দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং রূপগঞ্জে ভূমিদস্যুতা

১০ম বর্ষ Hide

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং রূপগঞ্জে ভূমিদস্যুতা

কল্লোল মোস্তফা

‘কোম্পানিদেশ’ প্রামাণ্যচিত্রের একটি দৃশ্য, ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাংলাদেশে এখন ভূমিদস্যুদের দাপট ও প্রতিযোগিতা দুটোই বেড়েছে। নীতি নির্ধারকদের মধ্যেও তারাই ক্ষমতাশালী। রূপগঞ্জ এই ভূমিদস্যুদের দখল দাপটের একটা বড় দৃষ্টান্ত। গত নির্বাচন ঘিরে এখানে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিযোগিতা- সংঘাত প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। তা প্রকাশিত হয় দুই গ্রুপের মিডিয়ার মধ্য দিয়ে। এই লেখায় তার একটি চিত্র উপস্থিত করা হয়েছে।

আবাসন কোম্পানি কর্তৃক কৃষিজমিতে বালু ফেলে দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করা আজকাল বেশ ‘স্বাভাবিক’ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আমাদের কাছে যখন ‘এক টুকরো মাথা গোঁজার ঠাই’, ‘স্বপ্ন’ ইত্যাদি বলে সেই জমিকে প্লট আকারে বিক্রি করা হয়, তখন আড়ালে পড়ে যায় সেই প্লটের পেছনের কৃষিজমি কিংবা জলাভূমির কথা। আড়ালে পড়ে যায় মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তের কাছে স্বপ্ন বেচার জন্য হাজারো কৃষকপরিবারের স্বপ্ন ধ্বংস করার কায়কারবার।

এ ধরনের অপরিকল্পিত ও অবৈধ আবাসন ব্যবসার অন্যতম শিকার রাজধানীর খুব কাছের উপজেলা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের স্থানীয় অধিবাসীরা। আবাসন কোম্পানিগুলোর দৌরাত্ম্যে গত এক যুগে রূপগঞ্জের কৃষিজমি কমে অর্ধেক হয়ে গেছে, কৃষিজমি ও জলাশয় কমে যাওয়ায় কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন বিপুল সংখ্যক বর্গাচাষি ও জেলেরা। রূপগঞ্জে এক যুগের বেশি সময় ধরে চলে আসা এই ভূমিদস্যুতার বিষয়টি সম্প্রতি আবার সামনে আসে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে। প্রকৃত বিরোধী দলবিহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রূপগঞ্জবাসীর লাভ ছিল এটাই যে, ক্ষমতাসীন দলের দুপক্ষের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও তাকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট আবাসন কোম্পানিগুলোর মেরুকরণের মধ্য দিয়ে ভূমিদস্যুতার দীর্ঘদিনের সমস্যাটি জাতীয় পর্যায়ে আলোচনায় উঠে এসেছিল।

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ক্রিয়াশীল সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীন নির্বাচনে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ রকম একটা প্রেক্ষাপটে সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও (নারায়ণগঞ্জ-১) নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিজ দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের ডামি বা সাজানো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার কৌশল নেয়। এই কৌশলের অংশ হিসেবে রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা প্রতীক) প্রার্থী তৎকালীন সাংসদ এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড় করানো হয় রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়াকে (কেটলি প্রতীক)।

নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক দেখানোর জন্য ক্ষমতাসীন দলের দুটি পক্ষ যখন একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়, তখনই সামনে চলে আসে ভূমিদস্যুতার বিষয়টি। প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, রূপগঞ্জে ভোটের প্রচারে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় ছিল ‘ভূমিদস্যুতা’। আওয়ামী লীগ মনোনীত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী পরস্পরকে ‘ভূমিদস্যুদের’ সহযোগী হিসেবে প্রচার করেছেন।

এর কারণ হলো, রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ জমি দখল করার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া আরও অনেক এলাকায় নতুন করে আবাসন প্রকল্প করার চেষ্টা চলছে। এই দখলের কাজটি করেছে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি ও তাদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা। আর এ কাজে সহযোগিতা করেছে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। এ কারণেই স্থানীয় ও জাতীয়–যে কোনো নির্বাচন উপলক্ষ্যে আবাসন কোম্পানিগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে যার যার পক্ষের রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনে জিতিয়ে আনতে যেন নিজ প্রভাবাধীন রাজনৈতিক নেতাদেরকে জমি দখলের কাজে ব্যবহার করা অব্যাহত রাখা যায়। এ রকম একটা প্রেক্ষাপটেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে রূপগঞ্জের দুটি প্রভাবশালী আবাসন কোম্পানির একটি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং অন্যটি আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান গ্রহণ করে এবং তার ফলে প্রার্থীদ্বয় পরস্পরের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ আনতে থাকে।

যেমন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী নির্বাচনী সমাবেশে বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষরা ভূমিদস্যুদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অর্থে নির্বাচনে নেমেছে। ভূমিদস্যুরা ওই প্রার্থীদের পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। তারা একজন পুতুল এমপি বানিয়ে রূপগঞ্জকে দখল করতে চায়।’

অন্যদিকে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী (প্রতীক কেটলি) রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়ার অভিযোগ ছিল, ‘রূপগঞ্জে যারা নৌকার প্রার্থী গাজীর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি। তাদের নেতাও ভূমিদস্যু।’

লক্ষণীয় বিষয় হলো, নির্বাচনের প্রার্থীদের পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি এই অভিযোগে যুক্ত হয়েছিল সংশ্লিষ্ট আবাসন কোম্পানিগুলোর মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোও। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষ হয়ে প্রচারে নামে রংধনু আবাসন কোম্পানির মালিকানাধীন সংবাদপত্র প্রতিদিনের বাংলাদেশ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষ হয়ে প্রচারণা করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন সংবাদপত্র কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ইত্যাদি।

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষ হয়ে প্রচারে নামে রংধনু আবাসন কোম্পানির মালিকানাধীন সংবাদপত্র প্রতিদিনের বাংলাদেশ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষ হয়ে প্রচারণা করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন সংবাদপত্র কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ইত্যাদি।

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) পৃষ্ঠপোষকতায় ‘বাংলাদেশে গণমাধ্যমের মালিক কারা?’ শীর্ষক এক গবেষণা অনুসারে, দেশের ৪৮টি বড় মিডিয়ার মালিকানা কুক্ষিগত হয়ে আছে মূলত ৩২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের হাতে। এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক স্বার্থকে এগিয়ে নিতে এবং প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের পক্ষপাতিত্বের জন্য নিজ মালিকানাধীন গণমাধ্যমগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক স্বার্থসিদ্ধির জন্য নিজ মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোকে কীভাবে ব্যবহার করে, তার ধ্রুপদি দৃষ্টান্ত হতে পারে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে রূপগঞ্জে ভূমিদস্যুতাকে কেন্দ্র করে দুই আবাসন কোম্পানির মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করার ঘটনাটি।

রংধনু গ্রুপ রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে রূপগঞ্জে নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে গণসংযোগ ও প্রচারণা চালায়, যে খবর গ্রুপটির মালিকানাধীন সংবাদপত্র ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ’-এ প্রকাশিত হয়। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর এক সংবাদ থেকে দেখা গেছে, রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত হয়ে নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শাহজাহান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ‘ভূমিদস্যুর ছত্রছায়ায়’ নির্বাচন করার অভিযোগ তোলেন। যেমন: নির্বাচনের আগে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে রূপগঞ্জের দাউদপুর নুরুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘শাহজাহান সাহেব আওয়ামী লীগের লোক হয়েও এখন তিনি আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করছেন। তিনি এক ভূমিদস্যু মাফিয়ার ছত্রছায়ায় নির্বাচন করছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জাহাঙ্গীর মাস্টার। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাহাঙ্গীর মাস্টাররা এক বিশাল ভূমিদস্যু, ভূমিখেকোর হয়ে এই রূপগঞ্জে তাদের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন।’

রংধনু গ্রুপের মালিকানাধীন ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ’ সংবাদপত্রে ‘নির্বাচন ভূমিদস্যু শাহ আলমের নাকি লুটেরা শাহজাহানের?’ শীর্ষক এক সংবাদে অভিযোগ করা হয়:

‘নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, রূপগঞ্জকে ঘিরে ভূমিদস্যু মাফিয়া আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমের তৎপরতা ততই বেড়ে চলেছে। প্রকাশ্যেই নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষে কাজ করছে তার লোকজন। মাফিয়া শাহ আলমের মালিকানাধীন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে নানা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে রূপগঞ্জের জনগণকে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শাহ আলম অবৈধ আয় থেকে অর্জিত টাকা দেদার খরচ করছেন নৌকার প্রার্থীর বিজয় ঠেকাতে। এসব দেখে রূপগঞ্জবাসীর প্রশ্ন: তাহলে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচনটা কে করছে? ভূমিদস্যু শাহ আলম নাকি লুটেরা শাহজাহান।

… তার একটাই উদ্দেশ্য: যে করেই হোক নিজের লোককে রূপগঞ্জের আসনে নির্বাচিত করে পুতুল এমপি বানাতে হবে। যাতে পরবর্তী সময়ে নিজের ইচ্ছায় রূপগঞ্জকে চালাতে পারেন। অভিযোগ রয়েছে, নৌকার বিপক্ষে শাহজাহানকে অর্থকড়ি দিয়েই সহায়তা করছেন না, বিরোধী সকল প্রার্থীকেই অবৈধভাবে অর্জিত টাকা বিলিয়ে যাচ্ছেন শাহ আলম। লক্ষ্য হচ্ছে, কোনোভাবেই যাতে রূপগঞ্জে এবার নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী জয়লাভ করতে না পারেন।… …

এলাকাবাসী জানান, ঢাকার বিশাল একটি অংশ দখল করার পর এবার ভূমিদস্যু শাহ আলমের চোখ পড়েছে রূপগঞ্জের দিকে। কয়েক বছর ধরে নানা কায়দায় ভয়ভীতি ও জাল দলিলের মাধ্যমে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য নিরীহ মানুষের জায়গা দখল করে নিয়েছেন তিনি। এখন চাইছেন পুরো এলাকা থেকে জনগণকে উচ্ছেদ করে সকল জমি গ্রাস করে নিতে।’

মাফিয়া শাহ আলমের মালিকানাধীন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে নানা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে রূপগঞ্জের জনগণকে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শাহ আলম অবৈধ আয় থেকে অর্জিত টাকা দেদার খরচ করছেন নৌকার প্রার্থীর বিজয় ঠেকাতে।

প্রকৃতপক্ষেই নির্বাচনের আগে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোতে নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী ও রংধনু গ্রুপের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জের জমি দখলের অভিযোগ তুলে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হয়। যেমন: কালের কণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ২ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে একযোগে প্রকাশিত ‘রূপগঞ্জ যেন গাজীগঞ্জ’ শীর্ষক এক রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়: ‘রাজধানী ঢাকার পাশেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ। এখানকার প্রতিটি গ্রাম ছিল সবুজ-শ্যামল। এর পরিবেশ-প্রকৃতি মুগ্ধ করত সাধারণ মানুষকে। গোলার ধান, জমির সবজি, পুকুরের মাছ, বাড়ির হাঁস-মুরগিতে স্বাবলম্বী ছিল এই গ্রামীণ জনপদ।

কিন্তু মাত্র ১৫ বছরে পুরো এলাকা ধূসর মরুভূমিতে রূপ নিয়েছে। জবরদখলে হারিয়েছে প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য। আর এর পেছনে আছে মাত্র একটি পরিবার। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী গোটা রূপগঞ্জকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন।’

রিপোর্টটিতে গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে বলা হয়: ‘রূপগঞ্জের কেয়ারিয়া, পর্শি, বাড়িয়াছনি, কুমারপাড়া এলাকায় কয়েকশ হিন্দু পরিবারের বসবাস। সেখানকার ৮০ শতাংশ হিন্দু মানুষের জমি জিপার্ক (গাজীপার্ক) নামে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরাও করে বালু ভরাট করেছেন তিনি।… …

রূপগঞ্জের খাদুন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে গাজী টায়ার ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরির প্রায় ৮০ শতাংশ জমিই জোরপূর্বক দখল করা হয়েছে। আয়েত আলী ভুঁইয়ার ছেলে হাজি আমজাদ আলী ভুঁইয়ার ১৯ বিঘা ৮ শতাংশ, হাজি আব্দুল হাইয়ের চার বিঘা, মোবারক হোসেনের দেড় বিঘা, আব্দুল বারী ভুঁইয়ার দুই বিঘা, নূর মোহাম্মদের এক বিঘা, ইসমাইল খাঁর চার বিঘা, সিরাজ খাঁর চার-পাঁচ বিঘা, শাহ আলমের প্রায় ৭০ শতাংশ, জুলহাস ভুঁইয়ার ৭১ শতাংশ ও আপেল মাহমুদের আড়াই বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে খাদুনে গাজী টায়ার ফ্যাক্টরি তৈরি করা হয়েছে।

পাশা গ্রুপের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, এই ফ্যাক্টরির স্টাফ কোয়ার্টার বানানো হয়েছে পাশা গ্রুপের ১৩৯ শতাংশ জমি ওপর। … …

আওয়ামী লীগের পদ এবং মন্ত্রিত্বের প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার বিরাব, কাঞ্চন, ভালুকাব, টেংরারটেক, পোনাব, আমলাব, কেশরাব, আধুরিয়া, পূর্বগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় দেড় হাজার বিঘা হিন্দু-মুসলিমের মালিকানা জমি ও খাসজমি দখলে নিয়েছেন গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার ছেলে পাপ্পা।’

আওয়ামী লীগের পদ এবং মন্ত্রিত্বের প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার বিরাব, কাঞ্চন, ভালুকাব, টেংরারটেক, পোনাব, আমলাব, কেশরাব, আধুরিয়া, পূর্বগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় দেড় হাজার বিঘা হিন্দু-মুসলিমের মালিকানা জমি ও খাসজমি দখলে নিয়েছেন গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার ছেলে পাপ্পা।

এ ছাড়া দৈনিক কালের কণ্ঠে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একই জমি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি ও তিনটি ব্যাংকে বন্ধক রেখে বিপুল অর্থ জালিয়াতির অভিযোগ প্রকাশিত হয়।১০ এ বিষয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়:

‘রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে কাউসার আহমেদ অপু নিজেদের জমি বিক্রি করেন। পরে বিক্রি করা জমি নিজের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও ক্রয়-বিক্রয় করে তৈরি করেন জাল দলিল। সেই জাল দলিলের জমি আবার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এওয়াজ বদল করেন। এওয়াজ বদলে পাওয়া সেসব জমি ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখায় বন্ধক রেখে নেন ঋণ।

এভাবে জালিয়াতি করে রফিকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা একই জমি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি ও তিনটি ব্যাংকে বন্ধক রেখে প্রায় ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।… …

জালিয়াতি করে রফিকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা একই জমি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি ও তিনটি ব্যাংকে বন্ধক রেখে প্রায় ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

তিনটি ব্যাংক থেকে রফিকুলের জালিয়াতি করে নেওয়া টাকার পরিমাণ ৯৪৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৪৭৫ কোটি টাকা নিয়েছেন সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে, যা সুদসহ এখন দাঁড়িয়েছে ৭২৫ কোটি টাকায়।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ২৭০ কোটি, সুদ-আসলে যা এখন বেড়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ২০০ কোটি টাকা। এ ব্যাংকেরও সুদ-আসলে পাওনা বেড়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পাওনা সুদ-আসলসহ হিসাব করলে রফিকুলের কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকারও বেশি।

২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তিনটি ব্যাংক থেকে অর্থ হাতিয়ে নিলেও মর্টগেজ হিসেবে রাখা হয়েছে একই জমি। সেই জমিগুলোর অধিকাংশই ঋণ নেওয়ার আগে বা পরে বিক্রি করে সটকে পড়েছেন রফিকুল। অন্যদিকে জমি ব্যাংকে বন্ধক রাখলে সে তথ্য গোপন করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। তিনি এমন প্রতারণা করে ৪২৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। রফিকুলের এমন প্রতারণা আর জালিয়াতির খপ্পরে পড়ে ঋণ দেওয়া টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চতায় পড়েছে ব্যাংকগুলো।

অন্যদিকে সাধারণ মানুষ জমিগুলো কিনলেও জমির বিপরীতে নেওয়া ঋণ, জাল দলিল ও দখল নিয়ে আতঙ্কে আছেন।’১১

এভাবে নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের কথিত পৃষ্ঠপোষকদের পাল্টপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে রূপগঞ্জে চলমান ভূমিদস্যুতার ভয়াবহতার চিত্রই ফুটে ওঠে। সম্প্রতি রূপগঞ্জেরই অধিবাসী প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ব্রাত্য আমিনের রূপগঞ্জের ভূমিদস্যুতা নিয়ে তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখার সুযোগ হয়েছিল। ‘কোম্পানিদেশ’ নামে ২০২৩ সালে নির্মিত এই প্রামাণ্য চিত্রটিতে উঠে এসেছে, কীভাবে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি আবাসন কোম্পানির প্রকল্পের ফলে সাধারণ মানুষ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে উন্নয়ন উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। নতুন শহর, স্মার্ট সিটি, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি বিজ্ঞাপনী স্লোগানের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি কর্তৃক কৃষিজমির জবরদখলকে নরমালাইজ বা স্বাভাবিকীকরণের যে প্রক্রিয়া চালু রয়েছে, প্রামাণ্যচিত্রটি সেই স্বাভাবিকীকরণকে দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। নগরায়ণের যে ধরনটি আপাতদৃষ্টিতে স্বতঃস্ফূর্ত বলে ভ্রম হয়, চলচ্চিত্রটি দেখলে তার পদ্ধতিগত দিকটি স্পষ্ট হয়ে যায়।

‘কোম্পানিদেশ’ নামে ২০২৩ সালে নির্মিত এই প্রামাণ্য চিত্রটিতে উঠে এসেছে, কীভাবে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি আবাসন কোম্পানির প্রকল্পের ফলে সাধারণ মানুষ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে উন্নয়ন উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছেন।

প্রথমে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা বাহিনী একটা এলাকায় জনস্বার্থের দোহাই দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করে, তার ঠিক পরপরই সেখানে ঢুকে পড়ে বেসরকারি আবাসন কোম্পানি। এরা লোভ দেখিয়ে বা ভয় দেখিয়ে প্রথমে অল্প জমি ক্রয় করে, তারপর বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলে চারপাশের সকল কৃষিজমি। ভূমিমালিক কৃষকরা তখন বাধ্য হয় সেই জমি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিতে। ক্ষমতাসীনরা ফসলি জমি অকৃষিকাজে ব্যবহারের বিরুদ্ধে মুখে নানা বাণী দিলেও কার্যত উন্নয়নের নামে এসব কৃষিজমি ধ্বংসকারী প্রকল্পের সবরকম পৃষ্ঠপোষকতা করে। ফলে কোম্পানির নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় একেকটা এলাকায়, গড়ে ওঠে দালাল ও সুবিধাভোগী চক্র। চাপে পড়ে জমি বিক্রি করে সম্পন্ন কৃষক দিনমজুরে পরিণত হয়।

ব্রাত্য আমিন রূপগঞ্জের স্থানীয় মানুষ হিসেবে কোম্পানি কর্তৃক কৃষকের জমি দখলের এই কারবার দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যক্ষ করছেন। তার নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও ভুক্তভোগীদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে কী করে সামান্য অর্থের বিনিময়ে কৃষকের জমি কেড়ে নিয়ে বহুগুণ বেশি দামে প্লট আকারে জমি বিক্রি হচ্ছে, কীভাবে বিভিন্ন সরকারি বাহিনী ও বেসরকারি কোম্পানির দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গোটা অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ, ঝুঁকিতে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা। ক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতায় গোটা দেশটাই যেন কোম্পানির দেশে পরিণত হয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে রূপগঞ্জে ভূমি দখলের এই ভয়ংকর চিত্রটিই সামনে উঠে এসেছিল। রূপগঞ্জের সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন নৌকার প্রার্থী সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। নির্বাচনে বিজয়ী গোলাম দস্তগীর গাজীকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ নির্বাচনে শাহজাহান ভূঁইয়া একজন ভূমিদস্যুর শেল্টারে পুতুল এমপি হতে চেয়েছিল, কিন্তু জনগণ তা ব্যালটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করেছে।’১২

নির্বাচনের পরদিন প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকায় ‘জনতার রায়ে ভেস্তে গেল ভূমিদস্যু শাহ আলমের মাস্টারপ্ল্যান’ শীর্ষক সংবাদে দাবি করা হয়: ‘নৌকাকে হারাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেও শেষ পর্যন্ত রূপগঞ্জের মানুষের কাছে হেরে গেলেন ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলম। ভোটবিপ্লবের মাধ্যমেই ভয়ানক এই ভূমিদস্যু ও তার সহযোগীদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন রূপগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ। ব্যালটের শক্তির কাছে বিনাশ ঘটেছে অপশক্তির।’১৩

বাস্তবে অবশ্য রংধনু গ্রুপের পছন্দের প্রার্থীর কাছে বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত প্রার্থীর পরাজয়ের সঙ্গে রূপগঞ্জের ভূমিদস্যুতার অবসানের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, উভয় পক্ষের বিরুদ্ধেই রূপগঞ্জবাসীর ভূমি জবরদখলের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বস্তুত, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রী-এমপিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে এরকম ভূমিদস্যুতা চলতেই থাকবে। সেই সঙ্গে, যে উন্নয়ন মডেলের দোহাই দিয়ে এ ধরনের দখলদারিত্ব আর লুটপাটকে জায়েজ করা হচ্ছে, সেই উন্নয়ন মডেলকেও প্রত্যাখ্যান করা জরুরি।

তথ্যসূত্র:

১। ‘এক যুগে কৃষিজমি কমে অর্ধেক’, দিনকাল, ১৪ মার্চ ২০২৩

২। ‘নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভোটের প্রচারে ‘ভূমিদস্যুতা’’, প্রথম আলো, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

৩। ‘ভূমিদস্যুরা আমার প্রতিপক্ষের পেছনে কোটি কোটি টাকা ঢালছে’: পাটমন্ত্রী, প্রথম আলো, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩

৪। ‘যারা গাজীর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন, তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী : শাহজাহান ভূঁইয়া’, কালের কণ্ঠ, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

৫। ‘বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের মালিক কারা?’, আলী রীয়াজ এবং মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান, সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ, মে ২০২১

৬। ‘রূপগঞ্জে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে রংধনু গ্রুপের গণসংযোগ-প্রচারণা’, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩

৭।  ‘রূপগঞ্জকে ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করতে নৌকাকে বিজয়ী করার বিকল্প নেই’, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

৮। ‘নির্বাচন ভূমিদস্যু শাহ আলমের নাকি লুটেরা শাহজাহানের?’ প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ৪ জানুয়ারি ২০২৪

৯। ‘রূপগঞ্জ যেন গাজীগঞ্জ’, ২ জানুয়ারি, ২০২৪। কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন

১০। ‘একই জমির একাধিক জাল দলিল, ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রফিক’, কালের কণ্ঠ, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩; ‘রংধনু গ্রুপ থেকে জমি কিনে প্রতারিত মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠান’, কালের কণ্ঠ, ২ জানুয়ারি ২০২৩

১১। ‘একই জমির একাধিক জাল দলিল, ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রফিক’, কালের কণ্ঠ, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩

১২। ‘রূপগঞ্জে শাহজাহানকে হারিয়ে বিপুল ভোটে গাজীর বিজয়’, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ৭ জানুয়ারি ২০২৪

১৩। ‘জনতার রায়ে ভেস্তে গেল ভূমিদস্যু শাহ আলমের মাস্টারপ্ল্যান’, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ৮ জানুয়ারি ২০২৪

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *