যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন এবং ট্রাম্প-বাইডেন-কর্পোরেট দুষ্টচক্র

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন এবং ট্রাম্প-বাইডেন-কর্পোরেট দুষ্টচক্র

আলমগীর খান

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আর কয়মাস পরেই। করোনা ভাইরাসে এখন সবচাইতে বিপর্যস্ত বিশ্বের সবচাইতে পরাক্রমশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। আক্রান্ত সংখ্যা এবং মৃত্যু সংখ্যা দুটোতেই এই দেশ সবার শীর্ষে। এই দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা যে কতটা ভঙ্গুর তা এবারেই প্রমাণিত হয়েছে। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন তথা সবার জন্য চিকিৎসার দাবি নিয়ে বার্নি স্যান্ডার্স গতবারের মতো এবারেও নির্বাচনের প্রচারণায় নেমেছিলেন। জনগণ বিশেষত তরুণদের সমর্থন তাঁর প্রধান শক্তি হলেও কর্পোরেট শক্তির জানা অজানা প্রবল বাধার মুখে এই নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের মনোনয়ন লড়াই থেকে বার্নি স্যান্ডার্স নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এই প্রবন্ধে বার্নির কর্মসূচি এবং এই কর্পোরেট দুষ্টচক্রের ভূমিকা পর্যালোচনা করা হয়েছে।

২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘ফিল দ্য বার্ন’ দিয়ে শুরু হয়েছিল ভারমন্ট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারাভিযান। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, নির্বাচন তাঁর একমাত্র লক্ষ্য নয়, উপলক্ষস্বরূপ। তাঁর অভিযান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য। সম্পদশালী ১ শতাংশ, লুটেরা কর্পোরেট ও ওয়ালস্ট্রিটের বিরুদ্ধে ডাক দিয়েছিলেন তিনি। সেসময় রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নবাগত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঠিক বিপরীত রাজনীতি। দ্রুত সারা যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ, সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষের মন কেড়ে নেন তিনি।

তখন সাড়া জাগানো ‘একবিংশ শতাব্দীতে পুঁজি’ গ্রন্থের লেখক বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ থমাস পিকেটি লিখেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রাইমারিতে সমাজতান্ত্রিক প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্সের অবিশ্বাস‌্য সাফল্যকে আমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করব? ৫০ বছরের নিচের বয়সের ডেমোক্রেটিকপন্থী ভোটারদের মাঝে হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে ভারমন্ট সিনেটর এগিয়ে। নির্বাচনে ক্লিনটন এগিয়ে আছেন কেবল বয়স্ক ভোটারদের কল্যাণে। যেহেতু তিনি ক্লিনটন মেশিনের ও রক্ষণশীল গণমাধ্যমের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, স্যান্ডার্স নির্বাচনি দৌড়ে নাও জিততে পারেন।”১ 

ঠিকই। সেবার ডেমোক্রেটিক দল মনোয়ন দেয় হিলারি ক্লিনটনকে। আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দক্ষ ও মেধাবী রাজনীতিক বলে প্রচারিত হিলারির পা কাটে ট্রাম্প নামের এক পচা শামুকে। একঝটকায় দৃশ্যপট থেকে প্রায় হারিয়ে গেলেন তিনি। তাই বলে হারিয়ে যাননি বার্নি স্যান্ডার্স। মার্কিন রাজনীতিকে পাল্টে দেয়ার যে প্রতিজ্ঞা তিনি করেছিলেন, তাতে কেবল ভাটা পড়েনি তাই নয়, জোয়ার এসেছে। স্যান্ডার্স-ক্যাম্পের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রস্তাব, স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনা, শ্রমিকের অধিকার সংরক্ষণ, অভিবাসীদের সমমর্যাদা প্রদান, পররাষ্ট্র বিষয়ে সহাবস্থানের নীতি গ্রহণ ইত্যাদি এখন জনপ্রিয় বিষয়। ডেমোক্রেটিক দলের কোন প্রার্থীই এগুলোকে এড়াতে পারছেন না। সমগ্র ডেমোক্র্যাট রাজনীতিই নেতাদের অনিচ্ছা সত্ত্ব্ওে কিছুটা বাম দিকে ঘুরে গেছে। স্যান্ডার্সের এই প্রচারাভিযান মার্কিন সমাজতন্ত্রীদের স্বপ্ন ও দীর্ঘ শ্রমনিষ্ঠ কাজের ফসল। কাজটি অত্যন্ত কঠিন। এই সাফল্যের পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের ও বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অবস্থা ও গণমুখী অগ্রগতি।

নয়া-উদারনৈতিক দস্যুবৃত্তি থেকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক রূপান্তরের পরিকল্পনা

১৯৭০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উদারনৈতিক (লিবারেল) গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে প্রতিস্থাপন করে নয়া-উদারনীতিবাদের প্রতিষ্ঠা ঘটতে শুরু করে, যারা যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে ‘মুক্তবাজারে’র জয়গান প্রচার করে। এর মাধ্যমে শ্রমিকের অধিকার খর্ব করা হয় এবং পুঁজির লাগামহীন আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার কুফল আজকের বিশ্বব্যাপী এই চরম ধনবৈষম্য।

খ্যাতিমান লেখক নোয়াম চমস্কি ‘ট্রিবিউন’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ১৯৩০-এর দশকে ‘নয়া চুক্তি’ প্রবর্তন সম্ভব হয়েছিল চাপ প্রদানে সক্ষম একটি শক্তিশালী যুদ্ধংদেহি শ্রমিক আন্দোলন বিদ্যমান থাকার ফলে। বলেন, “রিগ্যান ও থ্যাচারের আমল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ও ব্রিটেনে একে বেশ হটিয়ে দেয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “মার্গারেট থ্যাচার ও রিগ্যানের আশপাশের লোকজন বোকা ছিলেন না। তাঁরা বুঝতেন যে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর নীতিসমূহ বাস্তবায়ন করতে গেলে শ্রমিক আন্দোলনকে ধ্বংস করা প্রয়োজন, আর তাঁরা সত্যি তাই করেছেন।”

২০১৬-তে পিকেটি গার্ডিয়ানের নিবন্ধে লিখেছিলেন, “১৯৮০-র নির্বাচনে রোনাল্ড রিগ্যানের বিজয়ের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক-আদর্শিক চক্রের বিজয় শুরু হয়েছিল, অনেক দিক থেকেই আমরা এখন তার সমাপ্তির সাক্ষী হচ্ছি।”

‘অল-আমেরিকান নেটিভিজম’ বইয়ের লেখক ও সাংবাদিক ড্যানিয়েল ডেনভির লিখেছেন, “মানুষকে খন্ড খন্ড করার মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তারের নয়া-উদারনীতিবাদকে মোকাবিলা করে স্যান্ডার্স যৌথ স্বাধীনতার দাবিকে মূর্ত করছেন।” বার্নির প্রেস সেক্রেটারি ব্রায়না জো গ্রে-কে উদ্ধৃত করে তিনি লিখেছেন, “যে কোন প্রার্থীর চেয়ে বেশি স্পষ্ট করে বার্নি এ কথা বলছেন যে আমেরিকানরা প্রতিদিন যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সেগুলো তাদের আলস্যের বা কঠোর শ্রমে অনিচ্ছার ফসল নয়। এর কারণ ব্যবস্থাটা এমনভাবে নির্মিত যে আমাদের কষ্টের বিনিময়ে ধনীরাই লাভবান হবে।”

যে কোন প্রার্থীর চেয়ে বেশি স্পষ্ট করে বার্নি এ কথা বলছেন যে আমেরিকানরা প্রতিদিন যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সেগুলো তাদের আলস্যের বা কঠোর শ্রমে অনিচ্ছার ফসল নয়। এর কারণ ব্যবস্থাটা এমনভাবে নির্মিত যে আমাদের কষ্টের বিনিময়ে ধনীরাই লাভবান হবে।

ফিল দ্য বার্ন

বহুল প্রচারিত ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের কর্মকর্তাগণ গত বছর ২ ডিসেম্বর বার্নি স্যান্ডার্সের সঙ্গে ৯০ মিনিটের এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বসেন। তাঁরা স্যান্ডার্সকে প্রথমেই প্রশ্ন করেন, প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে প্রবেশ করে তাঁর প্রধান বিবেচ্য বিষয়গুলো কী হবে। জবাবে তিনি বলেন, তাঁর প্রথম কাজ হবে “জনগণের কাছে প্রমাণ করা যে আমাদের সরকার শ্রমজীবী মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করে, কেবল ১ শতাংশ মানুষকে নয়।” তিনি ওভাল অফিসে বসে বসে দেশ চালাবেন না, জনগণকে সংগঠিত করবেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও তিনি থাকবেন সেই একই বার্নি, ৩০-৪০ বছর ধরে মানুষ তাঁকে যেমনটা জানে। বলেন, তিনি হবেন জনগণের ‘প্রধান সংগঠক’ (অরগানাইজার-ইন-চিফ), কমান্ডার-ইন-চিফ নয়।

বার্নির এরূপ জবাব ক্ষমতাবান পত্রিকাটির চৌকস সম্পাদকীয় বিভাগের মাথায় ঢোকে না। তারা ট্রাম্প ও বার্নিকে একই জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে মাপে এবং দুজনের মধ্যে কোন মৌলিক পার্থক্য খুঁজে পায় না। সে জন্য বার্নি যে তাঁর প্রেসিডেন্ট পদটিকে জনগণকে আরও সংগঠিত করার কাজে লাগাবেন, সে কথা বুঝতে তারা অপারগ। জ্যাকোবিনের মিগ্যান ডে লিখেছেন, “কোন না কোনভাবে অন্য সবাই যে বার্তা দেয় তা হল- আমাকে নির্বাচন করো, আমি সব সমাধান করে দেব। একমাত্র বার্নি সরলভাবে বলছেন যে তিনি নির্ভর করবেন রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর।”

মিগ্যান ডের মতে অল্প কিছু কষ্টার্জিত ব্যতিক্রম বাদে বর্তমান মার্কিন সরকার ঠিক তাই, মার্ক্স-এঙ্গেলস যাকে বলেছেন ‘সমগ্র বুর্জোয়া শ্রেণির দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখভাল করার একটা কমিটি’। সেখানে ‘বার্নি স্যান্ডার্সের উদ্দেশ্য সামাজিক শক্তিকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রশক্তিকে বাধ্য করা অর্থনৈতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে। জনগণকে সংগঠিত করা সেই লক্ষ্যে।’

বার্নি স্যান্ডার্সকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হত মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহের একটি। আর তা সম্ভব না হলেও বার্নি আজ একটি আন্দোলনের নাম- যার মূলকথা সবুজ নয়া চুক্তি, সবার জন্য স্বাস্থ্য, শ্রমিকের অধিকার, সবার জন্য সমান সুযোগ ও বিশ্বরাজনীতির দিক পরিবর্তন। এ আন্দোলন চলবে, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বা না হন। বার্নির স্লোগান-‘আমি না, আমরা’ ছড়িয়ে যাবে অন্যত্র এবং জারি থাকবে বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রক্ষমতা গণমানুষের হাতে সমর্পিত না হওয়া পর্যন্ত।

বার্নি স্যান্ডার্সকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হত মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহের একটি। আর তা সম্ভব না হলেও বার্নি আজ একটি আন্দোলনের নাম- যার মূলকথা সবুজ নয়া চুক্তি, সবার জন্য স্বাস্থ্য, শ্রমিকের অধিকার, সবার জন্য সমান সুযোগ ও বিশ্বরাজনীতির দিক পরিবর্তন।

বার্নি মানে যে আন্দোলন

বার্নি স্যান্ডার্স শুধুই কোন ব্যক্তি নন, তিনি এক আন্দোলনের নামে রূপান্তরিত হয়েছেন। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিসমূহের কয়েকটি নিম্নরুপ :

  • সকলের জন্য সরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বাণিজ্য বিদ্যালয়গুলোতে বিনা বেতনে পড়ালেখার অধিকার ও ছাত্রঋণ বাতিল। ৫০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব সেরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা বেতনে পড়ালেখা করার সুযোগ ছিল এখন সেখানে পয়সা দিতে হয়, যে প্রক্রিয়া বন্ধ করা হবে।
  • সবার জন্য গৃহ নিশ্চিত করা এবং গৃহহীনতা বিলোপ করা।
  • ‘সবুজ নয়া চুক্তি’র অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ব্যবস্থাকে জীবাশ্ম জ¦ালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিসম্পদে রূপান্তরিত করা এবং এ খাতে ২ কোটি মানুষের চাকরি সৃষ্টি। ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুতের ও পরিবহনব্যবস্থার শতভাগ শক্তিচাহিদা পূরণ করা। ‘সবুজ জলবায়ু তহবিলে’ ২০০ বিলিয়ন ডলার প্রদান, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে যাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বৈশি^ক যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান। সর্বোচ্চ ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে কার্বন দূষণমুক্ত করা।
  • স্বাস্থ্য মৌলিক মানবাধিকার, তাই সবার জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এর ফলে শ্রমিকরা স্বাস্থ্যসেবার জন্য মালিকের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে রেহাই পাবে। সকল চিকিৎসা ঋণ বাতিল করা। স্যান্ডার্সের ‘মেডিকেয়ার ফর অল’ পরিকল্পনায় প্রাইভেট বিমা ব্যবস্থাপনাকে প্রতিস্থাপন করে জাতীয় পর্যায়ে একক স্বাস্থ্যবিমা পরিকল্পনা চালু করা হবে, যাতে বিনা মূল্যে সর্বজনীন চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। ২০২০-এর ফেব্র“য়ারিতে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলা হয়, বার্নির এই ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা’ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বেশি খরচ হওয়া দূরে থাকুক, বরং আগামী ১০ বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাঁচবে।
  • শ্রমিকের অধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান। পূর্ণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি। সব ধরনের শ্রমিকের জন্য ভীতিহীনভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করা। ইউনিয়নের সদস্যসংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। নিছক অবস্থানগত সুবিধার কারণে অস্বাভাবিক বেতন-মুনাফা ও অন্যান্য আয়-উপার্জন হ্রাস করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুবিধা বৃদ্ধি। কর্মস্থলে গণতন্ত্র নিশ্চিত করা। এর ফলে শ্রমিকের যৌথ দরকষাকষির ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবস্থাপনামূলক সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।
  • পশ্চাৎপদ জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষিতে অশে^তাঙ্গ কৃষকের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা। দেখা যায়, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৯৫ শতাংশ কৃষক ছিলেন শ্বেতাঙ্গ। আর ১৯১০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গ কৃষকরা তাদের জমি হারিয়েছে ৮০ শতাংশ। সামাজিক বৈষম্যের শিকার এমন মানুষের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
  • শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী ও ভাগ্য পরির্তনের স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আগত মানুষকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান। কেননা দেশটি আসলে অভিবাসীদের। অতএব, মানুষকে জোরপূর্বক যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগে বাধ্য করার প্রক্রিয়া বন্ধ করা।
  • নিম্নআয়ের প্রবীণ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রসারিত করা।
  • প্রত্যেকের জন্য অবসর ভাতার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  • বিচারাধীন আসামিদের জন্য বিনা পয়সায় জামিনের ব্যবস্থা করা।
  • সর্বজনীন শিশুসেবা ও প্রাক-কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা নিশ্চিত করা।
  • স্কুল সময়ের পর শিক্ষা কার্যক্রম প্রসারিত করা এবং বিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে খাবার সরবরাহ। শিক্ষা প্রত্যেকের অধিকার, কেবল ধনী ও সুবিধাভোগীদের নয়। যুক্তরাষ্ট্রে ৬ জনের মধ্যে একজন শিশু ক্ষুধার্ত অবস্থায় স্কুলে যায়। সকল বিদ্যালয়ে বছরব্যাপী নাশতা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

স্যান্ডার্সের ‘মেডিকেয়ার ফর অল’ পরিকল্পনায় প্রাইভেট বিমা ব্যবস্থাপনাকে প্রতিস্থাপন করে জাতীয় পর্যায়ে একক স্বাস্থ্যবিমা পরিকল্পনা চালু করা হবে, যাতে বিনা মূল্যে সর্বজনীন চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। ২০২০-এর ফেব্র“য়ারিতে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলা হয়, বার্নির এই ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা’ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বেশি খরচ হওয়া দূরে থাকুক, বরং আগামী ১০ বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাঁচবে।

প্রেসিডেন্ট হয়ে এসব প্রতিশ্রুতি পূরণ করা সহজ কাজ নয়। রিপাবলিকান দল তো বটেই, ডেমোক্রেটিক দলের এস্টাবলিশমেন্টের পক্ষ থেকেও বাধা নিশ্চিত। তারপর কায়েমি স্বার্থবাদী ও দালাল পত্রিকা-টেলিভিশন গোষ্ঠী প্রশ্ন করছে, এত টাকা আসবে কোথা থেকে? উত্তরটা সহজ : কর্পোরেটদের ওপর কর আরোপ করে, তাদের ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার কলাকৌশল বন্ধ করে এবং উচ্চ আয়ের ওপর ন্যায্য করারোপ করে।

স্যান্ডার্সকে ঠেকাতে ট্রাম্প-বাইডেন-কর্পোরেট দুষ্টচক্রের হাত

ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ক্ষমতায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বেশির ভাগ সময় ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। সুতরাং ট্রাম্প এখন সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। অন্যদিকে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক বাদ দিলে অর্থনৈতিকভাবে দেশটি খারাপ অবস্থায় না। ট্রাম্পের উদ্ভট অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তসমূহের কুফল এখনও ফলতে শুরু করেনি। স্পষ্টতই গতবারের হিলারি ক্লিনটনও যদি আজ তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ান, ফল কী দাঁড়াবে সহজেই অনুমেয়।

এখন ওবামা আমলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দল থেকে মনোয়ন লাভ নিশ্চিত করেছেন। অথচ হিলারির তুলনায় জো বাইডেন নস্যি। ডেমোক্রেটিক দল এবার এ রকম একটা দুর্বল প্রার্থীকেই নামাচ্ছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। বাইডেন অনেক আগে থেকেই ট্রাম্পের কাছে ‘সি­পি জো’ নামে কৌতুকের পাত্র। এখন তাঁর কেবল নাস্তানাবুদ হওয়ার অপেক্ষা। এ প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে।

নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা সাধারণত রাজনৈতিক মাঠ থেকে হারিয়ে যান। কিন্তু গতবারও যেমন বার্নি হারিয়ে যাননি, এবারও যাবেন না। গণমানুষের মাঝে জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও বার্নি স্যান্ডার্স কেন পিছিয়ে পড়ছেন? সে কি কেবলই মানুষ তাঁকে ভোট দিচ্ছে না বলে? আপাতদৃষ্টিতে তেমনটাই মনে হয়। কিন্তু এর পেছনে আছে কিছু রহস্য। আছে অদৃশ্য হাতের খেলা- যে হাত আড়ালে লুণ্ঠক পুঁজিবাদী দুষ্টচক্রের। এই হাত ব্রিটেনে জেরিমি করবিনকে ঠেকিয়েছে। সেই দুষ্টচক্র স্যান্ডার্সকে কিছুতেই যক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসতে দেবে না। এমনকি তাঁকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াতেই দেবে না।

এই চক্রান্তের কারণ সম্পর্কে চমস্কি বলেছেন, ‘তিনি একটি গণ-আন্দোলন জাগ্রত করেছেন, যা চার বছর অন্তর অন্তর ক্ষমতাসীনদের খুশিমত বোতাম না টিপে নিরন্তর ক্রিয়াশীল, চাপ প্রদানে সক্ষম এবং পরিবর্তন ও সাফল্য লাভে সক্ষম। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর জন্য এটাই আতঙ্কের।

বার্নি ঠেকাও চক্রান্ত

প্রথমেই লক্ষণীয় যে পৃথিবীতে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ধ্বজাধারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক উপায়ে হয় না। যে কারণে গতবারের হিলারি ক্লিনটনসহ ইতিপূর্বে অনেকেই মোট ভোট বেশি পাওয়া সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট সেখানকার নির্বাচনে মনোনয়ন লাভের পথে আরেক অগণতান্ত্রিক বাধা। এ ছাড়াও স্যান্ডার্সের সামনে প্রতিবন্ধকতা হিসাবে দাঁড়িয়েছে আরও অনেক শক্তি ও উপশক্তির দুষ্টচক্র।

নির্বাচনি প্রচারাভিযানে বার্নির বক্তৃতায় ভয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানির, তেল-গ্যাস কোম্পানির, ওয়ালস্ট্রিটের, অস্ত্র কোম্পানির কাপড়চোপড় নষ্ট হতে শুরু করেছিল। তৃণমূলে তাঁর জনপ্রিয়তার স্রোত তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশে ও দেশের বাইরে তাঁর জনপ্রিয়তা যেভাবে বাড়ছিল, তাতে সমাজতন্ত্রীদের মনে যেমন আশা জেগেছিল, পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী জগতে তেমনি ভয় ছড়িয়ে গিয়েছিল। বার্নি সমর্থকরা মনে করছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে- একজন সমাজতন্ত্রী বসতে যাচ্ছেন দেশটির ক্ষমতায়।

নির্বাচনি প্রচারাভিযানে বার্নির বক্তৃতায় ভয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানির, তেল-গ্যাস কোম্পানির, ওয়ালস্ট্রিটের, অস্ত্র কোম্পানির কাপড়চোপড় নষ্ট হতে শুরু করেছিল। তৃণমূলে তাঁর জনপ্রিয়তার স্রোত তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশে ও দেশের বাইরে তাঁর জনপ্রিয়তা যেভাবে বাড়ছিল, তাতে সমাজতন্ত্রীদের মনে যেমন আশা জেগেছিল, পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী জগতে তেমনি ভয় ছড়িয়ে গিয়েছিল।

বার্নিবিরোধীরা তাদের প্রথম পুরনো অস্ত্রটি বের করে, বলা শুরু করে- বার্নি একজন ‘কম্যুনিস্ট’। বার্নি ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্রে স্তালিনযুগ শুরু হবে। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর কলামিস্ট ডেভিড ব্রুকস লিখে ফেললেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও এলিজাবেথ ওয়ারেনের মাঝে ভোটযুদ্ধে তিনি ওয়ারেনকে ভোট দিতে রাজি বটে, কিন্তু ট্রাম্প ও স্যান্ডার্সের মাঝে ট্রাম্পকেই চান। স্যান্ডার্স তাঁর কাছে ভয়ানক, তিনি নাকি তাঁকে স্তালিনের গণহত্যার কথা মনে করিয়ে দেন! অতএব, ‘না, কোনভাবেই, কিছুতেই স্যান্ডার্স নয়।’১০ আর ব্রুকস প্রিয়পাত্র ট্রাম্প বলতে শুরু করেন, যুক্তরাষ্ট্রকে কিছুতেই ভেনিজুয়েলা হতে দেয়া যাবে না।

অথচ বার্নি যা করতে চেয়েছেন তা ডেনমার্ক, সুইডেন প্রভৃতি পুঁজিবাদী ইউরোপিয়ান দেশের ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিজমের বেশি কিছু নয়। শুধু তাই নয়, স্যান্ডার্স এই সমাজতান্ত্রিক উপাদান যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মাঝেই বিদ্যমান বলে দেখিয়েছেন। তাঁর প্রচারিত ‘সবুজ নয়া চুক্তি’র শিরোনাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় গৃহীত ‘নয়া চুক্তি’র নামে রাখা।

২০১৬-তে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে প্রদত্ত বক্তৃতা বার্নি শুরুই করেছিলেন রুজভেল্টেকে উদ্ধৃত করে। আর তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিংকে উদ্ধৃত করে বলেন, এ দেশে সব সময়ই সমাজতন্ত্র আছে, তবে সেটা কেবল ধনিক শ্রেণির মানুষের জন্যই, আর গরিবদের জন্য ব্যক্তিতান্ত্রিক পুঁজিবাদ। তিনি যা চেয়েছেন তা হচ্ছে মার্কিন বড়লোকদের আগাগোড়া ভোগ্য এই সমাজতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থাকে শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া, তাদেরকেও এর সম-অংশীদার করা।১১ তার পরও দুষ্টচক্র বুঝে গেল, বার্নি আর রুজভেল্ট কিছুতেই এক বস্তু নয়, হতেই পারে না।

কায়েমি স্বার্থের পোষ্য বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও প্রচারমাধ্যম মাঠে নামাল তাদের মিথ্যাচারের বহু পরীক্ষিত গোয়েবলসীয় মেশিন। প্রথমে তারা বলতে শুরু করল- বার্নির বয়স বেশি, যেন অন্য প্রার্থীরা নবজাতক! তারপর, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত। এরপর, প্রচারাভিযানে প্রতিপক্ষ এলিজাবেথ ওয়ারেনের একটি অভিযোগকে ভিত্তি করে ঢোল পেটানো শুরু হল যে তিনি নারীবিদ্বেষী। দুষ্টচক্রের থলে থেকে একটার পর একটা এমন মিথ্যাচারের অস্ত্র বেরোতে শুরু করল। কাজ হচ্ছিল না এসব কিছুতেই।

শুরু হল ডেমোক্রেটিক দলের অন্য প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রতিযোগিতা থেকে অব্যাহতি গ্রহণ আর তাদের বাইডেনকে সমর্থনের খেলা। স্পষ্টতই এরা সবাই ঠিক ডেভিড ব্রুকসের মতো বিশ্বাসী। খেলাটা কাজে লেগেছে। স্যান্ডার্সকে ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলেন বাইডেন।

স্যান্ডার্স ক্যাম্পের হিসাবে ভুল

স্যান্ডার্স ক্যাম্প যার ওপর বেশি নির্ভর করছিল তা হচ্ছে তরুণদের ভোট। কারণ তরুণদের মাঝে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। আর তিনি বক্তৃতায় প্রায়ই বলছিলেন, তাঁর প্রচারাভিযান যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বাধিক মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসবে। অথচ দেখা গেল, তরুণদের চেয়ে বয়স্করাই বেশি ভোট দিতে আসছেন। তরুণরা কেন আশানুরূপভাবে ভোটকেন্দ্রে এল না?

কারণ ভোট প্রদান একটি অভ্যাসের ব্যাপারও। তরুণরা রাস্তায় নামতে, মিছিল করতে, পুলিশের মুখোমুখি হতে যে পরিমাণ উৎসাহী ও সক্ষম, ভোটকেন্দ্রে আসতে সেই পরিমাণ নয়। যার যত বয়স সে তত এ কাজে অভ্যস্ত। তাছাড়া তরুণদের জন্য প্রথম ভোটার হওয়ার কাজটি যুক্তরাষ্ট্রে সহজ নয়। ভোটার হিসাবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য তাকে অনেক ঝক্কিঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তারুণ্য যা সইতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের এস্টাবলিশমেন্ট তরুণদের জন্য বিষয়টি সূক্ষ্ম পরিকল্পনা মোতাবেক কঠিন করে রেখেছে। বাইডেন সমর্থক পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমসে Jamelle Bouie এ কথাগুলো লিখেছেন।

মিশিগানে ভোট প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ১৮ থেকে ২৯ বছরের তরুণ এবং ৩০ থেকে ৪৪ বছরের যুবক এই উভয় গ্র“পের মাঝে স্যান্ডার্সের ভোট বেশি। বাইডেনের ভোট বেশি এর ওপরের বয়সের জনগোষ্ঠীর মাঝে। কিন্তু ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতির সংখ্যায় তরুণ-যুবক গোষ্ঠী বয়স্কদের বন্যায় ভেসে গেছে। Making Young Voters: Converting Civic Attitudes into Civic Action বইয়ের যৌথ লেখক John Holbein ও D. Sunshine Hillygus -এর বরাত দিয়ে তিনি লিখেছেন, “বিষয়টি রাজনৈতিক আগ্রহের নয়, কাঠামোর। প্রথমবারের জন্য কিছু করা যে কারও জন্য কঠিন। ভোটের বেলায় তা বিশেষভাবে সত্য। কেননা যক্তরাষ্ট্রে এটা কোন সহজ প্রক্রিয়া নয়। মন্দের ব্যাপার হল, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে এটি আরও কঠিন করে রাখা হয়েছে তরুণদের, বিশেষ করে ছাত্রদেরকে, ভোট থেকে বিরত রাখার বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে।”১২

সাম্প্রতিককালে করোনাভাইরাসের আতঙ্কও বার্নির প্রচারাভিযানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কেননা তাঁর প্রচারাভিযান মানেই বহু মানুষের জমায়েত। তাঁর পছন্দ জনসমাগম। সেই জনসমাগমেরই রাশ টেনে ধরতে হয়েছে। জো বাইডেনের বেলায় এটাই ছিল সুবিধাজনক। করোনাভাইরাসের আতঙ্কের ফলে ভোটকেন্দ্রগুলোতে উপস্থিতি ছিল কম এবং ভোট ব্যবস্থাপনা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। এ সবই আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে বাইডেনের জন্য। 

এরকম বিবিধ কারণই স্যান্ডার্সের মনোনয়ন লাভে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফল : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটি চমৎকার উপহার।

২০১৬-তে পিকেটি আরও বলেছিলেন, “এটা এখন প্রমাণিত যে অন্য কোন স্যান্ডার্স- সম্ভবত তরুণ ও অশে^তাঙ্গ কেউ-শিগগিরই কোনদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করবেন এবং দেশটির চেহারা পাল্টে দেবেন।”১৩ যুক্তরাষ্ট্রকে হয়তো তারই অপেক্ষা করতে হবে।

আলমগীর খান : নির্বাহী সম্পাদক, শিক্ষালোক

ই-মেইল : alamgirhkhan@gmail.com 

তথ্যসূত্র

১. Thomas Piketty on the rise of Bernie Sanders: the US enters a new political era, গার্ডিয়ান, ১৬ ফেব্র“য়ারি ২০১৬

২. Noam Chomsky: “Bernie Sanders Has Inspired a Mass Popular Movement, জ্যাকোবিন, ১০ মার্চ ২০২০

৩. Piketty, পূর্বোক্ত

৪. Daniel Denvir, What a Bernie Sanders Presidency Would Look Like, জ্যাকোবিন, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

৫. সম্পাদকীয় বিভাগের সঙ্গে বার্নি স্যান্ডার্স, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৩ জানুয়ারি ২০২০

৬. Meagan Day, Bernie Sanders Believes in Mass Politics — Something the New York Times Can’t Wrap Their Minds Around, জ্যাকোবিন, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

৭. পূর্বোক্ত

৮. https://berniesanders.com

৯. Chomsky, পূর্বোক্ত

১০. David Brooks, No, Not Sanders, Not Ever, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৭ ফেব্র“য়ারি ২০২০

১১. Heather Gautney, Defining Bernie’s Democratic Socialism, জ্যাকোবিন, ১৪ মার্চ ২০২০

১২. Jamelle Bouie, Bernie Sanders and the Case of the Missing Youth Vote,নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৩ মার্চ ২০২০

১৩. Piketty, পূর্বোক্ত

Social Share
  •  
  •  
  • 25
  •  
  •  
  •  
  •  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *