাত হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা ভর্তুকি ছাড়ের জন্য চিঠি দিয়েছে পিডিবি।
অনুসন্ধানে বাপেক্স পেয়েছে ১ হাজার কোটি, আমদানিতে ৮৫ হাজার কোটি টাকা
২৯ আগস্ট, ২০২২, বণিক বার্তা
পেট্রোবাংলার সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, গত চার অর্থবছর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৮৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। যদিও জাতীয় গ্রিডে সরবরাহকৃত গ্যাসের ৭৫ শতাংশ আসছে দেশীয় উৎস থেকে। এ সময়ে স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগের পরিমাণ যৎসামান্যই। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধান প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে একই সময়ে কূপ খনন ও জরিপে দেয়া অর্থের পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকার বেশি নয়। গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম স্থবির রেখে এলএনজি আমদানিবাবদ বিপুল অর্থের সংস্থান করতে গিয়ে অর্থ সংকটে পড়েছে পেট্রোবাংলা। অন্যদিকে অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মনোযোগী না হওয়ায় স্থানীয় গ্যাসের মজুদ প্রায় শেষের পথে।
পেট্রোবাংলার আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রিগ্যাসিফিকেশন চার্জসহ পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানি বাবদ ব্যয় হয় ১১ হাজার ৮১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মোট ৬৬টি কার্গো আমদানি করে পেট্রোবাংলা। এসব এলএনজিবাহী কার্গো আমদানি করতে সংস্থাটিকে গুনতে হয় ১৭ হাজার ৫০২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে দীর্ঘমেয়াদি ৭২টি কার্গো আমদানির বিপরীতে পেট্রোবাংলার খরচ হয় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে জ্বালানি পণ্যটি আমদানিতে পেট্রোবাংলার প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা।
কূপ খননে গ্যাজপ্রমের অর্ধেক বিনিয়োগে বেশি সফল বাপেক্স
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশের স্থলভাগে গ্যাসকূপ খননে কাজ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। একই সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমও কাজ করছে। তবে দুই দেশের রাষ্ট্র খাতের এ দুই কোম্পানির মধ্যে কূপ খনন ব্যয়ে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য নিয়ে বরাবরই বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে নিজেদের সক্ষমতা থাকার পরও গ্যাজপ্রমকে বেশি দরে কাজ দেয়ায় নানা সময়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে জ্বালানি বিভাগকে। প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে চুক্তির বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, বাপেক্স একটি কূপ খননে যেখানে গড়ে ৭০-৮০ কোটি টাকা নিয়েছে, সেখানে একই কাজ করে গ্যাজপ্রম পেয়েছে গড়ে ১৫০ কোটি টাকা। অথচ বৈশ্বিক জ্বালানি খাতের অনুসন্ধান-উৎপাদনে বিদেশী কোম্পানিটি উল্লেখযোগ্য কাজ করলেও বাংলাদেশে বলার মতো অগ্রগতি নেই।
গ্যাজপ্রমকে দ্বিগুণ অর্থ পরিশোধের বিষয়ে কখনই সদুত্তর পাওয়া যায়নি জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে। বরং বেশি দরে কাজ দেয়ার পেছনে বরাবরই সামনে আনা হয়েছে গভীর কূপ খননে বহুজাতিক কোম্পানিটির সক্ষমতা ও দক্ষতার বিষয়টি। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশে গ্যাসকূপ খনন ও সংস্কারে বাপেক্স বড় আকারে কাজ শুরু করেছে। তবে গভীর কূপ খননে এখনো তাদের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। আর যেসব জায়গায় বাপেক্সের কাজ করার সক্ষমতা নেই, সেখানেই কেবল গ্যাজপ্রম কাজ করছে। আবার বাপেক্স ও গ্যাজপ্রম যৌথভাবেও কাজ করছে। এভাবে কাজ করলে আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির অভিজ্ঞতা বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা অবশ্য বলছেন, গ্যাসকূপ খননে বাপেক্স বড় সফলতা পেলেও বরাবরই আলোচনায় থেকেছে রুশ প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। অথচ গত ১০ বছরে দুই কোম্পানির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে বাপেক্সকেই এগিয়ে রাখতে হবে। বাপেক্সের মাসিক এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, ২০১২-২২ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে দেশে বাপেক্স ২১টি কূপ খনন ও সংস্কারকাজ করেছে। প্রতিটি কূপ খননে সংস্থাটির গড় ব্যয় হয়েছে ৭০-৮০ কোটি টাকা। এসব কূপের ১০টিরও অধিক উৎপাদনে রয়েছে। আবিষ্কার করা হয়েছে চারটি নতুন কূপ। বাকি কূপগুলো অবশ্য বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক।
অন্যদিকে রুশ প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ১৭টি কূপ খনন করেছে। এর মধ্যে ২০১২ সালে খনন করা ১০টি কূপের মধ্যে পাঁচটিই বন্ধ হয়ে যায়। যদিও পরে তা বাপেক্স সংস্কার করে গ্যাস উৎপাদনে নিয়ে আসে। এরপর ২০১৬ সালে আরো পাঁচটি গ্যাসফিল্ড এবং ২০১৭ সালে ভোলার শাহবাজপুর ইস্ট-১ ও ভোলা নর্থ-১ আরো দুটি উন্নয়ন কূপ খনন করে। অর্থাৎ ২০১৩-১৮ সাল পর্যন্ত বহুজাতিক সংস্থাটি মোট ১৭টি কূপ খনন করলেও সেগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
১৪ বছরে সামিটের পকেটে ১২ হাজার কোটি টাকা!
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, শেয়ার বিজ নিউজ
খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল) মাধ্যমে ইউনাইটেড গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুৎ খাতে যাত্রা শুরু করে সামিট। পরবর্তীকালে এককভাবে বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলে গ্রুপটি। বর্তমানে বেসরকারি খাতে একক বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সামিট গ্রুপ।
সামিটের আটটি কেন্দ্রের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৪৩৫ মেগাওয়াট, যা বেসরকারি খাতের প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ। যদিও নানা কারণে কেন্দ্রগুলো বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ই বসে থাকে। তবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নিয়মিতই ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)।
সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৪ বছরে সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। এছাড়া কেপিসিএলের ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সামিট গ্রুপ ও এর বিভিন্ন পরিচালকের কাছে। এর মাধ্যমে আরও প্রায় এক হাজার ৪৮০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গেছে গ্রুপটির কাছে। সব মিলিয়ে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে গেছে সামিট গ্রুপ।
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাড়ছে বহুজাতিক কোম্পানির বলয়
১১ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
অবশেষে দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এগিয়ে আসছে দেশে কর্মরত বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো (আইওসি)। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি শেভরন নতুন নতুন এলাকায় অনুসন্ধান চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। নতুন দুটি ব্লকে কাজের অনুমতি চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিটি। পাশাপাশি বিবিয়ানার আয়তন বাড়ানোরও আবেদন করেছে। শেভরনের পরিকল্পনার বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে পেট্রোবাংলা।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরের দুই ব্লকে কার্যরত ভারতের ওএনজিসি (ভিদেশ) উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে, যা পেট্রোবাংলার সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, তাঁরা তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছেন। বিদেশি কোম্পানিগুলোও এ কাজে এগিয়ে এসেছে। শেভরনের সঙ্গে নতুন নতুন এলাকায় অনুসন্ধান চালানোর বিষয়ে কথা হচ্ছে। তারা কয়েকটি নতুন কূপ খনন করবে বলে জানিয়েছে।
বিবিয়ানার আয়তন বাড়ছে :স্থলভাগের ১২ নম্বর ব্লকে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানার আয়তন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শেভরন পরিচালিত এই গ্যাসক্ষেত্র হবিগঞ্জে অবস্থিত। বর্তমান চুক্তিবদ্ধ এলাকার বাইরে পাশের আরও ৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে শেভরনকে। চলতি মাসেই পেট্রোবাংলার সঙ্গে এ-সংক্রান্ত সম্পূরক চুক্তি সই করতে যাচ্ছে মার্কিন কোম্পানিটি। আগামী বছরের মার্চে নতুন এলাকায় কূপ খননের কাজ শুরু করবে শেভরন। বিবিয়ানায় বি২৭ ও বি২৮ নামে দুটি নতুন কূপ খনন করা হবে। এবারই প্রথম আড়াআড়িভাবে গভীর কূপ খনন করা হবে।
আরও গ্যাস ব্লক ইজারা চায় শেভরন : মার্কিন কোম্পানিটি বর্তমানে দেশের ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর ব্লকে কাজ করছে। এর বাইরে ছাতক, রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্র এবং ব্লক ১১ ইজারা নিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে শেভরন। রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রটি সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি এবং ব্লক ১১ বাপেক্সের মালিকানায় রয়েছে।
রশিদপুর ১৯৬০ সালে আবিস্কার করে পাকিস্তান শেলওয়েল কোম্পানি। ১১ নম্বর ব্লকে অনুসন্ধান কাজের জন্য জাপানের মিতসুই অয়েল এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি (মইকো) ও বাপেক্সের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে। ছাতক গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলছে বাংলাদেশের। তাই ওই গ্যাসক্ষেত্র এখনই ইজারা দেওয়া হচ্ছে না। তবে ব্লক ১১ শেভরনকে ইজারা দিতে চাচ্ছে সরকার। কারণ এই ব্লকে মইকো এখনও সেভাবে জোরালো অনুসন্ধান কার্যক্রম চালায়নি। জাপানি কোম্পানিকে নভেম্বরের মধ্যে এই ব্লক নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে পেট্রোবাংলা। এরপর আংশিক হোক বা পুরো ব্লক শেভরনকে ইজারা দেওয়া হতে পারে। আর রশিদপুরের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত শেভরনের কাছ থেকে রশিদপুর নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পায়নি পেট্রোবাংলা।
চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে চায় ওএনজিসি :পেট্রোবাংলা অগভীর সমুদ্রের এসএস-০৪ এবং এসএন-০৯ ব্লকের জন্য ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের পিএসসি সই করে ভারতের ওএনজিসি, যা শেষ হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি। এরপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়, যা শেষ হবে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তবে অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় তৃতীয়বারের মতো সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে কোম্পানিটি।
সূত্র জানিয়েছে, ইজারা নেওয়া দুই ব্লকে দুটি তিতলি ও মৈত্রী নামে দুটি অনুসন্ধান কূপ খননের জন্য ঠিকাদার নিয়োগে দুই দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এতে ১১০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব পায় ওএনজিসি, যা তাদের বাজেটের দ্বিগুণ।
অবহেলায় অব্যবহৃত ভোলার গ্যাস
২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
দক্ষিণের দ্বীপজেলা ভোলার গ্যাস নিয়ে আড়াই দশক পরও কার্যকর পরিকল্পনা নিতে পারেনি সরকার। এই গ্যাস জেলার বাইরে আনার কোনো ব্যবস্থা নেই। জেলার ভেতরেও উৎপাদন সক্ষমতা অনুসারে গ্যাসের ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি। সরকারের অবহেলায় অব্যবহৃত থাকছে ভোলার গ্যাস।
বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে দিনে ১৫ কোটি ঘনফুট উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস। চাহিদা না থাকায় গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে না এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে। এ ছাড়া আবিষ্কারের পরও প্রায় চার বছর ধরে ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বর্তমানে দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। উৎপাদিত হয় ২৩০ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি মেটাতে চড়া দামে সরকার ২০১৮ সাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির দিকে ঝুঁকলেও পড়ে আছে ভোলার গ্যাস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু যথাযথ উদ্যোগের অভাবে ভোলার গ্যাস কাজে লাগছে না। এখন বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম নাগালের বাইরে যাওয়ার পর ভোলার গ্যাস নিয়ে কিছুটা চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।
১৯৯৫ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। একই সংস্থা ২০১৮ সালে আবিষ্কার করে ভোলার দ্বিতীয় গ্যাসক্ষেত্র ভোলা নর্থ। শাহবাজপুর থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু হয় ২০০৯ সালে।
আর ভোলা নর্থ থেকে এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি। দুটি গ্যাসক্ষেত্র মিলে এখন দেড় ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের মজুত থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পেট্রোবাংলা। নতুন কূপ খননের পর মজুত আরও বাড়তে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে গ্যাস অনুসন্ধান
বাপেক্স চায় চীনা কোম্পানি পেট্রোবাংলার পছন্দ ভারতীয় ওএনজিসি
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশের স্থলভাগে সমতলের পাশাপাশি এবার পার্বত্যাঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। এজন্য পেট্রোবাংলার কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আগ্রহপত্র (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট বা ইওআই) আহ্বান করে সংস্থাটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছয় কোম্পানি পাহাড়ে গ্যাস অনুসন্ধানের আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রাথমিক বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে তিন কোম্পানি। সেখান থেকে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়েই পাহাড়ে গ্যাস সন্ধানে নামবে বাপেক্স।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, পাহাড়ে গ্যাস অনুসন্ধানে যে তিনটি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড (ওভিএল), রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ও চীনা একটি কোম্পানি। তবে বাপেক্সের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে ওএনজিসি ও চীনা কোম্পানিটির মধ্যেই চলছে জোর প্রতিযোগিতা। যদিও গ্যাস অনুসন্ধানে অভিজ্ঞতা বিবেচনায় চীনা কোম্পানিটির বিষয়েই সবচেয়ে বেশি আগ্রহ বাপেক্সের। অন্যদিকে দেশের সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধান তত্পরতা বিবেচনায় ওএনজিসিকে উপযুক্ত মনে করছে পেট্রোবাংলা। এখন কাজ পাওয়ার প্রতিযোগিতায় কোন কোম্পানিকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে, এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা কিংবা বাপেক্স দুই পক্ষই পরিষ্কার কিছু জানায়নি। প্রতিষ্ঠান দুটির শীর্ষ পর্যায় থেকে অবশ্য জানা গিয়েছে, পার্বত্যাঞ্চলে দেশের চাহিদা অনুযায়ী যে কোম্পানি শর্তপূরণ করতে পারবে তাদেরই সঙ্গে নেবে বাপেক্স।
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দেশ জুড়ে ভোগান্তি, কারণ জানা যায়নি
৪ অক্টোবর ২০২২, বিবিসি বাংলা অনলাইন
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে মঙ্গলবার ছয় ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎহীন ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো। কিন্তু রাত ১২টার সময়েও দেশের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎহীন ছিল বলে জানা যাচ্ছে।
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর একটা পর্যায়ে পুরো দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। ফলে এসব জেলার মানুষ ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন।
এক মাসের ব্যবধানে এটি দ্বিতীয়বারের মতো দেশে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটলো। এর আগে গত ছয়ই সেপ্টেম্বর একবার গ্রিড বিপর্যয় হয়েছিল। তখন কুষ্টিয়া, যশোরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো প্রায় দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, যমুনা সেতুর পূর্ব পাশের ন্যাশনাল গ্রিডে দুপুর ২টা পাঁচ মিনিটে বিপর্যয় হয়েছে। এর ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় একটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই।
বিদ্যুৎহীন দিনরাত্রি, মহাভোগান্তি
০৫ অক্টোবর ২২, সমকাল
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের এক বড় অংশ দীর্ঘ সময় ছিল বিদ্যুৎহীন। ফলে দিনরাত্রি মহাভোগান্তিতে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। বাধাগ্রস্ত হয় চিকিৎসাসেবা। কোথাও কোথাও রোগীর চিকিৎসা চলে মোমের আলোয়। ইন্টারনেট ও ফোনসেবা হয় বিঘ্নিত। দুর্গাপূজা উৎসবেও পড়ে ভাটা। পাম্পগুলোতে তেল ও সিএনজি বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতেও বেকায়দায় পড়েন গ্রাহকরা। প্রচণ্ড গরমে বাসাবাড়িতে অস্বস্তিতে পড়েন বৃদ্ধ ও শিশুরা। রাতেও সড়ক-অলিগলি ডুবে থাকে অন্ধকারে। মোমবাতি জ্বালিয়ে চলে বেচাকেনা। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের। দেখা দেয় মোমবাতি সংকট। রাত ১টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।
ঘটনা তদন্তে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নির্বাহী পরিচালক (পিঅ্যান্ডডি) ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের আরও দুটি কমিটি করার কথা রয়েছে।
গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে গতকাল রাত পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি সংশ্নিষ্ট কোনো সংস্থা। পিজিসিবির কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা আপাতত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার দিকে নজর দিয়েছেন। পরে কারণ খুঁজে বের করবেন। তবে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, নরসিংদীর ঘোড়াশালে দুটি উপকেন্দ্রে সংযোগ দেওয়ার সময় আশুগঞ্জ গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলীয় জোনে গতকাল দুপুর ২টা ৪ মিনিটে বিপর্যয় শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লার আংশিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে খুলনা, বরিশাল ও যমুনা নদীর ওপারে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে এ সংকট হয়নি। গতকাল বিকেলে আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ লাইন চালুর মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয় বিকেল সোয়া ৫টায়। রাত ১১টার মধ্যে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, চট্টগ্রাম ও মানিকগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। তবে গাজীপুর, ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জের কিছু এলাকা তখনও ছিল বিদ্যুৎহীন।
মানহীন সঞ্চালনে হারাচ্ছে দম
০৫ অক্টোবর ২২, সমকাল
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা নতুন নয়। গত ৬ সেপ্টেম্বরও দেশের বড় একটি অংশ গ্রিড বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিপর্যয়টি ঘটে ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর। ওই দিন সারাদেশই হয়ে যায় ‘ব্ল্যাকআউট’। এ ছাড়া ২০০২, ২০০৭, ২০০৯ ও ২০১৭ সালে বড় ধরনের গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। আর আঞ্চলিক বিভ্রাট তো গা-সওয়া হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সঞ্চালন ব্যবস্থাপনা আধুনিক হয়নি সেভাবে। তাঁরা বলছেন, রেন্টাল-কুইক রেন্টালসহ অনেক বেসরকারি কেন্দ্রে মানহীন যন্ত্রপাতি ব্যবহার, সঞ্চালন ব্যবস্থাপনায় পুরোপুরি আধুনিকায়ন না করা ও অ্যানালগ পদ্ধতিতে (ফোনে ফোনে) লোড ব্যবস্থাপনার কারণে জাতীয় গ্রিডে ঘন ঘন বিপর্যয় ঘটছে।
জোরদার হয়নি বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা
০৬ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন টানা বাড়তে বাড়তে এখন চাহিদার চেয়ে প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে বাড়েনি বিদ্যুৎ সরবরাহের সঞ্চালন লাইন। বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর সুপারিশ করা হলেও গড়ে ওঠেনি সঞ্চালনের আধুনিক অবকাঠামো। সমন্বয়ের অভাব আছে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে। ফলে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা জোরদার হয়নি।
জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের জন্য সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন বিদ্যুৎ খাত–সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, ২০০৭ ও ২০১৪ সালে দুটি বড় বিপর্যয়ের পর সঞ্চালন অবকাঠামো আধুনিক করার সুপারিশ করা হয়েছিল। এরপর সঞ্চালন খাতে নানা প্রকল্প নেওয়া হলেও তা নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না। নিয়মিত ব্যবধানে বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদ।
প্রস্তুত হন, চেরাগ জ্বালিয়ে চলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
০৬ অক্টোবর ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
বিশ্বের জ্বালানি সংকটের পরিস্থিতিতে আদিযুগে ফেরত যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেষে ভেন্নার তেল আর রেড়ির তেল দিয়ে কুপিবাতি জ্বালাতে হবে। এখন থেকে সবাই প্রস্তুত হন, চেরাগ জ্বালিয়ে চলতে হবে। কাঠখড়ি পুড়িয়ে রান্না করতে হবে। জাতিসংঘ সম্মেলন ও যুক্তরাজ্য সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকালে গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্বের জ্বালানি সংকটের কথা চিন্তা করে সবাইকে সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কারণে সবাইকে আদিযুগে ফিরতে হবে। শেষে ভেন্নার তেল আর রেড়ির তেল দিয়ে কুপিবাতি জ্বালাতে হবে। এখন তো কেউ ভেন্নার তেল চিনবে না। রেড়ির তেলও চিনবে না। রেড়ির তেল খুব ঘন একটা তেল। অনেকক্ষণ জ্বলে। ভেন্না গাছ তো সবুজ। সবুজ কাটা কাটা ফল হয়। সেটা থেকে তেল তৈরি করে সেই তেল দিয়ে বাতি জ্বালানো হতো। কুপি বাতিও তো বোধহয় চিনবেন না। পিদিম জ্বালায়, চেরাগ জ্বালায়। এটা দিয়ে হারিকেন জ্বালাতে হবে। সেটাতে ফিরতে হবে।
ক্যাপাসিটি চার্জে লাগাম চায় অর্থ মন্ত্রণালয়
০৮ অক্টোবর ২২, সমকাল
বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ খাতে লোকসানের লাগাম টানতে ক্যাপাসিটি চার্জ কমানো ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন বা নতুন চুক্তির আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগকে লেখা এক চিঠিতে ভর্তুকি ছাড়ের শর্ত হিসেবে এসব নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ বিভাগ। বিদ্যুৎ খাতের ক্রমবর্ধমান লোকসান নিয়ে সমালোচনা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হলো।
ডিজেলে ব্যয় ফার্নেসের দ্বিগুণ
৮ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
দেশে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়। ডলার–সংকটের কারণে সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ে গত জুলাইয়ে সব ডিজেলচালিত কেন্দ্র বন্ধের ঘোষণা দেয়। তবে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় আগস্টের মাঝামাঝি আবার বেসরকারি খাতের ডিজেলচালিত ছয়টি কেন্দ্র চালু করা হয়। অথচ এসব কেন্দ্র বন্ধ করে ফার্নেস তেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে ব্যয় ৪৮ শতাংশ কমত।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য জানা গেছে। বাড়তি লোকসানের চাপ কমাতে ডিজেল ও ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয়ের তুলনামূলক এই বিশ্লেষণ করে পিডিবি। এতে দেখা যায়, বেসরকারি খাতের ডিজেলচালিত ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে ফার্নেস তেলে উৎপাদন ১০ শতাংশ বাড়ালেই প্রতি মাসে সাশ্রয় হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
পিডিবির দুই কর্মকর্তা বলেন, লোকসান বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়েক মাসের বিল বকেয়া পড়েছে। তাই ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সহায়তা করছে না। তারা সক্ষমতার চেয়ে কম বিদ্যুৎ দিচ্ছে। দেশে সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে ফার্নেস তেলভিত্তিক ৬৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৬ হাজার মেগাওয়াট। আর ডিজেল থেকে উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট।
গত কয়েক দিনের তথ্য বলছে, ডিজেল ও ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে দিনে সর্বোচ্চ ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। তবে অধিকাংশ সময় দিনে গড়ে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে পিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। তাঁর ফোন নম্বরে খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকেরা বলছেন, আর্থিক চাপে তাঁরা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরো সক্ষমতায় চালাতে পারছেন না। ডিজেলের বদলে ফার্নেসে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে দিনে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। কিন্তু আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ৪৫ দিন পর বিল দেওয়ার কথা থাকলেও তিন মাসের বেশি বকেয়া পড়েছে।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান করিম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের চিন্তা তাঁদেরও আছে। কিন্তু আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় তাঁরা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারছেন না।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, বেসরকারি খাতের ছয়টি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা এক হাজার মেগাওয়াট। ৫০ শতাংশ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে মাসে উৎপাদিত হবে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুৎ। প্রতি লিটার ডিজেল কিনতে খরচ হচ্ছে ১০৫ টাকা ৪৩ পয়সা। প্রতি ইউনিটে জ্বালানি খরচ ২৮ টাকা ধরলে মাসে খরচ দাঁড়ায় ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ ফার্নেস তেলে উৎপাদন ১০ শতাংশ বাড়ালেই সমান বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। বেসরকারি খাতের মালিকদের এখন প্রতি লিটার ফার্নেস তেল আমদানিতে খরচ পড়ছে ৭০ টাকা। এতে মাসে খরচ কমবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিক সংকটে পিডিবি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল দিতে পারছে না। তবে সব ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্রই চালু আছে। ডিজেলের বদলে ফার্নেস থেকে কতটা উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ আছে, তা দেখতে হবে।
দেশে গ্যাস, কয়লা, ফার্নেস, ডিজেল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি খরচ ডিজেলে এবং সবচেয়ে কম গ্যাসে। গত অর্থবছরে (২০২১-২২) ডিজেল থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবির খরচ হয়েছে ৩৬ টাকার বেশি। এ সময় ডিজেলের মোট সক্ষমতার প্রায় ১২ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে। ফার্নেস বিদ্যুৎকেন্দ্রে খরচ পড়েছে ১৭ টাকার মতো এবং ব্যবহৃত হয়েছে সক্ষমতার প্রায় ৪২ শতাংশ। কয়লা থেকে উৎপাদনে খরচ ছিল ১৩ টাকার বেশি এবং গ্যাসে সাড়ে তিন টাকার কম। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসচালিত সক্ষমতার ৪৬ শতাংশ ও কয়লার ৩৩ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে।
পিডিবি সূত্র বলছে, জ্বালানির চড়া দামে বিপুল লোকসানের চাপে পিডিবি। নিয়মিত ভর্তুকিও পাচ্ছে না তারা। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এতে আর্থিক চাপে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। ডলারের বিনিময় হারে তারতম্যের কারণে বেশি দামে ডলার কিনে তেল আমদানির ঋণপত্র খুললেও পিডিবি বিল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত বিনিয়ম হারে। তাই লোকসানের কারণে ব্যবসায়ীরা উৎপাদন বাড়াতে রাজি হচ্ছেন না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি তেলনির্ভরতা বেড়ে গেলে পিডিবির টাকার অভাব হবে, এটা অনুমেয় ছিল। বিদ্যুতের দাম বাড়ালে হয়তো তাদের আয় বাড়বে। তবে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল নিয়মিত করা উচিত। বিল পরিশোধ করে মাসে ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করলে পিডিবিরই লাভ হবে।
মানা হচ্ছে না শিডিউল বেড়েছে লোডশেডিং
০৯ অক্টোবর, ২০২২, বণিক বার্তা
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক হারে বেড়েছে লোডশেডিং। রাজধানীতে কিছুটা কম থাকলেও ঢাকার বাইরের অন্যান্য শহরসহ মফস্বলে দিনে ও রাতে গড়ে ৬-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যাপক তারতম্য তৈরি হওয়ার কারণে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গ্রিড বিপর্যয়ের পর অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন এখনো বন্ধ রয়েছে। এগুলো উৎপাদনে আসতে সপ্তাহ খানেক লেগে যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় লোডশেডিং পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তবে অন্য একটি সূত্রের দাবি, গ্যাসের ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ কমে গিয়েছে, যার কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির বিদ্যুৎ চাহিদা ও সরবরাহের তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর দেশে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। বিপরীতে সেদিন উৎপাদন হয় ১১ হাজার ৫৭ মেগাওয়াট। ওইদিন লোডশেডিং করা হয়েছে ১ হাজার ৬৯৮ মেগাওয়াট। মূলত চাহিদার ঘাটতি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো লোডশেডিং দিয়ে সমন্বয় করছে।
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
সম্রাটের কোনো মামলারই বিচার শুরু হয়নি
২৭ আগস্ট, ২০২২
যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের চারটি মামলার কোনোটিরই বিচার শুরু হয়নি। তবে তিনটি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আরেকটি মামলার তদন্তই শেষ হয়নি।
ক্যাসিনোবিরোধী র্যাবের অভিযানে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে সম্রাট ও তাঁর সহযোগী এনামুল হক ওরফে আরমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই অভিযানে যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমসহ মোট ১৩ জন গ্রেপ্তার হন।
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল থেকে ১১ মের মধ্যে চার মামলায় জামিন পান সম্রাট। তবে এক সপ্তাহ পর ১৮ মে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় হাইকোর্ট জামিন বাতিল করে তাঁকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। সর্বশেষ ২২ আগস্ট তিনি এই মামলায় জামিন পান। এরপরও তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। গতকাল শুক্রবার তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তিনি সমর্থকদের নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ বিভন্ন এলাকায় মহড়া দেন। এতে ছুটির দিনেও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা দেয়।
সম্রাটের চার মামলা
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সম্রাট ও তাঁর সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া মানি লন্ডারিং আইনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, মানি লন্ডারিং ছাড়া বাকি তিনটি মামলায় সম্রাটের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে একটি মামলারও অভিযোগ গঠন হয়নি। অবশ্য গ্রেপ্তারের দিন বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।
মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সম্রাটের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ১৯৮ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করা টাকার বড় অংশই তিনি সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনোতে খরচ করেন। ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত তিনি শুধু সিঙ্গাপুরেই গেছেন ৩৫ বার। একই সময়ে তিনি মালয়েশিয়ায় গেছেন তিনবার।
মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, সম্রাটের পাচার করা অর্থের বিষয়ে তথ্য চেয়ে গত বছরের অক্টোবরে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠির জবাব না পাওয়ায় তাঁরা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিতে পারছেন না।
ভবন দখল, অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ
রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টার দখল করে নিজের ও যুবলীগ দক্ষিণের কার্যালয় বানান সম্রাট। সেখান থেকে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট স্বীকার করেন, ‘গডফাদারদের’ পক্ষে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও তদবির করলেও একসময় তিনি নিজেই রাজনৈতিক পর্যায়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার প্রধান নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি। পাশাপাশি মার্কেট ও ফুটপাতে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করে তিনি প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকা পেতেন।
র্যাব ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট বলেন, ছয়টি ক্যাসিনোর একেকটি থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০ লাখ করে ৬০ লাখ টাকা পেতেন। তৎকালীন একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও খালেদ মাহমুদ তাঁর জন্য চাঁদা তুলতেন। এসব টাকার হিসাব রাখতেন তাঁর সহযোগী আরমান।
জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট র্যাব ও পুলিশকে কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে বলেন, ক্যাসিনো পরিচালনা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ এসব নেতা তাঁকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিতেন।
দুই দিন আগে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া পাঁচজনকে পাওয়া গেল র্যাবের কার্যালয়ে
২৭ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
গত বুধবার রাতে কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলা থেকে মাদ্রাসার তিন শিক্ষকসহ নিখোঁজ পাঁচজনের সন্ধান পাওয়া গেছে। নিখোঁজের দুই দিন পর আজ শনিবার বেলা ১১টায় র্যাব-১২ কুষ্টিয়া কার্যালয়ে তাঁদের দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার কুমারখালী থানায় প্রতারণার অভিযোগে হওয়া একটি মামলার আট আসামিকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে র্যাব। তাঁদের মধ্যে নিখোঁজ পাঁচজনকে দেখা যায়। গতকাল দিবাগত রাত ১১টার পর কুষ্টিয়া ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এই আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাব দাবি করেছে।
র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবাই মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি সানরাইজ বিজনেস সার্ভিস লিমিটেড (এসবিএসএল) কর্মকর্তা। প্রতারণার মাধ্যমে তাঁরা গ্রাহকদের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনার বিস্তারিত জানাতে আজ বেলা ১১টায় র্যাব-১২ কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন করেন ক্যাম্পের কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান।
তারা কোথায় অদৃশ্য হয়ে যান
৩০ আগস্ট, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
‘আমাদের প্রিয় মানুষটি কেমন আছেন? তিনি কি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করেন? তাকে কি নির্যাতন করা হয়? তিনি কি… বেঁচে আছেন?’
এসব প্রশ্ন ‘গুম’র শিকার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের তাড়া করে। কারণ, তারা সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে আশা নিয়ে সপ্তাহ, মাস ও বছর কাটান।
সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।
বাংলাদেশে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৫২২ জন ‘গুম’ হয়েছেন বলে জানিয়েছে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন।
‘গুম’ থেকে মুক্তি পাওয়া বেশিরভাগ মানুষ বাড়ি ফেরার পর জনসাধারণের কাছ থেকে দূরে থাকেন। তারা কোথায় ছিলেন বা কে তাদের নিয়ে গিয়েছিলেন তা প্রকাশ করেন না।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) গত মার্চের সমীক্ষায় বলা হয়, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ঘটে যাওয়া ‘গুমের’ ঘটনাগুলোয় দেখা গেছে, ‘গুম’ হওয়া ৩০ শতাংশ ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের কেউই এ বিষয়ে কথা বলেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ‘গুম’ থেকে ফিরে আসা ৫ জন তাদের প্রিয়জনদের প্রাসঙ্গিকভাবে জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
যদিও পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে প্রতিটি অলি-গলিতে খুঁজেছিলেন, তবুও সেই ব্যক্তিদের দাবি, তারা রাজধানীর ভেতরেই ছিলেন।
বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের ভাষ্য, ঢাকায় কমপক্ষে ২টি কেন্দ্র আছে যেখানে ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের রাখা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এর একটি নিরাপত্তা বাহিনী ও অন্যটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পরিচালনা করে। দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলাতে আরও একটি কেন্দ্র আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের দাবি, কেন্দ্রগুলো পুরোপুরি অবৈধ এক কারাগার। জনগণের টাকায় আইনশৃঙ্খলা ও দেশকে রক্ষার নামে এসব কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে।
সূত্রের গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে দ্য ডেইলি স্টারে ইউনিটগুলোর নাম প্রকাশ করা হলো না।
বেঁচে থাকা ২ জনের বর্ণনা একটি অপরটির সঙ্গে মিলে যায় এবং একটি কেন্দ্রের দিকে নির্দেশ করে। ধরি কেন্দ্রটি ‘উ’।
বেঁচে থাকা অপর ৩ জনের বর্ণনা দ্বিতীয় একটি কেন্দ্রের নির্দেশ করে। ধরি সেটি হচ্ছে ‘ক’।
তাদেরকে ২ মাস থেকে দেড় বছর পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। তাদের আটকে রাখা হয়েছিল ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে।
বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে ৪ জনকে রাজনৈতিক কারণে এবং তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রমের জন্য তুলে নেওয়া হয়েছিল। অপর একজন, যাকে ‘ক’ কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল, তুলে নেওয়া হয়েছিল ভুল পরিচয়ে।
তাদের সবাইকে ঢাকা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। যা সিজিএসের গবেষণার সঙ্গে মিলে যায়—যেখানে দেখা গেছে যে এক-তৃতীয়াংশ গুমের ঘটনা ঘটেছে শুধু রাজধানীতে।
বর্ণনায় ‘উ’ কেন্দ্রে ভুক্তভোগীরা কঠোর ও অমানবিক জীবনযাপন এবং নির্যাতনমূলক জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলেছেন। ‘ক’ কেন্দ্রের ভুক্তভোগীরা বন্দিদের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু রয়েছে এমন একটি কারাগারের বর্ণনা দিয়েছেন।
উভয়ক্ষেত্রেই একজন ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্জন কারাবাসে, নির্বিচারে ও বেআইনিভাবে অন্তহীন সময়ের জন্য আটকে রাখার উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে বন্দি জানেন না যে তিনি মুক্তি পাবেন, নাকি এখানেই তার জীবন শেষ হবে।
কেন্দ্র ‘উ’ এ বন্দিদের বর্ণনা অনুযায়ী, তাদেরকে প্রায় আড়াই ফুট প্রস্থ, ৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৫ ফুট উচ্চতার কক্ষে বন্দি রাখা হয়েছিল। ‘এমনভাবে কেউ শুয়েও থাকতে পারবে না বা দাঁড়ায়েও থাকতে পারবে না। সেখানে সব সময় আধা বসা ও আধা শোয়া অবস্থায় থাকতে হবে।’ কক্ষের ৩ দিকে কংক্রিটের দেয়াল এবং ১ দিকে কারাগারের দরজা ছিল।
বন্দিদের মধ্যে ১ জনকে দক্ষিণের একটি জেলায় স্থানান্তরের আগে ৪ মাস সেখানে রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে একই কেন্দ্রের মধ্যে একটি বড় সেলে স্থানান্তরের আগে আরেক বন্দিকে সেখানে এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময় ধরে রাখা হয়েছিল।
উভয় বন্দিই ‘উ’ কেন্দ্রে থাকাকালীন পুরো সময় চোখ বেঁধে ও হাতকড়া পরা অবস্থায় ছিলেন বলে জানান।
একজন বন্দি বলেন, ‘খুব অন্ধকার ছিল, কিন্তু তারপরও আমার চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। প্রত্যেকেরই চোখ বাঁধা ছিল। সেলটি ২ তলা মাটির নিচে ছিল। তারা সেখানে অন্তর্বাস ছাড়া বাকি সব জামা-কাপড় খুলে ফেলে। একটি লুঙ্গি দেয়। লুঙ্গিটি অনেক পরে, বিবস্ত্র করার অনেক ঘণ্টা পরে দিয়েছিল।’
সেখানে একজন প্রহরী তাদের অবস্থা দেখে দয়া করে গোপনে রাতে তাদের হাতকড়া খুলে দিতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বন্দিত্বের পুরো সময়কালে হাত পিছনে হ্যান্ডকাফ দিয়ে বাধা ছিল। শুধুমাত্র খাওয়া ও টয়লেটে যাওয়ার সময় খুলে দেওয়া হতো।’
‘উ’ কেন্দ্রে ৩ মাসের কম সময় বন্দি থাকা একজন বলেন, ‘একজন চাচা ছিলেন, প্রবীণ প্রহরী; তিনি কয়েক ঘণ্টার জন্য মধ্যরাতের পর আমাদের হাত খুলে দিতেন। তখন আমরা চোখ খুলতে পারতাম। আমি বন্দি থাকাকালীন ৩ রাতে তাকে পেয়েছিলাম।’
তিনি জানান, ‘উ’ কেন্দ্রে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে একটি বড় সেলে স্থানান্তর করা হয়। ‘আমি ধাতবের তৈরি সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় সেলে গিয়েছিলাম। সেখানে একটি বড় ঘর ছিল, কিন্তু সেটি ছিল অত্যন্ত গরম এবং সেখানে প্রচুর মশা ছিল। সেখানে স্ট্যান্ডফ্যান ছিল, কিন্তু সেটা মাঝে মাঝে চালু করা হতো। তারা জানতো ঠিক কতক্ষণ সেটি চালালে আমরা বেঁচে থাকতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেঝেটি ভাঙা সিমেন্টের ছিল এবং আমাদেরকে মেঝেতে বিছানা ছাড়াই ঘুমাতে হতো। আমাকে এক বোতল পানি দেওয়া হয়েছিল এবং সেটিকেই আমি বালিশ হিসেবে ব্যবহার করতাম। রাতে মেঝে যে এত ঠাণ্ডা হতে পারে…’
৬ মাসের কম সময় কেন্দ্রে থাকা আরেক বন্দি বলেন, ‘যতদিন আমি ওই কেন্দ্রে ছিলাম, আমাকে চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল। কেন্দ্রটি সম্ভবত ৩ তলা মাটির নিচে ছিল।’
তিনি জানান, এটি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কারণ যখন তাকে অন্য কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছিল, তখন তারা তাকে ৩ তলায় উঠতে বাধ্য করেছিল এবং তারপরে তিনি সরাসরি সেই তলায় থাকা একটি গাড়িতে উঠেছিলেন।
প্রথম বন্দির মতো তার সেলটিতেও শোয়ার জন্য যথেষ্ট জায়গা ছিল না এবং তিনি কয়েক মাস ধরে বসে ছিলেন।
ভুক্তভোগী ২ জনই জানান, খাবার দেওয়ার সময় প্লেট ও দরজার আওয়াজ শুনে তারা বন্দিদের সংখ্যা গণনা করেছেন।
প্রথম বন্দি বলেন, তার মনে আছে ১২টি সেল গুনেছিলেন, যেগুলো ছিল মুখোমুখি। ‘একজন দয়ালু প্রহরীর সহযোগিতার কারণে যখন প্রথমবারে মতো চোখ খুলতে পেরেছিলাম তখন আমার বিপরীত পাশের সেলটি দেখেছিলাম। যখন তারা আমাদেরকে খাবার দিতো তখন আমি সেলের দরজায় ধাক্কা দেওয়ার শব্দ থেকেও গুনেছি।’
দ্বিতীয় বন্দি বলেন, ‘ওই দীর্ঘ হলটিতে আমরা প্রায় ১৪ জন ছিলাম। খাবারের সময় মেঝেতে ধাতব প্লেটের আওয়াজ শুনে আমি এটা গুনেছি।’
একইভাবে, তাদেরকে আটকের সময়কালে ৫ বছরের ব্যবধান থাকলেও জিজ্ঞাসাবাদের সময় ২ জনকেই নির্যাতন করা হয়েছিল।
একজন বলেন, ‘আমাকে ৬ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। আমার শরীরের প্রতিটি অংশে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের নির্যাতনের পদ্ধতি সিনেমার মতো। তারা উপরে থেকে তীব্র তাপ দেওয়ার জন্য কিছু একটা ব্যবহার করেছিল। তাদের নির্যাতনে আমার নাক দিয়ে রক্ত পড়েছে। আমি সেলে ফিরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।’
অপরজন দাবি করেন, ‘আমাকে গোড়ালি ও কব্জি বেঁধে একটি কাঠের চেয়ারে বসানো হয়েছিল। তারা আমার কানের লতিতে ২টি ক্লিপ সংযুক্ত করে, যেগুলো ২টি ব্যাটারির সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। তারা একটি করে প্রশ্ন করে আর আমার কানে শক দেয়। তারা হুমকি দিতে থাকে যে আমি তাদেরকে সহযোগিতা না করলে আমার যৌনাঙ্গে ক্লিপ লাগিয়ে দেবে। তাদের নির্যাতনে প্রস্রাব করে দিয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রার্থনা করার চেষ্টা করলে আমাকে মারধর করা হবে বলে তারা বলতেন। তারা বলতেন যে আমার মতো পাপীর প্রার্থনা করার দরকার নেই।’
তিনি অপর একটি কেন্দ্রে নির্যাতনের আরেকটি পদ্ধতিও বর্ণনা করেছেন। রাজধানী থেকে তুলে নেওয়ার পর তাকে রাজধানীর বাইরে দক্ষিণ দিকে অন্য একটি কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
দ্য ডেইলি স্টার আটক ব্যক্তির নিরাপত্তার স্বার্থে জেলার নাম প্রকাশ করছে না।
তিনি বলেন, ‘সেই জায়গায় পৌঁছাতে কয়েক ঘণ্টা লেগেছিল। সেই জেলায় যাওয়ার পথে বাসের কন্ডাক্টররা যখন যাত্রীর জন্য চিৎকার করে এলাকার নাম বলছিল, সেটা শুনেছিলাম। তাই জানি যে আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জায়গাটির খুব কাছেই একটি লঞ্চ জেটি ছিল, কারণ আমি সেখানে থাকার সময় জাহাজের হুইসেল শুনতে পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ওই কেন্দ্রে নির্যাতনের পদ্ধতি ছিল জোর করে খাওয়ানো। ‘তারা ৭-৮ কেজি গরুর মাংসের বালতি নিয়ে আসত। আমাকে বলত, আপনাকে এর অর্ধেক খেতে হবে। প্রতি বেলায় খাওয়ার জন্য ৬টি ডিম দিত।’
‘আপনার কোনো ধারণাই নেই যে তারা প্রত্যেক বন্দির পিছনে কত টাকা খরচ করে’, যোগ করেন তিনি।
ওই নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দেয়ালগুলো ছিল ঢেউতোলা টিনের এবং বন্দিদের যেখানে রাখা হতো সেগুলো বড় বড় পশুর খাঁচার মতো। ‘আমি সেগুলোর ভেতরে পা ছড়াতে পারতাম। সেখানে, আমার হাত সামনের দিকে আটকে রাখার পরিবর্তে, একটি হাত একটি হ্যাণ্ডকাফের সঙ্গে আটকে সেটিকে খাঁচার বাইরে একটি হুকের সঙ্গে সংযুক্ত লম্বা দড়িতে বাঁধা ছিল।’
লম্বা ঘরের ভেতরে ৪টি খাঁচা ছিল বলে জানান তিনি।
‘একটা সময় আসে, যখন অন্য ৩ জনকে একদিন নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে যারা নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা ফিরে এসে বলেন, ওই ৩ জনের একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, অন্য ২ জনকে “ক্রসফায়ারে” গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেই মুহূর্তে থেকে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি আতঙ্কে ছিলাম যে, এই ভাবেই আমাকেও হত্যা করা হবে’, যোগ করেন তিনি।
‘ক্রসফায়ারে’র হুমকি জিজ্ঞাসাবাদের একটি হাতিয়ার এবং নির্যাতনের পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ‘আমাকে শহরের একটি বড় হাইওয়েতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চোখ বেঁধে এবং হ্যাণ্ডকাফ লাগিয়ে। আমি জানি না সেটা কোন হাইওয়ে। যখন আমরা সেখানে পৌঁছলাম, সবাই আমাকে রেখে গাড়ি থেকে নেমে গেল। আমি অনুভব করতে পারছিলাম যে একজন লোক ঢুকছেন। তিনি আমার কাছে জানতে চান, আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কি কি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আমাকে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে দৌড়াতে বলা হয়। আমি ভয় পেয়েছিলাম যে পেছন থেকে গুলি করা হবে, তাই আমি দৌড় না দিয়ে ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলাম’, বলেন তিনি।
আটককৃতরা উভয়েই বলেন, বন্দিশালাগুলোর ভেতর থেকে যেন শব্দ বাইরে না যায় সেজন্য বড় মেশিনের শব্দ ব্যবহার করা হতো।
একজন বন্দি বলেন, একটি বড় জেনারেটর সব সময় চলত। আওয়াজের কারণে আমার নাক-গলা থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে।
অপর বন্দি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে খুব জোরে গান বাজানো হতে। ‘এতে আমার মাথা ব্যথা শুরু হতো।’
তিনি আরও বলেছিলেন যে তাকে মাঝরাতে গোসল করতে হতো। ‘আমি খালি গায়ে থাকতাম এবং একটাই লুঙ্গি ছিল। প্রতিবার লুঙ্গি ভিজালে না শুকানো পর্যন্ত ভেজা লুঙ্গিটিই পড়ে থাকতে হতো। আমার ঠাণ্ডার সমস্যা আছে এবং এভাবে ভেজা লুঙ্গি পড়ে থাকা ছিল আমার জন্য নির্যাতন।’
৫ বছর পরে কেন্দ্রে লন্ড্রি সিস্টেমের কিছুটা উন্নত হয়। অপর বন্দি বর্ণনা করেন, ‘তাদের কাছে লুঙ্গি ও টি-শার্ট ছিল। বন্দিদের মধ্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেগুলো দেওয়া হতো। আমরা টি-শার্ট ও লুঙ্গি ধুয়ে শুকাতে পারতাম এবং বদলে নিতে পারতাম।’
বন্দি উভয়েরই চুল-দাড়ি কাটা হয়েছিল মুক্তির ঠিক আগে, একবারই।
কেন্দ্র ‘ক’
কেন্দ্র ‘ক’ এর ৩ বন্দি তাদের বর্ণনায় কেন্দ্র ‘উ’ এর থেকে তুলনামূলক ভালো সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা বলেছেন এবং নির্যাতনের কথা বলেননি।
সব বন্দি কেন্দ্রটিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কারাগার বলে বর্ণনা করেছেন। যেখানে নিজস্ব রান্নাঘর, সেলুন, ডাক্তারের কক্ষ, বাথরুম, বিছানা ও কম্বলসহ কক্ষ, হাই কমোড টয়লেট এবং এমনকি বন্দিদের পড়ার জন্য বইও রয়েছে।
বন্দিদেরকে অনেকে সম্মানের সঙ্গে ‘স্যার’ বা ‘চাচা’ বলে ডাকতেন।
কিন্তু এর কোনোটিই এই সত্যকে অস্বীকার করে না যে, ওই বন্দিদেরকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ২ বছর পর্যন্ত নির্জন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল এবং তাদের পরিবার জানত না যে তারা মারা গেছেন নাকি বেঁচে আছেন।
এক বন্দি বলেন, ‘আমার ঘরে একটি লোহার খাট ছিল এবং গদি তৈরি করার জন্য ৪টি কম্বল দেওয়া হয়েছিল। একটি লাইট সব সময় জ্বলত এবং একটি দরজার কোণে এক্সজস্ট ফ্যান চলত।’
সাধারণ পেশাদার ওই ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল বিরোধী রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনার সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্যক্রমের জন্য।
বন্দি হওয়ার কয়েকদিন পর তিনি পড়ার জন্য একটি বই চেয়েছিলেন। ‘তারা আমারকে একটি বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ড দেন এবং যখন আমি প্রথম খণ্ড চাইলাম, তারা জানান যে সেটি অন্য একজন বন্দি পড়ছেন। পরে, যখন আমি একটি বইয়ের নাম বলে চাইলাম, তখন তারা সেটি দোকান থেকে কিনে আনেন। তবে বইয়ে দোকানের নাম লেখা প্রথম পাতাটি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল।’
বন্দিদের হাতকড়া পড়ানো হয়নি, এমনকি কক্ষে থাকা অবস্থায় চোখও বেঁধে রাখা হয়নি। এর একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যে তাদের কক্ষে ২টি দরজা ছিল। একটি জেল সেলের মতো দণ্ডযুক্ত এবং আরেকটি শক্ত দরজা। তাই তারা বাইরে কিছুই দেখতে পাননি।
তিনি বলেন, ‘দরজার নিচে দিয়ে একটি ছোট ফাঁক বানানো ছিল, সেখান দিয়ে খাবার কক্ষের ভেতরে দিত। আমি ঘরের ভেতরেই হাত ধুতাম।’
প্রতিবার কক্ষের বাইরে নেওয়ার সময় তাদের পুরো মাথা কালো একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতো এবং হাতকড়া পড়ানো হতো। টয়লেটে যাওয়ার সময়ও একই কাজ করা হতো।
তিনি বলেন, ‘একবার কালো কাপড়টি সড়ে গেলে আমাকে যে প্রহরী নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি আবার সেটি পড়ানোর প্রয়োজন মনে করলেন না। আমি আমার ডানদিকে একটি রান্নাঘর এবং সেখানে একজন নারীকে রান্না করতে দেখলাম।’
সব খাবার গরম গরম পরিবেশন হতো এবং বন্দিরা খাবার বেছে নিতে পারতেন। একজন বন্দি বলেন, ‘দুপুরের খাবারের সময় আমাকে শাক, তেলাপিয়া মাছ, ২টি ডিম ও ডাল দেওয়া হয়। আমি যখন তাদের বলি যে আমি চাষ করা মাছ ও ডিম খেতে চাই না, তখন তারা আমার জন্য গরুর মাংস নিয়ে আসেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোজায় সেহরিতে আমাকে গরম দুধ, একটি বড় কলা, ভাত, শাকসবজি ও প্রোটিন এবং ইফতারের জন্য ফল, জুস, ভাজা খাবার, ছোলা ও মিষ্টি দেওয়া হতো।’
বেশ কয়েকজন বন্দি বর্ণনা করেছেন যে বিশেষ দিনগুলো তারা বিশেষ খাবার পেতেন। সকালে পরাটা, সেমাই, ভাত ও বাদামের মিষ্টি এবং দুপুর ও রাতে তেহারি, ভাত, গরুর মাংস ও মুরগির মাংস দিয়েছে।
এক বন্দি বলেন, ‘যতবার আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, প্রতিবারই জানতে চাওয়া হয়েছে যে, আমাকে খাবার দেওয়া হচ্ছে কিনা এবং ভালো ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা। কিন্তু আমার সঙ্গে যতই ভালো আচরণ করা হোক না কেন, এটি কোনো জীবন না। আমি আমার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম এবং তারা আমার জীবনকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিল।’
একজন প্রহরী একবার একজন বন্দিকে বলেছিলেন, ‘আমি দিতে পারব না এমন কিছু না চাইলে, এখানে যা চাইবেন তাই পাবেন।’ এই দিতে না পারার মতো চাওয়া হচ্ছে, তাদের পরিবার বা বন্ধুদেরকে তাদের সম্পর্কে খবর দেওয়া।
বন্দিরা ২ ধরনের কক্ষের বর্ণনা দিয়েছেন। একটি দেয়ালের মুখোমুখি এবং অন্যটি বারান্দার দিকে।
দেয়ালের মুখোমুখি সেলে ছিলেন এমন একজন বন্দি জানান, তার সেলের শক্ত দরজা বেশিরভাগ সময় খোলা রাখা হতো। কিন্তু প্রত্যেকবার তাকে বাথরুমে নেওয়ার জন্য বন্ধ করা হতো, যাতে তিনি তাদেরকে দেখতে না পারেন। এই আটক ব্যক্তিকে ভুল পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল।
বারান্দার মুখোমুখি সেলে থাকা অপর একজন বন্দি জানান, তার কক্ষে একটি ছোট ভেন্টিলেটর ছিল। সেখান দিয়ে তিনি বাইরে দেখতে পেতেন। তার সেল ছিল নিচতলায়।
তিনি বলেন, ‘ছোট ভেন্টিলেটর দিয়ে আমি একটি কাঁঠাল গাছে কাঁঠাল ধরতে এবং সেগুলো বড় হতে দেখেছি। আমি বৃষ্টি দেখেছি, পাখির শব্দ শুনেছি। আমি একটি ছেলেকে গিটার বাজাতে শুনেছি এবং তার বোন তার মায়ের কাছে তাকে নিয়ে অভিযোগ করছে সেটাও শুনেছি।’
এই স্বাভাবিক, সুন্দর পৃথিবীর ঠিক পাশেই তিনি নির্জন কারাবাসে বন্দি ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি একবার পাশের সেলমেটের সঙ্গে কথা বলার জন্য দেয়ালে টোকা দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। দেয়ালগুলো প্রায় ১০ ইঞ্চি পুরু এবং অনেক উঁচু ছিল।’
তিনি বন্দি থাকা প্রতিটি দিন গুনেছেন। কাঠের একটি ছোট টুকরা ব্যবহার করে দেয়ালের নীচে তারিখ লিখতেন। জাতীয় দিবসগুলো হিসাব করে তিনি সঠিক হিসাব লিখে রাখতে পারতেন। বাইরে দেশাত্মবোধক গান শুনে তিনি বুঝতে পারতেন, এটি কোন তারিখ।
তিনি বলেন, ‘আগে যারা এই কক্ষে বন্দি ছিলেন তারা অনেক কিছু লিখেছিলেন। সেখানে কবিতা থেকে শুরু করে আরবি লেখা, হিন্দু ধর্মীয় চিহ্ন পর্যন্ত ছিল। একদিন কয়েকজন লোক এসে দেয়াল পেইন্ট করে দিয়ে যায়।’
একবার তিনি পা পিছলে বাথরুমে পড়ে যান এবং এক্স-রে করার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয়।
তিনি বলেন, ‘তারা আমার মাথা ঢেকে একটি গাড়িতে নিয়ে যায়। এই প্রথম আমি আমার মুখে সূর্য অনুভব করলাম। আমি শুনলাম রিকশাওয়ালারা ঝগড়া করছে। আমি একবার ভাবলাম, পালাই। কিন্তু পরেই মনে হলো, তারা গুলি করবে বা ধরে ফেলবে। এমন কিছু হলে আর এখন যেমন আরামে রেখেছে সেটা আর করবে না। তখন নির্যাতন করতে পারে। আমি কর্মকর্তাদের দেওয়া আশ্বাসে মনকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছিলাম যে, সময় হলে আবার বাড়ি ফিরব।’
আরেকজন বন্দি বর্ণনা করেন, কিভাবে তিনি পাশের সেল থেকে প্রচুর কান্নার শব্দ শুনতে পান। তিনি বলেন, ‘যদি তিনি খুব কান্নাকাটি করতেন, তাকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হতো। তারপর ফিরে অনেকক্ষণ ঘুমাতেন।’
সবকিছু ছাড়িয়ে নির্জন কারাবাসটিই তাদের জীবনে সবচেয়ে কঠিন অভিজ্ঞতা ছিল। বিষয়টি এতটাই দুর্বিষহ ছিল যে, তারা সেই সময়ের একমাত্র ভালো অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন সেই প্রহরীদের সঙ্গে আলাপচারিতা। বাইরের বিশ্বের সঙ্গে তাদের একমাত্র যোগাযোগ ছিল সেটিই।
অনেক বন্দি তাদের সম্পর্কে সম্মান দিয়ে কথা বলেছেন, অনেকটা স্নেহের সঙ্গে, যারা তাদের তদারকি করেছেন। যদিও তারা জানতেন যে, এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে তারাও জড়িত।
তাদের বক্তব্যকে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করা খুবই সহজ। কারণ তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না। কিন্তু তাদের বর্ণনা শুনে প্রশ্ন জাগে, পরিচয় প্রকাশ করে কে আবার সেই নির্যাতিত জীবনে ফিরে যেতে চাইবে?
গুম নিয়ে স্বাধীন তদন্তের বিষয়টি আবার এল মানবাধিকার পরিষদে
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, প্রথম আলো
বাংলাদেশে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর। এ তথ্য জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে জানানো হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গতকাল সোমবার মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশনের সূচনায় ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল নাশিফ বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে ওই তথ্য জানান। তিনি বাংলাদেশে গত মাসে তখনকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতের সফরের কার্যক্রমের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন।
৪৭ সদস্যের মানবাধিকার পরিষদে নাদা আল নাশিফ জানান, গত মাসে মিশেল ব্যাশেলেত বাংলাদেশে তাঁর প্রথম সফরের সময়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেছেন এবং সামগ্রিকভাবে সব উদ্বেগের বিষয় কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেছেন। সাবেক হাইকমিশনার ডিজিটাল জগতে মতপ্রকাশ রুদ্ধ করে এমন আইনগুলো পর্যালোচনায় জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
অনলাইন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন ও প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন এবং ওটিটি নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়াকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানসম্মত করার জন্য কমিশনের সহায়তার প্রস্তাবের কথা ব্যাশেলেত তাঁর সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেছিলেন।
নাদা আল নাশিফ জানান, মিশেল ব্যাশেলেত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে জোরপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন, বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং ওই কাজে সাহায্য করার কথাও বলেছেন।
যদিও সরকার দেশে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
জাসদ নেতাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখাল ডিবি
১৪ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
নোয়াখালী শহরের মাইজদীর বাড়ি থেকে মঙ্গলবার ডিবি পরিচয়ে মহাজোটের শরিক জাসদের (ইনু) জেলা সভাপতি নুর আলম চৌধুরী পারভেজকে (৬২) তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে পরিবার। প্রথমে আটকের তথ্য অস্বীকার করলেও পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার বিকেলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় ডিবি।.. ..
সূত্র জানায়, পারভেজ জাসদ করলেও তাঁর লন্ডন প্রবাসী ছোট ভাই শামছুল আলম লিটন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। লিটন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনিক দিনকাল পত্রিকার প্রতিনিধি এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের উপ-প্রেস সচিব ছিলেন। তিনি ‘সুরমা’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক এবং সম্প্রতি পত্রিকাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গুমের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে
১৫ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার কারণে ‘মায়ের ডাক’-এর সদস্যদের ওপর সরকার সমর্থকদের মতাদর্শিক আক্রমণ এবং কলঙ্কিত করার অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ১৯ জন নারী অধিকার কর্মী। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, সরকারি দলের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত কিছু ব্যক্তি মায়ের ডাকের নারী সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেনস্তা এবং কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। তাঁরা বলেন, একাধিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রতিপক্ষ বা সমালোচক বা প্রতিবাদী কেউ বা নিপীড়নে আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার পথ বেছে নিয়েছে। তাঁদেরকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বিতর্কিত নারী’ হিসেবে কলঙ্কিত করছে। মায়ের ডাকের সদস্যদের বিরুদ্ধে যাঁরা এই জঘন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, আদিবাসী অধিকার সুরক্ষাকর্মী রানী য়েন য়েন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়েমা খাতুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাদাফ নূর, মানবাধিকার কর্মী ও থাইল্যান্ড মাহিডল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোজিনা বেগম প্রমুখ।
ক্রসফায়ার ক্রস-চেক/ লিংক রোডে হঠাৎ পুলিশের চিৎকার, এরপরই যুবকের পায়ে ঠাণ্ডা মাথার গুলি
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, চট্টগ্রাম প্রতিদিন
‘বন্দুকযুদ্ধ’— এই শব্দবন্ধের সঙ্গে মোটামুটি সবাই পরিচিত। থানায় আটক বন্দিকে নিয়ে কথিত অস্ত্র উদ্ধার, গুলি-পাল্টা গুলির মাঝে পড়ে এই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শেষ পর্যন্ত প্রাণ হারান বন্দি। প্রাণ না হারালেও অনেকেই হারান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। ‘বাধ্য হয়ে আত্মরক্ষার্থে’ এমন ঘটনা ঘটে— প্রতিবার এমনটিই দাবি করা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। এমনই এক ঘটনায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণে বাঁচলেও ঠান্ডা মাথার বুলেটে পা হারান সাইফুল নামের চট্টগ্রামের এক যুবক। পুলিশের পাঠানো প্রেসরিলিজের বরাত দিয়ে ‘দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে পত্রপত্রিকায় প্রচারিত হলেও ঘটনাটি যাচাই করতে গিয়ে জানা গেল চাঞ্চল্যকর কাহিনী।
সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে আছে প্রায় দেড় ডজন মামলা। যদিও অপরাধজগতের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা আছে— এমন দাবি পুলিশ করলেও সাইফুলের অভিযোগ, বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার কারণেই তাকে জড়ানো হয়েছে একের পর এক মামলায়। তার অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণেই তিনি পুলিশের চক্ষুশূল হয়েছেন। আর এ কারণেই পুলিশের ঠান্ডা মাথার গুলিতে তাকে চিরতরে হারাতে হয়েছে একটি পা।
২০২১ সালের ১৬ জুন জনসম্মুখ থেকে ধরে নিয়ে সাইফুলকে পায়ে গুলি করে ফেলে রাখা হয় চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ লিংক রোড এলাকায়। ঘটনার পরদিন পুলিশ জানায়, সাইফুল পুলিশের ওপর গুলি করে, আর পুলিশও পাল্টা গুলি করলে সেই গুলি লাগে তার হাঁটুতে। আর এতেই তার একটি পা হারাতে হয়। কিন্তু দেখা গেছে, সাইফুলের একটি পা নিয়েও শান্ত হয়নি বায়েজিদ থানার পুলিশ।
পা হারানোর পর ৯ মাস জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে সাইফুল ঘুমাতে পারছেন না পুলিশের হয়রানিতে। কিছুদিন পর পরই বায়েজিদ থানা পুলিশের টহল টিম গিয়ে হানা দেয় তার বাড়িতে। এমনকি মধ্যরাতে গিয়েও পুলিশ ভাঙচুর করেছে তার বাড়িতে।
সাইফুলের সঙ্গে কী ঘটেছিল কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ সেই রাতে, চট্টগ্রাম প্রতিদিন সেই ঘটনা জানতে মুখোমুখি হয়েছিল সাইফুলের।
জামান হোটেল থেকে ধরে নিয়ে গ্রেপ্তার লিংক রোডে
২০২১ সালের ১৬ জুন। রাত তখন ৮টা। নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বের হলে সাইফুলকে ফোন দেন বায়েজিদ থানার সোর্স আকাশ। ফোনের ওপাশ থেকে সোর্স আকাশ জানান, একটি মামলার বিষয়ে জরুরি কথা আছে, দেখা করতে হবে এখনই। সাইফুলও দেরি না করে আকাশের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী নগরীর অক্সিজেন মোড়ে গিয়ে পৌঁছান।
সোর্স আকাশের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তারা কথা বলার জন্য অক্সিজেনের জামান হোটেলে যান। খাবার অর্ডারের পর মামলার বিষয়ে কথা শুরু করেন। ১৬ জুন রাত পর্যন্ত সাইফুলের নামে ১৮টি মামলা ছিল। অর্ধেক খাওয়ার পর সাইফুল ও আকাশকে হঠাৎ সাদা পোশাকে এসে ঘিরে ধরেন বায়েজিদ থানার সদ্য বিদায়ী ওসি কামরুজ্জামান, এসআই মেহের অসীম দাশ, এসআই তানভীর, রবিউল, সাইফুলসহ আরও তিন পুলিশ সদস্য। তাদের সবাই মাস্ক পরা ছিলেন।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে সাইফুল বলেন, ‘এ সময় ওসি কামরুজ্জামান টেবিলের ওপরে থাকা আমার মোবাইল ও বাইকের চাবি নিয়ে পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে বলেন—একদম চুপ, কোনও কথা বলবি না। এরপর একজন আমাকে মাস্ক পরিয়ে হোটেলের সামনে থাকা একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কারের ভেতর ঢুকিয়ে চোখেমুখে গামছা দিয়ে এবং হাতে হাতকড়া পরিয়ে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দেন তারা।’
তিনি বলেন, ‘গাড়ি ঘণ্টাখানেক চলার পর আমি গামছার নিচ দিয়ে দেখলাম গাড়িটি ব্লুসম গার্ডেন নামের কোনো এক রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপর ওসি কামরুজ্জামান ফোন করে অপর প্রান্তে থাকা কাউকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন, ‘তোমরা ড্রেস পরে জামানে যাও, তারপর রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত হোটেলের সব সিসিটিভি ফুটেজ ডিলিট করে দাও। আর বলবা ওপরের নির্দেশ আছে।’
‘আমাকে প্রাইভেট কারের পেছনের সিটের মাঝখানে রেখে আরও দুজন দুই পাশে এবং ওসি নিজে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছিলেন। গাড়িতে থাকা কেউই কোনো কথা বলছে না। তখন আমি বলি, ‘স্যার, আমার পরিবার আছে, ছোট ভাই-ব্রাদার আছে, আমাকে আপনারা মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে দেন। অথবা টাকা-পয়সা লাগলে বলেন, আমি টাকা দেবো। কিন্তু তারা কোনো সাউন্ড করেননি’—যোগ করেন সাইফুল।
ওই রাতের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া না গেলেও সেদিনের ঘটনার একটি ছবি নিজের মুঠোফোনে ধারণ করেন সাইফুলের এক পরিচিত লোক। ছবিতে সাদা পোশাকে মাস্ক পরা একাধিক পুলিশকে জামান হোটেলের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
তবে এর ১০ দিন পর সাইফুলকে আটকের বিষয়ে নগর পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আব্দুর রউফ গণমাধ্যমকে জানান, ২৬ জুন রাতে সাইফুলকে লিংক রোড এলাকার এশিয়ান ওম্যান ইউনিভার্সিটির গেটের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘টাকা দে ৫ লাখ, না হয় শেষ করে দেবো, কালেমা পড়’
সাইফুল বলেন, ‘রাত ৯টার পর থেকে গাড়িতে করে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার পর রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার দিকে নিয়ে যাওয়া হয় বায়েজিদ লিংক রোডে। চোখ গামছা দিয়ে বন্ধ থাকলেও গামছার নিচ দিয়ে রাস্তাটি দেখে চিনে ফেলি। আমাকে একা রেখে গাড়ি থেকে সবাই নিচে নেমে যায়। এর কিছুক্ষণ পর আমার চোখের গামছা খুলে এসআই অসীম এসে বলে—সাইফুল, টাকা দে ৫ লাখ, ওপর থেকে অর্ডার আসছে, শেষ করে দেবো তোরে, কালেমা পড়।’ তখন আমি বলি, পসিবল না স্যার, আরেকটু কমাই-সমাই বলেন। তখন অসীম ‘যাহ্ ব্যাটা’ বলে গাড়ি থেকে নেমে যায়।
অবশ্য সাইফুলের এই বিবরণ ‘মিথ্যা’ দাবি করে বায়েজিদ থানার এসআই মেহের অসীম দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি যেহেতু সাইফুলের মামলার আইও, তাই আমি মামলাগুলো তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিই। রিপোর্টগুলো ওর বিরুদ্ধে যাওয়াতে সে রাগ-ক্ষোভ থেকে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে।’
সোর্স এসে দিয়ে যায় সাদা ব্যাগ
চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে সাইফুল বলেন, ‘আমি গাড়িতে একা বসে বসে দোয়া-দরুদ পড়ছি। আমাকে নিয়ে যখন পুলিশ ঘুরছিল তখন গাড়িতে থাকা এসআই সাইফুল বলছে, ‘তুই নাকি কোরআনে হাফেজ? একটু কোরআন তেলওয়াত শোনা’। আমি ওনাদের শুনিয়েছি। কিন্তু যখন ওরা আমাকে লিংক রোডে নিয়ে যায়, তখন আমি ওনাদের অনুরোধ করি—স্যার আমার হাতটা খুলে দেন, আমি একটু নামাজ পড়তে চাই। কিন্তু তারা খোলেনি। আমি কারের ভেতরেই হাত বাঁধা অবস্থায় বসে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এরপর দেখলাম একটা টহল পুলিশের গাড়ি থেকে সাদা ব্যাগভর্তি কী যেন নিয়ে নামছে পুলিশের সেই সোর্স আকাশ। তারপর ব্যাগটা সাদা পোশাকে থাকা একজনের হাতে দেয় আকাশ। মনে হয় সেখানে আর্মসজাতীয় কিছু ছিল। ব্যাগ পাওয়ার পর পরই আমার হাতকড়া খুলে দিয়ে হাত দুটো পেছন দিকে নিয়ে গামছা দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিল। আর মুখেও শক্ত করে গামছা দিয়ে বেঁধে দিল। তারপর আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মেইন রোডের পাশে মাটির রাস্তায় উপুড় করে শুইয়ে দিল। তখন আমি ভয়ে কামেলা তৈয়ব পড়তেছি, দোয়া পড়তেছি।’
হঠাৎ ‘ডাকাত ডাকাত’ চিৎকার, এরপরই ওসির গুলি
সেই রাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে সাইফুল বলেন, ‘এসআই সাইফুল-অসীমরা আমাকে শক্ত করে চেপে ধরেছে মাটির সঙ্গে। অকথ্য ভাষায় গালাগালও দিচ্ছিল তারা। গাড়িতে থাকা অবস্থায় যখন ঘটনার বিষয়টি বুঝতে পারছিলাম, তখন ওসিকে একাধিকবার অনুরোধ করে বলেছি, স্যার আমাকে মাফ করে দেন, আমি দরকার হলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। এলাকা ছেড়ে চলে যাবো, ভালো হয়ে যাবো। দরকার হলে ৫ লাখ টাকাই দেবো, তাও ক্ষমা করে দেন।’
‘এরপর আমাকে যখন কার থেকে নামানো হলো তখন লিংক রোডের দু’পাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর কয়েকজন পুলিশ ‘ডাকাত ডাকাত’ চিৎকার করে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে থাকে। তখন ওসি কামরুজ্জামান আমার বাম পায়ে একটা শ্যুট করেছে। একদম হাঁটুতে, নিচে, শর্টগান দিয়ে। এর এক মিনিট পর অসীম দাশ দৌড়ে এসে ওসির হাত থেকে শর্টগান নিয়ে আরও একটা শ্যুট করেছে। এরপর আর কিছু জানি না আমি, অজ্ঞান হয়ে যাই। যখন জ্ঞান আসে তখন দেখি, আমি চট্টগ্রাম মেডিকেলের বেডে শুয়ে আছি। ডাক্তাররা আমাকে স্যালাইন দিচ্ছে’—যোগ করেন সাইফুল।
বাংলাদেশে গুমের অভিযোগ বেড়েছে
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
জাতিসংঘের গুমবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে বাংলাদেশে গুমের অভিযোগ বেড়েছে। কমিটির সর্ব সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ২২ মে থেকে এ বছরের ১৩ মে পর্যন্ত এক বছরে কমিটির কাছে আসা বাংলাদেশে গুমের অভিযোগের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৮, যা আগে ছিল ৭৬।
ওই সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কমিটিকে আটজনের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তথ্য দেওয়া হয়েছে। এখনো ৮১ জনের গুমের অভিযোগের কোনো সুরাহা হয়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স’ নামে পরিচিতি গুমবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটি গত শুক্রবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
পুলিশের হাতে নির্যাতন: মামলার পর হুমকির অভিযোগ, বিচার নিয়ে শঙ্কা
০২ অক্টোবর ২, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
৩ বছর আগে একটি ভয়াল রাত তার জীবনকে পুরোপুরি পাল্টে দেয়। ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কোতোয়ালি থানার ২ কর্মকর্তা সাদা পোশাকে রাজধানীর গোয়ালনগর এলাকায় জুয়েলারি-দোকানের কর্মী রাজীব কর রাজুর বাড়িতে যান।
তারা ১১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা মূল্যের ২৮ তোলা স্বর্ণালঙ্কার এবং রাজীবের মায়ের চিকিৎসার জন্য সঞ্চয় করা নগদ ৪১ হাজার ৩০০ টাকা নিয়ে যান। এরপর রাজীবকে মারধর করে হাতকড়া পরিয়ে মোটরসাইকেলে করে থানায় নিয়ে যান।
বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজিপির অভিযোগ মনিটরিং সেলে এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, ‘থানায় ৩ পুলিশ সদস্য কোনো মায়াদয়া ছাড়াই আমাকে প্রচণ্ড মারধর করেন। তাদের একজন আমার আঙুলের নখ তুলে ফেলেন। পরে তারা আমার মুক্তির জন্য ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি ২ লাখ টাকা দিয়ে বেরিয়ে আসি।’
ভয়াবহ এই পুলিশি নির্যাতনের শিকার রাজীব আশা করেছিলেন তিনি ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি লুট করা সোনা বা টাকা ফেরত পাননি। ন্যায়বিচার এখন তার কাছে দুষ্প্রাপ্য বলে মনে হচ্ছে।
কয়েকবার চেষ্টার পর গত ২ মার্চ ঢাকার আদালতে ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন তিনি।
অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান (৪০), সহকারী এসআই ফরিদ ভূঁইয়া (৩৫) ও এসআই জলিল (৩৫)।
গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘কিন্তু মামলা করার পর থেকে আমি নতুন সমস্যায় পড়ি।’
এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তাকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মায়ের স্বীকারোক্তি আদায়ে কিশোর ছেলেকে ঝুলিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ
০৭ অক্টোবর, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
ডাকাতির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে খোদ মামলার বাদীর পরিবারের সদস্যদের ডিবি কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। সেই পরিবারের এক নারীকে টানা ৩ দিন আটকে রেখে নির্যাতনের পাশাপাশি জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য শ্যামলী হালদার রূপাকে (৩৫) তীব্র মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তার ১৪ বছরের ছেলে দিগন্ত হালদারকে তার সামনেই হাতকড়া পরিয়ে ঝুলিয়ে পেটানো হয়।
রূপকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক শেখ ফরিদ তাদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করেছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, গত ১৮ জুন মামলা দায়েরের পর থেকে বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের নামে ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে রূপা ও তার ছেলে দিগন্তসহ অন্তত ৭ জনকে তাদের হেফাজতে নেন। তাদের মধ্যে ৩ জনই কিশোর।
পরবর্তীতে তাদের মধ্যে কীর্তন চন্দ্র হালদার এবং প্রতিবেশী ও কীর্তনের বন্ধু জীবন চন্দ্র পাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
সাদা পোশাকে ১৪ দিন আগে তুলে নেওয়া নুরুলের খোঁজ মিলছে না
০৭ অক্টোবর ৭, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
নিজেদের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) দাবি করা সাদা পোশাকে একদল ব্যক্তি গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর উত্তরা থেকে তুলে নিয়ে যায় একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির বিপণন কর্মকর্তা নুরুল আফসার হাওলাদারকে (৪০)।
এ ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে ২ সপ্তাহ। কিন্তু, নুরুলকে এখনো কোনো আদালতে তোলা হয়নি কিংবা পরিবারও তার কোনো খোঁজ পাচ্ছে না।
সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।
নুরুলের অফিসের গ্যারেজে থাকা ৪টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা পোশাকে প্রায় ১০ জনের একটি দল তাকে নিয়ে যায়।
নুরুল যে অফিসে কাজ করেন, সেই প্রতিষ্ঠানের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়রুল খান নিশ্চিত করেন যে, সিসিটিভি ফুটেজগুলো ওই অফিসেরই।
ফুটেজে দেখা গেছে, ওই ১০ জনের দলে একজন তুলনামূলক বয়স্ক ব্যক্তি ছিলেন, যার চুল ও দাড়ি কাঁচাপাকা এবং তার পরনে ছিল সবুজ রংয়ের শার্ট।
খায়রুল আরও জানান, ওই ব্যক্তিরা ক্লায়েন্ট সেজে তাদের অফিসে যান।
খায়রুল খান বলেন, ‘ওই ব্যক্তি তার নাম প্রকাশ করেননি। শুধু আমাদের বলেছেন, মিরপুরের রিয়েল এস্টেটে তার আগ্রহ আছে। অফিসেই আমরা কথা বলছিলাম এবং তখন তিনি নুরুলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি “নুরুল আফসার” কি না। নুরুল যখন ইতিবাচক উত্তর দেন, তখন ওই ব্যক্তি জানান, তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বাঁশখালীতে নুরুলের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। তিনি নুরুলকে গ্রেপ্তার করতে এখানে এসেছেন।’
‘তবে, ওই ব্যক্তি কোনো পরিচয়পত্র দেখাননি। কিছুক্ষণের মধ্যেই কালো পোলো শার্ট পরা ও “র্যাব” লিখা আইডি কার্ড ঝোলানো অন্য একজন ব্যক্তি আমার অফিসে প্রবেশ করেন’, যোগ করেন তিনি।
ছাত্রদল নেতাকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ
০৯ অক্টোবর ২২, সমকাল
বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক ফোরকান হোসেন ইরানকে শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, শনিবার সারারাত ও সকালে বরিশালের সব থানা, ডিবি অফিসে খোঁজ করেও ছাত্রদল নেতা ফোরকান হোসেন ইরানের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পুলিশ অস্বীকার করছে। এই ঘটনা আজ রোববার ১২ টার দিকে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
দুর্গম পাহাড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ক্যাম্পে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ
১১ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে ঘরছাড়া তরুণের সংখ্যা বাড়ছে। হিজরতের নামে নিরুদ্দেশ থাকা আরও ৫৫ জনের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে র্যাব। তাঁদের মধ্যে ৩৮ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম–ঠিকানা প্রকাশ করা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এসব তরুণ পার্বত্য এলাকার দুর্গম অঞ্চলে পাহাড়ি বিচ্ছিন্ন সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান চলছে।
শিক্ষা
কথা রাখেনি ‘সরকারের উচ্চপর্যায়’, স্বপদে আছেন শাবিপ্রবি উপাচার্য
১১ আগস্ট, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিতের ৬ মাস পূর্ণ হচ্ছে শুক্রবার।
সরকারের অনুরোধে শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষক ড. জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হক ২৮ শিক্ষার্থীর ১৬৩ ঘণ্টার অনশন ভাঙান। উপাচার্যের পদত্যাগের ব্যাপারে তখন শাবিপ্রবির সাবেক এই দুই শিক্ষকের মাধ্যমে ‘সরকারের উচ্চপর্যায়’ থেকে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের কাছে পাঠানোর আশ্বাস দেন। শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারেও আশ্বস্ত করেন তারা।
এর পরও শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এখনো স্বপদে বহাল আছেন। শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবির বেশিরভাগই পূরণ হয়নি। প্রত্যাহার হয়নি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলা। উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না পুলিশের শটগানের ছররা গুলিতে আহত সজল কুন্ডু। তার আয়ের একমাত্র অবলম্বন ক্যান্টিনটিও ফিরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন।
আন্দোলনকারীরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠছে।
‘সরকারের উচ্চপর্যায়’ আশ্বাস দেওয়ার এতদিন পরেও কথা না রাখায় বিব্রত ও ক্ষুব্ধ অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ইয়াসমীন হক।
শাবিপ্রবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন হক ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করছে তখন আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসি। আমরা শাবিপ্রবিতে যাওয়ার আগে বাসায় এনএসআই (জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা)’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলসহ অন্যান্যরা এসেছিলেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই এসেছিলেন কারণ এটা শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় ছিলো না, জাতীয় বিষয় হয়ে দাড়িয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে অনশন ভাঙলেই সঙ্গে সঙ্গে সব মামলা প্রত্যাহার হবে। উপাচার্যকে ২/৩ মাসের মধ্যে সরানো হবে, যেভানে গোপালগঞ্জের উপাচার্যকে সরানো হয়েছিল। তাদের একটাই দাবি ছিল যে করেই হোক শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে অনশন ভাঙাতে হবে। অনশন খুব ক্রিটিক্যাল স্টেজে ছিল। একজন শিক্ষার্থীও যদি মারা যেতো তাহলে এটা অন্যদিকে মোড় নিত।’
‘এখন আমি হিসাব রাখছি, জানুয়ারি থেকে ৬ মাস হয়ে গেছে। এতদিন পর্যন্ত কোনো কিছু হয়নি। জানতে চাইলেই বারবার আশ্বস্ত করা হয়। আমরাও আমাদের যা করার, ফোনের পর ফোন করে যাচ্ছি। এখন যদি না হয় তো কিছু বলার নেই। সরকার নিজেই জানে কখন হবে, কী হবে।’
যত বড় অপরাধ, ছাত্রলীগে তত বড় পদ
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন
কেউ হত্যা মামলার মতো বড় অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, কেউবা ডাকাতি মামলায়, আবার কেউ মন্দির ভাঙচুরের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সংগঠন থেকে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার হয়েছিলেন। তবে এসব কোনো কারণই তাদের জন্য ছাত্রলীগের বড় পদ পেতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে ফৌজদারি আইনে অভিযুক্ত এসব ‘অপরাধী’দেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার বড় বড় পদে পদায়ন করে ‘পুরস্কৃত’ করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ ২ নেতা।
গত ৩১ জুলাই রাতে ঘোষিত কয়েকটি কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অন্তত ৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, এ দিন একইসঙ্গে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আংশিক কমিটি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।
এসব কমিটির শীর্ষ পদের জন্য মূলত নানা অপরাধে অভিযুক্ত নেতাদেরকেই বেছে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সালের কথা।
ফয়সাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই রিয়াদকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে, ২০১৫ সালে পুলিশ যাদেরকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে, সেই তালিকায় রয়েছে ফয়সালের নাম।
এই ঘটনাসহ যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ তাকে ২ বার শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘সাময়িক’ বরখাস্ত করে।
সেই ফয়সালকে সাধারণ সম্পাদকের মতো বড় পদে রেখে ‘পুরস্কৃত’ করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। ঘোষণা করেছেন যবিপ্রবি শাখার ১১ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি।.. ..
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখার নতুন কমিটির নেতার বিরুদ্ধেও ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। ইবিতে ২৪ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিক আরাফাত হত্যাচেষ্টা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি।
বিগত কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক আরাফাতকে ২০১৬ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মন্দির ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত থাকায় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
এর প্রায় ২ বছর পর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে, মাদক নেওয়ার অভিযোগে আটককৃত তার কয়েক অনুসারীকে পুলিশ ভ্যান থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।.. ..
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রেও নানা অভিযোগ উঠে এসেছে।
চবি শাখা ছাত্রলীগের জন্য ঘোষিত ৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির মধ্যে অন্তত ১০ জন হত্যা ও অন্যান্য মামলার আসামি রয়েছেন বলে চবি ছাত্রলীগ নেতারা জানিয়েছেন।
তাদের মধ্যে ২০১৪ সালে ছাত্রলীগ নেতা তাপস সরকার হত্যা মামলার আসামি প্রদীপ চক্রবর্তী ও জাহেদুল আউয়াল নতুন কমিটির সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন।
অপরদিকে যুগ্ম সম্পাদক পদ পাওয়া রাজু মুন্সিও হত্যা মামলার আসামি। তিনি ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় ঘটে যাওয়া জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন।
অন্যদিকে মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসেন ও মিজানুর রহমান খানকে ২০১৫ সালের সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। তাদেরকে এই কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে।.. ..
দেশের ২৪ শতাংশ মানুষ এখনও অক্ষরজ্ঞানহীন
০৮ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
দেশের ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ এখনও নিরক্ষর। বিপুলসংখ্যক অক্ষরজ্ঞানহীন এই মানুষ নিয়েই সারাদেশে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। বিশ্বজুড়ে ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সাক্ষরতা শিখন ক্ষেত্রের প্রসার’।
সাক্ষরতার শিখন ক্ষেত্রগুলোর প্রসার বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। সরকারি হিসাবে, ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী জনসংখ্যা এ দেশে ৩ কোটি ২০ লাখের মতো। যাদের মধ্যে নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা কম নয়। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রতি চারজনের একজন নিরক্ষর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে সাক্ষরতা অর্জনের কাজ চলছে ঢিমেতালে। এই শামুকগতিতে এগোলে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের জন্য আরও ২৭ বছর লাগবে। অথচ ২০১৪ সালের মধ্যে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের জন্য সরকারিভাবে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। সেই সময়ও আমরা পেরিয়ে এসেছি আরও আট বছর আগে। এখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে নতুন করে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যের কারখানায় পরিণত হয়েছে: আনু মুহাম্মদ
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যের কারখানায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।
আজ শনিবার ৬০তম শিক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) আয়োজিত সমাবেশে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভয়ঙ্কর জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অধিকারের চেয়ে শিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করতে যে ধরনের নীতির প্রয়োজন, সে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ অধ্যাপক বলেন, ‘১৯৬২ সালে স্বৈরশাসনের সময়ে শিক্ষার জন্য আন্দোলন হয়েছিল। সেই ষাটের দশকে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের উন্নয়ন দশক আমরা দেখেছি। সেই উন্নয়ন দশকের বিশাল বিজ্ঞাপনও আমরা দেখেছি। আরেকটি উন্নয়ন দশক দেখেছি আশির দশকে, সেখানেও ছাত্র আন্দোলন দিয়েই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। ১৯৮২ এবং ৮৩ সালে যে ছাত্র আন্দোলন বিকশিত হয়েছিল, সে ছাত্র আন্দোলন কিন্তু স্বৈরাচারকে হটিয়েছিল। এ আন্দোলনগুলোর মধ্য দিয়ে শরীফ শিক্ষা কমিশন এবং মজিদ খান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে অনেক দাবি উঠেছিল।’
‘সে দাবির মধ্যে সবার জন্য অভিন্ন এবং অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা নিশ্চিত করা, সবার জন্য শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করা, গণতান্ত্রিক এবং জন্মগত অধিকার হিসেবে দেশের শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠা করা এবং সর্বজনের শিক্ষাকে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করার দাবি ছিল’, যোগ করেন তিনি।
ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার অধিকতর বাণিজ্যিকীকরণ এবং সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কুতরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন ছিল। যে কমিশনের পক্ষে স্বাধীনতাত্তোর সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। সে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের অগ্রসর দাবিগুলো এখনও বাস্তবায়িত হতে দেখিনি।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘দেশের জনসংখ্যার সর্বাধিক হচ্ছে তরুণ। তরুণরাই এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। দেশে যে ধরনের উন্নয়ন ধারা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাতে উন্নয়নের নামে নদী-নালা, খাল-বিল ধ্বংস করা হচ্ছে। দেশের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন ধরনের চুক্তি এবং সম্পদ লুণ্ঠন এবং পাচারের সঙ্গে যারা যুক্ত, তারাই এখন ক্ষমতায় আছেন। এ ক্ষমতাবানগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারের মধ্যে তৈরি হয়েছে স্বৈরতান্ত্রিক বিভিন্ন ব্যবস্থা।’
তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গিবাদী চিন্তা হলো সেই চিন্তা, যা অন্য কোনো চিন্তাকে গ্রহণ করে না৷ অন্যের মতকে গ্রহণ করার মানসিকতা না থাকা এবং যে কোনো মত নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলে হামলা করাই যদি জঙ্গিবাদী মতাদর্শ হয়, তাহলে বর্তমান সরকার ও তাদের ছাত্রসংগঠন জঙ্গিবাদী মতাদর্শ থেকে কীভাবে আলাদা হলো? তাদের মতাদর্শও তো জঙ্গিবাদী মতাদর্শ৷ কারণ তারা মনে করে, তারা যা বলবে সেটাই ঠিক, তারা যেভাবে ইতিহাস বলবে সেভাবেই মানতে হবে, তারা যেটাকে উন্নয়ন বলবে সেটাকেই উন্নয়ন বলতে হবে৷ এর বাইরে কেউ যেতে পারবে না৷ এই অবস্থানটাই তো জঙ্গিবাদী মতাদর্শ।’
‘সরকার বলছে যে তারা খুব জঙ্গিবিরোধী লড়াই করছে৷ কিন্তু জঙ্গিবাদী মতাদর্শ ধারণ করে একটা সরকার কী করে জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াই করবে? জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ের প্রধান শক্তি হচ্ছে সৃজনশীলতা, ভিন্নমত, প্রশ্ন উত্থাপন ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা৷ এর মধ্য দিয়ে তরুণদের সক্ষমতা বিকশিত করতে পারলে তরুণরা কারও অস্ত্র বা রোবট-কম্পিউটারে পরিণত হবে না’, যোগ করেন তিনি।
ঢাবি প্রক্টরের অপসারণ দাবির পর শিক্ষকের ব্যক্তিগত নথি তল্লাশির অভিযোগ
১৯ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের বিভাগীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
তানজীমউদ্দিনের অভিযোগ, গত সোমবার বিকেলে ঢাবির প্রক্টর কার্যালয়ের দুজন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর বিভাগীয় কার্যালয়ে গিয়ে তল্লাশি চালান। তাঁরা তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে যান। এ ছাড়া একই দিন সন্ধ্যায় তাঁর স্থায়ী ঠিকানায় পুলিশ দিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে।
ঢাবি প্রশাসনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত তানজীমউদ্দিন। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের একটি অংশের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের অন্যতম সংগঠক তিনি। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে গত সোমবার ঢাবির প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীর অপসারণ দাবি করা শিক্ষকদের একজন তিনি।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
ডেঙ্গুতেও আইসিইউ সংকট
২৪ অক্টোবর ২২, সমকাল
দেশে করোনার সংক্রমণ যখন উদ্বেগজনক ছিল, সেই সময় যেমন আইসিইউ শয্যা নিয়ে হাহাকার ছিল, তেমন চিত্র আবার ফিরে এসেছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ফাঁকা না পেয়ে রোগী নিয়ে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে স্বজনদের। অথচ এবারের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর ৩৫ শতাংশই শিশু। যাদের একটি বড় অংশের চিকিৎসাধীন অবস্থায় শক সিনড্রোম দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম সমকালকে বলেন, আইসিইউ সংকট আগেও ছিল। ডেঙ্গুর প্রকোপে আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। আইসিইউ শয্যা প্রয়োজন এমন ৩২ জন রোগী অপেক্ষমাণ। এবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশ কিছু অঙ্গে প্রভাব ফেলায় দ্রুত সংকটাপন্ন অবস্থা তৈরি হচ্ছে। এমনকি এ সেবা দিতে কিছুটা বিলম্ব হলে রোগীদের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ারও আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ডেঙ্গু সংকটে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে অন্যসব রোগের চিকিৎসাও।
রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন মুগদা জেনারেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখানে আড়াই হাজার ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এই হাসপাতালে ৩০টি আইসিইউতে এখন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তার মধ্যে জটিলতা নিয়ে একজন ডেঙ্গু রোগী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম দেখা দেওয়ার পর এ ধরনের অনেক রোগীকেই বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। লিখিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি করিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়ার। ঢামেক হাসপাতালে ৮০টি আইসিইউ শয্যা থাকলেও বেশিরভাগই অন্য রোগে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের দখলে রয়েছে।
অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে স্কয়ার, ইউনাইটেড কিংবা এভারকেয়ারের মতো উন্নতমানের হাসপাতালে ব্যয়বহুল নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) রেখে রোগীর চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে, হাসপাতালে মোট শয্যার ১০ শতাংশ আইসিইউ থাকার কথা থাকলেও দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে তা নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ৩ হাজার বেডের অনুপাতে ৩০০টি আইসিইউ বেড থাকার কথা। কিন্তু আছে মাত্র ৮০টি।
এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আশঙ্কা, যে ৩১ হাজার রোগী চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, এর ১০ শতাংশ রোগীর শক সিনড্রোম দেখা দিলে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় আইসিইউ কিংবা পিআইসিইউ নেই। ফলে আগামীতে মৃত্যুঝুঁকি আরও বাড়বে।
পরিবেশ
বায়ুদূষণে ২০১৯ সালে ঢাকায় ২২ হাজার মানুষের মৃত্যু
১৭ আগস্ট ২২, সমকাল
দূষিত বায়ুর কারণে ২০১৯ সালে রাজধানীতে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠনের একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বুধবার হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের ‘এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড হেলথ ইন সিটিস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে আরও জানানো হয় বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান এখন পঞ্চম।
বিশাল আয়োজনেও মরমর বুড়িগঙ্গা
২৫ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
রাজধানী ঢাকার হৃদয় বুড়িগঙ্গা। এ নদীর প্রাণ বাঁচাতে নেওয়া হয় একের পর এক প্রকল্প, ঢালা হয় কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। মাঝেমধ্যে চলে উচ্ছেদ, বসে সীমানা পিলার। গেল এক যুগে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচা করেও বদলানো যায়নি বুড়িগঙ্গার চেহারা। পানি হয়েছে আরও কালো। পড়ছে শিল্পকারখানা, ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, গৃহস্থালি, হাটবাজার ও নৌযানের বর্জ্য।
এখানেই শেষ নয়, সেই সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরীর বর্জ্য ধলেশ্বরী নদী হয়ে মিশছে বুড়িগঙ্গায়। এখনও কয়েক ডজন কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান রয়ে গেছে হাজারীবাগে। নদী রক্ষায় সীমানা পিলার নির্মাণ হলেও এর ভেতরেই গড়ে উঠেছে কারখানা ও দোকানপাট। বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে অভিযান চালিয়েও দমানো যাচ্ছে না দখলবাজদের। এখনও বেদখল হয়ে আছে শতাধিক একর জায়গা। নদীর জায়গায় কেউ কারখানা, কেউ বসতঘর, আবার মসজিদ বানিয়েও চালাচ্ছেন দখলদারিত্ব। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনা বাস্তবায়নেরও অগ্রগতি নেই।
বিশাল খরচও কাজে আসছে না: সরকার ২০০৯ সালে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্প হাতে নেয়। তবে ভুল পরিকল্পনার কারণে এক যুগের বেশি সময় পেরোলেও শেষ হয়নি প্রকল্পের মেয়াদ। সেই প্রকল্পের খরচ ১ হাজার ২০০ কোটিতে গিয়ে ঠেকলেও আদতে বুড়িগঙ্গার কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রকল্পটি চালু অবস্থায়ই ২০১৬ সালে ঢাকার চারপাশের চারটি নদীর অবৈধ দখল ঠেকাতে ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পটির খরচ বাড়িয়ে এখন ১ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণমুক্ত করতে ২০০৪ সালে একটি সমীক্ষা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। এর ছয় বছর পর ৯৪৪ কোটি ৯ লাখ ৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ নদী খনন নামে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। লক্ষ্য ছিল যমুনা থেকে পানি এনে বুড়িগঙ্গাসহ চারটি নদীর দূষণ রোধ করা। তবে এখনও যমুনার পানি বুড়িগঙ্গায় গড়ায়নি। বর্তমানে ওই প্রকল্পের খরচ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১২৫ কোটি ৫৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ওই চার নদী রক্ষায় বিআইডব্লিউটিএ ওয়াকওয়ে ও সীমানা পিলার নির্মাণসহ নানা কাজে ব্যয় করেছে ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। চার বছরমেয়াদি এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। এ ছাড়া ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধার ও খননকাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
ডিএসসিসির ভুলে ভরাট হচ্ছে অবশিষ্ট প্রাকৃতিক জলাধারটিও
০৭ অক্টোবর, ২০২২, বণিক বার্তা
রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ খাল-জলাশয় এরই মধ্যে দখলে নিয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। আবাসন-শিল্পায়নের পাশাপাশি নানামুখী উন্নয়নকাজে দখল হয়েছে প্রাকৃতিক এসব জলাধার। এর মধ্যেও যে কয়টি খাল টিকে আছে সেগুলো দখলে-দূষণে বিপর্যস্ত। নগরের সংরক্ষণযোগ্য সর্বশেষ জলাধার অঞ্চলটিও হারাতে বসেছে সেটির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। ক্রমেই আবাসিক ও বাণিজ্যিক অবকাঠামো গড়ে উঠতে শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে, যা একসময় নাসিরাবাদ ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত ছিল। অথচ ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপে এ এলাকাকে কৃষি ও জলাধার সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই বছর আগে সিটি করপোরেশনের ভুল পরিকল্পনায় নির্মিত সড়কের কারণেই রাজধানীর সংরক্ষণযোগ্য শেষ জলাভূমিটি এখন হুমকির মুখে।
ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (২০২২-২০৩৫) বলা হয়েছে, রাজধানীর পানি নিষ্কাশন এবং জলাধার ও কৃষিকাজের জন্য সংরক্ষণযোগ্য এলাকা নাসিরাবাদ-ডেমরা অঞ্চল। এ অঞ্চলের জলাভূমি ও খালগুলো যেন কোনোভাবেই দখল না হয় সে বিষয়ে এতে একাধিকবার গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাজধানীর জলাভূমি হিসেবে উল্লেখ করে এ এলাকাকে পরিকল্পিতভাবে কৃষি অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনাও জানানো হয়েছে সর্বশেষ ড্যাপে।
ঢাকায় ২০% হারে বাড়ছে এসি, বাড়ছে তাপমাত্রা
২২ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
ঘরের উষ্ণতা কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র। আবার এই যন্ত্রের (আউটডোর ইউনিট) কারণেই ঘরের বাইরের তাপমাত্রা বাড়ে। ঢাকায় প্রতিবছর ২০ শতাংশ হারে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি ঢাকা শহরের তাপমাত্রাও দিন দিন বাড়ছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল নগর সংলাপে এ মত দেওয়া হয়। ‘ভবনে এসি ব্যবহারজনিত বিদ্যুৎ–চাহিদা ও নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি: টেকসই ভবন ও শহর বিনির্মাণে করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা বলেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতায় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু যন্ত্রগুলোর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিদ্যুতের চাহিদা কমানো সম্ভব; আর ভবনে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখতে পারলে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চাহিদাও কমানো সম্ভব।
গবেষণায় বাংলাদেশে গত ছয় বছরে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, সারা দেশে আনুমানিক ২৮ লাখ ইউনিট শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রগুলো গড়ে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে চালালে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চালালে অন্তত ২৫ শতাংশ বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো সম্ভব। এ ছাড়া এই যন্ত্রগুলো নগরের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়।
পানি
উদ্বোধনের অপেক্ষায় ৩৭১২ কোটি টাকার পয়ঃশোধনাগার, পাইপলাইনের খবর নেই
২১ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। এখন এ শোধনাগার উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত এলাকা থেকে পয়োবর্জ্য শোধনাগারে পৌঁছানোর পাইপলাইনই (নেটওয়ার্ক) তৈরি হয়নি। ফলে এত টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পের সুফল শিগগির সংশ্লিষ্ট নগরবাসী পাবে না।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ২৩ আগস্ট দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার উদ্বোধনের তারিখ ধার্য ছিল। এ উপলক্ষে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। মোট ছয়টি কমিটি করা হয়। কমিটিতে ১৪০ সদস্য রাখা হয়। উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকা ওয়াসা ভবন ও প্রকল্প এলাকায় পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ২৩ আগস্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের উদ্দেশ্য—রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার পয়োবর্জ্য পরিশোধন করে বালু নদীতে নিষ্কাশন করা। এলাকাগুলোর মধ্যে গুলশান, বনানী, ডিওএইচএস, আফতাবনগর, বাড্ডা, মগবাজার, নিকেতন, কলাবাগান, ধানমন্ডি (একাংশ) ও হাতিরঝিল অন্যতম। দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পয়োবর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে ৫০ লাখ নগরবাসীকে সেবা দেওয়াই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, শোধনাগার নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে নেটওয়ার্ক তৈরি করা প্রয়োজন ছিল। পাইপলাইন নির্মাণ একটি সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। পয়োবর্জ্য নেটওয়ার্ক করতে কয়েক হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প নিতে হবে। এতে সময় লাগবে কয়েক বছর। ফলে যে উদ্দেশ্যে শোধনাগার করা হয়েছে, তা নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়া পূরণ হবে না। এত টাকা ব্যয়ে নির্মিত শোধনাগারের সুফল জনগণকে পেতে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, হাতিরঝিলে আসা বর্জ্য শোধন করা হবে দাশেরকান্দি শোধনাগারে। প্রকল্পের নির্ধারিত এলাকার জন্য পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণে আলাদা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। নতুন এ প্রকল্পে চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে কবে নাগাদ এ নেটওয়ার্ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে, তা নিশ্চিত নয়।
ঢাকা ওয়াসাতেই বিদেশি ঋণ ২১ হাজার কোটি টাকা
০৬ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
ঢাকা ওয়াসার সাতটি প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এ ঋণের একটি অংশ ওয়াসা ইতিমধ্যে নিয়েছে। বাকিটা অনুমোদিত, যা প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে নেওয়া হবে। এক যুগ আগেও ঢাকা ওয়াসার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল শূন্যের কোঠায়।
সমস্যা হলো ঋণ নিয়ে ঢাকা ওয়াসা যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, তার পুরো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, তার কয়েকটির পুরো সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
যেমন পদ্মা নদীর পানি পরিশোধন করে ঢাকায় সরবরাহের জন্য ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা-যশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা ওয়াসা। এ জন্য চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
অদক্ষতার কারণে প্রকল্পগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফলও পাওয়া যায়নি। এ ধরনের প্রকল্প দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপর চাপ ফেলেছে, যা এখন দৃশ্যমান হচ্ছে।
আদিল মুহাম্মদ খান, পরিচালক, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট
তিন বছর আগে পরিশোধনাগারটি চালু হয়। এখন উৎপাদন সক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ অব্যবহৃত। বাকি পরিশোধনক্ষমতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না পদ্মা-যশলদিয়া শোধনাগার থেকে রাজধানীতে পানি সরবরাহের পাইপলাইন না থাকায়। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এখন পাইপলাইন বসাতে ৬২২ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প নিতে চায়, যার পুরোটাই হবে বৈদেশিক ঋণে।
বিপুল ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে ঢাকা ওয়াসাকে ঋণের সুদ ও আসলের কিস্তি পরিশোধে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এ কারণে বছর বছর পানির দাম বাড়াচ্ছে তারা, যা চাপে ফেলছে নগরবাসীকে।
ঢাকা ওয়াসার পানি শোধনাগার
উচ্চ ব্যয়ের নতুন প্রকল্পে উৎপাদন বিপর্যয়
২২ অক্টোবর ২২, সমকাল
যে কোনো নতুন যন্ত্র বা যানবাহনের প্রথম পর্যায়ে মেরামত বা মেইনটেন্যান্স (পরিচালন) খরচ কম হয়। উৎপাদন ও পারফরম্যান্স (ফলাফল) ভালো পাওয়া যায়। যন্ত্রটি যতই পুরোনো হতে থাকে, ততই কমতে থাকে তার উৎপাদন ক্ষমতা। বাড়তে থাকে পরিচালন ব্যয়। অথচ চিরাচরিত এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে ঢাকা ওয়াসায়। অপেক্ষাকৃত বেশি ব্যয়ে স্থাপন করা নতুন পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে পানি উৎপাদন হচ্ছে অনেক কম। মেরামত খরচও হচ্ছে বেশি। বিপরীতে অপেক্ষাকৃত অনেক কম ব্যয়ে স্থাপিত পুরোনো প্রকল্প থেকে পানি উৎপাদন হচ্ছে বেশি। সেগুলোর পরিচালন ব্যয়ও অনেক কম। ২০০২ সালে চালু হওয়া ঢাকা ওয়াসার সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার-১ এবং ২০১২ সালে চালু হওয়া সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার-২-এর সঙ্গে ২০১৯ সালে চালু হওয়া পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্পের খরচ, পরিচালন ব্যয় ও পানি উৎপাদনের চিত্র পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
কিন্তু কেন এমনটি হলো, সে বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার দায়িত্বশীল কেউ মুখ খুলছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, সায়েদাবাদ ফেজ-১ ও ফেজ-২ নির্মাণে সহযোগিতা করেছিল ডেনমার্কের দাতা সংস্থা ড্যানিডা। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারেরও বিনিয়োগ ছিল। দুই প্রকল্পেই কাজ হয়েছিল মানসম্মত। দুর্নীতির অভিযোগও ছিল না। এ কারণে এ দুই শোধনাগার থেকে পানি উত্তোলন বেশি হয়। ২০ বছরের পুরোনো ফেজ-১ থেকেও প্রতিদিন সাড়ে ২২ কোটি লিটার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২১ কোটি লিটারেরও বেশি পানি পাওয়া যাচ্ছে। পানি উৎপাদনের পারফরম্যান্স প্রায় ৯৪ শতাংশ।
অপরদিকে ২০১৯ সালে চালু হওয়া পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্পের উৎপাদনের পারফরম্যান্স মাত্র ৬০ শতাংশ। সংশ্নিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পে ঋণ দিয়েছিল চীনা এক্সিম ব্যাংক। ঋণদানের শুরু থেকেই ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ প্রকল্পে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান ও প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামকে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) হাজিরা দিতে হয়েছে। এখানে কাজের মান সন্তোষজনক হয়নি। এ জন্যই এমন ঘটনা ঘটেছে।
যাতায়াত ব্যবস্থা ও দুর্ঘটনা
রেলক্রসিং নিরাপদ করতে মনোযোগ নেই, একের পর এক দুর্ঘটনা
৩০ জুলাই, ২০২২, প্রথম আলো
রেলক্রসিংগুলো যেন অবহেলার অপর নাম। সারা দেশে ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অরক্ষিত। অর্থাৎ ট্রেন চলাচলের সময় যানবাহন আটকানোর জন্য কোনো পাহারাদার কিংবা প্রতিবন্ধক কিছুই নেই। বাকি ১৮ শতাংশ ক্রসিংয়ে পাহারাদার ও প্রতিবন্ধক—দুটিই আছে। কিন্তু পাহারাদারের অবহেলায় কিংবা চালকের অসতর্কতায় সেগুলোতেও দুর্ঘটনা ঘটছে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, রেলপথে দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়, এর ৮৫ শতাংশই মারা যান রেলক্রসিংয়ে। অবশ্য রেললাইনে কাটা পড়ে মৃত্যুর হিসাব রেল কর্তৃপক্ষ রাখে না। মুখোমুখি সংঘর্ষ, লাইনচ্যুতি, এক ট্রেনকে অন্য ট্রেনের ধাক্কা, রেলক্রসিংয়ে গাড়িকে ট্রেনের চাপা—এসবকে দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সারা বিশ্বেই রেলকে নিরাপদ বাহন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু রেলক্রসিংয়ের কারণে রেলপথ পুরোপুরি নিরাপদ হতে পারছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, অরক্ষিত ক্রসিংয়ে ট্রেন এলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘণ্টা বাজার ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা। তবে পাহারাদার যেখানে আছে, সেখানে দুর্ঘটনা এড়াতে সবার সচেতনতা দরকার। তিনি বলেন, পাহারাদারের ভুলে দুর্ঘটনা হলে অবশ্যই শাস্তি হবে। তবে অনেক চালক বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়ে পার হতে গিয়েও দুর্ঘটনায় পড়ছেন।
সম্প্রতি উন্নয়ন হয়েছে মিরসরাইয়ের রেলক্রসিং
গতকাল শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে নিয়ে যায় চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেন। এতে মাইক্রোবাসে থাকা ১১ জন নিহত হন। এ ঘটনার পর পাহারাদারকে আটক করে পুলিশ।
রেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের কাছের এই রেলক্রসিং একটি প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি উন্নয়ন করা হয়েছে। পাহারাদারের বেতন দেওয়া হচ্ছে প্রকল্প থেকেই। পাহারাদার ও প্রতিবন্ধক থাকার পরও দুর্ঘটনার বিষয়টি উদ্বেগজনক।
রেলওয়ের নথিপত্র অনুসারে, ২০১৫ সাল থেকে রেলক্রসিংকে নিরাপদ করতে ১৯৬ কোটি টাকা খরচ করেছে রেলওয়ে। দুটি প্রকল্পের আওতায় রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ৭০২টি রেলক্রসিং উন্নয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় পাহারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৫৩২ জন। রেলক্রসিং উন্নয়নের মধ্যে প্রতিবন্ধক বসানো ও পাহারাদারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এরপরও রেলক্রসিং নিরাপদ হয়নি।
রেলের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, দুর্ঘটনার পর পাহারাদার সাদ্দাম হোসেন পালিয়ে যাননি। তিনি রেল কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন, তিনি প্রতিবন্ধক নামিয়ে যানবাহন আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু মাইক্রোবাসটি যাওয়ার জন্য কেউ একজন প্রতিবন্ধক তুলে দিয়েছিল। এই দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট আগে চট্টগ্রাম থেকে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকার দিকে আসে। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পরই আসল সত্যটা জানা যাবে।
সড়কে প্রাণহানির দায়ে শাস্তির সুনির্দিষ্ট আইন আছে। কিন্তু রেলক্রসিংয়ে প্রাণহানির দায়ে শাস্তির বিধান নেই। উল্টো যানবাহনের চালককে দায়ী করে রেল কর্তৃপক্ষ। বড়জোর পাহারাদারের ভুল পেলে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু রেলে পাহারাদারের সংকট থাকায় কদিন পরেই আবার দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয় বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।
কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে রেলওয়ে গতানুগতিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে। একাধিক তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় সব প্রতিবেদনেরই ভাষা, সুপারিশ ও দায়ী করার পদ্ধতি একই।
রেলওয়ে সূত্র আরও পাহারাদারের চাকরি স্থায়ী নয়। প্রকল্পের অধীনে সর্বসাকল্যে ১৪ হাজার টাকার মতো তাঁদের বেতন। ২০১৫ সালের পর দুটি প্রকল্পের অধীনে তাঁদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প শেষ হলে বেতন থাকবে না। এ জন্য শুরুতে নিয়োগ পাওয়া অন্তত ৩০০ পাহারাদার চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। অস্থায়ী চাকরি বলে তাঁদের প্রশিক্ষণেরও খুব একটা ব্যবস্থা নেই।
রেলের হিসাবে, ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রেলে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন প্রায় ২২১ জন। এর মধ্যে ১৮৭ জনই প্রাণ হারিয়েছেন রেলক্রসিংয়ে। অর্থাৎ রেলক্রসিংয়ে প্রাণহানি ৮৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।
৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অরক্ষিত
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেলক্রসিং নিরাপদ করার দুটি উপায় আছে। ১. রেললাইনের ওপর দিয়ে যাওয়া সড়কে উড়ালপথ নির্মাণ করা। ২. ট্রেন আসার সময় যানবাহন আটকে দেওয়ার জন্য পথরোধক (ব্যারিকেড) বসানো এবং ট্রেন এলে তা সময়মতো নামিয়ে যানবাহনের চলাচল বন্ধ রাখার জন্য পাহারাদার নিয়োগ।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, নতুন রেললাইন তৈরি করে প্রথম ট্রেন চালানোর ১০ বছরের মধ্যে এর ওপর দিয়ে কোনো সড়ক গেলে তা সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব রেলের। এরপর কোনো সড়ক নির্মাণ হলে তা আগে রেল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। সড়কের কারণে তৈরি রেলক্রসিংয়ে পথরোধক ও পাহারাদার দিয়ে তা সুরক্ষা করার দায়িত্ব সড়ক নির্মাণকারী সংস্থার। এটা না করলে রেল এসব ক্রসিংয়ের অনুমোদন নেই বলে বিবেচনা করে। এগুলোতে পাহারাদার কিংবা প্রতিবন্ধক থাকে না, যা পুরোপুরি অরক্ষিত।
রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে মোট রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৬১। এগুলোর মধ্যে অনুমোদন নেই ১ হাজার ৩২১টির। এসব ক্রসিংয়ের বেশির ভাগই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়কে। আরও আছে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সড়কে। সব মিলিয়ে দেশের ৮২ শতাংশ রেলক্রসিংই অরক্ষিত।
রেলওয়ে গত এক যুগে রেললাইন তৈরি ও কেনাকাটায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। সওজ প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করছে। কিন্তু রেলক্রসিংয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কেউ দায়িত্ব নিতে চাইছে না।
রেললাইনের ওপর উড়ালপথ নির্মাণে এক যুগের বেশি সময় ধরে আলোচনা চলছে। সওজ অল্প কিছু মহাসড়কের উড়ালসড়ক নির্মাণ করেছে। অন্যগুলোতে উড়ালসড়ক নির্মাণ কে করবে, সেটাই ঠিক করতে পারছে না সংস্থাগুলো। ফলে অরক্ষিতই থেকে যাচ্ছে।
বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, রেলে বিপুল বিনিয়োগের ফলে ট্রেনের গতি বাড়বে—এটাই ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু রেলক্রসিং অরক্ষিত রেখে গতি বাড়ানো যাবে না। তিনি আরও বলেন, সব রেলক্রসিং পর্যায়ক্রমে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আনতে হবে। এর আগে তাৎক্ষণিকভাবে সব ক্রসিংয়ের দুই পাশে তিনটি করে ছয়টি গতিরোধক বসাতে হবে। প্রতিটি ক্রসিংয়ে ফ্লাশিং লাইট বসাতে হবে, যাতে ট্রেন এলে জ্বলে ওঠে। ক্রসিংয়ে ঘণ্টা বসাতে হবে, যা ১০০ ডেসিবেল শব্দ সৃষ্টি করে।
সরু সড়কে বেশি যান, বেড়েছে দুর্ঘটনা
০২ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশালসহ দক্ষিণের বিভিন্ন সড়কপথে যানবাহনের চলাচল আগের তুলনায় বেড়েছে। যানবাহনের চাপ যত বেড়েছে সেই তুলনায় সড়ক ততটা প্রশস্ত হয়নি।
অপ্রশস্ত সড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। গত ২৬ জুন সেতু চালুর পর এক মাসে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে অন্তত ১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। সেতু চালুর আগে জুন মাসে এ মহাসড়কে ৬টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৫ জনের। আর মে মাসে নিহত হয়েছিলেন ১৭ জন।
সড়ক ও পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাসড়কে এ প্রাণহানি ও দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম অপ্রশস্ত মহাসড়ক, যানবাহনের সংখ্যা ও চলাচল কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়া, বেপরোয়া গতি ও বাঁক। পদ্মা সেতু চালুর পর এ সড়কপথে নতুন ৫০০ বাস নেমেছে বলে জানান বরিশাল বাসমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে।
পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কল্যাণে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটাসহ দক্ষিণের ছয় জেলায় মহাসড়কের গাড়ি চলাচল আগের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়লেও সে অনুযায়ী সড়ক প্রশস্ত করা হয়নি। ফলে বর্ধিত যান চলাচলের উপযোগী নয় ২৪ ফুট প্রশস্ত পুরোনো মহাসড়ক।
অবহেলা ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রকল্পে বারবার দুর্ঘটনা
১৬ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
বিদ্যমান সড়কের ওপর নির্মাণকাজের সময় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব প্রকল্প কর্তৃপক্ষের। এ জন্য খানাখন্দ মেরামত করতে হয় নিয়মিত। চলাচলকারী যানবাহন ও মানুষের নিরাপত্তা বিধান করাও প্রকল্পের কাজের অংশ। এ জন্য নির্মাণ এলাকা ঘিরে রাখার নিয়ম। কিন্তু রাজধানীর ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কে প্রায় এক দশক ধরে চলা বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে এর কিছুই মানা হয়নি।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথে বিশেষ লেনের মাধ্যমে বাস চলাচলের জন্য বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে।
নির্মাণকাজ শুরুর পর এ পর্যন্ত বিআরটির উড়ালপথ তৈরির গার্ডার ধসে চারটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরার জসিমউদ্দীন এলাকায় গার্ডার তোলার সময় তা একটি গাড়ির ওপর পড়ে যায়। এ ঘটনায় শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর আগে গত ১৫ জুলাই গাজীপুর শহরে গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে একজন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন। গত বছর ১৪ মার্চ বিমানবন্দর এলাকায় এবং আবদুল্লাহপুরে একই দিনে দুবার গার্ডারধসের ঘটনা ঘটে। এতে নির্মাণকাজে যুক্ত ছয়জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজন চীনের নাগরিক ছিলেন।
নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত সূত্র জানায়, গার্ডারগুলো ইংরেজি বর্ণ ‘আই’ আকৃতির। প্রতিটির ওজন ৪০–৪৫ টন। এসব গার্ডারের ওপর স্ল্যাব বসিয়ে বাস চলার পথ তৈরি হবে। বিপুল ওজনের এসব গার্ডার বসানোর কাজ চলছিল কোনো রকম নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়াই। এ ছাড়া যেসব ক্রেন ব্যবহার করা হচ্ছিল, এগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
চকবাজারে আগুন
নিমেষেই থেমে গেল জীবনযুদ্ধ
১৬ আগস্ট, ২০২২, প্রথম আলো
পুরান ঢাকায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি ঘটছেই। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস, থানা–পুলিশ, বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নড়েচড়ে বসে। কিছু পদক্ষেপও তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই বদলায় না। সর্বশেষ গতকাল সোমবার রাজধানীর চকবাজারের দেবীদাস ঘাট লেনে একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে চকবাজারের দেবীদাস ঘাট লেনে একটি চারতলা ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট সোয়া দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। মৃত ব্যক্তিরা সবাই ভবনের নিচতলার বরিশাল হোটেলের কর্মচারী। রাতে কাজ করে হোটেলের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন তাঁরা। মৃত ব্যক্তিরা হলেন বিল্লাল সরদার (৩৫), মো. স্বপন (১৮), ওসমান দেওয়ান (২৫), মো. রুবেল (২৭), মো. মোতালেব (১৮) ও মো. শরিফ (১৫)। তাঁদের মধ্যে বিল্লাল ও মোতালেবের বাড়ি বরিশাল, ওসমানের বাড়ি শরীয়তপুর, স্বপনের বাড়ি হবিগঞ্জ, রুবেলের বাড়ি মাদারীপুর ও শরিফের বাড়ি কুমিল্লা। তাঁরা সবাই ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাঁদের কষ্টার্জিত আয়েই পরিবারগুলো চলত।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, মরদেহগুলো উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ দেখে কাউকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তাই ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করতে হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগুন নেভানোর পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন বিকেলে ভবনের দোতলা থেকে একে একে মরদেহ বের করছিলেন, ভবনের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই রেস্তোরাঁর কর্মী মো. ইকবাল। তিনি বলেন, যখন আগুন লাগল, তাঁর ভাই ওসমানও ছিলেন ভেতরে। সারা রাত কাজ করে ঘুমাচ্ছিলেন ভাই। অন্য স্বজনদেরও হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতে দেখা গেল।
দেবীদাস ঘাট লেনের ওই এলাকা বেশ ঘিঞ্জি। সেখানে সারি সারি প্লাস্টিকের কারখানা ও প্লাস্টিক পণ্যের গুদাম। যে ভবনটি আগুনে পুড়েছে, সেখানেও প্লাস্টিক ও শিশুদের খেলনা তৈরির কারখানা ছিল। তিনতলা ভবনের ওপর টিনের ছাউনি দিয়ে বানানো হয়েছে আরেকটি তলা। ওই ভবনে থাকা সব কটি কারখানা আগুনে পুড়ে গেছে। আগুনে আশপাশের আরও কয়েকটি ভবন ও কারখানা পুড়ে গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, আগুন লাগা ভবনের মালিক মো. রানা। আর বরিশাল হোটেলের মালিকের নাম মো. ফুরকান। দ্বিতীয় তলায় পলিথিনের কারখানার মালিকের নাম ফারুক। তাঁর বাড়ি ফরিদপুর। বরিশাল হোটেলের পাশে যে ভবনে আগুন লাগে, সেখানে ছিল জুতার কারখানা। ওই কারখানার মালিকের নাম কবির। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সরকারি জমির ওপরে এসব কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। যে হোটেল থেকে আগুন লেগেছে, সেখানে আগে গ্যাসের লাইন ছিল। বিল বকেয়া থাকায় হোটেলটির গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকে তারা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছে। ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, দুপুর ১২টার দিকে বিকট শব্দ শুনে বের হয়ে দেখেন, ওই হোটেলে আগুন জ্বলছে। এরপর সেখান থেকে আগুন আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এসব স্থাপনা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্লাস্টিক কারখানা ও সংলগ্ন ভবনগুলোয় অগ্নিনিরাপত্তা–ব্যবস্থা নেই। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
আগুনের ঘটনা পরিদর্শনে এসে লালবাগ পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে এসব কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে।
গত জুন মাসে পুরান ঢাকার চকবাজারে প্লাস্টিকের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত বছরের নভেম্বরে পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার একটি জুতার কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যান পাঁচজন।
এর আগে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন মারা যান। চুড়িহাট্টার আগুনের ঘটনার পর বিভিন্ন সংস্থার সুপারিশে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা সরিয়ে নেওয়াসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঘটনার পরপর অভিযান চালিয়ে কয়েকটি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১০ বছর আগে পুরান ঢাকার ‘নিমতলী ট্র্যাজেডি’তে পুড়ে মরেছিলেন ১২৪ জন। ওই ঘটনার পর সরকারের শীর্ষ মহল থেকে রাসায়নিক গুদাম-কারখানা স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি গুদাম বা কারখানাও স্থানান্তরিত হয়নি।
ক্রেন চালাচ্ছিলেন সহকারী
১৯ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো
রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেট কারের ওপর গার্ডার পড়ার সময় ক্রেনটি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী (হেলপার) রাকিব হোসেন। আর বাইরে থেকে তাঁকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন ক্রেনচালক আল আমিন। হালকা গাড়ি চালানোর অনুমোদন থাকলেও ভারী যান চালানোর লাইসেন্স নেই আল আমিনের। দুর্ঘটনার পর তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
১৫ আগস্ট বিকেলে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনের সড়কে চলন্ত অবস্থায় প্রাইভেট কারটির ওপর বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের গার্ডার পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে পাঁচজন নিহত হন। সেখানে নির্মাণকাজ করছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি (সিজিজিসি)। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে এই প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কথা উঠে এসেছে।
গার্ডারচাপার এ ঘটনায় গভীর শোক এবং নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি বলেছেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে তাঁদের আপত্তি থাকবে না। এ ঘটনায় করা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তদন্ত কমিটি গতকাল বৃহস্পতিবার পুনর্গঠন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ প্রকৌশল
বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. আসিফ রায়হানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে পুনর্গঠিত কমিটির সদস্য দাঁড়াল সাতজনে।
দায়িত্বে অবহেলা
এ ঘটনায় ক্রেনচালক, তাঁর সহকারী, নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ক্রেনচালক আল আমিনের হালকা গাড়ি চালানোর অনুমোদন থাকলেও ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। ২০১৬ সালে ক্রেন চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে দু–তিনটি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেন। গত মে মাস থেকে বিআরটি প্রকল্পে ক্রেন অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন। আর রাকিব তিন মাস আগে এ প্রকল্পের ক্রেন হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাঁর ক্রেনচালনার প্রশিক্ষণ নেই।
প্রকল্প-সংক্রান্ত নথি অনুসারে বিআরটি প্রকল্পে উড়ালপথ ও সড়ক নির্মাণ করছে তিনটি চীনা কোম্পানি—চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি (সিজিজিসি), জিয়াংশু প্রভিনশিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং ওয়েহেই ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ।
র্যাব জানায়, সিজিজিসি থেকে ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের কাজ পায় ইফসকন নামের একটি দেশি প্রতিষ্ঠান। এর মালিক মো. ইফতেখার হোসেন ও হেড অব অপারেশন আজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইফসকন ক্রেন ভাড়া নেয় বিল্ড ট্রেড কোম্পানির কাছে থেকে। এ প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক তোফাজ্জল হোসেন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের আফরোজ মিয়া ও মো. রুবেল এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসির সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলী শাহ ও ভারী যন্ত্র সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সিজিজিসির প্রকিউরমেন্ট অফিসার মঞ্জুরুল ইসলামকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব জানতে পেরেছে, ইফতেখার ও আজহারুল অপারেটরদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও ক্রেনের ফিটনেস যাচাই না করে সড়কে ভারী গার্ডার স্থাপনের কাজে নিয়োজিত করছিলেন।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় আপত্তি নেই চীনের
গতকাল সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি বলেন, বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল চীন থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। প্রতিনিধিদলটি তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে তাঁদের আপত্তি থাকবে না।
‘ঢাকার বাসে দিনে সাড়ে ৮ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া আদায়’
১৩ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
রাজধানীতে পাঁচ হাজার বাস-মিনিবাসে দিনে গড়ে ৫০ লাখ ট্রিপ হয়। প্রতি ট্রিপে যাত্রীপ্রতি ১৭ টাকা হিসাবে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৮ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামের এক বেসরকারি সংগঠনের প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
নৌকাডুবিতে পঞ্চগড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৮, এখনো নিখোঁজ ৪
২৭ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আরও ১৮ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়। এর মধ্যে জেলার আওলিয়ার ঘাট এলাকা থেকে দুই জনের, দেবীগঞ্জের করতোয়া ঘাট এলাকা থেকে চার জনের, সালডাঙ্গা ইউনিয়নের করতোয়া নদী থেকে তিন জনের ও দিনাজপুরের একটি নদী থেকে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার হয়।
এর আগে রোববার নৌকিডুবির পর ২৫ জনের আর সোমবার আরও ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। নৌকাডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান পঞ্চগড় জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় এ পর্যন্ত ৬৮ জনের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ৪ জন এখনো নিখোঁজ আছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
সক্ষমতা থাকলেও ট্রেনে কম বগি মেলে না টিকিট
৩০ সেপ্টেম্বর ২২,সমকাল
ব্যবসা, চাকরিসহ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করেন। প্রতিদিন এ পথে চলাচল করে ১০টি আন্তঃনগর ও তিনটি মেইল ট্রেন। তবে যাত্রীর চাপ সামলাতে পারছে না ট্রেনগুলো। চাহিদা থাকলেও রেলওয়ে নতুন ট্রেন যেমন যুক্ত করতে পারছে না, আবার সক্ষমতা থাকলেও চলাচলরত ট্রেনে পর্যাপ্ত বগি (কোচ) সংযোজন করা হচ্ছে না। এতে একদিকে বাড়তি আয়ের সুযোগ হারাচ্ছে, অন্যদিকে টিকিট না পেয়ে প্রতিদিন খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে। অনেকে আবার ‘স্ট্যান্ডিং’ টিকিট নিয়ে দীর্ঘপথ ভ্রমণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
রেলসংশ্নিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী প্রথম শ্রেণির (‘ক’ শ্রেণি) আন্তঃনগর ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা ও তূর্ণা-নিশিতাসহ গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলো ২২টি বগির ‘র্যাক’ দিয়ে চলাচল করতে পারে। তবে এসব ট্রেন চলছে ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ বগি নিয়ে। অথচ একটি ট্রেন ১২ থেকে ১৬টি বগি নিয়ে চললে যে খরচ হয়, ২২টি বগি সংযোজনেও খরচ একই হয়। তবে বগি বেশি হলে রেলের আয় বাড়ে। যাত্রীরাও চাহিদা অনুযায়ী টিকিট পান। তবে বগি সংকটে তা করা যাচ্ছে না।
দুধের শিশুরও ভাড়া লাগবে মেট্রোরেলে
০১ অক্টোবর ২২, সমকাল
ট্রেনে তিন বছরের কম বয়সের শিশুর ভাড়া লাগে না। ৩ থেকে ১২ বছরের শিশুরা যাতায়াত করতে পারে অর্ধেক ভাড়ায়। তবে আগামী ডিসেম্বরে চালু হতে যাওয়া ঢাকার মেট্রোরেলে এর কোনো সুবিধাই থাকছে না। সব শিশুর জন্য গুনতে হবে প্রাপ্তবয়স্কদের সমান ভাড়া। অথচ পাশের দেশ ভারতের দিল্লি ও কলকাতার মেট্রোরেলেও শিশুর জন্য ভাড়ায় ছাড় রয়েছে। দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের (এমআরটি-৬) দিয়াবাড়ী-আগারগাঁও অংশ আগামী ১৬ ডিসেম্বর চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, মেট্রোরেলে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ী) থেকে আগারগাঁওয়ের ভাড়া ৬০ টাকা। কমলাপুর পর্যন্ত ভাড়া ১০০ টাকা। স্মার্ট কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন যাত্রীরা। বিনা ভাড়ায় ভ্রমণ করতে পারবেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
একটি ডেমুও সচল নেই, দায় নিচ্ছে না কেউ
৪ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
বাংলাদেশ রেলওয়ে সেই ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে ইঞ্জিন কিনেছিল, তা দিয়ে দেশে এখনো ট্রেন চলছে। অন্যদিকে গত শতাব্দীর আশির দশকে জার্মানি থেকে কেনা কোচ দিয়ে এখনো যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। কিন্তু ২০১৩ সালে চীন থেকে কেনা ২০টি ডেমু ট্রেনের একটিও এখন সচল নেই।
এই ডেমু কেনার পরিকল্পনা যাঁরা করেছিলেন, যাঁরা কেনার প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন, যাঁরা ডেমু দেখতে বিদেশ সফর করেছিলেন, তাঁদের কোনো দায় নিতে হয়নি। তাঁদের বেশির ভাগ সরকারি সব সুযোগ–সুবিধা নিয়ে চাকরি শেষে অবসরে গেছেন।
ডেমু কিনতে সরকারের ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এতে যাত্রী পরিবহন করে আয় হয়েছে ২২ কোটি টাকার মতো। মেরামত ও জ্বালানির পেছনে আবার খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ফলে দেখা যাচ্ছে, জনগণের বিপুল অঙ্কের টাকা গচ্চা যাচ্ছে ডেমুর পেছনে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তখন যাঁরা ডেমু কেনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বিবেচনা করে কিনেছিলেন। এখন এত বছর পর কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এটা একটা জটিল বিষয়।
অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এভাবে দায়মুক্তি পাওয়া যায় বলেই প্রয়োজনীয় বিচার–বিবেচনা ও যাচাই–বাছাই ছাড়া প্রকল্প নেওয়া হয়। পরে দেখা যায়, যে উদ্দেশ্যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ হচ্ছে না।
সেই ডেমু এখন জাদুঘরের পথে
দুই দিকে দুটি ইঞ্জিন, মাঝখানে একটি কোচ মিলে হয় ডেমুর একটি সেট। রেলওয়ে ২০১৩ সালে চীন থেকে ২০ সেট ডেমু কেনে। অবশ্য চালুর তিন বছর পর থেকেই ডেমু অকেজো হতে থাকে। এখন সব কটি ডেমু ট্রেনই অচল, পড়ে আছে রেলের বিভিন্ন স্টেশনে।
রেলের প্রতিটি ইঞ্জিন, কোচ ও ওয়াগনের অর্থনৈতিক বয়সসীমা (ইকোনমিক লাইফ) ধরা আছে। ইঞ্জিনের বয়সসীমা ২০ বছর। কোচ ও ওয়াগনের বয়সসীমা যথাক্রমে ৩৫ ও ৪৫ বছর। একেকটি ডেমু তিন থেকে সাত বছর টিকেছে।
রেলওয়ের হিসাবে, চালু হওয়ার পর ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডেমু ট্রেনে যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে প্রায় ৯৭ লাখ। এ থেকে আয় হয়েছে ২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০২০ সালের দিকে অর্ধেকের বেশি ডেমু অচল হয়ে যায়। করোনা মহামারি শুরুর পর আর এই ট্রেন খুব একটা চলেনি।
ডেমু নিয়মিত মেরামতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা। ডেমুর পেছনে কত টাকার জ্বালানি খরচ হয়েছে, এর আলাদা কোনো হিসাব রেল কর্তৃপক্ষ রাখে না। একটি সূত্র বলছে, চালুর পর জ্বালানি আর মেরামতেই ডেমুর পেছনে ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কর্মীদের বেতন–ভাতায় ব্যয় তো রয়েছেই। অর্থাৎ ডেমু চালিয়েও লোকসান দিয়েছে রেলওয়ে।
যেভাবে ডেমু কেনা হয়
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর হঠাৎ করে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ডেমু ট্রেন প্রকল্পের ধারণা দেন। ২০১০ সালে রাজস্ব খাত (সরকারের ব্যয়ে) থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়ে তা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। তবে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি নাকচ করে। এরপর প্রকল্পটি অতিগুরুত্বপূর্ণ এবং ঢাকার যানজট নিরসনে সহায়ক হবে উল্লেখ করে ওই বছর (২০১০) জুলাই মাসে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন তখনকার পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকারকে চিঠি লেখেন। এরপর প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
ডেমু প্রকল্পের দরপত্রে অংশ নেয় তিনটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে চীনের প্রতিষ্ঠান দুটি—সিএসআর জিয়াং ও তাংসেন রেলওয়ে ভেহিকেল কোম্পানি। অন্যটি ইন্দোনেশিয়ার পিটি ইনকা। জিয়াং ও পিটি ইনকাকে দরপত্র মূল্যায়নে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও একমাত্র যোগ্য হিসেবে তাংসেন কাজটি পায়। রেলওয়ে সূত্র বলছে, রীতি অনুসারে দুটি প্রতিষ্ঠান অযোগ্য হওয়ায় পুনরায় দরপত্র আহ্বান করার কথা। কিন্তু তাড়াহুড়া করে তাংসেন কোম্পানিকে কাজটি দেওয়া হয়।
চুক্তি অনুসারে, ডেমু ট্রেন সরবরাহ ছাড়াও ১৯ ধরনের প্রধান যন্ত্রাংশ, ৩৭ ধরনের সাধারণ যন্ত্রাংশ, ১৩৭ ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ যন্ত্রাংশ এবং ৩৭ ধরনের (সরঞ্জাম) টুলস ও মেরামতকাজে ব্যবহৃত যন্ত্র দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্প কর্মকর্তারা এসব যন্ত্রের সব কটি ঠিকভাবে বুঝে নেননি বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। এ জন্য পরে ডেমু মেরামতের প্রয়োজনে যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়নি।
দায়ীদের শাস্তি হয়নি
ডেমুর বিষয়ে জানতে চাইলে গত রাতে সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ডেমু জনপ্রিয়। সে জন্য সরকার ডেমু কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। আমি শুধু বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ট্রেনের কারিগরি দিক (স্পেসিফিকেশন) দেখার দায়িত্ব রেলওয়ের কর্মকর্তাদের। সেটা তো মন্ত্রীর দেখার কথা নয়।
ডেমু কেনার প্রকল্প তৈরির সময় রেলের মহাপরিচালক ছিলেন টি এ চৌধুরী। ২০১১ সালের শেষের দিকে তিনি অবসরে যান। তখনো ডেমু দেশে আসেনি। টি এ চৌধুরীর পর রেলের মহাপরিচালক হন মো. আবু তাহের। তাঁর সময়েই ডেমু দেশে আসে। এখন অবসরে থাকা এই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সময়ে ডেমু শুধু গ্রহণ করা হয়। কেনাকাটা আগেই হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘ডেমু নিয়ে আমাদের কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল। যদিও তখন কিছু করার ছিল না।’
শুরুতে ডেমু প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ছিলেন রেলের তৎকালীন প্রধান যন্ত্রকৌশল প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার) সাইদুর রহমান। তিনি দায়িত্বে থাকার সময়ই ডেমু আমদানি শেষ হয়। পরে ডেমু প্রকল্প নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে যন্ত্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা (পরে রেলের মহাপরিচালক) শামসুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি হয়। কমিটি প্রকল্প পরিচালক এবং ডেমু প্রকল্পের অধীনে চীন সফর করা কর্মকর্তাদের দায়ী করে। এরপর সাইদুর রহমানকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। সে অবস্থাতেই তিনি পরে অবসরে যান। যদিও আর কাউকে ওএসডি হতে হয়নি।
সাইদুর রহমান রেল থেকে অবসরে যাওয়ার পর উত্তরা-মতিঝিল পথে নির্মাণাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করেন। এখন তিনি সেখানে নেই।
সাইদুর রহমানের পর ডেমু প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পান রেলওয়ের তৎকালীন প্রধান যন্ত্রকৌশল প্রকোশলী ইফতিয়ার হোসাইন। ২০১৫ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি ছিলেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন, দরপত্রের দলিল তৈরি এবং দরপত্র মূল্যায়নে রেলের যন্ত্রকৌশল ও পুরকৌশল বিভাগের ১০ থেকে ১২ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন, যাঁদের বেশির ভাগই এখন অবসরে চলে গেছেন।
নথি থেকে জানা যায়, ডেমু কিনতে ৪৮ লাখ টাকার বেশি ব্যয় করে আটজনকে চীন সফরে পাঠানো হয়েছিল, যাঁদের দায়িত্ব ছিল ডেমুর কার্যকারিতা ও অন্যান্য বিষয় দেখে আসা। ভ্রমণকারীদের মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে বিভাগের ছয় কর্মকর্তা এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ও পরিকল্পনা কমিশনের একজন করে কর্মকর্তা ছিলেন।
রক্ষণাবেক্ষণের অবকাঠামোও ছিল না
বিদ্যমান রেল ইঞ্জিন ও কোচের চেয়ে কারিগরি দিক থেকেও ডেমু আলাদা। ডেমুর যন্ত্রাংশ দেশে সহজলভ্য নয়। কিন্তু প্রকল্প নেওয়ার সময় অভিজ্ঞতার ঘাটতি মেটানো এবং ডেমুর রক্ষণাবেক্ষণের কোনো পরিকল্পনাই নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বিদ্যমান রেল ইঞ্জিনগুলো দেড় বছর পরপর মেরামতের জন্য কারখানায় পাঠানো হয়। ডেমুর কলকবজা কোচের নিচে। ফলে এগুলো মেরামত করার জন্য বিশেষ অবকাঠামো দরকার, যা রেলে নেই। ফলে বিকল হয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এবং পার্বতীপুরে রেলের মেরামত কারখানায় নেওয়া হয়। কোনোরকমে মেরামত করে ফেরত দেওয়া হলে আবার তা নষ্ট হয়ে যায়।
৪২টি লোকাল ট্রেন চালুর গরজ নেই
৮ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। মহামারির ভয় কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু করোনার সময় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৪টি রুটের ৪২টি লোকাল ট্রেন আর চালু হয়নি। কবে নাগাদ এসব ট্রেনের চলাচল শুরু হবে, তা নিশ্চিত করতে পারছেন না রেলওয়ের কর্মকর্তারা। স্বল্প ভাড়ার কারণে ‘গরিবের বাহন’ হিসেবে পরিচিত এসব ট্রেনে বছরে যাতায়াত করতেন ১৫ থেকে ২০ লাখ যাত্রী।
ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় যাতায়াত ভোগান্তিতে পড়েছেন স্বল্প আয়ের লোকজন। তাঁদের এখন বেশি ভাড়া দিয়ে সড়কপথে চলাচল করতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সড়ক পরিবহনে ভাড়া বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রী কল্যাণ সমিতি এসব ট্রেন চালুর দাবিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এই ব্যাপারে মনোযোগ কম বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাত্রীসেবার নামে রেলওয়ে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। লোকাল ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় কম আয়ের লোকজনই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ট্রেনগুলো চালু থাকলে সাধারণ মানুষ যেমন সেবা পেতেন, তেমনি যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রেও রেলওয়ে তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারত।
করোনার আগে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অধীনে ১৮৮টি ট্রেন চলাচল করত। এগুলোর মধ্যে ৪৮টি আন্তনগর ট্রেন। বাকি সব কটি লোকাল (মেইল, লোকাল ও কমিউটার) ট্রেন হিসেবে চলাচল করে। করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের মার্চের শেষের দিকে সব যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অর্ধেক আসনের টিকিট বিক্রিসহ নানা বিধিনিষেধ নিয়ে ৩১ মে থেকে আট জোড়া ট্রেন চালু করা হয়। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে সব আন্তনগরসহ বেশির ভাগ ট্রেন চালু হয়। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারিতে বিধিনিষেধ পুরোপুরি উঠে গেলে চলাচল শুরু করে ১৪৬টি ট্রেন। কিন্তু লোকাল ট্রেনের ৪২টি আর চালু হয়নি। এসব ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় রেলওয়ের যাত্রী পরিবহন ও আয়ও কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩২ শতাংশ আয় কম হয়েছে। যাত্রী কমে গেছে ২৫ শতাংশ।
জানতে চাইলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনগুলো চালু করা প্রয়োজন। কিন্তু গত তিন-চার বছরে ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত অনেক ব্যক্তি অবসরে গেছেন, তা পরে পূরণ হয়নি। আবার ট্রেনগুলো চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন ও কোচও নেই। তাই ট্রেনগুলো চালু করা যাচ্ছে না।
অথচ করোনার আগে ও পরে ৩০টি নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হয়েছে রেলের বহরে। সব মিলিয়ে ইঞ্জিনসংখ্যা এখন ১৫৯। তবে রেলওয়ে সূত্র বলছে, লোকাল ট্রেনে যত ইচ্ছা, যাত্রী পরিবহন করা যায়। এসব ট্রেন থামে প্রায় সব স্টেশনেই। ফলে বেশি যাত্রী পরিবহন করা হয়। ভাড়া তুলনামূলক কম বলে স্বল্প আয়ের মানুষ এসব ট্রেন ব্যবহার করেন। তবে রেলের আয় কম হয়। এ ছাড়া টিকিট কাটার হারও কম। তাই আয় কম হওয়ায় ট্রেন চালুর ব্যাপারে আগ্রহ কম কর্তৃপক্ষের।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অধীনে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ। মূলত পদ্মা ও যমুনা নদীর এ পারের অঞ্চলকে নিয়ে রেলের পূর্বাঞ্চল।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের আগে সিলেট-ছাতকবাজার পথে চারটি লোকাল ট্রেন চলাচল করত। এখন একটিও চলে না। চট্টগ্রাম নগরের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ হচ্ছে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুট। এই পথের চারটি ট্রেনও বন্ধ। এখন সে পথে দুই জোড়া ডেমু ট্রেন চলে। তা–ও মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকে। চট্টগ্রাম-সিলেট পথে জালালাবাদ এক্সপ্রেস নামের ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া আখাউড়া-সিলেট ও লাকসাম-চাঁদপুরের মধ্যে কোনো ট্রেন চলে না। বর্তমানে ঢাকা-ময়মনসিংহ, আখউড়া-সিলেট, লাকসাম-নোয়াখালী, ঢাকা-জয়দেবপুর, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ-দেওয়ানগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার রুটগুলো সচল থাকলেও কোনোটিতে দুটি, কোনোটিতে চারটি ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
রানিং টাইম বেড়েছে, কমেছে ট্রেনের গতি
০৫ অক্টোবর, ২০২২, বণিক বার্তা
বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যস্ততম জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে যেসব অবকাঠামো রয়েছে, তা দিয়ে প্রতিদিন ২২টি ট্রেন চলার কথা। কিন্তু সেকশনটিতে প্রতিদিন চলছে ৪২টি ট্রেন। সেকশনটি সিঙ্গেল লাইনের। একটি ট্রেন কোনো স্টেশন ত্যাগ করার পর পরবর্তী স্টেশনে না পৌঁছানো পর্যন্ত সেখানে আর কোনো ট্রেন প্রবেশের সুযোগ থাকে না। যেহেতু সক্ষমতার দ্বিগুণ ট্রেন চলছে, তাই প্রতিটি ট্রেনেরই ক্রসিংয়ে বাড়তি সময় ব্যয় করতে হয়। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে ট্রেনের গতিতে। ফলে ঢাকা থেকে রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও রংপুরগামী ট্রেনগুলোর বেশির ভাগই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রায় পুরোটাই মিটার গেজ লাইন। মিটার গেজ লাইনে চালানোর জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কেনা ৩০টি ইঞ্জিন সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে রেলের বহরে। তবে চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ, ঢাকা-নোয়াখালী, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে নতুন ইঞ্জিনগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এসব রুটের রেলপথ ও রেলসেতু নতুন কেনা ইঞ্জিনগুলোর ভার বহনে সক্ষম নয়। আর যেসব পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে এসব রুটে ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে, সক্ষমতা কমে যাওয়ায় সেগুলোর গতি থাকে কম। যার কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগে বেশি।
রেলওয়ের সক্ষমতায় এসব ঘাটতি সার্বিকভাবে প্রভাব ফেলেছে ট্রেনের সময়সূচিতে। বর্তমানে ৫২ নম্বর ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে ট্রেন পরিচালিত হচ্ছে। ৫১ নম্বর ওয়ার্কিং টাইম টেবিলের চেয়ে বর্তমান টাইম-টেবিলে বেশির ভাগ ট্রেনের রানিং টাইম বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ ট্রেনগুলোর গতি কমেছে। পূর্বাঞ্চলের ৪৬টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে ২১টির রানিং টাইম বেড়েছে। বিপরীতে রানিং টাইম সামান্য কমেছে ১৬টি ট্রেনের। পঞ্চিমাঞ্চলের ৪২টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে ১৮টির রানিং টাইম বেড়েছে, সামান্য কমেছে ১৪টির।
৩ বছরের প্রকল্প ১৫ বছরে শেষের সম্ভাবনা, ব্যয় বাড়ছে ৪ গুণ
১৪ অক্টোবর, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
দুর্বল পরিকল্পনা, অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত ও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প। ফলে নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
প্রকল্পটির ব্যয় ও সময় আবারও বাড়ানোর প্রস্তাব যদি অনুমোদিত হয় তাহলে তা শেষ হতে আরও ৪ বছর লাগবে। অর্থাৎ, প্রকল্পের বয়স গিয়ে ঠেকবে ১৫ বছরে। খরচ হবে ৩ হাজার ২৬৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যা প্রথম দিককার খরচের হিসাবের ৪ গুণ।
২০১২ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকল্পটি হাতে নেয়। উদ্দেশ্য ছিল রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগের উন্নতি করা।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা ছাড়াই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ লাইন ও টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত দ্বিতীয় ডুয়েল গেজ লাইন বসাতে ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।
তখন বলা হয়েছিল, প্রকল্পের কাজ ২০১৫ সালে শেষ হবে।
কিন্তু, অবকাঠামোগত কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে। দরপত্র ও নকশায় জটিলতার কারণে এই দেরি। কাজ শেষের সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সাল করা হয়।
ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটে চলমান প্রকল্পটির ৫৮ দশমিক ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৭ সাল ও খরচ আরও ২ হাজার ১৫৮ কোটি ৯৬ লাখ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ করায় ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয় সায়েমকে
১৬ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো
আবু সায়েম (৩৫) ঢাকার মতিঝিলে একটি পোশাক কারখানার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রতিদিনের মতো কাজ সেরে বাসে করে বাসায় ফিরছিলেন তিনি।
বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাসচালকের সহকারীর সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি হয়। স্বজনদের অভিযোগ, এই কারণে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হয়েছে সায়েমকে। শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সরণিতে এ ঘটনা ঘটে।
সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৭ জনের মৃত্যু
২১ অক্টোবর, ২০২২, ভোরের কাগজ
দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৭ জনের মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া গত ১০ বছরে প্রতিদিন গড়ে ১৪ জনের মৃত্যু হচ্ছে। গত এক বছরে ৫ হাজার ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ২৮৪ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন সাত হাজার ৪৬৮ জন।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ, সেবক ও ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সড়কে ৭ বছরে ৩৭ হাজার দুর্ঘটনা, প্রাণহানি সাড়ে ৫১ হাজার
২২ অক্টোবর ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
‘নিরাপদ সড়ক দিবস’ ঘোষণার পরেও দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা আর মৃত্যুর মিছিল এখনও থামেনি। ঘোষণার একবছর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে গণমানুষের দুর্বার আন্দোলন দেখেছে বাংলাদেশ। সরকার বাধ্য হয়ে সংশোধন করে সড়ক আইনটিও, বাড়ানো হয় ঘাতকদের শাস্তি। কিন্তু তাতেও সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা, বন্ধ হয়নি মানুষের আহাজারি। তার প্রমাণ মেলে গত ৭ বছরে ৩৭ হাজার ৪২২টি সড়ক দুর্ঘটনায়। এসব দুর্ঘটনায় ৫১ হাজার ৬৬৫ জন মানুষ নিহত হয় এবং আহতের সংখ্যা ১ লাখের বেশি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত ৭ বছরে ৩৭ হাজার ৪২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১ হাজার ৬৬৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ৩৯৭ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ৬ হাজার ৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৬৪২ জন নিহত, ২১ হাজার ৮৫৫ জন আহত হয়। ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৪ হাজার ৩১২টি, আর ৬ হাজার ৫৫ জন নিহত, ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত। ৪ হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৩৯৭ জন নিহত, ১৬ হাজার ১৯৩ জন আহত হন ২০১৭ সালে। ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৫১৪টি দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৪৬৬ জন আহত হন। ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮৫৫ জন নিহত, ১৩ হাজার ৩৩০ জন আহত হয়েছেন। ৪ হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৬৮৬ জন নিহত, ৮ হাজার ৬০০ জন আহত হন ২০২০ সালে। ২০২১ সালে ৫ হাজার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনায় ৭ হাজার ৮০৯ জন নিহত, ৯ হাজার ০৩৯ জন আহত হয়েছেন।
বছরভিত্তিক এই হিসাব বলছে, ২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫৮১টি, যা ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬২৯টিতে। ২০১৫ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৬৪২ জন, যা ২০২১ সালে ৭ হাজার ৮০৯ জনে নেমেছে। আর ২০১৫ সালে আহত মানুষের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৮৫৫ জন, যা ২০২১ সালে কমে ৯ হাজার ৩৯ জন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে নিরাপদ সড়ক দিবস ঘোষণা এবং ২০১৮ সালের আন্দোলনের পর দুর্ঘটনা আগের চেয়ে বাড়লেও কমেছে হতাহতের সংখ্যা।
এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা আরেক সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত তিন বছরে ১৪ হাজার ৭৯৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে সারা দেশে। এতে প্রাণহানির সংখ্যা ১৬ হাজার ৯২৬ জন, আর আহতের সংখ্যা ২১ হাজার ৯৫০ জন। এর মধ্যে ২০১৯ সালে দুর্ঘটনা ৪ হাজার ৬৯৩টি, নিহত ৫ হাজার ২১১ জন, আহত হয়েছেন ৭ হাজার ১০৩ জন। ২০২০ সালে দুর্ঘটনা ৪ হাজার ৭৩৫টি, নিহত ৫ হাজার ৪৩১ জন, আহত হন ৭ হাজার ৩৭৯ জন। ২০২১ সালে দুর্ঘটনা ৫ হাজার ৩৭১টি, নিহত ৬ হাজার ২৮৪ জন, আহত হয়েছেন ৭ ৪৬৮ জন।
সংগঠনটির হিসাব মতে, নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের পর তিন বছরের ব্যবধানে দুর্ঘটনা, নিহত ও আহত বেড়েই চলেছে। ২০১৯ সালে দুর্ঘটনা ছিল ৪ হাজার ৬৯৩টি, যা ২০২১ সালে বেড়ে ৫ হাজার ৩৭১টিতে পৌঁছেছে। নিহতের সংখ্যা ২০১৯ সালের ৫ হাজার ২১১ জন থেকে বেড়ে ৬ হাজার ২৮৪ জন, আর আহতও ৭ হাজার ১০৩ জন থেকে বেড়ে ৭ হাজার ৪৬৮ জন হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের গত ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ২২৪টি। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫ হাজার ৫৭ জন এবং আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪১৪ জন। অর্থাৎ দুর্ঘটনা, নিহত ও আহতের ক্ষেত্রে এই হিসাবও পুরো বছরের মোট সংখ্যার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে এরইমধ্যে।
এবার চোখ ফেরানো যাক, মাস ও দিনভিত্তিক পরিসংখ্যানে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলেছে— গত মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে সারা দেশে ৪০৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৭৬ জন এবং আহত ৭৯৪ জন। এ মাসে প্রতিদিন নিহত হয়েছে ১৫ দশমিক ৮৬ জন। আগস্ট মাসে ৩ হাজার ৭৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬০৩ জন নিহত এবং ২ হাজার ৯৯০ জন আহত হন। এ মাসে গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছেন ১৯ দশমিক ৪৫ জন।
নিহতদের অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত বলছে, সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৬ জনের মধ্যে ১০৩ জনই ছিলেন পথচারী, যা মোট নিহতের ২১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। নিহতের মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল ৬২, শিশু ৭৭। আগস্টে নিহতদের মধ্যে ৫০ শতাংশই শিশু-কিশোর-তরুণ, যাদের বয়স ৭-২৫ বছর এবং তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। সেপ্টেম্বরে শিক্ষার্থী নিহত হন ৬২ জন, শিক্ষক নিহত হন ১৪ জন। এ মাসে দুর্ঘটনায় ১৯-৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হন ৩৮৪ জন, অর্থাৎ ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩৪টি (৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৫৮টি (৩৮ দশমিক ৮২ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৩টি (১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৬টি (৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬টি ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর ৬৬টি (১৬ দশমিক ২১ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮৭টি (৪৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৫টি (২৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ৪১টি (১০ দশমিক ০৭ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং আটটি (১ দশমিক ৯৬ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
কাগজ ফিটফাট, গাড়ি সদরঘাট
২২ অক্টোবর ২২, সমকাল
বাসটি ভাঙাচোরা, জরাজীর্ণ। খুলে পড়া পেছনের অংশ শিকলে আটকানো। খালি চোখেই ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-০৯৮৫ নম্বরের এই বাসটির অবস্থা দেখা যায় সঙ্গিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এটিকেই গত বছরের ১০ মার্চ ফিটনেস সনদ দিয়েছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ফিটনেসের মেয়াদ রয়েছে আগামী ৯ মার্চ পর্যন্ত। শুধু গাজীপুর-রামপুরা (এ/৪৩৬) রুটের এই বাসটি নয়, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এমন অসংখ্য গাড়ি রয়েছে, যেগুলো জরাজীর্ণ হলেও কাগজে-কলমে ফিট। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সনদের জোরে সড়ক দাপিয়ে চলছে, ঘটছে দুর্ঘটনা।
গত সোম ও মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন রুটের ২০টি ভাঙাচোরা বাসের ছবি তুলেছে সমকাল। এগুলোর ফিটনেস, নিবন্ধন হালনাগাদ আছে কিনা তা যাচাইয়ে দৈবচয়নের ভিত্তিতে পাঁচটি বাসের তথ্য বিআরটিএ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বিস্ময়কর তথ্য, সবক’টির ফিটনেসসহ সব কাগজ হালনাগাদ আছে। পথে চলতে, যাত্রী পরিবহনে বাধা নেই। যতই ভাঙাচোরা হোক, বিআরটিএ কিংবা পুলিশ কিছুই করতে পারবে না।
পররাষ্ট্র বিষয়ক
ভারতকে বলেছি, শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখতে হবে
১৯ আগস্ট, ২০২২, বণিক বার্তা
বাংলাদেশ কোনো উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডকে কখনো প্রশ্রয় দেবে না বলে ভারতকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করতে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জেএমসেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরই মধ্যে তার বক্তব্যের একটি অডিও রেকর্ড বণিক বার্তার হাতে এসেছে।
তিনি বলেন, আমি বলেছি, আমার দেশে কিছু দুষ্ট লোক আছে, কিছু উগ্রবাদী আছে। আমাদের দেশ সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, কোনো দ্বীপ নয়। কিছু দিন আগে তাদের দেশেও এক ভদ্রমহিলা কিছু বলেছেন। সেসময় আমরা সরকারের পক্ষ থেকে একটি কথাও বলিনি। বিভিন্ন দেশ কথা বলেছে, আমরা একটা শব্দও বলিনি। আমি বলেছি, এই ধরনের প্রটেকশন আমরা আপনাদের দিয়ে যাচ্ছি। সেটা আপনাদের মঙ্গলের জন্য, আমাদের মঙ্গলের জন্য। আমরা যদি একটু কথা বলি তখন উগ্রবাদীরা আরো সোচ্চার হয়ে বেশি বেশি কথা বলবে। তাতে আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে। আমাদের স্থিতিশীলতা ব্যাহত হবে।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা এমন কাজ করব না, ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এমন কোনো উসকানি দেব না, যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমাদের প্রতিবেশি দেশে কিছু মসজিদ পুড়েছে। আমরা কোনোভাবে সেটা প্রচার করতে দিইনি। এর কারণ হচ্ছে কিছু দুষ্টু লোক আছে, কিছু জঙ্গি আছে যারা এটার বাহানায় আরও অপকর্ম করবে। আমরা এটা নিয়ন্ত্রণ করেছি।
তিনি আরো বলেন, অনেকে আমাকে ভারতের দালাল বলে, কারণ অনেক কিছুই হয়, আমি স্ট্রং কোনো স্টেটমেন্ট দিই না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলেই ভারতের যথেষ্ট মঙ্গল হচ্ছে বলেও উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতে বর্ডারে (সীমান্তে) এক্সট্রা (অতিরিক্ত) খরচ করতে হয় না। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে বছরে ২৮ লাখ মানুষ ভারতে বেড়াতে যায়। কয়েক লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করে।
ভারতীয় ঋণ
সম্মতিতেই বাদ যাচ্ছে ৮ প্রকল্প
০৩ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
ভারতীয় ঋণের ফাঁদে পড়েছে বাংলাদেশ। ঋণের টাকা ছাড়ের আগেই শুরু হয়ে গেছে পরিশোধের দিন গণনা। সম্মতির ভিত্তিতে দুই দেশের করা ঋণচুক্তি থেকে মোট আটটি প্রকল্প বাদ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ভারত লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) ১, ২ ও ৩-এর আওতায় বাংলাদেশের সঙ্গে ৮০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার প্রথম ঋণচুক্তি হয়েছিল ১০০ কোটি ডলারের, যদিও পরে ঋণের পরিমাণ ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলারে নেমে আসে। বাকি ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনুদান হিসেবে দেয় ভারত।
সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে ২০১০ সালে ঋণচুক্তিতে ১৫টি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, কোনোটার ভূমি অধিগ্রহণ, ঠিকাদার নিয়োগসহ প্রকল্প নেওয়ার অন্য যে নিয়মগুলো রয়েছে তা শেষ করে কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়েছে ২০১২ সালে, কোনোটি ২০১৫ বা ২০১৭ সালে। তবে এ ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে শোধ করতে হবে। অন্য দাতা সংস্থাগুলোর ঋণ পরিশোধ প্রকল্প নেওয়ার বা অর্থনৈতিক চুক্তি করার পর থেকে শুরু হয়। তবে ভারতের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটা ভিন্ন। ২০১০ সালের চুক্তির আওতায় ২০১৬ সালে নেওয়া প্রকল্পটি ২০৩৬ সালের বদলে ২০৩০ সালের মধ্যে যেমন পরিশোধ করতে হবে। আবার ২০১০, ২০১২, ২০১৫ বা ২০১৭ সালের নেওয়া প্রকল্পেরও ঋণ পরিশোধ করতে হবে ২০৩০ সালের মধ্যে। এ অনুযায়ী কোনো প্রকল্প যদি ২০২৯ সালে নেওয়া হয়, তবে সেই টাকাও পরিশোধ করতে হবে ২০৩০ সালের মধ্যে।
একইভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ২০১৫ সালে করা ২০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি অনুযায়ী ১৫টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়। এ চুক্তির আওতায় নেওয়া ১৫টি প্রকল্প যখনই শুরু করা হোক না কেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। আর ২০১৭ সালে করা তৃতীয় ঋণচুক্তিতে মোট ১৬টি প্রকল্পে ৫০০ কোটি ডলারের ঋণ দিতে চায় ভারত। এখানেও প্রকল্প যখনই শুরু হোক না কেন বাংলাদেশকে ২০৩৭ সালের মধ্যে এই ৫০০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। তিনটি চুক্তিতেই ১ শতাংশ সুদে ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধের বিধান রাখা হয়েছে। এই ২০ বছরের মধ্যে ৫ বছর রেয়াদকাল বা গ্রেস পিরিয়ড রয়েছে।
তিস্তার উজানে আরো বাঁধ আরো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প
বাংলাদেশে নদী অববাহিকায় শুষ্ক মৌসুমে খরা, বর্ষা মৌসুমে বন্যা
০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, বণিক বার্তা
৪১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদী তিস্তার বাংলাদেশে রয়েছে শুধু ১২১ কিলোমিটার। যদিও এখানেই বসবাস করছে নদী অববাহিকার ৭১ শতাংশ বাসিন্দা। নদীটির উজানে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এতে নদীর জলপ্রবাহও এখন দিনে দিনে শীর্ণ হয়ে আসছে। পানিপ্রবাহ কমতে থাকায় বাংলাদেশ অংশের বাসিন্দারাই এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উজানে দেয়া বাঁধগুলোর কারণে শুষ্ক মৌসুমে মারাত্মক খরা মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাদের। আবার বর্ষা মৌসুমে বাঁধগুলো খুলে দেয়ার কারণে মারাত্মক বন্যারও শিকার হচ্ছে তারা।
বর্তমানে ভারতে তিস্তার ওপর বিদ্যমান ও নির্মাণাধীন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সংখ্যা ২০। প্রস্তাব ও পরিকল্পনা রয়েছে এর চেয়েও বেশিসংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়নের। হাতেগোনা কয়েকটি বাদ দিয়ে এসব জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অধিকাংশেরই অবস্থান নদীটির সিকিম অংশে। এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস এটলাসের তথ্য অনুযায়ী, তিস্তার শুধু সিকিম অংশেই ২৮টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে ভারত সরকারের। প্রকল্পগুলোর জন্য বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশের আগেই শীর্ণ হয়ে যাচ্ছে তিস্তা নদী। আবার সেখানেও আরো কয়েকটি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে ভারত সরকারের।
তিস্তায় উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ ভারতের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ ও রফতানির মাধ্যমে সিকিমের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা সাজিয়েছে রাজ্যটির আঞ্চলিক সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একের পর এক প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে সেখানে। নদী অববাহিকার মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশের বাস সিকিম অংশে। রাজ্যটির জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর প্রকৃত সুবিধাভোগী হিসেবে মূলত তাদের কথাই বলছে সিকিমের রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছে নদী অববাহিকার ১৭ শতাংশ বাসিন্দা।
বাংলাদেশের অধিকারে রয়েছে তিস্তা অববাহিকার মাত্র ১৭ শতাংশ এলাকা, যার পুরোটাই রংপুর বিভাগে অবস্থিত। যদিও অববাহিকার মোট বাসিন্দার ৭১ শতাংশেরই বসবাস এখানে। নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উজানে ভারত অংশে বিশেষ করে সিকিমে নদী অববাহিকার বাসিন্দা অনেক কম। যদিও এ কম মানুষ অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেই এখন নদীর প্রবাহ রুদ্ধ করে একের পর এক অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে অববাহিকার উজান ও ভাটির বাসিন্দাদের মধ্যে জীবনমানের দিক থেকে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে গৌতম আদানির সাক্ষাৎ
ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎ আসতে পারে ১৬ ডিসেম্বর
০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, বণিক বার্তা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের সফরে ভারতে অবস্থান করছেন। সফরের প্রথম দিনেই তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। এছাড়া শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের আদানি গ্রুপের ব্যবসায়ী গৌতম আদানি।
ভারতীয় এ ধনকুবেরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বণিক বার্তাকে জানিয়েছে, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে এরই মধ্যে চলমান অন্য বিনিয়োগগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়গুলোয় একে অন্যের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানি গ্রুপ যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে, সেটি থেকে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে কবে নাগাদ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে, সে দিন ঠিক করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসকে নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর এটি চালুর বিষয়ে যৌথ ঘোষণা দিতে পারেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। গতকাল গৌতম আদানির সঙ্গে বৈঠকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
দিল্লিতে শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি বৈঠক
স্থিতিশীলতা নিরাপত্তায় ঐকমত্য
০৭ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকে সামরিক নিরাপত্তা, সীমান্তে অপরাধ এবং জঙ্গিবাদ নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা বাংলাদেশকে জানিয়েছে ভারত। আর এসব বিষয়ে উদ্বেগ দূর করতে ভারতকে আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রতিবেশী দুই দেশ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। পাশাপাশি অর্থ ব্যবস্থাপনাকে সামনে রেখে স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। সেই সঙ্গে এ সম্পর্ককে আগামীতে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পরস্পরকে আশ্বস্ত করেছেন দুই নেতা। বৈঠকে উপাঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরবচ্ছিন্ন জরুরি খাদ্যপণ্য সরবরাহের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এ বৈঠক হয়। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন নরেন্দ্র মোদি। সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, খুবই হৃদ্যপূর্ণ পরিবেশে কথা বলেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় তাঁকে অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের সরকারপ্রধানকে এ সময় খুবই উৎফুল্ল দেখা যায়।
দুপুরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সাতটি সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশ। এবারের সফরে দুই দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি না হলেও কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে সমঝোতা, বিজ্ঞান বিষয়ে সহযোগিতা নিয়ে দুই দেশের কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের মধ্যে সমঝোতা, বিচার বিভাগের মধ্যে সহযোগিতা, রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ নিয়ে সমঝোতা, রেলওয়ের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সমঝোতা, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও প্রসার ভারতীর মধ্যে সমঝোতা এবং মহাকাশ প্রযুক্তি নিয়ে সমঝোতা হয়েছে।
পরে রামপালে মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিটের উদ্বোধন, রূপসা রেলসেতুর উদ্বোধন, ভারতীয় ঋণে খুলনা ও দর্শনা রেললাইন প্রকল্প, পার্বতীপুর রেললাইন প্রকল্প এবং সড়ক নির্মাণ সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ প্রকল্প নিয়ে ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। এরপর ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ২৩টি ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষা এবং ৫টি অন্যান্য ভাষায় অনূদিত বই নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেন শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালো ভারতের পরীক্ষামূলক ট্রানজিট পণ্যের চালান
৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা অনলাইন
ট্রানজিট চুক্তির আওতায় ভারতের পরীক্ষামূলক পণ্যের চালান চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। ভারতীয় জাহাজ ‘এমভি ট্রান্স সমুদেরা’ কলকাতা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দর থেকে ২৫ টন রড সহ ১২০টি কনটেইনার নিয়ে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টায় চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়।
কার্গো জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি (নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল) ১ জেটিতে ভিড়িয়ে খালাসের পর শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষে সড়ক পথে শ্যাওলা (সিলেট)স্থলবন্দরের পথে রওনা হবে। এরপর সুতারকান্দি (ভারত) স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারতের আসামে গিয়ে পৌঁছাবে।
এমভি ট্রান্স সামুদেরা জাহাজের শিপিং এজেন্ট ম্যাংগো লাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াকুব ভূঁইয়া সুজন জানান, চালানটি সিলেটের শ্যাওলা পর্যন্ত পরিবহনের জন্য ৮০ হাজার টাকায় একটি ট্রেইলর ভাড়া করা হয়েছে।
এমভি ট্রান্স সমুদেরা থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস ট্রান্স-শিপমেন্টের শুল্ক বাবদ ৭ হাজার ৭৫৪ টাকা এবং পণ্য খালাসের জন্য প্রায় ৭০ ডলার আয় করবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশকে ঘিরে বড় পরিকল্পনা করছে আদানি গ্রুপ
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, বণিক বার্তা
বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে ভারতের শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপ। ভারতীয় কনগ্লোমারেটগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে আদানি গ্রুপেরই বাংলাদেশকেন্দ্রিক বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ভোজ্যতেল, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা খাতে বিনিয়োগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। বিদ্যমান বিনিয়োগের পাশাপাশি নতুন নতুন সম্ভাবনাও অনুসন্ধান করছে গ্রুপটি। আগ্রহ দেখিয়েছে খাদ্য, বন্দর অবকাঠামোসহ আরো নানা খাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে বাংলাদেশকে ঘিরে বড় আকারে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে আদানি গ্রুপ।
এরই মধ্যে ভারতে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন গৌতম আদানি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার আলোচনায় বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়গুলো উঠে আসে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বণিক বার্তাকে জানিয়েছে, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে এরই মধ্যে চলমান অন্য বিনিয়োগগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়গুলোয় একে অন্যের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ, পরিবহন, লজিস্টিকস, বন্দর, এয়ারপোর্ট, রেল, ভোজ্যতেল, আবাসন, আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায় যুক্ত রয়েছে আদানি গ্রুপ। গতকালের তথ্যানুযায়ী গ্রুপটির বাজার মূলধন ২৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছেন গৌতম আদানি।
আদানি গ্রুপের বাংলাদেশকেন্দ্রিক সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এটি নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত হলেও এখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই বাংলাদেশে রফতানি করা হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চলমান ভারত সফরের সময় এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার ইউনিট-১-এর বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৬ ডিসেম্বর। আর দ্বিতীয় ইউনিটটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসবে আগামী বছরের ২৬ মার্চ।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বিদ্যুতের দাম ও ক্যাপাসিটি চার্জ তুলনামূলক বেশি বলে সাম্প্রতিক কিছু পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। এর জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন দি এক্সটার্নাল ডেট ও ভারতভিত্তিক গ্রোথওয়াচের এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ নেয়া না গেলে এর বিপরীতে বড় অংকের ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে বাংলাদেশকে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে বার্ষিক ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪২ কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার ডলারে।
দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড (বিইওএল) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালে। কোম্পানিটি রূপচাঁদা, ফরচুন, কিংস, মিজান ও ভিওলা ব্র্যান্ডের ভোজ্যতেল বিক্রি করে। বিইওএল শতভাগ বিদেশী মালিকানাধীন যৌথ উদ্যোগ। সিঙ্গাপুরের উইলমার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও ভারতের আদানি গ্রুপ মিলে আদানি উইলমার নামে এ যৌথ উদ্যোগ গড়ে ওঠে। বিইওএলের যাত্রার সময় এতে আদানি উইলমারের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩০ কোটি ডলার।
চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ জোন নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে আদানি গ্রুপ। এ প্রকল্পের উন্নয়নে গ্রুপটি ৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। এছাড়া আদানি গ্রুপ বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) প্রকল্পে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালি তুলে জমি ভরাটের কাজও করেছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে আদানি গ্রুপের অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি। আবার খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়ও আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে আদানি গ্রুপ। চাল প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটজাত চাল বিক্রির পাশাপাশি রাইস ব্র্যান অয়েলের ব্যবসায়ও আসতে চায় তারা। বাংলাদেশে বন্দরের জেটি ও টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার সঙ্গেও যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে আদানি গ্রুপ। আদানি গ্রুপের পরিকল্পনাধীন এসব প্রকল্পে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ হতে পারে ২ বিলিয়ন ডলার।
ট্রানজিটের এক চালানে সরকার পেয়েছে ২৯ হাজার টাকা
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হওয়া ট্রানজিটের একটি চালান এখন সড়কপথে সিলেটের শ্যাওলা স্থলবন্দর হয়ে ভারতের আসামের পথে রয়েছে। এক কনটেইনারের এ চালানে কাস্টম, বন্দর ও সড়ক বিভাগ পেয়েছে ২৮ হাজার ৯৩৫ টাকা। এর বাইরে বেসরকারি খাতেও আয় হয়েছে। বন্দর, কাস্টম এবং ট্রানজিটের চালান খালাস ও পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত শিপিং এজেন্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট চুক্তির আওতায় মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে চালানটি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে পৌঁছায় এমভি ট্রান্স সামুদেরা জাহাজ। মঙ্গলবার জাহাজটি জেটিতে ভেড়ার পরই অন্য কনটেইনারের পাশাপাশি ট্রানজিটের কনটেইনার খালাস করা হয়। এরপর ভোরে ভারতের উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রাইম মুভার ট্রেইলারে করে চালানটি নিয়ে রওনা হন কাস্টমস কর্মকর্তারা। ইলেকট্রনিক সিল অ্যান্ড বিধি কার্যকর না থাকায় কাস্টমস কর্মকর্তারা পাহারা দিয়ে চালানটি নিয়ে যাচ্ছেন।
চালানটি নেওয়ার আগে সরকারি সব মাশুল পরিশোধ করেছে শিপিং এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। কাস্টম কত ফি পাবে, তা আগেই নির্ধারণ করে দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এতে দেখা যায়, ছয় ধরনের ফি বাবদ কাস্টম পেয়েছে ৭ হাজার ৩০০ টাকা। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কনটেইনারটি জাহাজ থেকে নামানো বাবদ শিপিং এজেন্ট থেকে মাশুল পেয়েছে ৪৩ ডলার বা ৪ হাজার ৮৫ টাকা। এ ছাড়া প্রায় ১ হাজার ৭৫০ টাকা পণ্যের চালানের মালিকের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে। শিপিং এজেন্ট থেকে যে মাশুল আদায় হয়েছে, তা সাধারণত পণ্য পরিবহনের ভাড়ার সঙ্গে আগেই আদায় করে নেওয়া হয়।
এর বাইরে সড়ক বিভাগ সড়ক ব্যবহারের মাশুল পেয়েছে ১৫ হাজার ৮০০ টাকা। সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৯৩৫ টাকা পেয়েছে সরকারি তিন সংস্থা। এ হিসাবে ট্রানজিটের চালানে সরকারের টনপ্রতি আয় ১ হাজার ১৫৭ টাকা। কনটেইনারে পণ্য কমবেশি হলে টনপ্রতি মাশুলও কিছুটা কমবেশি হবে।
জানতে চাইলে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, এই কনটেইনার চালানের আমদানিকারক ও শিপিং এজেন্ট—এই দুই খাত থেকে বন্দরের আয় হয়েছে ৫ হাজার ৮৩৫ টাকা। এ টাকা ইতিমধ্যে আদায় হয়েছে।
সরকারি খাতে আয় ছাড়াও পণ্য পরিবহন ও খালাস বাবদ বেসরকারি খাতে আয় হয়েছে। চালানটি কলকাতার বন্দর থেকে বাংলাদেশি জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়। ট্রানজিটের চালান পরিবহনকারী মেরিন ট্রাস্ট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন শেখ সাহিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, পণ্য পরিবহনের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশি জাহাজমালিকের আয় হয়েছে ৬৫০ ডলার। ডলারপ্রতি ৯৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৬১ হাজার ৭৫০ টাকা।
চালানটি বন্দর থেকে সড়কপথে ভারতে নেওয়ার জন্য ভাড়া করতে হয়েছে প্রাইম মুভার ট্রেইলার। এ ছাড়া শিপিং এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কমিশন ও ফি রয়েছে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে দেশীয় শিপিং এজেন্ট ম্যাঙ্গো লাইন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইয়াকুব সুজন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে জানান, ট্রানজিট চালান পরিবহন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা বাবদ আয় হয়েছে আনুমানিক ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ভারতে নেওয়া পর্যন্ত চালানটিতে বেসরকারি খাত আয় করেছে প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। সেই হিসাবে, ট্রানজিটের এক কনটেইনার চালানে সরকারি-বেসরকারি খাতের আয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ লাখ টাকা।
তিন খাতে বড় পরিসরে বিনিয়োগ করতে চায় আদানি গ্রুপ
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
জ্বালানি খাতের পর এবার বাংলাদেশের নৌ পরিবহন, উন্নত প্রযুক্তির জ্বালানি এবং সেবা খাতে বৃহৎ পরিসরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায় গোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত সোমবার দিল্লিতে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি বিনিয়োগ নিয়ে আগ্রহের কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গতকাল বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে এখন ভারতে রয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি জয়পুর থেকে ঢাকায় ফিরে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ভারতে রয়েছেন সালমান এফ রহমান।
ব্লুমবার্গের বিজনেস ইনডেক্সে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা গৌতম আদানি গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর একটি ছবি টুইটার হ্যান্ডেল থেকে তিনি পোস্ট দেন। আদানি এতে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত। বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর যে দৃষ্টিভঙ্গি, তা অত্যন্ত সাহসী এবং অনুপ্রেরণা দেয়।’
ঝাড়খন্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা উল্লেখ করে আদানি তাঁর টুইটে লিখেছেন, ‘বিজয় দিবস, অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
দিনাজপুরে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত, নিখোঁজ ২
০৮ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
দিনাজপুরের দাইনুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মিনহাজুল ইসলাম ওরফে মিনার বাবু (১৬) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আরও দুই বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন। বুধবার রাত ১১টার দিকে পাঁচ শুঁটকি ব্যবসায়ী দাইনুর বিওপির ৩১৫ নাম্বার মেইন পিলারের সীমান্তের কাছে গেলে বিএসএফ সদস্যরা গুলি চালায়।
নিহত মিনার সদর উপজেলার ৯ নং আস্করপুর ইউনিয়নের ভিতরপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে। নিখোঁজ দুই ব্যক্তি হলেন- একই ইউনিয়নের খানপুর এলাকার লতিফুল ইসলামের ছেলে এমদাদুল (২৮) ও একই এলাকার সালমানের ছেলে সাগর (২০)।
চীনা ঋণ নিয়ে ধীরে চলো নীতি
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
চীনা ঋণের প্রতি বাংলাদেশের আগ্রহ কমেছে। সরকার এখন বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ পেতে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ও ভারতের মতো দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় দাতাদের সঙ্গে একের পর এক দর-কষাকষি করছে। অন্যদিকে চীনের সঙ্গেও মাত্র একটি প্রকল্পে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
মূলত চীনের দেওয়া ঋণ পরিশোধের মেয়াদ কম, শর্ত কঠিন। এ ছাড়া চীনের ঋণ নিলে কাজ করার জন্য সেই দেশের ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু ওইসব ঠিকাদারের কাজের মান নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তাই সরকার চীনা ঋণের প্রতি উৎসাহ হারিয়েছে বলে জানা গেছে।
২০১৯ সালে ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্প চিহ্নিত করে সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কাজে আসেনি। সেই তালিকার মধ্যে ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়ক, ছয়টি পূর্ণাঙ্গ টিভি কেন্দ্র স্থাপন ও বিজেএমসির আওতায় থাকা সরকারি পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন, রাজশাহী ওয়াসার ভূ–উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে। এই তালিকা থেকে শুধু ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়ক প্রকল্পের ঋণচুক্তি হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরে রাজশাহী ওয়াসার ভূ–উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে ঋণচুক্তি হতে পারে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। এই প্রকল্পে চার হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে চীন ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ইতিমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) চীনের বরাদ্দও রাখা হয়েছে।
চীনের অর্থায়নে ১৩ প্রকল্প
চীনের সহায়তায় নেওয়া প্রকল্পের সুদের হার ২ শতাংশের মতো। তবে ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৫ বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাপান ঋণ পরিশোধে ৩০ থেকে ৪০ বছর সময় দেয়। চীনের ঋণ দ্রুত পরিশোধ করতে হয়, তাই কিস্তিও বেশি।
২০১২ সালে শাহজালাল সার কারখানা উন্নয়ন প্রকল্প দিয়ে চীনা ঋণের প্রকল্প নেওয়া শুরু হয়। এরপর ২০১৩ সালে পদ্মা পানি শোধনাগার প্রকল্প ও জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো নির্মাণে দুটি প্রকল্প নেওয়া হয়। দুটি প্রকল্পই শেষ হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সফরের বছরে মোট চারটি ঋণচুক্তি হয়। ২০১৭ সালে হয় আরও দুটি। এরপর প্রতিবছর একটি প্রকল্পের ঋণচুক্তির বেশি হয়নি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮৫৪ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছে। গত ১০ বছরে চীনের কাছ থেকে কঠিন শর্তে ঋণ নিয়ে ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। প্রকল্পগুলোর অন্যতম হলো কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহু লেন সড়ক টানেল নির্মাণ; শাহজালাল সার কারখানা; দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার; ইনফো সরকার-৩; ইত্যাদি। ইতিমধ্যে শাহজালাল সার কারখানা, পদ্মা পানি শোধনাগার ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন—এই তিন প্রকল্পে পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধ শুরু হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ৯০ কোটি ডলারের মতো ঋণ পরিশোধ হয়েছে।
সীমান্তে স্কুলছাত্র হত্যা: ৪২ ঘণ্টায়ও মরদেহ ফেরত দেয়নি বিএসএফ
০৯ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
দিনাজপুরের দাইনুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে স্কুলছাত্র মিনহাজুল ইসলাম ওরফে মিনার বাবু (১৬) হত্যার ৪২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেনি বিএসএফ।
হত্যার ঘটনার ৪০ ঘণ্টা পর বিজিবির পক্ষ থেকে ডাকা হলে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সদরের ৯নং আস্করপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক, সংরক্ষিত নারী সদস্য রুমানা পারভীন, নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর আলম, নিহতের চাচাতো ভাই রুবেল হাসানসহ কয়েকজন বিজিবির খানপুর সীমান্ত ফাঁড়িতে যান। সেখানে তারা নিহতের ছবি, শরীরের চিহ্নসহ নানা তথ্য প্রদান করেন। সেসব বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করবে বিজিবি। মেইলের মাধ্যমে বিএসএফকে সেগুলো দিয়ে সংবাদ পাঠানো হয়েছে বলে বিজিবি জানিয়েছে।
বিজিবি ফাঁড়ি থেকে বের হয়ে রুমানা পারভীন ও রুবেল হাসান জানান, বিজিবি ছবিসহ যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছে তা বিএসএফের কাছে মেইল করে পাঠিয়েছে। এরপর বিএসএফের পক্ষ থেকে জানানো হবে কখন এবং কোথায় নিহতের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে হাসিনা-মোদির আলোচনা না হওয়া হতাশাজনক
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে কোনো আলোচনা না হওয়াকে হতাশাজনক বলে বর্ণনা করেছে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম)। আজ শুক্রবার সংগঠনটি এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।
কলকাতাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ভারতের ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের (ইউপিএ) সরকারের সময় (২০০৪-১৪) সীমান্তে বছরে গড়ে ১৫০ জন নিহত হতেন। ২০১৪ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ক্ষমতায় আসার পর বছরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০।
বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বাড়ার কারণ, কংগ্রেস সরকারের আমলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র (নন-লেথাল উইপন) ব্যবহার করত। ২০১৪ সালের পর বিএসএফ আবার প্রাণঘাতী অস্ত্র (লেথাল উইপন) ব্যবহার শুরু করে।
মাসুমের সম্পাদক কিরীটি রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, এ বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু হলো না। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের যৌথ বিবৃতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দিনাজপুরে গুলি চালিয়ে এক কিশোরকে হত্যা ও মরদেহ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। এটা সীমান্তের দুই পারের মানুষের জন্যই উদ্বেগের ও দুঃখজনক।’
সংগঠনটি বলেছে, ‘সীমান্তে হত্যা হঠাৎ বেড়েছে বলে আমাদের পরিসংখ্যান বলছে। যদিও দুই প্রধানমন্ত্রী সীমান্তে হত্যা কমে যাওয়া নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।’
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মহাসড়ক চায় ভারত
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের হিলি থেকে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত একটি মহাসড়ক নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। কৌশলগত দিক থেকে এই মহাসড়ক ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর উপলক্ষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতির ১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মহাসড়কটি নির্মাণের বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য ভারত প্রস্তাব দিয়েছে। মহাসড়কটি ‘নতুন উপ-আঞ্চলিক আন্তসংযোগ’ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের জন্য ভারত বাংলাদেশের ‘সহযোগিতা’ চেয়েছে।
এবার বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারপ্রধানদের শীর্ষ বৈঠক সম্পর্কে কথা বলার ব্যাপারে কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বেশ সতর্ক। এই সফরে কেবল কুশিয়ারা নদী থেকে সেচের পানি পাওয়ার ব্যবস্থা ছাড়া এবার আর কোনো অর্জন নেই বলে মন্তব্য করেছেন এক কূটনীতিক। কুশিয়ারা থেকে রহিমপুর খালের মাধ্যমে পানি আনার সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশের কাজে লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানি নিয়ে একটু নাড়াচাড়া হতে ১২ বছর লেগে গেল। এখন অন্য নদীর পানি ভাগাভাগির জট ছাড়াতে আর কত বছর লাগে, সেটাও দেখার বিষয়।
ঢাকার মধ্যপন্থায় আশ্বস্ত দিল্লি
ভারত সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী
০৯ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
নতুন মাত্রা পেয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সাতটি সমঝোতা সই করে দুই দেশ। বৈঠকে উঠে আসে পারস্পরিক স্বার্থ ও ভূরাজনীতি। যেখানে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সীমান্তে অপরাধ, জঙ্গিবাদ ও সামরিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা বাংলাদেশকে জানিয়েছে ভারত। তবে আঞ্চলিক নিরাপত্তায় এই অঞ্চলে চীনের ভূমিকা নিয়ে দেশটি যে উদ্বেগ জানিয়েছে তার জবাবে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতির কথাই বলেছে বাংলাদেশ। এখানে অন্য কারও উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা জাগতে পারে বাংলাদেশ সে নীতিতে বিশ্বাস করে না- এ কথাটিই পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সূত্র জানায়, উত্তর-পূর্ব ভারতে সন্ত্রাসবাদ দমন ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশে কোনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ হতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামরিক খাতে সহযোগিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ দমন নিয়ে কীভাবে দুই দেশ একত্রে কাজ করতে পারে। সেসঙ্গে সামরিক খাতে উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে। ভারতের নিরাপত্তায় কোনো ঝুঁকি তৈরি করে এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না বাংলাদেশ- এ বার্তাই দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
ট্রানজিটের হিসাব-নিকাশ
১০ সেপ্টেম্বর ২২,সমকাল
ট্রানজিটের পণ্য নিয়ে ভারত থেকে আসা দ্বিতীয় জাহাজ সম্প্রতি নোঙর করে চট্টগ্রাম বন্দরে। বন্দরের এনসিটি টার্মিনালের এক নম্বর জেটিতে গত মঙ্গলবার রাতে পৌঁছায় ট্রানজিটের জাহাজ এমভি ট্রান্স সামুদেরা। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে আসে ট্রানজিটের প্রথম জাহাজ এমভি সেঁজুতি। প্রথম জাহাজে পণ্য ছিল চার কনটেইনার। দ্বিতীয় জাহাজের পরীক্ষামূলক চালানের যাবতীয় কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করেছে বাংলাদেশ।
নৌ-ট্রানজিট বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, কে কতটুকু লাভবান হবে, কাকে কোন ধরনের অবকাঠামো তৈরি করতে হবে- তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। বিশিষ্টজন বলছেন, দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ট্রানজিট। চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের ভবিষ্যৎ সক্ষমতাও এ ক্ষেত্রে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
ট্যারিফ কমিশনের কোর কমিটি ট্রানজিটের জন্য ইতোপূর্বে ১৩টি সম্ভাব্য রুট চিহ্নিত করেছে। এসব রুট ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে পণ্য নেওয়া গেলে ভারতের পরিবহন ব্যয় কমে যাবে অর্ধেকের বেশি। অন্যদিকে পণ্য পরিবহন বাবদ বিভিন্ন ধরনের মাশুল পাবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। বিনিময়ে ট্রানজিট পণ্য নিরাপদে পৌঁছে দেবে বাংলাদেশ। পণ্যবাহী সঠিক গন্তব্যে নিতে প্রয়োজনে নিরাপত্তারক্ষীও রাখতে হবে বাংলাদেশকে। ট্রানজিট পণ্যে কাস্টম কর্তৃপক্ষ সাতটি খাতে মাশুল আদায় করতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মাশুল পাবে আটটি খাতে। সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান কমিশন পাবে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ টোল পাবে। আবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত নিতে ভাড়া পাবে বাংলাদেশের যানবাহন। ২০ ফুট দীর্ঘ পণ্যবোঝাই একটি কনটেইনারে সব মিলিয়ে খরচ হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তবে কনটেইনারপ্রতি মাশুলের পরিমাণ ১০ হাজার টাকারও কম হবে। মাশুলের বিষয়টি পণ্যের ধরন, ওজন ও দামের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ২০ ফুট দীর্ঘ একটি কনটেইনারে ১৪ টন পণ্য আমদানি করা যায়।
কেন ট্রানজিট চায় ভারত
অবস্থানগত সুবিধার কারণেই চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চায় ভারত। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার সঙ্গে কলকাতার দূরত্ব এক হাজার ৬৮০ কিলোমিটার। অথচ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আগরতলার দূরত্ব মাত্র ২৪৮ কিলোমিটার। মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের সঙ্গে কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ১৫০ কিলোমিটার হলেও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এ দূরত্ব মাত্র ৫৭০ কিলোমিটার। মিজোরামের রাজধানী আইজলের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ৬৫৫ কিলোমিটার হলেও কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ৫৫০ কিলোমিটার। নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমার সঙ্গে বন্দরের দূরত্ব ৮৮০ কিলোমিটার হলেও কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ৪৫০ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে অন্যান্য রাজ্যের দূরত্বও চট্টগ্রামের তুলনায় গড়ে তিন গুণের বেশি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে এখন কলকাতা বন্দর থেকে ফিডার জাহাজে করে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে ভারতকে। এতে ভারত সরকারের সময় ও অর্থ দুটিই বেশি যাচ্ছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহন শুরু হওয়ায় এখন আগের চেয়ে ভারতের খরচ কমে যাবে অর্ধেকেরও বেশি।
কেন সময় নিয়েছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত ট্রানজিট চাইছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু সময় নিয়েছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। সেসঙ্গে তৈরি করা হয়েছে সড়ক অবকাঠামোও। আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক চার লেন ছিল না। ট্রানজিট নিয়ে আলোচনার মধ্যেই চার লেন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্যানারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আনা হয়েছে বেশ কয়েকটি নতুন ক্রেন। চট্টগ্রাম কাস্টমস অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে লোকবলও। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে কাস্টমসের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। সব গেটে দেওয়ার মতো স্ক্যানার নেই কাস্টমসের। বিস্ম্ফোরক পণ্য শনাক্ত করতে নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। সংকট আছে দক্ষ জনশক্তিরও। সড়ক অবকাঠামোও টেকসই হয়নি এখনও। আট লেনের মহাসড়ক এখন সময়ের দাবি।
যেভাবে অবসান হয় এক যুগের অপেক্ষার
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহনের আলোচনা চলছে অনেক বছর ধরে। তবে তা জোরালো হয়েছে গত এক দশক ধরে। ২০১০ সালে ভারত প্রস্তাবনা তুলে ধরে বাংলাদেশের কাছে। ট্রানজিটের সক্ষমতা যাচাই করে দেখতে ২০১২ সালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিশেষ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, নৌ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রেল মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয়েছিল এ ওয়ার্কিং কমিটি। ট্রানজিট কিংবা ট্রান্সশিপমেন্টের অর্থনৈতিক সুবিধা কাজে লাগাতে সড়ক, রেল ও নৌপথের বিদ্যমান অবকাঠামো ও ভবিষ্যৎ প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করে কিছু সুপারিশ করে এ ওয়ার্কিং কমিটি। তখন তারা চট্টগ্রাম বন্দরের সর্ববৃহৎ ক্ষমতাসম্পন্ন নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পুরোদমে চালু করা, মোংলা বন্দরের তিনটি জেটি দ্রুত ব্যবহার উপযোগী করা, পর্যাপ্ত আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং মোংলা-খুলনা রেলপথ দ্রুত নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে সুপারিশ করে। তাদের এ সুপারিশের ভিত্তিতে গত ছয় বছরে কিছু নতুন অবকাঠামো হয়েছে দুই বন্দরে। তবে সড়ক ও রেলপথে আসেনি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন। তারপরও এগোতে থাকে আলোচনা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে উভয় দেশের সচিব পর্যায়ে এ ব্যাপারে চুুক্তি হয়। ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সংক্রান্ত এসপিও বা পরিচালন পদ্ধতির প্রক্রিয়াতে সই করেন। এর দেড় বছর পর পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয় পণ্য পরিবহন। প্রথম চালান আসে ২০২০ সালের জুলাইয়ে। দ্বিতীয় চালান আসে গত মঙ্গলবার রাতে।
কোন রুটে ভারতের কত সাশ্রয়
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে পণ্য নিতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারলে অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে ভারতের। অনেক কমে যাবে তাদের দূরত্বও। ট্যারিফ কমিশনের কোর কমিটি ট্রানজিট হলে কোন রুট দিয়ে পণ্য নিলে কার কত অর্থ সাশ্রয় হবে সে ব্যাপারে তাদের রিপোর্টে একটি ধারণা দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে তামাবিল-চট্টগ্রামে ১২ শতাংশ, আখাউড়া-চট্টগ্রামে ৭০ শতাংশ, আখাউড়া-বেনাপোলে ৪৮ শতাংশ, সুতারকান্দি-বেনাপোলে ৩৩ শতাংশ, সুতারকান্দি-চট্টগ্রামে ৫৩ শতাংশ, বাংলাবান্ধা-মোংলা ২৯ শতাংশ, বুড়িমারী-মোংলা ১২ শতাংশ, শাহবাজপুর-চট্টগ্রাম ৬৭ শতাংশ, আখাউড়া-দর্শনা ৭০ শতাংশ, রায়মঙ্গল-আশুগঞ্জে প্রায় ৫০ শতাংশ এবং শাহবাজপুর-দর্শনা রুটে ট্রানজিট সুবিধা পেলে ভারতের সাশ্রয় হবে ৫৭ শতাংশ খরচ।
৭০০ থেকে ৮০০ ডলার পেতে পারে বাংলাদেশ
বন্দর, কাস্টম, সিঅ্যান্ডএফ, পরিবহনসহ সবমিলিয়ে ২০ ফুট দীর্ঘ একটি কনটেইনারে বাংলাদেশের আয় হতে পারে ৭০০ থেকে ৮০০ ডলার। প্রথম জাহাজে চারটি কনটেইনারে ১০৩ টন পণ্য আসে। এসব পণ্য বাবদ ২০২০ সালে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে প্রায় ৫৯ হাজার টাকা। দ্বিতীয় জাহাজে এসেছে ২৫ টন রড। এখানে শিপিং এজেন্ট থেকে ৪৩ ডলার ও কনসাইনি থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা বন্দর কর্তৃপক্ষ আয় করেছে বলে জানান বন্দরের সচিব ওমর ফারুক। তবে সব মিলিয়ে এ চালানে বাংলাদেশ কত পেয়েছে তা এখনও চূড়ান্ত করে বলতে পারেনি কেউই।
আট খাতে মাশুল পাবে বন্দর
ট্রানজিট পণ্য পরিবহন বাবদ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে আলাদা কোনো মাশুল দিতে হবে না ভারতকে। বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের মাশুলও প্রযোজ্য হচ্ছে না তাদের জন্য। উপকূলীয় এলাকায় চলাচল করা অন্যান্য জাহাজের মতো ট্রানজিট পণ্যেও আটটি খাতে মাশুল পাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পাইলট চার্জ, রিভার ডিউজ, বার্থিং চার্জ, ল্যান্ডিং চার্জ, টাগ চার্জ, পোর্ট ডিউজ, পণ্য ওঠানামার লিপটন চার্জ ও আনবার্থ চার্জ পাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। জাহাজের আকার, পণ্যের ধরন ও ওজনের ওপর নির্ধারিত হবে এসব চার্জ।
সাত ধরনের ফি পাবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ
ভারতীয় পণ্য পরিবহনের সময় সাত ধরনের ফি আদায় করবে বাংলাদেশের কাস্টম কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে প্রতি চালানে প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, প্রতি টনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ৩০ টাকা, নিরাপত্তা মাশুল ১০০ টাকা, এসকর্ট মাশুল ৫০ টাকা, প্রশাসনিক মাশুল ১০০ টাকা এবং প্রতি কনটেইনারের স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা। এর বাইরে প্রযোজ্য হারে দিতে হবে ইলেকট্রিক সিলের মাশুল। সব মিলিয়ে বন্দর ও কাস্টম কর্তৃপক্ষ প্রতি কনটেইনার পণ্যে শুধু মাশুল বাবদ আদায় করবে প্রায় ১০০ ডলার। সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান পণ্যের দামের ওপর ভিত্তি করে কমিশন নেয়। ৫ লাখ টাকা দামের পণ্যের জন্য তারা এক শতাংশ হারে কমিশন নেয়। আবার পণ্যের দাম ২০ লাখ টাকার বেশি হলে তারা দশমিক ২৫ শতাংশ হারে কমিশন পাবে। এর বাইরে সড়কপথে প্রতিটি কনটেইনার আগরতলা পর্যন্ত নিতে বাংলাদেশি যানবাহনকে ভাড়া বাবদ গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার বা ৩২ থেকে ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে। তবে ভারত থেকে প্রতি বছর কী পরিমাণ ট্রানজিট পণ্য আসা-যাওয়া করবে তা এখনও চূড়ান্ত নয়। তাই এ খাতে বছর শেষে আসলে কত টাকা পাবে বাংলাদেশ তা চূড়ান্ত করে বলা যাচ্ছে না।
মনে হয় না আমি শূন্য হাতে ফিরেছি: প্রধানমন্ত্রী
১৪ সেপ্টেম্বর, দেশ রুপান্তর
ভারত সফরে প্রাপ্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার মনে হয় না আমি শূন্য হাতে ফিরেছি। বাংলাদেশের চারদিকে ভারত। বন্ধুপ্রতিম দেশ থেকে ব্যবসা বাণিজ্য কৃষি, যোগাযোগ, সব বিষয়ে সহযোগিতা, পাইপলাইনে করে তেল নিয়ে আসছি। ভারত এই লাইন করে দিচ্ছে।’
বুধবার গণভবনে করা সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের ‘ভারত সফর থেকে কী পেলাম’- প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নটি আপেক্ষিত, এই প্রশ্নের জবাব নির্ভর করছে আপনি কীভাবে দেখছেন।’
ভারত সফরে নানা চুক্তি, আলোচনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ রকম যদি হিসাব করেন, মনে হয় না একবারে শূন্য হাতে এসেছি বলতে পাবেন না। তা ছাড়া কী পেলাম কী পেলাম না এটা তো মনের ব্যাপার।’
মিয়ানমারের মর্টার শেলে সীমান্তে প্রাণ গেল যুবকের
১৬ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
কখনও বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতর এসে পড়ছে মিয়ানমারের গোলা, কখনও এ দেশের আকাশসীমায় দেখা যাচ্ছে তাদের হেলিকপ্টার, আকাশ থেকে করা হচ্ছে গুলিবর্ষণ। আর সীমান্তের ওপার থেকে প্রায় প্রতিদিনই ভেসে আসছে গোলাগুলির আওয়াজ। তবে এবার আর সেসব নয়, গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারের মর্টার শেলে নিহত হয়েছেন রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ ইকবাল (১৯)। তিনি ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দা মনির হোসেনের ছেলে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ছয়জন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শূন্যরেখার রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ।
মিয়ানমার না থামলে জাতিসংঘে যাবে বাংলাদেশ
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো
মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বাংলাদেশ। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিষয়টি বাংলাদেশ জাতিসংঘে তুলবে।
মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া মর্টারের গোলায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু এবং কয়েকজনের আহত হওয়ার পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন। তিনি গতকাল শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আহ্ছানিয়া মিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের সীমানায় এসে যে গোলাবারুদ পড়ছে, এটার কড়া ভাষায় আমরা প্রতিবাদ করছি। ওদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। সুস্পষ্টভাবে আমাদের অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কখনোই যুদ্ধ চান না, আমরা চাই শান্তিপূর্ণ সমাধান। তাদের যে ইন্টারনাল কনফ্লিক্ট (অভ্যন্তরীণ সংঘাত), সেটা তাদের সীমানার ভেতরেই থাকুক। বাইরে যেটা আসছে, সেটার সব সময় প্রতিবাদ করে আসছি।’
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশে জাতিসংঘের দপ্তরও। সীমান্ত পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কামানের গোলা পড়া এবং এতে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের দপ্তর উদ্বিগ্ন। বেসামরিক লোকজনের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্থিতির অবনতি রোধ করার স্বার্থে জাতিসংঘ শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। তিনি সীমান্ত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি সমর্থনের কথাও জানান।
মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। উভয় পক্ষই চাইছে বাংলাদেশসংলগ্ন সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ। এর জেরে গত মাস থেকে বেশ কয়েকবার মিয়ানমার থেকে আসা বিস্ফোরিত ও অবিস্ফোরিত মর্টারের গোলা পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশের সীমানায়।
সর্বশেষ গত শুক্রবার বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নে তুমব্রু সীমান্তের উল্টো দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া মর্টার গোলায় এক রোহিঙ্গা কিশোর প্রাণ হারায়। এ ছাড়া এক শিশুসহ পাঁচ রোহিঙ্গা আহত হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় সরকারের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া মর্টারের গোলার আঘাতে হতাহতের ঘটনায় দেশটির কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানাবে বাংলাদেশ। আজ রোববার সকালে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং মিউ কোয়েকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবের কথা রয়েছে। সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
ঢাকা ও ইয়াঙ্গুনের কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, এর আগে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারের গোলা এসে পড়া এবং আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তিনবার তলব করে প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করা হয়েছিল। পরে ইয়াঙ্গুনের পক্ষ থেকে জবাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তে মর্টারের গোলা সেনাবাহিনী ছুড়ে মারেনি। এসব আরাকান আর্মির কাজ। তবে আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং সীমান্তের অবনতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশটি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
প্রত্যাবাসন ঠেকাতেই কূটচাল মিয়ানমারের
২১ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
বাংলাদেশের কাঁধে ১২ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা। বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত নেওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে তা ভেস্তে দেয় মিয়ানমার। সর্বশেষ চলতি মাসে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিষয়টি নতুনভাবে সামনে আসার পরই কূটচাল শুরু করেছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর আলোচনাটি মাঠে আসার দুই দিনের মাথায় ২৮ আগস্ট প্রথম বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুর উত্তরপাড়ায় সীমান্তের ওপাশ থেকে মর্টারের গোলা এসে পড়ে। সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রক্রিয়াকে ঘোলাটে করার নীলনকশা শুরু করেছে জান্তা সরকার। মিয়ানমারভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে তাদের নতুন বিরোধকে কাজে লাগিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার তাদের সীমান্তের ওপারে শক্তি বাড়াচ্ছে; একই সঙ্গে জনবলও।
গত ২৫ আগস্ট সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন জাতিসংঘের মিয়ানমার-বিষয়ক বিশেষ দূত নয়েলিন হেইজার। ওই দিন প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বর মাসে শুরুর আশ্বাস দিয়েছে মিয়ানমার।
গোলাবর্ষণ নিয়ে মিয়ানমারের পক্ষে ‘সাফাই’ চীনা রাষ্ট্রদূতের
২৬ সেপ্টেম্বর ২২, সমকাল
সীমান্তের ভেতরে মিয়ানমার থেকে আসা গোলা ও মর্টার শেল পড়ার ঘটনা চীনকে জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এ বৈঠকে নিজেদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে ঢাকা। কিন্তু বাংলাদেশকে সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না দিয়ে প্রকারান্তরে মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন রাষ্ট্রদূত। এ সময় চীন-মিয়ানমার সীমান্তে ইউনান প্রদেশের মধ্যে মিয়ানমারের গোলাবর্ষণের উদাহরণ দিয়েছেন তিনি। আর চীনে ছোড়া গোলাগুলি ছিল অনিচ্ছাকৃত বলেও জানিয়েছেন লি জিমিং।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে মিয়ানমার পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের অবস্থান বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব ও মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। বৈঠকটি প্রায় দেড় ঘণ্টা অনুষ্ঠিত হয়।
দায়ী চীনা ঠিকাদারকে দেওয়া যাচ্ছে না শাস্তি
০৫ অক্টোবর ২২, সমকাল
ক্রেন উল্টে গার্ডার চাপায় পাঁচজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী হলেও শাস্তি পাচ্ছেন না বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) চীনা ঠিকাদার। দুর্ঘটনার পরপরই চুক্তি বাতিল করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গেঝুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা বলা হলেও সে পথেও হাঁটছে না সরকার। কারণ, এতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের গাফিলতিতে উল্টো ঠিকাদারকে ১৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এ ছাড়া চুক্তি বাতিল হলে প্রকল্প ঝুলে যাওয়া এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতিরও শঙ্কা রয়েছে। তাই শাস্তি না দিয়ে ঠিকাদারের কাছে নিহতের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। প্রকল্পের বীমা থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু ঠিকাদার বীমার প্রিমিয়াম দিয়েছে কিনা তা নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়টিও অনিশ্চিত। আবার গার্ডার দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে চীনা নাগরিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছেন ঠিকাদার।
ভূরাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে দ্বিধায় চীন: রাষ্ট্রদূত
১৩ অক্টোবর ২২, সমকাল
ভূরাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নিয়ে দ্বিধায় বেইজিং বলে জানিয়েছেন ঢাকার চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনুরোধে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হলো। এরপর যদি হঠাৎ করে কারো চাপে যদি বাংলাদেশ বলে, দুঃখিত চীন এ প্রকল্পটি আমরা করতে পারবো না। তখন পরিস্থিতিটি আমার জন্য বিব্রতকর হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে চীনের ভাবমূর্তি নিয়ে এক গবেষণা প্রকাশ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ন্যাশনাল ইমেজ অব চায়না ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস)।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, সম্প্রতি দূতাবাস চীনের প্রায় সকল প্রকল্প ঘুরে দেখেছে। আর সেই অংশ হিসেবে তিস্তা দিয়ে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ সরকার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের কাছে তিস্তা নিয়ে কিছু করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। ঢাকার দূতাবাস এটি পর্যালোচনা করে বেইজিংকে জানিয়েছে। এখন তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বেইজিং পর্যালোচনা করে দেখছে।
তিনি বলেন, তবে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া নিয়ে চীন দ্বিধায় রয়েছে। কারণ এ প্রকল্পে কিছুটা সংবেদনশীলতা রয়েছে, যা আমরা অনুভব করতে পারি। সেই সঙ্গে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে উদ্বিগ্ন, যদি এ প্রকল্প নেওয়ার পর বর্হিবিশ্বের চাপে বাংলাদেশ সরকারের তার অবস্থান পরির্বতন করে। হঠাৎ করে কেউ এসে এ প্রকল্প নিয়ে বলবে যে এটি চীনের আরেক ঋণের ফাঁদ। আর এখানে কিছুটা সুনির্দিষ্ট ভূরাজনৈতিক সংবেদনশীলতা রয়েছে। ফলে বিষয়গুলো আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবে। স্থানীয় সরকার ও মানুষ এ প্রকল্প নিয়ে বেশ আশাবাদী। সেখানকার ২ কোটি মানুষদের এটি দরকার বলে জানান লি জিমিং।
বিবিধ
জনশুমারি: দেশে প্রথমবারের মতো পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি
২৭ জুলাই, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
বাংলাদেশে জনশুমারির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংখ্যায় পুরুষদের ছাড়িয়ে গেছে নারীরা।
জনসংখ্যা ও আবাসন শুমারি-২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৯৯ জন।
সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।
আজ বুধবার রাজধানীতে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের ষষ্ঠ জনশুমারি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, প্রবাসীদের বাদ দিয়ে দেশের জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটির বেশি। সেই হিসাবে ২০১১ সালের জনশুমারির পর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ।
২০২১ সালে জনশুমারি পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সেটা পিছিয়ে যায়।
বিশ্বের জনসংখ্যা নিয়ে জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্বে নারী-পুরুষের অনুপাত হওয়ার কথা ১০০:১০১.৬৮।
গত জনশুমারিতে বাংলাদেশে নারী-পুরুষের অনুপাত ছিল ১০০.৩ এবং এর আগে ২০০১ সালের শুমারিতে এই অনুপাত ছিল ১০৬.৪।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নারীদের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার কারণে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নারী-পুরুষের বর্তমান আনুপাতিক হারের আরেকটা কারণ হতে পারে বহু সংখ্যক মানুষের বিদেশ যাওয়া।’
তবে, বিশ্বব্যাপী নারীর সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপালে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। যেখানে নারী-পুরুষের অনুপাত ৯৫:৯১ শতাংশ।
ভারতে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পরিচালিত পঞ্চম জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষায় (এনএফএইচএস) দেখা গেছে, প্রতি ১ হাজার পুরুষের বিপরীতে সেখানে নারীর সংখ্যা ১ হাজার ২০ জন।
বাংলাদেশের সবশেষ জনশুমারিতে আরও দেখা গেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বর্তমানে কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশের নিচে। যা এর আগের শুমারিতে ছিল ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
২০১১ সালের জনশুমারি অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৪ কোটি ৪০ লাখ। যা ২০০১ সালের শুমারিতে পাওয়া সংখ্যার তুলনায় প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি জনশুমারিতে সাধারণত ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ যোগ হয়। তবে, এবার জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমেছে।
গত ১৫ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত ব্যাপক পরিসরে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে সারাদেশে ষষ্ঠ জনশুমারি পরিচালিত হয়েছিল।
জনশুমারি জনসংখ্যার সামগ্রিক ধারণা, এর গঠন, কর্মশক্তি, ঘনত্ব, আবাসন ও অন্যান্য আর্থ-সামাজিক সূচকগুলো সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রদান করে। যা অর্থনৈতিক ও অন্যান্য নীতি সঠিকভাবে প্রণয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দায়িত্বে আছেন শেখ হাসিনা, কোনো দুশ্চিন্তা নাই : জাফর ইকবাল
১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, কালের কণ্ঠ
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশে তেলের দাম বেড়েছে। তবে আমার মধ্যে কোনো চিন্তা নেই, কারণ দেশের দায়িত্বে শেখ হাসিনা আছেন। ওনার হাতে দায়িত্ব দিয়ে আমি বসে আছি।
তিনি আরো বলেন, এখন ইউক্রেন যুদ্ধ হচ্ছে, আমাদের দেশের তেলের দাম বেড়ে গেল, দেশে হই চই শুরু করল, তেলের দাম বেড়ে গেল, খাবারের দাম বেড়ে গেল, কি হবে? কি হবে? কিন্তু আমার ভেতরে কোন দুশ্চিন্তা নাই, কারন দেশের দায়িত্বে আছেন শেখ হাসিনা।
তিনি সব জানেন, তিনি আমাদের সমস্ত সমস্যার কথা জানেন, উনি সব সামলাবেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় দেবীদ্বার উপজেলার দুয়ারিয়া আব্দুল গফুর (এজি) মডেল একাডেমির মাঠে শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে কুইজ প্রতিযোগিতার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এ কথা বলেন।
ভালো কলামিস্ট খুঁজছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
বাংলাদেশবিরোধী নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলায় সম্মানী দিয়ে কলাম লেখানোর উদ্যোগ নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি ইতিবাচক প্রচারণাও চালানো হবে। এ লক্ষ্যে ভালো কলামিস্ট খুঁজছে তারা। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তাদের নেওয়া হবে। ভালো কলামিস্টদের সন্ধান থাকলে তা মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য সংসদীয় কমিটির সদস্যদের কাছে আহ্বানও জানিয়েছে। এছাড়া নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধ ও ইতিবাচক প্রচারণা জন্য মন্ত্রণালয় নতুন একটি শাখাও খুলছে। মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের আওতায় ‘অভিবাসী কূটনীতি’ নামে একটি অধিশাখা সৃষ্টির জন্য সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, কমিটির আগের বৈঠকে বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক প্রচারণার বিষয় আলোচনা হয় এবং এগুলো বন্ধে মন্ত্রণালয়কে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে এসব কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে একটি আলাদা সেল গঠনেরও কথা বলা হয়। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত ১ কোটি ৪১ লাখের বেশি বাংলাদেশী
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, বণিক বার্তা
২০২০ সালের ২০ মে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা উপকূলে তীব্র শক্তিতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। ওই ঘূর্ণিঝড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও এর প্রাদুর্ভাবজনিত টানা ঝড়বৃষ্টিতে বাংলাদেশে পৌনে দুই লাখ হেক্টরেরও বেশি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাণহানি ও জীবন-জীবিকার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও উপকূলীয় কয়েকটি জেলার প্রচুর মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। জীবন-জীবিকার তাগিদে অন্যত্র পাড়ি জমাতে বাধ্য হয় তাদের অনেকেই।
এর আগের বছরের মে মাসেও আঘাত হেনেছিল ভয়াবহ আরেক ঘূর্ণিঝড় ফণী। সে সময় দুই দেশের প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। গত এক দশকে এমন অনেক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে এ অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শুধু উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস নয়; খরা, বন্যা, নদীভাঙন ও অতিবৃষ্টির আঘাতেও প্রতি বছর প্রচুর মানুষ নিজের আবাসস্থল হারিয়ে দেশের অন্যত্র পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে। আবার গত বছরের মে মাসে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় ইয়াশের প্রভাবেও দেখা গিয়েছে এ চিত্রের পুনরাবৃত্তি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখেরও বেশি মানুষ।
আ. লীগ নেতার নেতৃত্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-দোকান ভাঙচুর-লুটপাটের অভিযোগ
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
হামলাকারীরা ২টি বাড়ি ও ৬টি দোকান ভাঙচুর করে এবং লুটপাটের জিনিস ট্রাকবোঝাই করে নিয়ে যায়। ছবি: স্টার
নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ইটালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরিফের নেতৃত্বে পাকুরিয়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি এবং দোকানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল সোমবার বিকেলের দিকে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা সেসময় ২টি বাড়ি ও ৬টি দোকান ভাঙচুর করে এবং লুটপাটের জিনিস ট্রাকবোঝাই করে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
এ ঘটনাকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ও ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে হিন্দু নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করে বিচার চেয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের স্ত্রী এবং সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আরিফা জেসমিন কনিকা।
ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাসে ঘাটতি, তথ্যের গরমিল ও ওয়েবসাইট অচল
২৫ অক্টোবর ২২, সমকাল
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পূর্বাভাস, সতর্কবার্তা পৌঁছানো ও আগাম প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পূর্বাভাস নিয়েও একেক সময় একেক বার্তা দেওয়া হয়েছে। আগে থেকে সতর্ক না করার কারণে মানুষ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারেনি। ফলে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শেষ মুহূর্তে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটেছে মানুষ।
গত ১ অক্টোবর আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে মাসের শেষ দিকে একটি ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কার কথা জানানো হয়। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যম একাধিকবার ঘূর্ণিঝড় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কানাডার সাসক্যাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ গত ৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম বা জিএফএসসহ বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া মডেলের পূর্বাভাসের ভিত্তিতে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার খবর দেন ফেসবুকে। বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দেয়। এরপর ওই গবেষক ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে- সে ব্যাপারে ১৪ বার বার্তা দেন।
ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য এ তারিখ যতই ঘনিয়ে আসে ততই ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) তৎপর হয়ে ওঠে। গত ১৯ অক্টোবর থেকে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আইএমডি প্রতিদিন তথ্য দিলেও এ নিয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিম্নচাপ সৃষ্টির তথ্য ছাড়া আর কোনো আপডেট ছিল না। এমনকি ২১ অক্টোবরও ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কোনো তথ্য ছিল না আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে। ২২ অক্টোবর নিম্নচাপ সৃষ্টির বুলেটিনেও ছিল না ঝড়ের গতি-প্রকৃতির সম্ভাব্য তথ্য। ২২ অক্টোবরও আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করবে কিনা, এখনই নিশ্চিত নয় তারা।
ভারতের কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি হিসেবে ২০ অক্টোবর থেকে দেশটির উপকূলীয় এলাকাগুলোয় ব্যাপক কার্যক্রম চালায়। তখনও বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
শেষ মুহূর্তে গত রোববার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতিবিষয়ক জরুরি সভা করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। ওই দিন তিনি বলেন, ‘এটা সুপার সাইক্লোন হবে না, সিভিয়ার সাইক্লোন হবে।’ মঙ্গলবার ভোরে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানবে বলেও জানান তিনি। তাঁর বরাত দিয়ে গতকাল সোমবার দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে আঘাতের শঙ্কা তুলে ধরে। তবে গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মঙ্গলবার নয়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সোমবার সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানতে পারে।’ অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান সোমবার সন্ধ্যায়ও সমকালকে বলেছেন, ‘সিত্রাং সোমবার মধ্যরাতে আঘাত হানতে পারে।’ তবে দুপুর ১২টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার ভোর থেকে সকাল নাগাদ খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।