বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং জাতিগত সমস্যা : পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিপ্রেক্ষিত

পুন: প্রকাশ

বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং জাতিগত সমস্যা : পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিপ্রেক্ষিত

বাংলাদেশের জনগণ সামরিক-বেসমারিক, গণতান্ত্রিক-অগণতান্ত্রিক ইত্যাদি বহু ধরণের শাসন ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করেছে। এই বিভিন্ন ধরণের শাসন ব্যবস্থায় নাম বা খোলসের কিছু ভিন্নতা দেখা গেলেও মৌলিক নীতিতে ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থেকেছে। অন্যান্য আরও অনেক দিকের মত পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সংখ্যালঘু জাতিসত্তা সম্পর্কিত সরকারি নীতিতেও এর সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায়। এই লেখাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সম্পর্ক ও সমস্যার ঐতিহাসিক বিকাশধারা এবং এ সম্পর্কে শাসকশ্রেণীর বক্তব্যের বিচার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। লেখাটি ১৯৯২ সালে প্রথম প্রকাশিত হলেও এটি নেয়া হয়েছে বদরুদ্দীন উমর সম্পাদিত পাবর্ত্য চট্রগ্রাম নিপীড়ন ও সংগ্রাম (সংস্কৃতি প্রকাশনী, ১৯৯৭) শীর্ষক সংকলন থেকে। লিখেছেন আনু মুহাম্মদ। ‍বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে সর্বজনকথার পাঠকের জন্য লেখাটি পুন:প্রকাশ করা হলো।

বাংলাদেশের জনগণ অনেক রকম শাসনপদ্ধতি দেখেছেন, শাসকশ্রেণীর মধ্যেই বহুরকম রদবদল হয়েছে। অভূতপূর্ব জনপ্রিয় নেতার অধীনে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার এবং একদলীয় সরকার, জনপ্রিয় সামরিক শাসকের অধীনে সামরিক শাসন, নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার, জনধিকৃত সামরিক শাসনের অধীনে সামরিক শাসন ও ভোটারবিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত সরকার, স্বৈরতন্ত্রবিরোধী দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একাধিকবার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ইত্যাদি। এত ধরনের সরকার ও শাসনপদ্ধতি সম্পর্কে এত কম সময়ে, খুব কম দেশের জনগণেরই অভিজ্ঞতা হয়েছে। জনগণ সম্ভবত এ শিক্ষা লাভ করেছেন যে, শুধুমাত্র সরকার পদ্ধতি ও শাসক পরিবর্তনেই মৌলিক নীতির কোন পরিবর্তন হয় না। বস্তুত স্বাধীনতার পর থেকে এদেশে বুর্জোয়াশ্রেণী যেভাবে সংহত ও বিকশিত হয়েছে তাতে শাসনপ্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু তাতে শাসকশ্রেণীর ধারাবাহিকতা ও মৌলিক ঐক্য বরঞ্চ আরো দৃঢ়তা লাভ করেছে। সে কারণে সরকার পরিবর্তনের ফলে নাম বা খোলসের কিছু পরিবর্তন ঘটলেও মৌলিক নীতিতে ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থেকেছে। অন্যান্য আরও অনেক দিকের মত পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সংখ্যালঘু জাতিসত্তা সম্পর্কিত সরকারি নীতিতে এর সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায়।

বর্তমান প্রবন্ধে বিশেষভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সম্পর্ক ও সমস্যার ঐতিহাসিক বিকাশধারা এবং এ সম্পর্কে শাসকশ্রেণীর বক্তব্য সংক্ষেপে পরীক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে।

২. জাতির অধিকার ও জাতীয় চেতনা

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান অশান্ত ও অনিশ্চিত পরিস্থিতি নিছক আইনশৃঙ্খলার ব্যাপার নয়, বা নয় নিছক কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তির বিদ্রোহ ও তার দমনের ব্যাপার। বস্তুত এই ‘অঞ্চলে দীর্ঘদিন থেকে বসবাসরত প্রধান জনগোষ্ঠি বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিসত্তা সদস্যরা নিজেদের স্বতন্ত্র জাতিগত অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবার দাবি সরবে উচ্চারণ করেন প্রায় ২০ বছর আগে, এই উচ্চারণ ও তার প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অনেক গোপন, প্রচ্ছন্ন, হিংস্র বিষয় স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। একটি অস্পষ্ট বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে আপাতদৃষ্টিতে মনে হলেও ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে প্রকৃতপক্ষে সকল জাতিগত সমস্যার সমাধান হয়নি। স্পষ্ট হয়েছে যে বাংলাদেশ শুধু বাঙালির রাষ্ট্র নয়, এদেশের নাগরিক অন্যান্য ভাষাভাষী, জাতি বা জাতিসত্তাও রয়েছে। এই নির্মম সত্যের মুখোমুখিও আমরা দাড়িয়েছি যে, একটি নিপীড়িত জাতি দীর্ঘদিন জাতিগত নিপীড়নের মধ্যে থেকে এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই এর অভিজ্ঞতা দ্বারা সমৃদ্ধ হলেও তার শাসকশ্রেণীর কারণে নিপীড়ক জাতি হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে। আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, একটি রাষ্ট্রে সংখ্যাগুরু জাতি যতই সংখ্যাগুরু হোক না কেন, সংখ্যালঘু জাতি বা জাতিসত্তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন যদি সেই জাতি বা জাতিসত্তা নিজের অস্তিত্ব-স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কে একবার সচেতন হয়ে উঠে তাহলে সামরিক ব্যবস্থা দ্বারা তাদেরকে দমন করা যায় না। যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন বৃহৎ জাতির জাতিগত দম্ভ, আগ্রাসন পরিস্থিতিকে জটিল থেকে জটিলতর করে, বৃহৎ জাতির জনগণও তা থেকে ক্ষতিগ্রস্তই হন।

একটি রাষ্ট্রে সংখ্যাগুরু জাতি যতই সংখ্যাগুরু হোক না কেন, সংখ্যালঘু জাতি বা জাতিসত্তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন যদি সেই জাতি বা জাতিসত্তা নিজের অস্তিত্ব-স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কে একবার সচেতন হয়ে উঠে তাহলে সামরিক ব্যবস্থা দ্বারা তাদেরকে দমন করা যায় না। যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন বৃহৎ জাতির জাতিগত দম্ভ, আগ্রাসন পরিস্থিতিকে জটিল থেকে জটিলতর করে, বৃহৎ জাতির জনগণও তা থেকে ক্ষতিগ্রস্তই হন।

৩. জাতির আত্ম-উপলব্ধি

জাতি, জাতিসত্তা ও উপজাতি এই তিনটি নামে বিভিন্ন জনগোষ্ঠির জাতিগত অবস্থান চিহ্নিত করার রেওয়াজ আছে। নৃতাত্ত্বিক বিভিন্ন বর্গে বিভক্তির সঙ্গে সবসময় এর মিল ঘটে না। একই নৃতাত্ত্বিকবর্গে বিভিন্ন জাতির অস্তিত্ব থাকা সম্ভব। নৃতাত্ত্বিকবর্গ নির্ণয় করা হয় জনগোষ্ঠির প্রাথমিক গঠন, শারীরিক বৈশিষ্ট্য ঐতিহাসিক বিকাশধারা ইত্যাদির ভিত্তিতে। অন্যদিকে জাতির উদ্ভবের সংগে ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ এবং রাষ্ট্রের উদ্ভব সরাসরি সম্পর্কিত যদিও একটি জাতি একাধিক রাষ্ট্রে ছড়িয়ে থাকতে পারে, আবার একটি রাষ্ট্রে দুই বা বহুজাতির সহাবস্থান সম্ভব। তবে জাতি হয়ে ওঠার সঙ্গে রাষ্ট্রের ভূমিকার সম্পর্ক আছে। জাতিসত্তা বলতে সে রকম জনগোষ্ঠিকে বোঝানো হয়, যেটি জাতি হিসেবে বিকশিত হবার সম্ভাবনা ধারণ করে কিন্তু এখনও বিকশিত হয়ে উঠেনি। আর উপজাতি হচ্ছে আরও নিম্নপর্যায়ের স্তরে অবস্থানরত জনগোষ্ঠি, যেটি আদৌ জাতি হয়ে উঠবে এ সম্ভাবনা কম। এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ যে, উপজাতীয় সমাজ বলতে সাধারণত প্রাক-পুঁজিবাদী এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠিকে বোঝানো হয়। এ সব বিবেচনায় বাংলাদেশে বাঙালি একটি বিকশিত জাতি গোষ্ঠি এবং বাঙালি ভিন্ন অন্যান্য জনগোষ্ঠি ভিন্ন ভিন্ন জাতির অংশ। এদেরকে সাধারণত উপজাতি বলে আখ্যায়িত করা হলেও ‘জাতিগত সংখ্যালঘু’ই এদের নির্দেশ করার জন্য যথার্থ। তাছাড়া ‘উপজাতি’ শব্দটি ঔপনিবেশিক শাসকরা যেভাবে ব্যবহার করেছে তাতে এঁদের প্রতি গভীর অশ্রদ্ধাই প্রকাশ পায়। আর এতে এসব জাতিগোষ্ঠিকে “মানুষ বানানো” “আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিক” ও “সভ্য” করে তোলার নামে জাতিগত শাসন নিপীড়নকেও বৈধতাদানের চেষ্টা দেখা যায়। আধুনিকায়ন এবং আধুনিক রাষ্ট্রগঠন এখানে সামরিকীকরণ ও সংখ্যালঘুদের দমন ব্যবস্থার সমার্থক হয়ে যায়। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা বিবেচনা করলে বাংলাদেশ আপাতঃদৃষ্টিতে একটি একক জাতির বাসভূমি, এখানে মোট জনগোষ্ঠির শতকরা প্রায় ৯৯ ভাগ বাঙালি। শতকরা ১ ভাগ অন্যান্য জাতি বা জাতিসত্তার বাস, যাদের মধ্যে আছেন চাকমা, সাঁওতাল, মারমা, গারো, ত্রিপুরা ও অন্যান্য। বাংলাদেশের জনসংখ্যায় এর শতকরা অনুপাত ১ হলেও সংখ্যায় মোটেও কম নয়— ১১ লাখ। এদের জাতিগত ভিন্ন অস্তিত্ব সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত নয়, রাজনৈতিকভাবে এদের অস্তিত্ব টের পাওয়ার মত ঘটনা ৭২ এর আগে কমই ঘটেছে।

ব্রিটিশদের শাসন প্রতিষ্ঠার সূচনাকালে চাকমা রাজাদের বিদ্রোহ, একই সময়কালে সাঁওতালদের বিদ্রোহ এর উল্লেখ্য ব্যতিক্রম। স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জাতি ও জাতিসত্তাসমূহের অস্তিত্ব সম্পর্কে তাদের নিজেদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সচেতনতা সৃষ্টি হয় যখন সংখ্যাগুরু জাতি বাঙালিদের বাসভূমি হিসাবে বাংলাদেশ গড়ে উঠতে থাকে। মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা, চাকমা জাতির সদস্য হলেও তিনি বস্তুত সকল জাতির মানুষেরই কৃতজ্ঞতাভাজন হবেন এ কারণে যে, তিনিই প্রথম এদেশে ভিন্ন জাতির অস্তিত্ব, স্বাতন্ত্র্য ও অধিকার সম্পর্কে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই এই বিষয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক জোরালো দাবি উত্থাপিত হয়। বাঙালি শাসকশ্রেণী এসব দাবি উত্থাপনে প্রথমে ভ্রুকুটি করেছে, তারপর বিরক্তি প্রকাশ করেছে, এরপর দেখিয়েছে ভয়, তারপর ক্রুদ্ধ, হিংস্র হয়ে বৃহৎ শক্তি হিসাবে খুবই ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর বেয়াদবি দমনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু সঙ্গতকারণেই সফল হতে পারেনি। পারেনি বলেই বাঙালি জাতির সদস্য হিসেবে আমরা গ্লানির সাগরে ডুবে যাইনি, তাদের অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি ও একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা এখনও বলতে পারছি বাঙালি শাসকশ্রেণী ও বাঙালি জনগণ সমার্থক নয়।

মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা, চাকমা জাতির সদস্য হলেও তিনি বস্তুত সকল জাতির মানুষেরই কৃতজ্ঞতাভাজন হবেন এ কারণে যে, তিনিই প্রথম এদেশে ভিন্ন জাতির অস্তিত্ব, স্বাতন্ত্র্য ও অধিকার সম্পর্কে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই এই বিষয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক জোরালো দাবি উত্থাপিত হয়।

৪. ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশ

যেসব ঘটনা ধারাবাহিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১. অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজারা ছিলেন স্বাধীন, অঞ্চলের উপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। জুমচাষ, অব্যক্তিমালিকানা ও বিভিন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতিই ছিল তাদের বৈশিষ্ট্য। অষ্টাদশ শতকের বিভিন্ন সময়ে সীমান্তে বাণিজ্য নিয়ে চাকমাদের সঙ্গে বাঙালিদের সংঘর্ষ হয়। অবশেষে চাকমা রাজা জাল্লাল খান চট্টগ্রামের মুঘল গভর্নরের সঙ্গে চুক্তিতে আসেন। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিজয়ের পর একের পর এক এই অঞ্চলে হামলা পরিচালিত হয়। পরে চাকমা রাজা জান বকশ খাঁ ফোর্ট উইলিয়ামে গিয়ে পরাজয় স্বীকার করেন।

২. এ সময়ে এই অঞ্চলের নাম ছিল কার্পাসমহল, তুলা উৎপাদনের জন্য এক সময়ে খাজনা হিসাবে তুলার পরিবর্তে নগদ অর্থ দেয়ার প্রথা চালু হয়। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ১৮৬০ সালের পূর্ব পর্যন্ত এ অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ কোন ব্যাপারে তারা হস্তক্ষেপ করেনি।

৩. সিপাহি বিদ্রোহের পর ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রত্যক্ষ রূপ নেয় এবং ১৮৬০ সালে কার্পাসমহলকে একটি জেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। নাম হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম। জেলা প্রশাসক হিসাবে একজন ব্রিটিশ দায়িত্ব নেন। চাকমা, বোমাং ও মং রাজার উপর আঞ্চলিক প্রশাসনের দায়িত্ব ন্যস্ত হয়।

৪. ১৯০০ সালের এ্যাক্টে এ অঞ্চলের প্রশাসনকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়, যে আইন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয়নি, আবার পুরাপুরি কার্যকরও নেই। এই এ্যাক্ট অনুযায়ী পুরো জেলাকে তিনটি প্রশাসনিক ও রাজস্ব সার্কেলে বিভক্ত করা হয় এবং প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদাভাবে চাকমা, বোমাং ও মং রাজাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রতিটি সার্কেলকে আবার তালুকে ও প্রতিটি তালুককে আবার মৌজায় ভাগ করা হয়। তালুক ও মৌজার দায়িত্ব দেয়া হয় যথাক্রমে দেওয়ান ও হেডম্যানদের।

৫. এই এ্যাক্ট অনুযায়ী অঞ্চলে বহিরাগতদের বিনানুমতিতে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। অঞ্চলটিকে উপজাতীয় অঞ্চল হিসাবেই ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৪০ সালে এই বিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় এবং এর ফলে বহিরাগতদের প্রবেশ বাড়তে থাকে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য যে, সমতলভূমির অধিবাসীদের প্রবেশ তখন তেমন কোন জটিলতা সৃষ্টি করেনি।

৬. ১৯৩৭ সালে পার্বত্য অঞ্চলের প্রশাসনের সকল দায়িত্ব পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের হাতে ন্যস্ত করা হয় এবং রাজার অবস্থান নির্ধারণ করা হয় উপদেষ্টা হিসাবে।

৭. পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এই আইন অনুযায়ী অঞ্চলের শাসন চলতে থাকে। ১৯৫৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ জেলার মর্যাদা পেলেও অঞ্চলের জনগণের কোন ভোটাধিকার ছিল না। ১৯৫৫ সাল থেকেই এ জেলাকে একটি সাধারণ জেলায় পরিবর্তনের চেষ্টা নেয়া হয় এবং ১৯৬৩ সালে সংবিধান সংশোধন করে বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়।

৮. আর এই সময়েই এ অঞ্চলের জনগণের জীবন-জীবিকা ও অঞ্চলের সামগ্রিক পরিবেশের উপর, সে সময় পর্যন্ত, আরেকটি বড় আঘাত আসে। পাহাড়ি জনগণের নেতৃবৃন্দের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ইউ এস এইডের ঋণের টাকায় ৫ বছর ধরে রাঙামাটিতে বাস্তবায়ন করা হয় কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্প। এতে এ অঞ্চলের মোট আবাদি জমির শতকরা ৪০ ভাগ (প্রায় ৫৫ হাজার একর জমি) সহ ২৫০ বর্গমাইল অঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। এ প্রকল্পের ফলে প্রায় এক লাখ চাকমা ও অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষ (শতকরা প্রায় ২০ ভাগ) এতে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েন। এঁদের মধ্যে ৬০ হাজার কোনরকম ক্ষতিপূরণ পাননি। ক্ষতিপূরণ দেবার কথা ছিল ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার, দেয়া হয় মাত্র ২৫ লাখ ডলার। অঞ্চলে জুমচাষের ঐতিহ্যগত পদ্ধতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, হাজার হাজার পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে অঞ্চল ত্যাগ করেন। এ প্রকল্প পুরো এলাকায় একটি ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করে। এর পরপরই ১৯৬৬ সাল থেকে পরিকল্পিতভাবে বাঙালি পুনর্বাসন শুরু হয়। একদিকে শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন ও অন্যদিকে পরিবেশগত হামলা সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে চরম অস্তিত্বের সংকটের মুখে নিক্ষেপ করে।

পাহাড়ি জনগণের নেতৃবৃন্দের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ইউ এস এইডের ঋণের টাকায় ৫ বছর ধরে রাঙামাটিতে বাস্তবায়ন করা হয় কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্প। এতে এ অঞ্চলের মোট আবাদি জমির শতকরা ৪০ ভাগ (প্রায় ৫৫ হাজার একর জমি) সহ ২৫০ বর্গমাইল অঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। এ প্রকল্পের ফলে প্রায় এক লাখ চাকমা ও অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষ (শতকরা প্রায় ২০ ভাগ) এতে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েন। এঁদের মধ্যে ৬০ হাজার কোনরকম ক্ষতিপূরণ পাননি।

৯. ৬০ দশকে যখন একের পর এক পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি এ অঞ্চলের পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের উপর হামলা চালাচ্ছে ঠিক সে সময় বাঙালি জনগণ জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই অনেক সংগঠিত করেছেন, সারাদেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সে সময় ক্রমে জোরদার হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাঙালি ডান-বাম রাজনৈতিক ধারার কোনটাই পাহাড়ি জনগণের উপর একের পর এক হামলার বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য প্রতিবাদ করেনি, তাদের জাতিগত অধিকারের ইস্যুকে নিজেদের আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত করেনি। ঐ অঞ্চলে পাহাড়িদের ক্রমান্বয় নিরাপত্তাহীনতার মুখে বাঙালি প্রবেশ, বাঙালি পাহাড়ি দ্বন্দ্বের কিছু কিছু সূচনা করে ঐ সময়েই।

১০. ১৯৭১ সালে রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন করেন, অন্যদিকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

১১. পাহাড়িদের মধ্যে ক্ষুদ্র হলেও শিক্ষিত মধ্যবিত্তের উদ্ভব, বাঙালি জাতির বিজয় ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা পাহাড়ি জাতিগুলোর জাতিগত স্বাতন্ত্র্য চেতনার বিস্তার ঘটায়। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার কারণে তারা আশাবাদীও হয়ে ওঠেন। এসব জাতিগোষ্ঠির মধ্যে আগেও কিছু কিছু সংগঠিত হবার চেষ্টা দেখা গেলেও লারমার নেতৃত্বেই তাদের প্রথম কার্যকর উল্লেখযোগ্য বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

১২. বাংলাদেশের সংবিধান চুড়ান্ত করবার প্রাক্কালে লারমা ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিনিধিদলের নেতা হিসাবে শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করেন এবং ৪টি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হচ্ছে নিম্নরূপ :

ক) পার্বত্য চট্টাগ্রামের স্বায়ত্তশাসন ও তার নিজস্ব আইন ব্যবস্থা।

খ) বাংলাদেশের সংবিধানে ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন বলবৎ রাখা।

গ) ট্রাইবাল চিফ এর অফিস অব্যাহত রাখা এবং

ঘ) অউপজাতীয় জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং আইন সংশোধন পথ বন্ধ করার জন্য সাংবিধানিক ব্যবস্থা গ্রহণ। লারমা প্রত্যাখ্যাত হন শুধু এ দাবিগুলোর জন্যই নয়। জাতি হিসাবে তাঁদের আলাদা অস্তিত্বই অস্বীকৃত হয়। এর পরপরই গঠিত হয় “পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি” যার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো এসব জাতিগোষ্ঠির স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সত্তার স্ফুরণ ঘটে।

১৩. ১৯৭৩ সালে লারমা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসাবে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন। তিনি সংসদেও পাহাড়ি জনগণের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের বিষয়টি উত্থাপন করেন। কিন্তু এসব কথায় কর্ণপাত করা হয়নি। এ বছরই পার্বত্যঅঞ্চলে নিরাপত্তার নামে প্রথম সামরিক ক্যাম্প বসানো হয়। একই বছর শান্তিবাহিনী গঠিত হয়।

১৪. ১৯৭৫ এর পর সামরিক শাসন শুরুর পর পাহাড়ি জনগণের প্রতি রাজনৈতিক অস্বীকৃতি, সামরিক নিপীড়ন দমন এর রূপ নেয়। শান্তিবাহিনীর তৎপরতাও শুরু ব্যাপকভাবে।

১৫. সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দরিদ্র বাঙালিদের অর্থ ও জমির লোভ দেখিয়ে এ অঞ্চলে পুনর্বাসিত করবার কাজও এসময়ে ব্যাপকভাবে শুরু হয়। পরবর্তীকালে কয়েক একর জমি ও ৩৬০০ টাকা দিয়ে ১৯৮০ সালেই সমতলভূমি থেকে ১ লাখ বাঙালি পরিবার আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর আগে ১৯৭৯ সালে নেয়া। হয় ৩০ হাজার পরিবার। ১৯৬০ সালে যেখানে বাঙালি জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৩ ভাগ সেখানে ১৯৮৭ সাল নাগাদ তা শতকরা ৫০ ভাগ ছাড়িয়ে যায়।

সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দরিদ্র বাঙালিদের অর্থ ও জমির লোভ দেখিয়ে এ অঞ্চলে পুনর্বাসিত করবার কাজও এসময়ে ব্যাপকভাবে শুরু হয়। পরবর্তীকালে কয়েক একর জমি ও ৩৬০০ টাকা দিয়ে ১৯৮০ সালেই সমতলভূমি থেকে ১ লাখ বাঙালি পরিবার আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর আগে ১৯৭৯ সালে নেয়া। হয় ৩০ হাজার পরিবার। ১৯৬০ সালে যেখানে বাঙালি জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৩ ভাগ সেখানে ১৯৮৭ সাল নাগাদ তা শতকরা ৫০ ভাগ ছাড়িয়ে যায়।

১৬. দুই দশকে বিশেষত ১৯৭৯ এর পর থেকে পার্বত্য অঞ্চলে উত্তেজনা, রক্তপাত অনেক বৃদ্ধি পায়। সামরিক বাহিনী মুখ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নেয়। সামরিক অভিযান, নিরীহ মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন, ধর্মীয় স্থানে হামলা, বিভিন্নরকম বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে সংখ্যালঘু এসব জাতিগোষ্ঠিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে রূপান্তরের অভিযোগ ক্রমে বাড়তে থাকে।

১৭.  কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ ও পরবর্তীকালে আবাদি জমির তুলনায় অধিকহারে জনবসতি স্থাপন, পাহাড় কেটে অবাধ কাঠের ব্যবসা, সামরিক ঘাঁটি নিরাপদ করবার জন্য পাহাড় পরিষ্কার, বনায়নের বিকল্প ব্যবস্থা না করে বন পরিষ্কার করে রাস্তা তৈরি ইত্যাদির ফলে পরিবেশ দিনে দিনে আরো বেশি হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।

১৮. এ অঞ্চলে সামরিক কার্যক্রম চালানোর জন্য বছর বছর ব্যয় বাড়তে থাকে। এ সম্পর্কে কোন হিসাব সংসদে না দেয়া হলেও সংসদ সদস্যদের মতে এই ব্যয় দিনপ্রতি কোটি টাকার বেশি হবে। বলা বাহুল্য এ টাকা বাঙালি জনগণের করের অর্থ থেকেই যায়। সংসদীয় পদ্ধতির শাসন প্রবর্তিত হলেও এ ব্যাপারে সংসদের কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি। উপরন্তু সংসদে এ বিষয়ে আলোচনা তোলার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।

১৯. বিভিন্ন সময় ‘শান্তি আলোচনা চললেও তা বেশি দূর কখনোই অগ্রসর হয়নি। পাহাড়ি অঞ্চলে উন্নয়ন গুচ্ছগ্রামে রেশন ইত্যাদি বাবদ বিপুল অর্থব্যয়, কাঠের ব্যবসা, জমি বা পাহাড় দখল ইত্যাদি কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সুবিধাভোগী মহল এ সমস্যা জিইয়ে রাখতে আগ্রহী বলে অনেকে মনে করেন। তাছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর বিভিন্ন রাজনৈতিক বিবেচনাও এর পশ্চাতে কাজ করছে।

বিভিন্ন সময় ‘শান্তি আলোচনা চললেও তা বেশি দূর কখনোই অগ্রসর হয়নি। পাহাড়ি অঞ্চলে উন্নয়ন গুচ্ছগ্রামে রেশন ইত্যাদি বাবদ বিপুল অর্থব্যয়, কাঠের ব্যবসা, জমি বা পাহাড় দখল ইত্যাদি কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সুবিধাভোগী মহল এ সমস্যা জিইয়ে রাখতে আগ্রহী বলে অনেকে মনে করেন। তাছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর বিভিন্ন রাজনৈতিক বিবেচনাও এর পশ্চাতে কাজ করছে।

২০. যে বাঙালিদের পার্বত্যঅঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং যারা আগে থেকে সেখানে আছেন তারা সম্মিলিতভাবে এখন ৫ লাখের মত। এদের বিপুল অধিকাংশ বস্তুত ক্যান্টনমেন্টের চারধারে গুচ্ছগ্রামে বসবাস করেন, কার্যত এরা ব্যবহৃত হন ঢাল হিসাবে। কর্মসংস্থানের অভাব, নিরাপত্তাহীনতা, অনিশ্চয়তা সবকিছু মিলিয়ে এরা এক মানবেতর জীবনের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। সুযোগ পেলে এদের বেশিরভাগই এ অঞ্চল ত্যাগ করতে আগ্রহী। অন্যদিকে এদের খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ প্রশাসনের সংগে সম্পর্কিতভাবে কাজ করে ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধার অংশীদারে পরিণত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলের বাঙালিরাই এখন একটি সামাজিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন।

২১. ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত জেলা পরিষদ পাহাড়ি জনগণ গ্রহণ করেননি। এরশাদ পতনের পর অন্যান্য জেলা পরিষদ বাতিল করালেও এগুলি অব্যাহত রাখা হয়েছে। জেলা পরিষদের অস্তিত্ব থাকলেও মোট ২২টি দায়িত্বের মধ্যে জেলা পরিষদ প্রথমে ৩টি ও পরে ৯টি দায়িত্ব পালনের এখতিয়ার পেয়েছে। বাকিগুলো এখনো স্থগিত। বেসামরিক প্রশাসন এখনও প্রত্যক্ষভাবেই সামরিক প্রশাসনের অধীনস্থ।

২২. সর্বশেষ পরিস্থিতি হল, সরকার প্রশাসনিকভাবে সংসদ সদস্যদের নিয়ে (সংসদীয় নয়) একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি জনসংহতি সমিতির সংগে আলোচনা শুরু করেছে। কমিটির গঠনপ্রণালী ও ক্ষমতা এবং এ অঞ্চলে গড়ে উঠা জাতীয় আন্তর্জাতিক সুবিধাভোগী গোষ্ঠির প্রভাব বিবেচনা করে এটা ধারণা করা যুক্তিসঙ্গত যে, এই প্রক্রিয়ায় কোন স্থায়ী সমাধান হবে না। তবে যেটি হওয়া সম্ভব, সেটা হচ্ছে অস্থায়ী কোন সমাধান ও আপোষ। এতে করে হয়ত নতুন কিছু দ্বন্দ্বের উদ্ভব হবে।

৫. শাসক শ্রেণীর যুক্তি ও বাস্তবতা

পার্বত্যঅঞ্চলে অব্যাহত অঘোষিত সামরিক শাসন, বাঙালি বসতি স্থাপন, বাঙালি পাহাড়ি দ্বন্দ্ব, গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা, নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ ইত্যাদির পেছনে সরকার নির্বিশেষে শাসকগোষ্ঠি ও তাদের অংশীদার বাঙালি এলিটদের কাছ থেকে যেসব যুক্তি শোনা যায় সেগুলো হল :

১. জনসংখ্যা অনুপাতে পার্বত্য অঞ্চলে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় মানুষ জমি অনুপাত অনেক কম।

২. পার্বত্যঅঞ্চলে অন্যান্য এলাকা থেকে বাঙালি এনে বসতি স্থাপন করানোতে কোন সমস্যা নেই, কেননা একই দেশের যে কোন অঞ্চলে যে কোন মানুষের যাবার অধিকার আছে।

৩. এ অঞ্চলে ‘উপজাতি’রা শান্তিবাহিনী করে সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে, বাঙালিদের নিরাপত্তা ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত করছে, সে জন্যই এ অঞ্চলে সামরিক প্রশাসন রাখতে হচ্ছে।

৪. এ অঞ্চলের ‘উপজাতি’গুলো ভারতের দালাল এবং ৭১ এর রাজাকার। কাজেই এদের দমন করা প্রয়োজন।

৫. অঞ্চলে পরিবেশ ধ্বংস নয়, উন্নয়ন তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

৬. দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষা ও বাঙালিদের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী এই অঞ্চলে কাজ করছে।

পার্বত্যঅঞ্চলে মানুষ—জমি অনুপাত সমতলভূমির তুলনায় অনেক কম, এ যুক্তির সমর্থনে বলা হয়, পার্বত্য ৩টি জেলার আয়তন বাংলাদেশের মোট আয়তনের শতকরা ১০ ভাগ কিন্তু জনসংখ্যা শতকরা মাত্র ১ ভাগ। অর্থাৎ অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এখানে মাথাপিছু জমি ১০ গুণ বেশি। আপাতঃদৃষ্টিতে কথাটি সত্য, কিন্তু এ বক্তব্যের মধ্যে পাহাড়ের সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবে সম্পর্কিত কিছু জাতির স্বতন্ত্র কৃষিপদ্ধতি, জীবনধারা ও সংস্কৃতির প্রতি যেমন ইচ্ছাকৃত অবজ্ঞা আছে তেমনি পার্বত্যভূমি ও সমতলভূমির মাথাপিছু জমির পার্থক্য সম্পর্কে আছে অজ্ঞতা। পুরো পার্বত্য অঞ্চলে জমির আয়তন প্রায় ৩০ লাখ একর। কিন্তু ভূতত্ত্ববিদদের হিসাব অনুযায়ী এর মধ্যে শতকরা ৭৭ ভাগ জমি এখানে শুধুমাত্র পাহাড়ের জন্যই উপযুক্ত, শতকরা ১৫ ভাগ জমি ফলবাগানের জন্য এবং শতকরা ৩ ভাগ জমি কৃষি আবাদের জন্য উপযুক্ত। কাপ্তাই বাঁধের কারণে আবাদী জমির শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ ডুবে যাবার ফলে এ অবস্থা আরো সঙ্গীন হয়। এখন মোটামুটি ১ লাখ একর জমি কৃষি আবাদের জন্য ব্যবহারযোগ্য। বাঙালি-পাহাড়ি মিলে এখন প্রায় দেড় লাখ পরিবার আছে। তাহলে পরিবার প্রতি কৃষিজমি ০.৭ একর, ৫ জনের পরিবার ধরলে মাথাপিছু জমি হয় ০.১৪ একর। বাংলাদেশে সমতলভূমিতে মোট আবাদী জমি ২ কোটি একরের কিছু উপরে। পরিবার সংখ্যাও ২ কোটির সামান্য বেশি। সে হিসেবে গড়পড়তা পরিবারপিছু আবাদী জমি আছে এক একর, ৫ জনের পরিবার ধরলে মাথাপিছু ০.২০ একর। তার মানে পার্বত্যঅঞ্চলে মাথাপিছু জমি বেশি হলেও আবাদী জমি কম। আগে পার্বত্য অঞ্চলে জনসংখ্যা কম ছিল, নির্দিষ্ট জমিতে স্থায়ীভাবে চাষাবাদের ব্যবস্থাও ছিল, জুমচাষ ছিল এখানে প্রচলিত ব্যবস্থা। একেকটি পাহাড়ে বিরতি দরকার হত ৭ বছর। এখন জনসংখ্যাবৃদ্ধি, ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠা, অঞ্চল ত্যাগের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ইত্যাদি কারণে এ প্রথা প্রায় বিলুপ্তির পথে।

পার্বত্যঅঞ্চলে মাথাপিছু জমি বেশি হলেও আবাদী জমি কম। আগে পার্বত্য অঞ্চলে জনসংখ্যা কম ছিল, নির্দিষ্ট জমিতে স্থায়ীভাবে চাষাবাদের ব্যবস্থাও ছিল, জুমচাষ ছিল এখানে প্রচলিত ব্যবস্থা। একেকটি পাহাড়ে বিরতি দরকার হত ৭ বছর। এখন জনসংখ্যাবৃদ্ধি, ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠা, অঞ্চল ত্যাগের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ইত্যাদি কারণে এ প্রথা প্রায় বিলুপ্তির পথে।

সরকার নয়া বসতিস্থাপনকারী বাঙালি পরিবারকে আড়াই একর ধানী জমি, ৫ একর পাহাড়ি জমি ও ৪ একর ঢালু জমি দেবার যে কথা বলেছেন, তা বাস্তবায়ন করতে গেলে নিশ্চিতভাবে সমস্ত পাহাড়ি পরিবারকে আবাদি জমি থেকে উচ্ছেদ করতে হবে এবং তারপরও সব বাঙালি পরিবারকে জমি দেয়া সম্ভব হবে না। অর্থাৎ জাতিবিদ্বেষী নীতির পূর্ণবাস্তবায়ন করবার পরেও অধিকাংশ বাঙালি পরিবার শিকার হবে প্রতারণার।

বসতি স্থাপনের অধিকার

দেশের সর্বত্র সকল নাগরিকের যাবার এবং বসতিস্থাপনের অধিকার আছে, এ অঞ্চলে বাঙালি বসতিস্থাপনের পেছনে এ যুক্তিটি দেয়া হয়। যুক্তিটি ঠিক, কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে সরকারি উদ্যোগে বাঙালি বসতিস্থাপনের সঙ্গে সকল অঞ্চলে সকল নাগরিকের গমনাগমন ও বসতিস্থাপনের অধিকারের পার্থক্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এ পার্থক্য এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। বস্তুত পার্বত্য অঞ্চলে বসতি স্থাপনের সঙ্গে সম্পর্কিত হচ্ছে প্রতারণা, নির্যাতন, লুটপাট, জাতিগতবিদ্বেষ, বর্ণবাদী আগ্রাসন ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার। জাতিগত স্বাতন্ত্র্য, বৈশিষ্ট্য, অধিকার, ধারাবাহিকতা ইত্যাদির প্রসঙ্গ বাদ দিয়েই যদি বিষয়টি বিবেচনা করা যায় তাহলে এটি বুঝতে আরও সুবিধা হবে। বিবেচনা করা যাক বাঙালি অধ্যুষিত একটি অঞ্চল, যেমন পাবনা। যমুনার ওপারে সিরাজগঞ্জ ও এপারে টাঙ্গাইল। দু অঞ্চলেই বাঙালি বসতি। কিন্তু যদি ঘটনা এরকম ঘটে যে, সিরাজগঞ্জের যত লোকসংখ্যা আছে ঠিক প্রায় একই সংখ্যক মানুষকে সেখানে জমি দেবার লোভ দেখিয়ে সরকারি ব্যবস্থায় টাঙ্গাইল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত আছে, টাঙ্গাইলের সে মানুষদের দেয়া হচ্ছে নিয়মিত রেশন, প্রচার মাধ্যম ও শাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ তাদের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের মানুষদের জীবন, জীবিকা, মতপ্রকাশ ও চলাফেরার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে, তাদের প্রতি সবসময় নিক্ষিপ্ত হচ্ছে সন্দেহ, অবিশ্বাস। এরকম একটি পরিস্থিতি কি টাঙ্গাইলের মানুষদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নাকি সিরাজগঞ্জের অধিবাসীদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের জন্য টাঙ্গাইলের অধিবাসীদের ব্যবহার করা? এ রকম ঘটনা ঘটলে সিরাজগঞ্জের মানুষদের দিক থেকে অপরিহার্যভাবে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ গড়ে ওঠাই স্বাভাবিক প্রবণতা হয়ে দাঁড়ায়। একই জাতির মধ্যে যখন এরকম ঘটনা ঘটে সেখানে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মানুষ প্রধান একটি অঞ্চলে সংখ্যাগুরু জাতির মানুষেরা যদি জোরপূর্বক গিয়ে ওঠেন, জমিজমা ব্যবসা, কর্মসংস্থানে যদি আধিপত্য বিস্তার করেন, রাষ্ট্রীয় আইন, প্রচার মাধ্যম, রাজনৈতিক দল ও সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র শক্তির সমর্থন নিয়ে যদি তারা চড়াও হন সংখ্যালঘুদের উপর তাহলে অবস্থা আরও জটিল আকার ধারণ করে। জাতিগত বৈরিতা, অবিশ্বাস একটি স্থায়ী অবস্থায় পরিণত হবার দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে থাকে। এভাবে শাসকশ্রেণীই হুমকি সৃষ্টি করে রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সমাধানবিন্দু থেকে দূরত্ব বৃদ্ধি করতে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এ অবস্থাই তৈরি হয়েছে।

সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মানুষ প্রধান একটি অঞ্চলে সংখ্যাগুরু জাতির মানুষেরা যদি জোরপূর্বক গিয়ে ওঠেন, জমিজমা ব্যবসা, কর্মসংস্থানে যদি আধিপত্য বিস্তার করেন, রাষ্ট্রীয় আইন, প্রচার মাধ্যম, রাজনৈতিক দল ও সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র শক্তির সমর্থন নিয়ে যদি তারা চড়াও হন সংখ্যালঘুদের উপর তাহলে অবস্থা আরও জটিল আকার ধারণ করে। জাতিগত বৈরিতা, অবিশ্বাস একটি স্থায়ী অবস্থায় পরিণত হবার দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে থাকে। এভাবে শাসকশ্রেণীই হুমকি সৃষ্টি করে রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার বিরুদ্ধে।

রাজাকার বা ভারতের দালাল

এই পরিস্থিতিকে সমর্থন করা বা যুক্তিযুক্ত করার প্রচেষ্টা কোন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এবং এ চেষ্টা স্ববিরোধী বা আত্মঘাতীও হতে বাধ্য। চাকমা-মারমা- ত্রিপুরা সকল জাতিসত্তাকে একযোগে একবার ভারতের দালাল আবার পাকিস্তানি রাজাকার বলা হয়। যা একই সঙ্গে দায়িত্বহীন ও অসত্য। ভারতের শাসকশ্রেণীর দালাল প্রতিবেশী ক্ষুদ্র এই বাংলাদেশে থাকা খুবই সম্ভব, আছেও। আছে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সবক্ষেত্রেই। এবং এই দালালদের সবচাইতে শক্তিশালী ভিত্তি হচ্ছে সরকারের মধ্যেই, শাসকশ্রেণীর মধ্যেই যে শাসকশ্রেণী এই ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে চায়। আবার এদের রাজাকার গালি দেয় যে শাসকশ্রেণী সে শ্রেণী বাঙালি রাজাকারদের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বনিয়েছে, বাঙালি রাজাকারদের রক্ষা করার জন্য নিয়োজিত রেখেছে সর্বশক্তি। কাজেই এসব যুক্তির কোনটিই ধোপে টেকে না।

শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র তৎপরতা যেমন কোন শান্তিকামী বাঙালির পছন্দ নয় তেমনি কোন শান্তিকামী পাহাড়িরও তা পছন্দ হবার কথা নয়। আর এটাও ঠিক যে, ভারতেই শান্তিবাহিনীর প্রধান কেন্দ্র। ভারতের যে শাসকশ্রেণী সে দেশের কাশ্মীর, পাঞ্জাব, আসাম, মিজোরাম, নাগাল্যাণ্ড, অন্ধ্র, তামিলনাডুসহ প্রায় সকল অঞ্চলে জাতিগত ও বর্ণগত নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে, সমস্যাগুলোর গণতান্ত্রিক সমাধানের পরিবর্তে সশস্ত্র পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে সেই ভারতীয় শাসকগোষ্ঠি বাংলাদেশের পাহাড়ি জনগোষ্ঠির সমস্যার সমাধান চায় এটা ভাবারও কোন কারণ নেই। ভারতের শাসকশ্রেণী তার কৌশলগত কারণে যতদিন প্রয়োজন ততদিন এ অবস্থাকে ব্যবহার করবে। সম্ভবত এ উপলব্ধি পাহাড়ি জনগণেরও আছে, সেজন্য তারা এ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে ও বাংলাদেশের বাঙালিপ্রধান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবার আগ্রহ ব্যক্ত করছেন বেশি। তাছাড়া শান্তিবাহিনীর গঠন ও অভিযান শুরুকে, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে, ক্রিয়া বলা যায় না, বলতে হয় জাতিগত অস্তিত্বের অস্বীকৃতি ও আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া। এদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত, সামরিক দফতরের হিসাব অনুযায়ী, পাহাড়ি জনগোষ্ঠির শতকরা মাত্র ১ ভাগ-প্রায় ৫ হাজার। গত দুই দশকে এই শান্তিবাহিনীর দমনের নামেই এ অঞ্চলে বিপুল সামরিক শক্তি মোতায়েন করা হয়েছে। জনগণের করের অর্থ থেকে ব্যয় করা হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। নিহত হয়েছেন বহুসংখ্যক পাহাড়ি, বাঙালি ও সামরিক-আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য। প্রমাণিত হয়েছে, এ পথে জাতিগত সমস্যার সমাধান তো দূরের কথা এমনকি “নিয়ে যাওয়া” নিরীহ বাঙালিদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

শান্তিবাহিনীর গঠন ও অভিযান শুরুকে, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে, ক্রিয়া বলা যায় না, বলতে হয় জাতিগত অস্তিত্বের অস্বীকৃতি ও আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া। এদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত, সামরিক দফতরের হিসাব অনুযায়ী, পাহাড়ি জনগোষ্ঠির শতকরা মাত্র ১ ভাগ-প্রায় ৫ হাজার। গত দুই দশকে এই শান্তিবাহিনীর দমনের নামেই এ অঞ্চলে বিপুল সামরিক শক্তি মোতায়েন করা হয়েছে। জনগণের করের অর্থ থেকে ব্যয় করা হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।

৮. সামরিক বাহিনীর ব্যবহার

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে গণতান্ত্রিকচেতনা গড়ে উঠবার আবহ তৈরি হয়েছিল তা স্বাধীনতার পর টিকতে পারেনি। নতুনভাবে শোষণমূলক ব্যবস্থা ও অগণতান্ত্রিক বিধিবিধান প্রতিস্থাপিত হয়েছে। যে সামরিক বাহিনী পাকিস্তান রাষ্ট্রে একটি চরম গণবিচ্ছিন্ন গণবিরোধী কাঠামোতে বিকশিত হয়েছিল সেই সামরিক বাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঙালি সদস্য রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন, জনগণের সঙ্গে থেকে তাঁরা যুদ্ধ করেছেন। এ সময়েই সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও প্রাতিষ্ঠানিক স্থায়ী গণবিচ্ছিন্ন সামরিক বাহিনীর পাল্টা ধারণা বিকাশ লাভ করে। স্বাধীনতার পর এই ধারণার বহিঃপ্রকাশ ঘটে অনেকের মধ্যে। কিন্তু রাজনৈতিক অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ যত স্পষ্টভাবে শোষণমূলক অগণতান্ত্রিক রূপ নিতে থাকে ততই সামরিক বাহিনীও আগের আকার ও চরিত্র পেতে থাকে। এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ভেতর থেকেই প্রতিবাদ হয়েছে কিন্তু তা ছিল দুর্বল। মুক্তিযুদ্ধের জনগণের বাহিনী এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই জনগণের বৈরী যন্ত্রের শরীকে পরিণত হয়েছে। এই পরিণত হবার প্রক্রিয়াতেই জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বাহিনীকে এক পর্যায়ে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে।

পৃথিবীর সকল শোষণমূলক রাষ্ট্রে শাসকশ্রেণী নিজের শ্রেণীগত স্বার্থে অন্য জাতির উপর নিপীড়ন করেছে এবং তাকে বৈধতাদানের জন্য জাতীয় স্বার্থ হিসাবে প্রচার করেছে। একই কথা বলে এই শ্রেণী জনগণের করের অর্থে প্রতিপালিত সেনাবাহিনীকে জাতীয় স্বার্থ বা স্বাধীনতার নামে নিজ জাতির শ্রমজীবী জনগণের উপর যেমন আরোপ করেছে তেমনি করেছে সুযোগ থাকলে, অন্য জাতির উপর। বাংলাদেশে এ ঘটনাটিই ঘটেছে।১০

পৃথিবীর সকল শোষণমূলক রাষ্ট্রে শাসকশ্রেণী নিজের শ্রেণীগত স্বার্থে অন্য জাতির উপর নিপীড়ন করেছে এবং তাকে বৈধতাদানের জন্য জাতীয় স্বার্থ হিসাবে প্রচার করেছে। একই কথা বলে এই শ্রেণী জনগণের করের অর্থে প্রতিপালিত সেনাবাহিনীকে জাতীয় স্বার্থ বা স্বাধীনতার নামে নিজ জাতির শ্রমজীবী জনগণের উপর যেমন আরোপ করেছে তেমনি করেছে সুযোগ থাকলে, অন্য জাতির উপর। বাংলাদেশে এ ঘটনাটিই ঘটেছে।

পাহাড়ি জনগণের উপর যাবতীয় নিপীড়ন ও অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাঙালি জনগণের স্বার্থে করা হচ্ছে এটিও একটি প্রতারণামূলক বক্তব্য। পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের নামে ঐ অঞ্চলে যে বাঙালিদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশেরই বাস্তবত কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের কোন সম্মানজনক ব্যবস্থা হয়নি। তারা সামরিক ক্যাম্পে ঘেরাও হয়ে গুচ্ছগ্রামে অবস্থান করছেন। পাহাড়ি অঞ্চলে অনভ্যস্ত এই বাঙালি জনগোষ্ঠির বেশির ভাগ বাস করছেন মানবেতর জীবনে, তাঁরা ভীষণভাবে নির্ভরশীল রেশনের উপর।

রেশনের নামে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা, সে সম্পর্কেও বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়।

প্রায় ৫ লাখ বাঙালির নিরাপত্তা ও স্বার্থের নামে বছরে যারা শত শত কোটি টাকা ব্যয় করছে, সেই শাসকশ্রেণীর বাকি ১০ কোটি বাঙালির উপর শোষণ-নির্যাতনে কোন কার্পণ্য দেখা যায় না। ৫ লাখ দরিদ্র অসহায় বাঙালিকে যে ব্যবহার করা হচ্ছে হাতিয়ার হিসাবে সেটা সেই বাঙালির করুণদশা থেকেই উপলব্ধি করা সম্ভব।

৬. বস্তুগত পরিবর্তনের প্রবণতাসমূহ

পার্বত্য অঞ্চলে অ-বাঙালি বাংলাদেশী সংখ্যালঘু জাতিসমূহ বিশেষত ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে যে রকম অভিজ্ঞতা ও পরিবর্তনের মধ্যে গেছে তাতে এ জাতিগোষ্ঠিগুলোর গঠন, চেতনা ও সামাজিক প্রবণতার মধ্যেও অনেক রকম পরিবর্তন হয়েছে। ১১ সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে :

ক) আগে যেখানে এসব সমাজে উৎপাদন উপকরণের উপর অব্যক্তিগত মালিকানাই ছিল প্রধান, এখন সেখানে ব্যক্তিগত মালিকানাই প্রাধান্যে এসেছে।

খ) সামগ্রিক গোত্রীয় নেতৃত্বের প্রভাব ক্ষমতা খর্ব হয়েছে অনেক পরিমাণে, বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আরও স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ হয়েছে।

গ) পুঁজিবাদী বাজারের সঙ্গে এসব অর্থনীতির যোগাযোগ বেড়েছে, প্রাক-পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, নিয়মনীতি দৃষ্টিভঙ্গি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বিপুল পরিমাণে।

ঘ) কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ, বিপুল সংখ্যক বাঙালির বসতিস্থাপন ও সামরিক আগ্রাসনে অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশগত পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখযোগ্য। জুমচাষ এখন বিলুপ্তির দিকে। অন্যদিকে মৎস্যচাষ, কারখানায় কাজ, রাবার ও ফলবাগান ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত পেশা তৈরি হয়েছে, কিন্তু তাতে পাহাড়িদের অংশগ্রহণ খুব কম।

ঙ) যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বিদ্যুতায়ন অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন চরিত্র খর্ব করেছে।

চ) বিপুল সংখ্যক বাঙালির উপস্থিতি এখানে সমতলভূমির উৎপাদন পদ্ধতিকেও উপস্থিত করেছে। বাঙালি এখানে তার উৎপাদন পদ্ধতিও আরোপ করবার চেষ্টা করছে। সংস্কৃতি, অভ্যাস, আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়েছে।

ছ) সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের মধ্যে পেটি বুর্জোয়াশ্রেণী গড়ে উঠেছে, শ্রেণী- বিভাজনও নতুন রূপ নিতে যাচ্ছে।

৭. জনগণের গণতান্ত্রিক ঐক্য

পুঁজিবাদের আগ্রাসী বিস্তার এ অঞ্চলকে ভিন্নধাঁচে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবে-এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই আগ্রাসন যে বর্বরতা ও জাতিবিদ্বেষকে হাজির করে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধও বাস্তব এবং অবশ্যম্ভাবী ঘটনা। বলা বাহুল্য যে, এই প্রতিরোধ পশ্চাৎপদ প্রতিষ্ঠান, নেতৃত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাবাধীন হলে তা দুর্বল, ভঙ্গুর ও পরাজিত হতে বাধ্য। জাতি হিসাবে ভিন্ন অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকা, অগ্রসর প্রতিষ্ঠান, নেতৃত্ব, মূল্যবোধ ও রাজনীতি দিয়ে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এই জাতিগুলোর টিকে থাকা ও বিকশিত হওয়ার অপরিহার্য পূর্বশর্ত। তা কতটুকু পূরণ হবে তা বাঙালি জাতির প্রগতিশীল শক্তিসমূহের ভূমিকার উপর যতটা নির্ভর করে তার থেকেও বেশি নির্ভর করে এসব জাতির পুরনো সমাজের ভাঙনের মধ্য দিয়ে উদ্ভুত নতুন সচেতন অগ্রসর শিক্ষিত অংশের ভূমিকার উপর।

সংখ্যালঘু বিভিন্ন জাতিসত্তা যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সেইসঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছেন তারা সকলে একই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া, অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হননি। জাতি হিসাবে টিকে থাকা বা বিকশিত হবার মত শক্তিও সকলের এক রকম নয়। নির্মম হলেও সত্য যে, এ জাতিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভিন্ন জাতি হিসাবে খুব বেশিদিন নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। সংখ্যার স্বল্পতা, নিজস্ব ভাষা সাহিত্যের দুর্বলতা বা অনুপস্থিতি ইত্যাদি কারণে ছোট ছোট অনেক গোষ্ঠি বড় কোন জাতিসত্তার সঙ্গে মিশে যাবে কিংবা বৃহত্তর বাঙালি জাতির মধ্যেই বিলীন হবে।

পার্বত্য অঞ্চলে যে সব বড় জাতিসত্তা আছে তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য ‘জুমচাষ’ বর্তমান বাস্তবতায় আর কতদিন টিকতে পারবে বা টিকে থাকা যৌক্তিক সে সম্পর্কেও সন্দেহ করবার কারণ আছে। কিন্তু জীবিকার পরিবর্তন সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি জাতিসত্তা আছে যেগুলি জাতি হিসাবে বিকশিত হবার মত ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক শক্তি ধারণ করে। কোনটি টিকবে আর কোনটি টিকবে না সে সিদ্ধান্ত কে নেবে? কোন চাষপদ্ধতি ভাল ও যুক্তিযুক্ত সে সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্বই বা কার? এই প্রশ্নের সঙ্গেই জড়িত জাতি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি। কোন জাতি বা জাতিসত্তার জনসংখ্যা যতই কম হোক তাদের নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, নিজস্ব স্বতন্ত্র জাতিগত অস্তিত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্তের অধিকারও একমাত্র তাদেরই। অন্য কোন জাতি সে যত অগ্রসরই হোক, সে সিদ্ধান্ত তারা নিতে গেলেই তা সৃষ্টি করে জাতিগত দ্বন্দ্ব এবং তা থেকেই সৃষ্টি হয় বৃহত্তর জাতির দিক থেকে অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ।

কোন জাতি বা জাতিসত্তার জনসংখ্যা যতই কম হোক তাদের নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, নিজস্ব স্বতন্ত্র জাতিগত অস্তিত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্তের অধিকারও একমাত্র তাদেরই। অন্য কোন জাতি সে যত অগ্রসরই হোক, সে সিদ্ধান্ত তারা নিতে গেলেই তা সৃষ্টি করে জাতিগত দ্বন্দ্ব এবং তা থেকেই সৃষ্টি হয় বৃহত্তর জাতির দিক থেকে অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ।

বাংলাদেশে বাঙালি জাতির অন্তর্ভুক্ত গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক শক্তিসমূহ, গবেষক, বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হতে হবে তাই এই দৃষ্টিভঙ্গিকে জনগণের মধ্যে সম্প্রসারিত করা যে, জাতি হিসাবে নিজেদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবার জন্যই অন্যান্য সকল জাতি ও জাতিসত্তাসমূহের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠি যাতে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে সে অধিকার নিশ্চিত করা বৃহৎ জাতি হিসাবে বাঙালিরই কর্তব্য। এবং এ জন্যই যে কোন সামরিক বলপ্রয়োগের নীতি, ভাষা, সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার নীতি, মূলধারায় সম্পৃক্ত করবার নামে তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব মুছে ফেলার নীতি, তাদের সম্পর্কে বর্ণবাদী বিদ্বেষ, অশ্রদ্ধা, অবিশ্বাস ছড়ানোর নীতি ইত্যাদির বিরোধিতাও আমাদের দিক থেকেই প্রবলভাবে আসতে হবে।

জাতি হিসাবে নিজেদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবার জন্যই অন্যান্য সকল জাতি ও জাতিসত্তাসমূহের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠি যাতে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে সে অধিকার নিশ্চিত করা বৃহৎ জাতি হিসাবে বাঙালিরই কর্তব্য।

একটি ভূখণ্ডে বৈচিত্রময় সংস্কৃতি, ভাষা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ভিন্ন ভিন্ন জাতিগত বিকাশের মধ্য দিয়েই একটি সম্মিলিত উন্নত মানবসমাজ গড়া সম্ভব। বিশ্বব্যাপী সকল জাতিকে বৃহত্তর একক মানবজাতিতে নিয়ে আসার অপরিহার্য পূর্বশর্তই হচ্ছে সকল জাতির পূর্ণবিকাশ। পশ্চাৎপদ জাতির বিকাশের প্রক্রিয়াতেই জাতিগত বিচ্ছিন্নতা ভেঙে, বিকাশমান শ্রেণীতে ঐক্যের ভিত্তিতে সমগ্র মানবসমাজ অভিন্ন লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হতে পারে।

তথ্যসূত্র :

১. উপনিবেশিক শাসকদের “উপজাতি” ধারণা প্রচার ও পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণী আলোচনার জন্য দেখুন : Prashanta Tripura : ” The Colonial Foundation of Pahari Ethnicity”. The Journal of Social Studies, 58, October, 1992.

২. দেখুন : Raja Devasish Roy: “The Erosion of Legal And Constitutional Safeguard of the Hill People of the Chittagong Hill Tracts in Bangladesh: An Historical Account”. সেমিনারে পঠিত প্রবন্ধ, ১৯৯২

৩. এ বিষয়ে আলোচনার জন্য দেখুন : Syed Azizul Ahsan & Bhunifra Chakma: “Problems of National Integration in Bangaldesh,” Asian Servey, October, 1983. Abul Barkat & Shamsul Huda: “Politcal Economic Essence of Ethnic conflicts in the Chittagong Hill Tracts of Bangladesh,” Social Science Review, D.U. December 1988.

৪. Barkat এবং Huda, পূর্বোক্ত

৫. এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনার জন্য দেখুন : “Life is not Ours”, Land and Human Rights in the Chittagong Hill Tracts, Bangladesh, The Report of the CHT Commission, May 1991. এবং একই কমিশনের পরবর্তী রিপোর্ট March ১৯৯২

৬. দেখুন : Nahid Islam: ‘Ethnicity and Environment in South Asia : The case of CHT’ সেমিনার প্রবন্ধ, আগস্ট ১৯৯২

৭. সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, মোশতাক আহমেদ চৌধুরী, দীপংকর তালুকদার কল্পরঞ্জন চাকমার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের আলোচনা, ১৯৯২। আরও দেখুন : আনু মুহাম্মদ : “পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা নিয়ে সংসদে খোলাখুলি আলোচনা করতে বাধা কোথায়?” প্রিয় প্রজন্ম, জানুয়ারি ১৯৯২

৮. দেখুন : ফেরদৌস হোসেন : “পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্বশাসন আন্দোলন এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংহতির সমস্যা”, আত্মপ্রতিকৃতি, ঢাকা, ১৯৯১.

৯. Raja Devashish Roy : পূর্বোক্ত

১০. দেখুন : আনু মুহাম্মদ : “পার্বত্য জনগণ কি বাংলাদেশের নাগরিক?” দিকচিহ্ন, ১৯ জুলাই ১৯৯১। এ লেখার বিরুদ্ধে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক, একজন সামরিক কর্মকর্তা প্রতিবাদ লেখেন, যা এ পত্রিকাতেই ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। এর উত্তরে একই পত্রিকায় আরেকটি লেখা প্রকাশিত হয় ৫ অক্টোবর, আনু মুহাম্মদ : “পার্বত্য জনগণ কি বাংলাদেশের নাগরিক?—২”।

১১. এ বিষয়ে আরও তথ্য ও বিশ্লেষণের জন্য দেখুন : Aditya Kumar Dewan: Class & Ethnicity in the CHTs, Unpublished PHD thesis, McGill University, 1991.

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •