সংবাদপত্রের পাতা থেকে (০৯ আগস্ট- ২৬ অক্টোবর ২০২৪)

সংবাদপত্রের পাতা থেকে (০৯ আগস্ট- ২৬ অক্টোবর ২০২৪)

অন্তর্বর্তী সরকার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সংস্কার

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন যাত্রা

০৯ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কার্যত তিন দিন দেশ সরকারশূন্য ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ জন শপথ নিয়েছেন।

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গত রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, ‘অরাজকতার বিষবাষ্প এখন যে-ই ছড়াবে, বিজয়ী ছাত্র-জনতাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ শক্তি তাকে ব্যর্থ করে দেবে।’

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নতুন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ করার কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছিলাম, যে প্রতিশ্রুতির জন্য শত শত ভাইবোন হতাহত হয়েছেন, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেই আমরা সরকারে এসেছি। সেই প্রতিশ্রুতিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণ করার জন্য সচেষ্ট থাকব।’

এই সরকারে মোট উপদেষ্টা ১৬ জন। সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা, চিকিৎসক বিধান রঞ্জন রায় ও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক-ই-আজম ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ নিতে পারেননি। উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া অন্য ১১ জন হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের নির্বাহী পরিচালক আদিলুর রহমান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, নারী অধিকারকর্মী ফরিদা আখতার, ইসলামি চিন্তাবিদ আ ফ ম খালিদ হাসান, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর জাহান বেগম ও নির্বাচনব্যবস্থা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শারমিন মুরশিদ।

 উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সরকারের অগ্রাধিকার নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, গত কয়েক দিন বিভিন্ন ধরনের অপরাধ হয়েছে। কোনো কোনো দল দেশের বিভিন্ন এলাকায় দখলের সংস্কৃতিতে নেমেছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

উপদেষ্টারা শপথ নিলেও কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন, তা ঘোষণা করা হয়নি। তবে গত কয়েকটি সরকারের মন্ত্রিসভার আকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন গুণ বা এর কাছাকাছি ছিল। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কাঁধে একাধিক মন্ত্রণালয় সামলানোর দায়িত্ব পড়তে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘যে অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি, আমরা যেন সেই শক্তির মতো হয়ে না যাই। তাহলে ছাত্র-জনতা যে অভাবনীয় একটা সুযোগ আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে, সেটার অর্জন ও ও মাহাত্ম্য ম্লান হয়ে যাবে।’ আরেক উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ মন্তব্য করেন, একটা বিধ্বস্ত অবস্থায় এ সরকার গঠিত হয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে এগোনোর জন্য সরকারের সময় প্রয়োজন।

গত সোমবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে মাত্র সাত মাসের মাথায় তাঁর টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারের অবসান ঘটে। পরদিন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংসদ ভেঙে দেন। এতে দেশ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিশূন্য হয়ে পড়ে। সরকার না থাকা এবং সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরই দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ওঠে। কারণ, গত তিন দিনে দেশে বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানা ঘটনা ঘটতে থাকে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রথম প্রস্তাব করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। তাঁদের ৩৬ দিনের টানা আন্দোলন সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে। ৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এক দফা দাবি ঘোষণার পরদিন সোমবারই পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর মঙ্গলবার ভোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নাম প্রস্তাব করা হয়।

এর আগে সোমবার বিকেলে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের নিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও অন্য দুই বাহিনীর প্রধান সেনানিবাসে বৈঠক করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আরেকবার বৈঠক হয়। এতে রাজনীতিক, ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও তিন বাহিনীর প্রধানেরা অংশ নেন। তবে কোনো বৈঠকেই আওয়ামী লীগ বা তাদের সমমনা দলের কোনো প্রতিনিধিকে ডাকা হয়নি। এসব বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোও ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে সম্মতি দেয়।

অবশ্য এ সময়টায় ড. ইউনূস প্যারিসে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকেই তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাবে তাঁর সম্মতি জানান। গতকাল বেলা ২টা ১০ মিনিটে ঢাকায় আসেন ড. ইউনূস।

উপদেষ্টা নির্বাচনে তৎপরতা

বিমানবন্দরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধানেরা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, শারমিন মুরশিদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন প্রমুখ।

বিমানবন্দরেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করেন ড. ইউনূস। সেখানে নতুন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কারা থাকছেন—এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা রাষ্ট্রপতি ও তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে সম্ভাব্য উপদেষ্টাদের নামের তালিকা দেন। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শের সময়ও বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেওয়া তালিকা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকের সারমর্ম প্যারিসে থাকা অবস্থায় ড. ইউনূসকে অবহিত করা হয় বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে ড. ইউনূস উপদেষ্টাদের একটা সম্ভাব্য তালিকা প্রস্তুত করেই দেশে ফেরেন। বিমানবন্দরের বৈঠকে এই তালিকার চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়।

নতুন সরকারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি রয়েছেন। আছেন চারজন নারীও। তবে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছেন মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। সরকারে ব্যবসায়ী কিংবা আমলার সংখ্যা তুলনামূলক কম। অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোতে একাধিক ব্যবসায়ী ও আমলাদের প্রতিনিধি ছিলেন।

উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এ জন্য নতুন সরকারে তাঁদের থাকার বিষয়ে আগে থেকেই আলোচনা ছিল। অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোতে পুলিশের প্রতিনিধি ছিলেন। এবার সরকারে অবসরপ্রাপ্ত কোনো পুলিশ কর্মকর্তা নেই।

রাষ্ট্র সংস্কার, বৈষম্য দূর করা, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল কাজ হবে বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তবে এককথায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল কাজ কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার চাই।’

নতুন সরকারের সামনে দেশের ব্যাংক খাতের দুরবস্থা দূর করা এবং অর্থনীতির পুনরুদ্ধার বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ এই চিন্তা থেকেই সরকারে স্থান পেয়েছেন বলে আলোচনা আছে। আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে দক্ষতা থাকায় সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন সরকারে স্থান পেয়েছেন। আদিলুর রহমান খান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কারাবরণসহ নানাভাবে নিগৃহীত হন।

শপথ অনুষ্ঠান

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন রাত সোয়া নয়টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শপথ পড়ান। এরপর ১৩ জন উপদেষ্টাকে শপথ পাঠ করানো হয়। শপথ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে আওয়ামী লীগ কিংবা তাদের জোট ১৪ দলের কাউকে দেখা যায়নি।

শপথ অনুষ্ঠানে দরবার হলে প্রথম সারির মাঝখানে বসেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বাঁ থেকে এরপর বসেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং এরপর অন্য উপদেষ্টারা।

প্রধান উপদেষ্টার ডান দিকে ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান হাসান মাহমুদ খাঁন। এরপর বসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ।

দ্বিতীয় সারিতে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বসেন। আরও ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে সাধারণত উপস্থিত থাকেন। তবে এবার তাঁদের দেখা যায়নি।

অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে সমন্বয়ের কাজ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি

০৯ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নির্ধারণের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি সরকারের ভেতরে ‘ওয়েআউট বা সমন্বয়ের’ কাজ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রস্তাব পৌঁছে দিতে কাজ করবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে লিয়াজোঁ কমিটি বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলম এ কথা জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে তাঁরা বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হন।

সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, ৫ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে অভ্যুত্থান-পরবর্তী ছাত্র-জনতার সরকারের রূপরেখা ও অন্তর্বর্তী সরকারের অংশীজন নির্ধারণে মাহফুজ আলমকে সমন্বয়ক করে লিয়াজোঁ কমিটি প্রস্তাবিত হয়। লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা রাজনৈতিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন ও সুশীল সমাজের সঙ্গে কথা বলে দেশে অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের অংশীজন নির্ধারণে উচ্চ অংশীজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের কাছে অংশীজনের নাম প্রস্তাব করেন।

লিয়াজোঁ কমিটি যে প্রস্তাব করেছিল, সেটি আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পেশ করেছি এবং তিনিও সম্মত হয়েছেন। সবার সম্মতিক্রমে সেই তালিকা আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি।

নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

৬ আগস্ট লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলম ও সদস্য নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বঙ্গভবনে ছাত্র-শিক্ষকদের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা ও অংশীজন নির্ধারণে সহায়তায় কাজ করছে লিয়াজোঁ কমিটি। সরকার গঠন-পরবর্তী রাষ্ট্রের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে কাজ করবে তারা। গতকাল ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতেও কমিটির ওই দুই সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এই কমিটি আগামীর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য সব অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ ও প্রস্তাবের জন্য কাজ করবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি অনুযায়ী কমিটির পরিধি বর্ধিত হবে।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘লিয়াজোঁ কমিটি যে প্রস্তাব করেছিল, সেটি আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পেশ করেছি এবং তিনিও সম্মত হয়েছেন। সবার সম্মতিক্রমে সেই তালিকা আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি।’

লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, তিনি ছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, ভূঁইয়া মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, আকরাম হুসাইন, মামুন আবদুল্লাহিল ও আরিফুল ইসলাম।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা যেতে পারে, বৃহস্পতিবারই মত দেন সুপ্রিম কোর্ট

০৯ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করানো যেতে পারে বলে মতামত দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এই মতামত চেয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপতির পাঠানো রেফারেন্সের (মতামত) পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টির ওপর মতামত দেন।

সাত সদস্যের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য ছয় সদস্য হলেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।

সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপিল বিভাগের মতামত চাইতে পারেন।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করতে এবং নির্বাহী কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে এবং রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীকে শপথবাক্য পাঠ করাতে পারেন বলে বিশেষ রেফারেন্সের (১/২৪) মাধ্যমে আপিল বিভাগ মতামত দিয়েছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৪ উপদেষ্টা (প্রধান উপদেষ্টাসহ) গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে শপথ নেন। এর মাধ্যমে নতুন সরকার যাত্রা শুরু করে।

এর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। তাঁর পদত্যাগের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন।

সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বৃহস্পতিবার একটি চিঠি আসে। ওই চিঠিতেই রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের মতামত জানতে চান। সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা, প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের নিয়োগ এবং শপথ পাঠ করানো যেতে পারে বলে মতামত দিয়েছেন।

জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানও প্রথম আলোর কাছে একই বক্তব্য দিয়েছেন।

সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের বিষয়ে বলা আছে।

অনুচ্ছেদটি বলছে, যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা হলে তিনি (রাষ্ট্রপতি) প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করতে পারবেন এবং ওই বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করতে পারবেন।

ভারতে বসে শেখ হাসিনার বিবৃতি পছন্দ করছে না বাংলাদেশ

১৫ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবৃতি দেওয়া পছন্দ করছে না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকলীন সরকার। এটি দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে না। বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ তথ্য জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের অবস্থান এটাই।

এ ব্যাপারে হাইকমিশনার কী বলেছেন– জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি কীভাবে এর জবাব দেবেন? তিনি তো ডিসাইড করতে পারবেন না। তিনি এ নিয়ে কিছু বলতে পারেন না বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রদূতের পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। এটা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি যেটা পারেন, তাঁর সদরদপ্তরে জানাবেন। আমি নিশ্চিত তিনি এটা সদরদপ্তরে জানাবেন।

ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষাপট নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, যে বিবৃতি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এসেছে, সেটা আমাদের জন্য স্বস্তিকর নয়। আমরা চাই, তিনি ভারতে বসে যেন এটা না করেন। এটাকে আমি হোস্টাইল অ্যাক্ট হিসেবে বলছি না। এটা তো আসলে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অন্তরায়। এটাই আমাদের কথা।

শেখ হাসিনার বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে

১৫ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রচলিত আদালতের বদলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচার সম্ভব কিনা, তা নিয়ে আইনজ্ঞদের দ্বিমত থাকলেও গতকাল বুধবার হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে শেখ হাসিনা সরকার ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ শতাধিক স্বাধীনতাবিরোধীকে সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল। এই প্রথম স্বাধীনতাবিরোধী নয়, এমন কারও বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ পড়ল।

গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যেসব গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড ও গুলির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হতে পারে। এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি, যারা আদেশ দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবাইকে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।

অধিকাংশ মেয়র-চেয়ারম্যান আত্মগোপনে

১৫ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

স্থানীয় সরকারের সব স্তরেই আওয়ামী লীগ তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। জেলা ও উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার প্রায় সব শীর্ষ পদই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দখলে। গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর স্থানীয় সরকারের এই জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই আত্মগোপনে চলে গেছেন। ফলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬৪টির মধ্যে ৪৪টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানই বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদের ৩১৯টিতেই উপজেলা চেয়ারম্যানরা গা ঢাকা দিয়েছেন। আর ৩৩০টির মধ্যে ২০৫টি পৌরসভার মেয়র আত্মগোপনে আছেন। এ ছাড়া অনেক জনপ্রতিনিধি এলাকায় থাকলেও কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। তবে আওয়ামী লীগের বাইরে বিএনপিসহ অন্য দলের যেসব জনপ্রতিনিধি রয়েছেন, তাঁরা নিয়মিত কার্যালয়ে যাচ্ছেন, দাপ্তরিক কাজ করছেন।

দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে ৯টির মেয়র আত্মগোপনে রয়েছেন। রংপুরের মেয়র জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান, গাজীপুরের মেয়র জায়েদা খাতুন এবং নারায়ণগঞ্জের সেলিনা হায়াৎ আইভী নিয়মিত কার্যালয়ে যাচ্ছেন।

প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ১২৯ কাউন্সিলরের মধ্যে আত্মগোপনে আছেন ১১৮ জন।

আগে সব ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হতো। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৫ সালের আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার পর বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করে। ফলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বিপুল সংখ্যায় সরকারদলীয় প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি কর্মস্থলে আসছেন না। তাঁদের অনুপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম প্রধান নির্বাহী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী প্রকৌশলীরা অফিস চালাচ্ছেন। তবে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা আত্মগোপনে থাকা জনপ্রতিনিধিদের কাছে থাকায় নিয়মিত কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে ৯টির মেয়র আত্মগোপনে রয়েছেন। রংপুরের মেয়র জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান, গাজীপুরের মেয়র জায়েদা খাতুন এবং নারায়ণগঞ্জের সেলিনা হায়াৎ আইভী নিয়মিত কার্যালয়ে যাচ্ছেন।

পুরো জেলা জনপ্রতিনিধিশূন্য

১০ দিন ধরে বাগেরহাট জেলার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো জনপ্রতিনিধিশূন্য হয়ে পড়েছে। বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ কামরুজ্জামান টুকু আত্মগোপনে রয়েছেন। জেলার ৯টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানই আওয়ামী লীগদলীয় এবং তাঁরা আত্মগোপনে আছেন। বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ ও মোংলা পোর্ট—বাগেরহাটের তিনটি পৌরসভার মেয়রও আত্মগোপনে রয়েছেন।

শরীয়তপুরের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পাঁচজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও পাঁচজন পৌরসভার মেয়র আত্মগোপনে আছেন। মুন্সিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন ও ছয়টি উপজেলা পরিষদের সব কটির চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও প্রধান নির্বাহী অফিসের চিঠিপত্র আদান-প্রদান করা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করছেন না। সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলা পরিষদের মধ্যে ছয়টির চেয়ারম্যান আত্মগোপনে। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। কলারোয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামও আত্মগোপনে।

৬৭ জনের মধ্যে ৫৫ জনই আত্মগোপনে

রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মধ্যে রাজশাহী, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে আছেন। জয়পুরহাট ও নাটোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অসুস্থ হয়ে বাড়িতেই থাকেন। শুধু নওগাঁ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অফিস করছেন।

রাজশাহী বিভাগের ৬৭টি উপজেলা পরিষদের মধ্যে ৫৫টির চেয়ারম্যান আত্মগোপনে আছেন। অফিস করছেন মাত্র ৯ জন। বাকি তিনজন এলাকায় থাকলেও অফিস করেন না। আর এই বিভাগের ৬১টি পৌরসভার মধ্যে ৪২টি পৌরসভার মেয়র গা-ঢাকা দিয়ে আছেন।

কুমিল্লা সিটি মেয়র তাহসীন বাহার আত্মগোপনে আছেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলম জানান, তিনি সিটি করপোরেশনে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন। সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলর দেখা করে গেছেন। প্রতিটি বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে।

তবে সারা দেশের ব্যতিক্রম চিত্র গোপালগঞ্জে। গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান মুন্সি এলাকায় আছেন এবং অফিস করছেন। পাঁচ উপজেলা চেয়ারম্যানই উপজেলায় আছেন এবং কাজ করছেন। চারজন পৌর মেয়রও এলাকায় আছেন।

টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না গুলিবিদ্ধ তালহার

১৫ আগস্ট ২০২৪, কালবেলা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না টাঙ্গাইলের খন্দকার তালহা। বিনা চিকিৎসায় গুলিবিদ্ধ পা স্বাভাবিক না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একমাত্র ছেলের অবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা কোহিনুর বেগম। বাম পায়ে গুলির সিসা নিয়েই বিছানায় কাতরানো তালহার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

জানা যায়, তালহা টাঙ্গাইল পৌরসভার বেড়াবুচনা সবুজবাগ এলাকায় খন্দকার আশরাফ আলীর ছেলে ও শহরের দারুল উলুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র। গত ৫ আগস্ট টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। একপর্যায়ে শহরের কলেজপাড়া এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তালহা ভয়ে একটি ৪ তলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। পিছু নিয়ে পুলিশ সেখানে গেলে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে সহপাঠীদের সহায়তায় তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয় হাসমত বলেন, তালহার মা কয়েকটি বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে। স্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক না থাকায় দুটি সন্তান নিয়েই তার সব স্বপ্ন। এখন ছেলের যে গতি হলো তাতে তার দুভোর্গ আরও বেড়ে গেল।

তালহার বোন সুমাইয়া আফরোজ বলেন, ভাইবোন মিলে আন্দোলনের অংশগ্রহণ করি। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। আমার ভাই যে গুলিবিদ্ধ হয়েছে সেটি জানতাম না। বাড়িতে আসার পর সহপাঠীরারা আমাকে জানায়।

গুলিবিদ্ধ তালহা বলেন, আমার বুকে পুলিশ বন্দুক ঠেকিয়ে বলে গুলি করে দেব। তখন কোনো উপায় না পেয়ে বন্দুকটি বুকে থেকে সরানোর জন্য ধস্তাধস্তি করি। একপর্যায়ে বাম পায়ে গুলি লাগে।

তালহার মা কোহিনুর বেগম বলেন, আমি এক হতভাগা নারী। আমার দুটি সন্তান নিয়ে সংসার। আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। বাপের ভিটে বাড়িতে থাকি। ছেলে আন্দোলনে গিয়ে আহত হয়েছে। ৬ দিন হাসপাতালে থাকলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা শেষ না করে বাড়ি চলে আসি।

তিনি বলেন, কোনো বৃত্তবান ব্যক্তি অথবা সরকারের কাছে আমার ছেলেকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানাই। আমি ঝিঁয়ের কাজ করে মাসে ৩ হাজার টাকা পাই। কীভাবে আমার সন্তানকে চিকিৎসা করাব। ধার দেনা করে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা শেষ করেছি। আমার হাতে আর কোনো টাকা-পয়সা নেই। এখনো তার পায়ের অপারেশন বাকি রয়েছে।

আইসিইউতে বন্দী গুলিবিদ্ধ ইমনের স্বপ্ন, অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধের পথে

১৪ আগস্ট ২০২৪, আজকের পত্রিকা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের ইমন (১৮)। গত ৪ আগস্ট বিকেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোরাইতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয় তিনি।

আহতাবস্থায় প্রথমে তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং পরে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইলের সমন্বয়ক নবাব আলীর ভাতিজা ইমন গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলিন এলাকার জুলহাসের ছেলে। তিনি মনিরুজ্জামান খান বিএম কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি হেমনগর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ঘটনার দিন অ্যাম্বুলেন্স চালক আহত ইমনকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত যেতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে উত্তরার লেক ভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুদিনেই খরচ হয় লাখ টাকা। অনেক কষ্টে সে টাকা জোগাড় করে তাঁর পরিবার। এরপর ৬ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। বর্তমানে সেখানেই আইসিইউ ইউনিটে ভর্তি আছেন ইমন।

ক্লাস সিক্সে পড়াকালে ইমনের ভ্যানচালক বাবা মারা যান। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় হওয়ায় অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয় তাঁকে। টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি সংসার চালিয়ে ছোট তিন ভাইবোনকেও স্কুলে ভর্তি করায় ইমন। ইমন স্বপ্ন দেখতেন, একদিন সংসারের দুঃখ দূর করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন হাসপাতালের আইসিইউতে বন্দী। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার।

ইমনের মা রিনা বেগম কান্না করতে করতে বলেন, ‘ওর বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেছিল ইমন। পড়াশোনা আর সারা দিন টিউশনির পাশাপাশি ছোট ভাইবোনগুলোকেও স্কুলে ভর্তি করায়। ওকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আমার কথা শোনেনি। এর-ওর কাছ থেকে টাকা ধার করে চিকিৎসা করাচ্ছি। ডাক্তার বলেছেন, জ্ঞান ফিরলে পেটে অপারেশন করা লাগবে। অনেক টাকার প্রয়োজন।’

স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রায়হান

১৫ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রায়হান হোসেনকে (২৬) নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁর পরিবার। চিকিৎসা, সুস্থ হওয়া ও তাঁর কাজে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পেরে বাড়িতে যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছেন তিনি।

রায়হান হোসেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া গ্রামের কৃষক খয়বর হোসেনের ছেলে। তাঁরা তিন ভাই-বোন। ৫ আগস্ট তিনি ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন।

গত মঙ্গলবার বিকেলে রায়হান আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি কাতরাচ্ছিলেন। পাশে হতাশা আর উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছেন মা–বাবা। সন্তান সুস্থ হতে পারবে কি না, এ নিয়ে চিন্তিত তাঁরা। মা রাশেদা বেগমের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল।

সেদিন গুলিবিদ্ধ হওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন রায়হান হোসেন। আন্দোলনে সফলতার কোনো আনন্দ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। চোখের সামনে নবম শ্রেণির এক ছাত্রের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর দৃশ্য চোখে ভেসে উঠলেই শিউরে উঠছেন তিনি।

সেদিনের রোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে রায়হান হোসেন বলেন, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ৫ আগস্ট ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতার ঢল নামে। টেলিভিশনে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করার খবর পেয়ে আনন্দে তিনিও ছাত্র-জনতার সঙ্গে মিশে গাজীপুর এলাকায় উল্লাস করছিলেন। দুপুরের পর তিনি অন্যদের সঙ্গে আশুলিয়া থানার সামনে গেলে সেখানে ৩৫ থেকে ৪০ জন পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র হাতে দেখতে পান। তাঁরা সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পুলিশ সদস্যরা অস্ত্র উঁচিয়ে সেখানে অবস্থান করছিলেন। ছাত্র-জনতা তাঁদের কাছাকাছি গেলে পুলিশ সদস্যরা অস্ত্র নামিয়ে মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করেন। পাশে ভবনের ছাদ থেকেও ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা গুলি শুরু করেন। এ সময় শিশুসহ বেশ হতাহতের ঘটনা ঘটে। তিনিও দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। এই গুলিগুলো পাশের ভবনের ছাদ থেকে পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের লোকজন করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

রায়হান আহত অবস্থায় পাশে গুলিবিদ্ধ নবম শ্রেণির আরেক শিশুকে কাতরাতে দেখেন। শিশুটি তাকে উদ্ধারের জন্য বারবার আকুতি জানাচ্ছিল। তবে তাকে উদ্ধার করতে পারেননি তিনি। চোখের সামনে ছটফট করতে করতে শিশুর মৃত্যু হয় বলে জানান রায়হান।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাঁকেসহ গুলিবিদ্ধ অন্যদের পাশের গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান বলে জানান রায়হান। তিনি বলেন, সেখানে রোগীর অতিরিক্ত চাপ থাকার কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেও ভালো চিকিৎসা পাননি তিনি। এক দিন পর পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। সেখানে তিন দিন চিকিৎসার পর বাড়িতে চলে আসেন চিকিৎসকের পরামর্শে। এখন বাড়িতেই অবস্থান করছেন।

রায়হান জানান, চার বছর আগে তিনি স্ত্রীসহ গাজীপুরে পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। সেখানে একটি কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়ার করছিলেন। পরে পোশাক কারখানার চাকরি ছেড়ে দিয়ে সেখানে একটি ইপিজেডে চাকরি নেন। চাকরি করা অবস্থায় এই ঘটনা ঘটে। কবে তিনি সুস্থ হয়ে চাকরিতে ফিরতে পারবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। পায়ের মাংস পচে গেছে। তাঁর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। উন্নত চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য তাঁর পরিবারের নেই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ২৫ থেকে ২৬ দিন হয়তো তিনি ছুটিতে থাকতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে কাজে যোগ না দিলে চাকরি হারাবেন। আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

ছাত্র আন্দোলনে ৬৫০ জন নিহত: জাতিসংঘ

১৬ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনে ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জেনেভা থেকে প্রকাশিত সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত মারা গেছেন ৪০০ জন। আর ৫ থেকে ৬ আগস্টে মারা গেছেন ২৫০ জন। বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও আন্দোলনকারীদের মুভমেন্টকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।

স্বরাষ্ট্রে নেই এম সাখাওয়াত, উপদেষ্টাদের দায়িত্বে বড় পরিবর্তন

১৬ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

নতুন চার উপদেষ্টা শপথ নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের দায়িত্বে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন শপথ নেওয়া ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে পরিকল্পনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পুরোনো উপদেষ্টাদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্বরাষ্ট্রের সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ও সামলাবেন।

নতুন উপদেষ্টাদের মধ্যে আলী ইমাম মজুমদারকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পুরোনো উপদেষ্টাদের মধ্যে সালেহউদ্দিন আহমেদকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগে তাঁকে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে আইন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আদিলুর রহমান খানকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও সামলাবেন।

মো. নাহিদ ইসলাম ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।

এ ছাড়া ফারুক-ই-আজম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। আজ শুক্রবার শপথ নেওয়া নতুন চার উপদেষ্টা তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন।

এর আগে আজ বিকেল ৪টা ১১ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন উপদেষ্টাদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, খাদ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব রয়েছে। অন্য উপদেষ্টাদের মধ্যে হাসান আরিফ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়; মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র; শারমিন এস মুরশিদ সমাজকল্যাণ; সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক; বিধান রঞ্জন রায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা; আ ফ ম খালিদ হোসেন ধর্ম; ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ; নুরজাহান বেগম স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন।

চবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ সমন্বয়কের পদত্যাগ

১৭ আগস্ট ২০২৪, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা অনলাইন

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনে সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা পদত্যাগে ঘোষণা দেন।

এরা হলেন- সমন্বয়ক সুমাইয়া শিকদার এবং সহসমন্বয়ক ধ্রুব বড়ুয়া, আল মাশনূন, সাইদুজ্জামান ও ঈশা দে। তারা কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ ও সহসমন্বয়ক খান তালাদ মাহমুদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল মাশনূন। তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম ইতিমধ্যে একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে। জনমানুষকে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়েছে। কিন্তু এই সফলতা স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হলেও, এখন নানা ধরনের সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান হয়েছে।”

তিনি বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে সমন্বয়করা জবাবদিহিতা করছে না এবং নানা ধরনের সাফাই দিচ্ছেন- যেগুলো অনেকাংশেই একপাক্ষিক। প্রথম থেকেই যেসব সমন্বয়হীনতা ও অপরাজনীতির আভাস পেয়েছি, আমরা সেগুলোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”

পদত্যাগকারী এই সমন্বয়ক বলেন, “ভিসি, প্রক্টর ও প্রভোস্টদের পদত্যাগের যৌক্তিকতা ও অযৌক্তিকতা বিষয়ে নানা ধরনের বিতর্ক উঠে আসছিল। আমরাও তাদের পদত্যাগ চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা ধাপে ধাপে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আগমন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সব লেজুড়ভিত্তিক ও দখলদারি দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা করেই যেন ভিসি পদত্যাগ করেন। কিন্তু কোনো মতামতকে যাচাই-বাছাই না করেই সমন্বয়করা ক্যাম্পাসের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে ফেলেন। শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে সমালোচনার সঠিক কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি সমন্বয়ক কমিটিতেও।”

তিনি বলেন, “আন্দোলন চলাকালে চবির সমন্বয়ক সংখ্যা ছিল ২২ জন। কিন্তু পরে আগস্ট মাসের ৫ তারিখ চবি সমন্বয়ক সদস্য সংখ্যা হয় ৩০ জন। ৫ তারিখে নতুন যে কয়জন কমিটিতে যুক্ত হয়েছে তাদের বিষয় নিয়েও মূল সমন্বয়করা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এমন ঘটনা, জবাবহীনতা ও ট্যাগা-ট্যাগির ফ্যাসিস্ট বয়ান আমাদের মনে স্বাভাবিক প্রশ্নের জন্ম দেয়। আমরা মনে করি, সমন্বয়করা আমাদের সঙ্গে সৎ নন। ক্যাম্পাস সংস্কারের কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে তারা তৎপর নন, প্রভোস্টদের পদত্যাগ না করিয়ে হলে শিক্ষার্থীদের ওঠানোর বিষয়ে আরও ভালো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারতেন।”

“আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্বেগকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে সম্মান জানাই। তাই আমরা সবাই মিলে নিজ নিজ সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করছি। আগামীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যেসব কর্মসূচি পালন হবে তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমরা সবসময় ছিলাম এবং আগামীতেও থাকবো।”

সংঘর্ষ–সংঘাতে গুরুতর আহত ৪৩৯ জন এখনো হাসপাতালে

১৭ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

মো. জাকির সিকদারের বাসা রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায়। বয়স ৩৩ বছর। গুলশানের একটি পোশাকের দোকানে চাকরি করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। গত ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে মেরুল বাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।

আহত জাকির সিকদারকে প্রথমে আফতাব নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। জাকিরের আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারে সাহস করেননি। এরপর জাকিরকে আনা হয় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)। সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেল থেকে আবার পঙ্গু হাসপাতালে। সেই থেকে জাকির পঙ্গু হাসপাতালে।

হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ–সহিংসতায় আহত ১৪৪ জন এখনো হাসপাতালে আছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের একটি করে পা কেটে ফেলা হয়েছে। একজনের হাত কাটতে হয়েছে। এই ১১ জনকে বাকি জীবন প্রতিবন্ধী হয়ে কাটাতে হবে।

জাকিরের বাঁ হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকেরা। বুলেটে হাড় ভেঙেছে, রক্তনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেন, জীবন বাঁচাতে পা কেটে ফেলা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। মোটা বড় ব্যান্ডেজ দিয়ে পা মুড়ে রাখা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে পঙ্গু হাসপাতালে কথা হয় জাকির সিকদারের মা ও তাঁর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে। তাঁরা জানান, ২১ জুলাই অস্ত্রোপচারে পা কেটে ফেলা হয়। এরপর আরও তিনবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাঁরা ঠিক জানেন না, কবে হাসপাতাল থেকে জাকিরকে ছাড়া হবে।

হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ–সহিংসতায় আহত ১৪৪ জন এখনো হাসপাতালে আছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের একটি করে পা কেটে ফেলা হয়েছে। একজনের হাত কাটতে হয়েছে। এই ১১ জনকে বাকি জীবন প্রতিবন্ধী হয়ে কাটাতে হবে।

জাকিরের বাঁ হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকেরা। বুলেটে হাড় ভেঙেছে, রক্তনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেন, জীবন বাঁচাতে পা কেটে ফেলা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। মোটা বড় ব্যান্ডেজ দিয়ে পা মুড়ে রাখা হয়েছে।

হাসপাতালের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক আহত ব্যক্তিকে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। অনেকের পা বা হাত শক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাঁরাও অনেকটা প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে আছেন।’

পঙ্গু হাসপাতালের পাশে রাস্তার ওপারে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এই হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩২ জন চোখে আঘাত পাওয়া রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের চোখে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি লেগেছিল। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, করছি। তার পরও দুই–তিনজনের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাঁরা দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন কি না, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।’

পায়ে, হাতে, চোখে বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে গুলি লেগে আহত অনেকেরই এখনো চিকিৎসা শেষ হয়নি। রাজধানীর সাতটি সরকারি হাসপাতালে এ রকম ৪৩৯ রোগীর চিকিৎসা চলছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে ১৭৫ জন, পঙ্গু হাসপাতালে ১৪৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪১ জন, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ৩২ জন, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩০ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ১২ জন আছেন। এর বাইরে বেশ কিছু আহত ব্যক্তি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যাঁদের পা কাটা গেছে, তাঁদের কৃত্রিম পা দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আছে। একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম পা সংযোজনের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রোগীদের ওষুধ দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে।

আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ব্যর্থতা: সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ

১৬ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘প্রথম ব্যর্থতা’ চিহ্নিত করার দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তাঁর মতে, ব্যর্থতাটি হচ্ছে এখন পর্যন্ত আন্দোলন ঘিরে আহত ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত ও তাঁদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে না পারা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে এ ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ আশা করেছেন তিনি।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর চানখাঁরপুলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এর আগে তিনি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন।

সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন

১৬ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

বর্তমান সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন রয়েছে। তবে আইনের অনেক ধারাতে এই আকাঙ্ক্ষাকে খারিজ করার বিষয়টি রয়েছে। সংবিধানে একজন ব্যক্তিকে প্রচুর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এই ক্ষমতা স্বৈরাচার তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তাই সংবিধান সংশোধনে কমিশন গঠন করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের অধ্যাপক এসআইএমজি মান্নান হলে ‘অংশগ্রহণমূলক গণপাঠ: এরপর কী’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন। ‘সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সংঘ’ এর আয়োজন করে।

সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সংঘের আহ্বায়ক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আফজালুল বাসারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের দায়িত্ব নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কাজেই আমাদের দেখতে হবে, এই সময়ে নির্বাচনের মধ্যে আমরা কী করতে পারি। বামপন্থিরা কি একটা জোট তৈরি করতে পারে? এই জোটের মধ্য দিয়ে যদি তারা এই নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে কি কোনো আশানুরূপ ফল আনতে পারবেন? এছাড়া আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের কথা ভাববার বিষয় আছে। যেই নির্বাচন হবে, সেটা শুধু একটা জাতীয় পরিষদ নির্বাচন হবে, তা নয়। এই পরিষদের অন্যতম দায়িত্ব হবে এই সংবিধানকে সংশোধন করা। কেননা এই সংবিধান অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সংবিধান কমিশন করে সংবিধানের সংশোধন করতে হবে। এই সরকার থাকতে থাকতেই এর কাজ শুরু করা দরকার। একইসঙ্গে মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতন করতে হবে। ফ্যাসিবাদের পতন আন্দোলনকে এখন শোষণ মুক্তির সংগ্রামে রূপান্তর করতে হবে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বিগত সময়ের ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো- তা সাংবিধানিকভাবে কতটা ঠিক, তা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। এদেশের সংবিধান ক্রমান্বয়ে সংশোধন হতে হতে অধিকতর স্বৈরতান্ত্রিক, অগণতান্ত্রিক, ক্ষমতা কেন্দ্রীভ‚ত করা, সাম্প্রদায়িক ও জাতিবিদ্বেষী হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষা কিংবা তার যে প্রভাব তা সংবিধানে এখনও আছে। তবে এগুলো খারিজ করার মতো অনেক আইনও আছে। আগে যেসব সরকার এসেছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা খারিজ করার বিষয়টি গ্রহণ করেছে। এই যে সরকার গঠিত হয়েছে, সেটা সাংবিধানিকভাবে একটা অনিশ্চিত অবস্থায় আছে। তবে সরকারের মূল শক্তিটা হচ্ছে জনগণের সম্মতি।

তিনি বলেন, এই সংবিধান রেখে যদি সরকার পরিচালিত হয় কিংবা পরবর্তী সরকার আসে- তাহলে সেই সরকারের ভূমিকা হবে শেখ হাসিনার মতো। এই সংবিধান এমন ক্ষমতাই প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছে। তিনি যা খুশি তাই করতে পারেন। এই আন্দোলনের পর করণীয় হলো এই সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন তোলাই বড় কাজ। এই সংবিধান কীভাবে সংশোধন হবে সেটা আলোচনার বিষয়। এ সময় তিনি অন্য দেশের সঙ্গে প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত সব ধরনের চুক্তি জনগণের সামনে তুলে ধরার দাবি জানান।

বিতর্কিত সংস্থা ‘এনটিএমসি’ বিলুপ্তির দাবি

১৭ আগস্ট ২০২৪, ঢাকা পোস্ট

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারকে (এনটিএমসি) বিতর্কিত উল্লেখ করে বিলুপ্তির দাবি করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।

শনিবার (১৭ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এমন দাবির কথা জানিয়েছেন।

সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এনটিএমসি মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের ক্ষুণ্ন করেছে। নাগরিকের মুঠোফোনে আড়িপাতা, ডিভাইস নজরদারিতে রাখা, ফেসবুক-মেসেঞ্জার, এক্স, টেলিগ্রাম, ভাইবার, ইমো ও স্কাইপিতে এমন কি ওয়েবসাইট ব্লক ও ইমেইলে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছে। এটি একটি বিতর্কিত টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, এই সংস্থার কার্যক্রম সংবিধান পরিপন্থি। সংবিধানের ধারা ৪৩ এর (খ) অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র ও যোগাযোগের সকল মাধ্যমের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। অথচ ২০১৩ সালে এই সংস্থাটি গঠন করা হয় বিতর্কিত এবং বরখাস্ত হওয়া মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের পরামর্শে। মূলত, নাগরিকদের যোগাযোগে আড়িপাতা এবং নজরদারিতে রাখার জন্যই এই সংস্থা গঠন করা হয়েছে।  ফোনালাপ রেকর্ড ও ফাঁস, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন অ্যাপে আড়িপাতা ছাড়া অন্য কোন কাজই করেনি এই সংস্থাটি।

মহিউদ্দিন আহমেদ আরও অভিযোগ করেন, এনটিএমসি মোবাইল অপারেটরদেরও বাধ্য করেছে বিভিন্ন ধরনের মেসেজ গ্রাহকদের পাঠাতে। ফোনালাপ রেকর্ড এমনকি ভিডিও কলও রেকর্ড করে অনেক সম্ভ্রান্ত নাগরিককে হেনস্তা করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

তিনি দাবি করেন, তারা বিক্যাল মাউন্টেন ডাটা ইন্টারসেপ্টর এবং বিক্যাল মাউন্টেন মোবাইল ইন্টারসেপ্টরের মতো ভয়ানক যন্ত্র ব্যবহার করেছে। এমনকি বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা বিতর্কিত ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কাছ থেকে পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেনা হয়েছিলো বলেও দেশ ও বিদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। আমরা আগেই এর প্রতিবাদ করেছিলাম এবং তদন্ত চেয়েছিলাম। যদিও সরকার বলেছিলেন এই ধরনের যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি।

এনটিএমসির বিলুপ্তির দাবিপত্র শিগগিরই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা এবং সংবিধান পরিপন্থি। সেই সঙ্গে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তাই দেশ জাতি এবং সংবিধানকে সমুন্নত রেখে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এনটিএমসি বিলুপ্তি আবশ্যক। তাই আমরা নাগরিকদের পক্ষ থেকে এবং গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ও সুরক্ষার স্বার্থে এই সংস্থার বিলুপ্তির জন্য বর্তমান সরকারের কাছে স্মারকলিপি জমা দিবো।

শেখ হাসিনার বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে

১৫ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রচলিত আদালতের বদলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচার সম্ভব কিনা, তা নিয়ে আইনজ্ঞদের দ্বিমত থাকলেও গতকাল বুধবার হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে শেখ হাসিনা সরকার ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ শতাধিক স্বাধীনতাবিরোধীকে সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল। এই প্রথম স্বাধীনতাবিরোধী নয়, এমন কারও বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ পড়ল।

গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যেসব গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড ও গুলির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হতে পারে। এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি, যারা আদেশ দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবাইকে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।

আইএসপিআর: সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৬২৬, এখন আছেন ৭ জন

১৮ আগস্ট ২০২৪, ঢাকা ট্রিবিউন অনলাইন বাংলা

সেনানিবাসের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় নিয়েছিলেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার ৬২৬ জন। তবে বর্তমানে ৭ জন সেনানিবাসে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী সংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর।

রবিবার (১৮ আগস্ট) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, “গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। এ সময় প্রাণনাশের শঙ্কায় কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিবিধ নাগরিকগণ সেনানিবাসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ, জীবন রক্ষা ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে জীবন বিপন্ন ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ২৮ জন পুলিশ অফিসার, ৪৮৭ জন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন ও ৫১ জন পরিবার-পরিজনসহ (স্ত্রী ও শিশু) সর্বমোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়।”

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে ৬১৫ জন স্ব-উদ্যোগে সেনানিবাস ত্যাগ করেন। আশ্রয় দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত ৪ জনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়প্রাপ্ত ৩ জন তাদের পরিবারের ৪ জন সদস্যসহ মোট ৭ জন সেনানিবাসে অবস্থান করছেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সব তথ্য দেওয়া হয়েছে।”

সাবেক মন্ত্রীসহ আলোচিতরা কোথা থেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন

১৮ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা। আত্মগোপনের তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিরাও। তাঁদের কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হচ্ছেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকায় এখন পর্যন্ত ছয় আলোচিত ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। এ ছাড়া একজন সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাও আছেন। এই ছয় জনের দুজনকে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েকদিন আগে বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগের সময় আটকে দেওয়া হয়েছে বলে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ভিন্ন স্থান থেকে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, আটক হওয়া ব্যক্তিরা তাহলে কোথা থেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন?

তবে কোন পর্যায়ের ব্যক্তিরা আশ্রয় পেয়েছেন, সে বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। ফলে হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা হলে তাঁকে কীভাবে আইনের আওতায় নেওয়া হবে, সে বিষয়েও স্পষ্ট করে জানা যায়নি।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সেনা হেফাজতে নেওয়াসংক্রান্ত বিষয়ে ১৩ আগস্ট রাজশাহী সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘কারও যদি জীবন বিপন্ন হয়, ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে, অবশ্যই আমরা তাঁদের আশ্রয় দিয়েছি। তাঁদের প্রতি যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, অবশ্যই তাঁরা শাস্তির আওতায় যাবেন। কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইব না যে বিচারবহির্ভূত কোনো কাজ হোক, হামলা হোক। তাঁদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাঁদের আশ্রয় দিয়েছি। যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক, যে ধর্মের হোক, সেটা আমরা করব।’

তবে কোন পর্যায়ের ব্যক্তিরা আশ্রয় পেয়েছেন, সে বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। ফলে হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা হলে তাঁকে কীভাবে আইনের আওতায় নেওয়া হবে, সে বিষয়েও স্পষ্ট করে জানা যায়নি।

পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের কাছে গতকাল বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তারা বলেছে, সেনাপ্রধান ইতিপূর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তাই এ নিয়ে তাদের আলাদা কোনো বক্তব্য নেই।

আলোচিত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ১৩ আগস্ট জানানো হয়েছিল, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানী ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে এই দুজনকে নিউমার্কেট থানার মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হয়, আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে আগেই আটক করা হয়েছিল। গ্রেপ্তার দেখানো হয় পরে।

১৪ আগস্ট সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহ্‌মেদ পলক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তারের খবর জানায় ডিএমপি। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক তাঁর ব্যক্তিগত দুজন কর্মকর্তাকে নিয়ে দেশত্যাগের জন্য ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। সে সময় তাঁকে বিমানে উঠতে না দিয়ে ইমিগ্রেশন হেফাজতে আটকে রাখা হয়, সে খবর তখন গণমাধ্যমে প্রচারও হয়েছিল। একইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকে তাঁরা কোথায় ছিলেন, তা আর জানা যায়নি। আটদিন পর পলক ও সৈকতকে গ্রেপ্তার করা হলেও রিয়াজের অবস্থান সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনারকে একাধিকবার কল করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ ১৬ আগস্ট গ্রেপ্তার হন সেনাবাহিনী থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। তিনি সর্বশেষ টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। ১৬ আগস্ট বেলা ১টা ৫৪টা মিনিটে ডিএমপি গণমাধ্যমকে জানায়, নিউমার্কেট থানার একটি মামলায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে ১৫ আগস্ট গভীর রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ডিএমপির পক্ষ থেকে সংশোধনী দিয়ে বলা হয়, জিয়াউল আহসানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় সেনাবাহিনীর আশ্রয় গ্রহণ করলে ১৫ আগস্ট দিবাগত রাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যদিও জিয়াউল আহসানকে আদালতে হাজির করে যে রিমান্ড আবেদন করা হয় তাতে পুলিশ বলেছে, ১৬ আগস্ট রাজধানীর ৩০০ ফিট সংলগ্ন খিলক্ষেত থানা এলাকা থেকে অভিযান পরিচালনা করে তাঁকে আটক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের মুঠোফোনে পাঁচবার কল করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। এ ছাড়া ডিএমপির ঊর্ধ্বতন আরও তিন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনারকে একাধিকবার কল করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, সংস্কারের পর নির্বাচন

১৮ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এমন একটি সময়ে এসে দেশের দায়িত্ব নিয়েছি, যখন প্রায় সবক্ষেত্রেই চরম বিশৃঙ্খলা। তাই নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করবে।’

রাজধানীর একটি হোটেলে আজ রোববার দুপুরে ঢাকায় বিদেশি বিভিন্ন মিশনের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের প্রথম ব্রিফিংয়ে ড. ইউনূস এ কথা বলেন। গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের নবযাত্রায় বাংলাদেশের বন্ধু, অংশীদার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাশে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

পরে ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি কূটনীতিকদের পুরোপুরি সমর্থন চেয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের বন্ধুদের মধ্যে থাকতে পেরে আনন্দিত। দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে। শেখ হাসিনার নৃশংস স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল লাখো বীরছাত্র-জনতা। কিন্তু তাঁর (শেখ হাসিনা) দলের ছাত্র সংগঠন ও শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দেশে ভয়াবহতম বেসামরিক গণহত্যা করার পর তিনি (শেখ হাসিনা) দেশ ছাড়েন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি সেই সমস্ত বীর ছাত্র এবং নিরীহ মানুষদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই, যাঁরা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। আমাদের সাম্প্রতিক স্মৃতিতে অন্য কোনো দেশের ছাত্রদের তাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের জন্য এত মূল্য দিতে হয়নি; যেখানে একটি বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং পরিবেশবান্ধব একটি দেশের স্বপ্ন দেখতে হয়েছে, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এমন একটি সময়ে এসে দেশের দায়িত্বভার নিয়েছি, যেখানে অনেক দিক থেকেই পুরোপুরি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্ষমতায় থাকার চেষ্টায় শেখ হাসিনার স্বৈরাচার সরকার দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।’ তিনি বলেন, দীর্ঘ দেড় দশকের নির্মম নৃশংসতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার দমন করা হয়েছিল। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম তাদের ভোটাধিকারের চর্চা না করেই বেড়ে উঠেছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুট হয়েছে। আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে লুণ্ঠন করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার।

ড. ইউনূস বলেন, ‘দেশ নিয়ে ছাত্রদের একটি স্বপ্ন আমাদের মুগ্ধ করেছে, যে স্বপ্ন একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে।’ তিনি বলেন, ছাত্ররা এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখছে যেখানে মানুষ তাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয়–নির্বিশেষে, নিজেদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। সরকার গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। সশস্ত্র বাহিনী বেসামরিক শক্তির সহায়তায় কাজ চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না পরিস্থিতি নিশ্চিত হবে। সব ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ অন্তর্বর্তী সরকার।

প্রধান উপদেষ্টা দেশে জুলাই-আগস্ট মাসে আন্দোলনে নিহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্তকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, তিনি চান এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তদন্তে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ সরকার সহায়তা দেবে।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ যতগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে, তার সব বাস্তবায়ন করবে সরকার। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের জন্য দায়িত্ব পালন করব। এরপর আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করব। জাতীয় ঐকমত্য বৃদ্ধির জন্যও আমরা আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাব।’

হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির আগে তরুণ কর্মকর্তাদের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন সেনাপ্রধান

১৮ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলন একপর্যায়ে রূপ নেয় সরকার পদত্যাগের এক দফায়। পুলিশবাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হলে একপর্যায়ে সারা দেশে সেনা মোতায়েন করে সরকার। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি, দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর আগে ২ আগস্ট এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ওই দিন এক বৈঠকে তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। খবর ভারতীয় সাপ্তাহিক সংবাদ সাময়িকী দ্য উইকের।

প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য ওই বৈঠক ডেকেছিলেন সেনাপ্রধান। সেখানে তিনি সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভ প্রশমনে কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। ওয়াকার-উজ-জামান তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর হলে বাংলাদেশ কেনিয়া বা আফ্রিকার দেশগুলোর মতো হয়ে যেতে পারে।

এ সময় তিনি কর্মকর্তাদের সংযত থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ১৯৭০ সালের পর আমাদের দেশে এমন গণবিক্ষোভ আর কখনো ঘটেনি। এটি একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।

তবে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে আশ্বস্ত হননি কর্মকর্তারা। তরুণ কর্মকর্তাদের ক্ষোভ প্রকাশের মধ্য দিয়ে বৈঠকটি শেষ হয়। এর মধ্য দিয়ে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবি মানতে বাধ্য হন।

বিএনপির ১১৭ নেতাকর্মী নিহত, জামায়াতের ৮৭

১৯ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের অন্তত ১১৭ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৮৭ নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীও জীবন দিয়েছেন শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসন উৎখাতে।

অভ্যুত্থানকে রাজনৈতিক রূপ না দিতে হতাহত নেতাকর্মীর তালিকা গোপন রাখার কৌশল নিয়েছে দলগুলো। অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা আন্দোলনের সূত্রপাতকারী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বিরোধে না জড়াতেই এ কৌশল বলে জানা গেছে।

তবে সমকাল দলগুলোর সূত্রে নিহত নেতাকর্মীর বড় অংশের পরিচয় পেয়েছে। বিএনপি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ছাত্রদলের ৩৪, যুবদলের ৩৫, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৯, শ্রমিক দলের ১৪, কৃষক দলের ৪, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ৬, দক্ষিণ বিএনপির ১২, মৎস্যজীবী দলের ২, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের এক নেতাকর্মীর প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। বহু নেতাকর্মী চিকিৎসাধীন থাকায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, শিবিরের নিহত নেতাকর্মীর সংখ্যা অন্তত ৫৩। জামায়াতের ৩৪ জনের প্রাণ গেছে। তীব্র আন্দোলনের প্রথম দিন গত ১৬ জুলাই শিবিরের দুই নেতা নিহত হন। ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার পর ৪ ও ৫ আগস্ট জামায়াত-শিবিরের ৬০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। যদিও দলটি কেউ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানায়নি।

আহতদের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ

২০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলেছে, পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে বিলম্ব করছে।

১৭ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মেহাম্মদ আবদুল হাই পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালককে দেওয়া এক চিঠিতে রোগীর প্রতি অবহেলা ও বিলম্বের এই অভিযোগ তুলেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ঢুকতে দেওয়া যাবে না, রোগী দেখার সময়সূচি চিকিৎসকদের যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং সাক্ষাতের সময়সূচি ছাড়া কোনো দর্শনার্থী হাসপাতালের ভেতরে বা কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না।

এই চিঠি পেয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক কাজী শামীমুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যা চিকিৎসা প্রয়োজন, ঠিক তা–ই দেওয়া হচ্ছে, বিলম্বের অভিযোগ ঠিক না। সমস্যা সৃষ্টি করছেন দর্শনার্থীরা। ছাত্রসংগঠন, নানা সামাজিক সংগঠন, সরকারি কর্মকর্তাসহ বহু ধরনের মানুষ দল বেঁধে আসছেন। কেউ খাবার, কেউ ওষুধ, কেউ টাকা দিতে আসছেন। তাঁদের সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।’

গতকাল সোমবার দুপুরে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর পরিচালকের দপ্তরের সামনে পৃথকভাবে দুই দল শিক্ষার্থী এসে জড়ো হন। তাঁরা সাহায্য ও খাবার দিতে চান।

কী অভিযোগ মন্ত্রণালয়ের

সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগীর প্রতি অবহেলার অভিযোগ আসে প্রধানত রোগীর পক্ষ থেকে। সরকার পতনের পর হঠাৎ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিযোগ তুলল মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে অবহেলা ও চিকিৎসায় বিলম্বের পাশাপাশি আরও কিছু অভিযোগ আছে। বলা হয়েছে, আহত ব্যক্তিদের অপারেশন থিয়েটারে আনা–নেওয়া, অপারেশন করা এবং অপারেশনের পর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বেশি সময় নেওয়া হচ্ছে। সরকার সব ধরনের খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও রোগীদের হাত–পায়ে রড লাগানো, রক্ত সরবরাহ ও ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করার সময় নানা অজুহাতে আহত ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে।

গতকাল হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের চিঠির ব্যাপারে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই অধ্যাপক প্রথম আলোকে বলেন, এই হাসপাতালে কেনাকাটার কাজ নিয়ন্ত্রিত হয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। লোক নিয়োগ হয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। রোগীদের গজব্যান্ডেজ খোলা ও লাগানো বা ড্রেসিংও নিয়ন্ত্রণ করে একটি সিন্ডিকেট। এর পাশাপাশি এটাও সত্য যে জনবলের ঘাটতি আছে। জনবলের ঘাটতি দূর না করে ছাত্র আন্দোলনের সময় আহত ব্যক্তিদের মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে হলে অন্য রোগীরা সেবা পাবেন না। এতে সাধারণ রোগীদের ক্ষেত্রে বৈষম্য হবে।

গতকাল পঙ্গু হাসপাতালে ১৪২ জন আহত রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের শরীরে অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, অস্ত্রোপচারের বিধি হচ্ছে—ঘা শুকানোর পর অস্ত্রোপচার করতে হয়। কারও কারও ঘা শুকাতে বিলম্ব হয়। এতে সময় দিতে হয়; কিন্তু এই সময়টা অনেকেই দিতে চাইছেন না।

সিটি মেয়রসহ ১ হাজার ৮৭৬ জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ

২০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৬০টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সারা দেশের সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। স্থানীয় সরকারের এই চার স্তরে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮৭৬ জন জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করা হলো।

অপসারণ করা মেয়র ও চেয়ারম্যানদের জায়গায় সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গতকাল সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগ পৃথক প্রজ্ঞাপনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। গত শনিবার বিশেষ পরিস্থিতিতে এসব জনপ্রতিনিধি অপসারণের সুযোগ রেখে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল।

আগে সব ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হতো। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। শুরুর দিকে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। তবে সেখানে ব্যাপক কারচুপি, দখলের অভিযোগ ওঠে। পরে ক্রমে বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন শুরু করে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন কোনো নির্বাচনে দলটি অংশ নেয়নি। ফলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ এ বছর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপিসহ অধিকাংশ দল অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেয়নি। এ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা কর্মী জয়ী হন। সিটি করপোরেশনের ভোটেও একই চিত্র দেখা গেছে। কার্যত জেলা ও উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার প্রায় সব শীর্ষ পদই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দখলে ছিল।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প যাচাই–বাছাই হবে: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

১৯ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প কিংবা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে, এমন প্রকল্প আবার যাচাই–বাছাই করা হবে। এসব প্রকল্প দ্রুত মূল্যায়ন করা হবে। প্রয়োজনে ছাঁটাই করা হবে।

আজ সোমবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এ সভা হয়।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, চলমান প্রকল্প হলেই রেখে দিতে হবে, তা নয়। লাভ হবে না, এমন প্রকল্প বাদ দেওয়া ভালো। এমন অনেক প্রকল্প আছে, যেগুলো খুবই অপচয়মূলক। সড়কসহ বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্পে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে বলে দেখা গেছে। অনেক সময় ঠিকাদারদের স্বার্থ দেখা হয়েছে।

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ৮১৯ জনের মৃত্যু: এইচআরএসএস

২০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ৮১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় সারা দেশে অন্তত ২৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। অধিকাংশই গুলিতে আহত হন।

২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘন–সংক্রান্ত এক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরেছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন এইচআরএসএসের গবেষণা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। ১২টি জাতীয় দৈনিক, এইচআরএসএসের তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিট ও সারা দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

আন্দোলনের মুখে এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিল, ফল কীভাবে সিদ্ধান্ত পরে

২০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

আন্দোলনের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল কীভাবে দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত পরে হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে আজ দুপুরে সচিবালয়ে গিয়ে স্থগিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাগুলো আর দিতে চান না এবং অটো পাসের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীরা চান, ইতিমধ্যে যে কটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, তার ভিত্তিতে এবং স্থগিত বিষয়ের পরীক্ষা এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে ম্যাপিং করে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হোক। এ দাবিতে আগের দিন (গতকাল সোমবার) ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাওয়ের পর আজ সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে ভবনে অবস্থিত, সেই ভবনের নিচে অসংখ্য শিক্ষার্থী জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে।’ এরপর একপর্যায়ে বেলা ৪টার দিকে সচিবালয়ের ১৮ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উঠে যায়। শিক্ষার্থীরা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ দপ্তরের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় সচিবালয়ের সব প্রবেশপথ আটকে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাঁদের দাবি মেনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।

প্রশাসনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে সময় লাগবে

২১ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে জনপ্রশাসনে এখনো স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি। বিগত সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত কিছু কর্মকর্তা সচিবালয়ে আসছেন না। একজন সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে সচিব পদে থাকা ১১ জন কর্মকর্তার।

অন্যদিকে বিগত সরকারের আমলে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা বিক্ষোভে নেমেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পদোন্নতি দেওয়াও শুরু হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদ পর্যন্ত মোট ৩৪০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

মাঠ প্রশাসনেও একধরনের অস্থিরতা চলছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। এর ফলে মাঠ প্রশাসনের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের আন্দোলনের মুখে তিন দিনের ছুটি নিয়ে কর্মস্থল ছেড়েছেন ঝিনাইদহের ডিসি এস এম রফিকুল ইসলাম। গত রোববার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ডিসির দুর্নীতি, দলীয়করণ, ঘুষ-বাণিজ্য ও অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য পাচারের অভিযোগ এনে তাঁর কার্যালয় ঘেরাও করেন। এরপর ডিসি ছুটিতে যেতে বাধ্য হন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিগত সরকারের আস্থাভাজন সব ডিসিকে প্রত্যাহার করা হবে। তাঁদের পরিবর্তে নতুন ডিসি নিয়োগের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

সচিবালয় ও মাঠপ্রশাসনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সাবেক দুজন জ্যেষ্ঠ আমলার মূল্যায়ন হচ্ছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে জনপ্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে, তা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। এই অনিয়মের ফল হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের সব স্তরে একধরনের অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত দুই সপ্তাহে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদ পর্যন্ত মোট ৩৪০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতি-সংক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দীর্ঘদিন যাঁরা বঞ্চিত ছিলেন, তাঁরা যেমন পদোন্নতি পেয়েছেন, তেমনি যাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁরাও পদোন্নতি পেয়েছেন। এ নিয়েও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ৪৫ জন কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে প্রথমে উপসচিব, এরপর আবার পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়ে গেছেন। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে দুবার পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে বলা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই কর্মকর্তারা পদোন্নতিবঞ্চিত ছিলেন। তাঁদের ব্যাচের অনেক কর্মকর্তা কয়েক বছর আগেই সচিব হয়ে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপসচিব পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখন চাপ দিয়ে পদোন্নতি নেওয়া হচ্ছে। শৃঙ্খলা মানা হচ্ছে না। পদোন্নতিবঞ্চিতরা অন্য কর্মকর্তাদের কক্ষে (যাঁরা এখন অফিসে আসছেন না) বসে থাকেন। এটি জনপ্রশাসনের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪৫ জন কর্মকর্তাকে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে প্রথমে উপসচিব, এরপর যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন, তা জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এখন এক ব্যতিক্রমী ও অস্বাভাবিক সময় চলছে। পদোন্নতির বিষয়টিকে সেভাবেই দেখা উচিত। এর প্রভাব কী হবে, তা এখনই বলা যাবে না।

লিয়াজোঁ কমিটির ওরা ছয়জন

আগস্ট ২৩, ২০২৪, বণিক বার্তা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর রাষ্ট্র পরিচালনায় গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য নবগঠিত সরকারকে পরামর্শ দিতে লিয়াজোঁ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৮ আগস্ট ঘোষিত ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রধান মাহফুজ আলম (আব্দুল্লাহ)। অন্য সদস্যরা হলেন নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (নাসির আব্দুল্লাহ), আকরাম হুসাইন, ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান, মামুন আব্দুল্লাহিল ও আরিফুল ইসলাম আদীব। সরকার, অংশীজন ও ছাত্র-জনতার সঙ্গে সমন্বয় করাই মূলত তাদের দায়িত্ব।

নবীনদের দিয়ে গঠিত এ কমিটির সদস্যদের নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। চলছে নানা আলোচনা। ছাত্র-জনতা এবং সরকারের মাঝে সেতু হিসেবে কাজ করা এ যুবকদের নাম-পরিচয় ও দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে আগ্রহী সারা দেশের মানুষ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রূপরেখা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান মাহফুজ আলম (আব্দুল্লাহ)। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, পাঠচক্রের সঙ্গে যুক্ত। সাংবাদিকতাও করেছেন বেশ কিছুদিন। মাহফুজ আলম বর্তমানে বেশ কয়েকটি পাঠচক্র এবং পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিনেযোগ, গুরুবার আড্ডা, পূর্বপক্ষ, রণপা, দ্য কুইল্ট।

কমিটির পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্বে আছেন নাসির আব্দুল্লাহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ওই সেশনে ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১১তম স্থান লাভ করে মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন দারুননাজাত আলিম মাদ্রাসা থেকে।

নাসির আব্দুল্লাহর সহপাঠীরা জানান, এর আগে তিনি ছাত্র ফেডারেশন এবং এবি পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ২০২০ সালে সীমান্ত হত্যা বন্ধে একাই রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

লিয়াজোঁ কমিটির এডুকেশন অ্যান্ড আদার অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক সদস্য আকরাম হুসাইন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন ঢাকা কলেজ থেকে। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। পরে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল থেকে সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করেন।

আকরাম হুসাইন সাহিত্য পত্রিকা ‘সমাজচিন্তা’র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রকাশনা ‘মুক্তি’র সম্পাদকও ছিলেন তিনি। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সদস্য। তার বাবা হাফেজ আলমগীর ধানমন্ডির একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলার কান্দাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করা আকরাম হুসাইন বাবার কর্মস্থল রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় বেড়ে ওঠেন। স্নাতক সম্পন্ন করে ক্রিয়েটিভ আইটি থেকে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করেন। বর্তমানে একটি ডিজিটাল মার্কেটিং চালান, যেখানে কাজ করেন ২০ জনের মতো তরুণ-তরুণী। এ বছরের শুরুতে আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্টের আইভিএলপি ইয়াং লিডার হিসেবেও মনোনীত হন আকরাম হুসাইন।

লিয়াজোঁ কমিটির পলিসি অ্যাফেয়ার্স বিষয়াবলি দেখছেন ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। প্রাথমিক শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেছেন গ্রিন লাইফ নার্সারি কেজি স্কুল এবং ওয়ারুক আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।

আসাদুজ্জামানের সহপাঠীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে তিনি বিভিন্ন সাহিত্যিক কর্মকাণ্ড এবং পাঠচক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আন্দোলনেও শুরু থেকে অংশ নিতেন। বর্তমানে আসাদুজ্জামান অর্থনীতিবিষয়ক একাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া ‘রণপা’ নামে শিল্প-সাহিত্যবিষয়ক একটি মাসিক পত্রিকার সম্পাদনা পর্ষদের সদস্য হিসেবেও আছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মামুন আব্দুল্লাহিল দায়িত্ব পালন করছেন লিয়াজোঁ কমিটির ফরেন অ্যাফেয়ার্স বিষয় নিয়ে। কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণে ছাত্রদের অধিকার সংরক্ষণ থেকে শুরু করে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছিলেন সক্রিয়। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ইস্যুতে সরব থাকতেন। ঢাবি শিক্ষার্থীদের পরিচালিত পাঠচক্র ‘আড্ডা’র নিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি। আড্ডার পাঠচক্র ও সেমিনার মূলত রাজনৈতিক জ্ঞানচর্চা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে বিরাজনীতিকীকরণের সংস্কৃতি থেকে উত্তরণের উপায়গুলোকে চিহ্নিত করে সংঘটিত হতো। সেসব নিছক জ্ঞান আহরণের অরাজনৈতিক পাঠচক্র ছিল না।

মামুন আব্দুল্লাহিল ২০১১ সালে ঝিনাইদহের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন ঢাকার ইম্পিরিয়াল কলেজে। ২০১৩ সালে এইচএসসি সম্পন্নের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। তার পৈত্রিক নিবাস লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নে। বাবা স্কুল শিক্ষক, মা গৃহিণী।

মিডিয়া ও তথ্য অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্ব পালন করছেন আরিফুল ইসলাম আদিব। ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এর আগে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আদিব বর্তমানে রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের ঘোষণাপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। পেশাগত জীবনে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০২০ সালের পর থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট ও মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন।

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে জন্ম নেয়া আদিবের বাবা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক, মা গৃহিণী। ২০১১ সালে বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক সম্পন্নের পর আদিব ভর্তি হন ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, দেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিকড় প্রোথিত রয়েছে ‘গুরুবার আড্ডা’ নামে একটি পাঠচক্রে। ২০২১ সালে এটি শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ আলম। গুরুবার আড্ডার ধারণা ছিল ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক পাঠচক্রের মাধ্যমে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও রাজনৈতিক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে বোঝাপড়া নিশ্চিত করা।

তারা আরো জানান, ২০২৩ সালে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ছাত্র অধিকার পরিষদের আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠলে দলটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা একযোগে দল থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করা কর্মী ও ‘গুরুবার আড্ডা’র পাঠচক্রের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি’। এতে যোগ দেয়া নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পান খুব দ্রুতই। আন্দোলনের সমন্বয়ক ও লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যদের অনেকে এ গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি এবং পাঠচক্র আড্ডার সদস্য।

জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা

দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে, কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন

২৬ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সরকারের নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে তাঁরা কখন এই সরকারকে বিদায় দেবেন। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে তাঁরা এই দায়িত্ব নিয়েছেন। সরকার সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করবে।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গতকাল প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করব। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।’

জাতীয় সংসদ নিবাচন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব, যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়, আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব।’

সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কাজ শুরু করেছে উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দেশবাসীকে অনুরোধ করব, একটা আলোচনা শুরু করতে, আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাব, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিকনির্দেশনা পেতে পারি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে।’

এই দিকনির্দেশনা না পেলে তাঁরা দাতা সরকার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনায় দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হতে পারছেন না বলেও উল্লেখ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো প্রশ্ন তুলব না। আমরা আপনাদের সকলের দোয়া চাই। যে ক’দিন আছি সে সময়টুকু উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রত্যেকে নিজ নিজ সাধ্যমতো দেশের এই সংকটকালে, সংকট উত্তরণে যেন নিজ নিজ মেধা সাধ্যমতো কাজে লাগাতে পারি, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করলাম, আমরা আমাদের মতানৈক্যের কারণে সেটা যেন হাতছাড়া না করে ফেলি এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এ সুযোগ এবার হারিয়ে ফেললে আমরা জাতি হিসেবে পরাজিত হয়ে যাব।’

নির্বাচন কমিশনকে সংস্কার করে যেকোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখা হবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা খাত এবং তথ্য প্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর লক্ষ্য হবে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা।’

সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

২৬ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

বাংলাদেশ সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

ডিএমপি নিউজ জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান রোববার এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলেন, সাম্প্রতিক উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্সের ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে সোমবার (২৬ আগস্ট) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের (যমুনা) আশপাশের এলাকায় যেকোনো প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।

জনস্বার্থ বিষয়ক নীতিনির্ধারণে সহযোগিতায় নাগরিক কমিটি গঠন

২৭ আগস্ট ২০২৪, কালবেলা

জনগণকে সংগঠিত করে রাখা, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা, তদুপরি জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণে সহযোগিতার লক্ষ্যে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, এই কমিটি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন নিশ্চিত করবে।

গত শুক্রবার (২৩ আগস্ট) নাগরিক দায়িত্বের জায়গা থেকে একটি সভা করেন ৩৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক। সবার মতামতের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেন তারা।

গঠিতব্য এই কমিটি ৫টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে। সেগুলো হলো- গণঅভ্যুত্থানের শহিদ ও আহতদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাঁচিয়ে রাখা; মহানগর, জেলা, উপজেলা পর্যন্ত কমিটির বিস্তৃতি সাধনের জন্য কাজ করা; দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সমন্বিত উপায়ে সংহত করা; গণঅভ্যুত্থানের অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের জায়গায় পর্যালোচনা ও প্রস্তাবনা তৈরির কাজ করা এবং গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন করা।

সভার আয়োজকরা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে দেশের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিরুদ্ধে একটি গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। সহস্রাধিক শহীদ ও আহত ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিনিময়ে আমরা মুক্ত হয়েছি। গণঅভ্যুত্থান এর ভেতর দিয়ে জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু, গণঅভ্যুত্থানের ঘোষিত লক্ষ্য – ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠন এখনো দীর্ঘ রাজনৈতিক ও নীতিনির্ধারণের লড়াই দাবি করে। এখনো রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং শাসনকাঠামোর বিভিন্ন অংশে ফ্যাসিবাদের দোসররা নানারূপে বিরাজ করছে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার কুফল এখনো জনগণ প্রত্যক্ষ করছেন। অন্যদিকে, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পূর্বশর্ত হিসেবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন, জনস্বার্থের প্রতি সংবেদনশীল নীতিনির্ধারণ, তদুপরি গণহত্যাকারীদের যথাযথ বিচারের ক্ষেত্রেও অগ্রগতির অভাব রয়েছে।

তারা আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে আমরা নতুন রাজনৈতিক ভাষা ও জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনা অর্জন করেছি। সে সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তরের জন্যও আমাদের কাজ করে যেতে হবে। যাতে নবগঠিত এ রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হয়। ফলে, জনগণকে সংগঠিত করে রাখা, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা, তদুপরি জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণে সহযোগিতার লক্ষ্যে আমরা নাগরিক দায়িত্বের জায়গা থেকে গত ২৩ আগস্ট একটি সভায় বসেছিলাম।

সভায় উপস্থিত ছিলেন আসাদুজ্জামান (গবেষক), মামুন আব্দুল্লাহি (গবেষক), এরশাদুল বারী খন্দকার (আইনজীবী), সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ (গবেষক), মনিকা ইয়াসমিন (এক্টিভিস্ট), ফয়সাল মাহমুদ শান্ত (শিক্ষক ও এক্টিভিস্ট), সারোয়ার তুষার (গবেষক ও লেখক), আতাউল্লাহ (সংগঠক), আলাউদ্দীন মোহাম্মদ (শিক্ষক, গবেষক ও সংগঠক), আসিফ ত্বাসীন (সাংবাদিক), জাইমা ইসলাম (সাংবাদিক), মুশফিক উস সালেহীন (এক্টিভিস্ট), সামান্তা শারমিন (ভাস্কর), শ্রবণা শফিক দীপ্তি (নৃবিজ্ঞানী এবং গবেষক), সানজিদা ইসলাম তুলি (সংগঠক), এ. এস. এম সুজা উদ্দিন (সাংবাদিক ও নীতি বিশ্লেষক), তুহিন খান (লেখক), নাহিদা সারোয়ার নিভা (সংগঠক), আব্দুল্লাহ আল আমিন (আইনজীবী), মু. নিজাম উদ্দিন (চিন্তক ও সংগঠক), সায়ক চাকমা (আইনজীবী ও এক্টিভিস্ট), নুসরাত জাহান কেয়া (চার্টাড একাউন্টেন্ট স্টুডেন্ট), সৈয়দ তানভির মুত্তাকি (বেসরকারী চাকুরিজীবী), সাইয়েদ আবদুল্লাহ (ইন্ডিপেনডেন্ট জার্নালিস্ট এন্ড একটিভিস্ট), মুহাম্মাদ মিরাজ মিয়া (রাজনীতি বিশেষজ্ঞ), মুতাসিম বিল্লাহ (ইয়ুথ একটিভিস্ট এবং উন্নয়নকর্মী), আশরাফ মাহদি (শিক্ষক , একটিভিস্ট), আরীফুল ইসলাম আদীব (সাংবাদিক ও সংগঠক), মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী (রাজনীতিবিদ এবং সংগঠক), আখতার হোসেন (একটিভিস্ট), মাহফুজ আলম (চিন্তক ও গবেষক), জাবেদ রাসিন (লেখক ও রাজনীতিবিদ), তাসনীম জারা (চিকিৎসক), নিশাত ফারজানা (সংবাদকর্মী ও সমাজকর্মী) এবং আকরাম হুসাইন (ব্যবসায়ী ও একটিভিস্ট)।

গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন করল সরকার

কমিশন গঠনের একদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে গুমের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতের কথা বলেন।

গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন করল সরকার

২৭ আগস্ট ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে হাই কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে কমিশন গঠন করেছে সরকার।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ওই কমিটি গঠন করে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

তদন্ত কমিশন আইন, ১৯৫৬ সালের ক্ষমতাবলে এই কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্য কর্তৃক জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের’ জন্য এ কমিশন।

সাকিবের মামলার প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল

২৮ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হলেও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের মামলার সময় দেশের সংবাদমাধ্যম চুপ ছিল।

বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রশ্নোত্তরপর্বে সাকিবের বিরুদ্ধে করা মামলার প্রসঙ্গ এলে তিনি এ কথা বলেন।

মামলার বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এটাও আওয়ামী লীগই তো শুরু করেছে, ঠিক না? আমিনুল যে ফুটবলার, সাকিব তো আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য কিছু বয়ে আনে নাই। সাকিব নিজেই অনেক কিছু অর্জন করেছে। আমিনুল তো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য পুরস্কার বয়ে এনেছিল। এনেছিল না? জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন ছিল। আমিনুলকে যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, তখন কি আপনারা প্রশ্ন করেছিলেন? আমিনুলকে তো জেলে ভরা হয়েছে, সাকিবের বিরুদ্ধে জাস্ট মামলা হয়েছে।

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল

২৮ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সংক্রান্ত গেজেট আজ বুধবার প্রকাশ করা হতে পারে। জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির এ কথা জানিয়েছেন।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য জেনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বুধবারই সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাহফুজ আলম

২৮ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আরও একজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর নাম মো. মাহফুজ আলম। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক। মাহফুজ আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৫–১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।

আজ বুধবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, মাহফুজ আলমকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে সচিব পদমর্যাদায় বেতন, আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যোগদানের তারিখ থেকে প্রধান উপদেষ্টার মেয়াদ অথবা তাঁর সন্তুষ্টি সাপেক্ষে (যেটা আগে ঘটে) তাঁর এই নিয়োগ কার্যকর হবে।

এর আগে ২৪ আগস্ট অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হাফিজকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক দায়িত্ব পালনে প্রধান উপদেষ্টাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবেন। বিশেষ সহকারী পদে থাকাকালীন আবদুল হাফিজ উপদেষ্টার পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

সব সুবিধা পাচ্ছেন না আহতরা

২৮ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের বিনামূল্যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে মাঠ পর্যায়ে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে গলদ। এখনও অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় বহন করতে হচ্ছে আহতদের। তা ছাড়া গত শনিবার জারি হওয়া এই নির্দেশনা গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত না পাওয়ার কথা জানিয়েছে বেসরকারি অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আহতদের স্বজনরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকের হঠাৎ অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হচ্ছে, কিন্তু সিরিয়াল পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে। এই খরচ তাদেরই বহন করতে হচ্ছে। এ ছাড়া চিকিৎসার অনেক উপকরণ-ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। তাই বিনা খরচে চিকিৎসা বলতে যা বোঝায়, সেটি হচ্ছে না! তবে অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাইরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিল ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে।

আহতদের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট চালু করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু দর্শনার্থীর চাপে সেই নির্দেশনাও বাস্তবায়ন করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা বলছেন, হাসপাতালে স্বজন ও দর্শনার্থীর ভিড় কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ে রদবদলের ফলে স্বাস্থ্য খাতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা অফিস করছেন না, আবার অনেকে কাজে যোগ দিতে পারেননি। ফলে যথাযথ তদারকি হচ্ছে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১ মাস: একনজরে

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ এ সরকারের সদস্যসংখ্যা ২১। উপদেষ্টামণ্ডলীতে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার দুজন বিশেষ সহকারী, একজন আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত আছেন। মানবাধিকার, অর্থনীতি, প্রশাসন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলাসহ নানা ক্ষেত্রে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এক মাসে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে:

মানবাধিকার

১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে যেসব ফৌজদারি মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের ঘটনা জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। আর গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠিত হয়। গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে যাঁরা হতাহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দেখভালের জন্য সরকার একটি ফাউন্ডেশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশির সবাইকে আমিরাতের প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করে দেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের অনুরোধে এই ক্ষমা করার কথা জানায় সরকার।

সংসদ, আদালত-ইসি

৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পদত্যাগ করেন। ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। একই দিনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তার আগে ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামানকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেন।

রাজনীতি

৬ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। ২৮ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী দল ও জোট পুনর্বাসনের সুযোগ পাবে না।

আর্থিক খাত ও দুর্নীতি দমন

১০ ব্যাংক ও এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে নয়টির মালিকানা এস আলম গ্রুপের। সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ী, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের অনেকের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। ডলারের দাম আরও বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। মোবাইলে আর্থিক সেবা নগদের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারে বেক্সিমকো, লা মেরিডিয়ান হোটেলসহ ১২ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারে অভিযোগ অনুসন্ধান করছে সিআইডি। আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালীদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার

১৯ আগস্ট সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ ও প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ১২ আগস্ট বিভিন্ন পদে থাকা চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। পরে তা কার্যকর করা হয়। আবার প্রশাসনে নতুন করে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগও দেওয়া হয়।

সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ১ সেপ্টেম্বর। জনপ্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ পদগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি। ২৫ ডিসিকে প্রত্যাহার।

আইনশৃঙ্খলা

গণ–আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় সাবেক মন্ত্রী–উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। অস্ত্র উদ্ধারে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ হবে গণশুনানির মাধ্যমে, নির্বাহী আদেশে নয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০–এর আওতায় নতুন কোনো চুক্তি হবে না।

স্বাস্থ্য খাত

আন্দোলনে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সহায়তা দিতে কমিটি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিষয়ভিত্তিক সংস্কার, চিকিৎসাসেবার গুণগত মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালীকরণে ১২ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি।

শিক্ষা খাত

বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষাক্রম নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে মাধ্যমিকে আবারও ফিরছে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা। তবে উচ্চশিক্ষায় স্থবিরতা কাটেনি। ইউজিসি চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ। শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ ও হেনস্তা বন্ধের আহ্বান জানান শিক্ষা উপদেষ্টা। ২০ আগস্ট বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করে সরকার।

পরিবেশ

রামুর সংরক্ষিত বনে বাফুফের টেকনিক্যাল সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ বাতিল করা হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে নদীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া ৬৪ জেলায় অন্তত ৬৪টি নদী চিহ্নিত করে নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ক্রীড়াঙ্গন

২১ আগস্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি পদে পরিবর্তন এসেছে। এদিন বিসিবি সভাপতির পদ ছাড়েন সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হাসান। একই দিনে বিসিবির সভাপতি হন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। এ ছাড়া আরও কয়েকটি ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নির্বাহী আদেশ ও সিদ্ধান্ত

৫ সেপ্টেম্বর গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২৯ আগস্ট ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ -এর খসড়া অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এর ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা বিশেষ নিরাপত্তাসুবিধা পাবেন না।

১৩ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়। ৪ সেপ্টেম্বর সরকারি অর্থে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার নামকরণের বিষয়ে আইনি কাঠামো ঠিক করতে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই দিনে সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

২৫ হাজারে শিশুকে বিক্রি করে গুলিবিদ্ধ স্বামীর চিকিৎসা করাচ্ছেন রোকেয়া

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

গত ৪ আগস্ট দুপুরে গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত চেকআপ করাতে গিয়েছিলেন জেলার কাটাপাড়া এলাকার দিনমজুর আব্দুর রশিদ। স্ত্রীকে গাইনি ওয়ার্ডে রেখে নিচে এসে টিকিট কাটছিলেন। এমন সময় হাসপাতালের অভ্যন্তরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি হয়। এসময় গুলিবিদ্ধ হন আব্দুর রশিদ। তার পেটে, নাভিতে, পায়ে এবং প্রস্রাবের রাস্তায় গুলি লাগে। পরে ওই হাসপাতালেই তাকে ভর্তি করা হয়, নেন চিকিৎসাও। কিন্তু হামলা-মামলার ভয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি চলে যান আব্দুর রশিদ।

৩ দিন পর তার পেটে গুলিবিদ্ধ স্থানে পচন ধরলে ৮ আগস্ট তিনি দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। রাতেই হয় অস্ত্রোপচার, এরপর আইসিইউতে। পরের দিন বাড়িতেই ফুটফুটে এক মেয়ে জন্ম দেন আব্দুর রশিদের স্ত্রী রোকেয়া বেগম। হাসপাতালে চিকিৎসা চললেও অনেক ওষুধ, অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামাদিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আব্দুর রশিদের বিল আসে ৩৬ হাজার টাকা। যা দিনমজুর রশিদের পরিবারের জন্য অনেক বেশি। কারণ আব্দুর রশিদ এমন একজন মানুষ, যার মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। থাকেন অন্যের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। এই অবস্থায় উপায় না পেয়ে হাসপাতালের টাকা পরিশোধ করতে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে নিজের ৩ দিনের শিশু মেয়েকে অন্যকে দিয়ে দেন আব্দুর রশিদের স্ত্রী রোকেয়া।

জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি, পদোন্নতি পদায়ন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পরও জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি। কর্মকর্তাদের কেউ ব্যস্ত পদোন্নতি নিয়ে, কেউ ব্যস্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে যেতে, আবার কেউ তদবির করছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হতে। প্রায় প্রতিদিনই সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে ভিড় করছেন তদবিরকারী কর্মকর্তারা।

এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপসচিব পদমর্যাদার ৫০–৬০ কর্মকর্তা, যাঁরা ডিসি হতে পারেননি, তাঁরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি) শাখায় গিয়ে হইচই–হট্টগোল করেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ অবস্থা চলে। এরপর তাঁরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে যান। গত দুই দিনে ডিসি নিয়োগের দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হবে—এমন আশ্বাস পেয়ে তাঁরা ফিরে যান।

মাঠ প্রশাসনেও একধরনের অস্থিরতা রয়েছে। যে কারণে প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ২৫ জেলায় এবং গতকাল মঙ্গলবার ৩৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে পেট্রোবাংলা, এলজিইডি, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ–আন্দোলন করছেন। এতে ওই সব দপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে প্রশাসনের ওপর এত চাপ তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছরে ব্যাপক দলীয়করণ, মেধা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কারণে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সময় লাগবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, কারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল এবং কাউকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করায় এখন সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদ খালি। এসব মন্ত্রণালয়ের কাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

টেকসই উন্নয়ন কৌশল পুনঃনির্ধারণে ১২ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন সরকারের

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা

টেকসই উন্নয়ন কৌশল পুনঃনির্ধারণে ১২ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার।

গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর) পরিকল্পনা বিভাগ থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এ টাস্কফোর্স গঠনের তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক কৌশল পুনঃনির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণের রিপোর্ট প্রণয়ন এবং একটি ন্যায্য, টেকসই ও গতিশীল অর্থনীতির ভিত তৈরির লক্ষ্যে ১২ সদস্য বিশিষ্ট টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।”

এই টাস্কফোর্সের নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. একে এ এস মুর্শিদ। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহাম্মদ।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই টাস্কফোর্স আগামী তিন মাসের মধ্যে ন্যায্য, টেকসই ও গতিশীল অর্থনীতি ভিত তৈরির লক্ষ্যে একটি প্রাথমিক পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করবে।

টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যরা হলেন: বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আখতার মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান,  কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের সাবেক গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. আবদুর রাজ্জাক, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশফিক মোবারক, বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক, এমসিসিআই-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট  নাসিম মনজুর, বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মঞ্জুর আহমেদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড: ফাহমিদা খাতুন এবং বিডি জব-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর।

ব্যাংক খাত সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠন, প্রকাশ হবে শ্বেতপত্রও

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ব্যাংকিং খাত সংস্কারের লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে আর্থিক খাত বিষয়ে অভিজ্ঞ ছয়জনকে সদস্য করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক হিসেবে থাকবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এই টাস্কফোর্স।

আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। টাস্কফোর্সের ছয় সদস্য হলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ এ (রুমি) আলী, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহরিয়ার এম হাসান, বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের উপাচার্য এম জুবায়দুর রহমান ও হিসাববিদ কোম্পানি হুদা ভাসি চৌধুরীর অংশীদার সাব্বির আহমেদ।

ব্যবসায়ীদের প্রধান উপদেষ্টা

নতুন দেশ গড়তে আসুন একসঙ্গে কাজ করি

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি দল হিসেবে কাজ করতে চাই। আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে চাই। আসুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়ালগে’ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ আহ্বান জানান। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) এবং ১৫টি জাতীয় বাণিজ্য সংগঠন যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে।

ব্যবসায়ীদের সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রচলিত ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসায় একটি অংশ বিনিয়োগ করুন। আপনাদের নিজ গ্রাম, উপজেলা কিংবা নিজের শিল্পকারখানা যেখানে আছে, সেখানকার মানুষের জন্য বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারেন। যখন সফল হবেন, তখন বিনিয়োগের টাকা তুলে নেবেন। টাকা বানানো আনন্দের বিষয়, কিন্তু মানুষকে আনন্দে রাখা আরও বেশি আনন্দের।’

ফ্যাসিস্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখলে হাসিনাকে দেখে শিক্ষা নিন

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আমরা আপনাদের মাধ্যমে, ছাত্র-জনতার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশকে আমাদের রায় জানিয়ে দিতে চাই। এক ফ্যাসিস্টকে আমরা দেশছাড়া করেছি, অন্য ফ্যাসিস্টকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়। কেউ যদি এখনো শয়নে-স্বপনে, স্মৃতিতে কিংবা ঘুমের মধ্যে চিন্তা করে আবারও ছাত্র–জনতাকে ডমিনেট করে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠবে, তারা যেন ওই শেখ হাসিনাকে দেখে শিক্ষা নেয়।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় সারজিস আলম এ কথা বলেন।

৮ সেপ্টেম্বর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সঙ্গে জেলায় জেলায় মতবিনিময় সভা শুরু হয়েছে। গতকালও দেশের ছয় জেলায় মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে বগুড়া ও হবিগঞ্জের সভা দুটি অন্য একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীদের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঝিনাইদহ ও চাঁদপুরের মতবিনিময় সভায় গোলমালের খবর পাওয়া গেছে।

‘ছাত্ররা আপস করবে না’

টাঙ্গাইলের মতবিনিময় সভায় সারজিস আলম বলেন, ‘এই টাঙ্গাইলে এসে শুনতে হয়, আমার যে ভাই মারুফ হত্যা হয়েছে। আমার যে বোনকে অপদস্থ করা হয়েছে, আমার যে ভাইকে রক্তাক্ত করা হয়েছে, আমার স্কুল-কলেজের ছোট ভাইবোনদের বিভিন্নভাবে হামলা ও রক্তাক্ত করা হয়েছে। সেই পুলিশটা নাকি এখনো আশপাশে ঘোরাফেরা করে। আমার ভাই যখন রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে, তখন সেই হামলাকারী কতিপয় পুলিশ কীভাবে উন্মুক্ত রাস্তায় ঘোরাফেরা করে? আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, ওই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর, চাটুকার তেলবাজ, তোষামোদকারী যেসব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য রয়েছে, তারা যদি এখনো নিজেকে শুধরে না নেয়, তাদের হাসিনার মতোই দেশত্যাগ করতে হবে।’

ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আর ফ্যাসিজম চায় না। এই বাংলাদেশ ওই পলিটিক্যাল কালচার চায় না। এই বাংলাদেশের ছাত্র–জনতা এখন একটি নিউ পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট চায়। যারা কথা বলবে ছাত্রদের জন্য, যারা কথা বলবে সমতা, সমবণ্টন ও সব মর্যাদার জন্য।’ এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মিতু আক্তার, রফিকুল ইসলাম, ইলিমা খন্দকার এ্যানি, অয়ন, সুবাসিরুল, রফিকুল হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

গতকাল বিকেল পাঁচটায় কক্সবাজার শহরের পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এতে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজির বিপক্ষে সবার পরিচয় হবে বাংলাদেশ। রাষ্ট্র বিনির্মাণের কাজে অনেক বাধা আসবে; কিন্তু বাংলাদেশের প্রশ্নে ছাত্ররা কারও সঙ্গে কখনোই আপস করবে না।

রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জন্য পুলিশ, চিকিৎসক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদদের সহযোগিতা প্রয়োজন মন্তব্য করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘তাঁদের সঙ্গে ছাত্রদের সম্পর্ক হবে সহযোগিতামূলক। ছাত্রদের আচরণে কেউ যেন মনে না করেন তাঁকে বলপ্রয়োগ করা হচ্ছে।’

অন্যদের বাধায় ছাত্রদের সভা পণ্ড

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকারের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল গতকাল বগুড়ায় আসে। গণ–অভ্যুত্থানে হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে। বিকেলে সরকারি আজিজুল হক কলেজের মুক্তমঞ্চে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভা হওয়ার কথা ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বঘোষিত মতবিনিময় সভা প্রতিহত করতে গতকাল বেলা তিনটা থেকে মিছিলসহ কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীদের একাংশ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই ছিল একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী। একই সময়ে মুক্তমঞ্চে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেওয়ায় কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিকেল চারটার দিকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পাহারায় অনুষ্ঠানস্থলে গেলে ‘কথিত শিক্ষার্থীদের’ প্রতিরোধের মুখে পড়ে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

মাহিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বগুড়ায় ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভার আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের; কিন্তু ছাত্রদলসহ দু–একটি রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীরা মতবিনিময় সভায় বাধা দেন। তাঁদের বাধায় অনুষ্ঠান না করেই বগুড়া ত্যাগ করতে হয়েছে। এ মাসের মধ্যে বগুড়ায় বড় পরিসরে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হবিগঞ্জ জেলা শাখার ব্যানারে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আমাদুল্লাহ আল গালিব, হাসিবুল ইসলাম ও হাফিজুল ইসলামের। গতকাল বেলা দুইটায় সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও আগমুহূর্তে একদল উচ্ছৃঙ্খল তরুণ সমাবেশস্থলে প্রবেশ করে চেয়ার ভাঙচুর করেন এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বের করে দেন। তখনো কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছাননি। পরে পৌরসভার মাঠে বিকেল চারটায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে হবিগঞ্জ ত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা।

সমাবেশের আয়োজকদের একজন মাহাদি হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা আমাদের অনুষ্ঠানে আসার আগেই একদল যুবক ঘটনাস্থলে এসে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে তাঁরা মিলনায়তনের ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ার ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার সময় ছাত্রদলের পক্ষে নানা স্লোগান দেয়।’

দুই স্থানে গোলমাল

ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী স্কুল মাঠে বিকেলে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল চারটার পরে কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সে সময় স্বাধীন নামে একজন আহত হন। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে মতবিনিময় সভায় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম, আশরেফা খাতুন, আকরাম হোসাইন, ফারহানা ফারিনাসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং জেলার সমন্বয়ক আবু হুরাইরা, রত্না খাতুন, রায়হান হোসেন, হুসাইন আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত মানুষের নানা প্রশ্নের জবাব দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আশরেফা খাতুন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আশরেফা জানান, আপাতত রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেই। তবে ভবিষ্যতে যদি হয়, তা–ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে হবে না।

চাঁদপুর শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের কাঠগড়ায় না দাঁড় করানো হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা শিক্ষার্থীরা হাল ছাড়ব না। আমাদের আন্দোলন–সংগ্রাম চলবেই। কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের মধ্যে বক্তব্য দেন আবদুল কাদের, সুমাইয়া আক্তার, হামযা মাহবুব, মো. মহিউদ্দিন, আলী আহম্মেদ আরাফ, খালেদ হাসান, তাছনিয়া নাওরিন, জিয়াউদ্দিন আয়ান। সভা শেষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিটি থেকে অধ্যাপক এম এ ফয়েজের পদত্যাগ

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

অধ্যাপক এম এ ফয়েজ স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে তিনি স্বাস্থ্যসচিব বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। অধ্যাপক এম এ ফয়েজ প্রথম আলোকে তাঁর পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করেছেন।

আজ সন্ধ্যায় এম এ ফয়েজ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না।

দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় সংস্কার, চিকিৎসাসেবার গুণগত মান উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালী করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ৩ আগস্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল গঠন করে। ১১ সদস্যের এই প্যানেলের সভাপতি করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম এ ফয়েজকে।

কমিটি গঠনের পর থেকেই নানা সমালোচনা শুরু হয়। কমিটিতে শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রাখা হয়েছে। কমিটিতে কোনো জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ রাখা হয়নি। বিএনপি–সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

পোশাক খাতে বিক্ষোভ থামাতে সেই পুরোনো কৌশল

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

বিভিন্ন দাবি আদায়ে গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় টানা দুই সপ্তাহের শ্রমিক বিক্ষোভে তৈরি পোশাকশিল্প বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শুরুতে শ্রমিকদের দাবিকে পাত্তা না দিয়ে উসকানিদাতা, বহিরাগত হামলাকারী ও ঝুট ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন মালিকপক্ষের নেতারা। তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শ্রমিকদের দাবি আংশিকভাবে মেনে নেওয়া হয়। তত দিনে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত মাসে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি ওষুধ খাতের শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভে নামেন। এ খাতের উদ্যোক্তারা নিজ নিজ কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে কিছু দাবি মেনে নেন। ফলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে ওষুধ খাতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। আর পোশাকশিল্পে উল্টো চিত্র। পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে বরং খারাপ হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুরে ৯৪টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। এর বাইরে দেড় শ কারখানায় ওই দিন উৎপাদন ব্যাহত হয়।

তৈরি পোশাক খাতের চলমান অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আশুলিয়া। এখানে দেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কারখানার অবস্থান। একই সঙ্গে বিজিএমইএর কয়েকজন সাবেক সভাপতি ও বিদায়ী সরকারের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী মালিকদের কারখানাও আছে এখানে। এই মালিকেরাই মজুরিসহ অন্যান্য আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কলকাঠি নাড়েন।

পোশাকশিল্পে দুই সপ্তাহ ধরে চলমান এ অস্থিরতা নিরসন না হওয়ার জন্য মালিকপক্ষের পুরোনো কৌশলকেই দায়ী করছেন শ্রমিকনেতারা।

তাঁরা বলছেন, গত দেড় দশকে স্থানীয় মাস্তান দিয়ে ভয়ভীতি ও মারধর এবং মামলা–গ্রেপ্তার করে শ্রমিক বিক্ষোভ বা আন্দোলন দমন করেছে মালিকপক্ষ। এমনকি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সামনে নিয়ে আসা হয়। এবারও শ্রমিকদের দাবি পাশ কাটিয়ে পুরোনো কৌশলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে মালিকপক্ষ। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।

তবে পোশাকশিল্প মালিকেরা মনে করেন, বর্তমান অস্থিরতার পেছনে বড় কারণ ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিকদের দ্বন্দ্ব। তাঁরাই শ্রমিকদের উসকে দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগের মতো ভূমিকা রাখতে না পারায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ বিজিএমইএর বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন নেতা আত্মগোপনে থাকায় নেতৃত্বেও কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে।

বদলি-পদোন্নতি নিয়েই ব্যস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অনেকটা বিপর্যয়ের মধ্যে দেশের পুলিশি ব্যবস্থা। এক মাস পার হলেও পুলিশি ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনোযোগ বা কার্যক্রম মূলত বদলি, পদোন্নতি ও পদায়ন ঘিরে। এই ক্ষেত্রে পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সাত-আটজন কর্মকর্তার একটি গ্রুপ অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই গ্রুপ বিগত সময়ে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের তালিকা করছে। কে কোন থানার ওসি হবেন, কে কোন জেলার পুলিশ সুপার হবেন; রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে কারা যাবেন—সেটা ঠিক করছে এই গ্রুপ। এই ক্ষেত্রে পেশাদারত্ব কম গুরুত্ব পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি পেয়েছেন, ঢাকায় চাকরি করছেন—এমন কর্মকর্তারাও ‘বঞ্চিত’ দাবি করছেন। আবার বিগত সরকারের সময়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে শাস্তি পেয়েছেন এমন কর্মকর্তারাও একই দাবি করে সুবিধা নিচ্ছেন। এমন ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে।

একপর্যায়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঘুষ লেনদেন না করার অনুরোধ জানাতে বাধ্য হয় পুলিশ সদর দপ্তর। ৩১ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, একটি চক্র পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন ইউনিটে বদলির ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ধরনের প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

উপদেষ্টা নাহিদ-আসিফের ছাত্রশক্তির কার্যক্রম স্থগিত

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ কালের কন্ঠ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সংগঠনটির ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

ওই পোস্টে লেখা হয়, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সব কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন জানান, এই সংগঠনটির কার্যক্রম আরো আগেই স্থগিত করা হয়েছে।

সরকারের তৎপরতা মন্থর, আকাঙ্ক্ষা এখনো অধরা: জাতীয় নাগরিক কমিটি

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

মানুষ যেসব আকাঙ্ক্ষা থেকে আন্দোলনে নেমে এসেছিল, সেই সব আকাঙ্ক্ষা এখনো অধরা বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। একই সঙ্গে কমিটি মনে করে, যেকোনো ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের তৎপরতা খুবই মন্থর ও ধীরগতির। সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা গণ–অভ্যুত্থানের সরকার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে যদি তারা ধারণ করতে না পারে, তা হবে দেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।

শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব বিষয় তুলে ধরেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ৮ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশের পর শনিবারই প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেছে এই কমিটি। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে চলা মব জাস্টিস (বিশৃঙ্খল জনগোষ্ঠীর বিচার), মন্দির ও মাজার ভাংচুরের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়’ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। লিখিত বক্তব্যে কমিটি বলেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় মব জাস্টিস হতে দেখা গেছে। মন্দিরে, মাজারে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এমনকি পূর্বশত্রুতার জের ধরেও আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।

এসব ঘটনার নিন্দা ও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘অনেক দিন ধরে এসব ঘটনা ঘটলেও সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা আমাদের অবাক করেছে। আমরা জানি, ফ্যাসিস্ট সরকার টিকে ছিল তার প্রশাসন ও পুলিশ দিয়ে। ফলে তার পতনের পর প্রশাসন ও পুলিশকে ঠিকমতো কাজ করানো কঠিন হবে, তা আমরা জানতাম; কিন্তু পুলিশ ছাড়া অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও নীরব থাকতে দেখেছি আমরা।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে শহরে আমরা ডাকাতির কাহিনি জেনেছি। সে সময় মানুষের সামাজিক প্রতিরোধ এ ঘটনা ঠেকিয়ে দিয়েছে। আমরা দেখেছি, বন্যার সময়ও সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা অপ্রতুল। দেশের বিভিন্ন মন্দিরে হামলা হয়েছে। আমরা যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়ার কথা জানালেও সেখানেও সরকার যথাযথ ভূমিকা নিতে পারেনি। আজ এসবের পরম্পরায় মাজারের ওপর হামলা হচ্ছে।’

নতুন ডিসির ৫৬ জনই আ’লীগের তালিকার!

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২০ আগস্ট সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি বিদ্যমান জেলা প্রশাসক পদায়ন নীতিমালা ও গত সরকারের তৈরি ডিসি ফিটলিস্ট বাতিল করা হয়। এরপর নতুন ফিটলিস্ট তৈরির জন্য টানা দুই সপ্তাহ বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায় ৬০০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে তৈরি করা হয় ফিটলিস্ট। কিন্তু গত সোম ও মঙ্গলবার যে ৫৯ জনকে ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়, সেখানে গত সরকারের আমলে বারবার পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়া ও নানাভাবে কোণঠাসা থাকা মাত্র তিনজন কর্মকর্তা ঠাঁই পেয়েছেন। বাকি ৫৬ কর্মকর্তা গত ১৬ বছরে নিয়মিত পদোন্নতি পেয়েছেন। বেশির ভাগই ভালো পদায়ন নিয়ে দাপটের সঙ্গে চাকরি করেছেন। ছিলেন আওয়ামী লীগের করা ফিটলিস্টে, স্থান পেয়েছেন নতুন ফিটলিস্টেও।

দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৭১% মানুষ

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৭১ শতাংশ মানুষ। আর ৮১ শতাংশ মানুষ চান সংস্কার কার্যক্রম শেষ করতে যত দিন প্রয়োজন, তত দিন ক্ষমতায় থাকুক অন্তর্বর্তী সরকার। ‘পালস সার্ভে ২০২৪: জনগণের মতামত, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক জনমত জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) জরিপটি পরিচালনা করে। আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইনস্টিটিউটের জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ‘অভ্যুত্থানের চল্লিশ দিন: মানুষ কী ভাবছে’ শিরোনামে আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়।

জরিপে গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ২ হাজার ৩৬৩ জন মানুষের মতামত নেওয়া হয় টেলিফোনে। এতে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ, বর্তমান সময়ের সমস্যা, সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের মতামত নেওয়া হয়। গত ২২ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।

জরিপে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে দুটি প্রশ্ন ছিল। একটি হলো, এই সরকারের মেয়াদ নিয়ে কোন বক্তব্যটির সঙ্গে একমত পোষণ করেন? এখানে দুটি অপশন ছিল। ১. যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা ছাড়া। ২. অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে যত দিন প্রয়োজন ক্ষমতায় থাকা। ফলাফলে বলা হয়, শতকরা ৮১ ভাগ মানুষ চান যে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার সম্পন্ন করার জন্য যত দিন প্রয়োজন, তত দিন ক্ষমতায় থাকুক। আর শতকরা ১৩ ভাগ মানুষ মনে করেন অতিদ্রুত নির্বাচন দিয়ে সরকারের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া উচিত।

জরিপে সরকারের মেয়াদ নিয়ে আরেকটি প্রশ্ন ছিল—অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিন হওয়া দরকার? এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৩৮ শতাংশ বলেছে সরকারের মেয়াদ ৩ বছর বা তার বেশি হওয়া দরকার। ২ বছর মেয়াদ হওয়া দরকার বলে মত দেন ৯ শতাংশ। এক বছরের পক্ষে মত দেন ১১ শতাংশ। সরকারের মেয়াদ ৩ থেকে ৬ মাস হওয়া দরকার বলে মত দিয়েছেন ২২ শতাংশ মানুষ। ২ শতাংশ মত দিয়েছেন সরকারের মেয়াদ ৩ মাসের কম হওয়া উচিত। বাকিদের মধ্যে ১২ শতাংশ বলেছেন, জানেন না। আর ৬ শতাংশ কোনো জবাব দেননি।

নির্বাচন দেওয়ার আগে এই সরকারের কাছে যদি আপনার একটিমাত্র দাবি থাকে, সেটি কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা বলেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ মানুষ রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সংস্কারের কথা বলেছেন। আইনের শাসনের কথা বলেছেন ১২ শতাংশ মানুষ।

অর্থনীতিই প্রধান সমস্যা

জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, রাজনীতির তুলনায় অর্থনীতি নিয়ে মানুষের আশাবাদ কিছুটা কম। অর্থনৈতিকভাবে দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে বলে মত দিয়েছেন ৬০ শতাংশ মানুষ। রাজনীতি ও অর্থনীতি মিলিয়ে মোট ৫৩ শতাংশ মানুষ আশাবাদী। এই দুই দিক মিলিয়ে নিরাশাবাদী ১০ শতাংশ মানুষ। আর ১৩ শতাংশ মানুষ রাজনীতি নিয়ে আশাবাদী হলেও অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কিত।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা কী—জরিপে এমন প্রশ্নে ৪০ শতাংশ মানুষ অর্থনীতির কথা বলেছেন। ১৫ শতাংশ বলেছেন বন্যার কথা। রাজনৈতিক অস্থিরতাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ১৩ শতাংশ মানুষ। আর ৭ শতাংশ মানুষ প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকে।

‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা অনুদান

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ ও শহীদ পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’–এ ১০০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এই টাকা দেওয়া হয়েছে। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের এককালীন ও মাসিক সহায়তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আলাদাভাবে ক্ষতি অনুযায়ী জরুরি আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফাউন্ডেশনের দপ্তর সম্পাদক ও অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। এ সময় ফাউন্ডেশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান ওরফে স্নিগ্ধ (ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত মুগ্ধর বড় ভাই)।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পেল সেনাবাহিনী

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

গ্রেপ্তার ও বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার মত সুযোগ দিয়ে সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার।

সেনাবাহিনীর কমিশন পাওয়া কর্মকর্তাদের সারাদেশে দুই মাসের জন্য বিশেষ এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী তাদেরকে এ ক্ষমতা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এ প্রজ্ঞাপন জারি করে, যা এদিন থেকেই কার্যকর হবে।

ফৌজদারি কার্যবিধির যে ১৭ নম্বর ধারায় সেনা কর্মকর্তাদেরকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেখানে এই নির্বাহী হাকিমরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অর্থাৎ জেলা প্রশাসকের অধীনে থাকার কথা বলা আছে।

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ এবং ১৪২ ধারার অধীনে তাদের কার্যক্রম চলার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

এসব ধারায় গ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তারের আদেশ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা, তল্লাশি পরোয়ানা জারি, অসদাচরণ ও ছোটোখাটো অপরাধের জন্য মুচলেকা আদায়, মুচলেকা থেকে অব্যাহতি, বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ, স্থাবর সম্পত্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বাধা অপসারণ এবং জনগণের ক্ষতির আশঙ্কা করলে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন ক্ষমতা পাবেন বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।

দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগের অনেকেই

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক মাস পরও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অবৈধভাবে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরাও পড়েছেন কেউ কেউ। সীমান্ত পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, গত সপ্তাহে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। এঁদের আগে (৫ আগস্টের পর) দেশ ত্যাগ করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ (নাসিম) ও আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অনেকে।

যাঁরা পালিয়ে গেছেন বা পালানোর চেষ্টায় আছেন, তাঁদের প্রায় সবাই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, সরকার পতনের এত দিন পরও কীভাবে এসব ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালাতে পারছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আরও বেশ কয়েকজন নেতার দেশ ছাড়ার গুঞ্জন রয়েছে। তবে তাঁদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেরই ধারণা, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর ওবায়দুল কাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় আশ্রয় নেন। পরে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত চলে যান। সাবেক একজন মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি শুনেছেন ওবায়দুল কাদের এখন দুবাই আছেন।

শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয় ও সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দিন ও তাঁর ছেলে শেখ সারহান নাসের (তন্ময়), হেলালের ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এবং আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে ও বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এখনো দেশ ছাড়ার সুযোগ পাননি। তাঁরা দেশের ভেতরে আছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।

শেখ হাসিনার আরেক আত্মীয় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের কিছুদিন আগেই ভারতে চলে যান। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ৩ আগস্ট রাতে পরিবারসহ দেশ ছাড়েন। তিনি ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর যান। তাঁর পরিবার পৃথক ফ্লাইটে যায় লন্ডনে। তাপসের ভাই যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস (পরশ) সরকার পতনের কয়েক দিন আগে, ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছিলেন। তিনিও দেশে আছেন বলে জানা গেছে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও আন্দোলনের সময় সপরিবার সিঙ্গাপুরে চলে যান। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের (বিপু) অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অবশ্য সরকার পতনের পর শুরুতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিদেশ যাওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদও। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ৩০ জন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন।

৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগের এমন অন্তত ১৫ কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের নাম বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। অবৈধ পথে দেশ ছাড়ায় ইমিগ্রেশন বিভাগের নথিতে তাঁদের দেশত্যাগের তথ্য নেই। এর বাইরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং অন্যান্য সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের মধ্যে অন্তত ২৭ জনের দেশ ছাড়ার খবর জানা গেছে। তবে দেশ ছেড়ে পালানো ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা কয়েক শ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ৫ আগস্টের কিছুদিন আগে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে আর দেশে ফেরেননি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের এমন অন্তত ১৩ নেতার নাম জানা গেছে।

অবৈধ পথে এভাবে দেশ ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাঁর মুখপাত্রের মাধ্যমে প্রথম আলোকে বলেন, সীমান্তে নজরদারি রয়েছে। সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেই সাবেক সংসদ সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিসহ অনেকেই বিভিন্ন সীমান্তে ধরা পড়ছেন। এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

আন্দোলনে নিহতদের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা, আহতরা ১ লাখ

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দেশ রূপান্তর

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদদের প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ এবং আহতদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

আজ বুধবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

নতুন আইনি ভিত্তি পাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার, অধ্যাদেশ অনুমোদন

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় দেড় মাসের মাথায় নতুন আইনি ভিত্তি পাচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার; নিজেদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব ঠিক করে একটি অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা ও দায়িত্ব, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা, পদত্যাগ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ের বিধান হিসেবে এই অধ্যাদেশ জারি হচ্ছে।

১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করব

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

যে কোনো পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের অঙ্গীকার করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হতে পারে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে এই সরকারের প্রতি পরিপূর্ণ সমর্থন থাকবে। ঢাকায় নিজ কার্যালয়ে সোমবার রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সেনাপ্রধান। গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক এ সংবাদ সংস্থা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। পরে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এ ছাড়া সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার একটি রূপরেখা দেন তিনি।

অর্থাভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না গুলিতে পা হারানো হাসান

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বাসরা গ্রামের মো. হাসান ছিলেন ট্রাকচালকের সহকারী। চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে রাজধানীর চিটাগাং রোডে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি এসে পায়ে লাগে। চিকিৎসায় তাঁর ডান পা কেটে ফেলতে হয়। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরলেও অর্থাভাবে তিনি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

হাসান দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের বাসিন্দা। গত ২০ জুলাই ঢাকায় যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন। এলাকাবাসীর সহায়তায় কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়। কিন্তু টাকার অভাবে এখন ওষুধ কিনতে পারছেন না। কাজ না করতে পারায় তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৭ সমন্বয়কের পদত্যাগ

০৩ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সরকারি দলের মত আচরণ ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বিরুদ্ধ কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ১৩ জন সমন্বয়ক ও ৪ জন সহ-সমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। পদত্যাগকৃত সমন্বয়করা হলেন- আব্দুর রশিদ জিতু, রুদ্র মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, হাসিব জামান, জাহিদুল ইসলাম ইমন, জাহিদুল ইসলাম, ফাহমিদা ফাইজা, রোকাইয়া জান্নাত ঝলক, মিশু খাতুন, রাফিদ হাসান রাজন, হাসানুর রহমান সুমন, আব্দুল হাই স্বপন, নাসিম আল তারিক ও ঐন্দ্রিলা মজুমদার। তাদের মধ্যে আব্দুর রশিদ জিতু কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেন।

‘আয়নাঘরে’ সাজ বদল, নষ্ট গুমের আলামত

০৪ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

মানুষের মুখে মুখে ফেরা আয়নাঘরখ্যাত গোপন বন্দিশালার অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে এসব বন্দিশালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটকে রাখা হতো। ভুক্তভোগীরা গোপন কারাগারগুলো সংরক্ষণ চাইলেও বাহিনীগুলো এরই মধ্যে কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছে।

গুম-সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, ৪০০ অভিযোগ পাওয়া গেছে। গোপন বন্দিশালার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে। দেয়ালের লেখাগুলো রং করে মুছে দেওয়া হয়েছে।

চিলির স্বৈরশাসক অগাস্টো পিনোশের ১৬ বছরের শাসনামলে ৩ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা এবং দেড় হাজারের বেশি রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীকে গুম করা হয়। তাঁর পতনের পর সন্ধান মেলে ১৭টি নির্যাতন কেন্দ্রের। পিনোশের গোপন পুলিশখ্যাত ডিইএনএ পরিচালিত বন্দিশালাগুলো স্বৈরশাসনের দুঃসহ স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ রয়েছে, যা বাংলাদেশে হচ্ছে না।

২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় পার্বত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমাকে। তাঁর দাবি, ঢাকা সেনানিবাসের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ের বন্দিশালায় তাঁকে রাখা হয়েছিল। পাঁচ বছরের বেশি সময় বন্দি থাকার পর ৬ আগস্ট মুক্তি পান। সাবেক ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহিল আমান আযমী জানিয়েছেন, তাঁকেও আটকে রাখা হয়েছিল একই বন্দিশালায়। এতদিন এসব অভিযোগের পর্যায়ে থাকলেও কমিশনের মাধ্যমে এই প্রথম সরকারি ভাষ্যে আয়নাঘরের অস্তিত্ব সামনে এলো। যদিও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সমর্থকরা আয়নাঘরকে সব সময় কথিত বলে এসেছেন।

কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পরিদর্শনের সময়ে ডিজিএফআইর যে আয়নাঘর দেখেছি, এর সঙ্গে ভুক্তভোগীদের বর্ণনার মিল পেয়েছি। তবে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ তারা নষ্ট করেছে। বিশেষ করে দেয়ালের লেখাগুলো পেইন্ট করে মুছে দেওয়া হয়েছে। মৌখিকভাবে তাদের বলেছি এবং লিখিতভাবেও জানিয়েছি– যে অবস্থায় আয়নাঘর দেখে এসেছি, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো পরিবর্তন যেন না হয়।’

মাইকেল চাকমা সমকালকে বলেছেন, যদি গোপন বন্দিশালার পরিবর্তন আনা হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলো অপকর্মের দায় নিজেদের ওপর নিচ্ছে, সরকারের দোষ আড়ালের চেষ্টা করছে। তারা বলতে পারত– আমরা নই, শেখ হাসিনা গুম করেছে। গোপন কারাগার ভেঙে ফেলা মানে আলামত ধ্বংস, যা আরেকটি অপরাধ।

 গোপন বন্দিশালাগুলো সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের সরকারগুলো এ থেকে শিক্ষা নেয়; স্বৈরাচারী না হয়।

একাধিক সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, গুমের সঙ্গে অতীতে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার না করলেও, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাবমূর্তি রক্ষায় গোপন বন্দিশালাগুলো রাখতে চায় না বাহিনীগুলো। কমিশনকেও এ কথা জানানো হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে ডিজিএফআইয়ের যে বন্দিশালা ছিল তা শুধু বন্ধ নয়, অপসারণ করতে চায়। ভেতরের কুঠুরিগুলো ভেঙে একতলা ভবনটির অভ্যন্তরে পরিবর্তন আনতে কাজ চলছে। এ জন্য নতুন ইট আনা হয়েছে বলে সমকাল জানতে পেরেছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যানুযায়ী, শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনকালে অন্তত ৬৭৭টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ।

চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আহতরা

০৫ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় রয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত অনেক ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, দিনমজুর, সাধারণ মানুষ ও তাঁদের পরিবার। তাঁদের কারও হাত কাটা গেছে, কারও পা। কেউ চোখ হারিয়েছেন। কারও এক চোখের আলো নিভে গিয়ে, অন্য চোখেও কম দেখছেন। তাঁদের বেশির ভাগই চিকিৎসার জন্য সরকারি কোনো সহায়তা এখনো পাননি বলে জানিয়েছেন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, আহত এই মানুষগুলোর দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা দরকার। কিন্তু টানাটানির সংসারে তাঁদের চিকিৎসা অনেকটা অনিশ্চিত। পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত এই মানুষগুলোর বেদনাতুর কাহিনি জানা গেল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুরুতর আহত তিন শতাধিক ব্যক্তি এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব রোগীর চিকিৎসা দিতে যুক্তরাজ্য ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ঢাকায় এসেছে। চোখে আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্যও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আসবেন।

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের সহায়তা প্রদানের জন্য নীতিমালা করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে আঘাতের কারণে ওই সময় বা পরবর্তী সময়ে শহীদ ব্যক্তির আইনসম্মত ওয়ারিশেরা সরকারের সহায়তা পাবেন। একই সময়ে আহত ও স্থায়ীভাবে অক্ষম ব্যক্তি এই সহায়তার আওতায় আসবেন। মেডিকেল বোর্ড কোনো আহত ব্যক্তিকে স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা দেওয়ার সুপারিশ করলে তিনি চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। চিকিৎসা সহায়তার জন্য প্রত্যেকের একটি স্বাস্থ্য কার্ড থাকবে।

নীতিমালার পাশাপাশি হতাহত ব্যক্তিদের একটি খসড়া তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আট বিভাগে মোট ১৮ হাজার ২৪৭ জন আহত ব্যক্তি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। নিহত হয়েছেন ৬২২ জন। প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছেন ৫২৫ জন। এ ছাড়া চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন ৬৪৭ জন।

আহত এই মানুষদের চিকিৎসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. আবদুল মুনঈম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দফায় চিকিৎসা শেষে যাঁরা এখন বাড়িতে আছেন, তাঁদের ফলোআপ চিকিৎসার প্রয়োজন হলে নিকটের হাসপাতাল থেকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা নিতে পারেন। এ ছাড়া কারও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বা আর্থিক সহযোগিতা লাগলে স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটির হেল্পলাইন নম্বরে (০১৮১৮-২৭৯২১৭ ও ০১৪০০-৭২৮০৮০) যোগাযোগ করতে পারেন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানান আবদুল মুনঈম। স্বাস্থ্য কার্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। খুব দ্রুত এটি বাস্তবায়ন করা হবে।

পিছু ছাড়ছে না দাপুটে পিএসরা

০৯ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

বড়ই সৌভাগ্যবান উপসচিব মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন! আওয়ামী লীগ সরকারের এক আমলে তিনি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার একান্ত সচিব (পিএস)। পরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের পিএস হন। পরের মেয়াদে আবার ফিরে আসেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে। পিএস হন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর তিনি পিএস হন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের। আওয়ামী লীগ সরকারের চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পিএস থাকা নাছির উদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও একই মন্ত্রণালয়ে বহাল। পিএসগিরি করছেন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পিএস পদে মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে পদায়ন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তদবির করেন সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। ওই তদবিরবাজ সচিবের নিজের বিরুদ্ধেই রয়েছে দুর্নীতির জোরালো অভিযোগ। রাজধানীর খ্যাতনামা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে এ সচিবের দায়িত্ব পালনকালে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বলে তদন্ত উঠে এসেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জনপ্রশাসনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর আমলা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। তাঁর একান্ত সচিব ছিলেন আবু নঈম মুহাম্মদ মারুফ খান। মারুফ খান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ও পরে সংসদ সদস্য বনে যাওয়া সাজ্জাদুল হাসানেরও একান্ত সচিব ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শীর্ষ ক্ষমতাধর দুই আমলার পিএস থাকায় মারুফ খান এক সময় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক পদও বাগিয়ে নেন। এখন তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পিএস।

জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান ও কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর একান্ত সচিবরা এখনও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলে রেখেছেন।

প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসেও প্রশাসন দুর্বৃত্তায়নের খোলসমুক্ত হতে পারেনি। সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। ঘুরেফিরে বিগত সরকারের আস্থাভাজনকেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। 

গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনায় কোনো মামলা-গ্রেপ্তার-হয়রানি নয়: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

১৪ অক্টোবর ২০২৪, ইত্তেফাক

গত ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) মন্ত্রণালয় থেকে থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এক নবযাত্রা সূচিত হয়েছে। এ গণঅভ্যুত্থানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে যেসব ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে মাঠে থেকে আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই হতে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।

ডিম কি আমি মেশিন দিয়ে তৈরি করব, বাজার পরিদর্শনে গিয়ে প্রশ্ন বাণিজ্য উপদেষ্টার

১৫ অক্টোবর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বেশ কিছু দিন ধরে বাজারে ডিমের দাম বেশি। এর মধ্যে পাইকারি আড়তের ব্যবসায়ীরা ডিম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ পাল্টা প্রশ্ন করেন, ডিম কি আমি মেশিন দিয়ে তৈরি করব?

ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবস্থা…আপনি সাপ্লাই দেখেন না…নাই তো! ডিম আপনার…সাড়ে চার কোটি, পাঁচ কোটি ডিম পাচ্ছি। কোথাও হচ্ছে সাড়ে তিন কোটি। এখন ডিম কি আমি মেশিন দিয়ে তৈরি করব?’

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দরের ঊর্ধ্বগতির রাশ টানতে সোমবার সন্ধ্যায় কারওয়ানবাজার পরিদর্শনে যান অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘বাজারে ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে এটা ঠিক। এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কথা বলে পার পাওয়া যাবে না। তবে বাজারে পণ্যের সরবরাহ যাতে বাড়ে ও দাম কমে আসে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’

বিক্ষোভে বেঞ্চ হারালেন ১২ বিচারপতি

১৭ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

ছাত্র বিক্ষোভের মুখে হাইকোর্টের ১২ বিচারপতিকে আগামী রোববার থেকে বেঞ্চ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা গতকাল বুধবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে এসে এ ঘোষণা দেন। এর ফলে আপাতত তারা কোনো বিচারিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। দেড় মাস বার্ষিক ছুটির পর আগামী রোববার সুপ্রিম কোর্ট খুলবে। সেদিন থেকেই তারা আর কোনো বেঞ্চ পাবেন না।

এর আগে ‘দুর্নীতিবাজ, দলবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর’ বিচারকের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী আইনজীবীরা গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদেরও বিক্ষোভে দেখা যায়। পরে রেজিস্ট্রার জেনারেলের ঘোষণা আসার পর আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছাড়েন।

আরও চার সংস্কার কমিশনের ঘোষণা

১৭ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

স্বাস্থ্য, গণমাধ্যমসহ আরও চারটি বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এই সিদ্ধান্ত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

এই চার কমিশনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে থাকবেন জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ, শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে থাকবেন শিরীন পারভীন হক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই বিদেশে অর্থ পাঠানোর সুযোগ

১৭ অক্টোবর ২০২৪, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর অনলাইন

বিদেশে অর্থ পাঠাতে এয়ারলাইন্সসহ তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রক্রিয়া সহজ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে এখন থেকে দেশীয় এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন দেশ থেকে আনা উড়োজাহাজের ভাড়া বা লিজের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই বিদেশে পাঠানো যাবে। 

বৃহস্পতিবার  (১৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ থেকে এসব সংক্রান্ত তিনটি পৃথক সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

নির্দেশনা অনুযায়ী- এখন থেকে স্থানীয় এয়ারলাইন্স বিদেশ থেকে যেসব উড়োজাহাজ আনে তার ভাড়া বা লিজবাবদ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে পাঠাতে পারবে।

একই সঙ্গে ক্লাউড সেবা, আইটি অবকাঠামো এবং সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনের বিভিন্ন ব্যয় ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহকের পক্ষে বিদেশে পাঠানো যাবে। পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের আয়োজনকারী মাধ্যমে সফটওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণসহ এসব সেবা গ্রহণ বাবদ অর্থ বিদেশে প্রেরণযোগ্য হবে।

বিদেশে চাকরি বা অভিবাসনের উদ্দেশ্যে যাওয়া অর্থাৎ প্রবাসীদের বিদেশে ব্যাংক হিসাব খোলা এবং ওই হিসাবে প্রয়োজনীয় অর্থ জমা রাখার সাধারণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদেশি কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ বিদেশে ব্যাংক হিসাবে জমা করা যাবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না।

শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেটা, জলকামান

১৮ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বেসরকারি কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষকদের লাঠিপেটা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সামনে এ ঘটনা ঘটে। এমপিওভুক্তির দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে মাউশির সামনে বিক্ষোভ করছিলেন এই শিক্ষকেরা। বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালন করতে এসেছিলেন। তবে পুলিশের লাঠিপেটায় তাঁদের ফিরে যেতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগের তৈরি আইনেই এগোচ্ছে ট্রাইব্যুনাল

১৮ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের তৈরি আইনেই শেখ হাসিনার বিচারের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অতীতের মতো এই ট্রাইব্যুনাল নিয়েও বিতর্ক উঠতে শুরু করেছে।

নানা প্রশ্নের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় ৮ দফা সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া নিয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি মতবিনিময় সভা করেছে; কিন্তু সংস্কার করার আগেই ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল প্রাক্–বিচারপ্রক্রিয়া বা বিচারের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন।

আইনজীবীদের অনেকে মনে করেন, আইনের সংস্কার না করেই আওয়ামী লীগ আমলের আইনেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করায় এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার করার কথা বলা হয়েছে। এই আইন সংস্কার না করে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হলে বিতর্ক উঠতে পারে।

ট্রাইব্যুনাল নিয়ে প্রশ্ন

হাইকোর্টের বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং আরও দুজন বিচারক নিয়োগ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়েছে গত সোমবার। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুজন সদস্য হলেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কেন আন্তর্জাতিক বিচারক নিয়োগ করা প্রয়োজন, এই শিরোনামে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান প্রথম আলো অনলাইনের ইংরেজি ভার্সনে একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছেন। এতে তিনি পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

ডেভিড বার্গম্যান লিখেছেন, ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার জেলা আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক; মাত্র ছয় দিন আগে হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আর মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ। এ ছাড়া শফিউল আলম মাহমুদ আইনজীবী থেকে মাত্র ছয় দিন আগে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি বিএনপি–সমর্থিত আইনজীবী ফোরামে সম্পৃক্ত ছিলেন।

এসব বিষয় উল্লেখ করে ডেভিড বার্গম্যান লিখেছেন, এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে উদ্বেগের কারণ রয়েছে। তিনি তাঁর লেখায় একতরফা বিচার যাতে না হয়, সে জন্য আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে ধারণা আছে, এমন বিদেশি বিচারক নিয়োগের পরামর্শও দিয়েছেন।

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আ.লীগের অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হবে

২০ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হবে। নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য খুব দ্রুতই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের পর আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম এ কথা বলেন। সংস্কারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সামনে রেখে গতকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এই সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে। কয়েকটি দল জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিও জানিয়েছে। প্রায় সব দল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত সংস্কার চেয়েছে। দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য খুব দ্রুতই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে।

বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল

২০ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ করা যাবে। সংবিধানের এ-সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদ পুরোটাই পুনর্বহাল করেছেন আপিল বিভাগ।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা বহাল রেখে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন নিষ্পত্তি করে এই আদেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ রোববার এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

এই রায়ের ফলে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসমর্থতা ও পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে।

বিতর্কে জড়ালেন রাষ্ট্রপতি, বাড়ছে পদত্যাগের চাপ

২২ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

আচমকা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে মন্তব্য করে বেশ চাপে পড়েছেন তিনি। তাঁর এমন মন্তব্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। যদিও গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির তরফ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তারপরও শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র প্রশ্নে বিতর্ক থামছে না।

মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তাঁর কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই।’ সাক্ষাৎকারটি পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়।

রাষ্ট্রপতির এমন মন্তব্যের পর দেশজুড়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা চলতে থাকে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণজমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর আগে রাষ্ট্রপতির এই মন্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল আখ্যায়িত করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে রাজশাহীতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে ছাত্ররা।

এদিকে, সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন। তাঁর বক্তব্য শপথ লঙ্ঘনের শামিল।  তিনি যদি তাঁর বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হতে পারে।

উপদেষ্টা, সমন্বয়কের প্রতিক্রিয়া

২২ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা। তারা বলেছেন, হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। এখন ভিন্ন তথ্য দেওয়ায় তাঁর রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ বলেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, এটা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির শপথ লঙ্ঘনের শামিল। তিনি যদি তাঁর বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে তাঁর রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কিনা, তা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে। সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ, তিনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় কী আছে, সে বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে আপিল বিভাগে রেফারেন্স পাঠানো হয়েছিল। এ কথা উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে জানতে চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবং অন্য বিচারপতিরা মিলে একটি মতামত দেন। সেই মতামতের প্রথম লাইনটি হচ্ছে, দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন…। তারপর অন্যান্য কথা। রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এসব কথা। এই রেফারেন্সে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির স্বাক্ষর আছে।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এই মতামতের ভিত্তিতে একটি নোট আমরা মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে প্রেরণ করি। রাষ্ট্রপতি এই অভিমত দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এর পর তিনি নিজেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রপতি ৫ আগস্ট রাতে নিজের ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এরপর একের পর এক কার্যাবলির মধ্য দিয়ে এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত, তিনি পুরো জাতির কাছে নিশ্চিত এবং পুনর্বার নিশ্চিত করেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এখন প্রায় আড়াই মাস পর যদি উনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেননি, এটা এক ধরনের স্ববিরোধিতা হয়। এতে ওনার শপথ লঙ্ঘন হয়েছে। এ পদে থাকার আর ওনার যোগ্যতা আছে কিনা, সে সম্পর্কে প্রশ্ন আসে।

‘মৌখিকভাবে’ পদত্যাগ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের কাছে ‘মৌখিকভাবে’ পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য দেন তিনি।

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেছিল স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা। পদত্যাগপত্র নিয়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার কথা থাকলেও ছাত্র-জনতা গণভবনের কাছাকাছি চলে এলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় খুনি হাসিনা।’

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদচ্যুতি ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি

২২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদচ্যুতি ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সময়সীমা বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৷ এর মধ্যে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতি ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে তারা।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও ফ্যাসিবাদের দোসর রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর (রাষ্ট্রপতির ডাকনাম) পদত্যাগের দাবিতে বিপ্লবী ছাত্র–জনতার গণজমায়েত’ কর্মসূচির আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ৷

কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্যে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যে শহীদ মিনার থেকে আমরা এক দফা ঘোষণা দিয়েছিলাম, সেখান থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করতে চাইছি। আমাদের প্রথম দফা, যে সংবিধানের মধ্য দিয়ে চুপ্পু বলবৎ রয়েছে, এই মুজিববাদী বাহাত্তরের সংবিধানকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সেই সংবিধানের জায়গায় ২০২৪-এর গণ–অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ ঘোষিত অন্য চার দফা দাবি হচ্ছে এই সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলার মাটি থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। ফ্যাসিবাদের সংবিধানের দোসর রাষ্ট্রপতি চুপ্পুকে (মো. সাহাবুদ্দিন) এই সপ্তাহের মধ্যে পদচ্যুত করতে হবে। অভ্যুত্থান ও জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে ২০২৪-পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক ঘোষণা করতে হবে এবং এর ভিত্তিতে দেশে বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এই তিন নির্বাচনে যাঁরা সংসদ সদস্য ছিলেন, তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তাঁরা যেন ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক না হতে পারেন ও নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার

২৩ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি আজ সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। তার আগেই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা–পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি: রাজনৈতিক সমঝোতায় সমাধান খুঁজছে সরকার

২৫ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের থাকা না-থাকার প্রশ্নে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না অন্তর্বর্তী সরকার। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজছে। তবে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে অনড় রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নেই বলে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের মন্তব্য সম্প্রতি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেই মন্তব্যকে ঘিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মহল থেকে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি ওঠে। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ তৈরি হয়। সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

এমন পটভূমিতে গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করা হবে।

অর্থনীতি

দেশে কর্মসংস্থানের অভাব, বিদেশ যেতে মরিয়া তরুণেরা

১৯ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

দেশে পছন্দমতো কাজ না পাওয়ায় তরুণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তাঁরা কাজের সন্ধানে কিংবা উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালে কাজের প্রত্যাশায় গড়ে প্রতি ঘণ্টায় দেড় শ বাংলাদেশি দেশ ছাড়ছেন। প্রতিবছর বাংলাদেশিদের জন্য দেশে-বিদেশে যত নতুন কর্মসংস্থান হয়, তার এক-তৃতীয়াংশই হচ্ছে প্রবাসে। স্বল্প শিক্ষিত তরুণদের প্রধান গন্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।

আবার শোভন কাজ না পেয়ে ও উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় অনেক বাংলাদেশি তরুণ ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হতে চেষ্টা করছেন। তাঁদের কেউ কেউ সফল হন, আবার অনেকে ব্যর্থ হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন বা বিভিন্ন দেশের কারাগারে বন্দী জীবন যাপন করছেন। ঝুঁকি নিয়েও এই তরুণ গোষ্ঠী যেন দেশ ছাড়তে মরিয়া।

প্রবাসে জনসংখ্যা বেশি, এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ এখন ষষ্ঠ। আর প্রবাসী আয় গ্রহণের দিক থেকে অবস্থান সপ্তম। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কাজ খুঁজে পেয়েছেন কিংবা প্রতিবছর কাজ খুঁজতে যান।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর শ্রমবাজারে ২০ থেকে ২২ লাখ তরুণ–তরুণী নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন। দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান হয় ১২ থেকে ১৩ লাখের। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় মজুরিভিত্তিক অনানুষ্ঠানিক খাতে, বাকিরা শোভন চাকরিতে যান। সেই হিসাবে প্রতিবছর তিন লাখের মতো শোভন চাকরি হয়। আর প্রতিবছর ৮ থেকে ৯ লাখ মানুষ প্রবাসে যান। তবে ২০২২ ও ২০২৩ সালে প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি নারী-পুরুষ কাজের জন্য প্রবাসে গেছেন।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, চাকরির সিংহভাগই তৈরি হয় বেসরকারি খাতে। কিন্তু শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ধরনের ব্যর্থতা আছে। তাই শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে একধরনের হতাশা কাজ করছে। এই হতাশ যুবগোষ্ঠীর অনেকে নিরুপায় হয়ে অসম্ভব কঠিন পথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অনেকে জমিজমা বিক্রি এবং ধারদেনা করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যান, মানবেতর জীবনযাপন করেন। পরিশ্রমের তুলনায় ন্যায্য মজুরি না পাওয়ার অভিযোগও আছে।

অর্থনীতিতে অলিগার্কদের প্রভাব দূর করাই অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ

আগস্ট ২০, ২০২৪, বণিক বার্তা

ক্ষমতার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় ফুলেফেঁপে ওঠা অল্প কিছু ব্যক্তির হাতে দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ চলে গেলে তারা পরিচিতি পান অলিগার্ক হিসেবে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে বাজার নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত সবখানেই দেখা যায় তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রের অবাধ পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছেন এমন বেশ কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী। দেশের অর্থনীতির বৃহদংশই তাদের ও তাদের মালিকানাধীন শিল্প গ্রুপগুলোর নিয়ন্ত্রণে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ অলিগার্কদের অনেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন। গ্রেফতার বা সম্পদ ক্রোকের আতঙ্কেও রয়েছেন তাদের কেউ কেউ।

গত দেড় দশকে অলিগার্ক হিসেবে অর্থনীতিতে ব্যাপক মাত্রায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন এমন ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন সালমান এফ রহমান (বেক্সিমকো গ্রুপ), মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম গ্রুপ), মুহাম্মদ আজিজ খান (সামিট গ্রুপ), আহমেদ আকবর সোবহান (বসুন্ধরা গ্রুপ), মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম (ওরিয়ন গ্রুপ) ও মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার (নাসা গ্রুপ)।

এর মধ্যে সালমান এফ রহমান ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যানের পাশাপাশি আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। দেশের ওষুধ শিল্পের শীর্ষ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পাশাপাশি বস্ত্র, সিরামিকস, রিয়েল এস্টেট, নির্মাণ, ট্রেডিং, সামুদ্রিক খাবার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মিডিয়া, বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ৩০টিরও বেশি কোম্পানি রয়েছে বেক্সিমকোর। গ্রুপটির অন্যতম কর্ণধার সালমান এফ রহমান শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

তার বিরুদ্ধে সরকারের একজন মন্ত্রী সমমর্যাদার পদে থেকে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নীতি প্রণয়ন ও এর প্রয়োগ ঘটিয়ে নিজের ব্যবসা সম্প্রসারণের অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে ব্যাংক চেয়ারম্যান হিসেবে এককভাবে ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া ও নিজেই নামে-বেনামে ঋণ গ্রহণের অভিযোগও। দেশের ব্যাংক খাতে এখন বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণের পরিমাণ অন্তত ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এর বড় অংশই খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

আর্থিক খাতে বড় মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদেরও। দেশের অন্তত সাতটি বেসরকারি ব্যাংকের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, তার প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতাও। এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অন্তত দুই ডজনের বেশি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নেয়ার অভিযোগ আছে। ভোগ্যপণ্য আমদানির বাজারেও রয়েছে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ। পাশাপাশি বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে বড় বিনিয়োগ রয়েছে গ্রুপটির। অভিযোগ রয়েছে, গভর্নর-ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তে এস আলমের প্রভাব ছিল।

দেশের বিদ্যুৎ খাতের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খানের হাতে। বেসরকারি খাতে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ১৮ শতাংশই এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে গ্রুপটি। এ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে মূলত গত দেড় দশকে। বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ বিভিন্ন খাতের অন্যতম প্রভাবক গ্রুপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ওবায়দুল করিমের ওরিয়ন গ্রুপ। এ গ্রুপের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে জানা গেছে।

ভূমি উন্নয়ন ও আবাসনসহ বিভিন্ন খাতের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আহমেদ আকবর সোবহানের বসুন্ধরা গ্রুপ। টানা ১৬ বছর ধরে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার। এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতিতে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করা এ ছয় গ্রুপের ঋণের স্থিতি এখন ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তাদের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে আড়াই লাখেরও বেশি মানুষের।

অর্থনীতির পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতিতে অলিগার্কদের প্রভাব দূর করা এখন অন্তর্বতী সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হয়ে উঠেছে। এজন্য সরকারকে চূড়ান্ত মাত্রায় সতর্ক ও পরিপক্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের অবাধে সম্পদ আহরণের সুযোগ বহাল থাকলে আর্থিক খাত ও বাজার ব্যবস্থাপনার সংকটগুলো আগের মতোই বহাল থাকবে। আবার অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো বিবেচনায় না নিয়ে হঠকারী কোনো পদক্ষেপ নেয়া হলে বাজার ধস, মূল্যস্ফীতির মতো সংকট প্রকট হয়ে ওঠারও জোর আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশের মতোই বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ক্ষমতার সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বৃহৎ শিল্পোদ্যোক্তাদের ফুলেফেঁপে ওঠার অনেক নজির পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে অর্থনীতিতে এখন পর্যন্ত শুধু দক্ষিণ কোরিয়ার চেবলগুলোকেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। অর্থনীতিকে আমূল বদলে দেয়ার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ও পরিকল্পনা থেকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এক সম্পদশালী গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন দেশটির সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পার্ক চুং-হি। ষাটের দশকে তার শাসনামলে ব্যক্তি খাতের পরিবারভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া হয় ভর্তুকি, প্রণোদনা, করছাড়, সহজ অর্থায়নসহ সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা। আবার এগুলোকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে পণ্য, সেবা, ব্যবস্থাপনাসহ ব্যবসার প্রতিটি অনুষঙ্গ নিয়ে নিয়মিতভাবে গবেষণা-উন্নয়ন চালিয়ে যায়, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়। জোর দেয়া হয় ব্যবসার সামাজিক ভিত্তি গড়ে তোলার ওপর।

এর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় গণ্ডি পেরিয়ে বৃহৎ আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যবসা সম্প্রসারণে উৎসাহ দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় হয়ে ওঠা নিশ্চিত করে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রাপ্রবাহ ও জনকল্যাণমূলক ভিত্তি গড়ে তোলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সরকারের নীতিমালা ও নজরদারি। এর সুবাদে ব্যবসার গণ্ডি বড় হয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো রূপ নেয় বৈশ্বিক জায়ান্টে। পারিবারিক এসব ব্যবসা দক্ষিণ কোরিয়ায় পরিচিতি পায় চেবল (চে=সম্পদ, বল=গোষ্ঠী) হিসেবে। স্যামসাং, হুন্দাই, এলজি, লোটের মতো দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক বৈশ্বিক জায়ান্ট ব্র্যান্ডগুলোর প্রায় সবক’টিই সফল চেবলের উদাহরণ। দেশটির রফতানি আয় ও বৃহৎ পরিসরে কর্মসংস্থান তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে এ প্রতিষ্ঠানগুলোই। দক্ষিণ কোরিয়াকে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর অন্যতম করে তোলার পেছনে এসব প্রতিষ্ঠানকেই কৃতিত্ব দেয়া হয় সবচেয়ে বেশি।

বিপদের সময়ে পাওয়া সরকারি নীতিসহায়তাকে অর্থনীতির জন্য লাভজনক বিনিয়োগে রূপ দিয়েছে চেবলগুলো। ১৯৯৭ সালের দিকে ব্যবসায়িক বিপর্যয়ে পড়ে দেশটির অন্যতম বড় চেবল হুন্দাই। সে সময় নীতিসহায়তা দিয়ে হুন্দাইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিল দেশটির সরকার। ফলে বিপর্যয় কাটিয়ে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায় গ্রুপটি। হুন্দাই বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে ২০০৯ সালে। তৎকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে কয়েকজন উদ্যোক্তা ও তাদের প্রতিষ্ঠান বাজারে একচেটিয়া আধিপত্যের সুযোগ করে নেয়। সে সময় অর্থনীতির নীতিনির্ধারকরা এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের অর্থনীতিতে চেবলের মতোই বড় ভূমিকা রাখবে প্রতিষ্ঠানগুলো।

কিন্তু গত দেড় দশকে প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক পরিসরে দক্ষিণ কোরীয় চেবলগুলোর মতো বড় মাপের কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম দাঁড় করানো বা ‘বাংলাদেশী বহুজাতিকে’ রূপ নিতে পারেনি। বরং আইনি ও নীতিগত সুবিধা নিয়ে দেশের বাজার ও আর্থিক খাতের ওপর একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। কারো কারো বিরুদ্ধে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অবাধে সম্পদ লুট ও বিদেশে পাচারেরও অভিযোগ এসেছে।

সাবেক অর্থ সচিব এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী মনে করেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণগুলো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রযোজ্য হবে না। কারণ কোরিয়ান ব্যবসায়ীদের স্বদেশপ্রেম ছিল। তারা বিদেশে সম্পদ পাচার করেনি। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর বড় অংশই বিদেশে অর্থ পাচারে অভিযুক্ত। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার কারণে এটি ঘটেছে।’

মুসলিম চৌধুরী বলেন, ‘ভারতে আইন করে বলে দেয়া হয়েছে, করপোরেট জগতের লোকেরা ব্যাংকের পর্ষদে আসতে পারবে না। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যবসায়ী, ঋণদাতা, ঋণগ্রহীতা সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সব ব্যাংকের মালিকানা ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। পুরো আর্থিক খাতেই একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অপরাধীদের অবশ্যই ধরতে হবে। আবার এটিও খেয়াল রাখতে হবে যাতে অর্থনীতি ধসে না পড়ে। প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা যাতে বন্ধ হয়ে না যায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

আশির দশকে সীমিত পরিসরে ট্রেডিং ব্যবসার মধ্য দিয়ে করপোরেট জগতে হাতেখড়ি হয় মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদের। পরবর্তী সময়ে যিনি এস আলম হিসেবেই বেশি পরিচিতি পান। প্রতিষ্ঠা করেন এস আলম গ্রুপ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিকাশের ধারায় থাকলেও গ্রুপটির ব্যাপক উত্থান দেখা গেছে গত দেড় দশকে। এ সময়ে দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারের নিয়ন্ত্রকদের একজন হয়ে ওঠেন এস আলম। আবার ব্যাংক খাতেও বিস্তার করেছেন একচেটিয়া আধিপত্য। গত এক দশকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ অন্তত সাতটি বেসরকারি ব্যাংকের। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা খাতেও আধিপত্য রয়েছে গ্রুপটির।

বর্তমানে এস আলম গ্রুপের অধীনে রয়েছে অর্ধশতাধিক কোম্পানি। ভোজ্যতেল, গম, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনের একচেটিয়া ব্যবসা রয়েছে গ্রুপটির। আবার ইস্পাত, সিমেন্ট, শিপিং, পরিবহন, পর্যটন, রিয়েল এস্টেট, বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে এস আলমের। গ্রুপটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ১ লাখের বেশি কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।

এস আলম গ্রুপের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে প্রতিষ্ঠিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এসএস পাওয়ার প্লান্ট নামে পরিচিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এস আলম গ্রুপ ও চীনের যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত। কোম্পানির ৭০ শতাংশ মালিকানা বাংলাদেশের এস আলম গ্রুপের এবং বাকি ৩০ শতাংশ চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রির। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৬০ কোটি ডলার।

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংক ও গ্রুপটিকে বড় অংকের ঋণ দেয়া একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বণিক বার্তাকে বলেন, এস আলম গ্রুপের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলোয় হাজার হাজার কোটি টাকার বেনামি ঋণ রয়েছে। এসব ঋণের সুবিধাভোগী এস আলম গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম দায়িত্ব হবে, বেনামি ঋণগুলো চিহ্নিত করে এস আলমের সিআইবিতে অন্তর্ভুক্ত করা। দেশে থাকা তার সম্পদকে সেসব ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে দেখাতে হবে। বিদ্যুৎ আমদানি বন্ধ করে এস আলমের বাঁশখালীর বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে উৎপাদনে রাখলে ব্যাংকের বেশির ভাগ ঋণই আদায় করা সম্ভব হবে।

দেশের বেসরকারি খাতের বৃহৎ করপোরেট গ্রুপগুলোর একটি বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড, যা সংক্ষেপে বেক্সিমকো গ্রুপ নামে পরিচিত। স্বাধীনতার পরের বছর গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেন দুই ভাই আহমেদ সোহেল এফ রহমান ও সালমান এফ রহমান। বস্ত্র, ওষুধ, সিরামিকস, রিয়েল এস্টেট, নির্মাণ, ট্রেডিং, সামুদ্রিক খাদ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মিডিয়া, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসা রয়েছে গ্রুপটির। বেক্সিমকোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গ্রুপটিতে ৭০ হাজার কর্মী কাজ করছেন। গ্রুপটির বার্ষিক আয় ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বিভিন্ন খাতে রয়েছে ৩০টির বেশি কোম্পানি। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি রফতানি খাতেও বড় দখল রয়েছে গ্রুপটির। বিশেষ করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, শাইনপুকুর সিরামিকস, বেক্সিমকো সিনথেটিকস লিমিটেডের ব্যবসায়িক সফলতা বেশ ভালো। ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রেখে বেক্সিমকো গ্রুপের কাছ থেকে ব্যাংকের ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে।

দেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রকদের একজন সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আজিজ খান। গত দেড় দশকে সামিট গ্রুপের ব্যবসার পাশাপাশি গ্রুপটির উদ্যোক্তাদের সম্পদ ফুলেফেঁপে বড় হয়েছে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিক ও অবকাঠামো খাতের ব্যবসা আছে সামিট গ্রুপের। সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের অধীনে সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ ব্যবসার পাশাপাশি ভাসমান স্টোরেজ ও রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) এবং এলএনজি টার্মিনালসহ সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের মাধ্যমে বন্দর ব্যবসা, সামিট কমিউনিকেশনসের মাধ্যমে ফাইবার অপটিকসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসা এবং আবাসন খাতের ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে গ্রুপটির।

১৯৫৫ সালে জন্ম নেয়া মুহাম্মদ আজিজ খানের উদ্যোক্তা জীবন শুরু হয়েছিল মাত্র ১৮ বছর বয়সে। বাবার কাছ থেকে নেয়া ৩০ হাজার টাকার পুঁজি দিয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে ছাত্রাবস্থায় ১৯৭৩ সালে পুরান ঢাকায় জুতা তৈরির মাধ্যমে তার ব্যবসায় হাতেখড়ি। এসব জুতার একটি অংশ বাটা কোম্পানিকে সরবরাহ করতেন তিনি। জুতা তৈরির পাশাপাশি তিনি পিভিসি (পলি ভিনাইল ক্লোরাইড) আমদানিও শুরু করেন। এরপর তিনি শুরু করেছিলেন চিটাগুড় রফতানির ব্যবসাও। দুই যুগের বেশি সময় ধরে তিনি যুক্ত ছিলেন ট্রেডিং ব্যবসার সঙ্গে।

এরপর ১৯৯৭ সালে দেশের বেসরকারি খাতের শীর্ষ স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে প্রথম উৎপাদনে আসে সামিটের তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সে সময় কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩৩ মেগাওয়াট। ২০০৮ সালে এ সক্ষমতা দাঁড়ায় ১০৫ মেগাওয়াটে। মূলত ২০০৯ সালের পর থেকেই বিপিডিবির সঙ্গে একের পর এক বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তিতে আবদ্ধ হতে থাকে কোম্পানিটি। প্রথমে কুইক রেন্টাল পরে আইপিপি স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে থাকে সামিট পাওয়ার। গত এক দশকে বেসরকারি খাত থেকে বিপিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ে সামিট পাওয়ারই প্রাধান্য পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কোম্পানির মুনাফা ও সম্পদের পরিমাণ। এ সময়ের মধ্যেই সিঙ্গাপুরে ব্যবসা চালানোর অনুমতি পায় সামিট গ্রুপ। বর্তমানে সামিটের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান জায়গা করে নিয়েছেন দেশটির শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায়। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের সর্বশেষ প্রকাশিত সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীর মধ্যে আজিজ খানের অবস্থান ছিল ৪১তম। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, তার মোট সম্পদ রয়েছে ১১২ কোটি ডলারের।

দেশে বর্তমানে সামিট গ্রুপের ১৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আছে। গ্রুপটির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২ হাজার ১৯৬ মেগাওয়াট। দেশের বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ১৮ শতাংশই সামিট গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সামিট গ্রুপের মতোই দেশে বিদ্যুৎ খাতের বড় নিয়ন্ত্রক হলো ওরিয়ন গ্রুপ। গ্রুপটির ছয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৬১১ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ খাত ছাড়াও ওষুধ, কসমেটিক ও টয়লেট্রিজ, অবকাঠামো উন্নয়ন, আবাসন, প্রকৌশলসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে ওরিয়নের। গ্রুপটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বলা হয়, এ ঘনিষ্ঠতার সুবাদে দেশের বৃহৎ কোনো যোগাযোগ অবকাঠামোয় প্রথম বেসরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে ওরিয়ন গ্রুপ। রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ হয়েছিল ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের মাধ্যমে।

ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের ১০৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হিসেবে দেখানোর জন্য গতকালই রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের প্রতি নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বহুবার সময় নিয়েও ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোম্পানির ঋণের যথাযথ শ্রেণীবিভাগ করে আগামী ২২ আগস্টের মধ্যে সোনালী ব্যাংককে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোয় (সিআইবি) প্রতিবেদন পাঠাতেও বলা হয়েছে।

দেশের ভূমি উন্নয়ন ও আবাসন খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হলো বসুন্ধরা গ্রুপ। সিমেন্ট, পেপার, ইস্পাত, এলপিজি, ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে বসুন্ধরার। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর অনেকটাই লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন গ্রুপটির চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘গত দেড় দশকে দেশে সৎভাবে ব্যবসা করার কোনো সুযোগ ছিল না। গুটিকয়েক ব্যবসায়ী দেশে পণ্য আমদানি করতেন। আবার তারাই বেশি দামে পণ্য বিপণন করেছেন। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশের মানুষ তার সুবিধাভোগী হতে পারেনি। এখন সময় এসেছে বাজার ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা তৈরি করার। তবে এটি করতে গিয়ে যাতে সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটিও দেখতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে নিজেই পণ্য আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে।’

২০০৮ সাল থেকে টানা ১৬ বছর ধরে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার। দীর্ঘ সময় ধরে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন তিনি। বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান নাসা গ্রুপের এ কর্ণধার শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে খাতটিতে ‘পরিবারতন্ত্র’ ও ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ তৈরিতে নজরুল ইসলাম মজুমদারের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকগুলোর সিএসআর খাত থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ তহবিলে কম্বল আর শত শত কোটি টাকার অনুদান দেয়ার মাধ্যমে তিনি সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধ করে সুশাসন ফেরানোর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপই নেয়া হবে। এরই মধ্যে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে নজরদারি ও তদারকি বাড়ানো হয়েছে। আমদানি থেকে বিপণন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মূল্যের ব্যবধান কমানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’

ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল, আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ সাত নতুন পরিচালক

২০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংকটি পরিচালনার জন্য নতুন পর্ষদ গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন গভর্নর নিয়োগের পর এই প্রথম একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হলো।

ব্যাংকিং খাতের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের আগের পরিচালকদের অনেকেই চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ছিলেন। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে এস আলম গ্রুপের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকসহ ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বর্তমানে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণ রেখে গেছে আওয়ামী লীগ সরকার

২০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরের বেশি সময়ে দেদার ঋণ নিয়েছে। এ ঋণের বড় অংশই নেওয়া হয়েছে দেশি উৎস থেকে। এর মধ্যে আবার বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে পাওয়া দেশি-বিদেশি ঋণের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পদত্যাগের সময় শেখ হাসিনার সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ ঋণ পরিশোধে এখন ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, সাবেক সরকারের যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা না থাকায় দেশি উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া হয়েছে। যদিও বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশি ঋণ নেওয়াকে সব সময় স্বাগত জানান অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। গত ১৫ বছরে অনেক বিদেশি ঋণও নেওয়া হয়েছে। তবে এসব ঋণের বেশির ভাগই নেওয়া হয়েছে দর–কষাকষি ও বাছবিচারহীনভাবে; যা সরকারের দায়দেনা পরিস্থিতিতে চাপ বাড়িয়েছে।

মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্দশা

আগস্ট ২০, ২০২৪, বণিক বার্তা

সাড়ে ১০ হাজার কোটির বেশি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছে কর্ণফুলী টানেল। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর যানবাহন চলাচল শুরুর পর থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ৮২টি যানবাহন এ টানেল পারাপার হয়েছে। যদিও টানেল নির্মাণের আগে করা সমীক্ষায় পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, চালুর প্রথম বছরে প্রতিদিন গড়ে যানবাহন চলবে ১৭ হাজারের বেশি।

প্রত্যাশিত পরিমাণে যানবাহন না চলায় লাভ হওয়া দূরের কথা, টানেলের দৈনন্দিন পরিচালন ব্যয় তুলে আনাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে টানেল নির্মাণের জন্য নেয়া চীনা ঋণ। গ্রেস পিরিয়ড শেষে এরই মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন টানেলটি নির্মাণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।

যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয়ের হিসাবে পদ্মা সেতুর চেয়ে দেড় গুণ খরচ হয়েছে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর তুলনায় কর্ণফুলী টানেলের পরিচালন ব্যয় সাড়ে তিন গুণ। বাংলাদেশের বাস্তবতায় কর্ণফুলী নদীতে টানেল বানিয়ে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা অপচয় করা হয়েছে বলে অভিমত তাদের।

‘‌কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ কতটা দূরদর্শী সিদ্ধান্ত?’ শিরোনামে সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক। গবেষণায় অদূরদর্শী পরিকল্পনা ও টানেলটির বিভিন্ন দুর্বলতা তুলে ধরেছেন তিনি।

টানেল পরিচালনা পদ্ধতিটিকে হাসপাতালের আইসিইউর সঙ্গে তুলনা করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেকোনো টানেলে কৃত্রিম অক্সিজেন ও আলো সরবরাহ, সামগ্রিক নিরাপত্তা ও জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কর্ণফুলী টানেলও এর ব্যতিক্রম নয়। দ্বিতল পদ্মা সেতু পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে যেখানে পাঁচ বছরে ৬৯৩ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, সেখানে একই সময়ের জন্য কর্ণফুলী টানেল পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হচ্ছে ৯৮৪ কোটি টাকা। কিলোমিটারপ্রতি পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে পদ্মা সেতুর চেয়ে সাড়ে তিন গুণ অর্থ খরচ হচ্ছে কর্ণফুলী টানেলে।

কর্ণফুলী টানেলের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে শাহ আমানত সেতু। এ সেতুর তুলনায় কর্ণফুলী টানেলের টোল হার যানবাহনভেদে আড়াই থেকে ছয় গুণ পর্যন্ত বেশি। টোল হারের এ পার্থক্য টানেলে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।

এতে আরো বলা হয়, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রামকে ‘‌ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলা। যদিও বাইসাইকেল, সিএনজি ও মোটরসাইকেলের মতো ‘‌লোকাল ট্রাফিক’ পারাপারের সংস্থান না রাখায় ‘‌ওয়ান সিটি টু টাউন’ পরিকল্পনাটি হুমকির মুখে পড়েছে।

যানবাহন চলাচলের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর অনুমোদিত হেডরুম ৫ দশমিক ৫ মিটার। সড়কের ওপর কোনো ফ্লাইওভার বা সমজাতীয় অবকাঠামো করলে যানবাহন নির্বিঘ্নে পারাপারের জন্য সেটির উচ্চতাও এ মানদণ্ড অনুযায়ী করা হয়। কর্ণফুলী টানেলে হেডরুম রাখা হয়েছে ৪ দশমিক ৯ মিটার। উচ্চতা কম হওয়ায় টানেল দিয়ে ভারী কার্গোর মতো যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। আবার নিরাপত্তাজনিত কারণে দাহ্য পদার্থসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকারও বিরূপ প্রভাব পড়ছে দৈনন্দিন যানবাহন চলাচলে। কর্ণফুলী নদীতে টানেলের বদলে ধনুকাকৃতির (আর্চ) লম্বা স্প্যান, সাসপেনশন ও কেবল দিয়ে ঝুলন্ত সেতু তৈরি করে কম খরচে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই একটি অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

কর্ণফুলী টানেলকে একটি অপচয় প্রকল্প হিসেবে অভিহিত করে ড. সামছুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌যানবাহন চলাচলের যে পূর্বাভাস সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় দেয়া হয়েছে, সেটি পুরোপুরি ফরমায়েশি। শুধু কর্ণফুলী টানেল নয়, বিগত সময়ের বেশির ভাগ প্রকল্পেই এমন ফরমায়েশি পূর্বাভাস বা প্রাক্কলন করা হয়েছে মূলত প্রকল্পগুলোকে বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে দেখানোর জন্য। ভবিষ্যতে যেন কেউ কর্ণফুলী টানেলের মতো টাকা অপচয়ের কোনো প্রকল্প করতে না পারে, সেজন্য এটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’

কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন হয় গত বছরের ২৮ অক্টোবর। পরদিন শুরু হয় যানবাহন চলাচল। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যান চলাচল শুরুর পর ২৯৫ দিনে ১২ লাখ ৪ হাজার ১৯৮টি যানবাহন কর্ণফুলী টানেল পারাপার হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে টানেল পারাপার হওয়া যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার ৮২। এ টানেল দিয়ে এখন পর্যন্ত চলাচলকারী যানবাহনের বড় একটি অংশ পর্যটনকেন্দ্রিক। অর্থাৎ টানেল ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগেরই উদ্দেশ্য ছিল এটি ভ্রমণ করে দেখা।

‘‌পোলট্রি বাজার থেকে ৫,২৯০ কোটি টাকা অতিরিক্ত তুলে নিয়েছে সিন্ডিকেট’

আগস্ট ২০, ২০২৪, বণিক বার্তা

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে বছরে অতিরিক্ত ৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংগঠনটির ভাষ্য, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা, অনেকেই খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে একচেটিয়াভাবে ডিম ও মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিপিএর পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ করা হয়।

সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা ডিম ও মুরগির বাজারে স্বস্তি আনার চেষ্টা করেছি। সবসময় করপোরেট গ্রুপের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এক কেজি ফিডের দাম ৪০-৫০ টাকা, একটি মুরগির বাচ্চার দাম ২৫-৩৫ টাকা। সেখানে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ৫ টাকা। আর এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ৭৬-৮৬ টাকা। কিন্তু আমাদের দেশে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ প্রতিবেশী দেশের তুলনায় দ্বিগুণ।’

ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ , ২৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের বেশির ভাগই ফলপ্রসূ হয়নি

আগস্ট ২১, ২০২৪, বণিক বার্তা

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। ওই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি খাতকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ও এর মাধ্যমে খাতগুলোর ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত করার কথা। এ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১০ সাল থেকে একের পর এক প্রকল্প নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। এরপর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ স্লোগান পাল্টে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ ধারণা সামনে আনেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ স্লোগানের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের সব সেবা ও মাধ্যম ডিজিটালে রূপান্তর, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এর আওতায় নেয়া হয় আরো নতুন নতুন প্রকল্প।

সব মিলিয়ে ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। যদিও এসব উদ্যোগের বেশির ভাগই ফলপ্রসূ হয়নি। প্রকল্পগুলোয় মোট ব্যয়ের সিংহভাগই হয়েছে অবকাঠামো উন্নয়নে। কিন্তু এত বিপুল ব্যয়ের বিপরীতে উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে পারেনি প্রকল্পগুলো। আবার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতেও বেশকিছু প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানেও প্রশিক্ষণার্থীদের পরে আইসিটি শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়নি।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবকাঠামো উন্নয়ন বাবদ নিষ্ফল বিনিয়োগের বড় একটি উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের নেয়া প্রকল্পগুলোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সারা দেশে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে গড়ে তোলা হচ্ছে হাই-টেক পার্ক, আইটি পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর সেন্টার, ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। হাই-টেক শিল্পের বিকাশে দেশব্যাপী এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও তা প্রত্যাশা অনুযায়ী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারেনি। কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে। এছাড়া সিলেট ও রাজশাহীতে নির্মিত হাই-টেক পার্কে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিসরে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। এসব পার্কে খুব সামান্য পরিমাণে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে।

হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ৭৮৮ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। এছাড়া আরো ১০টি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১২৯ কোটি ৯৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাই-টেক পার্কগুলোয় আইটি ইন্ডাস্ট্রিসংশ্লিষ্ট কোনো মালিক বা কর্মী যেতে আগ্রহী নন। কিছু প্রতিষ্ঠান প্রথমদিকে গেলেও নানা সংকটের কারণে পরে তারা ফেরত আসে। মূলত হাই-টেক পার্ক বলা হলেও এসব অবকাঠামোকে ঘিরে জীবনধারণের প্রয়োজনীয় ইকোসিস্টেম গড়ে না ওঠায় প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট কর্মীরা সেখানে যেতে চান না।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়িক মডেলের মধ্যে পরবর্তী ২০ বছর পরও চাহিদা থাকবে এমন পরিকল্পনা দেখাতে পারলে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হয়। কিন্তু পাঁচ বছর পরই যদি কোনো পণ্য অকেজো হয়ে যায়, তাহলে ব্যবসায়ীরা সেখানে বিনিয়োগ করতে চান না। বিগত সরকারের উদ্যোগগুলোর মধ্যে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার মতো কোনো মডেল দেখানো যায়নি। একদিকে অবকাঠামো উন্নয়নে আমরা পিছিয়ে আছি, অন্যদিকে পরিকল্পনায়ও ভুল হয়েছে। সরকারের প্রকল্পগুলোয় শিক্ষিত স্নাতকদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেই। এ খাতে যারা কাজ করছেন তারা যথাযথ দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। এটি সরকারের পরিকল্পনার ঘাটতির কারণেই হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারসহ বিভিন্ন ডিজিটাল লিটারেসি প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য তৎকালীন সরকার ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয়ে বেশকিছু প্রকল্প নিয়েছিল। এসব প্রকল্পের একটি অংশ এরই মধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে। যদিও সরজমিন পরিদর্শন করে বিভিন্ন উদ্বোধনকৃত প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত সরঞ্জামাদি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) প্রতিবেদন বলছে, মোট শিক্ষক-শিক্ষার্থী আদর্শ অনুপাতের কাছাকাছি থাকলেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষক সংকট অত্যন্ত প্রকট। বর্তমানে আইসিটিতে মোট ১ কোটি ১৩ লাখ ৩১ হাজার ১৪৩ শিক্ষার্থীর বিপরীতে এখন শিক্ষক রয়েছেন ১৪ হাজার ৭১২ জন। সে হিসাবে প্রতি ৬৮৯ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন একজন।

শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার আইসিটি খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রশিক্ষণে বড় ধরনের বিনিয়োগ করলেও এসবের সুবিধা শিক্ষার্থীরা পায়নি। বিশেষ করে মফস্বল ও গ্রামের শিক্ষার্থীরা আইটি ল্যাব পেলেও এসব ল্যাব সারা বছরই বন্ধ থাকে। শিক্ষক না থাকায় তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে থাকে। ফলে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে এবং এর প্রভাব পড়ছে ফলাফলেও। মাধ্যমিক পর্যায়ে যারা অকৃতকার্য হচ্ছে তাদের একটি অংশ আইসিটিতে অকৃতকার্য হচ্ছে।

সরকারের বড় প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ডিজিটাল সংযোগ তথা ফাইবার অপটিক্যাল নেটওয়ার্কের বিস্তার করা। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার বিস্তারের জন্য বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে কানেক্টেড বাংলাদেশ, ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন, জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (ইনফো সরকার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়)। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে সরকার। তবে এর সুফল এখনো পাচ্ছে না মফস্বল ও প্রত্যন্ত জনপদের অধিবাসীরা।

জানতে চাইলে বিডিজবস ডটকমের সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশের নাম করে এখানে নানা ধরনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় নেয়া এসব প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। এর সুবিধা সাধারণ মানুষ পায়নি। এমনকি অনেক প্রকল্প ইন্ডাস্ট্রির জন্য নেয়া হলেও ইন্ডাস্ট্রির মানুষজন এখান থেকে কোনো ধরনের সুবিধা পায়নি। ইনফো সরকার-৩ নামেও একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ডিজিটাল সংযোগ, ব্রডব্যান্ড সংযোগ গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেয়ার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এখনো গ্রামের মানুষজন মোবাইল নেটওয়ার্কের ওপরই নির্ভরশীল।’

তিনি বলেন, ‘নানা সময়ে প্রশিক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ইন্ডাস্ট্রি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাউকে পায় না। প্রশিক্ষণের জন্য এত বরাদ্দ কোথায় যায়, নাকি প্রশিক্ষণই ভালোভাবে হয় না তা নিশ্চিত করা হয় না। আমরা ইন্ডাস্ট্রির জন্য দক্ষ মানুষ খুঁজে পাই না। অনেক অ্যাপও তৈরি করা হয়েছে, যেসব অ্যাপের কোনো কার্যকারিতা নেই। সাধারণ মানুষ এসব অ্যাপ ব্যবহার করতে পারে না।’

মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে আগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। আর প্রকল্পগুলোর টেন্ডার থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সব পর্যায়েই প্রভাব খাটাতেন যুবলীগের এক নেতা। তারা নিজেদের মতো করে বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করতেন। এসব প্রকল্পের কোনো ধরনের সম্ভাব্যতাও যাচাই করা হতো না।

এর অন্যতম উদাহরণ ‘ডিজিটাল সরকার ও অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ (ইডিজিই)’ শীর্ষক প্রকল্পটি। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ সহযোগিতায় এটি বাস্তবায়ন করছে আইসিটি বিভাগ। এর আওতায় ২০ হাজার আইটি গ্র্যাজুয়েট ও উদীয়মানকে প্রযুক্তির ২২টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা। সেই সঙ্গে ৮০ হাজার গ্র্যাজুয়েটের কর্মসংস্থান তৈরির উপযোগী প্রশিক্ষণ, জাতীয় চাকরি বাতায়ন প্রস্তুতকরণ, স্মার্ট লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠা, নীতিমালা তৈরি, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রযুক্তি খাতের রফতানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করাও এর উদ্দেশ্য। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন। এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। প্রকল্পটি এখনো চলমান। কিন্তু এর লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সংশয় রয়ে গেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রশিক্ষণ মানে তো নলেজ ট্রান্সফার বা জ্ঞান বিনিময় করা। এ প্রশিক্ষণের যদি প্রায়োগিক দিক না থাকে তাহলে তা টেকসই হয় না। আমাদের এখানে যেসব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, সেগুলোর বড় একটি অংশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীরা কাজে যোগ দিচ্ছেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ নেন, পরের দিন দেখা যায়, তিনি বদলি হয়ে যান। ফলে এ প্রশিক্ষণ আর তার কোনো কাজে লাগে না। এর জন্য যেমন প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীকে উৎপাদনশীলতায় আনতে হবে, একই সঙ্গে নীতিগত সিদ্ধান্তও নিতে হবে এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনগণের কী কী উপকার হবে, ব্যবসায়িক সফলতা কতটুকু আর রফতানি সম্ভাবনা কতটুকু। এর জন্য চলমান প্রকল্পগুলোকে যাচাই-বাছাই করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নীতিনির্ধারকরা অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। কারণ অবকাঠামো তৈরিতে বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, লুটপাটেরও সুযোগ থাকে এ ক্ষেত্রে। এসব খাতে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল। জনগণের অর্থের নিদারুণ অপচয় এটি। অনেক প্রকল্প বৈদেশিক সহায়তায় নেয়া হয়েছে, এ ঋণের বোঝা জনগণকে নিতে হবে। এখন নতুন করে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে, টেকসই করার জন্য জনবল প্রস্তুত করতে হবে।’

সরকারের গৃহীত প্রকল্পগুলোর অন্যতম জয় ডিজিটাল সার্ভিস এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (ডিসেট)। পঞ্চগড়ের এ সেন্টারটিতে শুরুতে তিন মাস পরপর বেসিক কম্পিউটার, ফ্রিল্যান্সিংসহ বিভিন্ন কোর্সের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হলেও বর্তমানে তা তালাবদ্ধ রয়েছে। উদ্যোক্তা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে এর কার্যক্রম।

দীক্ষা-দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষা অনলাইনে, গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ, হার পাওয়ার, লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রভৃতি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

মোবাইল গেম ও অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নেয়া হয় ৩৩০ কোটি টাকার প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় পাঁচ শতাধিক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হলেও এসব অ্যাপ্লিকেশন আপডেট করা হয়নি। জনগণও এর সুফল ভোগ করেনি।

পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকার ক্ষুদ্রঋণ, কাজ করছে ৭২৪টি প্রতিষ্ঠান

২৫ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

৫০ বছর আগেও দেশে ‘ক্ষুদ্রঋণ’ শব্দটি খুব বেশি পরিচিত ছিল না। প্রচলিত ছিল, ঋণ, ধার, দেনা, কর্জ, হাওলাত ইত্যাদি শব্দ। ব্যাংক-ব্যবস্থায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রবেশাধিকার তখন ছিল না বললেই চলে। যদিও চড়া সুদে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রচলন ছিল। তবে কম বা বিনা সুদে প্রতিবেশী বা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে মানুষ বেশি ঋণ নিতেন।

বিশ্বে আধুনিক ক্ষুদ্রঋণের জনক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক বিশেষ আইনবলে যাত্রা শুরু করে ১৯৮৩ সালে। এ গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে বহুমাত্রিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লবের সূচনা হয়। এ জন্য ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ব্যাংকার টু দ্য পুওর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, এক নারীর সঙ্গে দেখা হয় তাঁর, যিনি বাঁশ দিয়ে চেয়ার বানান। দিনে ২০ টাকা আয় হয় তাঁর চেয়ার বিক্রি করে। আয় কম হওয়ার কারণ, বাঁশ এনে দেওয়া ব্যক্তিকেই তাঁর আয়ের একটা বড় অংশ দিয়ে দিতে হয়। ড. ইউনূসের উপলব্ধি হচ্ছে, প্রত্যেক মানুষ জন্মগতভাবে উদ্যোক্তা। ওই নারী যদি নির্ভর করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ পান, তবে স্বনির্ভর হতে পারবেন। এ উপলব্ধি থেকেই তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।

ক্ষুদ্রঋণের মূল ধারণাটি হচ্ছে, দরিদ্র ব্যক্তিদের কিছু টাকা ঋণ দেওয়া। সেই টাকায় তাঁরা ছোট আকারে ব্যবসা শুরু করবেন। ব্যবসার মুনাফা থেকে ঋণের টাকা ফেরত দেবেন প্রতিষ্ঠানকে। প্রতিষ্ঠান আবার ওই টাকা ঋণ দেবে অন্য কাউকে। এভাবেই বিষয়টি দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখবে। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের সমসাময়িক কাজ করেন ব্র্যাকের স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও আশার প্রতিষ্ঠাতা মো. সফিকুল হক চৌধুরী। তারপর অন্যরাও এগিয়ে আসেন।

দেশের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম দেখভালে বহু বছর কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা ছিল না। প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ২০০৬ সালে গঠিত হয় মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)। এ সংস্থার সনদ ছাড়া বর্তমানে কেউ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালাতে পারেন না। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমআরএ ৮৮২টি প্রতিষ্ঠানকে সনদ দিয়েছে। আর বাতিল করেছে ১৫৫টি সনদ। বর্তমানে সংস্থাটির কাছ থেকে সনদ নেওয়া প্রতিষ্ঠান ৭২৪টি। এসব প্রতিষ্ঠানের সদস্য ৪ কোটি ১৯ লাখ।

এমআরএর তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন পর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণের প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া সদস্য ৩ কোটি ২৩ লাখ, যাঁদের মধ্যে ৩ কোটি ১৮ লাখই নারী। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন সদস্যরা। আর ফেরত দিয়েছেন ২ লাখ ৬১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। সদস্যদের সঞ্চয় স্থিতি আছে ৬৬ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। আর ঋণস্থিতি আছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা।

ব্র্যাক, আশা, বুরো বাংলাদেশ, টিএমএসএস, এসএসএস, সাজেদা ফাউন্ডেশন, উদ্দীপন, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন, শক্তি ফাউন্ডেশন—এ ১০টি দেশের শীর্ষ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান। শীর্ষ ১০টির মোট সদস্য ২ কোটি ৪৮ লাখ, যাঁদের মধ্যে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪৮ হাজার ঋণগ্রহীতা সদস্য। ক্ষুদ্রঋণ গ্রাহকদের ৯০ দশমিক ৫৪ শতাংশই নারী।

এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফসিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, প্রান্তিক মানুষের ঋণ পাওয়ার জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ঋণ দেয় না, সামাজিক কার্যক্রমও করে। দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ক্ষুদ্রঋণ কী ভূমিকা রাখছে, এ খাতের মোট পরিসংখ্যানই তা বলে দিচ্ছে। চার কোটির বেশি মানুষ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সদস্য। আর এমন প্রতিষ্ঠানও আছে, যারা কোনো কোনো ব্যাংকের চেয়ে বেশি ঋণ দিচ্ছে।

গ্রামীণ ব্যাংকসহ আরও যাদের ক্ষুদ্রঋণ

এমআরএর সনদ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের বাইরেও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম রয়েছে দেশে। বিশেষ আইনে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক একটি ব্যাংক হলেও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে ব্যাংকটি। এমআরএর ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ১ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার জন। এর মধ্যে ৭১ লাখ ৬০ হাজার ঋণগ্রহীতা সদস্য ঋণ নিয়েছেন ২৪ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। সদস্যদের ঋণের স্থিতি ১৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা আর সঞ্চয় স্থিতি ২২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা।

সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, প্রতিষ্ঠানেরও বিশেষ কিছু কর্মসূচি আছে ক্ষুদ্রঋণের। সংস্থাগুলো হচ্ছে পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, সমাজসেবা অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, জাতীয় মহিলা সংস্থা ইত্যাদি।

ঋণগ্রহীতার সংখ্যার ভিত্তিতে এমআরএ অতি বৃহৎ, বৃহৎ, মাঝারি ও ছোট—এ চার ভাগে ভাগ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। ৫ লাখের বেশি গ্রাহক থাকলেই অতি বৃহৎ, এ তালিকায় আছে ব্র্যাক, আশাসহ সাতটি প্রতিষ্ঠান। শুরুর দিকে বৈদেশিক তহবিলের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে দেশীয় উৎসনির্ভর।

ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফিন্যান্সের (আইএনএম) সাবেক নির্বাহী পরিচালক এম এ বাকী খলীলী প্রথম আলোকে বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ক্ষুদ্রঋণ খাতের অবদান ১২ থেকে ১৩ শতাংশ। আর গ্রামীণ অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ঋণ কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বছরে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকার ঋণ কার্যক্রমের বহুমাত্রিক প্রভাব রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোতে সদস্যদের অংশগ্রহণসহ দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ার ক্ষুদ্রঋণ।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নৌপথে পণ্য পরিবহনে নেই সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যয় কমেছে ২৫%

২৫ আগস্ট ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা

পণ্য পরিবহনে সিন্ডিকেট না থাকায় এখন চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে দেশের ৩৪টি নৌ রুটে পণ্য পরিবহন হচ্ছে ওপেন মার্কেট সিস্টেমে। এর ফলে লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহন ব্যয় অন্তত ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এর প্রভাবে বাজারে পণ্যমূল্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করত ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি)। জাহাজ মালিকদের সংগঠনের মধ্যে বিরোধের পর মার্কেন্টাইল মেরিন অফিস (এমএমও) গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন সেল (বিডব্লিউটিসিসি) প্রতিষ্ঠা করে।

তবে জাহাজ মালিকরা সংগঠনের অধীনে একত্রিত না হওয়ায় বিডব্লিউটিসিসি চালু হয়নি।

সিন্ডিকেট হিসেবে কাজ করা এসব সংগঠন না থাকায় আমদানি পণ্যের মালিক ও এজেন্টরা এখন তাদের পছন্দমতো জাহাজ ভাড়া করে পণ্য পরিবহন করতে পারছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে সিন্ডিকেটগুলো সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

জাহাজের নিবন্ধনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান এমএমও, জাহাজ মালিক ও আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, নৌপথে পণ্য পরিবহন কোনো সেলের অধীনে হোক, সেটি তারা চান না।

তারা বলছেন, ওপেন মার্কেট সিস্টেমে পণ্য পরিবহন হলে কমিশন বাবদ টনপ্রতি ২০ টাকা পরিবহন ব্যয় কমে আসবে। একইসঙ্গে কমবে বাড়তি ভাড়া আদায়সহ নৈরাজ্য।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রাম বন্দরে নৌপথে পণ্য পরিবহন ও পণ্য খালাসে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে আনলোডিং পয়েন্টে ঘাটে ভাঙচুর ও হামলার কারণে জাহাজগুলো অন্তত পাঁচ দিন পণ্য খালাস করতে পারেনি।

সীকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমিরুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আগে বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় তাদের নির্ধারিত দরে পণ্য পরিবহন হতো। এখন আর সেটি নেই।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর এই সিন্ডিকেট পুরোপুরি ভেঙে গেছে,’ বলেন তিনি।

আমিরুল হক জানান, আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে টনপ্রতি ভাড়া ছিল ৫৮৫ টাকা। এখন সেটি ৪৪০ টাকায় নেমে এসেছে। ‘পণ্য পরিবহন ব্যয় কমে এলে স্বাভাবিকভাবে পণ্যের মূল্যও কমে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, কোনোভাবেই যাতে আর এই পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা কোনো সিন্ডিকেটের দখলে না যায়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

সাধারণ জাহাজ মালিক, লজিস্টিক কোম্পানি এবং শিল্প মালিকরা যেন তাদের নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী পণ্য পরিবহন করতে পারে, এটি নিশ্চিত করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা জাহাজের ৪৫ শতাংশই বাল্ক ক্যারিয়ার বা খোলা পণ্যবাহী। বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজযোগে মুলত গম, চাল, ডাল, চিনি, ভুট্রা, ছোলা, খাদ্যপণ্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, স্ক্র্যাপসহ বিভিন্ন পণ্য আসে। এই বন্দরে আসা খোলা পণ্যের ৭৫ শতাংশ বর্হিনোঙরে লাইটার জাহাজে খালাস হয়। বাকি ২৫ শতাংশ পণ্য খালাস হয় বন্দর জেটিতে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য লাইটার জাহাজে খালাস করা হয়। এসব পণ্য দেশের ৩৪টি নৌ রুটে পরিবহন করে প্রায় আড়াই হাজার লাইটার জাহাজ।

এর মধ্যে ডব্লিওসিটির নিয়ন্ত্রণে ছিল প্রায় ১ হাজার ৩০০টি জাহাজ। এছাড়া বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ৪০০টি জাহাজ বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে যুক্ত ছিল।

সেলের বাইরে বিভিন্ন লজিস্টিকস কোম্পানিও লাইটার জাহাজ পরিচালনা করত। পরবর্তীতে ডব্লিওটিসি ভেঙে গেলে চট্টগ্রামভিত্তিক ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অভ চট্টগ্রাম (আইভোয়াক) এবং বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিভিওএ) আলাদাভাবে জাহাজের সিরিয়াল দিত।

বর্তমানে ব্যক্তিমালিকানাধীন, শিল্প গ্রুপ ও লজিস্টিকস কোম্পানির প্রতিদিন প্রায় ১০০ লাইটার জাহাজ পণ্য পরিবহন করছে।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য লোডিং স্বাভাবিক থাকলেও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ সহ বিভিন্ন আনলোডিং পয়েন্টে পণ্য খালাস বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন ঘাটে হামলা ও পণ্য লুটের আশঙ্কায় জাহাজগুলো ঘাটের অদূরে নদীতে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন লাইটার জাহাজ শ্রমিকরা।

এমএমওর প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ টিবিএসকে বলেন, ‘নৌপথে পণ্য পরিবহন এখন ওপেন মার্কেটে পরিচালিত হচ্ছে। কার্গো মালিক সরাসরি জাহাজ বুকিং নিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত সরকারের সময়ে নতুন সেল গঠনের বিষয়ে একটি চেষ্টা চলছিল। কিন্তু জাহাজ মালিক সংগঠনগুলো ঐকমত্যে না আসায় সেটি সম্ভব হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই বিষয়ে কী সিন্ধান্ত নেয়, তার ওপর নির্ভর করবে নতুন সেল গঠন হবে কি না।’

সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে ওপেন মার্কেট সিস্টেমে জাহাজ ভাড়া নেওয়ায় পণ্য পরিবহনে খরচ আগের তুলনায় কমে এসেছে।’

চট্টগ্রাম, মোংলাসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্য পরিবহনকারী লজিস্টিকস কোম্পানি এএমএমএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, ‘ডব্লিওটিসি গঠিত হয়েছিল বন্দরের বহির্নোঙর থেকে পণ্য পরিবহনের সমন্বয় করতে। কিন্তু তারা নৌ রুটে পণ্য পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। এই সেল টনপ্রতি ২০ টাকা কমিশন নিত। নিজেদের ইচ্ছামাফিক জাহাজ বরাদ্দ দিত। পণ্য পরিবহনে বিলম্ব হলে ডাবল ভাড়া চাপিয়ে দিত।

‘এর ফলে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়ে যেত দ্বিগুণ। কোনো অবস্থাতেই যাতে বন্দরের পণ্য পরিবহন সেল কিংবা সিন্ডিকেটের দখলে না যায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

২০০৩ সালে বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিভিওএ), কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশ এবং ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অভ চট্টগ্রাম (আইভোয়াক) যৌথভাবে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল প্রতিষ্ঠা করে।

শিপিং খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, ডব্লিওটিসি নিয়ন্ত্রন করত বিসিভিওএ। এর নেপথ্যে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ উপেদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন ও ডব্লিওটিসির কনভেনর নুরুল হক চৌধুরীসহ একটি চক্র।

চট্টগ্রামভিত্তিক আইভোয়াকের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আজম নাছির উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নোয়াখালীর সাবেক সংসদ সদস্য একরাম চৌধুরী ও আইভোয়াকের মুখপাত্র পারভেজ আহমেদসহ বেশ কিছু নেতা।

আইভোয়াকের মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ টিবিএসকে বলেন, আইভোয়াক ও ডব্লিউটিসির কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে নৌপথে পণ্য পরিবহনকারী ঠিকাদাররা তাদের নিজস্ব নৌবহরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করছে।

বিসিভিওএর সেক্রেটারি নুরুল হক বলেন, বর্তমানে কোনো সেলের অধীনে জাহাজ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না। ‘এটি এখন এলোমেলো অবস্থায় আছে। তবে আমরা পরবর্তীতে এটি ঠিক করে নেব।’

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক নবী আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য লোডিং স্বাভাবিক রয়েছে। ‘১০ আগস্ট থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।’

৭২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেললাইন, ট্রেন চলে কম

০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

রাজবাড়ী থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ ও পুরোনো লাইন সংস্কারে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করার সময় বলা হয়েছিল, এই রেললাইন দিয়ে দিনে ১৪টি ট্রেন চলাচল করবে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এই রেলপথ উদ্বোধন করেন। এখন এই পথে ট্রেন চলছে মাত্র দুটি।

রাজবাড়ী–গোপালগঞ্জের মতো ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্মিত আটটি রেললাইন সক্ষমতার তুলনায় অনেক কম ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাকি সাতটি রেললাইন হলো পাবনা–ঢালারচর, কুমিল্লার লাকসাম–চিনকি আস্তানা (চট্টগ্রামের কাছে), চট্টগ্রামের দোহাজারী–কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া–কুমিল্লার লাকসাম, খুলনা–মোংলা, আখাউড়া–আগরতলা (ভারত) এবং পদ্মা রেলসংযোগ (ঢাকা থেকে যশোর)। এগুলো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৭১ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। কিন্তু সুফল কম। ফলে রেললাইনগুলোকে বলা হচ্ছে ‘সাদা হাতি’।

‘সাদা হাতি’ বাগ্‌ধারাটি দিয়ে বোঝানো হয়, যার পেছনে প্রচুর ব্যয় হয়, কিন্তু সুফল পাওয়া যায় না। থাইল্যান্ডে রাজারা সাদা হাতি পুষতেন। প্রাণীটিকে ধরা হতো পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে। সাদা হাতি দিয়ে কোনো কাজ করানো নিষিদ্ধ ছিল। রাজারা কারও ওপর নাখোশ হলে তাঁকে বিপাকে ফেলতে সাদা হাতি উপহার দিতেন। উপহার পাওয়া ব্যক্তি সাদা হাতি পুষতে গিয়ে আর্থিক দুর্দশার মধ্যে পড়তেন।

সূত্র বলছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের ওই সব প্রকল্পের কোনোটি নেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়, কোনোটি অর্থায়নকারী কোনো দেশের পরামর্শে, কোনোটি ঠিকাদারদের তৎপরতায়। এখন প্রকল্পগুলো দেশের মানুষের জন্য বোঝায় পরিণত হয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকার যে ১৮ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ রেখে গেছে, তার একটি অংশ দিয়ে এমন ‘সাদা হাতি’ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল।

রেললাইন প্রকল্পগুলোর নির্মাণ ব্যয় ও মেয়াদ বারবার বাড়ানো হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই আট প্রকল্পের ছয়টি বাস্তবায়নে নিয়োজিত ছিল চীনের কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পাঁচটিতে তাদের অংশীদার ছিল বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান। দুটিতে কাজ করেছে ভারতীয় ঠিকাদার।

এগুলো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৭১ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। কিন্তু সুফল কম। ফলে রেললাইনগুলোকে বলা হচ্ছে ‘সাদা হাতি’।

বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ পেয়েছে ম্যাক্স গ্রুপ ও তমা কনস্ট্রাকশন।

সূত্র বলছে, মূলত বাংলাদেশি প্রভাবশালী ঠিকাদারেরা কাজ পাওয়ার যোগ্যতা বাড়াতে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সামনে রাখেন। কাজ পাওয়া এবং বাস্তবায়নে স্থানীয় ঠিকাদারেরাই মূল ভূমিকা পালন করেন। একমাত্র পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পে চীনা ঠিকাদার মূল ভূমিকায় ছিল।

বেশি কাজ পাওয়া তমা কনস্ট্রাকশনের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান ভূঁইয়া নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে অংশ নিয়ে তিনি পরাজিত হন। তমা কনস্ট্রাকশনের পেছনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম রয়েছেন বলে আলোচনা আছে। আত্মগোপনে থাকায় মির্জা আজমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শেখ পরিবারের নাম থাকলেই পাস : ৮২ প্রকল্পে ব্যয় ৫১ হাজার কোটি টাকা

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের চাপে বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। এসব প্রকল্প যাতে সহজে পাস করানো যায়, সে জন্য কৌশলে ব্যবহার করা হয়েছিল শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম। কিছু প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হলেও কাজে আসছে না। এতে সরকারি টাকার অপচয় হয়েছে।

শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে গত ১৫ বছরে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ৮২টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩৮টি প্রকল্পের কাজ শেষ, বাকি ৪৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে।

প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছিল বিনোদনকেন্দ্র, সাফারি পার্ক, দৃষ্টিনন্দন ভবন, নভোথিয়েটার, আইসিটি, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠার নামে। প্রকল্পগুলো নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, ছেলে শেখ কামাল ও শেখ রাসেলের নামে। এ ছাড়া শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের নামে আরও ৪৩টি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। এগুলো অনুমোদনের আগেই সরকারের পতন হয়।

ওএমএসের দোকানে মধ্যবিত্ত বরাদ্দ কম, ফিরতে হচ্ছে খালি

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

বাড়ির চারপাশে এখনও বন্যার পানি। এর মধ্যে ঘরে চাল নেই আম্বিয়া বেগমের (৬৫)। কোমরসমান পানিতে ভিজে গতকাল বুধবার সকালে তিনি ওএমএসের দোকানে ন্যায্যমূল্যে চাল-আটা কিনতে আসেন হিরাপুর এলাকায়।

এখানে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের ডিলার মো. বেল্লাল হোসেনের দোকান। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর খালি হাতে ফিরতে হয় একই এলাকার আম্বিয়াকে। সকাল ১০টায় লাইনে দাঁড়ানোর পর দুপুর ১টার দিকে তাঁকে জানানো হয়, দিনের বরাদ্দ চাল-গম শেষ। এতে খুব মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফেরেন এই বৃদ্ধ নারী।

একই অবস্থা উপজেলার অন্যান্য এলাকায়ও। বুধবার উপজেলার ভাটরা, ভাদুর, কাঞ্চনপুর, চণ্ডীপুর ইউনিয়নের বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে জানা গেছে, চাল-আটা বরাদ্দ কম থাকায় বেশির ভাগ মানুষকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। ডিলারদের ভাষ্য, বরাদ্দের চার-পাঁচ গুণ বেশি মানুষ আসছেন। বাধ্য হয়ে বাড়তি লোকদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে তাদের।

পূর্ব বিঘা এলাকার দিনমজুর সহিদুল ইসলামের (৫০) মন্তব্যে এর কারণ আঁচ করা যায়। তিনি বলেন, ওএমএসের দোকানের সামনের লাইনে মিশে যাচ্ছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন। আগে তাদের দেখা যেত না। ৫ কেজি চাল আর ৫ কেজি আটার জন্য কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে সবাইকে। বুধবার সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়েও সহিদুল চাল-আটা পাননি। খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।

কাল থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস্ট স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

সারাদেশে আগামীকাল রোববার থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয় করবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

এ কার্যক্রমের আওতায় সারাদেশে কার্ডধারী এক কোটি পরিবারকে চাল, মসুর ডাল ও ভোজ্যতেল দেওয়া হবে।

প্রত্যেক কার্ডধারী পরিবার ১০০ টাকা লিটার দরে সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, ৬০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল ও ৩০ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে বছরে ৬৬ কোটি টাকা লোকসান

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। ফলে লোকসানে আছে স্যাটেলাইটটির পরিচালনাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)। যদিও ‘কৌশলে’ তারা নিজেদের লাভজনক দেখাচ্ছে।

বিএসসিএলের সর্বশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন (২০২১-২২) অনুযায়ী, কোম্পানিটির মুনাফা ৮৫ কোটি টাকা। যদিও মুনাফার এই হিসাব করার ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের অবচয় বা ডেপ্রিসিয়েশন ধরা হয়নি। অবচয় ধরা হলে মুনাফার বদলে লোকসান দাঁড়াবে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরেও প্রায় সমপরিমাণ লোকসান ছিল।

লাভ-লোকসানের হিসাবের ক্ষেত্রে সম্পদের স্থায়িত্বের বিপরীতে বছর বছর অবচয় দেখাতে হয়। ধরা যাক, একটি গাড়ির দাম ১০ লাখ টাকা। এটি ব্যবহার করা যাবে ১০ বছর। তাহলে বছরে গাড়িটির অবচয় দাঁড়াবে ১ লাখ টাকা।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মেয়াদ ১৫ বছর। এর সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। ফলে বছরে অবচয় (স্ট্রেইট লাইন মেথড) দাঁড়ায় প্রায় ১৮৬ কোটি টাকা।

যোগসাজশে বোতলজাত পানির দাম বৃদ্ধি, ৭ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ঢাকা পোস্ট

খরচ বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে যোগসাজশের মাধ্যমে বোতলজাত পানির দাম বাড়িয়েছে দেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো। ভোক্তার পকেট কেটে তারা লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকার মুনাফা। আধা লিটারের বোতলজাত পানির দাম বাড়িয়ে ৪২০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অনুসন্ধানে যার প্রমাণ পেয়েছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।

এ অপরাধে প্রভাবশালী ৭ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে প্রতিযোগিতা কমিশন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- কোকাকোলা বাংলাদেশ বেভারেজ লিমিটেড, ট্রান্সকম বেভারেজ, মেঘনা বেভারেজ, পারটেক্স বেভারেজ, রূপসী ফুডস (সিটি গ্রুপ), আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এবং প্রাণ বেভারেজ লিমিটেড।

নামমাত্র খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে ব্যাপক মুনাফা করছে বোতলজাত পানির উৎপাদকরা

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

ডলার ও কাঁচামালের আমদানি খরচে ‘নামমাত্র’ ব্যয় বাড়লেও এই অজুহাতে উৎপাদন ও সরবরাহকারী বেসরকারি কোম্পানিগুলো আধা লিটারের বোতলজাত পানির দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৪২০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা বাড়িয়েছে বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের (বিসিসি) এক অনুসন্ধানে।

সেখানে উৎপাদন ও সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত পানির মূল্য যোগসাজসের মাধ্যমে ‘অস্বাভাবিকভাবে নির্ধারণ’ করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোকাকোলা বাংলাদেশ বেভারেজ লিমিটেড, ট্রান্সকম বেভারেজ, মেঘনা বেভারেজ, পারটেক্স বেভারেজ, রুপসী ফুডস (সিটি গ্রুপ), আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ এবং প্রাণ বেভারেজ লিমিটেড– এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।

কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান টিবিএসকে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কমিশনের ‘বোতলজাত পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে’ উঠে এসেছে, বোতলজাত পানির উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রথম সারির (মার্কেট শেয়ারের ভিত্তিতে) কোম্পানিগুলো ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে হঠাৎ করে আধা লিটার পানির বোতলের দাম ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা নির্ধারণ করে। এই দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলো ডলার ও কাঁচামালের কারণে বেড়ে যাওয়া আমদানি খরচকে দায়ী করে।

তবে কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ বিশ্লেষণ করে কমিশন দেখতে পায়, নামমাত্র উৎপাদন খরচ বাড়লেও দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে মূলত কোম্পানিভেদে মুনাফা বাড়ানো হয়েছে ৭১.২৩ শতাংশ থেকে ৪২০ শতাংশ পর্যন্ত। প্রফিট মার্জিন বেড়েছে ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতার।

ঢাকা ওয়াসা-সহ মোট ৮ কোম্পানির উৎপাদন খরচ বিশ্লেষণ করা হয় অনুসন্ধান পর্যায়ে। এরমধ্যে ওয়াসা ছাড়া বাকি ৭টি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।

টিবিএস মামলায় জড়িত ৭ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। তাতে ট্রান্সকম এবং সিটি গ্রুপের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

বাকি কোম্পানিগুলো তাদের বিরুদ্ধে হাওয়া মামলাআর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, চলতি মাসের ১৮ তারিখে মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

পারটেক্স গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো: নাহিদ ইউসুফ শুনানিতে নিজেদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন।

৪২০ শতাংশ মুনাফা করেছে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ

পানির দাম বাড়িয়ে যেসব কোম্পানি অতিরিক্ত মুনাফা করেছে, তাদের একটি  অকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। কমিশনের তথ্যমতে, স্পা ব্র্যান্ড নেমের অধীনে আধা লিটার পানির দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৪২০ শতাংশ মুনাফা করেছে  কোম্পানিটি।

প্রতিষ্ঠানের ১৮.৩৩ শতাংশ উৎপাদন খরচ ও ভ্যাট-ট্যাক্স এর কারণে ৩১.৭৮ শতাংশ খরচ হলেও কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২০ শতাংশ।

দাম বৃদ্ধির আগের আকিজের আধা লিটার পানি বিক্রি করে খুচরা বিক্রেতা পেতেন ৫.৬২ টাকা— যা দাম বৃদ্ধির পর ৯ টাকা হয়েছে।

একইভাবে, কোকাকোলার কিনলে ব্র্যান্ডেড ৫০০ মি.লি. বোতলজাত পানির উৎপাদন খরচ বেড়েছে ১.৬২৪ টাকা, যা শতাংশের হিসেবে ২৭.৬৭ শতাংশ এবং ভ্যাট-ট্যাক্স ও সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি ৩৩.৮৫ শতাংশ বেড়েছে। ৫ টাকা মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে কোম্পানি তাদের মুনাফা বাড়িয়েছে ২১১.৬২ শতাংশ। এতে ডিস্ট্রিবিউটর পর্যায়ে মুনাফা বেড়েছে ৩০.১৩ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে ২৬.৯৮ শতাংশ।

কিনলের আধা লিটারের একটি পানির বোতল ১৫ টাকা বিক্রি করে খুচরা বিক্রেতা আগে ৬.৬৭ টাকা মুনাফা করতেন, এখন সেটির দাম ৫ টাকা বাড়ানোর পর মুনাফা করছেন ৮.৪৭ টাকা।

একইভাবে, ট্রান্সকম বেভারেজের মুনাফা ৭১.২৩ শতাংশ এবং মেঘনা বেভারেজ লিমিটেডের মুনাফা ১৭৭.৭৮ শতাংশ বেড়েছে বলে উঠে এসেছে তদন্তে।

কমিশনের পর্যবেক্ষণ বলছে, সিটি গ্রুপ অপর্যাপ্ত তথ্য দেওয়ায় ও প্রাণ কোন প্রকার তথ্য সরবরাহ না করায় তাদের মুনাফার পরিমাণ বিশ্লেষণ করা যায়নি। শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান, পারটেক্স বেভারেজ দাম বাড়িয়ে ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতাদের কমিশন বাড়ালেও কোম্পানির মুনাফা বাড়ায়নি।

এছাড়া, ঢাকা ওয়াসার শান্তি ব্র্যান্ডের পনির উৎপাদন খরচ বাড়েনি এবং তারা প্রতিষ্ঠানের, ডিস্ট্রিবিউটর এবং খুচরা বিক্রেতার কমিশনও বাড়য়ানি। এতে করে অবশ্য প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায় ধাক্কাও খাচ্ছে। ১৫ টাকায় পানি বিক্রি করে লাভ কম হওয়ায় তাদের পানি খুচরা বিক্রেতারা দোকানে রাখতে চান না বলে জানা গেছে।

প্রতিযোগীতামূলকভাবে দাম নির্ধারণ না করে পারস্পারিক যোগসাজসের মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে মূল্য নির্ধারণ করতে গিয়ে প্রতিযোগীতা আইন, ২০১২ এর ধারা ১৫(১), ১৫(২)(ক)(অ) ও ১৫(২)(খ) লঙ্ঘন করেছে কোম্পানিগুলো।

বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম–মুরগি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

সরকারিভাবে ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে নিয়ে জানা গেছে, বেঁধে দেওয়া ওই দামে এই তিন পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ডিম ও মুরগি।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। নতুন দর অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও সোনালি মুরগি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা ঠিক করা হয়। এ ছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। তাতে প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়ে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।

সোয়া ২ লাখ কোটি টাকার ৭ প্রকল্পের ব্যয় যাচাই হবে

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

গত মাসে ক্ষমতা হারানো শেখ হাসিনা সরকারের নেওয়া সাতটি মেগা প্রকল্প চলমান আছে। এসব প্রকল্পে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে একমাত্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়া বাকি ছয়টি প্রকল্পের ৯০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। তবে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে এ রকম প্রকল্প নেওয়ার কী প্রয়োজনীয়তা ছিল এবং প্রকল্পগুলো যৌক্তিকভাবে নেওয়া হয়েছে কি না, এসব পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে মেগা প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করার এই তথ্য জানা গেছে। প্রকল্পগুলোর ব্যয় পর্যালোচনার কাজটি করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অর্থনীতির ওপর যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে, সেখানেও মেগা প্রকল্পের ওপর একটি পর্যালোচনা থাকবে। তাতে প্রকল্পগুলোর আদৌ দরকার ছিল কি না; কেন নেওয়া হয়েছিল—এসব খোঁজা হচ্ছে। পাশাপাশি খরচও পর্যালোচনা করা হবে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশ কিছু বড় প্রকল্প নেওয়া হয়, যেগুলো মেগা প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকায় মেট্রোরেল চালু, পদ্মা সেতু, চার লেন সড়ক—এসব প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু বেশ কিছু প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল বলে আলোচনা আছে। আবার বেশি অর্থ ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নতুন সরকার এখন এসব প্রকল্পের অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা খুঁজছে। প্রাথমিকভাবে আইএমইডি কাজ শুরু করেছে।

বেকার পড়ে আছে ৪০০ কোটি টাকার ওয়াগন

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, এখন টিভি অনলাইন

কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে আমদানি করা প্রায় ৫০০ মালবাহী ওয়াগন পড়ে আছে চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে। সম্প্রতি ৬০টি ওয়াগন খাদ্যশস্য পরিবহনে ব্যবহৃত হলেও বাকী ওয়াগন খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে। ট্রেনে খাদ্যশস্য ও পাথর পরিবহন কম হলেও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে ওয়াগন কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

রেল লাইনের বুক জুড়ে অলস পড়ে আছে হলুদ ও লাল বর্ণের সারি সারি ওয়াগন। এক বছর আগে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে এসব মিটারগেজ ওয়াগন আমদানি করে রেলওয়ে । ৫৮০টি ওয়াগনের মধ্যে ৩৮৬টি খাদ্যশস্য ও ১৭৪টা পাথর পরিবহনের জন্য। এর মধ্যে ৬০টি খাদ্য শস্যবাহী ওয়াগন চলতি মাসে সরকারি গুদামে গম পরিবহনে নিযুক্ত করা হয়। বাকিগুলো চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে। এরই মধ্যে চুরি হয়েছে বেশ কিছু মূল্যবান ব্যাটারিও।

৩০টি ওয়াগন মিলে চলে একটি খাদ্য শস্যের ট্রেন। প্রতি ট্রেনে রেলের আয় প্রায় সাত লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ৩৮৬টি ওয়াগন দিয়ে দৈনিক কমপক্ষে ১০টি ট্রেন চললেও বছরে রেলের বাড়তি আয় হতো ২৫৫ কোটি টাকা। তবে কেনো এসব ওয়াগন পড়ে আছে? এই বিষয়ে জানার জন্য এখন টেলিভিশনের দল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে গেলেও কথা বলতে রাজি হননি তিনি। জানান, খাদ্য বিভাগের চাহিদা না থাকায় এগুলো চলছে না।

বিদেশি ঋণ আবার ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

সরকারি-বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ আরও বেড়ে প্রায় ১০৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলারে ঠেকেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। এর আগে প্রথমবারের মতো গত ডিসেম্বরে বিদেশি ঋণের স্থিতি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। ওই সময় ঋণ ছিল ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। মার্চে আবার কমে ৯৯ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল।

জুন শেষে বিদেশি ঋণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভের পাঁচ গুণেরও বেশি। বর্তমানে দেশের রিজার্ভ রয়েছে ১৯ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। গত সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ১৩৭ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ এ পর্যায়ে রয়েছে। মূলত বৈশ্বিক পরিস্থিতি, অভ্যন্তরীণ নীতি দুর্বলতা, বিগত সরকারের সময়ে বিপুল অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন কারণে রিজার্ভ এ পর্যায়ে নেমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারি খাতে রয়েছে ৮৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। গত ডিসেম্বরে যা ছিল ৭৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। আর বেসরকারি খাতে ২০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। ছয় মাস আগে ছিল ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৬০১ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত ৯ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত কয়েক বছরে বড় কিছু অবকাঠামো প্রকল্পের কারণে বিদেশি ঋণ দ্রুত বেড়েছে।

বাজার গরম, তদারকি নরম

০২ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সুবাতাস বইতে থাকে নিত্যপণ্যের বাজারে। খোলনলচে বদলে যায় দরদাম। সব ধরনের সবজির দর আচকা ধপাস করে নেমে যায়। মাছ-মাংসের দামও চলে আসে সহনীয় পর্যায়ে। সে সময় ক্রেতার মনে ফেরে স্বস্তি। তবে ‘দামে আরাম’ বেশি দিন টেকেনি। আবারও তেতেছে নিত্যপণ্যের বাজার। সরকারের দুর্বলতার সুযোগে ‘সিন্ডিকেট’ ফের সটান দাঁড়িয়ে গেছে। নানা ছুতায় হরদম মানুষের পকেট কাটছে। এ পরিস্থিতিতে জনমনে দানা বাঁধছে ক্ষোভ।

ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার তদারকির সঙ্গে যুক্ত সরকারি অনেক সংস্থা মাঠে অকার্যকর। সংস্থাগুলো কাজের গতি না বাড়ালে বাজার পরিস্থিতি ক্রেতার অনুকূলে আসার সুযোগ কম। যদিও সরকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের তদারক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তবে কেউ কেউ বলছেন, ভোক্তা অধিদপ্তর ছাড়া মাঠে অন্য সংস্থাগুলোর অনুপস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাজারে সব ধরনের সবজির দাম তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসে।

এই স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি ছিল এক মাসের কিছুটা বেশি সময়। এখন সেই পুরোনো দরে ফিরেছে সবজিবাজার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি।

গত সোম ও মঙ্গলবার ঢাকার কারওয়ান বাজার, মহাখালী, হাতিরপুলসহ কয়েকটি খুচরা বাজারে দেখা গেছে, এক কেজি বরবটি কিনতে গুনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। মাসখানেক আগে বরবটি ও গোল বেগুনের কেজি কেনা গেছে যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ টাকার আশপাশের দরে। এক মাস আগে কাঁকরোল, ঢ্যাঁড়শের কেজি ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সবজি দুটি কিনতে ক্রেতাকে এখন গুনতে হচ্ছে অন্তত ৮০ টাকা। এ ছাড়া পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে, যা এক মাস আগে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কেনা গেছে। তবে কাঁচামরিচের দর কিছুটা কম দেখা গেছে, কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। সপ্তাহখানেক আগে মরিচের কেজি ছিল ১৮০ থেকে ২৪০ টাকা।

চার গুণ বাড়ানো হলো স্নাতকোত্তরের ভর্তি ফি

০২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) স্নাতকোত্তর শ্রেণির ভর্তি ফি এক লাফে প্রায় চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। হঠাৎ করে ভর্তি ফি বাড়ানোর কারণে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর শ্রেণির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তখন ভর্তি ফি ছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এতে ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৬০০ টাকা করে, যা আগের তুলনায় প্রায় চার গুণ।

৯৪৫ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা পেল ৪ দুর্বল ব্যাংক, মানতে হবে ৯ শর্ত

৩ অক্টোবর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

চার দুর্বল ব্যাংক- যথাক্রমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক ৯৪৫ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা পেয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সিটি ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা পেয়েছে।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক সিটি ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকা এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা পেয়েছে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা পেয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক সিটি ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকা পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘কিছু ব্যাংক এখনো এসব ব্যাংককে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করছে।’

এর আগে সংকটে থাকা পাঁচ ব্যাংক যথাক্রমে ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন ও ন্যাশনাল ব্যাংক গত মাসে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তারল্য সহায়তা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি পেয়েছে।

তারও আগে আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।

এই পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিতে নয়টি শর্ত আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

শর্ত অনুযায়ী, গ্যারান্টেড পরিমাণের ওপর ব্যাংকগুলোকে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ গ্যারান্টি ফি দিতে হবে।

গ্যারান্টিটি কেস-টু-কেস ভিত্তিতে তিন মাস মেয়াদী হবে। মেয়াদপূর্তির পর মুনাফাসহ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

চুক্তির আওতায় ঋণ পরিশোধের পর তারা আরও তিন মাসের জন্য ঋণ নিতে পারবে এবং এই প্রক্রিয়ার মোট মেয়াদ হবে এক বছর।

সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তারল্য সহায়তা দেওয়া ব্যাংকগুলো ঋণগ্রহীতা ব্যাংকের নামে ৯০ দিন মেয়াদী ফোর্সড লোন তৈরি করতে পারে।

তারল্য সহায়তার বিপরীতে বিদ্যমান স্পেশাল লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) হারে মুনাফা বা সুদ আরোপ করা হবে।

চুক্তি অনুযায়ী, সময়মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাব থেকে অর্থ কেটে নিতে পারবে।

সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে এসএলএফের হারের ওপর অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদ বা মুনাফা আরোপ করা হবে।

ঋণগ্রহীতার চলতি হিসাব থেকে অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের স্থায়ী সম্পদ, বন্ড ও অন্যান্য সিকিউরিটিজ বিক্রি করে নগদ অর্থ আদায় করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

দ্রব্যমূল্য কমাতে নজর কম

০৪ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার নানা খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ কম।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় দুই মাসে ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। কমেছে মাত্র দুটির।

বাজারে এখন সবজির দাম ব্যাপক চড়া। ডিমের প্রতি ডজনের দর উঠেছে ১৭০ টাকায়। মুরগি ও মাছের দামেও স্বস্তি নেই। সব মিলিয়ে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট কমেনি।

মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হারে লাগাম তুলে নিয়ে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে সুদের হার বেড়েছে। মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে একটা জায়গায় স্থিতিশীল হয়েছে। কিন্তু সুদের হার ও ডলারের দামের কারণে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়েছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় দুই মাসে ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। কমেছে মাত্র দুটির।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, সুদের হারে লাগাম তুলে নেওয়ার পদক্ষেপ ঠিকই আছে। তাতে বাজারে টাকার সরবরাহ কমবে। পণ্যের চাহিদা কমবে। মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনাও আছে। কিন্তু অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে এই নীতি ততটা কার্যকর নয়। কারণ, সেসব পণ্যের চাহিদা সব সময়ই থাকে। বাজারে টাকার সরবরাহের ওপর ওই সব পণ্যের চাহিদা, জোগান ও দাম ততটা নির্ভর করে না। এসব পণ্যের দাম কমাতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দরকার।

ডিম-মুরগির দাম বাড়িয়ে প্রতিদিন লুট ১৪ কোটি টাকা

অক্টোবর ৬, ২০২৪, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাজারে ডিম এবং মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে গত ২০ দিনে ২৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।

শনিবার (৫ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন অভিযোগ তুলেছেন সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার।

অভিযোগ করে বলা হয়, বাজারে প্রতিটি ডিমে ২ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন ৪ কোটি ডিমে ৮ কোটি টাকা বেশি লাভ করা হচ্ছে। এভাবে গত ২০ দিনে ১৬০ কোটি টাকা ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবার প্রতিটি মুরগির বাচ্চা গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। কিন্ত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে একই বাচ্চা বিক্রয় হচ্ছে ৪০-৫৬ টাকায়। আর ডিমের মুরগির বাচ্চা বিক্রয় হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। প্রতিদিন সব ধরনের ৩০ লাখ মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয়। প্রতিটি বাচ্চায় যদি ২০ টাকা বেশি ধরা হয়, প্রতিদিন ৬ কোটি টাকা বেশি আয় হয়। ফলে গত ২০ দিনে প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোম্পানিগুলো ১২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। সব মিলিয়ে ২৮০ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে গত ২০ দিনে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রান্তিক খামারি ডিম এবং মুরগি উৎপাদন করে, কিন্তু দাম নির্ধারণ করতে পারে না। দাম নির্ধারণ করে করপোরেট গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি। তাদের সুবিধামতো যে দাম নির্ধারণ করে সে দামে প্রান্তিক খামারিদের ডিম, মুরগি বিক্রয় করতে হয়। যখন দাম বাড়িয়ে দেয় তখন খামারি ন্যায্য মূল্য পায়। যখন কমিয়ে দেয় তখন উৎপাদন খরচ থেকে কম দামে বিক্রয় করে লস হওয়ার কারণে উৎপাদন থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। ডিম-মুরগির বাজারে অস্থিরতার কারণ করপোরেট গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ীদের আধিপত্য বিস্তার করে। এরা বারবার বাজারে সিন্ডিকেট করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিলেও তাদের শাস্তি না হওয়ায় বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলছে।

বাজার সামলাতে হিমশিম অবস্থা

১০ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ছিল অত্যন্ত চড়া। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রব্যমূল্য আরও বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম কমাতে যতটা জোর দেওয়া দরকার ছিল, ততটা গুরুত্ব শুরু থেকে দেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। ইতিমধ্যে দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।

সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাস পর এখন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিছু পণ্যের শুল্ক–কর কমানো হয়েছে। কিছু পণ্যের শুল্ক–কর কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাজারে অভিযান বাড়ানো হয়েছে। জেলায় জেলায় গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স।

যদিও এর আগেই ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানি কমে গেছে। এতে দাম বেড়েছে। ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম লাগামছাড়া। চাল ও আটার দাম বাড়তি। সবজির বাজারে যেন আগুন লেগেছে। সব মিলিয়ে কষ্টে আছে মানুষ।

ইলিশ আর কত অত্যাচার সইবে

১২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

ভোজনপ্রিয় মানুষের কাছে যেমন লোভনীয় ইলিশ, তেমনি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষের কাছে মোহনীয় হতে পারে ডুবোচর। আর এই দুটিরই সমাহার দেখতে হলে আসতে হবে ভোলার মেঘনা নদীতে। তবে আগেই বলে রাখা ভালো, আসার পর কিন্তু ছুটে যেতে পারে সব রোমাঞ্চ। কারণ, এখানে ঘটে চলেছে মন খারাপ করা সব ঘটনা।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এবং মানুষের অবিবেচক-অবৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডে সৃষ্টি হচ্ছে ডুবোচর। সেই চরে বাধা পেয়ে ইলিশ যাচ্ছে ভিন্ন পথে। ডিম ছাড়ছে ‘অন্য বাড়িতে’। সেই ডিম ফুটে বের হওয়া ছানাপোনারা খাবারের খোঁজে এসে জড়ো হচ্ছে ডুবোচরগুলোয়। আসছে অন্য মাছের পোনারাও।

তখন আবার সেই মাছের লোভে দলে দলে ছুটে আসেন অসাধু মৎস্য কারবারিদের ভাড়াটে জেলেরা। তাঁরা বাছবিচার ছাড়াই মেতে ওঠেন মাছ শিকারে। ক্ষতিকর নিষিদ্ধ জাল ফেলে ডুবোচরে ও আশপাশের নদীতে আশ্রয় নেওয়া ধরা নিষিদ্ধ এমন সব ছোট মাছ ধরে নিয়ে যান। সঙ্গে বড় ও মাঝারি মাছও ধরা পড়ে। ওই জালে আরও ধরা পড়ে অন্যান্য প্রজাতির মাছ, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের রেণু-পোনা। জালে আটকে সেগুলো অকালেই মারা পড়ে। রেহাই পায় না চাপিলা-জাটকা-ছোট আকারের ইলিশও। সেগুলো ধরে নিয়ে তুলে দেওয়া হয় আড়তদারের হাতে।

বিপুল ব্যয়ে স্টেশনবিলাস

১২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় করে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি রেলস্টেশন নির্মাণ করেছে রেলওয়ে। প্রতিদিন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল, ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করবে—এমনটা ধরে নিয়ে স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত তিন বছরে স্টেশনটি থেকে দিনে গড়ে যাত্রী যাতায়াত করেছে মাত্র ৪৭ জন। কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খরচের হিসাবে বছরে এই স্টেশনে ব্যয় ৩০ লাখ টাকার বেশি। অথচ বছরে গড় আয় সোয়া ৯ লাখ টাকা। রেলওয়ে সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের পাশে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বিশাল পরিসরে এই স্টেশন ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা হয়। চালুর ছয় বছর পর দেখা যাচ্ছে, এই স্টেশনে মাত্র দুটি ট্রেন থামে। এগুলো হচ্ছে টাঙ্গাইল কমিউটার ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস। অথচ এই স্টেশন হয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গের পথে ৪০টি ট্রেন চলাচল করে। মূলত যাত্রী না পাওয়ায় এসব ট্রেন এই স্টেশনে থামানো হয় না।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরে রেলের যাত্রীসেবা উন্নত করা হয়নি। কেনা হয়নি রেলের প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন ও কোচ। জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে। অথচ এই সময়ে বিপুল ব্যয়ে নতুন রেললাইনের পাশাপাশি স্টেশন ভবন নির্মাণ ও মেরামত করা হয়েছে। যদিও এসব স্টেশন দিয়ে ট্রেন চলে না কিংবা চললেও থামে না। ফলে সাধারণ মানুষের তা কোনো কাজে লাগছে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত সাড়ে ১৫ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো আগ–পাছ বিবেচনা করা হয়নি। খেয়ালখুশিমতো অবকাঠামো বানানো হয়েছে। এখন যেখানেই হাত দিই, সেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এভাবে অপরিকল্পিতভাবে কোনো প্রকল্প নেবে না। অতীতের অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখা হবে।

রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, বিগত সরকারের আমলে সারা দেশে ৪৮৪টির মধ্যে ১১৬টি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে ১৪৬টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই বিদেশি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পের টাকায় হয়েছে। রাজস্ব খাতের প্রকল্প থেকেও কিছু কিছু স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এই সময়ে ২৩৭টি স্টেশন ভবন মেরামত ও উন্নয়ন করা হয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসর সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না

১২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

আবেদন করে বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার হাজারো শিক্ষক-কর্মচারী অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না। কর্মজীবনের শেষে নিজের প্রাপ্য টাকা না পাওয়ায় নিদারুণ কষ্টে ভুগছেন মানুষ গড়ার এসব কারিগর।

আর্থিক সংকটের কারণে এমনিতেই বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এখন সরকার পরিবর্তনের পর অবসর সুবিধা বোর্ড পুনর্গঠন না করায় এই সমস্যা প্রকট হয়েছে। কারণ, বিগত সরকারের আমলে গঠিত বোর্ডের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা অফিস করছেন না। দিন যত যাচ্ছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধার টাকা পেতেও অপেক্ষার সঙ্গে কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়ছে।

সারা দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আছেন পাঁচ লাখের বেশি। এসব শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর ও কল্যাণ সুবিধা দেওয়া হয় দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এর মধ্যে কল্যাণ সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে। আর অবসর সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের মাধ্যমে।

৬৮ হাজার আবেদন, দেওয়ার মতো টাকা নেই

নিয়মানুযায়ী, অবসরের পরপরই অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

অবসর সুবিধা বোর্ডের সূত্রমতে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করে অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা দেওয়া আবেদনগুলোর নিরীক্ষা (অডিট) নিষ্পত্তি করা হয়েছে। কিন্তু তহবিলের অভাবে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত জমা হওয়া আবেদনগুলোর বিপরীতে অবসর সুবিধার টাকা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কল্যাণ ট্রাস্ট সূত্রে জানা গেছে, কল্যাণ সুবিধার জন্য প্রায় ৩১ হাজার আবেদন জমা আছে। এর মধ্যে এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আবেদন জমা পড়েছে ১০ হাজার ২৪২টি।

দাদনের ফাঁদে ইলিশ

১৩ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

বরেণ্য লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর বিভিন্ন লেখায় ঘুরেফিরে এসেছে বাংলার ইলিশের অতুলনীয় স্বাদ। ‘আড্ডা’ নামের এক প্রবন্ধে তিনি বেহেশতি খাবারের প্রসঙ্গ তুলে ইলিশকে ‘অমৃত’র আসনে বসিয়েছেন। একবার এক পাঞ্জাবি অধ্যাপকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে সৈয়দ মুজতবা আলী জোরগলায় বলেন, ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খাবার হলো সরু চালের ভাত আর ইলিশ। কিন্তু পাঞ্জাবি সেটা মানতে নারাজ। তাঁর মতে, বিরিয়ানিই শ্রেষ্ঠ। এই নিয়ে মুজতবা আলী এমন খেপলেন যে ওই অধ্যাপকের সঙ্গে সপ্তাহখানেক আর কথাই বললেন না।

আজ যদি মুজতবা আলী বেঁচে থাকতেন, ইলিশের মহিমা প্রচারের আগে হয়তো এর দাম নিয়ে দশবার ভাবতেন। ভরা মৌসুমেই এখন ইলিশের বাজারে আগুন! সাধারণ মানুষের নাগাল শুধু না, ভাবনারও বাইরে চলে গেছে ইলিশ। কীভাবে হলো এই অবস্থা? ২০২০-২১ সালে করোনা মহামারির সময় রপ্তানি-পাচার বন্ধ থাকায় দেশের মানুষ ইলিশ খেয়েছে তৃপ্তিমতো। ঢাকার ফুটপাতে গড়াগড়ি গেছে পদ্মা-মেঘনার ইলিশ। দামেও ছিল সস্তা। কিন্তু এখন কেন ইলিশের হাহাকার? দামে আগুন? এটা কি শুধুই ভারতে রপ্তানির অজুহাতে? নাকি আগে থেকেই ঘটে আসা অন্য কোনো ঘটনা?

প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়ে ইলিশের অতি মূল্যের বিষয়টা তলিয়ে দেখতে অনুসন্ধানে নামে প্রথম আলো। একে একে বেরিয়ে আসে গভীর হতাশার সব চিত্র। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন; অন্যদিকে বহুদিন ধরে চলে আসছে নদী দখল-দূষণ আর ইলিশ কারবারিদের নেতিবাচক সব তৎপরতা। নিষিদ্ধ মৌসুমে ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা ও নিষিদ্ধ জালে পোনা-জাটকা শিকার চলে সারা বছর। সব মিলিয়ে ইলিশের দেশে এখন লেগেছে আকাল। জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। যাই বা মেলে, তা নিয়ে শুরু হয় অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কাড়াকাড়ি আর কারসাজি। তাঁদের বহুচর্চিত দাদন চক্র জিম্মি করে রেখেছে বাঙালির সাধের ইলিশকে।

এই তো ২০২০-২১ সালে করোনা মহামারির সময় ঢাকার ফুটপাতে পদ্মা-মেঘনার ইলিশ বিক্রি হতে দেখা গেছে। দামও ছিল তুলনামূলক সস্তা; কিন্তু এখন কেন ইলিশের হাহাকার? দামে আগুন? এটা কি শুধুই ভারতে রপ্তানির অজুহাতে? নাকি আগে থেকেই ঘটে আসা অন্য কোনো ঘটনা?

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এই দাদন চক্রে অন্তত ৫টি ফাঁদের সন্ধান মিলেছে, যেখানে ওত পেতে থাকেন ৫ ধরনের কারবারি। তাঁরা প্রত্যেকেই একই সঙ্গে ইলিশের ক্রেতা ও বিক্রেতা; এবং তাঁদের মধ্যে মাঝখানের তিনজন আবার দাদনের (ঋণের আঞ্চলিক নাম) জালে বাঁধা। যে যাঁকে দাদন দিয়েছেন, তিনি শুধু তাঁর হাতেই ইলিশ তুলে দিতে বাধ্য; বাজার যাচাইয়ের কোনো সুযোগ নেই কারও। এই অদ্ভুত বাজরব্যবস্থার মাঝে পড়েই দফায় দফায় দাম চড়ে ইলিশের।

অনুসন্ধানের একপর্যায়ে আমরা দেখতে পাই, একদল জেলে জীবন বাজি রেখে, ৯ থেকে ১০ দিন সাগরে ভেসে যে মাছ ধরে আনলেন, তা বিক্রি হলো ৬ লাখ টাকায়। পরে দাদন চক্রের মারপ্যাঁচে দেখা গেল, ওই ৫ ধাপের কারবারি প্রত্যেকেই কমবেশি কয়েক হাজার করে টাকা পকেটস্থ করলেন; অথচ মাছশিকারি জেলেরা মাথাপিছু ৫৭১.৪২ টাকার দেনা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। 

সবজির দাম বৃদ্ধিতে আড়তদারদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, জানিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর

১৩ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

বাজারে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে আড়তদারদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলেছে, আড়তদারদের যোগসাজশে পাইকারি, ব্যাপারী ও খুচরা ব্যবসায়ী— সবাই একত্র হয়ে দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এ সংস্থাটি নিয়মিত বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সম্প্রতি সরকার বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এই টাস্কফোর্সসহ ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে গতকাল শনিবারও ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে বাজার তদারকি করেন।

তদারকি দলের সদস্যরা বাজারগুলোতে সবজি, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, আলু, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম ও সরবরাহের খোঁজ নেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় গতকাল তাদের মোট ছয়টি দল কাজ করেছে।

গতকাল ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবদুস সালামের নেতৃত্বে কারওয়ান বাজার ও বনানী কাঁচাবাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কারওয়ান বাজারে সবজির ট্রাক রাত ১২টার দিকে আসে। এরপর ট্রাক থেকে সবজি অন্তত ৬-৭ বার হাতবদল হয়ে তা পাইকারি বিক্রির পর্যায়ে পৌঁছায়।

ভোক্তা অধিদপ্তর জানায়, কারওয়ান বাজারে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন অবৈধ ফড়িয়া ব্যবসায়ী আছেন। তাঁদের কোনো ধরনের ব্যবসায় নিবন্ধন, রসিদ বই বা অন্য কোনো অনুমোদন নেই। অভিযানে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে সবজির দাম বৃদ্ধিতে আড়তদারদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আড়তদারদের যোগসাজশে পাইকারি, ব্যাপারী, খুচরা ব্যবসায়ী— সবাই একসঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছে।

সবজির সরবরাহ কম, দাম বাড়ে হাতবদলে

১৫ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সবজির চড়া দামের কারণ সরবরাহ ঘাটতি ও বারবার হাতবদল। উৎপাদন পর্যায়েই এখন সবজির দাম বেশি। ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে সেই দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

কৃষক, পাইকারি বিক্রেতা, আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সরবরাহব্যবস্থায় কীভাবে দাম বাড়ে, তা দেখতে প্রথম আলোর দুজন প্রতিবেদক যশোর ও বগুড়া থেকে সবজিবাহী দুটি ট্রাকে করে রাজধানীর আড়ত পর্যন্ত এসেছেন।

এদিকে গতকাল সোমবার রাজধানীর দুটি পাইকারি ও তিনটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কয়েক দফা হাতবদলে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কেজিতে সর্বনিম্ন ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে গতকাল প্রতি কেজি বরবটির দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। একই দিন তা মিরপুরের শেওড়াপাড়া ও মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে খুচরায় বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার দফা হাতবদলে দু-তিনজন মধ্যস্বত্বভোগী যুক্ত হন। প্রতি ধাপে দুই থেকে আট টাকা বা তার বেশিও দাম বাড়ে। যেমন গতকাল যাত্রাবাড়ীর একটি আড়তে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। তিন ঘণ্টার ব্যবধানে সেখানেই তা দুই হাত বদলের পরে ১০০ টাকায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি হয়।

জানা যায়, উৎপাদন এলাকার মোকাম থেকে রাজধানীতে পণ্য আসার পরও কয়েক দফা হাতবদল হয়। পাইকারি থেকে অন্তত চারবার হাত বদল হয়ে তা ভোক্তার কাছে পৌঁছায়। যেমন ট্রাক থেকে প্রথমে পণ্য যায় আড়তে, সেখানে থেকে পণ্য কেনেন পাইকার বা ফড়িয়ারা। পরে ফড়িয়াদের কাছ থেকে বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার দফা হাতবদলে দু-তিনজন মধ্যস্বত্বভোগী যুক্ত হন। প্রতি ধাপে দুই থেকে আট টাকা বা তার বেশিও দাম বাড়ে। যেমন গতকাল যাত্রাবাড়ীর একটি আড়তে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। তিন ঘণ্টার ব্যবধানে সেখানেই তা দুই হাত বদলের পরে ১০০ টাকায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি হয়।

ব্যয়বহুল ড্রেজিংয়ের ফাঁদে দেশের সমুদ্রবন্দর

১৫ অক্টোবর ২০২৪, বণিক বার্তা

দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলা। ২০২৩-২৪ অর্থবছর এ বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮৪৬টি। এখান থেকে সব মিলিয়ে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩১৯ কোটি টাকা।

দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলা। ২০২৩-২৪ অর্থবছর এ বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮৪৬টি। এখান থেকে সব মিলিয়ে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩১৯ কোটি টাকা। বিপরীতে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল খননকাজে চলমান রয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প। পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলি জমে দু-এক বছরের মধ্যে আবারো কমতে পারে মোংলা বন্দর চ্যানেলের গভীরতা। গভীরতা ধরে রাখতে প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পর পর দরকার হবে ব্যয়বহুল ড্রেজিং প্রকল্পের।

দেশের আরেক সমুদ্রবন্দর পায়রা। মোংলার মতোই পায়রায় বার্ষিক রাজস্ব আয় হয় কমবেশি ৩০০ কোটি টাকা। এক বছর আগে পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল ড্রেজিং করা হয়েছে। খরচ হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। ড্রেজিং স্কিম শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যে চ্যানেলটির নাব্য আবার কমে গিয়ে বড় জাহাজ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বন্দরসংশ্লিষ্টরা এখন পুনরায় ড্রেজিং প্রকল্প কিংবা স্কিম গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ চ্যানেলে দিয়ে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ পলি এসে জমছে। নাব্য ধরে রাখতে হলে রাবনাবাদে নিয়মিত ড্রেজিং চালিয়ে যেতে হবে।

ডিম-মুরগি বেচে ফুলেফেঁপে উঠছে বড় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো

১৬ অক্টোবর ২০২৪, বণিক বার্তা

দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের অন্যতম প্রধান উৎস এ দুই পণ্যের বাজারে অস্থিরতার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ওপর। নানামুখী সংকটেও ডিম ও মুরগিসহ পোলট্রি পণ্যের ব্যবসায় ভালো মুনাফা করছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে এ খাতের অন্যতম শীর্ষ তিন কোম্পানি কাজী ফার্মস, সিপি বাংলাদেশ ও প্যারাগন পোলট্রির মোট সংরক্ষিত মুনাফা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়

দেশের মুরগি ও ডিমের দাম বাড়ছে। দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের অন্যতম প্রধান উৎস এ দুই পণ্যের বাজারে অস্থিরতার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ওপর। নানামুখী সংকটেও ডিম ও মুরগিসহ পোলট্রি পণ্যের ব্যবসায় ভালো মুনাফা করছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে এ খাতের অন্যতম শীর্ষ তিন কোম্পানি কাজী ফার্মস, সিপি বাংলাদেশ ও প্যারাগন পোলট্রির মোট সংরক্ষিত মুনাফা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়।

মুনাফা থেকে যাবতীয় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ব্যয়, আয়কর ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ পরিশোধের পর যে অংক অবশিষ্ট থাকে সেটিই একটি কোম্পানির সংরক্ষিত মুনাফা। এটিকে কোম্পানির পুনর্বিনিয়োগযোগ্য মুনাফা হিসেবেও দেখা হয়। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতেও বিপুল পরিমাণ সংরক্ষিত মুনাফা অর্জনের মধ্য দিয়ে আরো ফুলেফেঁপে উঠছে পোলট্রি খাতের তিন করপোরেট প্রতিষ্ঠান।

দেশে মুরগির বাচ্চা, পোলট্রি খাদ্যের (ফিড) সিংহভাগ উৎপাদন করছে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি। পাশাপাশি ডিম ও মাংসের বাজারেরও বড় অংশ তাদের দখলে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি চুক্তির ভিত্তিতে কোম্পানির বাইরে অন্য অনেক খামারিকেও কাজে লাগাচ্ছে কোম্পানিগুলো। বাজারের আকৃতি, মুনাফাসহ ব্যবসায়িক বিভিন্ন তথ্য প্রকাশের বিষয়ে কোম্পানিগুলো বরাবরই এক ধরনের গোপনীয়তা বজায় রাখে। কোম্পানিগুলোর দাবি, ডিম ও মাংসের বাজারে তাদের সম্মিলিত প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ১৫-২০ শতাংশের বেশি হবে না। যদিও খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পোলট্রি পণ্যের বাজারের সিংহভাগই কোম্পানিগুলোর দখলে। বলতে গেলে বাজারের গতিপ্রকৃতি তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে।

পোলট্রি খাতের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বাজার অস্থিতিশীল করে তোলার অভিযোগ উঠেছে। পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে ২০২২ সালে অস্বাভাবিকভাবে ডিমের দাম বাড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ডায়মন্ড এগ ও সিপি বাংলাদেশকে এ বছরের জানুয়ারিতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি)। এর মধ্যে ডায়মন্ড এগকে আড়াই কোটি টাকা ও সিপি বাংলাদেশকে জরিমানা করা হয়েছে ১ কোটি টাকা।

পোলট্রি বাজারে বর্তমানে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবশালী হিসেবে দেখা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কাজী ফার্মস গ্রুপ, নারিশ, প্যারাগন, আফতাব, কোয়ালিটি, প্রোভিটা, সিপি, ডায়মন্ড এগ, রাশিক/জামান গ্রুপ ইত্যাদি। এর মধ্যে কাজী ফার্মস, সিপি বাংলাদেশ ও প্যারাগন পোলট্রির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বণিক বার্তার কাছে এসেছে। এতে দেখা যাচ্ছে পোলট্রি ব্যবসা থেকে এ তিন কোম্পানি সর্বশেষ হিসাব বছরে মোট বিক্রি করেছে ৯ হাজার ৬১ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানি তিনটির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ৩৬৬ কোটি টাকা। একই সঙ্গে এ তিন কোম্পানির মোট সংরক্ষিত মুনাফা (রিটেইনড আর্নিংস) দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৯১ কোটি টাকায়। উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পোলট্রি খাতের বিক্রি থেকে আয়ের ওপর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কর ধার্য ছিল।

কম দামে সবজি কিনতে ট্রাকের পেছনে লম্বা সারি, ছয় পণ্য কেনা যায় ৫২০ টাকায়

১৬ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানী ঢাকায় ওএমএস বা খোলাবাজারে বিক্রি কার্যক্রমের আওতায় আলু, ডিম, পেঁয়াজ, পটোলসহ কয়েকটি কৃষিপণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। সরকারি এ কর্মসূচি চালুর পর গত দুই দিনে ভোক্তাদের, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে এটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ট্রাকের পেছনে লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে কম দামে সবজি কিনছেন মানুষেরা।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে সবজি, ডিমসহ বেশির ভাগ নিত্যপণ্য চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বড় ধরনের চাপে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় সরকার আমদানি শুল্ক কমানো, বাজার তদারকিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এই প্রথমবারের মতো ওএমএসের মাধ্যমে কৃষিপণ্য বিক্রি শুরু করেছে সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় কৃষিপণ্যের ওএমএস কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এদিন রাজধানীর ২০টি স্থানে ট্রাকে করে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য বিক্রি করা হয়। আজ বুধবার ট্রাকের সংখ্যা আরও চারটি বাড়ানো হয়েছে।

কর্মকর্তাদের হিসাবে, গত দুই দিনে ১০ হাজারের বেশি মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যের এসব পণ্য সংগ্রহ করেছেন। ভোক্তারা বলছেন, দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে কমে না আসা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালু রাখা এবং এর পরিধি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

দুর্মূল্যের বাজারে বিধবা মালেকাদের ৫৫০ টাকার জীবন!

অক্টোবর ১৭, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

সর্বশেষ খানার আয় ও ব্যয় জরিপ (এইচআইইএস) ২০২২ এর তথ্য অনুসারে, দেশের জনসংখ্যা ১৮ দশমিক সাত শতাংশ বা তিন কোটি ১৭ লাখ মানুষ দরিদ্র—যারা দিনে গড়ে দুই দশমিক ১৫ ডলারের বেশি আয় করে। আর জনসংখ্যার পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ বা ৯৫ লাখ মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র—যাদের গড় দৈনিক আয় দুই দশমিক ১৫ ডলারের নিচে।

বাজেট তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দরিদ্র, চরম দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য এক লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দে ১৪০টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি রয়েছে।

এই বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক সরকারি কর্মচারীদের অবসরকালীন সুবিধা এবং সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ পরিশোধে চলে যায়।

চলতি অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন দিতে ৩৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে আট হাজার ৮২৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

সেই তুলনায় দরিদ্ররা পায় সামান্যই।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য দেখায়, সবচেয়ে দুরবস্থায় থাকা বিধবা, বয়স্ক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য মাসিক ভাতা যথাক্রমে ৫৫০, ৬০০ ও ৮৫০ টাকা।

বিধবা ভাতা শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ অর্থবছরে। তখন চার লাখ মানুষকে জনপ্রতি প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো। গত ২৫ বছরে তা বেড়েছে ৪৫০ টাকা।

তথ্য অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা এর এক বছর আগে চালু হয়েছিল। এই খাতেও তখন চার লাখ মানুষকে জনপ্রতি প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো। এই ভাতা বেড়েছে মাত্র ৫০০ টাকা।

২০০৬ অর্থবছরে এক লাখ মানুষের প্রতিজনের জন্য ২০০ টাকা করে বরাদ্দ দিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা চালু হয়। ১৪ বছর লেগেছে জনপ্রতি ৬৫০ টাকা ভাতা বাড়তে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বয়স্ক ভাতাপ্রাপ্ত সমেস উদ্দিন বলেন, ‘এই টাকা দিয়ে পাঁচ কেজি চাল ও এক কেজি মাছও কেনা কঠিন।’

যারা এর বাইরে

যৎসামান্য টাকা দেওয়া হলেও যথাযথ ব্যক্তি বাছাইয়ে ত্রুটির কারণে অনেক যোগ্য ব্যক্তি এই সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাইরেই রয়েছেন।

গত বছর ‘সোশ্যাল সেফটি নেট বাজেট অব বাংলাদেশ: ক্যাচিং সাম, মিসিং ম্যানি’ শীর্ষক সিপিডির এক সমীক্ষায় দেখা যায়, আনুমানিক ৩৩ লাখ বয়স্ক মানুষ ও ২৫ লাখ বিধবা—যারা এই সহায়তা পাওয়ার যোগ্য—এই কর্মসূচির আওতায় নেই।

বাংলাদেশে চরম দারিদ্রসীমায় ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ: জাতিসংঘ

১৮ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

বাংলাদেশে চরম দারিদ্রসীমায় বাস করছেন ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা গুরুতর। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

‘বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক-২০২৪: সংঘাতের মধ্যে দারিদ্র্য’ শিরোনামের গতকাল বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে যৌথভাবে এটা প্রকাশ করেছে ইউএনডিপি। প্রতিবেদনে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পরিস্থিতি বুঝতে বিশ্বের ১১২টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের ওপর গবেষণা করা হয়েছে। তাতে ২০২২–২৩ বছর পর্যন্ত এক দশকের বেশি সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এখানে মানুষের পর্যাপ্ত আবাসন, পয়োনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ভোজ্যতেল ও পুষ্টির মতো অতি প্রয়োজনীয় সেবাসমূহ পাওয়ার ক্ষেত্রে কেমন ঘাটতি রয়েছে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। শিশুরা কী হারে স্কুলে উপস্থিত হচ্ছে, তা-ও এখানে বিবেচনায় এসেছে।

নওগাঁয় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গুটিকয়েক অটো মিল

১৯ অক্টোবর ২০২৪, বণিক বার্তা

দেশের মোকামে ধান-চালের সিংহভাগ চাহিদা মেটায় উত্তরের জেলা নওগাঁ। গত শতাব্দীর আশির দশকের পর এ জেলায় গড়ে ওঠে ছোট-বড় প্রায় ১ হাজার ৮০০ হাসকিং মিল। কিন্তু অটোমেটিক রাইস মিলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এসব মিলের অন্তত ৮২ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চালের বাজার চলে গেছে গুটিকয়েক অটোমিল মালিকের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় ৩৫ হাজার চাতাল শ্রমিক।

বন্ধ হয়ে যাওয়া চালকল মালিকরা বলছেন, অটো রাইস মিলে ধানের চাহিদা বেশি। এ কারণে বাজারের বেশির ভাগ ধান তারাই কিনে নেয়। দামও তারা বেশি দেয়। ফলে তাদের সঙ্গে বাজারে টিকে থাকা হাসকিং মিলের মালিকদের পক্ষে কঠিন। অটো মিলের আধিপত্যের আরেকটি কারণ হলো, তাদের চাল দেখতে তুলনামূলক স্বচ্ছ। যদিও এ চালের পুষ্টিগুণ তুলনামূলক কম।

জেলা চালকল মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা অটো রাইস মিল চালাচ্ছেন। তারা স্বল্প সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছেন। অন্যদিকে হাসকিং মিলের মালিকদের বছরে নানা রকমের লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়ন করতে হয়।

খাদ্য বিভাগ ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে জেলায় ৩৫৬টি সচল চালকল রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪টি অটোমেটিক রাইস মিল এবং ৩১২টি হাসকিং মিল। গত এক বছরে জেলায় বোরো, আউশ ও আমন মৌসুমে ১৭ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে চালের চাহিদা ৬ লাখ টন। বাকি ১১ লাখ টন ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করা হয়।

সম্প্রতি শহরের আড়তদারপট্টি-সুলতানপুর সড়কে গিয়ে দেখা যায়, দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে অন্তত ছয়টি হাসকিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু মিল পুরোপুরি পরিত্যক্ত। কিছু চাতাল স্থানীয় কৃষক ধান শুকানোর কাজে ব্যবহার করেন।

সরজমিনে দেখা যায়, পরিত্যক্ত একটি হাসকিং মিলে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের কারখানা গড়ে উঠেছে। এ কারখানার মালিক সদর উপজেলার সুমন সাহা। বিদেশে লেখাপড়া শেষে ২০১১ সালে বাবার তিনটি হাসকিং মিলের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন। মুনাফা থাকায় ব্যবসাও চলছিল বেশ। কিন্তু ২০১৫ সালের পর অটো রাইস মিলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়তে হয় সুমন সাহাকে। পরে বাধ্য হয়ে দুটি হাসকিং মিল বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেন।

ব্যবসা পরিবর্তনের কারণ হিসেবে সুমন সাহা বলেন, ‘অটোমেটিক রাইস মিলের মালিকদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে ধান কেনা সম্ভব হচ্ছিল না। ওরা যে দামেই ধান কিনুক না কেন, মোটা অংকের মুনাফা রেখেই বাজারে চাল সরবরাহ করে। বিপরীতে হাসকিং মিলে উৎপাদিত চাল দেখতে আকর্ষণীয় না হওয়ায় বেশি দাম পাওয়া যায় না।’

চাতাল শ্রমিকদের সংগঠন নওগাঁ জেলা ধান ও বয়লার অটো শর্টার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘অল্প শ্রমিককে কাজে লাগিয়ে স্বল্পসময়ে বেশি পরিমাণে চাল উৎপাদনে সক্ষম অটোমেটিক রাইস মিল। বিপরীতে হাসকিং মিলে চাল উৎপাদনে বেশিসংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। তাই একের পর এক হাসকিং মিল বন্ধ হওয়ায় ৩৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।’

জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত দেড় দশকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই জেলায় অসংখ্য অটোমেটিক রাইস মিল গড়ে উঠেছে। মজুদ নীতিমালার তোয়াক্কা করেন না বেশির ভাগ অটোমেটিক রাইস মিল মালিকরা। সরকার কখনো তাদের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করেনি। ফলে ৮২ শতাংশ চালকল মালিক ব্যবসা থেকে সটকে পড়েছেন।’

শুল্কছাড়ের পরও বাড়ল চাল তেল চিনি ও পেঁয়াজের দাম

২২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

বাজারে এক সপ্তাহে একটি পণ্যের দাম কমেছে, বেড়েছে চারটির। দাম কমার তালিকায় আছে শুধু ডিম। নতুন করে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও পেঁয়াজের।

চারটি পণ্যের দাম আরও বাড়ল এমন এক সময়ে, যখন বাজারে কোনো স্বস্তি নেই। এই চার পণ্য কেনা ছাড়া সংসারও চলে না। পণ্যগুলোর দাম কমাতে সরকার শুল্ক–করে ছাড় দিয়েছে; কিন্তু এর সুফল এখনো বাজারে পড়েনি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কছাড়ের পণ্য এখনো বাজারে আসেনি। বিশ্ববাজারেও দাম বাড়ছে। অন্যদিকে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, শুল্ক কমানোর সঙ্গে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে, তাহলে প্রভাব পড়বে। দাম যাতে কমে, সে বিষয়ে নজরদারিও দরকার।

ওএমএসের দোকানে ভিড়, খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেককে

২৪ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস বাড়ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে (ওএমএস) পণ্য কিনতে লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এতে অনেক লোক দীর্ঘ অপেক্ষার পরও পণ্য কিনতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আজ বৃহস্পতিবার পৌর এলাকার নয়াগোলাহাট এলাকায় দেখা যায় এমন চিত্র।

কোলে শিশুসন্তান নিয়ে সকাল আটটা থেকে ওএমএসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন নায়েমা বেগম (২৬)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াগোলাহাটে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হয়, তখন দুপুর দেড়টা। ভীষণ হতাশা নিয়ে বললেন, ‘যতগুলো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, তাতে আমার পাওয়ার সুযোগ নেই। আমার জন্য একটু বলেন, যেন পাই। দুধের শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা টনটন করছে।’

ওই সময় ওএমএসে চাল-আটা নেওয়ার সুযোগ পাওয়া রুমালী বেগম নামের ষাটোর্ধ্ব নারী বলেন, ‘মহানন্দা লোদী (নদী) পার হয়্যা অ্যাসাছি ফজর ওকতে, আর পাইনু অ্যাতক্ষুণে। তাহিলেই বুঝো, হামারঘে কী কষ্ট।’

নায়েমা বেগমের সমস্যার কথা জানাতেই দোকানের কর্মচারী কাশেম বলেন, ‘আমাদের করার কিছু নাই। লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের সামনে থেকে দেওয়া হয়। না পাওয়া মানুষ অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হয়। আজও অনেকে ফিরে যাবেন। এখানে পৌর এলাকার বাইরে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। কোনো দিন পান, কোনো দিন পান না।’

লাইনের বাইরে ক্লান্ত হয়ে বসে থাকা আরেক নারী নূরজাহান বেগম (৫৮) এসেছেন ছয়-সাত কিলোমিটার দূরের বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে। তিনি বলেন, এর আগের দিনও তিনি খালি হাতে ফিরে গেছেন। আজও পাবেন কি না, নিশ্চয়তা নেই।

কাছাকাছি বয়সের একই ইউনিয়নের তাহিরপুর গ্রামের গিনি বেগমসহ আরও কয়েকজনকে বসে থাকতে দেখা যায়। সবার চেহারায় ক্লান্তি আর হতাশার ছাপ। লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজন জানান, প্রতিবারই এখান থেকে ৩০ থেকে ৫০ জন মানুষ মনে কষ্ট নিয়ে খালি হাতে ফিরে যান।

কক্সবাজারে ট্রেন চালিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধের টাকাও উঠছে না

২৫ অক্টোবর ২০২৪, বণিক বার্তা

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয় গত বছরের ১ ডিসেম্বর। বর্তমানে এ রেলপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুটি ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরেকটি ট্রেন চলছে। এর বাইরে ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে রেলওয়ে। সব মিলিয়ে কক্সবাজারে ট্রেন চালিয়ে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৭০ কোটি টাকা আয় করেছে সংস্থাটি। বিপরীতে ট্রেনগুলো পরিচালনায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। লাভের পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এ তথ্য পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বাণিজ্যিক ও মার্কেটিং বিভাগের।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে নির্মাণ করা হয়েছে ১০১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। ২০২২ সাল থেকে শুরু হয়েছে ঋণের কিস্তি পরিশোধ। সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও এডিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বার্ষিক প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৪২০ কোটি টাকার সমপরিমাণ) হারে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। ২০২৮ সালে এ কিস্তি পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে বার্ষিক প্রায় সাড়ে ৫ কোটি ডলার। ঋণের কিস্তির সঙ্গে সুদ আলাদাভাবে পরিশোধ করতে হবে। সুদের পরিমাণ প্রায় ২ শতাংশ। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে ২০৪৮ সাল পর্যন্ত।

 

শ্রমজীবি মানুষের কথা

‘চাইর দিনে বড় বড় গাড়ি আনল, কেউ উদ্ধার করল না, খালি খেদাই দেয়’

২৮ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার্সের ভবনের ভেতর এখনো চাপা আগুন থাকার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পাশাপাশি ভবন পুড়ে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় আজ বুধবারও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়নি। ভবনটিতে প্রবেশ করে উদ্ধার অভিযান চালানো যাবে কি না, তা জানতে বিশেষজ্ঞ দল ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

গত রোববার রাত ৯টায় রূপগঞ্জের খাদুন এলাকার কারখানাটির ছয়তলা একটি ভবনে লুটপাট চলাকালে নিচতলায় সিঁড়ির মুখে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এতে ভবনটির ভেতরে থাকা অনেকেই আটকা পড়েন বলে দাবি করেছেন স্বজনেরা। গাজী টায়ার্স কারখানার মালিক নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। রোববার ভোররাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

আগুনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আজ বিকেলে গণপূর্ত অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ছাইফুল ইসলাম বলেন, ভবনটির ভেতর এখনো চাপা আগুন আছে। ভবনের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। তাঁরা ভবনে প্রবেশের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসকে কোনো পরামর্শ দিতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল এসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তারপর সেই অনুযায়ী উদ্ধার অভিযান হবে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। শুরুতে তারা গাজী টায়ার্সের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন। পরে পুড়ে যাওয়া কারখানার বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।

বিকেল পাঁচটায় তদন্ত দলের প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) হামিদুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস অনবরত এখানে কাজ করে যাচ্ছে। তারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ড্রোন দিয়ে ভেতরের অবস্থা দেখেছে। ৪ থেকে ৬ তলা পর্যন্ত ফ্লোর ধসে পড়েছে। আজকে তারা উদ্ধারকাজ চালাতে পারবে না। ফায়ার সার্ভিস না পারলে সেনাবাহিনী বা অন্য বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা নেওয়া হবে।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকার বিষয়ে হামিদুর রহমান বলেন, ‘যে ব্যক্তি এসে বলছেন যে তাঁর স্বজন নিখোঁজ আছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা আমরা লিপিবদ্ধ করছি। আমরা এখনই সংখ্যা বলতে পারছি না। তবে নিখোঁজ বলে দাবি করা সংখ্যাটি শতাধিক হয়েছে। এখানে একজন মানুষ থেকে থাকলেও সেটি আমরা খুঁজে বের করার যথাসম্ভব চেষ্টা চালাচ্ছি।’ এ সময় ফায়ার সার্ভিসসহ তদন্ত দলের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আজ সন্ধ্যা সাতটায় কারখানার বাইরে নিখোঁজদের খোঁজে আসা স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে। অন্তত ৫০ জন স্বজন তখন কারখানার বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। সন্ধ্যায় যখন প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মীরা কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন এই প্রতিবেদককে ঘিরে ধরেন বৃদ্ধা রাশিদা বেগম ও তাঁর স্বামী আবদুল বাতেন। সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন সময় এই দম্পতির সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের ছেলে মো. আমানুল্লাহ (২৫) রোববার থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।

ছেলের শোকে মুষড়ে পড়া বৃদ্ধা ভাঙা গলায় জানতে চান তার আমানের কোনো খোঁজ পাওয়া গেল কি না। তিনি বলেন, ‘চাইর দিনে বড় বড় উদ্ধারের গাড়ি আনল। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস আইল। কেউ উদ্ধার করল না। খালি খেদাই দেয়, খালি খেদাই দেয়।’

গাজী টায়ার্সের পোড়া ভবন থেকে হাড়গোড় ও মাথার খুলি উদ্ধারের দাবি স্বজনদের

০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আগুনে পোড়া গাজী টায়ার্সের ছয়তলা ভবনটি থেকে মানুষের পোড়া হাড়গোড় ও মাথার খুলি খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন স্বজনেরা। অগ্নিকাণ্ডের সাত দিন পর রোববার বেলা তিনটায় আগুনে পোড়া ছয়তলা ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে এসব হাড়গোড় ও মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। মানুষের সেসব দেহাবশেষ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার প্রধান ফটকের সামনে একটি স্টিলের টেবিলের ওপর পোড়া হাড়গোড় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। উৎসুক লোকজন সেসব হাড় দেখছেন। স্বজনদের কেউ কেউ সেখানে বিলাপ করছেন। এ সময় জেলা প্রশাসক গঠিত তদন্ত দলের সদস্যরা এলে তাঁদের ঘিরে ধরে স্বজনেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সাভারে ১১ দফা দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ, ৩৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা

০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস প্রদান, শ্রমিক নিয়োগ, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়াসহ ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ সোমবার সকালে কারখানার শ্রমিক ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এ কর্মসূচি শুরু করেন। এ অবস্থায় আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৩৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

আজ সকাল ৯টার দিকে পলাশবাড়ী এলাকায় নবীনগর থেকে চন্দ্রাগামী মহাসড়কের এক পাশে বিক্ষোভ শুরু করেন গিল্ডান বাংলাদেশ নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। এ ছাড়া ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। নরসিংহপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা আবদুল্লাহপুর থেকে বাইপাইলের সড়কে বিক্ষোভ করেন।

একপর্যায়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেন এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে আশুলিয়ার ডিইপিজেড সামনের নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক অবরোধ করে রাখেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গিল্ডান বাংলাদেশের একজন শ্রমিক বলেন, তাঁরা ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের যেন চাকুরিচ্যুত করা না হয়; যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁদের অন্তত ১০ বছরের চাকরির নিশ্চয়তা; হাজিরা বোনাস ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা করতে হবে; প্রমোশনের ক্ষেত্রে চাকরির বয়স কমপক্ষে ৩ বছর ও যোগ্যতা অনুসারে হতে হবে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, গিল্ডান বাংলাদেশ কারখানার সামনের ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে বাংলাদেশে আমাদের (গিল্ডান বাংলাদেশ) সকল কারখানা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’

শিল্পাঞ্চলে শুরু যৌথ বাহিনীর অভিযান

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

শ্রমিক আন্দোলন ঘিরে অস্থিরতা চলছে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরসহ কয়েকটি শিল্পাঞ্চলে। এসব এলাকায় কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে গতকাল সোমবার রাতে শুরু হয়েছে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশের যৌথ অভিযান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনে আরও কঠোর অবস্থানে যাবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার কারখানা খোলা রাখতে মালিক কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর নেতাদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের আগে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেন শিল্পোদ্যোক্তারা।

বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, সরকার ও শিল্পোদ্যোক্তা উভয়েই মনে করেন, গত কয়েক দিন ধরে পোশাক কারখানায় যেসব হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে, তার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে। সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে বহিরাগতরা কারখানায় হামলা করছে। এর সঙ্গে সাধারণ শ্রমিকরা জড়িত নন।

তৈরি পোশাক ও ওষুধ খাত

বিক্ষোভে প্রায় ২০০ শিল্প কারখানায় উৎপাদন বন্ধ

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

শ্রমিক ও বহিরাগতদের বিক্ষোভে সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চল গতকাল বুধবারও অশান্ত ছিল। বিক্ষোভ ও হামলার কারণে ১৬৭টি তৈরি পোশাক কারখানায় গতকাল ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে ওষুধ খাতেও অস্থিরতা চলছে। তাতে অন্তত ২৫টি বড় ওষুধ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ আছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুইশ শিল্প কারখানায় বন্ধ আছে উৎপাদন।

শিল্পাঞ্চলের অস্থিরতা নিরসনে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা জরুরি বৈঠকে বসেন। পরে শ্রম ও কর্ম সংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে আজকে (গতকাল) থেকে অ্যাকশন শুরু হবে। যারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে যে তথ্য রয়েছে, সেটার ভিত্তিতে তাদের (ইন্ধনদাতাদের) গ্রেপ্তার করা হবে। সেখানে যে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে, সেটার জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’

আশুলিয়ায় অস্থিরতা চলছে, গাজীপুরে আবার বিক্ষোভ

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

তৈরি পোশাক খাতে চলমান অস্থিরতার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে সাভারের আশুলিয়ায় গতকাল মঙ্গলবারও ৭৪টি কারখানা বন্ধ অথবা ছুটি ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। চার দিন পর গাজীপুরে আবার শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে গাজীপুর ও আশুলিয়ায় শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

হাজিরা বোনাস ও টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে গত ৩১ আগস্ট থেকে গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া কারখানায় নিয়োগে নারী ও পুরুষের সম অধিকার নিশ্চিতের দাবিতেও বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, সাভার-আশুলিয়ায় সাড়ে চার শ তৈরি পোশাক কারখানা আছে। তার মধ্যে গতকাল ৪২টি কারখানা অস্থিরতার কারণে বন্ধ ছিল। ১১টি কারখানার শ্রমিকেরা কাজে উপস্থিত হলেও বেরিয়ে যায়। এ ছাড়া ২১ কারখানার শ্রমিকেরা কাজ না করে কর্মবিরতি পালন করেন।

পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রায় প্রতিদিনই বিজিএমইএর নেতারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আশুলিয়ার কারখানা মালিক ও শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে গত সোমবার ছয় ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠক করে আশুলিয়া অঞ্চলের শ্রমিকদের হাজিরা বোনাস ২২৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া নারী ও পুরুষ নয়, দক্ষতার ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে একমত হোন শ্রমিক ও মালিকপক্ষ। এসব সিদ্ধান্তের পরও গতকাল পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষ গার্মেন্ট ভাঙচুর, আগুন

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় স্থানীয় দুটি গার্মেন্ট কারখানা ভাঙচুর করা হয় এবং একটি ডায়িং ফ্যাক্টরির ভেতরে ঢুকে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুটি অটোরিকশা ও একটি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল বিকেলে ফতুল্লার রেললাইন বটতলা এলাকায় ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে  সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মাদকের বিরুদ্ধে শান্তি মিছিলের আয়োজন করা হয়। নেতাকর্মীর একাংশ মিছিল শুরু করলে অপর পক্ষের কর্মীরা হামলা চালায়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে হোসেন গার্মেন্ট কারখানা ভাঙচুর এবং হোসেন ডায়িং কারাখানার ভেতরে প্রবেশ করে কাপড়ের গাঁইটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় বিসমিল্লাহ  গার্মেন্টের

কাপড় গাড়ি থেকে নামিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরি, রাস্তায় থাকা দুটি অটোরিকশা ও বাজারের চার-পাঁচটি দোকান।

আশুলিয়ায় সংঘর্ষে নারী পোশাক শ্রমিক নিহত

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় শ্রমিকদের সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক।

আশুলিয়ায় অসন্তোষ কাটিয়ে শ্রমিকরা যখন কাজে ফিরতে শুরু করেছিলেন, স্বাভাবিক হয়ে উঠছিল উৎপাদন, তখনই বন্ধ কারখানা খোলার আন্দোলনের মধ্যে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল শিল্পাঞ্চল।

এ ঘটনার পর আশপাশের সব কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম।

শ্রমিকদের দাবি মেনে নিল মালিকপক্ষ, বুধবার থেকে খোলা সব গার্মেন্টস

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আগামীকাল বুধবার থেকে সব গার্মেন্টস খোলা থাকবে বলেও জানান তিনি।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সম্প্রতি দেশে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের কারণে শ্রমিক এবং মালিক পক্ষের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, দেশের শিল্পকে বাঁচানোর জন্য বুধবার থেকে সব শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান রইল।

এছাড়া সব পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিদ্যমান হাজিরা বোনাস ২২৫ টাকা বাড়ছে। সেই সঙ্গে আগামী অক্টোবরের মধ্যে সব কারখানায় সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করা হবে।

এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার উপস্থিত ছিলেন।

শ্রমিকদের দাবিগুলো হলো

১. মজুরি বোর্ড পুনর্গঠনপূর্বক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।

২. যেসব কারখানায় ২০২৩ সালে সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩. শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে।

৪. কোনো শ্রমিকের চাকরি পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে অথবা চাকরিচ্যুত হলে একটি বেসিকের সমান অর্থ দিতে হবে, এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক শ্রম আইনের ২৭ ধারাসহ অন্য ধারাসমূহ সংশোধন করতে হবে।

৫. সব ধরনের বকেয়া মজুরি অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।

৬. হাজিরা বোনাস (২২৫ টাকা), টিফিন বিল (৫০ টাকা), নাইট বিল (১০০ টাকা) সব কারখানায় সমান হারে বাড়াতে হবে।

৭. সব কারখানায় প্রভিডেন্ট ফান্ড ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৮. বেতনের বিপরীতে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ন্যূনতম ১০ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে।

৯. শ্রমিকদের জন্য রেশনিংব্যবস্থা চালু করতে হবে।

১০. বিজিএমইএ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বায়োমেট্রিক ব্ল্যাকলিস্টিং করা যাবে না, বায়োমেট্রিক তালিকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

১১. সব ধরনের হয়রানিমূলক এবং রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

১২. ঝুট ব্যবসার আধিপত্য বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইন করতে হবে।

১৩. কলকারখানায় বৈষম্যবিহীন নিয়োগ দিতে হবে।

১৪. জুলাই বিপ্লবে শহিদ এবং আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

১৫. রানা প্লাজা এবং তাজরীন ফ্যাশন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে তদন্তান্তে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

১৬. শ্রম আইন অনুযায়ী সব কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করতে হবে।

১৭. অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে।

১৮. নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১২০ দিন নির্ধারণ করতে হবে।

কেমন জীবন কাটান পোশাক শ্রমিকরা

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

ভোরের আবছা আলো। আলো তো নয় যেন আলো-আঁধারের লড়াই। রাজধানীর ঢাকার গা ঘেঁষে গড়ে উঠা শিল্পশহর আশুলিয়ার বাতাস প্রতিদিনের মতো বয়ে আনে নতুন দিনের আশা।

খানিক বাদেই সেলাই মেশিনের ছন্দময় শব্দে ভরে উঠবে এখানকার বাতাস। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশে এটি আরেক দিনের সূচনা।

কিন্তু, কারখানার যন্ত্রগুলো গর্জে ওঠার আগেই শুরু অন্য লড়াই। হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক দলবেঁধে বের হচ্ছেন ঘর থেকে। গন্তব্য—কারখানা।

ধোঁয়াশার দেয়াল ভেদ করে সূর্যের প্রথম আলো মাটি ছুঁতেই টিনের ছাউনি দেওয়া খুপরিঘর থেকে বের হলেন ৩০ বছর বয়সী পোশাক শ্রমিক রুবিয়া আক্তার।

ধুলোমাখা পথে দ্রুত পায়ে হাঁটছেন তিনি। পথ চলার ছন্দই যেন বুঝিয়ে দেয় সেলাই মেশিনের পেছনে তার কেটেছে অনেক বছর।

সূর্য দিগন্তরেখা স্পর্শ করার আগেই শুরু হয়ে যায় রুবিয়ার দিন। বিশ্বব্যাপী ফ্যাশনশিল্পের বিপুল চাহিদা মেটাতেই তার এত তাড়া।

রুবিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কাজের প্রচণ্ড চাপে সারাদিন সন্তানদের একা ফেলে রাখি।’

দীর্ঘ সময় ধরে রুবিয়ার কাজ ও স্বল্প মজুরি এ দেশের লাখো মানুষের দুর্দশার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বৈশ্বিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদা আর এখানকার শ্রমিকের বাস্তবতা ভীষণ সাংঘর্ষিক।

রুবিয়ার পেছনে ছোট্ট টিনের চালায় তার সবচেয়ে অমূল্য সম্পদ পড়ে আছে—মেয়ে অমি (৬) ও এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে রাকিব।

তাদের স্বপ্নে ভরে আছে এই এক কক্ষের ঘরটি। বিছানাও একটি। সেখানেই ঘুমায় বাচ্চারা। দেয়ালে ঝোলানো কাপড় যেন জীবনের রঙচটা ট্যাপেস্ট্রি। এতে লুকিয়ে আছে মায়ের যত্ন ও মাতৃগর্বের গল্প।

ঘরের কোণায় পুরোনো ফ্রিজ। কয়েক মাসের সঞ্চয় দিয়ে কেনা। তবে ভেতরের তাকগুলো খালি। পরিবারের আর্থিক অবস্থার স্পষ্ট চিহ্ন।

আবাসন সংকট ও নাগরিক সুবিধার অভাব জীবনের পরতে পরতে।

‘আমাদের ১০ পরিবারের জন্য দুটি বাথরুম। প্রতিদিন সকালে লাইনে দাঁড়াতে হয়।’

আরও বলেন, ‘সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য লেখাপড়া দরকার। কিন্তু, তা সহজে পাওয়া যায় না। বাচ্চারা হেঁটে স্কুলে যায়। এক ঘণ্টা লেগে যায়। সব স্কুল বাড়ি থেকে এক ঘণ্টা দূরে।’

ডাক্তার দেখাতেও সমস্যা। কম টাকায় কাছাকাছি চিকিৎসা পাওয়া যায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। তাও অত কাছে না। ‘রাস্তায় প্রায় দুই ঘণ্টা লাগে। খরচ কম হওয়ায় আমরা সেখানেই যাই।’

বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই

কারখানার পথে রুবিয়া হাঁটলেও তার মনের মধ্যে ঝড় তোলে জীবনের হিসাব-নিকাশ।

দীর্ঘ সময় কাজ করে পাওয়া ১২ হাজার ৮০০ টাকা বেতন চোখের সামনেই উবে যায়।

সংসারের হিসাবগুলো মাথায় ঘুরপাক খায়। বাড়ি ভাড়া সাড়ে তিন হাজার টাকা, বিদ্যুৎ ৫০০ টাকা, খাবার ও বাজারের জন্য ছয় হাজার টাকা।

বাকি দুই হাজার ৮০০ টাকায় যেভাবেই হোক সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে হয়। অমির স্কুলের বেতন ও রাকিবের এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি।

বিমর্ষ কণ্ঠে রুবিয়া বলেন, ‘মাঝেমধ্যে বাচ্চাদের স্কুলের বেতন দিতে পারি না। বারবার টাকা ধার করতে হয়। এই অবস্থা থেকে বের হতে পারছি না।’

আশুলিয়ার কাঁচাবাজারে এক হালি ডিমের দাম ৬৫ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, পেঁয়াজ ১২০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ৭০ টাকা।

তার ভাষ্য, ‘গরুর মাংস কেনার সামর্থ্য নাই। বাচ্চাদের জন্য ছোট তেলাপিয়া রান্না করেছি। একটা সময় ছিল যখন প্রতিদিন ডিম কেনার চেষ্টা করতাম। দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তা পারি না।’

পোশাক শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি খুব বেশি বাড়েনি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের জীবনযাত্রার ব্যয় সূচক অনুসারে তৈরি পোশাকের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকায় জীবন চালানো সম্ভব নয়।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ আরও বলেন, ‘সরকার দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকের কল্যাণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। স্কুল, হাসপাতাল, বাজার, আবাসন বা পরিবহন ব্যবস্থা দিয়ে শিল্পাঞ্চলের উন্নয়নের উদ্যোগ নেই। শ্রমিকদের নাগরিক সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারখানা পর্যায়ে শ্রমিকদের মত প্রকাশের সুযোগ থাকে না। তাই, তাদের প্রয়োজনের কথাও জানা যায় না।’

জীবন সংগ্রামের গল্প

রুবিয়ার মতো অন্য শ্রমিকদের জীবনও এমনই। আশুলিয়ায় ৪০৭টিরও বেশি পোশাক কারখানা। সেখানকার সরু গলি ও জনাকীর্ণ বাড়িঘরজুড়ে একই কষ্টের কাহিনী।

সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অপারেটরের কাজ করেন ৩৭ বছর বয়সী শাহিদা খান। তার মেয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংসার চালাতে হয় সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতনে।

ওভারটাইমসহ তার আয় সর্বোচ্চ ১৬ হাজার টাকা।

শাহিদা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মেয়ে ঢাকায় থাকে। তার সেমিস্টার ফি তিন হাজার টাকা। সাবলেটে থাকে। তার ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাতে পারি না।’

কাজ ও সংসার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন পলাশ মাহমুদ ও জেসমিন আক্তার। জামালপুরে তাদের চার বছরের ছেলে আত্মীয়দের সঙ্গে থাকে। এ এক হৃদয়বিদারক সিদ্ধান্ত।

পলাশ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগে আমিই কাজ করতাম। সংসারের প্রয়োজনে এখন স্ত্রীকেও কাজ করতে হয়।’

কঠোর জীবন সংগ্রামের কারণে সন্তানকে বড় করতে গিয়ে অনেক চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিতে হয়েছে।

পলাশ আরও বলেন, ‘ছেলেকে গ্রামে পাঠিয়েছি। তার যত্ন নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় বা টাকা নেই। প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা বাড়িতে পাঠাই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাকে কর্জ করে সংসার চালাতে হয়। চিকিৎসা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের টাকা হাতে থাকে না।’

পলাশ ও তার স্ত্রী চার হাজার টাকায় ছোট ঘর ভাড়া নিয়েছেন। ‘এখানকার পরিবেশ খুবই খারাপ। বৃষ্টি হলেই পানি জমে। যাতায়াত খরচ বাঁচাতে আমরা এখানেই থাকি।’

পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মিরপুরের এক পোশাক কারখানায় কাজ করছেন এক সন্তানের মা হোসনা আক্তার। সিনিয়র অপারেটর হিসেবে পান ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা।

পাঁচ বছর চাকরির পর তার স্বামী মান্না আয় করছেন ১৩ হাজার ৮০০ টাকা।

এই দম্পতির প্রতি মাসে খরচের মধ্যে আছে বাড়ি ভাড়া ছয় হাজার টাকা, বিদ্যুৎ খরচ ৪০০ টাকা, ইন্টারনেট ৫০০ টাকা ও সংসারের খরচ আট হাজার টাকা। এটি তাদের যৌথ আয়ের ৫৪ শতাংশের বেশি। তারপর যা থাকে তা দিয়ে সন্তানের খরচ চালাতে হয়।

চরম হতাশা থেকে হোসনা ও মান্না সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তারা গ্রামে চলে যাবেন।

অল্প বেতনে সংসার চালানো সম্ভব না হওয়ায় মিরপুরের অপর শ্রমিক শান্তা মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাওয়ার চিন্তা করছেন।

আশুলিয়ায় শ্রমিক-যৌথবাহিনীর সংঘর্ষে গুলি, নিহত ১

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ী এলাকায় শ্রমিক ও যৌথবাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।

সেসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা যৌথবাহিনীর অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।

আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়কের টঙ্গাবাড়ী এলাকায় মন্ডল গ্রুপের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত শ্রমিকের নাম কাউসার হোসেন খান (২৬)। তিনি ম্যাঙ্গোটেক্স লিমিমিটেডের অপারেটর ছিলেন।

গুলিবিদ্ধরা হলেন—আশুলিয়ার ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক হাবিব ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান, শ্রমিক রাসেল ও নয়ন।

শ্রমিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজ সকালে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক চলছিল। সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার বাইরে অবস্থান নেন। পরে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা সেখানে জড়ো হোন।

তারা আরও জানান, যৌথবাহিনী ও শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে শ্রমিকরা র‍্যাব ও পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। যৌথবাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকরা আরও মারমুখী হয়ে উঠেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায়।

গুলি ও লাঠিচার্জে অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে শ্রমিকরা দাবি করেন।

ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক মো. সুমন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ সকালে আমাদের কারখানায় সবাই কাজ করছিলেন। আমাদের কারখানায় কোনো আন্দোলন হয়নি। মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার সামনে আন্দোলন শুরু করলে আমাদের শ্রমিকরা সংহতি জানিয়ে সেখানে যান। আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরাও যোগ দেন। যৌথবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের লাঠিচার্জ ও গুলি করেন। দুই জনের পায়ে গুলি লাগে। আমি তাদের একজনকে পিএমকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’

রানা প্লাজার সোহেল রানার হাইকোর্টে জামিন

০১ অক্টোবর ২০২৪, ইত্তেফাক

সাভারের রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানাকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করবে রাষ্ট্রপক্ষ।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিচারপতি আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিনের

আদেশ দেন। একইসঙ্গে, তাকে কেন স্থায়ী জামিন দেয়া হবে না, জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন।

রাজধানীতে ১৯৯৬২ ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর অনলাইন

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গেল সাতদিনে ১৯ হাজার ৯৬২টি ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬৬০টি ব্যাটারিচালিত রিকশা ডাম্পিং করা হয় ও ৩টি রিকশার ব্যাটারি জব্দ করা হয় এবং ৫ হাজার ৮৩৯টি রিকশার বিরুদ্ধে অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

এ ছাড়াও অভিযানকালে ৯ হাজার ৩০১টি রিকশার বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ৪ হাজার ১৫৯টি রিকশার সিট জব্দ করা হয়।

৩ মাসের মজুরি বকেয়া, খাবার নেই ফুলতলা চা শ্রমিকদের ঘরে

০৮ অক্টোবর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

দুর্গামনি সাঁওতালের পরিবারে সদস্য আটজন। পরিবারটি চা বাগানের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। এদিকে গত তিন মাস ধরে মজুরি পান না বাগানের শ্রমিকরা।

‘একবেলা পান্তা ভাত খেয়ে দিন কাটছে। এখন এমন হয়েছে, কোনো দোকানদার বাকি দিতে চায় না। লজ্জায় কারও কাছে হাত পাততেও পারি না,’ বলেন দুর্গামনি।

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা চা বাগানের এক হাজার ৪০০ শ্রমিকের পরিবারের একই অবস্থা।

আরেক চা শ্রমিক মঙ্গলী সবর বলেন, ‘আমরা নিয়মিত কাজে যাচ্ছি, পাতা তুলছি কিন্তু মজুরি পাচ্ছি না। কেউ এসে বিষয়টির মীমাংসাও করে দিচ্ছে না। সবাই শুধু আশ্বাস দিচ্ছে। আর কত না খেয়ে থাকব!’

উপজেলার ফুলতলা চা বাগানটির মালিক দ্য নিউ সিলেট টি এস্টেটস লিমিটেড। সূত্র জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাত দেখিয়ে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া বন্ধ রেখেছেন।

বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি রবি বুনারজি বলেন, ‘মালিকপক্ষ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির অজুহাত দেখিয়ে প্রায় ১২ সপ্তাহ ধরে রেশন ও মজুরি বন্ধ রেখেছে। এ নিয়ে আমরা বারবার যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর পাইনি।’

ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম শেলু বলেন, ‘বাগানের বর্তমান অবস্থা ভালো না। বিষয়টি স্থানীয় ও ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে জানতে বাগানের ম্যানেজারকে কল করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

গাজী টায়ারসে আগুন: প্রতিবেদনেও নিখোঁজ ১৮২, ‘ধামাচাপার’ অভিযোগ

“তোমাগো সরকাররে কও, আমার পোলাডার পোড়া লাশটা দিতে না পারুক, হাড্ডিডা দিতো,” বলছিলেন নিখোঁজ আমান উল্লাহর মা।

গাজী টায়ারসে আগুন: প্রতিবেদনেও নিখোঁজ ১৮২, ‘ধামাচাপার’ অভিযোগ

২০ অক্টোবর ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর গাজী টায়ারস কারখানায় হামলা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্তত ১৮২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

২৫ অগাস্ট রাতে অগ্নিসংযোগের পর সকাল থেকেই আশপাশের এলাকার নিখোঁজদের স্বজনরা কারখানার ফটকে জড়ো হয়েছিলেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে প্রশাসন স্বজনদের কাছ থেকে নিখোঁজদের ছবি ও তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র রেখে নাম নিবন্ধন শুরু করে।

টানা পাঁচ দিন ধরে জ্বলা আগুনে ভবনটি ভেতরে থাকা কেউ যে আর রক্ত-মাংসে আস্ত থাকবেন না; সেটা ধরে নিয়েই স্বজনরা নিখোঁজদের অন্তত লাশটুকু চেয়েছিলেন; কিন্তু সেটাও তাদের ভাগ্যে জোটেনি। কারণ আগুনে পোড়া ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

১২ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনের দাখিল করা প্রতিবেদনে ‘দুর্ঘটনায় আহত, ক্ষতিগ্রস্ত ও নিহতদের বিবরণ’ শিরোনামে বলা হয়েছে- তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গেলে ফ্যাক্টরির বাইরে বেশ কিছু ব্যক্তি তাদের নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধান করতে থাকেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকার জন্য কমিটি ১ সেপ্টেম্বর গণশুনানির আয়োজন করে। সেখানে ৮০ জন নিখোঁজ ব্যক্তির তথ্য দেন স্বজনরা।

“তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন তালিকা তৈরি করে। তালিকাগুলো একত্রিত করে মোট ১৮২ জন ব্যক্তির নিখোঁজ থাকার তথ্য প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন।”

কমিটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় শনাক্ত করে স্বজনদের হাড়গোড় বুঝিয়ে দেওয়ারও সুপারিশ করেছে।

যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি শ্রম অধিকার লঙ্ঘন হয়, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম

২২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

বিশ্বের যেসব দেশে শ্রম অধিকার সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘিত হয়, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। এই কাতারে বাংলাদেশের সঙ্গে আছে আফগানিস্তান, জর্ডান ও জিম্বাবুয়ে।

অক্সফামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের সবচেয়ে নিচের ১০টি দেশের কাতারে। এই সূচকে ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬১তম। সেই সঙ্গে শ্রমিকের অধিকার রক্ষায়ও বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে তলানির ১০ দেশের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫৫তম।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম ও ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল গতকাল সোমবার যৌথভাবে ‘দ্য কমিটমেন্ট টু রিডিউসিং ইনইক্যুয়ালিটি (সিআরআই) ইনডেক্স ২০২৪’ বা ‘অসমতা হ্রাসের অঙ্গীকার সূচক’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের চিত্র উঠে এসেছে।

সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠি

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতের কিছু গণমাধ্যম কি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে

১০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণ–আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যম বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলার খবর প্রচার শুরু করে।

তাদের খবরে বলা হয়, ‘ইসলামপন্থী নানা বাহিনী’ সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা করছে।

ভারতজুড়ে নানা গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও বিভ্রান্তিকর নানা ভিডিও, ছবি ও সংবাদ প্রকাশ পেতে শুরু করে।

টাইমস গ্রুপের মালিকানাধীন মিরর নাউ–এর ইউটিউব চ্যানেল একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেটির শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা? উত্তেজিত জনতার গণহত্যা, হত্যা’। ভিডিওটিতে সহিংসতা এবং চারটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা দেখানো হয়। আগুন দেওয়া চারটি বাড়ির মধ্যে দুটির মালিক মুসলিম।

আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ভিডিওটির শিরোনাম পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর। ওই সব ঘটনায় কোনো ধরনের গণহত্যা হয়নি। ভিডিওতে যে চারটি বাড়িতে আগুন দেওয়ার কথা বলা হয়, তার একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের। কোনো প্রমাণ না দিয়ে ওই ভিডিওতে আরও কিছু দাবি করা হয়। যেমন ‘উত্তেজিত জনতা ২৪ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে’, ‘হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা’।

আল–জাজিরা স্বাধীনভাবে যাচাই করে দেখেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের দিন দুজন হিন্দু নিহত হয়েছেন। নিহতদের একজন পুলিশ সদস্য এবং একজন হাসিনার দল আওয়ামী লীগের কর্মী।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা ঐতিহ্যগতভাবেই সাধারণত আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন। বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর তুলনায় আওয়ামী লীগকে ধর্মনিরপেক্ষ দল বলে বিবেচনা করা হয়। যদিও তাদের জোটে ইসলামপন্থী দলও রয়েছে।

বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে এই ধরনের দাবিও করা হয়, ‘শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে এক কোটির বেশি শরণার্থী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করবে।’

টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বরাত দিয়ে এ ধরনের একটি খবর প্রকাশিত হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠ সংবাদ সংস্থা এএনআই ভারতের একজন ছাত্রনেতার বরাত দিয়ে বলে, প্রতিবেশী দেশের এই গণ–আন্দোলন ‘বাংলাদেশের শত্রুদের সাজানো চক্রান্ত’।

টাইমস অব ইন্ডিয়ায় বিষয়টি আরও সরাসরি করে বলা হয়, ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে’ এ আন্দোলন করেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে এ ধরনের খবর পরিবেশন নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান আল–জাজিরাকে বলেন, ‘ইসলামভীতির চোখে’ ওই সংবাদগুলো পরিবেশন করা হয়েছে।

এই বিশ্লেষক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন একসময় গণ–আন্দোলনে পরিণত হয়। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওই আন্দোলনে যোগ দেন। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো কোথাও না কোথাও পুরো বিষয়টিকে তাদের ইসলামভীতির চোখ দিয়ে ব্যাখ্যা করছে।’

আইএসআই ও ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতার দাবি

গত সোমবার শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশ করতে গিয়ে বলা হয়, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) বাংলাদেশের এই বিক্ষোভে উসকানি দিয়েছে। কারণ, তারা চায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তাদের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসুক এবং দেশটি একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত হোক।

এমনকি কয়েকটি গণমাধ্যমে ভারত সরকারকে সম্ভাব্য শরণার্থী সংকট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতেও পরামর্শ দেওয়া হয়। বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে।

দ্য ইকোনমিক টাইমস–এর কূটনীতিবিষয়ক সম্পাদক দীপাঞ্জন আর চৌধুরী এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে লেখেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী না সে দেশের জন্য ভালো হবে, না ভারতের জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত সীমান্তে সন্ত্রাসকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে…।’

গুজরাটের টেলিভিশন স্টেশন চ্যানেল টিভি৯ বাংলাদেশের গণবিক্ষোভকে ‘অভ্যুত্থান’ বলেছে। সামাজিক মাধ্যম এক্স–এ তাদের ১০ লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছে, ‘বাংলাদেশে এই অভ্যুত্থানের পেছনে কি আইএসআই? সহিংস হামলার পেছনে কি জামায়াতে ইসলামী?’

বাস্তবে কী ঘটেছিল

বাংলাদেশের আন্দোলন নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম যেভাবে খবর প্রকাশ করেছে, তা স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে জানায় আল–জাজিরা।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের দিন গত সোমবার রাতে দেশটির ৬৪ জেলার মধ্যে প্রায় ২০টি জেলায় হিন্দু বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হয়েছে।

আল–জাজিরার প্রতিনিধিরা যে কয়েকটি জেলায় আক্রমণ ও লুটের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে ওই সব বাড়িতে হামলা ও লুটের ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান হিরু আল–জাজিরাকে বলেন, তাঁদের গ্রামে দুটি হিন্দু বাড়িতে হামলা হয়েছে। ওই দুই বাড়ির লোকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা।

ভাড়ার গাড়িচালক মোস্তাফিজুর আরও বলেন, ‘লোকজন খেপে ছিল। কারণ, এই হিন্দু নেতারা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় স্থানীয় অন্য বাসিন্দাদের হয়রানি করেছেন। এখন হাসিনার পতনের পর তাঁদের পাল্টা হয়রানির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’

শেখ হাসিনার পতনের পর তাঁর ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা সজীব ওয়াজেদ জয় ভারতীয় বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এবং গুজব ছড়িয়ে চলেছেন বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর। বলেন, তিনি কোনো প্রমাণ ছাড়াই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হওয়ার দাবি করছেন। বলছেন, আইএসআই এর পেছনে রয়েছে।

মোস্তাফিজ বলেন, ‘ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এগুলো লুফে নিচ্ছে এবং জয়ের ভুয়া দাবি ছড়াচ্ছে।’

ভারত সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের জেলা যশোরে বাবুল সাহা নামের এক ব্যক্তির গুদাম ও বাড়িতে হামলা হয়। তিনি ওই এলাকার চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের টিকিটেই তিনি নির্বাচনে জিতেছেন বলে জানা গেছে।

যশোরের বাসিন্দা আবদুর রব হায়দার আল–জাজিরাকে বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, এমন কোনো হিন্দু বাড়িতে হামলা হয়নি।

হামলার কারণ রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক নয়

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন নেতা গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক আল–জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যত দূর তিনি জানতে পেরেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে, এমন হিন্দু ব্যক্তিরা ছাড়া সাধারণ হিন্দু ব্যক্তি বা পরিবার আক্রমণের শিকার হয়নি।

গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন নেতা হিসেবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, হামলার কারণ রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক নয়। দেশজুড়ে যতগুলো হিন্দু বাড়ি বা অবস্থানে হামলা হয়েছে, তার থেকে ১০ গুণ বেশি মুসলমান বাড়িতে হামলা হয়েছে, শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে।’

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত সোমবার রাতে উত্তেজিত জনতার হামলায় ১১৯ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাঁরা মূলত আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মী এবং পুলিশ।

এএফপির ফ্যাক্ট-চেকিং এডিটর কদর উদ্দিন শিশির আল–জাজিরাকে বলেন, গত সোমবার রাতে মারা যাওয়া মাত্র দুজন হিন্দু। তাঁদের একজন পুলিশ এবং একজন আওয়ামী লীগ নেতা।

ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান আল–জাজিরাকে বলেন, ‘বেশির ভাগ ভারতীয় গণমাধ্যম এককথায় বলতে গেলে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে একেবারেই কিছু জানে না।’

বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘ইসলামভীতিতে’ আক্রান্ত বলা হলেও ভারতীয় শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘ইসলামভীতি নয়, বরং বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনের অধীনে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো উদ্বিগ্ন।’

বাংলাদেশে যখন আওয়ামী লীগ সরকার থাকে না, যেমন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ‘সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বেড়েছে। এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্তমান এমন ভাবনাকে প্রভাবিত করছে’ বলেও মনে করেন তিনি।

মুসলিমরা হিন্দুদের মন্দির-বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন

শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল, তা এখন বেশ খানিকটা নিয়ন্ত্রণে। মুসলমানরা হিন্দুদের মন্দির ও বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন। এমন অনেক ছবি স্থানীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ব্যবসায়ী মুন্সি আজিজুল হক আল–জাজিরাকে বলেন, তাঁদের নিজেদের এলাকায় যাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য তাঁরা কাজ করছেন।

আজিজুল বলেন, ‘আমরা দেখছি, কীভাবে ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবর ছড়াচ্ছে। বাস্তবতা তার চেয়ে অনেক ভিন্ন।’

বাংলাদেশি সমাজকর্মী ও লেখক অনুপম দেবাশীষ রায় আল–জাজিরাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে, কিন্তু সংখ্যাটি অতিমাত্রায় বাড়িয়ে বলা হচ্ছে এবং বাংলাদেশ “ইসলামি বাহিনীর” দখলে চলে গেছে বলে দেখানো হচ্ছে, যা সত্যি নয়।’

বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে ভারতে অপতথ্যের প্রচার

১১ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে কিছু অপতথ্য ও ভুয়া ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই ভুয়া ভিডিও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও প্রচারিত হচ্ছে।

যেমন চট্টগ্রামের নবগ্রহ মন্দিরে হামলার ঘটনা দাবি করে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয় ডেইলি লেটেস্ট আপডেটস নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে। যেখানে #AllEyesOnBangladeshiHindus এবং #SaveBangladeshiHindus হ্যাশট্যাগ ছিল।

ভিডিওটি ভারতীয় গণমাধ্যম রিপাবলিক টিভির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও প্রচার করা হয়।

অনলাইন যাচাই ও মিডিয়া গবেষণা প্ল্যাটফর্ম ডিসমিস ল্যাব বলছে, নবগ্রহ মন্দিরে অগ্নিসংযোগ বা আগুন দেওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই ভিডিওকে অপপ্রচার বলে দাবি করেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চট্টগ্রামের লালদীঘি পাড়সংলগ্ন নবগ্রহ মন্দিরে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। হামলা হয়েছে মন্দিরের কাছাকাছি অবস্থিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। সেখানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি অক্ষত মন্দিরের ছবি পাঠিয়ে জানান, মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক স্বপন দাসও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে প্রথম আলো যোগাযোগ করে জেনেছে, অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি নবগ্রহ মন্দিরের নয়। মন্দিরটির পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা রনি বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্দিরে আমরা সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত কিছু হয়নি।’ তিনিও জানান যে আগুনের ঘটনাটি মন্দিরের পেছনে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের।

বাংলাদেশে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। পরদিন সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

অবশ্য শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়।

বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা বেশি। ভারত সরকার বাংলাদেশ পরিস্থিতি নজরে রাখতে একটি কমিটিও গঠন করেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা প্রচার পাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভারতকেন্দ্রিক অ্যাকাউন্টগুলো থেকে ব্যাপকভাবে ছড়ানো হয় হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা। তবে এর মধ্যে বেশ কিছু ভিডিও, ছবি ও তথ্য সঠিক নয়।

নোয়াখালীর সেনবাগে গত বৃহস্পতিবার এক নারীকে অপহরণের একটি ভিডিও সাম্প্রদায়িক হামলা বলে চালানোর চেষ্টা দেখা গেছে। তবে ওই নারীর বাবার সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো জানতে পেরেছে, বিষয়টি ঠিক নয়। ওই নারীকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তাঁর স্বামী। নারী অবশ্য স্বামীর সংসার করতে রাজি নন। স্বামীকে প্রতিহত করেছেন গ্রামবাসী।

ডিসমিস ল্যাব ভুয়া ও অপতথ্য ছড়ানো নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, তারা এখন পর্যন্ত ছয়টি পোস্ট পেয়েছে, যেগুলো ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে ভারত থেকে পরিচালিত এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে এসব পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে। সেগুলো স্থান পাচ্ছে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমেও।

হিন্দুদের দোকানে আগুন দেওয়া হয়েছে, এমন একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে এক্সে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি দোকানে আগুন ধরেছে এবং কিছু মানুষ আগুন থেকে মালামাল সরানোর চেষ্টা করছেন। ভিডিওটি ৭ আগস্ট পোস্ট হয়, যেখানে ক্যাপশনে #AllEyesOnBangladeshiHindus-সহ একাধিক হ্যাশট্যাগ দেখা যায়। এমন হ্যাশট্যাগ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনার পর শুরু হয়েছে।

এক্স-এর তথ্য অনুসারে, অ্যাকাউন্টটি ভারত থেকে পরিচালিত হয়। ভারতীয় গণমাধ্যম সুদর্শন নিউজও ভিডিওটি প্রচার করে এবং সেটিকে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ বলে প্রচার করে।

ডিসমিস ল্যাব যাচাইয়ে দেখতে পায়, ঘটনাটি সমসাময়িক নয়। মূল ভিডিওটি গত জুলাইয়ে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীরহাটে আগুনে ১৫টি দোকান পুড়ে যাওয়ার ঘটনার। অর্থাৎ এটি শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে ঘটেনি এবং এটি কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা নয়।

ভিডিওটি ‘ভয়েস অব বাংলাদেশি হিন্দুজ’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকেও ছড়াতে দেখা যায়। ডিসমিস ল্যাব বলছে, এই অ্যাকাউন্ট থেকে আগেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে একাধিক অপতথ্য ছড়ানোর নজির পাওয়া যায়।

বাংলাদেশি ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয় ভারত থেকে পরিচালিত একটি এক্স অ্যাকাউন্টে। তবে ডিসমিস ল্যাব যাচাই করে দেখতে পেয়েছে, বাড়িটি লিটন দাসের নয়। সেটি নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার বাড়ি। লিটন দাস নিজেও ফেসবুকে এ–সংক্রান্ত পোস্ট দিয়েছেন।

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা এবং অপতথ্য ছড়ানো নিয়ে আল-জাজিরাও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বাংলাদেশি সমাজকর্মী ও লেখক অনুপম দেবাশীষ রায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে, কিন্তু সংখ্যাটি অতিমাত্রায় বাড়িয়ে বলা হচ্ছে।’

ভারত থেকে পরিচালিত আরেকটি এক্স অ্যাকাউন্টে হিন্দু নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছে বলে দাবি করে একটি ছবি পোস্ট করা হয়। ডিসমিস ল্যাব বলছে, ২০২৩ সালে ভারতের তথ্য যাচাইকারী সংস্থা অল্টনিউজের করা একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, একই ছবি সামাজিক মাধ্যমে তখনই ছড়িয়েছিল। বলা হয়েছিল এটি বাংলাদেশে হিন্দুদের নির্যাতনের ঘটনা। যদিও ছবিটি বাংলাদেশের নয়। মূল ভিডিওটি ভারতের বেঙ্গালুরু শহরের একটি ঘটনার।

‘বাবা বেনারস’ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, বাংলাদেশি হিন্দু ব্যক্তিকে মেরে একটি ভাস্কর্যের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তবে ডিসমিস ল্যাব যাচাই করে দেখেছে, মরদেহটি কোনো হিন্দু ব্যক্তির নয়। এটি ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা ৯ নম্বর পোড়াহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হিরণের।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেও ভিডিওটি নিয়ে প্রতিবেদন করে জানিয়েছে, সেটি শহিদুলের মরদেহ।

বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা শুরু হয়েছে, ইসকন, কালীমন্দিরসহ বহু মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং ৫০০ জন মারা গেছে বলে দাবি করা হয় একই অ্যাকাউন্টের আরেকটি পোস্টে। সেটির সঙ্গে তিনটি ছবি যুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি ছবি কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ ও সরকারদলীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের। আরেকটি ছবি ২০২১ সালের। তৃতীয় ছবিটিও সাম্প্রতিক ঘটনার নয়। সেটি গত এপ্রিলে ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লি গ্রামের সর্বজনীন কালীমন্দিরে আগুন দেওয়ার।

ডিসমিস ল্যাব আরও একটি প্রতিবেদনে একাধিক পোস্ট থেকে বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি যাচাই করেছে।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ভবন থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনাকে হিন্দু হোস্টেলের ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। চাঁদপুরে মারধরে নিহত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানের ছবি দিয়ে তা হিন্দু ব্যক্তির বলে দাবি করা হয়েছে।

বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে বেঁধে রাখার ঘটনাকে হিন্দু মেয়েদের ওপর নির্যাতনের ভিডিও দাবি করে অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিসমিস ল্যাব। তারা আরও জানায়, ৫ আগস্ট সাতক্ষীরায় যুবলীগ নেতার একটি রেস্তোরাঁয় অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে মন্দিরে হামলা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই জেলায় এক আওয়ামী লীগ নেতার স্বজনসহ ১৪ জনের নিহতের ঘটনাকে বিকৃত করে ৭ জন হিন্দু মারা গেছে বলেও প্রচার করা হয়।

৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর সারা দেশে পুলিশ আত্মগোপনে চলে যায়। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সড়ক সামলাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরাই নগর পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও পালন করছেন। দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৫৩৮টির কার্যক্রম শনিবার পর্যন্ত চালু হয়েছে। তবে থানায় পুলিশের সদস্য সংখ্যা একেবারেই কম।

এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও মন্দির নাগরিক উদ্যোগে পাহারা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি খোলাচিঠি দিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ গত শুক্রবার বলেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এর মধ্যে ৫২টি জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান চান তাঁরা।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজার ভাঙ্গার ঘটনাগুলো কেন ঘটছে? কারা ঘটাচ্ছে?

৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বিবিসি নিউজ বাংলা

ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজার ভাঙ্গার ঘটনা ঘটছে। মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে ঘিরে মানুষজন আহতও হয়েছে, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইভেন্ট খুলেও মাজার ভাঙ্গার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এর মাঝে নতুন করে আগামী ১১ই সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলিস্তানে অবস্থিত গোলাপশাহ মাজার ভাঙ্গতে “গুলিস্তানে গোলাপশাহ মাজার ভাঙ্গা কর্মসূচি” শীর্ষক একটি ইভেন্ট খোলা হয়েছে, যাতে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ সাড়া দিয়েছে।

সাধারণত সুফি বা ধর্মীয় প্রচারকদের কবর কেন্দ্রিক মাজার গড়ে ওঠে। যেখানে অনেকে মনোকামনা পূরণের উদ্দেশ্যে মানত করে থাকেন। যদিও ইসলামিক রীতিতে মাজার ব্যবস্থা কতটা ধর্মসম্মত, তা নিয়ে স্কলারদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোয় অনেক সময় মাজার কেন্দ্রিক ব্যবসা, প্রতারণা, মাদক ব্যবহার বা অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে।

তবে এভাবে হামলা করা গ্রহণযোগ্য নয় বলে ইসলামিক স্কলাররা বলছেন।

কিন্তু কেন এমন ঘটনা ঘটছে? কারা ঘটাচ্ছে? এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কী?

নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ মাজারে হামলা

দেশে মাজার ভাঙ্গার যে হিড়িক চলছে, তাতে সর্বশেষ সংযোজন নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ মাজার।

এ জেলার বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় অবস্থিত ওই মাজারে শুক্রবার হামলা ও অগ্নিযংযোগের ঘটনা ঘটেছে, যাতে চারজন আহত হয়েছেন।

তবে যারা আহত হয়েছেন, তারা এখনও চিকিৎসাধীন থাকলেও আশঙ্কামুক্ত জানিয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, গতকাল সকাল ৬টার দিকে কিছু লোক ওই মাজারে ঢুকে ভাঙচুর করে। মাজারের ভেতরে থাকা লোকজন তাদেরকে আটকাতে গেলে হামলাকারীরা তাদেরকে মারধর করেন।

এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, তা জিজ্ঞেস করলে ওই থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সর্বশ্রেণির মাজার বিদ্বেষী, পীর বিদ্বেষী লোকজন এটা করেছে।”

এর আগে গত ২৫শে অগাস্ট নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নে আয়নাল শাহ দরগা নামে পুরোনো একটি মাজারও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিলো বলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

গান-বাজনা নিষিদ্ধ সিলেটের শাহপরান মাজারে

দেশজুড়ে মাজারে হামলার ঘটনার মাঝে আলোচনায় এখন সিলেটের হজরত শাহপরান (রহ.) মাজার।

গতকাল শাহপরান মাজার কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেন যে ওরসের সময় সেখানে কোনও গানবাজনা হবে না।

মাজারের অন্যতম খাদিম সৈয়দ কাবুল আহমদ গতকাল একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মাজারে উরুস উপলক্ষে গানবাজনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হল। কেউ বাদ্যযন্ত্র নিয়ে আসবেন না।”

এর ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, “দেখা গেছে গান বাজনার আড়ালে এইখানে মাদকের ব্যবসা করা হয়। যা আমরা খাদিম পরিবার কোনোভাবে সমর্থন করি না। এগুলোর তীব্র নিন্দা জানাই। এখন থেকে বৃহস্পতিবারের গান-বাজনা বন্ধ থাকবে। কেউ করার চেষ্টা করলে আমরা তা প্রতিহত করবো।”

এ প্রসঙ্গে শাহপরাণ থানার ওসি হারুন অর রশীদ চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, “এটা ঐরকম কোনও ইস্যু না। এখানে এলাকাবাসী মিলে গতকাল একটা প্রতিবাদ করছে।”

আগামী ৮, ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর শাহপরাণ মাজারে তিন দিন ধরে উরুস (ওয়াজ মাহফিল) অনুষ্ঠিত হবে।

“ওটাকে কেন্দ্র করে যত অসামাজিক কার্যকলাপ, যেমন মদের আসব বা নাচ-গান যেন না হয়, তাই এলাকাবাসী ও মাজারের খাদেম, সবাই একত্রিত হয়েই এটা করছে,” যোগ করেন তিনি।

এটাতে কোনও হামলা বা মাজার ভাঙ্গার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি জানিয়েছেন।

তবে সামাজিক মাধ্যমে অনেককে এসব মাজার ভাঙ্গতে ডাক দিতেও দেখা গেছে।

সিরাজগঞ্জের একাধিক মাজারে হামলা

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এক সপ্তাহের মাঝে সিরাজগঞ্জের দুইটি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ হামলার ঘটনা ঘটে গত তেসরা সেপ্টেম্বর। ওইদিন বিকালে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে ইসমাইল পাগলার মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে গত ২৯শে অগাস্ট সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের বামনজানি বাজারের পাশে আলী পাগলার মাজারও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এই মাজার ভাঙচুরের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, লাঠি-সোঁটা, হাতুড়ি, শাবল হাতে একদল মানুষ মাজারের দেয়াল থেকে শুরু করে ছাউনি, সবকিছু ভেঙ্গে ফেলছে।

ভাঙচুরকারীদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ। তাদের বেশিরভাগই পাঞ্জাবী-টুপি পরিহিত ছিল।

অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া স্থানীয় শালগ্রাম জামে মসজিদের ইমাম গোলাম রব্বানীকে চাকরিচ্যুত করেন গ্রামবাসী।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এতে বলা হয়েছে, মাজারে হামলার আগে মাদ্রাসা ছাত্রসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার লোক স্থানীয় কান্দাপাড়া হাটে জড়ো হন।

সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা মাজারে হামলা চালান। মাজারের বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত করার পর তারা দান বাক্স ও পাশেই থাকা খাদেমের ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে নগদ টাকা ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

এই দুই ঘটনার ব্যাপারে বিবিসি বাংলার সাথে কথা হয়েছে পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেনের সাথে।

তবে তিনি জানিয়েছেন যে তিনি ইসমাইল পাগলার মাজারে হামলার ব্যাপারে জানেন। কিন্তু আলী পাগলার মাজার ভাঙ্গচুর করার ঘটনা সম্বন্ধে তিনি কিছু জানেন না।

ইসমাইল পাগলার মাজারে ভাঙ্গচুরের কারণ সম্বন্ধে তিনি বলেন, “মাজারে গাঁজা খায়। বাদ্যবাজনা বাজায়। তা পারিপার্শ্বিকতার জন্য ডিজগাস্টিং পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।”

“মাজার পরিচালনা কমিটির লোকজন ও আশেপাশের ধার্মিক ও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন তাদেরকে নিষেধ করার পরও এগুলো চলমান বিধায় দুই গ্রুপের মাঝে ঝামেলা হয়েছে।”

তিনি জানান, সেখানে হামলার খবর শুনে তারা সেনাবাহিনীর সহায়তায় এটিকে প্রতিহত করেছে। সেইসাথে, ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জে অজস্র মাজার আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “সেসব মাজারে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। কিছু হলে আর্মির সহযোগিতায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

ঠাকুরগাঁওয়ের বিবি সখিনার মাজার তছনছ

এদিকে, নাগরিক টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১১ই জুলাই দিবাগত রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা অবস্থিত তিনশ’ বছরের পুরোনো বিবি সখিনার মাজার ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, রাতের আঁধারে কংক্রিটের ঢালাই ভেঙ্গে মাটি খুঁড়ে মাজার তছনছ করা হয়েছে।

এই মাজারে বছরের পর বছর ধরে অনেকে বিশ্বাস থেকে মানত করতে আসতো।

বিবি সখিনার মাজার ভাঙ্গার খবরটি নিশ্চিত করতে যোগাযোগ করা হয়েছিলো ঠকুরগাঁও পুলিশের সঙ্গে।

সেখানকার পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ বিবিসিকে এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেননি।

তিনি বলেছেন যে বিবি সখিনার মাজার ভাঙ্গার বিষয়টি সম্বন্ধে তারা অবগত নয়।

“আমাদের এখানে মাজার ভাঙ্গার কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে আমি জানি না।”

ঠাকুরগাঁও-এ মাজারের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও সেখানকার ২৮ শতাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

তাই, আসন্ন দুর্গা পূজা উপলক্ষে সেখানে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তাই স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে সতর্ক অবস্থায় আছে পুলিশ। এমনটাই জানিয়েছেন মি. প্রসাদ।

চট্টগ্রামে গণেশপূজার মণ্ডপে ভাঙচুর

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

চট্টগ্রাম নগরের ফিরিঙ্গী বাজার সেবক কলোনিতে গণেশপূজার মণ্ডপে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে দুর্বৃত্তরা পূজামণ্ডপে ভাঙচুর চালায়।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গণেশপূজা ছিল শনিবার। সন্ধ্যায় ফিরিঙ্গী বাজার সেবক কলোনিতে পূজামণ্ডপে গিয়ে একদল দুর্বৃত্ত অতর্কিত ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় গণেশের মূর্তি সামনে থাকা পূজার ঘট ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।

ঘটনার প্রতিবাদে ওই এলাকায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেন সনাতন ধর্মাবলম্বী বিক্ষুব্ধ নারী–পুরুষ। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

মধ্যরাতে সিলেটের শাহপরান (রহ.) মাজারে সংঘর্ষ, আহত অন্তত ২০

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

সিলেটের হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে তিন দিনব্যাপী ওরসের শেষ দিনে স্থানীয় জনতা ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওরসপন্থী ব্যক্তি–ফকির-পাগলদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত তিনটা থেকে ফজরের সময় পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে তিন দিনব্যাপী ওরস শুরু হয়। ওরস শুরুর আগের দিন শুক্রবার জুমার নামাজের পর গানবাজনার আড়ালে মাজারে মাদক সেবন ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে এসব বন্ধের দাবিতে মাজারগেটের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন একদল মুসল্লি। বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় মাজারের খাদেম সৈয়দ কাবুল আহমদ মাজারে গানবাজনা বন্ধের ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় ওরস চলাকালে কেউ যেন মাজারে গানবাজনা চালাতে না পারেন, সে জন্য শুরু থেকেই মাজার কর্তৃপক্ষ, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় আলেম-ওলামা কড়া নজর রাখেন।

গতকাল দিবাগত রাত তিনটা থেকে আখেরি মোনাজাত শেষে শিরনি বিতরণের মধ্য দিয়ে ওরস শেষ হওয়ার কথা ছিল। দিবাগত রাত তিনটার দিকে কয়েক শ ব্যক্তি মাজারে এসে কেন গানবাজনা নিষিদ্ধ হলো, এ নিয়ে ক্ষোভ জানান। বিক্ষোভকারী কিছু ব্যক্তির হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। এ সময় মাজারে থাকা মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই ব্যক্তিদের তর্কাতর্কি হয়। ওই ব্যক্তিরা তখন মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে মারধর করেন এবং ফকির-পাগল ও তাঁদের হয়ে একটি পক্ষ মাজারের ভেতরে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আটকে রেখেছেন, এমন একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ উত্তেজনার সূত্র ধরেই পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

৫–২০ আগস্ট: হামলার শিকার সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৬৮

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৯টিতে হামলার ঘটনা ঘটার তথ্য পাওয়া যায়। নিহত ২ জন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বহু হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও বাড়িঘরে, কোথাও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে, কোথাও উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

হামলা শুরু হয় মূলত গত ৫ আগস্ট বিকেল থেকে। প্রথম দুই দিন হামলার ঘটনা বেশি ঘটে। সারা দেশে প্রথম আলোর প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়ে হামলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তত ১ হাজার ৬৮টি ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন। এর বাইরে হামলা হয়েছে ২২টি উপাসনালয়ে।

সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগে। বিভাগটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তত ২৯৫টি বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়। রংপুর বিভাগে ২১৯টি, ময়মনসিংহে ১৮৩টি, রাজশাহীতে ১৫৫টি, ঢাকায় ৭৮টি, বরিশালে ৬৮টি, চট্টগ্রামে ৪৫টি এবং সিলেটে ২৫টি বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কোথাও কোথাও স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কোথাও কোথাও কম।

সরকার পতনের পর হামলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একজন মৃণাল কান্তি চ্যাটার্জি। বাগেরহাটের এই অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষককে গত ৫ আগস্ট রাতে মারধর ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আরেকজন খুলনার পাইকগাছা ইউনিয়নের স্বপন কুমার বিশ্বাস। ৮ আগস্ট বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে মারধর ও নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রাথমিক হিসাব (২০ আগস্ট দেওয়া) অনুযায়ী, ৫০টির বেশি জেলায় দুই শতাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার তারা জানায়, বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের পর তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনে সেটি তুলে ধরা হবে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত গত মাসে প্রথম আলোকে বলেন, ৫০ বছর ধরে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নানা পটভূমিতে সংখ্যালঘুদের টার্গেট (লক্ষ্যবস্তু) করে হামলার ঘটনা ঘটে আসছে। এসব হামলার মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুশূন্য করা।

এর আগে সংখ্যালঘুদের ওপর বড় হামলা হয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২১ সালে দুর্গাপূজার সময়। তখন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলেছিল, ওই বছর ১৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের ২৭টি জেলায় হামলায় ১১৭টি মন্দির-পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করা হয়। ৩০১টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি হামলা-লুটপাটের শিকার হয়। নিহত হন ৯ জন।

এবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে ১ হাজার ৬৮টি স্থাপনায় হামলা হয়েছে, তার অন্তত ৫০৬টির মালিক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

সারা দেশে প্রথম আলোর প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা (৬৪ জেলা ও ৬৭টি উপজেলা) অনুসন্ধান চালিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার তথ্য পেয়েছেন মোট ৪৯ জেলায়। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪৬টি সরেজমিনে দেখেছেন, যা মোট ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনার ৫১ শতাংশ। বাকিগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়েছেন। বেশ কিছু জেলায় হামলা হয়েছে ব্যাপকভাবে। কিছু জেলায় সে তুলনায় কম। অন্তত একটি ঘটনা ঘটেছে, এমন হিসাবে হামলা হওয়া জেলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯।

হিন্দুধর্মাবলম্বী ছাড়া হামলা হয়েছে খ্রিষ্টান ও আহমদিয়া সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর। বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, নওগাঁয় চার্চ অব বাংলাদেশ, দিনাজপুরে ইভ্যানজিলিক্যা হলিনেস চার্চ, নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের কালেকশন বুথ এবং বরিশালের গৌরনদীতে তিনটি, খুলনা শহরে একটি, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে একটি ও পার্বতীপুরে একটি খ্রিষ্টান বাড়িতে হামলা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে নিজপাড়া মিশনে মা মারিয়ার মূর্তি ভাঙা হয়েছে।

ঢাকায় রোমান ক্যাথলিক চার্চের আর্চবিশপ বিজয় নিসফরাস ডি’ক্রুজ বলেন, ‘আমরা এ দেশে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। কিন্তু নানা সময় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়। কিন্তু হামলাকারীদের শাস্তি হয় না।’ তিনি বলেন, শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে হামলা বন্ধ হবে না।

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান কাপেং ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর অন্তত ১০টি হামলায় অন্তত ১৮টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর অথবা অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। জমি দখল ও মাছ লুটের দুটি ঘটনা ঘটেছে। দিনাজপুরে সাঁওতাল বিদ্রোহের ঐতিহাসিক দুই চরিত্র সিধু মুর্মু ও কানু মুর্মুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।

আহমদিয়া সম্প্রদায় জানিয়েছে, পঞ্চগড়, রংপুর, রাজশাহী, নীলফামারী, ঢাকার মাদারটেক, শেরপুর ও ময়মনসিংহে হামলায় তাঁদের ১৩৭টি বাড়িঘর ও ৬টি আহমদিয়া মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহমদিয়া মুসলিম জামাতের জনসংযোগ সম্পাদক আহমাদ তাবশির চৌধুরী বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি না, কোনো দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। আমার মনে হয়, আমাদের ওপর এবারের আক্রমণ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় না থাকার সুযোগে।’ তিনি বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আমলেও আহমদিয়াদের ওপর হামলা হয়েছিল।

হামলার শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হামলা হয় সরকার পতনের পর ‘বিজয় মিছিল’ থেকে। হামলাকারীদের মধ্যে বিএনপি, জামায়াত এবং কিছু ধর্মীয় সংগঠনের স্থানীয় উগ্র কর্মী ও সমর্থকেরা ছিলেন। তবে ৬ আগস্ট থেকে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি, জামায়াত, বিভিন্ন ধর্মীও সংগঠন এবং শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে সংখ্যালঘুদের স্থাপনায় পাহারার ব্যবস্থাও করা হয়। হামলার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বক্তব্যও দিয়েছে।

থানচির দুর্গম এলাকায় খাদ্য সংকট কাটেনি এখনো

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বান্দরবানের থানচিতে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকার ২১টি পাড়ার দুই হাজারের বেশি বাসিন্দা খাদ্য সংকটে আছেন। পরিবারের ৬-৮ সদস্যের জন্য এক পট চালের ভাতের সঙ্গে বনের আলু,বাঁশকোড়ল মিশিয়ে যে পাতলা খাবার বানানো হয় তাই খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন তারা।

জুমের নতুন ধান আসার আগ পর্যন্ত এ খাবার খেয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকার প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে দুর্গম এলাকার এই মানুষদের।

বেশ কিছুদিন আগেই খবর পাওয়া যায়, সীমান্তের কাছাকাছি রেমাক্রি ইউনিয়নের ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মেনহাত পাড়া, বুলু পাড়া, ইয়ংদং পাড়া ও তাংখোয়াইং পাড়া, ম্রংগং পাড়াসহ আশপাশের ২১টি পাড়ার বাসিন্দারা খাদ্য সংকটে পড়েন। ঘরে চাল না থাকায় ভাতের বিকল্প হিসেবে প্রায় এক-দেড় মাস ধরে তারা বাশঁকোড়ল খেয়ে বেঁচে আছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জশনে জুলুশ ঘিরে আহলে সুন্নত ও হেফাজতের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ২০

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে জশনে জুলুশকে কেন্দ্র করে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত ও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত উপজেলার পৌর এলাকার কদমতলীর মোড়ে সংঘর্ষ চলে।

স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে উপজেলা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত কসবা উপজেলা চত্বর থেকে জশনে জুলুশের শোভাযাত্রা করার প্রস্তুতি নেয়। এতে নেতৃত্ব দেন উপজেলার পুরকুইল হাবিবিয়া দরবার শরিফের পীর ছদরুদ্দিন আহমেদ। অপর দিকে উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গাজী ইয়াকুব ওসমানী নির্দেশে হেফাজতের অনুসারীরা জশনে জুলুশের শোভাযাত্রা প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেন। এতে উত্তেজনা ছড়ায়।

দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার কদমতলী এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে উভয় পক্ষের নেতা-কর্মী ও অনুসারীরা লাঠিসোঁটা, দেশি অস্ত্রসহ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

দীঘিনালায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর দোকান, বাড়িঘরে আগুন

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে লারমা স্কয়ার এলাকায় এই সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দোকান ও ঘরবাড়ি আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্র জানায়, খাগড়াছড়ি শহরের নোয়াপাড়া এলাকায় গতকাল বুধবার ভোরে মোহাম্মদ মামুন (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মারধর করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় পরে তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামুন খাগড়াছড়ি সদরের শালবন মধ্যপাড়ার মৃত নূর নবীর ছেলে।

এ ঘটনার সূত্র ধরে আজ বিকেল পাঁচটার দিকে দীঘিনালায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বাঙালিরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, পাঁচটার দিকে ৩০০ থেকে ৪০০ বাঙালি জামতলি ও বোয়ালখালী বাজারের দিক থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তাঁরা লারমা স্কয়ারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এতে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে লারমা স্কয়ার ও দীঘিনালা কলেজের পাশের প্রায় ৩৭টি ঘরবাড়ি ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

বোয়ালখালী বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. লোকমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মামুন হত্যার বিচারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে তাঁরা মিছিল বের করেছিলেন। পরে পাহাড়িরা এসে বাধা দিয়েছেন। এ জন্য ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। লোকমান বলেন, ‘এভাবে ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে, এটা ভাবিনি।’

লারমা স্কয়ার এলাকার বাসিন্দা রিপন চাকমা বলেন, মিছিলে পাহাড়িরা কেউ বাধা দেননি। মিছিল থেকেই অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে।

নিহত মামুনের মামা মো. নুর হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, মামুনকে পানখাইয়া পাড়ার স্লুইসগেট এলাকায় হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশের সহযোগিতায় তাঁকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামুনের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন মৃধা প্রথম আলোকে জানান, মোটরসাইকেল চুরি করে পালানোর সময় বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে মামুন আহত হন। গণপিটুনির বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

এ ঘটনার পর গতকাল খাগড়াছড়ি শহরে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

খাগড়াছড়িতে রাতভর গোলাগুলি, নিহত ৩

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালির সংঘর্ষের জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সদরসহ পুরো জেলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতের গোলাগুলি ও বিকেলের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)।

বৃহস্পতিবার রাতে (আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টা) জেলা শহরের নারানখখাইয়া, স্বনির্ভর এলাকায় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত গুলির শব্দ পাওয়া যায়।

এর মধ্যে ধনঞ্জয় চাকমা দীঘিনালায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংঘর্ষে মারা যান। অপর দুজনকে আহত অবস্থায় রাতে খাগড়াছড়ি সদর থেকে হাসপাতালে আনা হয়।

খাগড়াছড়ি–রাঙামাটিতে সংঘর্ষ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির বর্ণনা দিল আইএসপিআর

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

পার্বত্য দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘর্ষ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পূর্বাপর তুলে ধরে একটি বিবরণ দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। আজ শুক্রবার বিকেলে আইএসপিআর এই বিবরণ দিয়েছে। এতে চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করে সেখানে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

ঘটনার বিবরণে আইএসপিআর বলেছে, গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল জনগণের পিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামের এক যুবক নিহত হন। পরে সদর থানা–পুলিশ নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দীঘিনালা কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফের (মূল) কিছু সন্ত্রাসী মিছিলের ওপর হামলা করে ও ২০-৩০টি গুলি ছোড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে।

এই সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের ৬ জন আহত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার ব্রিগেড ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় আগুন নেভায়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশপাশ এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সেঙ্গ কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাকর করে তোলে। দ্রুততার সঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়িসহ সব উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারদের (স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নেতাদের) সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে সব পক্ষকে সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

একই রাতে (১৯ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল রাত সাড়ে ১০টায় একজন মুমূর্ষু রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে অবস্থানরত উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে। একসময় ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের ওপর গুলি করে এবং আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। ওই গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয় বলে জানা যায়।

একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনসাধারণ কয়েকজন যুবকের মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের ওপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। সেই সঙ্গে উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে ফায়ার ব্রিগেডের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে।

আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে পিসিজেএসএস (পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা সদরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে স্থানীয় জনসাধারণ রাঙামাটি জিমনেসিয়াম এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় ৮০০-১০০০ জন উত্তেজিত জনসাধারণ একটি মিছিল বের করে বনরূপা এলাকার দিকে অগ্রসর হয় এবং বনরূপা বাজার মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজি-অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কিছু লোকজন আহত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

রাঙামাটিতে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু, আহত ৫৫

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষের প্রভাব পড়েছে রাঙামাটি জেলায়ও। আজ শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাঙামাটি সদরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, দোকানপাট ও বাড়িঘরে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় একজন পাহাড়ি যুবক নিহত ও আহত হয়েছেন দুই পক্ষের ৫৫ জন।

খাগড়াছড়িতে বাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ এবং গুলিতে তিন পাহাড়ির মৃত্যুর প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে রাঙামাটির সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। জেলা সদরের বনরূপা, উত্তর কালিন্দীপুর, কালিন্দীপুর এবং বিজন সরণি এলাকার দেড় কিলোমিটারজুড়ে সংঘর্ষ চলে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাঙামাটিতে শুক্রবার বেলা একটা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

লারমা স্কয়ারজুড়ে পোড়াচিহ্ন

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

গাছের কচি পাতাগুলো ঝলসে বিবর্ণ হয়ে গেছে। কাছাকাছি যেতেই গাছপালার নিচের দৃশ্য চোখে পড়ল। সেখানে পোড়া ছাই আর লোহালক্কড়ের কিছু ‘কঙ্কাল’। সব পুড়ে ছারখার। একপাশে দাঁড়িয়ে শূন্য ভিটার দিকে তাকিয়ে ছিলেন সমর বিকাশ চাকমা।

এটি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদরের লারমা স্কয়ার বাজারের চিত্র। ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে সহিংসতার আগুনে পুড়েছে বাজারটি। পাহাড়িদের দোকান বেশি পুড়েছে, বাদ যায়নি বাঙালিদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও।

৭২ ঘণ্টা অবরোধের পর গতকাল মঙ্গলবার থেকে খাগড়াছড়িতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। দীঘিনালাসহ বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে এর মধ্যে গতকাল দীঘিনালার বোয়ালখালী মাছবাজার এলাকায় সাজেক থেকে ফেরার পথে তিন পর্যটককে অপহরণচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর সাজেকে আগামী তিন দিন পর্যটকদের যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৮ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মো. মামুন নামের এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। পরদিন দীঘিনালায় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সহিংসতা হয়। ওই দিন দীঘিনালায় পিটুনিতে ধনঞ্জয় চাকমা নামে এক ব্যক্তি মারা যান। রাতে সদরে গোলাগুলি হয়। এ সময় দুজন পাহাড়ি যুবক মারা যান।

২০ সেপ্টেম্বর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক প্রেসনোটে বলা হয়, ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল একজন মুমূর্ষু রোগীকে স্থানান্তরের সময় শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা গুলি চালান। আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালান। গোলাগুলিতে তিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হন।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানিরা তাঁদের পোড়া ভিটায় ফিরছেন। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসনের হিসাবে ৮৬টি দোকান পুড়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি পাহাড়িদের; বাকিগুলো বাঙালিদের। এর বাইরে ২৬টি দোকান ভাঙচুর করা হয়।

পিটুনিতে ১২ সেকেন্ডেই নেভে অনিকের প্রাণ

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয় থেকে ২০০ গজের মধ্যেই দক্ষিণ কালিন্দীপুর সড়কের প্রবেশমুখ। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের সঙ্গে লাগোয়া একটি চায়ের দোকানে বসে ছিল অনিক চাকমা। ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১২টা পেরোলো কেবল। হঠাৎ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দেখে দোকান থেকে বের হয়ে আসে সে। রাস্তায় আসতেই কয়েক যুবক তাকে ঘিরে ধরে। অনিকের কলার ধরে তারা মারতে থাকে কিল-ঘুসি। ৫-৬ সেকেন্ডের মধ্যেই লাঠি হাতে সেখানে চলে আসে আরও ১৫ থেকে ২০ জন। তারা এসেই লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে অনিককে। মাত্র ১২ সেকেন্ডের গণপিটুনিতে তারা থামিয়ে দেয় ১৭ বছর বয়সী অনিকের জীবন। সমকালের হাতে আসা ৩ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে এমন নৃশংসতার চিত্র। ২০ সেপ্টেম্বরের ওই ভিডিওটিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে খুনিদের মুখ। এদের মধ্যে একজন ইসরাত হাসান শুভ। আরেকজনের নাম জাহাঙ্গীর বলে নিশ্চিত হয়েছেন স্থানীয়রা। তবে ঘটনার ছয় দিন পরও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। শুধু রাঙামাটির অনিক নয়; এমন নৃশংসতার শিকার হয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতেও মারা গেছেন তিনজন। তারা হলেন জুনান চাকমা, রুবেল ত্রিপুরা ও ধনঞ্জয় চাকমা।

সাভারে ঘোষণা দিয়ে মাজার ও পীরের বাড়িতে হামলার অভিযোগ

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন

ঢাকার সাভারে সুফি সাধক কাজী জাবেরের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে উপজেলার বনগাঁও ইউনিয়নের চাকুলিয়া এলাকায় মাওলানা কাজী আফসার উদ্দিন বাবার বাড়ি ও মাজার শরিফে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. শাহীনুর কবির বলেন, পুলিশের ফোর্স ইতোমধ্যে সেখানে গিয়েছে। আমি নিজেও সেখানে যাচ্ছি। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও যাচ্ছেন, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

‘কাজী জাবের আহমেদ’ নামে একটি ফেসবুক আইডি এ ঘটনার একাধিক ফেসবুক লাইভ করা হয়েছে। ভিডিওতে হামলার বিবরণ দিয়ে অভিযোগ করা হয়, হামলাকারী বাড়িঘর লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছেন। এতে বর্ণনাকারী নিজেও মাথা ও পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।

ফেসবুকে ‘সুফি আত্মপ্রকাশ’ নামের একটি পেইজ থেকেও মাজারের লোকজনকে লাইভে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সহায়তা চাইতে শোনা গেছে। এছাড়া বাড়িটির চারপাশ থেকে বিভিন্নভাবে আক্রমণের জন্য ইট-পাটকেল ছোড়াসহ আগুন দেওয়ারও চিত্র দেখা গেছে।

তাহেরীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা হেফাজতের

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দেশ রূপান্তর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ইসলামী বক্তা গিয়াস উদ্দিন তাহেরী ও নাঈম নামের একজন পীরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণাসহ ছয়টি দাবি উত্থাপন করেছে হেফাজতে ইসলাম।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভারতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় হেফাজত ইসলামের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল এ দাবি উত্থাপন করা হয়।

জানা যায়, কর্মসূচি উপলক্ষে সকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল এসে সড়ক বাজারের পৌর মুক্ত মঞ্চে জড়ো হয়। সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কটূক্তিকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার পর উত্তেজনা, ১৪৪ ধারা

০১ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর পাহাড়ি ও বাঙালিরা খাগড়াছড়ি সদরে আবার মুখোমুখি অবস্থান নেন। দুই পক্ষই পৃথক মিছিল বের করে। সদরের মহাজনপাড়ার কয়েকটি দোকানেও ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি–বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত হয়।

সাজেক ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করল রাঙামাটি জেলা প্রশাসন

০৩ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার পর্যটন এলাকা সাজেক ভ্রমণে পর্যটকদের অনির্দিষ্টকালের জন্য নিরুৎসাহিত করেছে জেলা প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে তিন দফা পর্যটকদের সাজেক ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছিল প্রশাসন।

নোটিশে বলা হয়, রাঙামাটি পাবর্ত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপেজলার সাজেক ও তার পাশ্বর্বর্তী এলাকার আইনশৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি এবং এসব এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে আগামীকাল শুক্রবার (৪ অক্টোবর) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হলো।

পাহাড়ে এবার কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান হচ্ছে না

০৬ অক্টোবর ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাজনিত কারণে তিন পার্বত্য জেলায় কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভিক্ষু সংঘসহ ১৫টি সংগঠন। এতে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন রাঙামাটি রাজবন বিহারও।

রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে রাঙামাটি বনরূপা মৈত্রী বিহারে সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের। তিনি বলেন, সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বিহারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটসহ শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় চার জন নিহত হন। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর এভাবে বিনা বাধায় সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পবিত্র বিহারে আক্রমণ ও বৌদ্ধমূর্তি ভেঙে ফেলার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এ ধরনের ঘটনা বারবার সংঘটিত হলেও প্রশাসনের আচরণ রহস্যজনক ও পক্ষপাতদুষ্ট। এই পর্যন্ত যতগুলো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে কোনোটির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি। পাহাড়ে চলমান সহিংসতা এবং এটি থামানোর লক্ষ্যে প্রশাসনের তরফ থেকে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ না দেখা এবং আইনশৃঙ্খলার চরম অব্যবস্থাপনা ও অবনতি দেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষু সংঘ বর্তমানে খুবই উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত হওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতা এবং প্রশাসনের ওপর আস্থাহীনতা বোধ করছি।

ভদন্ত মহাথের বলেন, এরকম চরম অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষু সংঘ আসন্ন পবিত্র ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে কোনও উৎসাহ বোধ না করায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শ্রদ্ধাবান দায়িক-দায়িকা ও পূজনীয় ভিক্ষু সংঘের মধ্যে আলোচনাক্রমে চলতি বছরের কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান না করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।

৮-৩১ অক্টোবর তিন পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা

০৬ অক্টোবর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

আগামী ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি এই তিন পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছে প্রশাসন।

আজ রোববার বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে এ সময় পর্যটকদের তিন পার্বত্য জেলায় না আসার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পাঠানো এক খুদেবার্তায় বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত পর্যটকদের আগামী ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

এদিকে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে অপ্রীতিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অনেক ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে হামলা ও ভাঙচুর হয়।

বন্ধ করে দেওয়া হলো ঐতিহ্যবাহী কুণ্ডুবাড়ী মেলা

২৬ অক্টোবর ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন

মাদারীপুরের কালকিনিতে বন্ধ করে দেওয়া হলো শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কুণ্ডুবাড়ী মেলা। প্রায় আড়াই শ বছরের পুরোনো এ মেলা প্রতি বছর কালিপূজায় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত হলেও এ বছর তা আর হচ্ছে না।

উপজেলা প্রশাসনের দাবি, স্থানীয় জনগণ ও আলেম সমাজ এ মেলা আয়োজনে আপত্তি জানায়। এ কারণে প্রশাসন মেলা আয়োজনে অনুমতি দেয়নি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটার কুণ্ডুবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী কালিপূজাকে কেন্দ্র করে মূলত সপ্তাহব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। এ মেলা এবারও অনুষ্ঠানের জন্য কালকিনি পৌরসভা থেকে আকবর হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় আলেম সমাজ ও ছাত্র প্রতিনিধিরা মেলায় আইন‑শৃঙ্খলার অবনতিসহ বিভিন্ন সমস্যা উল্লেখ করে মেলা বন্ধ করার জন্য লিখিত অভিযোগ দেয়। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কালকিনি পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন এবার মেলা আয়োজন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।’

দখল, দুর্নীতি ও অনিয়ম

জনতা ব্যাংকে এস আলমের ১০ হাজার কোটি টাকার বেআইনি ঋণ

১১ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

আইন লঙ্ঘন করে ব্যাংক খাতের বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপকে দশ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির মোট মূলধনের যা ৪২০ শতাংশ। আইন অনুযায়ী যেখানে একক গ্রুপকে মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫৭৮ কোটি টাকা দেওয়া যাবে। পণ্য আমদানির বিপরীতে এ ঋণ সৃষ্টি হলেও তা শোধ করেনি এস আলম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে বছরের পর বছর মেয়াদ বাড়িয়ে কৌশলে নিয়মিত দেখানো হচ্ছে। নতুন করে ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন সদ্য পদত্যাগ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে এখন আর ওপরের চাপ না থাকায় বেআইনি এ সুবিধা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে পুরোটাই খেলাপিতে পরিণত হবে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬(খ)(১) অনুযায়ী, একক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে একটি ব্যাংক তার মূলধনের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ফান্ডেড এবং ১০ শতাংশ নন-ফান্ডেড ঋণ দিতে পারে। আর গ্রুপ বলতে কোনো ঋণগ্রহীতা বা তাঁর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানিকে বোঝানো হয়। গত জুন পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। এর মানে একক কোনো গ্রুপকে ফান্ডেড ৩৪৭ কোটি ১০ লাখ এবং নন-ফান্ডেড ২৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেওয়া যাবে। দুইয়ে মিলে সর্বোচ্চ ৫৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিতে পারবে ব্যাংক। তবে এস আলম গ্রুপকে দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মোট পরিশোধিত মূলধনের যা ৪১৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

কারসাজি ও জালিয়াতির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় লাখো কোটি টাকা

আগস্ট ১২, ২০২৪, বণিক বার্তা

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর দেড় বছরে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে। অস্বাভাবিক এ উল্লম্ফনের পর হঠাৎ ধস নামে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে। লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীদের আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সংস্কার ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ বছর সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্সের অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। তার উত্তরসূরি হিসেবে ২০২০ সালে দায়িত্বে আসেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। যদিও আলোচিত এ দুই চেয়ারম্যানের বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও স্বজনপ্রীতির কারণে দেশের পুঁজিবাজার আরো খাদের কিনারে চলে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের পুঁজিবাজার থেকে জাল-জালিয়াতি, কারসাজি, প্লেসমেন্ট শেয়ার ও প্রতারণার মাধ্যমে গত ১৫ বছরে ১ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অনেক কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করেও নিজেদের ব্যবসায়িক ও আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে পারেনি। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে আইপিওর অর্থ ভিন্ন খাতে ব্যয়ের ঘটনাও দেখা গেছে। এছাড়া আইপিওতে আসার পর কৃত্রিমভাবে কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে এর মাধ্যমেও পুঁজিবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায়ও বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টাকা ছাড়াই উপহার হিসেবে প্লেসমেন্ট শেয়ার দেয়া হয়েছে। এসব শেয়ার কোম্পানির তালিকাভুক্তির পর বাড়তি দামে বিক্রি করেছেন তারা। আইপিও-সংক্রান্ত এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির একীভূতকরণ, সুকুক ও বন্ড ইস্যু এবং প্লেসমেন্ট শেয়ারের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গত ১৫ বছরে সুবিধাভোগী অনেক শেয়ার ব্যবসায়ী ও কোম্পানির উদ্যোক্তা পুঁজিবাজার কারসাজির মাধ্যমে বাজার থেকে বড় অংকের অর্থ হাতিয়েছেন। টাকার অংকে এর পরিমাণ ৫৫ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

২০১১ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্লেসমেন্ট বাণিজ্য, আইপিওর প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, অমনিবাস হিসাবের আড়ালে সন্দেহজনক লেনদেন, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, ব্রোকার ও মার্কেট প্লেয়ারদের ভূমিকার বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ২০০৯ ও ২০১০ সালে যেসব কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে উল্লম্ফন হয়েছিল সেগুলোর একটি তালিকা দেয়া হয়। তাতে দেখা যায়, ২০০৯ সালে বিচ হ্যাচারির শেয়ারদর ৮২৯ শতাংশ, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর ৫৬৭, আফতার অটোমোবাইলসের শেয়ারদর ৪৭৮, পদ্মা সিমেন্টের শেয়ারদর ৪৬৬, রহিম টেক্সটাইলের শেয়ারদর ৩৪২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। একইভাবে এর পরের বছর ২০১০ সালে সিটি ভেজিটেবলসের দর ৪ হাজার ১৫৮ শতাংশ, সাফকো স্পিনিংয়ের ৭৯২, তাল্লু স্পিনিংয়ের ৪৪৪, রহিমা ফুডের ৩২০ ও বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ারদর বেড়েছিল ২৯৯ শতাংশ পর্যন্ত।

ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত প্রতিবেদনে ১৯৯৬ সালের পুঁজিবাজার ধসের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনটি আমলে না নেয়ার বিষয় উল্লেখ করে সরকারের প্রতি বেশকিছু সতর্কতা ও সুপারিশ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে বলা হয়, ‘১৯৯৬ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে সন্দেহের তালিকায় ছিলেন ইমতিয়াজ হোসেন, খোরশেদ আলম, সালমান এফ রহমান, এনায়েতুর রহিম, রকিবুর রহমান, শাকিল রিজভি প্রমুখ। বর্তমান তদন্তে তাদের মধ্যে সালমান এফ রহমান ও রকিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক মতামত এসেছে এবং কিছু তথ্যও পরিবেশিত হয়েছে। এসইসিকে প্রভাবিত করতে দুজনেই সক্রিয় ছিলেন বলে অনেকের ধারণা। এসইসির চেয়ারম্যানের নিয়োগ ও সদস্য মনসুর আলমের পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রে সালমান এফ রহমান ও রকিবুর রহমানের জোরালো তদবির ও সমর্থন ছিল বলে অনেকের বিশ্বাস। বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের অস্বচ্ছ কেসটির তদবিরে সালমান এফ রহমান নিজেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ধরনা দিয়েছেন। জিএমজি, ইউনিক হোটেল প্রভৃতি কেসে সালমান এফ রহমান সম্পৃক্ত রয়েছেন। কেসগুলো অস্বচ্ছ। এসইসি পরিচালনায় দুজনেরই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব ছিল। এ কারণে সাধারণের মধ্যে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।’

তদন্ত প্রতিবেদনের এ সতর্কতা ও সুপারিশ পরবর্তী সময়ে সরকার কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেভাবে ভ্রুক্ষেপ করেনি। কেননা ২০১১-পরবর্তী সময়েও দেশের পুঁজিবাজারে এ দুজনের প্রভাব অব্যাহত ছিল।

ধস-পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালের ১৫ মে পুঁজিবাজার সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেনকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন, করপোরেট খাতের শীর্ষ নির্বাহী আরিফ খান ও সাবেক জেলা জজ মো. আবদুস সালাম সিকদার।

বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেছেন ড. খায়রুল। এমনকি আইন ভঙ্গ করে তাকে তৃতীয় মেয়াদেও নিয়োগ দেয় সরকার। দেশের পুঁজিবাজারের সংস্কারে গুরুদায়িত্ব ছিল তার ওপর। তার মেয়াদে পুঁজিবাজারে অনেক আইন-কানুন, বিধি-বিধান প্রণয়ন হলেও অনেক ক্ষেত্রেই এর প্রয়োগে ছিল বেশ ঘাটতি। বিশেষ করে খায়রুল কমিশনের মেয়াদে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে দুর্বল ও মানহীন কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার অভিযোগ রয়েছে। এ সময় প্রভাবশালী উদ্যোক্তা, ইস্যু ব্যবস্থাপক, নিরীক্ষক এবং এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর সমন্বয়ে একটি বড় কারসাজি চক্র গড়ে ওঠে। অনেক ক্ষেত্রেই আইনের ফাঁক-ফোকর কিংবা ছাড় দিয়ে সহযোগীর ভূমিকায় ছিলেন খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা।

গত দেড় দশকে ১৪৯টি কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি মূলধন সংগ্রহ করেছে, যার অধিকাংশই এসেছে খায়রুল কমিশনের মেয়াদে। এর মধ্যে অনেক কোম্পানিই বর্তমানে আর্থিকভাবে দুর্বল ও ভগ্ন অবস্থায় রয়েছে। উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বেশকিছু কোম্পানির। এমনকি আইপিওর ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের বিরূপ প্রতিবেদনও আমলে নেয়া হতো না। কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের তালিকাভুক্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও ভ্রুক্ষেপ করেনি খায়রুল কমিশন। এমনকি প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অ্যাপোলো ইস্পাতকে তালিকাভুক্ত না করার পরামর্শ দিলেও কর্ণপাত করেননি বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন। প্লেসমেন্ট কেলেঙ্কারির ঘটনায় আলোচিত কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইলের আইপিও অনুমোদন দিয়েছিল খায়রুল কমিশন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে প্রথম মূলধন হচ্ছে আস্থা। যদি এখানে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও ফেয়ার প্লে থাকে তাহলেই আস্থা থাকবে। বিনিয়োগ করার পরদিনই যদি লোকসান গুনতে হয় তাহলে মানুষ কেন আসবে? পুঁজিবাজারকে নিজের মতো চলতে দিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ না হলেও তারা অনেক ক্ষেত্রেই স্টক এক্সচেঞ্জের ওপর অভিভাবকত্ব দেখাতে চায়। এখানে বাজে কোম্পানির শেয়ারদর ইচ্ছামতো কমানো-বাড়ানো হয় এবং এর কোনো বিহিত নেই। ডিএসইরও অনেক ক্ষেত্রে করার কিছু থাকে না, কারণ নিয়ন্ত্রণটা বিএসইসির কাছেই থাকে। কারসাজি করার এক বছর পর যদি সামান্য টাকা জরিমানা করা হয় তাহলে তো হলো না। আইন ভেঙে জোর-জবরদস্তি করে সুকুকের মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকা নেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার গতিশীল না হওয়ার ব্যর্থতার দায় ডিএসইর পর্ষদ ও বিএসইসিকেই নিতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জে শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা নিয়ে আসতে হবে।’

খায়রুল কমিশনের সময়ে দেশের পুঁজিবাজারের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মিউচুয়াল ফান্ড খাতটিকে সুবিধাভোগীদের কব্জায় দিয়ে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড খাতের শীর্ষ দুই প্রতিষ্ঠান রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল ও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ইউনিট হোল্ডারদের অর্থ তছরুপের অভিযোগ থাকলেও বিএসইসির পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রেইসের কর্ণধার চৌধুরী নাফিজ সরাফত ও হাসান তাহের ইমাম এবং এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী রিয়াজ ইসলামকে বিভিন্ন সময় আনুকূল্য দেখিয়েছে বিএসইসি। বিশেষ করে সব মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ আরো ১০ বছরের জন্য বাড়ায় খায়রুল কমিশন। যদিও মেয়াদ শেষে আদালতের রায়ে এইমস অ্যাসেটে ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ড এর আগে অবসায়নে গিয়েছিল। মূলত রেইসকে সুবিধা দেয়ার জন্যই এ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। এ পরিবর্তনের ফলে এ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগের বিষয়টি ড. এম খায়রুল হোসেনকে আরো বিতর্কিত করে তুলেছিল। এ সময়ে তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে বিনিয়োগকারীরা মাঝেমধ্যেই মিছিল করতেন। এর আগে কখনো বিএসইসির কোনো চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। দেশের শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় সমালোচিত ফ্লোর প্রাইস পদ্ধতিও খায়রুল কমিশনের সময়ে চালু করা হয়েছিল। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুঁজিবাজারের সুনাম ধূলিসাৎ হয়ে যায়। তাছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আলোচিত সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্লেসমেন্ট ব্যবসা উত্থান হয়েছে খায়রুল কমিশনের সময়। আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর আর্থিক দুর্বলতা ও কর ফাঁকির বিষয়টিকে পুঁজি করে তখন প্লেসমেন্ট শেয়ার হাতিয়ে নেন মতিউর। তাছাড়া প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের সুবিধাভোগী ছিলেন পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, দুদক ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাসহ আরো অনেকেই।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত ১৫ বছর পুঁজিবাজার বেশ খারাপ ছিল। সুশাসন ছিল না, ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি, শেয়ারদরে কারসাজি হয়েছে, ফ্লোর প্রাইস দেয়ার মাধ্যমে ভালো কোম্পানির লেনদেন একপ্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন পর্যন্ত বাজে শেয়ারের মাধ্যমে কারসাজি চলছে। প্রচুর আইন থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ হয়নি। এ কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের আস্থা চলে গেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনেক ধরনের অনিয়ম করেছে, অনেককে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে, কারসাজির বিরুদ্ধে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই খারাপ অবস্থায় আছে। তার ওপর গত এক-দেড় মাসের ঘটনা আরো বড় ধাক্কা খেয়েছে। এটির প্রভাব কতদিনে কাটিয়ে উঠতে পারবে সেটি একটি প্রশ্ন। অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার রাতারাতি ভালো হয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগবে। গত তিনদিনে পুঁজিবাজারে যে ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গেছে সেটি কতটুকু যৌক্তিক কারণে আর কতটুকু আবেগের কারণে বেড়েছে সেটি সময়ই বলে দেবে।’

খায়রুল কমিশনের প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে কমিশনার আরিফ খান পদত্যাগ করেছিলেন। যদিও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন খায়রুল কমিশনের দুর্নাম থেকে নিজেকে বাঁচাতেই তিনি পদত্যাগ করেন। অবশ্য খায়রুল কমিশনের দুর্বল ও বিতর্কিত আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে তিনি দায় এড়াতে পারেন না বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। কেননা বিএসইসির আইপিও অনুমোদন যে বিভাগের আওতাধীন, সেই ক্যাপিটাল ইস্যু বিভাগের কমিশনার ছিলেন আরিফ খান। খায়রুলের ওই মেয়াদে আরো দুই কমিশনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা ও খন্দকার কামালুজ্জামান।

বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে বিদায় নেয়ার পর ড. এম খায়রুল হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। পরবর্তী সময়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার তাকে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

খায়রুল কমিশনের বিদায় নেয়ার আগ মুহূর্তে কভিডের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার। শেয়ারের দরপতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস আরোপের পাশাপাশি ৬৬ দিন বন্ধ রাখা হয় লেনদেন। এ অবস্থায় ২০২০ সালের ১৭ মে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ও সাবেক সচিব মো. আব্দুল হালিম। পরবর্তী সময়ে শিবলী কমিশনের সদস্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক রুমানা ইসলাম যোগ দেন।

শিবলী কমিশনের শুরুতেই পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু করাসহ বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়, যা বাজারসংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। বিশেষ করে কিছু বড় কারসাজিকারীকে বড় অংকের জরিমানা করা হয়। এতে অনেকেই খায়রুল কমিশনের দুঃসহ অভিজ্ঞতা কাটিয়ে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরই আশাহত হন বিনিয়োগকারীরা।

কভিড-পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করার জন্য সূচকের উত্থানে বেশকিছু বাজার কারসাজিকারীকে শিবলী কমিশনের পক্ষ থেকে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে আনুকূল্য দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারের আলোচিত বিনিয়োগকারী সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক মো. আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীরা কারসাজির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। অধ্যাপক শিবলীর সঙ্গে কমিশনে তার কার্যালয়ের দেখা করার পরই হিরু পুঁজিবাজারে কারসাজি শুরু করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এক্ষেত্রে হিরুকে অধ্যাপক শিবলীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের আরেক অধ্যাপক। সরকারি কর্মকর্তা হিরুর কাছে অনেক প্রভাবশালীর পোর্টফোলিও ম্যানেজের দায়িত্ব ছিল।

বেশকিছু কারসাজির ঘটনায় হিরু ও তার সহযোগীদের জরিমানা করা হলেও তারা বাজার থেকে এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থ তুলে নিয়েছেন। আবার অন্যান্য ক্ষেত্রে একক ব্যক্তির বিরুদ্ধে জরিমানা আদেশ দেয়া হলেও হিরুর ক্ষেত্রে এককভাবে জরিমানার আদেশ দেয়া হয়নি। বরং সম্মিলিতভাবে জরিমানা করা হয়। সরকারি চাকরিজীবী হিরুর যাতে চাকরির ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্যই এভাবে জরিমানা করা হয় বলে অভিযোগ। এমনকি তার সঙ্গে বিএসইসির শীর্ষ কর্তাদের দহরম-মহরম সম্পর্ককেও ভালো চোখে দেখেননি বাজারসংশ্লিষ্টরা।

হিরু নিজের পাশাপাশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকেও তার কারসাজির অংশীদার করেন। হিরু ও সাকিবের প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংসকে ব্রোকারেজ লাইসেন্স দেয় বিএসইসি। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আরেক বিতর্কিত বিনিয়োগকারী জাবেদ এ মতিন। তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। এমনকি মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংক হিসাব থেকে শিবলী রুবাইয়াতের কাছে অর্থ এসেছে বলে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ অর্থ লেনদেনের সঙ্গে জাভেদ মতিনের নাম পাওয়া গেছে এবং তিনি শিবলী রুবাইয়াতের বন্ধু বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

মতিন-হিরু ছাড়াও পুঁজিবাজারের এক শ্রেণীর বড় বিনিয়োগকারী শিবলী কমিশনের প্রশ্রয়ের কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বড় অংকের অর্থ হাতিয়েছেন। শিবলী দায়িত্ব নেয়ার পরের বছর ২০২১ সালে যে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তার মধ্যে ছিল সোনালী পেপার ৩২১ শতাংশ, ফরচুন সুজ ৩১৭, এমারাল্ড অয়েল ২৮৪, সালভো কেমিক্যাল ২৫৩ ও জেনেক্স ইনফোসিস ২৩১ শতাংশ। ২০২২ সালে সবচেয়ে দর বাড়া শেয়ারের তালিকায় ছিল ওরিয়ন ইনফিউশনস ৫০৭ শতাংশ, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ ৪০০, সি পার্ল বিচ রিসোর্টস অ্যান্ড স্পা ৩১৭, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ ১৮৩ ও জুট স্পিনার্স ১৭৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে যেসব শেয়ারের দর সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল তার মধ্যে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ইন্ডাস্ট্রিজ ৬৮৬ শতাংশ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ৩৩৮, খুলনা পিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ২২৩, আরএন স্পিনিং মিলস ১৬১ ও ফাইন ফুডস ১৩৪ শতাংশ।

সর্বশেষ এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ১৪৬ শতাংশ, তাওফিকা ফুডসের ১২৮, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের ১১৮ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে। এগুলোর অধিকাংশই দুর্বল ও রুগ্‌ণ কোম্পানি। অথচ কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রেই বিএসইসির পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ক্ষেত্রবিশেষে তদন্ত করা হলেও কারসাজিতে যুক্ত কাউকে কাউকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জাপানি বিনিয়োগের কথা বলে এমারাল্ড অয়েলের শেয়ারদর বাড়ানোর কারিগর ছিলেন মিয়া মামুন। যদিও এখন পর্যন্ত কোম্পানিটিতে কোনো জাপানি বিনিয়োগ আসেনি। অথচ বিভিন্ন সময়ে এ কোম্পানিটিকে কারসাজি করতে পরোক্ষভাবে বিএসইসির পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়েছে। এছাড়া শিবলী কমিশনের সঙ্গে সখ্যের সুযোগে কিছু উদ্যোক্তা তাদের লোকসানি কোম্পানিকে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে মূল বাজারে নিয়ে আসার মাধ্যমে বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

শিবলী কমিশনের সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ারদর কারসাজির ঘটনার ব্যাপকতা অনেক বেড়ে যায়। অনেক সময় পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন সামনের দিনে বাড়বে কিংবা কোনো খাতের শেয়ারে বিদেশী বিনিয়োগ আসছে এমন ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে শিবলী রুবাইয়াত নিজেই শেয়ারদর ও পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করতে ভূমিকা রেখেছেন। তার সময়ে গ্যাম্বলিং শেয়ার এতটাই আকর্ষণীয় ছিল যে বিনিয়োগকারীদেরও মৌল ভিত্তির ও বড় মূলধনি কোম্পানির পরিবর্তে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দিকে ঝুঁকতে দেখা গেছে। তাছাড়া শেয়ার কারসাজির ঘটনা তদন্তে কোনো কমিটি হলেও অনেক সময় এ তথ্য গণমাধ্যমের কাছে গোপন রাখা কিংবা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হতো না। যদিও বিএসইসির দীর্ঘদিনের রেওয়াজ অনুসারে এসব তথ্য বরাবরই গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হতো। এমনকি অনেক সময় স্পর্শকাতর তথ্য থাকলেও কমিশন সভার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হতো না। তাছাড়া বিএসইসিতে সাংবাদিকদের প্রবেশে সরাসরি প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করলেও তিনি কিছু ফ্লোরের ক্ষেত্রে তা করেছিলেন।

তাছাড়া শিবলী কমিশনের সময়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইউএফএস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও অ্যালায়েন্স ক্যাপিটালের বিরুদ্ধেও ইউনিট হোল্ডারদের অর্থ তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত এসব অর্থ ফেরত আনতে পারেনি বিএসইসি। রিংশাইন টেক্সটাইলের প্লেসমেন্ট জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটিত হলেও এ বিষয়ে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এছাড়া রুগ্‌ণ ও দুর্বল কোম্পানিগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে সেখানে শিবলী রুবাইয়াতের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী শিক্ষকসহ অন্যদের নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পর্ষদ পুনর্গঠনের পরও এসব কোম্পানির বেশির ভাগেরই আর্থিক ও ব্যবসায়িক অবস্থার উন্নতি হয়নি।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আর অফিসে যাননি। আত্মগোপনে থেকেই গত শনিবার বিএসইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে ই-মেইল পাঠিয়ে পদত্যাগ করেছেন তিনি। ফলে এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সূচক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্জিন ঋণের অনুপাত বাড়ানোর মতো বিধান করা হয়েছে। এতে করে পরোক্ষভাবে পুঁজিবাজারে উল্লম্ফনকে উসকে দেয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সূচককে ধরে রাখার প্রবণতাও দেখা গেছে। এক্ষেত্রে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকাকালীন কোনো শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়লেও সেটি ভ্রুক্ষেপ করা হতো না। শেয়ারদর কমতে শুরু করলে তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্রিয়তা শুরু হতো। এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে যারা কারসাজির সঙ্গে যুক্ত তাদেরই প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। তাছাড়া কারসাজির মাধ্যমে যে পরিমাণ মুনাফা করেছে, জরিমানা হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম। এতেও কারসাজি উৎসাহিত হয়েছে।’

আইপিও নিয়ে অনেক ব্যত্যয় হয়েছে জানিয়ে ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেন, ‘আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে সেটি দিয়ে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছিল, যা মোটেও উচিত হয়নি। পরবর্তী সময়ে আইন পরিবর্তন করে আইপিও তহবিলের এক-তৃতীয়াংশ ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়, এটিও উচিত নয়। কারণ পুঁজিবাজার থেকে নেয়া অর্থ শুধু ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ব্যয় করা উচিত। বুকবিল্ডিং পদ্ধতিকে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে এটি আর কোম্পানির শেয়ারের প্রকৃত ভ্যালুয়েশন নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারছে না। দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতটিকেও গত ১৫ বছরে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ আরো ১০ বছর বাড়ানোর মাধ্যমে এ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বীতশ্রদ্ধ করে তোলা হয়েছে। তাছাড়া পুঁজিবাজারে এ সময়ে এত বেশি আইন-কানুন করা হয়েছে যে প্রকৃতপক্ষে কোনটি কার্যকর আছে সেটি খুঁজে বের করতে গলদঘর্ম হতে হয়।’

৭৮৫৩ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন

১২ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

প্রকৃত তথ্য আড়াল করে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৯ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা হলেও দেখানো হয়েছে মাত্র এক হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। এর মানে, গোপন করা হয়েছে ৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকার খেলাপির তথ্য।

এ ছাড়া ৯ হাজার ২৮১ কোটি টাকার নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখার কথা থাকলেও রেখেছে এক হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে আড়াল করা হয়েছে ৮ হাজার ১২৮ কোটি টাকার প্রভিশন। এভাবে প্রকৃত তথ্য আড়াল করে ব্যাংকটি ২০২৩ সালের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে, যার ৫ শতাংশ ছিল নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক।

ইসলামী ব্যাংকে দুই পক্ষের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলিতে আহত কয়েকজন

১১ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীর দিলকুশায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ের বাইরে গুলির ঘটনা ঘটেছে। সকালে এ ঘটনার সময় ২০১৭ সালের আগে ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা–কর্মচারী এবং এর পরে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। গুলিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গুরুতর একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২০১৭ সালের পর নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে সকালে পুরোনো কর্মীরা ঘোষণা দেন। ওই বছরের পরে নিয়োগ পাওয়া বেশির ভাগ কর্মীই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার, সে কারণে তাঁরা পটিয়ার কর্মকর্তা–কর্মচারী হিসেবে পরিচিত। পুরোনো কর্মীদের ঘোষণার পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটিয়ার কর্মীরা আশপাশে জড়ো হয়ে ব্যাংকের দিকে রওনা দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এরপর পুরোনো কর্মীরা পটিয়ার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলি ছোড়া হলে কয়েকজন আহত হন। এদের মধ্যে একজন গুরুতর আহত হলে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ইসলামী ব্যাংকের পুরোনো কর্মীরা গুলি ছোড়ার জন্য পটিয়ার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের দায়ী করেন।

যেভাবে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল এস আলম গ্রুপ

১২ আগস্ট ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

একসময় বাংলাদেশের সেরা ব্যাংক হিসেবে গণ্য হতো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)। খুবই সামান্য মন্দ ঋণ, ব্যাংকিং বিধিবিধান প্রতিপালন, পর্যাপ্ত তারল্য ও গ্রাহকের অগাধ আস্থা অর্জন—ছিল ব্যাংকিং কার্যক্রমের অসামান্য পারফর্ম্যান্সের ট্র্যাক রেকর্ড। এমনকি ২০১৫ সালে দেশের মোট প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের ২৭ শতাংশ এসেছিল এই ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকখাতের অভ্যন্তরীণরা বলেছেন, সেসময় দেশের পাঁচ ভাগের একভাগ বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন করতো আইবিবিএল। ব্যাংকিং সেবা দিয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ ও স্বনামধন্য কর্পোরেট গ্রুপগুলোকে।

আজকে ব্যাংকটির হালচিত্র আগের থেকে সম্পূর্ণই উল্টো। যে ব্যাংকের কাছে একসময় বিপুল তারল্য বা নগদ অর্থ ছিল– এখন সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যূনতম যে মূলধন সংরক্ষণের বিধান– তা পূরণেই হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি জরুরি তহবিলের জন্য হাত পাততে হচ্ছে সেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারেই। ব্যাংকখাতের এই জায়ান্ট এমন দুর্দশাজনক অবস্থায় নামলো কীভাবে? যেভাবে তা ঘটলো, তারই বর্ণনা থাকছে এই প্রতিবেদনে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ছক কষা হয়েছিল বহু বছর ধরে। এর বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৩ সালে এসে, যখন ব্যাংকটির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতায় অর্থায়নের প্রচারণা চালানো হয়। পর্যায়ক্রমে রূপ নিতে থাকে একটি বয়ান, যখন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান– ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের সম্পৃক্ততা (কথিত) খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।  

২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন শামসুল হক টুকু, অপপ্রচারের এই আগুনে ঘি ঢালার কাজটি তিনিই করেন। ২০১৩ সালে এক বৈঠকের পরে ক্যামেরার সামনে জনসম্মুখে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি দাবি করে বসেন, ইসলামী ব্যাংকের ৮ শতাংশ অর্থায়নই সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট। তার এই মন্তব্য সমূলে আন্দোলিত করে ব্যাংকখাতকে।  

এর প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান প্রধান প্রধান বিদেশি ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক জরুরি সভাও করেন। যেখানে তিনি প্রতিমন্ত্রীর কথায় কান না দিয়ে– সবাইকে আইবিবিএলের সাথে তাদের ব্যবসা চালু রাখার অনুরোধ করেন।

সেসময় ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) ছিলেন মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান।  এ ধরনের চাপের মুখে  তিনি টুকুর বাসভবনে যান তার সাথে দেখা করতে। প্রতিমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাও করেন, ‘স্যার আপনি এটা কীভাবে বলতে পারলেন? আপনার মন্তব্য সার্বিকভাবে আমাদের ব্যবসা, বিশেষত ইন্টারন্যাশল অপারেশনের (আন্তর্জাতিক কার্যক্রম) জন্য মারাত্মক।”

একথায় টুকুর নির্বিকার উত্তর ছিল: ‘মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।’

বিরোধী দলগুলো ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করার পরে– টানা দ্বিতীয়বার যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে– তখন নতুন মাত্রা পায় ইসলামী ব্যাংকের দখল নেওয়ার প্রচেষ্টা। তখন ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সামনে এগোনোর রাস্তা খুলে যায়।  

২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের অস্থিতিশীল অবস্থা ও অবনতির সাক্ষী আইবিবিএল’ এর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা স্মরণ করেন, ‘তখনও দৃশ্যপটে এস আলম গ্রুপ ছিল না। প্রথমে পরিকল্পনা করা হয়, রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ এবং পেশাদার তিন থেকে চার জন স্বাধীন পরিচালককে নিয়োগ দেওয়া হবে।’ তবে ২০১৫ সালে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান তিনি।

২০১৬ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে, আইবিবিএল এর স্বাধীন চার পরিচালক নিয়োগের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন– এম আজিজুল হক, আইবিবিএল’ এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক; অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান; হেলাল আহমেদ চৌধুরী, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী; এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল। এই পরিচালকদের একজন– ব্যাংকের অডিট বা নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো নিয়ে শত শত আপত্তি তুলতে থাকেন, এর মধ্যে দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যাংকটি দখলের ভিত্তি।

এরপর দ্রুতই সব পরিবর্তন ঘটানো হয়। ২০১৬ সাল নাগাদ কেবলমাত্র কাগজে-কলমে অস্তিত্ব আছে— এমন নতুন নিবন্ধিত কিছু কোম্পানির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কেনা শুরু করে এস আলম গ্রুপ। এর ফলে ব্যাংকের ভিতরে তাঁদের প্রভাব বিস্তারের নতুন অধ্যায় শুরু হয়।

এস আলম সংশ্লিষ্ট সাতটি কোম্পানি শেয়ার কিনে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা পায়। ফলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বা বোর্ডে তাদের নিয়ন্ত্রণ হয় সুসংহত।  অথচ ২০১৬ সালে সবেই এই সাতটি কোম্পানি জয়েন্ট স্টক কোম্পানির নিবন্ধন নিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে: এক্সেল ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড, আরমাডা স্পিনিং মিল লিমিটেড, এবিসি ভেঞ্চার্স লিমিটেড, গ্রান্ড বিজনেস লিমিটেড, প্ল্যাটিনাম এন্ডেভারস, প্যারাডাইজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, এবং ব্লু ইন্টারন্যাশনাল।

সে সময়ে ব্যাংকের সিনিয়র নির্বাহী থাকা আরেক কর্মকর্তা বলেন,  ‘জীবনে যেসব কোম্পানির নামই শুনিনি— তারা প্রত্যেকে শত কোটি টাকার বেশি শেয়ার কিনেছিল। অথচ এরা কারা? তারা কীসের ব্যবসা করে? কোথা থেকে এত টাকাকড়ি পেল? – তা জানতে কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা তদন্ত করার কথাও ভাবেনি!’   

বিদ্যুৎখাতের জায়ান্ট ইউনাইটেড গ্রুপ ৩ কোটি ২৫ লাখের বেশি শেয়ার কিনেছিল, যা ছিল ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের ২ শতাংশের বেশি। এভাবে তারা পরিচালক বোর্ডের সদস্য হয়। কিন্তু এস আলম গ্রুপ আরো আগ্রাসীভাবে আইবিবিএল এর শেয়ার কিনতে শুরু করলে, পুঁজিবাজারেও বেড়ে যায় ব্যাংকটির শেয়ারদর। এখানে সুযোগ দেখে, ইউনাইটেড গ্রুপ তাদের হাতে থাকা সমস্ত শেয়ার বিক্রি করে দেয়। এই বিক্রি থেকে মাত্র কয়েক মাসেই তারা অন্তত ২০ কোটি টাকা আয় করে। 

ইসলামী ব্যাংকে ৫ জানুয়ারির ক্যু

ব্যাংকটির সামনে আরো প্রতিকূল সময় আসছে এমনটা অনুধাবন করে ইসলামী ব্যাংকের স্পন্সরদেরও অনেকে তাদের শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন। পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে নেওয়ার পরে আইবিবিএল এর প্রায় পাঁচভাগের একভাগ শেয়ার চলে আসে এস আলমের হাতে। ফলে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য ক্রীড়ানক। এরপরে গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ ক্ষমতা ও রাজনীতিকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। এই দখলের নৈরাজ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল।

যেমন ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে ইকোনমিস্ট উল্লেখ করে: একটি গুপ্তচর সংস্থার এধরনের কাজ করাটা সত্যিই অদ্ভূত। ৫ জানুয়ারি (২০১৭) সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান, একজন ভাইস-চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোন করেন। এরপর তাদের বাসভবন থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসা হয় ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সংস্থাটির সদর দপ্তরে। সেখানকার অফিসাররা ভদ্রতার সাথে এই ব্যাংকারদের তাঁদের পদত্যাগপত্র দেন, এবং তাতে সই করতে বলেন। যেটা তারা করেনও। এর কয়েক ঘন্টা পরেই সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নাকের ডগায়— সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন একটি হোটেলে বসেই এক সভা করে ব্যাংকের বোর্ড; যেখানে পদত্যাগ করা পরিচালকদের স্থলাভিষিক্ত কারা হবেন তা নির্ধারণ করা হয়। 

একইদিনে আরমাডা স্পিনিং মিলের প্রতিনিধিত্বকারী ও সাবেক আমলা আরাস্তু খানকে ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, আর ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল হামিদ মিয়াকে করা হয় আইবিবিএল এর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একইদিনে আইবিবিএল এর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) আকস্মিক এই পরিবর্তন আনার কারণে তাদের প্রায় ৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময়ে ইসলামী ব্যাংকে আইডিবির ৭.৫ শতাংশ অংশীদারত্ব ছিল।

এস আলম গ্রুপের হাতে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীর ভূমিকা পালন করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একদল সিনিয়র কর্মকর্তা। এদেরই একজন এবং মূল সহযোগী ছিলেন তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারকে চারটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচারে সহযোগিতা করার অভিযোগও আছে। রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সম্পূর্ণ মালিকানা এস আলম গ্রুপের। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকেও আছে তাদের জোর প্রভাব।  

ইসলামী ব্যাংককে যেভাবে নিজস্ব ঋণের যন্ত্র বানাল এস আলম গ্রুপ

২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক ছিল এস আলম গ্রুপ। তাঁদের ঋণ ছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার। কিন্তু, নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইসলামী ব্যাংক থেকে এ শিল্পগোষ্ঠীর নেওয়া ঋণ আকাশচুম্বী হয়।

আইবিবিএল এর ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, এস আলম গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান– এস আলম স্টিল অ্যান্ড রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল এবং এস আলম সুপার এডিবল অয়েল ছিল ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণগ্রহীতার মধ্যে। তবে ২০২০ সাল নাগাদ এস আলমের আরও দুটি কোম্পানি যুক্ত হয় শীর্ষ ঋণগ্রহীতার তালিকায়। ২০২১ সালে যুক্ত হয় আরও চারটি।

২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত,  ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের ঋণের চিত্র হচ্ছে: ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এস আলম স্টিলস অ্যান্ড রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ ৪ হাজার ২১৭ কোটি টাকা, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল ৩ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা এবং এস আলম কোল্ড রোলড স্টিলসের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা পেত ইসলামী ব্যাংক। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ এই চারটি কোম্পানি মোট ১৪ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা তাদের সাত বছর আগে নেওয়া ঋণের চেয়ে সাড়ে তিনগুণ বেশি।

কেবল এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানই ইসলামী ব্যাংক থেকে বড় ঋণ নেয়নি; গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোও বিপুল অংকের ঋণ নিয়েছে। যেমন তার ছেলে আহসানুল ইসলামের মালিকানাধীন  ইনফিনিট সিআর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে ইসলামী ব্যাংক পাবে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। সাইফুল আলমের জামাই বেলাল আহমেদের ইউনিটেক্স এলপি গ্যাস নিয়েছে ১ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার ঋণ। সাইফুল আলমের ভাগ্নে মোস্তান বিল্লাহ ও তার স্ত্রী সাদিয়া জামিল প্রত্যেকে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন তাদের কোম্পানি আদিল কর্পোরেশন ও সাদিয়া ট্রেডার্সের নামে।

ইসলামী ব্যাংকের ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এস আলম গ্রুপ এবং এর চেয়ারম্যানের স্বজনদের নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। যদিও ব্যাংকখাতের অভ্যন্তরীণরা জানান, প্রকৃত অঙ্ক আরও অনেক বেশি হবে, কারণ অনেক ঋণই এমন সব কোম্পানির নামে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে– যাদের অস্তিত্ব আছে কেবল কাগজে-কলমে।

এসব ঋণের বেশিরভাগেরই অনুমোদন করা হয় মাহবুবুল আলমের মেয়াদে, যিনি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ইসলামী ব্যাংকে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন মাহবুবুল। এই ব্যাংকও নিয়ন্ত্রণ করে এস আলম গ্রুপ। 

যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিপুল সম্পদ, বিদেশি ব্যাংকে বড় অঙ্কের অর্থ জমা

১৩ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তাঁর স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরীর নামে যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বিপুল সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এ ছাড়া তাঁদের নামে থাকা বিদেশি ব্যাংকের হিসাবগুলোতে বড় অঙ্কের অর্থ জমা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নিয়ে এখন পর্যন্ত সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁদের পরিবারের কোনো সদস্য বিদেশে অর্থ নেননি। ফলে কীভাবে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, তাঁর স্ত্রী, পুত্র-কন্যা এবং তাঁদের নামে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে দেশের ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। এসব হিসাবে আগামী ৩০ দিন কোনো লেনদেন করা যাবে না। এমনকি তাঁদের নামে থাকা ক্রেডিট কার্ডেও কোনো লেনদেন হবে না। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গতকাল এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও বিএফআইইউয়ের প্রধানের পদত্যাগের পর সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংস্থাটি।

রুখমিলা জামান চৌধুরী এখন বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান। সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ২০১৮-২৩ সাল সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে বিদেশে তাঁর বিপুল সম্পদের খবর গত নির্বাচনের আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিদায়ী সরকারে তাঁকে মন্ত্রী করা হয়নি।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও রুখমিলা জামান চৌধুরী দুজনই দেশের বাইরে আছেন বলে জানা গেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়ে গড়া সম্পদের ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে গত মার্চে এক সংবাদ সম্মেলনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছিলেন, তাঁর বাবা ১৯৬৭ সাল থেকে লন্ডনে ব্যবসা করেছেন। তিনি নিজে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করে ১৯৯১ সাল থেকে সেখানে ব্যবসা করেছেন। এরপর তিনি যুক্তরাজ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন। বিদেশে তাঁর আলাদা আয়কর নথি আছে। আর বিদেশে তাঁর যে সম্পদ আছে, তার জন্য ব্যাংকঋণ নেওয়া হয়েছে।

কোন দেশে কত সম্পদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৪ সালে র‍্যাপিড র‍্যাপ্টর এফজিই ও ২০১৫ সালে জেবা ট্রেডিং এফজিই নামে কোম্পানি খোলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এর মধ্যে র‍্যাপিড র‍্যাপ্টর এফজিই কম্পিউটার ও সফটওয়্যার ব্যবসা এবং জেবা ট্রেডিং এফজিই ভবন নির্মাণসামগ্রী বিক্রির জন্য নিবন্ধিত। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব রয়েছে দুবাই ইসলামিক ব্যাংক, ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের দুবাই শাখায়। এসব হিসাবে জমা রয়েছে ৩৯ হাজার ৫৮৩ দিরহাম ও ৬ হাজার ৬৭০ ডলার। সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৭ সাল থেকে গত মাস পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৬টি স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করেছেন।

রুখমিলা জামানের নামে ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ও ৩০ নভেম্বর দুবাইয়ের আল-বারশা সাউথ-থার্ড এলাকায় দুটি স্থাবর সম্পত্তি কেনা হয়। এই সম্পত্তির মূল্য ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ দিরহাম, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ৭ কোটি টাকার সমপরিমাণ।

প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক গত বছরের মার্চ মাসে দুবাই গিয়ে জানতে পারেন, দেশটিতে সম্পদ গড়ে তুলছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবার। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল এই বাণিজ্যিক শহরের বিজনেস বে এলাকায় তখন তাঁদের পাঁচ তারকা হোটেলের নির্মাণকাজ চলছিল।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রেও তাঁদের সম্পদের খোঁজ পেয়েছে বিএফআইইউ। ২০২১ সালের ৮ মার্চ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘টিডি ব্যাংকে’ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর জিটিএস প্রপার্টিজ এলএলসির হিসাবে ৪৫ হাজার ৩৪০ ডলার জমা হয়। এসব অর্থ জমা হয় ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংক এবং এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে। কিছু অর্থ যায় মার্কিন একটি কোম্পানি ক্যাপিটাল ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম লিমিটেড থেকে।

এ ছাড়া সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান আরামিট প্রপার্টিজ এলএলসি এবং জিটিএস প্রপার্টিজ এলএলসি পক্ষে ফার্স্ট আমেরিকান টাইটেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ডলার জমা করা হয়। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট নাহার ম্যানেজমেন্ট ইনকরপোরেটেডের মাধ্যমে ২০০৫ সাল থেকে দেশটিতে বিভিন্ন সময়ে নয়টি স্থাবর সম্পত্তি কেনা হয়। এই তথ্য বিএফআইউর নথি থেকে পাওয়া গেছে। আরামিট প্রপার্টিজ এলএলসি, জিটিএস প্রপার্টিজ এলএলসি এবং নাহার ম্যানেজমেন্ট ইনকরপোরেটেড—এই তিনটিই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি।

বিএফআইইউয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আপাতত শুধু দুই দেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এর চেয়ে বেশি সম্পদ যুক্তরাজ্যে রয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন।

গত নির্বাচনের আগে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, একজন মন্ত্রীর বিদেশে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা রয়েছে। পরে এই মন্ত্রীকে সাইফুজ্জামান চৌধুরী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। জানা যায়, যুক্তরাজ্যে স্ত্রী রুখমিলা জামান এবং মেয়ে জেবা জামানের নামে কোম্পানি খুলেছেন সাবেক মন্ত্রী। এ ছাড়া পারিবারিক মালিকানায় থাকা ব্যবসায়িক গ্রুপ আরামিটের নামেও সে দেশে একটি কোম্পানি খুলেছেন তিনি। গত মার্চের সংবাদ সম্মেলনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে ব্যবসা ও সম্পদ থাকার কথা স্বীকার করেন।

টাকার উৎস কি ইউসিবি

সরকারের পতনের পর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংককে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন ব্যাংকের দেড় শতাধিক শেয়ারধারী। গত বৃহস্পতিবার গুলশানে ইউসিবির প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁরা এই দাবি জানান। এই সময় তাঁরা বিভিন্ন ফেস্টুন প্রদর্শন করে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ‘বিদেশে অর্থ পাচার’ ও ব্যাংকটিতে ঘটা নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো এক চিঠিতে ব্যাংকটির কিছু শেয়ারধারী জানিয়েছেন, রুখমিলা জামান ব্যাংকের চেয়ারপারসন হলেও কার্যত সাইফুজ্জামান চৌধুরীই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের কারণে’ ব্যাংকটি দেউলিয়া হওয়ার পথে। ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যা এই ‘ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা লুট করে পরিশোধ করা হয়েছে’। চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়, ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকটিকে একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে ‘অবাধ লুটপাট, আর্থিক দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার’ করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সাল শেষে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।

ইউসিবির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বাবা চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে অন্যতম শেয়ারহোল্ডার পারটেক্স গ্রুপের মালিক পরিবারের সদস্যদের ইউসিবি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। তখন ব্যাংকটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেন সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুখমিলা জামান। তবে রুখমিলা জামান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় ব্যাংকটি যে মূলত সাইফুজ্জামান চৌধুরী পরিচালনা করেন, তা নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

১৫ বছরে ২৪ ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ৯২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে: সিপিডি

১২ আগস্ট ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা অনলাইন

২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ২৪টি বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে প্রায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

আজ সোমবার (১২ আগস্ট) ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

সিপিডির তথ্য অনুসারে, গত ১৫ বছরে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ বা জিডিপির ২ শতাংশের সমান।

যাদুকাটা বালুমহালে ‘চাঁদাবাজি’ বন্ধের দাবি, নিয়ন্ত্রণ নিতে চান বিএনপির নেতা-কর্মীরা

১৩ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় যাদুকাটা বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। একজনের নামে এটি ইজারা নেওয়া হলেও এত দিন মূলত নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে যাদুকাটার নিয়ন্ত্রণ নিতে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে একটি পক্ষ। ওই দিন বিকেলেই টোল আদায়ে বাধা দেওয়া হয়।

এর পর থেকে ইজারাদারের লোকজনও নানাভাবে বিষয়টি নিয়ে ওই পক্ষের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু এখনো সমঝোতা হয়নি। ইজারাদারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ছাত্র-জনতার নাম নিয়ে কিছু লোক কথা বললেও তলে তলে বিএনপির একটি পক্ষ বিষয়টি নিয়ে ‘সমন্বয়’ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। তাঁরা মূলত ‘ভাগ’ চান।

তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, এখানে টোল আদায়ের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও লুটপাট হচ্ছে। চাঁদাবাজি বন্ধ, এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার দাবি তাঁদের। সরকার নির্ধারিত হারে টোল নেওয়ার কথা বলছেন তাঁরা।

ওই দাবিতে গতকাল সোমবার বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদের আনোয়ারপুর এলাকায় ‘ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে সমাবেশ হয়েছে। এর আগে শনিবার তাহিরপুর উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে টোল আদায় ও অবাধে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি এবং ইজারা প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ এনে অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, এখান থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। নদী থেকে ড্রেজারে এবং নদীর পাড় কেটে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ইজারা সীমানার বাইরে থেকে তোলা হচ্ছে বালু।

ইসলামী ব্যাংকের ৫০ হাজার কোটি টাকাই এস আলমের পকেটে

১৪ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

মাত্র বছর দশেক আগেও দেশের শীর্ষ ব্যাংক ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। আইনকানুন পরিপালন, গ্রাহককে সেবা দেওয়া ও আর্থিক সূচকে অন্য সব ব্যাংককে ছাড়িয়ে গিয়েছিল এই ব্যাংক। গ্রাহকের আস্থার কারণে স্থানীয় আমানত কিংবা বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহে এটি সবচেয়ে এগিয়ে ছিল। ব্যাংকটির আকার এতটাই বড় হয়ে উঠেছিল যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হতো—ইসলামী ব্যাংক ঝুঁকিতে পড়লে পুরো খাতে ‘পদ্ধতিগত ঝুঁকি’ তৈরি হবে, যা রোধ করা সম্ভব হবে না।

কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে ২০১৭ সাল থেকে। ওই বছর সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংককে ‘জামায়াতমুক্ত’ করার উদ্যোগ হিসেবে এর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় সদ্য বিদায় নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ। এরপর সাড়ে সাত বছরে নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক–তৃতীয়াংশ। এই টাকা বের করতে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি। ঋণের যে তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, ব্যাংক থেকে পাচার করা অর্থের প্রকৃত পরিমাণ তার চেয়ে বেশি বলেই মনে করেন কর্মকর্তারা।

এই টাকা বের করা হয়েছে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তাঁর স্ত্রী, মেয়ের স্বামী, আত্মীয়সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে। ঋণ হিসেবে অর্থ বের করতে তৈরি করা হয় নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যেভাবে টাকা বের করেছিলেন, অনেকটা একই কায়দায় ইসলামী ব্যাংক থেকেও অর্থ বের করা হয়। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধের উপক্রম, আমানতকারীরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। পি কে হালদার ছিলেন এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন আভিভা ফাইন্যান্স ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।

ইসলামী ব্যাংক থেকে পাচার হওয়া টাকা এখন আদায় করা যাচ্ছে না, ফলে ব্যাংকটি তারল্যসংকটে ভুগছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে চাহিদামতো তারল্য জমা রাখতে না পারায় প্রতিদিন জরিমানা দিচ্ছে। আবার একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদ্য সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার নিজের বিশেষ ক্ষমতাবলে ‘টাকা ছাপিয়ে’ দেড় বছর ধরে ব্যাংকটিকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন; কিন্তু ব্যাংকটির খারাপ অবস্থার জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকে প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এসব কর্মকর্তার বেশির ভাগই সাইফুল আলমের নিজের এলাকা পটিয়া উপজেলার। ফলে ব্যাংকটির অর্ধেক কর্মকর্তাই এখন পটিয়ার। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই ২০১৭ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া পুরোনো কর্মকর্তারা আন্দোলন শুরু করেছেন ব্যাংকটিকে ‘এস আলম ও পটিয়ামুক্ত’ করতে। এর মধ্যে বিবদমান দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে গুলি বর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হয়েছেন। এই পদে তাঁর নিয়োগসংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার আগে গতকাল সকালে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ব্যাংকটি খেয়ে ফেলার জন্য এস আলম গ্রুপের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তারা সেই কাজই করেছে, ব্যাংকটি ধ্বংস করে দিয়েছে। আর এই ব্যাংকের টাকা ডলার হয়ে বিদেশে চলে গেছে। এখন এস আলম গ্রুপ ও যাদের নামে ঋণ বের হয়েছে, তাদের সব সম্পদ জব্দ করে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এতে ঋণের এক-তৃতীয়াংশ টাকাও আদায় হবে কি না, সন্দেহ আছে।

যেভাবে ব্যাংক দখল

সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংক কীভাবে দখল করা হয়, ২০১৭ সালে তা ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট–এ বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি গোয়েন্দা সংস্থার এ ধরনের কাজ করাটা সত্যিই অদ্ভুত। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোন করেন। এরপর তাঁদের বাসভবন থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসা হয় ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সংস্থাটির সদর দপ্তরে।

দ্য ইকোনমিস্ট–এ লেখা হয়, এর কয়েক ঘণ্টা পরেই সেনা গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের নাকের ডগায় সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন একটি হোটেলে বসে এক সভা করে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। পদত্যাগ করা পরিচালকদের স্থলাভিষিক্ত কারা হবেন, সেই সভায় তা ঠিক করা হয়।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি আরমাডা স্পিনিং মিলের প্রতিনিধি ও সাবেক আমলা আরাস্তু খানকে ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল হামিদ মিয়াকে নতুন এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক একই দিনে তা অনুমোদন করে। ওই সভাটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে। প্রথম আলোর এই প্রতিনিধি সেদিন র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। আরমাডা মূলত এস আলম গ্রুপেরই প্রতিষ্ঠান।

এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ধীরে ধীরে শেয়ার ছেড়ে দেয় ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), দুবাই ইসলামী ব্যাংক, আল-রাজি গ্রুপ, কুয়েতের সরকারি ব্যাংক কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস, সৌদি কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিস্ট এজেন্সিসহ বেশির ভাগ উদ্যোক্তা ও সাধারণ শেয়ারধারী প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া স্থানীয় জামায়াত–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনা, ইসলামিক সেন্টারসহ অনেককে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দিতে হয়। এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে বিদেশিদের শেয়ার ছিল ৫২ শতাংশের মতো, যা এখন ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে।

এস আলমের পকেটে কত টাকা

২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ যখন ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়, তখন এটিতে এস আলমের তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ ছিল তিন হাজার ছয় কোটি টাকা। চট্টগ্রামে ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক ছিলেন তিনি। তখন ব্যাংকের মোট ঋণ ছিল ৬১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা আর আমানত ছিল ৬৮ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। কর্মকর্তা ছিলেন ১০ হাজারের কম। নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আমানত বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন নতুন শাখা খুলে পটিয়ার লোকদের নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়।

ফলে সারা দেশে ব্যাংকটির শাখা এখন ৩৯৫টি। এর বাইরে রয়েছে ২৫০টি উপশাখা। ২০২৩ সাল শেষে ইসলামী ব্যাংকে আমানত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা ও ঋণ ১ লাখ ৬০ হাজার ২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমানতের চেয়ে বেশি টাকা ঋণ হিসেবে বের করে দিয়েছে ব্যাংকটি। বাড়তি এই টাকা এসেছে মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।

ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধন ১০ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। ফলে একটি গ্রুপকে ইসলামী ব্যাংক সর্বোচ্চ ফান্ডেড ১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা ও নন–ফান্ডেড ঋণ ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা ঋণ দিতে পারে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে একটি গ্রুপ ঋণ পেতে পারে ২ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংকঋণের টাকা পাচার করতে তাই এস আলম গ্রুপ একাধিক গ্রুপ তৈরি করেছে, ভিন্ন ভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠান খুলেছে।

প্রাপ্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এস আলম নাম যুক্ত আছে ইসলামী ব্যাংক থেকে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণই ১৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। আর সাইফুল আলমের মেয়ের স্বামী বেলাল আহমেদের ইউনিটেক্সের ঋণ ৪৫৪ কোটি টাকা। এর বাইরে এস আলম–সংশ্লিষ্ট ঋণের পরিমাণ ৩২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। এসব ঋণ ছড়িয়ে আছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রাজধানীর বিভিন্ন শাখায়। এ ছাড়া রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণ ৩ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।

নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সৎভাবে ব্যবসা করি। অন্য ব্যাংকে আমার ঋণে কোনো সমস্যা নেই। ইসলামী ব্যাংকের ঋণে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তবে আমার নামে যেসব ঋণ আছে, আমি তা শোধ করে দেব। বছরে আমার ৩০ হাজার কোটি টাকার ভোগ্যপণ্য কেনাবেচা হয়। আমার গ্রুপে ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।’

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের ছেলে। ব্যাংকের সার্বিক বিষয়ে জানতে তাঁকে ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে ফোন করা হলে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ইসলামী ব্যাংকের একজন পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন ব্যাংকের কেউ ফোন ধরছেন না। আমি কিছু জানতেও পারছি না। আমি অনলাইনে সভায় অংশ নিই। মতামত আমি দিয়ে থাকি। সব সময় তা গ্রহণ হয়নি। ঋণ কে কত টাকা নিয়েছে, এ নিয়ে আমি কিছুই জানি না।’

ইসলামী ব্যাংকের ‘বৈষম্যবিরোধী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষাকারী ব্যাংকার সমাজের’ সমন্বয়ক আবু ওয়ালিদ চৌধুরী বিবৃতিতে গত সোমবার বলেন, ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। ১০ হাজারের বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের অনেকের যোগ্যতা নেই।

বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যাংক থেকে এখনো নানাভাবে অর্থ বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছে এস আলম গ্রুপ। পাশাপাশি গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট ঋণের নথিপত্র সরানো ও তথ্য-উপাত্ত মুছে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিছু কর্মকর্তা। সে কারণে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দ্রুত ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন এবং এস আলমকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান আবু ওয়ালিদ চৌধুরী। পটিয়া এলাকার ব্যাংকারদের পাশাপাশি গতকালও ব্যাংকে যাননি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুল মওলা, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ ও আলতাফ হুসাইন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আকিজ উদ্দিন, মিফতাহ উদ্দিনসহ এস আলমপন্থী হিসেবে পরিচিত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। তাঁদের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন অন্য কর্মকর্তারা।

ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধানদের প্রায় সবাই চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আসা কিংবা চট্টগ্রামের বিভিন্ন শাখার দায়িত্বে ছিলেন। এমনকি সাইফুল আলম তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকেও ব্যাংকটির ডিএমডি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সালমান এফ রহমানের অন্ধকার জগৎ

১৪ আগস্ট ২০২৪, ডেইলিস্টার বাংলা অনলাইন

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম বিশ্বস্ত উপদেষ্টা ছিলেন সালমান এফ রহমান, যিনি মন্ত্রী পদমর্যাদার ছিলেন। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামি।

নানা রকমের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার বিষয়ে আলোচিত হলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে একটি দোকানের কর্মচারীকে হত্যার মামলায়।

শেয়ার বাজার ও ব্যাংকিং খাতে কেলেঙ্কারির মূলহোতাদের একজন হিসেবে সালমান এফ রহমানের নাম গত ১৫ বছর ধরে বরাবরই আলোচনায় ছিল। বর্তমানে দেশের এই দুই খাতই বিপর্যস্ত।

অনেকেই সালমান এফ রহমানকে বাংলাদেশের ‘ঋণখেলাপির জনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।

সালমান দোহারের সংসদ সদস্য এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি আইএফআইসি ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান। এ ছাড়াও অনেক ব্যবসায়ী সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদেও তিনি অধিষ্ঠিত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।

সালমানের বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে ব্যাংকটিকে ঝুঁকিতে ফেলেছিল। সেই ঋণের পরিমাণ ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে নয় গুণ বেশি। এটা তার বহু কাজের একটা উদাহরণ মাত্র।

১৯৭২ সালে কমোডিটি ট্রেডিং কোম্পানি হিসেবে সালমান ও তার বড় ভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত বেক্সিমকো বিভিন্ন সময় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য নতুন নিয়ম তৈরি বা সংশোধন করতে নিয়ন্ত্রকদের বাধ্য করেছেন। এর মাধ্যমে আদালতের আদেশের বিপরীতে নিজেকে সুরক্ষিত করেছিলেন তিনি।

২০১৪ সালের আগস্টে তারল্য সংকটের কারণ দেখিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে নেওয়া বেক্সিমকোর ঋণ পুনঃতফসিল করেন সালমান এফ রহমান।

এর পেছনে কোম্পানিটি ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঋণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধিনিষেধ, পূর্ববর্তী তিন বছরে ৮০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং ২০১৩-১৪ সালে দীর্ঘ অবরোধ ও শাটডাউনের কারণে ঘটা অর্থনৈতিক বিপর্যয়কে দায়ী করেন।

ওই সময় সাতটি ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়া এক চিঠিতে বেক্সিমকো টিকে থাকতে জরুরি ভিত্তিতে ঋণ পুনঃতফসিলের আহ্বান জানিয়েছিল।

২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন বড় ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালা জারি করে, যার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণগ্রহীতাদের আবেদন গ্রহণ করে।

প্রায় ১১টি ব্যবসায়ী গ্রুপ ওই সুযোগ গ্রহণ করে তাদের খেলাপি ঋণের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করেছে। সেই সময় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এই অর্থের এক-তৃতীয়াংশই পুনর্গঠন করেছে বেক্সিমকো।

ঋণগ্রহীতাদের স্বাভাবিক ১০ শতাংশের পরিবর্তে মাত্র ১-২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট এবং সর্বোচ্চ ১২ বছরের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ দেওয়া হয়। নীতিমালায় কোনো ঋণগ্রহীতা পরপর দুই কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংকগুলোকে এ সুবিধা প্রত্যাহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণদাতারা ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এতে যে বেক্সিমকো বিচলিত হয়নি, সেটা তাদের পরবর্তী কর্মকাণ্ড থেকে বোঝা যায়।

নীতিমালার আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ১২ বছর মেয়াদে ১০ শতাংশ সুদে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বেক্সিমকোর এক হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ পুনঃতফসিল করেছে, যা তখনকার ১৩-১৪ শতাংশ সুদের হারের চেয়ে অনেক কম।

এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড শেষে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ঋণগ্রহীতার প্রতি প্রান্তিকে সোনালী ব্যাংককে ৫৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঋণগ্রহীতার ছয় কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেক্সিমকো দিয়েছে মাত্র দুটি কিস্তি। আর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে তা খেলাপিতে পরিণত হয়।

এরপরেও সোনালী ব্যাংক প্রদত্ত সুবিধা প্রত্যাহার করেনি এবং বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে মামলাও করেনি।

এর পরিবর্তে ২০১৮ সালের মার্চে আবারও বেক্সিমকোকে দেওয়া ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য খেলাপি ঋণের ন্যূনতম ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট বাধ্যতামূলক হলেও তা করতে বেক্সিমকোকে কোনো ডাউন পেমেন্ট করতে হবে না।

আরেকটি উদাহরণ হলো জিএমজি এয়ারলাইনসের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার জন্য ২০১৬ সালের আগস্টে সালমান ও তার ভাই সোহেলের সম্পত্তি নিলামে তোলার জন্য সোনালী ব্যাংকের উদ্যোগ বন্ধ করা। ২০০৯ সালে দেশের প্রথম বেসরকারি বিমান সংস্থা জিএমজির অর্ধেক শেয়ার কিনে নেয় বেক্সিমকো।

গত জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের বিপরীতে বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তোলার নোটিশ দিলে জিএমজি হাইকোর্টে গিয়ে স্থগিতাদেশ নেয়। বছরের পর বছর ধরে গ্রাউন্ডেড থাকা বিমান সংস্থাটিও আদালতের আদেশের কারণে তার অ্যাকাউন্টগুলো নিয়মিত রাখতে সক্ষম হয়।

বিধ্বস্ত ডিবেঞ্চার মার্কেট

নব্বইয়ের দশকে সংগৃহীত প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধে বিলম্ব করায় বাংলাদেশের ঋণপত্র বাজার ধ্বংস করার অভিযোগ এখনো রয়েছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে।

ডিবেঞ্চার এক ধরনের ঋণ বিন্যাস, যা বৃহৎ কোম্পানিগুলো অর্থ ধার করার জন্য ব্যবহার করে।

বেক্সিমকো ১৯৯৪-৯৫ সালে ১০ বছর মেয়াদে চারটি ডিবেঞ্চার ইস্যু করে। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে তাদের মেয়াদ শেষ হলেও ২০২১ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের অর্থ পরিশোধ করা হয়নি।

ওই বছর তিন হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য সুকুক ইস্যু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বেক্সিমকো। এ অবস্থায় বেক্সিমকোর ঋণখেলাপি ইস্যু সমালোচনার মুখে পড়ে এবং কোম্পানিটিকে পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

নির্ধারিত সময়ের ১৫ বছর পর ওই টাকা পরিশোধ করেছে সংস্থাটি।

বন্ড বাজার

সালমানের বেক্সিমকো ২০২১ সালে দেশের সবচেয়ে বড় সুকুক ইস্যু করে, যার মাধ্যমে তিন হাজার কোটি টাকা আয় করে।

তবে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বন্ড বিক্রির জন্য তার রাজনৈতিক সুবিধা ব্যবহার করেছিলেন। কোনো ব্যাংক ও নন-ব্যাংক এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ছিল না।

সালমান তার সুকুকে বিনিয়োগের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের চাপ দেন। তা সত্ত্বেও অনেক ব্যাংক স্বল্প পরিমাণ তহবিল বিনিয়োগ করেছে। তাই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে অন্তত দুইবার বিনিয়োগের সময় বাড়াতে হয়েছে।

ব্যাংকগুলো যাতে তার সুকুকে বিনিয়োগ করতে পারে, সেজন্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা পরিবর্তন করেছেন।

পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি তহবিল গঠন করে এবং ব্যাংকগুলোকে শুধু শেয়ারবাজারের জন্য পরিকল্পিত তহবিল থেকে ২০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

সালমান এফ রহমান ব্যাংকগুলোকে সুকুকে বিনিয়োগের অনুমতি দিয়ে সার্কুলার জারি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বাধ্য করেন। এরপর সালমান কয়েকটি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তার কোম্পানির সুকুকে বিনিয়োগ করতে বলেন।

পট পরিবর্তনে পাল্টেছে দখলদার, চাঁদাবাজ

১৫ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর মাঠের পরিস্থিতি একেবারে বদলে গেছে। পাড়া-মহল্লায় বেশ সক্রিয় বিএনপির নেতাকর্মী। অনেক জায়গায় চলছে আধিপত্য জানান দেওয়ার চেষ্টা। কেউ কেউ দখলের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন।

চাঁদাবাজিতেও নতুন লোক আসতে দেখা গেছে। ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর অনুপস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের ময়লা সংগ্রহের ভূমিকা নিতেও মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি গ্রুপ। দখলদারি ও চাঁদাবাজিতে চেহারা পরিবর্তনের চিত্রই পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। আবার নতুন করে বিএনপির নেতাকর্মী সেজে অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে।

দলের কোনো পদ-পদবিতে নেই, আন্দোলন-সংগ্রামেও ছিলেন না– এমন নব্য বিএনপির কর্মীও রং বদলিয়ে মাঠে। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বারবার হুঁশিয়ারি ও বহিষ্কারের কথাও কানে নিচ্ছে না কেউ।

গত ২৭ জুন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় রামচন্দ্রপুর খালের ওপর বেদখলে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। কিন্তু কয়েক দিন আগে টিনের ছাউনি ও বেড়া দিয়ে খালের জায়গায় বানানো হয় দুটি ছাপরা ঘর। একটি ঘরের দরজায় ঝোলানো হয়েছে বিএনপির সাইনবোর্ড। তাতে লেখা, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, সাতমসজিদ হাউজিং ইউনিট, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড, মোহাম্মদপুর থানা, ঢাকা মহানগর উত্তর।’

গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হলে বিএনপির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, বিএনপির নাম ব্যবহার করে কারা সাইনবোর্ড লাগিয়েছে, তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন। পরে গতকাল বুধবার দুপুরে রামচন্দ্রপুর খালের ওই অংশে যান ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক। তাঁর উপস্থিতিতে বিএনপির নেতাকর্মী খালের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা ঘর দুটি ভেঙে ফেলেছে।

মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে সড়কের পাশেই অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল ছাত্রলীগের একটি কার্যালয়। সেখানে বসেই আশপাশের ফুটপাতের দোকান ও অটোরিকশার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা হতো। ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মী পালিয়ে গেলে সেই অফিসের দখল নেয় বিএনপি নেতাকর্মী। এখন সেখানে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মোহাম্মদপুরে শিয়া মসজিদ মোড়ে ছিল আদাবর থানা ছাত্রলীগের কার্যালয়। গত ৩ আগস্ট সংঘর্ষের সময় এটি পুড়িয়ে দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। ছাত্রলীগের সেই কার্যালয় এখন ভাগাভাগি করে দখল করেছে স্থানীয় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়টির শাটার বন্ধ। শাটারের এক অংশে লেখা– যুবদল, আরেক অংশে লেখা স্বেচ্ছাসেবক দল। 

তেজগাঁওয়ে বিজি প্রেস হাই স্কুল মোড়ে ফুটপাতের ওপর নির্মাণ করা একটি স্থাপনায় ঢাকা মহানগর উত্তরের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর ইউনিট বিএনপির একটি ব্যানার লাগানো। ওই কার্যালয়ের পাশের এক দোকানি বলেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত এটি আওয়ামী লীগের অফিস ছিল।

কল্যাণপুরের পোড়া বস্তির ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী হানিফ মোহাম্মদ বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পরই ১১ নম্বর ওয়ার্ডের এক বিএনপি নেতার ভাই রিপন বাসিন্দাদের আওয়ামী লীগ আখ্যা দিয়ে ৩০-৪০টি ঘর-দোকান দখল করে নেন। এর পর বিএনপি নেতা এস এ সিদ্দিক সাজুর কাছে অভিযোগ করলে তিনি লোক পাঠিয়ে ঘরগুলো দখলমুক্ত করেন। এ বিষয়ে সাজু বলেন, এ ধরনের ঘটনা শোনার পর আমরা লোক পাঠিয়ে ও নেতাকর্মী দিয়ে মিছিল করিয়ে তাদের নিবৃত্ত করেছি।

এদিকে ক্ষমতার পালাবদল হলেও চাঁদা দেওয়ার রেওয়াজ বদল হয়নি; চাঁদাগ্রহীতার চেহারা বদল হয়েছে। গত সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কে ভ্যানে সবজি বিক্রি করছিলেন এক ব্যক্তি। এ সময় এক লোক এসে তাঁর কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে যান। এ বিষয়ে ওই সবজি বিক্রেতা বলেন, আগে আওয়ামী লীগের লোকজন প্রতিটি ভ্যান থেকে দৈনিক ২০ টাকা এবং মাসে ৪০০ টাকা নিতেন। এখন বিএনপি পরিচয়ে কিছু লোক দৈনিক ১০ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন।

তেজগাঁওয়ের নাবিস্কো এলাকায় ফুটপাতের ওপর দীর্ঘদিন ধরে রিকশার গ্যারেজ চালান সবুজ আলী। আগে প্রতিটি রিকশার জন্য প্রতিদিন ৩০ টাকা চাঁদা দিতে হতো আওয়ামী লীগ নেতাদের। এখন তারা না থাকলেও চাঁদাবাজির হাত থেকে বাঁচতে পারছেন না তিনি। সবুজ আলী বলেন, ‘যাগো কোনো সময় এলাকায় দেখি নাই, তারাই এখন বিএনপির বড় নেতা হয়া গেছে। আইয়া কইতাছে, এখন নাকি তাদের চাঁদা দিতে হইব, না হইলে গ্যারেজ উঠায়া দিব। এখন বিএনপির এত নেতা বের হইতেছে, এতদিন তারা কই আছিল?’

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এই বাজারকেন্দ্রিক রাস্তা, ফুটপাত, মাছ বাজার, সবজির আড়ত, ট্রাক পার্কিং ইত্যাদি খাত থেকে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। এখন আর আগের নেতারা নেই। কিন্তু দোকানে দোকানে নতুন নেতারা আনাগোনা শুরু করেছেন।

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর রাজধানী ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থায়ও হাত বদল হয়েছে। ডিএনসিসির আগারগাঁওয়ের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্জ্য সংগ্রহের লাইসেন্স ছিল এটুজেড মিডিয়া অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টার নামে একটি কোম্পানির। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন এতদিন এটি দখলে রেখেছিলেন। ৫ আগস্টের পর ফোরকান এলাকা ছেড়েছেন। এখন বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি নিয়েছেন এটুজেড মিডিয়া অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টারের মালিক নাজমুল হক পান্না।

এসব বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, দখল, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিএনপি থেকে একাধিক হটলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, কিছু দুষ্কৃতকারী, কিছু নব্য বিএনপি নেতাকর্মী এভাবে বিএনপির নামে বদনামের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা বিএনপির বদনামের চেষ্টা করছেন, তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আর কেউ করার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর কাছে তুলে দিতে হবে। দুষ্কৃতকারী বিএনপির লোক হলে তাকেও পুলিশে দিতে হবে।

এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা আরও ৫ ব্যাংক ঝুঁকিতে, ব্যাংক দখলের পরিণতি

১৫ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

শুধু ইসলামী ব্যাংক নয়, আরও পাঁচটি ব্যাংক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে ইচ্ছেমতো লুট করে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে সদ্য বিদায়ী আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। ঋণের নামে পাচার করা এই টাকা ব্যাংকে ফেরত না আসায় ব্যাংকগুলো দেড় বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাহিদামতো টাকা জমা রাখতে পারছে না। কিন্তু সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিশেষ সুবিধা দিয়ে এসব ব্যাংকের কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছিলেন। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব সুবিধা কাটছাঁট করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকায় নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে ‘টাকা ছাপিয়ে’ ও নানা অভিনব সুবিধা দিয়ে এস আলম-নিয়ন্ত্রিত ছয়টি ব্যাংককে টিকিয়ে রেখেছিলেন সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এতে তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সায় ছিল। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরপরই আত্মগোপনে চলে যান সাবেক গভর্নর। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংককে দেওয়া বিশেষ সুবিধার সীমা কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি এসব ব্যাংকের এক কোটি টাকার বেশি অর্থের চেক ক্লিয়ারিং করার সুবিধাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। এসব ব্যাংক নিয়ে এখন কী করা হবে, সে ব্যাপারে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।

এসব ব্যাংকের বিষয়ে এ মুহূর্তে করণীয় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, এখন কোনো ব্যাংক আর কৃত্রিমভাবে টিকিয়ে রাখা ঠিক হবে না। যেসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেই ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ে স্বাধীনভাবে নিরীক্ষা করাতে হবে। এরপরই ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা থাকলে সহায়তা করা যেতে পারে। না হলে দুর্বল ব্যাংক এভাবে টিকিয়ে রাখলে ভালো ব্যাংকগুলোর অবস্থাও খারাপ হয়ে পড়বে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এখন ব্যাংকটির এক-তৃতীয়াংশ ঋণই গ্রুপটির স্বার্থসংশ্লিষ্ট। একই বছরে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় দখল করে এস আলম গ্রুপ। আগের বছর তারা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ এস আলম গ্রুপের হাতে। আর ২০০৪ সালে সিকদার গ্রুপ থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ যায় এস আলম গ্রুপের কাছে।

বড় ঝুঁকিতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। আগের দিন রাতে ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও কোম্পানি সচিবকে তুলে নিয়ে যায় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা। ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদ হচ্ছেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের জামাতা। যখন মালিকানা পরিবর্তন হয়, তখন ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণ ছিল প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা, যা এখন বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। নতুন ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের বড় অংশই এস আলম গ্রুপ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা।

এর মধ্যে এস আলমের ছেলে আহসানুল আলমের ইনফিনিয়া গ্রুপ ও নাবিল গ্রুপের ঋণও রয়েছে। এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে প্রায় তিন বছর আগে চিনি ও তেল আমদানি করেছে, তবে এখনো সেই অর্থ শোধ করেনি। নিয়মানুযায়ী এক বছরের মধ্যে এই অর্থ শোধ করার কথা। তবে এক বছরের মধ্যে অর্থ আদায় না করলেও চলবে—বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ক্ষমতাবলে ব্যাংকটিকে এই অনুমোদন দিয়ে রেখেছে। সম্প্রতি এই অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

৭ আগস্টের হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাবে নগদ জমাসহ (সিআরআর) ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। এরপরও ব্যাংকটির লেনদেন অব্যাহত রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের মতো এই ব্যাংকেও চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকার লোকদের বেশি হারে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁরা ব্যাংকটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্বে রয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সুবিধায় ব্যাংকটি খেলাপি দেখিয়েছে মাত্র ১ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকটি ৭ হাজার ৯২৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ গোপন করেছে। এভাবে ব্যাংকটি কৃত্রিম মুনাফা করেছে, লভ্যাংশ নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

ব্যাংকটির এমডি জাফর আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড় দিয়ে ঋণ নিয়মিত করার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিল, আমরা তার চেয়ে বেশি ঋণ নিয়মিত করেছি। চলতি হিসাব ভালো হয়ে আসছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা আবার ঘাটতিতে চলে গেছে। অফশোর ইউনিটের ঋণ আদায়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

ব্যাংকটির একাধিক উদ্যোক্তা সম্প্রতি প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সহায়তায় এস আলম চক্র ও তার সহযোগীরা ব্যাংকটি থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে। তাঁরা দ্রুত পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবিও জানান।

ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক) ও ইউনিয়ন ব্যাংক। কিছুদিন পর গ্লোবাল ইসলামীতে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে। এই দুই ব্যাংক যা ঋণ দিয়েছে, তার বেশির ভাগই ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের নামে। এসব ঋণ এস আলম গ্রুপের বলেই জানিয়েছেন ব্যাংক দুটির ঋণ বিভাগের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালে ইউনিয়ন ব্যাংকে চিঠি দিয়ে জানায়, ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার যোগ্য, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যত ঋণ বিতরণ করেছে, তার সিংহভাগই খেলাপি বা অনিয়মযোগ্য। পরে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দেন সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এখন ব্যাংকটির ঋণ বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। ঋণের টাকা আদায় না হওয়ায় ব্যাংকটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে থাকা চলতি হিসাবে ঘাটতি হয়েছে। ৭ আগস্ট সিআরআরসহ ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। এরপরও ব্যাংকটির লেনদেন নিয়মিত রয়েছে, তবে এখন তা সীমিত করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ইউনিয়ন ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সেলিম উদ্দিন আগে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে এত দিন টাকা দিয়ে আসছিল, এখন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে চেক ক্লিয়ার করতে সমস্যা হচ্ছে। আমি চেয়ারম্যান হলেও তেমন কিছুটা জানি না। আশা করি, দ্রুত ঠিক হয়ে আসবে। ব্যাংকগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করা দরকার।’

ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিণতির দায় আপনার ওপরও বর্তায় কি না, প্রথম আলোর এ প্রশ্নের জবাবে সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রতিনিধি পরিচালক, আমাদের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তেমন নেই।’

ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ভাই রাশেদুল আলমসহ পরিবার ও গ্রুপটির কর্মকর্তারা ব্যাংকটির পরিচালক পদে রয়েছেন।

এদিকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে পি কে হালদার বিভিন্ন নামে টাকা বের করে নেওয়ার পর ব্যাংকটি আর খুব একটা ঋণ বিতরণ করেনি। বছরের পর বছর এসব ঋণের কোনো আদায় নেই। প্রতিবছর সুদযুক্ত হয়ে তা শুধু বাড়ছে। গত বছর শেষে ব্যাংকটির ঋণ ছিল ১৩ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান প্রবাসী নিজাম চৌধুরী, পরিচালক পদে রয়েছেন সাইফুল আলমের ভাই শহীদুল আলম, ভাইয়ের স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজন। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলমও ব্যাংকটির পরিচালক।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ব্যাংকটির এমডি হাবিব হাসনাতকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ও কমার্সে অচলাবস্থা

২০০৪ সালে সিকদার গ্রুপ থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ যায় এস আলম গ্রুপের কাছে। এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম নিজেই। নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ব্যাংকটিকে ইসলামি ধারার ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়। ব্যাংকটির ঋণ প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকটির একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঋণের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা এস আলম গ্রুপ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্টদের।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার কিনে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তাঁর পরিবারের এক সদস্যকে ওই ব্যাংকের পরিচালক করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর সেই শেয়ার হস্তান্তর হয়েছে, কিন্তু ঋণ শোধ হয়নি। বছরের পর বছর এসব ঋণ আদায় না হলেও খেলাপি দেখানো হয় না। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে থাকা চলতি হিসাবে সিআরআরসহ ৭ আগস্ট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির অনিয়ম প্রকট হওয়ায় গত বছর ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পটিয়া এলাকার বাসিন্দাদের ব্যাপক হারে নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যাংকটির ১ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ৭০০ জনই পটিয়া এলাকার। কমার্স ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটি থেকে বিভিন্নভাবে প্রায় ৬১০ কোটি টাকা ধার নেয় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। কিন্তু ওই টাকা ফেরত পাচ্ছে না। এর ফলে তারল্যসংকটে ভুগছে কমার্স ব্যাংক।

৭ আগস্ট সিআরআরসহ কমার্স ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৫০৩ কোটি টাকা। এদিকে তারল্যসংকটে পড়ে ব্যাংকটি কর্মচারীদের স্থায়ী চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। সরকার পতনের পর ব্যাংকে যাচ্ছেন না ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজুল ইসলামও। ফলে ব্যাংকটিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

ব্যাংকের ফ্রি টাকায় সালমান এফ রহমান যেভাবে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন

১৫ আগস্ট ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

টিবিএস-এর হাতে আসা নথির তথ্যানুসারে, দেশের সাতটি ব্যাংকে—চারটি সরকারি ও তিনটি বেসরকারি—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩৬ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।

যে ব্যাংকগুলোতে ঋণ আছে, সেগুলো হলো: জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।

মঙ্গলবার রাতে পালানোর সময় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সালমান এফ রহমানকে।

নথির তথ্যানুযায়ী, কিছু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের অপব্যবহার করে সেগুলোকে দুর্বল ব্যাংকে পরিণত করেছেন সালমান।

নথি অনুযায়ী, সালমান এফ রহমানের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জনতা ব্যাংকে ২৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকে ১ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকে ৯৬৫ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকে কাছে ১ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকে ২ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকে ৬ হাজার ৩১ কোটি টাকা ও এবি ব্যাংকে ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু আইএফআইসি ব্যাংকেই সালমান এফ রহমানের নামে-বেনামে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শ্রেণিকৃত করার জন্য ওভারডিউ হয়ে গেলেও একাধিকবার পুনঃতফসিলের মাধ্যমে এসব ঋণের বেশিরভাগ অ-শ্রেণিকৃত রাখা হয়েছে।

জনতা ব্যাংক

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক গত বছর অন্য গ্রাহকদের বছর ঋণ দিতে পারেনি। কারণ, বেক্সিমকো গ্রুপ একাই ১৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ২৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা একক ঋণগ্রহীতাকে ঋণ দেওয়ার সর্বোচ্চ সীমার চেয়েও বেশি। অর্থাৎ ব্যাংকটির ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বেক্সিমকো একাই ব্যবহার করে ফেলেছে।

বেক্সিমকো গ্রুপ নতুন নতুন কোম্পানি খুলে নতুন ঋণ নিয়ে জনতা ব্যাংকের সঙ্গে ‘ডেবট সার্ভিসিং’ (সুদসহ ঋণ পরিশোধ) অব্যাহত রেখেছে। অর্থাৎ গ্রুপটি নতুন ঋণ নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করে গেছে।

টিবিএসের হাতে আসা নথি অনুসারে, শিল্পগোষ্ঠীটি জনতা ব্যাংকের স্থানীয় অফিস শাখা থেকে অন্তত ২৮টি কোম্পানির নামে ঋণ নিয়েছে।

এভাবেই বেক্সিমকো জনতা ব্যাংকের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থবির করে দিয়ে ব্যাংকটিকে বিপুল লোকসানে ফেলেছে। ফলে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানতকারীদের ১.১০ লাখ কোটি টাকা ঝুঁকিতে পড়ে গেছে।

জনতা ব্যাংক ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে ৫৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা দেখিয়েছে। কিন্তু এটি প্রকৃত মুনাফা নয়। কারণ, ব্যাংকটি খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ না করার বিশেষ অনুমতি পেয়েছে। প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হলে জনতার ব্যাংকের ১ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হবে বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

একক ঋণগ্রহীতাকে ঋণদানের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করার পরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমতি নিয়ে বেক্সিমকোর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে জনতা ব্যাংক।

চলতি বছরের জুনে অনুষ্ঠিত ২০২৩ সালের বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান বলেছিলেন, ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধ না করায় জনতাসহ কয়েকটি ব্যাংকের আর নতুন ঋণ বিতরণের সক্ষমতা নেই।

মাহফুজুর রহমান বলেন, নতুন ঋণ বিতরণ না করে তারা খেলাপি ঋণ আদায়ের ওপর গুরুত্ব দেবেন।

রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে (ইডিএফ) বেক্সিমকো গ্রুপকে ৫৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল জনতা ব্যাংক। সেই ঋণও ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রুপের বকেয়া ঋণের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এক বছর আগে জনতা ব্যাংককে ইডিএফ ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

ইডিএফ ঋণ দেওয়া হয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে। এই ঋণ রপ্তানিকারকদের খুব কম সুদহারে—৩ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ—দেওয়া হয়।

বেক্সিমকো গ্রুপের আমদানি বিল পেমেন্ট না করা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে অনেক বিদেশি ঋণদাতা জনতা ব্যাংককে কালো তালিকাভুক্ত করেছে।

আমদানি বিল না দেওয়ায় বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে ঢাকায় ভারতীয় কমিশনে অনেকগুলো অভিযোগ দিয়েছে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। এরকম বেশ কিছু অভিযোগ দেখেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

এসব সমস্যার পরও জনতা ব্যাংক বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, উল্টো হাসিনা সরকারের পতনের পর সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার আগপর্যন্ত ঋণ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।

আইএফআইসি ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, আইএফআইসি ব্যাংকের শীর্ষ ৩০ বড় ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় দশটির মালিক সালমান এফ রহমান। তিনি আবার ব্যাংকটির চেয়ারম্যানও।

আইএফআইসি ব্যাংকের শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে রয়েছে শ্রীপুর টাউনশিপ; এ প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ২০ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকটিতে সানস্টার বিজনেসের ঋণের পরিমাণ ৬১৫ কোটি টাকা, ফারইস্ট বিজনেসের ঋণ ৬১৪ কোটি টাকা, কসমস কমোডিটিস লিমিটেডের ঋণ ৬১২ কোটি টাকা ও উত্তরা জুট ফাইবারসের ঋণ ৫৫২ কোটি টাকা। তাছাড়া অ্যাবসোল্যুট কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ঋণ ৪৬৩ কোটি টাকা, অ্যাপোলো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ঋণ ৪৫৫ কোটি টাকা, অল্ট্রন ট্রেডিং লিমিটেডের ঋণ ৪৪৯ কোটি টাকা ও নর্থস্টোন কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ঋণ ৪২১ কোটি টাক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব কোম্পানি সালমান এফ রহমানের সঙ্গে যুক্ত।

এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংক থেকে আসাদ ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নামে ৪২৬ কোটি টাকা ও সার্ভ কনস্ট্রাকশনের নামেও ৪০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানই সালমানের সঙ্গে যুক্ত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিমের একজন সদস্য বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন নামে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান থাকলেও ঋণগুলো আসলে বাগিয়ে নিয়েছেন সালমান এফ রহমান। ওপরের উল্লেখিত এগারোটি প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণ রয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন পরিচালক বলেন, আইএফআইসি ব্যাংকে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু ছোট ঋণও রয়েছে। এসব কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যেই প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সালমান এফ রহমানের বেনামি এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগের ঠিকানা গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা এলাকায়। সরেজমিনে গেলে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো যথার্থ কর্মক্রম পাওয়া যায় না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে আইএফআইসি ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ৪১ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৬.২৮ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিশদ পরিদর্শনে দেখা গেছে, আইএফআইসি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বা ২৪ শতাংশ।

ওই পরিদর্শনে আরও উঠে এসেছে, আইএফআইসি ব্যাংকে সালমান এফ রহমানের নামে-বেনামে ঋণ রয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা।

ন্যাশনাল ব্যাংক

ন্যাশনাল ব্যাংকে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ব্লুম সাকসেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ৮৩৬ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। এছাড়া এ ব্যাংকে সালমানের বেক্সিমকো গ্রুপের ৮২৩ কোটি টাকা এবং বেক্সিমকো এলপিজি ইউনিট ১-২-এর ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।

অগ্রণী ব্যাংক

অগ্রণী ব্যাংকে বেক্সিমকো লিমিটেডের ঋণ রয়েছে ৬৬৩ কোটি টাকা, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ঋণ আছে ৩৭৫ কোটি টাকা এবং বেক্সিমকো কমিউনিকেশন লিমিটেডের ঋণ আছে ৩৭১ কোটি টাকা।

এবি ব্যাংক

এবি ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ রয়েছে ৬০০ কোটি টাকা।

যেভাবে আইএফআইসি ব্যাংকের অপব্যবহার করা হয়েছে

মাত্র ২ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয়েও ২০১০ সাল থেকে গত ১৪ বছর ধরে আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ ধরে রেখেছেন সালমান এফ রহমান। ২ শতাংশ শেয়ার নিয়ে তার ছেলে ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান। আর ব্যাংকটির ৩২.৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকার। বাকি ৬১ শতাংশ শেয়ারের মালিক সাধারণ শেয়ারধারীরা।

চেয়ারম্যান থাকাকালে আর্থিক কারসাজির মাধ্যমে সালমান এফ রহমান ব্যাংকটির সম্পদের অপব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গত বছর আইএফআইসি ব্যাংক বেক্সিমকো গ্রুপের সঙ্গে অংশীদারিত্বে নবগঠিত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের (এসটিএল) অনুকূলে ১ হাজার কোটি টাকার ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ ইস্যু করে।

আমার বন্ডের গ্যারান্টি দিয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। এর অর্থ, ১ হাজার কোটি টাকার সম্পূর্ণ দায় ব্যাংকের, যা শেষপর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধন নষ্ট করে এবং আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকিতে ফেলে।

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সুদ পরিশোধের আর্থিক সক্ষমতা মূল্যায়ন না করেই একটি নতুন প্রকল্পের জন্য এই বৃহৎ বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে।

এসটিএল প্রকল্প ব্যর্থ হলে প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও আইএফআইসি ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের ঋণ পরিশোধে দায়বদ্ধ থাকবে।

এই গ্যারান্টি স্বার্থের সংঘাতও বটে। কারণ, আইএফআইসি ব্যাংক ও এসটিএল উভয় জায়গাতেই শেয়ার আছে সালমান এফ রহমানের।

ব্যাংকটি যখন চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত ব্যবসার জন্য অর্থায়ন সংগ্রহ করছিল এবং এসটিএলের বন্ডের প্রচারণার জন্য জনসাধারণের অর্থ ব্যয় করছিল, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয় পুরোপুরি উপেক্ষা করে গেছে।

চড়া ১২ শতাংশ সুদে বন্ডের গ্যারান্টি দিয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। অথচ এসটিএল গত বছরের মার্চেই প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া টাউনশিপ নির্মাণ তো দূরের কথা, প্রতিষ্ঠানটির ফ্ল্যাট নির্মাণ বা প্লট ডেভেলপমন্টের অভিজ্ঞতাও ছিল না।

এই দুর্নীতির পরও কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রশ্ন তুলতে সাহস পায়নি। পরে চলতি বছরের মার্চে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম তার মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক আগে বেক্সিমকোকে এসটিএলে বিনিয়োগের জন্য বন্ড ইস্যু করে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমতি দেন।

এর ফলে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে দিয়ে সালমান এফ রহমান তার নতুন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির জন্য মোট ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পারেন।

চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরু

১৫ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

আর্থিক খাতে আলোচিত নাম চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে ব্যাংক দখল ও শেয়ারবাজার থেকে টাকা লুটপাটের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক নাফিজ সরাফাত ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এবং এস আলম গ্রুপের ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেওয়ার অভিযোগেরও তদন্ত শুরু করেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সাবেক ব্যাংকার চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেইসের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া তাঁর মোবাইলের টাওয়ার কোম্পানি, বিদ্যুৎ কোম্পানি, তারকা হোটেল ব্যবসা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, গণমাধ্যমসহ নানা ব্যবসা রয়েছে।

বস্তায় ঘুষের টাকা নিতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

১৬ আগস্ট ২০২৪,সমকাল

আত্মগোপনে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের কাছে অভিযোগ এসেছে, তিনি সিন্ডিকেট করে বস্তায় বস্তায় ঘুষের টাকা নিতেন।  পুলিশ সুপার নিয়োগে সর্বনিম্ন ৮০ লাখ থেকে ২ কোটি এবং পুলিশ সুপার পদায়নে ১ থেকে ৩ কোটি টাকা নিতেন। নিয়োগ বাণিজ্যও করতেন বেপরোয়াভাবে। বৃহস্পতিবার কমিশন এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কামালের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিষয়েও তদন্ত করা হবে। দুদক সূত্রে এ খবর জানা গেছে। 

এজন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযোগটি অনুসন্ধান করা হচ্ছে বিশেষ অনুসন্ধান তদন্ত-৩ শাখা থেকে। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন– দুদক উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, নাছরুল্লাহ হোসাইন ও মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম।

ইসলামী ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে দুদক, এস আলম ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব

১৮ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের (এস আলম) বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির আয়কর বিভাগ সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। ঢাকার কর অঞ্চল-১৫ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত চিঠি সব ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ডাক বিভাগের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর পাশাপাশি এস আলমের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়ার পাশাপাশি এস আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা ৯২টি প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখায় যদি তাঁদের নামে কোনো হিসাব থাকে, সে ব্যাপারে তথ্য জানাতে হবে এনবিআরকে।

এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংক দখল করে লুট, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে। গণ–আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ঘনিষ্ঠ ও তাঁদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পাওয়া অন্যতম বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। এস আলমের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, কমার্স ব্যাংকসহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলম পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি গ্রুপটির অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীও দেশ ছেড়েছেন।

ব্যাংকের পরিচালকরা যেভাবে একে অপরকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন

১৭ আগস্ট ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাই বাংলা

আটটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা পরস্পরকে দিয়েছেন প্রচুর পরিমাণে ঋণ। কিছু ব্যাংক আরও এক ধাপ এগিয়ে এসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালকদের আত্মীয়দের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারের বিশ্লেষণ করা আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের শেষের দিকে আটটি ব্যাংকের পরিচালকরা অন্য ব্যাংকের পরিচালকরদেরকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন, বিপরীতে তারা সেসব ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। এর বাইরে চারটি ব্যাংক পরিচালকদের আত্মীয়দের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

অর্থাৎ এই পরিচালক ও তাদের আত্মীয়রা ব্যাংকগুলো থেকে পারস্পরিক যোগসাজসে ঋণ নিয়েছেন ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের অধিকাংশই গত পাঁচ বছরে দেওয়া হয়েছে।

গত তিন মাস ধরে দ্য ডেইলি স্টার বাংলাদেশের ৫১টি তফসিলি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেছে এবং দেখা গেছে, আটটি ব্যাংক এই ধরনের ঋণ দিয়েছে।

ব্যাংকগুলো হলো—ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।

ব্যাংকগুলো এমন প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাংকিং পদ্ধতির জন্য আলোচিত এবং সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে অভিযোগ রয়েছে।

শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে এস আলম, বেক্সিমকো, নাসা ও সিকদার গ্রুপসহ শক্তিশালী ব্যবসায়িক গ্রুপগুলো রাজনীতির অপব্যবহার এবং আইনের ফাঁকগুলোর সুযোগ নিয়ে অনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে, যা দেশের পুরো আর্থিকখাতকে গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলেছে।

এই আট ব্যাংকের যেসব পরিচালক এ ধরনের ঋণের সঙ্গে জড়িত তারা সম্মিলিতভাবে দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন দিয়েছেন। আর তারা একে অপরের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, তাদের পরিশোধিত মূলধন ঋণের মাত্র পাঁচ শতাংশ।

ব্যবসায়ীক হিসাব, আর্থিক পরিস্থিতি ও ব্যাংকিং নীতি বিবেচনায় নিলে এই ব্যবসায়ীক গ্রুপগুলোর বেশিরভাগই ঋণ পাওয়ার যোগ্য ছিল না। তাই তারা একে অপরকে ঋণ দেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের পরিচালক তার নিজ ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট অংকের বেশি ঋণ নিতে পারেন না। এই নিয়ম ফাঁকি দিতেই তারা নিজের ব্যাংক থেকে অপরকে ঋণ দেওয়ার ধূর্ত পদ্ধতি বেছে নেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রবণতা নতুন না হলেও গত সাত-আট বছরে ব্যাংকিংখাতে অধিকমাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে।

একজন ব্যাংকিং বিশ্লেষক বলেন, ‘যেহেতু অধিকাংশ ব্যাংকের মালিকরাও সফলভাবে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন, তাই অন্য ব্যাংক থেকে তারা ঋণ নিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটা আটকাতে পারে না।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১৪ সালের এক সার্কুলার অনুসারে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের পরিচালকদেরকে নিজ নিজ পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই আট ব্যাংকের মধ্যে চারটি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। দুটি ব্যাংক জানিয়েছে, তারা যেসব ঋণ দিয়েছে তা আইন মেনেই অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি দুটি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ব্যাংকাররা বলছেন, এ ধরনের পারস্পরিক ঋণ দেওয়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিংখাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

তাদের মতে, এই ধরনের ঋণ ইঙ্গিত দেয় যে এই পরিচালকরা আমানতকারীদের অর্থ একে অপরকে ঋণ হিসেবে দিচ্ছিলেন। কারণ, তাদের অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন।

ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংকের তিনজন মধ্যসারির কর্মকর্তা জানান, পরিচালকদের নির্দেশেই বেশিরভাগ ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কিছুই করার ছিল না।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, বেশ কয়েকটি ব্যাংক কিছু কোম্পানিকে বড় অংকের ঋণ দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব ঋণের পরিমাণ ছিল তাদের বার্ষিক বিক্রির কয়েকগুণ পর্যন্ত।

এই তিন ব্যাংকারের একজন বলেন, ‘তাহলে তারা কীভাবে এই ঋণের অর্থ পরিশোধ করবে?’ বাকি দুজনও বলেন একই কথা।

‘অনৈতিক সুবিধা’

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে এস আলম গ্রুপ যখন থেকে ইসলামী ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দখল নেয়, তখন থেকেই এই পারস্পরিক ঋণ প্রদান শুরু করে ব্যাংক দুটি।

এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংক এর আগে থেকেই এই প্রক্রিয়ায় ঋণ দিয়ে আসছিল, কিন্তু সেটা সীমিত পরিসরে। এই ধরনের ঋণের আকার গত ১০ বছরে বহুগুণ বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকগুলো যখন পরিচালকদের আত্মীয়দের ঋণ দেয়, তখন ভয়াবহ ঝুঁকিতে পরে। কারণ, এই ঋণ অনুমোদন করার সময় ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয় না।

এই ঋণগ্রহীতারা সাধারণত ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের ক্ষেত্রে অনৈতিক সুবিধা পান। এ ধরনের ঋণ দেওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যেই ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখতে হয় তাদের যে পরিমাণ সম্পদ ও দায় আছে সেই হিসাবে তারা ঋণ পায় কি না।’

তিনি বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ঋণ দেওয়া হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।’

এক্সিম ব্যাংক

এক্সিম ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের পরিচালকদের মালিকানাধীন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আট হাজার ১১৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা পারস্পরিক ঋণের হিসাবে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে তিন হাজার ৯৮২ কোটি টাকা গেছে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন তিনটি কোম্পানিতে, যার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম)। এস আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান।

এই পারস্পরিক ঋণের অংশ হিসেবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক নাসা গ্রুপকে ঋণ দিয়েছে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে যে ঋণের স্থিতি ছিল ৭৩৪ কোটি টাকা।

এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার নিজেই এসব ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন নাসা গ্রুপের নামে। নাসা গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক থেকেও ঋণ পেয়েছে, যেখানে এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম চেয়ারম্যান।

এক্সিম ব্যাংক ইউনিটেক্স স্পিনিং এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৮০১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে নাসা গ্রুপের ঋণের স্থিতি এখন ৬৫১ কোটি টাকা।

২০২৩ সালের শেষে এক্সিম ব্যাংকে বেক্সিমকো এবং এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৬১ কোটি টাকা। বেক্সিমকোর ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান। আইএফআইসি ব্যাংকের কাছে নাসা গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৬৩৭ কোটি টাকা।

এক্সিম ব্যাংক পাওয়ারপ্যাক মতিয়ারা কেরানীগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টকে দুই হাজার ৬৭১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রিক হক সিকদার ও তার ভাই রন হক সিকদারের মালিকানাধীন সিকদার গ্রুপের একটি সহযোগী সংস্থা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জোরপূর্বক বহিষ্কার করার আগে এই দুই ভাই ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন।

২০২৩ সালের শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে নাসা গ্রুপের বকেয়া ঋণ ছিল এক হাজার ৬৩২ কোটি টাকা।

এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার পরিবারের কাছে এ ব্যাংকের প্রায় ২৫ কোটি শেয়ার রয়েছে অর্থাৎ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনে তার অবদান প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, তিনি ব্যাংকটি থেকে সর্বোচ্চ ১২৫ কোটি টাকা (পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশ) ঋণ পেতে পারতেন।

একজন অভিজ্ঞ ব্যাংকার মুহাম্মদ এ (রুমী) আলী বলেন, ‘এর ফলে ঋণ কয়েকজনের কাছে কেন্দ্রীভূত হয়ে যায় এবং এই ধরনের ঋণ ব্যাংকের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে—যদিও এই ঋণ এখনো খেলাপি দেখানো হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘যদি কোনো বড় ঋণগ্রহীতা খেলাপি হয়ে যায়, তাহলে ওই ব্যাংক দুর্বল হয়ে যাবে। এই ধরনের উদ্বেগের কারণে কোনো ভালো ব্যাংক সাধারণত এমন ঋণ অনুমোদন দেয় না।’

এক জায়গায় অধিক পরিমাণে যেন ঋণ যেতে না পারে এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একক ঋণের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ম ফাঁকি দিতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছে ব্যবসায়ীক গ্রুপগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ এ (রুমী) আলী বলেন, ‘ব্যাংকিং দিক থেকে কে ঋণের চূড়ান্ত সুবিধাভোগী তা খুঁজে বের করা কঠিন না। তাই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেই তাদের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের পরিচালকদের এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এবং এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদ ওই পরিচালকদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন।

উদাহরণস্বরূপ, স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক ইনফিনিয়া গ্রুপের কয়েকটি সংস্থাকে এক হাজার ৪৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যার চেয়ারম্যান আহসানুল আলম ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান।

বিনিময়ে ইসলামী ব্যাংক ইউনিটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদের দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার ২২১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

এই পারস্পরিক ঋণ ছাড়াও স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার ১৯৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদ ও এস আলম গ্রুপের সাইফুল আলম পরস্পর আত্মীয়।

স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকে ইউনিটেক্স গ্রুপের প্রায় সাড়ে চার কোটি শেয়ার রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনে কোম্পানির অবদান ৫০ কোটি টাকারও কম। এস আলমের বেশ কয়েকজন আত্মীয়েরও এই ব্যাংকে শেয়ার রয়েছে এবং ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনে তাদের সম্মিলিত অবদান প্রায় ২৩০ কোটি টাকা।

ইসলামী ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংক পারস্পরিকভাবে অন্যান্য ব্যাংকের পরিচালকদের চার হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

এ ছাড়া, এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম ও তার আত্মীয়রা ব্যাংকটিতে পরিশোধিত মূলধন দিয়েছেন ৩৫০ কোটি টাকা এবং এর সমপরিমাণ শেয়ার তাদের রয়েছে।

এস আলম গ্রুপ নামে ইসলামী ব্যাংকে বিনিয়োগ করা হয়নি। তাই ব্যবসায়ীক গ্রুপের কোম্পানিগুলোকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকের কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই।

অন্যান্য ব্যাংক

ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকেরও এমন পারস্পরিক ঋণ দেওয়ার ঘটনা রয়েছে প্রচুর।

উদাহরণস্বরূপ, ন্যাশনাল ব্যাংক বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে সাত হাজার ৮০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যেসব কোম্পানির মালিকরা অন্যান্য ব্যাংকের পরিচালক। বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপকে এসব ঋণ দেওয়া হয়েছে।

বিনিময়ে সিকদার গ্রুপ আইএফআইসি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছে।

একইভাবে আইএফআইসি ব্যাংক নাসা গ্রুপ ও সিকদার গ্রুপকে এক হাজার ৭৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বিনিময়ে বেক্সিমকো গ্রুপ এক্সিম ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছে।

আইএফআইসি ব্যাংক শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডকে এক হাজার ২০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। যৌথ উদ্যোগের এই প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম মালিক বেক্সিমকো।

সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে আহমেদ শায়ান রহমানের কাছে ব্যাংকটির ৪ দশমিক ১১ শতাংশ বা সাত কোটি ৫১ লাখ শেয়ার রয়েছে; যার মূল্য ৭৫ কোটি টাকা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এই ধরনের ২ হাজার ৪৪২ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন গ্রুপের এমন পারস্পরিক ঋণ এক হাজার ৬১৮ কোটি টাকার।

এস আলমের বেশ কয়েকজন আত্মীয়ের কাছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৩০ কোটি শেয়ার রয়েছে, যার অর্থ ব্যাংকে তাদের বিনিয়োগ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ৫৭০ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে।

এসব ব্যাংকের সঙ্গে গত ১৫ জুন প্রথম যোগাযোগ করে দ্য ডেইলি স্টার এবং ১২ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে পুনরায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিরা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের চিফ অপারেটিং অফিসার জাফর আলম জানিয়েছেন, তারা ব্যাংকিং নিয়ম মেনেই সব ঋণ অনুমোদন দিয়েছেন এবং এস আলম গ্রুপসহ ঋণগ্রহীতারা বড় অংকের ঋণ পাওয়ার যোগ্য।

ইসলামী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল মওলা জানান, তারা ১৯৯০ সাল থেকে নাসা গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপে বিনিয়োগ করে আসছে এবং এই দুটি গ্রুপের লেনদেন খুবই ভালো।

‘বিএনপির সাইনবোর্ডে’ চাঁদার নিয়ন্ত্রণ ও দখলের অভিযোগ

১৬ অগাস্ট ২০২৪, বিবিসি নিউজ বাংলা

সাভারের হেমায়েতপুর। মূল সড়ক থেকে একটু ভেতরে জয়না বাড়ি রোড। এখানকারই স্থানীয় এক বাজারে গিয়ে চাঁদাবাজির তথ্য পাওয়া গেলো।

দোকানিরা জানাচ্ছেন, আগে আওয়ামী লীগের লোকজন চাঁদা তুললেও এখন এর নিয়ন্ত্রণ ‘অন্য গ্রুপের’ হাতে।

প্রতিদিন দোকানপ্রতি তোলা হচ্ছে দুইশত টাকা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি বলছিলেন, “আওয়ামী লীগ এখন নাই। কিন্তু এরপরও দুইদিন চাঁদা দিলাম। আইসা কয় টাকা মাফ নাই। হ্যারা নাকি এখন টাকা তুইল্যা অন্য গ্রুপের কাছে দিতাছে।”

অন্য গ্রুপ মানে কী এমন প্রশ্নে অবশ্য খোলাসা করে কিছু বলেননি তিনি।

“আগে যে ম্যানেজার কালেকশন করতো, সে ছিল আওয়ামী লীগের ম্যানেজার। ঐ ম্যানেজারই কালেকশন করতাছে। এখন টাকা নিয়া সে কারে দেয়, সেই প্রশ্ন আর করি নাই।”

আরেকজন দোকানি জানালেন, আগের মতোই তিনি দুইশত টাকা করে চাঁদা দিচ্ছেন।

“আমি একদিন দিছি দুইশত টাকা। পরের দিন দোকান খুলি নাই, টাকাও দেই নাই। আজকে খুলছি, এখন টাকা দেয়া লাগবে।”

বাংলাদেশে কোনো একটি সরকার পরিবর্তনের পর ব্যক্তির বদল ঘটলেও দুর্নীতি, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি কিংবা দখলের যে পুরনো ব্যবস্থা, সেটার পরিবর্তন খুব একটা হয় না।

এবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও কমবেশি একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।

বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, প্রভাব খাটানো এমনকি দখলের মতো অভিযোগ উঠছে বিশেষত বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।

যদিও অন্তবর্তীকালীন সরকার তো বটেই খোদ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে এ ধরনের ঘটনায় কোনো ছাড় না দেয়ার কথা।

কিন্তু এতে করে কি চাঁদাবাজি আর দখল বন্ধ হয়েছে? বাস্তবতা অবশ্য সেটা বলছে না।

দেশে-বিদেশে কী নেই হারুনের

১৯ আগস্ট ২০২৪, কালবেলা

টাকা পাচারের পথ সহজ করতে নিজেই চালু করেন মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও আছে তার। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি দখল ও দেখাশোনার জন্য আছে তিন সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি। নামে-বেনামে অন্তত তিনটি রিসোর্টের মালিকানা আছে তার। রয়েছে একাধিক আবাসিক হোটেল। আরও অন্তত ১০টি কোম্পানির মালিক তিনি। শুধু ঢাকায়ই আলিশান বাড়ি করেছেন দুই ডজনেরও বেশি। এর বাইরে আছে অগণিত প্লট ও ফ্ল্যাট। কথিত মামা জাহাঙ্গীর আলমের নামে গড়েছেন এসব সম্পদ। দখল করা সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা দেশের বাইরে পাচার ও বিদেশে গড়ে তোলা সম্পদ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব আলাদা কমিটির। অন্তত ছয়টি দেশে ব্যবসা গড়েছেন অঢেল টাকার। বহুল আলোচিত এই কর্মকর্তার নাম হারুন অর রশীদ। বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা সর্বশেষ ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি)। সরকারি স্কেল অনুযায়ী তৃতীয় গ্রেডের চাকরিজীবী হিসেবে সর্বসাকল্যে বেতন ৮০ হাজার টাকারও কম। অথচ সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন হারুন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চাকরি জীবনের শুরু থেকেই হারুন ছিলেন বেপরোয়া। কখনোই চাকরি

বিধিমালার তোয়াক্কা করেননি। যখন যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই নানান অনিয়মে জড়িয়েছেন। প্রতিটি ধাপে প্রতারণা ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়ালেও তাকে কখনো শাস্তি পেতে হয়নি। বরং পদায়ন করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব ইউনিটে। ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, জিম্মি করে অর্থ আদায়, মারধর, জমি দখল, বাড়ি দখল, প্লট দখল, ফ্ল্যাট দখল, গুম, খুন, হত্যা, অর্থ পাচার, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, আটকে রেখে নির্যাতন, নিয়োগ বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারিসহ এহেন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে জড়াননি হারুন। তবুও বছর বছর পেয়েছেন পদোন্নতি। এসব অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জ ঘুরে ডিবি হারুনের অন্তত হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার সাবেক প্রধান হারুনের দেশে থাকা হাজার হাজার কোটি টাকার সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক ছিলেন তার কথিত মামা জাহাঙ্গীর হোসেন এবং তার সহযোগী জহির। মূলত মামার মাধ্যমে সব অপকর্ম করতেন হারুন। জায়গা, জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি রিসোর্ট সব সম্পদেই তার মামা জাহাঙ্গীরের নামে করেছেন। আবার এসব সম্পদ দেখিয়ে ব্যাংক থেকে হাতিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

আবার মানুষের সম্পত্তি দখলের পর তা বিক্রি এবং সেই টাকা দেশের বাইরে পাঠানোর দায়িত্ব পালন করতেন ডিবির খিলগাঁও জোনের এডিসি সাইফুল। বিদেশে অর্থ পাচারের সুবিধার জন্য গড়ে তোলা হয় নিজস্ব মানি এক্সচেঞ্জ। ঢাকায় এই প্রতিষ্ঠানের অফিস পুরানা পল্টনের আজাদ প্রোডাক্টসের গলিতে। কার্যক্রম পরিচালনায় দুবাইয়ে আছে আরেকটি অফিস। এই মানি এক্সচেঞ্জ পরিচালনা করেন এডিসি সাইফুল ইসলামের দুই ভাই। একজন থাকেন দেশে। আর আরেক ভাই রিফাত অবস্থান করেন দুবাই।

জানা গেছে, দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিলাসী জীবনযাপন করছে হারুনের পরিবার। এ ছাড়া বিশ্বের অন্তত ছয়টি দেশে রয়েছে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সৌদি আরবের জেদ্দায় কথিত মামা জাহাঙ্গীরের এক বন্ধুর মাধ্যমে একটি আবাসিক হোটেলে বিনিয়োগ করেছেন। এ ছাড়া দুবাইয়ে একটি পাঁচ তারকা হোটেল, এডিসি সাইফুলের ভাই রিফাতের সঙ্গে স্বর্ণ ব্যবসাসহ নামে-বেনামে রয়েছে অসংখ্য সম্পদ।

তথ্য বলছে, হারুনের স্ত্রী ২০০৭ সালের দিকে ডিবি ভিসায় আমেরিকায় পাড়ি জমান। এর কিছুদিন পর হারুনও সেখানে যান। কালবেলার হাতে থাকা নথিপত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও রয়েছে হারুনের। আছে সে দেশের পাসপোর্টও। তিনি বাংলাদেশের সরকারি পাসপোর্ট ব্যবহার না করে সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করেই বিদেশে ভ্রমণ করেন।

সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নিউ হাইড পার্ক এলাকায় স্ত্রীর নামে পাঁচ মিলিয়ন ডলারের একটি বাড়ি কিনেছেন হারুন। ওই সময় হারুনের স্ত্রীর বিপুল অর্থ লেনদেন শনাক্ত করে এর তদন্ত করেছিল এফবিআই।

ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের ৭৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ

১৯ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

সেঞ্চুরি ফুড প্রডাক্ট, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স এবং মুরাদ এন্টারপ্রাইজ ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের তিনটি শাখার গ্রাহক। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে গত জুলাই শেষে ব্যাংকের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। ঋণের কাগজপত্রে চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের যে ঠিকানা ব্যবহার করে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে, সেখানে পাওয়া গেছে আবাসিক ভবন ও ঢেউটিনের দোকান।

ঢাকার গোপীবাগে টপটেন ট্রেডিং নামে আরেক প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেওয়া হয়েছে ৫৪৮ কোটি টাকা। এ ঠিকানায় রয়েছে বাস কাউন্টার। এভাবে বেনামে ইসলামী ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে বহুল সমালোচিত এস আলম গ্রুপ। নামে-বেনামে শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে অন্তত ৭৫ হাজার কোটি টাকা। যার বেশির ভাগই পাচার করেছে এস আলম গ্রুপ। সরেজমিন অনুসন্ধান, ইসলামী ব্যাংকের নথি পর্যালোচনা ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণস্থিতি রয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকা। মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এসব ঋণের মধ্যে এখন পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ৭৪ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের অর্ধেক। সরাসরি এস আলম গ্রুপের সাত প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে ১৪ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা।

এস আলম বা সাইফুল আলমের জামাতা ও এসআইবিএলের চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদের নামে প্রতিষ্ঠিত ইউনিটেক্স গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে ৪৫৫ কোটি টাকা। নাবিল গ্রুপের নামে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা, যার বড় অঙ্কের সুবিধাভোগী এস আলম। এর বাইরে বেশির ভাগ ঋণ নেওয়া হয়েছে অস্তিত্বহীন, সাইনবোর্ডসর্বস্ব বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে। ঋণ আবেদনে দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর বা অন্যান্য ডকুমেন্টের বেশির ভাগই ভুয়া।

২ কোটিতে ভিসি, ৫০ লাখে অধ্যক্ষ পদ বিক্রি করতেন দীপু মনি

২০ আগস্ট ২০২৪, ঢাকা পোস্ট

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গত ১১ বছরে পররাষ্ট্র, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে। তার সময়ে শিক্ষা খাতে দুর্নীতির জাল ছড়িয়ে যায় সব স্তরে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীপু মনি দেশের পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কুক্ষিগত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দীপু মনির বিষয়ে খোঁজ রাখেন এমন অনেকে বলছেন, মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ- সবকিছুতে তার হাত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগের জন্য দুই কোটি এবং কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য তিনি ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন। তার সময়ে শিক্ষা খাতে এটি ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’। এসব দুর্নীতি-অনিয়ম সম্পর্কে জানলেও ভয়ে মুখ খোলেননি তার মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।

দীপু মনি ক্ষমতায় থাকাকালে দায়িত্বে থাকা দুইজন সচিবের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা এসব বিষয় জানলেও আওয়ামী সরকারে দীপু মনির দাপটের কারণে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি। দীপু মনির ভাই ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ টিপুর মাধ্যমে হতো সব নিয়োগ ও পদায়ন। বিভিন্ন কাজে বিতর্কের জন্ম দেওয়ায় একপর্যায়ে তার দপ্তর থেকে অন্যত্র চলে যান তৎকালীন এক সচিব। এছাড়া, নিজ থেকে চলে যান দীপু মনির একান্ত সচিবও (পিএস)।

পরিবহনে চাঁদাবাজির হাতবদল, আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপি

২২ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীর ইস্কাটনে বহুতল ভবন ইউনিক হাইটসের চতুর্থ তলায় ঢাকা সড়ক পরিবহন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়টি বেশ সুসজ্জিত ও সুপরিসর। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এখান থেকেই দেশের পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ করা হতো। ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর ১৩ আগস্ট কার্যালয়টির নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন বিএনপিপন্থী পরিবহন নেতারা।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এসেছে, সারা দেশে পরিবহন খাত থেকে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার চাঁদা তোলা হয়। এর মধ্যে প্রতিটি বাস-ট্রাক থেকে প্রতিদিন প্রকাশ্যে তোলা হয় ৭০ টাকা। ‘গেটপাস বা জিপি’ কিংবা সমিতির সদস্য ফি—এ জাতীয় নানা অজুহাতে দৈনিক, মাসিক ও এককালীন আরও বিপুল টাকা চাঁদা তোলা হয়। সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে সড়ক খাতের এ ব্যাপক চাঁদাবাজিরও হাতবদল হয়ে গেল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সরকার পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে। পরিবহন সমিতিগুলোর অফিস বিএনপি নেতাদের দখলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের গত সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ঢাকাসহ সারা দেশের মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণ করতেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তাঁর সহযোগী ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা মসিউর রহমান (রাঙ্গা)। সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়েছেন এনায়েত। আত্মগোপনে আছেন মসিউর রহমান।

এ সুযোগে ১০ আগস্ট কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন পরিবহন নেতা মিছিল নিয়ে এসে ইউনিক হাইটসের কার্যালয়ের তালা ভাঙেন। এরপর ১৩ আগস্ট কার্যালয়টি দখলে নেন তাঁরা। এর পরদিন সাইফুলের নেতৃত্বে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করা হয়।

সাইফুল ইসলাম আগের দুই দফা বিএনপির শাসনামলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দুবারই তাঁর সভাপতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এবারও মির্জা আব্বাসই তাঁদের পেছনে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সাইফুলের বাড়ি কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে। তাঁর পরিবহন কোম্পানির নাম ইলিয়টগঞ্জ এক্সপ্রেস। আর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ঢাকা পরিবহন নামে মির্জা আব্বাসের বাস চলাচল করত।

পরিবহনমালিকদের সূত্র বলছে, ময়মনসিংহ পথে এনা পরিবহনের ব্যানারে এনায়েত ছাড়াও সাইফুল, ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের নেতা আমিনুল হক শামীম, শ্রমিকনেতা ওসমান আলীর বাস চলত। সেগুলো এখন ‘ইউনাইটেড’ নাম নিয়ে চলছে। এর বাইরে রাজধানীর সায়েদাবাদ ও গাবতলী টার্মিনালেরও নিয়ন্ত্রণ বদলে গেছে। মহাখালী হাতবদলের পথে। সারা দেশে একই অবস্থা চলছে।

সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে তাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন। চাঁদাবাজি বন্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন। আগের মতো মির্জা আব্বাসের যুক্ত থাকার সম্ভাবনা নিয়ে সাইফুল বলেন, তিনি এখন ব্যস্ত। উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন।

কার্যালয় ও সমিতির নিয়ন্ত্রণ বদলে যাওয়ার পর খন্দকার এনায়েত উল্যাহর মালিকানাধীন ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে এনা পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিলেটসহ অন্যান্য পথে যেসব বাস চলাচল করে, সেগুলোও হুমকির মুখে। পরিবহনমালিকদের সূত্র বলছে, ময়মনসিংহ পথে এনা পরিবহনের ব্যানারে এনায়েত ছাড়াও সাইফুল, ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের নেতা আমিনুল হক শামীম, শ্রমিকনেতা ওসমান আলীর বাস চলত। সেগুলো এখন ‘ইউনাইটেড’ নাম নিয়ে চলছে। এর বাইরে রাজধানীর সায়েদাবাদ ও গাবতলী টার্মিনালেরও নিয়ন্ত্রণ বদলে গেছে। মহাখালী হাতবদলের পথে। সারা দেশে একই অবস্থা চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি দীর্ঘদিন ধরেই এক কার্যালয় থেকে পরিচালিত হতো। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মালিক সমিতির কার্যালয় ছিল মতিঝিলে বিআরটিসি ভবনে। বছর ছয়েক আগে ইউনিক হাইটসে আট হাজার বর্গফুটের অফিস নেওয়া হয়। জায়গা কেনা ও সুসজ্জিত করতে ব্যয় হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা।

এরই মধ্যে রাজধানীর সায়েদাবাদ, জয়কালী মন্দির ও গাবতলী বাস টার্মিনালে শাজাহান খানের নিয়ন্ত্রণাধীন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়গুলো বিএনপিপন্থীরা দখলে নিয়েছেন। ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে বাস ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের দুটি কার্যালয়ই হাতবদল হয়েছে। রংপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর ও জামালপুরেও শাজাহান খানের লোকজন কর্তৃত্ব হারিয়েছেন।

এর বাইরে গাবতলী বাস টার্মিনালভিত্তিক সংগঠন আছে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ সংগঠনের সভাপতি শ্যামলী পরিবহনের স্বত্বাধিকারী রমেশ চন্দ্র ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হান। পটপরিবর্তনের পর তাঁরাও কার্যালয়ে আসছেন না বলে জানা গেছে। বিএনপির স্থানীয় নেতা ও হানিফ পরিবহনের মালিক কফিল উদ্দিন এখন ওই কার্যালয় নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই সমিতি নিয়ন্ত্রণ করতেন দলটির সাবেক সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ।

অবশ্য কফিল উদ্দিন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি সমিতির কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেননি। নেতারা আসছেন না। তাই কর্মচারীরাই এখন সমিতি চালাচ্ছেন।

বরিশালে আওয়ামী লীগের ‘সাম্রাজ্য’ যেভাবে বিএনপির দখলে

২২ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বরিশালের দলের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এত দিন তাঁদের দখলে থাকা বাজার, মাছঘাট, বালুমহালসহ অন্যান্য স্থাপনা একে একে দখলে নিচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের দখল, নৈরাজ্য, লুটপাট থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশনা দিলেও কাজে আসছে না। বরিশালে এ ধরনের নানা অভিযোগ ওঠায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস আক্তার জাহান শিরিনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে।

বরিশালে এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে। ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের লোকজনের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালান। অনেক সাধারণ মানুষের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও হামলার ঘটনা ঘটে। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর বালুমহাল, মাছঘাট, লঞ্চ ও খেয়াঘাট এবং চরের জমি দখলের ঘটনা শুরু হয়। 

স্থানীয় বেশ কয়েকজনের ভাষ্য, বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিকে জেলা ও উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন মেহেন্দীগঞ্জের লঞ্চঘাট, দক্ষিণপাড়ের খেয়াঘাট, তাজুলের খেয়াঘাট, পোত্তাখালী খেয়াঘাট, উলানিয়া লঞ্চঘাট, হিজলা লঞ্চঘাট, পুরান হিজলা খেয়াঘাট, হরিনাথপুর খেয়াঘাটসহ ছোট-বড় সব খেয়াঘাটের ইজারা দেওয়া হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় প্রভাব খাটিয়ে এসব ঘাটের ইজারা নিতেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ও তাঁদের সমর্থকেরা। কিন্তু সরকার পতনের পর থেকে এসব ঘাটের নিয়ন্ত্রণ এখন বিএনপির নেতা ও তাঁদের অনুসারীদের হাতে। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া তীরের শত শত মাছঘাটের দখলও বিএনপির নেতা-কর্মীদের হাতে।

বিপুর মাফিয়া সিন্ডিকেট

২২ আগস্ট ২০২৪, যুগান্তর

আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে চলেছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। এর মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এসব ঘটনাকে লুটপাটের মহোৎসব হিসাবে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব অপকর্মের নেপথ্যে ছিল একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট। এক যুগ ধরে এর (সিন্ডিকেট) নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসে সব অপকর্মকে নির্বিঘ্ন করতে যারা কলকাঠি নাড়তেন, তারা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ ও আহমেদ কায়কাউস। যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জানা যায়, একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া থেকে শুরু করে অনুমোদন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টি ধাপে ওই সিন্ডিকেটকে টাকা দিতে হতো। এর মধ্যে ছিল প্ল্যানিং, সাইট ভিজিট, মেশিনপত্র অনুমোদন দেওয়া, নেগোসিয়েশন, প্রকল্পের সাইট সিলেকশন, মাটি ভরাট, জমি ক্রয়, বিদ্যুৎ ক্রয়ের দরদাম ঠিক করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা বা কমিশনিং, মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানো, ক্রয় অনুমোদন, বিল অনুমোদন, বিল ছাড় করা-অর্থাৎ প্রতিটি খাতে এ সিন্ডকেটকে টাকা দিতে হতো।

এছাড়া পিডিবি চেয়ারম্যান কিংবা মন্ত্রী স্বাক্ষর করলে সেই স্বাক্ষরের পাশে সিল দেওয়ার জন্যও ঘুস দিতে হতো। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন কোম্পানির নানা কেনাকাটা এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পারচেজসহ লোভনীয় কমিটিতে পছন্দের কর্মকর্তাদের রাখা, পদোন্নতি, পোস্টিং দিয়েও এ চক্র হাতিয়ে নিত কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা পর্যদে যাওয়ার জন্যও এ সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিত মোটা অঙ্কের টাকা। এছাড়া প্রকল্পের বিরুদ্ধে নিজস্ব লোকদের দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় রিপোর্ট করিয়ে প্রকল্পের পিডি বা কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্ল্যাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য ছিলেন পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানসহ সাবেক দুই চেয়ারম্যান ও একাধিক প্রধান প্রকৌশলী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন, প্রতিমন্ত্রীর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু এবং সাবেক সেতুমন্ত্রীর এক ভাতিজা। আর সিন্ডিকেটের অবৈধ আয়ের হিসাবনিকাশের দায়িত্বে ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস মুজাহিদুল ইসলাম মামুন, কেরানীগঞ্জের প্রভাবশালী শাহীন চেয়ারম্যান এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আসলাম।

তারা সবার ক্যাসিয়ার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পাশাপাশি নানা কাজের মূল কারিগর ছিলেন পিডিবির বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের বিভিন্ন স্তরের নেতা। আলোচ্য সময়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ১০০টির বেশি কোম্পানির পকেটে ঢুকেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। আরও জানা যায়, দুর্নীতির নানা পরিকল্পনা যারা তৈরি করতেন অর্থাৎ পিডিবির বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতাদের জন্য খোদ পিডিবিতে রয়েছে আলাদা একটি অফিস।

সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত চলত অবৈধ কর্মকাণ্ড ও লেনদেন। ওই রুম থেকে পরিচালনা হতো অফিসারদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং আর পদোন্নতি বাণিজ্য। হাতবদল হতো শত শত কোটি টাকা। ক্ষমতায় থাকাকালীন সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিয়েছেন সামিট গ্রুপকে। আর এ কারণেই পুরস্কার হিসাবে অবসরের পর তিনি মুখ্য অ্যাডভাইজারের চাকরি পান সামিটে।

আবুল কালাম আজাদ সামিট গ্রুপের অ্যাডভাইজার থাকাকালীন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সঙ্গে বিরোধে জড়ান। তার ক্ষমতার দাপটে বিদ্যুতের দাম বেশি দেখিয়ে সামিট গ্রুপ আরইবির কাছে থেকে ১২শ কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নেন। এ নিয়ে মামলা হয়। মামলায় আরইবি জয়ী হলেও আবুল কালাম আজাদের ক্ষমতার দাপটে সামিট গ্রুপ এই টাকা দিচ্ছে না।

জানা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন প্রজন্মের নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। আওয়ামী লীগের দলীয় থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর রিসার্চ ইনফরমেশন বা সিআরআই-এর পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন। শেখ হাসিনার জীবনের ওপর নির্মিত “হাসিনা : এ ডটার’স টেল” তথ্যচিত্রটির একজন প্রযোজকও ছিলেন বিপু।

সংশ্লিষ্টদের অভিমত-বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে কৃতিত্বের দাবিদার আওয়ামী লীগ সরকার ও নসরুল হামিদ বিপু। তবে সরকারের এই সাফল্য ম্লান হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে। পরিবারের লোকজন ছাড়াও এ সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন তার সাবেক একান্ত সচিব (পিএস) রোকন উল হাসান, সেলিম মোল্লা, পিডিবির সাবেক দুই চেয়ারম্যান আলমগীর কবির ও খালিদ মাহমুদ। এছাড়া সাবেক আইপিপি সেলের প্রধান ও পিডিবির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া, বাংলাদেশ চায়না মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম, পিজিসিবির সাবেক এমডি মাসুদ আল বিরুনী।

এছাড়া পিডিবির বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সাবেক সভাপতি এবিএম সিদ্দিক, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি রায় ও ক্রয় বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ। তারা সবাই মিলে বিদ্যুৎ আর আইটি সেক্টরে গড়ে তুলেছিলেন একটি শক্তিশালী মাফিয়া সিন্ডিকেট। আর হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ।

বানোয়াট পরিসংখ্যানের প্রধান পরিকল্পনাকারী লোটাস কামাল

আগস্ট ২৫, ২০২৪, বণিক বার্তা

সরকারি পরিসংখ্যান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরও দেশে আশানুরূপ কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় অর্থনীতির মূল সূচকগুলো হয় প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৪ সালে পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার পর পরিসংখ্যান বিভ্রাট আরো প্রকট হয়। মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডাটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে পাঁচ-ছয়জনের একটি সিন্ডিকেট। অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকের তথ্য ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর অভিযোগ ওঠে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও বাড়তে থাকে পরিসংখ্যানগত পার্থক্য। এ প্রবণতা অব্যাহত ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পরবর্তী মেয়াদেও। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যেই কেবল সাড়ে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বেশি দেখানো হয়েছিল। এসব বানোয়াট পরিসংখ্যানের প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে মনে করা হয় লোটাস কামাল তথা তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামালকে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল ১৯৭০ সালে পুরো পাকিস্তানের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে কমার্সে স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ সালে অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। আইন শাস্ত্রেও রয়েছে তার স্নাতক ডিগ্রি। মেধার স্বীকৃতি হিসেবে শিক্ষাজীবনেই তিনি ‘লোটাস’ উপাধি পেয়েছিলেন। তবে তার এ জ্ঞানকে ভালো কাজে ব্যবহার হয়নি বলে মনে করেন অনেকেই। ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতায় এলে মিথ্যা তথ্য তৈরির পুরস্কার হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কামালকে ২০১৯ সালে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে বসান শেখ হাসিনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক অর্থনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল দেশের পরিসংখ্যান, যা পরিচালিত হতো শীর্ষ পর্যায় থেকে। ফলে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি দেখানো হতো। কিন্তু সামষ্টিক তথ্যের সঙ্গে যার কোনো মিল ছিল না। মূলত রাজনৈতিক কারণে পদ্ধতিগত পরিবর্তন এনে সরবরাহ করা হয় বিকৃত পরিসংখ্যান। এসব ভুল তথ্যের ভিত্তিতে নীতি নির্ধারণের কারণেই ধাক্কা লেগেছে দেশের অর্থনীতিতে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যানগত পারফরম্যান্স বিবেচনায় স্কোর প্রকাশ করে থাকে বিশ্বব্যাংক। ২৫টি সূচক বিবেচনায় এমন তালিকা তৈরি হয়। ২০১৪ সালে প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিক্যাল ক্যাপাসিটি ইন্ডিকেটরে বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ছিল একশর মধ্যে ৮০ আর পদ্ধতিগত স্কোর ৭০। কিন্তু এরপর থেকে দুটি স্কোরই ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। ২০১৮ সালে সার্বিক স্কোর দ্রুত হ্রাস পেয়ে ৬২-তে নেমে যায়। ২০২০ সালে নেমে আসে ৬০-এ, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার গড় স্কোর ছিল ৬৯। সে সময় মেথডোলজি বা পদ্ধতিগত সূচকে সবচেয়ে বড় পতনের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। এ সূচকে ২০১৪ সালের ৭০ স্কোর থেকে ২০২০ সালে তা অর্ধেকের বেশি কমে ৩০-এ নেমে আসে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের সব ধরনের সরকারি পরিসংখ্যান তৈরি ও প্রকাশ করে থাকে। এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পরই বিবিএসে নিজের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় সংস্থাটির মাধ্যমে নিয়মিত মাসিক মূল্যস্ফীতি প্রকাশের দায়িত্বটিও তিনি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। পরবর্তী সময়ে বিবিএসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিপিআই শাখার জনবলেও পরিবর্তন আনা হয়। পদায়ন করা হয় মুস্তফা কামালের আশীর্বাদপ্রাপ্তদের। তৎকালীন মন্ত্রীর এসব কাজ দেখভাল করতেন মাসুদ রানা চৌধুরী নামে অর্থনৈতিক ক্যাডারের এক বিশেষ সহায়ক। তার মাধ্যমেই মুস্তফা কামাল যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিবিএসের বর্তমান ও সাবেক পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দেড় দশকে প্রতিষ্ঠানটিতে কথা বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না। পরিসংখ্যান নিয়ে কেউ ন্যূনতম আপত্তি তুললে বা কথা বলার চেষ্টা করলে ঢাকার বাইরে বা কম গুরুত্বপূর্ণ শাখায় বদলি করে দেয়া হতো। এমনকি বিনা কারণে হয়রানির জন্য বিভাগীয় মামলাও করা হয়। আর সংস্থাটির বিভিন্ন শাখা থেকে শুরু করে উপমহাপরিচালক ও মহাপরিচালক হয়ে সচিবের দপ্তরে চলত পরিসংখ্যান ইঞ্জিনিয়ারিং। এমনকি কখনো কখনো মূল্যস্ফীতির এসব ফাইল মন্ত্রী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনও নিতে হতো। অথচ বিধি অনুযায়ী বিবিএসের সব তথ্য প্রকাশের দায়িত্ব মহাপরিচালকের।

তৎকালীন বিবিএসের প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যগত পার্থক্য বেড়েই চলছিল। ২০১৮ সালে প্রবৃদ্ধির তথ্যে বিস্তর ফারাক নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান মুস্তফা কামাল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। যদিও লোটাস কামাল ওই বছরের এপ্রিলে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ হবে বলে দাবি করেন। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ছিল, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে বড়জোর ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এডিবির পক্ষ থেকেও সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা হয়।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের ডাটাকে চ্যালেঞ্জ করে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘‌আমাদের ডাটাই সঠিক।’ সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাংককে ‘আলটিমেটাম’ দিয়ে অচিরেই বিবিএসের সঙ্গে বসে ডাটা সংশোধনের জন্য সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এমনকি নিজে ফোন করে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদের চাপ প্রয়োগ করেছিলেন তা দ্রুতই সংশোধনের জন্য।

কমার্স ব্যাংক সরকারি, নিয়ন্ত্রণ ও লুট করেছে এস আলম গ্রুপ

২৫ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

সরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকটির ৫১ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার। অথচ এ ব্যাংকের পুরো নিয়ন্ত্রণ বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের হাতে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ব্যাংকটিতে চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকও নিয়োগ দিয়েছে এই গ্রুপ। তাদের মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আটকা পড়েছে ব্যাংকটির ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের।

জানা গেছে, এস আলম গ্রুপ কমার্স ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ নেয়নি। তাদের মালিকানাধীন অন্য ব্যাংকগুলোয় টাকা জমা রেখেছে কমার্স ব্যাংক। সেসব ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে টাকা নেয় এস আলম গ্রুপ। এতে কমার্স ব্যাংকের ৬১০ কোটি টাকা আটকা পড়েছে। এ ছাড়া এস আলম ও প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আটকে আছে ৭০০ কোটি টাকা। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও এসব টাকা ফেরত পাচ্ছে না কমার্স ব্যাংক। বেশির ভাগ বিনিয়োগ থেকে সুদও পাচ্ছে না।

এদিকে কমার্স ব্যাংক থেকে কৌশলে অন্য ব্যাংকে টাকা নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি এস আলম গ্রুপ, ব্যাংকটিতে প্রায় ৬০০ জনবলও নিয়োগ দিয়েছে তারা। এর বেশির ভাগই গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকার। সার্বিকভাবে আধা সরকারি এই ব্যাংকের কার্যক্রম থমকে আছে।

বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন এস আলম

২৬ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এসব সুবিধা দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থ পাচারের পথ সহজ করা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জবাবদিহি এড়াতে এমন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এস আলস পরিবার যেদিন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন, সেইদিনই আবার বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়েছিলেন। নাগরিকত্ব ত্যাগ ও স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ বাংলাদেশে জটিল প্রক্রিয়া হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই দিন সন্ধ্যায় অতি গোপনে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই কাজটি করা হয়।

তবে নাগরিকত্ব ত্যাগ ও আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করতে হলে পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হলেও কীভাবে একই দিনে দুটি কাজ সম্পন্ন হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনপত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম এবং আসাদুল আলম মাহির বাংলাদেশে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের এই সুবিধা অর্জনের সুযোগ বা প্রয়োজন নেই। নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বলেই তারা স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিলেও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে এস আলম পরিবারের সদস্যরা জনপ্রতি বিনিয়োগ দেখিয়েছেন মাত্র ৭৫ হাজার ডলার।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এস আলম ও তার পরিবার এমন কোন দেশে নাগরিকত্ব নিয়েছেন যে দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদিত নয়। আবার তিনি পরিবারসহ বাংলাদেশের স্থায়ী আবাসিক সুবিধা নিয়েছেন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে, এটা নিশ্চিত। বাংলাদেশে বিদেশি কেউ বিনিয়োগ করলে যে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়, তা এড়াতেই এস আলমের পরিবার এই পন্থা অবলম্বন করেন। একই সঙ্গে দুই দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার মাধ্যমে অনেকে অর্থ পাচার করেন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে যদি কেউ বিদেশি বিনিয়োগ করে তবে তাকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। বিনিয়োগের পরিমাণ হিসেবে কমপক্ষে ৭৫ হাজার হাজার মার্কিন ডলার হতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভারী শিল্পে বিনিয়োগ থাকতে হবে। এ ছাড়াও বিনিয়োগের ছাড়পত্র দেয়- এমন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সনদ প্রয়োজন হয়।

সর্বোপরি পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের অনেকেই বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। পরবর্তী সময়ে তাদের এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, স্থাবর সম্পত্তির বিক্রির সুবিধার্থে অনেকেই দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। অনেকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতিও গ্রহণ করে থাকেন।

এস আলম পরিবারের সদস্যদের স্থায়ী বসবাসের পৃথক অনুমোদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের বাসিন্দার মতো সব অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও যোগ্যতার অধিকারী হবেন এবং বাংলাদেশের নাগরিকের মতোই দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকবে। তবে সরকার কর্তৃক অর্পিত বা পরিত্যক্ত ঘোষিত কোনো সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না। বাংলাদেশে শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত অর্থ আবেদনকারী তাহার স্বদেশে অথবা বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোনো দেশে ফেরত বা প্রেরণ করিতে পারবে না, অন্যথায় তার স্থায়ী আবাসিক সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।’

এস আলমের পিএসের প্রতিষ্ঠানের হিসাবেই শতকোটি টাকা

২৮ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

আলোচিত ও বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের (এস আলম) ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) আকিজ উদ্দিন–সংশ্লিষ্ট চার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে ৯৯ কোটি টাকার হদিস পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)। এসব হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এর ফলে এসব হিসাব থেকে টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

এস আলমের ব্যক্তিগত সচিবের পাশাপাশি আকিজ উদ্দিন ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক। সরকার পরিবর্তনের পর তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ব্যাংকটি। গতকাল মঙ্গলবার তাঁর পদত্যাগ ব্যাংকটির পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদিত হয়।

জানা গেছে, সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে স্থায়ী হওয়ায় সাত বছর ধরে তাঁর পক্ষে গ্রুপের ব্যাংকগুলো পরিচালনা করতেন আকিজ উদ্দিন। এসব ব্যাংকে নিয়োগ, কেনাকাটা, পদোন্নতি ও ঋণ বিতরণ—সবই তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। গ্রুপটির পক্ষে নামে-বেনামে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থাকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রভাবিত করতেন তিনি। নিজেকে গ্রুপের বিকল্প চেয়ারম্যান হিসেবেও পরিচয় দিতেন। তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কক্ষ ও গভর্নরের বাসভবনেও দেখা যেত। তাঁর প্রভাবের মাত্রা এতটাই ছাড়িয়েছিল যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়োগ ও কর্মকর্তাদের পদায়নও তিনি ঠিক করে দিতেন। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তাঁর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। এস আলম গ্রুপের পাশাপাশি নিজের আত্মীয়স্বজনের নামেও তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে নেন। দেশে ও বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

সাভারে দখলবাজিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা, বাড়ছে ক্ষোভ

২৮ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার সাভারে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে শিল্পকারখানার ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা দখল, জমি দখল, চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ডে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নাম এসেছে।

ক্ষমতার পালাবদলের পর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে চলে যান। অন্যদিকে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ৬ আগস্ট থেকে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা মহড়া দিচ্ছেন, পথসভা করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে আসায় অনেকে খুশি হয়েছিলেন। তবে এরই মধ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তাঁদের অনেকে। ফলে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে মানুষের ক্ষোভও বাড়ছে।

শিমুলিয়া ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদা তুলছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা

২৯ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জ লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ফেরিঘাট, মাছঘাট ও ট্রলারঘাট দখলে নিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বৈধ ইজারাদারের লোকজনকে মারধর করে ঘাট থেকে বের করে দিয়ে সেখান থেকে টাকা তুলছেন।

উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাউসার তালুকদারের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা এ কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ইজারাদার সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে শিমুলিয়া ফেরিঘাটটি যাত্রী পারাপারের জন্য ব্যবহার হতো। সেতু উদ্বোধনের পর ঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। তবে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে বেড়াতে আসেন। চলতি অর্থবছরে বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে লৌহজং উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মোল্লা প্রায় ১ কোটি ৪২ লাখ টাকায় ঘাটের ইজারা নেন। সেই সঙ্গে আলাদা করে ৮ লাখ টাকায় এখানকার দুটি ট্রলার ঘাট এবং ১০ লাখ টাকায় একটি মাছ ঘাটেরও ইজারা নেন তিনি। সরকারি বিধি মেনে ঘাটের কার্যক্রম চলছিল।

ইজারাদার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। এ সুযোগে কুমারভোগ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাউসার তালুকদারের নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের একটি দল ঘাটের সব ব্যবসা তাঁদের দখলে নেন। তাঁরা ইজারাদারদের লোকজনকে টাকা তুলতে বাধা দেন। ১৬ আগস্ট ঘাটের পার্কিং, ট্রলার ঘাট, দোকান, রেস্তোরাঁ থেকে তাঁরা (কাউসারের লোকজন) নিজেরাই টাকা তুলতে শুরু করেন।

মহড়া চাঁদাবাজি মারধরে নগর ভবনে অস্থিরতা

৩০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে নিজেদের প্রভাব দেখাতে দলবল নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে মহড়া দিচ্ছেন বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মী। যাঁরা মহড়া দিচ্ছেন, তাঁদের একটি অংশ দরপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার একজন ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে মারধর করেছেন। এ ছাড়া গত দুই সপ্তাহে তাঁরা নানাভাবে লাঞ্ছিত করেছেন সিটি করপোরেশনের শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচজন কর্মকর্তাকে।

এর বাইরে একজন কর্মকর্তাকে তাঁর কক্ষ থেকে বের করে সবার সামনে মারধর করা হয়েছে। কয়েকজন কর্মকর্তার কাছ চাঁদা আদায় করার তথ্যও পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নগর ভবনে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা কাজ করছে। অনেকে ভীতির মধ্যে রয়েছেন। এর ফলে দাপ্তরিক কাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

দক্ষিণ সিটির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র বলছে, বিএনপিপন্থী একজন শ্রমিকনেতা করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগের কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়েছেন তাঁকে না জানিয়ে কাউকে বদলি করা যাবে না। পদোন্নতি ও পদায়ন বন্ধ রাখতে হবে। ওই শ্রমিকনেতা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কর্মী।

রাতে এস আলমের ১৪ বিলাসী গাড়ি গোপনে সরানো হল বিএনপি নেতাদের তদারকিতে (ভিডিও)

৩০ আগস্ট ২০২৪, চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মধ্যরাতে চট্টগ্রামের দুই শীর্ষ বিএনপি নেতার উপস্থিতিতে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের মালিকানাধীন একটি ওয়্যারহাউস থেকে একে একে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি। এগুলোর মধ্যে আছে বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ ও অডি ব্যান্ডের গাড়িও। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা সন্দেহ করছেন, গাড়িগুলোর ভেতরে বিপুল পরিমাণ টাকা ছিল। কারণ শুধু গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সেখানে সশরীর উপস্থিতি ও তদারকি করার কথা নয়।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরী সংলগ্ন কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক এলাকায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন একটি ওয়্যারহাউসের ভেতর থেকে বিলাসবহুল দামি গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের ড্রাইভার মনসুর গাড়ি বের করার বিষয়টি তদারকি করছিলেন।

গাড়িগুলো কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলতে পারেননি। তবে তারা জেনেছেন, গাড়িগুলো সীতাকুণ্ডের দিকে গেছে। কিন্তু চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় ছিল, সেটা তারা জানতে পারেননি।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, অন্তত ১৫ জনের একটি দল এস আলম গ্রুপের ওয়্যারহাউসের সামনে আসে। একই সময়ে আরও তিনটি গাড়ি সেখানে পৌঁছায়। সেখান থেকে একে একে নামেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, পটিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলু এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়ন।

এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের মেয়ের শ্বশুর মীর গ্রুপের আবদুস সালাম বিএনপি নেতা এনামুল হক এনামের মামাতো ভাই।

গুলশান-বনানীতে হাতবদলে ‘ময়লার মধু’ এখন বিএনপির কাছে

৩১ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

শুধু বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁর বর্জ্য সংগ্রহের নামে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে অর্থ লুটপাটের একটি চক্র গড়ে উঠেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। এই চক্রে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা ছিলেন। বর্জ্য সংগ্রহ বা ময়লা–বাণিজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা উঠত ঢাকা উত্তর সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান ও বনানী নিয়ে এই ওয়ার্ড।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে গুলশান ও বনানী এলাকার ময়লা–বাণিজ্যে হাতবদল হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের জায়গায় এখন ময়লা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। আগে সেখানে ওয়ার্ডে ময়লা সংগ্রহের কাজ করা ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের ৩১টিরই মালিক ছিলেন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের পদধারী নেতারা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁরা আত্মগোপনে আছেন। গুলশান–বনানীর ময়লা–বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে মাসে তাঁরা তুলতেন অন্তত তিন কোটি টাকা।

প্রথম আলোর অনুসন্ধান, সরেজমিন পর্যবেক্ষণ এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গুলশান-বনানীর ময়লা–বাণিজ্যের মূল নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আলীম নকী। তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার (কাউন্সিলর) ছিলেন। তাঁর অধীন বনানীতে (১-২৮ নম্বর সড়ক) ময়লা সংগ্রহের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুল মমিনকে। তাঁর সঙ্গে আছেন বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক শাহজাহান সরকার।

■ গুলশান–বনানী এলাকায় ময়লা সংগ্রহকারী ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন আ.লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

■ সরকারের পতনের পর গুলশান-বনানীর ময়লা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কিছু নেতা–কর্মী।

অন্যদিকে গুলশান–১ ও ২ নম্বরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুবদলের স্থানীয় নেতা হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আনোয়ার ওরফে দাদা আনোয়ারকে। তাঁর সঙ্গে আছেন গুলশান থানা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল জলিল। আবার জলিলের সঙ্গে কাজ করছেন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মোহাম্মদ স্বপন ও লিটন (স্থানীয়ভাবে পান লিটন নামে পরিচিত)।

সরকার পরিবর্তনে শিল্পকারখানায় চাঁদাবাজিরও হাতবদল

৩১ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের একটি বস্ত্রকলে ৩৫ থেকে ৪০ জন তরুণ হানা দেন। তাঁরা নিজেদের একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে কারখানার কর্মচারীদের বলেন, এখন থেকে অন্য কারও কাছে কারখানার ঝুট বা ফেলনা উপকরণ বিক্রি করা যাবে না। বিক্রি করতে হলে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। যোগাযোগের জন্য ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ছয়জন নেতার নাম ও মুঠোফোন নম্বর লেখা একটি কাগজ দিয়ে আসেন তাঁরা।

সেই কাগজের থাকা প্রথম নামটি রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি মো. খোকন মিয়া। জানতে চাইলে তিনি গত সোমবার প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন, তাঁদের কর্মীরা বিভিন্ন কারখানায় গিয়েছিলেন। খোকন দাবি করেন, ‘আমরা কোনো চাঁদাবাজি চাই না। অতীতে যেভাবে কারখানার ঝুট বিক্রি হয়েছে, আমরা সেভাবেই সমঝোতার মাধ্যমে কাজটি করতে চাই।’

মিলে সুতা উৎপাদনের পর ঝুট হিসেবে তুলা বের হয়। বিদায়ী সরকারের আমলে কারখানা থেকে তুলা বের করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের গাড়িপ্রতি ১০ হাজার টাকা দিতে হতো বলে জানালেন রূপগঞ্জের এক বস্ত্রকল–মালিক। তিনি জানান, সুতা উৎপাদনে ব্যবহৃত তুলার ৭ থেকে ৮ শতাংশই ওয়েস্টেজ হয়। তার মধ্যে ৪ শতাংশ ঝুট হিসেবে বিক্রি করতে হয়।

৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন ধরনের সরবরাহ ব্যবসার হাতবদল শুরু হয়। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা তৈরি পোশাক কারখানা ও বস্ত্রকলের ঝুট ব্যবসা, শ্রমিকদের নাশতা সরবরাহের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পকারখানার ফেলনা উপকরণ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। ক্ষমতার পরিবর্তনের পর তাঁরা গা ঢাকা দিয়েছেন। এই সুযোগে বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সেসব ব্যবসার দখল নিতে মাঠে নামেন।

কয়েকজন শিল্প উদ্যোক্তা বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন কারখানার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। কোথাও কোথাও নিজেদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় তাঁরা নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি। বিএনপির নেতাদের নামে কিছু ব্যবসায়ীর কাছে মোটা অঙ্কের নগদ টাকা চাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আবার গা ঢাকা দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ নামে-বেনামে ফোন করে ঝুটের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হুমকি দিচ্ছেন। তাই রাজনীতির পটপরিবর্তন হলেও চাঁদাবাজি থেকে আদৌ মুক্তি মিলবে কি না, এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা।

চৌধুরী নাফিজ সরাফাত: রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যাঁর উত্থান

৩১ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ১৯৯৯ সালে চাকরিজীবন শুরু করেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। বিদেশি এ ব্যাংকে থাকার সময় হঠাৎ করেই বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হন তিনি। এক ব্যাংকে চাকরি আর অন্য ব্যাংকে পরিচালক—এমন প্রশ্ন ওঠার পর তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেন।

২০০৮ সালে তিনি যোগ দেন আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে। হন কনজ্যুমার ব্যাংকিংয়ের প্রধান। ভিজিটিং কার্ডে তিনি নিজের পরিচয় ‘এমডি, কনজ্যুমার ব্যাংকিং, আইসিবি গ্লোবাল হোল্ডিংস’ ব্যবহার করতেন।

তার আগেই চৌধুরী নাফিজ সরাফাত একটি মিউচুয়াল ফান্ডের লাইসেন্স নেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে। লাইসেন্সের জন্য প্রথমে নিজের নামে আবেদন করেছিলেন। যেহেতু ব্যক্তির নামে লাইসেন্স দেওয়া হয় না, তাই বিএসইসি সদস্য মোহাম্মদ আলী খানের পরামর্শে পরে তিনি কোম্পানি গঠন করেন। এ কোম্পানিরই নাম বাংলাদেশ রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, যাতে তাঁর মালিকানা ২৫ শতাংশ। বাকি মালিকানা অন্য অংশীদার হাসান ইমামের। বিএসইসিতে তখন থেকে যাঁরা চাকরি করতেন, তাঁরা এসব তথ্য জানিয়েছেন, যা নিশ্চিত করেন নাফিজ সরাফাতও।

গোপালগঞ্জের মানুষ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে ‘কাজিন’ হিসেবে অন্যদের কাছে পরিচয় দিতেন।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন খাতের অন্যতম প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন নাফিজ সরাফাত। শুরুতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন। পরে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সঙ্গে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্কের চিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। গোপালগঞ্জের এই ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে ‘ফুফু’ বলে সম্বোধন করতেন। আর সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ছিলেন তাঁর ‘চাচা’। গোপালগঞ্জের মানুষ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে ‘কাজিন’ হিসেবে অন্যদের কাছে পরিচয় দিতেন।

■ চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ছিলেন বিদেশি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। বাড়ি গোপালগঞ্জে।

■ শেখ হাসিনাকে নাফিজ সরাফাত ‘ফুফু’ ডাকতেন, আ হ ম মুস্তফা কামালকে ডাকতেন ‘চাচা’। 

শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে নাফিজ সরাফাতের সম্পর্কের কথা ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের প্রায় সবারই জানা।

মাত্র ১৩ বছরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক, পুঁজিবাজার, বিদ্যুৎ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, গণমাধ্যমসহ আরও কিছু খাতে রহস্যজনক কিন্তু অপ্রতিরোধ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পান নাফিজ সরাফাত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, তিনি মালিক হন হাজার কোটি টাকার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নাফিজ সরাফাতের সম্পদ অনুসন্ধান করতে দুদক তিন সদস্যের দল গঠন করেছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানিতে যথেচ্ছ লুট

৩১ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় খুচরায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। অর্থাৎ, গত সাড়ে ১৫ বছরে খুচরায় বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৪২ শতাংশ। ২০০৯ সালে গ্যাসের দুই চুলার মাসিক বিল ছিল ৪৫০ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৮০ টাকা। অর্থাৎ গেল সাড়ে ১৫ বছরে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৪০ শতাংশ। এই সময়ে বিদ্যুৎ খাতের লোকসান ঠেকেছে ২ লাখ কোটি টাকার ওপরে। বিপরীতে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বিপুল লোকসানের জন্য বিশ্লেষকরা আওয়ামী লীগ সরকারের অপরিকল্পিত উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও দায়মুক্তি আইনের আড়ালে দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা প্রদানকে দায়ী করেন। পাশাপাশি ওই সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন মহলের দুর্নীতি এ খাতকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করেন তারা।

দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতিকে পুঁজি করে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ বিধান পাস করা হয় ২০১০ সালে। এই আইনে টেন্ডার ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। এর পর দেশের ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদার অবাস্তব প্রাক্কলন করে একের পর এক ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রয়োজন না থাকলেও অনেক প্রকল্প দেওয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ ‍উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকসহ প্রায় দুই ডজন সংসদ সদস্য সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা প্রকল্পের কাজ পান।

সামিট, ইউনাইটেড পাওয়ার, বাংলাক্যাট, মোহাম্মদী গ্রুপ, ডরিন, বারাক, সিনহাসহ বেশ কিছু কোম্পানি একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে। যদিও এত বেশি কেন্দ্রের প্রয়োজন ছিল না বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। ফলে অনেক কেন্দ্রই নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শত শত কোটি টাকা আয় করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আদানি ও রিলায়েন্সকে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ ব্যবসা। রাশিয়া ও চীনের কোম্পানিকে গ্যাসকূপ খননের কাজ দেওয়া হয় বেশি দামে। জনগণের প্রবল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সুন্দরবনঘেঁষে ভারতের সঙ্গে যৌথ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। দেশীয় উৎপাদন ও অনুসন্ধানের দিকে নজর না দিয়ে গ্যাস সংকটকে পুঁজি করে অসৎ উদ্দেশ্যে এলএনজি আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। পছন্দের কোম্পানিকে এলএনজি ব্যবসায় যুক্ত করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

গাজীপুরে ময়লা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০

৩০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ময়লা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জেরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষ হয়েছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার মৌচাক এলাকায় এ সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, মৌচাক বাজার সমিতির সভাপতি মাসুদ পারভেজ কয়েক বছর ধরে মৌচাক শিল্পাঞ্চলের প্রতিটি বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহসিন সরকারের ভাই। মাসুদ পারভেজ তাঁর কর্মচারী খাইরুল ইসলামকে দিয়ে ময়লা–বাণিজ্য সামলাতেন। প্রতি বাড়ি থেকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আদায় করতেন খাইরুল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই ময়লা–বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন মৌচাক ইউনয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি উমর আলী ফারুক। উমর আলী ফারুকের পক্ষের লোকজন খাইরুলের কাজে বাধা দিলে মাসুদ পারভেজ ও তাঁর ভাই মোহসিন সরকার এগিয়ে আসেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ সন্ধ্যায় মৌচাক বাজার এলাকায় মাসুদ পারভেজের লোকজন এবং উমর আলীর লোকজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।

এস আলমের গাড়িতে এলাকায় গিয়ে সংবর্ধনা নিলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন

০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

আলোচিত ও সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের মালিকানাধীন গাড়িতে চড়ে নিজ এলাকায় গিয়ে সংবর্ধনা নিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ। গত বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে তিনি কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর দলের নেতা-কর্মীদের গাড়িবহরের সঙ্গে পেকুয়ায় পৌঁছান তিনি।

কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদের গাড়িবহর পেকুয়ায় পৌঁছানোর বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ রকম একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যে গাড়িতে (জিপ) চড়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার থেকে পেকুয়ায় আসেন, সেটির নম্বর চট্ট মেট্রো ঘ-১১-১৫৩৩। এটি মিতসুবিশির স্টেশন ওয়াগন ব্র্যান্ডের জিপ। তিনি সামনে সিটে বসে হাত নেড়ে আশপাশের লোকজনকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিববহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানা যায়, সালাহউদ্দিন আহমেদকে বহন করা গাড়িটি (চট্ট মেট্রো ঘ-১১-১৫৩৩) এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন। এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে এটি ২০১০ সালে নিবন্ধন করা। ঠিকানা লেখা আছে এস আলম ভবন, চট্টগ্রাম নগরের আছদগঞ্জ। এটি এস আলম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়।

বিআরটিএ চট্টগ্রামের উপপরিচালক আইনুল হুদা গাড়িটি এস আলম গ্রুপের নামে নিবন্ধন করা বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত

০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

এস আলম গ্রুপের ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরানোর অভিযোগে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থগিত করা হয়েছে তিন নেতার প্রাথমিক সদস্যসহ দলীয় সব পদ। তারা হলেন– বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম মামুন মিয়া। রোববার রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পরবর্তী কমিটি ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির নামে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো যাবে না।’

জুনের মৃত্যুকে আগস্টে আন্দোলনে নিহত দেখিয়ে মামলা, আসামি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী

০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হচ্ছে। এতে এমন ব্যবসায়ীদেরও আসামি করা হচ্ছে, যাঁদের রাজনৈতিক-সংশ্লিষ্টতা নেই।

চাঁদা ও তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ না পেয়ে এবং অনৈতিক সুবিধার জন্য অনেক ব্যবসায়ীকে আসামি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, মামলায় কারা আসামি হবেন, না হবেন সেটা অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএনপি বা দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা। আবার কোনো কোনো নেতাকে ব্যবহার করে স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরাও তাঁদের প্রতিপক্ষকে মামলায় ফাঁসাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।

ঢাকার পার্শ্ববর্তী শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জেই এমন পাঁচটি মামলা পাওয়া গেছে, যাতে অন্তত সাতজন ব্যবসায়ীকে আসামি করা হয়। তাঁদের বিষয়ে অনুসন্ধান করে উপরিউক্ত তথ্য ও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফকির গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজারের মতো কর্মী রয়েছেন। তাঁদের তৈরি পোশাক কারখানার ঝুটসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত মালামালের ব্যবসা করেও অনেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

এর মধ্যে দুটি হত্যা মামলা আড়াইহাজার থানার। মামলা দুটিতে আসামি করা হয়েছে বৃহৎ রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফকির গ্রুপের তিনজনকে। তাঁরা হলেন ফকির নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির আক্তারুজ্জামান ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির মাশরিকুজ্জামান নিয়াজ এবং ফকির ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ। উভয় মামলায় ঢাকার বাইরের একজন পরিবহন ব্যবসায়ীকেও আসামি করা হয়। মামলা দুটির এজাহারের বর্ণনা প্রায় একই। দুই এজাহারেই এসব ব্যবসায়ীর নামের ক্রমিকও একই।

অবৈধ বালু উত্তোলনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপিতে মারামারি

০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দখল ও লুটে বরিশালে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে মেঘনাবেষ্টিত জনপদ হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা। নদী, মাছঘাট, চর, খেয়াঘাট ও লঞ্চঘাট কিছুই দখলে বাকি নেই। এবার নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দলের দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

গত শনি ও রোববার রাতে হিজলার পৃথক দুটি স্থানে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। ভাঙচুরের পর জব্দ করা হয় দুটি ড্রেজার। এসব ঘটনার দায় বিএনপির কেউ স্বীকার করছেন না। তবে হিজলার সব দখলের নাটের গুরু হিসেবে উপজেলা আহ্বায়ক আবদুল গাফফার তালুকদার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন খোকন ও সদস্য সচিব মনির দেওয়ানের নাম আলোচিত হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সপ্তাহখানেক আগে বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় হিজলার একাধিক পয়েন্টে আবার বালু তোলা শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, রোববার রাতে গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নে মেঘনার শাখা নয়াভাঙ্গুনী নদীর সুলতানপুর ও নাছোকাঠি পয়েন্টে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় একটি ড্রেজার আটক করেছে প্রতিপক্ষ। তার আগের রাতে একই ঘটনা নিয়ে মারামারি হয় হরিনাথপুর ইউনিয়নের চর আবুপুরে। সেখানে আটক করা হয় আরেকটি ড্রেজার। বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য এক স্থানীয় বাসিন্দা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পৃথক দুটি আবেদন করেছেন। আবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে বালু তোলায় সংলগ্ন গ্রামগুলো নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে।

‘অসাধ্য সাধন’ করত সাধনের পরিবার

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

সাধন চন্দ্র মজুমদার ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের সাড়ে পাঁচ বছরের খাদ্যমন্ত্রী। টানা চারবার তিনি হয়েছেন এমপি। গেল সাড়ে ১৫ বছর সাধন চন্দ্রের জনপ্রতিনিধির জমানা ছিল অরাজকতায় ভরা। ক্ষমতাকে তিনি মনে করতেন ‘জাদুর কাঠি’। সেই কাঠির ছোঁয়ায় নানা অপকর্মে তাল দিয়ে গেছেন তাঁর ভাতিজা রাজেশ মজুমদার, ছোট ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার মনা, ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার এবং দুই জামাতা আবু নাসের বেগ ও নাসিম আহম্মেদ। সবাই মিলে গড়ে তোলেন  দুর্ভেদ এক সিন্ডিকেট। টাকা দিয়ে ‘অসাধ্য সাধন’ হতো সাধন চন্দ্রের ডেরায়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পুরোভাগে থেকে সব অপকর্মের সমন্বয় করতেন ভাতিজা রাজেশ। তিনি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রীর সহকারী; বসতেন মন্ত্রণালয়ে। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রীর একান্ত সচিব সাধন চন্দ্রের বড় জামাতা আবু নাসের বেগ (মাগুরার সাবেক ডিসি) ও মন্ত্রীর এপিএসের দায়িত্বে থাকা ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার। টাকার বিনিময়ে দপ্তরের যে কোনো পদায়ন, বদলি, বরাদ্দ– সবকিছু মন্ত্রণালয়ে বসে তারাই সামলাতেন। টাকার লেনদেন হতো মন্ত্রীর বেইলি রোডের সরকারি বাসায়। সেই বাসভবন সন্ধ্যা থেকেই খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার পদভারে করত গমগম। প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে দরদাম ঠিক করে পছন্দমাফিক বদলি কিংবা পদায়ন নিতেন কর্মকর্তারা।

প্রতি পদায়নে অন্তত ৩০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ কোটি টাকা পর্যন্ত নিলাম উঠত। লোভনীয় পদের মধ্যে ছিল আরসি ফুড (রিজওনাল কন্ট্রোলার অব ফুড), ডিসি ফুড (ডিস্ট্রিক্ট কন্ট্রোলার) এবং ওসি এলএসডি (গুদাম কর্মকর্তা)। এ ছাড়া ধান-চাল বেশি উৎপাদন হয় এমন তালিকাভুক্ত জেলার বাইরেও যে কোনো স্থান ও পদে পদায়নের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হতো সাধন সিন্ডিকেটকে। খাদ্য বিভাগের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী  সূত্র সমকালকে নিশ্চিত করেছে এসব তথ্য।

হাসিনা পরিবারের ৬০ কাঠা প্লট

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, যুগান্তর

রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আলোচিত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে স্বয়ং নিজের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তিনি একা নন, প্লট নিয়েছেন তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়) ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এছাড়া প্লট বরাদ্দ প্রাপ্তদের তালিকায় আছেন হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার দুই ছেলেমেয়ে।

সূত্র জানায়, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের ১৩/এ ধারার ক্ষমতাবলে তাদের প্লট দেওয়া হয়। ২০২২ সালে তারা প্লট বুঝে পান। পরে বিষয়টি রাষ্ট্রীয় অতি গোপনীয় বিষয় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া খোদ রাজউকেরই অনেকে এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ১০ কাঠা আয়তনের প্লট নিয়েছেন।

এদিকে হাসিনার পতনের পর এ সংক্রান্ত প্লট বরাদ্দের ফাইল রাজউকের রেকর্ড শাখা থেকে সরিয়ে অন্যত্র লুকিয়ে ফেলা হয়। পরে চেয়ারম্যানের ড্রয়ারে ফাইল রয়েছে এমন খবরে রাজউকে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দেয়। সম্প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির মুখে এ সংক্রান্ত ৬টি ফাইল পুনরায় রেকর্ডরুমে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে চুরি বা নথি হারানোর শঙ্কায় সবকটি ফাইল বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

বসুন্ধরার চেয়ারম্যান-এমডির বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ অনেক অভিযোগ, তদন্ত করবে সিআইডি

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, জালিয়াতি, প্রতারণা, শুল্কফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ বৃহস্পতিবার সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের প্রস্তাবিত জমির কিছু অংশ রাজউকের অনুমোদন থাকলেও অধিকাংশই রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই ক্ষমতা ও অর্থের বলে জনসাধারণের ও সরকারি সম্পত্তি যেমন- খাল, বিল, নদী, খাস জমি, পতিত ভূমি, কবরস্থান, বধ্যভূমি ইত্যাদি ভরাট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। বসুন্ধরা রিভারভিয়ের এর ক্ষেত্রেও রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে জায়গা দখল ও ভরাটের কাজ করে জনসাধারণ তথা সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের নিকট থেকে প্লট বিক্রয়ের মাধ্যমে অগ্রীম এককালীন ও কিস্তির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ব্লকে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজ লিমিটেড কর্তৃক বিপুল পরিমাণ জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া যায়, যার আনুমানিক  মূল্য দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। এসব জমি নিজেদের দখলে নিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সরকারের খাস, নালা, নদীসহ ৮০০ একর (২ হাজার ৪০০ বিঘা) এবং ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ২১৬ একরসহ মোট ১ হাজার ১৬ একর জমি বেআইনিভাবে দখল করার অভিযোগ রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে।’

এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত জামানত না রেখে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিঘাপ্রতি ২০-২৫ লাখ টাকায় কেনা জমি; কাঠাপ্রতি ৩ কোটি টাকা দাম দেখিয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়, ‘এর বেশিরভাগ অর্থ পাচার করা হয়েছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, লন্ডন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। বসুন্ধরা গ্রুপের সিঙ্গাপুর অফিস দেখাশোনা করছেন শাহ আলমের বড় ছেলে সাদাত সোবহান তানভীর। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে একের পর এক প্রকল্প দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলেও সেসব ঋণ পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’

আরও বলা হয়, ‘বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস নামক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ট্রেড বেজড মানিলন্ডারিংয়ের আশ্রয় নিয়ে বিদেশ হতে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার বিটুমিন আমদানি করে এবং পরবর্তীতে উক্ত আমদানিকৃত বিটুমিন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ইচ্ছামতো দাম নিয়ন্ত্রণ করে মনোপলি বিজনেসের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশের স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। উক্ত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে দেশে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রায়শই স্বর্ণের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলার তথ্য পাওয়া যায়।’

তখন ‘সাহস’ পায়নি, এখন তৎপর দুদক

০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার আগে ৩১ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে স্বাধীন দুদক তখন কিছু করার ‘সাহস’পায়নি। এখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই সব প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। ইতিমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুও হয়েছে।

প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী (এখন সাবেক) রয়েছেন ১১ জন। সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন ১৯ জন। এর বাইরে প্রয়াত একজন মন্ত্রীর ছেলেও রয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছিল দুদক। কিন্তু সরকারের দিক থেকে ‘ইশারা’না পাওয়ায় তখন কারও বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান শুরু করা হয়নি। দুদকের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।

এস আলমের লাখ কোটি টাকা ঋণ, ব্যাংকে জমা ২৬ হাজার কোটি

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নামে কেবল ছয়টি ব্যাংকেই বিপুল অঙ্কের নগদ টাকার সন্ধান মিলেছে। এ অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। এস আলম, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ভাই আবদুল্লাহ হাসানসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এই টাকা ব্যাংকগুলোতে জমা আছে। এসব ব্যাংকের পাঁচটিই এস আলম গ্রুপের সরাসরি মালিকানায় অথবা নিয়ন্ত্রণে ছিল।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর অঞ্চল-১৫–এর এক অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে এস আলম গ্রুপের এ বিপুল অর্থের সন্ধান মিলেছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ওই কর অঞ্চলের কর্মকর্তারা ব্যাংকে জমা পুরো অর্থ কর বিভাগের আয়ত্তে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই কর অঞ্চল-১৫ এস আলম পরিবারের সদস্য ও তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল। সাধারণত ফাঁকি দেওয়া কর আদায় করার লক্ষ্যে হিসাব তলব করে থাকে কর বিভাগ।

কৃষক দল নেতার অডিও

‘ভাই বোঝেন তো অস্ত্র মামলা, জমি বিক্রি করেন, টাকা দেন’

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

মামলার আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেছেন লক্ষ্মীপুরের কৃষক দলের এক নেতা। এ–সংক্রান্ত মুঠোফোন কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কৃষক দলের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে অডিও রেকর্ড সাজানো বলে দাবি করেছেন ওই নেতা।

অভিযুক্ত কৃষক দল নেতার নাম জসিম চৌধুরী। তিনি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়ন কৃষক দলের সদস্যসচিব। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক জহির উদ্দিনকে মামলা থেকে বাঁচানোর বিনিময়ে তিনি টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিটিআরসির পাওনা ৯২১ কোটি টাকা, উধাও আওয়ামী লীগ নেতাদের স্ত্রী-সন্তানদের প্রতিষ্ঠান

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দলের নেতাদের কেউ কেউ টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যবসায় নামেন। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নেমেছিলেন বিদেশ থেকে টেলিফোন কল আনার ব্যবসায়।

শামীম ওসমান ২০১২ সালে স্ত্রী সালমা ওসমান ও ছেলে ইমতিনান ওসমানের নামে কে টেলিকম লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে বা আইজিডব্লিউ লাইসেন্স নেন, যার মাধ্যমে বিদেশ থেকে টেলিফোন কল আসত। কে টেলিকমের কাছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা দাঁড়িয়েছিল ১২৬ কোটি টাকা। সেই টাকা তারা পরিশোধ করেনি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শামীম ওসমানের পরিবার আত্মগোপনে চলে গেছে। ফলে সরকারের টাকা আদায় একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

শুধু শামীম ওসমান নয়, বিটিআরসি দ্বাদশ সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছেলে আসিফ শামস ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের পরিবারের প্রতিষ্ঠানসহ ছয়টি আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৯২১ কোটি টাকা পাবে। বিটিআরসি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তবে টাকা আদায় করতে পারেনি।

বিটিআরসির আগের প্রশাসনের বিরুদ্ধে টাকা আদায়ে জোর তৎপরতা না থাকা এবং মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে ঢিলেমির অভিযোগ ছিল। সংস্থাটির কমিশনার (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগ) মুশফিক মান্নান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিটিআরসি এখন কাজ করবে।

দেশের বাইরে থেকে করা (আন্তর্জাতিক ইনকামিং) কলগুলো আইজিডব্লিউ অপারেটরের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করে। নীতিমালা অনুসারে, আন্তর্জাতিক কলের আয় থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ বিটিআরসিকে দিতে হয়। যদিও ছয়টি প্রতিষ্ঠান সেই টাকা দেয়নি।

মালয়েশিয়ায় টাকা ‘পাচারে’ আমিনুল ও রুহুল আমিন

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে চক্র গড়ে বিপুল টাকা পাচার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ‘চক্র ফি’ হিসেবে কর্মীপ্রতি এক লাখ টাকা করে পাচার হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ভিসা ‘বাণিজ্যের’ নামে পাচার হয়েছে আরও ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে পাচারের পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত ছিল না। দেড় হাজারের বেশি এজেন্সির মধ্য থেকে ১০০ এজেন্সির একটি চক্র বা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। চক্রের সদস্যরা মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় ৭৯ হাজার টাকার জায়গায় গড়ে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভেরিটে ইনকরপোরেটেডসহ পাঁচটি সংস্থার এক জরিপে (মে, ২০২৩)।

চক্রে থাকা দুটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক প্রথম আলোর কাছে তুলে ধরেছেন কীভাবে তাঁদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে তা মালয়েশিয়ায় পাচার করা হতো। তাঁরা বলেছেন, চক্রটির হোতা আমিনুল ইসলাম বিন আমিন নূর, যিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার নাগরিক। বাংলাদেশে তাঁর প্রতিনিধি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ওরফে স্বপন।

চক্র গড়ে শ্রমিক পাঠানো, ঘুষ লেনদেন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারের দরজা বারবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত মে মাসে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজারগুলোর একটি।

রিক্রুটিং এজেন্সি হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার চক্রে না থাকলেও কর্মী পাঠিয়েছে অন্য এজেন্সির মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠিয়েছি, তারা একজন কর্মীর শুধু বিএমইটি ছাড়পত্র করে দেওয়ার নামে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা করে চক্র ফি নিয়েছে। এ ছাড়পত্র নিতে মূলত খরচ হয় ৬ হাজার টাকা।’ তিনি বলেন, উড়োজাহাজের টিকিটসহ কর্মীর বাকি সব খরচ আলাদাভাবে করতে হয়েছে। এতে অভিবাসন খরচ বেড়েছে।’

পণ্য রপ্তানির আড়ালে বেক্সিমকোর অর্থ পাচার

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করেছেন পিতা। এই পণ্যের কাঁচামাল কিনতে রিজার্ভ থেকে ডলার ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই পণ্য দুবাইয়ে বসে কিনেছে পুত্রের প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ে সেই অর্থ দেশে আসেনি। এভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ তিনটি দেশে আটকে গেছে প্রায় ৮ কোটি ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৯৫৭ কোটি টাকা।

রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের এই আয়োজন সম্পন্ন করেছে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর আর গ্লোবাল।

বেক্সিমকো গ্রুপের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে গত ১২ বছরে তিনটি দেশে পোশাক রপ্তানি দেখিয়ে এ টাকা পাচার করেছে বলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এই ঘটনায় গ্রুপটির মালিক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ পাচার করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ।

যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টি বাড়ির মালিক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ক্ষমতাচ্যুৎ শেখ হাসিনা সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাভেদ) শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টি বাড়ির মালিক। এর বেশির ভাগই বার্কলি গ্রুপের মতো শীর্ষস্থানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা। বাড়িগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য ৩২ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়েও তাঁর সম্পদ রয়েছে।

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম আল–জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার রাতে ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ শিরোনামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আল–জাজিরা। অনুসন্ধান করেছে আল–জাজিরার অনুসন্ধানী দল ‘আই ইউনিট’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান লন্ডনের বাইরে দুবাইয়ে ২০২০ সালের মধ্যে অন্তত ৫৪টি সম্পদের মালিক হন। যুক্তরাষ্ট্রেও তাঁর সম্পত্তি আছে। সেখানে তিনি নয়টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। এর মধ্যে পাঁচটি ম্যানহাটানসহ নিউইয়র্কের প্রধান এলাকায় এবং চারটি নদীর ওপারে নিউ জার্সিতে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান দেশের বাইরের এত পরিমাণ সম্পদ তাঁর নির্বাচনী হলফনামা ও ট্যাক্স ফাইলে গোপন করেছেন।

জমি দখলে ‘অপ্রতিরোধ্য’ আওয়ামী ‘গডফাদার’ হাসানাত আবদুল্লাহ

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। কিন্তু জেলা ছাড়িয়ে বরিশাল বিভাগে দলের রাজনীতিতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক। নিজের অনুসারীদের নিয়ে গড়েন একটি শক্তিশালী ক্ষমতার কেন্দ্র। দলীয় কমিটি ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়নকাজের বড় কমিশন আদায় এবং জমি দখলের অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। গত ১৬ বছরে বেড়েছে তাঁর সম্পদ।

স্থানীয় বাসিন্দা, ভুক্তভোগী মানুষ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেতা-কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে হাসানাত আবদুল্লাহ ‘বরিশালের গডফাদার’ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর রাজত্বে সবাই ছিল ‘করদ প্রজা’। তাঁকে টাকা না দিলে জেলায় কোনো সরকারি কাজ বাস্তবায়িত হতো না। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি গণমাধ্যমও কথা বলতে ভয় পেত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই হওয়ার সুবাদে তাঁকে বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ‘অভিভাবক’ হিসেবে প্রচার করতেন অনুসারীরা।

আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আশির দশকের শেষ দিকে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এরপর তিনি দীর্ঘদিন এই পদে ছিলেন। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিনি জেলা সভাপতি হন। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য হন। ২০০১ সালে তিনি পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেননি। এরপর ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার তিনি সংসদ সদস্য হন।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সংসদে চিফ হুইপ ছিলেন আবুল হাসানাত। চিফ হুইপ হিসেবে তাঁর যোগ্যতার প্রশ্নে সে সময় নানা আলোচনা ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। এ ছাড়া তিনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রীর পদমর্যাদা) ছিলেন। এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা, ভুক্তভোগী মানুষ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেতা-কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে হাসানাত আবদুল্লাহ ‘বরিশালের গডফাদার’ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর রাজত্বে সবাই ছিল ‘করদ প্রজা’।

জমি দখলে ‘অপ্রতিরোধ্য’

প্রভাব খাটিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে কখনো নামমাত্র মূল্যে, আবার কখনো গায়ের জোরে হাসানাত আবদুল্লাহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে অনেক জমি দখল করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও তাঁর কাছে জমি হারিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা মামলা করার সাহস পাননি।

গৌরনদী উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসানাত আবদুল্লাহর নামে উপজেলার চর গাধাতলী মৌজার জেএল-৫৫,৭০৯ নম্বর দাগে ৬৪ শতাংশ, উত্তর বিজয়পুর মৌজার জেএল-৫০,৫৪৪ নম্বর দাগে ৩০ শতাংশ, একই মৌজার জেএল-৫০,৬১৯, ৬২২,৬২৪ ও ৬১৮ নম্বর দাগে ৭০ শতাংশ এবং দক্ষিণ পালরদী মৌজার জেএল-৫৪,২৬৩, ২৫৯,২৬০, ২৬৩,২৬৪ নম্বর দাগে ৫৪ দশমিক ৭২ শতাংশ জমির রেকর্ড রয়েছে। সব জমিই ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রেকর্ড হয়েছে।

তিন কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়ন!

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, কালবেলা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে কেলেঙ্কারি শেষ হয়নি। সম্প্রতি বিতর্কিত ডিসি নিয়োগকাণ্ডের অন্যতম হোতা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের (এপিডি) কক্ষ থেকে ৩ কোটি টাকার একটি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। পদায়ন হওয়া এক জেলা প্রশাসকের পক্ষে ওই যুগ্ম সচিবকে চেকটি দেন এক ব্যবসায়ী। তবে কাঙ্ক্ষিত জেলায় পদায়ন না হওয়ায় চেকের বিপরীতে টাকা জমা দেননি ডিসি। অন্যদিকে, সব কিছু ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চেকদাতা ওই ব্যবসায়ী। বিষয়টি নিয়ে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। সচিবালয় ও গোয়েন্দা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, এবারের ডিসি নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ডিসি ফিটলিস্ট তৈরির আগেই এসব অর্থের লেনদেন হয়। এতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুজন যুগ্ম সচিবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এর অংশ হিসেবে তিন দিন আগে মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ এপিডি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদের কক্ষ থেকে ৩ কোটি টাকার চেক উদ্ধার করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সঙ্গে চেকদাতার এনআইডির ফটোকপিসহ ডিসি নিয়োগ-সংশ্লিষ্ট কিছু কাগজপত্র এবং চিরকুটও উদ্ধার করা হয়। যেখানে ডিসি নিয়োগ সম্পর্কিত ইঙ্গিতপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে।

প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা রেখে আওয়ামী ‘গডফাদার’ শফিকুলের সম্পদের পাহাড়

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

গত ৫ আগস্ট সকালেও ‘নাটোরের রাজপথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ব্যস্ত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। ওই দিন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে আগে তিনি আত্মগোপনে যান। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা শহরের কান্দিভিটুয়া মহল্লায় ‘জান্নাতি প্যালেস’ নামে তাঁর প্রাসাদসম বাড়িতে হামলা চালান। ভাঙচুর, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িটির পরিণতি দেখতে এখন প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সেখানে আসেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশি সব উপকরণ আর আসবাবে সাজানো যে বাড়ি ছিল গত ১৫ বছরে শফিকুল ইসলামের গড়া সম্পদের একটি ‘নিদর্শন’।

নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে ২০০৮ সালে জনপ্রতিনিধির খাতায় নাম লেখান শফিকুল ইসলাম। শিমুল নামেই বেশি পরিচিত এই আওয়ামী লীগ নেতা ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য বনে যান। এরপর টানা তিনবার সংসদ সদস্য হন। ১৫ বছরে তিনি গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। দেশে-বিদেশে নিজের ও স্ত্রীর নামে প্রাসাদসম বাড়ি করে দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন শফিকুল। নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে তিনি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মামলা–হামলার মাধ্যমে হয়রানি করেছেন। নিজ দলের নেতা-কর্মীরাও নির্যাতন থেকে বাদ যাননি। নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে দলীয় পদে বসিয়েছেন নিকটাত্মীয় ও বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর অঢেল অবৈধ সম্পদের খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করেছে। পাশাপাশি শফিকুল ও তাঁর স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতির ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ।

ফেনীতে আওয়ামী ‘গডফাদার’ নিজাম হাজারীর ‘ঘাটলার শাসন’

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ার লমি হাজারী বাড়ির সামনের পুকুরের ঘাটকে স্থানীয় লোকজন ‘ঘাটলা’ বলেন। ওই ঘাটলায় বসেই ১৩ বছর ফেনী ‘শাসন’ করেছিলেন ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী।

নিজ বাড়ির সামনে পুকুরঘাটে টেবিল নিয়ে বসে তিনি ঠিকাদারি কাজ বণ্টন থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতের চাঁদাবাজির হিসাব, দলীয় ও স্থানীয় বিবাদ মীমাংসাসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ ঘাটলার সামনে অপেক্ষায় থাকতেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে নিজাম হাজারীর ‘ঘাটলার শাসনের’ অবসান হয়। নিজাম হাজারী ও তাঁর অনুসারীরা ফেনী ছেড়ে পালিয়েছেন। এরপর থেকে নিজামের পৈতৃক বাড়ি লমি হাজারীর বাড়ির ওই ঘাটলায় সুনসান নীরবতা। তবে তাঁর ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা ধরা না পড়ায় এখনো এলাকার মানুষ নিজামের অপকর্মের বিষয়ে মুখ খুলতে ভয় পান।

নিজ বাড়ির সামনে পুকুরঘাটে টেবিল নিয়ে বসে তিনি ঠিকাদারি কাজ বণ্টন থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতের চাঁদাবাজির হিসাব, দলীয় ও স্থানীয় বিবাদ মীমাংসাসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ ঘাটলার সামনে অপেক্ষায় থাকতেন।

ফেনীতে সরজমিনে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১১ সালে ফেনী পৌরসভার মেয়র হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজামের উত্থান শুরু। ২০১২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর ফেনীর অঘোষিত ‘শাসক’ হয়ে ওঠেন। অনুগত ক্যাডারদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন।

নিজাম হাজারীর গডফাদার হয়ে ওঠার সময়ে ফেনীতে তাঁর কাছাকাছি প্রভাবশালী নেতা ছিলেন ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক। দুজনের একসময়কার গুরু জয়নাল হাজারীকে কোণঠাসা করে দলীয় ক্যাডার বাহিনীকে সংগঠিত করতে একরাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরে একরামকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এরপর থেকে দলে ও সরকারি উন্নয়নকাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন নিজাম।

ফেনীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দুই বছর কর্মরত ছিলেন, এমন একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ফেনীর সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান, দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি, বৈধ-অবৈধ বালুমহালের নিয়ন্ত্রণসহ পুরো জেলার অপরাধজগৎ নিজাম হাজারী নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। তাঁর সম্মতি ছাড়া অন্যদের কোনো অপকর্মের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া যেত না।

আওয়ামী গডফাদার: তাঁর ভয়ে ‘টুঁ–শব্দ’ করতেন না কেউ

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

শুধু বিরোধী দল নয়, নিজের দলের বিরুদ্ধ মতের নেতা-কর্মীদেরও এলাকাছাড়া করেছেন তিনি। ঘরছাড়া করেছেন অনেককেই। ভেঙে দিয়েছেন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনী ব্যবস্থা। পছন্দের লোক ছাড়া জনপ্রতিনিধি হতে পারতেন না কেউ। সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা দখল করে গড়ে তোলেন বাগানবাড়ি, বিপণিবিতান। গুম-খুনের অভিযোগ তো আছেই। এত সব অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, তিনি হলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য যেন নিজ এলাকায় ছিলেন ‘রাজা’। মূলত ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ফজলে করিম। কেউ ‘টুঁ-শব্দ’ করার সাহস পেতেন না। তাঁর কারণে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ছাড়াও দুই শতাধিক শিক্ষক, কর্মচারী তাঁদের কর্মস্থল রাউজানে যেতে পারেননি। ফজলে করিমের ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি বাহিনীও সক্রিয় ছিল।

ধর্মীয় একটি আধ্যাত্মিক সংগঠনের ৪৬টি কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এত দিন কেউ ভয়ে মুখ না খুললেও এখন এলাকায় ফিরছেন। প্রতিকার চেয়ে মামলাও করছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষুব্ধ লোকজন ফজলে করিমকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করেছেন। সরেজমিন ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজি, জরিমানা ৪২৮ কোটি টাকা

০২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজি করে ৪৭৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠান। কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে এরপর শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছে তারা। এর বাইরে একই শেয়ারে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনাদায়ি মুনাফার (আনরিয়ালাইজড গেইন) পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। ২০২১ ও ২০২২ সালে এই কারসাজির ঘটনা ঘটে।

কারসাজির মাধ্যমে ৪৭৭ কোটি টাকা মুনাফা তুলে নেওয়া চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শেয়ারবাজারে কোনো একক কোম্পানির কারসাজির ঘটনায় এটিই এখন পর্যন্ত রেকর্ড জরিমানা।

গতকাল মঙ্গলবার বিএসইসির কমিশন সভায় এই জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। জরিমানা করা হয়েছে মারজানা রহমান, মুশফিকুর রহমান, মমতাজুর রহমান ও আবদুর রউফকে। আর পাঁচ প্রতিষ্ঠান হলো ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল, জুপিটার বিজনেস লিমিটেড, অ্যাপোলো ট্রেডিং, এআরটি ইন্টারন্যাশনাল ও ক্রিসেন্ট লিমিটেড।

সমবায় ব্যাংকে রাখা গ্রাহকের ৭৩৯৮ ভরি সোনা বিক্রি করে দেন আওয়ামী লীগ নেতা

০২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

সমবায় ব্যাংকে সোনা জমা বা বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলেন সাধারণ গ্রাহকেরা। গ্রাহকদের সেই সম্পদ ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁর নাম মহিউদ্দিন আহমেদ, যিনি যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এখন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

নথিপত্র বলছে, সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় ২০২০ সালে মহিউদ্দিন আহমেদ মোট ৭ হাজার ৩৯৮ ভরি সোনা বিক্রি করে দেন, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যাংকটির ২ হাজার ৩১৬ জন গ্রাহক।

ডিসি নিয়োগ কেলেঙ্কারি

‘আমার টাকা-পয়সার প্রতি লোভ নেই, ৫ কোটি হলেই চলবে’

৩ অক্টোবর ২০২৪, কালবেলা

বেসামরিক প্রশাসনে নিয়োগ নিয়ে ভয়াবহ এক কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস হয়েছে। এর সঙ্গে খোদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এবং বিতর্কিত দুজন যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও আলী আযম সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য ফুটে উঠেছে। সেই সিনিয়র সচিবের সঙ্গে এক যুগ্ম সচিবের হোয়াটসঅ্যাপে সংবেদনশীল কথোপকথনে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে উঠে এসেছে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের তথ্যও। যে কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশট রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহলেও ঘুরপাক খাচ্ছে, যা নিয়ে তোলপাড় চলছে খোদ প্রশাসনের ভেতরেও। এ কথোপকথনের অতি সংবেদনশীল কিছু অংশের স্ক্রিনশট কালবেলার হাতে এসেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশের দায়িত্ব নেওয়া নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে বিপাকে ফেলতে বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ডিসি ‘নিয়োগকাণ্ড’ ঘটানো হয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অনেকে বিষয়টিকে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন।

‘গরিব মন্ত্রী’ হাছানের বল্গাহীন ধন-সম্পদ

০৪ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

কারও ওপর একবার নাখোশ হলেই হলো, আর নিস্তার নেই! সাত ঘাটের জল খাইয়ে ছাড়তেন। এ কারণে চট্টগ্রাম এলাকায় চাউর ছিল, তিনি ‘ঠান্ডা মাথার ডাকাত’। ভীতিজাগানিয়া মানুষটি আর কেউ নন, ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের প্রতাপশালী মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

শুধু ভয় ছড়িয়ে তিনি ক্ষান্ত হননি। ক্ষমতার ছড়ি ঘুরিয়ে সম্পদের চূড়ায় চড়েছেন। গেল সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া হলফনামায় নিজেকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে ‘গরিব মন্ত্রী’ দাবি করেছিলেন। আদতে তাঁর উত্থানের গল্প পুরোটাই বিপরীত। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে গেল সাড়ে ১৫ বছরে কামাই করেছেন হাজার কোটি টাকা। পাহাড় কেটে গড়েছেন বাংলো। জলাশয় ভরাট করে বানিয়েছেন রেস্তোরাঁ-রিসোর্ট। সম্পদে ফুলেফেঁপে ওঠার এ যাত্রায় সঙ্গী করেছেন স্ত্রী, মেয়ে, ভাইদেরও। ক্ষমতার জাদুতে তারাও একেকজন ‘টাকার কুমির’।

এলাকাবাসী বলছেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এই নেতার অর্থবিত্ত বেড়েছে রকেট গতিতে। নামে-বেনামে সম্পদ গড়ার পাশাপাশি অবৈধ আয়ের অর্থের পুরোটাই পাচার করে দিয়েছেন কৌশলী হাছান। বেলজিয়াম ও দুবাইয়ে তাঁর অঢেল সম্পদ থাকার প্রাথমিক প্রমাণও পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এলাকায় গেলে ভয়ে এখনও স্বনামে কথা বলতে চাননি অনেকে। পুরো জনপদে ‘হাছান মাহমুদ’ নামটি এখনও ভয়ের, আতঙ্কের।

সড়কে ১৫ ঠিকাদারের রাজত্ব, পেছনে ওবায়দুল কাদের, শেখ হেলাল, তারিক সিদ্দিক

০৫ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

সড়কের ঠিকাদারি কাজে এক বিস্ময়ের নাম ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (এনডিই)। ২০১৭ সালের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠানটি সড়কে কাজ শুরু করে। মাত্র ছয় বছরে তারা সড়কে একক ও যৌথভাবে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি পেয়েছে, যা মোট কাজের ১০ শতাংশ।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সাতজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এনডিই ঠিকাদারি কাজ পেতে আওয়ামী লীগ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করত। ওবায়দুল কাদের কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছিলেন যে প্রতিষ্ঠানটির পেছনে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক।

২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত এক যুগে সওজের ঠিকাদারি কাজের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ সময়ে এনডিইর মতো ১৫টি প্রতিষ্ঠান ব্যয়ের দিক দিয়ে মোট কাজের ৯০ শতাংশ পেয়েছে। এক যুগে সড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে ৮৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে সরকার। যার মধ্যে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার কাজ একক ও যৌথভাবে পেয়েছে ওই ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ইউনিয়ন ব্যাংকের রহস্যময় হিসাবে ভোটের আগে অস্বাভাবিক নগদ লেনদেন

০৬ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেসরকারি ইউনিয়ন ব্যাংকের একটি হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। নির্বাচনের এক বছর আগে হিসাবটি খুলে জমা করা হয় নগদ টাকা। এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে এসে শুরু হয় নগদ টাকা উত্তোলন। এভাবে এই হিসাব থেকে নির্বাচনের আগেই উত্তোলন করা হয় প্রায় ৭২ কোটি টাকা। ব্যাংকের বনানী শাখায় হিসাবটি খোলা হলেও নগদ টাকার বেশির ভাগ উত্তোলন করা হয়েছে প্রধান কার্যালয়ের নিচে থাকা গুলশান শাখা থেকে। ইউনিয়ন ব্যাংকের নথিপত্র পর্যালোচনায় এ তথ্য মিলেছে।

মোস্তাক ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে এই হিসাব খোলা হয়েছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২০ আগস্ট হিসাবটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যাংকটির অনলাইন তথ্যভান্ডার থেকে এই হিসাবে সব তথ্য গায়েব করে ফেলা হয়। যদিও হিসাব বন্ধ হলেও তথ্য মুছে ফেলার সুযোগ নেই। হিসাবের তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে, এমন হিসাবের সংখ্যা ইউনিয়ন ব্যাংকে আরও রয়েছে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন এমন অনেককে ও তাঁদের পক্ষের ব্যক্তিদের তাঁরা নির্বাচনের আগে এই হিসাব থেকে টাকা তুলতে দেখেছেন। ক্রিকেট থেকে চলচ্চিত্র তারকা, নবীন থেকে প্রবীণ প্রার্থীরাও ছিলেন এই তালিকায়। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনের খরচ চালাতে এটা ছিল তৎকালীন সরকারের উপহার, যে খরচ দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম। এ জন্য ইউনিয়ন ব্যাংকসহ তাঁর মালিকানায় থাকা আরও ব্যাংক থেকে এমন বেনামি ঋণ নেওয়া হয়। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউনিয়ন ব্যাংক ‘ব্যাংক খেকো’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির লাভের টাকা বিএনপি সভাপতির পকেটে

০৬ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় চারটি ইউপি সচিবদের (ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা) ডিলার সাজিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির লাভের টাকা বিএনপির উপজেলা সভাপতি মিঞা মো. শফিকুল আলম নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় উপজেলার কাটলা ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৬ জন, খানপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ১৪৪ জন, দিওড় ইউনিয়নে ১ হাজার ৪১৪ জন এবং পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নে ৫৮৪ জন সুবিধাভোগী রয়েছেন। গত সপ্তাহে এসব সুবিধাভোগীর কাছে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করা হয়েছে।

বাবা মন্ত্রী, অধীন প্রতিষ্ঠানে ছেলের ঠিকাদারি

০৬ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

আওয়ামী লীগ সরকারে ইয়াফেস ওসমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি সংস্থায় ঠিকাদারি কাজ করেছেন তাঁর ছেলে ইশরার ওসমান। ইশরারের প্রতিষ্ঠান সাইটেক কনসালটিং সলিউশন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেখানে কাজ পায়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মন্ত্রীর অধীন প্রতিষ্ঠানে তাঁরই ছেলের ঠিকাদারি কাজ করা স্বার্থের সংঘাত বা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট।

সাইটেক কনসালটিং সলিউশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন ইশরার ওসমানের বাবা ইয়াফেস ওসমান মন্ত্রী। ওয়েবসাইটে পরামর্শক হিসেবে দুটি কাজের কথা বলা হয়েছে। দুটিই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থায়। একটি সংস্থা হলো বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এবং অন্যটি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি)।

পাবলিক টয়লেটও দখল

০৮ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

একসময় অতি বিপদে না পড়লে পাবলিক টয়লেটে যেতেন না সাধারণ মানুষ। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ৩৪টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে। এসব টয়লেটের চেহারা একেবারেই ভিন্ন। দেয়াল, মেঝে ঝকঝকে। মাথার ওপরে বৈদ্যুতিক পাখা। প্রতিটি গণশৌচাগারে নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কক্ষ, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ, টিস্যু পেপার, হ্যান্ডওয়াশ, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গোসলের ব্যবস্থা রয়েছে। আছে শৌচাগার ব্যবহারকারীদের জন্য লকার। বাইরে সিসি ক্যামেরা। শিশুদের দুধ খাওয়ানো এবং ডায়াপার পরিবর্তনের জন্যও রয়েছে আলাদা স্থান। এসব টয়লেটের পরিচ্ছন্নতায় রয়েছেন পেশাদার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নারী নিরাপত্তাকর্মী। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন থেকে এসব পাবলিক টয়লেটও এখন বেহাত।

ইতোমধ্যে ওয়াটারএইডের দুটি পাবলিক টয়লেট দখল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা পরিচয়ে একজন। রাজধানীর বাকি টয়লেটগুলোও দখলে নিতে ছাত্রদল পরিচয়ে কিছু লোক হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

চট্টগ্রামে ওয়াটারএইডের পাবলিক টয়লেট দখল করতে তৎপর বিএনপিপন্থি এক ঠিকাদার। পাবনার ঈশ্বরদীতে পাবলিক টয়লেটের একটি কক্ষ দখলে নিয়ে স্থানীয় বিএনপি অফিস বানিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে টয়লেট রক্ষায় ওয়াটারএইড কর্তৃপক্ষ থানা ও সিটি করপোরেশনে অভিযোগ করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। উল্টো হুমকি ও আতঙ্কে আছেন মাঠ পর্যায়ে টয়লেট পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীরা।

বাকিগুলোও দখলের হুমকি

ওয়াটারএইড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ৩৪টি পাবলিক টয়লেট স্থানীয় বিভিন্ন এনজিও পরিচালনা করে। একেকটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬০-৭০ লাখ টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১২টি, দক্ষিণ সিটি এলাকায় ১১টি, চট্টগ্রাম সিটিতে ৮টি, ঈশ্বরদী ও পঞ্চগড় রেলস্টেশন এবং রাজশাহী সিটিতে একটি করে টয়লেট আছে। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি টয়লেটে হামলা চালানো হয়। এ সময় সব মাল খুলে নিয়ে যায় তারা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আজমপুর ও মিরপুর ১২ নম্বরে তিনটি এবং চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড়, লালদীঘির পাড় ও নতুন রাস্তা ব্রিজসংলগ্ন পাবলিক টয়লেটে হামলা করা হয়।

১১ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রির মামলায় ডেটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক গ্রেপ্তার

০৯ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডেটা সেন্টারে সংরক্ষিত ১১ কোটির বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য দেশি-বিদেশি ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির অভিযোগে করা মামলায় তারেক বরকতউল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তিনি ইসির ডেটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর কাফরুলের উত্তর কাজীপাড়া থেকে বরকতউল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়েছে।

১১ কোটির বেশি নাগরিকের ৪৬ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্যের অনুলিপি বিক্রির ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কাফরুল থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, তারেক বরকতউল্লাহসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসার অনুমতি দেন আসামিরা। জাতীয় নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে এনআইডির তথ্য দেশ-বিদেশের প্রায় ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে ডিজিকন। এতে জনগণের নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। তথ্য বিক্রি করে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

ওবায়দুল কাদেরের সড়কে ঘুষ-দুর্নীতির ‘উন্নয়ন’

১০ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে সড়ক-মহাসড়কের ব্যাপক উন্নয়ন দাবি করা হলেও, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা অনুযায়ী এ খাতে ২৯ হাজার ২৩০ থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ১২ বছরই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী হিসেবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) দায়িত্বে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মিত বচন দিলেও তাঁর সময়ে ঠিকাদারি কাজ ও বিল পেতে ঘুষ, কমিশন বাণিজ্য হয়েছে। নেতা, ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের আঁতাতে প্রকল্প ব্যয়ের ১০ থেকে ২০ শতাংশ গেছে। লাইসেন্স ভাড়া, কার্যাদেশ কেনাবেচা, স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজিতে আরও ২ থেকে ৬ শতাংশ টাকার অনিয়ম হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে এসেছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সংস্থার রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মোস্তফা কামাল ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন।

প্রতিবেদনে ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বাস্তবায়ন প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে সম্পন্ন ২৫টি প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। গত ১৫ অর্থবছরে সওজে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে নির্মাণকাজে। ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোট ব্যয়ের ৭২ শতাংশ কাজ পেয়েছে।

কয়েকজনকে সুবিধা দিতে শেয়ার বণ্টনে তুঘলকি কাণ্ড, বঞ্চিত সরকার

১২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) শেয়ার নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটেছে। কয়েকজন প্রভাবশালী শেয়ারধারীকে বিশেষ সুবিধা দিতে আনুষ্ঠানিকতা শেষ না করেই তড়িঘড়ি করে তাদের মধ্যে নতুন শেয়ার বণ্টন করা হয়েছে। কম দামে কেনা এসব শেয়ার বাড়তি দামে বাজারে বিক্রি করে বিপুল মুনাফার সুযোগ দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় বঞ্চিত করা হয়েছে কোম্পানির অন্যতম মালিক সরকারি তিন প্রতিষ্ঠানকে।

শেয়ার বণ্টন করা হয়েছে গত ২ অক্টোবর। অথচ সেটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে শেয়ারধারীদের জানানো হয় ৮ অক্টোবর। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্য সংবেদনশীল তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানানোর বিধান থাকলেও কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কিছু ব্যক্তিকে শেয়ার বিক্রির বাড়তি সুবিধা করে দিতে তা ছয় দিন পরে প্রকাশ করে।

কোম্পানিটির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলধন বাড়াতে এনটিসি প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিদ্যমান শেয়ারধারীদের মধ্যে নতুন ২ কোটি ৩৪ লাখ শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছরের এপ্রিলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিষয়টি অনুমোদন করে। প্রতিটি শেয়ারের বিক্রয়মূল্য নির্ধারিত হয় ১১৯ টাকা ৫৩ পয়সা। ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুর সঙ্গে ১০৯ টাকা ৫৩ পয়সা অধিমূল্য বা প্রিমিয়ামসহ এ দাম নির্ধারণ করা হয়। প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিদ্যমান শেয়ারধারীদের মধ্যে একটি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে প্রায় তিনটি নতুন শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত হয়। পরিকল্পনা ছিল, নতুন এই শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২৮০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে।

বিএনপির ‘অবাধ্য’ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ

১২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

সারা দেশে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ‘অবাধ্য’ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ পড়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর হামলা, দখল, অর্থ দাবি, আধিপত্য বিস্তার এবং দলীয় নির্দেশনা অমান্য করাসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গত দুই মাসে এক হাজারের বেশি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে বহিষ্কার, অব্যাহতি, পদাবনতি ও কমিটি বাতিল করার মতো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরও অভিযোগ আসা এখনো থামেনি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদের একটি অংশ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ায়। ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে ধরে নিয়ে তাঁরা কোথাও হামলা, চাঁদাবাজি, দখল, আবার কোথাও আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষ ও হাঙ্গামায় লিপ্ত হন। তাঁদের নিবৃত্ত করতে শীর্ষ নেতৃত্বকে শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়। দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, এত কম সময়ে এত বিপুলসংখ্যক নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা বিএনপিতে এই প্রথম।

তবে বিএনপি নেতাদের অনেকে বলছেন, এই ‘অবাধ্য’ নেতা-কর্মীদের গত দুই মাসের কর্মকাণ্ড ১৫ বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার দলকে সমালোচনার জায়গায় নিয়ে গেছে। বিশেষ করে, একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিএনপি আগামী দিনের রাজনীতিতে বা ক্ষমতায় গেলে নেতা-কর্মীরা কী ধরনের আচরণ করতে পারেন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডগুলো সেসব প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

একটি ফ্লাইওভারের গল্প

১৩ অক্টোবর ২০২৪, মানবজমিন

এ এক অন্যরকম গল্প। যে গল্প হার মানায় রূপকথাকেও। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মারপ্যাঁচে যেখানে বন্ধু হয়ে যায় বিশ্বাসঘাতক। বন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজে হয়ে গেলেন এক রাজ্যের মহারাজা। অন্যদিকে যার জন্য তিনি পেলেন রাজ্য, তাকে ছুড়ে দেয়া হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এমন কাহিনী আর গল্প সিনেমাতেই দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে এমন এক গল্পের খলনায়ক ওবায়দুল করিম । আর তার রাজ্যের নাম ওরিয়ন। ওরিয়ন গ্রুপ। ঢাকার প্রবেশ পথ যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান যে ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে এই ওরিয়ন গ্রুপের তত্ত্বাবধানেই। এখানেও রয়েছে আরও ভয়ঙ্কর গল্প। তার আগে রাজ্য দখলের গল্প আপাতত কিছুটা জেনে আসা যাক। দুই দশক আগের কথা। তখন ২০০৩ সাল। এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে আসেন সেদেশের ধনকুবের ব্যবসায়ী মাজেদ আহমেদ সাইফ বেলহাসা। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে নির্মাণ প্রকল্পে বিনিয়োগ করা। বাংলাদেশে এসে ঘটনাচক্রে যোগাযোগ হয় ওবায়দুল করিমের সঙ্গে। বেলহাসা জানান, তার মনের ইচ্ছার কথা। লুফে নেন ওবায়দুল করিম । দুইজনের মধ্যে কথা হয়। হয় বন্ধুত্ব। একে- অপরকে বিশ্বাস করেন। তাহলে আর দেরি কেন? ২০০৩ সালেই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেন ধনকুবের বেলহাসা। দুবাইভিত্তিক কোম্পানি বেলহাসা ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকটিং কোম্পানি এলএলসি ও বেলহাসা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি এলএলসি’র শাখা খোলেন বাংলাদেশে। সঙ্গে নেন বন্ধু ওবায়দুল করিমকে। বেলহাসা ঢাকার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণকাজে অর্থ বিনিয়োগ করেন। এক বছরের মাথায় কূটচাল চালতে থাকেন ওবায়দুল করিম। ফন্দি আঁটেন পুরো ব্যবসা নিজের করে নেয়ার। ওদিকে ওবায়দুল করিম বেলহাসার প্রকল্পের নামে ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার শুরু করেন। বিষয়টি জেনে যায় বেলহাসা। এছাড়া বেলহাসা কোম্পানির শেয়ার ভাগাভাগী নিয়েও দু’জনের মধ্যে সৃষ্টি হয় দূরত্ব। ওবায়দুল করিম শুরু করেন কোম্পানি হাতিয়ে নেয়ার চক্রান্ত। খুবই দ্রুত জাল-জালিয়াতি করে পুরো কোম্পানি দখলের চেষ্টা করেন। এ কাজে সহায়তা নেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরও। জাল স্বাক্ষর করে কোম্পানির নামও বদলে দেন। বেলহাসা থেকে নাম পাল্টে হয়ে যায় ওরিয়ন গ্রুপ। এ গ্রুপের চেয়ারম্যান হন ওবায়দুল করিম। এরপর শুরু হয় তার অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, শেয়ার প্রতারণা, অংশীদারদের শেয়ার দখল। শুধু তাই নয়, পরিবারের সদস্যদের নামে ভুয়া মালিকানা হস্তান্তর শুরু করেন। এরপর জড়ান একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা। এ থেকেই গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে ওরিয়ন গ্রুপের নাম। ওবায়দুল করিমের নাম। একজন বিদেশি ধনকুবের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসে নিঃস্ব হয়ে ফিরেন তার দেশে। সঙ্গে বয়ে নিয়ে যান নজিরবিহীন এক প্রতারণার ইতিহাস। ওবায়দুল করিমের নেশাই ছিল এটি। শুধু বেলহাসা নয়, একম ইঞ্জিনিয়ারিং নামে আরেকটি কোম্পানি এভাবে দখল করেন ওবায়দুল করিম। তার সেই অংশীদারকেও করেন দেশছাড়া। ওবায়দুল করিমের উত্থানের শুরু এমন নাটকীয়ভাবে। শুরুতেই দুবাইভিত্তিক কোম্পানি বেলহাসার শেয়ার কেলেঙ্কারি করে হাতিয়ে নেন কোম্পানির দেড় হাজার কোটি টাকা। ওদিকে ক্ষমতা খাটিয়ে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার প্রকল্পে হাজার কোটি টাকা লোপাট করে রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। মানবজমিন-এর অনুসন্ধানে ওরিয়ন গ্রুপের জাল-জালিয়াতির অনেক তথ্য উঠে এসেছে।

ফ্লাইওভার থেকে হাজার কোটি টাকা উধাও:

ঢাকা সিটি করপোরেশন যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার নির্মাণে প্রকল্প ব্যয় ধরে ৬৭০ কোটি টাকা। সেই অনুযায়ী ওবায়দুল করিম বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১০ শতাংশ সুদে ৬০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। এরমধ্যে জনতা ব্যাংক-২০০ কোটি, এসআইবিএল ব্যাংক-৫০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক-১৫০ কোটি, আইসিবি ব্যাংক-৫০ কোটি, রূপালী ব্যাংক-১৫০ কোটি টাকা ঋণ দেয়। তবে ওবায়দুল করিম তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক আসিকুর রহমান ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের যোগসাজশে তথাকথিত আরবিট্রেশনের নামে চুক্তির ৬৭০ কোটি টাকা থেকে ব্যয় বাড়িয়ে ২ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করেন। তবে আরবিট্রেশন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিমপ্লেক্স ইনফ্রাক্টাকচার লি. ইন্ডিয়ার সঙ্গে হওয়া চুক্তিমতে, ফ্লাইওভারে কনস্ট্রাকশন কাজে মোট খরচ হয় ৭৮৮ কোটি টাকা। অথচ প্রকল্প ব্যয় ধরা ছিল ৬৭০ কোটি টাকা। কিন্তু অবৈধভাবে ব্যয় বর্ধিত করা হয় ২৩৭৮ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বন্ড ডিসকাউন্টের মাধ্যমে বন্ধক রেখে ২১৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এরমধ্যে ১৩৬২ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয় এমন তথ্যও প্রকাশ পায়। এদিকে বেলহাসা ও একম ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ব্যাংক একাউন্টে লেনদেনের স্টেটমেন্ট ঘেঁটে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার প্রকল্পে ৭৯০ কোটি টাকা খরচের তথ্য পাওয়া গেছে। বাকি ১৩৬০ কোটি টাকার কোনো হদিস মেলেনি। ২০১১ সালের ২৮শে নভেম্বর বেলহাসা-একম জেভি অ্যান্ড এসোসিয়েটের নাম পরিবর্তন করে অবৈধভাবে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার নামকরণ করা হয়। এই নাম পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় ওবায়দুল করিম বেলহাসার প্রধান অংশীদার মাজেদ বেলহাসা ও পার্টনার মুজিবুল হকের স্বাক্ষর জাল করেন। এজিএম ছাড়াই তাদের কোম্পানি থেকে বের করে দেয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওবায়দুল করিম যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার থেকে আদায়কৃত টোলের মাত্র ৪০ শতাংশ হিসাবে দেখান। বাকি ৬০ শতাংশ টোলের টাকা গোপনে সরিয়ে নিচ্ছেন। ১২ বছর ধরেই চলছে এ ঘটনা। এমন বেশকিছু টোল আদায়ের ব্যালেন্স সিট মানবজমিন-এর হাতে এসেছে। ফ্লাইওভার সরজমিন ঘুরেও এমন চিত্র দেখা গেছে। নির্দিষ্ট টোল প্লাজা বাদ দিয়েই ফ্লাইওভারের বিভিন্ন পয়েন্টে চালকদের হাতে রশিদ ধরিয়ে টোল আদায় করছেন ওরিয়নের পোশাক পরিহিত কিছু ব্যক্তি। এভাবে টাকা নেয়ার হিসাব থাকছে না কম্পিউটারের সফ্‌টওয়্যারে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের হিসাব বলছে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে প্রতি ঘণ্টায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলে ৮ থেকে ১০ হাজার। সে হিসাবে টোল আদায় হওয়ার কথা বছরে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর ওরিয়ন হিসাব দিচ্ছে বছরে ১৪০ কোটি থেকে ১৭৮ কোটি টাকার।

এ ছাড়া ফ্লাইওভার নির্মাণ নকশা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নিচের রাস্তা বন্ধ করে পায়ার ও ডিভাইডার করা হয়েছে যাতে গাড়ি কম চলতে পারে।

অবিশ্বাস্য সম্পদ অর্ধশত বিচারক-কর্মকর্তার

১৪ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

বিচার বিভাগের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার অবিশ্বাস্য সম্পদের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের অনেকেই অবৈধ উপায়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কেউ কেউ আবার হাজার কোটি টাকার মালিক। অনেকের আলিশান ফ্ল্যাট রয়েছে দেশে ও বিদেশে। কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি কিনেছেন বেশ কয়েকজন। শত শত বিঘা জামির মালিকানা অর্জন করেছেন কয়েকজন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা শাখার গোপন অনুসন্ধানে বিচার বিভাগের ৫১ জনের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের নামে-বেনামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্যও রয়েছে দুদকের কাছে।

হাতবদল হয়ে পরিবহনে এখন বিএনপির দুই সাইফুলের চাঁদাবাজি

১৪ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

বিএনপির দুই সাইফুলের চাঁদাবাজি চলছে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে। এই টার্মিনাল থেকেই দিনে সাড়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এই সাইফুলদের একজন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব। আরেকজন হলেন কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল আলম।

রাজনৈতিক ও পরিবহন খাতের সূত্রগুলো বলছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি দখলে নেন কুমিল্লা বিএনপির সাইফুল। তিনি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেশের পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ করছেন। আর ঢাকা উত্তর বিএনপির সাবেক নেতা সাইফুল আলম নিরব মহাখালী বাস টার্মিনালের বাইরে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, কারওয়ান বাজার ও শেরেবাংলা নগর এলাকায় একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।

তেজগাঁও, শেরেবাংলা নগর, মহাখালী টার্মিনালসহ আশপাশের এলাকা দীর্ঘদিন ধরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের লোকজন নিয়ন্ত্রণ করতেন। ৫ আগস্টের পর আসাদুজ্জামান খান আত্মগোপনে চলে যান। তাঁকে ভারতে দেখা গেছে—এমন খবর বের হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসাদুজ্জামান খান কামাল যেসব এলাকায় নিয়ন্ত্রণ করতেন, এর সবই সাইফুল আলম নিরবের অধীন চলে এসেছে। কোথাও কোথাও বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। মহাখালী ও তেজগাঁও টার্মিনালে আসাদুজ্জামান খানের লোকজনকে সামনে রেখে চাঁদাবাজি করছেন তিনি।

জামালপুর চলত আওয়ামী গডফাদার মির্জা আজমের ইশারায়

১৫ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

পুরো জামালপুরে তাঁর কথার বাইরে যাওয়ার সাহস ছিল না অন্য কোনো সংসদ সদস্য (এমপি), দলীয় নেতা-কর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ কারও। সরকারি দপ্তরের ঠিকাদারি, জমি দখল, দলীয় মনোনয়ন, দলীয় পদপদবি পাওয়া না–পাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।

তিনি মির্জা আজম। তিনি জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ১৬ বছরের ব্যবধানে তিনি বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। ১৬ বছর ধরে ‘চুপ’ থাকা মানুষগুলো এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন, বের হতে শুরু করেছে তাঁর রাজত্বের নানা অন্যায় ও অনিয়মের তথ্য।

মির্জা আজম তাঁর স্ত্রী, সন্তান, পাঁচ ভাইসহ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নামে-বেনামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

সাজা দিয়েও সামলাতে হিমশিম বিএনপি

১৯ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দল ও নেতাদের ভাবর্মূতি আরও বাড়িয়ে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে চায় বিএনপি। তবে দলের হাইকমান্ডের এ আশা পূরণে ‘পথে কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন মাঠপর্যায়ের কিছু নেতাকর্মী। তাদের দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না দলটি। আড়াই মাসে সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কারসহ নানা সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও লাগাম টানা যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে কতিপয় নেতাকর্মী দলের কঠোর অবস্থানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। এ পরিস্থিতিতে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে দলটির হাইকমান্ড। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে লাগাম টানার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অবশ্য বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের ‘জিরো টলারেন্সে’র কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কারণ অপকর্ম ও বিরোধে জড়িয়ে এরই মধ্যে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী দল থেকে বাদ পড়ছেন। একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব–কোন্দল থাকলেও প্রকাশ্যে বিরোধে জড়াতে ভয় পাচ্ছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে নিজের এবং দলের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে ‘গোপনীয়তা ও সর্তকতা’ অবলম্বনের মাধ্যমে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মনে করেন, সারাদেশের মুষ্টিমেয় নেতাকর্মীর নেতিবাচক কাজের দায় দলের সবাইকে নিতে হচ্ছে। নানা কায়দায় যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা নিয়েছেন এখনও তারাই চাঁদাবাজি ও দখলদারিতে জড়িয়ে পড়ছেন।

আবাসনের নামে কৃষিক্ষেতে আ’লীগ নেতাদের থাবা

১৯ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

২০১০ সালেও খুলনা থেকে সাতক্ষীরা, কৈয়া কিংবা বটিয়াঘাটা সড়কের দু’পাশে চোখে পড়ত অবারিত ধানক্ষেত। গত ১৫ বছরে সেই দৃশ্য বদলে গেছে। এখন সড়কের দু’পাশে অসংখ্য স্থাপনা। যেটুকু ফাঁকা রয়েছে, সেখানে ঝুলছে আবাসন কোম্পানির সাইনবোর্ড। আশপাশের অলিগলি, সংযোগ সড়কের দৃশ্যও একই।

খোলা চোখে আবাসন ব্যবসায়ীদের এসব কাজ স্বাভাবিকই মনে হয়। কিন্তু আড়ালে চলছে কোটি কোটি টাকার খেলা। অস্ত্র আর পেশিশক্তির ঝনঝনানি। জাল কাগজ তৈরি করে জমি দখল, দরিদ্র কৃষকদের জমি বিক্রিতে বাধ্য করা, সরকারি খাল ভরাট করে আবাসন প্রকল্প তৈরি ও বিক্রির মাধ্যমে প্রতিবছর এখানে শত শত কোটি টাকা হাতবদল হয়। গত ১৫ বছর ধরে এই ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছিল গুটি কয়েক আওয়ামী লীগ নেতার হাতে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আবাসন ব্যবসার মাধ্যমে প্রভাবশালীরা কোটি টাকার মালিক হলেও দিন দিন নিঃস্ব হচ্ছেন এলাকার কৃষক। খাল ভরাট করায় শোলমারী এলাকার ২৩টি গ্রাম পানির নিচে ডুবে ছিল দীর্ঘদিন। কৃষিজমি রক্ষা এবং আবাসন কোম্পানি তৈরির জন্য আইন থাকলেও পদে পদে তা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। খুলনায় ৯৪টি আবাসন প্রকল্পের একটিরও নিবন্ধন নেই। ঘুষ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে সরকারি দপ্তরগুলো।

প্রভাবশালীদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের ধীরগতি, ২ মাসে ১টি মামলা

২০ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে প্রভাবশালী ১৮০ জনের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। অনুসন্ধান শেষ করে গত দুই মাসে দুদক মামলা করতে পেরেছে মাত্র একটি।

মামলাটি হয়েছে ৯ অক্টোবর। অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে দুদক। এ মামলায় আসাদুজ্জামান খানের স্ত্রী এবং দুই ছেলেমেয়েকেও আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেনও এ মামলার আসামি।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও অন্য প্রভাবশালীদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। নির্বাচনী হলফনামার তথ্যের ভিত্তিতে সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের সম্পদ কত গুণ বেড়েছে, সেই তথ্য বের করে রেখেছেন অনুসন্ধানে যুক্ত থাকা দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

দুদকের পাঁচজন উপপরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, অনিয়ম–দুর্নীতির অনুসন্ধান দ্রুত করার জন্য সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া জরুরি। পাশাপাশি সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালীদের দুর্নীতির অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে দিকনির্দেশনা দেওয়া দরকার। এটি সেভাবে হচ্ছে না। অনুসন্ধানের কাজে অভিযুক্ত ব্যক্তির বাসা ও কার্যালয়ে অনেক ক্ষেত্রে তল্লাশি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তল্লাশির ক্ষেত্রে আইনগত বাধা না থাকলেও দুদক কমিশনের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সময়মতো অনুমতিও পাওয়া যাচ্ছে না। দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান, দুজন কমিশনারসহ শীর্ষ পদগুলোতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা সবাই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া।

দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের কাজটি সাধারণত করে থাকেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক থেকে পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তারা। দুদকে উপসহকারী পরিচালক থেকে পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন প্রায় ৪০০ জন।

সংবাদপত্র ও প্রচারসংখ্যা নিয়ে ডিএফপির অবিশ্বাস্য তথ্য

২০ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

আপনি দেশের কয়টি পত্রিকার নাম জানেন? ১০, ২০, ৩০টি? সরকারের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) তথ্য অনুযায়ী, এখন দেশে কেবল মিডিয়া তালিকাভুক্ত দৈনিক পত্রিকা আছে ৫৮৪টি। এর মধ্যে ২৮৪টি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়।

অবশ্য এসব পত্রিকার বেশির ভাগেরই নাম পাঠকেরা কখনো শোনেননি। বাজারে নামসর্বস্ব এসব পত্রিকা খুঁজে পাওয়াটাও অনেকটা দুঃসাধ্য সাধনের মতো। কারণ, ঢাকার হকাররা বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে বিলি করেন কমবেশি ৫৪টি দৈনিক পত্রিকা। এই ৫৪টির সব কটি আপনি সব সময় পাবেন না। কিছু পত্রিকার দেখা পাওয়া যাবে শুধু নগরের কিছু দেয়ালে।

এ তো গেল পত্রিকার সংখ্যা। ডিএফপির নির্ধারণ করা পত্রিকার প্রচারসংখ্যাও বিস্ময়কর। সরকারি হিসাব বলছে, ১৭ কোটি মানুষের দেশে প্রতিদিন সব মিলিয়ে ১ কোটি ৮৫ লাখ কপির বেশি পত্রিকা ছাপা হচ্ছে! অর্থাৎ প্রতি ৯ জনের বিপরীতে এক কপি পত্রিকা ছাপা হচ্ছে।

সরকারি হিসাব ও বাজারের চিত্র

ডিএফপির গত আগস্টে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ২৮৪টি সংবাদপত্রের ১ কোটি ৫৩ লাখ ৮৬ হাজার কপি ছাপা হচ্ছে।

ছাপা পত্রিকার বড় অংশই বিক্রি হয় রাজধানী ঢাকায়। আর ঢাকার মোট জনসংখ্যা এখন ২ কোটি ১০ লাখ। পাঠকের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দেওয়ার প্রধান মাধ্যম হকার। ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের (সাভার, নবীনগর, সিঙ্গাইর, গাজীপুর, দাউদকান্দি, মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত) এলাকায় সংবাদপত্র বিলি করে থাকে হকারদের দুটি সংগঠন। এর একটি ঢাকা সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতি। আরেকটি হলো সংবাদপত্র হকার্স কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি। সমিতি দুটির নেতারা জানিয়েছেন, এই দুই সমিতির বাইরে আর কেউ ঢাকা মহানগরে সংবাদপত্র বিলি করে না।

ঢাকা সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা নিয়মিত ৫২টি পত্রিকা বিলি করেন। তাঁরা প্রতিদিন আনুমানিক সাড়ে তিন লাখ কপি পত্রিকা বিলি করেন।

আর হকার্স কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সালা উদ্দীন মো. নোমান প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা দৈনিক ৪৪টি পত্রিকার ৭০-৭৫ হাজার কপি বিলি করেন।

এই দুই সমিতি যেসব পত্রিকা বিলি করে, সেটার নির্দিষ্ট তালিকা আছে। তালিকা দুটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হকার্স কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি যে ৪৪টি পত্রিকা বিলি করে, ঢাকা সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমিতির তালিকায়ও তার ৪২টি আছে। অর্থাৎ এই দুটি সমিতি ঢাকায় বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে মোট ৫৪টি দৈনিক সংবাদপত্র বিক্রি করে। সব মিলে প্রতিদিন গড়ে সোয়া চার লাখ কপি পত্রিকা বিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় প্রথম আলো ও বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১০-১৫টি পত্রিকা বাদে অন্যগুলোর বিক্রির সংখ্যা ১০-৫০ কপির মতো।

এর বাইরে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় দেয়ালে কিছু পত্রিকা দেখা যায়। আর কিছু পত্রিকা বের হয় সরকারি বিজ্ঞাপন বা ক্রোড়পত্র পেলে। যখন যে প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দেয়, সে প্রতিষ্ঠানে এবং সরকারি কিছু দপ্তরে এসব পত্রিকার কপি পৌঁছে দেওয়া হয় নিজেদের উদ্যোগে। আর কিছু পত্রিকা হাতে গোনা কয়েক কপি ছাপা হয়, যেগুলো কিছু নির্দিষ্ট সরকারি দপ্তর এবং যাদের নিয়ে বিশেষ সংবাদ করা হয়, তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এই পত্রিকাগুলো ‘দেয়াল পেস্টিং’ পত্রিকা এবং ‘আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা’ হিসেবে পরিচিত।

বালুমহালের টাকা বণ্টনে বিএনপি নেতার তালিকা ভাইরাল

২১ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর বালুমহাল থেকে আদায় করা টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিএনপি নেতার একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রিয়াজ মৃধা স্বাক্ষরিত এ তালিকা সম্প্রতি ভাইরাল হয়। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে রিয়াজ মৃধা বলেন, সন্ধ্যা নদী থেকে বালু উত্তোলন করত মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ। গত ৫ আগস্টের পর তারা বালু উত্তোলনের জন্য আর আসেনি। পরে ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে বানারীপাড়া পৌর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান জুয়েল চুক্তি করেন। ওই চুক্তি অনুযায়ী বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়।  লাভের টাকা ১৭ বছর বঞ্চিত বিএনপির নেতাকর্মীসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। মোট ১ মাস ১৭ দিনের লাভের টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে। বরিশালের বটতলায় একটি হোটেলে বসে এ ভাগবাটোয়ারার তালিকা করা হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ছড়িয়ে পড়া তালিকায় ওই বিএনপি নেতা প্রভাবশালী কাউকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘নেতা, আমি যে টাকা পাই আমার এখানে যারা সব সময় থাকে তাদের অধিকাংশকে ১ হাজার/২ হাজার টাকা করে দিয়েছি, তাহলে দয়া করে বিবেচনা করে দেখুন আমি একা বালুর টাকা খাই কিনা? তাহলে কেন আমার বিরুদ্ধে এত যড়যন্ত্র? হ্যাঁ, আমার দোষ, দলীয় লোকজন যে কাজে আসে সে কাজগুলো করার চেষ্টা করি এবং আপনার নির্দেশ পালন করি। আল্লাহ হাফেজ, ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।’ নিচে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রিয়াজ মৃধার স্বাক্ষর, নাম ও দলীয় পদবি রয়েছে।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, এমডিসহ পরিবারের ৮ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

২১ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরসহ এই পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ তাঁর পরিবারের আটজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহান, তাঁর স্ত্রী আফরোজা বেগম, ছেলে সায়েম সোবহান আনভীর ও তাঁর স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, আরেক ছেলে সাদাত সোবহান ও তাঁর স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌস সোবহান এবং আরও দুই ছেলে সাফিয়াত সোবহান সানভীর ও সাফওয়ান সোবহানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিএনপি-জামায়াতপন্থী চিকিৎসকদের হাতাহাতি

২২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের পদ নিয়ে ড্যাব ও এনডিএফের সমর্থক চিকিৎসকেরা বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এ নিয়ে চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিএনপি–সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব বা ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। অন্যদিকে জামায়াত–সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন এনডিএফ বা ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপ বা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সদস্যরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এখন স্বাস্থ্য বিভাগের বড় পদে আর স্বাচিপের কাউকে রাখা হচ্ছে না। পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে ড্যাব আর এনডিএফের মধ্যে।

ঢাকা উত্তর সিটিতে কাকে, কোথায়, কোন পদে বদলি–‘ঠিক হচ্ছে’ শ্রমিক দলের ফরমাশে

২৬ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

ঢাকা উত্তর সিটিতে কাকে, কোথায়, কোন পদে বদলি–‘ঠিক হচ্ছে’ শ্রমিক দলের ফরমাশে

ঢাকা উত্তর সিটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রমিক দল নেতাদের ফরমায়েশি তালিকা মেনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি, পদোন্নতি বা দায়িত্বে রদবদল করার অভিযোগ উঠেছে। পাওয়া গেছে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও। এ ক্ষেত্রে কাউকে ভালো জায়গায় বদলির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, কাউকে–বা খারাপ জায়গায় বদলির হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সংস্থাটিতে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি

পুলিশে দেড় দশকে নতুন পদ সৃষ্টি ৮৩ হাজার, নিয়োগ প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার

আগস্ট ১০, ২০২৪, বণিক বার্তা

মাঠপর্যায়ে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে পুলিশ বাহিনী। গত দেড় দশকে এ বাহিনীতে বিপুলসংখ্যক নতুন পদ সৃজন ও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে বাংলাদেশ পুলিশে মোট ৮৩ হাজার ৭০টি নতুন পদ সৃজন করা হয়। কিন্তু এ দেড় দশকে শুধু কনস্টেবল, এসআই ও পুলিশ সার্জেন্ট পদে নিয়োগ দেয়া হয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৯১৯ জনকে, যা মোট পুলিশ সদস্যের প্রায় অর্ধেক।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের এ নিয়োগের বড় অংশই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে মূলত ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের ক্ষমতাসীনদের একটি বড় সমস্যা হলো তারা ক্ষমতা ছাড়তে চান না; ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চান। গত দেড় দশকে এ ক্ষমতা চিরস্থায়ী এবং অর্থ লোপাট করতে গিয়ে পুলিশসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি ইনস্টিটিউশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। পুলিশের এ বড় নিয়োগের পেছনেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য মুখ্য ছিল এবং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার একটি হাতিয়ার হিসেবে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে তারা জনগণের আস্থা হারিয়েছে।’

জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে গত দেড় দশকে পুলিশ বাহিনীর পরিবর্তন নিয়ে গত নভেম্বরে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে পুলিশের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার ৯২৫ জন কনস্টেবল, ১১ হাজার ৫১০ জন এসআই ও ২ হাজার ৪৮৪ জন পুলিশ সার্জেন্টকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর। তাদের মধ্যে এসআই ও সার্জেন্ট পদে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে। এ মেয়াদে এসআই পদে ৪ হাজার ৯০৮ জন এবং সার্জেন্ট পদে ৭২৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া ২০০৯-২০১৩ সময়কালে এসআই পদে ৩ হাজার ৭৫১ ও সার্জেন্ট পদে ৪২৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৪-২০১৮ সময়কালে এসআই পদে ২ হাজার ৮৪৫ ও সার্জেন্ট পদে ৪২৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়।

এ দেড় দশকে দেশে ৬৪টি নতুন থানা, ৯৭টি তথ্যকেন্দ্র ও একটি ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। এছাড়া দেড় দশকে পুলিশের জন্য মোট ২ হাজার ৭৬০টি পিকআপ, ৫২৪টি জিপ, ৩৫৪টি ট্রাক, ১৩টি এপিসি, ১৭৮টি জলযান এবং ৭ হাজার ৬৩৪টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্রও আধুনিকায়ন হয়েছে।

বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও একাধিকবার উদ্বেগ জানানো হয়েছে। তবে সর্বশেষ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্বিচারে গুলির ঘটনা জনরোষ তৈরি করে। এর ধারাবাহিকতায় গণ-অভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। দেশের বিভিন্ন থানায় পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অনেক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুও ঘটেছে।

বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট একদিনে সারা দেশে ৪৫০টিরও বেশি থানা আক্রান্ত হয়েছে। এর আগে ৪ আগস্টেই মৃত্যু হয়েছিল ১৪ জন পুলিশ সদস্যের। আহত হয়েছিল তিন শতাধিক। এসব ঘটনার জেরে পুলিশকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ রেখে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়াসহ ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে যান নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তারা। ফলে দেশের সব থানাসহ ট্রাফিক পয়েন্টগুলো কার্যত ফাঁকা হয়ে যায়।

ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরো আগেই চলে গিয়েছিল। দেখা যেত মানুষ তখনই পুলিশের কাছে যেত, যখন তার আর উপায় থাকত না। কিন্তু তখনো দেখা যেত যে ভুক্তভোগী পুলিশের সহায়তা পাচ্ছে না, বরং অপরাধীকেই পুলিশ রক্ষা করছে। ফলে মানুষ পুলিশের ওপর আরো আগেই আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। গত কয়েক দিনে আমরা পুলিশের প্রতি জনগণের যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখালাম, তা একসময় ঘটতই। ছাত্র-জনতার আন্দোলন থামাতে পুলিশ যেভাবে দলীয় নির্দেশে কাজ করেছে, গুলি চালিয়েছে, তার জেরে এটা আমরা এখন দেখতে পেয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘তবে পুলিশ হত্যা বা থানায় ছাত্ররা আগুন দিয়েছে বলে মনে করি না। কারণ তারা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিচার চেয়েছিল। এ সহিংসতা হয়তো কোনো সুযোগসন্ধানী মহল করেছে। তবে আমাদের দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে কাজে ফেরাতে হবে। যে ছাত্ররা কোটা সংস্কার থেকে রাষ্ট্র সংস্কারে আন্দোলন করছে, তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে, বাকিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, সব পুলিশই অপরাধী নয়, যারা হুকুম পালন করেছে এবং যারা হুকুম দিয়েছে তাদের উভয়েরই বিচার করতে হবে। আর পুলিশসহ সব ইনস্টিটিউটে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে, যেন ইনস্টিটিউটগুলো রাজনৈতিক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পরিবর্তে জনকল্যাণে কাজ করে। এ পরিবর্তন একদিনে আসবে না। এজন্য ধৈর্য ধরতে হবে।’

দেশজুড়ে পুলিশের ওপর হামলার জেরে ৬ আগস্ট থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা দেন পুলিশ সদস্যরা। দেশের সব থানাসহ ট্রাফিক পয়েন্টগুলো কার্যত ফাঁকা হয়ে যায়। ফলে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে একটি বড় সংকট তৈরি হয়েছে। ৭ আগস্ট পুলিশ সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। তবে এ সময় পুলিশের অনেকেই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তায় গতকাল দেশের বিভিন্ন থানার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন, অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে মিছিল

১০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘দেশত্যাগে বাধ্য করা’র প্রতিবাদে করা বিক্ষোভ মিছিল কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে হামলা করে সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় এক সেনাসদস্যের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে মিছিল করা হয়।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাঁচ সেনাসদস্যসহ সাতজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় ছবি তুলতে গেলে দুই সাংবাদিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়। তাঁরা হলেন চ্যানেল ২৪-এর গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি বাদল সাহা ও মাছরাঙার টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সাবেত আহমেদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেলা তিনটার দিকে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচিতে সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ও জালালাবাদ ইউনিয়ন এবং কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বেলা তিনটার দিকে ওই তিন ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হয়। তাঁরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশের গাড়ি আটকা পড়ে। খবর পেয়ে গোপালগঞ্জে কর্মরত সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে সেনাসদস্যদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান তাঁরা। পরে বিক্ষোভকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সেনাসদস্যদের মারধর শুরু করলে সেনাসদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। বিক্ষোভকারীদের হামলায় সেনাসদস্যরা দৌড়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ সময় এক সেনাসদস্যের কাছ থেকে একটি অস্ত্র নিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।

ঘটনার পর ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীরা মিছিল করেন। পরে অস্ত্রটি গোপীনাথপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে জমা দেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু তাঁরা অস্ত্রটি নিতে অস্বীকৃতি জানালে গোপীনাথপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফের কাছে জমা দেওয়া হয়।

 

দেড় দশকে বিচারবহির্ভূত হত্যা ২,৬৯৯ ও গুম হন ৬৭৭ জন

আগস্ট ১২, ২০২৪, বণিক বার্তা

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শাসনামলে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৬৯৯ জন। এ সময়ে গুম হন ৬৭৭ জন, কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন ১ হাজার ৪৮ জন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের তালিকাসহ ২০২৪ সালের ঘটনা যুক্ত করলে নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়াবে বলে দাবি সংগঠনটির।

অধিকারের প্রতিবেদন বলছে, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন বজায় রাখতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার। অকার্যকর বিচার ব্যবস্থার কারণে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ব্যবহার করে এসব বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুনের ঘটনা ঘটেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সরকারের সমালোচক ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনের কাজে সরকারের পক্ষে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ব্যবহার করা হয়। এসব বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুনের ঘটনার মধ্যে নির্যাতনে হত্যা, ক্রসফায়ার, হত্যার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গুলি, ব্যবসায়ীকে আটক করে মালামাল লুট, নাগরিকদের গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের মাধ্যমে এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে অধিকারের পরিসংখ্যান বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার বছর ২০০৯ সালে হত্যার শিকার হন মোট ১৫৪ জন। এছাড়া ২০১০ সালে ১২৭ জন, ২০১১ সালে ৮৪, ২০১২ সালে ৭০ জনকে হত্যা করা হয়। নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৯ জনে। আর নির্বাচনের বছর ২০১৪ সালে ১৭২ জন, ২০১৫ সালে ১৮৬, ২০১৬ সালে ১৭৮, ২০১৭ সালে ১৫৫ জনকে হত্যা করা হয়।

২০১৮ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয় ৪৬৬ জনকে। ২০১৯ সালে ৩৯১ জন, ২০২০ সালে ২২৫ জনকে হত্যা করা হয়। ২০২১ সালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারির পর তা কমে ১০৭ জন, ২০২২ সালে ৩১ ও ২০২৩ সালে ২৪ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়।

এ দেড় দশকে ৬৭৭ জন গুমের শিকার হন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৮ জন গুমের শিকার হন ২০১৮ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর। এছাড়া ২০০৯ সালে তিনজন, ২০১০ সালে ১৯, ২০১১ সালে ৩২, ২০১২ সালে ২৬, ২০১৩ সালে ৫৪, ২০১৪ সালে ৩৯, ২০১৫ সালে ৬৭, ২০১৬ সালে ৯০, ২০১৭ সালে ৮৮, ২০১৯ সালে ৩৪, ২০২০ সালে ৩১, ২০২১ সালে ২৩, ২০২২ সালে ২১ ও ২০২৩ সালে ৫২ জন গুমের শিকার হন।

শুধু অধিকার নয়, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সলও একই তথ্য জানান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘অধিকারের সঙ্গে আমাদের হয়তো সংখ্যাগত দিক থেকে কিছুটা পার্থক্য থাকবে, এটা অবশ্য খুবই ছোট। তবে অধিকারের তথ্যের ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে।’

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সবচেয়ে বেশি হয়েছে নির্বাচনের বছরগুলোয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় যা দ্বিগুণ ছিল। এর মধ্যে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৪৬৬ জনকে হত্যা করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এ বছরই সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ গুম হয়। কারাগারে মৃত্যুও ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ।

গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই এখনো নিখোঁজ। তবে ফেরত আসা ব্যক্তিদের দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর নিজেদের তারা আবিষ্কার করতেন কোনো এক বদ্ধ রুমে। ‘আয়নাঘর’ কিংবা ‘সেফ হোম’ নামে পরিচিত সেই কুঠুরিতে বছরের পর বছর তাদের আটকে রেখে ভয়ংকর নিষ্ঠুর নির্যাতন করার অভিযোগ।

ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম আরমানকে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট মিরপুরের নিজ বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকে নিয়মিতই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হেনস্তা করত তার পরিবারকে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আরমান পরিবারের কাছে ফিরেছেন। এতদিন তিনি আয়নাঘরে বন্দি ছিলেন বলে জানান।

আরমানের মা খোন্দকার আয়েশা খাতুনের সঙ্গে গতকাল কথা হয়। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘ছেলে গুম হওয়ার পর পুরো সময়টাই আমাদের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে। পুলিশি নির্যাতন, নিরাপত্তাহীনতা, বাসায় তল্লাশির মতো ঘটনা ঘটত প্রতি মাসে। এমন কোনো মাস নেই যখন পুলিশ আসত না। কখনো মিরপুর থানা, কখনো কয়েকটি থানা একসঙ্গে আবার কখনো যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হতো। স্থানীয় গুণ্ডাদের অত্যাচারেও আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। আমাদের আত্মীয়-স্বজন বাসায় আসতে পারত না, এমনকি ড্রাইভাররাও না। একপর্যায়ে আমাদের বাচ্চারা ট্রমাটাইজ হয়ে যায়। পরে ২০২১ সালে বাসা ছেড়ে দিই। কিন্তু বাসাটা ভাড়া দিতে পারলাম না।’

মীর আহমদ বিন কাশেম আরমানের ফিরে আসার বিষয়ে মা আয়েশা খাতুন বলেন, ‘আয়নাঘরে তাকে শারীরিক কোনো নির্যাতন করা হয়নি বলে জানিয়েছে। তবে তার সেলটা ছিল খুবই ছোট। সেখানে বড় ফ্যান লাগানো ছিল, সারা দিন-রাত প্রচণ্ড শব্দ করত, মাঝে মাঝে উচ্চ ভলিউমে গান বাজত। এটার প্রভাবে এখন তার মাথা সারাদিন ঝিমঝিম করে। টানা এক বছর তার চোখ বাঁধা ছিল, হাতে হ্যান্ডকাফ লাগানো থাকত। দিনের বেলা সামনের দিকে এবং রাতের বেলা পেছনের দিকে হাত বাঁধা থাকত। খাবার ও শীতের কষ্ট পেয়েছে। শীতের জন্য কাপড় দেয়নি। তবে আরমান মানসিকভাবে অনেক দৃঢ়। এখন অবশ্য তার মধ্যে সারাক্ষণ আতঙ্ক কাজ করছে, কথা বলতে সংকোচ করছে। মানুষের সামনে কথা বলতে পারে না, কেউ কথা বললে আমাদের হাত ধরে রাখে। চোখে দেখতে পারছে না, ঘুমাতে গেলে আতঙ্ক কাজ করে। সে মনে করে আমাদের সঙ্গে যে এখন থাকছে তা তার কাছে পুরোপুরি স্বপ্ন। ঘুমালেই এ স্বপ্ন দূর হয়ে যাবে!’

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্যমতে, ২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ২৫৫ জন। অন্যদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৬০ জন গুমের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯২ জন এখনো নিখোঁজ। তাদের মধ্যে যেমন বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন শিক্ষার্থী কিংবা ব্যবসায়ী; যারা মূলত তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও উপদেষ্টা সালমান গ্রেপ্তার

১৪ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর প্রথম আলোকে জানান, রাজধানীর নিউমার্কেট থানার একটি মামলায় এই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে গত ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। তাঁদের একজন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সবুজ আলী (২৬) এবং অন্যজন হকার মো. শাহজাহান (২৬)। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব হত্যার ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো একটি খুদে বার্তায় বলা হয়েছে, নৌপথে পালিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এক ভুক্তভোগীর বিবরণে গোপন বন্দিশালায় ৯৪ দিন

১৪ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

উত্তর-দক্ষিণে ছয় কদম। আর পূর্ব-পশ্চিমে চার কদম। এই হলো একটি কক্ষের আকার। ছাদ অনেক উঁচুতে। সেখানে সারাক্ষণ জ্বলে থাকে একটি বাতি। একটি ছোট খাটে বিছানা পাতা। পাশেই প্রস্রাব করার জন্য প্লাস্টিকের দুটি পাত্র রাখা। দেয়ালে দেয়ালে খোদাই করে নানা লেখা। কেউ লিখেছে পরিবারের ফোন নম্বর। খোঁজ জানানোর আকুতি। কেউ দাগ দিয়ে দিয়ে হিসাব করেছে বন্দিদশার দিনপঞ্জি।

এমন একটি ঘরেই ৯৪ দিন কাটানোর কথা জানিয়েছেন সাবেক সেনাসদস্য মো. মুকুল হোসেন। তিনি বলেছেন, কেন তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছিল, কেন রাখা হয়েছিল অমন ঘরে, তা আজও তিনি জানেন না। সরকার পরিবর্তনের পর ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে তিনি এসেছেন প্রথম আলোয়।

১৩ আগস্ট কথা হয় মুকুল হোসেনের সঙ্গে। বেশ কিছু কাগজপত্রও নিয়ে এসেছেন তিনি। এতে দেখা যায়, স্বামীকে ফিরে পেতে ২০১৯ সালের ৫ মার্চ ডিবি কার্যালয় ও ১০ মার্চ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর আবেদন করেছিলেন মুকুলের স্ত্রী জিয়াসমিন আরা। এ বিষয়ে ‘ডিবি পরিচয়ে সাবেক সেনাসদস্যকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের ১০ মার্চ। ওই বছরের ১৮ মার্চ র‍্যাব সদর দপ্তরেও আবেদন করেন জিয়াসমিন। ‘নিখোঁজের তিন মাস পর থানায় দিল র‍্যাব’ শিরোনামে প্রথম আলোয় আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ওই বছরের ১৫ মে। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন মুকুল। তাঁর ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হয় ওই ডায়েরিতে। ওই ডায়েরিতে উল্লিখিত বিবরণ ও মুকুল হোসেনের কথায় এ ঘটনার আদ্যোপান্ত উঠে এসেছে।

মধ্যরাতে তুলে নিয়ে নির্যাতন

২০০৩ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর করপোরাল পদে থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নেন মুকুল। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন আশুলিয়ায়। ভারতে বেড়াতে যাওয়ার ভিসা নিয়ে পরামর্শ করতে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কলাবাগানে যান এক বন্ধুর বাসায়। বন্ধু আশিস বিশ্বাসের ওই বাসা মূলত ছাত্রদের মেস। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার দিকে চার থেকে পাঁচজন জন লোক এসে অস্ত্রের মুখে তুলে নেয় মুকুলকে। হাতকড়া লাগিয়ে, মাথায় কালো কাপড় মুড়িয়ে, চোখ বেঁধে ছয়তলা থেকে নিচে নামানো হয় তাঁকে। এরপর একটি মাইক্রোবাসে তুলে বেদম মারধর করা হয়। মাথায়, মুখে ও চোখে ঘুষি মারতে থাকে অনবরত। গাড়িটি চলতে শুরু করার ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর থামে। গাড়ি থেকে নামিয়ে তিন থেকে পাঁচ কদম পার করে একটি কক্ষের মধ্যে নিয়ে বসানো হয় মুকুলকে।

মুকুলের বর্ণনায়, কক্ষটিতে অ্যারোসল ও এয়ারফ্রেশনারের গন্ধ ছিল। চোখ শক্ত করে বাঁধা। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসেন। কী করেন, কয়টা মোবাইল, মোবাইলে কার ছবি, ভাই-বোন কী করে, মানিব্যাগে ব্যাংকের তিনটা কার্ড (ডেবিট) কেন, কোন ব্যাংক হিসাবে কত টাকা, এমন নানা প্রশ্ন করতে থাকেন ওই কর্মকর্তা। প্রশ্নের মধ্যেই লোহা–জাতীয় শক্ত কিছু দিয়ে দুই পায়ের ঊরুর ওপর ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে কেউ একজন। মুকুল প্রথম আলোকে বলেছেন, সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, কোনো মিথ্যা বলেননি। প্রায় ৩০ মিনিট পর থামে সেই নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ।

‘বাইরে লোকজনের চলাফেরা দেখা যেত, কারও চেহারা দেখা যেত না’

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুজন দুই পাশ থেকে ধরে আরেকটি কক্ষে নিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দেন। সব পোশাক খুলে নিয়ে একটি লুঙ্গি ও লাল রঙের সোয়েটার পরতে দেওয়া হয়। নিজে নিজে পোশাক পরার মতো অবস্থা ছিল না। কক্ষটিতে একটি চৌকি (খাট), বালিশ, বিছানার চাদর ও দুটি কম্বল। পূর্ব-পশ্চিম কোনায় প্রস্রাবের দুটি পাত্র। তার ওপরের দিকে একটি ভেন্টিলেশন ফ্যান। বিকট শব্দে সারাক্ষণ চালু থাকত এটি। রুমের মাঝ বরাবর ওপরের ছাদে একটি এনার্জি বাল্ব ২৪ ঘণ্টা জ্বলত। কক্ষটির ভেতরে এক কোনায় ছিল একটি সিসিটিভি ক্যামেরা।

কক্ষটির দুটি দরজা; একটি লোহার ও অন্যটি কাঠের। কাঠের দরজার ওপরের দিকে গোল করে বড় ছিদ্র করা ছিল, যা একটি কাঠ দিয়ে ঢেকে রাখা হতো। ইচ্ছা হলে কাঠ সরিয়ে কক্ষের ভেতরের অবস্থা দেখত বাইরে থেকে। লোহার দরজা থাকত সব সময় তালাবন্ধ। বাইরে লোকজনের চলাফেরা দেখা যেত। তবে কারও চেহারা দেখা যেত না, সব সময় মুখোশ পরে থাকতেন তাঁরা। ফজর, জোহর, আসর ও এশার নামাজের সময়; টয়লেট, অজু ও গোসলের জন্য চারবার বের করা হতো। এর বাইরে জরুরি টয়লেটে যেতে চাইলে লোহার দরজায় শব্দ করলে লোক এসে নিয়ে যেত। চোখ বেঁধে হাতে হাতকড়া লাগিয়ে টয়লেটে নেওয়া হতো। টয়লেটে নিয়ে হাত ও চোখ খুলে দেওয়া হতো। দরজার নিচ দিয়ে তিন বেলা খাবার দিত। সকালে শক্ত রুটি আর সবজি। দুপুরে ও রাতে ভাত, ডাল মিশ্রিত সবজি, মাছ বা ডিম। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখে বিশেষ খাবার দেওয়া হতো।

মুকুল হোসেন বলেন, এক সারিতে আনুমানিক পাঁচটি কক্ষ ছিল। প্রতিটি কক্ষেই তাঁর মতো একজন করে গুম হওয়া মানুষ ছিলেন। মাঝেমধ্যে দরজায় শব্দ করে ডাকাডাকি করত, উচ্চৈঃস্বরে কান্নাকাটি করত। খাবার খুবই জঘন্য ধরনের ছিল। শুরুতে খাওয়া যেত না। এক সপ্তাহ পর এতেই অভ্যস্ত হয়ে যান।

র‍্যাবে হস্তান্তর ও মাদকের মামলা

২০১৯ সালের ৮ মে ইফতারের পর মুকুলকে প্রথম দিন পরে আসা কাপড় ফেরত দিয়ে দ্রুত তৈরি হতে বলা হয়। চোখে তিন পরতের কাপড় বেঁধে বের করে নিয়ে মাইক্রোবাসে তোলা হয়। আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ মিনিট গাড়িটা চলার পর থামে। সিঁড়ি পেরিয়ে দোতলার একটি কক্ষে নিয়ে হাতকড়া ও চোখ খুলে দেওয়া হয়। ওই কক্ষে হাতকড়া পরা আরও তিনটি ছেলে ছিল। দরজার কাছে রাখা স্ট্যান্ড ফ্যানে লেখা ছিল র‍্যাব-১ এমটি পুল। পরদিন জোহরের নামাজের আগে চোখ বেঁধে, হাতকড়া লাগিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দর–সংলগ্ন মনোলোভা কাবাবের সামনে। গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তা পার করে একটি নির্মাণাধীন ভবনের সামনে লোকজনের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর একটি মাইক্রো এসে দাঁড়ালে ধাক্কা দিয়ে ওই গাড়িতে তোলা হয়। ১০ মিনিট পর আবার র‍্যাব কার্যালয়ে আনা হয়। একটি টেবিলের ওপর ছোট ছোট প্যাকেটে ইয়াবা, পাশে মুকুলের দুটি মোবাইল ও পাসপোর্ট রেখে তাঁর ছবি তোলা হয়। ৯ মে রাত আনুমানিক ৯টার দিকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয় তাঁকে। ৭০০টি ইয়াবাসহ আটকের মামলা দেওয়া হয় তাঁর নামে। তিন দিনের রিমান্ডে এনে অত্যাচার চালানো হয় থানায়। এরপর কারাগারে গিয়ে জামিনে মুক্তি পান সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে।

গত ৯ এপ্রিল তাঁর মামলার শুনানি ছিল। আদালতে গিয়ে জানতে পারেন, মার্চে তাঁর মামলার রায় হয়ে গেছে; পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। এর পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। দেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর তিনি এখন তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিচার চাচ্ছেন।

মুকুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুরগির হাড় দিয়ে দেয়ালে দাগ কেটে দিন হিসাব করতাম। আগেও কেউ কেউ করে গেছে ওই কক্ষের দেয়ালে। ৯৪ দিনের প্রতিটি দিন কাঁদতাম, প্রার্থনা করতাম। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছি।’

কথা বলতে বলতে কেঁদে দেন মুকল। তিনি আরও বলেন, ‘এখন নতুন সরকারের কাছে ন্যায়বিচার চাই। আমার মামলা প্রত্যাহার করে আমাকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দিতে পারে তারা। আমার মতো যাঁরা গুমের শিকার হয়েছেন, তাঁদের সবার পাশে নিশ্চয়ই দাঁড়াবে সরকার।’

শামসুল হক টুকু, পলক ও ছাত্রলীগ নেতা সৈকত গ্রেপ্তার

১৫ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ বিভাগ আজ বুধবার রাতে এক খুদে বার্তায় এই তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যেতে বাধা, মারধর

১৫ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আশপাশের এলাকায় কাউকে কাউকে মারধর করতে দেখা গেছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই চিত্র দেখা যায়।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের আশপাশের এলাকায় অনেক মানুষ লাঠি, বাঁশ, পাইপ নিয়ে অবস্থান করছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, এই এলাকায় কেউ এলেই তাঁদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছেন, কেন এসেছেন, তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। এমনকি পরিচয়পত্র, মুঠোফোন দেখা হচ্ছে। ৩২ নম্বর সড়কে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

এই এলাকায় কখনো কাউকে কাউকে ধাওয়া দিতে দেখা গেছে। জটলা পাকিয়ে কাউকে মারধর করতেও দেখা গেছে।

সালমান-আনিসুলের রিমান্ড নিয়ে প্রশ্ন ডেভিড বার্গম্যানের

১৫ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের রিমান্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান।

বুধবার ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্টে তিনি লিখেছেন, সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আদালতের আচরণে তেমন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বুধবার আদালত পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে সালমান ও আনিসুলকে ১০ দিনের জন্য রিমান্ডে পাঠিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা হত্যাকাণ্ডের ‘উস্কানিদাতা’।

সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেনের জামাতা বার্গম্যান দীর্ঘদিন বাংলাদেশে কর্মরত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। এ জন্য তাঁকে বিএনপি-জামায়াতের দালাল বলে সমালোচনা করত আওয়ামীপন্থিরা।

ফেসুবকে বার্গম্যান লিখেছেন, যদিও এখনও মামলার এফআইআর আমার দেখা হয়নি, তবে এটি অনেকটা আগের সরকারের আমলে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মিথ্যা মামলার মতো বলে মনে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পুলিশ বারবার বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করত যে, তারা অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত।

তিনি লিখেছেন, কোনো সন্দেহ নেই– ২৪ বছর বয়সী দোকানকর্মী শাহজাহান আলীকে ১৬ জুলাই পুলিশ হত্যা করেছে। তবে এই হত্যার ঘটনায় সালমান ও আনিসুলের সরাসরি জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া কঠিন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের সদস্য হওয়ার কারণে।

তিনি আরও লিখেছেন, বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা আদালতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে দেননি। আসামিদের প্রতিনিধিত্ব করতে আসা দুই আইনজীবীকে আদালতে মারধর করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিচারক কীভাবে বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে দিলেন– তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বার্গম্যান বলেন, এ ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিথ্যা মামলা চলতেই থাকবে, যদি না পুলিশ এবং আদালতকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে আইন প্রয়োগের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে এ দুই ব্যক্তি অপরাধ করে থাকতে পারেন। সে জন্য যথাযথ তদন্ত করে প্রমাণ সংগ্রহ এবং তার ভিত্তিতে মামলা করা উচিত।

বার্গম্যান লিখেছেন, কোনো সরকার কীভাবে নিজের সবচেয়ে বড় হুমকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তা দেখে সেই সরকারকে মূল্যায়ন করা হয়। এখন পর্যন্ত এ ধরনের ফৌজদারি মামলা সরকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যদি এটি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে নতুন সরকার মানবাধিকারের কোনো দাবি করতে পারবে না।

বিক্ষোভে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

১৭ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ ও বিক্ষোভের পর সংঘাত দমনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অপ্রয়োজনীয়’ ও ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলপ্রয়োগের গুরুতর ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ঘটনার ক্ষেত্রে নির্বিচার বল প্রয়োগ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের পাশাপাশি পাখি শিকারে ব্যবহৃত অস্ত্র, বুলেটসহ নানা রকম প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন।

‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও অস্থিরতা বিষয়ে প্রাথমিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। গণমাধ্যম এবং আন্দোলনে যুক্তদের দেওয়া তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ এবং পরবর্তী সহিংসতায় অন্তত ৬৫০ জন বাংলাদেশি প্রাণ দিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) ১০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার জেনেভা থেকে প্রকাশ করেছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের পতন হয়। এ পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করল।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক গতকাল জেনেভা থেকে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘বাংলাদেশের এই সন্ধিক্ষণে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংঘাতের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জোর দিচ্ছি।’

অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি পুনর্বহালকে কেন্দ্র করে জুনের মাঝামাঝি বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বেকারত্বের উচ্চ হার এ আন্দোলনে প্রভাব ফেলে। এই আন্দোলনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংসতা আর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে অন্তত ৩২ শিশুসহ কয়েক শ মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি বলেছে, বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ আর বিক্ষোভের পর সংঘাত দমনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অপ্রয়োজনীয়’ ও ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলপ্রয়োগের গুরুতর ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ক্ষেত্রে নির্বিচার বল প্রয়োগ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের পাশাপাশি পাখি শিকারে ব্যবহৃত অস্ত্র, বুলেটসহ নানা রকম প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তির লাঠি, ইট বা অপ্রচলিত অস্ত্র ব্যবহারের বিপরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাবার বুলেট এবং পিলেট শটগান, হ্যান্ডগান, রাইফেলসহ আগ্নেয়াস্ত্রের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার এবং মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে।

জাতিসংঘ বলেছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার সহিংসতার মাত্রাকে তীব্রতর করেছে। কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন যানবাহন এবং হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে, যেগুলোতে জাতিসংঘের লোগো ছিল; যা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশি দলগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়।

গণমাধ্যম এবং আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে ৬০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর ৫ থেকে ৬ আগস্ট প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ওই সময়কাল থেকে পরবর্তীকালে প্রতিশোধমূলক হামলায় নিহতের সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। ৭ থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে বেশ কিছু মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাঁরা সহিংসতায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিক্ষোভকারী, পথচারী, রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ও পথচারী আহত হয়েছেন। রোগীদের ভিড়ে হাসপাতালগুলো উপচে পড়েছে। নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যার বিষয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সম্ভবত প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কম। কারণ, কারফিউ, ইন্টারনেট বন্ধ এবং চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে তথ্য সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তা ছাড়া হাসপাতালগুলোকে নিহত ও আহতদের বিশদ বিবরণ কাউকে না দিতে সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার পতনের দিন গণভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, বঙ্গবন্ধু জাদুঘরসহ অনেক স্থাপনায় হামলা হয়েছে। শুধু ৫ ও ৬ আগস্ট ২৭ জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও স্থাপনায় হামলা-লুটপাট হয়েছে। এর আগে ৩০ জুলাই সরকার চিঠি পাঠিয়ে ওএইচসিএইচআরকে জানায়, পুলিশের ২৩৫টি স্থাপনা, মেট্রোরেল স্টেশন, এক্সপ্রেসওয়েসহ শত শত সরকারি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিক্ষোভ চলার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে তাজা গুলি ব্যবহার করেছে। এ রকম একটি ভিডিওতে রংপুরে আবু সাঈদ নামের একজন ছাত্রকে হত্যার চিত্র ফুটে উঠেছে। এই ছাত্র এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে ছিলেন। তখন পুলিশকে সরাসরি তাঁর বুকে গুলি করতে দেখা যায়। পুলিশ অন্তত দুবার গুলি চালালে আবু সাঈদ তাঁর বুক চেপে ধরেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় এক যুবক আহত অন্য যুবককে নিরাপদে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এর কিছুক্ষণ পর হেলমেট পরা সাদাপোশাকের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে তাঁদের দিকে গুলি চালাতে দেখা যায় এবং মারাত্মকভাবে আহত ব্যক্তিটিকে পেছনে ফেলে যুবকটি পালাতে বাধ্য হন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত শুধু ঢাকায় ২৮৬টি ফৌজদারি মামলা হয়। এসব মামলায় ২ হাজার জনকে শনাক্ত উল্লেখ করে এবং অন্তত সাড়ে ৪ লাখ অশনাক্ত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলাগুলোতে নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়, যাঁদের মধ্যে অনেকেই বিরোধী দলের নেতা–কর্মী। বাংলাদেশে প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) প্রায়ই শত শত ব্যক্তিকে ‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যা নির্বিচার গ্রেপ্তার কিংবা আটকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ঢাকাসহ সারা দেশে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। তল্লাশিচৌকি বসিয়ে মানুষের মুঠোফোন দেখে দেখে পুলিশের সহিংসতার প্রমাণ মুছে ফেলা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া বেশির ভাগ মানুষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়নি, আইনি সুরক্ষা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি, এমনকি তাঁরা কোথায় কীভাবে আছেন, সে তথ্যও পরিবারকে জানানো হয়নি।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অবিলম্বে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত শুরু করা, দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কার্যকর প্রতিকার নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা

আন্দোলনের এক পর্যায়ে পারস্পরিক যোগাযোগ সীমিত করে দেওয়া হয়। ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত এবং ৪ ও ৫ আগস্ট সরকার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। প্রভাব ফেলে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকারের ওপর। তৎকালীন সরকার বলেছে, বিক্ষোভকারীদের হামলার কারণে অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়। কিন্তু জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পেরেছে, সরকার নিজেই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করেছে। তথ্য প্রচারে বাধা দিতে ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমন্বয় বন্ধ করতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে সরকার। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হওয়ায় সংবাদপত্রগুলোর অনলাইন সংস্করণ বন্ধ হয়ে যায়।

ইন্টারনেট বন্ধ করার কারণে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্য পাওয়ার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।

স্বাধীন চলাচলে বাধা

সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র (অনুচ্ছেদ ১৩) এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে (অনুচ্ছেদ ১২) স্বাধীনভাবে চলাচলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে; যা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু দেশজুড়ে কারফিউ জারি করার মানুষের স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। যোগাযোগ সীমিত হয়ে যায়; যা অন্যান্য মৌলিক অধিকারের ওপরও প্রভাব ফেলে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া ব্যাহত হয়।

গোপন বন্দিশালায় ৮৮ দিন চোখ বেঁধে নির্যাতন

১৭ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

গোপন বন্দিশালা থেকে শোনা যেত উড়োজাহাজ ওঠানামার শব্দ। মাঝেমধ্যেই ভেসে আসত নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির আর্তনাদ। সেই সময় উচ্চ শব্দে গান বাজানো হতো। কোনো বন্দিশালায় ছিল স্ট্যান্ড ফ্যান, আবার কোনোটিতে ছিল উচ্চ শব্দের ভেন্টিলেশন ফ্যান। কোনো বন্দিশালা থেকে আজানের ধ্বনি শোনা যেত, কোনোটি থেকে শোনা যেত না।

শেখ হাসিনার শাসনামলে যাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছিল, তাদের ছয়জনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তাদের সবার বর্ণনায় মোটামুটি মিল রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ছাড়া অন্য পাঁচজন জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় পেটানো হতো। দেওয়া হতো ক্রসফায়ারের হুমকি। তুলে নেওয়ার সময় মাইক্রোবাসে উঠিয়ে চোখ এবং হাত বাঁধা হয়। ছেড়ে দেওয়ার সময় বলা হয়, জীবনে কখনও যেন সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ না খোলে। মুখ খুললে আবার গুম করা হবে।

ফিরে আসা তিনজন জানিয়েছেন, শৌচাগার ব্যবহারের সময় ছাড়া সারাদিন চোখ বেঁধে রাখা হতো। পাওয়া যেত আজানের ধ্বনি। সেই ধ্বনি শুনে তারা দিনরাত সম্পর্কে ধারণা করতে পারতেন এবং দিন গুনে রাখতেন। অন্য তিনজন জানিয়েছেন, বন্দিশালার ছোট্ট ঘরে থাকার সময় চোখ খোলা রাখা হতো। শৌচাগারে নেওয়ার সময় চোখ বাঁধত। আজানের ধ্বনি শুনতে পেতেন না। এসব বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায়, একাধিক গোপন বন্দিশালা ছিল আওয়ামী লীগ শাসনামলে। ছয়জনই বলেছেন, তৎকালীন সরকারের আদেশে পুলিশ, র‌্যাব বা অন্য কোনো বাহিনী তাদের গুম করেছিল।

গত ১ জুলাই রাজধানীর আজিমপুরের ছাপরা মসজিদের সামনে থেকে সাদা পোশাকের কয়েক ব্যক্তি ধরে নিয়ে যায় ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহসভাপতি আতিকুর রহমান রাসেলকে। চোখ বাঁধার আগে তিনি পুলিশের লালবাগ থানার এবং র‌্যাব-১০ লেখা দুটি গাড়ি দেখতে পেয়েছিলেন। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনোই রাসেলকে তুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করেনি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাসেলকে রাতে ফেলে যায় রাজধানীর পূর্বাচলে। এর আগে ৩৬ দিন গোপন বন্দিশালায় তাঁর ওপর চলে বর্বর নির্যাতন।

২০১৩ সালের ২৪ জুন রাজধানীর বাড্ডার পিপলস ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিদ্যালয়ের দুই নেতা আজিজুর রহমান এবং মোজ্জামেল আলীকে (ছদ্মনাম) তুলে নিয়ে যায় কয়েক ব্যক্তি। দু’দিন পর রাজধানী থেকে আবদুস সালাম নামে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিবির নেতাকে ধরে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। প্রথম দু’জনকে ৮৮ দিন এবং পরের জনকে ৮৬ দিন গোপন বন্দিশালায় আটকে রেখে ভয়ংকর নির্যাতন চালানো হয়।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকে অস্ত্রধারী কয়েক ব্যক্তি রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে হাতকড়া পরিয়ে তুলে নিয়ে যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে। ৬১ দিন পর ভারতে নিয়ে যায় তাঁকে। ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল সভাপতি মেহেদী হাসান রুয়েলকে তুলে নিয়ে ১৮৩ দিন গুম করে রেখে, গোপন বন্দিশালায় নির্যাতন করা হয়।

নাম জেনে তুলে নেয় গাড়িতে

ছাত্রদল নেতা আতিকুর রহমান সমকালকে জানান, গত ১ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে আজিমপুরের ২৭ নম্বর মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাঁচ-ছয়জন এসে নাম-পরিচয় জানতে চান। এর পর তাদের সঙ্গে সামনে যেতে বলেন। ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ছাই রঙের গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে চোখ বেঁধে ফেলা হয়। এর পর শুরু হয় কিলঘুসি। চিৎকার আর কান্নার শব্দ যাতে বাইরে না যায়, সেজন্য উচ্চ শব্দে গান চলছিল গাড়িতে।

আতিক জানান, আনুমানিক এক ঘণ্টা চলার পর গাড়ি থামে। তাঁকে নামিয়ে দুই সিঁড়ি পেরিয়ে একটি কক্ষে নেওয়া হয়। সেটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছিল। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের সময় চলতে থাকে মারধর। সব প্রশ্নের উত্তর দিলেও কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছিল।

আতিক আরও জানান, তাঁর নামে থাকা একটি মামলায় জামিনে ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা জানতে চাচ্ছিলেন, বিএনপির বড় বড় নেতার মধ্যে কাকে কাকে চেনেন? শাহবাগে কেন যান? নির্যাতনের পর নেওয়া হয় একটি ছোট ঘরে। আনুমানিক পাঁচ হাত দৈর্ঘ্য এবং তিন হাত প্রস্থের ঘরটির উঁচু দেয়ালে ভেন্টিলেশন ফ্যান উচ্চ শব্দে চলত ২৪ ঘণ্টা। কক্ষটিতে কারাগারের মতো লোহার গ্রিল এবং এর পর ছিল কাঠের দরজা। দরজার ওপরের দিকে ছিদ্র করা ছিল। দরজা সব সময় বন্ধ থাকত। বাইরে যারা দায়িত্বে থাকতেন, কারও চেহারা দেখা যেত না। বন্দিশালায় নেওয়ার আগে দুটি লুঙ্গি, দুটি গেঞ্জি ও একটি জায়নামাজ দেওয়া হয়।

বাথরুম-ওয়াশরুমে নেওয়ার সময় হ্যান্ডকাফ ও চোখ বাঁধলেও ভেতরে নেওয়ার পর খুলে দেওয়া হতো। এক মাসের বেশি সময় কোনো আজানের শব্দ শুনতে পাননি তিনি। প্রথম ছয় দিন লোহার গ্রিলের সঙ্গে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রাখা হয়। গ্রিলে হাত ঝুলিয়ে মারধর করত। প্রতিবার নির্যাতনের আগে প্রেশার মাপা হতো। টানা তিন দিন ঘুমাতে দেওয়া দেয়নি। কক্ষের দেয়ালে ভিন্ন ব্যক্তির হাতে লেখা ছিল। কেউ স্বজনের কাছে খবর দিতে আকুতি জানিয়ে ফোন নম্বর লিখেছেন। লেখা ছিল ‘ইন ২০১৪ আউট ২০২০’। আরেকটি হাতের খেলা ছিল ‘ইন ২০১৬ আউট ২০২১’।

আতিক বলেন, ৫ আগস্ট রাতে চার-পাঁচজন মুখ ঢেকে ঘরে এসে দ্রুত তৈরি হতে হুকুম করে। বলে, ‘আজ তোকে নতুন পৃথিবীতে নেব। তুই শুধু খুশি হবি।’ এর পর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে এবং চোখ বেঁধে গাড়িতে ওঠানো হয়। এক-দেড় ঘণ্টা পর নির্জন একটি স্থানে নামিয়ে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। ১০ মিনিট পর চোখের বাঁধন খুলতে বলা হয়।

ফজরের আজান শুনে চোখ খুলে আতিক মূল সড়কে এসে বুঝতে পারেন, তাঁকে পূর্বাচলে ফেলে গেছে। ভাড়া করা মোটরসাইকেলে কুড়িল বিশ্বরোড আসার পর বাবাকে ফোন করেন। তখন জানতে পারেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। আতিকের বাবা ছেলের সন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। কিন্তু কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই আতিককে তুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করেনি।

চোখ বাঁধা অবস্থায় ৮৮ দিন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের দুই নেতা আজিজুর রহমান এবং মোজ্জামেল আলীকে (ছদ্মনাম) একই গোপন বন্দিশালার একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল। ৮৮ দিন তাদের চোখ ও হাত বাঁধা ছিল।

আজিজুর সমকালকে বলেছেন, রাজধানীর বাড্ডা থেকে ধরে গাড়িতে তুলে কয়েকজন সুঠাম দেহের ব্যক্তি। সাদা মাইক্রোবাসে তুলে চোখ ও হাত বেঁধে ফেলে। আনুমানিক ৪০ মিনিট চলার পর গাড়িটি ইউটার্ন নিয়ে কয়েক মিনিট চলার পর থামে। এর পর কাঁধে করে ওপরে তোলা হয়। এ কারণে বুঝতে পারেননি কয়তলায় তোলা হয়েছে। একটি কক্ষে নিয়ে বসতে দেওয়া হয়। আধা ঘণ্টা পর শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। বসিয়ে রাখার সময় তিনি মোজাম্মেল আলীর চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলেন। সে সময়ে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হচ্ছিল। এর পর আজিজুরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। একজন প্রশ্ন করতে থাকে, আরেকজন পেটাতে থাকে। শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সময়কার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোথায় আছেন, জানতে চাওয়া হয়। জবাব দেওয়ার পরও পেটানো চলতে থাকে। আজিজুর রহমান বলেন, এক পর্যায়ে ঝুলিয়ে কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পেটানো হয়। তবে পাঁচ-ছয়টি আঘাতের পর মারধর টের পাননি।

মোজাম্মেল আলী বলেন, শিবির বিদেশ থেকে এবং ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা পায় কিনা, জানতে চাচ্ছিল জিজ্ঞাসাবাদকারীরা। নেতিবাচক জবাব দেওয়ার পর মাথায় ড্রিল মেশিন ধরা হয়। ড্রিল করে মাথা ফুটো করে মগজ বের করে আনার হুমকি দেয়– পেটাতে থাকা জিজ্ঞাসাবাদকারীরা।

আজিজুর জিজ্ঞাসাবাদকারীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাদের নিয়ে কী করা হবে? একজন জবাব দেন, ‘থাক, আল্লাহ ভরসা। ভাগ্য ভালো হলে মা-বাবার কাছে যেতে পারবা। নইলে কী হবে, বুঝতেই পারছ।’

আজিজুর জানালেন, তারা শবেবরাতের দিন গুম হয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর চোখ বাঁধা এবং হাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরানো অবস্থায় একটি কক্ষে নেওয়া হয়। বাইরে চার বেলায় পাহারাদার বদল হতো। যারা পাহারায় থাকতেন, তারা কক্ষে আসতেন। একজন সদয় ছিলেন। তিনি ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করতেন, সান্ত্বনা দিতেন।

আজিজুর এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহবন্দি দু’জনই জানান, শুধু খাবার দেওয়ার সময় এবং শৌচাগার ব্যবহারের সময় হাতের বাঁধন খুলে দিত। সব সময় হাত পেছন দিকে হ্যান্ডকাফ বাঁধা অবস্থায় থাকায় কখনও শুয়ে ঘুমাতে পারতেন না। খাবার ভালোই দিত। ৮৮ দিনের মধ্যে দু’দিন পোলাও-মাংস খেতে দিয়েছে। রোজার সময় দু-একটি কলা, আপেল দিয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর তাদের ছেড়ে দেওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে দাড়ি-গোঁফ ছেঁটে দেওয়ার সময় আয়নায় একজনের মুখ দেখেন।

আজিজুর সমকালকে বলেন, ‘আমার অনুমান কর্মকর্তা পর্যায়ের একজন সেই দিন মাগরিবের পর এসে বলছিলেন, ছেড়ে দেওয়ার পর কী কী করতে হবে। রাজনীতি থেকে দূরে থাকা, পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা, কখনোই সাংবাদিকদের সামনে মুখ না খোলাসহ ১০-১২টি উপদেশ দেন।’ আজিজুর জানান, গাড়ি ঘণ্টাখানেক চলার পর তাঁকে চোখ খুলে ছেড়ে দিয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে বসে থাকতে বলে। ১০ মিনিট পর চোখ খুলতে বলে। গাড়ির শব্দ মিলিয়ে যাওয়ার পর আজিজুর চোখ খুলে দেখেন জঙ্গলে ফেলে গেছে তাঁকে। ১০-১৫ মিনিট হাঁটার পর মূল সড়কে উঠে জানতে পারেন, জায়গাটি ময়মনসিংহের ভালুকার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি।

এই দুই শিবির নেতার পরিবার দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের সন্ধান চেয়েছিল। তবে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটকের কথা স্বীকার করেনি।

৬১ দিনের বন্দিজীবন

২০১৫ সালের ১০ মার্চ বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের গুম হওয়ার বিষয়টি ছিল দেশজুড়ে আলোচিত। তাঁকে ৬১ দিন বন্দি রাখার পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চোখ বেঁধে গাড়িতে করে নিয়ে একটি কক্ষে ঢুকিয়ে দেয়। সেটি ৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের হতে পারে। কক্ষের এক কোণে ছিল শৌচকর্মের ব্যবস্থা। লোহার দরজার নিচ দিয়ে খাবার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হতো। কক্ষের বাইরে একটি স্ট্যান্ড ফ্যান চালু থাকত। ছাদে ছিল উচ্চ আলোর বাতি। ৬১ দিনের মধ্যে একবারও ঘর থেকে বের করেনি। সবই করা করা হয়েছে তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের হুকুমে। এসব কাজের জন্য কোথাও না কোথাও তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

বন্দি অবস্থা থেকে ভারতে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেদিন ঘর থেকে বের করে, চোখে কালো কাপড় বেঁধে গাড়িতে আনুমানিক ছয়-সাত ঘণ্টা ঘোরানো হয়। সেখানে বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করল তারা। এর পর কিছুদূর হাঁটিয়ে আবার কিছুদূর গাড়িতে করে নেওয়া হয়।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি মাঠের কোণে তাঁকে ফেলে যায়। তখনও সূর্য ওঠেনি। প্রাতভ্রমণকারীদের কাছে জানতে পারেন জায়গাটি ভারতের মেঘালয়ে শিলংয়ের গলফ লিংক এলাকা। তাঁর পরিচয় জানানোর পর প্রাতভ্রমণকারীরা পুলিশে খবর দেন। সেখানে আইনি জটিলতা কাটিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর পর গত ১১ আগস্ট দেশে ফেরেন তিনি। গত বছর তাঁর মামলা শেষ হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের অসহযোগিতার কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারছিলেন না।

১৯৪ দিন পর গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার

ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান রুয়েল জানান, ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় সাদা পোশাকের পাঁচজন তাঁর নাম জানতে চায়। নাম বলার পর রুপালি রঙের একটি মাইক্রোবাসে তুলে হাত এবং চোখ বেঁধে ফেলে। শুরুতে বুঝতে পারেননি কোথায় নেওয়া হয়েছে। মারধরের পর তাঁর জবানবন্দি ভিডিও করতে শৌচাগারে নেওয়া হয় মুখ ধোয়াতে। সেখান থেকে জানালার ফাঁক দিয়ে পুলিশের এপিবিএন ব্যাটালিয়নের মাঠ দেখতে পান। এ থেকে বুঝতে পারেন র‌্যাব-১ কার্যালয়ে আনা হয়েছে।

২০১৪ সালে র‌্যাব-১-এর কার্যালয় ছিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিপরীতে। রুয়েল জানান, গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি কক্ষে নিয়ে মারধর করা হয় এবং বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। বিএনপির বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিতে বলা হয়। সেই সময় চোখ বাঁধা ছিল। শুরুতে কাগজে সই নেয়, পরে জবানবন্দির ভিডিও করে। তবে তিনি জিজ্ঞাসাবাদকারীদের চেহারা দেখতে পাননি। সবার মুখ মুখোশে ঢাকা থাকত।

রুয়েল বলেন, র‌্যাব-১ কার্যালয়ে সাড়ে চার মাস বন্দি থাকা অবস্থায় হ্যান্ডকাফ এবং চোখের বাঁধন খোলা হয়নি। শুধু শৌচাগার ব্যবহার এবং গোসলের সময় খুলে দেওয়া হতো। একজন প্রহরী ধরে ধরে শৌচাগার পর্যন্ত নিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দিত। সেই শৌচাগারে জানালা ছিল না।

রুয়েল জানান, ডেমরার ছাত্রদল নেতা শাওন ও রাজুকেও আনা হয়। একদিন ছয়টি সিঁড়ি পেরিয়ে গাড়িতে তেলা হয়। এতে বুঝতে পারেন, মাটির নিচে কোনো কক্ষে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। তাদের তিনজনকে চোখ এবং হাত বাঁধা অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা গাড়িতে ঘোরানো হয়। পরে জানতে পারেন, বরিশাল র‌্যাব কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তুলনামূলক ভালো ছিলেন। দেয়ালে রক্ত দিয়ে গুমের তারিখ, পরিচয় লেখা ছিল বন্দিশালায়। তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ঝন্টু রক্ত দিয়ে নিজের পরিচয় এবং তাঁর ভাইয়ের ফোন নম্বর লিখে গিয়েছিলেন। লেখা ছিল, ‘যদি কেউ এখান থেকে বের হতে পারেন তাহলে যেন তাঁর ভাইকে এই নম্বরে ফোন দেন।’ ঝন্টুর খোঁজ আজও মেলেনি।

রুয়েল জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় গুমের ৬ মাস ১৪ দিন পর তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাতেই বরিশাল কোতোয়ালি থানা পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়। ২৮ দিন পর জামিনে মুক্তি পান।

এখনও অনেকে নিখোঁজ

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৬৯৯ জন। গুম হয়েছেন ৬৭৭ জন।

গুম হওয়া অধিকাংশ ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে পরবর্তী সময়ে। তাদের বড় অংশকেই পরে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। তবে আদালতে তুলে দাবি করা হয়, আগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, জোরপূর্বক তুলে নেওয়া ৮৬ জন ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত নিখোঁজ ছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী, আইনজীবী মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান, মাইকেল চাকমা ফিরেছেন গোপন বন্দিশালা থেকে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর ৫ বছর ৩ মাস থেকে ৮ বছর ৪ মাস গুম ছিলেন।

জার্মান-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন সময় তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার গোপন বন্দিশালায় রাখা হতো। যেগুলো ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

আলোচিত গুমের ঘটনার মধ্যে বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক, দলটির সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হীরুসহ অন্তত ২৫ নেতা এখনও নিখোঁজ। জামায়াত এবং শিবিরের অন্তত ৯ জনকে তুলে নেওয়ার পর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অনেকের সন্ধান নেই।

তাদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছে স্বজনের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। তারা ডিজিএফআই কার্যালয়, র‌্যাব কার্যালয় এবং পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

জনরোষে নিহত পুলিশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসআই-কনস্টেবল

আগস্ট ১৯, ২০২৪, বণিক বার্তা

কনস্টেবল মো. শহিদুল আলম যুক্ত ছিলেন ট্রাফিক বিভাগে। ৪ আগস্ট রাতে ডিউটি শেষে বাসায় ফেরেন। পরদিন সকালে আবার উত্তরার জসীমউদ্‌দীন সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হন। ঘণ্টা খানেক ডিউটি করার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কল পেয়ে ছুটে যান উত্তরা পূর্ব থানার সামনে। সেখানে জনরোষের শিকার হয়ে মৃত্যু হয় তার। শুধু তিনি নন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উচ্চাভিলাষের বলি হয়েছেন ৪৪ পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই কনস্টেবল থেকে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পদমর্যাদার। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে পুলিশের কার্যক্রম শুরু হলেও অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের অধীনে কাজ করতে চাচ্ছেন না মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষ ও জনরোষের শিকার হয়ে বিভিন্ন পদমর্যাদার ৪৪ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জন কনস্টেবল, একজন নায়েক, ১১ জন উপপরিদর্শক (এসআই), আটজন এএসআই, তিনজন পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৪ জন নিহত হয়েছেন ৫ আগস্ট। ১৪ জন নিহত হয়েছেন ৪ আগস্ট এবং বাকি সদস্যরা আন্দোলনের মধ্যে বিভিন্ন সময় নিহত হন। নিহত সদস্যদের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ১৪ জন, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ১৫, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার দুই, কুমিল্লার তিতাস থানার দুই, চাঁদপুরের কচুয়া থানার এক, হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানার এক, ঢাকার বিশেষ শাখার (এসবি) এক, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এক, ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের এক, কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের এক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার এক, খুলনা মহানগর পুলিশের এক, গাজীপুর মহানগর পুলিশের এক ও ঢাকা জেলার দুজন রয়েছেন।

যানজটে রাজধানীর সড়কে অচলাবস্থা

১৯ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে সকাল সোয়া নয়টায় বের হয়েছিলেন চাকরিজীবী আহমেদ সিরাজী। তাঁর কর্মস্থল কারওয়ান বাজার। আধা ঘণ্টা ধরে যানজটে আটকে ছিলেন আজমপুরে। সেখান থেকে যানজট পেরিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে আবার নতুন যানজটে পড়েন তেজগাঁওয়ে। কিন্তু অফিসে আসার জন্য কোনো যানবাহনে চড়ার সাহস না করে হেঁটেই আসেন অফিসে। টানা পৌনে দুই ঘণ্টা লাগে আসতে।

আহমেদ সিরাজীর মতো আজ সোমবার সকালের দিকে এমন অভিজ্ঞতা অনেক নগরবাসীর। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আজ তীব্র যানজট। ট্রাফিক পুলিশ সূত্র বলছে, ঢাকার সড়কে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

রাজধানীর ফার্মগেট, বিজয় সরণি, কারওয়ানবাজার সার্ক ফোয়ারা, বাংলামোটর, তেজগাঁও, সিদ্ধেশ্বরী, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় যানজট দেখা দিয়েছে।

সারা দেশে দেড় হাজার ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভাঙচুর

২০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় দেড় হাজার ভাস্কর্য, রিলিফ ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও উপড়ে ফেলা হয়েছে। এসব ভাস্কর্য ও ম্যুরালের বেশির ভাগই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক। ধ্বংস করা হয়েছে ময়মনসিংহের শশীলজের ভেনাসের মূর্তি, সুপ্রিম কোর্টের থেমিস ও শিশু একাডেমির দুরন্ত ভাস্কর্যটিও।

প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা খোঁজ নিয়ে ৫ থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে ৫৯টি জেলায় ১ হাজার ৪৯৪টি ভাস্কর্য, রিলিফ ভাস্কর্য (সিরামিক বা টেরাকোটা দিয়ে দেয়ালে খোদাই করে ফুটিয়ে তোলা অবয়ব), ম্যুরাল ও স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও উপড়ে ফেলার তথ্য পেয়েছেন। বেশির ভাগ ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট।

ঢাকা মহানগর এলাকার ১৫টি স্থানে ১২২টির বেশি ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও রিলিফ ভাস্কর্য ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও উপড়ে ফেলা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের পরিপূর্ণ অবয়ব কাঠামোর ভাস্কর্য ধ্বংস করা হয়েছে ৭টি। ঢাকা বিভাগে ২৭৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০৪, রাজশাহীতে ১৬৬, খুলনায় ৪৭৯, বরিশালে ১০০, রংপুরে ১২৯, সিলেটে ৪৯ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৯২টিসহ মোট ১ হাজার ৪৯২টি ভাস্কর্য, রিলিফ ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে, উপড়ে ফেলে এবং আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভাস্কর্য, ম্যুরাল ভাঙচুর প্রসঙ্গে দেশের প্রথিতযশা ভাস্কর্যশিল্পী হামিদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি খুবই দুঃখিত, ভারাক্রান্ত। এমন না হওয়াই উচিত ছিল। আর যেন এমন ঘটনা না ঘটে। প্রত্যাশা করি দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু হবে।’

ঢাকার যত ভাস্কর্য

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা–ভাঙ্চুরের সময় ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে দুটি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। রাজধানীতে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত পাঁচটি ভাস্কর্যের স্থান ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও হাতুড়ি-শাবল দিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে, কোথাও উপড়ে ফেলা হয়েছে, কোনো কোনো ভাস্কর্য পোড়ানো হয়েছে আগুনে।

মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পী শামীম শিকদারের ‘স্বাধীনতাসংগ্রাম’ ভাস্কর্যটি রাজধানীর পলাশীর মোড়ে অবস্থিত। সেখানে ছোট-বড় শতাধিক পৃথক ভাস্কর্য রয়েছে। এর মধ্যে অক্ষত আছে মাত্র পাঁচটি। বাকিগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে। ১১ আগস্ট দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, মাটিতে লুটাচ্ছে দেশ-বিদেশের কবি, সাহিত্যিক, বিপ্লবী, রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানীদের আবক্ষ ভাস্কর্য। এর মধ্যে আছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে ইয়াসির আরাফাত, জগদীশচন্দ্র বসু থেকে লালন।

শিশু একাডেমি চত্বরের ‘দুরন্ত’ পুড়ে যাওয়ার খবর জানা গেছে ৮ আগস্ট। সেদিন বিকেলে শিশু একাডেমিতে গিয়ে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়ে আছে দুরন্তর অঙ্গার শরীর। অক্ষত ছিল শুধু শিশু মুখটুকু। কাঠি দিয়ে চাকা নিয়ে ছুটে চলা কিশোরের দুরন্ত ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল ২০০৮ সালে। পাশে থাকা শেখ রাসেলের ম্যুরালটিও পুড়ে ছাই।

বিজয় সরণিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘মৃত্যুঞ্জয়’ ভাস্কর্য স্থাপিত হয় সাম্প্রতিক সময়ে। গত বছরের ১০ নভেম্বর ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ উদ্বোধন করা হয়। ৫ আগস্ট বিকেলে দেখা যায়, বিজয় সরণিতে বিশাল অবয়বের ভাস্কর্যটি ভাঙার চেষ্টা চলছে। দড়ি বেঁধে টেনে, আগুন দিয়ে, শাবল চালিয়ে একপর্যায়ে ধ্বংস করা হয় মৃত্যুঞ্জয়।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে স্থাপিত থেমিসের ভাস্কর্যটি উপড়ে ফেলা হয়েছে দুই পর্বে। এই ভাস্কর্য নিয়ে ২০১৬ সাল থেকেই ছিল নানা মতবিরোধ। গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলা এই ভাস্কর্যের হাতে ছিল ন্যায়দণ্ডের প্রতীক। ৭ আগস্ট উপড়ে ফেলা হয় এটি।

জেলায় জেলায় ক্ষতি

মেহেরপুরের ‘মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স’কে একক ভাস্কর্য হিসেবে ধরা হলেও সেখানে পাঁচ শতাধিক পৃথক ভাস্কর্য ছিল। কমপ্লেক্সের অন্তত ৩০৩টি ছোট–বড় ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। সবার আগে ভাঙা হয় বঙ্গবন্ধুর বিশাল ভাস্কর্যটি। ৫ আগস্ট বিকেল পাঁচটার দিকে শতাধিক যুবক রড, বাঁশ ও হাতুড়ি নিয়ে স্মৃতি কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে। প্রথমে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির মাথা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। একই সময় এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ‘১৭ এপ্রিলের গার্ড অব অনার’ ভাস্কর্যটিতে।

ময়মনসিংহের শশীলজে থাকা ভেনাসের ভাস্কর্যটি ভাঙা হয়েছে, চুরি হয়েছে মাথাটি। শশীলজের জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘শত শত লোক দলবেঁধে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। ভাস্কর্যের মাথার অংশ পাওয়া যায়নি। এটি অমূল্য সম্পদ ছিল।’ এ শহরে জয়নুল সংগ্রহশালার সামনে থাকা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ মূর্তিটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্য স্থানীয় শিল্পীরা মিলে পরে সেটি সংস্কার করেছেন।

খুলনায় শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ভাস্কর্য পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। জেলা শহর মাদারীপুরে নির্মাণাধীন মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিকেন্দ্রের নাম ছিল ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’। শহরের প্রাণকেন্দ্র শকুনির লেকপাড়ে অবস্থিত এই স্মারকের ভেতরের সবকিছু নষ্ট করা হয়েছে ৭ আগস্ট বিকেলে।

৫ আগস্টের পর গাজীপুরে তিনটি স্থানে ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাত বীরশ্রেষ্ঠের রিলিফ ভাস্কর্য। এটি ছিল জয়দেবপুরের ভেতরের দিকে। সিলেটে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, এমসি কলেজ, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা ১২টির বেশি ম্যুরাল ভাঙা হয়েছে। এর সব কটিই শেখ মুজিবুর রহমানের। নরসংদীতে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘তর্জনী’ নামে পরিচিত ভাস্কর্যটি। সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ ভাষণের একটি আঙুল তুলে রাখা সেই দৃশ্যের অনুকরণে তর্জনী বানানো হয়েছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমুল খবির প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভাস্কর্যের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সংস্কারের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভাস্কর্য নির্বাচনে। কোনটি কোন প্রক্রিয়ায় সংস্কার হবে তা নির্ধারণে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। তবে সবগুলোই সংস্কার করা সম্ভব নয়।

থানায় মায়ের ১২ ঘণ্টা অপেক্ষার পর মধ্যরাতে মামলা নিল পুলিশ

২১ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে আলোকচিত্রী তাহির জামান (প্রিয়) নিহতের ঘটনায় মামলা নিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পর রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় মামলাটি নেওয়া হয়। এর আগে ছেলে হত্যার মামলা দায়েরের জন্য মঙ্গলবার সকাল থেকে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় থানায় অপেক্ষা করেন তাহির জামানের মা সামসি আরা জামান।

সামসি আরা জামানের দায়ের করা ওই মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ-আল মামুন, রমনা জোনের সাবেক ডিসি মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, রমনা জোনের সাবেক এডিসি হাফিজ আল-আসাদ, নিউমার্কেট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ও  নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনসারদের সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

২৬ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে দিনভর সচিবালয় ঘেরাও করে রাখার পর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন আনসার সদস্যরা। গতকাল রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সচিবালয়ের সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আসিফ হাওলাদারসহ অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় কয়েকজন আনসার সদস্য আহত হন। পরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে সচিবালয় এলাকা ত্যাগ করেন আনসার সদস্যরা। তাঁদের একটি অংশ জিপিও হয়ে, আরেকটি অংশ প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে চলে যায়।

সচিবালয়ে আনসার সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেককে আটকে রেখেছেন, রাতে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। আনসার সদস্যদের প্রতিহত করতে তাঁরা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকায় যান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। সারা দিন ভেতরে আটকে থাকার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপদেষ্টা, সচিব ও সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরা সচিবালয় থেকে বের হতে সক্ষম হন। গেটের সামনে তাঁদের স্বাগত জানান শিক্ষার্থীরা। রাত পৌনে ১১টার দিকে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।

চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অধীনে থাকা আনসার সদস্যরা।

জামিনে মুক্ত জসিম উদ্দিন রাহমানি

২৬ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি।

মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানি বরগুনা সদর থানার খাজুরতোলা গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে।

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানি সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় জামিন পেয়েছেন। জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

মুফতি জসিম উদ্দিনের মুক্তির খবরে সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় কারাগারটির মূল ফটকে অবস্থান করেন তাঁর বড় ভাই আবদুল খলিল, মো. আবদুল জলিল, মো.আইয়ুব আলীসহ অন্য অনুসারীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুফতি জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছিল। ওই মামলায় গতকাল রোববার ২৫ আগস্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন পান তিনি। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে করা আরও তিনটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে আইন লঙ্ঘন করে নির্বিচার প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার

২৮ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিছিলটি যখন পার্কের মোড়ে যায়, তখন সবার সামনে ছিলেন আবু সাঈদ। পুলিশের বাধার মুখে অন্যরা সরে গেলেও আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান। একা নিরস্ত্র প্রতিবাদী এই তরুণকে একের পর এক গুলি করে পুলিশ। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।

শুধু রংপুর নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিচার গুলি করেছে। এর মধ্যে অন্তত তিন শ্রেণির প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে মানুষ হত্যা করার তথ্য পাওয়া গেছে। ১৬ জুলাই থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন পর্যন্ত যে বিপুলসংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৭৫৮ জনের নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁদের বেশির ভাগই নিহত হয়েছেন প্রাণঘাতীর অস্ত্রের গুলিতে। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির হিসাবে ৭০ শতাংশ মৃত্যুই হয়েছে গুলিতে।

রংপুরে আবু সাঈদকে গুলির ওই ঘটনার দুটি ভিডিও যাচাই করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস এভিডেন্স ল্যাব। সংস্থাটি জানিয়েছে, স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করে তারা দেখেছে, ১৫ মিটার দূর থেকে আবু সাঈদকে গুলি করা হয়। সাঈদ তখন পুলিশের জন্য কোনো হুমকির কারণ ছিলেন না। আপাতদৃষ্টে ওই গুলির ঘটনা ইচ্ছাকৃত ছিল।

এ রকম আরও ছয়টি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে তথ্য যাচাইকারী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। তাতে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ প্রয়োগের মতো পরিস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪১ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৭৫ জনের মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৩৭ জনের শরীরে প্রাণঘাতী গুলি ও ২২ জনের শরীরে শটগানের গুলির চিহ্ন ছিল। তাঁদের অনেকে ‘এইম ফায়ার’ বা লক্ষ্যবস্তু করে গুলির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

৪ আগস্ট থেকে পরের সময়ে আরও ৪১৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে এখন পর্যন্ত। এর মধ্যে ৪ আগস্ট এক দিনেই সারা দেশে নিহত হন ১১৬ জন। ওই দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীও আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে।

গোপন বন্দিশালা: যেখানে বেঁচে থাকাই দুঃসহ যন্ত্রণার

৩০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

ধরেই বেঁধে ফেলা হতো হাত ও চোখ। মুখমণ্ডল ঢেকে দিতে পরানো হতো টুপি। নিয়ে যাওয়া হতো গোপন বন্দিশালায়। জানালাবিহীন ছোট্ট কক্ষটিতে সার্বক্ষণিক উচ্চ আলোর বাতি জ্বলে। রাত–দিন বোঝার উপায় নেই। কখনো কখনো বাতি বন্ধ করে দিত, তখন নেমে আসত ঘুটঘুটে অন্ধকার। এগজস্ট ফ্যানের বিকট শব্দের কারণে শোনা যেত না বাইরের কোনো শব্দ।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে ও পরে গোপন বন্দিশালা থেকে ছাড়া পাওয়া ব্যক্তিদের কয়েকজন বন্দিশালার এমন চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলেছেন, ওই অজ্ঞাত বন্দিশালায় বেঁচে থাকাটাও ছিল দুঃসহ যন্ত্রণার। সারাক্ষণ মৃত্যুর প্রহর গুনতে হতো, এই বুঝি বের করে নিয়ে গেল।

একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, তুলে নেওয়ার পরপর ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করা হতো। কাউকে কাউকে মাঝেমধ্যে নিয়ে যেত নির্যাতনকক্ষে (টর্চার সেল)। চোখ বেঁধে ও হাতকড়া পরা অবস্থায় শৌচাগারে আনা-নেওয়ার পথে নির্যাতনের শিকার অন্যদের কান্নার আওয়াজ পাওয়া যেত।

২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় দেখা গেছে, তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের মুখমণ্ডলে পলিথিন পেঁচিয়ে রেখে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর পেট কেটে মৃতদেহের সঙ্গে সিমেন্ট বা ভারী বস্তু বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। আবার কাউকে কাউকে লম্বা সময় পরে কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

গুমসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করে, এমন সূত্রগুলো বলছে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হতো, তাঁদের এমন গোপন বন্দিশালায় রাখা হতো। আবার তুলে নেওয়ার পরপর বা অল্প দিনের মধ্যে মেরে ফেলা হয়েছে। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় দেখা গেছে, তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের মুখমণ্ডলে পলিথিন পেঁচিয়ে রেখে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর পেট কেটে মৃতদেহের সঙ্গে সিমেন্ট বা ভারী বস্তু বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। আবার কাউকে কাউকে লম্বা সময় পরে কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কারও কারও লাশ উদ্ধার হয়। কারও লাশও পাওয়া যায়নি।

শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সাল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী বা লক্ষ্যবস্তু করা ব্যক্তিদের গুম করার প্রবণতা শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এটা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। শুরু থেকেই এ ঘটনায় সরকারি বাহিনী জড়িত বলে অভিযোগ উঠলেও তৎকালীন সরকার সেটা আমলে নেয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘পাওনাদারের ভয়ে পালিয়ে আছে’ বলে উপহাসমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়া, গোপন বন্দিশালা বন্ধ করা এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জোরালোভাবে উঠেছে।

এমন একটা প্রেক্ষাপটের মধ্যে আজ ৩০ আগস্ট পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস।

গুমসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করে, এমন সূত্রগুলো বলছে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হতো, তাঁদের এমন গোপন বন্দিশালায় রাখা হতো। আবার তুলে নেওয়ার পরপর বা অল্প দিনের মধ্যে মেরে ফেলা হয়েছে।

বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০০৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৬২৯ জন গুমের শিকার হয়েছেন। পরে বিভিন্ন সময় লাশ উদ্ধার হয় ৭৮ জনের, অপহরণের পর ছেড়ে দেওয়া হয় ৫৯ জনকে। পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ৭৩ জনকে। বাকি ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাক ১৮ আগস্ট এখনো নিখোঁজ ১৫৮ জনের একটি তালিকা দিয়ে আসে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালকের কাছে। যাঁরা ২০০৯ সালের পর থেকে গুম হন।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে স্বজনেরা দীর্ঘদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে এলেও গোপন বন্দিশালার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে দুই বছর আগে। ২০২২ সালের আগস্টে ‘আয়নাঘর: ডিজিএফআইয়ের গোপন বন্দিশালা’ শিরোনামে সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনের পর। বন্দিশালা থেকে ছাড়া পাওয়া সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের বর্ণনায় প্রকাশ পায় ‘আয়নাঘরের’ রোমহর্ষ কাহিনি।

আয়নাঘর নামের ব্যাখ্যায় দুই দফা গুমের শিকার সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বলেন, প্রহরীরা মাঝেমধ্যে অবজ্ঞা করে বলত, আয়নাঘরের মধ্যে আছেন। আয়নাঘর একটি রূপক নাম। যেখানে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দেখা যায় না।

সব থানা চালু হলেও পুলিশ আগের মতো তৎপর নয়

৩০ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

ধানমন্ডি এলাকা থেকে তিন দিন আগে একজন ব্যবসায়ীর মুঠোফোন চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পুলিশ অবস্থান শনাক্ত করেও মুঠোফোনটি উদ্ধার করতে পারছে না।

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মুঠোফোনটি সক্রিয় রয়েছে। ফোন করে মুঠোফোনটি থানায় দিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু ফোন ধরে অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি হুমকি দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন, সাহস থাকলে এসে ফোন নিয়ে যান। পুলিশ সাহস করে আর মুঠোফোনটি উদ্ধার করতে যায়নি।

শুধু মুঠোফোন চুরির এ ঘটনা নয়, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে আদাবর থানা এলাকার নবোদয় হাউজিংয়ে প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। চাপাতি হাতে একদল ছিনতাইকারী এক বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীর রিকশা থামিয়ে মুঠোফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। আশপাশের লোকজন দাঁড়িয়ে দেখলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। ভুক্তভোগী ঝামেলা এড়াতে মামলায় যাননি, জিডি করেছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, থানার কার্যক্রম এখনো পুরোদমে চালু হয়নি। টহল ও তল্লাশি আগের মতো চলছে না। চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেছে। কিন্তু থানায় ছিনতাইয়ের মামলা তেমন হচ্ছে না। চুরি ও হারানোর জিডি হচ্ছে বেশি।

সম্প্রতি একজন মাদক ব্যবসায়ী রাজধানীর একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ভিডিও কলে মাদক দেখিয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, আগে বহুবার গ্রেপ্তার করেছেন, সাহস থাকলে এবার আসেন, গ্রেপ্তার করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, থানার কার্যক্রম এখনো পুরোদমে চালু হয়নি। টহল ও তল্লাশি আগের মতো চলছে না। চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেছে। কিন্তু থানায় ছিনতাইয়ের মামলা তেমন হচ্ছে না। চুরি ও হারানোর জিডি হচ্ছে বেশি।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, পুলিশ সদস্যরা থানার বাইরে গিয়ে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। আগে এক–দুজন পুলিশ সদস্য পাঠিয়ে আসামি গ্রেপ্তার করা হতো। এখন সাধারণ আসামি ধরতেও দল পাঠাতে হয়।

৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে ঢাকার প্রতিটি থানায় গড়ে ৪০ থেকে ৮০টি জিডি ও ৫ থেকে ১০টি মামলা হতো। সেই সংখ্যা এখন অনেক কম। যেসব থানায় হামলা হয়েছিল, এখনো সেসব থানা ভবন মেরামতের কাজ চলছে।

গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ঢাকার বাড্ডা, হাতিরঝিল, রমনা, নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি থানা ঘুরে দেখা গেছে, থানাগুলো এখনো আগের মতো লোকজন আসছেন না। ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে ঢাকার প্রতিটি থানায় গড়ে ৪০ থেকে ৮০টি জিডি ও ৫ থেকে ১০টি মামলা হতো। সেই সংখ্যা এখন অনেক কম। যেসব থানায় হামলা হয়েছিল, এখনো সেসব থানা ভবন মেরামতের কাজ চলছে। কিছু কিছু থানায় এখনো আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।

পাঁচটি থানার অন্তত ১০ জন উপপরিদর্শকের (এসআই) সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেক কথাই বলেন। প্রকৃতপক্ষে থানার সব কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছে।

শত শত পরিবার আজও আছে অপেক্ষায়

৩০ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

২০১৩ সালের ৬ ডিসেম্বর। অগ্রহায়ণের হালকা শীতের রাত। রাজধানীর দক্ষিণখানের হাজী মার্কেটের সামনে থেকে সাদা পোশাকের কয়েক ব্যক্তি ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয় তেজগাঁও সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক তরিকুল ইসলাম ঝন্টুকে। ছেলে রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। বাবা নুর মোহাম্মদ খান বুঝতে পারেননি ছেলের ভাগ্যে কী ঘটেছে। ভেবেছিলেন, সরকারবিরোধী রাজনীতি করা ছেলের নিয়তিতে জেল নির্ধারিত। কিন্তু থানা, আদালত, কারাগার কোথাও ঝন্টুর সন্ধান না পেয়ে বুঝতে পারেন, তাঁর আদরের সন্তানকে গুম করা হয়েছে।

ছেলেকে ফিরে পেতে পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে বছরের পর বছর ঘুরেছেন নুর মোহাম্মদ খান। তীব্র মনোকষ্ট নিয়ে তিনি ২০১৬ সালে মারা যান। আর ঝন্টুর মা হাসিনা বেগম ১১ বছর পরও রাত জেগে থাকেন ছেলের অপেক্ষায়। দরজায় শব্দ হলে ভাবেন, এই বুঝি ছেলে এলো!

ঝন্টু ফিরে এসে যদি মাকে খুঁজে না পান– এই শঙ্কায় ভাড়া বাসা বদল করেননি হাসিনা বেগম। ঝন্টুর ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম মিঠু সমকালকে বলেন, সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসার সামনে লন্ড্রিতে গিয়েছিলেন তাঁর ভাই। দুটি সাদা মাইক্রোবাসে আসা ব্যক্তিরা ডিবি পরিচয়ে ঝন্টুকে গাড়িতে তোলে। ওই রাতে ঝন্টুকে তুলে নেওয়ার ঘটনা জানতে পারেননি। বাসায় না ফেরায় ভেবেছিলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে হয়তো কারও বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। পরদিন ওই দোকানি জানান, রাতে ঝন্টুকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। কিন্তু র‍্যাব, ডিবিসহ পুলিশের সব ইউনিট ঝন্টুকে আটকের কথা  অস্বীকার করে। তাঁকে আদালতে তোলা হবে– এ আশায় কয়েকদিন আদালতে যান বাবা-মা। সেখানে না পেয়ে ২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর দক্ষিণখান থানায় জিডি (নম্বর ৪৩৬) করেন হাসিনা বেগম। ১৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু পুলিশ কখনোই সহায়তা করেনি। উল্টো হয়রানি করেছে। শুধু ঝন্টু নন, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে গুম হয়েছিলেন অন্তত ৬৭৭ জন। তাদের বাবা-মা, পরিবার-স্বজন প্রতিদিন প্রহর গোনেন কখন ফিরবে তাদের প্রিয়জন।

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের হিসাবে, গত বছরের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত নিখোঁজ ছিলেন অন্তত ১৫৩ জন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর তিনজন ফিরেছেন পাঁচ থেকে আট বছর নিখোঁজ থাকার পর। এ হিসাবে গুমের শিকার অন্তত দেড়শ জন এখনও নিখোঁজ।

মামলায় নানা অসংগতি, মনগড়া এজাহার

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

দেশের বাইরে থেকেও কেউ কেউ ‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে গুলি ছুড়ে’ হয়েছেন অভিযুক্ত। দুই স্থানে একই সময়ের ঘটনায় করা আলাদা মামলায় উঠেছে অভিন্ন আসামির নাম। কিছু মামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আসামি হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীর নামও। প্রতিপক্ষ ঘায়েলে ইচ্ছা করেই নাম ঢোকানো হয়েছে কোনো কোনো মামলায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার পটভূমিতে করা বেশ কিছু মামলার এজাহার ঘেঁটে এমন নানা অসংগতি পেয়েছে সমকাল। যেমন খুশি তেমন মনগড়া মামলায় আসামি হয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন নিরপরাধ অনেক ব্যক্তি। এমনকি মামলায় জড়িয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে কিছু মামলার এজাহার হয়ে গেছে বেশ দুর্বল।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব অসংগতি ও কমজোরি এজাহারের কারণে অভিযোগের সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ কারণে সুবিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হতে পারে ভুক্তভোগী পরিবার।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী-এমপি ও দলের নেতাকর্মীর নামে এ পর্যন্ত ২৬৮ মামলা হয়েছে। শুধু শেখ হাসিনার নামেই হয়েছে ১০০ মামলা। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে ২৬ হাজার ২৬৪ জনের। একই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৫ জনকে। বেসরকারি সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) আগস্টের মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

খুলনায় মহানবী (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে পুলিশ কার্যালয়ে ঢুকে কিশোরকে গণপিটুনি

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

খুলনায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ১৬ বছরের এক কিশোরকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। উত্তেজিত জনতা গতকাল বুধবার রাতে উপপুলিশ কমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ে ঢুকে তাকে পিটুনি দেয়।

পুলিশ জানায়, ওই কিশোর খুলনার আযম খান সরকারি কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। তার বাসা খুলনা নগরের সদর থানা এলাকায়।

পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার মহানবী (সা.)-কে নিয়ে ওই কিশোর ফেসবুকে কটূক্তি করে বলে অভিযোগ। পরের দিন বুধবার দুপুরে ওই কিশোর নগরের টুটপাড়া এলাকায় কোচিং সেন্টারে গেলে তার বন্ধুরা তাকে আটকায়। কেন সে এমন কথা বলেছে, তা জানতে চায়। খবর পেয়ে ওই কিশোরের বাবা কোচিং সেন্টারে যান। তিনি ছেলে ও অন্যদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। সেখান থেকে তাদের পুলিশের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিকেলের দিকে কিশোরের বাবা ও কয়েকজন শিক্ষার্থী উপপুলিশ কমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ে যান। ঘটনাটি জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা ওই কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

কিলার আব্বাস ও হেলালের পর মুক্তি পেলেন সুইডেন আসলাম

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

একে একে কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন দাগি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। দুই দশক জেলবন্দি থাকার পর সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মুক্তি পান শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম। এক সময় তিনি ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি।

এর আগে গত ১২ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পান আব্বাস আলী ওরফে কিলার আব্বাস। এ ছাড়া ১৫ আগস্ট কারামুক্ত হন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হোসেন ওরফে হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল। অথচ এই তিনজনের নাম ইন্টারপোলের লাল তালিকায় ঝুলছে মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে। এর পরও তারা কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন। তাদের মুক্তিতে অনেকের মধ্যে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে আন্ডারওয়ার্ল্ডে আলোচনায় থাকা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ এ ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেননি। এ ছাড়া রাজধানীর মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীরা সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। 

রাজশাহীতে গণপিটুনিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে রাবিসংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে তার ওপর হামলা হয়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।

নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে রাতে বিনোদপুর বাজারে মাসুদের ওপর হামলা হয়। পরে একদল শিক্ষার্থী তাকে প্রথমে মতিহার থানায় নিয়ে যান। কিন্তু মতিহার থানায় ৫ আগস্টের সহিংসতার কোনো মামলা নেই। তাই তাকে বোয়ালিয়া থানায় আনা হয়, যেন তাকে কোনো সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।”

সেই কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দেশ রূপান্তর

মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে খুলনার সেই কলেজছাত্র উৎসব মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। খুলনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) নিমাই চন্দ্র কু-ু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করেছেন নাসির হোসেন নামের এক ব্যক্তি।

গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর অস্ত্র লুট ও গাড়ি পোড়ানোর মামলায় গ্রেপ্তার আসামির মৃত্যু

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

গোপালগঞ্জে সেনাসদস্যের ওপর হামলা, গাড়িতে আগুন ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় কারাগারে থাকা এক আসামি হাসপাতালে মারা গেছেন। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ইলাহি সিকদার (২৫) নামের ওই আসামির মৃত্যু হয়।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জিবিতেষ বিশ্বাস ও জেলা কারাগারের জেলার আবুল হোসেন আসামির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ইলাহি সিকদার গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের ফলসি গ্রামের মহি সিকদারের ছেলে। তিনি ফলসি বাজারে মিষ্টির দোকানদার ছিলেন।

বগুড়ায় হিরো আলম লাঞ্ছিত , মারধর

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মানবজমিন

বগুড়ায় আদালত চত্বরে হামলার শিকার হয়েছেন আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে কয়েকজন যুবক এই হামলা চালান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার হাত-পায়ের রগ কর্তন

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, নিউজ বাংলা টুয়েন্টিফোর ডট কম

সিলেট মহানগরের ৭ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমদসহ দুজনকে কুপিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। আহত অপরজন হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রুমেল আহমদ। গুরুতর আহত মনজুরকে রাতেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

সিলেট মহানগরের ৭ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমদসহ দুজনকে কুপিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। আহত অপরজন হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রুমেল আহমদ। তাদের বাসা বনকলাপাড়ার লাল-সবুজ আবাসিক এলাকায়।

রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের বনকলাপাড়ায় একটি গলিতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত মনজুর আহমদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হামলাকারীরা মনজুরের হাত ও পায়ের রগ কেটে ফেলেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

আহত রুমেল আহমদ দাবি করেন, গত সিটি নির্বাচনের সময়ের বিরোধের জের ধরে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের কিছু নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা করেছে।

যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক দু’জনের মৃত্যুর অভিযোগ

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

গাইবান্ধায় যৌথবাহিনীর অভিযানে সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইটসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে ভরতখালী হাট এলাকার সুইট চেয়ারম্যানের নিজ বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আটক অন্য চারজন হলেন, ভরতখালী ইউনিয়নের গোবিন্দি গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৫), বাঁশহাটা গ্রামের ছেঁড়ায়েত আলীর ছেলে সাহাদত হোসেন পলাশ (৪৫), উত্তর সাতালিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম রকি (২৮) এবং গোবিন্দি গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে সোহরাব হোসেন আপেল (৩৫)।

পিটিয়ে হত্যার আগে তরুণকে ভাত খেতে দিয়েছিল ঢাবি শিক্ষার্থীরা

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। হত্যার আগে নিহত তরুণকে ভাত খেতে দিয়েছিল হলের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ফজলুল হক মুসলিম হলে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকের নাম তোফাজ্জল। বরগুনার পাথরঘাটার কাঠালতলি ইউনিয়নে তার বাড়ি। তোফাজ্জাল মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানা গেছে।

হল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকের পর গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করে শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ওই যুবককে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। এরপর পুনরায় মারধর করা হয় বলে জানা গেছে।

রাত ১০টার দিকে হলের হাউস টিউটররা ঘটনাস্থলে গেলে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায় কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে ওই শিক্ষার্থীরা সেখানে রেখেই সরে যায়।

হোটেল থেকে তুলে নিয়ে ১৪ ঘণ্টা আটকে রাখল ডিবি

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সাবেক এক কর্মীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ১৪ ঘণ্টা আটকে রেখেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত ২৮ আগস্ট এ ঘটনা ঘটে। চাকরিচ্যুত কর্মীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় এমনটি ঘটানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাবেক ওই হোটেল কর্মীর নাম মো. নুরুজ্জামান। তিনি সেখানকার শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরদিন চাকরিচ্যুতদের কর্মসূচি থাকায় রাতে ফোন করে কর্মসূচি বাতিলের জন্য চাপ দেওয়া হয়। তিনি তাতে রাজি হননি এবং ধরে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ওই রাতে তিনি রাজধানীর মহাখালীতে পর্যটন করপোরেশনের হোটেল অবকাশে অবস্থান করেন। ভোরে তাঁকে তুলে নেয় ডিবি পুলিশ।

যুবলীগ নেতাকে মারধরের পর গণপিটুনি বলে প্রচার

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

নোয়াখালী সদর উপজেলায় যুবলীগ নেতা মো. আবদুস শহীদকে (৪৩) প্রতিপক্ষের লোকজন পেটানোর পর গণপিটুনি বলে প্রচার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা গেছে, মারধরে অংশ নেওয়া লোকজন ওই এলাকার একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। তাঁদের সঙ্গে শহীদের দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপ দিতেই এটিকে গণপিটুনি হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল বলে এলাকার বাসিন্দারা ধারণা করছেন।

গতকাল শনিবার বিকেলে নোয়াখালী সদর উপজেলার ১৯ নম্বর চর মটুয়া ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণবহর গ্রামে শহীদকে পিটিয়ে খুন করা হয়। নিহত আবদুস শহীদ ওই গ্রামের মমিন উল্যাহর ছেলে। আবদুস শহীদের এলাকার একাধিক বাসিন্দা, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাবেক এই যুবলীগের নেতা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

ভঙ্গুর পুলিশ, প্রতি ধাপে প্রয়োজন সংস্কার

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে পুলিশে নিয়োগ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। এই সময়ে বরাদ্দ বেড়েছে ৪৩৩ শতাংশ। কিন্তু পুলিশকে পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কার্যকর কোনো উদ্যোগ ছিল না; বরং পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের অতিরিক্ত পুলিশ নির্ভরতায় বাহিনীটির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দেড় মাসেও পুলিশ কার্যকর ভূমিকায় যেতে পারছে না। মহাপরিদর্শক (আইজি) থেকে শুরু করে সব শীর্ষ পদে পরিবর্তন এনেও পুলিশের ভঙ্গুর পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এ অবস্থায় পুলিশি ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কারের দাবি উঠেছে। এ জন্য বাহিনী পরিচালনায় পুলিশ কমিশনের পাশাপাশি সদস্যদের অপরাধ তদন্তে পুলিশ অভিযোগ কমিশন গঠনেরও দাবি উঠেছে।

পুলিশের বর্তমান ও সাবেক সদস্য, সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বাহিনীর সংস্কারের বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ ও ধারণা পাওয়া গেছে। তাঁরা মূলত দুই ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমত, পুলিশ সদস্যদের বদলি, পদোন্নতি, নিয়োগ, কার্যক্রম পরিচালনা ও সঠিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পুলিশকে সেবামুখী করতে এবং মামলা ও এর তদন্ত, গ্রেপ্তার এবং অভিযানসহ সব ক্ষেত্রে জবাবদিহির আওতায় আনতে শক্ত কাঠামো তৈরি করতে হবে। এ জন্য পুলিশ-সংক্রান্ত কিছু আইন ও বিধান যুগোপযোগী করতে হবে।

সেপ্টেম্বরে ২৮ জনকে পিটিয়ে হত্যা, রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১৬

৩ অক্টোবর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

সেপ্টেম্বরে দেশে অন্তত ২৮ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং পিটিয়ে আরও ১৪ জনকে আহত করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে মানবাধিকারের কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও, সামগ্রিকভাবে এ অগ্রগতি অপর্যাপ্ত।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে ৮৩টি রাজনৈতিক সহিংসতার  ঘটনায় কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টি বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং ২৩টি ছিল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ।

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে পথেঘাটে নারীদের হয়রানির ঘটনা

০৮ অক্টোবর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

এক সপ্তাহ আগে ঢাকার পান্থপথ মোড়ে যে অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তা এখনো ভুলতে পারছেন না তরুণ চলচ্চিত্রনির্মাতা ও নারী অধিকার কর্মী অপরাজিতা সঙ্গীতা।

মোড়ের পাশে তিনি যখন সিগনালের জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন ঠিক তখনই একজন বয়স্ক ব্যক্তি ওড়না ছাড়া পোশাক পরায় তাকে গালাগাল শুরু করেন। তবে এই কাজ করেই ক্ষান্ত হননি তিনি। অপরাজিতা এক পর্যায়ে গাড়ির জানালার কাঁচ তুলে দেওয়ায় ওই লোকটি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এই ঘটনাটির ভিডিও ধারণ করতে মোবাইল ফোনের ক্যামেরা চালু করতেই গাড়ির জানালায় থুতু দিয়ে চলে যান তিনি।

ওই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে অপরাজিতা জানান, লোকটি এতটাই আক্রমণাত্মক ছিলেন যে মনে হচ্ছিল গাড়ির জানালাই ভেঙে ফেলবেন।

‘শুধুমাত্র ওড়না না থাকায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার কথা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। সেটাও আবার আমার নিজের গাড়িতে বসে। মনে হলো লোকটি যেন আমার মুখেই থুতু দিয়ে গেছেন।’

এর পরই গাড়ি থেকে নেমে নিজের মুখ ধুয়ে ফেলেন অপরাজিতা।

বেশ কিছুদিন ধরেই অনেক নারী এভাবে পথেঘাটে হয়রানির মুখোমুখি হওয়ার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করছেন। গত ৫ আগস্ট দেশে পট পরিবর্তনের পর থেকেই এ ধরনের ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে তারা জানাচ্ছেন।

অধিকারকর্মীরা বলছেন, রাস্তায় পুলিশের উপস্থিতি কম থাকায় একশ্রেণির মানুষ নির্ভয়ে এই অপরাধগুলো করছেন। তাদের কাছে নারীরা সহজ টার্গেট।

শুধু রাজধানীতেই নয় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও পথেঘাটে একই কায়দায় হয়রানির ঘটনার কথা তুলে ধরছেন নারীরা। নারীদের সরাসরি চলাচলে বাধা দেওয়া, বাজে মন্তব্য করা এমনকি কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন হয়রানির ঘটনাও ঘটছে।

গত মাসে, দেশের বিশিষ্ট পর্বতারোহী শায়লা বীথি ধানমন্ডির একটি ফুটওভার ব্রিজ পার হওয়ার সময় প্রকাশ্য দিবালোকে একদল পুরুষের দ্বারা শারীরিকভাবে আক্রান্ত হন। হামলায় আহতও হন তিনি।

গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দুই নারীকে মারধর ও হয়রানির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

একই কায়দায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যৌনকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে।

সিনিয়র সাংবাদিক ঝর্ণা রায় জানান, স্ট্রিট ফুডের দোকানে পরিবারের সঙ্গে খাবার খাওয়ার সময় হিজাব না থাকায় হয়রানির মুখে পড়তে হয় তাকে।

পথেঘাটে নারীদের প্রতি একশ্রেণির পুরুষের বৈষম্যমূলক আচরণে বাড়বাড়ন্তের মধ্যেও সঙ্গীতা ও ঝর্ণার মতো নারীরা প্রতিবাদ করার সাহসও হারিয়ে ফেলছেন। কারণ প্রতিবাদ করলে আশপাশের লোকজনের সমর্থন পাওয়া তো দূরের কথা বরং তারা এখন হামলার মুখে পড়ার আশঙ্কাও করছেন।

সঙ্গীতা বলেন, এরকম ক্ষেত্রে আমি সব সময় প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছি। আমার সিনেমা সব সময় নারী স্বাধীনতার কথা বলে। কিন্তু সেদিন আমি প্রতিবাদ করতে পারিনি। আমার আশঙ্কা ছিল ওই লোকের বয়সের কারণে আশপাশের মানুষ হয়ত আমার কথা বিশ্বাস না-ও করতে পারে।

সামাজিক মাধ্যমে নারীরা জানাচ্ছেন, দূর থেকে ছুড়ে দেওয়া কটু মন্তব্য, অসৌজন্যমূলক কথাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। একজন নারী জানান, কপালে টিপ পরার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে তাকে। আরেকজন জানান, চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বোরকা না পরার কারণে হয়রানির শিকার হতে হয় তাকে। আরও অনেকেই পথে চলার সময় কটুকথা শোনার অভিজ্ঞতার কথা জানান।

সাবের চৌধুরীর জামিন নিয়ে কৌতূহল

০৯ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর মুক্তি নিয়ে জনমনে নানা কৌতূহল দেখা দিয়েছে। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের যে মন্ত্রী-এমপিরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের মধ্যে একমাত্র সাবের চৌধুরীই জামিন পেলেন। তাঁকে দ্রুত জামিন ও মুক্তি দেওয়ার ঘটনাটিও বিরল। হত্যা মামলায় রিমান্ডে পাঠানোর পরদিনই ছয় মামলায় জামিন দিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে হাজতখানা থেকে সাবেরকে মুক্তি দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাবেরের জামিন আদেশের পর আদালত কক্ষেই বিক্ষোভ করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তাদের কাউকে কাউকে বিচারকের উদ্দেশে গালমন্দ করতেও দেখা গেছে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না অবশ্য এ ঘটনায় আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি সমকালকে বলেন, এটি খুবই ভালো লক্ষণ। অপরাধ যা-ই থাকুক না কেন, স্বাস্থ্যগত কারণে যে কেউ জামিন পেতে পারেন, যেটা আদালত বিবেচনায় নিয়েছেন। আরও যারা কারাগারে রয়েছেন, তারাও জামিন পাবেন–এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে সাবেরের মুক্তির পেছনে কোনো রহস্য আছে কিনা, এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীও মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ আশাবাদী হলেও অনেকে অতীত রাজনীতির ইতিহাস বিবেচনায় সাবেরের জামিন পাওয়ায় বিশেষ কোনো ‘রাজনৈতিক সমঝোতার’ গন্ধ খুঁজছেন।

প্রকাশ্যে এসেই তৎপর সুব্রত বাইন, ‘পিচ্চি হেলাল’, ‘কিলার আব্বাস’সহ শীর্ষ সন্ত্রাসীরা

১১ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য তৎপরতা শুরু করেছেন। একইভাবে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছেন। অপরাধের পুরোনো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি চাঁদা চেয়ে ব্যবসায়ীদের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ঢাকায় গত মাসে জোড়া খুনের একটি ঘটনায়ও একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম এসেছে।

সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারে দলবল নিয়ে মহড়া দিয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। একটি দোকান দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। পরে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ডেকে কথা বলেছেন। এ নিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

শুধু সুব্রত বাইন নয়, মোহাম্মদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালসহ অনেকেরই এ ধরনের তৎপরতা দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রায় দুই যুগ পর জামিনে বের হওয়া পিচ্চি হেলালের বিরুদ্ধে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে। এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজারে সাদেক খান আড়তের সামনে ওই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এলাকার ‘দখল’ নিতে সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের বিরোধ থেকে জোড়া খুনের ওই ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার পর পিচ্চি হেলালকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদপুরের খুনের ঘটনায় পিচ্চি হেলাল গ্রেপ্তার না হলেও দু-তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্য শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ওপরও পুলিশের নজরদারি রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী হোক বা যে–ই হোক, অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্তত ছয়জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিলেন। জামিনে মুক্ত হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত মিরপুরের আব্বাস আলী, তেজগাঁওয়ের শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, হাজারীবাগ এলাকার সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন। এ ছাড়া ঢাকার অপরাধজগতের আরও দুই নাম খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসুও কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গুলি: ১২৬ অস্ত্রধারী শনাক্ত, গ্রেপ্তার ১৯

১৩ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে অস্ত্র হাতে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যাচ্ছেন এক যুবক। পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, ওই যুবক ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ। তিনি সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাতিজা। গত ৪ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল। সেদিন আসিফের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ঠিক এক দিন আগে গত ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুরে এ রকম আরেকটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেদিন মোহাম্মদপুরের বছিলা সড়কেও ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোড়া হয়েছিল। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঢাকা উত্তরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আরেকজন সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান ওরফে রাজীব এবং সাবেক সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের ব্যক্তিগত সহকারী মাসুদুর রহমান ওরফে বিপ্লব আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যাচ্ছেন।

গত জুলাই ও আগস্টের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার যেসব এলাকা উত্তাল হয়ে উঠেছিল, এর মধ্যে মোহাম্মদপুর অন্যতম। এর মধ্যে ১৭–২১ জুলাই এবং ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বছিলা পর্যন্ত সড়কে অবস্থানকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করা হয়েছিল। আন্দোলন দমন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় দলবল নিয়ে সক্রিয় ছিলেন সাবেক দুই কাউন্সিলর আসিফ ও রাজীব এবং বিপ্লব। গত ৫ আগস্ট দুপুরের পর তাঁরা আত্মগোপনে চলে যান। এখন পর্যন্ত তাঁদের কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি।

আগে ছিল ‘গায়েবি’ মামলা, এখন ‘ইচ্ছেমতো’ আসামি

১৬ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে দুই ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা করা হয় ২ সেপ্টেম্বর। মামলা দুটিতে আসামিদের তালিকায় নাম দেওয়া হয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন পরিচালক, একজন উপপরিচালক ও একজন সহকারী পরিচালককে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মামলাটির পেছনে রয়েছেন বিএনপির একজন নেতা ও তাঁর জামাতা। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের আসামি হওয়া কর্মকর্তারা বিএনপি নেতার জামাতার অনুমোদনহীন হিমাগারে অভিযান ও মামলা করেছিলেন। আবার পরিবেশ অধিদপ্তরের যে পরিচালককে আসামি করা হয়েছে, তিনি ওই বিএনপি নেতার আরেক জামাতা ছিলেন। তাঁদের বিচ্ছেদ হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশজুড়ে মামলা হচ্ছে। এর মধ্যে পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা এবং চাঁদাবাজি ও হয়রানি করতে অনেককে আসামির করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। মামলায় কাদের আসামি করা হবে, তা অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএনপি বা দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা দিত পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, হত্যা মামলায় ‘ইচ্ছেমতো’ আসামি করা হচ্ছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র

১৮ অক্টোবর ২০২৪, বণিক বার্তা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার ওপর নজিরবিহীন হামলা চালায় পুলিশ। গত ১৯ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত তিনদিনে ওই এলাকায় আন্দোলনকারীদের দমাতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৯৫ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয় ৭ পয়েন্ট ৬২ এমএম চায়না রাইফেল থেকে। এতে প্রাণহানি ঘটে শতাধিক। অত্যাধুনিক এ মারণাস্ত্র দিয়ে প্রতি মিনিটে নির্ভুলভাবে ৩০-৪০ রাউন্ড গুলি চালানো যায়। অত্যাধুনিক এ অস্ত্র ব্যবহার হয় মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে।

পুলিশ বাহিনীর হাতে এ ধরনের মারণাস্ত্র তুলে দেয়া শুরু হয় ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর। আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর পুলিশের আধুনিকায়নের নামে বাহিনীতে যুক্ত করা হয় ৭ পয়েন্ট ৬২ এমএম চায়না রাইফেল, এসএমজি, এলএমজি, বিডি-৮ অ্যাসল্ট রাইফেল, টরাস ৯ এমএমের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার্য অস্ত্র।

পুলিশের হাতে এ ধরনের অস্ত্র তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর। সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ) ছিলেন আখতার হোসেন ভূঁইয়া। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় পুলিশের পক্ষে অংশ নেন তৎকালীন এআইজি মো. হারুন অর রশিদ। সভায় বাহিনীতে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘এদেশে পার্বত্য অঞ্চল ও সমতল অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে পুলিশের বিভিন্ন মডেল ও ক্যালিবারের অস্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে।’

তার ওই প্রস্তাবে অনুমোদন দেন আখতার হোসেন ভূঁইয়া। একই সঙ্গে স্বাভাবিক অন্যান্য প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে এসব অস্ত্র কেনাকাটা থেকে শুরু করে বণ্টনের কাজটিতেও তত্ত্বাবধান করেন তিনি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের মতো বাহিনীর সদস্যদের হাতে এ ধরনের মারণাস্ত্র তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অংশীজনসহ সংশ্লিষ্ট কারো মতামত নেয়া হয়নি। এমনকি ক্রয় প্রক্রিয়াও বাস্তবায়ন হয় দ্রুততম সময়ের মধ্যে। সরকারি অন্যান্য কেনাকাটায় যে ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, সেটিও এখানে উপেক্ষিত থেকে যায়। ২০১৫ সালে প্রথম দফায় ইতালি থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গুলি আমদানি করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয় আরো অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ও গুলি। গোটা বিষয়টি দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেন আখতার হোসেন ভূঁইয়া। ২০১৯ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে পদোন্নতি পান। পরে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে সচিব ও সিনিয়র সচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান। এরপর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি পরের দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ পান। পুলিশের হাতে এ ধরনের মারণাস্ত্র তুলে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

যেকারণে জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলো

১৭ অক্টোবর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার মামলায় জাফর ইকবালসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। গণহত্যায় উস্কানিদাতা হিসেবে এই মামলায় জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালতের প্রধান কৌঁসুলি।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ আওয়ামী সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইসিটির প্রধান কৌঁসুলি মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রাজাকার’ উক্তির প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক বিক্ষোভ মিছিল করেন। ১৪ জুলাই রাতের ওই মিছিলে তারা স্লোগান দেন, ‘তুমি কে আমি কে – রাজাকার, রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে – স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’ এই স্লোগান ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত শিক্ষক ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর।

শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

১৭ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন এই ট্রাইব্যুনাল।

১৮ নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে এই ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজ বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে চলা হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সকালে বিচারকাজ শুরু হয়েছে।

যাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ প্রমুখ। পরোয়ানা জারির আবেদনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমল এবং জুলাই–আগস্টে তাঁদের ভূমিকা তুলে ধরা হয় ।

প্রশিক্ষণরত ২৫২ এসআইকে অব্যাহতিতে নানা প্রশ্ন

২৩ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

তিন দিনের ব্যবধানে আবার আলোচনায় সারদা পুলিশ একাডেমি। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এবার অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণরত ২৫২ উপপরিদর্শককে। প্রায় এক বছর ধরে তারা সারদায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। আগামী ৪ নভেম্বর তাদের প্রশিক্ষণ সমাপ্তির কথা ছিল। তবে তার আগেই বড় দুঃসংবাদ পেলেন তারা। এই খবরে চাকরি হারানো অনেকের পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন। চাকরিপ্রত্যাশীদের মাঝে নেমে এসেছে হতাশা। আবার একসঙ্গে একটি ব্যাচের এত সংখ্যক সদস্যের চাকরি খোয়ানোর ঘটনায় প্রশিক্ষণরত এসআই ও তাদের পরিবার নানা প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের ভাষ্য– শৃঙ্খলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সারদায় ৮২৩ প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআই ছিলেন। তাদের মধ্যে শৃঙ্খলাজনিত কারণে ২৫২ জনকে অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর আগে নানা কারণে আরও ১৯ জনের চাকরি গেছে বলে জানায় পুলিশ সদরদপ্তর। চাকরি থেকে অব্যাহতির ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানানো হয়েছে।

গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির তৃতীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় নয়, শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ২৫২ এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘কাকে কোন ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সেটা একাডেমি ভালো বলতে পারবে। এই সংখ্যা পূরণের জন্য আমরা এরই মধ্যে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ নিয়োগ সম্পন্ন করব। উপদেষ্টা আরও বলেন, ডিসিপ্লিনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজ নয়। এখানে তো সংখ্যা কম। যদি পুরো ব্যাচের ভেতর শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ থাকে, তাহলে পুরো ব্যাচকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভূঞা সমকালকে বলেন, খাবার না খেয়ে হইচইসহ নানা ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কারণে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চাকরি থেকে অব্যাহতির তালিকায় আরও কেউ রয়েছেন কিনা– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারও কারও অভিযোগ সরাসরি রাজনীতি বা রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য বা স্বজন এবং তৎকালীন প্রভাবশালী কারও ‘সুপারিশ’ যাদের ক্ষেত্রে ছিল, তারা অব্যাহতি পেলেন কিনা– এ প্রশ্নে সারদার অধ্যক্ষ বলেন, ‘এই অভিযোগ সঠিক নয়।’

গণতন্ত্র মতপ্রকাশের অধিকার

বদলে গেল সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা

১১ আগস্ট ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ক্ষমতার পালাবদলের ডামাডোলে বেসরকারি টিভি স্টেশন সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনাও বদলে গেল।

আগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়েরকে অব্যাহতি দিয়ে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কোম্পানির পরিচালক শম্পা রহমানকে।

সময় মিডিয়া লিমিটেড এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, শনিবার গুলশানের ‘সিটি হাউজে’ সময় মিডিয়া লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

আহমেদ জোবায়ের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, সময় টেলিভিশনের লাইসেন্স তার নামে। ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক’ ও আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে তিনি উচ্চ আদালতে যাবেন।

সময় টেলিভিশনের অনলাইন পোর্টালে এ বিষয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, “অবৈধ বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে সময় টেলিভিশনের এমডি ও সিইওকে অপসারণের খবর ছড়াচ্ছে একটি মহল, যা আদৌ সত্য নয়। সময় টেলিভিশনের লাইসেন্স বর্তমান এমডির নামে। সুতরাং তাকে অপসারণ করার সুযোগ নেই।’’

২০০৯ সালে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা সময় টেলিভিশন পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শেষে ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল বাণিজ্যিক সম্প্রচারে আসে।

লাইসেন্স নেওয়ার সময় তৎকালীন মন্ত্রী কামরুল ইসলামের ভাগ্নে আহমেদ জোবায়েরের নামে ৯৩ শতাংশ শেয়ার ছিল। ব্যবসায়িক ও পারিবারিক সূত্রের তথ্য, এর মধ্যে ৯০ শতাংশ শেয়ার কামরুল ইসলামের হলেও কাগজে কলমে তা ছিল আহমেদ জোবায়েরের নামে।

অন্য অংশীদারদের মধ্যে কামরুল ইসলামের ভাই মোরশেদুল ইসলামের ৩ শতাংশ এবং নিয়াজ মোরশেদ ও তুষার আবদুল্লাহর ২ শতাংশ করে শেয়ার ছিল।

এরপর দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সিটি গ্রুপ সময় টেলিভিশনে ৬৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। তাদের কাছে ৭৫ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ জোবায়েরের মাধ্যমে মন্ত্রী কামরুলের পরিবারের কাছে থেকে যায়।

পরে তুষার আবদুল্লাহ সময় টিভি ছেড়ে যান।

বিভিন্ন সময় সিটি গ্রুপের শীর্ষ ব্যক্তিরা আক্ষেপ করে বলেছেন, তাদের কোম্পানি অধিকাংশ শেয়ার ধারণ করলেও সময় টিভি পরিচালনায় তাদের কথা শোনা হত না, কোনো পরামর্শ নেওয়া হত না।

গত ডিসেম্বরে মারা যাওয়া সিটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানও বিভিন্ন সময় এ নিয়ে তার ক্ষোভ ও বেদনার কথা বলেছেন।

প্রবল গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর সময় টেলিভিশনের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।

এরপর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের প্রবল দাবির মধ্যে সিটি গ্রুপ সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনল।

ইন্টারনেট বন্ধ করেছিল বিটিআরসি ও এনটিএমসি, ফোন করেছিলেন পলকও

১৩ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির কর্মসূচি চলাকালে সরকারি দুই সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিত। এমনকি তখনকার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকও সরাসরি ফোন করে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সরকারি সংস্থাগুলো ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করেনি; বরং তার বদলে নানা সময়ে নানা বক্তব্য দিয়েছিলেন জুনাইদ আহ্‌মেদ। তিনি সামনে এনেছিলেন ইন্টারনেট অবকাঠামোয় অগ্নিসংযোগের কথা।

দেশে গত ১৭ জুলাই (বুধবার) রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত নয়টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। টানা পাঁচ দিন সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা বন্ধ ছিল ১৩ দিন।

২৮ জুলাই বেলা দেড়টার দিকে এনটিএমসি থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে মোবাইল অপারেটরদের বলা হয়, ইন্টারনেট সচল হবে। তবে তার আগে অপারেটরদের ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, ভাইবার, ইমো, ইউটিউব, বিপ, সিগন্যাল, স্কাইপ ও বটিম বন্ধ করতে হবে।

কখন, কোন মাধ্যমে ও কোন সংস্থা ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল, তার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে। জানা যায়, ১৫ জুলাই (সোমবার) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে আরেক নির্দেশনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও ইন্টারনেট বন্ধের জন্য বলা হয়।

পরদিন ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) দুপুরের দিকে বিটিআরসির একই বিভাগ থেকে দেশের ৫৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ আসে। সঙ্গে উল্লেখ করা হয়, এই নির্দেশের ক্ষেত্রে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন রয়েছে। বিটিআরসি এই মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা।

ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে বিটিআরসির একজন কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হতো না।

সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি ও আইটিসি সূত্রে জানা যায়, ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় বিটিআরসি ব্যান্ডউইডথ বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। আইটিসি কোম্পানিগুলো লিখিত আদেশ চাইলে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হয়। রাত নয়টার মধ্যে পুরো দেশ ইন্টারনেট–বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত বিটিআরসি নজরদারি করতে থাকে।

১৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হন। এর মধ্যে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদও রয়েছেন। খুব কাছ থেকে করা পুলিশের গুলিতে তাঁর নিহত হওয়ার ঘটনা মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করে।

১৭ জুলাই (বুধবার) থেকে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশনাগুলো দিতে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা এনটিএমসি। সেদিন রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে এনটিএমসি থেকে মোবাইল অপারেটরদের বলা হয়, তাদের আধেয় বা কনটেন্ট ‘ব্লকিং’ ও ‘ফিল্টারিং’ ডিভাইসের আওতার বাইরে থাকা ফেসবুক ও ইউটিউব দিবাগত রাত ১২টা থেকে বন্ধ করে দিতে হবে। এর দুই ঘণ্টার মাথায় এনটিএমসি সব মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেয়। পরে এনটিএমসির নির্দেশনাতেই দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সচল হয়।

বিটিআরসি আইআইজিগুলোকেও ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে এবং ৫ আগস্ট বেলা ১১টা নাগাদ ইন্টারনেট বন্ধ করতে বলেছিল। তবে আইআইজিরা জানিয়েছে, তারা ইন্টারনেট বন্ধ করতে গিয়ে দেখে আগেই ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

২৮ জুলাই বেলা দেড়টার দিকে এনটিএমসি থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে মোবাইল অপারেটরদের বলা হয়, ইন্টারনেট সচল হবে। তবে তার আগে অপারেটরদের ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, ভাইবার, ইমো, ইউটিউব, বিপ, সিগন্যাল, স্কাইপ ও বটিম বন্ধ করতে হবে।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। তার আগে কয়েক দফা এনটিএমসি ইন্টারনেট বন্ধসংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়।

এনটিএমসির মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। তাঁকে ৬ আগস্ট সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় একই দিন দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর জেনারেল আ স ম রিদওয়ানুর রহমানকে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট যেভাবে বন্ধ

দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ আসে সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি ও ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্টিরিয়াল কেব্‌ল (আইটিসি) কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে। তাদের কাছ থেকে ব্যান্ডউইডথ নেয় ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠান। আইআইজির কাছ থেকে ব্যান্ডউইডথ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা দেয় আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো।

সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি ও আইটিসি সূত্রে জানা যায়, ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় বিটিআরসি ব্যান্ডউইডথ বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। আইটিসি কোম্পানিগুলো লিখিত আদেশ চাইলে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হয়। রাত নয়টার মধ্যে পুরো দেশ ইন্টারনেট–বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত বিটিআরসি নজরদারি করতে থাকে। সাবমেরিন কোম্পানিকে তখনকার প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ নিজে ফোন করে ইন্টারনেট বন্ধের জন্য বলেন। ৫ আগস্টেও সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি ও আইটিসি থেকে ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছিল।

সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট দেশ ছাড়তে গেলে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয় জুনাইদ আহ্‌মেদকে। পরে তাঁর অবস্থান কী, সে সম্পর্কে জানা যায়নি।

বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌লস পিএলসির (বিএসসিপিএলসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তাঁরা ব্যান্ডউইডথ বন্ধ করেছিলেন।

বিটিআরসি আইআইজিগুলোকেও ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে এবং ৫ আগস্ট বেলা ১১টা নাগাদ ইন্টারনেট বন্ধ করতে বলেছিল। তবে আইআইজিরা জানিয়েছে, তারা ইন্টারনেট বন্ধ করতে গিয়ে দেখে আগেই ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইআইজিএবির মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে ইন্টারনেট বন্ধের কথা ভাবা যায় না। আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে রাজনীতিমুক্ত করে স্বাধীন কমিশন গঠনের জন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।

এদিকে ইন্টারনেট সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশের ক্ষেত্রে দ্বিমত করা হলে লাইসেন্স বাতিলসহ নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হতো।

আইন কী বলে

দেশে ১২ কোটির বেশি মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক এবং ১ কোটির বেশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছেন। এখন ব্যবসা, বাণিজ্য, আর্থিক লেনদেন, সরকারি-বেসরকারি অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা, তথ্যপ্রবাহ, বিনোদনসহ সব ক্ষেত্রে ইন্টারনেট লাগে।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিভিন্ন সময় ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ঘিরে প্রায়ই ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা ঘটত। যদিও সরকার তা স্বীকার করত না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে।

যদিও আন্দোলন, বিক্ষোভ ও সরকার পতনের পর সহিংসতায় অন্তত ৫৮০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গুজবও প্রতিরোধ করা যায়নি।

টেলিযোগাযোগ আইনের ৯৭ ধারা অনুযায়ী সরকার রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করতে পারে। অবশ্য আইনজীবীরা মনে করেন, জনশৃঙ্খলার নামে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক বিরোধিতা ও বিক্ষোভ দমনে ইন্টারনেট বন্ধের কৌশলটি ব্যবহার করেছে। মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেছে।

আওয়ামী লীগের শাসন: ২০০৯-২০২৪

দানবিক রাষ্ট্রের কারিকর

আগস্ট ১৫, ২০২৪, বণিক বার্তা

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। ওই সময়ের পর থেকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দলটি ক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর ৭ মাস। এ সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে তিনটি। সবগুলোই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

এ দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতাসীন থাকা দলটির বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, বিরোধী মত দমন, সংবিধানকে সংশোধন, ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক খাতে সুশাসনের অভাব, তিনবারের বিতর্কিত নির্বাচন, ব্যাপক মাত্রায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পদক্ষেপগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলার পথও রুদ্ধ করা হয়েছিল নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখে এসবের সুযোগ তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সরকারের উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকার কথা থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনে দলীয় কর্মীর মতোই ভূমিকা রেখেছেন তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যবস্থা স্বৈরতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। ব্যাপক আকার পেয়েছে দুর্নীতি, বাড়তে বাড়তে গোটা ব্যবস্থাকেই গ্রাস করেছে। আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হয়ে পড়েছে দুর্নীতির সুরক্ষাদাতা। এক পর্যায়ে সরকারসংশ্লিষ্টরাও বুঝে যান, কোনো কারণে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হলে তার মূল্য তাদের জন্য মারাত্মক হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে পুরো ব্যবস্থাকেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দলীয়করণের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার খর্ব করা হলো। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সরকারের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হলো। যেটা জনস্বার্থে কাজ করবে সেটাকে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে রূপান্তর করা হলো। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আইনের শাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যত প্রতিষ্ঠান আছে, সবগুলোয় একই চিত্র। সবগুলো ক্ষেত্রে দলীয়করণের মাধ্যমে পেশাগত দেউলিয়াপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, দুদক, পিএসসি, মানবাধিকার কমিশন—যত কমিশন আছে; সবগুলোকে এক ধরনের দুর্নীতিসহায়ক জায়গায় ঠেলে দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পেশাগত দেউলিয়াপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ভূমিকা পালন করেছেন। এখানে এ প্রতিবেদনে যে তালিকা দেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণ না, আংশিক মাত্র। তাদের কারণে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে ক্ষমতার যে স্তম্ভ, এসব স্তম্ভে জনগণের কোনো অস্তিত্ব থাকেনি। রয়েছে শুধু আমলাতন্ত্র ও কলুষিত এবং দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি। ব্যবসা, আমলাতন্ত্র ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি—এ তিন চক্রের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকা যাবে, এটাই নিশ্চিত করে ধরে নেয়া হয়েছিল।’

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নানা সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তা এক পদেই ছিলেন দীর্ঘদিন। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিটি বিভাগকেই তৎকালীন সরকারের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার হাতিয়ারে পরিণত করেছিলেন তারা। এ তালিকায় রয়েছেন সাবেক বিচারপতি থেকে শুরু করে রয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান, সচিব, গভর্নর, ব্যবসায়ী, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের নামও।

আওয়ামী লীগের শাসনে দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে দলীয়করণ এবং রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচটি ইমাম)। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচটি ইমাম ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা ও ২০১৪ সালে রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান।

তার তত্ত্বাবধানে কোনো রাখঢাক ছাড়াই প্রশাসনের ব্যাপক দলীয়করণ ঘটে। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে তিনি ছাত্রলীগের কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তোমরা লিখিত পরীক্ষায় পাস করে আসো, তারপর আমরা দেখব।’

নির্বাচনে জয়লাভ করতে প্রশাসনকে ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে নিজেই কথা বলেছেন খোলাখুলি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ছাত্রলীগের এক সভায় তিনি নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ পুলিশ ও প্রশাসনের যে ভূমিকা, নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে।’

বিষয়টি সমালোচনা তৈরি করলে পরে তিনি বক্তব্য বিকৃতির অভিযোগ আনেন।

এভাবে দলীয়কৃত প্রশাসনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে। যদিও দেশের নির্বাচনীয় ব্যবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নিজেই রেখেছিল প্রধানতম ভূমিকা। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেয়ে সরকার গঠন করে দলটি। এরপর সংসদে ২০১১ সালে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী বিলের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়। এর সুযোগ করে দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি রায়। হাইকোর্টে বৈধ ঘোষণা হওয়া সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে ২০১১ সালের মে মাসে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বেঞ্চ। এরই ভিত্তিতে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বিলের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের সুযোগ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। ফিরে আসে দলীয় সরকারের অধীনে ভোটগ্রহণের প্রথা।

এবিএম খায়রুল হক ১৯তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১০ সালে। ৭ মাস ১৮ দিনের দায়িত্ব পালনকালে যেসব রায় দিয়েছিলেন, তার মধ্যে এ রায়টিই পরের ১৪ বছরের শাসনব্যবস্থার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে দিয়েছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে (সাবেক) কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছিল। সিন্ডিকেটটা আইনি, পুলিশি কিংবা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যা-ই হোক না কেন, সব প্রক্রিয়ায় যেকোনোভাবেই তাকে ক্ষমতায় রেখে যেন সুবিধা নিতে পারে, সেই বন্দোবস্তটা করে ফেলেছিল। সর্বোচ্চ আদালত রায় দেয়ার সময় জাতির ব্যাপারটাও চিন্তা করে। রায়ে একটা দিকনির্দেশনাও থাকে। এ দিকনির্দেশনায় এক ধরনের প্রজ্ঞা থাকে। এবিএম খায়রুল হকের কথা বিশেষভাবে বলতে হয় এ কারণে যে তার রায়ের ক্ষেত্রে এ প্রজ্ঞাটা আমরা দেখিনি। একটা জাতি যেখানে এগোচ্ছে, সেখানে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট বাতিল করার যে এখনো সময় হয়নি, সে বিষয়টা ওনার রায়ের মধ্যে আমরা দেখিনি। আইনের মধ্যে কিছু প্রজ্ঞাও থাকে, সে বিষয়টা আমরা পাইনি।’

আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে দেখা হতো মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিককে। আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থায় ঊর্ধ্বতন পদে কাজ করেছেন তিনি। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ সময় তিনি সামরিক বাহিনীতে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটান ও ব্যাপক দলীয়করণ করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অনেক মেধাবী অফিসারের ক্যারিয়ারে প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগ রয়েছে। অনেক গুমের নির্দেশদাতা হিসেবে বিভিন্ন সময় তার নাম আলোচিত হয়েছে।  ২০১৯ সালে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে তারিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া আলোচিত গোপন কারাগার ‘আয়নাঘর’ তৈরিতেও তারিক আহমেদ সিদ্দিক মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে দাবি একাধিক সাবেক সেনা কর্মকর্তার।

আয়নাঘরের নির্যাতনের ভুক্তভোগীদের অন্যতম লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান (বীর প্রতীক)। গত ৬ আগস্ট তিনি নিজের একাধিকবার গুম হওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন। আর এর মূল হোতা হিসেবে দায়ী করেন মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিককে।

বলা হয়, আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদও। ২০১৮ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সময়ে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন তিনি। এছাড়া পুলিশের খাতায় অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত নিজের ভাইকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য শাস্তি এড়িয়ে রেহাই পেতেও সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে তারা বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে, নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি ও তার ভাইরা একযোগে কাজ করেছেন। সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুসও নিয়েছেন।

প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় ফেরার পথ প্রশস্ত করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে গত তিন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে কাজী রকিব উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ কমিশনের অধীনেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বিরোধী দলবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশে-বিদেশে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল সে নির্বাচন।

বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, এ কমিশন তার পাঁচ বছরের মেয়াদে তা ধ্বংস করে দিয়েছে। এর অধীনে জাতীয় সংসদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছে। কমিশন সচিবালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এত বেশি নির্বাচন করার সুযোগ অতীতের কোনো কমিশন পায়নি।

২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন। এ সময়ও জাতীয় সংসদ থেকে স্থানীয় সরকার পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ-সংশয় ছিল। এ কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৯ আসন পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে একতরফা সুবিধা প্রদান, ভোট কারচুপি, নির্বাচন কমিশনাররা সরকারদলীয় কর্মীর মতো বক্তব্য রাখাসহ বিতর্কিত নানা ঘটনার নজির দেখা যায়। ভোটের আগের দিন-রাতে ব্যালট বক্সে সিল মারা ব্যালট আগে থেকে রাখার অভিযোগ ওঠে সরকারি দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।

‘ভোটিং ইন আ হাইব্রিড রেজিম: এক্সপ্লেনিং দ্য ২০১৮’ বাংলাদেশী ইলেকশন বইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো, বেসামরিক প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন দল এ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে এবং তারা একে অপরের সহযোগী ছিল। বিরোধী দলের কর্মী ও প্রার্থীদের গ্রেফতার, পুলিশের উপস্থিতিতে বিরোধীদের ওপর সরকারি দলের কর্মীদের হামলা এবং প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষেত্রে দ্বৈত নীতি—এ রকম কৌশলগুলো ব্যবহৃত হয়েছে।’

২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একতরফাভাবে বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে মোট ২৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানানো হলেও পরে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই সেটি ৪১ শতাংশ ঘোষণা করা হয়।

দেশের জ্বালানি খাতের বর্তমান দুরবস্থার প্রধান দুই কারিকর ধরা হয় সাবেক দুই আমলা মো. আবুল কালাম আজাদ ও আহমদ কায়কাউসকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব হিসেবে ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পান মো. আবুল কালাম আজাদ। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের বিদ্যুৎ খাতের অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক চাপ তৈরির জন্য বিদ্যুৎ সচিব হিসেবে তার ভূমিকাকে অনেকাংশেই দায়ী করা হয়। তার হাত ধরেই দেশের বিদ্যুৎ খাত হয়ে উঠেছে বেসরকারি উদ্যোক্তানির্ভর (আইপিপি)।

জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্যিক ঋণে নির্মিত এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তিতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পরিবর্তে উদ্যোক্তাদের মুনাফাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে বেশি। এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, এসব আইপিপির সঙ্গে যোগসাজশমূলক চুক্তির কারণে প্রতি বছর সরকারকে ভর্তুকি হিসেবে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় ১০০ কোটি ডলার। জ্বালানি সরবরাহ ও চুক্তি নবায়নেও ব্যয়বহুল এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র অগ্রাধিকার পেয়েছে বেশি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয় পান তিনি।

অনুগত আমলা হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসও। তিনি ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। প্রশাসনে আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি তৎকালীন সরকারপ্রধানের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের তালিকায় প্রথম সারির দিকে নাম লেখান তিনি। আধিপত্যের মাধ্যমে প্রশাসনে ক্ষমতা বিস্তার করতেন এ সচিব। ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পদে থেকে অব্যাহতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে নিয়োগ পান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী একটি দেশের সহায়তা বড় ভূমিকা রেখেছে। আবার নানা চুক্তি ও এজেন্ডায় বিশেষ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে দেশটির ক্ষেত্রে একপ্রকার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে। এর শুরু ২০১০ সাল-পরবর্তী সময়ে। সে সময় পররাষ্ট্র সচিবের ভূমিকায় ছিলেন মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস। কিন্তু প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখেন ২০১৩ সালে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে যোগদান করা মো. শহীদুল হক। তার মেয়াদেই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বড় সফরগুলো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখনো ওই দেশমুখী এজেন্ডা নিয়েই কূটনৈতিক মহলে আলোচনায় নিয়োজিত থাকেন তিনি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিবের ভূমিকায় ছিলেন শহীদুল হক।

শহীদুল হকের পর মাসুদ বিন মোমেন পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে যোগদান করেন ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন পেশাদার হিসেবে খ্যাত এ কূটনীতিক অত্যন্ত আনুগত্যের সঙ্গে সরকারের পররাষ্ট্র এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের ব্যাপক প্রয়াস চালিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে সরকারের নির্বাচন পরিকল্পনায় প্রতিবেশী দেশটির আনুকূল্য প্রতিষ্ঠায়ও বড় ভূমিকা ছিল তার। আর কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের খেয়াল-খুশিমতো উপস্থাপনের দায়িত্বটিও তিনিই পালন করেছেন।

২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর সরকারের মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ পান তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন এ মুখ্য সচিব। প্রয়াত এইচ টি ইমামের পরই তিনিই মাঠ প্রশাসনের অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে আবির্ভূত হন। আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন তিনি। দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ২৬ জুন তার চুক্তির মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ায় সরকার। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী হিসেবে তিনি নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পালন করেন।

সরকারের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি নিয়োগ পান বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। নিয়োগের পর তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন। তার মেয়াদের পুরোটাজুড়েই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে সরকারের পক্ষে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন তিনি। সরকারের আনুকূল্য ছাড়া কোনো পক্ষকেই ব্যবসা সংগঠনগুলোয় যুক্ত হতে না দেয়ার নেপথ্যে ভূমিকা ছিল তার। কভিডের সময় বিদেশ থেকে টিকার জোগান নিশ্চিতে নিজস্ব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দৃশ্যমান হওয়া সত্ত্বেও। তার মেয়াদের পুরো সময়টায় নিজস্ব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রসারের ক্ষেত্রেও বিশেষ মনোযোগ ছিল তার। বিশেষজ্ঞরা তাকে দেখেন ক্ষমতার আনুকূল্য গ্রহণকারী ও স্বজনতোষী পুঁজিবাদের বড় উদাহরণ হিসেবে।

আর্থিক খাতে বর্তমান বিশৃঙ্খলার জন্য যাদের সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়, তাদের অন্যতম পলাতক সাবেক গভর্নর ও অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। শেখ হাসিনা সরকারের টানা তিন মেয়াদেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর থেকে অর্থ সচিব হয়ে চলতি বছরের ৯ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ ব্যবস্থার মৌলিক নীতি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক। এ কারণেই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে আব্দুর রউফ তালুকদার পালিয়ে যান। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র গভর্নর, যিনি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নিরুদ্দেশ হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে বড় আয়োজন ছিল বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার। সংস্থাটির মহাপরিচালক হিসেবে ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লে. জেনারেল (অব.) শেখ মামুন খালেদ। তার সময় থেকেই দেশে গুমের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের গুম করে আওয়ামী লীগের ২০১৪-এর নির্বাচন জয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী এ সময়ে অন্তত শতাধিক ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে লে. জেনারেল (অব.) শেখ মামুন খালেদ বণিক বার্তার কাছে দাবি করেন***, ‘আমি মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলাম ১ বছর ৮ মাস। ২০১১ সালের ২৩ জুন থেকে ২০১৩ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেছি। আমার সময় গোয়েন্দা সংস্থাটি কোনো ধরনের গুম বা বেআইনি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না।’

২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়কালে বিশেষ ওই সংস্থার মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আকবর হোসেন। তার বিরুদ্ধেও বিরোধী নেতাকর্মীদের গুমের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে একতরফাভাবে জয়লাভ ও বাংলাদেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য অনুযায়ী তার মেয়াদকালে অন্তত আড়াই শতাধিক ব্যক্তি গুম হয়েছেন।

২০১৭ থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদীন। তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ই ২০১৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ওই বছরই সবচেয়ে বেশি গুমের ঘটনা ঘটে। ওই বছর ৯৮ জনকে গুম করা হয়, যা ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল—দেড় দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া তার মেয়াদকালে দেড় শতাধিক ব্যক্তি গুম হন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠান জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি। ২০১৭ সালের ৬ মার্চ থেকে  মেজর জেনারেল  (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) জিয়াউল আহসান এনটিএমসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি সরকারের হয়ে নাগরিকদের ফোনকল ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন যোগাযোগ অ্যাপে আড়িপাতা এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থা ও ইন্টারনেট অপারেটর নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন। এ সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে হেনস্তা, গ্রেফতার, গুম-খুনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হতো বিরোধীদলীয় মতকে।

২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশের আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এ কে এম শহীদুল হক। এ আইজিপির সময়কালে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ছিল সর্বোচ্চ। বিরোধী দলের ওপরেও নিপীড়ন, ধরপাকড় ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তিন পদে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। এ সাবেক আইজিপিকে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী আইজিপি’ হিসেবে বিবেচনা করেন অনেকেই। পুরো বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেন তিনি। গত এক দশকে বিরোধী দল দমনে অতিউৎসাহী পদক্ষেপ বারবার সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।

এ সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে বহু বিরোধী রাজনৈতিককে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। র‍্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে ক্রসফায়ারে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী হত্যার ঘটনা বেশি ঘটে। পুলিশের শীর্ষ পদে থাকা অবস্থায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।

অতিরিক্ত আইজিপি ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলামকে গত মঙ্গলবারেই চাকরি থেকে অপসারণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শেখ হাসিনা সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মনিরুল ইসলাম এর আগে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধেও ব্যাপক মাত্রায় মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ আছে। বিশেষ করে সিটিটিসি প্রধান থাকা অবস্থায় জঙ্গি দমনের নামে সরকারের বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের ওপরেও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার এসব কর্মকাণ্ডের ভুক্তভোগী হয়েছে সাধারণ মানুষও। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়েও পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা শাখার প্রধান হিসেবেও বিরুদ্ধ মত দমনে শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম বড় সহযোগীর ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

মনিরুল ইসলামের মতো মঙ্গলবারেই চাকরি থেকে অপসারিত হয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদ্যসাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নে হাবিবুর রহমানেরও ভূমিকা ছিল। সে সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ডিআইজি (অ্যাডমিন) হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার হিসেবে  শিক্ষার্থীদের ওপর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের দমনপীড়ন ও গুলি চালানোর দায়ভার বড় অংশে তার।

উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি

২৩ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগের আগে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থক শিক্ষকদের পাল্টাপাল্টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ও রাতে দুই পক্ষ এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়।

প্রথম বিজ্ঞপ্তিটি দেয় ক্যাম্পাসে জামায়াতে ইসলামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হিসেবে পরিচিত সাদা দল। বিজ্ঞপ্তিতে সাদা দলের পরিচিতি হিসেবে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী শিক্ষক সমাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য পদে দলটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শামিম উদ্দিন খানকে সুপারিশ করার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে এই সুপারিশ কোথায় করা হয়েছে, সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না অথবা সরকার থেকে এই ধরনের সুপারিশ চাওয়া হয়েছে কি না, এর কোনো ব্যাখ্যা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।

মানুষ নয়, আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেসবুকে মন্তব্য করেছিল ‘বট’

২৯ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিরোধী দলের ফেসবুক পেজে নানা মন্তব্য করা হয়েছে ভুয়া বা ফেক ফেসবুক প্রোফাইল থেকে।

আর এসব ফেসবুক প্রোফাইল পরিচালিত হয়েছে বট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এমন ১ হাজার ৩৬৯টি ফেসবুক প্রোফাইলের একটি বট নেটওয়ার্কের সন্ধান মিলেছে গবেষণায়।

তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগে ডিসমিসল্যাব গবেষণাটি করেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করার কথা।

গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুক প্রোফাইলগুলো থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ১৯৭টি পোস্টে সমন্বিতভাবে ২১ হাজারের বেশি মন্তব্য করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন পোস্টে একই মন্তব্য করেছে। একই মন্তব্য বিভিন্ন প্রোফাইল থেকে পোস্ট করা হয়েছে।

বট অ্যাকাউন্ট ও এর করা মন্তব্যের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, এই গবেষণা করা হয়েছে মোট ১৯৭টি পোস্টে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে।

বট নেটওয়ার্ক মূলত একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা, যেখানে বিশেষ সফটওয়্যারের (বট) মাধ্যমে কাজ করা হয়। বট নেটওয়ার্কের কার্যক্রম পুরোপুরি না হলেও অন্তত আংশিকভাবে কম্পিউটারভিত্তিক বা স্বয়ংক্রিয়। তারা একটি তালিকা থেকে নির্দিষ্ট ‘কি-ওয়ার্ড’ বা শব্দ ধরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পোস্ট বাছাই করে। আরেকটি তালিকা থেকে বেছে নিয়ে মন্তব্য পোস্ট করে। এই প্রক্রিয়ায় কোথায় কী মন্তব্য পোস্ট করা হচ্ছে, সেখানে মানুষের নজরদারি নেই বললেই চলে।

গবেষণায় দেখা যায়, বট নেটওয়ার্কটি সক্রিয় হয় গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে। গত জুন পর্যন্ত বট নেটওয়ার্কটি ঘুরেফিরে ৪৭৪টি একই ধরনের রাজনৈতিক মন্তব্য করেছে।

মন্তব্যগুলো নির্বাচনের আগে তৈরি করা। কিন্তু বট নেটওয়ার্কটি নির্বাচনের পরও একই মন্তব্য পোস্ট করে গেছে। বট নেটওয়ার্কটি লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে দেশের প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম ও তৎকালীন বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফেসবুক পেজকে।

গবেষণায় ভুয়া প্রোফাইলগুলোর মধ্যে একধরনের সংযোগ থাকার চিত্র পাওয়া যায় দুটি নির্দিষ্ট পেজে লাইক দেওয়ার প্রবণতা থেকে।

প্রোফাইল ‘লকড’ নেই, এমন ১ হাজার ১২৪টি অ্যাকাউন্টের ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেগুলো ‘বাংলার খবর’ ও ‘আওয়ামী লীগ মিডিয়া সেল’ পেজ দুটির কোনো একটিকে বা দুটিকেই অনুসরণ (ফলো) করে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ মিডিয়া সেল পেজটি আর পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশে বাম মানেই ফ্যাসিস্ট: ফরহাদ মজহার

৩০ আগস্ট ২০২৪, যুগান্তর

কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার বলেছেন, বাংলাদেশে বাম মানেই ফ্যাসিস্ট। কারণ তারা কোনো দিন কার্ল মার্কস পড়ে নাই, কংগ্রেসের ইশতেহার পড়ে নাই। বাংলাদেশে বামপন্থি মানেই ফ্যাসিবাদের আরেকটি রূপ। বাংলাদেশ এখনো ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে মুক্ত হয়নি।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে ‘গণঅভ্যুত্থান ও গঠন: বাংলাদেশে রাজনৈতিক ধারার বিকাশ প্রসঙ্গ’ শীর্ষক পাঠ পর্যালোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় দর্শকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধান হলো— জনগণের ইচ্ছা ও সংকল্পের প্রকাশ। রাষ্ট্র বুঝতে হলে জনগণের সার্বভৌমত্ব কি তা বুঝতে হবে। আমরা বাঙালি না মুসলমান— এই প্রশ্নের জবাবই তো গত ৫০ বছরে খুঁজে পাইনি।

প্রধান পাঠ পর্যালোকের বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, ফ্যাসিস্ট সংবিধানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকার এখনো টিকে আছে। বাংলাদেশের যে সংবিধান এখন চালু রয়েছে, তা শেখ হাসিনা প্রণীত ফ্যাসিস্ট সংবিধান। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলে কিছু নেই। তাই এই সংবিধান অনুসারে এই সরকার অবৈধ। বাংলাদেশ এখনো ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে মুক্ত হয়নি।

নির্বাচনের আগে ৩৪ হাজার কোটি টাকার শুল্কছাড় দেয় আওয়ামী সরকার

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

নির্বাচনের আগের বছরে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বেশি শুল্ক ছাড় দিয়েছিল সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার। ব্যবসায়ীদের খুশি করতে এ শুল্ক ছাড়া দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক প্রতিবেদনেই এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। নির্বাচনের ঠিক আগের বছরে অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এক বছরে এত শুল্ক ছাড় আর কখনোই দেওয়া হয়নি।

চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের আগের বছরে মূলত ব্যবসায়ী সমাজের সমর্থন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন খাতে শুল্ক ও কর ছাড় দেওয়া হয়েছিল বলে মনে করেন এনবিআরের শুল্ক কর্মকর্তারা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শুল্ক-কর ছাড় কমানোর শর্ত রয়েছে। এই বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থা ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে কর ছাড় কমাতে বলেছে। সংস্থাটি মনে করে, শুল্ক-কর ছাড় যৌক্তিক করা প্রয়োজন। শুল্ক ও কর ছাড় যৌক্তিক করা হলে স্থানীয় উৎস থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়বে।

এখন নির্বাচন হলে কাকে ভোট দেবেন

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

এখন নির্বাচন হলে ৩৪ শতাংশ মানুষ নিশ্চিত নন কাকে ভোট দেবেন। আর ১১ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা ছাত্র–সমর্থিত নতুন কোনো দলকে ভোট চান। এই উত্তর পাওয়া গেছে মাঠপর্যায়ের জরিপ থেকে। অন্যদিকে অনলাইন জরিপে অংশ নেওয়া ৩৫ শতাংশই ছাত্র–সমর্থিত নতুন কোনো রাজনৈতিক দলকে ভোট দিতে চান। তবে ১১ শতাংশ এখনো নিশ্চিত নন কাকে ভোট দেবেন।

উন্নয়ন গবেষণা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সংস্থা ইনোভিশন কনসাল্টিং বাংলাদেশ পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তাদের বাংলাদেশ স্পিকস নামের একটি মাইক্রো-পোলিং প্ল্যাটফর্মে ২৯ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে ও অনলাইনে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। দেশের ৫০টি জেলায় মাঠ পর্যায়ে ৫ হাজার ১১৫ নমুনা এবং অনলাইনে ৬৪টি জেলায় ৩ হাজার ৫৮১ নমুনার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়। ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াৎ সরওয়ার জরিপের বিস্তারিত ফলাফল তুলে ধরেন। এ সময় বলা হয়, দুই জরিপেই মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে অনলাইন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রত্যাখ্যান করার প্রবলতা স্পষ্ট।

মো. রুবাইয়াৎ সরওয়ার ফলাফল তুলে ধরে বলেন, মাঠপর্যায়ের জরিপে দেখা গেছে বিএনপির সমর্থন বেশি, এর হার ২১ শতাংশ। এর পরে আছে জামায়াতে ইসলামী—১৪ শতাংশ। আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন এমন কথা বলেছেন ৫ শতাংশ। আর ৩৪ শতাংশ, অর্থাৎ বেশির ভাগই নিশ্চিত নন কাকে ভোট দেবেন।

অন্যদিকে অনলাইন জরিপের ফল বলছে, ৩৫ শতাংশই ছাত্র–সমর্থিত নতুন কোনো রাজনৈতিক দলকে, জামায়াতকে ২৫ শতাংশ, আওয়ামী লীগকে ১০ শতাংশ এবং বিএনপিকেও ১০ শতাংশ ভোট দিতে চান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্র–শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত পৌনে নয়টা পর্যন্ত সিন্ডিকেটের জরুরি সভা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়–সংলগ্ন লাউঞ্জে এ সভা হয়। সভায় সিন্ডিকেটের ১৭ সদস্যের মধ্যে ১৫ জন অংশ নেন।

ধর্মীয় অবমাননা এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও উপদেষ্টা নাহিদকে নিয়ে কটূক্তি, নালিশি মামলা

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ধর্মীয় অবমাননা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে নালিশি মামলা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সাইবার ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামের বিচারক জহিরুল কবিরের আদালতে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানার হারুয়াছড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. সাইফুদ্দীন। তিনি উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক। এতে আসামি করা হয় ফটিকছড়ির নানুপুরের পশ্চিম নানুপুর গ্রামের বাসিন্দা মোকতার হোসেনকে। তিনি একজন ব্যবসায়ী।

চলচ্চিত্রে সার্টিফিকেশনের মোড়কে সেন্সরই রয়ে গেল

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

চলচ্চিত্রকর্মীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের মুখে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২৩’ পাস করে বিগত সরকার। সে আইনেই ২০ সেপ্টেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করেছে সরকার। সার্টিফিকেশন বোর্ডে গঠনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও সেন্সর বোর্ডের অবসান ঘটল।

সার্টিফিকেশন বোর্ড নিয়ে আলোচনার মধ্যে সার্টিফিকেশন আইনকেও সামনে আনছেন নির্মাতারা, শিল্পীরা। আইনের বেশ কয়েকটি ধারা নিয়ে চলচ্চিত্রকর্মীদের জোরালো আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আইনটি করেছিল বিগত সরকার।

‘দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট, ১৯৬৩’ এবং ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২৩’ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দুই আইনের কোনো কোনো ধারা প্রায় হুবহু মিল রয়েছে। আবার সার্টিফিকেশন আইনের কোনো ধারা সেন্সর আইনের চেয়েও বেশি ‘দমনমূলক’।

দুটি আইন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সার্টিফিকেশন আইনের ২১ ধারার মধ্যে ১৩ ধারাই সেন্সর–সংক্রান্ত; সার্টিফিকেশন বা রেটিংয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

সার্টিফিকেশন বোর্ডের চেয়ারম্যান কে হবেন, এর সদস্য সংখ্যা কত হবে, সার্টিফিকেশন বোর্ডের কার্যাবলি, সার্টিফিকেশন স্থগিত বা বাতিল কিংবা আইন লঙ্ঘনে শাস্তির ধারাগুলো নেওয়া হয়েছে প্রায় হুবহু সেন্সর আইন থেকে।

উল্টো সার্টিফিকেশন আইনের সংজ্ঞায় ‘চলচ্চিত্রের’ পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে। সেন্সর আইনে শুধু পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকেই ‘চলচ্চিত্র’ বলা হতো। সার্টিফিকেশন আইনে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পাশাপাশি স্বল্পদৈর্ঘ্য, প্রামাণ্যচিত্র, কার্টুনচিত্র, অ্যানিমেশন চিত্রসহ সব ধরনের চলচ্চিত্রকেই সার্টিফিকেশন আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সার্টিফিকেশন আইন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রের জন্য সার্টিফিকেশন বোর্ডের অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন ছাড়া ওটিটি বা কোনো ডিজিটাল মাধ্যমেই ছবি প্রদর্শন করা যাবে না।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষকেরা বলছেন, সার্টিফিকেশন বোর্ডের প্রধান কাজ কখনোই ছবি আটকানো নয়, ছবিটি কোন বয়সের দর্শকেরা দেখতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করা। অথচ সার্টিফিকেশনের নামে সেন্সর আইনকেই আরও কঠোরভাবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ফলে নির্মাতারা চলচ্চিত্র নির্মাণে আগের স্বাধীনতাও কতটা পাবেন, তা নিয়ে নতুন করে সংশয় তৈরি হয়েছে।

গত দেড় দশকে একের পর এক ছবি আটকে দিয়ে বারবারই শিরোনামে এসেছে ঢাকার সেন্সর বোর্ড। ‘নমুনা’, ‘রানা প্লাজা’, ‘অমীমাংসিত’, ‘শনিবার বিকেল’, ‘মেকআপ’, ‘মং থেংগারি’র মতো সিনেমা বছরের পর বছর ধরে সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে।

১৯৬৩ সালের ‘দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্টে’ ছবি আটকে দেওয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিল সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানের। সার্টিফিকেশন আইনেও বোর্ডের চেয়ারম্যানকে একচেটিয়া ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

সার্টিফিকেশন আইনেও পদাধিকারবলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব সার্টিফিকেশন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও সচিবই থাকতেন।

বোর্ডের চেয়ারম্যান চাইলে সার্টিফিকেশন দেওয়ার পরও সার্টিফিকেশন আইনের ৮ ধারা বলে কোনো ছবির সার্টিফিকেশন সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারেন।

সার্টিফিকেশন আইনের ৯ ধারায় সার্টিফিকেশন পাওয়া চলচ্চিত্রের সার্টিফিকেশন বাতিলের এখতিয়ার রয়েছে সরকারের।

প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের অভিযোগে পটুয়াখালী আদালতে মামলা

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে পটুয়াখালীর আদালতে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আশিষ রায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।

দণ্ডবিধির ৩০৭/৪৯৯/৫০৬ (৪) ধারায় হাসান মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনি উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব মধুখালী গ্রামের বাসিন্দা। বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. হাফিজুর রহমান মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলায় বিবাদী করা হয়েছে মো. মাসুম বিল্লাহ (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে। তাঁর বাড়িও পূর্ব মধুখালী গ্রামে। মাসুম বিল্লাহ পাল্টা অভিযোগ করেছেন, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তাঁকে ফাঁসাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলা করা হয়েছে।

বিভিন্ন রকম ফ্যাসিবাদের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখন আবার বিভিন্ন ধরনের ফ্যাসিবাদের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এক ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়ে যদি আরেক ফ্যাসিবাদের মুখে পড়ি, তাহলে তো হবে না।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাঁটাবনের পাঠক সমাবেশে ‘সংকটে গণতন্ত্র: সামরিক শাসনোত্তর বেসামরিক শাসনের সমস্যা’ শীর্ষক বইয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন।

বইটির লেখক সাংবাদিক আমীর খসরু। এর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অনন্যা প্রকাশনী আলোচনাটির আয়োজন করে।

এতে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশে অনেক জায়গায় নারীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। তাঁদের পোশাক নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য আসছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। তিনি বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে শ্রেণি, জাতি, লিঙ্গ ও ধর্মীয় বৈষম্য দূর করা দরকার। এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের আলোচনা এবং জাতীয় সংলাপের মধ্যে যেতে হবে। একটি পরিষ্কার রূপকল্প প্রণয়ন করতে হবে।

অনুমতি ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা-সমাবেশ-মানববন্ধন নিষিদ্ধ

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, মিছিলসহ যেকোনও ধরনের কর্মসূচি আয়োজন না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

জরুরি এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্যের আদেশক্রমে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সমাবেশ, মানববন্ধন, মিছিল-মিটিংসহ যেকোনও কর্মসূচি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আয়োজন না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এই নির্দেশ অমান্য করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোন যুক্তিতে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাতকে চট্টগ্রামের মেয়র ঘোষণা

০১ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

তিন বছর আগে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে (চসিক) পূর্বপরিকল্পিত তামাশার, প্রহসনের নির্বাচন উল্লেখ করে বিচারক বলেছেন, সরকারদলীয় মনোনীত প্রার্থীকে মেয়র ঘোষণা দেওয়া কৃত্রিম আনুষ্ঠানিকতামাত্র। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ খাইরুল আমীনের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে এই মন্তব্য করা হয়।

বাদীর আইনজীবী মফিজুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণ পেয়েছেন আদালত। এ জন্য বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে চসিকের মেয়র ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্বাচিত হওয়ার ফলাফল বাতিল ঘোষণা করেন আদালত। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির আদেশও দিয়েছেন।

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে ভোট চায় বিএনপি ছাড়া বিভিন্ন দল

১২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

ঢাকায় এক সেমিনারে বিএনপি ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে তাঁদের প্রায় সবাই নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

শনিবার ‘নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কেমন চাই?’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের মত দেন। নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ওই সেমিনারের আয়োজন করে।

ফেসবুক পোস্টের জেরে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের

২৩ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

এক ফেসবুক পোস্টের জেরে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন। ওই ফেসবুক পোস্ট ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ দাবি করে কলেজের এক প্রভাষক লিখিত অভিযোগ করার পর এই নির্দেশনা দিল জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের শিক্ষা শাখা থেকে গত সোমবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এই চিঠি দেওয়া হয়। আজ বুধবার দুপুরে চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

মশা মারতে ‘কামান দাগাচ্ছে’ না কেউ

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

ডেঙ্গু মৌসুম ঘিরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নানা কর্মসূচি নিয়ে সামনে এলেও এবার মশা মারতে কামান দাগাচ্ছে না কেউ! প্রজননের অনুকূল পরিবেশ পেয়ে রাজধানী তো বটেই, সবখানে এখন মশার রাজত্ব। মশক বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এডিস মশার ঘনত্ব এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ফলে প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ধীরে ধীরে মৃত্যুর তালিকাও হচ্ছে দীর্ঘ।

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি পালিয়ে থাকায় গেল এক মাস মশক নিধন কার্যক্রম কার্যত লাটে উঠেছে। মাঠ পর্যায়ে অনেকেই হাত গুটিয়ে বসে আছেন। ফলে এডিস মশার ‘হটস্পট’ বিষয়ক কোনো তথ্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে আসছে না। যাদের মাধ্যমে এ তথ্য কেন্দ্রে আসার কথা, সেই জনপ্রতিনিধিরা রাজনৈতিক কারণে কর্মস্থলেই যাচ্ছেন না। এর মধ্যে আবার পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের সব শীর্ষ জনপ্রতিনিধিকে পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এদিকে, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরকে এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় চিহ্নিত করা হয়। বর্ষার শেষ সময়ে এসে মাঝেমধ্যেই নামছে ঝুম বৃষ্টি। এতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে গত বছরের চেয়ে এবার আরও ভয়ংকর চেহারায় দেখা যেতে পারে ডেঙ্গু।

স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চর দখলের কাজ চলছে

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

একটি চিহ্নিত চিকিৎসক গোষ্ঠী জোরজবরদস্তিমূলকভাবে স্বাস্থ্য প্রশাসন, চিকিৎসা শিক্ষা এমনকি জেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ বাতিল, বদলি ও পদায়নের নামে চর দখলের কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছে ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।

‘স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংকট ও জন-আকাঙ্ক্ষা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক এম আবু সাঈদ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এম এইচ ফারুকী।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জন-আকাঙ্ক্ষা রূপ নিয়েছে এ দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিবর্তন। এখনো পরাজিত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলের মতো চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ‘মব জাস্টিসের’ শিকার হচ্ছেন। নিরাপত্তাহীনতা ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে জনতুষ্টি নেই, আছে ধনী ও দরিদ্র ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবায় বৈষম্য। এখনো অনেকে চিকিৎসার জন্য ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ উন্নত দেশে যাচ্ছেন। এতে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হচ্ছে।

বন্যা ও জলাবদ্ধতা

ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত শতাধিক গ্রাম

২১ আগস্ট ২০২৪, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা

তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি ভাঙন অংশে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। এক মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।

ঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেকে চৌকিতে মানবেতরভাবে বসবাস করছেন। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক ও উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ফুলগাজি উপজেলা সদরের বেশ কিছু এলাকাও প্লাবিত হয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. আবুল কাশেম  বলেন, “গত ২ আগস্ট মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুর থেকে আবারও ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে।”

এতে পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম অলকার মাস্টারবাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধের ভাঙন অংশ, মির্জানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাউতলি কাশিনগর ও চম্পকনগর এলাকায় বাঁধের দুইটি অংশ, চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন, দক্ষিণ শালধর, কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের টেটেশ্বর ও সাতকুচিয়া এলাকার ভাঙন অংশ এবং পশ্চিম মির্জানগর এলাকার সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি ঢুকে তিন উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।

বক্সমাহমুদ গ্রামের বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, “এতো প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করতে এর আগে কখনো দেখিনি। বাড়িতে পানি উঠে গেছে। খুব কষ্টে রাত পার করছি আমরা।”

দক্ষিনশালদার গ্রামের জাহিদ হোসেন  বলেন, “এই দিকের এলাকা উঁচু হওয়ায় সাধারণত বন্যার পানি প্রবেশ করে না। কিন্তু এবার ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিত তলিয়ে গেছে। পানি আরও বাড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।”

ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ৩ উপজেলা

২১ আগস্ট ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানির চাপ বেড়ে গেছে। এতে তিন উপজেলার প্রায় সব এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া ফেনী সদর ও দাগনভূঁঞা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ছোট ফেনী নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, গত প্রায় ৩৭ বছর পর এলাকাবাসী আবার এ ধরনের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।

পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনীর স্পিডবোট ও হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হচ্ছে বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।

আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মোহাম্মদ সেলিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যা হলেও ১৯৮৮ সালের পর এ ধরনের ভয়াবহ বন্যা আর হয়নি। তিন উপজেলায় প্রায় প্রতিটি বাড়ি ও বসতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।’

পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ সব সড়ক, ফসলি মাঠ এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পরশুরামে একজন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।

ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ১২ জেলা, মৃত্যু ৮

২৩ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে দেশের ১০ জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৩৬ লাখ মানুষ। তবে বন্যাকবলিত আরও দুই জেলার খবর পাওয়া গেছে। পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গত দুই দিনে চার জেলায় আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

গত বুধবার থেকে আট জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আরও চার জেলাসহ মোট ১২ জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। জেলাগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। বন্যার্তদের সহায়তায় পাঁচ জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ করছেন সেনাসদস্যরা।

বন্যার পানিতে রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেক স্থানে পানি। ওই সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। এতে কার্যত ওই সব এলাকার মানুষ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।

আকস্মিক বন্যায় বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে ফেনীতে। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার পর ফেনী পৌর শহরও গতকাল পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, কোথাও বুকসমান পানি।

৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, দেশের বন্যাকবলিত জেলা ১০টি। আর প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। বন্যায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। টেলিযোগাযোগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

বন্যার কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে শফিকুল আলম জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশে টানা বৃষ্টি হয়েছে এবার। ১৬ আগস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছিল। আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব জানান, আগামীকাল শনিবার নাগাদ বৃষ্টি একটু কমতে পারে।

বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনা মোতায়েন

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, গতকাল চট্টগ্রামের মিরসরাই, কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন, ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা পানিবন্দী মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সহায়তা করছেন। এ ছাড়া ফেনী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে সেনাবাহিনীর পাঁচটি চিকিৎসা দল সহায়তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে।

সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার বন্যাদুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ করছে।

গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত

ফেনী সদরের বিভিন্ন এলাকা কার্যত পানির নিচে। গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দেখা যায়, কোথাও বুকপানি, কোথাও গলাপানি। দক্ষিণ মাইজবাড়িয়া, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, ভাঙ্গা তাকিয়াসহ একাধিক গ্রামে এ দৃশ্য দেখা যায়।

গ্রামের পর গ্রামের বেশির ভাগ একতলা ঘর তলিয়ে গেছে। ফসলি জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট ডুবে আছে। কেউ কেউ কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানিয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ বুকপানিতে সাঁতরে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

মাইজবাড়িয়া এলাকার ভেতরে একটা গাছ ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুফিয়া বেগম নামের এক নারী। পানির প্রবল স্রোত তাঁকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করেন।

টানা বর্ষণের ফলে নোয়াখালীর আটটি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডুবে গেছে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের চৌমুহনী–মাইজদী অংশের একাধিক এলাকা। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি ছেড়ে ছুটে চলছে অনেকে।

গতকাল সকালে কথা হয় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া ননী বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘৭০ বছর বয়স আমার। এর আগেও অনেকবার এ রকম বৃষ্টি দেখেছি। দিনের পর দিন বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু কোনোবার এত পানি দেখিনি।’

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে কয়েক শ মাছের ঘের, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা। ঢলের সঙ্গে কুমিল্লায় এক দিনেই ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আখাউড়ায় বাঁধ ভেঙে ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল আসতে শুরু করে। বুধবার সকাল থেকে ইমিগ্রেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ আছে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীর বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে আছেন এই তিন উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক।

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের রামুতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ২৩ হাজার মানুষ। জেলার পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ও টৈটং ইউনিয়নের অন্তত ১১টি গ্রামীণ সড়ক ভেঙে গেছে।

প্রবল বর্ষণ ও ঢলে ভেসে গেছে পাহাড়ি শহর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির সমতল ও নিচু এলাকা, খেতখামার ও পুকুর। ডুবে আছে বিস্তীর্ণ এলাকার বসতবাড়ি। খাগড়াছড়ি শহরের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

লক্ষ্মীপুরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল সকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঞ্ছানগর এলাকার পাটোয়ারীবাড়ির আবুল কালামের স্ত্রী সোমা বেগম বলেন, ‘গ্যাসের সংযোগ বন্ধ। চুলাও পানির নিচে। আগুন জ্বালাতে পারছি না। সকালে রেস্টুরেন্ট থেকে এনে নাশতা খেয়েছি। দুপুরের খাবারও কিনে আনতে হবে। এত বৃষ্টি, এত পানি জীবনেও দেখিনি।’

আটজনের মৃত্যু

বন্যার পানিতে ডুবে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আটজন মারা গেছেন। এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, কক্সবাজারে দুজন, ফেনীতে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন মারা গেছেন। পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া কক্সবাজারের দুজন নিখোঁজ আছেন।

কুমিল্লায় দুজন বন্যার পানিতে তলিয়ে, একজন বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং একজন মাথায় গাছ পড়ে মারা গেছেন। গত বুধবার কুমিল্লা নগর, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত ব্যক্তিরা হলেন নাঙ্গলকোট পৌরসভার দাউদপুর এলাকার বাসিন্দা কেরামত আলী (৪৫), কুমিল্লা নগরের ছোট এলাকার কিশোর রাফি (১৫) ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাকাটিয়া গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে শাহাদাত হোসেন (৩৪)। লাকসামে পানিতে তলিয়ে মারা যাওয়া শিশুর নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

কক্সবাজারের রামুতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ২৩ হাজার মানুষ। বাঁকখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। স্রোতে ভেসে গেছেন চারজন। বিকেল পাঁচটার দিকে এক শিশুসহ দুজনের মরদেহ ভেসে উঠলেও অপর দুজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব জুমছড়ি গ্রামের ছৈয়দ হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেন (২২) ও ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের লম্বরিপাড়ার বাসিন্দা নুরুল কবিরের ১০ বছর বয়সী মেয়ে।

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে একজন মারা গেছেন। তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। আর গত বুধবার দুপুরে বন্যার পানিতে ডুবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বীরচন্দ্রপুর গ্রামে সুবর্ণা আক্তার (১৯) নামের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী মারা যান।

ফেনী ও কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। একইভাবে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিলেটের সঙ্গেও সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।

রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (ডিএম) নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের ট্রেনের মোট ৩১টির যাত্রা পূর্ণ ও আংশিক বাতিল করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এসব ট্রেন চলাচল করার কথা ছিল।

চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে গতকাল সকালে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস এবং সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ছেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বন্যার পানিতে রেললাইন ডুবে থাকায় ট্রেনগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি।

রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেনী থেকে ফাজিলপুর পর্যন্ত রেললাইন পানিতে ডুবে গেছে। অনেক জায়গায় রেলসেতুর ওপর দিয়ে পানি বয়ে যাচ্ছে। আর স্রোতে কুমিল্লায় রেললাইন উপড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফেনী স্টেশনে বন্যার পানি জমে আছে।

রেলের পাশাপাশি সড়কপথেও যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। ওই সড়কে যানবাহন থেমে থেমে চলছে। গতকাল ভোর থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নবগ্রাম রাস্তার মাথা থেকে চৌদ্দগ্রাম বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এতে যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে।

মোবাইল টাওয়ার অচল

বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় মোবাইল ফোনের ২১ দশমিক ৬ শতাংশ টাওয়ার অচল হয়ে গেছে। ফেনী ও খাগড়াছড়ি জেলার প্রায় অর্ধেক মোবাইল টাওয়ার কাজ করছে না। এসব এলাকায় নেটওয়ার্কব্যবস্থা সচল রাখতে ভি–স্যাট পাঠানো হয়েছে। গতকাল ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত বন্যাপ্লাবিত জেলাগুলোয় মোট ৬ হাজার ৯৮৬টি টাওয়ারের মধ্যে ৫ হাজার ৪৭৬টি সচল আছে। টাওয়ার অচল হয়েছে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনীতে, এই জেলার টাওয়ারের ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ অচল হয়ে গেছে। আর খাগড়াছড়ির ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ টাওয়ার এখন অচল আছে। এসব টাওয়ার সচল করতে কাজ করা হচ্ছে।

এমন ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস ছিল না

২৩ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগজুড়ে প্রবল বর্ষণ ও ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস ছিল না। ১৮ আগস্ট দেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে শুধু নদ–নদীর পানি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। ভারতের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকেও এমন তথ্য জানানো হয়নি। ফলে হঠাৎ ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল।

ভারত থেকে বড় ও আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা থাকলে তা বিশেষভাবে জানানোর চর্চা দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের রয়েছে। মুহুরী নদীর উজানে ভারতীয় নদী বিলুনিয়াতে গত তিন দিনে সর্বকালের রেকর্ড–ভাঙা বৃষ্টি হয়েছে। পানির উচ্চতা দ্রুত বেড়েছে; কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে কোনো বিশেষ সতর্কবার্তা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়নি।

দেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরকার উদয় রায়হান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোমতী ও মাতামুহুরী নদীর উজানে ভারতীয় অংশে পানি বৃদ্ধির তথ্য আমরা তাদের ওয়েবসাইট থেকে পাই। তাদের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে দিনে দুবার তথ্য দেওয়া হয়; কিন্তু এবার বিস্তারিত তথ্য আমাদের জানানো হয়নি। বিস্তারিত তথ্য না পাওয়া গেলে বন্যার বিস্তারিত ও সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হয়ে যায়।’

ত্রাণ যাচ্ছে না দুর্গম গ্রামে

২৫ আগস্ট ২০২৪, সমকাল

বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেটও উধাও। হাসপাতাল, ব্যাংকসহ জরুরি প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় সেবা বন্ধ। চারদিকে পানি থইথই করলেও এক চুমুক বিশুদ্ধ পানির বড্ড অভাব। এক ইঞ্চি জায়গাও বাকি নেই, যেখানে পানির স্রোত নেই। এমন দুঃসময় হয়তো কখনও আসেনি তাদের জীবনে। তবু ভয়াবহ বানের সঙ্গে চার দিন ধরে চলছে যুদ্ধ! ফেনীর পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী এখনও বিচ্ছিন্ন। কারও সঙ্গে নেই কারোর কথন। বিশেষ করে তিন উপজেলার দুর্গম এলাকার মানুষ কেমন আছেন, তাও সবার কাছে অজানা। আটকা পড়ে আছে লাখ লাখ মানুষ। অনেকে গ্রামে থাকা পরিবারের সদস্যের নাম-ঠিকানা দিয়ে উদ্ধার তৎপরতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দেয়ালে লিখছেন। তবে নৌযান সংকটের কারণে উদ্ধার তৎপরতায় তেমন গতি আসেনি।

ফেনীর বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ এখন বাঁচার জন্য লড়ছে। কেউ অভুক্ত, কারোর জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম আধা পেট খেয়ে। ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকে স্থানীয় প্রশাসনের চালু করা আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েও পাচ্ছে না খাবার। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে গবাদি পশু। সরকারের পাশাপাশি বন্যাদুর্গত এলাকায় বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন। তবে দুর্গত এলাকায় সেসব ত্রাণ তেমন যাচ্ছে না। সড়কের দু’পাশেই বিতরণ হচ্ছে বেশি। ফলে সেসব এলাকার অসহায় মানুষ উদ্বেগ, অনিশ্চয়তার মধ্যে বুভুক্ষু দিন কাটাচ্ছে।

ধানের চারা নিয়ে বন্যাদুর্গত কৃষকদের পাশে

২৫ আগস্ট ২০২৪, প্রতিদিনের বাংলাদেশ

বন্যাপরবর্তী খাদ্যসংকট হওয়া নতুন কিছু নয়। এর আগেও বন্যাপরবর্তী দেশে খাদ্যসংকট হয়েছিল। দেশের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এই আকস্মিক বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে আমন ধানের চারা। কিছু দিন পর বন্যার পানি নেমে গেলেও আবার চারা তৈরি করতে এক মাসের মতো সময় লাগবে। এতে আমন ধান লাগানোর সময় চলে যাবে। আবার বন্যার কারণে চারা তৈরি করতে কৃষকরা সমস্যায় পড়বেন। দেশে দেখা দেবে খাদ্যসংকট। এই খাদ্যসংকটের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা বন্যাপরবর্তী কৃষকদের ধানের চারা দিয়ে সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে অন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বীজ কোম্পানি ও কৃষি উদ্যোক্তারা।

জানা গেছে, বন্যাপরবর্তী সময়ে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যাদুর্গত এলাকায় কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে আমন ধানের চারা বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন এসব শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরেই আমন ধানের চারা সরবরাহ করবেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরেই দ্রুত চারা সরবরাহ করা গেলে দেশের খাদ্যসংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে জানান তারা। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত বিইউ ধান-১ জাতের চারা সরবরাহ করবেন। ধানের চারার পর সবজির বীজও সরবরাহ করা হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

বন্যার পূর্বাভাস: ভারতের কাছে তিনটি তথ্য চেয়ে পাওয়া গেছে একটি

২৬ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

বন্যার পূর্বাভাসের ব্যাপারে ভারতের কাছ থেকে তিন ধরনের তথ্য চেয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমত, অভিন্ন নদীগুলোর উজানে কী পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে। সেই পানি কত গতিতে নিচের দিকে নেমে আসছে। দ্বিতীয়ত, আগামী তিন দিনে বৃষ্টির পরিমাণ ও পানি বৃদ্ধির গতি কেমন হতে পারে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের উজানে ভারতীয় অংশের নদীগুলোয় যে ৬০টি বাঁধ রয়েছে, তা কোন সময়ে খুলে দেওয়া হবে এবং সেখান থেকে কী পরিমাণে পানি ভাটির দিকে আসতে পারে।

গত বছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব তথ্য চাওয়া হয়। পরে একাধিকবার চিঠি দিয়ে একই তথ্য চাওয়া হলেও ভারত কোনো সাড়া দেয়নি।

ভারত শুধু অভিন্ন নদীগুলোর ১৪টি পয়েন্টের পানি বৃদ্ধির তথ্য দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ চেয়েছিল ২৮টি পয়েন্টের বিস্তারিত তথ্য। ১৯৭২ সালের যৌথ কমিশন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ এই একটিমাত্র তথ্য দৈনিক দুবার পায়। বাংলাদেশে বন্যার পানির ৯২ শতাংশের উৎস হচ্ছে উজান থেকে আসা ঢল। ফলে উজান থেকে আসা পানির পরিমাণ, গতিবেগ ও ব্যাপ্তিকাল বিস্তারিত না জানলে বন্যার সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়।

ভেলায় ভেসে আসছে লাশ, সঙ্গে চিরকুট ‘শুকনো জায়গা পেলে কবর দেবেন’

২৮ আগস্ট ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত ফেনী। বন্যা কেড়ে নিয়েছে সবকিছু। এর ভেতর যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের বেদনার ভয়াবহতা হৃদয়বিদারক। সব তলিয়ে যাওয়ায় মাটির অভাবে মৃত মানুষটির দাফন বা সৎকারের সুযোগ না পেয়ে ভাসিয়ে দিতে হচ্ছে কলাগাছের ভেলায়। স্বজনের মরদেহ যেন একটু মাটির ছোঁয়া পায় সে আশায় অনেকে মরদেহের সঙ্গে কাগজে দাফনের অনুরোধ লিখে দিচ্ছেন। জীবনের এমনই ভয়াবহতা ছুঁয়ে যাচ্ছে ফেনীবাসীকে।

স্থানীয় সংবাদকর্মী নাজমুল হক শামীম জানান, শনিবার রাতে ফেনী শহরের মিজান রোডে সোনালী ব্যাংকের সামনে হাঁটু পানিতে একটি শিশুর (৫) মরদেহ ভেলায় ভাসতে দেখি। কয়েকজন মানুষ সেই লাশটির জানাজা ও দাফনের জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু কোথায় সেটি দাফন করা হয়েছে তা আর জানা যায়নি।

রোববার ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকার উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামে বন্যায় ভেসে আসে আরেকটি শিশুর লাশ।

উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা পপি মজুমদার বলেন, ‘রোববার সকালে আমার স্বামী ডোবায় আনুমানিক পাঁচ বছরের এক শিশুর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে লোকজনকে খবর দেন। তারপর কয়েকজন ধরাধরি করে মরদেহটি এনে সড়কের পাশে রাখেন।’

স্থানীয় জয়নাল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিশুটির চোখ দুটো ফুলে সাদা হয়ে ছিল। শরীর ফোলা। লাশের সঙ্গে একটি কাগজে লেখা ছিল—”বন্যার মধ্যে মাটি না পেয়ে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কেউ লাশ পেলে যেন কবর দেওয়া হয়।”‘

বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৫০ ছাড়াল

২৯ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ ছাড়াল। আজ বুধবার পর্যন্ত ৫২ জন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ, ৬ জন নারী ও ৭ শিশু। বন্যায় গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩১।

আজ সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত ১১টি জেলার ৬৮টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত। জেলাগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট।

মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ফেনীতে ১৭, কুমিল্লায় ১৪,নোয়াখালীতে ৮, চট্টগ্রামে ৬, কক্সবাজারে ৩, খাগড়াছড়িতে ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১ ও মৌলভীবাজারে ১ জন রয়েছেন। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে একজন নিখোঁজ আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এখনো ১০ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৯টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৪ লাখ ৮০ হাজার ৪৬৩ জন। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৩ হাজার ৪০৩টি। এগুলোতে ৫ লাখ ২ হাজার ৫০১ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

লাফিয়ে বাড়ছে রোগী, মিলছে না সেবা

০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমকাল

বন্যার পানি সরে গেছে। ফেনীর বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি ফিরে গুছিয়ে ওঠার চেষ্টায় ব্যস্ত। এরই মধ্যে তাদের কপালে নতুন চিন্তার ভাঁজ! প্রতিদিনই পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য অসুস্থ হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে নিলেও মিলছে না চিকিৎসা। বানের পানিতে এসব হাসপাতাল নিজেই এখন অসুস্থ! অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় হচ্ছে না পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

সামর্থ্যবানরা ছুটছেন জেলা শহরে। সেখানে রোগীর ঠাসাঠাসি, সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্স। একটি স্যালাইন পুশ করার জন্য রোগীকে আধা ঘণ্টার বেশি লাইনে থাকতে হচ্ছে। শয্যার অভাবে অনেকে রাস্তা ও গাছতলায় ঠাঁই নিয়েছেন। সেখানে ডালে ঝুলিয়ে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

বন্যা-উত্তর মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, জ্বর, আমাশয়, এলার্জি ও নিউমোনিয়ায়। রয়েছে সাপেকাটা রোগীও। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন মানুষ আসছেন জেলা সদরের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে। এখানে লাফিয়ে লাফিয়ে রোগী বাড়লেও, বন্যায় ওষুধপত্র ও যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেবা মিলছে না।

১৫টি খাল খনন করলেই দূর হবে ঢাকার ৮০ শতাংশ জলাবদ্ধতা

০৬ অক্টোবর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

রাজধানীর দখল হয়ে যাওয়া খালগুলোর মধ্যে মাত্র ১৫টি খাল খনন করলেই অবিরাম জলাবদ্ধতা সমস্যার প্রায় ৮০ শতাংশের সমাধান হতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) সম্প্রতি রাজধানীর ৯টি জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে চলমান সমস্যার সমাধান দিয়েছে।

আরডিআরসি যেসব খাল খননের জন্য সুপারিশ করেছে সেগুলো হলো- রূপনগর মেইন খাল, বাউনিয়া খাল, বাইশতেকি খাল, সাংবাদিক কলোনি খাল, কল্যাণপুর খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, পান্থপথ বক্স কালভার্ট খাল, রায়েরবাজার খাল, জিরানী খাল, রামপুরা খালের দক্ষিণ প্রান্ত, দোলাই খাল, কদমতলী খাল ও মান্দা খাল।

ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার দেড় মাস পার হলেও পুনর্বাসনে নেই তৎপরতা

৬ অক্টোবর ২০২৪, ঢাকা পোস্ট

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পানির তীব্র স্রোতের সঙ্গে ভেসে গেছে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার জগতপুর এলাকার আসমা আক্তারের বসতঘর। গত দেড় মাস ধরে পরিবার নিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার।

ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, অনেক বেশি সম্পদ না থাকলেও সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবেই কাটছিলো সংসার। তবে আকস্মিক বন্যায় আমাদের আর কিছুই বাকি নেই। এতদিন ধরে অনেকে খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছে। অনেকে ঘরের জন্য নাম নিয়েছে। তবে এখনো ঘর পাইনি।

বন্যায় ঘর হারিয়েছেন পরশুরামের বক্সমাহমুদ এলাকার বয়োবৃদ্ধ রেজিয়া বেগম। তিনি বলেন, আইজ্জা (আজকে) দেড় মাসে কতজন আইছে (আসছে) নাম নিতে, অনো (এখনো) আর ঘরগান (ঘরটি) হাইনো (পাইনি)। আন্ডার লাই (আমাদের জন্য) কত মানুষ টেয়া (টাকা) দিছে হুনছি (শুনছি), হেগুন (সেগুলো) তো ঢাকায়। ঘর কেন্নে (কিভাবে) হামু (পাব) তই (তো)।

শুধু আছমা কিংবা বয়োবৃদ্ধ রেজিয়াই নয়, এমন একই অভিযোগ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ঘর হারানো ফেনীর জনপদের শত শত মানুষের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বন্যা পরবর্তী বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পুনর্বাসনে কাজ করছেন। তবে গৃহ নির্মাণ বা পুনর্বাসনে এখনো আসেনি সরকারি কোনো বরাদ্দ।

ফুলগাজীর দক্ষিণ জগতপুর গ্রামের বাসিন্দা সিএনজি অটোরিকশা চালক খোকন মিয়া। ২০ আগস্ট ভয়াবহ বন্যায় পানির তীব্র স্রোতের সঙ্গে ভেসে গেছে বসতভিটা। সেদিন পানি থেকে বাঁচতে ঘর থেকে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বের হতে পারলেও সঙ্গে কিছুই আনতে পারেনি তারা। নিরুপায় হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ স্কিমের ছোট একটি ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনমতে দিনযাপন করছেন খোকন। তিনি বলেন, বন্যা সবকিছু শেষ করে দিয়ে গেছে। আয়ের একমাত্র অবলম্বন সিএনজি অটোরিকশাটিও ভাঙন এলাকায় আটকে গেছে। এক মাস পার হয়ে গেলেও কোনো কাজ নেই। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা ছাড়া নতুন করে আমার পক্ষে ঘর তোলা সম্ভব না।

‘চাইর দিন ধইরা বাড়িঘরে পানি, কেউ খোঁজ নিল না’

০৭ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

‘চাইর দিন ধইরা বাড়িঘরে পানি। রান্দুনের কোনো বাও নাই। বাজার থাইকা শুকনা খাওন আইনা কোনো রহম দিন কাডাইতাছি। দুঃখের বিষয় অইল, এই পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাইলাম না। কেউ খোঁজ নিল না।’ বাড়ি থেকে বুকপানি ভেঙে এসে আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার উত্তর নাকশী গ্রামের আলেয়া বেগম (৫২)। এ সময় ভেজা শরীরে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর স্বামী রফিজ হক।

এই অভিযোগ শুধু আলেয়া বেগমের একার নয়, তাঁর মতো উপজেলার মরিচপুরান, যোগানিয়া ইউনিয়নের অনেকেই ত্রাণ না পাওয়ার আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। গতকাল রোববার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত যোগানিয়া, মরিচপুরান, কলসপাড় ও রাজনগর ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। রাতে হালকা বৃষ্টি হলেও সকাল থেকে রোদ রয়েছে।

‘৭ দিন অইয়া গেল, কাউর দেহা পাইলাম না’

১১ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয় ৪ অক্টোবর। এর মধ্যে উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গোয়াতলা ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের বাসিন্দা আছেন মহাবিপদে। গত সাত দিনেও এ এলাকায় সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণই পৌঁছায়নি। খাবার সংকটে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা।

স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়নের কান্দাপাড়া, মাটিখলা, পাইববাজুড়ি, চুরবহুলী গ্রাম চারটি উপজেলার মূল সড়ক থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে। গ্রামগুলোতে যেতে আঞ্চলিক সড়কের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও বুকপানি। নৌকা নেই বললেই চলে, পানির মধ্যে হেঁটে যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। এজন্য কোনো স্বেচ্ছাসেবী ওই এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যেতে চাচ্ছেন না। সরকারিভাবে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও ত্রাণ পৌঁছায়নি।

গতকাল বৃহস্পতিবার কান্দাপাড়া ও মাটিখলা গ্রাম দুটি ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে পানি; কোথাও মাটির চিহ্ন নেই। কান্দাপাড়া গ্রামের উত্তরে কোনো কোনো বাড়িতে এখনও বুকপানি। এমন কোনো ঘর নেই যেটাতে পানি ঢোকেনি। কিছু পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পাশের উঁচু গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন।  

ফেনী নোয়াখালী লক্ষ্মীপুরে তৎপরতা নেই পুনর্বাসনে

১৩ অক্টোবর ২০২৪, বণিক বার্তা

গত আগস্টের আকস্মিক বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী ও নোয়াখালী জেলা। দুই জেলার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধ্বংস হয়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ বাড়িঘর। এর পরই ক্ষতি হয়েছে লক্ষ্মীপুরে।

গত আগস্টের আকস্মিক বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী ও নোয়াখালী জেলা। দুই জেলার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধ্বংস হয়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ বাড়িঘর। এর পরই ক্ষতি হয়েছে লক্ষ্মীপুরে। বর্তমানে জেলাটির কয়েকটি এলাকায় এখনো বাড়ির উঠান ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে আছে। তবে বন্যা-পরবর্তী গৃহনির্মাণ বা পুনর্বাসনে এখনো আসেনি সরকারি কোনো বরাদ্দ। যতটুকু চলছে সবই বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে।

প্রবল বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ১৯ আগস্ট রাতে ডুবতে শুরু করে ফেনীর উত্তরাঞ্চল। ধীরে ধীরে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয় সম্পূর্ণ ফেনী জেলা। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যার ক্ষত এখনো স্পষ্ট ফেনীর কৃষি, ঘরবাড়িসহ নানা অবকাঠামোয়। সরকারি হিসাবে বন্যায় ফেনীতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। এছাড়া ১১ লাখের অধিক মানুষ এবং ৯৫ শতাংশ এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছিল। বন্যাদুর্গতদের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২ হাজার ৩০০ টন চাল, ৮২ লাখ টাকা, ছয় হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং শিশুখাদ্যের জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।

বন্যাকবলিত এলাকায় মাত্র ৭২ লাখ টাকা বিতরণ

১৩ অক্টোবর ২০২৪, বণিক বার্তা

পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়ে শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ।

পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়ে শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ। তলিয়ে যায় ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। বন্যাদুর্গত এসব এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম, লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা, তাদের খাদ্য ও অর্থসহায়তা অব্যাহত রেখেছে বলে দাবি করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ)। সরকারি এ সংস্থার গত বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এনডিআরএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে নগদ ৭২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া চাল বিতরণ হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টন, শুকনা ও অন্যান্য খাবার বিতরণ করা হয়েছে ৭ হাজার প্যাকেট বা বস্তা। শিশুখাদ্য ১৫ লাখ টাকার এবং সমপরিমাণ অর্থের গো-খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। এ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বিদ্যুৎ-জ্বালানী-খনিজসম্পদ

বড় দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, বেড়েছে লোডশেডিং

১৬ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

গ্যাসের সরবরাহ বাড়ছে না। ফলে উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। এর মধ্যে কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র। একই কারণে বন্ধ আছে ভারতের ঝাড়খন্ডে নির্মিত আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট। এতে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। দুই দিন ধরে ঢাকার বাইরে বেড়েছে লোডশেডিং।

দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট। তিন দিন ধরে দেশে লোডশেডিং বাড়তে শুরু করেছে। এ সময় দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা হয়েছে ঘণ্টায় প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি হয়েছে দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগপর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় এমন চিত্র দেখা গেছে। ঢাকার বাইরে কোনো কোনো গ্রামে দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে ভুগছে মানুষ।

আগের নয় বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৬% , আওয়ামী লীগের দেড় দশকে ১৮৮%

আগস্ট ১৮, ২০২৪, বণিক বার্তা

দেশে ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে মোট চারবার। এ সময় গ্রাহক পর্যায়ে (সর্বনিম্ন ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ ইউনিট ব্যবহার) বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ। আর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তা বেড়েছে ১৮৮ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে গত দেড় দশকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৪ বার।

গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে অভাবনীয় হারে। এর কারণ হিসেবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতাহীন বাজার এবং খাতটির অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দাম বেড়েছে বিদ্যুতের। বিদ্যুৎ খাতে ঋণ ও দায়-দেনা মেটানোর নামে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে তা চাপানো হয়েছে ভোক্তার ওপর। এতে ভোক্তা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সব প্রতিষ্ঠানই ভুক্তভোগী হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে দেশে বিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত সক্ষমতা বেড়েছে ২৬ হাজার ৫৭৮ মেগাওয়াট। আর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে ১২৫টি। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৫ বছরে অন্তত ১৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ বিনিয়োগ করেছে। ২০২১ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত আরো ২৪ বিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এসব বিনিয়োগ পরিকল্পনা ছিল প্রধানত উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি বা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকেন্দ্রিক। বিপুল অংকের এ বিনিয়োগের সঙ্গে মানুষের জীবনমান, মাথাপিছু আয়ের সংগতি না থাকায় বিদ্যুতের দাম বেড়েছে বছরের পর বছর। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের উৎপাদন খাতের সব পণ্যের দাম বেড়েছে, যা সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনমানের ওপর প্রভাব ফেলেছে।

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই বছরের জানুয়ারিতে ৫ শতাংশ হারে দুই দফা এবং ফেব্রুয়ারিতে এক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সরকার। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আরেক দফা ৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। চলমান প্যাকেজের আওতায় ঋণ দেয়ার সময় সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসার শর্ত দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

এ লক্ষ্যে প্রতি বছর বিদ্যুতের দাম চারবার বাড়ানোর কথা জানিয়েছিলেন সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। মূল্যবৃদ্ধির এ ধারা আগামী তিন বছর বহাল থাকবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ মূল্যবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখা হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগের নয় বছর ক্ষমতায় ছিল বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত। এ সময় এক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। ১০০ ইউনিট ব্যবহারকারী বিদ্যুতের দাম আড়াই টাকা ছিল। এ দাম অপরিবর্তিত ছিল। ৩০১-৪০০ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুৎ বিল বাড়ানো হয় ৫ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৩ টাকা ১৫ পয়সা।

তত্ত্বাবধায়কের আগে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল বিএনপি সরকার। এ সময় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তিন দফা। প্রতি ১০০ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের বিলের দাম ২ টাকা ১৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে আড়াই টাকা করা হয়। আর ৩০১-৪০০ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে কমানো হয়। এ শ্রেণীর ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমিয়ে ৩ টাকা করা হয়।

নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়বে না

১৮ আগস্ট ২০২৪, প্রথম আলো

নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) মাধ্যমে শুনানি করে মূল্য সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে আজ রোববার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বারবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। তাই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না, যা দুর্ভোগ আরও বাড়াবে। আমরা বাধ্য না হলে মূল্যবৃদ্ধি করব না। প্রয়োজন হলে কমিশন সবার সঙ্গে কথা বলে নীতিমালা অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নেবে।’

ফাওজুল কবির বলেন, বিতর্কিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির বিশেষ আইনের অধীন চলমান সব কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তবে দায়মুক্তির বিধান নামে পরিচিত এই বিশেষ আইনে ইতিমধ্যে সম্পাদিত চুক্তিগুলো বহাল থাকবে এবং চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ, যেহেতু চুক্তি হয়ে গেছে, তাই চাইলে তা বাতিল করা যাবে না। এ জন্য আইনগত দিক খতিয়ে দেখতে হবে।

আইনটি বাতিল করার বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, এ জন্য উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, তাতে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন থাকবে।

ভোলায় আরও ৫ টিসিএফ গ্যাসের সন্ধান, বাজারমূল্য সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

বাংলাদেশের দক্ষিণের দ্বীপজেলা ভোলায় ৫ দশমিক ১০৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও রাশিয়ার জ্বালানি জায়ান্ট গ্যাজপ্রমের এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১ লাখ কোটি ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস দেশের বার্ষিক চাহিদা পূরণ করতে পারে।

গবেষণার আওতায়, শাহবাজপুর থেকে ইলিশা পর্যন্ত ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় একটি ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ (থ্রি-ডি সাইসমিক সার্ভে) করা হয়, যেখানে ২ দশমিক ৪২৩ টিসিএফ গ্যাস পাওয়া যায়। চর ফ্যাশনে আরেকটি ১৫২.৬ লাইন- কি.মি. দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের তথ্যে ২ দশমিক ৬৮৬ টিসিএফ গ্যাস মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে বাপেক্স জানিয়েছে।

গ্যাসের অভাবে বন্ধ ৪ ইউরিয়া কারখানা, সার আমদানির উদ্যোগ

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

গ্যাস সংকটের কারণে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচটি ইউরিয়া কারখানার মধ্যে চারটি বন্ধ হয়ে গেছে। কারখানাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলতি আমন ও আসন্ন বোরো মৌসুমে ইউরিয়া সারের সংকট দেখা দিতে পারে।

দেশে আমন ও বোরো মৌসুমে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া প্রয়োজন হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে দেশে ইউরিয়ার মজুদ আছে প্রায় পাঁচ লাখ টন যা দিয়ে দুই মাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, ইউরিয়ার সরবরাহ না থাকলে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ সংকট তৈরি হতে পারে।

মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনালের একটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশে ইউরিয়া উৎপাদনে ধাক্কা লাগে। বন্ধ হয়ে যাওয়া টার্মিনালটি থেকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। সম্প্রতি টার্মিনালটি মেরামতের কাজ শেষ হলেও এখনো গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়নি।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) শফিউল আজম বলেন, এলএনজি না থাকায় চট্টগ্রামে সার কারখানার জন্য পেট্রোবাংলা থেকে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রামে অবস্থিত জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানিকে (কাফকো)।

গত ১১ সেপ্টেম্বর শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি গ্যাসের অভাবে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচটি কারখানার মধ্যে শুধু ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার জাতীয় গ্রিড থেকে প্রয়োজনীয় গ্যাস পাচ্ছে।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানিতে জানুয়ারি থেকে এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল) ও যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানির উৎপাদন ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে।

কুইক রেন্টালে বিনিয়োগের ৪৫০% ক্যাপাসিটি চার্জ!

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শেয়ার বিজ

২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরই দ্রুত বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ছোট ও মাঝারি বেশকিছু রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের লাইসেন্স দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। তিন বছরের জন্য এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হলেও তা চলেছে আট থেকে ১০ বছর। কোনোটি চলেছে আবার ১২ থেকে ১৫ বছর। এসব কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জও নির্ধারণ করা হয় অতি উচ্চ হারে। এতে বিনিয়োগের প্রায় সাড়ে চারগুণ বা ৪৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাপাসিটি চার্জ তুলে নিয়েছে কোনো কোনো কোম্পানি।

শেয়ার বিজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমনই কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্য। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ঘোড়াশালে এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনালের নির্মিত ১৪৫ মেগাওয়াট দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক (গ্যাস ও ডিজেল) বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করে ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট। প্রথমে ডিজেলে ১৮ মাস চললেও পরে তা গ্যাসে উৎপাদন শুরু করে। উৎপাদন শুরুর সময় কুইক রেন্টাল এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি কিলোওয়াটের জন্য প্রতি মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ ধরা হয়েছিল ২১ ডলার। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি মাসে ৩০ লাখ ৪৫ হাজার ডলার ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হতো।

এগ্রিকোর ঘোড়াশাল ১৪৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের জন্য এ হারে বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ পড়ত তিন কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। তিন বছরের জন্য কুইক রেন্টাল এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। আর এগ্রিকো বিনিয়োগ করেছিল ১০ কোটি ডলার বা ৫৬০ কোটি টাকা। এতে তিন বছরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করত ১০ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার ডলার। অর্থাৎ মুনাফাসহ তিন বছরে বিনিয়োগ তুলে নিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল।

যদিও হঠাৎ করে মাঝপথে বাড়ানো হয় চুক্তির মেয়াদ। ১৮ মাস বাকি থাকতেই তা আরও ৩৬ মাসের জন্য নবায়ন করা হয়। আর চুক্তি নবায়নের সময় প্রতি মাসে প্রতি কিলোওয়াটের জন্য ২১ ডলারের ক্যাপাসিটি চার্জ বাড়িয়ে ৩০ ডলার করা হয়। এতে মাসিক ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ফলে সাড়ে চার বছরে এগ্রিকো মোট ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করে ২১ কোটি ১৪ লাখ ১০ হাজার ডলার। অর্থাৎ বিনিয়োগের দ্বিগুণের বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করে নেয় কোম্পানিটি।

এখানেই শেষ নয়; পরে চুক্তির মেয়াদ আরও সাড়ে তিন বছর বাড়ানো হয়। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৮ সালে অবসরে যায়। অর্থাৎ তিন বছরের জন্য লাইসেন্স দেয়া হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চলেছে আট বছর। সব মিলিয়ে এ আট বছরে এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল মোট ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে দুই হাজার ৫০২ কোটি টাকা। অথচ কোম্পানিটির বিনিয়োগ ছিল মাত্র ৫৬০ কোটি টাকা। এ হিসাবে বিনিয়োগের প্রায় সাড়ে চারগুণ বা ৪৫০ শতাংশ অর্থ ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে আদায় করেছে এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল।

শুধু একটি কেন্দ্র দিয়েই নয়; এভাবেই উচ্চ হারে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিনিয়োগের কয়েকগুণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এগ্রিকোর আরও দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এমনই একটি কেন্দ্র হলো এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনালের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৮৫ মেগাওয়াট দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১১ সালের ৬ মার্চ উৎপাদন শুরু করা কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের তিন বছরের জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। প্রায় একই সময়ে ২০১১ সালের ৩১ মে উৎপাদনে আসে এগ্রিকোর ৯৫ মেগাওয়াট আশুগঞ্জ দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটিও তিন বছরের জন্য লাইসেন্স পায়। তবে কয়েক দফা চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির পর মোট আট বছর করে চলে বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি।

দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রেরই প্রতি কিলোওয়াটের জন্য মাসিক ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয় ৩০ ডলার। ফলে তিন বছরের জন্য লাইসেন্স দেয়া হলেও আট বছরে ৮৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রের জন্য পিডিবিকে মোট ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। তবে তুলনামূলক কম চলায় ৯৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রের জন্য মোট ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই কেন্দ্রে এগ্রিকো মোট ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করে দুই হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। যদিও দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রে এগ্রিকোর বিনিয়োগ ছিল প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে বিনিয়োগের সাড়ে চারগুণ বা ৪৫০ শতাংশ অর্থ এগ্রিকো তুলে নিয়েছে এ দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে।

এদিকে ঘোড়াশালে ম্যাক্স পাওয়ার লিমিটেডের ৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসে ২০১১ সালের ২৭ মে। দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক এ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও তিন বছরের জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। তবে পরে কয়েক দফা মেয়াদ বৃদ্ধির পর ১০ বছর চলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জও ধরা হয় প্রতি কিলোওয়াটের জন্য মাসিক ৩০ ডলার। এতে ১০ বছরে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ম্যাক্স পাওয়ার ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করে এক হাজার ৩০৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। যদিও এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ করতে হয়েছিল মাত্র ৩০০ কোটি টাকা।

একই সময়ে আশুগঞ্জে ৫৩ মেগাওয়াট সক্ষমতার দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে ইউনাইটেড পাওয়ার, যা ২০১১ সালের ২২ জুন উৎপাদনে আসে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল ইউনাইটেড পাওয়ার। তিন বছরের জন্য রেন্টাল এ বিদ্যুৎকেন্দ্রেটির লাইসেন্স দেয়া হলেও পরে তা কয়েক দফা বাড়ানো হয়। এতে ২০১৯ সালে এর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর কেন্দ্রটি তিন বছর বন্ধ ছিল। তবে অদৃশ্য হাতের ছোঁয়ায় তিন বছর পর আবারও পাঁচ বছরের জন্য ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার অনুমতি পায় ইউনাইটেড গ্রুপ। ২০২২ সালের শুরুতে অনুমোদন পাওয়ার পর তা আগামী বছর জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।

সূত্রমতে, বন্ধ হওয়ার আগে আট বছরে কেন্দ্রটির জন্য প্রায় ৭৯০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পায় ইউনাইটেড আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানি। মাঝে তিন বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২-২৩ অর্থবছর আরও ৬৩ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পায় কেন্দ্রটি। এতে ৮৫৩ কোটি টাকা বা নির্মাণব্যয়ের প্রায় সাড়ে তিনগুণ ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় হয়ে গেছে। পরের অর্থবছরগুলো মিলিয়ে কেন্দ্রটির জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকায় ঠেকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকার পতনের ২ মাস আগে জ্বালানি তেল নিয়ে বসুন্ধরাকে বিশেষ সুবিধা

০৩ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

বিগত দেড় দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্ধেকের বেশি চলে গেছে বেসরকারি খাতের দখলে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির অনুমতি পেয়েছে বেসরকারি কোম্পানি। এরপর একটি কোম্পানিকে সুবিধা দিতে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল বিক্রির নীতিমালা করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বাজারে সরাসরি জ্বালানি তেল বিক্রির অনুমোদন পায় বসুন্ধরা গ্রুপ।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর আগে ১০ জুন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসি) একটি চিঠি পাঠায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এতে বলা হয়, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে মজুত, পরিবহন ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপাদিত তেল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিক্রির বিষয়ে বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়া হলো।

বিপিসির দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল বিক্রির অনুমতি প্রদানে রাজি ছিল না বিপিসি। তাই শুরু থেকেই তারা এ বিষয়ে নেতিবাচক সুপারিশ করেছে জ্বালানি বিভাগে। সাত বছরে এটি দফায় দফায় পিছিয়েছে। এরপর জ্বালানি বিভাগ অনুমোদন দেওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পর বসুন্ধরাকে চিঠি পাঠানো হয়। এখন নতুন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে বিপিসি।

ভারত হয়ে আসবে নেপালের বিদ্যুৎ, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই

০৩ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারত ও নেপালের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। চুক্তির আওতায় জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের জন্য নেপাল থেকে ভারত হয়ে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে আজ বৃহস্পতিবার ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তি সই হয়।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), নেপালের বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (এনইএ) এবং ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যবসা নিগম লিমিটেডের (এনভিভিএন) প্রতিনিধিরা চুক্তি সই করেন।

দক্ষিণ এশিয়ায় এলপিজির সবচেয়ে বেশি দাম বাংলাদেশে

০৭ অক্টোবর ২০২৪, দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি অনলাইন

অক্টোবর মাসের জন্য দেশের বাজারে প্রতি লিটার এলপি গ্যাসের দাম ১২১ টাকা ৩২ পয়সা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এরমধ্যে কাঁচামাল বিউটেন ও  প্রোপেন আমদানিতে জাহাজ ভাড়া ও প্রিমিয়াম খরচ সাড়ে ১৪ টাকার বেশি। মজুদ ও বোতলজাতে প্রতি কেজিতে খরচ ১৬ টাকার বেশি। বাকিটা মূল্যসংযোজন কর, রিটেইলার, ডিস্ট্রিবিউটরের কমিশন।

দক্ষিণ এশিয়ায় মধ্যে এই জ্বালানিটির সর্বোচ্চ দাম বাংলাদেশে। বিপণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, কাঁচামাল আমদানিতে বাড়তি জাহাজ ভাড়া ও শুল্কই বাড়তি দামের মূল কারণ। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নিচ্ছে সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশের চেয়ে ভারত, নেপাল, ভূটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বাজারগুলোতে কমদামে  এলপিজি বিক্রি হয়। সেসব বাজারে দামের ওঠানামাও কম দেখা যায়। ভারতে প্রতিকেজি এলপি গ্যাসের দাম ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা, পাকিস্তানে ১০৮ টাকা, ভুটানে ৯২ টাকা ৮২ পয়সা, নেপালে ১১২ টাকা ৬৮ পয়সা এবং শ্রীলংকায় ১২০ টাকা ৪ পয়সা।

সামিটের নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তি বাতিল

০৭ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) আজ সোমবার কক্সবাজারের মহেশখালীতে সামিট গ্রুপের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তরের দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তি বাতিল করেছে।

সামিটকে পাঠানো পেট্রোবাংলার এ–সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, চুক্তির কিছু শর্তভঙ্গের দায়ে এমন ব্যবস্থা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পারফরম্যান্স গ্যারান্টির টাকা জমা না দেওয়ার বিষয়ও আছে।

আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি বলবৎ রাখতে পারে বাংলাদেশ

১২ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

দাম নিয়ে উদ্বেগকে এক পাশে রেখে ভারতের আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি বহাল রাখতে পারে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ সরবরাহ করা নিয়ে দুশ্চিন্তা ও সম্ভাব্য আইনি জটিলতার মধ্যেই এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে বিষয়টি সম্পর্কে সরাসরি অবগত থাকা দুটি সূত্র।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দেশের স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা করে বিভিন্ন চুক্তি করেছে কি না, বিশেষ করে এসব চুক্তিতে স্বচ্ছতার অভাব আছে কি না, তা নিরূপণে এক বিশেষ আইনের অধীন একটি প্যানেল গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এসব চুক্তির একটি ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে করা ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডে আদানির ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মূলত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

পিটার হাসের নেতৃত্বে পেট্রোবাংলায় এক্সিলারেটের প্রতিনিধি দল

১৭ অক্টোবর ২০২৪, বণিক বার্তা

বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহ দেখিয়েছে এক্সিলারেট এনার্জি। এ বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে গতকাল পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারসহ সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে মার্কিন কোম্পানিটির একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে। প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া পিটার ডি হাস, যাকে সম্প্রতি এক্সিলারেট এনার্জির স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা করা হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশনে টার্মিনালের সংখ্যা আরো বাড়াতে চায় এক্সিলারেট। আর পেট্রোবাংলা চায় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে মহেশখালীতে এলএনজির ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করতে। তাই অন্যান্য কোম্পানির মতো এক্সিলারেট এনার্জিকেও সেখানে অংশ নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহের জন্য পেট্রোবাংলার মাস্টার সেলস পারচেজ এগ্রিমেন্টে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যও আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া অফশোর বিডিং রাউন্ডে কীভাবে এক্সিলারেট সহযোগিতা করতে পারে, সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয় প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন গ্রামের মানুষ

১৮ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

দুই দফা দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছেন দেশের সব গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে নিয়োজিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সমিতির ২০ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন সমিতির কর্মচারীরা। এতে জেলায় জেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিলেন গ্রামের মানুষ। সারা দেশেও বিদ্যুৎ বন্ধের শঙ্কা তৈরি হয়।

আরইবির অধীন কাজ করে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। সমিতির কর্মকর্তা–কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। দেশের মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের ৫৫ শতাংশ আরইবির অধীন।

আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নসহ চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে মুক্তিকামী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারীর ব্যানারে এ আন্দোলন হচ্ছে।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়েছে, ২০ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাঁদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণ, চাকরি অবসায়নের আদেশ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তাঁরা। না হলে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করতে বাধ্য হবেন তাঁরা।

পল্লী বিদ্যুতের ৬ কর্মকর্তা তিন দিনের রিমান্ডে

১৯ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগ এনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। ঢাকার খিলক্ষেত থানায় করা মামলায় সমিতির ছয় কর্মকর্তার তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বাসস জানায়, গতকাল শুক্রবার ছয় কর্মকর্তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক আশিকুর রহমান দেওয়ান তাঁদের ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আরইবির শোষণে জর্জরিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো!

শেয়ার বিজ, ২০ অক্টোবর ২০২৪

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। ৬১টি জেলার ৪৬২টি উপজেলার ৮৫ হাজার ৩৬৮টি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব এ পবিসগুলোর। আর এসব সমিতিকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। যদিও প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সেবা প্রদানকারী এসব পবিস নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরইবির শোষণে জর্জরিত।

নিয়ন্ত্রণের নামে পবিসগুলোর সব ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম কুক্ষিগত করে রেখেছে আরইবি। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার সঞ্চালন লাইন থেকে শুরু করে গ্রাহকের ঘরের মিটার পর্যন্ত সবই নিজেই কিনে আরইবি। যদিও এগুলোর দাম পরিশোধ করতে হয় পবিসগুলোকে। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আরইবি কিনে থাকে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি। আর নিম্নমানের এসব যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম দিয়ে পরিচালিত বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার দায়িত্ব পবিসগুলোর। তবে প্রতিবাদ করতে গেলেই মিলে বদলি, তিরস্কার বা শাস্তি।

তবে এখানেই শেষ নয়। পবিসগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করে নিয়ন্ত্রক আরইবি। এর মধ্যে অন্যতম হলো সরকারের অনুদানকে ঋণ হিসাবে দিয়ে সুদ আদায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পবিসগুলোর অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে নগদ তহবিল। তবে আরইবি সেই তহবিলকে ৩ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়েছে পবিসগুলোকে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গৃহীত সহজ শর্তের ঋণের বিপরীতেও ৩ শতাংশ হারেই সুদ পবিসগুলো থেকে আদায় করছে আরইবি। এর মাধ্যমে বড় অঙ্কের মুনাফা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

সূত্রমতে, বর্তমানে ৮০টি পবিসের মধ্যে ১২টি মুনাফায় রয়েছে। আর একটি পবিস ব্রেক ইভেনে (আয়-ব্যয় সমান) পরিচালিত হচ্ছে। বাকি ৬৭টি পবিস লোকসানে থাকায় তাদের পক্ষে সুদ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ক্রস সাবসিডি থেকে সুদের অংশ কেটে রাখছে আরইবি। এতে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি না পেয়ে লোকসানে থাকা পবিসগুলো আরও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আর সুদের অর্থ ব্যাংকে জমা রেখে বছরের পর বছর এফডিআর বাড়িয়ে চলেছে আরইবি। আরইবির ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই অর্থবছর সংস্থাটির আয় ছিল এক হাজার ৭০৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে পবিসগুলোকে দেয়া ঋণের সুদ থেকেই আরইবি আয় করে এক হাজার ৩৭১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। যদিও আরইবি তার বিদেশি ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করেছে মাত্র ১২০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ শুধু পবিসগুলো থেকে আদায়কৃত সুদেই আরইবি মুনাফা করেছে এক হাজার ২৫০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

এদিকে ব্যাংকে আরইবির এফডিআর রয়েছে তিন হাজার ৪৪০ কোটি ৯ লাখ টাকা। এর সুদ থেকে আরইবি আরও আয় করেছে ২৮৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ সুদ বাবদই আরইবির মুনাফা হয়েছে এক হাজার ৫৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে আরইবির কর-পরবর্তী মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এছাড়া শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্যও এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা সুদ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে গত অর্থবছর আরইবির মুনাফা আরও বাড়বে।

অন্যদিকে নিয়মিত বেতন-ভাতার বাইরে আরইবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানাভাবে বোনাস বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকেন। সংস্থাটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আরইবির বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় ছিল ৮০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। তবে কর্মীদের ওয়েলফেয়ার খাতে ব্যয় ছিল ৭৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, ওয়েলফেয়ার সম্মানী ও রিওয়ার্ড প্রায় এক কোটি টাকা, এপিএ বোনাস পাঁচ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং কর্মী নিয়োগ ব্যয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আরইবি যখন মুনাফায় ভাসছে তখন পবিসগুলোর আর্থিক অবস্থা বেশ শোচনীয়। মূলত বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের ফর্মুলা অনুযায়ী, মুনাফায় থাকা পবিসগুলো থেকে উদ্বৃত্ত অর্থ নিয়ে লোকসানে থাকা পবিসগুলোকে ভর্তুকি দেয়া হয়, যা ক্রস সাবসিডি হিসেবে বিবেচিত। তবে এ ক্রস সাবসিডির পুরোটা লোকসানি পবিসগুলো পায় না। সুদের অংশ কেটে রেখে বাকি অর্থ দেয়া হয়। ফলে লোকসানি পবিসগুলোর ঘাটতি বেড়েই চলেছে। পবিসগুলোর শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বহু বছরের শোষণ ও বঞ্চনার কারণে গত জানুয়ারিতে দুই দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে প্রায় ৪৫ হাজার কর্মী। তাদের দাবি মূলত দুটি। এগুলো হলো- পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূত করে অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিত করা। দাবি আদায়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল ও গ্রাহক সেবা চালু রেখে সারা দেশে একযোগে গত ৫ মে থেকে টানা ৫ দিন কর্মবিরতির ফলে বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়।

অতঃপর বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে দাবি পেশ করা হয়। এতে সন্তোষজনক ফলাফল না আসায় পুনরায় ১ জুলাই থেকে টানা ১০ দিন কর্মবিরতির ফলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব, তিনজন অতিরিক্ত সচিব, আরইবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্মের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যদিও এখন পর্যন্ত এ দুই দফা দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। বরং দাবি বিবেচনায় গঠিত কমিটি বিলুপ্ত করাসহ নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে আরইবির শীর্ষ কর্তারা। মূলত পবিসগুলোকে ইচ্ছামতো শোষণ ও সুদ আদায় বন্ধ হয়ে যাবে বিধায় তারা একীভূতকরণের বিপক্ষে। বরং আন্দোলনে থাকা পবিসগুলোর শীর্ষ ২০ জনকে গত সপ্তাহে একসঙ্গে কোনো ধরনের শোকজ ছাড়াই সরাসরি চাকরি থেকে অপসারণ করে আরইবি।

এর প্রতিবাদে গত ১৭ অক্টোবর ৬০টি পবিসে সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানানো হয়। যদিও এর পরিপ্রেক্ষিতে

পবিসের কর্মীদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এতে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এক সংবাদ সম্মেলনে উল্লিখিত দুটিসহ মোট চার দফা দাবি তুলে ধরেন। অন্য দুটি দাবি হলো- অবিলম্বে গ্রেপ্তার কর্মকর্তাদের মুক্তি দিয়ে তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়া এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর থেকে আরইবি মোট ২৪ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় ঢাকা-১ পবিসের জুনিয়র প্রকৌশলী তানজিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা (বিদ্যুৎ বন্ধের) জন্য দুঃখিত, যেটি আসলে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কর্মকর্তাদের বরখাস্ত ও গ্রেপ্তারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল।’ তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদন্ত, পবিসে আর্থিক শোষণ বন্ধ, বোর্ডের হয়রানি বন্ধ এবং তাদের ব্যর্থতার দায়ভার পবিস এবং অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার সংস্কৃতি বন্ধের দাবিতে তারা এই বছরের জানুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু করেছেন।

ওই সময় বোর্ড দুই সহকারী মহাব্যবস্থাপককে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং কয়েকজনকে ছেড়ে দেয়। ‘আমরা একটি চলমান প্রতিবাদে ছিলাম। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত না করে দুই দফায় কমপক্ষে ১৫ দিন ধরে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আগে কোনো নোটিশ দেয়া ছাড়াই আমাদের ২৪ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলো’, তিনি যোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে; কারণ তারা বোর্ডের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। তারা পদ্ধতিগত সংস্কার এবং শহর ও গ্রামীণ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে বৈষম্য কমানোর দাবি জানিয়েছিলেন।’

যাতায়াত ব্যবস্থা ও দুর্ঘটনা

চট্টগ্রামে শিপ ইয়ার্ডে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ১২

০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দেশ রূপান্তর

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এসএন কর্পোরেশন নামে একটি শিপ ইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১২ জন দগ্ধ হয়েছেন। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের তেঁতুলতলা এলাকার সমুদ্র উপকূলে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট।

বিস্ফোরণে আহতরা হলেন— জাহাঙ্গীর (৪৮), আহমাদুল্লাহ (৩৮), কাসেম (৩৯), সাগর (২০), আলামিন (২৩), কারিমুল (২১), হাবিব (৩৬), বরকত (২৩), আনোয়ার (৫০), রফিকুল (৩০), রফিক (৩০), সাইফুল (৩০)।

বগুড়ায় রাইস ব্রান অয়েল কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত ৪

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বগুড়ার শেরপুরে মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের একটি রাইস ব্রান অয়েল ইউনিটে তেলের ট্যাংক বিস্ফোরণে অন্তত চার জন টেকনিশিয়ান নিহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

বগুড়া শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দুপুরে শেরপুর মজুমদার প্রোডাক্ট লিমিটেডের রাইস ব্রান তেলের একটি ট্যাংকে মেরামতের কাজ করছিলেন চার জন টেকনিশিয়ান। এ সময় হঠাৎ ট্যাংকটি বিস্ফোরিত হলে ওই চারজন মাটিতে পড়ে যান। পরে তাদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে মেরামত করার সময়ে ওয়েল্ডিংয়ের আগুনের ফুলকি তেলের ট্যাংকিতে ঢুকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন—মো. ইমরান (৩২), নীলফামারীর সৈয়দপুরের মোহাম্মদ সাঈদ (৩৮), রুবেল (৩১) ও মো. মনির (২৮)।

এক প্রতিষ্ঠানের জাহাজভাঙা কারখানায় ১০ বছরে ১৬ জনের মৃত্যু

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় এসএন করপোরেশন নামের জাহাজভাঙা কারখানায় আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানটির তিনটি জাহাজভাঙা কারখানায় অন্তত ১৬ জন মারা গেছেন। বারবার দুর্ঘটনার পরও শ্রমিক সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গ্রিন সনদ প্রাপ্তির পরও ইয়ার্ডটিতে শ্রমিকদের স্বার্থ উপেক্ষিত ছিল—এমন অভিযোগ পরিবেশবাদীদের।

৭ সেপ্টেম্বর একটি তেলের ট্যাংকার (জাহাজ) কাটার সময় এসএন করপোরেশনে আবার দুর্ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ছয়জন মারা গেছেন। আরও ছয়জন দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুর্ঘটনার সময় যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি ছিল বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারপরও এ ঘটনায় থানায় শুধু একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। সীতাকুণ্ড থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, কেউ অভিযোগ করেনি। শুধু একটা ভুক্তভোগী পরিবার অপমৃত্যু মামলা করেছে।

এসএন করপোরেশনের তিনটি জাহাজভাঙা কারখানা রয়েছে। ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী এ ইয়ার্ডগুলোর মালিক। তিন ইয়ার্ডের অবস্থান সীতাকুণ্ডের তেঁতুলতলা, কদমরসুল ও মাদামবিবিরহাট এলাকায়। এর আগে ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এসএন করপোরেশনের তিনটি ইয়ার্ডে পৃথক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ৩০ জন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে তিনজনের মৃত্যু হয়।

২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সীতাকুণ্ডের ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৪৭ জন। বর্তমানে সীতাকুণ্ড উপকূলে ৩০টির মতো ইয়ার্ড চালু রয়েছে। এর মধ্যে চারটি গ্রিন ইয়ার্ডের মর্যাদা পেয়েছে। এসএন ইয়ার্ডের তিনটি কারখানার মধ্যে তেঁতুলতলার কারখানাটি গত বছর সবুজ শ্রেণি বা গ্রিন ইয়ার্ডের মর্যাদা পায়।

জাহাজ মেয়াদোত্তীর্ণ, ছিল না নিরাপত্তা ব্যবস্থাও

০১ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বন্দরের ডলফিন অয়েল জেটি এলাকায় অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ডেক ক্যাডেটসহ তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনার পর গতকাল সোমবার গঠন করা হয়েছে সাত ও দুই সদস্যের দুটি তদন্ত কমিটি। তবে ভয়াবহ এ ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলার জ্যোতি নামে এই ট্যাঙ্কারটি ৩৮ বছরের পুরোনো। এটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আরও পাঁচ বছর আগে। ছিল না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। যে স্থানে এই অয়েল ট্যাঙ্কারটি তেল খালাস করছিল, সেটি চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা। এখানে রয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে জ্বালানি তেল নেওয়ার পাইপলাইনও। যদি কোনো কারণে জাহাজে থাকা প্রায় ১২ হাজার টন তেল এবং পাইপলাইনে আগুন ধরত তাহলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ত বন্দর।

ফের দুই জাহাজে আগুন, ৩১ ক্রুর সাগরে ঝাঁপ

১৪ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসবাহী দুটি জাহাজে আগুন লাগার ১২ ঘণ্টা পর তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। জাহাজে আগুন লাগার পর ৩১ ক্রু প্রাণে বাঁচতে সাগরে ঝাঁপ দেন। পরে পাশে থাকা একটি টাগবোট তাদের উদ্ধার করে। গত শনিবার মধ্যরাতে কুতুবদিয়া উপকূলের পশ্চিমে সাগরের বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজ সোফিয়া ও মাদার ভেসেল ক্যাপ্টেন নিকোলাস নামে দুটি জাহাজে এ আগুনের ঘটনা ঘটে। ঘটনা তদন্তে গতকাল রোববার ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।  

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এ নিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় জ্বালানিবাহী চারটি জাহাজে আগুন লাগল। এসব ঘটনায় চারজন প্রাণ হারালেও সাগরে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বাঁচেন ৭৮ জন।

বাসে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ৩

১৫ অক্টোবর ২০২৪, কালবেলা

রোববার রাত দেড়টা। ফিলিং স্টেশনে আসে মেঘনা ক্ল্যাসিক পরিবহনের একটি বাস। যাত্রীবিহীন গাড়িতে গ্যাস নেওয়া শুরু হয়। তখন সিরিয়ালে ছিলেন কয়েকজন সিএনজি অটোরিকশার চালক। গ্যাস নেওয়ার মধ্যে বাসটি হঠাৎই কেঁপে ওঠে। দ্রুতই গ্যাসের নজেল খুলে দেন স্টেশন কর্মী। তখনই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় বাসের গ্যাস সিলিন্ডার। এতে অটোরিকশার এক চালকের মাথার খুলি উড়ে যায়, পড়ে থাকে তার নিথর দেহ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে আরও কয়েকজনের হাত-পা।

গত রোববার রাত দেড়টায় লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রিন লাইফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে বাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এমন বীভৎস দৃশ্য দেখা যায়।

এ ঘটনায় অন্তত তিনজন নিহত ও ২০ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

সেপ্টেম্বরে ৫৪৭ দুর্ঘটনার ৪৯৩টিই সড়কে, সারা দেশে নিহত ৫৫৪

অক্টোবর ১৭, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

সড়ক, রেল ও নৌপথে গত সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে মোট দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৪৭টি। এর ভেতর ৪৯৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে সড়কে। সবমিলিয়ে এসব দুর্ঘটনায় ৫৫৪ জন নিহত ও এক হাজার ৩৮ জন আহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত দুর্ঘটনার খবরের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংগঠনের সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল।

সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে রেলপথে ৪০টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত ও চার জন আহত হয়েছেন। আর ১৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও ৫৬ জন আহত হওয়ার পাশাপাশি নিখোঁজ আছেন ৪৭ জন।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর ভেতর এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও এতে নিহতের হার সবচেয়ে বেশি। এ সময়ে ১৯২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৫ জন নিহত ও ১৪৯ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৮দশমিক ৯৪ শতাংশ, নিহতের ৩৯ দশমিক ১৫ শতাংশ ও আহতের ১৫ দশমিক।

সড়কে নেই কোনো শৃঙ্খলা দাপট অবৈধ যানের

২২ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

সরকারি হিসাবে ২০২৩ সালের আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩৭৬ জন। পরের মাসে প্রাণ যায় ৪১০ জনের। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সড়কে শৃঙ্খলা না থাকলেও, সরকারি হিসাবে ওই মাসে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৩১ জন। সেপ্টেম্বরে প্রাণহানির সংখ্যা ৩৬১।

যদিও বেসরকারি সংগঠনগুলোর হিসাবে চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মৃত্যুর সংখ্যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে সেপ্টেম্বর ৪২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুয়ায়ী আগস্টে নিহত হয়েছেন ৪৭৬; যা সরকারি হিসাবের দ্বিগুণের বেশি।

পরিবহন খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতির সুযোগে সড়কে যে বিশৃঙ্খলা, আগস্ট-সেপ্টেম্বরের সরকারি পরিসংখ্যানে হতাহতের অবাস্তব সংখ্যা এরই প্রমাণ। সরকারি সংস্থাগুলো কাজ না করায় প্রকৃত তথ্যই আসছে না।

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) হতাহতের পরিসংখ্যান করে। বিশৃঙ্খলা থাকলেও হতাহত কমলো কীভাবে– এ প্রশ্নের জবাব দেননি সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, খতিয়ে দেখা হবে।

পররাষ্ট্র বিষয়ক

বাংলাদেশে ‘প্রভাবশালীরা’ নাকি মূল্য ধরে দিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতে! নতুন চক্র? সন্ধানে বিএসএফ

২১ অগস্ট ২০২৪, আনন্দবাজার অনলাইন

বাংলাদেশের মেহেরপুর উপজেলার কাশারীবাজার থেকে এক সাংসদের ফোন এসেছিল সীমান্তবর্তী কাথুলিবাজার এলাকায় একটি বাড়িতে। দেশের পরিস্থিতি অশান্ত। তাই স্ত্রী এবং চার সন্তানকে নিয়ে কিছু দিনের জন্য দেশ ছেড়ে ভারতে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ চান তিনি। ওই ফোনের কিছু ক্ষণ পরে কাথুলিবাজার থেকে ফোন আসে নদিয়ার করিমপুর-২ ব্লকের রাউতবাটি গ্রামে। মিনিট পাঁচেকের কথোপকথন। যিনি আশ্রয় চাইছেন, তাঁর ‘প্রোফাইল’, রাজনৈতিক ঝুঁকি, আর্থিক সঙ্গতি ইত্যাদি সংক্ষেপে জেনে নিয়ে চূড়ান্ত হয় রফা।

জানিয়ে দেওয়া হয়, ভারতে আসতে সাংসদের পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু খরচ পড়বে ভারতীয় মুদ্রায় এক লক্ষ করে টাকা। তা ছাড়া যত দিন ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ থাকবেন, তত দিন সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নজর এড়িয়ে থাকার জন্য দিতে হবে মাসিক ১০ লক্ষ টাকা! খানিক দর কষাকষির পরে ঠিক হয় সীমান্ত পার করাতে দিতে হবে ১ লক্ষ নয়, মাথাপিছু ৭০ হাজার টাকা। আর আশ্রয়ের জন্য মাসিক ৫ লক্ষ। রাজি হয়ে যান সাংসদ। গত সোমবার রাতে মেহেরপুর সদর থেকে পরিবারকে নিয়ে রওনা দেন সাংসদ। বাংলাদেশের গ্রামে এক দিন অপেক্ষার পর গাঁটের কড়ি গুনে দিয়ে কাথুলি এবং কুলবেড়িয়া হয়ে ‘ফেন্সিংহীন’ বাংলার একটি গ্রামে পৌঁছে গিয়েছেন ওই সাংসদ ও তাঁর পরিবার। বাংলাদেশের মইনুদ্দিন (নাম পরিবর্তিত) এবং পশ্চিমবঙ্গের দেবাংশু (নাম পরিবর্তিত) মিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘অপারেশন’ সফল করেছেন।

বাংলাদেশের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এমন অবৈধ ভাবেই নাকি ভারতে আসছেন বাংলাদেশের ‘প্রভাবশালীরা’। তাঁদের নিরাপদে পৌঁছে দিতে কাজ করছে একাধিক চক্র। কেউ নিচ্ছে মাথাপিছু লক্ষ টাকা, কেউ ৫০ হাজার। বস্তুত, এই চক্র নিয়ে অবহিত বিএসএফ-ও। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছে তারা। চলছে আরও সুলুকসন্ধান।

পড়শি দেশের অশান্ত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তৈরি হয়েছে অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরোনোর নতুন ‘সিন্ডিকেট’। পারাপার এবং আশ্রয়ের জন্য কেউ খরচ করছেন ২ হাজার টাকা (তাঁরা বেশি দিন থাকছেন না), কাউকে দিতে হচ্ছে ২ লক্ষ টাকা (বেশি দিন থাকার জন্য)। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আর্থিক সঙ্গতি এবং সামাজিক পরিচিতি বুঝেই টাকা চাওয়া এবং নেওয়া হচ্ছে। কাথুলিবাজার এলাকায় ব্যবসা করেন শেখ নাজিম (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এ সব এলাকা হাতের তালুর মতো চিনি। কোথায় কাঁটাতার আছে, কোথায় নেই, সব মুখস্থ। কোথায় পাচারকারী কাঁটাতার কেটে রেখেছে, সেটাও জানি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই বর্ষায় ভৈরব নদী টইটম্বুর। নদী পুরো খোলা। এ দেশ থেকে যারা ও দেশে (ভারতে) যেতে চাইছে, পরিচিত আর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শুধু সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছি আমরা। বাকি দায়িত্ব ওদের।’’

পারাপার করাতে কে কত নিচ্ছেন? ব্যবসায়ীর স্বীকারোক্তি, ‘‘ঝুঁকি দু’পক্ষেরই রয়েছে। তাই টাকার ভাগাভাগিও সমান সমান।’’ এ পারের দেবাংশু বললেন, ‘‘কাঁটাতার পার হয়ে আমাদের চাষের জমি আছে। রোজ যাতায়াত করি। ও দিক থেকে বেশ কয়েক জন পরিচিত, আত্মীয়স্বজনেরা ভারতে আসার জন্য মোটা টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা শুধু পার করে এখানে নিয়ে এসেছি। রাখার দায়িত্ব আমাদের নয়। সেটা দেখে অন্য লোক।’’

বিএসএফ, পুলিশের নজর এড়াচ্ছেন কী ভাবে? দেবাংশুর জবাব, ‘‘বিএসএফ এখন খুব সজাগ। সেটা ঠিক। তবে গ্রামে আমাদের সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক। তাই কাউকে আশ্রয় দিয়েছি জানলে কেউ মুখ খুলবে না।’’ কিন্তু কাজটা তো অনৈতিক? যুবক এ বার দার্শনিক, ‘‘ও দেশ থেকে যারা আসছে, তারা তো সত্যিই বিপদে পড়েছে। বিপদে মানুষকে আশ্রয় দেওয়া তো মানুষেরই কর্তব্য!’’

শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের ‘ঘনিষ্ঠ’ বা সমর্থকেরা এখন বাংলাদেশের আন্দোলনকারীদের নজরে। হাসিনার আমলের অনেক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় লুক-আউট নোটিস দিয়েছে সে দেশের প্রশাসন। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, এমন মানুষজনের ক্ষেত্রেও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশ ছাড়ার অনুমতি দিচ্ছে না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে সংখ্যালঘুদের দেশ ছাড়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। তার পরেও অনেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই যে কোনও ভাবে দেশ ছেড়ে আপাতত এ পারে ঠাঁই নিতে চাইছেন। সেখান থেকেই এই ‘দালাল নির্ভরতা’।

তবে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামে এই ‘হঠাৎ অতিথিদের’ নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। ‘নতুন পন্থায়’ অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে বিএসএফ-ও উদ্বিগ্ন। সিন্ডিকেট চক্রের উপস্থিতি টের পেয়ে টহলদারি বেড়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায়। বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি একে আর্য বলেন, ‘‘পড়শি দেশের অশান্ত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় টহল কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সঙ্গে জনসংযোগ বৃদ্ধি করেছি আমরা। অনুপ্রবেশের সব রকম খবর রাখার চেষ্টায় বিএসএফ। বেশ কয়েকটি অবৈধ অনুপ্রবেশ আটকেও দিয়েছেন জওয়ানেরা। গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে সীমান্ত এলাকায় এই মুহূর্তে কোনও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির খবর নেই।’’ অবৈধ অনুপ্রবেশ আটকাতে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি) কতটা সক্রিয়? বিজিবি-র মহা-উপ পরিচালক (যোগাযোগ) কর্নেল শফিউল আলম পারভেজ আনন্দবাজার অনলাইনকে ঢাকা থেকে বলেন, ‘‘যাঁরা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনি এবং অন্যায় কাজ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তেরা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। বাংলাদেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ও দেশে যাতে কোনও ভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় না পায়, তার জন্য আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাব।’’

কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোরীর মৃত্যু

০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে স্বর্ণা দাস (১৪) নামের এক কিশোরী মারা গেছে। গতকাল রোববার রাতে উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে তার লাশ বিএসএফ নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

আজ সোমবার সন্ধ্যার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৬ ব্যাটালিয়নের একটি দল স্বর্ণাদের বাড়িতে যায়। এ সময় খবরটি এলাকায় জানাজানি হয়।

নিহত স্বর্ণা জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের বাসিন্দা পরেন্দ্র দাসের মেয়ে। সে স্থানীয় নিরোদ বিহারী উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত।

স্বর্ণা দাশ হত্যার কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতকে বাংলাদেশের চিঠি

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ১৩ বছরের কিশোরী স্বর্ণা দাশ নিহতের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ এ ধরনের জঘন্য কাজের পুনরাবৃত্তি রোধ এবং সব সীমান্ত হত্যার তদন্ত পরিচালনা ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো এক প্রতিবাদপত্রে এসব কথা বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিএসএফের গুলিতে স্বর্ণা দাশ প্রাণ হারান। ১ সেপ্টেম্বর রাতে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্ত এলাকায় ঘটনাটি ঘটলেও ২ সেপ্টেম্বর রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়।

ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোর নিহত, আহত ২

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি এক কিশোর নিহত হয়েছে। গতকাল রোববার গভীর রাতে উপজেলার ধনতলা সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কিশোরের নাম জয়ন্ত কুমার সিংহ (১৫)। সে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ফকিরভিটা বেলপুকুর গ্রামের বাসিন্দা মহাদেব কুমার সিংহের ছেলে। এ ঘটনায় মহাদেব কুমার সিংহ ও নিটালডোবা গ্রামের দরবার আলী নামের আরেক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

জয়পুরহাট সীমান্তে বিজিবির বাধার মুখে কাঁটাতারের বেড়া দিতে পারেনি বিএসএফ

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের উচনা ঘোনাপাড়া সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বাধার মুখে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কাঁটাতারের বেড়া দিতে পারেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিজিবির হাটখোলা ক্যাম্পের আওতাধীন ঘোনাপাড়া সীমান্তের ২৮১ নম্বর পিলারের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। তবে বিজিবি বলছে, আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি শান্ত আছে।

ঘোনাপাড়া গ্রামের লোকজনের ভাষ্য, গ্রামের ১০০ গজের মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত। তাঁরা শান্তিতে গ্রামে বসবাস করে আসছেন। হঠাৎ করেই গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মূল ২৮১ নম্বর পিলারের অধীন ৩৭ ও ৩৮ নম্বর সাবপিলারের কাছে ভারতের ৫০ গজ ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া দিতে শুরু করে বিএসএফ। এ সময় বিজিবির হাটখোলা ক্যাম্পের সদস্যরা এসে বিএসএফ সদস্যদের বাধা দেন। বাধার মুখে বিএসএফ সদস্যরা ফিরে যান। এ ঘটনার পর তাঁরা আতঙ্কে আছেন।

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করার হুমকি অমিত শাহর

২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে বিজেপি সরকার গড়তে পারলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে গত শুক্রবার ঝাড়খন্ডের সাহেবগঞ্জ জেলায় ‘পরিবর্তন যাত্রা’র উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে দেওয়া ভাষণে অমিত শাহ এই হুমকি দেন।

জেলার সাঁওতাল পরগনায় আয়োজিত সমাবেশে বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, এই ‘পরিবর্তন যাত্রা’ আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যের প্রতিটি গ্রামে গিয়ে পরিবর্তনের বার্তা দেবে।

মোংলা বন্দর দ্রুত সম্প্রসারণ করতে চায় ভারত

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ ও ব্যস্ততম মোংলা বন্দর দ্রুত সম্প্রসারণ করতে চায় ভারত। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শততম দিন উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এই কথা বলেছেন দেশটির বন্দর, শিপিং ও নৌপথমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল। এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মিন্ট এই খবর জানিয়েছে।

ইরানের চাবাহার ও মিয়ানমারের সিতওয়েতে বন্দর সুবিধা তৈরি করেছে ভারত। এবার বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় দুটি বন্দর তৈরি করতে যাচ্ছে দেশটি। ওই অনুষ্ঠানে সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেন, বিশ্ব সামুদ্রিক খাতে নিজেদের উপস্থিতি আরও জোরদার করতে চায় ভারত। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় দুটি অতিরিক্ত বন্দর তৈরি করে এই প্রতিযোগিতায় নিজেকে আরও শক্তিশালী করবে দেশটি।

এ সময় তিনি জানান, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ ও ব্যস্ততম মোংলা বন্দর সম্প্রসারণের কাজটি করবে মন্ত্রণালয়ের অধীনে সাগরমালা ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন একটি সহযোগী সংস্থা ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড (আইপিজিএল)।

অ্যাকসিলারেট এনার্জির উপদেষ্টা হলেন পিটার হাস

০১ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানির মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি অ্যাকসিলারেট এনার্জির স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা পদে যোগ দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। এর আগে তিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের মার্চ থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেন এই পেশাদার কূটনৈতিক।

নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পিটার হাস যোগ দেওয়ার খবরটি জানিয়েছে অ্যাকসিলারেট এনার্জি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিস থেকে অবসরে যান পিটার হাস। বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে সমুদ্রে ভাসমান একটি টার্মিনাল আছে অ্যাকসিলারেট এনার্জির। এর বাইরে আরও একটি টার্মিনাল নির্মাণের কথা রয়েছে তাদের। এ ছাড়া ২০২৬ সাল থেকে বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহে একটি চুক্তি করেছে অ্যাকসিলারেট।

কুমিল্লা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবক নিহত

০৮ অক্টোবর ২০২৪, যুগান্তর

কুমিল্লা সদর দক্ষিণের পাহাড়পুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কামাল হোসেন (৩৩) এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছে।

সোমবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কামাল হোসেন জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার জোলাই কুড়িয়াপাড়া গ্রামের ইদু মিয়ার ছেলে। সে বিভিন্ন স্থানে পিঁপড়ার বাসা ভেঙে ডিম বিক্রি করত বলে জানায় স্থানীয়রা।

নিহতের বড় ভাই হিরন মিয়া জানায়, সোমবার রাত ৭টার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা দক্ষিণ ইউনিয়নের যশপুর বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়পুর সীমান্তে কামাল হোসেনকে ভারতের বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে। পরে বিএসএফ ভারতীয় একটি এম্বুলেন্সে কামালের মৃতদেহ তুলে নিয়ে যায়।

গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ পাচ্ছে জাপান

০৭ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো

পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘গভীর সমুদ্রবন্দর চীন না ভারত করবে, এটা নিয়ে টানাপোড়েন ছিল। তবে জাপান আমাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়, তাই জাপানই গভীর সমুদ্রবন্দরে অর্থায়ন করবে। আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছি। জাপান অর্থ দেবে। জাপানের অর্থায়নের প্রকল্প সময়মতো শেষ হয়। প্রকল্পের অর্থ বেঁচে গেলে সেই অর্থ অন্য প্রকল্পে দিয়ে দেয়।’

আজ সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ তথা ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট (২য় সংশোধিত) ’ শীর্ষক এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি ৬২ লাখ ও প্রকল্পের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে ২ হাজার ৮৬৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রকল্প ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে ১৭ হাজার ৯৬৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

সীমান্তে আবার বিএসএফের গুলি, বাংলাদেশি যুবক নিহত

২৫ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া  সীমান্তে  ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। পরে তার মরদেহ নিয়ে গেছেন বিএসএফ সদস্যরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের মুন্সাপাড়া বিজিবি ক্যাম্প দীগলবাঘ সীমান্তে এলাকায় ১১৩৯/৯ এস পিলারের কাছে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত রেজাউল করিম (২৬) শেরপুর নারায়নপুর গ্রামের আব্দু সাত্তারের ছেলে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যার পর সীমান্তে বিকট গুলির আওয়াজ শোনা যায়। এর আগে রেজাউল করিম স্বল্পমূল্যে ওষুধ আনার জন্য ভারতে প্রবেশ করেন। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলি করে।

 

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •