সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতনের এক বছর পূর্তি হচ্ছে ৫ আগস্ট, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর হচ্ছে ৮ আগস্ট। দেশজুড়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি এবং সেই সাথে করণীয় নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক ও প্রশ্ন বেড়েছে। এই সংখ্যায় এই বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে অনেকগুলো বিষয় আনা হচ্ছে যেগুলো পরিবর্তন ও পরিবর্তনহীনতা বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

জাতীয় বাজেটের কাঠামোগত দিকে গত ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা পরীক্ষা করেছেন মাহতাব উদ্দীন আহমেদ। লেখক গত সরকারের ১৬টি বাজেট এবং এইবারের অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটের পদ্ধতিগত দিক বিশ্লেষণ করে প্রধানত আটটি কাঠামোগত সমস্যা সনাক্ত করেছেন। এই লেখায় তথ্যযুক্তিসহ এগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং এর পরিবর্তনের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।

সর্বজনকথার আয়োজনে এই বছরের প্রথমদিকে ‘স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথ: বৈষম্যহীন বাংলাদেশের সন্ধানে’ শিরোনামে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সেমিনারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য, কৃষি, শিল্প,  বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গীয় প্রশ্ন, জাতিগত প্রশ্ন, ধর্মীয় বৈষম্য ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বক্তৃতার অনুলিখন এই সংখ্যায় দেয়া হলো। গত সংখ্যায় দুটো বক্তৃতার অনুলিখন গেছে। এই সংখ্যায় যাদের বক্তব্য গেছে তারা হলেন আনু মুহাম্মদ, সামিনা লুৎফা নিত্রা, রেং ইয়ং ম্রো, আন্তনী রেমা, খোকন দাস এবং ডা. হারুন অর রশিদ। এছাড়া এই সংখ্যায় ‘২৪ -এর গণআন্দোলনের গান’ এর ধারাবাহিক লেখার ৪র্থ পর্ব প্রকাশিত হলো। সংকলন ও ভূমিকা বীথি ঘোষ।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছর পূর্তিতে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে। সরকারেরও বহু কর্মসূচি আছে। সরকারের ‘জুলাই নারী দিবস’ উদযাপন নিয়ে গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় চারজন নারীর প্রতিক্রিয়া দেয়া হলো এই সংখ্যায়।  সরকার যেভাবে নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে ব্যয়বহুল, অসংলগ্ন আয়োজন করছে তা নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের সক্রিয় অংশীদারদের মধ্যেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ফেসবুক থেকে নেয়া চারজনের প্রতিক্রিয়ায় গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বছরে নারীর অবস্থা ও লড়াইএর চিত্র পাওয়া যাবে।   

চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় ও লাভজনক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য কোনো ধরনের দরপত্র আহ্বান ছাড়াই জিটুজি পদ্ধতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তির আলোচনা চলছে। প্রতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে বিশ্বব্যাংকসহ বিদেশি কোম্পানির লবিস্টদের কথা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। কল্লোল মোস্তফা এই উদ্যোগ পর্যালোচনা করে জাতীয় স্বার্থের জন্য ঝুঁকির দিকগুলো উন্মোচন করে লিখেছেন এই সংখ্যায়।

এর মধ্যে দেশে অর্থনীতি যখন নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ও সংকটে তখন সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের সব ট্যারিফ ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর সাথে লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও সক্ষমতা বাড়ানোর যুক্তি তুলে বিদেশি কোম্পানির হাতে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান টার্মিনাল তুলে দেবার তৎপরতা সম্পর্কিত। দখল পেলে বিদেশি কোম্পানি তার মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য সব ট্যারিফ বাড়াবে, বিভিন্ন দেশে তাদের রেকর্ড এরকমই। মনে হচ্ছে এই সরকার এমনভাবে পথ পরিষ্কার করে দিচ্ছে যাতে বিদেশি কোম্পানি খুব সহজে বড় মুনাফা পেতে পারে। এতে দেশের অর্থনীতি ব্যবসা বাণিজ্য এবং মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় সবই বাড়বে। কিন্তু মনে হচ্ছে সরকারের অগ্রাধিকার জনগণ নয় বহুজাতিক পুঁজির স্বার্থ। ট্রাম্পের ট্যারিফ সন্ত্রাস মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকাও বাংলাদেশের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ দেখা যাচ্ছে।  

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছিলো এক বা একাধিক আঞ্চলিক বাহিনী। গবেষকদের মতে এদের সংখ্যা কমপক্ষে ৩০টি। ভারতে বেঙ্গল রেজিমেন্টের  নিয়মিত বাহিনীর প্রশিক্ষিত ও বিভিন্ন সেক্টরের অধীনে মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ঠিক তেমনি দেশের ভেতরে আঞ্চলিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারাও পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিটি যুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রদর্শন করেছিলেন অসাধারণ সাহস ও বীরত্ব। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা যথাযথ স্বীকৃতি পান নি। এদের মধ্যে ১০টি আঞ্চলিক বাহিনীর ওপর বছরজুড়ে অনুসন্ধান করা হয় এবং তা ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ডেইলি স্টার পত্রিকায় ১০ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশিত হয়। সাংবাদিক গবেষক আহমাদ ইশতিয়াক প্রণীত এই পর্বগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপ দুই পর্বে আমরা প্রকাশ করছি। এবারে প্রথম পর্ব। অন্যান্য আঞ্চলিক বাহিনী নিয়েও আমরা লেখা প্রকাশ করতে চাই।   

এছাড়া মেহেদী হাসানের ধারাবাহিক লেখা ‘২২ পরিবারের অতীত ও বর্তমান’ শেষ পর্ব প্রকাশিত হলো এই সংখ্যায়। তারিক আলী রচিত ‘মৌলবাদের সংঘাত’ গ্রন্থের ধারাবাহিক অনুবাদ করছেন ফাতেমা বেগম। এবারে আছে দশম পর্ব। চলচ্চিত্র পর্যালোচনা করে মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন লিখেছেন আরেক ভোরের নয়, নারকীয় বিজয় অথবা নবসম্ভাবনার “অপেক্ষা”!

আনু মুহাম্মদ

২৭ জুলাই ২০২৫

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •