নিপীড়ন, ট্রমা ও সংলগ্ন সত্তা

নৈতিক স্মৃতিচারণ হিসেবে ইতিহাস। সিপি গ্যাং-এর ‘বেশ্যা’ ব্যানার-১২

নিপীড়ন, ট্রমা ও সংলগ্ন সত্তা

রেহনুমা আহমেদ

ধর্ষণ বা যৌন সন্ত্রাস শাসক নির্যাতক ক্ষমতাবান আর তাদের নানারূপের প্রতিনিধিদের একটি ভয়ংকর অস্ত্র। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমরা এর ভয়াবহ রূপ দেখেছি, স্বাধীনতার পরও প্রতিষ্ঠানে, পথে ঘাটে, বাড়িতে ধর্ষণ আক্রমণ নিয়মিত ঘটনা হিসেবে অব্যাহত আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা ধর্ষিত হয়েছিলেন, পরেও যারা হয়ে যাচ্ছেন তাদের ওপর জুলুম এখানেই শেষ হয় না। তাদের ওপর সমাজের নানাবিধ আক্রমণ অব্যাহত থাকে, ‘চরিত্রহনন’, কুৎসা, অপপ্রচার চলতে থাকে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র কথা আমরা অহরহ শুনি, এর পুনর্জাগরণের কথাও শুনতে পাই। কিন্তু এর মধ্যেও নারীর প্রতি পুরনো দৃষ্টিভঙ্গী কীভাবে আধিপত্য বিস্তার করে থাকে সে বিষয়ে এই পর্বে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণ”

শেন্ডেলের আলোচনার সূত্র ধরেই ফখরুল আলম বলেন, পুনরুজ্জীবিত জাতীয়তাবাদীরা “প্রগতিশীল, সেক্যুলার ও বাম-ঘেঁষা।” ১৯৯০-শেষে সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর বাংলাদেশের জাতিসত্তা গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, এটি পরিণত হয় দেশব্যাপী আন্দোলনের “হেডকোয়ার্টার”এ। অসংগঠিত কিন্তু বিস্তৃত এই আন্দোলন একাধিক ফ্রন্টে কাজ করে: যুদ্ধ অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণ ঘটানো, বাঙালি ঐতিহ্যকে সামনে নিয়ে আসা এবং (ইসলাম) ধর্ম বহির্ভূত অনুষ্ঠানাদি উদযাপনকরা। পহেলা বৈশাখ। মঙ্গল শোভাযাত্রা । শহীদ মিনারে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন। বসন্ত উৎসব। শরৎ উৎসব।

“মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণ,” কথাগুলো প্রায়শই ব্যবহার করেন রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, মিডিয়া… আমি নিজেও উল্লেখ করেছি বার’কয়েক। কিন্তু এখন সিপি গ্যাংয়ের “বেশ্যা” ব্যানারের বদৌলতে দৃঢ়ভাবে জিজ্ঞেস করা সম্ভব: মুক্তিযুদ্ধের কোন চেতনা? যৌনবাদী, নারী-বিদ্বেষী চেতনা নাকি পিতৃতন্ত্র-বিরুদ্ধ, অঙ্গীকারাবদ্ধ চেতনা?

হাজেরার শিশু আশ্রম: “মর্যাদার সাথে বেড়ে ওঠা”

আমি চাই ওরা মর্যাদার সাথে বেড়ে উঠুক।

হাজেরার শিশু আশ্রম রেজিস্ট্রি-করা। পিচ্চি-পাচ্চির সংখ্যা ত্রিশোর্ধ্ব, যৌনকর্মী, মাদকসেবী ও শিশুদের ফেলে যাওয়া বাবা-মায়ের সন্তান। হামাগুড়ি সাইজের পিচ্চি বাদে সব বাচ্চাই স্কুলে যায়। “আমি চাই আমি যেই সুযোগ সুবিধাগুলো পাই নাই ওরা সেগুলো পাক।” পিচ্চিরা হাজেরাকে মা ডাকে।

শিশু আশ্রমটি ব্যক্তিগত অনুদানে চলে, আর চলে তরুণ,তরুণীদের স্বেচ্ছাশ্রমে। খরচপাতি চালানো কঠিন কিন্তু হাজেরা লেগে থাকে, সাথে আছে তার এক দল শুভাকাক্সক্ষী।

আমি চাইনা ওরা আমার মতো ভুগুক।

আর হাজেরা ভুগেছিল বটে। খেতে বসার আগে সৎমা সন্তানদের বলতেন প্যান্টের ফিতা শক্ত করে বাঁধতে। “তখন তো বুঝতাম না। কিন্তু ওভাবে ফিতা বাঁধলে ভাত বেশি খেতে পারতাম না।” খিদা তাই কখনো মিটত না।

গুলিস্তানে যখন আমার জীবন শুরু হয়, তখন জিপিওর উল্টা দিকে একটি হোটেল থেকে প্রতি বিকেলে আমাদের ভাত দিত, আমরা বিশ-পঁচিশ জন বাচ্চা লাইন ধরে দাঁড়াতাম সেই ফ্যান মেশানো ভাতের জন্য। গোদনাইলের ভবঘুরে কেন্দ্রে আমাদের পোকাওয়ালা খিচুড়ি খেতে দিত, ভাতের না, গমের। অনেক মারধরও করত। কেন্দ্রের একজন স্যার আমাকে বাড়ি নিয়ে যান বাসার কাজ করার জন্য, ভারি কাজ, ওদের বড় বড় পাতিল, মরিচ বাটা, কুয়া থেকে পানি আনা। তখন আমার বয়স মাত্র নয়। আর তো ছিল মিরপুর ফকিরখানার সেই ‘ম্যানেজার’ ইন্দ্রামতি মজুমদার, খুব অত্যাচারী ছিলেন। আমাদের খুব মারত, টাকা-পয়সা কেড়ে নিত। একটু বড় মেয়েদের পুরুষ কর্মচারীরা অফিসে ডেকে নিয়ে ওদের সাথে যৌনকাজ করত।

মিরপুর চিড়িয়াখানার ঘটনার পর যখন গুলিস্তানে ফিরি, আমার পকেটমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে কি করবে বুঝে পেল না, আমার সমবয়সী মেয়েদের তুলনায় আমি বড়সড় কিন্তুঅত চালাকচতুর না। “বোন তুই অন্য এলাকায় যা।” কিন্তু আমি কোথায় যাব? ওদের সাথেই ঘোরাঘুরি করতাম, রাতে আমার হাতে-মুখে কালি মেখে দিত যাতে আশেপাশে ঘুরঘুর করা লোকেরা আমাকে দেখতে না পায়।

সাত বছর কাশিমপুরের ভবঘুরে কেন্দ্রে ছিলাম। গার্মেন্টসে চাকরি নিলাম কিন্তু মাসিক বেতন মাত্র ৩০০ টাকা, আমি তখন মিরপুর রিসিভ সেন্টারে থাকি। ‘ম্যানেজার’ আপা বাজে খাবারদাবার দিতেন, এমনকি ঈদের দিনেও। আমরা প্রতিবাদ করি। তিনি প্রতিশোধ নেন, আমাদের বের করে দেন। আমি যৌনকাজে ফিরে যাই। এই বেতনে বাইরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা সম্ভব না।

সায়দিয়া একদিন আমাকে বলল, আমি বুঝি না হাজেরা আপা কীভাবে এতকিছু সামাল দেন। সেদিন ঢুঁ মারলাম, দেখি পিচ্চি রাহাত আলমারির উপর, যে কোন মুহুর্তে পড়ে মাথা ফাটাতে পারত। দেখে তো আমার ফিট্ হওয়ার দশা।

শহিদুল এক রাত ছিল, বাচ্চারা সারা রাত ওকে গল্পে-নাচে-গানে মাতিয়ে রাখে, ঘুমিয়ে পড়লে ও যদি চলে যায়!

ঊনিশ’শ একাত্তর নৃশংস ছিল। সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনও নির্মম। যারা নৃশংসতার শিকার হ’ন তাদের কী হয়? সহিংসতার পরে যা ঘটে সেটিকে কিভাবে নিরীক্ষণ করা সম্ভব?  ট্রমার ধারণার সাহায্যে? নাকি প্রতিরোধের ধারণা দিয়ে কিংবা এজেন্সির ধারণা? নাকি একেবারে ভিন্নভাবে?  এমনভাবে যা ট্রমাকে “দমন” হিসেবে দেখে না, যন্ত্রণাকে “অবর্ণনীয়” বলে ছেড়ে দেয় না, “প্রতিরোধের নায়কোচিত মডেল”এ সীমাবদ্ধ থাকে না।

নৃবিজ্ঞানী বীণা দাস কাজ করেছেন পাঞ্জাবী পরিবারের সাথে যারা ১৯৪৭-এর দেশভাগের সময়ের রায়টে প্রাণে বেঁচে গিয়ে দেশান্তরী হন, শিখদের মাঝে যারা ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পর প্রতিশোধমূলক আক্রমণ থেকে প্রাণে বেঁচে যান, এবং সাধারণ মানুষের সাথে যাদের, ধরেন, থাকার জায়গা নিয়ে যুদ্ধ করতে হয়, বোঝার জন্য “প্রাত্যহিক জীবনে বেদনা কীভাবে দাগ কাটে।”১০ দাস বলেন, গবেষক হিসেবে যারা ট্রমার শিকার বা যাদের জীবন ভাঙাচোরা বা যাদের ক্ষত সেরে গেছে তাদের খুঁজে বের করা বিষয় না, বরং “চিনতে শেখা [ভুক্তভোগীর] বেদনা এবং সেই বেদনা কীভাবে [ভুক্তভোগীর সামাজিক] সম্পর্কে স্থায়ীভাবে দাগ কাটে, আবার, তা সত্ত্বেও, উন্মুক্ত থাকা একটি সংলগ্ন সত্তার সম্ভাবনার ব্যাপারে [the possibility of an adjacent self], বা যদি এভাবে বলি, একটি আবির্ভূত হতে থাকা সত্তা [জন্মানোর সম্ভাবনার প্রতি গবেষক হিসেবে উন্মুক্ত থাকা]।”১১

খুবই সাধারণ মানুষ “তাদের সাধারণ [দৈনন্দিন] ক্রিয়াকর্মে জন্ম দিতে পারে বিশেষ ধরণের নতুনত্ব ওসূক্ষ সম্ভাবনার।”১২ দার্শনিক ভাষা তাদের আয়ত্তে না থাকতে পারে কিন্তু তারা “কীভাবেনিজেদের জীবন যাপন করবেন তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন” (বাঁকা হরফ মূল লেখায়)।১৩ বহু বছর ধরে দাস এটিই খুঁজে বেড়াচ্ছেন; তার মতে, মানুষ কীভাবে তার বাস্তব জীবন যাপন করে সেটি অনুধাবন করতে পারা থেকে সত্যিকার দর্শনের কোনো দূরত্ব থাকা উচিৎ না; দর্শন ও তত্ত্বের কাজ সাধারণভাবে হওয়া উচিৎ “জীবনযাপনের সাথে খাপ খাইয়ে চলা – সুতরাং, এমন ধরণের প্রত্যয়ের জন্ম দিতে পারা [উচিৎ] যা বিনীত, লঘু, প্রাত্যহিক,কাছের।১৪

আমেরিকান দার্শনিক স্ট্যানলি ক্যাভেল অধ্যাপক দাসের লাইফ অ্যান্ড ওয়ার্ডস এর “প্রাককথন”-এ আমাদের মনে করিয়ে দেন যে সহিংসতা ও তার প্রভাব লিঙ্গায়িত। “নারীর ভূমিকা হচ্ছে ছিন্নভিন্ন জগতে প্রাত্যহিক জীবনের খুঁটিনাটির প্রতি লক্ষ রাখা যাতে গৃহস্থালী সচল থাকে, [নারীর ভূমিকা] রসদ যোগাড় করা, রান্না করা, ধোয়াধুয়ি করা, আবার উঠে দাঁড়ানো, বাচ্চাদের দেখাশোনা করা ইত্যাদি, যা সম্ভব করে জীবনকে একধরনের বাস্তবপোযোগী ছন্দে ফিরিয়ে আনা, জোড়ায়-জোড়ায়।”১৫ দাসের কাজের মাহাত্ম ওখানেই যে তিনি আমাদের ভাবিয়ে তোলেন কীভাবে “অবর্ণনীয় নৃশংসতা”র১৬ পরিণামের সাথে খাপ খায় আপাতদৃষ্টিতে যা ক্ষুদ্র তা, কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আপাতদৃষ্টিতে যা ক্ষুদ্র মনে হয় তা আসলে ক্ষুদ্র না বরং কল্পনার বাইরে সাহসী।

হাজেরা, পুনরায় আবির্ভূত হওয়া সত্তার মধ্য দিয়ে নিজের ক্ষত সারানো।

বেদনা সনাক্ত করতে পারার মধ্য দিয়ে সূক্ষ সম্ভাবনার জন্ম দেওয়া: “আমি চাই না ওরা আমার মতো ভুগুক।”

নৈতিক চর্চার মধ্য দিয়ে কিন্তু নৈতিক চর্চার অর্থ “আদর্শিক জীবনকে অনুসরণ-করা” নয় বরং বীতশ্রদ্ধ বা সংসারবিরাগী না হওয়া, তার থেকে দূরে থাকা তা না হলে সম্পর্কের উপর বিষাদের ছায়া পড়বে। দাস জোরারোপ করেন, “কাজ” ও “চিন্তা” দুটো ভিন্ন জিনিস না;১৭ আমি সঠিক ছিলাম কি ভুল করেছিলাম, তার হিসাবনিকাশ না করে আমরা পরিচালিত হতে পারি বিখ্যাত দার্শনিক লুডভিগ ভিটগেনস্টাইন এর প্রায়শই উদ্ধৃত কথা দ্বারা: “তার প্রতি আমার মনোভাব হচ্ছে অপরাত্মার প্রতি [যেমন হওয়া উচিৎ তেমন] মনোভাব।”১৮

আর “মনোভাব” এর অর্থ হচ্ছে অন্যদের প্রতি নৈতিক মেলবন্ধনে থাকা: “আমি চাই ওরা মর্যাদার সাথে বড় হোক।”

হাজেরার পিচ্চিদের প্রায়ই চিরাচরিত প্রশ্নটি করা হয়: তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও? ইঞ্জিনিয়ার,ডাক্তার, পুলিশ অফিসার, একে একে উত্তর আসে। সম্ভবত, তার কারণ বড় পিচ্চিদের কেউ কেউ পড়াশোনায় খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। তিনজন সেরা বোর্ডি স্কুলে অ্যাডমিশন পেয়েছে।

হয়ত ওদের মধ্যে কেউ লেখক হবে, যেমন হবার স্বপ্ন ছিল হাজেরার।

অন্য কেউ? হয়ত কোনো এক দিন ওদেরই একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবে, কে জানে। তবে হাজেরার হাতে মানুষ হওয়া তো, নিশ্চয়ই আত্মমর্যাদাবোধ থাকবে।

নৈতিকভাবে জীবনযাপন করার বোঝা শুধু কেউ কেউ বহন করে, সবাই করে না, করতে চায়ও না। কেন? শুধু কারো কারো মনে হয় জীবনের অর্থ হচ্ছে অপরের প্রতি দায়বদ্ধতা, সবার মনে হয় না। কেন? শুধু কারো কারো মনে হয় পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অর্থ হচ্ছে অপরের ঋণ শোধ করা কিন্তু সবার মনে হয় না। কেন? উত্তরে দাস বলেন, “এই সমস্যার সমাধা করা খুব কঠিন।”১৯

সাধারণতএই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয় মতাদর্শে বা ইতিহাসে – উনি খুবই শিক্ষিত তাই, উনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তাই, উনি বাম, উনি নারী আন্দোলনে আছেন তাই, উনি প্রগতিশীল রাজনীতি করেন তাই – কিন্তু উত্তর কি সত্যি সত্যি মেলে?

শিশু আশ্রমের মেঝেটা ফাতেমাকে হাজেরার অঙ্ক শেখানোর স্লেট।© শহিদুল আলম/দৃক/মেজরিটি ওয়ার্ল্ড।

তথ্যসূত্র:

১. Fakrul Alam, “The University of Dhaka and National Identity Formation in Bangladesh,” in Mridula Nath Chakraborty (ed.),Being Bengali: At Home and in the World, London: Routledge, 2014,  পৃ.২৬।

২. উপরোক্ত, পৃ.২৮।

৩. কুররাতুল-অঅইন-তাহমিনা ও শিশির মোড়ল, বাংলাদেশে যৌনতা বিক্রি। জীবনের দামে কেনা জীবিকা, ঢাকা: সেড (সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড হিউমান ডেভেলাপমেন্ট), ২০০০, পৃ.১০১।

৪. উপরোক্ত, পৃ. ১০৫।

৫. দার্শনিক প্রত্যয় হিসেবে ‘এজেন্সি’ বলতে বোঝায় কোনো কর্তাসত্তার জগতে কাজ করার সক্ষমতাকে; মানুষের এজেন্সি বলতে বোঝানো হয় মানুষের চয়ন/বাছাই করার সক্ষমতা এবং সেই বাছাইকে জগতে আরোপণের সক্ষমতা। এটি প্রাকৃতিক কিছু নয় বরং ঐতিহাসিকভাবে গতিশীল এবং সামষ্টিক। এই বর্ণনা ধার করেছি এখান থেকে: সাঈদ ফেরদৌস, “বাদপড়াদের ফিরে দেখা: ইতিহাসরচনায় প্রান্তজনের খোঁজ,” প্রবল ও প্রান্তিক-১, পাবলিক নৃবিজ্ঞান, ঢাকা, অক্টোবর ২০১১,টীকা ৩৬, পৃ.৬৭। নৃবিজ্ঞানী তালাল আসাদ আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করান এজেন্সি কীভাবে একটি বাঁধা বুলিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন এজেন্সি নিয়ে এই মোহগ্রস্থতা উদারনৈতিক ব্যক্তিবাদের কারণে। ব্যক্তি চাইলে নিজেকে একভাবে গড়ে তুলতে পারে, চাইলে তার জীবন পরিবর্তন করতে পারে, এই বক্তব্য বা বিশ্বাস মতাদর্শিকভাবে অগ্রাধিকার পায় ব্যক্তিটি কোন সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে বাস্তবে বেড়ে উঠেছে, কিসের মধ্যে অবস্থিত, কিসের মধ্যে বেঁচে আছে, তার উপর। দেখুন, “Modern Power and the Reconfiguration of Religious Tradition: An Interview with Talal Asad,” by Saba Mahmood, Stanford Humanities Review5(1), 27 February 1996, web.stanford.edu।

৬. Listening to Voices. An Interview with Veena Das,” by Kim Turcot DiFruscia, Alterites, Vol. 7, No. 1, 2010,পৃ.১৪০।

৭. উপরোক্ত, পৃ.১৩৭।

৮. Veena Das, Life and Words: Violence and the Descent into the Ordinary, California, University of California Press, 2006,পৃ.২।

৯. An Interview with Veena Das”, পৃ.১৪১।

১০. উপরোক্ত, পৃ.১৪০।

১১. উপরোক্ত, পৃ.১৪১।

১২. উপরোক্ত, একই পৃষ্ঠা।

১৩. উপরোক্ত, পৃ. ১৪১।

১৪. Veena Das, Book Symposium. “Ethics, the householder’s dilemma, and the difficulty of reality,” HAU. Journal of Ethnographic Theory, Vol 4, No. 1, ২০১৪,পৃ. ৪৮৯।

১৫. Stanley Cavell, “Foreword,” in Life and Words,প্রাগুক্ত, পৃ. ীরা।

১৬. উপরোক্ত, একই পৃষ্ঠা।

১৭. “Ethics, the householder’s dilemma”, প্রাগুক্ত, পৃ.৪৯৩।

১৮. উপরোক্ত, পৃ. ৪৯৩-৪৯৪। “My attitude towards him is an attitude towards a soul”- এই বাক্য উচ্চারণের পরপরই লুডভিগ ভিনগেস্টাইন যোগ করেন, “I am not of the opinion that he has a soul.” ভিটগেনস্টাইনের কথাগুলো নিয়ে চিন্তাপ্রসূত আলোচনা করেছেন সুইডেনের দার্শনিক কেমিল্লা ক্রঙ্কভিস্ট। তিনি বলেন, ভিটগেনস্টাইন কথাগুলো বলেছিলেন পশ্চিমা চিন্তাজগতের দুটো ঐতিহ্যের পরিপ্রেক্ষিতে: দেকার্তের মাইন্ড-বডি বিভাজন ও খ্রিস্ট ধর্মের বডি-অ্যান্ড-সোল বিভাজন। তিনি দুটোরই বিরোধী। দেকার্তের ঐতিহ্যের বিরোধিতায় ভিটগেনস্টাইন বলেন “এটি মানুষকে দুটো অংশে বিভক্ত করে, বস্তুগত দেহ ও অবস্তুগত মনবা আত্মা। এই দুটোর মধ্যে মনকে দেখা হয় আসল মানুষ হিসেবে আর দেহকে মনে করা হয় স্রেফ একটি যন্ত্র যার চারপাশের দেহগুলোও যন্ত্র, নেই কোনোমন বা আত্মা। …মানুষকে এভাবে দেখতে আমরা প্রলুব্ধ হই; আসল মানুষ বা আসল ব্যক্তিসত্তাকে এভাবে দেহ ছাড়া আন্যকিছু [হিসেবে দেখতে শিখেছি], আর সেই অ-দৃশ্যমান, অ-দেহ সত্তাকেই আমরা বেশি মূল্য দেই, আমাদের সামনে দাঁড়ানো দেহ’টিকে না।” ক্রঙ্কভিস্ট বলেন, ভিটগেনস্টাইন আমাদের দৃষ্টি সরাতে চেয়েছেন প্রচলিত প্রশ্ন থেকে, বিষয় এটি নয় যে অন্য মানুষেরও দেহ আছে, মন আছে, আত্মা আছে, বিষয় হচ্ছে আমাদের সবার প্রতি এমন আচরণ করা উচিৎ যার সাথে সে কী ধরণের, কিসে বিশ্বাস করে (সে সতী নাকি সে অসতী, পিয়ন নাকি অফিসার), এ ব্যাপারে পূর্বনির্ধারিত ধারণা যাতে আমাদের আচার আচরণকে নির্ধারিত না করে। দেখুন, Camilla Kronqvist, “An attitude towards a soul.”

১৯. “Ethics, the householder’s dilemma”, প্রাগুক্ত, পৃ.৪৯২।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •