ইন্টারনেট ট্রল ও বিজেপির ডিজিটাল আর্মির গোপন জগৎ

ইন্টারনেট ট্রল ও বিজেপির ডিজিটাল আর্মির গোপন জগৎ

স্বাতী চতুর্বেদী

ফেসবুক, টুইটারসহ ইন্টারনেট যোগাযোগ মাধ্যম আপাতদৃষ্টিতে মত ও তথ্য প্রকাশের উন্মুক্ত মঞ্চ মনে হলেও বিভিন্ন দেশের স্বৈরতন্ত্রী শাসক এবং ক্ষমতাবান গোষ্ঠীর সংগঠিত দাপটে এই মঞ্চগুলোই হয়ে উঠেছে নাগরিকদের ওপর নজরদারি এবং ভিন্নমতাবলম্বী/প্রতিবাদী মানুষদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বাহন। বাংলাদেশ ও ভারতসহ বহু দেশে এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে; এসব মঞ্চ ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক- জাতিগত বিদ্বেষ ও উন্মাদনা সৃষ্টির ঘটনাও ঘটছে বারবার। এই লেখায় আমরা এবিষয়ে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীর বয়ানে ভারতের অভিজ্ঞতা জানতে পারি। লেখাটি ভারতীয় সাংবাদিক Swati Chaturvedi রচিত I am a Troll: Inside the Secret World of the BJP’s Digital Army (Juggernaut Publication, ২০১৬) শীর্ষক পুস্তক অবলম্বনে তৈরি করেছেন কল্লোল মোস্তফা ।

বিভিন্ন উত্তেজনাসৃষ্টিকারী মন্তব্য ও ছবির মাধ্যমে যারা ইন্টারনেটে বিভেদ তৈরি করে ও মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তাদের বলা হয় ‘ইন্টারনেট ট্রল’। তারা হলো অনলাইন জগতের গুন্ডা। ভারতে অনলাইন ট্রলদের একটা বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী ডানপন্থি ও উগ্র জাতীয়তাবাদী। যেসব ব্যক্তিকে তারা সরকার, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বা দেশবিরোধী মনে করে, তাদের ওপরেই আক্রমণ চালায়। তাদের অনেকেরই ফলোয়ার বা অনুসারীর সংখ্যা অনেক। সাধারণত তাদের প্রোফাইল ছবি হিসেবে থাকে হিন্দু দেব-দেবী কিংবা টুইটার এগ। অনেক সময় আকর্ষণীয় নারীর ছবিও থাকে। ফলে অনেক সময় দেখা যায়, হয়তো ‘সোনম’ নামের এক নারী টুইটারে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাবর্ষণ করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ট্রলগুলো বেনামে থাকে। কিন্তু কিছু স্বনামেই পরিচালিত হয়, যাদের এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত ফলো করে থাকেন।

স্বনামে থাকা ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রে আক্রমণের নেতৃত্ব দেয়। তারা কোনো ব্যক্তিকে আক্রমণ শুরুর পরেই দেখা যায় একগাদা বেনামি ট্রল আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মূল অভিযোগটি ধরে অথবা তার সঙ্গে আরও নতুন কিছু অভিযোগ যুক্ত করে বারবার আক্রমণ করতে থাকে। বিশেষ করে নারীদের বিরুদ্ধে বেনামি টুইট আক্রমণগুলোর ক্ষেত্রে রগরগে যৌন হিংসাত্মক ভাষা ব্যবহার করা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি যত বিখ্যাত হন, আক্রমণ তত নোংরা হয়।

প্রশ্ন হলো, ভুয়া নাম ও ছবিসহ এই ট্রলগুলোর পেছনে আসলে কারা থাকে? কোথা থেকে আসে এগুলো? এমন আচরণ তারা কেন করে? তারা কি কোনো সংগঠিত শক্তির অংশ হিসেবে কাজ করে, নাকি স্বতঃস্ফূর্তভাবে করে? তারা কি স্রেফ বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদির ভক্ত, নাকি পার্টির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো সম্পর্কে আবদ্ধ? দুই বছরের বেশি সময় ধরে করা গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি লেখাটিতে এসব প্রশ্নেরই উত্তর অনুসন্ধান করা হয়েছে। এই জন্য আমি ট্রল হিসেবে কাজ করা বিভিন্ন ব্যক্তি, বিজেপি ও আরএসএস-এর নেতা, বিরোধী দলের নেতা, সরকারি আমলাসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি।

প্রশ্ন হলো, ভুয়া নাম ও ছবিসহ এই ট্রলগুলোর পেছনে আসলে কারা থাকে? কোথা থেকে আসে এগুলো? এমন আচরণ তারা কেন করে? তারা কি কোনো সংগঠিত শক্তির অংশ হিসেবে কাজ করে, নাকি স্বতঃস্ফূর্তভাবে করে? তারা কি স্রেফ বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদির ভক্ত, নাকি পার্টির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো সম্পর্কে আবদ্ধ? দুই বছরের বেশি সময় ধরে করা গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি লেখাটিতে এসব প্রশ্নেরই উত্তর অনুসন্ধান করা হয়েছে।

নয়াদিল্লির ১১ অশোক রোডের অফিসে [২০১৮ সালে যা দিল্লির ৬, দিন দয়াল রোডের নতুন ভবনে সরিয়ে নেওয়া হয় –অনুবাদক] বিজেপির একটি সোশ্যাল মিডিয়া সেল রয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে যার কাজ হলো প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তার দলের বিভিন্ন অর্জনকে হাইলাইট করা, এগুলোকে ট্রেন্ডে পরিণত করা। কিন্তু আইটি সেলের (তৎকালীন) প্রধান অরবিন্দ গুপ্ত ব্যক্তিগতভাবে টুইটারের বিভিন্ন ট্রলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। আমি বিজেপির ৩০ জনের বেশি সোশ্যাল মিডিয়া স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে কথা বলেছি, যারা একই কথা বলেছেন। এরপর আমার কথা হয় সাধাভী খোসলার সঙ্গে, যিনি ছিলেন বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেলের একজন সদস্য। তিনি আমার কাছে তার পুরো গল্প বলেছেন। কিন্তু তার আগে কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড বা প্রেক্ষাপট জেনে নেওয়া যাক।

বিজেপির আইটি সেলের কেন্দ্রীয় সদস্যদের কাজ হলো বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন ধরনের হ্যাশট্যাগকে জনপ্রিয় করে তোলা। এখান থেকে ভারতজুড়ে বিস্তৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কর্মীদের কাছে টুইটারের এজেন্ডা নির্ধারণ করে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশ পাঠানো হয়। এই কর্মীদের একটা অংশ স্বেচ্ছাসেবক আর অন্য একটা অংশ অর্থের বিনিময়ে নিয়োজিত আইটিকর্মী। এসব নির্দেশনার একটা বড় অংশ নিয়মিত প্রচারণার অংশ যেমন: নরেন্দ্র মোদি বা অমিত শাহর বক্তৃতার প্রচারণা, কিংবা মোদি বা অমিত শাহকে কেন্দ্র করে টুইটারে বিভিন্ন ট্রেন্ড তৈরি ইত্যাদি।

টুইটারে অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া যখন বেশ শিথিল ছিল, তখন বিজেপি বেশ কিছু টু্ইটার অ্যাকাউন্ট তৈরি করে রেখেছিল। পার্টির বিভিন্ন কর্মীর নামে তৈরি এসব অ্যাকাউন্টকে টুইটারে কোনো বিষয়ে ঝড় তুলতে একযোগে কাজে লাগানো হয়। এছাড়া আইটি সেল নিয়ন্ত্রিত অনেকগুলো বট অ্যাকাউন্টও রয়েছে, যেগুলো থেকে একযোগে একই ধরনের বার্তা টুইট করা হয়। এই বটগুলো কতগুলো যান্ত্রিক এলগরিদমের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেগুলোকে বাইরে থেকে আসল ব্যক্তি বলে মনে হয়। আইটি সেলের কাজ হলো এগুলোকে একযোগে ব্যবহার করে সময়মতো নির্দিষ্ট কিছু টুইট বারবার পোস্ট করে টাইমলাইন ভাসিয়ে দেওয়া ও নির্দিষ্ট কিছু হ্যাশট্যাগ জনপ্রিয় করে তোলা।

কোনো একটা মেসেজ বা বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিজেপির আইটি সেল যে বেশ দক্ষ একটা সংগঠন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এতদিন এ বিষয়টা পরিষ্কার ছিল না যে, ডানপন্থি ট্রলগুলোর সঙ্গে এর সম্পর্কটা ঠিক কেমন এবং দৈনিক কার্যক্রমের সমন্বয়টাই-বা ঠিক কীভাবে হয়। সাধাভী খোসলাসহ বিজেপির বেশ কিছু সোশ্যাল মিডিয়াকর্মীর সঙ্গে কথা বলে প্রমাণ পেয়েছি যে, বিজেপি আইটিসেল ও অনলাইন ট্রলগুলোর মধ্যে সুস্পষ্ট সম্পর্ক রয়েছে এবং আইটি সেল থেকে অনলাইন ট্রলের অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রিত হয়।

ছবি: নরেন্দ্র মোদি পৃষ্ঠপোষকতা করছেন এমন একজন টুইটার ট্রল (বাঁ-দিকে) এবং এই টুইটার ট্রল কর্তৃক গালাগালির নিদর্শন(ডান দিকে)

খোসলার গল্প

তরুণ উদ্যোক্তা সাধাভী খোসলার জন্য ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ছিল বিশেষ একটি দিন। বর্তমানে যে স্থানটি গুরুগ্রাম নামে পরিচিত, সেখানে তার একটি নলেজ প্রসেস আউটসোর্সিং (কেপিও) কোম্পানি ছিল। তিনি সেদিন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অফিস থেকে একটি টেলিফোন পান। তাকে বলা হয়, নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কাজের বেশ প্রশংসা করেছেন এবং তাকে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া টিমে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

খোসলা বেশ কিছুদিন ধরে টুইটারে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলছিলেন, বলছিলেন কী করে দেশব্যাপী দুর্নীতি ভারতকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং বতর্মান সময়ে একজন শক্তিশালী নেতার কত প্রয়োজন। ফোনকলের পর মোদিও তাকে টুইটারে ফলো করতে শুরু করেন, যা এই লেখা তৈরির সময় পর্যন্তও বজায় ছিল।

খোসলা ছিলেন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়াশোনা করা ৩৭ বছর বয়সি এক আকর্ষণীয় নারী। তিনি মার্কেটিং বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেন এবং ছয় বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পর পিতামাতার সঙ্গে থাকা ও সন্তানকে দেশের মাটিতে বড় করে তোলার উদ্দেশ্যে দেশে ফিরে আসেন। নরেন্দ্র মোদির ফোন পেয়ে তিনি ব্যাপক উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। তার আদর্শ ব্যক্তিত্ব, যাকে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান, তিনি তাকে দেশকে পরিবর্তনের আন্দোলনে যোগ দিয়ে ‘আচ্ছে দিন’ আনা ও ভারতের উন্নয়নের জন্য কাজ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন!

খোসলা তার সব কাজ বাদ দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেলে যোগ দিলেন এবং মোদির পক্ষে প্রচারণার কাজ শুরু করলেন। তিনি ছিলেন বহুল প্রশংসিত ‘চাই পে চর্চা’ পরিকল্পনার অংশ, যিনি গুরুগ্রামে এরকম অনেকগুলো ‘চাই পে চর্চা’ সংগঠনে ভূমিকা রাখেন। তাহলে এমন কী ঘটল যে, তিনি নরেন্দ্র মোদির একজন চরম সমর্থক ও বিশ্বাসী থেকে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেলকে ভয় পায় এরকম একজন মানুষে পরিণত হলেন?

তিনি একাধিক বৈঠকে যখন তার কথাগুলো বলেছেন, প্রায়ই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। এরকম সুবেশী, প্রাণচঞ্চল ও আত্মবিশ্বাসী একজন নারীকে বারবার ভেঙে পড়তে দেখাটা বেশ অস্বস্তিকর ব্যাপার। এমনও হয়েছে, বাধ্য হয়ে তাকে আমি ঘরের বাইরে নিয়ে গিয়েছি। তিনি বেশ আবেগ নিয়ে আমাকে বলেছেন, ‘আমি প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।’

ছবি: বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া উইমেন’স গ্রুপের সঙ্গে খোসলা তার নিজের আয়োজিত ‘চাই পে চর্চা’মিটিংয়ে (উপরের ছবি) এবং কিরণ খেরের সঙ্গে (নিচের ছবি)

খোসলা যে কারণে আইটি সেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তা এরকম:

খোসলা এমন এক পরিবারের সদস্য, যারা প্রায় তিন প্রজন্ম ধরে কংগ্রেসের সমর্থক। তার দাদা সুরেন্দ্র নাথ খোসলা ছিলেন একজন মুক্তিসংগ্রামী ও পাঞ্জাবের সামানা অঞ্চল থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস এমএলএ। কিন্তু তিনি নিজে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়েন এই প্রত্যাশায় যে, ‘শুধু নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হলেই ইউনাইটেড প্র্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স বা ইউপিএ শাসনের দুর্নীতি ও জড়তা থেকে মুক্ত হয়ে দেশের উন্নয়ন ঘটবে।’

এই তরুণ নারী ভীষণ ধর্মপরায়ণ। তিনি ভগবদ্‌গীতা ও রামায়ণ মুখস্থ আওড়াতে পারেন। বিজেপির মতবাদে দীক্ষার পেছনে ধর্মের প্রতি তার এই ভক্তির ভূমিকা ছিল। ঘটনার শুরু ২০০৪ সালে, প্রকৌশলী স্বামীর সঙ্গে মিশিগানে যাওয়ার পর থেকে। তার স্বামী কাজ করতেন হিউলেট প্যাকার্ড কোম্পানিতে এবং খোসলা কাজ করতেন একটা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে। সেখানে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তিনিসহ আরও কিছু ভারতীয়, যারা প্রত্যেকেই বেশ উঁচু বেতনের চাকরি করেন, বেনামি ই-মেইল পাওয়া শুরু করেন। এসব ই-মেইলে ভারতীয় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আশ্চর্য সব অভিযোগ থাকত যেমন: সোনিয়া গান্ধী হিন্দুত্ব বিরোধিতার জায়গা থেকে রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন, প্রিয়াংকা গান্ধী বাইপোলার ডিজঅর্ডার নামক মানসিক রোগে ভুগছেন এবং তার স্বামী রবার্ট ভদ্র থেকে পৃথক হয়ে গেছেন, রাহুল গান্ধী একজন মাদকাসক্ত, তিনি একজন অহিন্দু নারীকে বিয়ে করেছেন এবং তার একটি সন্তান থাকলেও তা গোপন করা হচ্ছে ইত্যাদি। এছাড়া তারা বছরজুড়ে পি. চিদাম্বরম ও বারখা দত্তের দুর্নীতি, বারখা দত্তের নিরা রাদিয়া সংযোগ ও তার ‘মুসলিম স্বামী’ সম্পর্কে গাদা গাদা তথ্য পেতেন।

খোসলা জানিয়েছেন, বিজেপির আইটি সেলে যোগ দেওয়ার পর তিনি যেসব হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দেখেছেন, যেগুলো আইটি সেলপ্রধান ও তার সহযোগীদের পরামর্শমতো তাদের প্রচার করতে হতো–সেগুলোর সঙ্গে ওইসব ই-মেইলের কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু পুরোপুরি মিলে যায়। তার কাছে ওইসব চেইন মেইলের অনেকগুলো এখনো আছে। তিনি জানান, ‘[তৎকালীন আইটিসেলপ্রধান] অরবিন্দ গুপ্ত আমাদের বারবার এসব মিথ্যা অপবাদ টুইট করতে বলতেন। ধীরে ধীরে আন্না হাজারের আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে এই অভিযোগগুলো গান্ধী পরিবার সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য আখ্যানে পরিণত হলো। কারণ, এমনকি গান্ধী পরিবারের কেউ এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেননি। মার্কেটিংয়ে এমবিএ করা সত্ত্বেও আমি এসব কথা দ্বারা প্রভাবিত হই এবং এগুলোকে গভীরভাবে বিশ্বাস করা শুরু করি।’

আইটি সেলে যোগ দেওয়ার পর নিয়মানুযায়ী অরবিন্দ গুপ্তর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা হয়। অরবিন্দ গুপ্ত তখন ছিলেন ন্যাশনাল ডিজিটাল অপারেশন সেন্টার (এনডিওসি)-এর প্রধান। এটি ছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনের জন্য ডিজিটাল প্রচারণা মিশন ২৭২+ এর সোশ্যাল মিডিয়া সেলের আনুষ্ঠানিক নাম। ‘আমার ডাক পড়ে বিশাল একটা রুমে যেখানে বহুসংখ্যক ৫৬ ইঞ্চি টেলিভিশন স্ক্রিনের সামনে গুপ্তকে বেশ সাধারণ একজন বলে মনে হচ্ছিল। এই টিভি স্ক্রিনগুলোয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রিয়েল টাইম ডেটা ও ট্রেন্ডগুলো দেখা যাচ্ছিল।’

গুপ্তর সঙ্গে তার প্রথম কথা বলার স্মৃতি স্মরণ করতেই তার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। ‘তাকে ব্যাপক চিন্তানিবিষ্ট মনে হলো। আমাকে বলা হলো মূল লক্ষ্য হবে–ইউপিএ সরকার ও গান্ধী পরিবারের ওপর আক্রমণ চালানো এবং তাদের দুর্নীতি উন্মোচন করা। তিনি জানান, তিনিসহ তার কয়েকজন সোশ্যাল মিডিয়া সহযোগী প্রতিরাতেই মোদিজির সঙ্গে টেলিকনফারেন্স করেন। মোদিজি বেশি ব্যস্ত থাকলে এই টেলিকনফারেন্স প্রয়োজনে এমনকি মধ্যরাতের পরও অনুষ্ঠিত হয়। মোদিজি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কেন্দ্র করে পরিচালিত সব কর্মকাণ্ডের ওপর ব্যক্তিগতভাবে নজর রাখছেন। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের স্বেচ্ছাসেবকরা সবাই জানতাম, অরবিন্দ গুপ্তর সঙ্গে প্রতিদিন নরেন্দ্র মোদির কথা হয়। ফলে তার ক্ষমতা ছিল অনেক বেশি।’

২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় গুপ্ত সবচেয়ে বড় সোশ্যাল মিডিয়া অপারেশন পরিচালনা করেন। শুধু দিল্লিতেই তার ২০০ জনের একটা দল ছিল; এর মধ্যে কিছু ছিল অর্থের বিনিময়ে নিয়োগকৃত আর কিছু ছিল স্বেচ্ছাসেবক।যাদের ভ্রমণ, খাওয়া ও জীবনযাপনের পুরো খরচ বহন করত বিজেপি। খোসলার মতো কেউ কেউ বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতেন এবং নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ থেকে তারা প্রায় পুরোপুরি ছুটি নিয়েছিলেন। আর অর্থের বিনিময়ে কাজ করা ‘টেকি’ ব্যক্তিরা ৯টা থেকে ৫টা রুটিন মেনে অফিসে আসত। এছাড়া গুরুগ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে বিজেপির জন্য স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহের কাজও চলছিল। এই কাজটা আরও বড় আকারে প্রায় ২ হাজার মানুষকে নিয়ে সংগঠিত হচ্ছিল গুজরাটের আহমদাবাদ ও ভাদোদরা অঞ্চলে।

মোদিজির নামে সামান্যতম সমালোচনাও যদি কোথাও করা হতো, গুপ্তর ডিজিটাল ট্র্যাকিং টুলে তা ধরা পড়ত ও হায়েনার মতো একপাল ট্রল সমালোচনাকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত।’

এই স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মীদের হাতে আক্রমণের লক্ষ্য হিসেবে মূলধারার সাংবাদিকদের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছিল। এই তালিকায় এনডিটিভির বারখা দত্ত ও সিএনএন-আইবিএনে কাজ করা রাজদ্বীপ সারদেশাইয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। ‘মোদিজির নামে সামান্যতম সমালোচনাও যদি কোথাও করা হতো, গুপ্তর ডিজিটাল ট্র্যাকিং টুলে তা ধরা পড়ত ও হায়েনার মতো একপাল ট্রল সমালোচনাকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত।’

প্রচণ্ড উৎসাহের চোটে মিশন ২৭২+ সফল করার জন্য খোসলা তার সব কাজ বাদ দিয়ে দিলেন। তিনি হাসতে হাসতে বলেন,‘আপনি শুনলে অবাক হবেন, আমি টানা একবছর কোনো ডিনারের আমন্ত্রণে যোগ দিইনি।’ তার প্রধান যোগাযোগ ছিল বিজেপির দুজন সদস্য–বিশাল গুপ্ত ও নিতিন কাশ্যপের সঙ্গে, যারা গুপ্তর অধীন কাজ করেন। তাদের দায়িত্বে ছিল হোয়াটসঅ্যাপ ম্যানেজ করা। খোসলার মতো স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হতো কী কী বিষয় নিয়ে টুইট করতে হবে এবং কী কী ট্রেন্ড তৈরি করতে হবে। এর কোনো শেষ ছিল না। খোসলা বলেন,‘এগুলো হুবহু টুইট করা না হলে গুপ্ত রাগারাগি করতেন।’

তাদের দায়িত্বে ছিল হোয়াটসঅ্যাপ ম্যানেজ করা। খোসলার মতো স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হতো কী কী বিষয় নিয়ে টুইট করতে হবে এবং কী কী ট্রেন্ড তৈরি করতে হবে। এর কোনো শেষ ছিল না। খোসলা বলেন,‘এগুলো হুবহু টুইট করা না হলে গুপ্ত রাগারাগি করতেন।’

সব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কাছে এনডিওসির সাধারণ নির্দেশ ছিল একটাই–গান্ধীদের ট্রল করো ও বিদ্রুপ করো। ‘গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে যত ধরনের প্রপাগান্ডা ও কার্টুন তৈরি করা হয়েছে, তার সব কটিরই জন্ম এনডিওসিতে এবং স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ ছিল এগুলোকে ট্রেন্ডে পরিণত করা ও সোশ্যাল মিডিয়াকে এসব দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া। এমনকি রবার্ট ভদ্র ও রাহুল গান্ধীকে নিয়ে কৌতুকগুলোরও জন্ম এই এনডিসিতে, যেগুলো দিয়ে সব ভাসিয়ে দেওয়ার হুকুম ছিল আমাদের ওপর।’ এসব কাজ ছাড়াও খোসলার মতো স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রার্থীর ব্যক্তিগত নির্বাচনি প্রচারণার জন্যও কাজ করতে হতো।

বিজেপির প্রধান কার্যালয়ে ৫০ জনের একটা কেন্দ্রীয় সেল সরাসরি অরবিন্দ গুপ্তর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করত। তাদের কাজ ছিল খোসলার মতো স্বেচ্ছাসেবকদের পরিচালনা করা। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সংখ্যা ছিল বিশ বা একুশটি, যেগুলো আবার পেশা ও নারীদের বিভিন্ন গ্রুপ অনুযায়ী বিভক্ত ছিল। অনেক সময় বিশেষ বিশেষ ঘটনা উপলক্ষ্যে অরবিন্দ গুপ্ত সবাইকে একযোগে মেসেজ পাঠাতেন। ‘চূড়ান্ত কর্তৃত্ব ছিল গুপ্তর হাতে। তিনি যখন হোয়াটসঅ্যাপে কোনো বার্তা পাঠাতেন, তখন বিনা প্রশ্নে সেটা বাস্তবায়ন করতে হতো। তাকে চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ, তার কর্তৃত্ব সরাসরি মোদি অনুমোদিত।’

খোসলা প্রথম একটা ধাক্কা খান যখন স্মৃতি ইরানি তাকে তার দলসহ অপদস্থ করেন। খোসলা তার গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে গুরুগ্রামের একটি পার্কে একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিলেন। ইরানি সময় মতোই হাজির হন; কিন্তু দর্শকের উপস্থিতি কম দেখে বিশাল মিডিয়াবাহিনীর সামনেই সংগঠকদের গালমন্দ করেন। এরপর শুরু করেন উপস্থিত মিডিয়াকে গালাগাল করা। খোসলা বলেন, ‘আমি একটা ধাক্কা খেলাম। তখন বেশ বৃষ্টি পড়ছিল এবং লোকজনের উপস্থিতি তেমন ছিল না। কিন্তু তিনি অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ও মিডিয়াকে বলেন, অনুষ্ঠানটির খবর যেন প্রচার করা না হয়। আমাদের বলেন, এত ছোট অনুষ্ঠান আয়োজন করে আমরা তাকে অপমান করেছি। পরবর্তী সময়ে বিজেপির মিশন ২৭২+ এর পক্ষ থেকে আমাকে আমেথিতে তার নির্বাচনি প্রচারণার জন্য কাজ করার কথা বলা হলে আমি তা প্রত্যাখ্যান করে চন্ডিগড়ে কিরণ খেরের জন্য কাজ করি।’

কিন্তু এসব ছোটখাটো ঘটনায় নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নের মডেল নিয়ে খোসলার উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েনি। তিনি বিশ্বাস করতেন,‘ভারতের রূপান্তর অর্থাৎ একটা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের পতন ঘটিয়ে অবশেষে হিন্দুদের তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়ার কাজে’ তার একটা দায়িত্ব রয়েছে।

নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি জয়লাভ করলেন। আর সোশ্যাল মিডিয়া সেল তারপরও যুদ্ধংদেহি ভঙ্গিতে কাজ চালিয়ে যেতে থাকল। খোসলার বক্তব্য অনুসারে, বিজয়ের পর সেলের ‘আকার আরও বড় হতে থাকল। কারণ, এখন আগের চেয়ে আরও বেশি অর্থের জোগান রয়েছে, সেই সঙ্গে শত্রুর সংখ্যাও বেড়েছে। আক্রমণের তালিকায় প্রতিদিনই কোনো-না-কোনো নতুন শত্রু যোগ হচ্ছে। উত্তর প্রদেশের নির্বাচন [২০১৭ সাল] উপলক্ষ্যে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেলের আরও বিস্তার ঘটছে।’

প্রচারণার জন্য খোসলার কাছে যে গাদা গাদা নোংরা কথা পাঠানো হতো, সেগুলো নিয়ে একসময় তার খারাপ লাগা শুরু হলো। ‘সংখ্যালঘু, গান্ধী পরিবার, সাংবাদিক, উদারনৈতিক ও মোদিবিরোধী বলে যাদেরই মনে করা হতো, তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর যেন কোনো শেষ নেই।’ মাসের পর মাস চলে যায়; কিন্তু যে উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে তিনি মোদিকে ভোট দিয়েছেন, তার কোনো খবর নেই; বরং সবকিছু বাদ দিয়ে ঘৃণার সংস্কৃতি বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। তিনি তো এসব করার জন্য বিজেপিতে যোগ দেননি।

প্রচারণার জন্য খোসলার কাছে যে গাদা গাদা নোংরা কথা পাঠানো হতো, সেগুলো নিয়ে একসময় তার খারাপ লাগা শুরু হলো। ‘সংখ্যালঘু, গান্ধী পরিবার, সাংবাদিক, উদারনৈতিক ও মোদিবিরোধী বলে যাদেরই মনে করা হতো, তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর যেন কোনো শেষ নেই।’ মাসের পর মাস চলে যায়; কিন্তু যে উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে তিনি মোদিকে ভোট দিয়েছেন, তার কোনো খবর নেই; বরং সবকিছু বাদ দিয়ে ঘৃণার সংস্কৃতি বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। তিনি তো এসব করার জন্য বিজেপিতে যোগ দেননি।

পাঞ্জাবে মাদকাসক্তির মহামারি নিয়ে খোসলা ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে কমপক্ষে ৫ হাজার টুইট করেন। যেগুলোয় তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদিকেও ট্যাগ করেছিলেন। মাদকাসক্তির কারণে তিনি তার এক বন্ধুকে হারিয়েছেন। কিন্তু মোদির কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ‘যে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে আমি ভেবেছিলাম, তিনি দুর্নীতিকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দেবেন, সেই প্রধানমন্ত্রী পাঞ্জাব রাজ্যের ক্ষমতাসীন আকালি দলের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলেন না, যেহেতু বিজেপি ও আকালি দল একই জোটে আছে। আমি ভীষণ দুঃখ পেয়েছিলাম। এই একই প্রধানমন্ত্রী মানুষকে গালিগালাজ করা ইন্টারনেট ট্রলের কথায় সাড়া দেন, এমনকি তাদের জন্মদিনের শুভেচ্ছাও পাঠান। আমি আসলেই তার ওপর ভরসা করে তাকে ক্ষমতায় দেখতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা শ্রম দিয়েছি অথচ তিনি আমার ন্যায্য দাবিগুলো পাত্তা দিলেন না। বিষয়টা খুবই যন্ত্রণার।’

প্রতিদিনই কোনো-না-কোনো নতুন মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে যৌন সুড়সুড়িমূলক নোংরা গালাগাল, ধর্ষণ ও মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হতো। এসব কাজ কারবার দেখে একজন নারী হিসেবে আমার অসুস্থ লাগতে থাকে।

এসব ট্রল ও গালাগালি তাকে এখন বিপর্যস্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত করতে শুরু করল। ‘আমার পক্ষে আর গুপ্তর নির্দেশ মেনে চলা সম্ভব ছিল না, যখন আমি দেখছি আমার অল্প বয়সের আদর্শ বারখা দত্তের মতো নারী সাংবাদিককে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ছোটবেলায় আমি তার চুলের স্টাইল পর্যন্ত অনুকরণ করেছি। আর এখন আমাদের তার বিরুদ্ধে নোংরা ভাষা ব্যবহার করে আক্রমণ করতে হবে। প্রতিদিনই কোনো-না-কোনো নতুন মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে যৌন সুড়সুড়িমূলক নোংরা গালাগাল, ধর্ষণ ও মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হতো। এসব কাজ কারবার দেখে একজন নারী হিসেবে আমার অসুস্থ লাগতে থাকে। আমি তো এসবের জন্য যোগ দিইনি।’

ছবি: নরেন্দ্র মোদি ফলো করেন এমন একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে সাংবাদিক বারখা দত্তকে গালিগালাজ করা টুইট

বারখাকে গালিগালাজ করে টুইট করতে অস্বীকৃতি জানান খোসলা। কিন্তু অনেক সময় তার কিছু করার থাকত না। গুপ্তর নির্দেশে খোসলা রাজদ্বীপ সারদেশাইকে তার ‘৫০ কোটি টাকা দামের বাংলো’ নিয়ে ট্রল করেন, ফলে রাজদ্বীপ তাকে ব্লক করে দেন। এছাড়া তিনি রবার্ট ভদ্রকে ডিএলএফ চুক্তি নিয়ে ও রাহুল গান্ধীকে তার ছুটি নেওয়া নিয়ে ট্রল করেন। ‘গুপ্তর কাছ থেকে [নির্দেশ] এলে আপনাকে তা পালন করতেই হবে। সোশ্যাল মিডিয়া সেলের বেশিরভাগ স্বেচ্ছাসেবক একই ধরনের টুইট করে। আমি অবশ্য কাউকে গালিগালাজ, ধর্ষণ বা হত্যার হুমকি দিয়ে টুইট করিনি। আমার আফসোস হলো, আমি তাদের মিথ্যা কথাগুলো বিশ্বাস করেছিলাম। আমি এসবের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। আমি পরবর্তীকালে সারদেশাই যখন টুইট ত্যাগ করেন, তখন তাকে ফিরে আসার আহ্বান জানাই। তিনি অবশ্য আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করেছিলেন এবং আমাকে আনব্লকও করেছিলেন।’

খোসলা এমনকি আরএসএস-এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক প্রধান উদ্যোক্তা রাম মাধবকেও তার উদ্বেগগুলোর কথা জানিয়েছিলেন। খোসলা বলেন,‘গুপ্তর চেয়ে তাকে আমার কম ভয়ংকর মনে হতো।’ তিনি জানান,‘আরএসএস-এর সদস্যদের মধ্যে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধার ব্যাপক অভাবের বিষয়টি নিয়ে আমি সরাসরি তাকে জিজ্ঞেস করি। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করেন। রাম মাধবজি বেশ ধৈর্য নিয়ে আমার কথাগুলো শোনার পর বলেন,‘সাধাভী, আপনার নামটি আমাদের দলের জন্য জুতসই, বিজেপির সঙ্গে নামটি বেশ মানানসই। ভালো দিকগুলোর দিকে মনোযোগ দিন। এসব বিষয় উপেক্ষা করুন।’

এদিকে তার পারিবারিক জীবনেও এসব কাজের প্রভাব পড়তে শুরু করে। খোসলার পিতা, যিনি ছিলেন পাঞ্জাব সরকারের একজন প্রথম শ্রেণির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং কংগ্রেসের কট্টর সমর্থক, তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেন। ‘যে দুই বছর আমি বিজেপিতে ছিলাম, তিনি আমার সঙ্গে একটি কথাও বলেননি। এতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। এমনকি আমার মা-ও এই বলে আমাকে ব্যঙ্গ করতেন যে,‘তোমার আচ্ছে দিন কোথায়, বেটা? ওরা তো তোমাকে বোকা বানিয়েছে।’

দেখা গেল খোসলা সারা দিনের কথাবার্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে খাবার টেবিলে বসে মুসলিমবিদ্বেষী কথা বলে বসলেন। খোসলার স্বামী একদিন তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘তোমার কি মনে আছে, তোমার ছেলের আয়া ছিলেন একজন পাকিস্তানি? ছেলেটাকে কত যত্ন করেছেন তিনি। তুমি আজকাল যেরকম ধর্মান্ধ হয়েছ, আজ হলে কি তুমি তাকে নিয়োগ দিতে?’ তার স্বামীর সাধারণ এই প্রশ্নটা যে ‘মগজধোলাই করা বুদ্বুদের মধ্যে আমি এতদিন ছিলাম’, সেটা ফাটিয়ে দেয়। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আমার জীবনের চেয়ে বেশি প্রিয়। তার প্রথম আয়া ছিলেন একজন পাকিস্তানি আর আমি আজ একজন ধর্মান্ধ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছি।’এ ঘটনাটা তার মধ্যে একটা পরিবর্তনের সূচনা করে। আর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার দুই বছরের মাথায় ২০১৫ সালের শেষে এসে তার মোহ পুরোপুরি কেটে যায়।

যে ঘটনার মধ্যদিয়ে বিজেপির সঙ্গে তার সম্পর্ক পুরোপুরি ভেঙে যায় তা হলো, আমির ও শাহরুখ বলিউডের এই দুই খানের বিরুদ্ধে বিজেপির আক্রমণ। ২০১৫ সালের নভেম্বরে এনডিটিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ খান ভারতে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা নিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানান। তার মন্তব্য নিয়ে অনলাইনে বিতর্কের ঝড় ওঠে এবং ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পেতে যাওয়া তার ছবি ‘দিলওয়ালে’ বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে অনলাইন প্রচারণা শুরু করা হয়। এই মন্তব্যের জন্য তাকে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।

তিন সপ্তাহ পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমির খান ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার কারণে তার ‘নিরাপত্তাহীনতার বোধ’-এর কথা বলেন এবং জানান যে তার স্ত্রী কিরণ রাও ভারতে তাদের সন্তানকে বড় করার ব্যাপারে ভীত।

আমির খানকে যত জঘন্যভাবে সম্ভব আক্রমণ করা হয় এবং তাকে বলা হয় নিরাপত্তার জন্য তিনি যেন তার স্ত্রীসহ সন্ত্রাসীদল ইসলামিক স্টেটে যোগদান করেন। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয় তাকে তাদের ‘ইনক্রিডিবল ইন্ডিয়া’ নামক প্রচারণার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি প্রদান করে। অরবিন্দ গুপ্ত দলের সব সোশ্যাল মিডিয়া স্বেচ্ছাসেবকের কাছে মেসেজ পাঠান আমির খানকে ভারতীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান স্ন্যাপডিলের বিজ্ঞাপন থেকে বাদ দেওয়ার পিটিশনে যেন সবাই স্বাক্ষর করে।

আমির খানকে যত জঘন্যভাবে সম্ভব আক্রমণ করা হয় এবং তাকে বলা হয় নিরাপত্তার জন্য তিনি যেন তার স্ত্রীসহ সন্ত্রাসীদল ইসলামিক স্টেটে যোগদান করেন। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয় তাকে তাদের ‘ইনক্রিডিবল ইন্ডিয়া’ নামক প্রচারণার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি প্রদান করে। অরবিন্দ গুপ্ত দলের সব সোশ্যাল মিডিয়া স্বেচ্ছাসেবকের কাছে মেসেজ পাঠান আমির খানকে ভারতীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান স্ন্যাপডিলের বিজ্ঞাপন থেকে বাদ দেওয়ার পিটিশনে যেন সবাই স্বাক্ষর করে। বিজেপির সমর্থকরা গুগল প্লে ও আইওএস অ্যাপ স্টোরে স্ন্যাপডিলের অ্যাপের রেটিং কমিয়ে দেয় এবং স্ন্যাপডিল একপর্যায়ে আমির খানের সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল করে নিম্নোক্ত বক্তব্যটি প্রদান করে:

‘আমির খান ব্যক্তিগতভাবে যে কথাগুলো বলেছেন, তার সঙ্গে স্ন্যাপডিলের কোনো সম্পর্ক নেই। স্ন্যাপডিল একটি গর্বিত ভারতীয় কোম্পানি। কোম্পনিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন একদল উদ্যমী ভারতীয় তরুণ, যাদের লক্ষ্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারত গড়া। প্রতিটি দিন আমরা হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যাবসা ও লক্ষ-কোটি ভোক্তার সুবিধার জন্য কাজ করছি। দশলাখ সফল অনলাইন উদ্যোক্তা গড়ে তোলার যে মিশন আমাদের রয়েছে, তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করে যাব।’

ছবি: আমির খানের বিরুদ্ধে স্ন্যাপডিলের কাছে পিটিশনের জন্য খোসলার কাছে অরবিন্দের পাঠানো বার্তা

‘আমিরের বিরুদ্ধে প্রচারণার ঘটনাটি ছিল বিজেপির সঙ্গে আমার সম্পর্কের কফিনের শেষ পেরেক। যে দল ও প্রধানমন্ত্রীকে আমি প্রবল উৎসাহ নিয়ে সমর্থন করেছি, এ ঘটনার ফলে আমি বাধ্য হই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে। বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া টিম যে বিষাক্ত প্রচারণা শুরু করে, তা অসহিষ্ণুতা নিয়ে আমির খানের বক্তব্যের যথার্থতাই প্রমাণ করে।’

খোসলা মনে করেন, আমির খানের বিরুদ্ধে বিজেপির আক্রমণের ব্যাপার প্রধানমন্ত্রী মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর সমর্থন ছিল। তিনি বলেন,‘যেখানে তাদের অনুমোদন ছাড়া বিজেপি বা সরকার কোনো কিছুই করে না, সেখানে তাদের দুজনের অনুমোদন ছাড়া অরবিন্দ গুপ্তর পক্ষে আমির খানের মতো একজন অভিনেতার পেছনে বিজেপির পুরো সোশ্যাল মিডিয়াবাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রশ্নই আসে না।’

এ নিয়ে অরবিন্দ গুপ্ত প্রকাশ্যে কোনো কথা না-বললেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর এ বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন এবং অসাবধানতাবশত ২০১৬ সালের জুলাই মাসের এক বক্তৃতায় এই ঘটনার পেছনে বিজেপির ভূমিকা সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বই প্রকাশনা উপলক্ষ্যেএক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘জনগণ তার ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছে; একজন অভিনেতা ভুলবশত বলে ফেলেছিলেন যে, তার স্ত্রী দেশ ছেড়ে বিদেশ গিয়ে থাকতে চান। কথাটা বেশ উদ্ধত ছিল।’ তারপর তিনি যোগ করেন, ‘আমি জানি, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বেশ স্মার্ট। এ বিষয়ে গোটা একটা টিম কাজ করে। তারা লোকজনকে অর্ডার করে ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানায়। কোম্পানিটির বেশ উচিত শিক্ষা হয়েছে; তারা বিজ্ঞাপন নামিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।’

এই বক্তব্যে আমির খান বা স্ন্যাপডিলের নাম উল্লেখ না-করা হলেও এটা যে তাদের বিষয়েই বলা হয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয়না। এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় খোসলা টুইট করেন:

‘পারিকর আমির খানকে শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে যে কথাগুলো বলেছেন, ঠিকই বলেছেন। কারণ, আমি তখন বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়াপ্রধানের কাছ থেকে এই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পেয়েছিলাম।’

খোসলা এরপর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

তিনি বলেন, “আমি সবসময়ই শাহরুখকে দেখেছি ‘রাজ’ ও ‘রাহুল’ হিসেবে, সালমানকে ‘প্রেম’ ও আমিরকে মনে রেখেছি তার অভিনয়ের জন্য আর এখন হঠাৎ করে তাদের মুসলিম বানিয়ে আক্রমণ করতে হবে, ট্রল করতে হবে।” তিনি আরওবলেন, “শাহরুখ ও আমিরকে আক্রমণ করার ব্যাপারে অরবিন্দ গুপ্তর সিদ্ধান্ত ও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ নিয়ে আমার মধ্যে বিরক্তি তৈরি হয়। আমার পক্ষে এগুলো করা সম্ভব নয়। আমিরের ওপর আক্রমণের বিষয়টা সবাই জেনে যায়। কারণ, মনোহর পারিকর এই ঘটনাকে ‘আমাদের’ স্মার্ট দলের কাজ বলে নিশ্চিত করে কিন্তু এই আক্রমণের শুরু তো শাহরুখ খানকে দিয়ে এবং আক্রমণ এখনো চলছে, সর্বশেষ আমিরের ‘দাঙ্গাল’ [যা ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়ার কথা]-কে ট্রল করা হচ্ছে।”

পারিকরের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে খোসলা টুইট করে আরও লেখেন:

‘আমি একজন বিশ্বাসী মানুষ এবং আমার হিন্দুত্বে এই ধরনের ঘৃণার কোনো স্থান নেই। তারা যদি এভাবে চলতে থাকেন, তাহলে তারা হিন্দুত্বের ধ্বংস ডেকে আনবেন। এমনকি বিজয় লাভ করার পরও তারা বিভেদ ও ঘৃণা তৈরির চেষ্টাতেই জোর দিতে থাকেন। আমি বুঝতে পারিনা, কেন মুসলমানদের ভয়ংকর হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করতে হবে এবং ফটোশপের মাধ্যমে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ছবি প্রচার করতে হবে। আমার ছোট একটা ছেলে আছে। আমি চাইনা, সে এমন এক ভারতে বড় হোক, যা পাকিস্তানের প্রতিরূপ। তাকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি এবং আমি চাই, সে একজন ভালো মানুষ হিসেবে বড় হোক। ধর্মান্ধতার ভাইরাসে আক্রান্ত না হোক। আমি একজন মার্কিন নাগরিক। পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণ দেখে এই প্রথমবারের মতো আমি এত আতঙ্কিত হয়েছি যে, আমি হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাব।’

তিনি দল থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার স্বামী সবসময়ই রাজনীতি থেকে দূরে থেকেছেন, তার সিদ্ধান্তে তিনিও বেশ স্বস্তিবোধ করলেন। অবশেষে ২০১৫ সালের শেষে খোসলা বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেল ত্যাগ করলেন। তিনি বলেন, ‘বিজিপির সোশ্যাল মিডিয়া সেলের কাছ থেকে আসা এত জঘন্য সব হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ আমার মোবাইলে ছিল যে, এগুলো মুছে ফেলার পর আমি পরিচ্ছন্ন বোধ করেছি।’

একজন ট্রলের কথা

লেখক চেতন ভগত ২০১৫ সালের ১১ জুলাই টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক লেখায় মোদির ভক্তদের বর্ণনা করেছিলেন এভাবে: ‘বিশেষত পুরুষ’, যাদের ‘বিশেষ করে ইংরেজিতে যোগাযোগ করার ক্ষমতা দুর্বল’ ফলে ‘হিনম্মন্যতায় ভুগতে থাকে’। তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন, এরা ‘সাধারণত নারীদের সঙ্গে ভালো করে কথা বলতে জানে না’, তারা নারীদের কামনা করে কিন্তু কাছে যেতে পারে না, ফলে ‘যৌন হতাশাগ্রস্ত’। তারা ব্যাপকভাবে হিন্দুত্বের পক্ষের মানুষ হলেও আসলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও হিন্দুভাষী হিসেবে তাদের মধ্যে একধরনের লজ্জাবোধ কাজ করে।

লেখক চেতন ভগত ২০১৫ সালের ১১ জুলাই টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক লেখায় মোদির ভক্তদের বর্ণনা করেছিলেন এভাবে: ‘বিশেষত পুরুষ’, যাদের ‘বিশেষ করে ইংরেজিতে যোগাযোগ করার ক্ষমতা দুর্বল’ ফলে ‘হিনম্মন্যতায় ভুগতে থাকে’। তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন, এরা ‘সাধারণত নারীদের সঙ্গে ভালো করে কথা বলতে জানে না’, তারা নারীদের কামনা করে কিন্তু কাছে যেতে পারে না, ফলে ‘যৌন হতাশাগ্রস্ত’। তারা ব্যাপকভাবে হিন্দুত্বের পক্ষের মানুষ হলেও আসলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও হিন্দুভাষী হিসেবে তাদের মধ্যে একধরনের লজ্জাবোধ কাজ করে।

বিজেপির যেসব সোশ্যাল মিডিয়া ট্রলের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে, চেতন ভগতের দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে তাদের অনেক কিছুই মিলে গেছে। যে কথাটা চেতন ভগত উল্লেখ করেননি তা হলো, মুসলিমদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা।

তাদের কারিগরি দক্ষতা বেশ বিপজ্জনক মাত্রায় ভালো; কিন্তু ইংরেজিতে যোগাযোগের দক্ষতা খুবই কম। তাছাড়া মুসলিমদের সম্পর্কে তারা কী ভাবে এবং দেশের সর্বনাশ করার যে পরিকল্পনা মুসলিমদের রয়েছে, সে বিষয়ে যে তারা দেশের মানুষকে বোঝাতে পারছেনা–এই বিষয়টা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রবল হতাশা লক্ষ করা গেছে।

এখন যে ট্রলের কথা বলব তার বয়স তিরিশের কাছাকাছি। ধরা যাক তিনি ‘ট্রল ১’। আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি কফি অর্ডার করলেন। তাকে বেশ নার্ভাস মনে হচ্ছিল। নিজের সম্পর্কে যখন তাকে বলতে বললাম, তখন তার উদ্বেগ কিছুটা কমল বলে মনে হলো। তিনি টেবিলে চিনির প্যাকেট নিয়ে নাড়াচাড়াও বন্ধ করলেন। তিনি বেশ গর্বের সঙ্গে জানালেন, তিনি উত্তর প্রদেশের প্রতাপ গড়ের ঠাকুর পরিবারের সদস্য। তিনি ছিলেন তার স্কুলের সেরা ছাত্রদের একজন। এরপর তিনি প্রকৌশল শিক্ষার জন্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এরপর তিনি মুখ অন্ধকার করে বলেন, ‘আমি ৯০তম হয়েছিলাম; কিন্তু এই চামারের দল ৬০তম হওয়ার পরও সুযোগ পেয়ে গেল। ম্যাডাম, আপনিই বলেন, এটা কি ন্যায্য? সবকিছুই তো এসব লোক ও বদমাশ মুসলমানদের জন্য।’

উত্তর প্রদেশের অর্থনীতির অবস্থা ও কর্মসংস্থানহীনতা নিয়ে তাকে সত্যিকার অর্থেই বেশ বিচলিত মনে হলো। দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের বয়স পঁচিশের নিচে এবং ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫-এর নিচে। তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করেন, মোদি এই বিপুলসংখ্যক তরুণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।

আমি তাকে মনে করিয়ে দিলাম, মুসলিমদের জন্য কোনো কোটা নেই। তিনি কথাটা বেশি পাত্তা দিলেন না, ‘আরে এর কারণ হলো, এরা তো লেখাপড়ার বদলে সন্তান জন্ম দিতেই বেশি ব্যস্ত থাকে।’ বিজেপির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘আমার পরিবার সবসময়ই বিজেপির সমর্থক ছিল। আমি মানভ রাচনা ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিতে বাধ্য হলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা বেশ ব্যয়বহুল হলেও একমাত্র এখানেই আমার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ ছিল। সেখানে আমি ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দিই এবং মোদিজির পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিই। ম্যাডাম, দয়া করে বোঝার চেষ্টা করুন, তিনিই একমাত্র নেতা, যিনি ভারতকে পাল্টে দিতে পারবেন। যে সামাজিক ব্যবস্থা আমাদের পিছু টেনে রেখেছে, সেটা বদলাতে পারবেন। আপনারা মিডিয়ার মানুষ কেউই ভারতের প্রকৃত ইতিহাস কী, আমাদের সংস্কার কী–তা জানেন না। আপনারা খালি চান মুসলমানদের সাহায্য করতে।’

যতজন ট্রলের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেই দুটো বিষয়ে একেবারে নিশ্চিত–মুসলমানরা খুবই হিংস্র আর তাদের এই হিংস্রতার কারণ হলো তারা অনিরামিষভোজী। আপনি যদি যুক্তি ও তথ্য দিয়ে দেখান, দাঙ্গায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মুসলমানরা, তারা আপনার কথা শুনতে চাইবে না।

যতজন ট্রলের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেই দুটো বিষয়ে একেবারে নিশ্চিত–মুসলমানরা খুবই হিংস্র আর তাদের এই হিংস্রতার কারণ হলো তারা অনিরামিষভোজী। আপনি যদি যুক্তি ও তথ্য দিয়ে দেখান, দাঙ্গায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মুসলমানরা, তারা আপনার কথা শুনতে চাইবে না।

ট্রল ১ ক্রমাগত মাথা নাড়াতে থাকলেন। আমার চোখের দিকে তাকালেন না। ভালোভাবে আমার কথা শুনলেন না। আমার যুক্তিগুলো তার মনঃপূত হলো না। তারপর তিনি মুখ তুলে বলেন, ‘আসলে আপনারা মুসলমানদেরও সাহায্য করতে চান না, আপনারা শুধু চান যে কোনো অজুহাতে মোদিজির ওপর আক্রমণ করতে।’ এই বই নিয়ে কাজ করার পুরোটা সময় আমি এই প্যারাডক্সের মুখোমুখি হয়েছি। ভক্তদের কাছে মোদি হলেন একজন এভেঞ্জার বা প্রতিশোধ গ্রহণকারী, যিনি তার ভক্তদের বিপক্ষে যারা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভুল পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাদের শায়েস্তা করবেন; অন্যদিকে সেই মোদিকেই তারা আবার ‘সিক্যুলার’ইস্টাবলিশমেন্ট (ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ব্যঙ্গ করে বিজেপিপন্থিরা সেক্যুলারের বদলে সিক্যুলার অর্থাৎ অসুস্থ বলে আখ্যায়িত করে –অনুবাদক)-এর হাতে সদা নিগৃহীত বলে মনে করেন।

ট্রল ১ এরপর আসল কথায় এলেন। বলেন, প্রতিদিন সকালে বিশেষ হ্যাশট্যাগ তৈরি করে তারা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন, সোশ্যাল মিডিয়ার কোন বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। যেসব হাই প্রোফাইল সাংবাদিককে তারা মোদি বিরোধী হিসেবে মনে করেন, তাদের শায়েস্তা করার বিষয়ে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া হয়।

ট্রল ১ এরপর কিছুটা উশখুশ করে বেশ করে শব্দ তুলে নিজের পানীয় গলায় ঢেলে দিয়ে বলেন, ‘যেহেতু আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছে, তাই আপনাকে এখন থেকে বেশি গালিগালাজ করব না। আপনাকে আমি টিভিতে দেখেছি। আপনি অবশ্য খুব বেশি পক্ষপাতদুষ্ট নন।’ তারপর যেন বিশাল একটা ছাড় দিচ্ছেন এভাবে বলেন, ‘আপনাকে প্রস্টিটিউট বা রান্ডি বলব না, শুধু প্রেস্টিটিউট বলব।’

নারীদের, বিশেষ করে নারী সাংবাদিকদের আক্রমণ করার বেলায় কেন ধর্ষণের হুমকি থেকে শুরু করে যৌনকর্মের বর্ণনা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়, সে বিষয়ে জানার বেশ আগ্রহ ছিল আমার। কিন্তু ট্রল ব্যক্তিটি কেমন অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন। বোঝাই যাচ্ছে, কিবোর্ডযোদ্ধা হিসেবে গালিগালাজ করা যত সহজ, ট্রলের শিকার নারীর সামনা সামনি প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া ততটা সহজ নয়। ‘দেখেন, এটাই সবচেয়ে সহজ উপায়। কারণ, সাধারণ মানুষ তো আর জানে না, এটা সংগঠিত আক্রমণ। ফলে মানুষ তীব্র আঘাত পায়। সাধারণত এধরনের যৌনতাকেন্দ্রিক আক্রমণ করলে সাংবাদিকরা আমাদের অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেন। কিন্তু এটাও একটা স্কোর। আপনার পালিয়ে যাওয়া মানে আমরা আপনাকে পরিষ্কার আঘাত করতে পেরেছি। আমি কিন্তু ধর্ষণের হুমকি দেওয়া বা এরকম কিছু করিনা। তবে আপনারা মিডিয়ার লোকজন কিন্তু প্রেম ও ফ্রি সেক্সের মতো অনেক খারাপ কাজ করেন।’

যৌনতাকেন্দ্রিক আক্রমণ করলে সাংবাদিকরা আমাদের অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেন। কিন্তু এটাও একটা স্কোর। আপনার পালিয়ে যাওয়া মানে আমরা আপনাকে পরিষ্কার আঘাত করতে পেরেছি। আমি কিন্তু ধর্ষণের হুমকি দেওয়া বা এরকম কিছু করিনা। তবে আপনারা মিডিয়ার লোকজন কিন্তু প্রেম ও ফ্রি সেক্সের মতো অনেক খারাপ কাজ করেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা মিডিয়ার লোকজন পাকিস্তানের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেন। ওই বারখা দত্ত কিন্তু একজন আইএসআই এজেন্ট, তার স্বামী একজন পাকিস্তানি।’

আসলে কোনো পাকিস্তানি ব্যক্তির সঙ্গে বারখা দত্তের বিয়ে হয়নি এবং তিনি বেশ সম্মানিত সাংবাদিক। জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কীভাবে এসব‘সত্য’ জানেন। জবাবে তিনি হাসেন, মনে হলো স্কোর করতে পেরে গর্বিত, ‘সোশ্যাল মিডিয়া সেলের সব সদস্যকে আক্রমণের লক্ষ্যে থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়। আপনাদের বিতর্কিত টুইটগুলোর স্ক্রিনশটও আমাদের কাছে আছে, যেগুলো ব্যবহার করে আমরা আপনাদের আক্রমণ করে থাকি। অনেক সাংবাদিক আছেন, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত; যেমন, সাগরিকা ঘোষ, যিনি গোপনে একজন খ্রিষ্টান আর তার স্বামী আম আদমি দলের সঙ্গে যুক্ত। স্বামী রাজদ্বীপ সারদেশাই তো ইউপিএ সরকারের সময় রাদিয়ার দালাল হিসেবে কাজ করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন।’ ইউপিএ সরকারের আমলে টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত করপোরেট লবিস্ট নিরা রাদিয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে এইকথাগুলো বলা হয়।

বেশ জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ঠিক জানিনা, তাদের বাংলোটার মূল্য কত; কিন্তু আমি সবসময়ই বলি, এর মূল্য দেড়শ কোটি রুপি।’ তারপর যোগ করেন, ‘অবশ্য বেশি চাপাবাজি করা ঠিক নয়। কারণ, তাতে লোক আপনাকে বিশ্বাস করবে না।’

অর্থবিষযক কথা বলার ক্ষেত্রে তিনি বেশ সাবধানী। এই যে ট্রল করতে করতে তার দিনের বেশিরভাগ সময় চলে যায়, তার বিনিময়ে বিজেপি কি তাকে অর্থ দেয়? আরেকটা মিষ্টান্ন অর্ডার দিয়ে তিনি বলেন, ‘আরে স্বাতীজি, আমরা হলাম আসল ভক্ত। কাজ করি আদর্শের জন্য।’ কিন্তু তার চলে কী করে? তিনি চারপাশে তাকান, তারপর নিচু কণ্ঠে বলেন,‘দেখেন, আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মানুষ; কিন্তু শুনেছি, অনেকেই আছেন, যারা টুইটপ্রতি টাকা নেন। এমনকি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়াকেন্দ্রিক প্রচারণার কাজ বাগানোর জন্য কোম্পানিও খুলে বসেন।’

থাইল্যান্ড সংযোগ

আম আদমি পার্টির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিষয়ক প্রধান অঙ্কিত লাল বিজেপির অনুকরণে সোশ্যাল মিডিয়া সেল তৈরি করেছেন এবং তার কাজের অংশ হিসেবেই বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেল কী কী করে, সেদিকে লক্ষ রাখেন। তিনি বিভিন্ন অ্যানালিটিক টুল ব্যবহার করে করা তার একটি তদন্ত রিপোর্ট আমাকে দেখিয়েছেন। সিদ্ধার্থ ভাস্কর নামের যুক্তরাজ্যভিত্তিক একজন কারিগরি বিশেষজ্ঞ এই রিপোর্টের যথার্থতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সিদ্ধার্থ ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হিউ, একসেনচিউর ও পিডব্লিউসির মতো নামকরা কনসাল্টিং ও আইটি ফার্মে কাজ করেছেন।

অঙ্কিত লালের গবেষণা থেকে দেখা যায়, থাইল্যান্ডভিত্তিক অনেকগুলো টুইটার হ্যান্ডেল মোদিকে নিয়ে বিজেপির তৈরি বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে টুইট করে। থাইল্যান্ডভিত্তিক এই টুইট হ্যাল্ডেলগুলো মোদি ছাড়া আরও কাজে লাগিয়েছেন মনোহর পারিকর, স্মৃতি ইরানি ও রাজনাথ সিং। লাল মনে করেন, এই ঘটনার দুইধরনের ব্যাখ্যা হতে পারে। বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়া কন্ট্রোল সেন্টারগুলো নিজেদের অবস্থান ও পরিচয় গোপন করার জন্য ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে থাকতে পারে। ভিপিএন এমন একধরনের প্রাইভেট নেটওয়ার্ট, যা পাবলিক নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট জুড়ে গ্রাহকদের নিজেদের পরিচয় ও অবস্থান গোপন করে ভিন্ন একটি নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হিসেবে দেখাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভিপিএন ব্যবহার করে দিল্লির একজন নাগরিক এমন ভান করতে পারেন যে, তিনি আসলে লন্ডনের একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন। এভাবে তিনি এমন কিছু কনটেন্ট দেখতে পারবেন, যা হয়তো শুধু যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ব্যবহারকারীদের জন্যই বরাদ্দ। এধরনের ভিপিএন দেওয়ালের আড়ালে থেকে ফেক বা বানোয়াট টুইটার অ্যাকাউন্ট বা হ্যান্ডেল দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ জনপ্রিয় করে তোলার কাজ করা যায়। একাধিক হ্যান্ডেল কর্তৃক নির্দিষ্ট একটি মেসেজ করার ব্যাখ্যা এরকম একটা কিছু হতে পারে।

এ ঘটনার আরেকটা ব্যাখ্যা হতে পারে এরকম, বিজেপি তাদের অনলাইনের কাজকর্ম করার জন্য থাইল্যান্ডের কোনো এজেন্সিকে ভাড়া করেছে। এই অনলাইন কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেক হ্যান্ডেল ব্যবহার করে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের গালিগালাজ করা। মোদি যখন মেক্সিকো গিয়েছিলেন, তখন মোদির মেক্সিকো ভ্রমণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি টুইট করা স্থানের মধ্যে চতুর্থ স্থানে উঠে আসে ব্যাংকক থেকে ১০১ কিমি দূরে সেন্ট্রাল থাইল্যান্ডের ছোট্ট একটি শহর সুফান বুড়ি। লাল এটাকেই বলেন ‘মোদিজির থাইল্যান্ড সংযোগ’।

ছবি: মোদির মেক্সিকো ভ্রমণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি টুইট করা স্থানের মধ্যে চতুর্থ স্থানে উঠে আসা ব্যাংকক থেকে ১০১ কিমি দূরে সেন্ট্রাল থাইল্যান্ডের ছোট্ট একটি শহর সুফান বুড়ি

চল্লিশ রুপির টুইট

ইদানীং বিভিন্ন এজেন্সিকে টুইট করার জন্য এবং বিজেপিবিরোধীদের আক্রমণ করার জন্য অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। সম্প্রতি আমার হাতে এরকম একটি মেমো বা স্মারক এসেছে, যেখান থেকে দেখা যাচ্ছে, একটি এজেন্সিকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে টু্ইট করার জন্য প্রতি সাতটি টুইটের জন্য চল্লিশ রুপি করে প্রদান করা হচ্ছে। অবশ্য কারা এই অর্থ প্রদান করছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ছবি: মোদির মেক্সিকো ভ্রমণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি টুইট করা স্থানের মধ্যে চতুর্থ স্থানে উঠে আসা ব্যাংকক থেকে ১০১ কিমি দূরে সেন্ট্রাল থাইল্যান্ডের ছোট্ট একটি শহর সুফান বুড়ি

উপসংহার

ভারতের যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার তা হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ট্রলদের ব্যবহৃত ভাষা ও আচরণ একেবারে ক্ষমতার কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি টুইটারে বড় বড় অপরাধীকে অনুসরণ করেন, ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেল নামকরা অভিনেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে, কারসাজি করা ভিডিও ব্যবহার করে বিরোধী ছাত্রনেতাদের জেলে পোরা হয়েছে, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে এবং বিশিষ্ট মন্ত্রীরা জনসম্মুখে এসব আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করা শুরু করেছেন।

ভবিষ্যতে কী হবে? আমার আশঙ্কা হলো,আরও খারাপ কিছু ঘটবে। বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেলের পক্ষে আরও বড় দানবে পরিণত হওয়া খুবই সম্ভব। কারণ, এটি খাদ্যাভাস, ধর্ম, কাশ্মীর এবং আদিবাসীদের অধিকারের মতো বিষয়ে বিজেপির বিশ্ববীক্ষার সঙ্গে একমত পোষণ না-করার দায়ে নাগরিকদের ওপর আক্রমণ চালায়। সামনের এই বিপদ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার উপযুক্ত সময় এখনই।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •