সমকালীন বাংলাভাষার চলচ্চিত্রে চিত্রিত ভাবনা, নির্মাণভঙ্গি, বিষয় আশয়
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন
প্রারম্ভ
মূলত ঢাকা ও কলকাতায় নির্মিত হয় বাংলা ভাষার এবং বাঙালি নির্মাতাদের চলচ্চিত্র। জনপ্রিয় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বাংলায় ৫০শের দশক থেকে নানান ধরনের শিল্পসমৃদ্ধ প্রামাণ্যচিত্র, কাহিনীচিত্র ধারাবাহিক কিন্তু অনিয়মিতভাবে নির্মিত হয়ে আসছে নানান রচয়িতাদের মাধ্যমে। কখনো একই নির্মাতা ভিন্ন দুই ধরনে প্রকাশ করছেন নিজেকে। যেমন ঋত্বিক ঘটক “আদিবাসীদের জীবন” (১৯৫৫, ১৫ মিনিট), “ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান” (১৯৬৩, ২৪ মিনিট), নামের প্রামাণ্যচিত্রের পাশাপাশি নির্মাণ করেছেন কাহিনীচিত্র “অযান্ত্রিক” (১৯৫৮, ১০৪ মিনিট), “মেঘে ঢাকা তারা” (১৯৬০, ১২৭ মিনিট), যে সিনেমার সাথে মিশে রয়েছে প্রামাণ্যচিত্রের অনেক উপাদান। নানা উপদানের মিশ্রণ করছেন নতুন বাস্তবতা উপস্থাপনের জন্য, যা প্রচলিত সিনেমা ভাষায় হচ্ছেনা। একই রকমভাবে এরকম পাশাপাশি নানান মাধ্যমের সিনেমায় নানাভাবে নানাভাব প্রকাশ করছেন বাংলার চলচ্চিত্রকারগণ। ফলে কেউ কেউ আলাদাভাবে প্রামাণ্যচিত্র বা কাহিনীচিত্র নির্মাণ করছেন, আবার কারো কাজে প্রামাণ্যচিত্রের ভিতরে ঢুকে পড়েছে কাহিনীচিত্রের উপাদান বা কারো ক্ষেত্রে বিপরীত। সমসাময়িক শিল্পভাষার এরূপ খোঁজ থাকার যাত্রা নতুন নয়। সাম্প্রতিককালের “শুনতে কি পাও” (২০১২, ৯০ মিনিট), “থিংস আই কুড নেভার টেল মাই মাদার” (২০২২, ৮০ মিনিট), “ঝিল্লী” (২০২১, ৯৩ মিনিট) সহ অনেক কাজে এমনতর প্রবনতা লক্ষণীয়। বিশেষ করে এরূপ মিশ্রিত সিনেমা ভাষার উল্লেখযোগ্য নির্মাতা তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ, নাঈম মোহাইমেনের কোনো কোনো সিনেমা, মৃণাল সেনের অনেক সিনেমা, বা গোঁড়ার দিকের বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত প্রমুখসহ অনেকে। বাণিজ্যিক মূলধারার পাশাপাশি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এসব সিনেমা, বাংলার ভাব, বিষয়, অভিব্যক্তি ও যাপনের উপাদান হিসেবে। লক্ষণীয় এসব সিনেমার বিষয়-আশয় থেকে বক্তব্যে ভিন্নতা বিরাজমান তবে একাত্মতাও লক্ষণীয়। এমন ভাবের সাম্প্রতিকালের ৫ বাংলা সিনেমা পর্যালোচিত হলো।
আলোচিত সিনেমা
পর্যালোচিত সিনেমার তালিকা আলোচনাক্রমে উল্লেখ করা হলো।
১। নাঈম মোহাইমেন, “জলে ডোবেনা” (২০২০, ৬৪ মিনিট)
২। মধুজা মুখার্জী, “ডিপ৬” (২০২১, ১৪১ মিনিট)
৩। হুমায়রা বিলকিস, “থিংস আই কুড নেভার টেল মাই মাদার” (২০২২, ৮০ মিনিট)
৪। যুবরাজ শামীম, “আদিম” (২০২২, ৮৩ মিনিট)
৫। ঈশান ঘোষ, “ঝিল্লী” (২০২১, ৯৩ মিনিট)
ঢাকা, কলকাতায় ২০২০ থেকে ২০২২ এর ভিতরে বেশকিছু সিনেমা নির্মিত হয়েছে যা আলোচিত হতে পারে নানান ভাবে। বেশকিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য, মুক্তদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মিত ও প্রদর্শিত হয়েছে যা আলোচনার দাবীদার এবং বেশ আলোচিত হয়েছে নানানভাবে নানা মাধ্যমে। যদিও অধিকাংশ আলোচনা একরৈখিক এবং গুণগতমান প্রশ্নহীন নয় আর বিশ্লেষণের চেয়ে ব্যক্তিগত মতামতের প্রকাশ বেশি পরিলক্ষিত হয়ছে। আবার এখানে উল্লিখিত “আদিম” বেশ আলোচিত হয়েছে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জেতার পরে বা অন্য সিনেমাগুলিও যে একেবারে আলোচিত হয়নি এমন নয়। তবে এসব সিনেমার নির্মাণভঙ্গির বিশেষত্ব বা বিষয়-আশয় যে ধীরে ধীরে বাংলা সিনেমাকে বৈচিত্র্যময় ভাবে সমৃদ্ধ করছে এবং আমাদের ধর্ম-রাজনীতি-অর্থনীতি-যৌনতার সিরিয়াস আলাপে যোগ করছে নতুন নতুন তর্ক, সমস্যা, সমাধান খোঁজার ইঙ্গিত ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে উল্লিখিত সিনেমাগুলোর এসব বৈশিষ্ট্য ধরে আলাপ অনেক প্রাসঙ্গিক মনে হয়ছে। যেখানে নির্মাণের গল্প, বাজেট, সমস্যা-সমাধান থেকে অনুপ্রেরণা ইত্যাদি আলোচনা না করে স্বয়ং সিনেমা আলোচনার বিষয়বস্তু। বাংলার সমাজ ও সিনেমার পরিবর্তনকালের সময়রেখা বহন করার উদাহরণ হিসেবে অনেক সমসাময়িক সিনেমার পাশাপাশি এসব সিনেমা সমান গুরুত্ববাহী।
১। জলে ডোবেনা
নাম- জলে ডোবে না। নির্মাতা- নাঈম মোহাইমেন। শব্দ- সুকান্ত মজুমদার। ভাষা- বাংলা। দেশ- ভারত, জাপান, সুইডেন, ইউ, এস, এ। মুক্তির সাল- ২০২০। দৈর্ঘ্য- ৬৪ মিনিট। প্রযোজনা সংস্থা- সবাক ফিল্মস।
নাঈম মোহাইমেন অনেকদিন ধরে অনেক ধরনের সিনেমা নির্মাণ করছেন। তার সাম্প্রতিক সময়ের প্রযোজনা “জলে ডোবে না”, যে সিনেমায় তিনি আব্দুল আলীমের “প্রেমের মরা জলে ডোবে না” গানের অন্তর্গত দর্শন পরিবেশন করেছেন। যেখানে আব্দুল আলীম মানুষের সম্পর্কের ভিতরকার তিক্ততা, বিপদ, ছলনা, প্রলোভন ইত্যাদি ইত্যাদি সব পেরিয়ে এক প্রাপ্তমনস্ক বোধের জায়গায় পৌঁছানোর বাংলার প্রচলিত উদাহরণ উল্লেখ করেছেন। যেমন ইউসুফ নবী, জুলেখা বিবি, মূসা নবী, ইউনুস নবী, রহিমা বিবি, চণ্ডীদাস, রজকিনী (কোনো কোনো সংস্করণে শেষ দুজনের উল্লেখ রয়ছে।) প্রমুখদের। এক সময়ের জনপ্রিয় এ গানের উল্লিখিত চরিত্রদের সাধনা, সম্পর্ক, বিশ্বাস, দর্শন বর্তমানের সম্পূণ বিপরীত। এখন সম্পর্ক যে কোনো কিছুর মতোই ঠুনকো। যে যার ইচ্ছামতো শুধু ভালো লাগছে বা লাগছেনার উপরে ভিত্তি করে শেষ করে দিতে পারে সম্পর্ক বা বিপরীতে শুরু হতে পারে কোনো সম্পর্কের। একসাথে একাধিক বা সম্পর্ক বহির্ভূত সম্পর্ক ইত্যকার নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিতর দিয়ে যেতে যেতে এখন একেকজন মানুষ যার যার তার তার মতো করে নিঃসঙ্গ, কেউ একা একা, কেউ সপরিবারে! ফলে সমসাময়িক সিনেমায় এ বিষয়, চাপের প্রতি-উত্তর ভিন্ন ভিন্নভাবে একেকজন ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ চূড়ান্তরকমের মারামারি-হানাহানি বা পৌরাণিক, লোমহর্ষক, রোমাঞ্চকর কাহিনী দেখাচ্ছেন যেখানে মূল চরিত্র বা চরিত্রেরা মূলত একা এবং মূল বিষয়ের একটা প্রধান উপাদান “একাকীত্ব” “হারিয়ে ফেলার ভয়” “মানসিক চাপ” ইত্যাদি। আবার কেউ কেউ এই মৃত্যুমুখী পুঁজিবাদের ফলে “মৌলিকত্ব” ও “গোপনীয়তা” হারানো মানুষের স্মৃতিকাতরতা, অতীতমেদুরতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছেন। যেখানেও অন্যতম প্রধান বিষয় “একাকীত্ব” “নস্টালজিয়া” ইত্যাদি।
নাঈম মোহাইমেনের “জলে ডোবে না”র চরিত্ররা, তাদের সম্পর্ক, ধর্ম, বিশ্বাস, মৃত্যু, অসুখ, স্মৃতি, ইতিহাস নিয়ে কথা বলে অতীত আচ্ছন্নতায় বাস করে। বই পড়ে শোনায়, একে অপরকে নিবিড়ভাবে কামনা করে, মৃত্যু শয্যায় পাশে থাকে। এসব উপাদান আমাদের গত শতকের ৬০/৭০ এর দশকের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেইসব মানুষেরা এবং তাদের দশকের অনেক উপাদান এখন আর উপস্থিত নেই, যেমন নেই সেই সময়ের অর্থনীতি, যাপন, ভাবনা। এতসব বদলের ভিতর দিয়ে বর্তমানে এসে এই খানিক আগের অতীতকে এতো গুরুত্ব মনে হচ্ছে বর্তমানকে উপস্থাপন করার জন্য? সাধারণ ন্যূনতমবাদীয় নির্মাণভঙ্গী, শব্দ নকশা, চিত্রনাট্য, মানানসই না খারাপ অভিনয় আর দুর্বল চিত্রায়ণ নিয়ে “জলে ডোবে না” একটা সম্পর্কের ধরণ, অতীত আর ভরসার বিতর্ক। মানানসই চিরায়ত রোম্যান্টিক বাংলা সিনেমার সম-সাময়িক উপস্থাপন।
২। ডীপ সিক্স
নাম- ডিপ৬। নির্মাতা- মধুজা মুখার্জী। প্রযোজনা- অভিক মুখোপাধ্যায়, সুজিত সরকার, হরচরণ সিং, রনি লাহিড়ী, শীল কুমার। ভাষা- বাংলা। দেশ- ভারত। মুক্তির সাল- ২০২১। ১৪১ মিনিট।
অতুল কৃষ্ণ মিত্রের “আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল, সকলি ফুরায়ে যা মা।” গানের ভিতর দিয়ে কলকাতা শহরের একা একা থাকা মেয়ে মিতুলের যাপন-দর্শনের ভেদ প্রকাশ করেন মুধুজা মুখার্জী। “ডিপ৬” তার পরিচালিত ২য় পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, এখানে তিনি প্রথম চলচ্চিত্র “কার্নিভালে”র চেয়ে অনেক কম নিরীক্ষাপ্রবণ। আবার আগের বিষয় আশয়ের অনেক কিছুই বিদ্যমান। প্রতিদিনের জীবন, বাঙালির মাছপ্রীতি, সমসাময়িক মধ্যবিত্তের খাবার, শহর। যদিও কোথাও কোথাও অতিরিক্ত যোগাযোগ প্রবণতা লক্ষ্য হয়, যেমন মিতুলের মুসলিম প্রেমিককে নিয়ে করা রাস্তার পাশের লোকের অযাচিত সংলাপ। ইত্যাদি দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও তিলোত্তমা সোমের দারুণ অভিনয় আর ভালো চিত্রায়ণ, সম্পাদনা আর শব্দ নকশার ভিতর দিয়ে দারুণ এক সমসাময়িক জীবন তুলে ধরছেন মধুজা “ডীপ৬” সিনেমায়। এখানে আমরা মিতুলের দাদির মৃত্যুর ভিতর দিয়ে গল্প শুরু করি, মিতুলের যেন তেমন কিছুই আসে যায়না। মারা যেয়েও আবার মিতুলের জীবনে তার বাসের ফ্ল্যাটে দাদি ফিরে আসে, বসে বসে আগের মতোই টিভি দেখতে থাকে এবং নানা প্রকার অভিযোগ তুলতে থাকে, মিতুলের এসবেও তেমন ভাবান্তর নেই। কখনো কখনো দাদি গাইতে থাকে “আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল, সকলি ফুরায়ে যা মা”, মিতুল শুনে যায়, জীবন চলতে থাকে। ধীরে ধীরে বর্তমানকালের অধিকাংশ মানুষের মতোই তার জীবনেও জীবিত মানুষদের চেয়ে মৃত্যু মানুষদের আনাগোনা, স্মৃতি, ব্যক্তিগত কাতরতা, অসম্ভব উচ্চাভিলাষ, একাকীত্ব, বিষণ্ণতা, যৌনকাতরতা, দিবাস্বপ্ন, ব্যর্থতাবোধ বাড়তে থাকে! তার জীবনের স্মৃতি, অতীত, ভবিষ্যৎ, স্বপ্ন, বাস্তবতা, কর্মক্ষেত্র, ব্যক্তিগত জীবন, বন্ধুত্ব, প্রেম, আড্ডা, পেশা ইত্যাদি আর কোনো সীমারেখায় আবদ্ধ থাকে না, জট পাকিয়ে যায় খারাপভাবে। কিছুতেই আলাদা ও আপোষযোগ্য করে তুলতে পারেনা মিতুল এসবের। তারা হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে তার বাস্তবতায় এবং মনের পৃথিবীতে! সে তালগোলের খুব তোয়াক্কা না করেই চলতে থাকে একা একা, পুরনো কোনোকিছুতে তার আর ভালোলাগা না থাকলেও সেই যন্ত্রণা, হিংসা, ভালোবাসা সাথে জড়িয়ে নিয়ে অভিশাপগ্রস্তেরর মতোন টলতে টলতে চলতে থাকে মিতুল। “মেঘে ডাকা তারা”র (১৯৬০) নীতা বা “মহানগরে”র (১৯৬৩) আরতির মতো তার কোনো শক্ত চাওয়া নেই, সে অনেক তারল্যতায় ভুগতে থাকে। যেন সে নির্বাণগ্রস্ত হয়েও কখনো নির্বাণ না পাওয়া, না পেতে চাওয়া মানুষ। নির্বাণ সম্পর্কে অনেক জেনেও না বোঝা, হতাশা নিয়ে, গভীরতাহীন গভীর একজন মানুষ। মিতুল যেন মৃত্যুমুখী নির্বাণগ্রস্ত মানুষের মতো তার আবেগহীন আবেগময়, আশা-হতাশাহীন জীবনকে নিজেও দেখতে চায়। আর কিছুনা। বর্তমান সময়, কাঠামো, সংস্কৃতি, অর্থনীতি আমাদের নিজের সাথে নিজেদের যে বিচ্ছেদ তৈরি করেছে গণহারে যার ফলাফল উভয়বিধ বহুমুখী অসুস্থতা, যুদ্ধ, পরিবেশ বিনাশ, মৃত্যু, অকারণ অর্থকেন্দ্রিক পরিবার ভাবনা থেকে উদ্ভূত সমস্যা এবং সবচেয়ে ভয়ানক শুধুমাত্র মানুষকেন্দ্রিক ভাবনার ফলে মানুষসহ পৃথিবীর কেয়ামতের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হওয়া! এমন পরিস্থিতির একজন মানুষ হিসেবে মিতুল সমসাময়িক এক শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে করতে একা একা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে সংশপ্তকের মতন।
৩। মাকে কখনো না বলতে পারা আশয়
নাম- থিংস আই কুড নেভার টেল মাই মাদার। নির্মাণ, চিত্রায়ণ, রচনা, শব্দ- হুমায়রা বিলকিস। প্রযোজনা- কুয়েন্টিন লরেন্ট, হুমায়রা বিলকিস। সম্পাদনা- লিয়া চাতাউরেট। শব্দ মিস্রণ- অলিভার চ্যান। সঙ্গীত- তাজদার জুনায়েদ। ভাষা- বাংলা। দেশ- বাংলাদেশ, ফ্রান্স। মুক্তির সাল- ২০২২। দৈর্ঘ্য- ৮০ মিনিট।
সাধারণ একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে যা হয়, মা-বাবার অতিরিক্ত সেবা-যত্ন্, আদর ভোগ করতে করতে পৃথিবীর আর সকল তরুণ যুবার মতো আমাদের দেশের তরুণ যুবারাও একসময় ব্যক্তিগত সবকিছুর একটা বোঝাপোড়া নিয়ে সামনে দাঁড়ায় মা-বাবার। উভয় পক্ষেই কিছু যুক্তি, বোধ কাজ করে কিন্তু মূলত বিজয়ী হয় যৌবন। মা-বাবার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, বোধ অনেক সময় ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়, মূলকথা আড়ালে থেকে যায় বা হয়তো খুব তাৎক্ষণিক সময়ের বলা কথা বা আচরণকে “শেষ” ধরে আমরা (জীবন বা বেঁচে থাকা নিয়ে) এগিয়ে (মূলত মেনে নেই জীবনের ঘানি) যাই। শুরু হয় যাত্রা। তো কেমন মা-বাবার সাথে আমাদের এই বোঝাপোড়া, সেখানে কি অমর্ত্য সেনের “তর্কপ্রিয় ভারতীয়”দের মতো তর্ক, বাহাস, আলোচনা, ঝগড়া, মারামারি থাকে আবার নিজেরাই একটা আপোষ, মীমাংসা, সমাধানে এগিয়ে আসি? এরূপ ব্যক্তিগত বাহাসের জায়গায় আমাদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয় “থিংস আই কুড নেভার টেল মাই মাদার” । তো আমাদের সম্পর্ক, যৌনতাবোধ, যৌনসম্পর্ক, অযৌনসম্পর্ক ইত্যাদির সাথে একটা মধ্যবিত্ত ছেলে বা মেয়ের নিজেরই কতটা বোঝাপোড়ার সুযোগ রয়েছে? শিক্ষা ব্যবস্থায় এরূপ আলোচনা বা বিষয়ের অবতারণা রয়েছে কতটুকু? আর যে শিক্ষক শেখাবেন তার শেখানোর যোগ্যতা কি? সাম্প্রতিকালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক হিজড়াদের প্রসঙ্গ বইয়ে উল্লেখ থাকায় তিনি বই ছিঁড়ে ফেলেছেন, সবার সামনে, গণপরিসরে। তো এরকম একজন শিক্ষক আমাদের কি শেখাবেন? তার গভীরতা কতটুকু বা কতটা কার্যকর? আর তিনি নিজে কি শিখলেন? এরকম শিক্ষা-সমাজ-সংস্কৃতি কাঠামোর ভিতর দিয়ে বড় হতে হতে চলছি আমরা। কোনো শিল্পী বা নির্মাতা নিজেও এর বাইরে নন। হুমায়রা তার নিজের শ্রেণিগত অবস্থান থেকে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, অভিজ্ঞতা, মতামত এরূপ কিছু বিষয়ের অবতারণা করেন এ সিনেমায়। মূলত তিনি ভিনদেশি, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী একজন পুরুষের সাথে প্রেম করছেন, তাকে বিয়ে করতে চান এবং মা-বাবাকে তিনি বলতে পারছেন না, বিশেষ করে তার মাকে। কারণ তারা এরূপ সম্পর্ক মানবে না। তো তাদের একটা জমি বিক্রির বাড়তি টাকা দিয়ে তার মা তাকে নিয়ে হজ্জে যেতে চান। করোনাকাল শুরু হওয়ায় তাদের যাওয়া হয়না। তার মা চেয়েছিল এ তীর্থযাত্রার ফলে হুমায়রা তার ব্যক্তিগত বিষয় আশয় নিয়ে নিরপেক্ষভাবে ভাবতে পারবে এবং ভালো একটা সিদ্ধান্তে আসবে। সে নিজেও হয়তো মাকে না বলতে পারার অপরাধবোধ থেকে বেরিয়ে আসবে গোপন রাখা কিছু বিষয়ের স্বীকারোক্তি করে। বলা হয়না, যাওয়া হয়না, দিন চলতে থাকে। প্রেমিকের সাথে তার সম্পর্ক একসময় সময়ের প্রতিক্রিয়ায় শেষ হয়ে যায়। হুমায়রা বার বার ফিরে পেতে চায় ছোটবেলার তার কবিতা লেখা, সুন্দর করে শাড়ি পড়া মাকে, যে মা সময়ের বদলের ভিতর দিয়ে এখন অনেক বেশি নানাবিধ সীমাবদ্ধ ধর্মীয় ভাবনার চর্চা করছেন। সে নতুন রূপের এমন মাকে মেনে নিতে পারে না, সে বার বার তার পুরনো মাকে ফেরত চায়! বাবা মারা যায়, জানা হয় না কেন আমাদের মা-বাবাদের ভিতরে এরকম একটা জায়গা তৈরি হলো? বা কেন সারা পৃথিবীজুড়ে উগ্র একনায়ক/নায়িকার, ভাবনার উদ্ভব হচ্ছে এবং এরূপ উগ্রতা মেনে নেয়া এবং মানিয়ে নেয়া চলছে? এরকম মনোভাবের উৎপত্তি কেন আর কোথায়? কেন আবার মানুষ শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয় এবং প্রচলিত বিপরীতকামী স্বাভাবিকতা ও পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে মূল্যবান মনে করছে? আর কেন প্রচলিত ব্যবস্থায় এসবের কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমাধান, উত্তর খোঁজার যথাযথ প্রয়াস নেই? প্রশ্নগুলো তৈরি হয় কিন্তু হুমায়রা এসবে না যেয়ে তার নিজের জীবন নিজে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। জীবন, মৃত্যু, জরা, যাপনের দৈনন্দিন নান্দনিকতার প্রচলিত প্রামাণ্যচিত্রের ছকে তিনি তার ব্যক্তিগত ধর্মবোধ, ধর্ম দর্শন, যৌনসম্পর্ক সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা, সম্পর্কের ভাঙ্গন, উত্থান-পতন, আশা-আকাঙ্ক্ষা আর অভিজ্ঞতা যোগ করেন।
৪। আদিম
নাম- আদিম। নির্মাণ, রচনা- যুবরাজ শামীম। চিত্রায়ণ- আমির হামযা। প্রযোজনা- গণঅর্থায়ন। দৈর্ঘ্য- ৮৩ মিনিট। ভাষা- বাংলা । দেশ- বাংলাদেশ।
নায়ক-নায়িকা, ভিলেন, জটিল সমস্যা, চারিদিকে কোনো কূল-কিনারা নেই! এবং অবশেষে ধীরে ধীরে একত্রে বা আলাদা আলাদা করে সমাধান হতে থাকে একের পরে এক সমস্যার বা ন্যূনতম একটা স্থায়ী অবস্থার সৃষ্টি হয়। যাকে আপাত দৃষ্টিতে একটা শান্ত অবস্থা বলা যায়। যেকোনো একটা প্রচলিত জনপ্রিয় ধারার সিনেমার গল্পের বা আখ্যানের যে কাঠামো অনুসরণ করা হয় কম বেশি তা উপরের উল্লিখিত কাঠামোর চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। প্রচলিত এই কাঠামো ধরে টঙ্গি রেলষ্টেশনের বস্তিতে বাসরত দুলাল, সোহাগী আর ল্যাংড়ার ত্রিমুখী প্রেম, জীবন-সংগ্রামের ভিতর দিয়ে চলতে থাকে “আদিম” সিনেমার গল্প। এবং একটা দৃশ্যমান সমাধান তৈরি হয়, এক ল্যাংড়া মারা যায় তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তৈরি হয় আরেক ল্যাংড়ার, যে নিজেই খুন করে প্রাক্তন ল্যাংড়াকে। সধারণ গল্প, পাত্র-পাত্রী কেউ অভিনেতা নন, জীবনে প্রথমবারের মতন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন তারা, হয়তো একই সাথে জীবনের শেষবারের মতো। তো তাদের জীবনকে তাদের গল্প (মধ্যবিত্তরা যে গল্পকে তাদের গল্প বলে চালাতে চায়!) দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে মধ্যবিত্ত দর্শকদের জন্য। পাত্রপাত্রী, লোকেশন ও সংলাপ নির্বাচনে দৃশ্যগত চমক তৈরি হয়। মাঝবয়সি জনপ্রিয় নায়কের জিম করা শরীর বা নায়িকার অসম্ভব ব্যয় ও শ্রমঘন্টা খরচ করে তৈরি করা “ন্যাচারাল লুকে”র চেয়ে এ সিনেমার পাত্রপাত্রীদের মেকাপহীন অবয়ব একটা “নতুন” ধরণ হিসেবে উপস্থিত হয়ে নজর কাড়ে। প্রথাগতভাবে ঢাকা, কলকাতাসহ দক্ষিণ এশিয়ার জনপ্রিয় মূলধারার সিনেমার সমস্যা-বিস্তার-সমাধানসহ যে কাঠামো অতি ব্যবহারে জীর্ন সে কাঠামোর মৌলিক কোনো সমালোচনা বা সংযোজন “আদিম” করে না। মূলত গত শতকের ৫০ এর দশকের সিনেমা আন্দোলন, ইতালীয় নব্যবাস্তববাদের সমসাময়িক বঙ্গীয় চর্চার সংযোজন যুবরাজ শামীমের “আদিম”।
৫। ঝিল্লী
নাম- ঝিল্লী। নির্মাণ, রচনা, সম্পাদনা, চিত্রায়ন- ঈশান ঘোষ। প্রযোজনা- গৌতম ঘোষ ও ঈশান ঘোষ। সঙ্গীত- সৌমজিৎ ঘোষ, রাজর্ষি দাস। মুক্তির সাল- ২০২১। দৈর্ঘ্য- ৯৩ মিনিট। ভাষা- বাংলা। দেশ- ভারত।
বকুলের সবকিছু ময়লার ভাগাড়ের সাথে সম্পর্কিত। তার পরিবার, আপনজন, বান্ধব, মা, যৌনতা, প্রেম, শিক্ষা, বিনোদন, সব মানে সব। তার আর কিছু দরকার নেই, সে নিজেকে পুঁজির ছলনায় ভুলায়নি বা ভুলাতে পারার সুযোগ কখনো পায়নি। সে ভাগাড়ের, ভাগাড় তার। আমাদের ব্যক্তিগত অবস্থান যাই হোক, যখন সমস্ত ক্ষমতা, অর্থ পৃথিবীর মুষ্টিমেয় মানুষের কুক্ষিগত তখন কাঠামোগতভাবেই কোনো কিছু নিরাপদ নয়। ধরুন ইলন মাস্কের কথা, তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনবান তিন ব্যক্তির একজন। তার আয়ের অন্যতম উৎস গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান “টেসলা”। সম্প্রতি জঙ্গল সাফ করে টেসলা জার্মানি তাদের কারখানা আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে চারপাশের পরিবেশের উপর ব্যাপক খারাপ প্রভাব পড়বে, ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাবে এবং ধীরে ধীরে দূষণের স্বীকার হবে সবকিছু। তো এমন সিদ্ধান্ত নিতে ইলনের খারাপ লাগেনি এবং তার বাড়ির পাশে এরকম জঙ্গল কেটে তিনি হয়তো কারখানা বানাবেন না। কিন্তু পৃথিবীর আরেক প্রান্তে কী হচ্ছে বা কী হতে পারে তার চেয়ে তার কাছে নগদ লাভ অনেক বড়! ফলে কারখানা হচ্ছে এবং হবে। তো এরকম গগনবিদারী পুঁজিবাদী আইনের ছলনায়, আমার আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ততক্ষণ মূল্যবান, যতক্ষণ সে মতামত বা ভালোলাগা/খারাপলাগা অত্যাধিক ক্ষমতাবান এবং ধনী কারো মতের, নীতির বিপক্ষে যাচ্ছে না, মানে এখানে নীতি, নৈতিকতার বালাই নেই। প্রথাগতভাবে পুঁজিবাদ ব্যক্তি স্বাধীনতার বিজ্ঞাপনের বুলি আওড়ালেও তার শ্রম, কাঁচামালের জোগান চলমান রাখা ও বাজারের চাহিদা বজায় রাখার জন্য সব করতে পারে। মানুষ নামের প্রাণীকে যন্ত্রের মতন নিয়ম নীতি ঠিক করে দিয়ে চালাতে পারে। সেখানে সম্পদহীন একাধিক মানুষের ভালো বা খারাপের চেয়ে অত্যাধিক জোর দেয়া হয় মুষ্টিমেয় সম্পদশালীদের স্বার্থ বজায় রাখতে। আর সম্পদশালীদের হাতে যেহেতু তহবিল, প্রচারণা, তথ্যমাধ্যমসহ সবকিছু, ফলে কী তৈরি হবে, কে তৈরি করবে বা সেখানে বাস্তবতার কীরকম উপস্থাপন হবে তা সহজেই নামে-বেনামে নানান প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি দিয়ে তারা নির্ধারণ করে দিতে পারে। মানে ব্যক্তিগত বা পরিবেশগত প্রভাবের চেয়ে “মুনাফা” নিশ্চিত ও বৃদ্ধি করে যেতে হবে, যেকোনো উপায়ে। আর যেহেতু তাদের মুষ্টিমেয় মানুষের সিদ্ধান্তের ফলাফল মেনে নিতে বাধ্য করা হয় পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষকে ভয়, হুমকি আর প্রলোভন দেখিয়ে ফলে সহজেই তারা এসব সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরে দেখায় সবাই খুশি এবং মেনে নিয়েছে সব! এসবকে চিরকালীন একটা তকমা দিয়ে দিনের পরে দিন শোষণ চালিয়ে যেতে থাকে যা একসময় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। বকুল এসবের বাইরের। বকুলদের ভাগাড় একসময় স্থানান্তরিত হয়ে অন্য জায়গায় চলে যায়, কারণ ভাগাড়ের জায়গা এখন শহরের পেটের ভিতরে, সেখানে অন্য কিছু করলে লাভ আরো বেশি। কিন্তু বকুল কোথায় যাবে? এই ভাগাড়তো বকুলের দেশ, মাতৃভূমি! যেহেতু পুঁজিবাদের কেন্দ্র মুনাফা এবং এজন্য সব করে পুঁজি, কিন্তু বকুলদের কি হবে তা কেউ ভেবে দেখেনা, বকুলরা কেন? কীভাবে তৈরি হয় সে গল্পের কোনো হদিস নেই। আছে বকুলরা, খারাপ, অপ্রয়োজনীয়, অশিক্ষিত, নেশাখোর, মারামারি করা ক্ষতিকর জীব ইত্যাদি ইত্যাদি। তো এসবের বিপরীতে ঈশান ঘোষ তার “ঝিল্লী” সিনেমায় বকুলদের পৃথিবী চিত্রায়িত করে উপস্থাপন করেছেন, প্রথাগত সংলাপের বদলে পরিস্থিতির গভিরতা তৈরি করতে পারে যেসকল অর্থহীন (প্রথাগতভাবে) বাক্য, শব্দ তিনি সে সবের অনুসরণ করেছেন। আলো-আঁধারিতে বদলে যাওয়া ভাগাড়ে বিলুপ্তপ্রায় তিমির ডাকের মতো একা বকুলের আহত, বিভ্রান্ত, অসুস্থ হয়ে ছোটাছুটি করতে করতে যে ডাক, আর্তনাদ, চিৎকার আমারা শুনি/দেখি (“মা… মা…”), বোধহয় আমরা তিমির ডাক বা আর্তনাদের মতন বকুলের এ আর্তনাদের/গর্জনের/ডাকের অর্থ বুঝতে পারিনা এবং চেষ্টা করি না।
আলাপের স্বল্পবিস্তার
বাংলা সিনেমায় প্রধান চরিত্রে মেয়েদের কম দেখা গেছে। চিনু (“এক দিন প্রতিদিন” (১৯৭৯, ৯৫ মিনিট), নীতা বা আরতিকে শুরু ধরে ক্রমবর্ধমান সে যাত্রার নতুন সংযোজন “রেহানা মরিয়ম নূর” (২০২১, ১০৭ মিনিট), মিতুল বা হুমায়রার প্রামাণ্যচিত্রের, নিজের চরিত্র। অনেক দূরে এসে এখন আরো বেশি ভালো মন্দ মিশিয়ে আরো বেশি পরিমাণের মানবিক মানুষ তারা। বাংলার “নারী” ভাবনায় তারা নারীকে “বউ”,“যৌন আবেদনময়ী” বা “মা” ছক থেকে বেরিয়ে এসে অনেক বেশি প্রাপ্তমনস্ক, যৌনতাকেন্দ্রিক, বৈচিত্র্যময় ভাবনার সাধারণ মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। সাথে সাথে যোগ হয়েছে নানাসব বিচিত্র অভিজ্ঞতা, ভাবনা, তর্কের অবসান এবং উত্থান। “জলে ডোবে না”র সুফিয়াও সমাজ-সংসার-রাজনীতি-সংস্কৃতি নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া, ভাবনা ব্যক্ত করে অনেক স্বাভাবিক, সাধারণরূপে। সাথে সোহাগী, দুলাল, ল্যাংড়ার টঙ্গি স্টেশনের ভাষা, যাপন, চাহিদা আমাদের সমাজের নিম্নবিত্তদের সাথে দৃশ্যগতভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়, আন্তরিক ভঙ্গীতে। বকুল অচেনা আরেক পৃথিবীর ভাবনার যাত্রায় আমাদের শামিল করে। সে বাঁচতে চায়, পরিবার চায়, মাতৃভূমি চায়, তার অধিকার, ভাষার, সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা চায়। বকুলের পরিবার প্রাকৃতিক নয় নির্বাচিত, তার মাতৃভূমি সভ্যতার আবর্জনার ভাগাড়, তার বন্ধু-স্বজন-পরিবারে হিজড়ারাও অন্তর্ভুক্ত, বিরামহীন পুঁজিবাদী ছলনার বিপরীতে সে সুস্থতা প্রত্যাশা করে। বকুল প্রশ্ন করে, আমাদের আন্তরিকভাবে জড়িয়ে ধরে তার যাত্রার সহযাত্রী করে। এসব সিনেমায় উপস্থাপিত মৃত্যু, শোক, আত্মহত্যা, হত্যা, জোরপূর্বক স্থানান্তর, ধর্ম বিষয়ক বাহাস, একাকীত্ব, পেশাগত সংস্কৃতিসহ আরো অনেক বিষয়েরা যে অনুভূতি, সংবেদ, শিক্ষা, বিতর্ক, দর্শন, নির্মাণভঙ্গী বাংলার সিনেমায়, সমাজে সংযোজন করে তা নতুনতর সংবেদনশীলতা এবং কম পরিমাণে হলেও একরূপ কার্যকর পরিবর্তন সাধন করে।
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন। চলচ্চিত্রকার, চলচ্চিত্র সমালোচক।ইমেইল:maangorepublik@gmail.com
দোহাই
https://www.youtube.com/watch?v=gHhCBt-8ihg
https://www.shobak.org/jole-dobe-na