ইন্টারনেট যুগে কর্তৃত্ববাদ
ইভজেনি মোরজোভ
জর্জ অরওয়েল ১৯৪৯ সালে লেখা তাঁর ‘1984’ উপন্যাসে এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা কল্পনা করেছেন যেখানে সর্বব্যাপী নজরদারি ও প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আর অলডস হ্যাক্সলি তাঁর ১৯৩২ সালে লেখা উপন্যাস ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ এবং ১৯৫৮ সালে লেখা ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড রিভিজিটেড’ নামের প্রবন্ধে এক ভিন্নরকম দুনিয়া কল্পনা করেছেন। সেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে মানুষের আনন্দ সর্বোচ্চকরণের কাজে লাগানো হয়, মানুষের একা থাকার সময় সর্বনিম্নকরণ করা হয় এবং দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা ভোগবিলাসের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে সর্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণের কাঠামো কাজ করে। এই লেখায় মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে জর্জ অরওয়েল ও অলডস হাক্সলির খুবই প্রভাবশালী এই দুই ভিন্ন ধরনের রূপকল্প বর্তমান সময়ের অভিজ্ঞতায় পরীক্ষা করা হয়েছে। লেখাটি ইভজেনি মোরজোভ-এর ‘দ্য নেট ডিল্যুশন: হাউ নট টু লিবারেট দ্য ওয়ার্ল্ড’ (পেঙ্গুইন ২০১২) পুস্তকের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায় অবলম্বনে তৈরি করেছেন কল্লোল মোস্তফা।
আধুনিক কালের সরকারগুলো জনগণকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে বিষয়ে জর্জ অরওয়েল ও অলডস হাক্সলি উভয়েই ভীষণ শক্তিশালী কিন্তু দুটো একেবারেই ভিন্ন ধরনের রূপকল্পের কথা লিখে গেছেন। জর্জ অরওয়েল ১৯৪৯ সালে লেখা তার ‘1984’ উপন্যাসে এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা কল্পনা করেছেন, যেখানে সর্বব্যাপী নজরদারি ও মন অসাড় করা প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই প্রচারণা করা হয় একধরনের অর্থহীন শব্দমালা ব্যবহার করে, যার নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘নিউস্পিক’। অরওয়েলীয় দুনিয়ায় নাগরিকদের কোনো গোপনীয়তার অধিকার থাকে না। তাই নাগরিকরা সেখানে বাতিল ও পুরোনো কাগজ সংরক্ষণ করে রাখে। কারণ, এগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণ জগতের বাইরের সামগ্রী, যা তাদের ভিন্ন ধরনের অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এমনকি টেলিভিশন সেটের মাধ্যমে নাগরিকদের ওপর নজরদারি চালানো হয়।
অলডস হ্যাক্সলির রূপকল্পের দেখা পাওয়া যায় তার ১৯৩২ সালে লেখা উপন্যাস ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ এবং ১৯৫৮ সালে লেখা ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড রিভিজিটেড’ নামের প্রবন্ধে। হ্যাক্সলির দুনিয়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে মানুষের আনন্দ সর্বোচ্চকরণের কাজে লাগানো হয়, মানুষের একা থাকার সময় সর্বনিম্নকরণ করা হয় এবং দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা ভোগবিলাসের ব্যবস্থা করা হয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে নাগরিকদের মধ্যে চিন্তা ও সমালোচনা করার ক্ষমতা লোপ পায় এবং ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া যে কোনো সিদ্ধান্তে তারা সায় দিতে থাকে।
বলা হয়, জর্জ অরওয়েলের ১৯৮৪ উপন্যাসটি সর্বব্যাপী নজরদারিব্যবস্থা, প্রপাগান্ডার মাধ্যমে চিন্তার ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম ও কঠোর সেন্সরশিপের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে, তা বোঝার জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিনোদন-যৌনতা-বিজ্ঞাপনের রাজনীতিকে স্পষ্ট করে তোলার বেলায় হ্যাক্সলির ‘ব্রেইভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ বেশ সফল। তবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে হ্যাক্সলীয় কৌশল এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অরওয়েলীয় ব্যবস্থার কোনো স্থান নেই। নাওমি ক্লেইন যেমন বলেছেন, চীন খুব স্পষ্ট ও দৃশ্যমানভাবে ক্রমেই পশ্চিমের আদল নিচ্ছে (চীনে স্টারবাকস, হুটারস, সেলফোন ইত্যাদি পশ্চিমের তুলনায় বেশি আকর্ষণীয়) আর পশ্চিম তুলনামূলক কম দৃশ্যমানভাবে চীনের রূপ ধারণ করছে (নির্যাতন, ওয়ারেন্ট ছাড়াই আড়ি পাতা, অনন্তকালের জন্য আটক ইত্যাদি)।
তবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে হ্যাক্সলীয় কৌশল এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অরওয়েলীয় ব্যবস্থার কোনো স্থান নেই। নাওমি ক্লেইন যেমন বলেছেন, চীন খুব স্পষ্ট ও দৃশ্যমানভাবে ক্রমেই পশ্চিমের আদল নিচ্ছে (চীনে স্টারবাকস, হুটারস, সেলফোন ইত্যাদি পশ্চিমের তুলনায় বেশি আকর্ষণীয়) আর পশ্চিম তুলনামূলক কম দৃশ্যমানভাবে চীনের রূপ ধারণ করছে (নির্যাতন, ওয়ারেন্ট ছাড়াই আড়ি পাতা, অনন্তকালের জন্য আটক ইত্যাদি)।
তবে কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি না-করেই বোধহয় এই কথাটা বলা যায়, সাম্প্রতিক কালের বেশিরভাগ স্বৈরশাসকই সম্ভবত অরওয়েলীয় দুনিয়ার চেয়ে হ্যাক্সলীয় বিশ্বকেই বেশি পছন্দ করবেন। কারণ, বিনোদনের মাধ্যমে জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করাটা তুলনামূলক সস্তা এবং তাতে খুব বেশি নির্মমতার প্রয়োজন পড়ে না। অল্প কিছু স্যাডিস্টিক বা ধর্ষকামী স্বৈরশাসকের কথা বাদ দিলে বেশিরভাগ স্বৈরশাসকের মূল লক্ষ্য রক্তপাত নয়, তারা যা চান তা হলো ক্ষমতা ও অর্থ। নজরদারি, সেন্সরশিপ এবং গ্রেফতার করা ছাড়া স্রেফ মানুষের মনোযোগ বিক্ষেপের মাধ্যমেই যদি তারা তা পেতে থাকেন, তাহলে তাদের আপত্তি থাকার কোনো কারণ নেই। চব্বিশ ঘণ্টার পুলিশি শাসনের বদলে মনোযোগ বিক্ষেপের কৌশলই দীর্ঘ মেয়াদে বরং অধিক লাভজনক। কারণ, পুলিশিব্যবস্থা স্বল্প মেয়াদে যতই সুবিধাজনক হোক না কেন, দীর্ঘ মেয়াদে তা জনগণকে রাজনৈতিক করে তোলে এবং বিদ্রোহের দিকে ধাবিত করে। বিগ ব্রাদারের আর নাগরিকদের ওপর নজর রাখার প্রয়োজন নেই, নাগরিকরা বরং টেলিভিশনে ব্রিগ ব্রাদার দেখছেন‒এ রকম একটা বাস্তবতা গণতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য সুবিধাজনক কিছু নয়।
সুতরাং ডিসট্রাকশন বা মনোযোগ ঘোরানোর প্রশ্নে ইন্টারনেট হ্যাক্সলি-অনুপ্রাণিত স্বৈরশাসনের ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করেছে। ইউটিউব-ফেসবুক তাদের সীমাহীন সস্তা বিনোদনের জগৎ দিয়ে ব্যক্তিকে তার রুচিমাফিক অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছে। মানুষ একঘেয়েমি পছন্দ করে না, অনেক সময় একঘেয়েমি মানুষকে রাজনীতির দিকে ঠেলে দেয়। নতুন গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটের সফলতা হলো মানুষের একঘেয়েমিকে চাপা দেওয়া। মানুষের অসন্তোষ প্রকাশের রাস্তা বন্ধ থাকলে একসময় মানুষ বিরক্তি ও একঘেয়েমি থেকে বিদ্রোহ করে বসতে পারত। কিন্তু এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। এক অর্থে কর্তৃত্ববাদের অধীন থাকা মানুষের বিনোদন-অভিজ্ঞতা ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীন থাকা জনগণের থেকে ভিন্ন কিছু নয়।
কর্তৃত্ববাদের তিন খুঁটি
স্বীকার করতেই হয়, ‘বিনোদনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ’-এর এই পদ্ধতি কর্তৃত্ববাদী সমাজের সবার ক্ষেত্রে কাজ করবে না; কিছু মানুষের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে এত বেশি ক্ষোভ থাকবে যে, স্রেফ বিনোদনের মাধ্যমে তা ভাসিয়ে দেওয়া যাবে না। তা ছাড়া দেশি-বিদেশি বিরোধী পক্ষ সবসময়ই স্থানীয় জনগণকে রাজনৈতিক করে তোলার নানান উপায় বের করতেই থাকবে, এমনকি ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষের মতো উপাদানকেও এই ফেসবুক-ইউটিউবের যুগে এ কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। সুতরাং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের অরওয়েলীয় ধরনকেও যে ব্যবহার করতে হবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অনেকে মনে করেন, অবাধ তথ্যপ্রবাহের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার পতন ঘটনো সম্ভব; কিন্তু বাস্তবতা হলো, তথ্যের মাধ্যমে প্রপাগান্ডা, সেন্সরশিপ ও নজরদারি‒অরওয়েলীয় ধাঁচের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের এই তিন মূল খুঁটিকেও কিন্তু শক্তিশালী করা যায়।
অনেকে মনে করেন, অবাধ তথ্যপ্রবাহের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার পতন ঘটনো সম্ভব; কিন্তু বাস্তবতা হলো, তথ্যের মাধ্যমে প্রপাগান্ডা, সেন্সরশিপ ও নজরদারি‒অরওয়েলীয় ধাঁচের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের এই তিন মূল খুঁটিকেও কিন্তু শক্তিশালী করা যায়।
ইন্টারনেট কর্তৃত্ববাদের এই তিন খুঁটির গঠনকে হয়তো পালটে দেয়নি; কিন্তু এই তিন খুঁটি ব্যবহারের ধরনে নিশ্চিতভাবেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। বিকেন্দ্রিক চরিত্রের কারণে হয়তো ইন্টারনেট সেন্সরশিপকে আগের চেয়ে আরও কঠিন করে তুলেছে; কিন্তু একই সঙ্গে ইন্টারনেট হয়তো সরকারি প্রপাগান্ডাকে আগের চেয়ে বেশি কার্যকর করার সুযোগও তৈরি করে দিয়েছে। কারণ, সরকারি প্রচারণা এখন বেসরকারি ব্লগারদের মাধ্যমেই ছড়ানো সম্ভব। অনলাইন যোগাযোগকে সহজে এনক্রিপশন করার সুবিধা হয়তো অভিজ্ঞ ও পেশাদার রাজনৈতিক কর্মীদের সুরক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে; কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতো বিভিন্ন ধরনের ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা অপরিণত রাজনৈতিক কর্মীদের আরও বেশি নজরদারির মুখোমুখি করেছে।
কারও কারও মতে, রেডিও ফ্রি ইউরোপ বা এ ধরনের সংবাদ সম্প্রচারভিত্তিক তৎপরতার মাধ্যমে একসময় যেভাবে কর্তৃত্ববাদী সরকারের সেন্সরশিপ ভেদ করে জনগণের কাছে বিভিন্ন তথ্য পৌঁছে দিয়ে তাদের রাজনৈতিক করে তোলা গেছে, ইন্টারনেট যুগে সে রকমটা সম্ভব নয়। কারণ, ইন্টারনেট জগৎটা রেডিওর মতো নিশ্চিত কিছু নয়। ইন্টারনেটের চরিত্র অনেক বেশি খেয়ালি ও অস্থির ধরনের। ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রপাগান্ডাব্যবস্থা দুর্বল করা গেলেও দেখা যাবে, নজরদারিব্যবস্থা শক্তিশালী হয়েছে, উলটোভাবে মানুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেন্সরশিপ ফাঁকি দিতে পারলেও দেখা যাবে, প্রপাগান্ডার খপ্পরে গিয়ে পড়ছে। ইন্টারনেট কর্তৃত্ববাদের তিন খুঁটিকে আগের চেয়ে আরও বেশি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত করে তুলেছে; যে কারণে দেখা যায়, একটা খুঁটিকে দুর্বল করতে গেলে অন্য দুটি আরও শক্তিশালী হয়ে যায়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সরকারি সেন্সরশিপের হাত থেকে বাঁচতে জনগণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগের ওপর নির্ভরশীল হলে দেখা যায়, আগের চেয়ে বেশি করে প্রপাগান্ডা ও নজরদারির খপ্পরে গিয়ে পড়ে। অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের পরস্পরের মধ্যে যত বেশি যোগাযোগ আবিষ্কার করা যাবে, কর্তৃত্ববাদী সরকারের জন্য তত বেশি সুবিধা। ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর ব্যবহারকারীদের আস্থা যত বাড়বে, সেই আস্থা সতর্কভাবে কাজে লাগিয়ে সরকারি প্রপাগান্ডা চালানো তত বেশি সহজ হবে। ইন্টারনেট স্বাধীনতার নামে কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাতকেই উলটো শক্তিশালী করার ভুল এড়ানোর একমাত্র উপায় হলো ইন্টারনেট যুগে নজরদারি, সেন্সরশিপ এবং প্রপাগান্ডার কৌশলগুলো কীভাবে পালটে গেছে তা বোঝার চেষ্টা করা।
ইন্টারনেট ও কর্তৃত্ববাদের বৈধতা
হাল আমলে অনেক দেশে দীর্ঘকাল জুড়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা টিকে থাকার ঘটনাকে অনেকভাবেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যেমন: জ্বালানি সম্পদ, জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা না-থাকা, পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর গোপন অনৈতিক সমর্থন, মন্দ প্রতিবেশী দেশ ইত্যাদি। এসব কারণের মধ্যে নাগরিকদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য না-থাকার বিষয়টিকে কিন্তু আজকাল আর অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। ফলে এ রকম মনে করার কোনো কারণ নেই যে, অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ করে দিলেই কর্তৃত্ববাদীব্যবস্থা ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়বে। আরেকটা বিষয় হলো, কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার বৈধতা অনেক সময় অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়াও অন্যান্য আরও অনেক উপাদান ব্যবহার করেও দাঁড় করানো হয়, যেমন: উগ্র জাতীয়তাবাদ (চীন), বিদেশি শক্তির আগ্রাসনের ভীতি (ইরান), দ্রুতগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (রাশিয়া), কম দুর্নীতি (বেলারুশ) এবং সরকারি সেবাব্যবস্থার দক্ষতা (সিঙ্গাপুর)।
কাজেই কর্তৃত্ববাদের ওপর ইন্টারনেটের প্রভাব বুঝতে হলে সরকারবিরোধীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কী কী প্রচার করতে পারে, সেই ভাবনার বাইরেও বোঝার চেষ্টা করা দরকার‒আধুনিক কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার বৈধতা জোরালো করার কাজে দেশে-দেশে ইন্টারনেট কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কোনো কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের অনলাইন জগৎ বিষয়ে ভালোভাবে অনুসন্ধান করলেই দেখা যায়, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও বিষাক্ত বিদেশি বিদ্বেষ দিয়ে এসব দেশের অনলাইন জগৎ এমনভাবে পূর্ণ যে, এর কাছে সরকারি আনুষ্ঠানিক নীতি রীতিমতো পানসে মনে হবে। অনলাইন জগতে এ ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী তৎপরতা সরকারের বৈধতা তৈরির ক্ষেত্রে ঠিক কী ধরনের ভূমিকা রাখবে, তা সবসময় নিখুঁতভাবে বলে দেওয়া না-গেলেও এটুকু তো বলাই যায়, ইন্টারনেটের আবির্ভাবের মাধ্যমে যে ধরনের নিখুঁত গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটবে বলে অনুমান করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি মোটেই তার জন্য অনুকূল নয়। এমনকি যে ব্লগার বা অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট সরকারের বিভিন্ন অংশের দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর প্রকাশ করে থাকেন, তাকেও ওই সরকারেরই ওপরের সারির রাজনীতিবিদ কর্তৃক দুর্নীতি দমন অভিযানের অংশ হিসেবে কাজে লাগানো সম্ভব। এর ফলে ক্ষমতাসীন সরকারের কোনো একটি অংশের দুর্নাম হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের সুনাম ও ক্ষমতা হয়তো বৃদ্ধিই পাবে। ফলে শাসনব্যবস্থার কেন্দ্র ও প্রান্তের মধ্যে ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে না-বুঝে গণতন্ত্রায়ণের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট কী ভূমিকা রাখতে পারে, তা অনুমান করা কঠিন।(চলবে)