জনগণের ৫১ শতাংশের মতামতকে উপেক্ষা করে তৈরি জুলাই সনদ জন-আকাঙ্ক্ষা ও গণতন্ত্রের পরিপন্থি

সংবাদ সম্মেলনে নারী সংগঠনসমূহের বক্তব্য

জনগণের ৫১ শতাংশের মতামতকে উপেক্ষা করে তৈরি জুলাই সনদ জন-আকাঙ্ক্ষা ও গণতন্ত্রের পরিপন্থি

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে পঠিত লিখিত বক্তব্য এখানে যুক্ত হলো। এখানে অংশ নেন নারী আন্দোলন, নাগরিক সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীদের পক্ষে (বর্ণক্রম অনুসারে): ক্ষুব্ধ নারী সমাজ, গণসাক্ষরতা অভিযান, দুর্বার নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন, নাগরিক কোয়ালিশন, নারী উদ্যোগ কেন্দ্র (নউক), নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা, নারী সংহতি, নারীপক্ষ, নারীর ডাকে রাজনীতি, ফেমিনিস্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ (ফ্যাব), বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র, ভয়েস ফর রিফর্ম।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, সহকর্মী এবং উপস্থিত সকলে,

আজ নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের পক্ষ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা জানেন গত ৩১ আগস্ট নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই ফোরামের কাজ হলো নারীর সাংবিধানিক অধিকার কার্যকর করা, সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণে বিদ্যমান কাঠামোগত বৈষম্য দূর করার জন্য আইন ও নীতির সংস্কার দাবি করা।

স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও সংসদে নারীর সরাসরি প্রতিনিধিত্ব এখনো হতাশাজনকভাবে কম। এ পরিপ্রেক্ষিতে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি ১৯৮৭ সালে ঐক্যবদ্ধ নারীসমাজ প্রণীত ১৭ দফা এবং ১৯৯৫ সালে গঠিত সম্মিলিত নারীসমাজের কথা– একই দাবিতে ১৯৯৬ সালের নির্বাচন প্রাক্বালে যারা বছরব্যাপী কাজ করেছেন। আজ ২০২৫ সালে একটি গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমরা আমাদের পূর্বসূরিদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই: সংসদে নারীর ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব আমাদের গণতন্ত্র, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তির ধারণার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত।

বর্তমানে সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসন আছে। কিন্তু এই আসনগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে প্রাপ্ত দলীয় আসন অনুপাতে এমপিদের ভোটে পূরণ হয়, ফলে তারা দলীয় নেতৃত্বের কাছে জবাবদিহি থাকেন, জনগণের কাছে নয়। এতে নারীদের স্বাধীন রাজনৈতিক ভূমিকা সংকুচিত হয়ে পড়ে। তারা সংসদে উপস্থিত থাকলেও বেশিরভাগ সময়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন না। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ রোকেয়া দিবসে যে ‘পায়রাবন্দ ঘোষণা’ দেওয়া হয় সেখানে মোট ৩১টি ধারার মধ্যে ১১ নম্বর ধারায় বলা হয়: ‘জাতীয় সংসদে মহিলাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অপমানজনক পদ্ধতির অবসান চাই।’ আজ ৩০ বছর পরেও সেই পরিস্থিতিই বহাল আছে।

এমন পরিস্থিতিতে ‘নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম’ শুরু থেকেই বলছে—নারীর প্রতিনিধিত্বকে প্রতীকী পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। আমাদের লক্ষ্য হলো নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, যাতে তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

আমরা বারবার বলেছি, সংসদে নারীর ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব এখনই বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং ধাপে ধাপে সেটিকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে। শুধু দলগুলোর সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করলে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে না।

একইসঙ্গে আমরা বলেছি—সংসদের সংরক্ষিত আসনকে ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার যে সিদ্ধান্ত জুলাই সনদে নেওয়া হয়েছে, সেটিকে স্বাধীনতা-পরবর্তী নারী আন্দোলনের একটি অগ্রগতি বলে ধরে নিলেও এই ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে কি না, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, ইশতেহারে উল্লেখ থাকলেও দেশের ৫১ শতাংশ নারীর এই দাবিটি কোনো সরকারই পূরণ করেনি এবং কার্যকর আইন প্রণয়নও করেনি। সরাসরি নির্বাচন না হলে আবারও নারীরা দলীয় নেতৃত্বের কাছে মনোনয়নের জন্য নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন। এতে তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে এবং তারা কখনোই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে পারবেন না। তাই আমরা দৃঢ়ভাবে বলছি, শুধু নিজেদের দলীয় স্বার্থে আসন বাড়ালেই চলবে না, সংরক্ষিত আসনগুলোতে অবশ্যই সরাসরি নির্বাচন চালু করতে হবে।

আমরা বারবার বলেছি, সংসদে নারীর ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব এখনই বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং ধাপে ধাপে সেটিকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে। শুধু দলগুলোর সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করলে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে না।

আমরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছি। আরপিও (RPO) সংশোধন করে রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত কিংবা স্বতন্ত্র—সকল নারী প্রার্থীর জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিশেষ আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী প্রচারণার যে ব্যয়সীমা নির্ধারণ করে দেয়, সেই অঙ্কের সমপরিমাণ অর্থ মঞ্জুরি হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বরাদ্দ দেওয়ার বিধান করতে হবে। এর ফলে আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেক যোগ্য নারী প্রার্থী নির্বাচন থেকে পিছিয়ে যাবেন না। আজকের বাস্তবতায় নির্বাচনী ব্যয়ের বোঝা নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণের অন্যতম বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও নারী প্রার্থীদের নিরাপদ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে শারীরিক ও অনলাইন সহিংসতা প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার ব্যাপারে আমরা দাবি জানিয়েছি। নির্বাচনকালীন প্রতিটি ধাপে নারীদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করা কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব।

—————— —————— —————– ——————- —————– —————-

গত ৯ সেপ্টেম্বর নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের প্রতিনিধি দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক করে। বৈঠকে আমরা দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেছি যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাঠামোতে কোনো নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত নেই। প্রধান উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে কমিশন গঠিত হওয়া সত্ত্বেও সেখানে কোনো নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তি না থাকা শুধু বৈষম্যমূলক নয়, বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে একপাক্ষিক ও অগণতান্ত্রিক করে তুলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় নারী রাজনৈতিক কর্মীদের সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়ায় সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব প্রসঙ্গে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নারীর কণ্ঠস্বর ও অধিকারের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই সনদের বর্তমান খসড়ায় নারীর জন্য মাত্র ৫ শতাংশ মনোনয়নের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক; এটি নারীর নেতৃত্ব বিকাশ ও যোগ্য প্রার্থীদের সামনে আসার ঐতিহাসিক সুযোগকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাঠামোতে কোনো নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত নেই। প্রধান উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে কমিশন গঠিত হওয়া সত্ত্বেও সেখানে কোনো নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তি না থাকা শুধু বৈষম্যমূলক নয়, বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে একপাক্ষিক ও অগণতান্ত্রিক করে তুলেছে।

১০০ আসনে নারীর সরাসরি নির্বাচন এবং ৩৩ শতাংশ মনোনয়ন দেওয়ার যে প্রস্তাব ও রূপরেখা ফোরাম থেকে ৩১ আগস্টের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া হয়েছিল, কমিশন সেটি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং উল্লেখ করেন যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবও মোটাদাগে একই ছিল, যদিও ভিন্ন ভিন্ন রূপরেখায়। কাজেই নীতিগতভাবে কমিশন আমাদের প্রস্তাবের সাথে শুধু একমতই নন, তাঁরা এই প্রস্তাব ও দুই সংস্কার কমিশনের রূপরেখা নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দীর্ঘ আলোচনা ও দরকষাকষি করেছেন। কিন্তু সাধারণ নির্বাচনে জিতে আসার মতো যথেষ্ট পরিমাণ যোগ্য নারী না পাওয়ার কথা বলে রাজনৈতিক দলগুলো ২০২৬-এর নির্বাচনের জন্য নারী মনোনয়নের হার কোনোভাবেই ৫ শতাংশের বেশি বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়নি। ২০২৫ সালে নারীরা যেখানে সমাজের প্রতিটি স্তরে শিক্ষায়, যোগ্যতায়, কর্মস্থলে, আন্দোলনে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে, রাজনৈতিক দলের ভেতরে তাঁদেরকে এভাবে প্রান্তিক অবস্থানে চিত্রিত করার প্রচেষ্টা তাই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

আমরা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নারী নেতৃত্বদের সাথে সরাসরি কথা বলেছি। তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে যে রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি শুধু প্রয়োজনীয় নয়, বরং দলীয় কাঠামো ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও এটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুযোগ তৈরি করা হয়, তবে তাঁরা যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সংসদে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন, যা আমরা তাদের সাথে আলোচনায় আশ্বস্ত হয়েছি।

আমরা সকল পর্যালোচনার আলোকে ঐকমত্য কমিশনের কাছে প্রস্তাব করেছি সকল অংশীজন– রাষ্ট্র, নারী অধিকারকর্মী, রাজনৈতিক দলসমূহ এবং কমিশনের মধ্যস্থতায় একটি যৌথ সভা আহ্বান করা অত্যন্ত প্রয়োজন। গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছি। সেই চিঠিতে নারীর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব প্রসঙ্গে একটি জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগ ও সহায়তায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একটি বৈঠক করার জন্য জোর দাবি জানাই। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমাদের এই যৌক্তিক দাবিগুলোর আশানুরূপ কোনো উত্তর আমরা পাইনি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছেন তারা এ ধরনের সভা আয়োজন করতে পারবেন না। আরও হতাশার বিষয় হলো, জুলাই সনদের নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ক অধ্যায়ে আমাদের উত্থাপিত প্রস্তাবও কার্যত আমলে নেওয়া হয়নি।

আমরা প্রশ্ন করতে চাই: নারীদের বাদ দিয়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে জুলাই সনদের বৈধতা কোথায়? মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশকে বাদ দিয়ে কীভাবে তাকে ‘উইল অব দ্য পিপল’ বা জনগণের আকাঙ্ক্ষার আধার হিসেবে দাবি করা যায়?

আমাদের প্রস্তাবগুলো গ্রহণ না করার মানে হলো নারীর কণ্ঠস্বরকে অবমূল্যায়ন করা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করা। আমরা এটিকে কেবল রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয়, বরং একটি সামাজিক অবিচার হিসেবেও দেখি।

আমরা আবারও স্পষ্ট করে বলতে চাই—সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব শুধু একটি প্রতীকী বিষয় নয়। এটি সমাজের ন্যায্যতা, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তির প্রশ্ন। সংসদে নারীরা কার্যকরভাবে উপস্থিত থাকলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, শ্রম অধিকার এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের মতো বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে। গবেষণার ফলাফলেও দেখায় যে নারীরা যখন নীতি নির্ধারণে অংশ নেন, তখন জনকল্যাণমুখী নীতিগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।

আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এবং করব। আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে অনুরোধ করেছি, রাজনৈতিক দলগুলোকে চাপ দিতে, যাতে তারা নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাড়ায় এবং সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ নিশ্চিত করে।

আজকের এই প্রেস কনফারেন্স থেকে আমরা আবারও স্পষ্টভাবে বলতে চাই—নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া গণতন্ত্র  পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। সংসদে নারীর ন্যায্য অংশগ্রহণ ছাড়া সংসদ প্রকৃত অর্থে জনগণের প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। তাই আমাদের দাবিগুলো আমরা আরেকবার আজকে উল্লেখ করতে চাই:

১। দেশের মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশের বেশি নারীর যথাযোগ্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

২। ২০২৬ সালেই নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০০ আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।

৩। রাজনৈতিক দলে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং RPO সংশোধন করে ধাপে ধাপে ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। একই সঙ্গে, RPO সংশোধনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত বা স্বতন্ত্র সকল নারী প্রার্থীর জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত নির্বাচনী প্রচারণার ব্যয়সীমার সমপরিমাণ অর্থ মঞ্জুরি হিসেবে (ব্যয় বিবরণী যথাযথভাবে দাখিল করার শর্তসাপেক্ষে) রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪। জুলাই সনদে সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব বিষয়ে সরাসরি নির্বাচন ও নির্বাচনী পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে। নির্বাচনী পদ্ধতি সম্পর্কে এই অস্পষ্টতা সনদটির গ্রহণযোগ্যতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে। তাই আমরা জোর দাবি জানাই যে, সংসদে বর্ধিত সংরক্ষিত ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।

আমরা এখনো আশা করি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, রাজনৈতিক দল এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।

নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম তার অবস্থানে অবিচল থাকবে। আমরা চাই, বাংলাদেশের সংসদে নারী ও পুরুষ সমানভাবে কণ্ঠস্বর উত্থাপন করবে, এবং গণতন্ত্র হবে সত্যিকার অর্থে অন্তর্ভুক্তিমূলক।

ধন্যবাদ।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •